সিপিএমএলএম বাংলাদেশ দলিলঃ পথ নির্দেশক চিন্তাধারা সংক্রান্ত কমরেড অজিথের ভ্রান্ত মত সম্পর্কে (১০ জুন ২০১৪)

সিপিএমএলএম বাংলাদেশ দলিল
১০ জুন ২০১৪

পথ নির্দেশক চিন্তাধারা সংক্রান্ত কমরেড অজিথের ভ্রান্ত মত সম্পর্কে

সম্প্রতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নক্সালবাড়ী এক পার্টিতে একীভূত হয়েছে। সিপিআই (এম এল) নক্সালবাড়ীর নেতা হিসেবে কমরেড অজিথ তার ‘এভাকিয়ানবাদের বিরুদ্ধে’ দলিলে কিছু মত ব্যক্ত করেছিলেন নক্সালবাড়ী সংখ্যা নং ৪, জুলাই ২০১৩ এ। সেখানে তিনি পথনির্দেশক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।
আমরা এখানে কমরেড অজিথের পথনির্দেশক চিন্তাধারা সংক্রান্ত মন্তব্যকে খণ্ডন করছি।
সেই দলিলে তিনি আমাদের পথনির্দেশক চিন্তাধারা প্রজেক্ট এবং তিন-পার্টি বিবৃতির কথা উল্লেখ করেছিলেন।
আমরা কমিউনিস্টরা বস্তুবাদী। অজিথের মত হচ্ছে ভাববাদী। অজিথ বস্তুর গতি ও তার প্রতিফলনসমূহ বোঝেননি। তিনি বোঝেননি যে পথনির্দেশক চিন্তাধারা বিপ্লবকে পরিচালনা করে।
অজিথ লাইনের কথা বলেন, এবং চিন্তাধারার কথা নয়। অজিথ লাইনের গুণগত রূপান্তরকে বোঝেননা।
তিনি মনে করেন চিন্তাধারা ও বাদ হছে একই। বাস্তবে তা নয়।
তিনি চিন্তাধারার জন্ম ও বাদ-এ তার বিকাশকে সরলভাবে পাশ কাটিয়ে গেছেন। উদাহারণস্বরূপ মাও চিন্তাধারা।
পথনির্দেশক চিন্তাধারা সত্যিকারভাবে যৌথ। চিন্তাধারা ব্যক্তির নয়। ব্যক্তি চিন্তা করে না। বরং চিন্তাধারা জনগণের এক একটা গ্রুপ ও শ্রেণী প্রভৃতির সাথে যুক্ত। গনসালো বস্তুর এই বিশেষ গতিকে আবিষ্কার করেন বিপ্লবের জন্য কর্মরত পেরু ও সমগ্র বিশ্বের কমিউনিস্টদের প্রতিনিধি হিসেবে। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি এমনভাবে চিন্তা করেন, কিন্তু তিনি হচ্ছেন পথ প্রদর্শক।
সিরাজ সিকদার বাংলাদেশ বিপ্লবের কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তাই আমরা বলি তাঁর পথনির্দেশক চিন্তাধারা।
ভারতে, চারু মজুমদার ও সম্ভবত কানাই চ্যাটার্জিও ভারতের বিপ্লবের কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান করেছিলেন। সেটা স্রেফ লাইন নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু।
কমরেড অজিথকে বুঝতে হবে যে একটা বাদ হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়েনা।
১৯৩৭, ১৯৪৯ ও ১৯৬৬র মাওসেতুঙ চিন্তাধারা এক নয়।
কমিউনিস্ট ইশ্তেহারের মার্কসবাদ, পুঁজির মার্কসবাদ আর প্যারী কমিউন উত্তর মার্কসবাদ এক নয়। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের।
প্রতিটি বিপ্লব এক পথনির্দেশক চিন্তাধারা জন্ম দেয়। নেপালের একটা পথনির্দেশক চিন্তাধারা থাকতে পারত, কিন্তু বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। প্রচণ্ড পথ ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। তাই, আমরা ইতিমধ্যেই নেপালের আন্তরিক কমরেডদের অনুরোধ করেছি নেপালী বিপ্লবের বিশেষত্ব আবিষ্কারের, যা বিপ্লবের একটা পথনির্দেশক চিন্তাধারা হতে পারতো।
চারু মজুমদারের পথনির্দেশক চিন্তাধারাই ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমরা জানি, অনেক ভারতীয় কমরেড একই বিশ্বাস করেন।
অজিথ মনে করেন বিপ্লব করার জন্য লাইনই যথেষ্ট। তাই, তিনি লাইনকে চিন্তাধারার বিরুদ্ধে স্থাপন করেন। এভাবে তিনি মতাদর্শের গুরুত্বকে খাটো করেন।
বিপ্লব অর্থ হচ্ছে বস্তু ও চিন্তার গুণগতভাবে উচ্চতর স্তরে রূপান্তর। পথনির্দেশক চিন্তাধারা তত্ত্ব সভাপতি মাও কর্তৃক সূচিত এবং গনসালো কর্তৃক আবিষ্কৃত ও সংজ্ঞায়িত হয়েছে। এটা গনসালোর সর্বাধিক অসাধারণ অবদানের একটি। পথনির্দেশক চিন্তাধারার অর্থ এই নয় যে এটা সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য।
পথনির্দেশক চিন্তাধারা একটা নির্দিষ্ট দেশের সাথে যুক্ত। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পথনির্দেশক চিন্তাধারার অনেক দিকই সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য হতে পারে। যেমন, কমরেড সিরাজ সিকদার বলেছেন যে আধা উপনিবেশের উপনিবেশ থাকতে পারে। এটা সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু কমরেড সিরাজ সিকদারের সব তত্ত্বই সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য নয়। এই প্রেক্ষিতে, গনসালো চিন্তাধারা সভাপতি মাওয়ের পর সবচেয়ে অগ্রসর। এটা মাওবাদ সুত্র এবং গণযুদ্ধের তত্ত্বকে সংজ্ঞায়িত করেছে। কিন্তু এখনো আমরা বলছিনা যে সমগ্র গনসালো চিন্তাধারা সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য। একইসাথে, গনসালো চিন্তাধারা অথবা যেকোন চিন্তাধারা নিজেকে বাদ-এ বিকশিত করতে পারে।
ইতিমধ্যে ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী এবং আফগানিস্তানের ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, প্রধানত মাওবাদী) অজিথের মতকে সমালোচনা করেছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি যে অজিথ পথনির্দেশক চিন্তাধারা প্রশ্নটি অধ্যয়ন করেননি।
এই প্রশ্নটি অধ্যয়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ভারতীয় কমরেড এই প্রশ্নটি অধ্যয়ন করতে চান এবং স্বাভাবিকভাবে অনেকেই আমাদের মত একইভাবে চিন্তা করেন।
আমরা আশা করি সিপিআই (মাওবাদী) সর্বাধিক নির্ধারক মতাদর্শিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন সূচিত করবে।

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ