মাও সেতুঙ। জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিন, কর্মপদ্ধতির প্রতি মনোযোগ দিন।।

 

মাও সেতুঙ। জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিন। পড়ার জন্য পিডিএফ

মাও সেতুঙ। জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিন। প্রিন্টের জন্য পিডিএফ

এই রচনাটির পূর্ণ বিবরণ ১৯৬৪ সালের জুন মাসে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে প্রকাশিত “মাও সেতুঙের নির্বাচিত রচনাবলী”তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে চীনের পিকিং গণ প্রকাশন কর্তৃক চীনা ভাষায় প্রকাশিত “মাও সেতুঙ রচনাবলীর নির্বাচিত পাঠ”-এর দ্বিতীয় সংস্করণে এই রচনাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টীকা গ্রন্থকার কর্তৃক সন্নিবেশিত হয়েছ। উক্ত সংস্করণ থেকে বিদেশী

কমরেড মাও সেতুঙ

কমরেড মাও সেতুঙ

ভাষা প্রকাশনা পিকিং রচনাটির বাংলায় ভাষান্তর করে প্রকাশ করে। উক্ত ভাষান্তরে সামান্য কিছু ভাষাগত সম্পাদনা করে বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীর কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৩ প্রকাশ করে। সেইসাথে মার্কসিস্ট ইন্টারনেট আর্কাইভে সংরক্ষিত ইংরেজী কপির সাথে বাংলা এই অনুবাদ মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সর্বহারা পথ ওয়েবসাইট থেকে এই সংস্করণটির অধ্যয়ন ও প্রিন্ট নেয়া যাবে।।   

এ রচনায় কমরেড মাও সেতুঙের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি

 “বিপ্লবী যুদ্ধ হচ্ছে জনসাধারণের যুদ্ধ, কেবলমাত্র জনসাধারণকে সমাবেশিত করে এবং তাদের উপর নির্ভর করেই এ যুদ্ধ চালানো যেতে পারে”

 “সত্যিকারের লৌহ প্রাচীর কী? তা হচ্ছে জনসাধারণ, কোটি কোটি জনসাধারণ, যারা বিপ্লবকে অকৃত্রিমভাবে ও আন্তরিকভাবে সমর্থন করে। এটাই হছে প্রকৃত লৌহ প্রাচীর, একে ধ্বংস করা দুনিয়ার কোন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়”

 বাংলা ভাষান্তরের ভূমিকা

“জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিন, কর্মপদ্ধতির প্রতি মনোযোগ দিনরচনায় কমরেড মাও বিপ্লবী যুদ্ধকে সংগঠিত করার সময় জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি মনোযোগ দিতে বলেছেন। তিনি বলেনঃ “বিপ্লবী যুদ্ধ হচ্ছে জনসাধারণের যুদ্ধ, কেবলমাত্র জনসাধারণকে সমাবেশিত করে এবং তাদের উপর নির্ভর করেই এ যুদ্ধ চালানো যেতে পারে”

বিপ্লবী যুদ্ধকে সংগঠিত করতে গেলে কৃষকদের মধ্যে জমি বন্টন করতে হবে, শ্রমিকদের শ্রমের প্রকৃত মূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, শ্রম উৎসাহ বাড়াতে হবে, সমবায় করতে হবে, জনগণের আশু সমস্যা যথা ভাত, কাপড়, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিবাহ, সন্তান জন্মদান এগুলির সমাধান করতে হবে। বিপ্লবী যুদ্ধকে ঠেকাতে চিয়াং কাইশেক নেতৃত্বাধীন গণজাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়াশীলরা লাল এলাকার আশে পাশে লৌহ নির্মিত প্রাচীরসহ অসংখ্য দূর্গ নির্মাণ করছিল। জাপানীরাও সাম্যবাদীদের বিরুদ্ধে একই কৌশল নেয়। এখানেই মাওয়ের বিখ্যাত উক্তিঃ  “সত্যিকারের লৌহ প্রাচীর কী? তা হচ্ছে জনসাধারণ, কোটি কোটি জনসাধারণ, যারা বিপ্লবকে অকৃত্রিমভাবে ও আন্তরিকভাবে সমর্থন করে। এটাই হছে প্রকৃত লৌহ প্রাচীর, একে ধ্বংস করা দুনিয়ার কোন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়।” অর্থাৎ আমরা যদি জনসাধারণের যত্ন নেই তাহলে বিপ্লবী যুদ্ধকে জনগণ নিজের জীবনের সমমূল্যে গ্রহণ করেন। এটা একটা সত্যিকারের লৌহ প্রাচীরে পরিণত হয়। এভাবেই যুগে যুগে গণজোয়ারে প্রতিক্রিয়াশীলদের লৌহ প্রাচীরের পতন ঘটেছে। চীনেও তাই ঘটেঃ সত্যিকারের লৌ প্রাচীর জনগণের গৌরবময় উত্থানের দ্বারা শত্রুর লৌহপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যায়।।

কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ

বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী

৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৩

জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিন, কর্মপদ্ধতির প্রতি মনোযোগ দিন

(১৯৩৪ সালের জানুয়ারী মাসে চিয়াংসী প্রদেশের রুইচিনে অনুষ্ঠিত শ্রমিক ও কৃষক প্রতিনিধিদের দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে কমরেড মাও সেতুঙের প্রদত্ত সমাপ্তি ভাষণের একটি অংশ)

২৭শে জানুয়ারী, ১৯৩৪

আলোচনা চলাকালে কমরেডরা যে দুটি প্রশ্নের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আমি মনে করি সে সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত।

প্রথমটি হল জনকল্যাণ।

বর্তমানে আমাদের প্রধান কাজ হল বিপ্লবী যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য ব্যাপক জনসাধারণকে সমাবেশিত করা, এই বিপ্লবী যুদ্ধের দ্বারা সাম্রাজ্যবাদ ও গণ জাতীয় পার্টি (কুওমিনতাঙ)র পতন ঘটানো, সারা দেশে বিপ্লবকে ছড়িয়ে দেয়া এবং সাম্রাজ্যবাদকে চীন থেকে বিতাড়িত করা। যিনি এই প্রধান কাজের ওপরে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেননা, তিনি ভাল বিপ্লবী কেডার নন। আমাদের কমরেডরা যদি এই কাজকে প্রকৃতই হৃদয়ঙ্গম করে থাকেন এবং বুঝে থাকেন যে, যে কোন মূল্যে বিপ্লবকে দেশময় ছড়িয়ে দিতে হবে, তাহলে ব্যাপক জনসাধারণের আশু স্বার্থ, তাদের কল্যাণের প্রশ্নটি তাঁদের  কোন মতেই অবহেলা করা কিংবা তার উপর কম গুরুত্ব দেয়া উচিত হবেনা। কারণ বিপ্লবী যুদ্ধ হচ্ছে জনসাধারণের যুদ্ধ, কেবলমাত্র জনসাধারণকে সমাবেশিত করে এবং তাদের উপর নির্ভর করেই এ যুদ্ধ চালানো যেতে পারে।

যদি আমরা যুদ্ধ চালাবার জন্য জনগণকে সমাবেশিত করা ছাড়া আর কিছুই না করি তাহলে আমরা কি শত্রুকে পরাজিত করতে সক্ষম হব? অবশ্যই না। যদি আমরা বিজয় অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই আরো অনেক কাজ করতে হবে। কৃষকদের ভূমি সংগ্রামে পরিচালিত করতে হবে এবং জমি তাদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে; কৃষকদের শ্রম-উৎসাহ বাড়াতে হবে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে; শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে; সমবায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে; বাইরের অঞ্চলগুলির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হবে, এবং জনসাধারণ যে সব সমস্যার সম্মুখীন সেগুলির—যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানি, চাল, রান্নার তেল ও লবণ, রোগ ও স্বাস্থ্যরক্ষা এবং বিবাহ—সমাধান করতে হবে। সংক্ষেপে, জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বাস্তব সমস্যার প্রতিই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। যদি আমরা এসব সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিই, এগুলোর সমাধান করি এবং জনসাধারণের চাহিদা মেটাই, তাহলে আমরা প্রকৃতই জনসাধারণের কল্যাণ বিধানের সংগঠক হয়ে উঠব এবং জনগণ সত্যিই আমাদের পাশে সমবেত হবে আর আমাদেরকে তাদের আন্তরিক সমর্থন দেবে। কমরেডগণ! আমরা কি সেই সময় তাদের বিপ্লবী যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হব? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই সক্ষম হব।

আমাদের কিছু কেডারের মধ্যে এই ধরণের ব্যাপার দেখা গিয়েছিল যে, তারা শুধু লাল ফৌজ সম্প্রসারণ, পরিবহনবাহিনী বৃদ্ধি, জমির খাজনা আদায় এবং বন্ড বিক্রয় সম্বন্ধেই কথা বলে, অন্য বিষয় সম্পর্কে তারা আলোচনাও করেনা বা সেদিকে মনোযোগ দেয়না, এমনকি সেগুলিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, এক সময় থিংচৌর পৌর সরকার শুধ লাল ফৌজের সম্প্রসারণ এবং পরিবহনবাহিনীর সংগঠনের উপরই মনোযোগ দিয়েছিল আর জনগণের কল্যাণের প্রতি সামান্যতম মনোযোগও দেয়নি। থিংচৌ শহরের জনসাধারণ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল সেগুলি ছিল এই যে, তাদের জ্বালানী কাঠ ছিলনা; বাজারে লবন বিক্রি হতনা কারণ পুঁজিপতিরা তা মজুদ করেছিল; কারো কারো মাথা গুঁজবার বাড়ীঘর ছিলনা এবং চাল ছিল দুষ্প্রাপ্য ও উচ্চদামী। থিংচৌর অধিবাসী জনসাধারণের কাছে এগুলো ছিল বাস্তব সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধানে সাহায্যের জন্য তারা সাগ্রহে আমাদের দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু থিংচৌর পৌর সরকার এসব বিষয়ের কোনটি নিয়েই আলোচনা করেনি। সে কারণেই থিংচৌ শহরে শ্রমিক ও কৃষকদের প্রতিনিধি পরিষদ নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম কয়েকটি পরিষদ সভায় জনগণের কল্যাণকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র লাল ফৌজের সম্প্রসারণ ও পরিবহনবাহিনীর সংগঠনের কথাই আলোচিত হওয়ার পর থেকে শতাধিক প্রতিনিধি সভায় যোগদানে অনিচ্ছুক ছিল। তার ফলে পরিষদ আর সভা করতে সক্ষম হয়নি। ফল হয়েছিল এই যে লাল ফৌজের সম্প্রসারণ ও পরিবহনবাহিনীর সংগঠন সম্পর্কে অতি অল্প সাফল্যই অর্জিত হয়েছিল। এটি ছিল এক রকমের অবস্থা।

কমরেডগণ! দুটি আদর্শ থানা সম্পর্কে যে পুস্তিকা আমাদের দেয়া হয়েছে আপনারা সম্ভবত তা পড়েছেন। ওখানকার অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। চিয়াংসীর ছাংকাং থানায় এবং ফুচিয়ানের ছাইসী থানায় [টীকাঃ ছাংকাং থানা চিয়াংসী প্রদেশের সিংকুও জেলায় অবস্থিত আর ছাইসী থানা ফুচিয়ান প্রদেশের সাংহাং জেলায় অবস্থিত] কি বিপুল সংখ্যক লোকই না লাল ফৌজে যোগদান করেছে। ছাংকাংয়ে শতকরা ৮০ জন যুবক-যুবতীই লাল ফৌজে যোগদান করেছে এবং ছাইসীতে এই সংখ্যা হল শতকরা ৮৮ জন। বন্ডের বিক্রিও বেশ প্রচুর, ১৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছাংকাং থানায় ৪৫০০ ইউয়ান মূল্যের বন্ড বিক্রি হয়েছে। আন্যান্য কাজেও খুব বেশি সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর কারণ কী? কয়েকটি উদাহারণই বিষয়টা পরিষ্কার করবে। ছাংকাং থানার একজন গরীব কৃষকের বাড়িতে যখন একটি অগ্নিকাণ্ডের ফলে দেড়টি কামড়া পুড়ে গিয়েছিল তখন থানা সরকার তাকে সাহায্য করার জন্য জনসাধারণের নিকট অর্থদানের আবেদন করেছিল। অন্য একটি দৃষ্টান্ত। তিনজন লোক অনাহারে ছিল, সুতরাং থানা সরকার এবং পারস্পরিক সাহায্য সমিতি তাদের সাথে সাথে চাল দিয়েছিল। গত গ্রীষ্মে খাদ্য ঘাটতির সময় থানা সরকার জনসাধারণের দুইশত লী’রও [এক শত কিলোমিটার] বেশি দূরবর্তী কোংলুয়ে জেলা থেকে চাল এনেছিল [কোংলুয়ে জেলা তৎকালীন চিয়াংসী লাল এলাকায় অবস্থিত ছিল। তার কেন্দ্র ছিল চী আন জেলার দক্ষিণ পূর্বের তোংকু শহর। লাল ফৌজের তৃতীয় আর্মিকোরের কমাণ্ডার কুরেড উয়াং কোংলুয়ে ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে এখানে শহীদ হন, তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নামানুসারেই এই জেলার নামকরণ করা হয়েছিল]। ছাইসী থানায়ও এই ধরণের চমৎকার কাজ করা হয়েছে। এই ধরণের থানা সরকার বাস্তবিকই আদর্শস্থানীয়। আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ববিশিষ্ট থিংচৌ পৌরসভার থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা। ছাংকাং ও ছাইসী থানা থেকে আমাদের শেখা উচিত এবং থিংচৌ শহরের নেতৃত্বদের মত আমলাতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করা উচিত।

আমি আন্তরিকভাবে এই কংগ্রেসে প্রস্তাব করছি যে, ভূমি ও শ্রম সমস্যার থেকে শুরু করে জ্বালানী, চাল, রান্নার তেল ও লবণের সমস্যা পর্যন্ত জনগণের হিতের প্রতি আমাদের গভীর মনোযোগ দিতে হবে। মেয়েরা লাঙ্গল ও মই দেওয়া শিক্ষা করতে চায়। তাদের শেখাবার জন্য আমরা কাকে বলতে পারি? শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে চায়। আমরা কি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি? ওখানকার কাঠের পুলটি খুবই সরু, মানুষ পড়ে যেতে পারে। আমাদের কি তা মেরামত করা উচিত নয়? অনেক মানুষ ফোঁড়া ও অন্যান্য রোগে ভোগে। এই সম্বন্ধে আমরা কী করতে যাচ্ছি? জনগণের জীবনের সাথে সম্পর্কিত এ ধরণের সমস্ত সমস্যাকেই আমাদের আলোচ্য বিষয়ে স্থান দিতে হবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে ও সে সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করতে হবে আর তার ফলাফল খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের ব্যাপক জনসাধারণকে বুঝতে সাহায্য করতে হবে যে, আমরা তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করি এবং তাদের জীবনের সাথে আমাদের জীবন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই সমস্ত বিষয় থেকে শুরু করে আরো অগ্রসর হয়ে আমাদের উত্থাপিত উচ্চতর কর্তব্যকে, বিপ্লবী যুদ্ধের কর্তব্যকে বুঝতে যেন আমরা তাদেরকে সাহায্য করি যাতে তারা বিপ্লবকে সমর্থন করে সারা দেশে তা ছড়িয়ে দেয়, আমাদের রাজনৈতিক আবেদনে তারা সাড়া দেয় এবং বিপ্লবে জয়লাভের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। ছাংকাং থানার জনগণ বলেঃ “সাম্যবাদী পার্টি বাস্তবিকই ভাল। আমাদের পক্ষে সে সব কিছুরই চিন্তা করছে”। ছাংকাং থানার কমরেডগণ আমাদের সকলের পক্ষেই আদর্শস্থানীয়। কী চমৎকার লোকই না তারা! তারা ব্যাপক জনগণের অকৃত্রিম ভালবাসা অর্জন করেছে এবং যুদ্ধ সংগঠিত করণের সমাবেশের জন্য তাদের আহবান জনসাধারণের সমর্থন লাভ করেছে। আমরা কি জনগণের সমর্থন লাভ করতে চাই? আমরা কি চাই যে, জনসাধারণ তাদের শক্তি যুদ্ধ ফ্রন্টে নিয়োজিত করুক? যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের অবশ্যই জনসাধারণের সঙ্গে থাকতে হবে, তাদের উদ্দীপনা ও উদোগকে জাগরিত করতে হবে, তাদের কল্যাণের প্রতি যত্ন নিতে হবে, তাদের স্বার্থে আন্তরিকভাবে ও ঐকান্তিকভাবে কাজ করতে হবে এবং তাদের উৎপাদন ও দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি সমস্যা যথা লবণ, চাউল, বাসগৃহ, কাপড় ও প্রসবকালীন সমস্যা ইত্যাদির    সমাধান করতে হবে। যদি তা করি, তাহলে জনসাধারণ নিশ্চয়ই আমাদেরকে সমর্থন করবে এবং বিপ্লবকে তাদের নিজেদের জীবন আর তাদের নিজেদের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় পতাকা হিসেবে গণ্য করবে। লাল এলাকায় গণ জাতীয় পার্টি (গজাপা)র আক্রমণ ঘটলে ব্যাপক জনসাধারণ গজাপার বিরুদ্ধে আমরণ যুদ্ধ করবে। এতে কোন সন্দেহই থাকতে পারেনা। কারণ এটা কি সুস্পষ্ট ঘটনা নয় যে, আমরা শত্রুর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ “ঘেরাও দমন” অভিযানকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছি?

গজাপা এখন দুর্গভিত্তিক যুদ্ধনীতি [টীকাঃ ১৯৩৩ সালের জুলাই মাসে চিয়াংসী প্রদেশের লুশান পাহাড়ে সামরিক সম্মেলনে চিয়াং কাইশেক পঞ্চম “ঘেরাও দমন” অভিযানের নতুন সামরিক কৌশল হিসেবে লাল এলাকাসমূহের চারপাশে দুর্গ নির্মান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এক হিসাব অনুসারে ১৯৩৪ সালের জানুয়ারী মাসে শেষের দিকে চিয়াংসী প্রদেশে ২৯০০টি দুর্গ তৈরি করা হয়। পরবর্তীকালে অষ্টম রুট বাহিনী ও নতুন চতুর্থ বাহিনীর বিরুদ্ধে জাপানী আক্রমণকারীরাও চিয়াং কাইশেকের এই নীতি গ্রহণ করেছিল। অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণভাবে প্রমান করেছে যে, কমরেড মাও সেতুঙের গণযুদ্ধের রণনীতি অনুসরণ করে এই ধরণের প্রতিবিপ্লবী দুর্গভিত্তিক যুদ্ধনীতিকে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ও পরাজিত করা সম্ভব] অনুসরণ করছে, পাগলের মত তারা “কচ্ছপের খোলা” নির্মাণ করে যাচ্ছে, যেন সেগুলোই তাদের লৌহ প্রাচীর। কমরেডগণ! সেগুলো কি সত্যিকারের লৌহ প্রাচীর? মোটেই না। হাজার হাজার বছরের সামন্ত সম্রাটদের প্রাসাদগুলোর কথা ভেবে  দেখুন, প্রাচীর ও পরিখা বেষ্টিত সেগুলি কি শক্তিশালী ছিলনা? তবু, গণজাগরণের সাথে সাথে তারা একের পর এক টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে। রাশিয়ার জার ছিল পৃথিবীর জঘণ্যতম হিংস্র শাসকদের অন্যতম, তবু যখন সর্বহারাশ্রেণী ও কৃষকশ্রেণী বিপ্লব ঘটালো তখন কি তার কিছু অবশিষ্ট ছিল? না, কিছুই না। আর তার লৌহ প্রাচীর? সেগুলিও সব টুকরো টুকরো হয়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। কমরেডগণ! সত্যিকারের লৌহ প্রাচীর কী? তা হচ্ছে জনসাধারণ, কোটি কোটি জনসাধারণ, যারা বিপ্লবকে অকৃত্রিমভাবে ও আন্তরিকভাবে সমর্থন করে। এটাই হছে প্রকৃত লৌহ প্রাচীর, একে ধ্বংস করা দুনিয়ার কোন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রতিবিপ্লবী শক্তি আমাদের ধ্বংস করতে পারেনা, পক্ষান্তরে আমরাই বরং তাকে ধ্বংস করব। বিপ্লবী সরকারের চারপাশে কোটি কোটি জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং আমাদের বিপ্লবী যুদ্ধকে সম্প্রসারিত করে আমরা সমস্ত প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেব আর সমগ্র চীন অধিকার করব।

দ্বিতীয় প্রশ্ন আমাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে।

আমরা যেমন বিপ্লবী যুদ্ধের নেতা ও সংগঠক তেমনি জনসাধারণের জীবনযাত্রারও নেতা ও সংগঠক। বিপ্লবী যুদ্ধ সংগঠিত করা এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার উন্নয়ন করা আমাদের দুটি প্রধান কর্তব্য। এ বিষয়ে আমরা কর্মপদ্ধতির গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন। আমাদের শুধু যে কর্তব্য নির্ধারণ করলেই চলবে তা নয়, বরং কর্তব্য সম্পন্ন করার পদ্ধতি সম্পর্কিত সমস্যারও সমাধান করতে হবে। যদি নদী পার হওয়া আমাদের কর্তব্য হয়, তাহলে সেতু বা নৌকা ছাড়া তা পার হতে আমরা পারিনা। সেতু বা নৌকা সমস্যার সমাধান না হলে নদী পার হওয়ার কথাটা বলা বাতুলতা। পদ্ধতি সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান না হলে কর্তব্য সম্পন্ন করার কথা বলা অর্থহীন। যদি আমরা লাল ফৌজের সম্প্রসারণের কাজে নেতৃত্ব দেয়ার দিকে মনোযোগ না দিই আর আমাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ যত্নবান না হই, তাহলে হাজার বার “লাল ফৌজ সম্প্রসারিত কর” এই কথা আবৃত্তি করেও আমরা সফল হতে পারবনা। কিংবা অন্য কোন ক্ষেত্রে যথা জমি বন্টন সম্পর্কে যাচাইয়ে [টীকাঃ লাল এলাকাসমূহে জমি বন্টন করার পর, ভুমি সংস্কারকে গভীরতর করার জন্য ও জনসাধারণকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যে কাজ করা হয়েছিল তাকেই বলা হয় জমি বন্টনের কাজের যাচাই। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল লুকিয়ে থাকা জমিদার ও ধনী কৃষকদের খুঁজে বের করা এবং জমির সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-সামন্ততান্ত্রিক মালিকানা সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ করা], অর্থনীতি গঠনে, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় এবং নতুন এলাকা ও দূরবর্তী জেলাসমূহে আমাদের সকল কাজে যদি আমরা শুধু কর্তব্য নির্ধারণ করি, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী করার পদ্ধতির প্রতি মনোযোগ না দিই, আমলাতান্ত্রিক কর্মপদ্ধতিকে বাঁধা না দিই, এবং কার্যকরী ও বাস্তব কর্মপদ্ধতি গ্রহণ না করি, হুকুমবাদী কর্মপদ্ধতি পরিত্যাগ না করি এবং ধৈর্যের সাথে বুঝিয়ে বলার কর্মপদ্ধতি গ্রহণ না করি, তাহলে কোন কর্তব্য সম্পন্ন করাই সম্ভব নয়।

সিংকুওয়ের কমরেডরা প্রথম শ্রেণীর কার্য সম্পাদন করেছেন এবং আদর্শ কর্মী হিসেবে আমাদের প্রশংসা পাবার যোগ্য। অনুরূপভাবে উত্তর পূর্ব চিয়াংসীর কমরেডরাও ভাল কাজ করেছেন এবং তাঁরাও আদর্শ কর্মী। জনসাধারণের কল্যাণের সমস্যাকে বিপ্লবী সংগ্রামের সাথে যুক্ত করে এই উভয় স্থানের কমরেডগণ বিপ্লবী কর্মপদ্ধতির সমস্যাকে এবং বিপ্লবী কার্য সম্পন্ন করার সমস্যাকে যুগপৎ সমাধান করেছেন। তাঁরা মন দিয়ে কাজ করছেন, যথার্থ সতর্কতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করছেন, বিপ্লবী দায়িত্বকে আন্তরিকতার সঙ্গে বহন করছেন এবং বিপ্লবী যুদ্ধ ও জনসাধারণের কল্যাণ এই উভয়েরই তাঁরা উত্তম সংগঠক ও পরিচালক। অন্যান্য অঞ্চলেও আমাদের কমরেডগণ তাঁদের কাজে অগ্রগতি সাধন করেছেন এবং তাঁরাও আমাদের প্রশংসার দাবিদার—যেমন ফুচিয়ান প্রদেশের শাংহাং, ছাংথিং ও ইয়োংতিং প্রভৃতি জেলার কোন কোন জায়গায়, দক্ষিণ চিয়াংসীর সীচিয়াং প্রভৃতি স্থানে, হুনান-চিয়াংসী সীমান্ত অঞ্চলের ছালিং, ইয়োংসিন ও চীয়ান প্রভৃতি জেলার কোন কোন জায়গায়, হুনান-হুপেই-চিয়াংসী সীমান্ত অঞ্চলের ইয়াংসিন জেলার কোন কোন স্থানে এবং চিয়াংসীর অন্য আরো জেলার মহকুমা ও থানাগুলিতে এবং আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন রুইচিন জেলায়।

আমাদের নেতৃত্বাধীন সমস্ত স্থানেই নিঃসন্দেহে অনেক সক্রিয় ক্যাডার ও চমৎকার কমরেড আছেন যারা জনসাধারণের ভেতর থেকে এসেছেন। যেস্থানে কাজ দুর্বল সে সব স্থানে সাহায্য করা এবং যে কমরেডরা এখনো  ভালভাবে কাজ করতে সক্ষম নন তাঁদেরকে সাহায্য করা হচ্ছে এই সব কমরেডদের দায়িত্ব। আমরা এক বিরাট বিপ্লবী যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। শত্রুর ব্যাপক আকারের “ঘেরাও দমন” অভিযানকে আমাদের ভেঙ্গে দিতে হবে আর দেশের সর্বত্র বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে। সকল বিপ্লবী কর্মীরই বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। এই কংগ্রেসের পর আমাদের কাজের উন্নতির জন্য আমাদের অবশ্যই কার্যকরী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অগ্রসর এলাকাকে আরো অগ্রসর করতে হবে, পশ্চাদপদ এলাকাকে অগ্রসর এলাকার নাগাল ধরতে হবে। আমাদের ছাংকাং এর মত হাজার হাজার থানা আর সিংকুওয়ের মত ডজন ডজন জেলার সৃষ্টি করতে হবে। সেগুলোই হবে আমাদের শক্তিশালী ভিত্তি। এগুলি থেকে আমরা শত্রুর “ঘেরাও দমন” অভিযানকে চূর্ণ করার জন্য এগিয়ে যাব আর সমগ্র দেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও গজাপার শাসনকে উচ্ছেদ করব।।