রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের কবিতাঃ রূপনারানের কূলে

আজ বাংলা সাহিত্য শীর্ষস্থানীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ, মৃত্যু ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ। রূপনারানের কূলে কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। এই কবিতায় কবি জেগে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উঠেছেন, আর ভাবের জগত থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তিনি সত্যের জগত অর্থাৎ বস্তুজগতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। এই কবিতার প্রতিটি লাইন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে কথাগুলো বিশ্বাস করি, কবি তা লিখতে পারেন অনেক সহজভাবে। তিনি স্বীকার করেছেন দ্বন্দ্ববাদ, অর্থাৎ এ জীবন দ্বন্দ্বমুখর। কঠিনেরে তিনি ভালবেসেছেন, সে কখনো করেনা বঞ্চনা। রবি কবির স্বীকারোক্তি যে ভাববাদ এক বঞ্চনা, এক প্রতারণা। ভাববাদ যে আধ্যাত্মবাদের কথা বলে তার কোন অস্তিত্ব নেই, সেটা এক মিথ্যা। তিনি উপলব্ধি করেছেন রক্তের অক্ষরেই আপনার রূপ দেখা যায়, নিজেকে চেনা যায় আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়। তারপর তিনি এটাও বুঝেছেন যে এ জগত দুঃখের তপস্যা, আর জীবনের একটা উদ্দেশ্য আছে, তা হল সত্যের মূল্য লাভ করা, আর মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের সকল দেনা শোধ করে দেয়া। এই অসাধারণ কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি বাস্তবতাবাদী কবিতা। বাস্তবতাবাদ জীবনের প্রতিফলন ঘটায় আর জীবনকেই তা সেবা করে।

রূপ-নারানের কুলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালােবাসিলাম,
সে কখনাে করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দিতে।।