সিরাজ সিকদার রচনাঃ স্বাধীন পুর্ববাংলা কায়েম করুনঃ সিরাজ সিকদার। জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, একটি স্ফুলিঙ্গকে দাবানলে রূপ দিন; স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপুর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ববাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক জানুয়ারী ১৯৭১ রচিত ও প্রকাশিত। এই দলিলটি ছিল পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কমরেড সিরাজ সিকদার কর্তৃক পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল, সমর্থক বিপ্লবী জনগণ এবং অন্যান্য দেশ্রপ্রেমিকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত আহ্বান। ১৯৭১-১৯৭৫ কালে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি দলিলটি সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রকাশনা চালায়। ১৯৭৫ সালে কমরেড সিরাজ সিকদারর মৃত্যুর পর পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় সংস্থাসমূহ উক্ত দলিলটির সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রকাশনা চালায়। বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী উক্ত দলিলটি সর্বহারা পথ www.sarbaharapath.com ওয়েবসাইটে  অনলাইনে প্রকাশ ও সংরক্ষণ করে ৩০ ডিসেম্বর ২০১২। উক্ত দলিলটি এই পার্টির কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ পুস্তিকাকারে প্রকাশ করে


 

পিডিএফ

সিরাজ সিকদার রচনা_স্বাধীন পুর্ববাংলা কায়েম করুন। পুস্তিকা। পড়ার জন্য পিডিএফ

সিরাজ সিকদার রচনা_স্বাধীন পুর্ববাংলা কায়েম করুন। পুস্তিকা। মুদ্রণের জন্য পিডিএফ

 

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিশেষ অনুশীলনে প্রয়োগের মূল্যবান অভিজ্ঞতা নিয়ে পূর্ববাংলা ও বিশ্বের প্রতি দৃষ্টি প্রসারিত রেখে দৃঢ় পদক্ষেপে তার প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করছে।

এই তিন বৎসর পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা আত্মবলিদান ও কঠোর সংগ্রাম দ্বারা আনন্দ ও বেদনার মহা উপাখ্যানের সৃষ্টি করেছে এবং পূর্ববাংলার বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসে মহান গৌরবময় অধ্যায়ের সংযোজনা করেছে।

সভাপতি মাওয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্বের সর্বহারা শ্রেণী ও বিপ্লবীদের সংশোধনবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রভাবে পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা ‘প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত’, এ পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে পূর্ববাংলার বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পূর্ববাংলার শ্রমিক শ্রেণীর সঠিক রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি সংগঠন পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার মুহুর্ত থেকেই পার্টির অভ্যন্তরে ও বাইরে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ ও ক্ষুদে বুর্জোয়া মতাদর্শ ও তার প্রকাশের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনা করছে এবং বিপ্লবী অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় প্রণয়ন করেছে-সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তির সঠিক রাজনৈতিক লাইন, দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের বর্তমান পর্যায়ে জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ সূচনার সঠিক সামরিক লাইন এবং গোপনভাবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তোলার সঠিক সাংগঠনিক লাইন।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা অধ্যয়ন ও প্রয়োগ, কৃষক-শ্রমিকের সাথে একীভূত হওয়া এবং বিপ্লবী ঝড়তরঙ্গে পোড় খেয়ে অধিকতর পরিপক্ক হয়েছেন এবং অধিকতর দক্ষতার সাথে বিপ্লবীকার্য পরিচালনা করছেন।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের বিপ্লবী অনুশীলনের এই তিন বৎসর সশস্ত্র সংগ্রাম সূচনা ও পরিচালনা করার আত্মগত প্রস্তুতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের গেরিলারা সাফল্যজনকভাবে পাকিস্তান কাউন্সিল কেন্দ্র, অফিস ও মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে কমান্ডো হামলা পরিচালনা করে এবং পূর্ববাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করে।

পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক সামরিক শাসকগোষ্ঠী একটি পাতা নড়ার শব্দেই আঁতকে উঠে এবং পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার জন্য পাগলা কুকুরের মত হন্যে হয়ে উঠে। তাদের এ জঘন্য প্রচেষ্টায় শামিল হয় পূর্ববাংলার বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী দালালরা এবং পূর্ববাংলার দক্ষিণপন্থী ও আকৃতিগতভাবে বামপন্থী কিন্তু সারবস্তুগতভাবে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলরা।

পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনে কার্যরত পূর্ববাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অনেককে গ্রেপ্তার করেছে, আরো অনেকের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছে গ্রেপ্তারী পুরস্কার।

পূর্ববাংলার জনগণের রক্তের রক্ত, মাংসের মাংস পুর্ববাংলার এ সকল শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা আজ কারার অন্তরালে অশেষ নির্যাতন ও কষ্টে ভুগছেন। তাদের কথা মনে পড়ে আমাদের হৃদয় বেদনায় ভরে উঠে, চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মীরা বেদনাকে শত্রুর প্রতি তীব্র ঘৃণায় এবং অশ্রুকে শত্রু ধ্বংসের বজ্রকঠিন শপথে রূপান্তরিত করে নিজেদের শক্তিকে সুসংবদ্ধ ও পুনর্গঠিত করে, বিপ্লবী কাজ দ্বিগুণভাবে জোরদার করে এবং সশস্ত্র সংগ্রামকে গ্রাম্য এলাকায় সম্প্রসারিত করে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের গেরিলারা সাফল্যজনকভাবে পুর্ববাংলার বুকে সর্বপ্রথম সূর্যসেনের দেশ চট্রলায় এবং সন্যাস বিদ্রোহের দেশ ময়মনসিংহে জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে গেরিলাযুদ্ধের সূচনা করেছে এবং বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।

১৯৭০-এ পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন তার বিকাশের সশস্ত্র সংগ্রামের ঐতিহাসিক স্তরে প্রবেশ করেছে।

পাকিস্তানী অবাঙ্গালী শাসকগোষ্ঠীর সাথে পূর্ববাংলার জনগণের দ্বন্দ্ব প্রতিদিনই তীব্রতর হচেছ। স্মরণাতীতকালের প্রচণ্ডতম ঘূর্ণীঝড় ও জলোচ্ছাসের তাণ্ডবলীলায় লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বলিদান প্রমাণ করেছে পূর্ববাংলার পরাধীনতার চরিত্র। পাকিস্তানের উপনিবেশিক সামরিক শাসকগোষ্ঠী, পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তি ও বিচ্ছিন্নতার সংগ্রামকে নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপুর্ণ সংগ্রামের কানাগলিপথে পরিচালনার ষড়যন্ত্র করছে এবং এ উদ্দেশ্যে সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় এবং আইনগত কাঠামোর আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে।

আওয়ামী লীগ জনতাকে এর বিরুদ্ধে পরিচালিত না করে এ ষড়যন্ত্রে হাত মিলিয়েছে এবং পূর্ববাংলার উপরস্ত শোষণ নিপীড়ণ  সমাধানের জন্যে শান্তিপূর্ণ ও সংস্কারবাদী পথ ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের কথা বলছে।

পাকিস্তানের অবাঙ্গালী শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার প্রধান উপাদান হলো সামরিক বাহিনী। পুর্ববাংলার জনগণের কোন উপকারই করা সম্ভব নয় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পূর্ববাংলার গণবিরোধী এ সশস্ত্র বাহিনীকে পরাজিত ও ধ্বংস করা ব্যতীত। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, সংস্কারবাদী সকল প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি হলো আপোষ ও আঁতাত এবং জনগণের স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। কাজেই আওয়ামী লীগের সামনে সশস্ত্র সংগ্রাম ও আপোষের দুটো পথই খোলা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শ্রেণীভিত্তি প্রমাণ করে ইহা শেষোক্ত পথ অনুসরণ করেছে যার পরিণতি হলো জনগণের স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

আওয়ামী লীগ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণ করে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়। সর্বহারার রাজনৈতিক পার্টি ও তার মাধ্যমে পরিচালিত সর্বহারার একনায়কত্ব ব্যতীত অন্য সকল প্রকার সমাজতন্ত্রের সারবস্তু হলো রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ। ইহা জনগণের পরিবর্তে দুর্নীতিপরায়ণ আমলা-ম্যানেজার প্রভৃতিদের স্বার্থ রক্ষা করে। এর পরিণতি হলো লোকশানের প্রতিষ্ঠান ই.পি.আর.টি.সি, বা ই.পি.আই.ডি.সি এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থা।

তথাকথিত মুক্ত পৃথিবীর প্রধান মোড়ল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের কমিউনিজম প্রতিহত করার ইহা একটি নতুন কৌশল। বার্মার নে-উইন, সিঙ্গাপুরের লি-কান-উয়ে, ভারতের ইন্দিরা গান্ধি নিজস্ব পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্র গঠনের নামে পুরনো শোষণকে নতুন শোষণের রূপে তীব্রতর করছে এবং কমিউনিস্ট ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কমিউনিজম প্রতিহত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের বিপ্লবী সংগ্রাম প্রচণ্ড রোষে ফেটে পড়ছে।

শেখ মুজিব সমাজতন্ত্র ও শোষণের অবসানের কথা বলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পূর্ববাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতা ও তাদের নেতৃত্বকে ‘জ্যান্ত কবরস্থ’ করা এবং পূর্ববাংলার চিয়াংকাইশেক, নে-উইন, ইন্দিরা, লি-কান-উইয়ের ভূমিকা পালন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক সামরিক শাসকগোষ্ঠী এ কারণেই তাদেরকে কিছুটা সুবিধা প্রদান করে পূর্ববাংলার বিপ্লবীদের পরিচালিত পূর্ববাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালীদের দ্বারা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।

ইতিহাস সকল ভাঁড় ও ভাঁওতাবাজদের, আগে হোক পরে হোক চূড়ান্তভাবে কবরস্থ করবেই। পূর্ববাংলার বিপ্লবী জনতার পরিচালিত ইতিহাসের চাকা শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে উচ্চ শিখরে উত্তোলিত করেছে; ইহা নিজস্ব গতিপথে অনিবার্যভাবেই তাদেরকে গুঁড়িয়ে চূর্নবিচূর্ণ করে চূড়ান্তভাবে কবরস্থ করবে।

আমরা অবশ্যই এ সত্য প্রতিনিয়ত জনতার সামনে তুলে ধরবো এবং বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে উঠতি বুর্জোয়াদের মোহগ্রস্ত জনগণকে আমাদের পিছনে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করবো। এ উদ্দেশ্যে আমরা গ্রাম্য এলাকায় কৃষকদের জাতীয় শত্রু বিরোধী খতম অভিযান জোরদার করবো। এভাবে পূর্ববাংলার ৮০ ভাগ জনতার নেতৃত্ব অর্জনের মাধ্যমে শহুরে বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক শ্রেণী ও জাতীয় বুর্জোয়াদের নেতৃত্ব অর্জন করতে সক্ষম হবো।

বর্তমান আন্তর্জাতিক অবস্থা বিপ্লবের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। মহান নেতা সভাপতি মাও যথাযথভাবে বর্তমান দুনিয়ার বিপ্লবী সংগ্রামের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করেছেন, “বিপ্লব হলো বর্তমান বিশ্বের প্রধান প্রবণতা” বিশ্বের বিপ্লবীরা দ্রুতগতিতে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, বার্মা, ভারত, প্যালেস্টাইন এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিপীড়িত দেশ ও জাতিসমুহের মুক্তি সংগ্রাম দাউদাউ করে জ্বলছে।

খোদ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মর্মস্থলে কালো অধিবাসীদের হিংসাত্মক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম জোরদার হচ্ছে।

সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সংশোধনবাদী দেশসমূহে গণঅসন্তোষ এবং নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে। তারাও নিজের খতমের দিন গুণছে।

পক্ষান্তরে সভাপতি মাওয়ের নেতৃত্বে গণচীন বিরাটাকায় দানবের মত দাঁড়িয়ে আছে পূর্ব দিগন্তে, ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক আলোকস্তম্ভ আলবেনিয়া উজ্জ্বল কিরণ বিচ্ছুরিত করছে।

এ যুগ সম্পর্কে সভাপতি মাও দূরদর্শিতার সাথে যথার্থই উল্লেখ করেছেন, “আজ থেকে আগামী ৫০ সর থেকে ১০০ সর অথবা তার পরের সময়টা হচেছ বিশ্বব্যাপী সমাজ কাঠামোর আমুল পরিবর্তনের মহান যুগ পূর্ববর্তী যে কোন ঐতিহাসিক পর্যায় নজীরবিহীন একটি বিশ্ব কাঁপানো যুগ

পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী, আওয়ামী লীগ পূর্ববাংলার জনগণের সশস্ত্র সংগ্রাম কিছুতেই দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ১৯৭০-এ পূর্ববাংলার জনগণের যে গণযুদ্ধ শুরু হয়েছে তা দাবানলের রূপ নেবে ১৯৭১-এ। পূর্ববাংলার গ্রামে গ্রামে দাউ দাউ করে জ্বলবে গণযুদ্ধের দাবাগ্নি, আর তাতে পুড়ে মরবে পূর্ববাংলার স্বাধীনতার শত্রুরা, তাদের দালাল, বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা। এই প্রবল ঝড়-তরঙ্গে থর থর করে কাঁপবে পুরোনো দুনিয়া, গড়ে উঠবে জনগণের গেরিলা বাহিনী, সমাপ্ত হবে পূর্ববাংলার শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি সংগঠন হিসেবে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক ভূমিকা, প্রতিষ্ঠিত হবে পূর্ববাংলার শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি।□

টীকা

১। বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীঃ মনি সিং-মোজাফ্ফর সংশোধনবাদী, হক-তোয়াহা নয়া সংশোধনবাদী, দেবেন-মতিন ট্রটস্কী-চেবাদী, কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারী, অগ্নিপ্রভ মাইতি প্রভৃতিকে বুঝানো হয়েছে, যারা আকৃতিতে পৃথক কিন্তু সারবস্তুগতভাবে সংশোধনবাদী।

২। পূর্ববাংলার দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলঃ মুসলিম লীগের সকল অংশ, পিডিপি, জামাত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক পার্টিসমূহ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের একটি অংশ।

৩। আকৃতিগতভাবে বামপন্থী, সারবস্তুগতভাবে দক্ষিণপন্থীঃ প্রতিক্রিয়াশীল ন্যাপ উভয় অংশ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ব্যাপক অংশ। ■