সিরাজ সিকদার রচনাঃ চক্রের নিয়মবিধি আবিস্কার করুন, চক্রের বিরোধিতা করুন

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ মে ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা  ২ ডিসেম্বর ২০১৩


 

পিডিএফ

 

মার্কসবাদ আমাদের শিক্ষা দেয়, “বস্তুর নিয়মবিধি আবিস্কার করে সে অনুযায়ী তাকে পরিবর্তন করা যায়।”

একইভাবে চক্রের নিয়মবিধি আবিস্কার করে চক্রের বিরোধিতা করা, তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করা, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

এর ফলে চক্র সম্পর্কিত জ্ঞান আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করা যায়, এটা তখন নিজে নিজেই বিরাজ করা থেকে আমাদের জন্য বস্তুতে রূপান্তরিত হয়। [১]

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপ্লবী সংগঠনসমূহে চক্র গঠনের ঘটনা, পূর্ববাংলার ক্ষুদে বুর্জোয়া সংগঠন এবং মার্কসবাদী নামধারী বুর্জোয়া উপদলসমূহে চক্র গঠনের সংবাদ, ঘটনা ও পরিণতি আমরা জানতাম। আমাদের সংগঠনে হাজিপুরের সাদেকচক্র এবং আবুল হাসান-শান্তিলালের চক্র গঠনের ঘটনাও ঘটেছে।

কিন্তু এ সকল ঘটনার তাৎপর্য, ব্যাপ্তি খুব কম থাকায় চক্র সম্পর্কে একটা সাধারণ নিয়মবিধি আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি।

ফজলু-সুলতান চক্রের কার্যকলাপ, তাৎপর্য, ব্যাপ্তি ও পরিণতি খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এর ফলে এ ধরণের কার্যকলাপের সাধারণ নিয়মবিধি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে।

ব্যক্তিস্বার্থ সকল চক্রের মূল বিষয়

হাজিপুরের সাদেক দ্রুত একটা কিছু করে ফেলে দেশবরেণ্য নেতা এবং পার্টিকর্তা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে একটি চক্র গঠন করে হঠকারী কার্যকলাপ চালায়।

নাম-যশ, নেতা ও পার্টিকর্তা হওয়াই তাদের চক্র গঠনের উদ্দেশ্য ছিল।

আবুল হাসান যৌন স্বেচ্ছাচার, অর্থ আত্মসাৎ, নেতা হওয়ার কারণে একটি চক্র গঠন করে।

ফজলু যৌন স্বার্থকে বিপ্লবী স্বার্থের অধীন না করে বিপ্লবী স্বার্থকে যৌন স্বার্থের অধীন করে, পার্টির পদ ও নাম-যশের জন্য কাজ করে। তাকে এর জন্য বিপ্লবে যোগদানের প্রথম থেকেই সমালোচনা করা হয়, শেষ পর্যন্ত পার্টি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তখন সে চক্র গঠন করে।

সুলতান যৌন স্বার্থকে বিপ্লবী স্বার্থের অধীন করতে ব্যর্থ হয় এবং পদের জন্য কাজ করে।

পদ থেকে নামিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সে চক্র গঠন করে।

কাজেই যৌনের স্বার্থ, পদের স্বার্থ, নাম-যশের স্বার্থ অর্থাৎ ব্যক্তি স্বার্থ অর্থাৎ বুর্জোয়া শ্রেণী স্বার্থের কারণই চক্র গঠনের মূল কারণ।

চক্র গঠনের জন্য ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, মিথ্যা গুজব ছড়ানো, অপবাদ রটানো হয়

চক্র গঠকরা পার্টির অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব মীমাংসার ঐক্য-সমালোচনা-আত্মসমালোচনা-ঐক্যের গণতান্ত্রিক পথ পরিত্যাগ করে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, মিথ্যা-গুজব ছড়ানো, অপবাদ রটানোর পথ গ্রহণ করে। তারা সভায় বা সংশ্লিষ্ট কমরেড বা উচ্চস্তরকে কিছুই বলে না।

হাজিপুরের সাদেক পার্টি ও নেতৃত্ব সম্পর্কে আজে-বাজে ভিত্তিহীন মিথ্যা কথাবার্তা বলে, দলত্যাগীদের সাথে গোপনে চক্রান্ত করে, জনগণকে ভাওতা দেয়, নিজেদেরকে পার্টির কর্তা বলে জাহির করে।

আবুল হাসান মিথ্যার আশ্রয় নেয়, নিজেকে পার্টির কর্তা হিসেবে জাহির করে।

ফজলু পার্টির নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় কমিটি সম্পর্কে সভায় বা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কিছু না বলে বিভিন্ন কমরেডদের নিকট মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, আজে-বাজে কথাবার্তা, গুজব ছড়ায়, তাদেরকে তা রিপোর্ট করতে নিষেধ করে চক্রান্ত পাকায়, ষড়যন্ত্র করে, পার্টির অর্থ ও অস্ত্র চুরি করে।

সুলতান সামনা-সামনি বা সভায় কিছু না বলে একই কাজ করে।

এর কারণ গুজব-অপবাদ সভায় বা সংশ্লিষ্ট কমরেডদেরকে করলে তা টেকেনা, যেহেতু সেগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন। কাজেই এগুলো পিছনেই বলা যায়, সামনে নয়। এগুলো রাতের দুর্গন্ধ বাতাস, দিনের আলোয় টেকেনা। অর্থাৎ সত্যের সামনে টেকেনা।

পার্টির মধ্যকার সুবিধাবাদীরা হলো চক্র গঠনের ভিত্তি

হাজিপুরের সাদেক সুবিধাবাদী এবং দলত্যাগীদের সাথে লাইন দেয় ও চক্র গঠন করে।

আবুল হাসান একইভাবে সুবিধাবাদীদের নিয়ে চক্র গঠন করে।

ফজলু যৌনস্বার্থের নিকট আত্মসমর্পণকারী, সুবিধাবাদী, অধঃপতিত সুলতানের সাথে লাইন দেয় ও চক্র করে, তারা পার্টির মাঝে এমন সব ব্যক্তিদের লাইন দেয় যাদেরকে তারা সুবিধাবাদী, ব্যক্তিগত বা অন্য কোন কারণে পার্টির প্রতি অসন্তুষ্ট বা পার্টির কর্তৃক সমালোচিত বলে মনে করে।

এভাবে সুবিধাবাদী, অধঃপতিত, দলত্যাগী অসন্তুষ্টদের নিয়ে চক্র গঠন করে, চক্র গঠকরা সাধারণ কর্মী ও জনগণকে প্রতারিত করে, নিজেদের পার্টি কর্তা হিসেবে জাহির করে।

চক্র গঠক্ররা ক্রুশ্চোভের মত দু’মুখো অভিনেতা

সাদেক পার্টির সাথে আলাপের বিশ্বস্ততা দেখায়, কিন্তু পিছনে চক্রান্ত করে।

ফজলু পার্টি, কমরেড ও নেতৃত্বের সাথে আলাপে নিপুণ অভিনেতার পরিচয় দেয়, এমনকি সিরাজ সিকদারের প্রশংসায় কবিতা লিখে আনে, কমরেড সিরাজ সিকদারকে যে বিরোধিতা করবে সে বিপ্লবী নয় এমনি কথা বলে, কিন্তু ইতিমধ্যেই সে কমরেড সিরাজ সিকদারের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যা অপবাদ ও গুজব ছড়িয়েছে।

সে কমরেডদের কাছে বিপ্লবী পত্র লিখতে বলে আর পলায়নের ষড়যন্ত্র করে, একজনের কাছে এক কথা অপরের কাছে তা অস্বীকার করে। সামনা-সামনি প্রশংসা করে পিছনে চরম শত্রুতা করে।

ফজলু-সুলতান চক্র কথায় চরম বিশ্বস্ততা দেখায়। এদের দ্বারা পার্টির কোন ক্ষতি হবে এমন চিন্তাও কারো মনে উদয় হয়নি, তারা যে পার্টি ত্যাগ করবে তা ঘুনাক্ষরেও বুঝা যায়নি, অথচ পশ্চাতে তারা ষড়যন্ত্র করে, পার্টির অর্থ ও অস্ত্র চুরি করে, চক্র গঠন করে, পলায়নের ষড়যন্ত্র করে।

চক্র গঠকরা পার্টির শৃংখলা ভঙ্গ করে

চক্র গঠকরা পার্টির শৃঙ্খলা বিসর্জন দেয়, বিভিন্ন স্তরের সিদ্বান্ত বিকৃত করে জাহির করে, গোপনীয়তা নষ্ট করে, স্তর বজায় রাখে না। তারা এগুলো করে যাতে বিভিন্ন স্তর ও তার সম্পর্কে কর্মীদের ভুল ধারণা হয়, তাদের ওপর অনাস্থা আসে। কর্মী ও স্তরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

চক্র গঠকরা ইতিহাস ও মার্কসবাদ বিকৃত করে

ক্রুশ্চোভ ইতিহাস ও মার্কসবাদকে বিকৃত করে নিজেদের ক্ষমতা দখলকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য।

সে সোভিয়েট বিপ্লবে মহান স্ট্যালিনের ভূমিকাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে, তার বিরুদ্ধে জঘন্যতম কুৎসা-অপবাদ রটায়, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ সেকেলে হয়ে গেছে বলে তা বর্জন করে নিজস্ব প্রতিবিপ্লবী তত্ত্ব হাজির করে।

ফজলু চক্রও ইতিহাসকে বিকৃত করে, প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব রচনা করে, নিজের প্রতিবিপ্লবী ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রকে ন্যায়সঙ্গত করার চেষ্টা চালায়।

সে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন, মহান পেয়ারা বাগান ও সর্বহারা পার্টিতে কমরেড সিরাজ সিকদারের ভূমিকাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে, এভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করে কমরেড সিরাজ সিকদারের বিরুদ্ধে জঘন্যতম কুৎসা ও অপবাদ রটায়।

চক্র গঠকরা ষড়যন্ত্রের জাল বোনে, পরস্পরকে রক্ষা করে, পার্টির মাঝে অপর কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে

সাদেক ও অন্যান্যদের কেউই একে অপরের কার্যকলাপ সম্পর্কে পার্টির নিকট রিপোর্ট করেনি, তারা পরস্পরকে রক্ষা করে।

আবুল হাসানদের মাঝেও কেউ রিপোর্ট করেনি।

ফজলু-সুলতান চক্র একে অপরের কার্যকলাপ সম্পর্কে রিপোর্ট করেনি, বরঞ্চ পরস্পরকে রক্ষা করেছে। ফজলু সুলতানের একটি চিঠি (তার সুবিধাবাদের প্রমাণ রয়েছে এরূপ) পার্টির নিকট জমা দেবার পরিবর্তে গায়েব করে দেয়।

ফজলু-সুলতান পার্টির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, কোন কোন কর্মীকে অবৈধভাবে ডেকে আনে (যা কেন্দ্রীয় কমিটি পারে), অর্থ দেয়, চক্রান্তের লাইন দেয়, এভাবে পার্টির মাঝে একমাত্র কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত অপর এক কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের জাহির করে।

তারা একে অপরকে টেলিগ্রাম-পত্র মারফত খবর দেয়, তাদের বিরুদ্ধে পার্টির পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করে। ফজলু-সুলতান চক্র বিশ্বাসঘাতক দলত্যাগী নুরুল হাসানকে ভাল বলে, তার বিরুদ্ধে পার্টির সিদ্ধান্তকে ভুল বলে।

এভাবে তারা বিশ্বাসঘাতক দলত্যাগী দিপু, মাহবুবকে লাইন দেয়। এভাবে তারা দলত্যাগী বিশ্বাসঘাতকদের সারিতে নেমে যায়।

ঝানু চক্রান্তকারীরা গোপনে কাজ করে, পর্দার অন্তরালে কর্তা ব্যক্তি থাকে, ধীরে ধীরে সে চক্রান্তের জাল ছড়ায়, যেমন ক্রুশ্চোভ, লিউশাউচি। এরা অতিশয় গোপনীয়তার সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বোনে।

ক্রুশ্চোভ সাফল্য লাভ করে ক্ষমতা দখল করে।

লিউশাউচির চক্র প্রকাশ হয়ে পড়ে, সে উৎখাত হয়।

আমাদের চক্রান্তকারীরা অতিশয় বুদ্ধু। তাদের চক্রান্ত প্রকাশ হয়ে পড়ে। তারা ধরা পড়ে যায় সহজেই।

চক্র গঠকরা পার্টির সম্পত্তি আত্মসাৎ করে, পার্টির সুনাম ব্যবহার করে

চক্র গঠকরা চক্রের কাজ চালাবার জন্য পার্টির অর্থ, অস্ত্র এবং সম্পত্তি আত্মসাৎ করে, হিসেব ফাঁকি দেয়, অর্থ চুরি করে।

তারা পার্টির সুনাম ব্যবহার করে নিজেদের পার্টি-কর্তা হিসেবে জাহির করে, পার্টি ভাল কিন্তু নেতৃত্ব খারাপ, অতএব তারাই নেতা এ ধরণের কথা বলে।

ফজলু-সুলতান পার্টিকে না জানিয়ে পার্টির বিশ্বাস ভঙ্গ করে, পার্টির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে পার্টির অর্থ চুরি করে। তাদের ইচ্ছা ছিল সমুদয় অর্থ চুরি করা। ফজলু পার্টির অপারেশনের অর্থ নিয়ে পলায়নের পরিকল্পনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পার্টির অর্থ চুরি করে পার্টির কাজ বন্ধ করে দেওয়া, পার্টিকে তাদের নিকট আত্মসমর্পণ করানো এবং নিজেদের চক্রের কাজ চালিয়ে নেওয়া, নিজেদেরকে অর্থের বিনিময়ে পার্টির কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

চক্র গঠকরা দুর্গ গঠন করে

চক্র গঠকরা নিজ নিজ এলাকায় কেন্দ্রীয় কমিটি ও পার্টি থেকে স্বতন্ত্র দুর্গ গঠনের প্রচেষ্টা চালায়। তারা এমনভাবে কাজ করে যাতে কর্মীদের পার্টি, কেন্দ্রীয় কমিটি প্রভৃতির ওপর আস্থা না জন্মায়, শুধু তাদের ওপর আস্থা জন্মে।

ফজলু খুলনায় এরূপ একটি দুর্গ গঠনের চেষ্টায় ছিল। এ উদ্দেশ্যে সে প্রচুর অস্ত্র, কর্মী চায়, ব্যক্তিগত নামে লিফলেট ছড়াতে চায়, পার্টিগত সুনামের সুযোগ গ্রহণ করে এবং সামন্তবাদী আত্মীয়তার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে লোক সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালায়।

কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক তাকে অন্যত্র বদলীর কথা সে বিরোধিতা করে, এমনকি জনৈক কর্মীর অধীনেও থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে। অর্থাৎ যেভাবেই হউক সে খুলনায় থাকার চেষ্টা করে।

কেন্দ্রীয় কমিটি যদি তাকে খুলনা থেকে অপসারণ না করতো, তবে সে সমগ্র এলাকাটাকে একটি ছিদ্রহীন দুর্গে পরিণত করতে চাইতো। কর্মীদের মাঝে গুজব ছড়িয়ে, অপবাদ রটিয়ে, মিথ্যা বলে পার্টি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কোন কোন কমরেড সম্পর্কে অনাস্থা সৃষ্টি করে, তাদেরকে সে তার ব্যক্তিগত প্রভাবে রাখার চেষ্টা করতো।

এ উদ্দেশ্যে সে সহায়তা গ্রহণ করতো সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানীদের। এ ধরণের দুর্গ গঠনের উদাহারণ হলো পাবনার মতিন-আলাউদ্দিন যারা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রভাবে দুর্গ গঠন করেছে। তোয়াহাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য, সেও ব্যক্তিগত প্রভাবে দুর্গ গঠন করেছে। অর্থাৎ যে দিকে মতিন সেদিকে ঐ এলাকা, যে দিকে তোয়াহা সেদিকে ঐ এলাকা।

চীনের ইতিহাসে পেংচেন পিকিং পৌর এলাকায় একটি দুর্গ গঠন করেছিল। তাউচু দক্ষিণ চীনে দুর্গ স্থাপন করেছিল। কাজেই ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদীদের এধরণের দুর্গ গঠনের চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।

চক্র সংগঠকরা নিজেদের দোষ অন্যের কাঁধে চাপায় নিজেরা ভাল মানুষ সাজে

ফজলু-সুলতান চক্র সমস্ত দোষ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব ও অন্যান্য কমরেডদের ওপর চাপায়, নিজেরা ভাল মানুষ সেজে থাকে।

তারা এমন ভাব দেখায় যে তারা রাজনীতি, মতাদর্শ নিয়ে সংগ্রাম করছে, তাদের কোন দোষ নেই, অন্যায়ভাবে তাদেরকে পদ থেকে নামানো হয়েছে। এভাবে তারা ক্রুশ্চভের মত আচরণ করে।

চক্রান্তকারীরা ও ষড়যন্ত্রকারীরা কমরেডদের গুপ্তহত্যা করে, ধরিয়ে দেয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের এজেন্ট হয়

ফজলু-সুলতান চক্র জনৈক অসুস্থ কমরেডকে সরকারের নিকট ধরিয়ে দিতে চায়, পরে তাকে গুপ্তহত্যা করার ষড়যন্ত্র করে।

তারা পার্টির নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং পার্টির সাচ্চা বিপ্লবীদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে।

এভাবে পার্টি-ক্ষমতা দখলের জন্য তারা জঘন্যতম পন্থা গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি।

সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে পার্টির মধ্যকার চক্র কমরেড কিরোভ (লেনিনগ্রাড পার্টির নেতা)কে ১৯৩৪ সালে হত্যা করে।

বার্মার পার্টির ইতিহাসে সংশোধনবাদী চক্র সভাপতি থাকিন থান তুনকে ১৯৬৭ সালে হত্যা করে।

চীনা পার্টির ইতিহাসে চক্রান্তকারীরা বহু ক্ষেত্রে শত্রুর চরে পরিণত হয় এবং শত শত কমরেডকে ধরিয়ে দেয়।

লিন পিয়াও সভাপতি মাওকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছিল।

এভাবে চক্রান্তকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের অনেকেই দেশী ও বৈদেশিক শত্রুর চরে পরিণত হয়।

চক্রান্তকারীদের পার্টি বিরোধী কার্যকলাপের সুযোগ গ্রহণ করে সুবিধাবাদীরা

ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীদের পার্টি বিরোধী কার্যকলাপের সুযোগ গ্রহণ করে কোন কোন সুবিধাবাদী পার্টি-কর্মী ব্যক্তিগত, পার্টিতে সুযোগ-সুবিধা, নেতৃত্ব অর্জনের প্রচেষ্টা চালায়।

কেউ কেউ ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীদের মতামতকে প্রতিফলিত করে। এ মতামতকে রক্ষা করে।

শেষোক্তরা যদি সতর্ক না হন তবে তাদের পক্ষে খুবই সম্ভাবনা থাকে চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদীদের খপ্পরে পড়ার এবং তদের একজন হওয়ার। কোন কোন সোজা কমরেডদেরকে চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদীরা উস্কে দেয় তাদের হয়ে লড়ার জন্য। এভাবে কেউ কেউ চক্রান্তকারীদের শিকারে পরিণত হতে পারেন।

চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারীদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে পার্টির ক্ষমতা দখল

ফজলু-সুলতান চক্র জঘন্যতম মিথ্যা-গুজব-অপবাদ রটিয়ে পার্টি-নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং বিশ্বস্ত, সৎ কমরেডদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা, গুপ্তহত্যা, বাধা হয়ে দাঁড়াবে এমন কমরেডদের ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দূর করা, অবশিষ্ট কমরেডদের কাউকে সুবিধা দিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে বশে আনা, এরপর তথাকথিত নেতৃস্থানীয় কর্মীদের বৈঠকের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে একটি প্রতিবিপ্লবী কু-দেতা ঘটিয়ে তাদের নির্দেশমত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে পার্টির ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল।

তারা প্রথমে সুবিধাবাদীদের লাইন দেয়, কিছু সাচ্চা কর্মীদের প্রতারিত করে।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তারা পার্টির অর্থ চুরি করে, যাতে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাচ্চা বিপ্লবীদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে তারা যাতে অবাধে সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারে, নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় কমিটি ও খাঁটি কমরেডদের সম্পর্কে অপবাদ-গুজব সর্বত্র ছড়াতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়। এ উদ্দেশ্যে তারা তাদের পদলেহীদের বিভিন্ন স্থানে পাঠায়।

তারা গুপ্তহত্যার তালিকা প্রণয়ন করে, তার পরিকল্পনা করে। তারা পরিকল্পনার পরবর্তী স্তর, নেতৃস্থানীয় কর্মীদের বৈঠকের দাবী জানায়।

নেতৃত্বের সতর্কতা, কমরেডদের আন্তরিকতা, নেতৃত্ব ও বিপ্লবের প্রতি কমরেডদের আস্থার জন্য তাদের চক্রান্ত ধরা পড়ে যায়। তাদের সকল প্রতিক্রিয়াশীল পরিকল্পনা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে। তাদের কেউ কেউ পলায়ন করে। কেউ কেউ নিজে বাঁচবার জন্য সাফাই গাইছে।

সোভিয়েট পার্টির ক্ষমতা ক্রুশ্চোভ একইভাবে দখল করে। তারা লেনিনগ্রাড পার্টি কমিটির কমরেড কিরোভকে ১৯৩৪ সালে গুপ্তভাবে হত্যা করে।

লিউশাউচী প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। লিনপিয়াও একইভাবে ব্যর্থ হয়।

আমাদের চক্রান্তকারীরাও ব্যর্থ হয়েছে পার্টির ক্ষমতা দখল করতে। পক্ষান্তরে তারা হয়েছে কমরেড ও জনগণের নিকট ঘৃণিত, ধিকৃত।

ষড়যন্ত্রকারীরা, চক্রান্তকারীরা প্রকৃতপক্ষে সামন্তবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট

ফজলু-সুলতানচক্র তাদের অনুসৃত জঘন্য উপায়ে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হলে সে-পার্টি কি বিপ্লবী থাকতো? মোটেই না। এটা দেশীয়-আন্তর্জাতিক শত্রুদের স্বার্থরক্ষাকারীতে পরিণত হতো।

ফজলু-সুলতান চক্র সুবিধাবাদী, দলত্যাগী বিশ্বাসঘাতকদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করে। সাচ্চা ও খাঁটি কর্মীদের খতম বা উৎখাত করার চক্রান্ত করে। তারা নিজেরা হচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্যপ্রদানকারী। এর ফলে তাদের পার্টির সবাই পার্টিকে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্যদানকারীদের পার্টিতে

পরিণত করতো। অর্থাৎ, যৌন স্বেচ্ছাচার, নেতা, পদ, অর্থ, নাম ইত্যাদির জন্য তারা যা প্রয়োজন তাই করতো, অর্থাৎ মার্কসবাদ বা নীতি বলতে তাদের কিছুই থাকতো না।

এর পরিণতি হত দেশীয়, আন্তর্জাতিক শত্রুর দালালী করা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি হচ্ছে দেশীয়-আন্তর্জাতিক শত্রুদের নিকট পহেলা নম্বরের বিপদ। বর্তমানে পার্টির বিকাশের চমৎকার অবস্থা বিরাজ করছে।

এ সময় ফজলু-সুলতান চক্রের পার্টিকে ধ্বংস করার কার্যকলাপ শত্রুর জন্য সবচাইতে উৎকৃষ্ট উপহার ছাড়া আর কিছু নয়।

চক্রগঠকদের পতন অনিবার্য

ফজলু-সুলতান চক্রের সমস্ত অপরাধসমূহ কর্মীরা শেষ পর্যন্ত জেনে ফেলেছে, গোপন রাখা সম্ভব হয়নি।

সমস্ত কর্মীদের নিকট তারা চোর, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী বলে পরিচিত হয়েছে। তার মিথ্যা ও গুল মেরেছে—এ কথা সকলের নিকট পরিস্কার হয়ে গেছে। তারা নিজেরাই শেষ পর্যন্ত সংগঠন পরিত্যাগ করে পলায়ন করেছে।

সভাপতি মাও বলেছেন, “অসৎ মনোভাব পতন ডেকে আনে”

সাদেকচক্রের পতন তাদের অসৎ মনোভাবের জন্যই হয়েছে।

আবুল হাসান-শান্তিলালের পতন একই কারণে হয়েছে। ক্রুশ্চোভ-লিউশাউচির পতন একই কারণে হয়েছে। লিনপিয়াও-এর পতনও একই কারণে হয়েছে।

ফজলু-সুলতানচক্রের পতনও একই কারণে হবে। তারা অভিনয় করে, দু’মুখো হয়ে ভাল মানুষ সাজতে চেয়েছে। কিন্তু সময় তাদের প্রকৃত কুৎসিত, প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র প্রকাশ করে দিয়েছে। সারা জীবন ধরে অভিনয় করা যায় না, প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ পাবেই পাবে।

ইতিহাস তখন তাদেরকে ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ করবে, এভাবে সমাজের গতিধারায় প্রতিক্রিয়ার আবর্জনা নোংরা কেটে পড়বে, খাঁটি ও প্রকৃত বিপ্লবীরা টিকে থাকবে সমাজের গতিধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

সুবিধাবাদী, চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, অধঃপতিত ব্যক্তিদের বের করে দিয়ে পার্টি শক্তিশালী হয়

সাদেক, আবুল হাসান-শান্তিলালচক্র নিজেরাই পার্টি থেকে বেরিয়ে যায়। ফজলুচক্রও স্বেচ্ছায় পার্টি থেকে পলায়ন করে।

এর ফলে পার্টির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কিছু কর্মী চলে গেছে, কোন কোন এলাকায় কাজ চক্রান্তকারীদের সংগঠন বিরোধী তৎপরতার জন্য ক্ষতি হয়েছে বা ধ্বংস হয়েছে। সাধারণ কর্মীদের মাঝে কিছু প্রতিক্রিয়া হয়েছে, শত্রুরা খুশী হয়েছে, এদের মাধ্যমে নতুন যোগাযোগসমূহ হারিয়েছে।

কিন্তু এর একটা ভাল দিকও রয়েছে। এ সকল চক্রান্তকারীরা পার্টির কর্মীদের মাঝে হতাশা, দোদুল্যমানতা, অস্থিরতা সৃষ্টি করতো। পার্টির শৃংখলা দুর্বল করে বা ভেঙ্গে দিয়ে অপর এক কেন্দ্র গঠন করতো। পার্টির মাঝে টাইম বোমা হিসেবে থাকতো। পার্টির মাঝে গুপ্তহত্যা, বিশ্বাসঘাতকতার কারণ হিসেবে বিরাজ করতো, ভবিষ্যতের বিরাটাকার ক্ষতি ঘটাতো।

ষ্ট্যালিন বলেছেন, এ ধরনের মিত্র নিয়ে লড়াই করার অর্থ হচ্ছে পার্টিকে দু’দিক থেকে গুলির মাঝে ফেলা; একদিকে বাইরের শত্রুর, অন্যদিকে ভিতরের শত্রুর। এর ফলে পার্টির পক্ষে বিজয় অর্জন করা অসম্ভব।

ফজলু-সুলতানচক্রের ঘটনা থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান নেতিবাচক উদাহারণ ও শিক্ষা পার্টি অর্জন করেছে। এর মূল্য অপরিসীম। ভবিষ্যতের চক্র, ষড়যন্ত্র, চক্রান্তকে সংগ্রাম করার জন্য এ অভিজ্ঞতার খুবই প্রয়োজন।

চক্র গঠকদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত পরাজিত হলে তাদের কেউ কেউ ঐক্যপন্থী হয়ে যায়, গা বাঁচাবার জন্য ভাল মানুষের ভান করে

ফজলু-সুলতানচক্রের পার্টি ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় তারা খুব ঘাবড়ে গেছে। ফজলুচক্র পলায়ন করে। অন্যান্যদের মধ্যে কেউ কেউ ঐক্যপন্থী, গা বাঁচাবার জন্য ভাল মানুষের ভান ধরে। তারা পার্টির ঐক্য, পার্টির ভাল করার জন্য কুম্ভিরাশ্রু ফেলে।

এটা তাদের একটা প্রতারণা মাত্র। পার্টির চরম সর্বনাশ করার মত কার্যকলাপ করে তারা এখন পার্টি-স্বার্থ, পার্টি-ঐক্যের কথা বলে। কিরূপ ভাওতাবাজ হলে এরূপ করা সম্ভব তা সহজেই অনুমেয়।

তারা যে ঐক্য-স্বার্থের কথা বলে তা প্রকৃতপক্ষে হচ্ছে সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, সুযোগ সন্ধানী, উপদল গঠনকারী, গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রকারী, অর্থ-অস্ত্র আত্মসাৎকারী প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে পার্টির ঐক্য এবং এদের স্বার্থ রক্ষা করা।

অর্থাৎ, তারা এবারকার মত রেহাই চায়, পার্টির মাঝে থাকতে চায় যাতে পার্টিকে তারা আরো নিপুণভাবে ধংস করতে পারে; তারা আরেকটা সুযোগ চায়।

এ ধরণের চক্রান্তকারীরা পার্টির মধ্যে থাকার সুযোগ পেয়ে কমরেড কিরোভকে হত্যা করে। বার্মার কমরেড থাকিন থান তুনকে হত্যা করে।

এ কারণেই ষ্ট্যালিন বলেছেন, “পার্টির অভ্যন্তরের শত্রু এবং বাইরের শত্রুর দ্বিমুখী আক্রমণের মুখে পার্টি কিছুই করতে পারে না।”

এমতাবস্থায় পার্টির দায়িত্ব হলো ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদী ও বিশ্বাসঘাতকদের সাথে পার্টির বিভেদের নীতিতে দৃঢ় থাকা, তাদেরকে শর্তহীনভাবে বহিস্কার করা, তাদেরকে আর সুযোগ না দেওয়া, পার্টির মাঝে লুক্কায়িতদের খুঁজে বের করা, তাদেরকে শাস্তিবিধান করা।

এভাবে পার্টির মহান দায়িত্ব হলো সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী ঘাতকদের ও অধঃপতিতদের বহিস্কারের মাধ্যমে পার্টিকে প্রতিনিয়ত শক্তিশালী করা, অর্থাৎ পাগলা কুকুর পানিতে পড়লেও তাকে পিটানোর নীতিতে দৃঢ় থাকা, এদের বিরুদ্ধে শ্রেণী সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া, এ প্রক্রিয়ায় খাঁটি বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করা।

উপসংহার

উপরোক্ত চক্রগুলো থেকে যে নিয়মবিধি আবিস্কার করা যায় তা অতিশয় মনোযোগ সহকারে পার্টি-কর্মীরা পাঠ করবেন। এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে চক্র, ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা করা। কাজেই এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণে বিরত থাকবেন। ন্যায়পরায়ণ, অকপট ও মুক্তমন হবেন, পার্টির মধ্যকার গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পদ্ধতি অনুসরণ করবেন; ঐক্য-সমালোচনা-আত্মসমালোচনা-ঐক্য-এর মাধ্যমে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করবেন, পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ, সুশৃংখল, এককেন্দ্রিক পার্টি হিসেবে গড়ে তুলবেন। যে কেউ শৃংখলাকে ভঙ্গ করে সে-ই শত্রুকে সহায়তা করে। কাজেই শৃংখলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবেন। সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রগঠক, অভিনেতা ও দু’মুখোদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।

নোট

১। ক্যান্সার রোগ পৃথিবীতে বিরাজ করছে। আমরা চিন্তা করি বা না করি তা আছে, অর্থাৎ ক্যান্সার আমাদের চিন্তা থেকে স্বাধীনভাবে বিরাজ করছে। একে বলে বস্তু নিজে নিজেই বিরাজ করে। কিন্তু মানুষ গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সারের নিয়মবিধি, অর্থাৎ কিভাবে ইহা উৎপত্তি হয়, কিভাবে ভাল করা যায়, তা জানতে চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মানুষ যখন সফল হবে তখন ক্যান্সার আমাদের জন্য বস্তুতে রূপান্তরিত হবে। বস্তুবাদীরা এই ধরণের রূপান্তরকে বিশ্বাস করে। ভাববাদীরা বলে প্রকৃতিকে জানা, তাকে বশে আনা, তাকে আমাদের জন্য বস্তুতে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়।■