আফগানিস্তানের ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, প্রধানতঃ মাওবাদী) দলিল। মাওবাদের তীরকে নিক্ষেপ করুন বিশ্বসর্বহারা বিপ্লবের লক্ষ্যে! আসুন ২রা জানুয়ারী সভাপতি সিরাজ সিকদারের শহীদ হওয়ার দিবসে নিজেদেরকে সারিবদ্ধ করি তাঁর স্মৃতি ও অবদানসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

মাওবাদের তীরকে নিক্ষেপ করুন বিশ্বসর্বহারা বিপ্লবের লক্ষ্যে!

আসুন ২রা জানুয়ারী সভাপতি সিরাজ সিকদারের শহীদ হওয়ার দিবসে নিজেদেরকে সারিবদ্ধ করি তাঁর স্মৃতি অবদানসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে

মার্কসবাদলেনিনবাদমাওসেতুঙ চিন্তাধারা আমরা কিভাবে প্রয়োগ করবো আমাদের দেশের বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে? মার্কসবাদলেনিনবাদমাওসেতুঙ চিন্তাধারা হবেতীর যা আমাদের নিক্ষেপ করতে হবে পূর্ববাংলার বিপ্লবকে লক্ষ্য করে যারা আজ লক্ষ্যহীনভাবে তীর ছোঁড়েন, এলোপাথারী তীর ছোঁড়েন, তারা সহজেই বিপ্লবের ক্ষতি করতে পারেন মার্কসবাদী নামধারী বহু ব্যক্তিইএলোপাথারী তীর ছুড়ে সুবিধাবাদী প্রতিবিপ্লবী ভূমিকা পালন করছেন

— সভাপতি সিরাজ সিকদার

তালিবান প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আফগানিস্তানে শাসন করেছে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ –এর পূর্ব পর্যন্ত। তালিবান চক্র ছিল মূলতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এক প্রতিক্রিয়াশীল ফসল, আর তারা অন্য কিছু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থনও ভোগ করছিল। কিন্তু মার্কিনপন্থী ইসলামিক চরমপন্থী আল কায়দাই এই চক্রকে আফগানিস্তানে শাসন কায়েমে পরিচালিত করেছে। পাকিস্তান আর আরব প্রতিক্রিয়াশীলেরা ছিল সবচেয়ে নির্ধারক শক্তি যারা আফগানিস্তানে তালিবান শাসকদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। বস্তুত, পাকিস্তান রাষ্ট্রই সর্বাধিক সুবিধা ভোগ করেছে, তালিবানকে একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং আফগানিস্তানে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে।

আফগানিস্তানের তrকালীন বাম ও মাওবাদী শক্তিসমূহ তালিবানী শাসনাধীন আফগানিস্তানকে একটা আধা-উপনিবেশিক দেশ হিসেবে চরিত্রায়িত করেছিল। এই বিশ্লেষণ ছিল পরিস্থিতির সরলীকরণ। এমন একটা বিশ্লেষণ পরিস্থিতির জটিলতা ভুলে গিয়েছিল। তালেবান শাসকগোষ্ঠি কতিপয় দাতাদের দ্বারা সমর্থিত ছিল, কিন্তু পাকিস্তানী সরকারের প্রতি তালেবানের অধীনতা ও বাধ্যতা প্রমাণ করেঃ এটা ছিল প্রধানতঃ পাকিস্তানী রাষ্ট্র যার হাতে ছিল তালেবান সরকারের রিমোট কন্ট্রোল। পরিস্থিতির জটিলতা ছিল অনেক দ্বন্দ্বের অস্তিত্বের কারণে। মৌলিক দ্বন্দ্বসমূহ তখন ছিলঃ

১। আফগানিস্তানের জনগণের সাথে পাকিস্তানের পুতুল তালেবান রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব তথা পাকিস্তান সম্প্রসারণবাদের দ্বন্দ্ব।

২। আফগানিস্তানের কৃষক জনতা বনাম সামন্তবাদ দ্বন্দ্ব

৩। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ, প্রধানত মার্কিনের সাথে আফগানিস্তানের জনগণের দ্বন্দ্ব

৪। প্রতিবেশী দেশগুলির সম্প্রসারণবাদের সাথে জাতিয় দ্বন্দ্ব

৫। আফগানিস্তানের শ্রমিকশ্রেণী বনাম বুর্জোয়া শ্রেণী দ্বন্দ্ব

৬। আফগানিস্তানের নিপীড়িত জনগণের ঐতিহাসিক স্বার্থের সাথে ইসলামিক মৌলবাদ, প্রধানত আরব প্রতিক্রিয়াশীল ইসলামবাদের দ্বন্দ্ব।

এছাড়াও অনেক দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু উপরেল্লিখিতগুলো ছিল মৌলিক, আর উপরের দ্বন্দ্বগুলো প্রধান দ্বন্দ্ব হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারত ছিল, কিন্তু প্রথমটি ছিল প্রধান দ্বন্দ্ব।

অতঃপর প্রশ্ন আবারো উত্থাপিত হয়। আফগানিস্তান কি আধা-উপনিবেশ না উপনিবেশ ছিল?

যদি তা উপনিবেশ হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে আফগানিস্তানের তখনও তালিবান “কেন্দ্রীয়” সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা “মুক্ত” অথবা “তখনো অনধিকৃত” এলাকাগুলোকে বিচার করবো? যদি তা আধা উপনিবেশ হয়ে ছিল, তাহলে পাকিস্তানের পুতুল তালিবান শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকা বিপুল শতকরা জমির সমস্যার আমরা কিভাবে সমাধান করবো?

এর জোয়ারে, তালিবানের অধীনে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ এলাকা চলে গিয়েছিল। কিন্তু তালিবান ছিল নামে শাসক। বাস্তবে সবকিছু পাকিস্তানী সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং এমনকি উপজেলা স্তরের কার্যক্রমও পাকিস্তানী সামরিক ও অফিসারদের দ্বারা করা হতো।সুতরাং আফগানিস্তানের জন্য এটা ছিল আধা-উপনিবেশিক পরিস্থিতির চেয়ে বেশী কিছু। এর রয়েছে উপনিবেশের অনেক আবশ্যিক চরিত্র।

স্বাধীনতাপূর্ব পূর্ববাংলা একদা ছিল পাকিস্তানের উপনিবেশ। সংশোধনবাদীরা একে বিশ্লেষণ ও গ্রহণ করতে পারেনি। তারা উপলব্ধি করতে পারেনি যে পাকিস্তানের মতো একটা আধা-উপনিবেশিক দেশের উপনিবেশ থাকতে পারে।

এটা ছিল সভাপতি সিরাজ সিকদার যিনি সত্যিকারভাবে ও দ্বান্দ্বিকভাবে সূত্রায়িত করেনঃ একটা আধা-উপনিবেশের উপনিবেশ থাকতে পারে।

তালিবানের অধীনে আফগানিস্তানেরও ছিল একই পরিস্থিতি। আফগানিস্তানের বিশ্ব ইসলামিক মৌলবাদ কর্তৃক অধিকৃত অবস্থার দ্বন্দ্বের প্রধান দিক ছিল পাকিস্তানী পক্ষ।

এই পক্ষটা তালিবানের “ভাগ্য” সাজানোর নির্ধারক ছিল। তাই, আধা-উপনিবেশিক পাকিস্তানই আফগানিস্তানকে উপনিবেশে রূপান্তরিত করে। আফগানিস্তান ও তrকালীন পূর্ববাংলার পার্থক্য হচ্ছেঃ পূর্ববাংলা অথবা বাংলাদেশ তখন ছিল পাকিস্তানের অংশ আর তালিবান অধীন আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের অংশ ছিলনা। বরং পাকিস্তানী সম্প্রসারণবাদ হচ্ছে সেই যে আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক ছিল।

তাই, পূর্ববাংলার মতো আফগানিস্তানও পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়। কিন্তু আফগানিস্তানে “অ-তালিবানীকৃত” এলাকাসমূহের অস্তিত্ব এবং তালিবানকে পুতুল বানানোয় নির্ধারক গুরুত্বের মধ্যে অন্যান্য অ-পাকিস্তানী ধারাসমূহের প্রভাবও ছিল যার কারণে এটা বলা সঠিক যে তালিবান অধীন আফগানিস্তান ছিল আধা-সামন্তবাদী, উপনিবেশিক, আধা-উপনিবেশিক দেশ যাতে উপনিবেশিক দিক ছিল প্রধান।

সভাপতি সিরাজ সিকদারের সঠিক সূত্রায়ণই আমাদের সক্ষম করে তোলে তালিবান-অধীন আফগানিস্তানকে চরিত্রায়িত করতে এক বৈজ্ঞানিক সূত্রায়ণ দ্বারা তথা এই মৌলিক সূত্রঃ আধা-উপনিবেশের উপনিবেশ থাকতে পারে।

পূর্ববাংলা ছিল একটা আধা-উপনিবেশের উপনিবেশ। কিন্তু তালিবানের অধীন আফগানিস্তান, পরিস্থিতির জটিলতার কারণে, উপনিবেশিক দিক প্রধান হলেও, এখানে আংশিকভাবে অন্যান্য প্রতিবেশী সম্প্রসারণবাদের আধা-উপনিবেশ পরিস্থিতি ও আফগানিস্তানে প্রধানত উপনিবেশ অবস্থা পাশাপাশি ছিল।

সত্যিই, আমাদের দেশের মূর্ত পরিস্থিতিতে আমরা সভাপতি সিরাজ সিকদারের সূত্রায়ণকে বিকশিত করেছি। সিপিএমএলএম বাংলাদেশ-এর কমরেডগণ সঠিকভাবে দাবী করেনঃ আমাদের অবশ্যই কমরেড সিরাজ সিকদারের চিন্তাধারা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটা সত্য। প্রতিটি চিন্তাধারা, তা যে দেশ তাকে জন্ম দিয়েছে তার দ্বারা বিশেষায়িত হলেও, অনেক আন্তর্জাতিক দিক ধারণ করে। এটা গনসালো চিন্তাধারার ক্ষেত্রে সত্য যা বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবে অনেক অবদান রেখেছে। সভাপতি সিরাজ সিকদারের শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটা সত্য ছিল যা অনেক অবদান রাখে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার বিপ্লবে।

তালিবান-অধীন আফগানিস্তানের সঠিক বিশ্লেষণে পর আমরা সভাপতি সিরাজ সিকদারের সঠিক শিক্ষার প্রয়োগে পৌঁছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন। আমরা এখন মুক্ত হয়েছি আফগানিস্তানের তrকালীন মাওবাদীদের ভূয়া বিশ্লেষণ থেকে যারা সূত্রায়িত করেছিল – এবং যা এখনও তাদের অনেকে বলে – যে তালিবান-অধীন আফগানিস্তান ছিল একটা আধা-উপনিবেশিক রাষ্ট্র।

তালিবান প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানের সম্প্রসারণবাদী আধিপত্যের দিক থেকে কখনো কখনো ছিল দোদুল্যমান। তাই, কখনো কখনো তালিবানের অধীনে আফগানিস্তান উপনিবেশ ও আধা-উপনিবেশ হওয়ার মাঝে একটা দোদুল্যমানতার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল কিছু পরিমাণে। কিন্তু এই দোদুল্যমানতার পরিস্থিতির মধ্যে উপনিবেশিক দিকটি ছিল প্রধান। তাই, আমরা উপসংহার টানতে পারিঃ

আধা-উপনিবেশের একই সাথে আধা-উপনিবেশ ও উপনিবেশ থাকতে পারে। কিন্তু যুক্তির দিক থেকে একটা দেশের জন্য একই এলাকায় পরমভাবে একই সময়ে উপনিবেশ ও আধা-উপনিবেশ বলা ভুল। সত্যিই, এই বৈচিত্র্য ও দোদুল্যমানতা সময় ও এলাকাভেদে সংঘটিত হয়।সুতরাং একটা নির্দিষ্ট সময়ে ক দেশ আধা-উপনিবেশিক খ দেশের আধা-উপনিবেশ হতে পারে আবার অন্য সময়ে উক্ত ক দেশ উক্ত খ আধা-উপনিবেশিক দেশের উপনিবেশ হতে পারে।

আফগানিস্তানের ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন সভাপতি সিরাজ সিকদারের শহীদ দিবস স্মরণ করছে, এবং ঘোষণা করছেঃ কমরেড আকরাম ইয়ারি যেমন আফগানিস্তানে মাওবাদী লাইনের প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি সিরাজ সিকদার বাংলাদেশে মাওবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাই, আমরা উপসংহার টানি যে এই দুই প্রতিষ্ঠাতা নেতার পথনির্দেশক চিন্তাধারা ব্যতীত দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশে কোন মাওবাদ হতে পারেনা। দক্ষিণ এশিয়ায় সফল বিপ্লবের জন্য পথনির্দেশক চিন্তাধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই, সকল দেশের জন্যই এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অনেক সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে, দুনিয়ার এই অংশের বিপ্লবের পথনির্দেশক চিন্তাধারাসমূহের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ও সম্পর্ক অধ্যয়ণ করা নির্ধারক গুরুত্বসম্পন্ন।

সভাপতি সিরাজ সিকদারকে স্মরণ করা মানে হচ্ছে বাংলাদেশের নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে গৌরবান্বিত করা। আমরা সভাপতি সিরাজ সিকদারের সংশোধনবাদ-বিরোধী অবদান ও সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। সত্যিই, চারু মজুমদার, সিরাজ সিকদার, আকরাম ইয়ারি, ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া ও গনসালোর মতো নেতাদের ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক অবদান ছাড়া মাওবাদ বলতে যা বোঝায় তার মৌলিক কোন উপলব্ধি হতোনা। তrকালীন পূবাসপা এমইউজির কমরেডগণ সঠিকভাবে বলেছিলেনঃ আমরা মাওবাদ পাই মাও সেতুঙ, সিরাজ সিকদার, চারু মজুমদার, ইব্রাহিম কায়পাক্কায়া, গনসালো থেকে! এখানে আমরা আফগানিস্তানে যুক্ত করিঃ আমরা আফগানিস্তানে মাওবাদ পাই সভাপতি আকরাম ইয়ারির লাল লাইন থেকে। কমরেড আকরাম ইয়ারিকেও প্রতিক্রিয়াশীলরা হত্যা করেছিল। তিনি সংশোধনবাদী পিডিপিএ শাসকগোষ্ঠীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি

আফগানিস্তানের ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (মার্কসবাদীলেনিনবাদীমাওবাদী, প্রধানতঃ মাওবাদী)

জানুয়ারি, ২০১৩।