সিরাজ সিকদার রচনাঃ একটি সাংগঠনিক একক কর্তৃক সভা পরিচালনার উপায়

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭০

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক কমরেড সিরাজ সিকদারের নির্বাচিত সাংগঠনিক রচনাবলীর সংকলনে এর প্রকাশ ১৯৭৪

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২ ডিসেম্বর ২০১২


 

পিডিএফ

 

সভাপতি মাও নির্দেশ দিয়েছেন সভা পরিচালনার কৌশল উত্তমরূপে আয়ত্ত্ব করতে। নিম্নে সভা পরিচালনার উপায় ধারাবাহিকভাবে প্রদত্ত হলোঃ

১। সাংগঠনিক এককের সম্পাদক বা নেতার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বা নেতা বা উচ্চস্তরের প্রতিনিধি সভা আহ্বান করতে পারেন।

২। সাংগঠনিক এককের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণ দাবী করলে সম্পাদক বা নেতা সভা আহ্বান করতে বাধ্য থাকবেন।

৩। সভার পূর্বে সম্পাদক বা নেতা লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেবেন। লিখিত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সম্ভব না হলে মৌখিকভাবে জানাতে হবে। বিজ্ঞতিতে থাকবেঃ

(ক) সাংগঠনিক এককের নাম (খ) তারিখ, সময় (গ) সভার ক্রমিক নং (ঘ) সভার স্থান (ঙ) আলোচ্যসূচী (চ) সভায় আমন্ত্রিতদের নাম (ছ) সভা আহ্বানকারীর পদসহ স্বাক্ষর।

৪। আলোচ্যসূচীতে পূর্বেকার সভায় গৃহীত প্রস্তাবাবলীর পুনরোনুমোদনের বিষয় থাকবে।

৫। সভার খসড়া প্রস্তাব, রিপোর্ট, প্রস্তাব ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সম্পাদকসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিগণ সভার পূর্বেই পেশ করার জন্য তৈরী করবেন।

৬। সাংগঠনিক এককের সহ-সম্পাদক বা সহকারী নেতা অথবা একজন সদস্য সভায় আমন্ত্রিত উপস্থিতদের স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। সভায় আমন্ত্রিত নয় এইরূপ অপ্রয়োজনীয় কেউ থাকলে তাদেরকে চলে যেতে বলতে হবে। তাদের অপসারণ সম্ভব না হলে সভা স্থগিত রাখতে হবে।

৭। সভার কোরাম হলে (সাংগঠনিক এককের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত হলে) সহ-সম্পাদক সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য সম্পাদককে অনুরোধ করবেন। সহ-সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে একজন সদস্য এ দায়িত্ব পালন করবেন।

৮। সম্পাদক বা নেতা সভাপতির আসন গ্রহণ করবেন এবং সভার উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন।

৯। সভাপতি সভার আলোচ্যসূচী পাঠ করবেন এবং সভায় অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা এ আলোচ্যসূচী অনুমোদন করাবেন।

১০। সহ-সম্পাদক বা একজন সদস্য সভার ধারাবাহিক বিবরণী লিখে রাখবেন।

১১। সভায় কোন পূর্ণাঙ্গ সদস্য অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প সদস্য পূর্ণাঙ্গ সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন।

১২। এক বৈঠকে সভার কাজ শেষ না হলে সভা কয়েকটি বৈঠকে বিভক্ত করতে হবে।

১৩। সভাপতি আলোচ্যসূচীর ভিত্তিতে আলোচনা, রিপোর্ট, প্রস্তাব ইত্যাদি আহ্বান করবেন।

১৪। সভায় সভাপতির অনুমতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে বা সভাকক্ষ ত্যাগ করতে হবে।

১৫। সভাপতি সভাকক্ষের বাইরে গেলে অন্য কাউকে সভার কার্য পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যাবেন।

১৬। সভাপতি সভায় গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করবেন। সভাপতি সভায় সকল অংশগ্রহণকারীদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবেন। তিনি সভায় অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করবেন।

১৭। কোন সদস্যের কোন প্রস্তাব, সমস্যা, সমালোচনা বা আত্মসমালোচনা সভায় করতে হবে। সভার বাইরে একজনের সমালোচনা অপরের কাছে করা উচিত নয়।

১৮। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সভায় স্থির করতে হবে। সদস্যদের মতপার্থক্য সভায় স্থির করতে হবে।

১৯। সংখ্যাগুরুকে সংখ্যালঘু মেনে নেবে। যখন সংখ্যালঘুর মতামত বাতিল করা হয় তখন সংখ্যাগুরুর গৃহীত সিদ্ধান্তকে তাদের অবশ্যই সমর্থন করতে হবে। প্রয়োজন হলে পরবর্তী সভায় তা আলোচনার জন্য পেশ করা যেতে পারে, তাছাড়া কার্যকলাপে কোনরকম আপত্তি প্রকাশ করা উচিত নয়।

২০। সভায় অংশগ্রহণকারী সকলকেই মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্ত করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। বিতর্কের প্রশ্নে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। সেখানে কোন প্রকার আপোষ বা যেন-তেন করা চলবে না। সুস্পষ্ট সমাধানে একবারে যদি পৌঁছতে পারা না যায় তাহলে আবার তা আলোচনা করতে হবে (অবশ্যই কাজ ব্যহত না করে)।

২১। সভায় কথাবার্তা, বক্তৃতা, প্রবন্ধ, প্রস্তাব সবই সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ হবে।

২২। কোন কর্মী অবৈধ সভায় বা অনির্ধারিত আলোচনা সভায় গৃহীত কোন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবে না।

২৩। সভায় প্রস্তাবাবলীর উপর ভোট গ্রহণ করতে হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য কর্তৃক সমর্থিত প্রস্তাব গৃহীত বলে বিবেচিত হবে।

২৪। কোন প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে সমান ভোট পড়লে সভাপতি যে পক্ষে ভোট প্রদান করবেন ঐ পক্ষের প্রস্তাব গৃহীত হবে।

২৫। সভাপতি সভা শেষের পূর্বে ধারাবাহিক বিবরণীর শেষে স্বাক্ষর দেবেন।

২৬। তিনি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করবেন।

সভার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে

১। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত কোন প্রকার অনির্ধারিত আলোচনায় কেউ বাতিল করবেন না। কোন বিশেষ অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আবশ্যক হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার সভায় উহা বাতিল হবে। সম্পাদক বা নেতা উহা কার্যকরী করা স্থগিত রাখতে পারেন এবং পরবর্তী সভায় তা অনুমোদনের জন্য পেশ করবেন। উচ্চতর স্তর নিম্নতর স্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিতে পারে।

২। যে সকল কর্মীদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করা হবে, তারা তা পুংখানুপুংখভাবে আলোচনা করবেন তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি বের করার জন্য। কিন্তু তারা কখনো সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেবেন না।

৩। সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে কোন প্রকার নিমরাজী মনোভাব থাকলে চলবে না। সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ইহা উগ্রগণতন্ত্রের প্রকাশ। ■