সিপিএমএলএম বাংলাদেশঃ ভোট নয়, গণযুদ্ধ! বুর্জোয়া রাজনীতি মানে জনগণের দুর্দশা

সিপিএমএলএম বাংলাদেশঃ

ভোট নয়, গণযুদ্ধ!

বুর্জোয়া রাজনীতি মানে জনগণের দুর্দশা

বুর্জোয়াদের ক্ষমতার কামড়াকামড়ি এতদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে যে এখন তাদের ক্ষমতা বহির্ভূত অংশ বিএনপি-জামাত জোট তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ট্রেন লাইন তুলে যাত্রীসমেত ট্রেন লাইনচ্যুত করছে, যাত্রীসমেত বাসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, পথচারী খেটে খাওয়া শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর বোমা নিক্ষেপ করে প্রতিদিন গণহত্যা সংঘটিত করছে। আর অপরদিকে সরকারী আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি-ওয়ার্কার্স পার্টি-জাসদের জোট তাদের তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে সরকারী বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামাত-হেফাজত ইসলাম যে জনগণের শত্রু তা তারা প্রতিদিন অপরাধ সংঘটিত করার মাধ্যমে দেখিয়ে দেয়। আর তাদের এসব অপরাধের সহযোগী হচ্ছে বাম নামধারী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল (দিলীপ বড়ুয়া), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। একপক্ষ শোষণ-দুর্নীতি অব্যাহত রাখতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। অন্যপক্ষ শোষণ-দুর্নীতি করার জন্য আবার ক্ষমতা চায়।

আর জনগণের কী করণীয়? তাদেরকে নিজস্ব ক্ষমতার জন্য লড়াই করতে হবে। তাই, গণশত্রুদের যাবতীয় অপরাধকে হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে প্রতিরোধ শুরু  করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলেও, সুন্দরবন ধ্বংস করতে রামপালে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার অনুমতি দিয়েছে ও তা চালু করেছে। তারা গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাথে প্রতারণা করেছে, মালিকদের সাথে যোগসাজসে ন্যুনতম মজুরীর দাবীকে পদদলিত করেছে। তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে টিকফা চুক্তি সই করেছে। তারা বিডিআরের সৈনিকদের সাথে প্রতারণা করে সেনাবাহিনী দিয়ে অজস্র সৈনিককে বন্দী অবস্থায় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করিয়েছে, প্রহসনমূলক বিচারে অজস্র সৈনিককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামাতিদের দাবী ছিল আরো অত্যাচার, আরো দমন। অতীতের সরকারগুলো এরকম বহু বিদ্রোহ গণহত্যার মাধ্যমে দমন করেছে। এসবের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা সকল প্রগতিশীল শক্তির কর্তব্য। আওয়ামী লীগ সরকার পেঁয়াজের দাম তিনগুন বৃদ্ধি করে তাদের দালালদের পকেট ভরিয়ে দিয়েছে। তারা কৃষকের ফসল রক্ষায় ভাইরাস প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেয়নি, ফলে ফসলহানিতে আমন মৌসুমে কৃষকরা লাভবান হতে পারেনি। বিগত ইরি মৌসুমে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। এরা পার্বত্য চট্রগ্রামের আদিবাসীদের স্বতন্ত্র জাতিগত অস্তিত্বকে অস্বীকার করে সেখানে পুনর্বাসিত বাঙালীদের পাহাড়ী আদিবাসীদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমাদেরকে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেনি। ফেলানী হত্যার আসামীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তাদের অন্যায় আদালতে হত্যাকারীর পক্ষে রায় দিয়েছে।

বুর্জোয়া ও সামন্তরা আর তাদের প্রভু সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ হল জনগণের শত্রু। তাহলে, ভোট দিয়ে ঐ সকল শত্রুদের শাসন মজবুত করা কি ন্যায়সঙ্গত?

অবশ্যই নয়।

জনগণকে ভোট বয়কট করতে হবে তা সে যে সরকারের অধীনেই হোক, অমুক বুর্জোয়া অথবা তমুক বুর্জোয়া থাক আর না থাক। ওরা সকলেই জনগনের দুর্দশার কারণ। এরাই দেশের সকল জমি, কল কারখানা, খনি ও সম্পদের মালিক। জনগণকে খাটিয়ে তাদের শোষণ করে এরা এদের সম্পদ বাড়িয়ে তোলে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। কেউ অমুক সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দালাল, কেউ তমুক সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দালাল। কখনো এই গ্রুপ ক্ষমতায় থাকে, কখনো ঐ গ্রুপ। এদের কোন আদর্শ নেই। এরা ফ্যাসিবাদী। এরা সোনার বাংলা, খাল কাটা, নতুন বাংলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ইসলাম ইতাদি বিভিন্ন ভাঁওতা দিয়ে মানুষকে শোষণ করে। ক্ষমতাকে রক্ষা করতে অথবা ক্ষমতায় যেতে এরা জনগনের ওপর নামিয়ে আনে সীমাহীন অত্যাচার। গণহত্যা করতে তারা একটুও দ্বিধা করেনা। আর এটাই এখন ঘটছে। এদের অস্তিত্ব থাকা পর্যন্ত জনগণ মুক্তি পাবেনা।

তাই বুর্জোয়া-সামন্তদের রাষ্ট্র, সরকার, সামাজিক ব্যবস্থা ও তাদের ভাঁওতাবাজি সমূলে উৎপাটিত করার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে, যে পথ দেখিয়েছেন শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদার। সে পথ হচ্ছেঃ ভোট নয়, গণযুদ্ধ!

গ্রামকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে গরীব ও ভূমিহীন কৃষকের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের পথে অবশেষে শহর দখল করা। এই হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে সর্বহারা বিপ্লবের পথ। এই পথে সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্ত ভুস্বামীদের উৎখাত করে কায়েম করা হবে শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত ও প্রগতিশীল উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষমতা, যাকে বলা হয় নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিপ্লব অব্যাহত ভাবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে এবং তারপর সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের মাধ্যমে সাম্যবাদের পথে এগিয়ে যাবে। সেই সাম্যবাদের পূর্ব পর্যন্ত গণযুদ্ধই হচ্ছে লড়াইয়ের পথ।

আসুন আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করি।

৪ ডিসেম্বর ২০১৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী