সিরাজ সিকদার রচনাঃ “পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিপ্লবী কমরেড ও সহানুভূতিশীল, সিরাজ সিকদারের কাছ থেকে জবাব নিন” শিরোনামায় বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র কর্তৃক প্রচারিত পুস্তিকা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ জুন ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪


 

পিডিএফ

 

[নোটঃ পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের পরই একটি জরুরী বৈঠক বসে (২৮/৩/৭২)। ফজলু চক্রের বিষয় বিবেচনা করার জন্য বৈঠক বসে।

সেখানে ফজলু চক্রের ব্যক্তিস্বার্থ বিপ্লবী স্বার্থের অধীন করতে না পারার বিষয় বিবেচনা করা হয় এবং তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্বান্ত গৃহীত হয়। অবশ্য ছয় মাস পরে তাকে পুনরায় উক্ত পদে গ্রহণ করা যায় কিনা তা বিবেচনা করার সিদ্বান্তও গৃহীত হয়। তাকে খুলনা থেকে বদলী করার সিদ্ধান্ত এবং এই ছয় মাস আঞ্চলিক কমিটির প্রধানের পদ প্রদান না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

তাকে খুলনা থেকে বদলী করা হয় এ কারণে যে, সে আত্মীয়ের মাঝে ব্যক্তিগত লাইনে কাজ করেছে, যারা রাজনীতি ও পার্টির চেয়ে আত্মীয়তাকে বেশি দাম দেয়। এটা তার মাঝে নেতৃত্বের লোভ এবং দুর্গ গঠনের মনোভাবের জন্ম দিতে পারে।

এভাবে তাকে কাজের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়। পার্টি তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করেনি। এ সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এ সকল সর্তকতা ও শাস্তিকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করা, ভালভাবে নিঃস্বার্থ হয়ে কাজ করার পরিবর্তে ফজলু জোরে সোরে সুলতানের সাথে চক্রান্ত আঁটে, ক. আতাউর, ক. মুজিবকে এর মধ্যে টানার চেষ্টা করে। সে ক. কবীরকে এর মধ্যে টানার চেষ্টা করে।

খুলনার দায়িত্বে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিকে না জানিয়ে গোপনে কিছুসংখ্যক নতুন কর্মী, ভ্রষ্ট, পার্টির প্রতি পূর্বেই ব্যক্তিগত কারণে অসন্তুষ্ট (জাফর, হামিদ, মনসুর, রিজভী, বিপ্লব ও অন্যান্য)দের নিয়ে গোপন বৈঠক দেয় এবং জঘন্যতম অপবাদ, কুৎসা রটনা করে, তাদের রাজনৈতিক নিম্নমান, অসন্তুষ্টতার  সুযোগ নেয়, পার্টি কর্মীদের হত্যা ও পার্টি-ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত করে। ফজলু চক্র তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ভান করে তার প্রেমিকাকে নেয়ার জন্য আসেএ সময় ক. সিরাজ সিকদার ও জনৈক অসুস্থ কমরেডকে খতমের জন্য হামিদকে নিয়ে আসে।

এ সময় সে চরম অভিনয় করে, কিন্তু ক. সিরাজ সিকদারের সর্তকতার জন্য তাকে খতম করা সম্ভব হয়নি। এ সময় ফজলু চক্র পার্টির দু’হাজার টাকা চুরি করে।

সে তার স্ত্রী নিয়ে পলায়নের জন্য (পার্টি তার স্ত্রীকে চিটাগাং পাঠিয়েছিল এবং সেখানে ফজলুকে বদলী করা হয়েছিল) চিটাগাং যায়, সেখানে চক্রান্ত আঁটে। তখনই স্ত্রীকে নিয়ে খুলনায় পলায়নের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পার্টির ষাট হাজার টাকাসহ পলায়নের জন্য অপেক্ষা করে। ইতিমধ্যে তার কার্যাবলী কিছুটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তখন জনৈক কমরেড এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য চিটাগাং যান।

সে উক্ত কমরেডের আগমনের খবর পেয়ে স্ত্রীসহ পলায়ন করে। কমরেডরা তাকে খুঁজে বের করলে সে আত্মসমালোচনা করে পার্টির নিকট আত্মসমর্পণ করার ভাওতা দেয়, কিন্তু গোপনে কাজী চক্রের সহায়তায় সেখান থেকে পলায়ন করে।

সে পার্টির গণতন্ত্র অর্থাৎ সংখ্যাগুরুর মতামত, কংগ্রেসের মতামত পদদলিত করে, পার্টির মধ্যে থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগ্রাম করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাদ দেয়, পার্টির মধ্যে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে, অপবাদ, গুজব রটায়, অর্থ-অস্ত্র চুরি করে, উপদল গঠন করে, গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্র করে। এ সকল জঘন্য অপরাধের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে পার্টি থেকে চিরদিনের জন্য তাকে বহিষ্কার করে।

সে পুনরায় খুলনা গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে সেখানকার কিছুসংখ্যক কর্মীকে মিথ্যা বলে প্রতারিত করে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিকে গ্রেফতার করে, তার নিকট থেকে অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্য রেখে দেয়, তাকে হত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু প্রতারিতদের সকলে একমত না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

সে খুলনাস্থ পার্টির সকল সম্পদ দখল করে, আত্নীয়দের নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল দুর্গ গঠনের প্রচেষ্টা চালায়।

সে পার্টির নেতৃত্বের নামে জঘন্য অপবাদ ও কুৎসা রটায়, বর্তমানে সে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নামে একটি প্রতিক্রিয়াশীল উপদল গঠন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইতিমধ্যে সে সাচ্চা কর্মীদের খতমের জন্য চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রমাণ পাওয়া গেছে এ সকলের পিছনে কাজী চক্রের হাত রয়েছে।

পার্টি, বিপ্লব, জনগণ, দেশ ও জাতি এবং শহীদ কমরেডদের জন্য যার বিন্দুমাত্র দরদ আছে এ ধরনের জঘন্য কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

ফজলু চক্র সম্প্রতি মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসাপূর্ণ একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। এর জবাব নিম্নে প্রদত্ত হল।] 

এ প্রচার পুস্তিকার উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং কমরেডগণ, আসুন আমরা সিরাজ সিকদারের সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, কুক্ষিগত নেতৃত্ব ও তার লেজুড় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, ঘোষণা করি, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির লাইনের প্রতি আমরা অনুগত, কিন্তু তথাকথিত পার্টি প্রধান সিরাজ সিকদারের নেতৃত্ব আমরা মানি না।

এখানে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির লাইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এ প্রচারপত্র প্রণয়নকারীদের নিকট প্রশ্ন হচ্ছে সর্বহারা পার্টির যে লাইনের প্রতি তারা অনুগত তা কে প্রণয়ন করেছে? পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক ও অন্যান্য লাইন কমরেড সিরাজ সিকদার প্রণয়ন করেছেন।

সঠিক লাইন হচ্ছে পার্টির প্রাণ। পার্টির বিকাশ ও বিজয় নির্ভর করে সঠিক লাইনের উপর।

লাইন ঠিক হলে ক্ষুদ্র শক্তি বড় হয়, সশস্ত্র শক্তি না থাকলে সশস্ত্র শক্তি গড়ে উঠে, রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে তা অর্জিত হয়।

লাইন ভুল হলে অর্জিত ফলও খোয়া যায়।

কাজেই পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও সর্বহারা পার্টির বিকাশ এবং বর্তমান পর্যায়ে পোঁছানো সম্ভব হয়েছে সঠিক লাইনের জন্য।

এরা কমরেড সিরাজ সিকদার প্রণীত লাইনের প্রতি অনুগত, কিন্তু তাকেই বলছে সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব দখলকারী ইত্যাদি।

তাদের বক্তব্য থেকে পাওয়া যায় সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব দখলকারী অর্থাৎ প্রতিক্রিয়াশীল সিরাজ সিকদার সঠিক লাইন প্রণয়ন করেছে।

স্বভাবতঃই প্রশ্ন উঠে একজন প্রতিক্রিয়াশীল কি সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে পারে? একজন সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব দখলকারী ব্যক্তি অর্থাৎ একজন প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক এবং নেতৃত্ব দখলকারী প্রতিক্রিয়াশীল লাইন প্রণয়ন করতে পারে—সঠিক লাইন নয়।

সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব দখলকারী প্রতিক্রিয়াশীলরা যদি সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হত তবে বাকুনিন, বার্নেস্টাইন (মার্কস-এঙ্গেলসের সময়) এবং অন্যান্য, ট্রটস্কী, বুখারিন, টিটো, ক্রুশ্চোভ, লিউ শাওচি, চেনতাওশিউ, লিলিসান, ওয়াংমিং, জ্যোতিবসু-নাম্বুদ্রিপদ, ডাঙ্গে, পূর্ববাংলার কাজী-রণো, দেবেন-বাসার, হক-তোহা, মতিন-আলাউদ্দিন, মোজাফফর-মনিসিং এরা সকলেই সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হত। তাহলে আমাদের এবং বিশ্বের সর্বহারাদের সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারীদের থেকে বেরিয়ে আসা বা তাদেরকে নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা বা পৃথক সংগঠন করার প্রয়োজন হত না।

কাজেই যিনি সঠিক লাইন বা পার্টির প্রাণ তা প্রণয়ন করেন তিনি কখনও ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব লোভী হতে পারেন না, তাকে অবশ্যই সৎ লোক হতে হবে, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী হতে হবে, সর্বহারার বিশ্ব দৃষ্টিকোণ রপ্ত ও প্রয়োগ করতে সক্ষম হতে হবে।

সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্ব দখলকারীদের বিশ্বদৃষ্টিকোণ হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া বিশ্বদৃষ্টিকোণ, যার মৌলিক কথা হলো ব্যক্তিস্বার্থ। তাদের দর্শন হচ্ছে ভাববাদ ও অধিবিদ্যা। তারা প্রতিটি সমস্যা বিচার করে ব্যক্তিস্বার্থ এবং ভাববাদ-অধিবিদ্যা দিয়ে। এ কারণে তারা সর্বহারার উপকারের বুলি আওড়ালেও প্রকৃতপক্ষে তারা বুর্জোয়া এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বহারা ও জনগণের জন্য ভুল লাইন প্রণয়ন ও তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তাদের চরম ক্ষতি সাধন করে।

এ ধরণের লোক পার্টির নেতা হলে পার্টি পদে পদে ভুল করে এবং পার্টি বুর্জোয়া পার্টিতে, সংশোধনবাদী পার্টিতে, বুর্জোয়াদের লেজুড় পার্টিতে পরিণত হয় বা ভেঙ্গে যায়।

রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও মঙ্গোলিয়ায় সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারীরা, আমলাতান্ত্রিকরা পার্টির ক্ষমতা দখল করে বিশ্বাসঘাতক লাইন প্রণয়ন করে এবং পার্টি ও রাষ্ট্রকে বুর্জোয়ায় রূপান্তরিত করে।

পাক-ভারত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে বিপ্লব হয়নি সেখানে এ ধরণের লোক পার্টির ক্ষমতায় থাকায় পার্টি বুর্জোয়া পার্টি, সংশোধনবাদী পার্টিতে পরিণত হয় এবং পার্টির বিকাশ ব্যাহত হয়।

পক্ষান্তরে কেবলমাত্র সৎ এবং প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এবং সর্বহারার বিশ্ব দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন কমরেডরাই সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে পারেন।

কাজেই যেহেতু পার্টির লাইন সঠিক সেহেতু কমরেড সিরাজ সিকদার সৎ, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এবং সর্বহারার বিশ্ব দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্বলোভী অর্থাৎ প্রতিক্রিয়াশীলদের বিশ্বদৃষ্টিকোণ প্রতিক্রিয়াশীল, তারা পারে প্রতিক্রিয়াশীল ভুল লাইন প্রণয়ন করতে আর সর্বহারা ও সৎ, মার্কসবাদী-লেনিনবাদীদের বিশ্বদৃষ্টিকোণ হল সর্বহারা। তারা পারে সর্বহারা ও সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে। প্রতিক্রিয়াশীলরা সঠিক লাইন প্রণয়ন করতে পারে না, সর্বহারারা প্রতিক্রিয়াশীল লাইন প্রণয়ন করতে পারে না।

একে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে মার্কসবাদের “ক-খ-গ”-কে অস্বীকার করা।

যেহেতু তারা লাইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে সে কারণে যে কমরেড লাইন প্রণয়ণ করেছেন এবং কংগ্রেস কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন তার প্রতি তাদের অনুগত হওয়া উচিত।

ইহা প্রমাণ করবে কমরেডরা সৎ ও আন্তরিক বিপ্লবী কিনা।

অপরাধীরা যেমন কিছু ক্লু রেখে যায় যার ভিত্তিতে তারা ধরা পড়ে, তেমনি ‘লাইনের প্রতি অনুগত’ এ ক্লু ধরিয়ে দিচ্ছে যে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংগঠনিক বা অন্যকোন লাইনের দ্বিমতের কারণে নয়; ব্যক্তিগত পদ, ক্ষমতা, নেতা হওয়ার লোভে অর্থাৎ ব্যক্তিস্বার্থের কারণে ফজলু চক্র কমরেড সিরাজ সিকদারকে প্রতিক্রিয়াশীল ও আমলাতান্ত্রিক, সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী বলেছে, তার বিরুদ্ধে গুজব, অপবাদ রটাচ্ছে।

ব্যক্তিস্বার্থেই সে কমরেড সিরাজ সিকদার ও তার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের পরিবর্তে একে বিরোধিতার মত প্রতিবিপ্লবী কাজ করছে।

কিন্তু কমরেড সিরাজ সিকদারের লাইনের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেও কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বকে অমান্য করতে, তাকে সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক ও নেতৃত্বলোভী বলতে পারে কারা?

যেহেতু কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিক লাইন প্রণয়ন করেন এবং মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, স্বাভাবিকভাবেই তিনি উদারতাবাদী নন। তিনি ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্যকারী, নেতৃত্বলোভী, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারী, ভাববাদী, অধিবিদ্যক, সমরবাদী, পার্টির গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীকতা ভঙ্গকারী, বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী, পার্টির অভ্যন্তরস্থ ও বাইরের শ্রেণী ও জাতীয় শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন।

এরাই কমরেড সিরাজ সিকদারকে সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্বলোভী বলতে পারে, কোন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বলতে পারে না।

অতীতেও ময়মনসিংহের হাজীপুরের সাদেক চক্র বলেছে, পার্টির লাইন সঠিক কিন্তু সিরাজ সিকদার খারাপ। সাদেক শেষ পর্যন্ত ছয় পাহাড়ের তাবেদার হয়। হক-তোহা, দেবেন-মতিন, কাজী-রণো, মনিসিং-মোজাফফর, ছয় পাহাড়ের দালাল, তাদের প্রভু ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, কমরেড সিরাজ সিকদারকে সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রকারী, আমলাতান্ত্রিক, নেতৃত্বলোভী বলে।

কাজেই এ প্রচার পুস্তিকার প্রণেতারদের কথার সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের কথার কোন তফাৎ নেই। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের অনুচর মাত্র।

তাদের নিজেদের বক্তব্য নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরেছে। তারা যে বিদ্রোহের আহ্বান করেছে তা হলো বিপ্লবী ও সঠিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লবীদের, দলত্যাগী, সুবিধাবাদীদের বিদ্রোহের ডাক।

তাদের এ বিদ্রোহ হচ্ছে পার্টির সঠিক লাইনের বিরুদ্ধে, পার্টির বিরুদ্ধে, বিপ্লব ও জনগণের বিরুদ্ধে এবং পূর্ববাংলা ও বিশ্বের বিপ্লবের বিরুদ্ধে।

এ দলিল প্রণয়নকারীদের চরিত্র উপরোক্ত বিশ্লেষণের সাথে মেলে কিনা দেখা যাক।

এ দলিল প্রণয়ন করেছে বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র যে পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল, প্রতিবিপ্লবী।

পার্টিতে যোগদানের প্রথম থেকে ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তাকে পার্টি কর্তৃক সমালোচনা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে ব্যক্তিস্বার্থ বিপ্লবের বশে রাখতে না পারার কারণে এবং কমিউনিস্ট হওয়ার নিম্নতম যোগ্যতা না থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে নামিয়ে দেয়া এবং বদলী করা হয়। এ সকলই কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত।

কিন্তু সে পার্টি, পদ, ক্ষমতার লোভে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত শুরু করে, অপবাদ ও গুজব রটায়, ব্যক্তিগত কুৎসা ছড়ায়, পার্টির অর্থ-অস্ত্র চুরি করে, কমরেড সিরাজ সিকদার ও অন্যান্য সাচ্চা কমরেডদের গুপ্ত হত্যার ষড়যন্ত্র করে, পার্টির গণতন্ত্র কেন্দ্রীকতা ও শৃংখলাকে পদদলিত করে, কিছুসংখ্যক কর্মীকে প্রতারিত করে, খুলনার পার্টির অস্ত্র ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি দখল করে এবং প্রতিক্রিয়াশীল দুর্গ গঠন করে। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে তাকে তার কতিপয় সহচরদেরসহ চিরদিনের জন্য পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তারা পার্টি, বিপ্লব, সর্বহারা ও জনগণের উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করার জন্য এ সকল কার্যকলাপ চালাচ্ছে এবং এখনও কমরেডদের হত্যা করার চক্রান্ত চালাচ্ছে।

এ হলো তথাকথিত অগ্রগামী কর্মীদের দুষ্কর্ম এবং প্রকৃত চরিত্র।

১৯৭০ সালে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের বিপ্লবী পরিষদ কর্তৃক কর্মীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে পার্টি নেতৃত্বের নাম বলা এবং প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমরেড সিরাজ সিকদারের নির্দেশে নয়। কয়েক বৎসরের অনুশীলন এ সিদ্ধান্তের সঠিকতা প্রমাণ করেছে।

ক) এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কর্মীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় কে তোমাদের নেতা?

খ) বিপ্লবী আর প্রতিবিপ্লবী সকলেই তাদের নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করে। কাজেই পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বকে জনপ্রিয় না করার কোন কারণ নেই।

নেতৃত্ব আপেক্ষিক অর্থাৎ নেতৃত্ব যতদিন বিপ্লবী, সঠিক, ততদিনই নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকবে। ভুল ও বেঠিক হলে নেতৃত্ব আজ হোক আর কাল হোক অপসারিত হবে, তখন নতুন বিপ্লবী নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করতে হবে।

বিপ্লবী ও সঠিক নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করার সুবিধা নিম্নরূপঃ

পার্টির মধ্যে এককেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও সুদৃঢ়করণঃ কর্মীদের কেন্দ্রের প্রতি আস্থাশীল এবং কেন্দ্রকে প্রভাবশালী ক্ষমতাপূর্ণ করা, পার্টির মধ্যকার খাঁটি বিপ্লবী ও বাইরের বিপ্লবী ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক – শত্রুদের ভীতসন্ত্রস্ত এবং তাদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টির সহায়ক।

পক্ষান্তরে পার্টির নেতৃত্বকে অপ্রিয় করা, কেন্দ্রকে দুর্বল করা, অপর কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বুর্জোয়াদের সহায়তা করা।

কমরেড সিরাজ সিকদারের জনপ্রিয়তায় ভীত কারা? হক-তোহা, মতিন-আলাউদ্দিন, দেবেন-বাসার, কাজী-বদরুদ্দীন, মনিসিং-মোজাফফর, ফজলু-সুলতান, ছয় পাহাড়ের দালাল এবং আন্তর্জাতিক শত্রুরা।

পৃথিবীর সকল বিপ্লবীদের জনপ্রিয়তাই প্রতিক্রিয়াশীলদের ভীত করেছে। লেনিন বলেছেন, “মহান বিপ্লবীদের জীবদ্দশায় শোষক শ্রেণী (এবং মার্কসবাদের মুখোশধারী তাদের দালালরা – লেখক) তাদেরকে সর্বদাই পাগলা কুত্তার মত খুঁজে বেড়িয়েছে, তাদের শিক্ষার প্রতি চরমতম ঘৃণা প্রদর্শন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জঘন্যতম মিথ্যে ও অপবাদের প্রচার অভিযান চালিয়েছে।”

কমরেড সিরাজ সিকদার বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রেণী ও জাতীয় শত্রুদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করছেন। কাজেই তাকে শত্রুদের দ্বারা সর্বদাই আক্রান্ত হতে হবে বৈকি।

এ কারণেই সভাপতি মাও বলেছেন, শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ভাল।

সম্প্রতি প্রকাশিত লাল ঝাণ্ডায় (১নং) বাস্তব ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছে। পার্টির ইতিহাস হচ্ছে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। এতে প্রত্যেকের ভূমিকা বস্তুগত এবং সুনির্দিষ্ট। পার্টির প্রতিটি ঘটনার সাথে নেতৃত্বের ভূমিকা জড়িত, যেহেতু নেতৃত্বই নির্ণয় করে পার্টির লাইন। কাজেই পার্টি দিবস, সশস্ত্র বাহিনী দিবস ও শ্রম দিবসে নেতৃত্বের ভূমিকা আলোচনায় আসা স্বাভাবিক।

এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ সম্পাদকীয়তে আত্মপ্রচার হয়নি বলে সিদ্বান্ত নেওয়া হয় এবং কিছু সংশোধনীসহ গৃহীত হয়।

ক) পেয়ারা বাগানের মুক্তি বাহিনী আসলে আওয়ামী লীগ মুক্তি বাহিনী ছিলনা। প্রকৃতই সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনী ছিল। ইহা ঐতিহাসিক সত্য।

এই মুক্তি বাহিনী গড়ে উঠে ৩০শে এপ্রিল।

২৮শে এপ্রিল আওয়ামী লীগ মুক্তি বাহিনী আমাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে, তাকে ছাঁটাই করা হয়, পুনর্গঠিত করা হয়, আমাদের পার্টির নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়, রাজনৈতিক কমিশার নিয়োগ করা হয়, গেরিলা গ্রুপে ভাগ করা হয়, প্রতি গেরিলা গ্রুপে আমাদের পার্টির কর্মীদের রাজনৈতিক কমিশার নিয়োগ করা হয়।

পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট বিরোধী ও অধঃপতিতদের বের করে দেওয়া হয়, অতি অল্পদিনের মাঝেই অধিকাংশ পুরোনো ও খারাপ উপাদান বাদ দিয়ে স্থানীয় ও ভাল উপাদান গ্রহণ করা হয়।

প্রতি গেরিলা পার্টি, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা এবং পার্টির রাজনৈতিক, সামরিক লাইন পালন করতো।

এরপর এ বাহিনীকে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ বাহিনী বলার অর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগের দালালী করা।

২৮ এপ্রিলের বহু পূর্বেই অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহে কমরেড সিরাজ সিকদার সরাসরি বরিশাল ও ঝালকাঠির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঝালকাঠি পাক ফৌজ কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর তিনিই বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করেন আওয়ামী লীগ বাহিনীর চরম সংকটজনক সময় নির্দেশ দেন তাদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করতে।

কমরেড সিরাজ সিকদারের লিখিত নির্দেশ ও নিয়োগপত্র বহন করে নিয়ে যায় প্রচার পুস্তিকার উল্লিখিত দু’জন।

এ বাহিনী পুনর্গঠন, কমান্ড গঠন, তাদের গেরিলা গ্রুপে গঠন, গ্রামে নিয়োগ, প্রভৃতি সমস্যাবলী কমরেড সিরাজ সিকদার নিজে সমাধান করেন।

এ সময় এবং পরে অনেক সময় ফজলু চক্র বলেছে, “আপনি (সিরাজ সিকদার) না থাকলে আমরা কয়েকটা গোলাগুলি করে যার যার বাড়ীতে চলে যেতাম”।

ফজলু বর্তমানে তার কথা পাল্টিয়ে, ইতিহাসকে পাল্টিয়ে নিজের ইচ্ছাখুশীমত কথাবার্তা বলছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কমরেড সিরাজ সিকদারকে হেয় করা।

কিন্তু ইতিহাস পাল্টানো যায় না, ইতিহাস ইতিহাসই, সত্য সত্যই।

খ) জাতীয় শত্রুদের ভূমি ও সম্পত্তি গরীব চাষীদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়, এবং জনগণ আমাদের এ কর্মসূচীকে গ্রহণ করে।

এভাবে জাতীয় ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সমন্বয় সাধন করা হয়।

এ পরিকল্পনাই ব্যাপক আকারে কার্যকরী করা হয় পেয়ারা বাগান থেকে প্রত্যাহার করার পরবর্তীকালীন সংগ্রামে।

জনগণকে কৃষক, নারী ও অন্যান্য মুক্তি সমিতিতে গঠন করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। এজন্য গণসংযোগ কমিটিও গঠন করা হয়েছিল।

এগুলো ঐতিহাসিক সত্য।

ঘেরাও-দমন জনিত সমস্যার সমাধান করা হয় গেরিলাদের বিভক্ত করে এক অংশকে গৌরনদী অঞ্চলে এবং অন্য অংশকে ঘেরাও বলয়ের বাইরে থাকার নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে। এর ফলে অধিকাংশ গেরিলা টিকে যায়।

এ সময় পেয়ারা বাগান থেকে কমরেড সিরাজ সিকদারের প্রত্যাহারের প্রশ্নে একমাত্র কমরেড সিরাজ সিকদারই বলেছিলেন প্রত্যাহার ঠিক হবে না। তিনিই ছিলেন প্রত্যাহারের বিপক্ষে।

কিন্তু ফ্রন্টের সকল নেতৃত্ব স্থানীয় গেরিলা ও কর্মী কমরেড সিরাজ সিকদারের প্রত্যাহারের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি তাদেরকে এ বিষয় বহুবার পুনরায় বিবেচনার জন্য বলেন।

এ সময় ফজলু বলেছিল, ‘আপনি বাঁচলে পার্টি ও বিপ্লব গড়ে উঠবে, কাজেই আপনার যাওয়া উচিত

এভাবে সংখ্যাগুরুর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে কমরেড সিরাজ সিকদার পেয়ারা বাগান থেকে প্রত্যাহার করেন, প্রাণের ভয়ে নয়।

এখন বুঝা যাচ্ছে ফজলু-তারেকের কমরেড সিরাজ সিকদারের প্রত্যাহারের পক্ষে অভিমত পেশ করার কারণ।

ফজলু-তারেক কমরেড সিরাজ সিকদারের উপস্থিতিতে তাদের ইচ্ছা খুশিমত কার্যকলাপ করতে পারত না।

কমরেড সিরাজ সিকদারের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফজলু তার প্রেমিকাকে নিয়ে পলায়ন করে, তারেক-মুজিব ষড়যন্ত্র করে কমরেড ফারুক-মজিদকে হত্যা করে, সমরবাদী হয়ে নেতা বনে যায়, ১নং ফ্রন্টের চরম ক্ষতি সাধন করে, নারীদের নিয়ে স্বেচ্ছাচার করে।

ফজলু দীর্ঘদিন পরে অর্থ, অস্ত্র, স্বর্ণ হারিয়ে পার্টির নিকট এসে যোগাযোগ করে। পেয়ারা বাগানের বাইরে এসে কমরেড সিরাজ সিকদার কুরিয়ার পাঠিয়ে যোগাযোগ করা এবং পুনরায় সেখানে সরাসরি নেতৃত্ব প্রদানের প্রচেষ্টা চালান। কমরেড শহীদকে দ্রুত যোগাযোগ করে রিপোর্ট করতে বলা হয়। তিনি বহু দিন পরে যোগাযোগ ও রির্পোট করেন। কমরেড কবীরকে (পরবর্তীকালে প্রেরিত নেতা) বহুবার যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। কমরেড কবীর বাস্তব অসুবিধার কারণে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

এগুলো ঐতিহাসিক সত্য। পার্টির যে সম্পদ কমরেড সিরাজ সিকদারের নিকট ছিল তা দ্বারা পার্টির কার্য পরিচালনা করা হয়।

গ) পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে টেকনাফ থেকে আসার পর কমরেড সিরাজ সিকদার একমাত্র থাকেন বিপ্লবের প্রতি দৃঢ়। বাকী অনেকেই সুবিধাবাদী, দোদুল্যমান হন বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এটাও ঐতিহাসিক সত্য। পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনে ফজলু চক্র তখনো যোগদান করেনি বলে তার পক্ষে ইহা না জানা স্বাভাবিক। কোন দিবস উদযাপনের প্রায় মাস খানেক পূর্বেই দলিলাদি প্রণয়ন ও ছাপানো প্রয়োজন যাতে নির্দিষ্ট দিনের পূর্বেই কমরেডদের নিকট পৌঁছে।

তাতেও অনেক সময় সর্বস্তরে পৌঁছায় না।

পৃথিবীর সর্বস্থানেই এজন্য বহুদিন পূর্বেই দলিল প্রণয়ন করা হয়।

খাঁটি ও সাচ্চা কর্মী ও সহানুভূতিশীল ও বিপ্লবীরা বিপ্লবী পার্টির নেতৃত্বের দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। অল্প আয়ু বা মৃত্যু কামনা করে শত্রুরা, ফজলুর মত বৈর ব্যক্তিরা।

এ সত্যের প্রতিফলন হয়েছে ১নং লাল ঝাণ্ডার সম্পাদকীয়তে।

ফজলু বিশ্বাসঘাতক চক্র সভাপতি মাওয়ের পবিত্র উক্তি ব্যবহার করার স্পর্ধা দেখিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। নিরাপত্তা বজায় রেখে বিপ্লবী কাজের জন্য সুবিধাজনক স্থানে কর্মস্থল পরিবর্তন করা বিপ্লবীদের দায়িত্ব।

কাজের সুবিধার্থে এবং পার্টির স্বার্থে কমরেড সিরাজ সিকদার ২৫শে মার্চের পর প্রয়োজনীয় স্থানে যান, প্রাণভয়ে নয়। তিনি ভারতেও পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু কেন যাননি, এর উত্তর তো ফজলু চক্র দেয়নি।

পার্টির যে মহান দায়িত্ব তার উপর প্রদত্ত ছিল তা তিনি যথাযথভাবে পালন করেন, পার্টির সম্পদ রক্ষা করেন, পার্টি কর্মীদের পশ্চাদপসারণের ব্যবস্থা করেন, এ গুরুতর পরিস্থিতিতে পার্টির লাইন প্রণয়ন করে কর্মীদের রাজনৈতিক দিশা বজায় রাখেন, শহরে কাজের ব্যবস্থা বজায় রাখেন, যে সকল স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেখানে কুরিয়ার পাঠান, সঠিক লাইন ও নির্দেশ প্রেরণ করেন। এর ফলে পূর্ববাংলায় একমাত্র আমাদের সংগঠনই তখন কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে সংগঠিত ছিল। এ অবস্থা সব সময় বজায় থাকে।

বরিশালের সুবিধাজনক বিপ্লবী পরিস্থিতি সদ্ব্যবহারের জন্য কমরেড সিরাজ সিকদার নিজ সিদ্বান্তে সেখানে গমন করেন (এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে)। ফজলু-মুজিব তাকে পনের দিন পরে যেতে বলেছিল। কিন্তু তিনি তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে পনের দিন পূর্বেই রওনা হন। পরে তারা বলেছিল আপনি পনের দিন পরে এলে কিছুই করতে পারতাম না, কেন যে পনের দিন পূর্বে আপনাকে আনলাম না!

কমরেড সিরাজ সিকদার বরিশাল জেলার সংগ্রামের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, বিন্দু ভেঙ্গে প্রবেশ করেন, তিনি পেয়ারা বাগানের এ মূল্যবান অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সংগঠনের রাজনৈতিক, সামরিক ও অন্যান্য সমস্যাবলীর যথাযথ সমাধান প্রদান করেন।

এগুলো প্রতিফলিত হয়েছে তখনকার প্রণীত দলিলসমূহে। তিনি বিভিন্ন ফন্টে যাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন এবং উদ্যোগ নিয়ে পাবনা, টাঙ্গাইল গমন করেন, সেখানকার অভিজ্ঞতার সারসংকলন করেন। অন্যান্য ফ্রন্ট বারংবার বলা সত্ত্বেও নিরাপত্তার কারণে ব্যবস্থা করতে পারেননি। এছাড়া সর্বদাই তিনি কেন্দ্রীয় দায়িত্ব ছাড়াও কোন না কোন আঞ্চলিক কমিটির পরিচালনায় ছিলেন।

ফজলু চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো গোপন করে মিথ্যা বলছে যে, তিনি জনগণের সাথে যুক্ত নন।

কমরেড সিরাজ সিকদার যে ধরনের জীবনযাপন করেন তা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কমরেডদের অধিকাংশের ইচ্ছা মতই করেন।

কংগ্রেসে পেশ করা কোন প্রস্তাব কমরেড সিরাজ সিকদার বাতিল করেননি।

জনগণের সাথে যুক্ত না থাকলে কমরেড সিরাজ সিকদারের পক্ষে সঠিক লাইন (যার প্রতি ফজলু চক্র অনুগত) প্রণয়ন করা সম্ভব হত না। কেননা সঠিক লাইন আকাশ থেকে পড়ে না বা মনের মধ্যে সহজাত নয়। সঠিক লাইন আসে অনুশীলন থেকে, শ্রেণী সংগ্রামের সঠিক লাইন আসে শ্রেণী সংগ্রামের অনুশীলন থেকে, কাজেই কমরেড সিরাজ সিকদার অবশ্যই শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের অনুশীলন এবং জনসাধারণের সাথে যুক্ত ছিলেন।

পোশাক-আশাক, চেহারা দিয়ে বিপ্লবী কিনা তা নির্ণিত হয় না। নির্ণিত হয় সর্বহারার বিশ্ব দৃষ্টিকোণ দিয়ে, অর্থাৎ, তিনি মতাদর্শগতভাবে সর্বহারা কিনা তাই দিয়ে।

ভুল দেখিয়ে দিলে এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রামের কারণে সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা সর্বদাই বিপ্লবীদের বিপ্লবের একনায়ক, আমলাতান্ত্রিক, সবজান্তা, পণ্ডিত বলে গালাগালি করে। ক. সিরাজ সিকদার কর্তৃক মাহবুবুল্লাহ, আকাম ফজলুল হক, নুরুল হাসান, হক-তোহা, দেবেন-বাসার, কাজী-রনো-বদরুদ্দীন এবং দলত্যাগী বেবী-আসাদ, সাদেক প্রভৃতিদের চরিত্র উদ্ঘাটিত হওয়ায় তারা কমরেড সিরাজ সিকদার সম্পর্কে এ ধরণের কথা বলে।

ফজলু চক্রও তাদের অপর একজন হয়েছে মাত্র।

কমরেড সিরাজ সিকদারের রচনা তত্ত্ব থেকে শুরু করে তত্ত্বে রয়ে গেলে পার্টির সঠিক লাইন এলো কোথা থেকে? সেগুলো কি (যেমন থিসিস ও বিভিন্ন দলিলাদি) চীনা বইয়ে লেখা ছিল বা পিকিং রিভিউ-এ ছাপা ছিল, না ফজলু চক্রের মাথা থেকে এসেছে?

সংশোধনবাদীদের চরিত্র তুলে ধরায় ফজলু চক্রের এ মায়া কান্না কেন? প্রকৃতপক্ষে সে ইতিমধ্যেই কাজী চক্রের পরিচালিত পুতুলে পরিণত হয়েছে। সমন্বয় কমিটির সংশোধনবাদীদের সাথে দহরম-মহরম করছে।

‘ছয় পাহাড়ের দালাল’ দলিল সম্পর্কে পূর্বে বহুবার আলোচনা হয়েছে। এ দলিল পার্টির পত্রিকায় সাপলিমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এ সময় পার্টির পত্রিকা বের করা সম্ভব না হওয়ায় ইহা পৃথকভাবে বের হয়।

শহরে দলিলটির প্রতিক্রিয়া ভাল হয়নি, কিন্তু যে সকল স্থানে বিশেষ করে গ্রামে যেখানে আমাদের গণসমর্থন রয়েছে, জনগণ আমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত সেখানে এর ভাল প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব অসুবিধার কারণে সেখানে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়া দলিলটির ভবিষ্যত প্রতিক্রিয়া ভাল হয়েছে, পার্টির কর্মী ও অনেক সহানুভূতিশীলরা বুঝতে পেরেছে ভারতের ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা।

এর ফলে কর্মীদের মাঝে ভারতীয় দখল কায়েম হওয়ার পর রাজনৈতিক লাইন সম্পর্কে কোন দ্বিধা দেখা দেয়নি।

বর্তমানে দলিলটি খুবই সমাদৃত।

দলিলটিতে ভারতীয় আক্রমণের সম্ভাবনা প্রধানভাবে দেখানো সম্ভব হয়নি পার্টির আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অভাবে।

বহু বামপন্থী সহানুভূতিশীল এ দলিলে বর্ণিত সঠিক ভূমিকার কারণে সংগৃহীত হয়।

স্বল্পকালীন দৃষ্টি থেকে দলিলটি ভাল হয়নি, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দলিলটি ভাল হয়েছে। দলিলটির দীর্ঘ প্রতিক্রিয়াও দেখা উচিত।

দলিল বা প্রচারপত্র লেখার অধিকার সকলেরই রয়েছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটিও প্রচারপত্র ছাপায় ও প্রকাশ করে। কিন্তু পার্টির কেন্দ্রের পক্ষে দলিল কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত হবে, লালঝাণ্ডা কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্র। কাজেই এখানে কেন্দ্র কর্তৃক অনুমোদিত বিষয়াদি ছাপানো হয়।

বাকী অভিযোগ অমূলক।

বেহিসাবী খরচ তদারক করার জন্য কোন কমরেডকে নিয়ে কোন হিসাব কমিশন গঠন করা হয়নি। কমরেড সিরাজ সিকদারের পক্ষে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফলে হিসেব তদারক করার সময়ের অভাব হয়। এ কারণে তিনি অনেক সময় এ বিষয়ে কমরেডদের সহায়তা নেন। ফজলু কর্তৃক উল্লিখিত ব্যক্তিকে এরূপ অস্থায়ীভাবে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছিল। পরে সে কাজ নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

কমরেড সিরাজ সিকদার বা তার সংশ্লিষ্ট কোন কমরেড হিসেব দেননি ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

কংগ্রেসে পার্টির আয়-ব্যয়ের হিসেব নেওয়ার সমস্যা উত্থাপিত হয়নি।

বিপ্লবের জটিল অবস্থা, পশ্চাদপসরণ, জিনিসপত্র হারানো প্রভৃতি কারণে প্রত্যেকের হিসেব পেশ করার মত অবস্থা ছিল না। কমরেডদের একে অপরের সততাকেই বিশ্বাস করা হয়।

কমরেড সিরাজ সিকদারের যদি তহবিল তছরুপের উদ্দেশ্য থাকতো তবে তিনি বিপ্লবে যোগদান করতেন না, বুর্জোয়া জীবনে নিরাপদে বহু তহবিল তছরুপ করতে পারতেন (কারণ তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে একজন ডিগ্রীধারী ইঞ্জিনিয়ার)। পার্টির তহবিলহীন অবস্থায় প্রায় অন্নহীনভাবে তহবিল তছরুপের আশায় তিনি বিপ্লবী কাজ করেননি।

তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিপ্লবীদের এ বিশ্বাস রয়েছে।

ফজলু চক্রও কোনদিন এ অভিযোগ কোন সভায় বা মৌখিকভাবে উত্থাপন করেনি। কেবলমাত্র পার্টি-ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ার পরই সে এ সকল অপবাদ রটায়।

নীতির প্রশ্নে কমরেড সিরাজ সিকদার দৃঢ়, কারো প্রতি উদারতাবাদ করেন না এবং নীতিকে বিসর্জন দিয়ে তিনি কোন ধরনের সম্পর্ক রাখেন না।

একেই ফজলু চক্র তাচ্ছিল্য ও ঔদাসিন্য বলে আক্রমণ করেছে। যে সকল বিপ্লবী তার সাথে সর্বহারার অভিন্ন দৃষ্টিকোণের কারণে ঐক্যমত পোষন করেন তাকেই সে মোসাহেব বলেছে।

 তার মতে কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য কমরেড সিরাজ সিকদারের মোসাহেব, কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল অন্যান্য সকল কর্মীরাই মোসাহেব। অর্থাৎ ফজলু চক্রের সাথে যারা একমত নয় তারাই সিরাজ সিকদারের মোসাহেব, তাদের খতম করা উচিত।

এটা স্বৈরতন্ত্র ছাড়া আর কি?

ক) মুজিব-তারেককে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির আহবায়ক কমিটি বহিষ্কার করে, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেসে তা অনুমোদিত হয়।

তারা ষড়যন্ত্র করে কমরেড মজিদ-ফারুককে হত্যা করে, সমরবাদী হয়ে ওঠে, বন্দুকের নলের মুখে গেরিলা ও পার্টির কর্মীদের সন্ত্রস্ত রাখে, পার্টির কেন্দ্রকে অস্বীকার করে, নারীদের নিয়ে স্বেচ্ছাচার করে, বিনা অনুমতিতে বন্দুকের ডগায় বিয়ে করে, পার্টির সুনাম নষ্ট করে, পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের অনুরূপ কাজ করে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সর্বহারা পার্টির গেরিলা ও কর্মীরাই মুজিব-তারেককে খতম করার পরিকল্পনা করছিল। তাদের জীবিত অবস্থায় বিচার সম্ভব হয়নি, কারণ তারা পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে মারা যায়।

অতীতেও তারেক চরম নারী ঘটিত স্বেচ্ছাচার দেখায়, যা ফজলু পার্টির কাছে প্রকাশ করেনি। তার ইতিহাস না জানার কারণে পার্টির মাঝে সে গোপনে ঢুকে পড়ে।

ব্যক্তিস্বার্থে যারা এহেন জঘন্য কাজ, একজন কমরেডকে হত্যা (নির্মমভাবে পিটিয়ে, গলাটিপে) করতে পারে তাদের বহিষ্কার করার পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। একজন কমরেডকে অপর একজন কমরেড কখনো হত্যা করতে পারে না।

মৃত্যু হচ্ছে বস্তুর রূপান্তর, জীবন্ত বস্তু থেকে জড় বস্তুতে রূপান্তর। কিন্তু মৃত্যু হলেও কাজকে মার্কসবাদীরা পর্যালোচনা করে। এ কারণেই মৃত্যুর পর পার্টির সদস্যপদ দেওয়া হয়। কাজেই মৃত্যুর পর এ সকল প্রতিক্রিয়াশীলরা যাতে বীর বলে চিত্রিত না হয় তার জন্য যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

এ কারণেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

ক্রুশ্চোভ মহান মার্কসবাদী-লেনিনবাদীকে মিথ্যা অজুহাতে বিচার করছে, আর বিপ্লবীরা (যদি পায়) অবশ্যই ক্রুশ্চোভ এবং তার মত সাঙ্গপাঙ্গদের মৃত্যুর পরও বিচার করবে।

ক্রুশ্চোভের বিচার চলছে। এখনও শেষ হয়নি। ক্রুশ্চোভ মৃত বলে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ফজলু চক্র সকল সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছে, বর্তমানে সে অন্যমত পোষণ করছে। সভাপতি মাও বলেছেন, “এক সভায় হাঁ বলা পরে কথা পাল্টিয়ে না বলো না” ফজলু চক্র সর্বত্রই এভাবে কথা পাল্টিয়ে দুমুখো হয়েছে।

খ) মাসুমকে বহিষ্কার করা হয়নি। এটা মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী। প্রচারপুস্তকে তার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

গ) কমরেড তাহের কমরেড সিরাজ সিকদারের ঘনিষ্টতম কমরেড ছিলেন, এ সম্পর্কে সকলেই অবগত। তার অবদান সর্বদাই স্বীকার করা হয়, বিভিন্ন  প্রচারপত্রে শহীদদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করা হয় অনেক সময় প্রথমেই।

কমরেড এনায়েত সম্পর্কে পার্টির অনুসন্ধান চলছিল। তার বিরুদ্ধে ফজলু চক্রই অভিযোগ উত্থাপন করে (জেলে থাকাকালীন কার্যাবলীর) এবং চরমতম  ঘৃণা প্রদর্শন করে। ফজলুর অধীনে এনায়েতকে নিয়োগ করা হয়েছিল।

কিন্তু সে ঘৃণা ও প্রতিশোধকামিতার জন্য এনায়েতকে নিতে রাজি হয়নি।

তখন এনায়েতকে কমরেড তাহেরের অধীনে দেওয়া হয় এবং তাকে অনুসন্ধান চালাতে বলা হয়।

ফজলু এখন এনায়েতের দরদী সেজেছে। কি দু’মুখো! শহীদদের সকলের নাম বিভিন্ন পুস্তিকায় সবসময় স্থানাভাবের কারণে দেওয়া সম্ভব নয়। এটাই কারণ। কোন ইমেজ ভাঙ্গার জন্য নয়।

ঘ) পঁচিশে মার্চের পূর্বে সংগঠনের অবস্থা মারাত্মক রকম সংকটজনক অবস্থায় ছিল। চরম আর্থিক সংকট ও কর্মী স্বল্পতা ছিল। বরিশালের প্রায় সকল পুরানো কর্মী অন্যত্র চলে যায় বা গ্রেফতার হয়।

এ সময় সম্পূর্ণ নতুন কমরেড দিয়ে সেখানে যোগাযোগ স্থাপন করতে পাঠানো ও কাজ চালানো হয়। স্থানীয় কর্মীদের অনেকের সাথেই তার যোগাযোগ ছিল না।

জেলে যোগাযোগের কোন পদ্ধতিই কমরেডদের জানা ছিল না।

কমরেডেদের অজ্ঞতা ও মারাত্নক কর্মী স্বল্পতার কারণে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। পঁচিশে মার্চের পর অধিকাংশ কমরেড জেল থেকে বেরিয়ে আসে। কর্মীর মুক্তির জন্য কোথায় যে অর্থ ব্যয় হয়নি এটা পার্টির নিকট অজানা। ঢাকা জেলে যে সকল কমরেড ছিল তাদের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা হয়েছিল এবং পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। এছাড়া ঢাকা ও চট্রগ্রামের চিকিৎসাধীন আহত কমরেডদের মুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

(ঙ) সুধীর নামক জনৈক ব্যক্তির বিষয় মুক্তির জন্য এক সহানুভূতিশীল কর্তৃক অর্থ চাওয়া হয়। সে বরিশালের কর্মী ছিল। বরিশালের নেতৃত্বের মতামত ব্যতীত কিভাবে কেন্দ্র টাকা দেয়? এ কারণে সুধীর সম্পর্কে বরিশালের নেতৃত্বের মতামত চাওয়া হয়। বরিশালের কর্মীরা এর সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দেন, শেষ পর্যন্ত যখন বুঝা যায় সে পার্টির সহানুভূতিশীলের পর্যায়ে পড়ে তখন তার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়।

ফজলু চক্র সুধীরের জন্য অর্থ দিতে নিষেধ করেছিল। এ সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

(চ) মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্বান্ত বিভিন্ন পরিবারের কথা কমরেড সিরাজ সিকদার কিভাবে জানবেন? যারা এ সকল এলাকার পরিচালক তাদেরকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে, শহীদ ও নিখোঁজদের তালিকা পেশ করতে বার বার বলা হয়েছে, ছয় পাহাড়ের দালালদের হাতে শহীদদের পরিবারের নিকট শোকবাণী প্রেরণ করা হয়। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে নিহতদের পরিবারের শোকবানী ছাপতে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু ছাপার দায়িত্বে নিযুক্ত কমরেড ছাপার কাজ শেষ করতে পারেননি।

মজিদ, ফারুক, পন্ডিত পরিবারে সাহায্যের অর্থ কমরেড মজিদের (খুলনার দায়িত্বে নিযুক্ত কমরেড) মাধ্যমে প্রেরিত হয়েছিল, ফজলু চক্র তা জোর করে দখল করে (৩৫০ টাকা)।

প্রসঙ্গক্রমে কমরেড আতাউরের পরিবারে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

(ছ) কমরেড তাহের ও কমরেড এনায়েতকে গণতন্ত্রমণার জন্য বিপদসংকুল স্থানে পাঠানো হয় যাতে তারা খতম হয়।

এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কমরেড তাহের স্বেচ্ছায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান, দূরবর্তী কোন জেলায় যেতে চান।

তখন কমরেড সিরাজ সিকদার ভাল সম্ভাবনাময় কাজ হয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য সুবিধাজনক, কেন্দ্রের আশ্রয়স্থল তৈরী সম্ভব এমন এলাকায় তাকে দায়িত্ব দেন।

তাকে গণতান্ত্রিক মনোভাবের জন্য পাঠানো হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

কারণ কমরেড তাহের এমন স্থানে ছিলেন যে প্রতি দুই ঘন্টায় একবার কমরেড সিরাজ সিকদারের সাথে দেখা করতে পারতেন। কাজেই গণতান্ত্রিক মনোভাবের কোন বাঁধাই ছিল না। বিপ্লবে আত্মবলিদান স্বাভাবিক। কিন্তু জনগণের জন্য কমরেড তাহের প্রাণ দিয়েছেন, তাই তার মৃত্যু মহান। ফজলু চক্রের আদর্শ তারেক-মুজিবের মত প্রতিক্রিয়াশীল মৃত্যু নয়।

(জ) ফজলু বিশ্বাসঘাতক চক্র এখানে তার প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন করেছে। অন্যান্য সংগঠনগুলো কি? প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে মার্কসবাদের নামধারী বুর্জোয়া উপদল, প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন যা সর্বহারাদের প্রতারিত করছে; দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের সহায়তা করছে।

তাদেরকে আক্রমণ করা তাদের মুখোশ উন্মোচন করা বিপ্লবী কাজ।

আর আমাদের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক বা অন্যকোন ভুল থাকলে অবশ্যই আত্মসমালোচনা করতাম।

কিন্তু কোথায় আমাদের ভুল?

ফজলু চক্র একটিও রাজনৈতিক ভুল দেখাতে পারেনি। ফজলু চক্র তাদের আক্রমণে মন খারাপ করেছে।

ইতিমধ্যেই সে কাজী-রনো-বদরুদ্দিন এবং অন্যান্য সংশোধনবাদীদের সাথে হাত মিলিয়েছে।

(ঝ) ফজলু-সুলতান অর্থ-অস্ত্র চুরি করা, ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করা, গুজব-অপবাদ রটনা করা, গুপ্ত হত্যার ষড়যন্ত্র করা, উপদল গঠন করা প্রভৃতি অপরাধে বহিষ্কৃত হয়। এদের সাথে যুক্ত থাকার কারণে হামিদ-জাফরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইহা কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্বান্ত, কোন ব্যক্তি বিশেষের নয়।

হত্যার আদেশ নয়, আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণের অধিকারের কথা সকলকে বলা হয়েছে।

কোন কর্মী সম্পর্কে তিনি (কমরেড সিরাজ সিকদার) বা কেন্দ্রীয় কমিটি আক্রোশের কারণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আহবায়ক কমিটির কোন নির্দেশই কমরেড সিরাজ সিকদার ভাঙ্গেননি। এটা মিথ্যা অপপ্রচার।

(ক) সভাপতি মাও বলছেন, “ব্যক্তিগত ব্যাপার যদি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভুল-ভ্রান্তির সাথে জড়িত না হয় তাহলে ছিদ্রানুসন্ধানের দরকার নেই।”

এর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন এ ধরণের সমালোচনা যদি একবার বিকাশ লাভ করে তাহলে পার্টির ভিতর মনোযোগ শুধু ছোটখাটো ত্রুটির উপরেই কেন্দ্রীভূত হবে এবং প্রত্যেকেই ভুলে যাবেন পার্টির রাজনৈতিক কর্তব্য। এটা খুবই বিপজ্জনক।

রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক বা মতার্দশগত ভুল-ভ্রান্তি দেখাতে না পেরে প্রতিক্রিয়াশীলদের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী ফজলু চক্র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী ফেঁদে বসেছে। তাদের জঘন্য উদ্দেশ্য হলো কর্মীদের দৃষ্টি রাজনীতি থেকে সরিয়ে ফেলা এবং ব্যক্তিগত ছিদ্রানুসন্ধানে নিয়োগ করা যাতে তারা রাজনৈতিক কাজ বাদ দেয় এবং সংগঠন বিপদজনক অবস্থায় পড়ে। এটা তাদের  চক্রান্তের একটা অংশ।

কমরেড সিরাজ সিকদারের ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত বিষয়াদি পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের বিপ্লবী পরিষদ কতৃক অনুমোদিত। একজন সর্বহারা বিপ্লবী হিসেবে তিনি কখনও পার্টির নিকট মিথ্যা বলেননি।

ফজলু চক্র কোনকালে বিপ্লবী পরিষদের সদস্য ছিল না। কাজেই তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বানোয়াট কাহিনী ব্যতীত আর কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

পার্টির অনুমতিসহ বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার কমরেডদের রয়েছে।

মতাদর্শগতভাবে সর্বহারাদের মধ্যে অনৈক্য বা বিচ্ছেদ হয় না এ কথা ফজলু চক্রের জানা উচিত।

একজনের জোর করে চাপিয়ে দোয়া বোঝা (বিশেষ করে বৈবাহিক ক্ষেত্রে) নেবে এমন লেজুড় সর্বহারা পার্টিতে কেউ নেই। উপরন্তু সর্বহারাদের বিবাহ হচ্ছে বিবাহ ইচ্ছুক নর-নারীর স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে। সামন্তবাদী পদ্ধতিতে চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়।

(খ) সর্বহারা বিপ্লবী পার্টিতে প্রত্যেককে পৃথকভাবে বিচার করা হয়। আত্মীয়তার সূত্র ধরে নয়। যে কারণে চীনা বা অন্যকোন পার্টিতে কোন কমরেডকে অমুকের স্ত্রী বা আত্মীয় হিসেবে বিচার করা হয় না।

ফজলু চক্র কর্তৃক অমুকের স্ত্রী এই এই করেছে বলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে যার স্ত্রী তাকে আক্রমণ করা।

অর্থাৎ ক সিরাজ সিকদারকে আক্রমণ ও হেয় করার জন্যই সে এ কাজ করেছে।

ফজলু চক্র কর্তৃক যে সকল শাড়ী বা গহনার কথা বলা হয়েছে তা পার্টির স্টোর। এখান থেকে কমরেডদের সর্বনিম্ন প্রয়োজন অনুযায়ী শাড়ী বা অন্যান্য দ্রব্য প্রদত্ত হয়। এ প্রয়োজন নির্ধারিত হয় কি পরিচয়ে, পরিবেশে কমরেডরা থাকে।

কমরেড সিরাজ সিকদারকে যদি কেউ প্রভাবান্বিত করেন বা পাইলট হিসেবে পরিচালনা করেন তবে তিনিই সর্বহারা পার্টির লাইন ও পরিচালনার যোগ্য প্রকৃত লোক।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়।

কমরেড তাহেরকে যথাযথ চিকিৎসা করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তার বা তার পরিবারের কোন অভিযোগ ছিল না।

অসুস্থ কমরেডদের গুরুত্ব এবং পার্টির সামর্থ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যয় করা হয়। এর বেশী কারো জন্য করা হয়নি। সংগঠনের অর্থ সহানুভূতিশীল এমনকি ফজলু চক্রের নামেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফজলু চক্র ব্যতীত আর কেউ চুরি করেনি।

(গ) কমরেড সিরাজ সিকদার কসমেটিক ব্যবহার করেন, বুর্জোয়া মনোভাবের কারণে বুর্জোয়া হিসেবে থাকেন এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তিনি যা কিছু করছেন তা কমরেডদের সামনেই বিপ্লবের ও নিরাপত্তার প্রয়োজনেই করছেন।

বিপ্লব ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিভিন্ন বেশভূষা ও সাজগোজ ব্যবহার করা, বিভিন্ন স্থানে থাকা চলে।

খাদ্য ও অন্যান্য বিষয়ে ফজলু বিশ্বাসঘাতক চক্র সবসময়ই বলতো, আপনার আরো খাওয়া উচিত, স্বাস্থ্য ভাল করা উচিত ইত্যাদি। আপনার একটি গাড়ী দরকার এমন কথাও সে বলেছে।

কিন্তু ক. সিরাজ সিকদার তার ষড়যন্ত্রে পা দেননি। সর্বনিম্ন প্রয়োজন অনুযায়ী সাধারণভাবেই তিনি চলেন।

(ঘ) ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ক. সিরাজ সিকদার অননুমোদিত এবং অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেননি।

(ঙ) ক. সিরাজ সিকদারের প্রতিটি কার্যকলাপে পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন একথা ফজলু চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে উল্লেখ করেনি যাতে তাকে স্বেচ্ছাচারী হিসেবে তুলে ধরা যায়।

. সিরাজ সিকদার কারো প্রতি নিয়োগে কোন পক্ষপাত দেখাননি।

যার সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে তাকে সার্বক্ষনিক করার সিদ্বান্ত নেয় ১৯৬৯ সালে ঢাকা জেলা কংগ্রেস, তাকে নেতৃত্ব সংস্থায় অর্থাৎ বিপ্লবী পরিষদে নেয় বিপ্লবী পরিষদ, বিপ্লবী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ বর্ধিত অধিবেশন তাকে সংগঠনের গুরুদায়িত্ব দেয়। পেয়ারা বাগানে নেতৃত্বস্থানীয় কর্মীসহ বর্ধিত বিপ্লবী পরিষদের বৈঠকে তাকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ প্রদান করা হয়।

সংগঠনের সিদ্বান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে নিয়োগ করা হয়, কোন ব্যক্তি বিশেষের শুভেচ্ছার জন্য নয়।

ফজলু চক্রই উক্ত কমরেডের সবচাইতে ভক্তের ভাব দেখায়। সর্বহারা পার্টির প্রথম কংগ্রেসে ফজলু তার নাম কেন্দ্রীয় কমিটির জন্যও প্রস্তাব করে (১৯৭২ সাল, জানুয়ারী)। পক্ষান্তরে ক. সিরাজ সিকদার উক্ত কমরেডের নির্বাচনের পরেও অসুস্থতার কারণে তার সদস্য হওয়া উচিত হবে না বলে মত পেশ করেন। সভাপতিমন্ডলী তার প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং কংগ্রেস সদস্যদের এ প্রস্তাব গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। কংগ্রেস সদস্যরা এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ক. সিরাজ সিকদারের স্বজনপ্রীতি থাকলে তিনি উক্ত কমরেডের নির্বাচনের বিরোধিতা করতেন না।

ফজলু চক্র উপরের বহু অভিযোগ কোন সভায় বা লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে সমালোচনা কোনোদিন করেনি। সে এখন মিথ্যা বলছে, সে সমালোচনা করেছে।

উচিয়াং-এর পুস্তক সম্পর্কে কমরেড সিরাজ সিকদার বলেছেন যে পুস্তকখানি ১৯৩৪ সালে লেখা। এত সুদীর্ঘদিনের ব্যবধানে উচিয়াং এর কি হয়েছে আমরা জানি না। উপরন্তু যেখানে মাওসেতুঙ কর্তৃক সমালোচনা-আত্মসমালোচনার সম্পর্কে সকল সমস্যার সমাধান লিখিত রয়েছে, সেখানে উচিয়াং এর পুস্তক কর্মীদের পড়ানো বা একে তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে নেওয়া ঠিক হবে না। লিউশাওচীর ‘কিভাবে ভাল কমিউনিস্ট হওয়া যায়’ পুস্তক এককালে কমিউনিস্টরা পড়তেন। বর্তমানে লিউর আসল চরিত্র বুঝতে পারায় কেউ তা পড়েন না।

উচিয়াং-এর প্রকৃত অবস্থা না জেনে আমরা উক্ত পুস্তক সকল কর্মীদের কিভাবে পড়াই?

ফজলু চক্র কংগ্রেস সম্পর্কে বানোয়াট মিথ্যা কাহিনী বলেছে। কংগ্রেস এক সাথে বসে করা হয়নি নিরাপত্তার কারণে, অন্যকোন কারণে নয়। কমরেডগণ চিন্তা করুন, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সকল নেতৃত্বস্থানীয় কর্মী এক সাথে বসেছেন, আর তা প্রকাশ হয়ে গেল, তাদেরকে শত্রু ঘেরাও করল, তাহলে কি অবস্থা হতো? সংগঠন শেষ হয়ে যেতো।

একমাত্র পার্টি ও বিপ্লবের শত্রু ব্যতীত আর কেউ এ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একত্রে বসার দাবী জানাবে না। ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় সমগ্র কেন্দ্রীয় কমিটি একবার এরূপভাবে খতম হয়েছিল। এ সকল কথা বিবেচনা করে ক. সিরাজ সিকদার কংগ্রেস প্রতিনিধিদের গ্রুপে গ্রুপে ভাগ করে বসার প্রস্তাব দেন। এর কারণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলেও শুধু এক গ্রুপের নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হবে, সকলের নয়।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য কংগ্রেসের পূর্বে আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক কংগ্রেস ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল কংগ্রেসের স্থানের ও বৈঠকের ব্যবস্থা করা, নিমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের নিকট নিমন্ত্রণ পৌঁছে দেওয়া, তাদের আসার ব্যবস্থা করা, থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, কংগ্রেস সদস্যদের উপস্থিত হতে সহায়তা করা, কংগ্রেস শেষে কর্মীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা।

কাজেই কংগ্রেস এক সাথে বসবে, না পৃথকভাবে গ্রুপে ভাগ হয়ে বসবে, কোথায় বসবে, কিভাবে বসবে, কে কোথায় থাকবে, কংগ্রেসে কিভাবে সদস্যরা যোগাযোগ করবেন তা নির্ণয় করেছে কংগ্রেস ব্যবস্থাপনা কমিটি, কমরেড সিরাজ সিকদার নয়।

এ কমিটি ক. সিরাজ সিকদারের প্রস্তাব গ্রহণ না করলেই পারতো। অতএব পৃথক পৃথকভাবে গ্রুপে ভাগ হয়ে বসার ব্যবস্থা করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা কমিটির অর্থাৎ ফজলু-সুলতান চক্রের (যেহেতু তারা সংখ্যাগুরু ছিল অর্থাৎ তিন জনের কমিটির দুইজন ছিল তারা।)।

ফজলু চক্র কংগ্রেস ব্যবস্থাপনা কমিটির কথা ও তার দায়িত্ব ইচ্ছেকৃতভাবে গোপন করে ক. সিরাজ সিকদার ও সাচ্চা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অস্বীকার করার মিথ্যা অজুহাত তৈরী করা।

কংগ্রেসে ফজলু চক্রের তার বক্তব্য পেশের পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা ছিল। উপরন্তু সে একজন গ্রুপ পরিচালক ছিল। প্রায় সকল গ্রুপে সে গিয়েছে, কর্মীদের সাথে মিশেছে। কংগ্রেসের সকল সদস্যও তাকে অপরের সাথে মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে।

গ্রুপসমুহের মতামত সর্বদাই জানানো হতো, এ নিয়ে ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়।

কেডার ইতিহাস মৌখিকভাবে প্রদত্ত হয়। ইহা সভাপতিমণ্ডলীর তখনকার মত অনুমোদিত ছিল।

এ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় সভায় আত্নসমালোচনা করা হয় নিম্নভাবেঃ

কেডার ইতিহাস প্রণয়ন দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া যার জন্য প্রয়োজন শুদ্ধি আন্দোলন। সময়াভাবে মৌখিকভাবে প্রদান করার ফলে পরিপূর্ণ ইতিহাস দেওয়া সম্ভব হয়নি।

ফজলু চক্রের, সুলতান চক্রের পরিপূর্ণ কেডার ইতিহাস প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এগুলো সংগঠনের সীমাবদ্ধতা।

‘বাক স্বাধীনতা ছিল না’ বলা কংগ্রেস সদস্যদের অপমান করা ব্যতীত আর কিছু না।

জনৈক কমরেডের মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে প্রকৃত বিষয় হলো নিম্নরূপঃ ফজলু-মনসুর উক্ত কমরেড সম্পর্কে খবর সংগ্রহ করে যে সে ক. সিরাজ সিকদারকে খতম করতে চায়। এ তথ্য ফজলু সভাপতিমন্ডলীর সভায় পেশ করে। ফজলুই মৃত্যুদণ্ড দাবী করে (ফজলু চক্র অনেক সময় ক্ষুদ্র অপরাধে অনেকের মৃত্যুদণ্ড দাবী করেছে, উদাহারণ ঝালকাঠির জাহাঙ্গীর)। ক. সিরাজ সিকদার উক্ত কমরেডকে গ্রেফতার ও অনুসন্ধানের কথা বলেন, এ প্রস্তাব গৃহীত হয়।

ক. সিরাজ সিকদার পরে বিষয়টি গুরত্বহীন দেখে গ্রেফতার বাতিল করে শুধু অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন (সে অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রকাশিত ২নং সার্কুলার দ্রষ্টব্য)। কংগ্রেসে ক. সিরাজ সিকদার ও সভাপতিমণ্ডলীর বাকী সদস্যরা ষড়যন্ত্র আঁটছিলেন ইহা ফজলু চক্র যদি জানতো তবে কেন সে কংগ্রেস সদস্যদের জানালো না? এর কারণ হিসেবে সে বলে ভয়ে জানায়নি।

এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।

কংগ্রেসের সকল সদস্যকে না জানিয়ে বিনা বিচারে ক. সিরাজ সিকদার বা সভাপতিমণ্ডলী ফজলুকে কিছুই করতে পারতো না।

উপরন্তু ফজলু চক্র ক. সিরাজ সিকদার কোথায় রয়েছেন তা জানত, অস্ত্র দখল করাও তার পক্ষে সম্ভব ছিল।

প্রকৃতপক্ষে সমস্ত বিষয়টি বানোয়াট কাহিনী, কর্মীদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তৈরী।

মার্কসবাদীরা ষড়যন্ত্রকারী নয়, মুখ দেখে বা ভয়ে কর্মীরা ক. সিরাজ সিকদার বা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব গ্রহণ করে না, সঠিকতার জন্যই করে। কমরেড সিরাজ সিকদার প্রায়ই বলেন, “নেতা হওয়ার জন্য আমরা বিপ্লব করছি না, জনগণের মুক্তির জন্য বিপ্লব করছি। এর জন্য ন্যায় ও সত্যকে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার নীতি ও পবিত্রতাকে এবং পার্টির পবিত্রতাকে রক্ষা করতে মৃত্যু পর্যন্ত সংগ্রাম করবো। সঠিক ও অধিকতর যোগ্য বিপ্লবীর নেতৃত্ব শর্তহীনভাবে সব সময় গ্রহণ করবো, প্রতিক্রিয়াশীল-প্রতিবিপ্লবীদের, ক্রুশ্চোভের মত খারাপ লোকদের পার্টির ক্ষমতা দখলকে, পার্টি ও বিপ্লবকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রকে শেষ পর্যন্ত বিরোধিতা করব

কাজেই ফজলু চক্রের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করার প্রয়োজন হতো না। নিঃস্বার্থ বিপ্লবী অনুশীলনে যোগ্যতর প্রমাণিত হলে ক. সিরাজ সিকদারসহ সকল খাঁটি বিপ্লবীরা ও জনগণ আনন্দের সাথে তার হাতে সমুদয় ক্ষমতা তুলে দিত।

কিন্তু সাপ গর্ত থেকে বেরুবেই। পদ, নেতৃত্ব, ক্ষমতার লোভ নিয়ে যারা বিপ্লবে আসে তাদের প্রকৃত কুৎসিত চেহারা প্রকাশ পাবেই পাবে। ফজলু চক্রের চেহারা দ্রুত প্রকাশ পেয়েছে। বিপ্লবী ও জনগণ অচিরেই তাদেরকে ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে।

ফজলু চক্র এতই নেতৃত্ব লোভী, পদ ও নাম-যশ লোভী যে, সর্বহারা পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নামধারী প্রতিক্রিয়াশীল উপদল গঠন শেষ না করেই ‘সেলিম শাহনেওয়াজ জিন্দাবাদ’ খুলনার দেওয়ালে লিখছে।

দেশীয় প্রবাদ আছে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। পার্টির ক্ষমতা ও নাম যশের লোভে যে পাপ হয়েছে, অর্থাৎ যে অপরাধ ফজলু করেছে তা তার কলংকিত মৃত্যুকেই ত্বরান্বিত করেছে।

ফজলু চক্র হবে ইতিহাসের কলংকিত নেতিবাচক শিক্ষক। ফজলু চক্র শহীদদের কথা, বিপ্লব, পার্টি ও জনগণের কথা তার কদর্য মুখে উচ্চারণ করে তাদের অপমান করেছে।

শহীদ কমরেড, বিপ্লব, পার্টি ও জনগণ, দেশ ও জাতির জন্য ফজলু চক্রের কিছু মাত্র দরদ থাকলে পার্টি যখন হু হু করে দেশব্যাপী বিকাশ লাভ করছিল তখন পার্টি নেতৃত্ব ও সাচ্চা কমরেডদের হত্যা করা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, গুজব, কুৎসা রটনা করা, কর্মী ও পার্টির প্রতি আস্থাশীলদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, তাদেরকে প্রতারিত করা, অর্থ চুরি করে পার্টির কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা, অস্ত্র চুরি করে পার্টিকে হাতিয়ার শূন্য করা, ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে উপদল গঠন করা, পার্টিকে ভেঙ্গে ফেলা বা দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালানো, পৃথক প্রতিক্রিয়াশীল দূর্গ গঠন করা, পার্টির গণতন্ত্র, কেন্দ্রিকতা, সংবিধানকে পদদলিত করার মত প্রতিবিপ্লবী কাজ সে কখনও করতো না।

সে ভাল কমরেড হলে পার্টিকে শক্তিশালী করার কাজকে প্রাধান্য দিয়ে কমরেডদের ভুল-ত্রুটিকে পার্টির মধ্যে থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা ও সংগ্রামের সঠিক পথ গ্রহণ করতো, পার্টির ঐক্যকে জোরদার করতো।

ফজলু চক্র এ পথ গ্রহণ করেনি, কারণ এ সকল মিথ্যা অভিযোগ, গুজব, অপবাদ, কুৎসা, সত্যের সামনে টিকবে না, ফলে তার পক্ষে পার্টির নেতা হওয়া যাবে না, ক্ষমতা দখল করা যাবে না।

যাদেরকে তার চক্রে যোগদান করাতে চেয়েছিল এরূপ কেউ কেউ তাকে বলেছিল, তুমি সভায় সামনাসামনি তোমার বক্তব্য বলো। সে আঁতকে উঠে এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়েছে।

মিথ্যা অপবাদ, গুজব, কুৎসা, হত্যা-ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে মেনুফেস্টো (কর্মসূচী) করে কিছুদিন কিছুসংখ্যক লোককে প্রতারিত করা যায়, চিরদিন সবাইকে প্রতারিত করা যায়না।

রাজনৈতিক পার্টি গঠিত হয় রাজনীতির ভিত্তিতে। ফজলু চক্রের কোন রাজনীতি নেই। ক. সিরাজ সিকদার প্রণীত রাজনৈতিক ও অন্যান্য কর্মপদ্ধতিগত লাইন চুরি করে, সর্বহারা পার্টির সুনাম ব্যবহার করে, সামন্তবাদী আত্মীয়তার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে তারা অল্প কিছু দিন চলতে পারে।

কিন্তু শ্রেণী ও জাতীয় সংগ্রামের জটিল প্রক্রিয়ায় উত্থাপিত সমস্যাবলীর সমাধান দিতে না পেরে, রাজনীতি ও মতাদর্শ বর্জিত হয়ে তারা হাত মেলাবে হয় বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সাথে (ইতিমধ্যে তারা কাজী চক্রে সাথে হাত মিলিয়েছে), বা গুপ্ত পুলিশ হয়ে সরকারের সাথে হাত মিলাবে বা ডাকাত দলে পরিণত হবে। তারা ক. সিরাজ সিকদারকে খতম করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এ কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকার থেকে পাবে বাহবাসহ বিরাট অংকের অর্থ। বিভিন্ন আকৃতির সংশোধবাদীদের প্রশংসা ও সহায়তা। আন্তর্জাতিক শত্রুদের পুরস্কার। তাদের কাজ ইতিমধ্যেই শত্রুদের বহু প্রশংসা পেয়েছে।

এভাবে তারা তাদের কাজ দ্বারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের দালালে পরিণত হয়েছে।

তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের দালাল।

তাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ভাল। ইহা প্রমাণ করে ক. সিরাজ সিকদার এবং তার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাচ্চা বিপ্লবীরা প্রকৃতই বিপ্লবী।

পরিশিষ্ট-১

১) ফজলু ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিপ্লবের স্বার্থের অধীন রাখবে এই শর্তে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিমন্ডলী তার নাম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদের জন্য পেশ করে।

২) পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ফজলু সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত (২৫/০৩/৭২):

তাদেরকে (ফজলু ও তার স্ত্রী) নিম্নলিখিত সর্বনিম্ন ত্রুটি সংশোধনের আহবান জানানো হচ্ছেঃ

মিনুর মুক্ত মনের অভাব, সমালোচনা-আত্নসমালোচনা গ্রহণ না করা, জেদ, অভিমান, সমালোচনায় কান্নাকাটি, বিনয়ের অভাব, ছাত্র হওয়ার মনোভাবের অভাব, ভাগ্যান্বেষী মনোভাব ইত্যাদি।

আহাদ (ফজলু) ব্যক্তিগত বিষয়ে চিন্তায় অস্পষ্টতা। ব্যক্তিগত বিষয় স্বেচ্ছায় যথাযথ পরিমাণে বিপ্লবের অধীনে না আনা, আবেগ ইত্যাদি।

ফজলু ত্রুটিসমূহ সংশোধনের পূর্বে বিয়ের আবেদন জানালে ইহা প্রমাণ করবে যে, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিপ্লবের অধীন রাখতে পারছেন না। তখন কমরেড সভাপতি নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিয়ের অনুমতি দিতে পারেনঃ

(ক) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে এবং আঞ্চলিক কমিটির প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান।

কমরেড আহাদকে সমালোচনা করেন কমরেড হাকিম নিম্নলিখিত কারণেঃ

যৌন সম্পর্কিত বক্তব্যে (যৌনকে কি অস্বীকার করা যায়-ফজলুর বক্তব্য) এই বক্তব্য পেশ করা প্রয়োজন ছিল যে যৌনকে বিপ্লবের স্বার্থের অধীনে রাখতে হবে। নিম্নস্তরে অসম্পূর্ণ বক্তব্য পেশ করা উচিৎ নয়।

কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগত স্বার্থকে দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে, তাকে বজায় রেখে নয় (ফজলুর বক্তব্য কমিউনিস্টদের কিছুটা ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকবে)।

নিম্নস্তরে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা উচিৎ নয়।

সভায় সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

৩) পূর্ববাংলার সর্বহারার পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী বৈঠক (তারিখ ২৮/৩/৭২):

ব্যক্তিগত স্বার্থকে বিপ্লবের স্বার্থের অধীনে রাখতে না পারার পরিপ্রেক্ষিতেঃ

(ক) পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো (ক. ফজলুকে); ৬ মাস পরে এই বিষয়ে পুনর্বিবাচনা করা হবে।

(খ) কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী নিম্নতর স্তরে প্রধান পদে নিয়োগ করা হবে না, ৬ মাস পরে এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা হবে।

(গ) ক. ফজলুকে খুলনা হতে প্রত্যাহার করে ক. ……অধীনে চট্রগ্রাম নিয়োগ করা হলো।

পরিশিষ্ট-২

ফজলু গত এপ্রিলে নিম্নলিখিত কবিতাটি রচনা করে। একই সময়ে সে কমরেড সিরাজ সিকদারসহ সাচ্চা বিপ্লবীদের হত্যার, পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে। এ কবিতার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় তার দু’মুখো ও ভাওতাবাজী চরিত্র। কবিতার মূল পাণ্ডুলিপি গত ৩রা জুন পার্টি হস্তগত করেছে। কবিতাটি নিচে দেওয়া হলঃ

কাগুজে বাঘ

পূর্ব বাংলার বীর জনগণ,

সংগ্রামে বলিদান নিশ্চয়,

তবু আজ চলে এসো নির্ভয়।

প্রতিরোধের দূর্গ তুলি আয়রে সর্বহারা,

আমরা সকলে মিলেই গড়িব নতুন সমাজধারা।

সর্বহারারা মিলিছে মিশিবে,

দেশপ্রেমিকরা আসিছে আসিবে,

সর্বহারাদেরই পিছে

তবু আজ ওরে

শুধু কেন ভাই সময় কাটাই মিছে?

নাই যার কিছু হারাবার ভাই, তার চেয়ে আর সাহসী যে নাই।

অগ্রগামী সে শ্রেণীর নেতা

মোদের সিরাজ ভাই

তারই মহান আহবানে

চল যাই ওরে যাই

তিনি বলেছেন-

“অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন!”

সে আহবানে সাড়া দিয়ে ধরুন অস্ত্র ধরুন!!

হানাদারী অস্ত্রের ঝনঝনি দেখে

কেন কর মিছে ভয়?

দুর্জয় জনতার একতার কাছে

ওসব কিছুই নয়।

শোষকেরা সব দেখতে যতই

হোক না ভয়ংকর।

জনতার মহান সংগ্রামে সব

হয়ে যাবে একাকার।

জনতার রক্ত শোষণের কালে

সত্যিই ওরা বাঘ

জাগুক জনতা, দেখুক বিস্ময়

ওরা যে কাগুজে বাঘ।

পরিশিষ্ট-৩

দেরীতে পাওয়া সংবাদে কেন্দ্রীয় কমিটি নিম্নলিখিত তথ্যাদি অবগত হয়েছেন—

১) বাংলাদেশ পুতুল সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ফনীভূষণ মজুমদারের সাথে ফজলু–সুলতান চক্র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তাদের পদলেহী জাফর (পৈত্রিক নাম আজম)কে নিয়োগ করেছে। জাফর একাধিকবার ফনী মজুমদারের সাথে দেখা করেছে।

২) কোন এক স্থানে আমাদের দু’জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করার জন্য তারা পুলিশে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এ দু’জন কমরেডকে গ্রেপ্তার করে এবং অস্ত্র ও অর্থসহ বহু প্রচারপত্র ও দলিল কব্জা করে।

৩) ষড়যন্ত্র করার জন্য সম্প্রতি ফজলু চক্র বরিশাল যায় এবং সেখানে সে ছয় পাহাড়ের দালাল সামসুর রহমান এমসিএর আশ্রয়ে থেকে বরিশালের সংগঠনে বিভেদ সৃষ্টি করা ও তা দখল করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়।