সিপিএমএলএম বাংলাদেশ-এর দলিলঃ সাম্প্রতিক যৌন সন্ত্রাসের শ্রেণী প্রকৃতি (১৪ জুন ২০১৫)

সিপিএমএলএম বাংলাদেশ-এর দলিল

১৪ জুন ২০১৫

সাম্প্রতিক যৌন সন্ত্রাস

নববর্ষে বর্ষবরণ করতে আসা নারীদের উপর ছাত্রলীগের যৌন সন্ত্রাস মধ্য শ্রেণীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগের এ জাতীয় আচরণ নতুন না হলেও আওয়ামী লীগের আশির্বাদ নিয়ে চলে এরূপ অনেক বুদ্ধিজীবিদের এ ঘটনাগুলো হতাশ করেছে। বলা বাহুল্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। তারপর এর প্রতিবাদ করতে আসা বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপর পুলিশি সন্ত্রাস মধ্যশ্রেণীর স্বচ্ছল অংশকে আরো হতাশ করেছে।

উক্ত যৌন সন্ত্রাসের শ্রেণী

এই যৌন নিপীড়কগণ আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া। এই বুর্জোয়ারা নারীদের ভোগের বস্তু মনে করে। নারীদের পন্য মনে করে ও পন্যে রূপান্তরের প্রচেষ্টা চালায়। অন্যদিকে সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়ন নারীকে পুরুষের দাসী ও ভোগ্য বস্তু মনে করে। এরা নারীকে গৃহদাসীরূপে আবদ্ধ রাখতে চায়। তাই তারা নারীদের উপর অবরোধ আরোপ করতে চায়। বাংলাদেশে এই দুই রূপের নারী নিপীড়ণ বিরাজ করছে।

মধ্যশ্রেণীর বাঙালী সংস্কৃতি ও হতাশা

শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যশ্রেণীর বিপুল অধিকাংশ মানুষ বাঙালী সংস্কৃতি পালন করেন। এটা অবশ্যই ভাল। প্রতিটি জাতি নিজস্ব সংস্কৃতি লালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু

বাংলা নববর্ষ ১৪২২ উদযাপন

বাংলা নববর্ষ ১৪২২ উদযাপন

মধ্যশ্রেণীর অনেকেই প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া ধারার উপর আস্থা রাখেন এবং সেখান থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করতে চান। কিন্তু তারা যখন বিশ্বাসঘাতকতা—ধর্ষণ, লাঞ্চনা গঞ্চনা প্রাপ্ত হন তখন তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তারা এর শ্রেণীপ্রকৃতি আবিষ্কার করতে পারেননা। সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়ণ তারা বোঝেন, এটা তাদের কাছে খানিকটা পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে, কিন্তু বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীলদের নিপীড়ণ কাঠামোটি তাদের কাছে পরিষ্কার হয়না, তারা শুধু উপরিতলের ঘটনা দেখেন, এর গভীরে যেতে পারেন না। কেন? কারণ তারা নিজেরা কেউ কেউ কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত, কেউ কেউ তা দেখে লালায়িত, কেউ কেউ এসব থেকে বঞ্ছিত হলেও ঐ স্বপ্ন তাদের মন থেকে একেবারে উবে যায়নি। আর ঐ শ্রেণীর ব্যাপক অধিকাংশই তাদের স্বপ্ন দিন দিন অধিক থেকে অধিক ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে দেখছে, যে স্বপ্ন কিন্তু আর কিছুনা, স্রেফ কোনভাবে বেঁচে থাকা। শ্রমিক ও কৃষকেরও কোনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। কিন্ত আরেক বিপরীত স্বপ্ন আছে যা শুধু বেঁচে থাকার নয়, বরং এমন এক জীবনের যেখানে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দরকার এক জীবন মরণ সংগ্রাম।

নারী নিপীড়ণের আরেক উৎস সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ

সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদ বাংলাদেশকে আধা উপনিবেশিক অধীনতায় আবদ্ধ রেখেছে। তারা নারী নিপীড়ণের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী। পুরুষতান্ত্রিক পর্নো সংস্কৃতির আগ্রাসন, যৌন ব্যবসা-বাণিজ্য ও নারী পাচার তারা পরিচালনা করে।

সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ নারীদের মিত্র হতে পারেনা

মধ্যশ্রেণীর যে ধারাটি পুঁজিবাদের উপর কোন না কোনভাবে আস্থা রাখে কিন্তু তার অত্যাচারী প্রকৃতি দেখে হতাশ হয়ে পড়ে তার প্রকৃষ্ট উদাহারণ তসলিমা নাসরিন। সামন্ততান্ত্রিক ধর্মবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে।

মধ্যশ্রেণীর প্রতিবাদীরা দেশে থাকতে পারেননা কেন? এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন।

মধ্যশ্রেণীর লোকেরা দৈহিক শ্রমে নিযুক্ত হতে পারেনা, বস্তিতে থাকতে পারেনা, দরিদ্র কৃষকদের বাড়ীতে থাকতে পারেনা। এগুলো তারা দরকারও মনে করেনা। আমরা কমিউনিস্ট, তাই এই ধরণের কথাবার্তা বলি। আমরা কিন্তু মধ্যশ্রেণীর লোকেদের উপর এমন কঠিন শর্ত আরোপ করিনা, কিন্তু তাদেরকে বিপ্লব করতে হলে অনেক ওলট পালটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যথার্থ বিজ্ঞানকে ধারণ করতে হলে জনগণের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে থাকতে হবে। মধ্যশ্রেণীর লোকেরা একটু সুযোগ সুবিধা পেলেই যে কোন আন্দোলনের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করে অথবা বিদেশে আশ্রয় নেয়।

সাম্রাজ্যবাদ অথবা সম্প্রসারণবাদ তাদের আশ্রয় দেয় ধর্মবাদী দৃষ্টিকোন থেকে এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মকে উস্কানী দিতে আর আগ্রাসনের অজুহাত খাঁড়া করতে।

তাই মধ্যশ্রেণীর নেতৃত্বে নারী প্রশ্নটি সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারেনা, এর গভীরে পৌঁছতে পারেনা, এক ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত হতে পারেনা।

নারী প্রগতির প্রশ্নটি যদি সমাজের আমূল বিপ্লবী রূপান্তরের প্রশ্নের সাথে যুক্ত হয় তবেই তা সফল হতে পারে। এমন এক সাম্যবাদী সমাজের কথা কল্পনা করুন যেখানে কোন শোষণের চিহ্ন নেই, নারীরা আর যৌন দাসী নয়, সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র নয়!

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী