সিরাজ সিকদার রচনাঃ কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইশতেহার

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ৮মে ১৯৭২ইশতেহারের পরিশিষ্ট ২ পার্টির তাত্ত্বিক মুখপত্র লালঝাণ্ডার ২নং সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১ নভেম্বর ২০১৩


 

পিডিএফ

প্রথম অংশ

কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ৬ই মে, ১৯৭২ সাল শুরু হয় এবং ৭ই মে সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয়। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য ও বিকল্প সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সভার সভাপতিত্ব করেন।

১) ফজলু-সুলতান চক্র সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ৩০/৪/৭২ তারিখের ৫নং সার্কুলার কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়।

২) ফজলু-সুলতান চক্র সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটি নিম্নলিখিত তথ্যাবলী সংগ্রহ করে।

* ফজলু-সুলতান চক্র খুলনায় কোন কোন কর্মীকে ভাওতা দিয়ে অসাংগঠনিকভাবে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে শরিক করায়। ইহা সে স্থানীয় নেতৃত্বকে গোপন করে এবং বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের এই সভার বিষয়বস্তু গোপন রাখতে বলে।

* এ সভায় ফজলু চক্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কোন কোন কমরেডের বিরুদ্ধে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এরূপ জঘন্য, অশ্লীল মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা, গুজব রটায়।

* ফজলু-সুলতান চক্র জনৈক অসুস্থ কমরেডকে প্রথম ধরিয়ে দেওয়া, পরে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

* আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা কমরেড সিরাজ সিকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য এবং পার্টির প্রতি বিশ্বস্ত এরূপ কিছু সংখ্যক কমরেডকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে যাতে তারা পার্টির ক্ষমতা দখল করতে পারে।

* ফজলু-সুলতান চক্রের পা চাটা কুকুর জাফর, রিজভী পার্টির অর্থ নিয়ে তাদের প্রভুদের নির্দেশে বিভিন্ন স্থানে যায়, দলত্যাগী সুবিধাবাদীদের সাথে যোগাযোগ করে অস্ত্র সরাবার চক্রান্ত করে।

* ফজলু-সুলতান চক্রের অপর এক পদলেহী কুকুর হামিদকে খারাপ উদ্দেশ্যে চক্রন্তকারীরা এখানে সেখানে পাঠায়।

ফজলু-সুলতান চক্র এবং সুবিধাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীরা কমরেড সিরাজ সিকদারকে সর্বাধিক আক্রমণ করেছে। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কমরেডদের জঘন্যভাবে আক্রমণ করেছে, এমনকি হত্যার চক্রান্ত করেছে।

‘শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ভাল’। ইহা প্রমাণ করে চক্রান্তকারীদের ও সুবিধাবাদীদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ভূত প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সাচ্চা কর্মীরা নীতিতে দৃঢ় থেকেছেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার পবিত্রতা রক্ষা করেছেন, পার্টিকে সুবিধাবাদী ও চক্রান্তকারীদের পার্টিতে পরিণত করা থেকে রক্ষা করেছেন।

অতি সত্ত্বর উপদল ও চক্র ভেঙ্গে দেওয়া এবং শর্তহীনভাবে উপদলীয় চক্রান্তমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যে লিপ্তদের বহিস্কারের নীতিতে অটল থেকে পার্টি নিম্নলিখিত প্রমাণিত চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, উপদল গঠনকারীদের চিরদিনের জন্য পার্টি থেকে বহিস্কার করেছে।

১) ফজলু ওরফে আহাদ (সেলিম শাহনেওয়াজ পৈত্রিক নাম)।

২) সুলতান ওরফে মাহমুদ ওরফে আকবর (মাহবুব পৈত্রিক নাম)।

৩) জাফর ওরফে কামাল (আজম পৈত্রিক নাম)।

৪) হামিদ (মহসিন পৈত্রিক নাম)।

চক্রান্তকারীদের সাথে যুক্ত রিজভীকে পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এই সময় সে পার্টির লোক বলে পরিচয় দিতে পারবে না, লোক সংগ্রহ ও পরিচালনা করতে পারবে না। তার নিকট পার্টির গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। পার্টির সাথে যুক্ত কেউই কোন দ্রব্যাদি তাকে প্রদান করবেন না।

এদের সম্পর্কে আরও তথ্য লালঝাণ্ডাতে প্রকাশ করা হবে।

ফজলু-সুলতান চক্রের জঘন্যতম অপরাধ ও কার্যকলাপের জন্য তাদের নিজেদের বিবেক তাদের ক্ষমা করবেনা, পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা এবং পূর্ববাংলার সচেতন জনগণ কখনও তাদের ক্ষমা করবেনা এবং যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবে।

কেন্দ্রীয় কমিটি আরও অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে এবং চক্রের সাথে যুক্ত এবং সুবিধাবাদীদের যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান করবে।

বর্তমানে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিকাশের চমৎকার অবস্থা বিরাজ করছে। সমগ্র পূর্ববাংলা ব্যাপী জাতীয় গণভিত্তিক পার্টি বিকাশের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এ চক্রান্তকারীদের শত্রুতামূলক কার্যকলাপের ফলে কিছুটা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু চক্রান্তকারী ও সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায় এবং তাদের বহিস্কারের মাধ্যমে পার্টি চূড়ান্ত বিশ্লেষণে শক্তিশালী হয়েছে।

ফজলু-সুলতান চক্রের উপদল গঠন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও গুপ্তহত্যার মাধ্যমে পার্টির ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

ইহা সম্ভব হয়েছে পার্টি ও নেতৃত্বের সঠিক লাইন, নেতৃত্বের সতর্কতা, কর্মীদের আন্তরিকতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং নেতৃত্বের প্রতি অবিচলিত আস্থার কারণে।

কিন্তু সংগঠনের প্রতিকূলতা এখনও কেটে যায়নি। সংগঠনের কাছে প্রকাশ হয়নি এরূপ সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানী, ষড়যন্ত্রকারী ও চক্রান্তকারীরা এই প্রতিকূল আবহাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে সুবিধা আদায় করা এবং নেতৃত্ব দখলের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

কাজেই পার্টির বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে এবং আভ্যন্তরীণ চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, অন্যদিকে সুবিধাবাদী এবং সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী আক্রমণের বিরুদ্ধে সমগ্র পার্টিকে সতর্ক থাকতে হবে। এর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, “পানিতে পড়লেও সেখানে পাগলা কুকুরকে পিটানোর নীতিতে দৃঢ় থাকতে হবে।”

সমগ্র পার্টি কমরেড সিরাজ সিকদার ও তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ঐক্যকে দৃঢ় করবেন, কমরেড সিরাজ সিকদার, তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির সাচ্চা বিপ্লবীদের রক্ষা করবেন, পার্টির ক্ষমতা যাতে সর্বদাই পরীক্ষিত খাঁটি বিপ্লবীদের হাতে থাকে তা নিশ্চিত করবেন।

দ্বিতীয় অংশ

ছয় পাহাড়ের দালাল কর্তৃক বামপন্থী ও দেশপ্রেমিক জনগণবিরোধী শ্বেত সন্ত্রাস অচিরেই সমগ্র পূর্ববাংলাব্যাপী তীব্র আকার ধারণ করবে।

এ সন্ত্রাসের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশপ্রেমিক জনগণ ও বামপন্থীদের খুঁজে বের করা, অস্ত্র খোঁজা, লাল বই খোঁজা, সরকার বিরোধী প্রচারপত্র খুঁজে বের করা। তারা সর্বাধিক জোর দেবে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মী, গেরিলা, সহানূভূতিশীলদের খুঁজে বের করা ও খতম করা, অস্ত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি হস্তগত করার জন্য।

এ কারণে সমগ্র সংগঠনকে সতর্ক করা হচ্ছে।

প্রকাশ হয়ে পড়া কমরেড, সহানুভূতিশীল ও বন্ধুগণ, অন্যত্র সরে গোপনভাবে কাজ করবেন। প্রকাশ হয়ে পড়েননি এইরূপ কমরেড, গেরিলা, সহানুভূতিশীল ও বন্ধুগণ অতিশয় সতর্কতার সাথে কাজ করবেন। গোপনীয়তা বিষয়ক দলিল পাঠ ও প্রয়োগ করবেন। পুস্তক, অস্ত্র, দলিলাদি নিরাপদে রাখবেন।

তৃতীয় অংশ

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ৬ই মে শুরু হয় এবং ৭ই মে সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয়।

সভায় সকল সদস্য, বিকল্প সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।

সভায় ফজলু-সুলতান সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় কমিটির ৫নং সার্কুলার অনুমোদিত হলো। এ চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া ও যথাযথ শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ সভায় পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির যে সকল কর্মী ফজলু-সুলতান চক্রের গুজব, অপবাদ, অসাংগঠনিক কার্যকলাপ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত জানামাত্র রিপোর্ট করেননি তাদেরকে সমালোচনা করা হয়। তারা এ ধরণের ত্রুটি ভবিষ্যতে পুনরায় করবেন না এবং যথাযথ আত্মসমালোচনা করবেন।

তারা যদি সময়মত রিপোর্ট করতেন তবে বহু পূর্বেই এ চক্রের কার্যকলাপ চূর্ণ-বিচূর্ণ করা সম্ভব হতো।

সভায় সমগ্র পার্টিতে জরুরী ভিত্তিতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সিদ্বান্ত গৃহীত হয় এবং শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত দলিল (পরিশিষ্ট-১) গৃহীত হয়।

পার্টির অভ্যন্তরে এখনো যে সকল ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানী রয়ে গেছে তারা ফজলু-সুলতান চক্র সৃষ্ট প্রতিকূল অবস্থার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে।

শুদ্ধি অভিযানের লক্ষ্য হবে চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতিগত ভুল সংশোধন করা, একই সাথে ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী এবং সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানীদের অবশিষ্টাংশদের খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে বাসি উপাদান হিসেবে বর্জন করা।

এজন্য সংগঠনের বর্তমান সাধারণ শ্লোগান হবে, বাসি উপাদান বর্জন কর, টাটকাটা গ্রহণ কর।

সচেতন হয়ে চক্রের সাথে কাজ করেননি, সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী হননি, না বুঝে চক্রের সাথে যুক্ত হয়েছেন, কিন্তু আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত, সংশোধনের ইচ্ছুক এ ধরণের কমরেডদেরকে অবশ্যই সংশোধনের সুযোগ প্রদান করা হবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে ভবিষ্যতের ভুল এড়ানো এবং মতাদর্শগত স্পষ্টতা ও কমরেডদের ঐক্য অর্জন করা।

কেন্দ্রীয় কমিটির শুদ্ধি অভিযানের অগ্রগতির দ্রুত পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বর্ধিত পূর্ণাঙ্গ সভা আহ্বান করা হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির জনৈক বিকল্প সদস্যকে কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

এ সভায় জনৈক কমরেড সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য এক সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এ অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের সাথে ফজলু-সুলতান চক্রের বিভিন্ন গুজব, অপবাদ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে একটি বিবৃতি প্রদান করা হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটি নিম্নলিখিত বিষয়ে আত্মসমালোচনা করেঃ

১) ফজলু সংগঠনে যোগদানের প্রথম থেকেই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে তা জানা সত্ত্বেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে নিয়োগ করা। কংগ্রেসের সভাপতি মণ্ডলী কর্তৃক তাকে প্রদত্ত শর্ত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে তাকে প্রদত্ত শর্তসমূহ যথাসময়ে কর্মীদের জানানো উচিত ছিল।

২) তার কর্মদক্ষতাই দেখা হয়েছে, কিন্তু মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক নিম্নমান বিবেচনা না করা।

৩) সুলতানের অতীতের ভ্রষ্ট জীবন জানা সত্ত্বেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা, পার্টির অভ্যন্তরে তার ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে না ধরা।

৪) কংগ্রেসে এদের ও অন্যান্যদের কেডার ইতিহাস যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। এর কারণ কেডার ইতিহাস প্রণয়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এর জন্য শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। প্রেসিডিয়ামের পক্ষ থেকে যে কেডার ইতিহাস দেয়া হয় তা সম্পূর্ণ ছিলনা।

কারো কিছু কিছু পয়েন্ট বাদ পড়েছে, কারো কিছু কিছু পয়েন্ট অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। ইহা তাড়াহুড়া করে মৌখিকভাবে তৈরীর কারণে হয়েছে, ইচ্ছাকৃত নয়।

শুদ্ধি অভিযানের প্রক্রিয়ায় কেডার ইতিহাস পেশ করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বিকল্প সদস্যরা নিজ নিজ কেডার ইতিহাস এবং তাদের পরিচালনাধীন কর্মীদের কেডার ইতিহাস পেশ করবেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির এ সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, সমগ্র পার্টির অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির হেফাজতে থাকবে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি সদস্য, বিকল্প সদস্য নিজ নিজ আওতাধীন যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অনুমোদন করিয়ে নেবেন।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। (পরিশিষ্ট-২)

সভায় কয়েকটি দলিল প্রসঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্ত নিম্নরূপঃ

লালঝাণ্ডার সম্পাদকীয় সংশোধনীসহ গৃহীত হলো। এ সম্পাদকীয়তে আত্মপ্রচারবাদ হয়নি।

“অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন” প্রচারপত্রে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ রয়েছে, এ সমালোচনা সঠিক নয়। উপস্থাপনার ত্রুটির জন্য ভুল বুঝা হয়েছে। ইহা সংশোধিত আকারে অনুমোদিত হলো।

ফজলু চক্রের সাথে মিনু (ফজলু চক্রের স্ত্রী) পার্টি পরিত্যাগ করে পলায়ন করেছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির জনৈক সদস্যকে মুক্তমন হওয়া, সমালোচনা করতে সাহসী হওয়া এবং সময়মতো সমালোচনা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তিনি এ ত্রুটির জন্য আত্মসমালোচনা করেন এবং সংশোধন করবেন বলে জানান।

বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের দেউলিয়াত্ব এবং পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সঠিকতা প্রমাণিত হওয়ার কারণে সমগ্র পূর্ববাংলাব্যাপী গণভিত্তিক পার্টি হিসেবে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিকাশের চমৎকার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমত অবস্থায় ফজলু-সুলতান চক্রের পার্টি, জনগণ ও বিপ্লব বিরোধী কার্যকলাপের ফলে পার্টি কিছুটা প্রতিকূল অবস্থায় পড়েছে।

কিন্তু চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত, রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং তাদেরকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে খাঁটি বিপ্লবী কর্মীদের দৃঢ় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পার্টি এ সংকট অচিরেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই চক্রান্তকারীরা মারাত্মকভাবে নিঃসঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তারা সুবিধাবাদী দলত্যাগীদের নিয়ে কিছুদিন হৈ চৈ করতে পারে, গুজব-অপবাদ রটাতে পারে, আমাদের কাজে কোন এলাকায় ক্ষতি সাধন করতে পারে, এমনকি সর্বহারা পার্টির সুনামও ব্যবহার করতে পারে, সর্বহারা পার্টির নামে ডাকাত দল, প্রতারক দল গঠন করতে পারে, কিন্তু অচিরেই তাদের পরিণতি হবে আবুল হাসান, শান্তিলাল, সাদেক, বেবী এবং দুনিয়ার অন্যান্য চক্রের অনুরূপ। তাদের চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হওয়া।

কাজেই খাঁটি বিপ্লবীরা এ অস্থায়ী প্রতিকূলতায় ঘাবড়ে যাবেন না। মন খারাপ করবেন না। চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারীদের সকল ধরনের কার্যকলাপ মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।

আমাদের রয়েছে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটি ও সর্বহারা পার্টি, আমাদের লাইন সঠিক, জনগণের সাথে রয়েছে সংযোগ, কাজেই বিজয় আমাদের অনিবার্য।

কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তী সভার তারিখ নির্ধারণ করে সভার কাজ সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয়।

পরিশিষ্ট-১

কেন্দ্রীয় কমিটির শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মীগণ, সংগঠনের সকল স্তরে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান শুরু করুন

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সর্বস্তরে নিম্নলিখিত পাঁচটি বিষয়ে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ শুদ্ধি অভিযানের উদ্দেশ্য হলো এ পাঁচটি বিষয়ে ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি বর্জন করা।

শুদ্ধি অভিযানের পাঁচটি বিষয়

ক) গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা।

খ) বিপ্লবে নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভূমিকা।

গ) ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন, ব্যক্তি স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ।

ঘ) শ্রেণী অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা, গণলাইনের কর্মপদ্ধতি।

ঙ) অভিজ্ঞতার সারসংকলন।

গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা ও সমালোচনা-আত্মসমালোচনা

একটি পার্টি বিপ্লবী কিনা তা প্রমাণিত হয় এ পার্টি এবং কর্মীরা যথাযথভাবে সমালোচনা-আত্মসমালোচনা পরিচালনা করে কিনা, গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীকতা প্রসঙ্গে তাদের সঠিক ধারণা রয়েছে কিনা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মীদের উপরোক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি থাকায় সংগঠনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কাজেই এগুলো দূর করে সঠিক চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি রপ্ত করা অতিমাত্রায় জরুরী হয়ে পড়েছে।

বিপ্লবে নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভূমিকা

এ বিষয়ক সঠিক ধারণা না থাকার অর্থ হবে পার্টি ও জনগণের উপর যথাযথ আস্থা না থাকা। এর পরিণতি হবে সহজেই বিগড়ে যাওয়া, ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, সুবিধাবাদীদের খপ্পরে পড়া, তাদের দ্বারা প্রতারিত হওয়া।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির ইতিহাসে ফজলু-সুলতান চক্রের সৃষ্টি ও বিকাশ এ কারণেই সম্ভব হয়েছে।

বিপ্লবে নেতৃত্ব ও কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত থাকলে সাধারণ কর্মীরা প্রতারিত হতেন না, ফজলু-সুলতান চক্রের ধ্বংস ত্বরান্বিত হতো।

ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন

ব্যক্তিস্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ

রাজনৈতিক জীবনের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের সম্পর্ক এবং ব্যক্তিস্বার্থের সাথে জনগণের স্বার্থের সম্পর্ক বিষয়ক সঠিক শ্রেণী দৃষ্টিকোন ও কর্মপদ্ধতি বিপ্লবীদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এর উপর নির্ভর করছে একজন বিপ্লবী থাকবেন না সুবিধাবাদী, সংশোধনবাদী হবেন।

এ সকল বিষয়ে সঠিক শ্রেণী দৃষ্টিকোণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সংগঠনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে এ সকল প্রশ্নে ভুল চিন্তাধারা ও পদক্ষেপ দূর করে সঠিক চিন্তাধারা ও পদক্ষেপ গ্রহণ অতিমাত্রায় জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় সংগঠনের আরো বিরাট ক্ষতি হবে।

শ্রেণী অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা,

গণলাইনের কর্মপদ্ধতি

ইহা হচ্ছে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী কর্মপদ্ধতি। ইহা ব্যতীত কার্য পরিচালনার অনিবার্য পরিণতি হবে সুবিধাবাদ অথবা অন্ধক্রিয়াবাদ। এর ফলে জনগণ বিপথে পরিচালিত হবেন এবং বিপ্লবের ক্ষতি হবে।

কাজেই ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি পরিহার করে শ্রেণী অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা এবং গণলাইনের কর্মপদ্ধতি রপ্ত করা বিপ্লবী পার্টি এবং কর্মীদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

অভিজ্ঞতার সারসংকলন

প্রতিনিয়ত কাজকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, নিজেদের কর্মদক্ষতার উৎকর্ষ সাধন করা এবং কার্য পরিচালনার সাধারণ লাইন প্রণয়নের জন্য প্রতিনিয়ত জ্ঞানকে উন্নত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতার সারসংকলন একান্ত প্রয়োজন। ইহা মার্কসবাদী জ্ঞানতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর।

কাজেই এ বিষয়ক সঠিক ধারণা ও কর্মপদ্ধতি রপ্ত করা বিপ্লব, পার্টি ও তার কর্মীদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। উপরোক্ত পাঁচটি বিষয় সম্পর্কিত সঠিক ধারণা ও কর্মপদ্ধতি রপ্ত করতে পারলে আমাদের প্রতিটি কর্মী ভাল মার্কসবাদী বিপ্লবী কর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি সুসংবদ্ধ, শক্তিশালী এবং নেতৃত্ব প্রদানকারী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠবে।

শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার উপায়

প্রথমে একটি অঞ্চলের নেতৃত্ব গ্রুপ বা নেতৃস্থানীয় কর্মীরা শুদ্ধি অভিযানের বিষয় সম্পর্কিত দলিল সমূহ পাঠ করবেন, পর্যালোচনা করবেন, এর ভিত্তিতে নিজেদের এবং সংগঠনের বিশেষ অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করবেন, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করবেন।

সমালোচনা-আত্মসমালোচনা গুরুত্বহীন, হাসি-ঠাট্রা হিসেবে করলে চলবে না, গুরুত্ব সহকারে ন্যায়পরায়ণতার সাথে করতে হবে।

এরপরে নেতৃত্ব গ্রুপের সদস্যরা বা নেতৃস্থানীয় কর্মীরা তাদের পরিচালনাধীন কর্মীদের নিয়ে দলিলসমূহ পাঠ করবেন, অভিজ্ঞতার পর্যালোচনা করবেন এবং সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করবেন।

এ প্রক্রিয়ায় উত্থাপিত সমস্যাবলী নেতৃত্বগ্রুপ বা কর্মীরা বৈঠকে মিলিত হয়ে পর্যালোচনা করবেন এবং এর সমাধান বের করে নিম্নস্তরে পৌঁছে দেবেন। এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না শুদ্ধি অভিযানের বিষয়গুলি সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মে এবং কর্মীরা তা কাজে প্রয়োগ করে।

উপসংহার

সংগঠনের সকল কর্মী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি ধোলাই করে বর্জন করবেন, সঠিক চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতি রপ্ত করবেন।

অন্যথায় আজ পূর্ববাংলার বিপ্লবের নেতৃত্ব প্রদানের যে গুরুদায়িত্ব সংগঠনের সামনে উপস্থিত তা পালন করা সম্ভব হবে না।

সকল স্তর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনাকে অগ্রধিকার দেবেন, গুরুত্ব সহকারে সময় নির্ধারণ করে শুদ্ধি অভিযানের কাজ চালাবেন এবং এর লক্ষ্য সমূহ অর্জন করবেন।

* *

শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত দলিল-প্রথমাংশ

গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা পাঠ্য তালিকা

১। পাঁচটি প্রবন্ধঃ

– জনগণের সেবা,

– নর্মান বেথ্যুনের স্মরণে,

– বোকা বুড়ো পাহাড় সরিয়েছিলেন,

– ভুল চিন্তাধারার সংশোধন,

– উদারতাবাদের বিরোধিতা।

২। উদ্ধৃতিঃ

– সমালোচনা-আত্মসমালোচনা,

– জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসা,

– অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যকার সম্পর্ক,

– ভুল চিন্তাধারার সংশোধন,

– কেডার, কমিউনিস্ট ইত্যাদি অধ্যায়।

৩। মতাদর্শগত পুনর্গঠন প্রসঙ্গে কয়েকটি দলিলঃ

– কমিউনিস্ট হওয়ার পাঁচটি মানদণ্ড,

– উপদলবাদ ও সুবিধাবাদ প্রসঙ্গে,

– উপদলবাদের শ্রেণী বিশ্লেষণ,

– মতাদর্শগত পুনর্গঠনে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রয়োগ।

৪। Four Essays on Philosophy:

– On Contradiction

– Correct handling of contradictions among the people.

৫। Chairman Mao’s Speech at the Chinese National Conference on Propaganda work

৬। সংবিধান

গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা

সংবিধান, শৃংখলা, Correct handling of the contradictions among the people ইত্যাদি।

* কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকারঃ

° প্রতিটি কর্মীর নিজস্তর, উচ্চস্তর বা কেন্দ্রীয় কমিটি বা তার সভাপতির নিকট প্রস্তাব, বক্তব্য, সমালোচনা পেশ করার অধিকার রয়েছে।

° নিজস্ব মতামত পোষণ করার অধিকার রয়েছে, তা বারংবার পেশ করার অধিকার রয়েছে, কিন্তু এই মতামত কার্যকরী করার জন্য অসাংগঠনিক ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার অর্থাৎ চক্র গঠন, চক্রান্ত করা, ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে এ মতের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার অধিকার নেই।

* সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর অধীন

প্রতিটি কর্মীর ভোটের অধিকার রয়েছে। ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগুরুর মতামত কংগ্রেসে কার্যকরী হয়, কেন্দ্রীয় সংস্থা নির্বাচিত হয়, রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইন গৃহীত হয়।

সংখ্যালঘুর মতামত বাতিল হলে তাদেরকে সংখ্যাগুরুর মতামত মত কাজ করতে হবে। সেখানে কোন প্রকার নিমরাজী মনোভাব পোষণ করা চলবে না।

 কেন্দ্রীকতা

* সমগ্র সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন

কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্বান্ত পালনে সংগঠনের সকল স্তর, সদস্য, সংগঠনের অধীনস্থ সংস্থাসমূহ বাধ্য।

* নিম্নস্তর উচ্চস্তরের অধীন

নিম্নস্তর উচ্চস্তরের সকল বিষয় (কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপন্থী নয়) মানতে বাধ্য থাকবে।

* ব্যক্তি সংগঠনের অধীন

ব্যক্তিস্বার্থ ও মতামত যাই হোক না কেন তা সংগঠনের সাধারণ স্বার্থ ও বক্তব্যের অধীন রাখতে হবে।

ফজলু-সুলতান চক্র সংখ্যাগুরুর অভিমত, এমনকি সভায় পেশ করা নিজস্ব মতামতকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। এভাবে তারা পার্টির গণতন্ত্র ভঙ্গ করে কেন্দ্রীকতাকে বিসর্জন দেয়। তারা পার্টির ক্ষমতা দখলের জন্য চক্র, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে, গুজব, অপবাদ রটায়, তাদের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায়, গুপ্ত হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তাদের অসততাই তাদের পতন আনে।

কর্মীদের দায়িত্ব হলো পার্টির গণতান্ত্রিক জীবনকে নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীকতা মেনে চলা, গণতন্ত্র ও কেন্দ্রীকতার পরিপন্থী ফজলু-সুলতান চক্রের অনুরূপ কার্যকলাপ সম্পর্কে আঁচ পাওয়া মাত্র উচ্চস্তরে রিপোর্ট করা যাতে এদের কার্যকলাপ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা যায়, পার্টির ক্ষতি রোধ করা যায়।

পরিশিষ্ট-২

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে

কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত

বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী ও ছয় পাহাড়ের দালালদের চেয়েও জঘন্যভাবে পার্টির অভ্যন্তরে ফজলু-সুলতান চক্রের নেতৃত্বে শ্রেণী শত্রুরা কমরেড সিরাজ সিকদার ও তার সঠিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জঘন্যতম মিথ্যা, কুৎসা, অপবাদ ও গুজব ছড়িয়েছে। এই প্রতিবিপ্লবী তৎপরতার সুযোগ গ্রহণ করে চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারীদের অবশিষ্টাংশ ও তাদের সহোদর ভাই সুবিধাবাদী, সুযোগ সন্ধানীরা কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্বকে আক্রমণ করছে।

এই অবস্থায় পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও সর্বহারা পার্টির বিকাশের সাথে কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্বের ভূমিকা সম্পর্কে অবগত হওয়া পার্টি কর্মীদের আশু দায়িত্ব।

“একটি সর্বহারা শ্রেণীর পার্টির পক্ষে বিপ্লব পরিচালনায় সক্ষম হতে হলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্যকে নিজ দেশের বিপ্লবের বাস্তব অনুশীলনের সঙ্গে সমন্বিত করতে হবে। এবং ঐ দেশের অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি নির্ভুল লাইন প্রণয়ন ও কার্যকরী করতে হবে। লাইন নির্ভুল হলে দুর্বল শক্তি সবল হয়ে উঠতে পারে, সশস্ত্র শক্তি না থাকলে তা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে তাও অর্জিত হতে পারে। লাইন ভুল হলে বিপ্লব বিঘ্নিত হবে এবং পূর্বে অর্জিত ফলও খোয়া যাবে।” [১]

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা ও তার বিকাশ, পূর্ববাংলার জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তার অগ্রগতি, সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহন, সর্বহারা পার্টিতে তার বিকাশ এবং আভ্যন্তরীণ ও বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে মতাদর্শগত, রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক ও অন্যান্য বিষয়ে সংগঠনের নির্ভুল লাইন ও কর্মপদ্ধতির কারণে।

নির্ভুল লাইন ও কর্মপদ্ধতি না থাকলে সংগঠন আজকের পর্যায়ে বিকাশ লাভ করতো না। বহু পূর্বে সংগঠন শেষ হয়ে যেত।

এই নির্ভুল লাইন ও কর্মপদ্ধতি কমরেড সিরাজ সিকদার কর্তৃক মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিশেষ অনুশীলনে সৃজনশীলভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।

কমরেড সিরাজ সিকদার সংগঠনের বিকাশের প্রক্রিয়ায় উথাপিত জটিল সমস্যাবলীর কি কি সঠিক সমাধান দেন এবং সঠিক লাইন প্রণয়ন করেন তা ১নং লালঝাণ্ডার সম্পাদকীয়তে সংক্ষিপ্তভাবে প্রদত্ত হয়েছে।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিকাশের জন্য কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্ব অপরিহার্য।

কমরেড সিরাজ সিকদারের সঠিক নেতৃত্বকে সচেতনভাবে রক্ষা করা, জনপ্রিয় করা, সঠিক নেতৃত্বের বস্তুগত ভূমিকাকে স্বীকার করা একটি বিপ্লবী দায়িত্ব।

সচেতনভাবে নেতৃত্বকে রক্ষা করার অর্থ হচ্ছে নেতৃত্ব প্রকৃতই কি বিপ্লবের প্রতিটি প্রশ্নে সর্বহারার স্বার্থ রক্ষা করেছেন তা শ্রেণী সচেতনতার সাথে বুঝা।

সঠিক নেতৃত্বকে রক্ষা করা, জনপ্রিয় করা ও তার ভূমিকাকে স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে পার্টির মাঝে এককেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, তা শক্তিশালী করা, তার উপর আস্থা স্থাপন করা, পার্টির কেন্দ্রকে ব্যাপক প্রভাবশালী ও ক্ষমতা সম্পন্ন করা, সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, শত্রুকে ভীতসন্ত্রস্ত ও বিভক্ত করা। বিপ্লবের স্বার্থে এ সকল কাজ একান্ত অপরিহার্য।

কাজেই কমরেড সিরাজ সিকদার ও তার সঠিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা, অপবাদ-গুজব রটনা করা, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা, তাকে হত্যা, উৎখাতের চক্রান্ত করা চরমতম প্রতিবিপ্লবী কাজ।

এর উদ্দেশ্য পার্টির কেন্দ্রকে ভেঙ্গে ফেলা, তার প্রতি কর্মীদের আস্থা নষ্ট করা, সংগঠনের শৃংখলা ভঙ্গ করা, পার্টি, বিপ্লব ও জনগণের স্বার্থের চরমতম ক্ষতি সাধন করা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির অভ্যন্তরে এ ধরনের প্রতিবিপ্লবী কাজ কখনও অনুমোদন করা যায় না।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সকল কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল এবং বিপ্লবী ও জনগণ কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন ঐক্যকে দৃঢ় করবেন।

ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের গুজব, অপবাদে বিভ্রান্ত হবেন না। এরা হচ্ছে শ্রেণী শত্রু। শ্রেণী শত্রুদের দ্বারা পার্টিকে ধ্বংস করার, একে দুর্বল করার চক্রান্তকে বিরোধিতা করবেন।

বহু ঘনিষ্ঠ ও জনপ্রিয় কমরেড ও গেরিলাদের রক্ত এবং পূর্ববাংলার লক্ষ লক্ষ জনগণের রক্ত বৃথা যেতে দিবেন না। কমরেড সিরাজ সিকদার ও তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটির উপর আস্থা হারাবেন না। এর উপর আস্থা হারাবার অর্থ হচ্ছে পার্টির উপর আস্থা হারানো। পার্টির উপর আস্থা না থাকলে বিপ্লব করা যায় না।

কাজেই সংগঠনের বিকাশের প্রতিটি প্রশ্নে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে সংগঠনের সর্বস্তরে আলোচনা প্রয়োজন যাতে কর্মীরা সচেতনভাবে নেতৃত্বের প্রতি, এক কেন্দ্রের প্রতি আস্থাশীল হন এবং এক কেন্দ্রকে মেনে চলেন। এ উদ্দেশ্যে সর্বস্তরে ১নং লালঝাণ্ডার সম্পাদকীয় মনোযোগের সাথে পাঠ ও পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

নোটঃ

১। সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের বিজয় দীর্ঘজীবী হোক, প্যারি কমিউন শতবার্ষিকী স্মরণে। বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পিকিং পৃঃ-১৭।