সিরাজ সিকদার রচনাঃ হুমায়ুন কবীর প্রসঙ্গে বক্তব্য

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক “হুমায়ুন কবীর প্রসঙ্গে সর্বহারা পার্টির বক্তব্য-১” শিরোনামে রচনা ও প্রকাশ ১০ জুন ১৯৭২ এটি পরবর্তীকালে আগস্ট ১৯৭৪-এ পার্টি প্রকাশিত উপদলবাদ বিরোধী সংগ্রামের দলিল সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪


 

পিডিএফ

হুমায়ুন কবীর পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে সুবিধাবাদ, ব্যক্তিস্বার্থ (স্ত্রী, পরিবার), চাকুরী ও পদের স্বার্থে সে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। বহুদিন তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।

বরিশালে সে একবার ধরা পড়ে, কিন্তু জেল থেকে সে বন্ড দিয়ে বেরিয়ে আসে, অর্থাৎ পাক-সামরিক দস্যুদের কাছে সে আত্মসমর্পণ করে।

২৫শে মার্চের পরবর্তী সময়ে সে সুদীর্ঘদিন পালিয়ে থাকে। পার্টি তার সাথে যোগাযোগ করে বার বার জাতি ও জনগণের এই সংকটজনক অবস্থায় বিপ্লবে যোগদানের আহ্বান জানায়। শেষ পর্যন্ত সে এর শর্ত হিসেবে বিরাট অংকের ভাতা চায়। পার্টির বারংবার বুঝানোর ফলে সে কিছুটা তৎপরতায় অংশগ্রহন করে। এটা সে করে আত্মপ্রচার ও দুঃসাহসী বীর হিসেবে নিজেকে জাহির করার জন্য।

ইতিমধ্যে তার ভাই ফিরোজ কবীর ওরফে তারেক চক্রান্ত করে একজন কমরেডকে হত্যা, সমরবাদী নীতি, বন্দুকের ডগায় নারীদের নিয়ে সেচ্ছাচার করার জন্য পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক বহিষ্কৃত হয়। হুমায়ূন কবীর এই বহিষ্কারকে শুধু যে মেনে নিতে পারেনি তাই নয়, পার্টির মতামতকে উপেক্ষা করে সে তার ভাই ও তার সামন্তবাদী বংশকে বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পত্রিকায় এবং বাংলা একাডেমীতে তার ভাইয়ের জীবনী (সত্যকে লুকিয়ে রেখে) ছাপাবার ব্যবস্থা করে।

সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ, নাম-যশ করার পুরোপুরি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতঃই হুমায়ুন কবীরের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য ছিল। তার ইচ্ছা ছিল R.S.P-এর নির্মল সেন ও প্রফেসর সিদ্দিকের মত চাকুরী ও বুর্জোয়া জীবনযাপন করে সর্বহারা পার্টির নেতা হওয়া এবং লেখক হিসেবে নিজেকে জাহির করা। তার এই মনোভাব এবং তার ভাই ফিরোজ কবীর সংক্রান্ত পার্টির সিদ্ধান্ত তাকে প্ররোচিত করে ফজলু-সুলতান চক্রের সাথে যুক্ত হতে।

ফজলু চক্রের উদ্ভব ও বিকাশের একটা সময় পর্যন্ত হুমায়ুন কবীর পার্টি ও কমরেডদের ভাওতা দেয় এবং দেখায় যে সে এর সাথে যুক্ত না। ফজলু চক্র সংক্রান্ত প্রথম সার্কুলার পড়ে সে বলে, “পার্টি যখনই ভাল অবস্থায় আসে; তখনই কিছু লোক পার্টিকে ধ্বংস করতে আসে। ফজলু-সুলতান চক্রকে খতম করা উচিৎ। আমার বোনটা একটা খারাপ লোকের হাতে পড়েছে (তার বোন ফজলুর স্ত্রী)তাকে (বোনকে) পেলে আমার কাছে ফেরত দিয়ে যাবেন। আপনারা কি করছেন? এখনো তাদের খুঁজে বের করে খতম করছেন না কেন?”

এক দিকে সে এ ধরনের কথা বলছে আর অন্যদিকে ফজলু চক্র ও নিজের বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। পার্টি ও নেতৃত্ব বিরোধী অপপ্রচার ও জঘন্য ব্যক্তিগত কুৎসা সম্বলিত দলিলাদি লিখেছে, ছাপিয়েছে এবং বিতরণ করেছে, চক্রের প্রধান প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে কাজ করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল চক্রান্তকারীদের চর হিসেবে গোপনে পার্টির মধ্যে অবস্থান করা যাতে ফজলু চক্রের পতন হলেও সে পার্টির মাঝে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং পার্টির বিরাটাকার ক্ষতি সাধন করতে পারে। সে পার্টির প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়েছে আর গোপনে ঢাকায় ফজলু চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে। সাচ্চা বিপ্লবীদের খতমের জন্য প্রেরিত ফজলু চক্রের গুপ্তঘাতক দলের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছে। এভাবে সুদীর্ঘদিন সে পার্টির মাঝে গুপ্ত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিরাজ করে। সে পুরোপুরি পার্টির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

এ সকলের কারণ হল R.S.P ও বিভিন্ন আকৃতির  সংশোধনবাদীদের মত বুর্জোয়া জীবনযাপন করা, ফজলু চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব দখল করে তাকে ধ্বংস করা, একে সুবিধাবাদী বুর্জোয়াদের লেজুড় ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিতে পরিণত করা। তার এ সকল কাজ বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী, ছয় পাহাড়ের দালাল এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের সেবার শামিল।

তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ পুতুল সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, আজ পর্যন্ত কোন নিহত বুদ্ধিজীবীর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। উপরন্তু বাংলা একাডেমী ও অন্যান্য স্থানে সকলেই জানে সে বামপন্থী দল সর্বহারা পার্টির সাথে যুক্ত। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, সর্বহারা পার্টির একজন সাধারণ কর্মী লিফলেট বিতরণ করতে যেয়ে ধড়া পড়লে তাকে শেখ–এর সামনে হাত ভাঙ্গা হয় এবং চরম নির্যাতন চালানো হয়। বর্তমানে তাকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করা হয়েছে। অতীতে আমাদের কর্মী এমন কি সহানুভুতিশীলদের পেলেও খতম করা হয়েছে। বর্তমানেও এরূপ নির্দেশ রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ পুতুল সরকার ও ছয় পাহাড়ের দালালদের হুমায়ুন কবীরের প্রতি এই বিশেষ দরদের তাৎপর্য কি?

উল্লিখিত কারণসমুহের জন্য সর্বহারা পার্টি হুমায়ুন কবীরকে বিপ্লবী বা প্রগতিশীল বা দেশপ্রেমিকদের শিবিরভুক্ত করে না।

তার পার্টি, বিপ্লব ও জনগণ বিরোধী তৎপরতার অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি। ফজলু চক্রে হুমায়ুন কবীরের ভূমিকা সংক্রান্ত দলিলাদির ফটোস্ট্যাট কপি কর্মী ও সহানুভুতিশীলদের দেখানো হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটি

পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি

নোট

প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে হুমায়ুন কবীর পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির গেরিলাদের হাতে খতম হয়। হুমায়ুন কবীরের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা পাক ফ্যাসিস্টদের হাতে নিহত কোন বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে নেয়নি। তার প্রতি সরকারের বিশেষ প্রীতি কি প্রমাণ করে না যে, সে সরকারের উঁচুদরের গোপন তাবেদার ছিল? ■