সুকান্ত ভট্রাচার্যের কবিতাঃ ছাড়পত্র

মহান সর্বহারা বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য

মহান সর্বহারা বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য

বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ধারার কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য জন্মেছিলেন ১৫ই আগষ্ট ১৯২৬ সালে বাংলা দেশের কলকাতার কালিঘাটে। তাদের পৈত্রিক নিবাস ছিল গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার ঊনশিয়া গ্রামে। কৈশোর থেকেই তিনি সাম্যবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের সাম্যবাদী পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি এই পার্টির একজন পেশাদার বিপ্লবী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ঔপনিবেশিক পরাধীনতা, শ্রেণীশত্রুর শোষণ-নিপীড়নে জনগণের দুঃখ দুর্দশা তার হৃদয় দগ্ধ করেছে। তার কবিতার মুল প্রেরণা শোষণ নিপীড়ণ থেকে মুক্তি। স্বপ্ন এক সাম্যবাদী সমাজ। ১৩ই মে ১৯৪৭ সালে বাংলা সাহিত্যের বাস্তবতাবাদী ধারার মহাকবি মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথমে ম্যালেরিয়া তারপর দুরারোগ্য ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সাহিত্য ও বাংলাভাষী জনগণের জন্য তিনি এক অপরিসীম প্রেরণা হিসেবে রয়ে গেলেন।।

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়,
তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত উত্তোলিত,
উদ্ভাসিত কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,

তারপর হব ইতিহাস।।