মিয়ানমারে প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র ও সরকারী বৌদ্ধ ধর্মবাদ কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত ও ধর্মবাদী নিপীড়ণ ২

লেখকঃ হোসেন নীল

ইতিপূর্বে আমরা দেখিয়েছি ২০১৬ সালের চিত্র। এর পরবর্তী ইতিহাস সকলে দেখেছেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি সংগঠন একযোগে প্রায় ত্রিশটির উপর পুলিশ ও সামরিক আধা সামরিক অবস্থানে হামলা চালায়। এর পালটা নিপীড়ণ হিসেবে ব্যাপক জালাও পোড়াও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে মিয়ানমার রাষ্ট্র। শত সহস্র নারী শিশু বৃদ্ধসহ গোটা জাতি গণহত্যার শিকার হয়। যার ফলে আগষ্ট ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজারের মত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ সরকার প্রথমে

২৯১৭ সালে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিরাট সংখ্যায় আগমণ

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিরাট সংখ্যায় আগমণ

আশ্রয় না দিয়ে তাদের পুশ ব্যাক করে, কিন্ত ব্যাপক জনমতের চাপে তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়। কক্সবাজার জেলার আশ্রয় শিবিরগুলিতে নতুন এসব উদ্বাস্তু আর আগে আসা রোহিঙ্গা সমেত বাংলাদেশে এক মিলিয়নের মত রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। বলা হয় যে রোহিঙ্গা জাতির অধিকাংশই এখন বাংলাদেশে। রোহিঙ্গারা এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির বুর্জোয়ারা কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ করছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব পুনপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ভারত চিন রাশিয়া অস্ত্র বিক্রী করতে, তেল গ্যাস লুটতে পাইপ লাইন বসাতে এবং নিজ দেশের অভ্যন্ত্রীণ জাতিগত নিপীড়ণ বজায় রাখতে সরাসরি মিয়ানমারের নিপীড়ক রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের বঙ্গোপসাগরের এক দুর্গম চরে রাখার পরিকল্পনা করেছিল যা হচ্ছে তাদের পানিতে ডুবিয়ে মারার পরিকল্পনার মতই। কারণ বছরের অধিকাংশ সময় সেটা পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া জলদস্যুদের অত্যচার রয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার মিয়ানমারের সরকারের সাথে একটি চুক্তি সই করেছে যা হচ্ছে ১৯৯২ সয়ালে সম্পাদিত চুক্তির ধারাবাহিকতা। এই চুক্তি মোতাবেক প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজারের মত করে রোহিঙ্গা ফিরে যাবে। কোথায় যাবে? বাড়িতে না, গ্রামে না। সেখানে ক্যাম্পে অবস্থান করবে। তারপর তাদের জন্য বাড়ী তৈরি হবে। তারা সেই বাড়িতে যাবে…।।

কিন্তু রোহিঙ্গারা জানেন তারা এখানেই তার চেয়ে ভাল আছেন। গণহত্যার বাড়তি নিপীড়ন এখানে নেই। তাই তারা সেখানে ফিরে যেতে চাননা। সেখানে নিরাপত্তার জন্য মধ্যস্থতাকারী বাহিনী হিসেবে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েনের দাবী তুলছেন তারা অনেকেই, তারা বলছেন নিপীড়ণের বিচার হতে হবে, বাড়ী ঘর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।

কক্সবাজার জেলার একটি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির

কক্সবাজার জেলার এরকম আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছেন

রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি দিতে হবে-নাগরিকত্ব দিতে হবে ইত্যাদি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলেই তারা যাবেন, অন্যথায় নয়। এগুলো অত্যন্ত ন্যায্য দাবি।

পাশাপাশি তাদের এটাও বুঝতে হবে জনগণের একটি সংগঠন প্রয়োজন যা ধর্মীয় বা অলৌকিক শক্তির উপর বিশ্বাসের উপর নয় বরং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। যা মানুষে মানুষে সাম্যে বিশ্বাস করে, বিভেদে নয়। এই চেতনা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের দ্বারা সঞ্চারিত হয়, যা মানব সমাজের শ্রেণিসংগ্রামের শিক্ষা ও তার অনিবার্য ফল প্রদর্শন করে। কুসসংস্কারের ভিত্তিতে কোন মুক্তি অর্জন হয়না, সাম্যবাদের ভিত্তিতে হয়। ধর্নবাদ বা জাতিয়তাবাদ নয়,  জাতীয় সংগ্রাম অবশ্যই হতে হবে জাতীয় গনতান্ত্রিক অথা নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সংগ্রামের অংশ, যা নিজ জাতির মুক্তির পাশাপাশি সকল জাতি গোষ্ঠির মুক্তি অর্জনে সর্বহারা নেতৃত্বে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী সমাজের দিকে এগিয়ে যাবে। হিংস্র জাতিয়তাবাদের রূপ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে দেখেছেন, বাংলাদেশেও এই পার্বত্যাঞ্চলেই কিছু দিন আগে মিঠুন চাকমা খুন হয়েছেন। হিংস্র ধর্মবাদের রূপ রোহিঙ্গারা মিয়ানয়ারে দেখেছেন এখানেও, কিছুদিন আগে রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীল সরকার রোহিঙ্গাদের বোঝা মনে করে যেনতেন ভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চায় তাদের পুনরায় বলির পাঠা হতে। কিন্তু তাদের যেতে হবে। সেখানে মিয়ানমারে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বহারা কৃষক মধ্য শ্রেণির জনগণকে নিয়ে নতুন পরিকল্পিত এক গণযুদ্ধ গড়ে তুলতে। যেতে হবে মুক্তির যোদ্ধা হয়ে। সুকির ভণ্ডামি উন্মোচিত। সামরিক জান্তার শক্তির দম্ভ চূর্ণ করে দিতে রোহিঙ্গা জাতি জনগণ মুক্তিদাত্রী মতবাদ গ্রহণ করবেন, আরো অগ্রসর হবেন, আমরা এই আশাই করি।■