সিরাজ সিকদার রচনাঃ বিপ্লবে নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভূমিকা

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১৮ জুলাই ২০১৪


 

পিডিএফ

একটি পার্টির রয়েছে নেতৃত্ব ও কর্মী। নেতৃত্ব ও কর্মী হচ্ছে একটি দ্বন্দ্বের দুটো দিক। [১] নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভূমিকা বিপ্লবে সুনিদিষ্ট।

পার্টি-লাইন ও নেতৃত্ব

সভাপতি মাও বলেছেন, “পরিচালকদের (নেতৃত্বের–লেখক) দায়িত্ব প্রধানতঃ দু’টোঃ অভিমত পেশ করা ও কেডারদের কাজে লাগানো।”

“সমস্ত পরিকল্পনা, সিন্ধান্ত, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি অভিমত পেশ করার আওতায় পড়ে।” [২] অর্থাৎ, রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক, মতার্দশগত ও কর্মপদ্ধতিগত এবং অন্যান্য লাইন নির্ধারণ করা ও তা বাস্তবায়নে কর্মীদের কাজে লাগানো নেতৃত্বের দায়িত্ব। লাইন প্রণয়ন ও কর্মীদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা হচ্ছে নির্ণায়ক।

একটি পার্টির বিকাশ ও বিজয় অর্জনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক লাইন নির্ধারণ করা। লাইন সঠিক হলে ক্ষুদ্র শক্তি বিরাট হয়, সশস্ত্র শক্তি না থাকলে তা গড়ে উঠে, রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে তা অর্জিত হয়, কর্মী সংগৃহীত হয়, তারা আত্মবলিদানে উদ্বুদ্ধ হয়, শৃংখলা পালন করে, কেন্দ্রের প্রতি অনুগত হয়।

লাইন ভুল হলে কর্মীরা আত্মবলিদানে উদ্বুদ্ধ হয় না, শৃংখলা পালন করে না, শেষ পর্যন্ত তারা চলে যায়, পার্টির পূর্ব-অর্জিত ফল খোয়া যায়।

লাইন সঠিক হলে কর্মীদের আত্মবলিদান ও রক্তপাত সফল হয়, আর লাইন ভুল হলে কর্মীদের আত্মবলিদান ও রক্তপাত বৃথা যায়। কাজেই সঠিক লাইন হচ্ছে পার্টির প্রাণ। মহান লেনিন সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির সঠিক লাইন রচনা করেন, পার্টি তা গ্রহণ ও কার্যকরী করে। ফলে সোভিয়েট ইউনিয়নে সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের আত্মত্যাগ সার্থক হয় (পরবর্তীকালে সোভিয়েট ইউনিয়নে সংশোধনবাদীদের ক্ষমতা দখলের ফলে এ আত্মত্যাগ বৃথা যায়)।

সভাপতি মাওসেতুঙ মহান চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঠিক লাইন প্রণয়ন করেন, পার্টি তা গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করে। এভাবে চীনা বিপ্লব অব্যাহতভাবে বিজয় অর্জন করেছে, কর্মী ও জনগণের আত্মত্যাগ ও রক্তপাত সার্থক হচ্ছে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও সর্বহারা পার্টির সঠিক লাইন কমরেড সিরাজ সিকদার প্রণয়ন করেন, সংগঠন তা গ্রহণ করে, কর্মীরা বাস্তবায়িত করে। এভাবে সংগঠনের বিজয় ও অগ্রগতি অব্যাহতভাবে অর্জিত হচ্ছে। কর্মী, গেরিলা, সহানুভুতিশীলদের আত্মত্যাগ ও রক্তপাত সার্থক হচ্ছে।

এ সঠিক লাইনের কারণেই শ্রমিক আন্দোলন বিকাশ লাভ করে, কর্মী সংগৃহীত হয়, তারা আত্মবলিদানে উদ্ভুদ্ধ হয়, শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের জটিল পরিস্থিতির মধ্যে শ্রমিক আন্দোলন টিকে থাকে ও বিকাশ লাভ করে, শেষ পর্যন্ত তার ঐতিহাসিক ভূমিকা সমাপ্ত করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি প্রতিষ্ঠা করে।

সর্বহারা পার্টি আভ্যন্তরীণ ও বাইরের শ্রেণী ও জাতীয় শত্রুদের এবং তাদের চরদের মারাত্মক হামলার মুখেও সঠিক লাইনের কারণে টিকে আছে এবং অব্যাহতভাবে বিকাশ লাভ করছে।

এভাবে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি সমগ্র পূর্ববাংলাব্যাপী জাতীয় গণভিত্তিক পার্টিতে বিকাশ লাভ করে এবং বিরাটাকার সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ সূচনার স্তরে পৌঁছেছে।

পক্ষান্তরে হক-তোয়াহা, মতিন-আলাউদ্দিন, দেবেন-বাসার, কাজী-রণো, মণিসিংহ-মোজাফফর প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী নেতৃত্বের ভুল ও বিশ্বাসঘাতক লাইনের জন্য সাধারণ খাঁটি কর্মী ও বিপ্লবীদের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়েছে, কর্মীরা তাদের প্রতারণা বুঝতে পেরে সত্যিকার সর্বহারা পার্টিতে ব্যাপক সংখ্যায় যোগদান করছে। এভাবে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধবাদীরা মারাত্মকভাবে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে, তারা তাদের চুড়ান্ত ধ্বংসের স্তরে পৌঁছেছে। তাদের সাথে যুক্ত সাধারণ কর্মীদের রক্তপাত ও আত্মবলিদান ভুল পথে ব্যবহৃত হয়ে ব্যর্থ হচ্ছে।

১৯৪৭ সালের পূর্বেকার পাক-ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ভুল ও বিশ্বাসঘাতক লাইনের জন্য লক্ষ লক্ষ সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যায়, সাম্রাজ্যবাদের দালাল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীরা পাক-ভারতের ক্ষমতা দখল করে।

ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের ভুল লাইনের জন্য লক্ষ লক্ষ কমিউনিস্ট ও জনগণ প্রাণ হারায়।

সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের বিশ্বাসঘাতক বুর্জোয়া লাইনের কারণে যে সোভিয়েট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য কোটি কোটি সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী দেশে পরিণত হয়, সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টি বুর্জোয়া ফ্যাসিস্ট পার্টিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে কোটি কোটি সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণের আত্মবলিদান বৃথা যায়।

পার্টি নেতৃত্বের বিশ্বাসঘাতক লাইনের জন্য পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ [৩] ও মঙ্গোলিয়ার পার্টি সংশোধনবাদী পার্টিতে রূপান্তরিত হয় এবং উক্ত দেশগুলো সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশ বা তার ওপর নির্ভরশীল দেশে পরিণত হয়।

একারণে সভাপতি মাও বলেছেন, “কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংশোধনবাদের আর্বিভাব সবচেয়ে বিপজ্জনক” এর কারণ কেন্দ্রীয় কমিটি হচ্ছে সংগঠনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বদাতা সংস্থা, সমগ্র সংগঠন এর অধীন। কাজেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংশোধনবাদের উদ্ভব ও তার প্রাধান্যের অর্থ হচ্ছে সমগ্র সংগঠন সংশোধনবাদী হয়ে যাওয়া।

একারণেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রেণী ও জাতীয় শত্রুর চর, বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীলরা সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবী পার্টিকে ধ্বংস করা, একে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের স্বার্থরক্ষাকারী পার্টিতে পরিণত করার জন্য পার্টির নেতৃত্ব দখলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির অভ্যন্তরস্থ শ্রেণীশত্রু বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রেণী ও জাতীয় শত্রু ও তাদের চর বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের যোগসাজোশে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব দখলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। তার উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব দখল করে বিশ্বাসঘাতক লাইন প্রণয়ন করা। পার্টির সকল কর্মীদের তা বাস্তবায়ন করতে লাগানো, তাদের আত্মত্যাগকে বিপথে চালনা করা, দেশীও ও আন্তর্জাতিক শ্রেণী ও জাতীয় শত্রু ও তাদের চর বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সেবা করা।

সে কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্ব ও সঠিক লাইনের ভূমিকাকে অস্বীকার করে, কর্মীদের আত্মবলিদান ও রক্তপাতের কথা উল্লেখ করে তা তার জঘন্যতম স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালায়।

তার উদ্দেশ্য ছিল কর্মীরা যেন পার্টি ও বিপ্লবের জন্য কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্ব ও তার দ্বারা প্রণীত সঠিক লাইনের গুরুত্ব উপলব্ধি না করে, মূল্যহীন গৌন মনে করে, ফজলু চক্রের পার্টি-ক্ষমতা দখলের সাধারণ পরিকল্পনার শিকার হয়।

বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র গঠনের সময় কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করাকে বিরোধিতা করে। সঠিক নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করার অর্থ হচ্ছে পার্টির মাঝে এক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও তা শক্তিশালী করা, কেন্দ্রকে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন করা, পার্টি কর্মী ও জনগণকে নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ও অনুগত করা, শত্রুকে ভীত সন্ত্রস্ত করা এবং তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা।

ফজলু চক্রের উদ্দেশ্য ছিল এক কেন্দ্রকে ভাঙ্গা ও দুর্বল করা, তার প্রভাব ও ক্ষমতা হ্রাস করা, পার্টি-কর্মী ও জনগণকে নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীন করা ও শত্রুদের সহায়তা করা।

সে নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করার বিরোধীতা করে এবং নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জঘণ্যতম অপবাদ রটায়, সঠিক নেতৃত্ব ধ্বংস ও হেয় করার জন্য এক হাজার একটা প্রচেষ্টা চালায়। এমনকি হত্যার ষড়যন্ত্র চালায়, তার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য ছিল এ সকল কুকর্ম করে পার্টির ক্ষমতা দখল করা।

নেতৃত্বের নির্ভুল লাইন প্রণয়নের পদ্ধতি

নেতৃত্বর নির্ভুল লাইন গড়ে ওঠে বস্ত থেকে চেতনার, চেতনা থেকে বস্ততে অর্থাৎ অনুশীলন থেকে জ্ঞানে, জ্ঞান থেকে অনুশীলনে অনেকবার পুনরাবৃত্তির পরেই। এ হচ্ছে মার্কসবাদের জ্ঞানতত্ত্ব অর্থাৎ দ্বন্দ্ববাদী বস্তুবাদের জ্ঞানতত্ত্ব। সভাপতি মাও একে আরো বিশদভাবে “নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কতিপয় সমস্যা” প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন।

এখানে তিনি বলেছেন, “আমাদের পার্টির সমস্ত নির্ভুল নেতৃত্ব অপরিহার্যভাবেই হচ্ছে জনসাধারণ থেকে আসা ও জনসাধারণের মধ্যে যাওয়া। এর অর্থ হচ্ছে জনসাধারণের মতামত (ইতস্ততঃ ছড়ানো ও অব্যবস্থিত) সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা (গবেষণার মাধ্যমে তাদের কেন্দ্রীভূত ও সুব্যবস্থিত মতে রূপান্তরিত করা), তারপর তা নিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রচার ও ব্যাখ্যা করা, এই মত জনসাধারণের নিজস্ব মতে পরিণত করা যাতে জনসাধারণ এই মতকে কার্যকরী করেন, কাজে পরিণত করেন এবং জনসাধারণের কার্যাক্রিয়ার ভিতর দিয়েই এই মত ভুল কি নির্ভুল  তা যাচাই করে নেওয়া, পুনর্বার জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করা এবং তা জনসাধারণের কাছে গিয়ে কার্যকরী করা। আর এমনি চলে বারংবার, চলে সমাপ্তিহীন ঘূর্ণাবর্ত, ফলে প্রতিবারই এই মত হয়ে ওঠে আরো বেশী নির্ভুল, আরো বেশী প্রাণবন্ত, আরো বেশী সমৃদ্ধ এ হচ্ছে মার্কসবাদের জ্ঞান তত্ত্ব।”

এ থেকে আমরা নিম্নলিখিত জ্ঞানের প্রক্রিয়া পাইঃ

ক) বস্তুর সাথে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান – অনুশীলন।

জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করা, অর্থাৎ বস্তুর সংস্পর্শে যাওয়া, বস্তুকে মস্তিষ্কে প্রতিফলিত করা, ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান সংগ্রহ করা। এই জন্য প্রয়োজন নেতৃত্বের বিন্দু ভেঙ্গে প্রবেশ করা, অর্থাৎ একটি ইউনিট বা এলাকায় নেতৃত্বের প্রতিটি সমস্যা সমাধান করা।

খ) ধারণাত্মক জ্ঞান – তত্ত্বের পর্যায়।

এ স্তর হচ্ছে সংগৃহীত মতামতকে সুব্যবস্থিত মতে রূপান্তরিত করা, ধারণাত্মক জ্ঞান-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন রচনা করা অর্থাৎ বস্ত-ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকে চেতনা-ধারণাত্মক জ্ঞানের স্তরে উন্নীত করা।

গ) বস্তর সাথে সংস্পর্শ – অনুশীলন।

ধারণাত্মক জ্ঞান-চেতনা-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন জনসাধারণের নিকট নিয়ে যাওয়া, তা কার্যকরী করা, অর্থাৎ ধারণাত্মক জ্ঞান-চেতনা-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন অনুশীলনে প্রয়োগ করা, তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন অনুযায়ী বস্তুকে রূপান্তরিত করতে লেগে থাকার মাধ্যমে তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইনের সঠিকটা যাচাই করা।

এ অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় যে ধারণাত্মক জ্ঞান-চেতনা-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন অনুযায়ী বস্তুর রূপান্তর হয় তা সঠিক। ওই বস্তু সম্পর্কিত জ্ঞান ওই স্তরে সম্পূর্ণ হয়।

বস্তুর পরিবর্তন ও রূপান্তরের সাথে ধারণাত্মক জ্ঞান পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে অনুশীলন ও প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান হয়, অভিজ্ঞতার সারসংকলন ও গবেষণার মাধ্যমে অসাঞ্জস্যসমূহ দূর করে নতুন তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন অর্থাৎ ধারণাত্মক জ্ঞান প্রণয়ন করতে হবে, পুনরায় তা যাচাইয়ের জন্য অনুশীলনে প্রয়োগ করতে হবে; বস্তুকে পরিবর্তন ও রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োগ করতে হবে।

এভাবে বস্তু-অনুশীলন-ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান থেকে চেতনা-ধারণাত্মক জ্ঞান-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন এবং চেতনা-ধারণাত্মক জ্ঞান-তত্ত্ব-প্লান-পরিকল্পনা-সাধারণ লাইন থেকে বস্তু-অনুশীলন-ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানে বারংবার আবর্তিত হয়ে সঠিক ও নির্ভুল লাইন গড়ে ওঠে। কর্মী পরিচালনার ক্ষেত্রেও গণ লাইনের কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।

এ পদ্ধতি প্রয়োগ না করলে নেতৃত্ব হবে আমলাতান্ত্রিক ও আত্মগত।

অর্থাৎ, আমলারা শুধু নির্দেশ দিয়ে যায়, তাদের নির্দেশের বাস্তব ভিত্তি না থাকায় তা হয় আত্মগত।

কাজেই নেতৃত্বের নির্ভুল লাইন আকাশ থেকে পড়ে না বা তা সহজাত নয়। এটা অনুশীলন থেকেই আসে।

শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের নির্ভুল লাইন শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের অনুশীলন থেকেই আসে।

বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা ও ফজলু চক্র পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও কমরেড সিরাজ সিকদার জনগণের সাথে যুক্ত নয় কিন্তু পার্টির লাইন সঠিক একথা বলছে।

এর অর্থ হচ্ছে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সঠিক লাইন কমরেড সিরাজ সিকদারের সহজাত বা আকাশ থেকে পড়েছে। এটা প্রমাণ করে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও ফজলু চক্র ভাববাদী।

মানুষের সৃজনশীল ভূমিকা

বাস্তব অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা, তা সারসংকলন করে সাধারণ পরিচালনার নির্ভুল লাইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হচ্ছে মানুষের সৃজনশীল ভূমিকা।

এটা মানুষে মানুষে তফাৎ হবে। অর্থাৎ মানুষের যোগ্যতার তারতম্য হবে।

নেতৃত্বের এ সৃজনশীল ভূমিকা সর্বাধিক প্রয়োজন। মার্কসবাদ-লেলিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সাহায্যে বাস্তব অভিজ্ঞতার সারসংকন করা ও নির্ভুল লাইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগ করার ক্ষমতাসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্ব বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য।

এই সৃজনশীল ভূমিকার তারতম্যের জন্য কেউ হন মহান প্রতিভাবান, কেউ হন মহান মার্কসবাদী-লেনিনবাদী।

যোগ্যতার পার্থক্য অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন হলেও প্রত্যেকেই জনগণের নিস্বার্থ সেবক হবেন, যোগ্যতা বেশী হলেও জনগণের মাথায় চড়ে বসা লাটসাহেব হবার অধিকার কারো নেই।

সভাপতি মাও নেতৃত্ব ও কর্মীদের শিখিয়েছেন, “আমাদের সবারই তার (নর্মান বেথুনের – লেখক) সম্পূর্ণ নিস্বার্থ ভাবমানস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। এই ভাবমানস গ্রহণ করলে সকলেই জনগণের পক্ষে খুবই হিতকর হবেন। একজন মানুষের যোগ্যতা কম বা বেশী হতে পারে, কিন্তু এই ভাবমানস থাকলেই তিনি হতে পারেন মহাপ্রাণ লোক, প্রকৃত লোক, নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন লোক, নীচ রুচি থেকে মুক্ত লোক ও জনগণের জন্য হিতকর লোক”

বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র পার্টির নেতৃত্ব ও কমরেড সিরাজ সিকদারের সৃজনশীল ভূমিকাকে অস্বীকার করেছে, পার্টির বিকাশ ও বর্তমান স্তরে পৌঁছানোতে কমরেড সিরাজ সিকদারের কোন ভূমিকা নেই এ ধরণের কথা বলছে, যাতে তার নেতৃত্ব দখলের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা যায়। নিজেকে সে সবচাইতে যোগ্য বলে মনে করেছে যে তাকে ছাড়া ‘পৃথিবী ঘুরা বন্ধ হয়ে যাবে’, জনগণের নিস্বার্থ সেবক হওয়ার পরিবর্তে সে পার্টি, কমরেড ও জনগণের মাথায় চড়ে বসা লাটসাহেব হয়ে বসতে চেয়েছে, স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করার অলীক স্বপ্ন দেখেছে।

যৌথ নেতৃত্ব ও ব্যক্তি বিশেষের ভূমিকা

নেতৃত্ব গঠিত হয় পার্টির সবচাইতে অগ্রগামী কর্মীদের নিয়ে। বিপ্লবে নেতৃত্বের প্রত্যেকের বস্তুগত ভূমিকা রয়েছে।

নেতৃত্বের প্রতি সদস্যের যোগ্যতা বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ নিশ্চিত করা, একই সাথে নেতৃত্বের মাঝে গণতান্ত্রিক জীবন বজায় রাখার মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্বকে কার্যকরী করা, এভাবে ব্যক্তিগত ভূমিকা ও যৌথ নেতৃত্বের মধ্যে যথাযথ সামঞ্জস্য বিধান করা সর্বহারা বিপ্লবী ও নেতৃত্বের দায়িত্ব। সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নেতা গড়ে ওঠে। এধরণের নেতা লাইন প্রণয়ন ও কেডারদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের (উদাহরণ-কেন্দ্রীয় কমিটির) মাঝে প্রধান ভুমিকা পালন করে।

নেতৃত্ব সংস্থা এধরণের নেতার লাইন পর্যালোচনা ও বিবেচনা করে গ্রহণ করে, গণতন্ত্র ও যৌথ নেতৃত্ব কার্যকরী করে, সমগ্র পার্টি ও বিপ্লব বিজয় অর্জন করে।

সোভিয়েট ইউনিয়নে মহান লেনিন পার্টির লাইন ও কর্মীদের কাজে লাগানোর পদ্ধতি প্রণয়ন করেন, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সমগ্র পার্টি এটা পর্যালোলচনা ও বিবেচনা করেন এবং গ্রহণ করেন, সমগ্র পার্টি কমরেডরা তা বাস্তবায়িত করেন।

এভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি মহান লেনিনের ব্যক্তিগত ভূমিকাকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ প্রদান করে, একই সাথে গণতন্ত্র ও যৌথ নেতৃত্ব বজায় রাখে।

চীনে সভাপতি মাওসেতুঙ পার্টির লাইন ও কর্মপদ্ধতি রচনা করেন এবং পার্টি তা গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করে। এভাবে সমগ্র চীন মুক্ত হয়।

আলবেনিয়ায় এনভার হোকজা পার্টি লাইন ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করেন এবং পার্টি তা গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করে, এভাবে সমগ্র আলবেনিয়া মুক্ত হয়। ভিয়েতনাম, কোরিয়ার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।

প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদীদের ক্ষেত্রেও যৌথ নেতৃত্বের মাঝে ব্যক্তি বিশেষের ভূমিকা প্রধান হয়ে দেখা দেয়।

বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের বেলায়ও দেখা যায় নেতৃত্বের মধ্যকার ব্যক্তিবিশেষ প্রতিক্রিয়াশীল ভুল লাইন ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করে এবং তা কাজে লাগায়। কাউটস্কী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের নেতা হিসেবে তার প্রতিক্রিয়াশীল সংশোধনবাদী লাইন ও কর্মপদ্ধতি কাজে লাগায় ও কর্মীদের, সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণকে প্রতারিত করে।

ক্রুশ্চোভ প্রতিক্রিয়াশীল সংশোধনবাদী লাইন প্রণয়ন ও তা কার্যকরী করে, সোভিয়েট কমিউনিস্ট পার্টি ও রাষ্ট্রকে বুর্জোয়া পার্টি ও রাষ্ট্রে পরিণত করে, ব্রেজনেভ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।

মণিসিং, মোজাফফর, হক, তোয়াহা, বাসার, মতিন, কাজী প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা তাদের প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব সংস্থায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও সর্বহারা পার্টিতে কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিক লাইন প্রণয়ন করেন, বিপ্লবী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি এসকল নির্ভুল লাইন গ্রহণ করে এবং সমগ্র পার্টি তা কার্যকরী করে। ফলে পার্টির বিজয় ও অগ্রগতি অব্যাহতভাবে অর্জিত হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক কমরেড সিরাজ সিকদারের রচিত লাইন পর্যালোচনা এবং তা গ্রহণ ও অনুমোদনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও যৌথ নেতৃত্ব কার্যকরী হচ্ছে।

এভাবে পার্টির নির্ভুল লাইন প্রণয়ন ও কেডারদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যৌথ নেতৃত্বের মাঝে কমরেড সিরাজ সিকদার প্রধান ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিকে ধ্বংস করার সাম্প্রতিক চক্রান্তে ফজলু, সুলতান, হুমায়ুন কবির ইত্যাদির মাঝে প্রধান ভূমিকা পালন করে বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র।

ফজলু চক্র তার পূর্বসূরী ক্রুশ্চোভ-লিউশাউচির মত বিপ্লবী সঠিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে সম্পূর্ণ শূন্য হিসেবে দেখিয়েছে, ক্রুশ্চোভের অনুরূপ [ক্রুশ্চোভ স্ট্যালিনের তথাকথিত ব্যক্তিতাবাদের (Personality Cult) বিরোধীতার নামে রাশিয়ার বিপ্লবে স্ট্যালিনের ভূমিকাকে সম্পূর্ণ মূছে ফেলতে চেয়েছে, তাকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে চিত্রিত করেছে] যৌথ নেতৃত্বের কথা বলে প্রকৃতপক্ষে নিজের প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্ব ও স্বৈরাচার কায়েম করতে চেয়েছে, নেতৃত্বকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করেছে, চক্র গঠন ও বিশ্বাসঘাতকতায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

এভাবে দেখা যায় বিপ্লবী বা প্রতিবিপ্লবী, প্রতিক্রিয়াশীল উভয় ক্ষেত্রেই যৌথ নেতৃত্বের মাঝে ব্যক্তিবিশেষ প্রধান ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

সঠিক নেতৃত্বঃ বিপ্লবের সৃষ্টি

সর্বহারা শ্রেণী, বুর্জোয়া ও অন্যান্য শোষক শ্রেণীবিরোধী শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় আজ হোক আর কাল হোক তার প্রতিনিধিত্বকারী বিপ্লবী রাজনৈতিক পার্টি সৃষ্টি করে, এ রাজনৈতিক পার্টি পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্বও সৃষ্টি করে।

অর্থাৎ সঠিক রাজনৈতিক পার্টি ও নেতৃত্বের সৃষ্টি ইতিহাসের গতিধারার অনিবার্য পরিণতি।

অর্থাৎ চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও মাওসেতুঙের সৃষ্টি কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, চীনা সমাজের শ্রেণী সংগ্রামের ও সামাজিক বিকাশের অনিবার্য পরিণতি।

কাজেই পূর্ববাংলার সমাজের বিকাশের অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর সঠিক রাজনৈতিক পার্টি ও নেতৃত্বের জন্ম লাভ করা।

সর্বহারা পার্টির নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির হোক আর স্থানীয় কমিটির সদস্য হোক, জনগণের মধ্য থেকে শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে, তারা সীমাহীনভাবে জনগণের প্রতি অনুগত, তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং জনগণের মতামতকে কেন্দ্রীভূত করা ও তা কার্যকরি করতে ভাল। এ ধরনের নেতা হচ্ছে সর্বহারার সত্যিকার প্রতিনিধি এবং জনগণ স্বীকৃত একটি সর্বহারা পার্টির রাজনৈতিক পরিপক্কতার লক্ষণ হল এ ধরনের নেতা থাকা। এখানেই থাকে সর্বহারার উদ্দেশ্যের বিজয়ের আশা।

লেনিন সম্পূর্ণ সঠিকভাবেই বলেছেন, “ইতিহাসে কোন শ্রেণীই ক্ষমতা দখল করেনি তার রাজনৈতিক নেতা সৃষ্টি না করে…।” তিনি আরও বলেছেন, “অভিজ্ঞ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী পার্টি নেতৃত্বের ট্রেনিং খুবই দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল কাজ কিন্তু এ ছাড়া ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’-এর ইচ্ছার ঐক্য শুধু কথাই থেকে যাবে।” পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও তার নেতৃত্ব এভাবে সর্বহারা ও জনগণের শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠেছে। এটা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়।

সঠিক লাইন প্রণয়ন ও তা কার্যকরী করতে সক্ষম এবং ব্যাপক পার্টি কমরেড ও জনগণ দ্বারা স্বীকৃত কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্ব প্রমাণ করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক হয়ে ওঠেছে।

ফজলু চক্র এই ইতিহাসকে অস্বীকার করে শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামে সুবিধাবাদ ও ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নেতা হতে চেয়েছিল।

এভাবে সে ইতিহাসের গতিধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার পরিবর্তে ইতিহাসের ভিলেন হিসেবে এ গতিধারার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। অনিবার্যভাবেই সে বাকুনিন, বার্নেস্টাইন, কাউটস্কি, ক্রুশ্চোভ, লিউশাউচীর মত ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়।

নেতৃত্ব পরিবর্তনশীল

সভাপতি মাও বলেছেন, “একটি বিরাট সংগ্রামের প্রক্রিয়ার প্রাথমিক, মধ্যম ও চূড়ান্ত পর্যায়ে নেতৃত্ব গ্রুপের গঠন প্রকৃতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরিবর্তিত থাকে না বা থাকতে পারেনা। অর্থাৎ সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব প্রতিনিয়ত নিজেকে দু’ভাগে ভাগ করছে। কিছু সংখ্যক নেতৃস্থানীয় কর্মী সুবিধাবাদী, সংশোধনবাদী, অধঃপতিত, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীতে পরিণত হয়ে পড়ছে বা নতুন এগিয়ে আসা কর্মীদের তুলনায় অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ফলে সুবিধাবাদী, সংশোধনবাদী, অধঃপতিত, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, অযোগ্য উপাদান বর্জিত হচ্ছে, তাদের স্থান দখল করছে নতুন তাজা রক্ত, যোগ্য কর্মী।

পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অর্থাৎ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান বা সভাপতির বেলায়ও এটা প্রযোজ্য। সভাপতি যদি প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যকার দুই দিকের সংগ্রামকে আঁকড়ে না ধরেন, অসর্বহারা দিকসমূহকে সংগ্রাম করে বর্জন না করেন, অসর্বহারা দিকের প্রাধান্য পেতে দেন, শেষ পর্যন্ত তার মাঝে যদি অসর্বহারা দিক প্রাধান্য পায় তখন তার রাজনৈতিক ও অন্যান্য কার্য পরিচালিত হবে অসর্বহারার দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে, ফলে সব কিছুই হবে ভুল। অনিবার্যভাবেই পার্টির সর্বহারা ও খাঁটি উপাদান তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করবে এবং সভাপতি সংশোধিত ও যোগ্য না হলে বর্জিত হবে।

চীন ও পৃথিবীর বহু দেশের সর্বহারা পার্টিতে বহুবার সভাপতি বা প্রধান সম্পাদক অসর্বহারায় রূপান্তরিত হওয়ার কারণে বর্জিত হয়েছে।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রস্তুতি সংগঠন পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত অনেকেই বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় বর্জিত হয়। পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় সংস্থা বিপ্লবী পরিষদের বহু সদস্যও অযোগ্যতার কারণে বর্জিত হন।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় সদস্য ফজলু-সুলতানচক্র শ্রেণী শত্রু এবং দেশীয় ও আন্তুর্জাতিক শত্রুদের  সাথে যোগসাজশে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করা, উপদল গঠন করার কারণে বর্জিত হয়।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরেও একই প্রক্রিয়া চলে, সর্বহারা পার্টির বিভিন্ন স্তরেও এ প্রক্রিয়া চলছে।

অর্থাৎ ‘বাসিটা বর্জন ও টাটকাটা গ্রহণের’ প্রক্রিয়া নেতৃত্বের বেলায়ও প্রযোজ্য হচ্ছে।

নেতৃত্ব ও কর্মীদের মূল্যায়ন

ক্রুশ্চোভের বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল লাইনের বিরোধীতা করতে যেয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, “চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদাই ঐতিহাসিক বস্তুবাদের সাহায্যে স্ট্যালিনের ভাল ও খারাপ দিকের সামগ্রিক, বস্তুগত ও বাস্তবেই যা ঘটেছে সে ইতিহাসকে উত্থাপনের দাবী জানিয়েছে এবং ঐতিহাসিক ভাববাদের দ্বারা স্ট্যালিনকে আত্মগত স্থুল মূল্যায়ন এবং তাঁকে পুরোপুরি অস্বীকার করাকে এবং ইতিহাসের বিকৃতি ও পরিবর্তনকে বিরোধীতা করেছে।” [৫]

এ থেকে পাওয়া যায়, আমরা নেতৃত্ব ও কর্মীদের মূল্যায়ন ঐতিহাসিক বস্তবাদের সাহায্যে সামগ্রিক বস্তগত ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে করবো। ইতিহাস যেভাবে ঘটেছে সেভাবেই তুলে ধরব।

সভাপতি মাও একে আরো সংক্ষেপে বলেছেন, “দুটি সীমারেখা স্পষ্ট করে অংকন করুন। প্রথমতঃ বিপ্লব না প্রতিবিপ্লব? ইয়েনান না সিয়ান? কেউ কেউ বুঝেন না, এই সীমারেখাকে অবশ্যই স্পষ্ট ভাবে আঁকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যখন তারা আমলাতন্ত্রবাদের বিরোধীতা করেন তখন ইয়েনান সম্পর্কে এমনি করে বলেন যেন সেখানে কিছুই ঠিক নয়; ইয়েনানের আমলাতন্ত্রবাদের ও সিয়ানের আমলাতন্ত্রবাদের মধ্যে তুলনা ও পার্থক্য করেন না, এটা মূলতঃ ভুলদ্বিতীয়তঃ বিপ্লবী বাহিনীর ভুল ও নির্ভুলের মধ্যে, সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যে স্পষ্ট সীমা রেখা টানতে হবে এবং কোনটা মুখ্য কোনটা গৌণ তা স্পষ্ট করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগ না ৭০ ভাগ? কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে বললে চলবে না। ব্যক্তিবিশেষের কাজের মৌলিক মূল্যায়ন আমাদের অবশ্যই করতে হবে যে, তার সাফল্য শতকরা ৩০ ভাগ এবং ভুল শতকরা ৭০ ভাগ, না সাফল্য ৭০ ভাগ ও ভুল ৩০ ভাগ। যদি তার সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ হয় তাহলে তার কাজকে মৌলিকভাবে ইতিবাচক বলে স্বীকার করতে হবে। সাফল্য প্রধান কাজকে ভুল প্রধান কাজ বললে সম্পূর্ণরূপেই ভুল হবে। সমস্যা বিচার করতে গেলে এ দুটো সীমারেখা টানতে আমাদের কিছুতেই ভোলা উচিৎ নয়ঃ বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যকার সীমারেখা এবং সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যকার সীমারেখা। যদি এ দুই  সীমারেখাকে আমরা মনে রাখি, তাহলে ভালভাবে কাজ করতে পারব, অন্যথায় আমরা সমস্যার প্রকৃতিকে গুলিয়ে ফেলবস্বভাবতঃই যদি এ সীমারেখা ভালভাবে আঁকতে হয়, তবে মনোযোগের সঙ্গে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য। প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিটি বিষয়ের প্রতি আমাদের বিশ্লেষণ ও গবেষণার মনোভাব গ্রহণ করা উচিত”

নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে, এ সকল ভুল-ভ্রান্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সমালোচনা-আত্মসমালোচনার পদ্ধতিতে সংগ্রাম করতে হবে।

“আমাদের জোর দিতে হবে কি কি অবস্থায় ভুলগুলো হয়েছে, ভূলের প্রকৃতি ও তার সামাজিক, ঐতিহাসিক এবং মতাদর্শগত শেকড়সমূহকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এগুলো করতে হবে ‘অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের ভুল এড়ানোর’, ‘রোগ সারিয়ে রোগিকে বাঁচানোর’ জন্য যাতে মতাদর্শগত স্পষ্টতা ও কমরেডদের ঐক্যের দুটো লক্ষ্য অর্জিত হয়।” [৬]

নেতৃত্ব ও কমরেডদের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে, এই ব্যক্তিগত জীবনের ত্রুটিবিচ্যুতি যদি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভুল-ত্রুটির সাথে জড়িত না হয়, তবে ছিদ্রানুসন্ধানের প্রয়োজন নেই, কারণ এর দ্বারা সংগঠন বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে, কর্মীরা ভূলে যাবে রাজনৈতিক দায়িত্ব, এটা শত্রুরাই চায়।

বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র তার গুরু ক্রুশ্চোভের মত কমরেড সিরাজ সিকদার ও অন্যান্য সাচ্চা কমরেডদের মূল্যায়ন করে ঐতিহাসিক ভাববাদ দ্বারা, ইতিহাস ও সত্যকে বিকৃত করে তার ইচ্ছানুযায়ী পাল্টায়, আত্মগতভাবে দোষ-ত্রুটি, অপরাধ, মিথ্যা করে কমরেড সিরাজ সিকদার ও সাচ্চা কমরেডদের ওপর চাপিয়ে দেয়। গুজব, অপবাদ, বিশেষ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটায়, ক্রুশ্চোভের অনুরূপ কমরেড সিরাজ সিকদারের ব্যক্তিতাবাদের বিরোধিতার নামে কমরেড সিরাজ সিকদারের ভূমিকাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে।

কাজেই আমাদেরকে নেতৃত্ব ও কমরেডদের মূল্যায়নে ক্রুশ্চোভ ও তার শিষ্য ফজলুচক্রের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া পদ্ধতির বিরোধীতা করতে হবে এবং মার্কসবাদী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

বিপ্লবে কর্মীদের ভূমিকা

কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে সভাপতি মাও বলেছেন, “রাজনৈতিক লাইন নির্ধারিত হয়ে গেলে কেডাররাই হচ্ছে নির্ণায়ক উপাদান।”

অর্থাৎ পার্টির লাইন নির্ণীত হয়ে গেলে প্রয়োজন কেডারদের, যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে, আত্মবলিদানে নির্ভয় হয়ে, সমস্ত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে পার্টির লাইন প্রয়োগ করবেন এবং বিজয় অর্জনের জন্য সংগ্রাম করবেন।

পার্টির জনসাধারণের সাথে সংযোগ হচ্ছে কেডারদের মাধ্যমে এবং পার্টির লাইন কার্যকরী হয় কেডারদের মাধ্যমে।

কেডারদের কঠোর প্রয়াস, আত্মবলিদান ও রক্তপাত সার্থক হয়ে ওঠে যখন তা পার্টির সঠিক লাইন বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ পার্টির বিকাশ ও সফলতা অর্জিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের মুক্তি অর্জিত হয়। পার্টির লাইন ভুল হলে তাদের প্রয়াস, আত্মবলিদান ও রক্তপাত বৃথা যায়।

কাজেই কেডারদের প্রয়োজন নিম্নলিখিত সর্বনিম্ন যোগ্যতা অর্জন করা, “কেডাররা পার্টির লাইন দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করেন কিনা, পার্টির শৃংখলা মানেন কিনা, জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে কিনা, স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম কিনা এবং তারা সক্রিয়, পরিশ্রমী ও নিঃস্বার্থ কিনা।

কেডারদের দায়িত্ব হচ্ছে নেতৃত্বকে সস্নেহে তত্ত্বাবধান করা, তা যাচাই করা, ভুল ও নির্ভুল নির্ণয়ের ক্ষমতা অর্জন করা, পার্টির লাইন নির্ণয়ে নেতৃত্বের ভূমিকাকে সচেতনভাবে উপলব্ধি করা, সঠিক নেতৃত্বকে মেনে চলা ও তাকে রক্ষা করা, শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করা, প্রতিনিয়ত নিজেদের কর্মক্ষমতাকে উন্নীত করা, অধিকতর জনসেবার দায়িত্ব গ্রহণে নিজেদেরকে সক্ষম করে তোলা।

কর্মীদের কাজে লাগানোর পদ্ধতি

সভাপতি মাও বলেছেন, প্রথম তাদের পথ নির্দেশ করা, এর অর্থ তাদের অবাধে কাজ করতে দেওয়া, যাতে করে তারা সাহসের সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন, একই সময়ে তাদের সময়োচিত নির্দেশ দেওয়া্‌ যাতে করে পার্টির রাজনৈতিক লাইনে পরিচালিত হয়ে তারা তাদের সৃজনশীল উদ্যোগকে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

দ্বিতীয়তঃ তাদের মান উন্নত করা। এর অর্থ অধ্যয়ন করার সুযোগ দেওয়া, তাদের শিক্ষাদান করা, যাতে করে তারা তত্ত্বগত ক্ষেত্রে ও কর্ম ক্ষমতার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে উন্নত করতে পারেন।

তৃতীয়তঃ তাদের কাজকর্মের পরীক্ষা করে দেখা এবং তাদের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করা, তাদের সাফল্যকে সামনে এগিয়ে নিতে এবং ভুলকে শোধরাতে তাদেরকে সাহায্য করা। পরীক্ষা ছাড়া কাজের ভার দেওয়া, এবং শুধু মারাত্মক ভুল হলেই তার প্রতি মনোযোগ দেওয়াটা কেডারদের প্রতি যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি নয়।

চতুর্থতঃ যে সব কেডার ভুল করেছেন, সাধারণতঃ তাদের প্রতি বুঝিয়ে বলার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এবং তাদেরকে ভুল শোধরাতে সাহায্য করতে হবে।

গুরুতর ভুল করেও যারা নির্দেশ মানে না, কেবলমাত্র তাদের প্রতিই সংগ্রামের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, ধৈর্য এখানে অপরিহার্য। কোন লোককে অবিবেচিতভাবে ‘সুবিধাবাদের লেবেল আঁটা’  অথবা অবিবেচিতভাবে তার বিরুদ্ধে ‘সংগ্রাম চালানোর পদ্ধতি’ অবলম্বন করা ঠিক নয়।

পঞ্চমতঃ তাদের অসুবিধায় সাহায্য করা, কেডাররা রোগ, জীবনযাত্রা বা পারিবারিক ও অন্যান্য কষ্টের ফলে অসুবিধায় পড়লে তাদের প্রতি যতটা সম্ভব মনোযোগের সঙ্গে যত্ন নিতে হবে।

কেডাদের কাজ পরীক্ষার সময় তারা যে স্তরের সে স্তরের মতামত সংগ্রহ করলেই চলবে না, কেডারদের অধীনস্থদের এমনকি সম্ভব হলে জনসাধারণের মতামতও সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ ওপর ও নীচ উভয় দিক থেকেই কেডারদের কাজকর্ম পরীক্ষা করতে হবে।

উপসংহার

“জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব ইতিহাস সৃষ্টির পরিচালক শক্তি।” এ থেকে অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে ঐতিহাসিক ভাববাদ।

সভাপতি মাও আরো বলেছেন, “জনগসাধারণের এই সক্রিয়তাকে যথাযথভাবে সংগঠিত করার জন্য যদি একটা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গ্রুপ না থাকে তাহলে জনসাধারণের সক্রিয়তা দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকতে পারেনা।”

এ কারণেই সভাপতি মাও বলেছেন, “একটি বিপ্লবী পার্টি ব্যতিত বিপ্লব হয় না।” বিপ্লবী পার্টি হচ্ছে এ ধরনের নেতৃত্ব গ্রুপ, জনসাধারণের কার্যের নেতৃত্বের কেন্দ্রশক্তি। পার্টির ভূমিকা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণকে শ্রেণী শত্রু (ও জাতীয় শত্রু – লেখক) বিরোধী সংগ্রামে পরিচালনা করা অর্থাৎ সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের শ্রেণী ও জাতীয় শত্রুবিরোধী সংগ্রামের নিয়মবিধি আবিষ্কার করে সে অনুযায়ী তাদেরকে পরিচালনা করা এবং এভাবে সমাজ ও দুনিয়াকে রূপান্তরিত করা।

পার্টির মধ্যকার নেতৃত্বের দায়িত্ব হল শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের নিয়মবিধি আবিষ্কার করা, সঠিক লাইন প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নে কেডারদের পরিচালনা করা, কেডারদের দায়িত্ব হচ্ছে নেতৃত্বের দ্বারা পরিচালিত হয়ে পার্টির লাইনকে বাস্তবায়িত করা, সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণকে শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করা।

বিপ্লবী পার্টির কর্মীদের সক্রিয়তার জন্য প্রয়োজন বিপ্লবী নেতৃত্ব। এটা ব্যতীত পার্টির কর্মীদের সক্রিয়তা টিকে থাকে না বা উচ্চস্তরে উন্নত হতে পারে না, বিপ্লবী পার্টি হতে পারে না।

জনসাধারণ ও পার্টির মাঝে জনসাধারণকে পরিচালনা ও নেতৃত্ব প্রদানের প্রশ্নে পার্টি হচ্ছে প্রধান দিক, সমাজ ও দুনিয়াকে রূপান্তরিত করার প্রশ্নে জনসাধারণ হচ্ছে প্রধান দিক। আর পার্টির মধ্যকার নেতৃত্ব ও কর্মীদের মাঝে লাইন প্রণয়ন ও কর্মীদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব হচ্ছে প্রধান দিক, পার্টির লাইন বাস্তবায়নে কর্মীরা হচ্ছে প্রধান দিক।

নোট

১। সভাপতি মাও বলেছেন, “প্রতিটি পার্থক্যই হচ্ছে দ্বন্দ্ব।” নেতৃত্বের ও কর্মীদের মধ্যে স্তরের ও মানদণ্ডের পার্থক্য রয়েছে; এ কারণে নেতৃত্বের সাথে কর্মীদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ দ্বন্দ্ব হচ্ছে জনগণের

মধ্যকার দ্বন্দ্ব। কর্মীদের নিয়মবিধি আবিস্কার করা এবং সে অনুযায়ী তাদের পরিচালনা করে যথাযথভাবে গণতন্ত্র ও কেন্দ্রিকতা এবং গণলাইনের কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করে নেতৃত্বের পক্ষে এ দ্বন্দ্বকে অবৈরী রাখতে হবে। নেতৃত্বের সাথে কর্মীদের দ্বন্দ্ব বৈরী রূপ নিতে পারে। নেতৃত্ব বা তার এক অংশ যখন সংশোধনবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রতিবিপ্লবী হয় তখন সাধারণ কর্মীদের সাথে নেতৃত্বের বা নেতৃত্বের অংশের দ্বন্দ্ব বৈরী রূপ নিতে পারে। নেতৃত্ব বা তার অংশ তখন অপসারিত হয় বা বর্জিত হয়।

২। মাও উদ্ধৃতি ৩২৬ পৃষ্ঠা।

৩। বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, চেকোস্লাভিয়া, পূর্ব জার্মানী ইত্যাদি। যুগোস্লাভিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল।

৪। Polemics on the General Line of International Communist Movement. P-132

৫। Do. P-119

৬। Mao. Selected Works. Vol-III. P-16