মিঠুন চাকমা খুন হলেন

লেখকঃ হাসন লাল

বিশিষ্ট চাকমা জাতীয়তাবাদী নেতা ও লেখক মিঠুন চাকমাকে ৩রা জানুয়ারী ২০১৮ খাগড়াছড়িতে নিজ বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে খুন করে ফেলে যায় শত্রুপক্ষ। মিঠুন চাকমা একসময় চাকমা জাতীয়তাবাদী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন। প্রগতিশীল শিবিরের সংস্পর্শেও এসেছিলেন। কিন্তু তিনি মার্কসবাদী হতে পারেননি। তার পূর্বসূরিদের মতই তিনি চাকমা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জোরালো ভুমিকা রাখেন। তার সততা ও তাত্ত্বিক অগ্রসরতার কারণে নিশ্চয়ই তিনি তার রাজনৈতিক পরিসরে শ্রদ্ধা পেয়েছেন। তার

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা

শত্রুরা হয় সেনাবাহিনীর মদদে তাকে খুন করেছে অথবা মিঠুনের নিজ সংগঠন ইউপিডিএফ এর চাঁদাবাজ কোন গ্রুপ উক্ত হত্যাকান্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনা এক জঘন্য ঘটনা যা বিবেকবান মানুষের মনে তীব্র ঘৃণার সঞ্চার করেছে আর প্রগতিশীল মানুষকে ব্যথিত করেছে। আমরা বাঙালী ও পাহাড়ী ছোট ছোট জাতিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বকে অবৈরি দ্বন্দ্ব মনে করি। নিপীড়িত জাতিসমূহ বাংলাদেশ রাষ্ট্র কর্তৃক জাতিগত নিপীড়নের স্বীকার। এ সমস্যার সমাধান সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ধারায় হবেনা। এ সমস্যার সমাধান জাতীয় তথা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাধা হবে। স্মরণ করা যেতে পারে ঊনিশশ সত্তুর দশকে সভাপতি সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্রগ্রামে বিপ্লবী লড়াই অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু সভাপতি শহীদ হওয়ার পর সে লড়াই এগিয়ে যেতে পারেনি। পরবর্তী নেতৃত্বরা ভ্রান্ত লাইন অনুসরণ করে সংগঠণকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। পরবর্তীতে পুর্বেই জন্ম নেয়া চাকমা জাতীয়তাবাদী ধারা শক্তি অর্জন করে চাকমা-বাঙালী দ্বন্দ্বকে তীব্রতর ও বৈর করে তোলায় ভুমিকা রাখে। ঊনিশশ নব্বই দশকে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের নির্দেশে এই ধারার সংগঠন পার্বত্য চট্রগ্রাম জন সংহতি সমিতি ও তার সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর বিরোধিতা করে জন্ম নেয় ইউপিডিএফ। কিন্তু এই সংগঠন একই লাইন অনুসরণ করে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী হয়। পাহাড়ে বাঙালী-চাকমা ও অন্যান্য জাতিসমূহের দ্বন্দ্ব বৈরই থেকে যায়। মিঠুন চাকমা এ ধারা থেকে বের হতে পারেননি। কিন্তু তিনি তার বুদ্ধিমত্তা ও সততার কারণে সকলের কাছে একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। আমরা সকলে তার হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সেইসংগে খুনিদের শাস্তি কামনা করি।।