আধা উপনিবেশবাদ ও আধা সামন্তবাদের মধ্যে সম্পর্ক

যৌথ দলিল

১ আগষ্ট ২০১২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ 

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী ফ্রান্স

আধা উপনিবেশবাদ ও আধা সামন্তবাদের মধ্যে সম্পর্ক

 

১.আমলাতন্ত্রিক পুঁজিবাদ, নিপীড়িত দেশসমূহ ও সাম্রাজ্যবাদ

 

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ অনুসারে বিশ্বের দেশগুলো একটি দ্বন্দ্বকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে দুইভাগে বিভক্ত।

একদিকে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ অর্থাৎ পুঁজিবাদী দেশসমূহ যেখানে লগ্নি পুঁজি অর্থনীতিতে একাধিপত্য কায়েম করে অথবা করেছে এবং বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে অথবা করেছে।

অন্যদিকে রয়েছে নিপীড়িত দেশগুলো যারা সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ কর্তৃক আধা উপনিবেশিকীকরণের এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে এবং যেখানে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ প্রত্য ও পরো বহুরূপী মাধ্যমে (সামরিক হস্তপে, দুনীতি, মতাদর্শিক প্রভাব প্রভৃতি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।

নিপীড়িত দেশসমূহ সাম্রাজ্যবাদের দিকে অগ্রসরমাণ পুঁজিবাদকে চেনেনা, বরং চেনে একটি নির্দিষ্ট ধরণের পুঁজিবাদঃ আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদকে অর্থাৎ “সেই পুঁজিবাদ যা নিপীড়িত দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন মাত্রার সামšতবাদের ভিত্তিতে অথবা এমনকি প্রাক-সামšতবাদী ¯তরসমূহের ভিত্তিতে গড়ে তুলছে।” (কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ-এর কর্মসুচি ও ঘোষণা)

আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের ওপর নির্ভরশীল; সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতার কারণে প্রায়ই সামরিক ক্যু ঘটে আর অন্য সাম্রাজ্যবাদের প্রতি অনুগত এক নয়া আমলাতান্ত্রিক শ্রেণী গঠিত হয় ।

এখানে কোন জাতীয় রাষ্ট্র নেই। জাতীয় রাষ্ট্র অস্তিত্বমান হতে পারেনা একটি শক্তিশালি বুর্জোয়া সমেত পুঁজিবাদ ব্যতিত। একটি দেশ জাতীয় রাষ্ট্র হতে পারে এই থিসিস হচ্ছে সংশোধনবাদ যাহচ্ছে আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ার এক উপদলের বিরুদ্ধে আরেকটির প্রতি ছদ্মবেশি সমর্থন।

কোন কোন েেত্র একটি আধা উপনিবেশিক আধা সামন্তবাদী দেশের শাসক শ্রেণী আধিপত্যবাদী হতে চেষ্টা করে, উদাহারণস্বরূপ ভারত, তুরস্ক অথবা অতীতে (পশ্চিম) পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। কখনো কখনো সে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় যা সামরিক হস্তপে ঘটায়, যেমন সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের বিরুদ্ধে। তখনো ঐসব দেশ “স্বাধীন” অথবা “জাতীয়” নয়।

সেকারনে, আজকের মৌলিক দ্বন্দ্বসমূহ নিম্নরূপঃ

১)   সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি (এখন কেবলমাত্র মার্কিন) ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ বনাম নিপীড়িত জাতি ও জনগণের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের শাঁস নিহিত রয়েছে পরাশক্তির সাথে দ্বন্দ্বে। এর সমাধান হচ্ছে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব।

২)   সাম্রাজ্যবাদীদের নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব

ক) সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি মার্কিনের সাথে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যেমন রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন, বৃটেন ও জাপান ইত্যাদির দ্বন্দ্ব

খ) ছোট সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমুহের নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব

এই দ্বন্দ্ব বিশ্বে একাধিপত্যের জন্যে লুন্ঠনের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে চালিত করে যাকে সর্বহারা শ্রেণী অবশ্যই গনযুদ্ধের দ্বারা এবং চুড়ান্তত বিশ্ব গণযুদ্ধের দ্বারা বিরোধিতা করবে।

৩)   বুর্জোয়া বনাম সর্বহারা শ্রেণীর দ্বন্দ্ব

এই দ্বন্দ্বের সমাধান হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং অতঃপর সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

(কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ-এর কর্মসুচি ও ঘোষণা)

 

২.আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের জন্ম প্রক্রিয়াঃ সামন্তবাদ

 

যখন সাম্রাজ্যবাদ আফ্রিকা,এশিয়া ও আমেরিকার দেশসমূহকে উপনিবেশিকরণের প্রক্রিয়ায় এল, সে সামন্তবাদকে সমর্থন করলো।

এই সামন্তবাদই ছিল সেই ভিত্তি যা জাতীয় বুর্জোয়াকে দুর্বল করায় ও আধিপত্যকে বজায় রাখার অনুমোদন করে। সামন্ত প্রশ্নের সমাধান ব্যতিরেকে কোন জাতীয় বিপ্লব হতে পারেনা।

এটা হচ্ছে একটা চাবিকাঠি নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের নীতিমালা সঠিকভাবে বোঝার েেত্র, আর “জাতীয় মুক্তি আন্দোলন”-এর সফলতার সম্ভাবনায় অবিশ্বাস করায়, যা অনিবার্যভাবে ধ্বংস হবে এই উপলব্ধি ব্যতিরেকে।

তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টি/মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-র প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া ব্যাখ্যা করেনঃ

“প্রধান দ্বন্দ্ব কী? কোন প্রক্রিয়ায় যখন অনেকগুলো দ্বন্দ্ব অস্তিত্বমান, প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে সেই দ্বন্দ্ব যা “নেতৃত্বকারী ও নির্ধারক ভুমিকা পালন করে” [মাও সেতুঙ, দ্বন্দ্ব সম্পর্কে]

কমরেড মাও তাঁর “নয়া গনতন্ত্র সম্পর্কে” বইয়ে একইভাবে বলেনঃ প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে সেই দ্বন্দ্ব যা অন্য দ্বন্দ্ব সমূহের বিকাশ নির্ধারণ করে অথবা তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে”। [মাও সেতুঙ, দ্বন্দ্ব সম্পর্কে]

আমাদের দেশে সামন্তবাদের সাথে ব্যাপক জনগণের দ্বন্দ্ব হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব কারণ এটা “অন্য দ্বন্দ্বসমূহের বিকাশ নির্ধারণ করে অথবা তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে” এবং কারণ এটা “নেতৃত্বকারী ও নির্ধারক ভুমিকা পালন করছে”।

শ্রম ও পুঁজির মধ্যেকার দ্বন্দ্বের বিকাশ, অন্য কথায়, সর্বহারা ও বুর্জোয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিকাশ “সামন্তবাদ ও ব্যাপক জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব”-এর বিকাশ ও সমাধানের ওপর নির্ভর করে, যে মাত্রায় এই দ্বন্দ্ব নিজেকে বিকশিত করে ও উন্মুক্ত করে, সর্বহারা ও বুর্জোয়া উদ্ভূত হয় ও নিজেকে বিকশিত করে।

সর্বহারা ও বুর্জোয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব পরিষ্কারভাবে উদ্ভূত হয়, খারাপ রূপ নেয় ও পেঁকে ওঠে এমন একটা পরিস্থিতির জন্য সামন্তবাদকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে।

যে কারণে সর্বহারা শ্রেণী সামন্তবাদের বিরুদ্ধে আর সম্মুখ সারিতে সংগ্রামে সর্বাধিক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এটাই হচ্ছে তার ভিত্তি। কারণ এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও চুড়ান্ত কৃষক সংগ্রাম কর্তৃক সামন্তবাদ যতই ঝেটিয়ে বিদেয় হয়, ততই বুর্জোয়া-সর্বহারা দ্বন্দ্ব উদ্ভূত হয় এবং সর্বহারা শ্রেণীর শ্রেণীসংগ্রামের জন্য তথা সমাজতন্ত্রের জন্য অনুকুল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে।

এসবই হচ্ছে স্তরে স্তরে গমনকারী অব্যাহত বিপ্লবের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্বের ভিত্ গঠনকারী ভাবধারা।

আধা-উপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী দেশসমূহে সাম্রাজ্যবাদ বনাম দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের ওপর নেতৃত্বকারী ও নির্ধারক ভুমিকা পালনকারী “দ্বন্দ্ব”টি হচ্ছে বস্তুত সামন্তবাদ ও ব্যাপক জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

সাম্রাজ্যবাদ এসব দেশে তার অস্তিত্ব ও আধিপত্য বজায় রাখে সামন্তবাদকে রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক েেত্র টিকিয়ে রেখে, একে শক্তিশালি করে এবং সামন্ত মালিকানা ও সামন্ত সম্পর্কের বিলোপের গতিকে শ্লথ করে। ” (ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া, সাফাক-এর সংশোধনবাদের সাধারণ সমালোচনা, ১৯৭২)

যেমনটা কমরেড কায়পাক্কায়া কর্তৃক বিবৃত হয়েছে, সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক বজায় থাকা সামন্তবাদ জাতীয় বুর্জোয়াদের দুর্বল রাখাকে অনুমোদন করে; এটা সামন্তবাদের মতাদর্শিক আধিপত্যকে বজায় রাখে, এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র “গণতান্ত্রিক” হওয়ার ভাণ করলেও।

 

৩.সামন্তবাদঃ আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের আধিপত্যের ভিত্তি

 

আধা-সামন্তবাদ ও আধা-উপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত একটি দেশের বিকাশের প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে সামন্তবাদী দিক। তাসত্ত্বেও, এর অর্থ এই নয় যে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ দুর্বল ও নিজেদের বিকাশে অম।

বিপরীতে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ নিজেকে পনুঃপুনঃ উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালায় একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেখানে সমাজ বিভক্ত হয়েছে কর্পোরেশনসমূহে এবং জনগণ সমাবেশিত হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল চেতনায়।

এটা সামন্তবাদের সাথে দ্বন্দ্বকেও নিয়ে আসে, যেমন উদাহারণস্বরূপ, ইরানে আধুনিকতাবাদী আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী শ্রেণীর প্রতিনিধি শাহ এবং সামন্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি খোমেনীর মধ্যে।

এই প্রক্রিয়ায়ÑÑযেখানে সাম্রাজ্যবাদ নিপীড়িত দেশসমূহের প্রাকৃতিক সম্পদকে অধিক থেকে অধিকতর ব্যবহার করেÑÑএক আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী কৃষি বিকশিত হয় একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেখানে সামন্তবাদ নিজেই আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদে বিলীন হয়।

এটা হচেছ সেই প্রক্রিয়া যা বিপুল আধুনিক কৃষি বাগান ও প্রধানত সাম্রাজ্যবাদী বাজারের জন্য বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদন কারী বিপুল খামারসমূহ জন্ম দেয়।

এই প্রক্রিয়া হচ্ছে পুঁজিবাদী, কিন্তু পুঁজিবাদী ওপর থেকে, এটা হচেছ আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, এ হচ্ছে ফ্যাসিবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

কমরেড কায়পাক্কায়া ল্য করেনঃ

“এমনকি যদি মালিকানা সম্পর্কসমূহ, প্রধানত বৃহৎ ভুমি মালিকানাসমূহ খুবই ধীর গতিতেও বিলীন হয়, এসব মালিকানা সম্পর্কসমূহ তাদের শোষণের সামন্তীয় ধরণ বজায় রাখে।

আধা-সামন্তীয় শোষণের ধারা বজায় থাকে, যেমন ভুস্বামীকে ফসলের অর্ধেক দেওয়া, লীজ, সুদী কারবার, সুদে ভাড়া। সুদী কারবারের সুদ এবং লীজ সাম্রাজ্যবাদী ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।

সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্কসমূহ তাদের তীব্রতাসহ বজায় থাকে, নির্দিষ্টত উপরিকাঠামোয়। বুর্জোয়া গণতন্ত্র সর্বদাই সামন্তবাদের জোয়ালের সাথে হাত ধরাধরি করে চলে।

গণতন্ত্র সর্বদাই এক সামন্তীয় চরিত্র বহন করে। বুর্জোয়াদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আধা-বুর্জোয়া আধা-সামন্তীয় চরিত্র প্রদর্শন করে।

এসবই, যেমন সামন্ত সম্পর্কসমূহ সাম্রাজ্যবাদের পরো আধিপত্য কায়েমে সহযোগিতা করে, তারা হচ্ছে এর স্তম্ভ।

(ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া, শাফাক-এর সংশোধনবাদের সাধারণ সমালোচনা, ১৯৭২)

একারণে, এমনকি যদি সামন্তবাদকে ঝেটিয়ে দূরও করা হয়, এটা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের একনায়কত্বের ধরণে বজায় থাকে, ফ্যাসিবাদে। সামন্তবাদ আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদে নিজেকে বিলীন করে।

মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ তার ঘোষণা ও কর্মসুচিতে বলেঃ

যার জাতীয় ও গণতান্ত্রিক এ দুটো দিকের মধ্যে আজকে গণতান্ত্রিক দিকটি প্রধান। অর্থাৎ আধা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাই প্রধান সমস্যা।

কিন্তু শ্রেণী হিসেবে এই ব্যবস্থাকে রা করছে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদের প্রতিনিধি আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াশ্রেণী যার রয়েছে কেন্দ্রিয় রাষ্ট্র, সংসদ, ব্যাংক, শিল্প, রাজনৈতিক দল ও সৈন্যবাহিনী। অর্থাৎ রাজনৈতিক মতায় এরা আসীন। কিন্তু শ্রেণী হিসেবে এরা স্বাধীন নয়, এরা সাম্রাজ্যবাদের দালাল। ফলে এই শ্রেণীটিকে উৎখাত করে বিপ্লব সাধন করতে হবে যেহেতু রাজনৈতিক মতা দখলই বিপ্লবের কেন্দ্রিয় প্রশ্ন। সুতরাং এই শ্রেণীটির উৎখাত একই সাথে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ-আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ উৎখাতের সাথে যুক্ত। কিন্তু সামন্ততন্ত্র উৎখাত ব্যতীত পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে উৎখাতে আগেই যাওয়া যায়না ইতিহাসের বস্তুবাদী নিয়মানুসারে। তাই, বিপ্লবের বর্তমান পর্বে এটি প্রধানতঃ কৃষি বিপ্লব। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা উৎখাতই হচ্ছে এখনকার প্রধান করণীয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে শ্রেণী হিসেবে আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ার কেন্দ্রিয় কাঠামোর অধীন এখানে সামন্তবাদীরা এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এরা বড় বুর্জোয়াদের নীচের স্তরে নিপ্তি হয়েছে।

 

৪.দখলদারি ও উপনিবেশবাদঃ এক বিশেষ পরিস্থিতি

 

এমনকি যদি সাম্রাজ্যবাদ প্রকাশ্য উপনিবেশবাদ ছেড়ে আধা-উপনিবেশবাদ গ্রহণ করার পরিস্থিতিতে ছিল, এমন পরিস্থিতি এখনো আছে বা থাকতে পারে যেখানে উপনিবেশবাদ প্রধান দিক, একটা বিশেষ পরিস্থিতি যার বিশেষ উত্তর প্রয়োজন।

একটা আধা-উপনিবেশিক দেশে, জাতীয় বুর্জোয়া হচেছ দুর্বল, উভয়ত সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ কর্তৃক নিপীড়িত। এটা একটা প্রগতিশীল দিক ধারণ করে; এটা শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন কৃষকদের সাথে মৈত্রীতে আবদ্ধ গণতান্ত্রিক বিপ্লবে মিত্র হতে পারে।

তাসত্ত্বেও, এমন পরিস্থিতিতে, গণতান্ত্রিক দিক হচ্ছে প্রধান দিক, আর সেখানে জাতীয় নিপীড়ণের  এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে যেখানে জাতীয় দিক প্রধান হয়।

জাতীয় দিক প্রধান হয় পরিষ্কারভাবে দুই পরিস্থিতিতেঃ

ক) একটা দেশে গণযুদ্ধ পুরনো রাষ্ট্রকে ভেঙে দিতে সম হলে সেখানে অনিবার্যভাবে বিদেশী হস্তপে আসবে কারণ বাইরের সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ ছড়িয়ে পড়া বিপ্লবী আগুণকে নিভিয়ে ফেলতে চেষ্টা করবে।

খ) একটা দেশে নির্দিষ্টভাবে জাতীয় বিকাশ দুর্বল এক দুর্বল বুর্জোয়ার কারণে, সর্বদাই অন্য অধিক শক্তিশালি দেশ কর্তৃক অধীনতার প্রক্রিয়া ছিল অর্থাৎ এক পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশ কর্তৃক (যেমন নিউ ক্যালিডোনিয়া ফ্রান্স কর্তৃক) অথবা একটা আধা-উপনিবেশিক সম্প্রসারণবাদী দেশ কর্তৃক (যেমন উত্তর কুর্দিস্তান তুরস্ক কর্তৃক)।

উভয় পরিস্থিতিতে, বিপ্লবঃ গণতান্ত্রিক অথবা সমাজতান্ত্রিক যাই হোক তাকে অবশ্যই জাতীয় বিপ্লবের পতাকা তুলে ধরতে হবে প্রধান দিক হিসেবে।

যেমন স্তালিন ব্যাখ্যা করেছেন, “একটা জাতি হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে গঠিত জনগণের স্থায়ী গোষ্ঠী যা গড়ে ওঠেছে সাধারণ ভাষা, ভুখণ্ড, অর্থনৈতিক জীবন ও মনস্তাত্বিক গড়নের ভিত্তিতে যা একটি সাধারণ সংস্কৃতিতে প্রকাশিত হয়। (মার্কসবাদ ও জাতীয় প্রশ্ন)

বিদেশী হস্তপে নেতিকরণ করতে চায় ঐতিহাসিক বর্গ হিসেবে একটা জাতিকে, ঐ জাতিকে নিপীড়ণ ও শোষণ করে মুনাফা করতে। তাই কমিউনিস্টদের জনগণকে বৃহত্তর উপায়ে সমাবেশিত করতে হবে, কারণ তা সম্ভবঃ বিদেশী হস্তপে যা নেতিকরণ করতে চায় তা হচ্ছে বিপ্লবী সম্ভাবনা সমেত খোদ জনগণের অস্তিত্ব।

কমিউনিস্টরা কোন প্রকার জাতিদম্ভী দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়াই জাতিকে প্রধান দিক হিসেবে তুলে ধরে, কারণ সার্বজনীন দিক হিসেবে সে বিপ্লবের পথ বহন করেঃ প্রতিটি প্রক্রিয়ায় যে গুণগত উলম্ফণ রয়েছে এবং যা গড়ে তোলে যে প্রতিটি জাতি সাম্য ও স্বাধীনতা চায় সার্বজনীন দাবী হিসেবে।

পৃথিবীতে মানব ঐক্যের প্রক্রিয়ার এক আবশ্যকীয় স্তর এটা, সমস্ত গ্রহে এক বিশ্ব সাম্যবাদী সমাজের, প্রকৃতির সাথে সাম্যাবস্থায় এবং মহাবিশ্বে জীবনের বিস্তার ঘটিয়ে।

এদিকে গণতান্ত্রিক বিপ্লবেরও গৌণ দিক হিসেবে আধা-উপনিবেশ থেকে জাতীয় মুক্তির প্রশ্ন রয়েছে।

আধা উপনিবেশিক দেশসমূহে, সংশোধনবাদ ও হোজাবাদের এটা একটা চরিত্র যে তারা জাতীয় দিককে প্রধান দিক বলে, “জাতীয় বুর্জোয়া” কে পরো উপায়ে সমর্থন করতে যা বস্তুত আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী শ্রেণীর একটা নির্দিষ্ট উপদলকে আড়াল করে।

১৯৬০-১৯৮০ দশক সময়কালে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী সোভিয়েত ইউনিয়ন “জাতীয় বিপ্লব”-এর কথা বলে “জাতীয় বুর্জোয়া” ও “স্বাধীনতা”র জন্য নয় বরং কেবল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া অংশের জন্য যা দেশকে সোভিয়েত তল্পিবাহক হিসেবে চালাবে।

এটা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের শিা নয়। একটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ অস্তিত্বমান কেবল প্রকাশ্য উপনিবেশবাদ ও দখলদারিত্বের পরিস্থিতিতে।

 

৫.রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা

 

যেহেতু প্রধান মূল হচ্ছে গণতান্ত্রিক দিক, তাই সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দিককে যথেষ্ট বিবেচনা করা ভুল। এটা করা “জাতীয় রাষ্ট্র” থাকতে পারে এই সংশোধনবাদী ধারণায় চালিত করবে।

আমাদের যুগে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে ভাঙতে পারার মতো যথেষ্ট শক্তিশালি “জাতীয় প্রতিরোধ” থাকতে পারেনা যদিনা তা এক প্রকৃত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে লাল পতাকার অধীনে পরিচালিত হয়।

কোন জাতীয় পতাকারই কোন অর্থ নেই, কারণ আমাদের যুগে সর্বহারা শ্রেণী হচ্ছে সমগ্র নিপীড়িত শ্রেণীসমূহের সমর্থনপুষ্ট কেন্দ্রিয় চরিত্র।

জাতীয় প্রতিরোধ-এর উপর একতরফা জোর প্রদান করা হচ্ছে এক মতাদর্শিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ভ্রান্তি তা সে যত প্রগতিশীলই হোক। এমনকি তা যদি সাম্রাজ্যবাদকে দুর্বলও করে এই প্রতিরোধের এর বাইরে যাওয়ার আর একটা প্রকৃত নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার কোন সম্ভাবনা নেই।

এ প্রশ্নে বিশেষ যতœ ছাড়া একটা সাম্রাজ্যবাদের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদসমূহের মধ্যেকার ঘোঁট ও প্রতিযোগিতা তাদের সবাইকে একটা “গণতান্ত্রিক” আন্দোলনকে সমর্থনে চালিত করে নিজেদের ক্যুকে ছদ্মাবরণে ঢাকতে।

একারণে, যে কোন পরিস্থিতিতে, সাম্রাজ্যবাদী দেশে বসবাসকারী বিপ্লবীদের অবশ্যই জোর দিয়ে বলতে হবে যে শত্র“ হচ্ছে তাদের নিজ সাম্রাজ্যবাদ; এ প্রশ্নে কোন দ্বিধা থাকা চলবে না, এমনকি যদি সাম্রাজ্যবাদ তার হস্তপেকে ন্যায্য করার চেষ্টা চালায় (গণতন্ত্র,“এক নয়া হিটলার” কে প্রতিরোধ করার অধিকার প্রভৃতির নামে)।

যে কোন সাম্রাজ্যবাদী হস্তেেপ অনিবার্যভাবে নিপীড়িত দেশের গণতান্ত্রিক উপাদান শিকার হয়, এটা কেবল আমলাতান্ত্রিক শ্রেণীর ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটায়, দেশের চরিত্রের কোন পরিবর্তন ঘটায়না; এটা কেবল সেই জনগনকে বোকা বানায় যারা “পরিবর্তন” আশা করে।

কিন্তু একটি নিপীড়িত দেশের জনগণের জন্য পরিবর্তন আসে কেবল গণযুদ্ধের মাধ্যমে, কেবল গণযুদ্ধই সামন্তবাদ ও উপনিবেশবাদকে ধ্বংস করার প্রকৃত প্রক্রিয়া বহন করে পুরোনো রাষ্ট্রের বিলোপ ও এক নয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সৃষ্টি করে, নিজেকে এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অব্যাহত প্রক্রিয়ার মধ্যে রূপান্তর করে।

 

সংযুক্তিঃ প্রশিয়ান ও আমেরিকান পথ সম্পর্কে লেনিন

 

“সংগ্রামের কেন্দ্রীয় নিশানা হচ্ছে সামন্তীয় ল্যাটিফুন্ডিয়া যা হচ্ছে সর্বাধিক মূর্ত এবং রাশিয়ায় ভুমি দাসত্বের টিকে থাকার সর্বাধিক শক্তিশালি নির্ভর। পন্য উৎপাদন ও পুঁজিবাদের বিকাশ নিশ্চিতভাবে ও অনিবার্যভাবেই ঐসব অস্তিত্বের বিলোপ ঘটাবে।

এইেেত্র, রাশিয়ার সামনে একটি পথই খোলা যা হচ্ছে বুর্জোয়া বিকাশ। কিন্তু সেই বিকাশের দুটি ধরণ হতে পারে।

টিকে থাকা ভুমি দাসত্বের পতন ঘটতে পারে ভুস্বামী অর্থনীতির রূপান্তরের ফলে অথবা ভুস্বামী ল্যাটিফুন্ডিয়ার বিলোপ ঘটানোর ফলে অর্থাৎ, হয় সংস্কারের মাধ্যমে নাহয় বিপ্লবের মাধ্যমে। বৃহৎ ভুস্বামী অর্থনীতিকে শীর্ষে রেখে বুর্জেয়া বিকাশ ঘটতে পারে, যা ক্রমান্বয়ে অধিক থেকে অধিক বুর্জোয়া হবে এবং সামন্তীয় শোষণের ধরণের জন্য ক্রমান্বয়ে বুর্জোয়াকে প্রতিস্থাপন করবে।

এটা ুদে কৃষক অর্থনীতিকে শীর্ষে রেখেও এগোতে পারে যা একটা বিপ্লবী উপায়ে সামন্তীয় ল্যাটিফুন্ডিয়ার অতি বাড় কে অপসারিত করবে সামাজিক কাঠামো থেকে এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির দিকে নিজেকে মুক্তভাবে বিকশিত করবে।

বিষয়গতভাবে সম্ভব বুর্জোয়া বিকাশের দুই পথকে আমরা বলব যথাক্রমে প্র“শিয়ান পথ ও আমেরিকান পথ।

প্রথম েেত্র সামন্তীয় ভূস্বামী অর্থনীতি ধীরে ধীরে বুর্জোয়া জাঙ্কার ভূস্বামী অর্থনীতিতে পরিণত হয় যা কৃষকদেরকে ভয়াবহতম শোষণ ও দাসত্বের যুগে আটকে ফেলে, যেখানে গ্রসবার্ন (“বৃহৎ কৃষক”) এর একটি ুদ্র সংখ্যালঘু আবির্ভূত হয়।

দ্বিতীয় েেত্র, কোন ভূস্বামী অর্থনীতি নেই, অথবা বরং এটা বিপ্লবের মাধ্যমে চূর্ণ হয়েছে যা সামন্তীয় এস্টেটগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে এবং ভেঙে দেয়। সেেেত্র, কৃষক আধিপত্য করে, কৃষির পরম প্রতিনিধি হয় এবং পুঁজিবাদী কৃষকে পরিণত হয়।

প্রথম েেত্র, বিবর্তনের প্রধান বিষয় হচ্ছে সামন্তীয় শৃংখলের ভূমিদাসত্বে রূপান্তর এবং সামন্ত ভূস্বামী জাংকারের ভূমিতে পুঁজিবাদী শোষণ।

দ্বিতীয় েেত্র, প্রধান প্রোপট হচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক কৃষকের বুর্জোয়া কৃষকে রূপান্তর।” (লেনিন, প্রথম রুশ বিপ্লবে সোশাল ডেমোক্রেসির কৃষি কর্মসুচি, ১৯০৫-১৯০৭, ১৯০৭)

“বুর্জোয়া রাশিয়ার বিকাশে কৃষি সমস্যা”র সমাধান করার যে দুটি পথের কথা আমি বলেছি তা কৃষিতে পুঁজিবাদ বিকাশের দুই পথের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই দুটি পথকে আমি বলি প্র“শিয়ান ও আমেরিকান পথ।

প্রথমটির বৈশিষ্ট্যপুর্ণ চিত্র হচ্ছে ভূমি মালিকানার মধ্যযুগীয় সম্পর্ককে এক আঘাতে চূর্ণ করা হয়না, বরং ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাদের সাথে খাপ খাওয়ানো হয়, যা এর কারনে আধা-সামন্ততান্ত্রিক চরিত্রকে দীর্ঘ দিনের জন্য টিকিয়ে রাখে।

প্র“শিয়ান সামন্তবাদ বুর্জোয়া বিপ্লব কর্তৃক চুর্ণ হয়নি; এটা টিকে থেকেছে এবং “জাংকার” অর্থনীতির ভিত্তি হয়েছে, যা সারবস্তুতে পুঁজিবাদী, কিন্তু এটা কৃষক জনগণকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্ভরশীল করে তোলে যেমন গেসিনদিওর্দনা [“চাকুরের বিধি”, ১৮৫৪, প্র“শিয়ায় কৃষি শ্রমিকদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এমন অনেক আইনের অন্যতম। এই আইনের অধীনে শ্রমিকদের স্রেফ ধর্মঘট সংগঠিত করার প্রচেষ্টাও কারাবাসসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ] প্রভৃতি।

ফলত, ১৮৪৮-এর পর জাংকারদের সামাজিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য সুসংহত হয় অনেক দশক ধরে এবং আমেরিকার চেয়ে অনেক ধীর গতিতে জার্মান কৃষির উৎপাদিকা শক্তি বিকশিত হয়।

সেখানে বিপরীতে, বৃহৎ ভূস্বামীদের পুরোনো দাস রাখার অর্থনীতি পুঁজিবাদী কৃষিতে বিকশিত হয়নি (গৃহযুদ্ধ দাস মালিকদের এস্টেটগুলি ধ্বংস করে), বরং মুক্ত ভূমিতে কর্মরত মুক্ত কৃষকের মুক্ত অর্থনীত ÑÑ সকল মধ্যযুগীয় বাঁধা থেকে মুক্ত, একদিকে ভুমিদাসত্ব ও সামন্তবাদ অন্যদিকে ভুমিতে বক্তিগত মালিকানার বাঁধা থেকে মুক্ত।

আমেরিকায় ভুমি তার বিশাল সম্পদসহ দিয়ে দেয়া হয়েছিল নামমাত্র দামে; এবং কেবল একটা নতুন, সম্পূর্ণ পুঁজিবাদী ভিত্তিতেই ভুমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা এখন সেখানে বিকশিত হয়েছে।

পুঁজিবাদী বিকাশের উভয় পথই সম্পূর্ণ পরিস্কারভাবে রাশিয়ায় আবির্ভূত হয় ১৮৬১র পর। ভুস্বামী কৃষির উন্নতি সন্দেহাতীত কিন্তু এই উন্নতির ধীর গতি দৈব নয় বরং অনিবার্য যতণ ভুমিদাসত্বের অবশেষ টিকে আছে।

এটাও সন্দেহাতীত যে কৃষকরা যত মুক্ত তত কম তারা ভুমিদাসত্বের অবশেষ দ্বারা পিষ্ট (দেিণ, উদাহারণস্বরূপ, এসকল অনুকুল পরিস্থিতি অস্তিত্বশীল), এবং চূড়ান্তত যত ভালভাবে সর্বেসর্বা কৃষকদের জমি দেয়া হয়, কৃষকদের মধ্যে মেরুকরণ ততই বেশি হয় এবং গ্রামীণ পুঁজিবাদী কৃষকের একটা শ্রেণী গঠণের প্রক্রিয়া ততই দ্রুততর হয়।

দেশের অধিকতর বিকাশের পুরো প্রশ্নটি এই কথায় এসে দাঁড়ায়ঃ বিকাশের দুই পথের কোনটি শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করবে, এবং তার সাথে সংগতিপূর্ণভাবে কোন শ্রেণী প্রয়োজনীয় ও অনিবার্য পরিবর্তন আনবেঃ পুরোনো ভূস্বামী ভদ্রমহোদয়গণ নাকি মুক্ত কৃষক?”

(লেনিন, ঊনিশ শতকের শেষের দিকে রাশিয়ায় কৃষি প্রশ্ন, ১৯০৮)