মাও সেতুঙ। পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি

মাও সেতুঙ। পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি। পড়ার জন্য পিডিএফ

মাও সেতুঙ। পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি। মুদ্রণের জন্য পিডিএফ

এই রচনাটির পূর্ণ বিবরণ ১৯৬৪ সালের জুন মাসে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে প্রকাশিত “মাও সেতুঙের নির্বাচিত রচনাবলী”তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে চীনের পিকিং গণ প্রকাশন কর্তৃক চীনা ভাষায় প্রকাশিত “মাও সেতুঙ রচনাবলীর নির্বাচিত পাঠ”-এর দ্বিতীয় সংস্করণে এই রচনাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টীকা গ্রন্থকার কর্তৃক সন্নিবেশিত হয়েছে। উক্ত সংস্করণ থেকে বিদেশী ভাষা প্রকাশনা পিকিং রচনাটির বাংলায় ভাষান্তর করে প্রকাশ করে। উক্ত ভাষান্তরে সামান্য কিছু ভাষাগত সম্পাদনা

কমরেড মাও সেতুঙ

কমরেড মাও সেতুঙ

করে বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীর কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ ৮ই জানুয়ারী, ২০২৪ প্রকাশ করে। সেইসাথে মার্কসিস্ট ইন্টারনেট আর্কাইভে সংরক্ষিত ইংরেজী কপির সাথে বাংলা এই অনুবাদ মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সর্বহারা পথ ওয়েবসাইট থেকে এই সংস্করণটির অধ্যয়ন ও প্রিন্ট নেয়া যাবে।।  

এ রচনায় কমরেড মাও সেতুঙের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি

“পার্টি কমিটির সম্পাদকের একজন “স্কোয়াড নেতা” হবার দক্ষতা থাকতে হবে।… নেতৃত্ব দেয়া মানে শুধু সাধারণ ও নির্দিষ্ট কর্মনীতি স্থির করাই নয়, বরং সঠিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করাও। সঠিক সাধারণ ও নির্দিষ্ট কর্মনীতি থাকা সত্ত্বেও যদি কর্মপদ্ধতিকে অবহেলা করা হয়, তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পার্টি কমিটিকে নিজের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে হলে অবশ্যই “স্কোয়াড সদস্যদের” উপর নির্ভর করতে হবে এবং তাঁরা যাতে নিজেদের ভূমিকা পুরোপুরিভাবে পালন করতে পারেন সেজন্য তাঁদেরকে সমর্থ করে তুলতে হবে। ভাল “স্কোয়াড নেতা” হবার জন্য সম্পাদককে অবশ্যই গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসন্ধান চালাতে হবে। যদি সম্পাদক বা সহসম্পাদক নিজেদের “স্কোয়াড সদস্যদের” মধ্যে প্রচার ও সাংগঠনিক কার্যে মনোযোগ না দেন, যদি কমিটির সদস্যদের ও নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক ভালভাবে পরিচালিত করতে না পারেন, অথবা কি করে ভালভাবে সভা চালাতে হয় তা নিয়ে যদি অধ্যয়ন না করেন, তাহলে তাঁরা তাঁদের “স্কোয়াড” সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে অসুবিধায় পড়বেন। “স্কোয়াড সদস্যরা” যদি পায়ে পা মিলিয়ে না চলেন, তাহলে তারা যুদ্ধ ও গঠণকাজে কোটি কোটি মানুষকে নেতৃত্ব দেবার আশা কোন দিনই করতে পারবেননা”।                                

“পিয়ানো বাজাতে” শিখুন।…সুন্দর সুর সৃষ্টির জন্য দশটা আঙ্গুলকে ছন্দোবদ্ধভাবে এবং সমন্বয় সহকারে চালাতে হবে। পার্টি কমিটির উচিত এর কেন্দ্রীয় দায়িত্বকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা, আর কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজও তার করা উচিত”

“দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন। এর অর্থ হল পার্টি কমিটি এর প্রধান কাজকে স্রেফ আঁকড়ে ধরবেনা, অবশ্যই দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। কোন জিনিসকে শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেই এবং সামান্যতমও শিথিল না করেই তাকে ধারণ করা যায়। দৃঢ়ভাবে না ধরার অর্থ হচ্ছে একেবারেই না ধরা”

 “দুটি পার্থক্যরেখা স্পষ্ট করে টানুন। প্রথমতঃ বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে, ইয়েনান ও সীআনের মধ্যে।… বিপ্লবী বাহিনীর অভ্যন্তরে ভুল ও নির্ভুলের মধ্যে, সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে হবে এবং এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা মুখ্য ও কোনটা গৌণ তা স্পষ্ট করতে হবে। উদাহারণস্বরূপ, সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগ না শতকরা ৭০ ভাগ? আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিবিশেষের কাজের মৌলিক মূল্যায়ন করতে হবে… যদি তার সাফল্যের পরিমাণ সমগ্রের শতকরা ৭০ ভাগ হয় তাহলে তার কাজকে মূলত অনুমোদন করতে হবে”

“সমস্যা সামনে তুলে ধরুন।… লোকের পিছনে কথা বলবেননা। সমস্যা দেখা দিলে সভা ডাকুন, সমস্যা সামনে তুলে ধরে আলোচনা করুন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে”

“তথ্য বিনিময় করুন। এর অর্থ হচ্ছে, পার্টি কমিটির সদস্যের যেসব ব্যাপার তাদের নজরে এসেছে, সেগুলি সম্পর্কে পরস্পরকে জানানো এবং নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করা”

“আপনি যা বুঝেননা বা জানেননা, তা আপনার অধস্তনদের জিজ্ঞাসা করুন… নিম্নস্তরের লোকেদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে, তাদের কাছ থেকে শিখতে লজ্জা করা উচিত নয় এবং নিচের স্তরের কেডারদের মতামত আমাদের যত্ন সহকারে শোনা উচিত। শিক্ষক হবার আগে প্রথমে আপনি ছাত্র হন; আদেশ জারি করার আগে নিচের স্তরের কেডারদের কাছ থেকে শিখুন”                                                                          

“হিসাব করতে সমর্থ হোন”। এর অর্থ হল পরিস্থিতি বা সমস্যার পরিমাণগত দিকে আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক পরিমাণগত বিশ্লেষণ করতে হবে।

“যেসব কমরেড আমাদের সাথে একমত পোষণ করেন শুধু তাঁদের সাথেই নয়, বরং যাঁরা আমাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন তাঁদের সাথেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে আমাদের নিপুণ হওয়া উচিত”

“জনসাধারণকে আশ্বাসদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করুন। সভার বিজ্ঞপ্তি আগেই দিতে হবে…যাতে প্রত্যেকেই জানতে পারেন কী সমস্যার উপর আলোচনা হতে যাচ্ছে, কোন সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে তাঁরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন”

“উন্নততর সৈন্য আর সহজতর প্রশাসনব্যবস্থা”। কথাবার্তা, বক্তৃতা, প্রবন্ধ ও প্রস্তাব সবই সংক্ষিপ্ত ও সঙ্গত হওয়া উচিত। সভাও খুব দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়”      

“অহংকার থেকে বাঁচুন। যেকোন নেতৃত্বস্থানীয় লোকের পক্ষে এটা হচ্ছে নীতিগত বিষয় এবং ঐক্য বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এমনকি যাঁরা গুরুতর ভুল করেননি এবং নিজেদের কাজে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন, তাঁদেরও অহংকারী হওয়া উচিত নয়।… আমাদের সহজসরল জীবনযাপন ও কঠোর পরিশ্রমের রীতিকে বজায় রাখতে হবে এবং তোষামেদী ও বেহুদা প্রশংসা বন্ধ করতে হবে”

 

বাংলা ভাষান্তরের ভূমিকা

কমরেড মাও সেতুঙ এই ভাষণে পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেনঃ

১। পার্টি কমিটির সম্পাদককে একজন “স্কোয়াড নেতা” হবার দক্ষতা থাকতে হবে। স্কোয়াড কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তা জানতে হবে। নিজেকে এবং স্কোয়াড সদস্যদের এমনভাবে শিক্ষিত করে তুলতে হয় যাতে তারা পায়ে পা মিলিয়ে চলতে পারে। স্কোয়াডকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে স্কোয়াড নেতাকে গভীরভাবে অধ্যয়ন ও তদন্ত করতে হয়। স্কোয়াড সদস্যদের মধ্যে প্রচার ও সাংগঠনিক কার্য পরিচালনা করতে হয়। স্কোয়াড সদস্যদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হয় আর তাদেরকে তা পালনে সক্ষম করে তুলতে হয়।

২। সমস্যা সামনে তুলে ধরতে হবে। পিছনে কথা বলা যাবেনা। সমস্যা দেখা দিলে সভা ডাকুন, সমস্যা সামনে তুলে ধরে আলোচনা করুন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে।

৩। “তথ্য বিনিময় করুন”। এর অর্থ হচ্ছে, পার্টি কমিটির সদস্যের যেসব ব্যাপার তাদের নজরে এসেছে, সেগুলি সম্পর্কে পরস্পরকে জানানো এবং নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করা। তাই নিজেদের মধ্যে সমঝোতা থাকা জরুরী।

৪। নিচের স্তরের কেডারদের মতামত আমাদের যত্ন সহকারে শোনা উচিত। শিক্ষক হবার আগে প্রথমে আপনি ছাত্র হন; আদেশ জারি করার আগে নিচের স্তরের কেডারদের কাছ থেকে শিখুন।

৫। “পিয়ানো বাজাতে” শিখুন। সুন্দর সুর সৃষ্টির জন্য দশটা আঙ্গুলকে ছন্দোবদ্ধভাবে এবং সমন্বয় সহকারে চালাতে হবে। পার্টি কমিটির উচিত এর কেন্দ্রীয় দায়িত্বকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা, আর কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজও তার করা উচিত।

৬। “দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন”। এর অর্থ হল পার্টি কমিটি এর প্রধান কাজকে স্রেফ “আঁকড়ে ধরবে”না, অবশ্যই “দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে”।

৭। “হিসাব করতে সমর্থ হোন”। এর অর্থ হল পরিস্থিতি বা সমস্যার পরিমাণগত দিকে আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক পরিমাণগত বিশ্লেষণ করতে হবে।

৮। “জনসাধারণকে আশ্বাসদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করুন”। সভার বিজ্ঞপ্তি আগেই দিতে হবে; এটা জনসাধারণকে আশ্বাসদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মত, যাতে প্রত্যেকেই জানতে পারেন কী সমস্যার উপর আলোচনা হতে যাচ্ছে, কোন সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে তাঁরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন।

৯। “উন্নততর সৈন্য আর সহজতর প্রশাসনব্যবস্থা”। কথাবার্তা, বক্তৃতা, প্রবন্ধ ও প্রস্তাব সবই সংক্ষিপ্ত ও সঙ্গত হওয়া উচিত। সভাও খুব দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়।

১০। যেসব কমরেড আপনাদের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন, তাঁদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিন।

১১। অহংকার থেকে বাঁচুন। এটা একট নীতিগত বিষয়। ভুল কম করলেও অহংকার করা যাবেনা। আমাদের সহজসরল জীবনযাপন ও কঠোর পরিশ্রমের রীতিকে বজায় রাখতে হবে এবং তোষামোদী ও বেহুদা প্রশংসা বন্ধ করতে হবে।

১২। দুটি পার্থক্যরেখা স্পষ্ট করে টানুন। প্রথমতঃ বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে, ইয়েনান ও সীআনের মধ্যে। ইয়েনান ছিল বিপ্লবী কেন্দ্র। আর সীআন ছিল প্রতিবিপ্লবী কেন্দ্র। কোন বিষয় বা কারো মূল্যায়ন করার সময় তার বিপ্লবী দিক প্রধান না প্রতিবিপ্লবী দিক প্রধান তা দেখে তাকে বিচার করতে হবে। বিপ্লবী দিক প্রধান হলে প্রধানত সে বিপ্লবী। একইভাবে তার সঠিক দিক প্রধান না ভুল দিক প্রধান তা দেখতে হবে। সঠিক দিক প্রধান হলে মূলত তার কাজ অনুমোদন করা যাবে।।

কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ

বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী

৮ই জানুয়ারী, ২০২৪                                              

পার্টি কমিটির কর্মপদ্ধতি

(চীনের সাম্যবাদী পার্টির সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কমরেড মাও সেতুঙ প্রদত্ত সমাপনী ভাষণের একটি অংশ)

(১৩ই মার্চ, ১৯৪৯)

১। পার্টি কমিটির সম্পাদকের একজন “স্কোয়াড নেতা” হবার দক্ষতা থাকতে হবে। একটা পার্টি কমিটিতে দশ থেকে বিশজন সদস্য থাকেন, এটা সৈন্যবাহিনীর একটা স্কোয়াডের মত আর সম্পাদক একজন “স্কোয়াড নেতা”র মত। বস্তত এই স্কোয়াডকে ভালভাবে পরিচালনা করা সহজ নয়। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিটি আঞ্চলিক ব্যুরো এবং উপ-আঞ্চলিক ব্যুরো এখন এক একটা বিরাট এলাকার নেতৃত্ব করছে এবং অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব বহন করছে। নেতৃত্ব দেয়া মানে শুধু সাধারণ ও নির্দিষ্ট কর্মনীতি স্থির করাই নয়, বরং সঠিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করাও। সঠিক সাধারণ ও নির্দিষ্ট কর্মনীতি থাকা সত্ত্বেও যদি কর্মপদ্ধতিকে অবহেলা করা হয়, তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পার্টি কমিটিকে নিজের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে হলে অবশ্যই “স্কোয়াড সদস্যদের” উপর নির্ভর করতে হবে এবং তাঁরা যাতে নিজেদের ভূমিকা পুরোপুরিভাবে পালন করতে পারেন সেজন্য তাঁদেরকে সমর্থ করে তুলতে হবে। ভাল “স্কোয়াড নেতা” হবার জন্য সম্পাদককে অবশ্যই গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুসন্ধান চালাতে হবে। যদি সম্পাদক বা সহসম্পাদক নিজেদের “স্কোয়াড সদস্যদের” মধ্যে প্রচার কার্যে ও সাংগঠনিক কার্যে মনোযোগ না দেন, যদি কমিটির সদস্যদের ও নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক ভালভাবে পরিচালিত করতে না পারেন, অথবা কি করে ভালভাবে সভা চালাতে হয় তা নিয়ে যদি অধ্যয়ন না করেন, তাহলে তাঁরা তাঁদের “স্কোয়াড” সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে অসুবিধায় পড়বেন। “স্কোয়াড সদস্যরা” যদি পায়ে পা মিলিয়ে না চলেন, তাহলে তারা যুদ্ধ ও গঠণকাজে কোটি কোটি মানুষকে নেতৃত্ব দেবার আশা কোন দিনই করতে পারবেননা। অবশ্য সম্পাদক ও কমিটি সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক এমনি যে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুকে মেনে চলবে, সুতরাং স্কোয়াড নেতা ও তাঁর সৈনিকদের মধ্যকার সম্পর্ক থেকে এটা ভিন্ন ধরণের। এখানে আমরা শুধু একটা উপমা দিয়েছি মাত্র।

২। সমস্যা সামনে তুলে ধরুন। এটা যে শুধু “স্কোয়াড নেতা”কেই করতে হবে তা নয়, কমিটির সদস্যদেরও করতে হবে। লোকের পিছনে কথা বলবেননা। সমস্যা দেখা দিলে সভা ডাকুন, সমস্যা সামনে তুলে ধরে আলোচনা করুন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। যদি সমস্যা থাকে এবং তা যদি সামনে তুলে ধরা না হয়, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে তা অমীমাংসিত থেকে যাবে, এমনকি কয়েক বছর ধরে তা চলতে থাকবে। “স্কোয়াড নেতা” ও কমিটির সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা থাকা উচিত। সম্পাদক ও কমিটির সদস্যদের মধ্যকার, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিটি আঞ্চলিক ব্যুরোর মধ্যকার আর প্রতিটি আঞ্চলিক ব্যুরো ও এলাকা পার্টি কমিটির মধ্যকার পারস্পরিক সমঝোতা, সমর্থন ও বন্ধুত্বের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। অতীতে এর প্রতি কেউ মনোযোগ দেননি, কিন্তু পার্টির সপ্তম কংগ্রেসের পর থেকে এই ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে  আর বন্ধুত্ব ও ঐক্যের সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এর প্রতি আমাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে মনোযোগ দিয়ে যাওয়া উচিত।

৩। “তথ্য বিনিময় করুন”। এর অর্থ হচ্ছে, পার্টি কমিটির সদস্যের যেসব ব্যাপার তাদের নজরে এসেছে, সেগুলি সম্পর্কে পরস্পরকে জানানো এবং নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করা। একটি অভিন্ন ভাষা গড়ে উঠার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন লোক এমনটা করেনা বরং লাও জির বর্ণিত লোকের মত “যাদের মধ্যে সারা জীবন আসা যাওয়া নেই, যদিও তাদের মোরগের ডাক ও কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ পরস্পরের কানে যায়।” [টীকাঃ লাও জি নামক গ্রন্থের ৮০তম পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য] ফলে তাদের মধ্যে অভিন্ন ভাষার অভাব থাকে। অতীতে আমাদের কিছু উচ্চপদস্থ কেডারদের মধ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মৌলিক তত্ত্ব সম্পর্কিত সমস্যার ব্যাপারেও একটি অভিন্ন ভাষার অভাব দেখা গিয়েছে, কারণ তাঁরা যথেষ্ট অধ্যয়ন করেননি। আজকে পার্টিতে ভাষা আরো বেশি অভিন্ন হয়ে উঠেছে, কিন্তু সমস্যাটির এখনো সম্পূর্ণভাবে মীমাংসা হয়নি। উদাহারণস্বরূপ, ভূমি সংস্কারে “মাঝারি কৃষক” আর “ধনী কৃষক” কাদের বোঝায় এ সম্পর্কেও উপলব্ধির কিছু পার্থক্য রয়েছে।

৪। আপনি যা বুঝেননা বা জানেননা, তা আপনার অধস্তনদের জিজ্ঞাসা করুন আর আপনার সম্মতি বা অসম্মতি লঘুভাবে ব্যক্ত করবেননা। কোন কোন দলিলপত্রের খসড়া রচিত হবার পরও সাময়িক কালের জন্য বিলিবন্টন বিরত রাখা হয়, কারণ সেগুলির মধ্য কোন কোন প্রশ্ন স্পষ্ট করা প্রয়োজন, আর প্রথমে নিচের স্তরের মতামতই শোনা দরকার। আমরা যা জানিনা তা জানার ভান করা কখনো উচিত নয়, “নিম্নস্তরের লোকেদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে, তাদের কাছ থেকে শিখতে লজ্জা করা উচিত নয় [টীকাঃ “কনফুসিয়াসের উদ্ধৃতি সংকলন”, ৫ম গ্রন্থ, কোং ইয়ে ছাং থেকে উদ্ধৃত] এবং নিচের স্তরের কেডারদের মতামত আমাদের যত্ন সহকারে শোনা উচিত। শিক্ষক হবার আগে প্রথমে আপনি ছাত্র হন; আদেশ জারি করার আগে নিচের স্তরের কেডারদের কাছ থেকে শিখুন।

সামরিক জরুরী অবস্থা ছাড়া অথবা যেসব বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে সেসব বিষয় ছাড়া, সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিটি আঞ্চলিক ব্যুরোর এবং ফ্রন্টের পার্টি কমিটিগুলির এটাই রীতি হওয়া উচিত। এতে নিজের মর্যাদার হানি হবেনা, বড়ং বাড়বেই। যেহেতু নিম্নস্তরের কেডারদের সঠিক মতামত আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্তের অন্তর্ভুক্ত হয়, সেজন্য স্বভাবতই তাঁরা এগুলি সমর্থন করবেন। নিম্নস্তরের কেডাররা যা বলেন তা সঠিক হতে পারে, নাও হতে পারে; শোনার পর আমাদের এটা বিশ্লেষণ করা উচিত। সঠিক অভিমতকে আমাদের অবশ্যই শুনতে হবে এবং সেই অনুসারে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব সঠিক, তার কারণ, প্রধানত তা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্য, রিপোর্ট ও সঠিক মতামতের সংশ্লেষণ করে। যদি বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য না আসে বা মতামত উত্থাপিত না হয়, তবে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে সঠিক আদেশ জারি করা কঠিন হবে। নিচের স্তর থেকে আসা ভুল মতামতকেও আমাদের শুনতে হবে, একেবারেই না শোনাটা ভুল; কিন্তু এ ধরণের মতামত শোনার পর সেই অনুসারে কাজ করা চলবেনা, তার সমালোচনা করতে হবে।

৫। “পিয়ানো বাজাতে” শিখুন। পিয়ানো বাজাতে দশটা আঙ্গুলই চালনা করতে হয়, কয়েকটা আঙ্গুল চালনা করে আর অন্যগুলো না করে এ কাজ করা যায়না। আবার দশটা আঙ্গুল দিয়ে এক সঙ্গে চাপ দিলেও মিষ্টি সুরের সৃষ্টি হয়না। সুন্দর সুর সৃষ্টির জন্য দশটা আঙ্গুলকে ছন্দোবদ্ধভাবে এবং সমন্বয় সহকারে চালাতে হবে। পার্টি কমিটির উচিত এর কেন্দ্রীয় দায়িত্বকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা, আর কেন্দ্রীয় দায়িত্বের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজও তার করা উচিত। বর্তমানে, আমাদের অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা, সৈন্যবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও বিভাগসমূহের কাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে এবং অন্যান্যগুলিকে বাদ দিয়ে শুধু কয়েকটি সমস্যার উপর মনোযোগ দিলে চলবেনা।

যেখানেই কোন সমস্যা দেখা দেবে, সেখানেই আমাদেরকে তার উপর অঙ্গুলি স্থাপন করতে হবে এবং এই পদ্ধতিকে আমাদের অবশ্যই ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। পিয়ানো কেউ ভালভাবে বাজায়, কেউ বা খারাপভাবে; এঁরা যে সুর সৃষ্টি করেন তার মধ্যে বিরাট পার্থক্য থাকে; পার্টি কমিটির কমরেডদের অবশ্যই ভালভাবে “পিয়ানো বাজাতে” শিখতে হবে।

৬। “দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন”। এর অর্থ হল পার্টি কমিটি এর প্রধান কাজকে স্রেফ “আঁকড়ে ধরবে”না, অবশ্যই “দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে”। কোন জিনিসকে শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেই এবং সামান্যতমও শিথিল না করেই তাকে ধারণ করা যায়। দৃঢ়ভাবে না ধরার অর্থ হচ্ছে একেবারেই না ধরা; স্বভাবতই খোলা হাতে শক্ত করে কিছু ধরা যায়না। কোন কিছু ধরার মতন করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করা হলেও মুষ্টি যদি দৃঢ় না হয় তাহলে সেই ধরাও তখনও দৃঢ় হয়নি। আমাদের কোন কোন কমরেডও প্রধান কাজকে তেমন করে ধরেন, কিন্তু দৃঢ়ভাবে ধরেননা, তাই কাজেও তারা সাফল্য পাননা। একেবারেই না ধরলে যেমন চলবেনা, আবার তেমনি দৃঢ়ভাবে না ধরলেও চলবেনা।

৭। “হিসাব করতে সমর্থ হোন”। এর অর্থ হল পরিস্থিতি বা সমস্যার পরিমাণগত দিকে আমাদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক পরিমাণগত বিশ্লেষণ করতে হবে। যে কোণ গুণই একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে নিজেকে প্রকাশ করে, পরিমাণ ছাড়া কোন গুণ হতে পারেনা। আমাদের বহু কমরেড আজো পর্যন্ত বোঝেননা যে, বস্তুর পরিমাণগত দিকে তাঁদের মনোযোগ দিতে হবেঃ মৌলিক পরিসংখ্যান, প্রধান শতকরা অনুপাত এবং বস্তুর গুণ নির্ধারণকারী পরিমাণগত সীমা, এসব দিকে তাঁদের অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। তাঁদের মাথায় কোন “হিসেব” নেই, তাই তারা ভুল না করে পারেননা। উদাহারণস্বরূপ, ভুমি সংস্কার চালাতে গেলে জনসংখ্যার শতকরা কতজন জমিদার, ধনী কৃষক,

মাঝারি কৃষক, গরীব কৃষক আর কী পরিমাণ জমি প্রত্যেক গ্রুপের অধিকারভুক্ত তা জানা দরকার। কেবলমাত্র এই সংখ্যার ভিত্তিতেই আমরা সঠিক কর্মনীতি ঠিক করতে পারি। কাকে ধনী কৃষক বলা যায়, কাকে স্বচ্ছল মাঝারি কৃষক বলা যায় এবং শোষণ থেকে আয়ের পরিমাণ কত হলে একজন ব্যক্তিকে স্বচ্ছল মাঝারি কৃষক না বলে ধনী কৃষক হিসেবে ধরা যায়—সেক্ষেত্রেও পরিমাণগত সীমা অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে। সকল গণ আন্দোলনেই সক্রিয় সমর্থক, বিরোধী এবং নিরপেক্ষদের সংখ্যা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই মৌলিক তদন্ত চালাতে হবে এবং তার মৌলিক বিশ্লেষণ করতে হবে; ভিত্তিহীন ও আত্মগতভাবে সমস্যার সমাধান করলে চলবেনা।

৮। “জনসাধারণকে আশ্বাসদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করুন”। সভার বিজ্ঞপ্তি আগেই দিতে হবে; এটা জনসাধারণকে আশ্বাসদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মত, যাতে প্রত্যেকেই জানতে পারেন কী সমস্যার উপর আলোচনা হতে যাচ্ছে, কোন সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে তাঁরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেন। কোন কোন স্থানে আগে রিপোর্ট ও খসড়া প্রস্তাবাদি তৈরি না করেই কেডারদের সভা ডাকা হয়, এবং সভায় লোকজন উপস্থিত হওয়ার পরই কেবল কাজ চালানো গোছের, উপস্থিত মত ব্যবস্থা গ্রহণ করে নেওয়া হয়। এ যেন কথায় যে বলেঃ “সৈন্য ও ঘোড়া এসে গেছে, কিন্তু খাদ্য ও ঘাস প্রস্তুত নেই”। এটা ভাল নয়। যদি প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, তাহলে তাড়াহুড়া করে সভা ডাকবেননা।

৯। “উন্নততর সৈন্য আর সহজতর প্রশাসনব্যবস্থা”। কথাবার্তা, বক্তৃতা, প্রবন্ধ ও প্রস্তাব সবই সংক্ষিপ্ত ও সঙ্গত হওয়া উচিত। সভাও খুব দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়।

১০। যেসব কমরেড আপনাদের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন, তাঁদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার দিকে মনোযোগ দিন। স্থানীয় সংগঠনেরই হোক বা সৈন্যবাহিনীরই হোক, উভয় ক্ষেত্রেরই একথা মনে রাখা উচিত।

পার্টিবহির্ভূত লোকদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। আমরা দেশের প্রতিটি স্থান থেকে এসেছি এবং যেসব কমরেড আমাদের সাথে একমত পোষণ করেন শুধু তাঁদের সাথেই নয়, বরং যাঁরা আমাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন তাঁদের সাথেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে আমাদের নিপুণ হওয়া উচিত। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মারাত্মক ভুল করেছেন; তাঁদের সম্পর্কে আমাদের বিরূপ ধারণা পোষণ করা উচিত নয়, বরং তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকা উচিত।

১১। অহংকার থেকে বাঁচুন। যেকোন নেতৃত্বস্থানীয় লোকের পক্ষে এটা হচ্ছে নীতিগত বিষয় এবং ঐক্য বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এমনকি যাঁরা গুরুতর ভুল করেননি এবং নিজেদের কাজে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন, তাঁদেরও অহংকারী হওয়া উচিত নয়। পার্টির নেতাদের জন্মবার্ষিকী পালন করা নিষিদ্ধ। পার্টির নেতাদের নামে কোন স্থান, রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করাও অনুরূপভাবে নিষিদ্ধ। আমাদের সহজসরল জীবনযাপন ও কঠোর পরিশ্রমের রীতিকে বজায় রাখতে হবে এবং তোষামেদী ও বেহুদা প্রশংসা বন্ধ করতে হবে।

১২। দুটি পার্থক্যরেখা স্পষ্ট করে টানুন। প্রথমতঃ বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে, ইয়েনান ও সীআনের [টীকা ১৯৩৭ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯৪৭ সালের মার্চ পর্যন্ত চীনের সাম্যবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদর দপ্তর ছিল ইয়েনানে। সিআন ছিল উত্তর পশ্চিম চীনে কুওমিনতাঙ (গণ জাতীয় পার্টি)র প্রতিক্রিয়াশীল শাসন কেন্দ্র। কমরেড মাও সেতুঙ এই দুটি শহরকে বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের প্রতীক হিসেবে দেখিয়েছেন] মধ্যে। কেউ কেউ বুঝেননা যে, এই পার্থক্যরেখা তাঁদের টানতেই হবে। যেমন ধরুন, তাঁরা যখন আমলাতন্ত্রবাদের বিরোধিতা করেন তখন ইয়েনান সম্পর্কে এমনভাবে বলেন যেন সেখানে “কিছুই ঠিক নয়”; তাঁরা ইয়েনানের আমলাতন্ত্রবাদ ও সীআনের আমলাতন্ত্রবাদের মধ্যে তুলনা ও পার্থক্য করেননা। এটা মৌলিক ভুল। দ্বিতীয়তঃ, বিপ্লবী বাহিনীর অভ্যন্তরে ভুল ও নির্ভুলের মধ্যে, সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে হবে এবং এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা মুখ্য ও কোনটা গৌণ তা স্পষ্ট করতে হবে। উদাহারণস্বরূপ, সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগ না শতকরা ৭০ ভাগ? কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে বললে চলবেনা। আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিবিশেষের কাজের মৌলিক মূল্যায়ন করতে হবে, তার সাফল্য শতকরা ৩০ ভাগ এবং ভুল শতকরা ৭০ ভাগ, না সাফল্য ৭০ ভাগ এবং ভুল ৩০ ভাগ? যদি তার সাফল্যের পরিমাণ সমগ্রের শতকরা ৭০ ভাগ হয় তাহলে তার কাজকে মূলত অনুমোদন করতে হবে। যে কাজে সাফল্য প্রধান সে কাজকে ভুল প্রধান বলে বিবৃত করা সম্পূর্ণ ভুল হবে। বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে এবং সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যে সমস্যার বিচার করতে গিয়ে এই দুটি পার্থক্যরেখা টানতে আমাদের কিছুতেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এই দুটি পার্থক্যকে আমরা যদি মনে রাখি, তাহলে আমরা ভালভাবে কাজ করতে পারব, অন্যথায়, আমরা সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে গোলমাল করে ফেলব। স্বভাবতই যদি এই পার্থক্যরেখা ভালভাবে টানতে হয়, তবে মনোযোগের সঙ্গে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। প্রতিটি ব্যক্তি ও বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোভাব হওয়া উচিত বিশ্লেষণের ও গবেষণার।

রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্যরা ও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেই কেবল পার্টি কমিটিগুলো তাদের কাজ ভালভাবে করতে পারে। পার্টি কংগ্রেসকে ভালভাবে চালানো ছাড়াও, নেতৃত্বদানের কাজকে ভালভাবে করা সকল স্তরের পার্টি কমিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মপদ্ধতির পর্যালোচনা করা ও তাকে নিখুঁত করার জন্য আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে, যাতে পার্টি কমিটির নেতৃত্বের মান আরো উন্নত করা যায়।।