সিরাজ সিকদার রচনাঃ পার্টি, বিপ্লব, জনগণ বিরোধী কার্যকলাপকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করুন

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী সার্কুলার

(সার্কুলার নং-৫), পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ৩০ এপ্রিল ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা  ৩১ অক্টোবর ২০১৩


 

পিডিএফ

সম্প্রতি ফজলু-সুলতান পার্টির মধ্যে একটি চক্র গঠন করে এবং জঘন্য পার্টি, বিপ্লব ও জনগণ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও কার্যকলাপ চালায়।

* তারা ষড়যন্ত্র করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কমরেডদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত পার্টির অর্থ চুরি করে আত্মসাত করার চেষ্টা চালায়।

ফজলু পার্টির বিশ্বাস ভঙ্গ করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পার্টির সভাপতি বা কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ব্যতীত ২,০০০/-(দুই হাজার) টাকা পার্টির ফান্ড থেকে চুরি করে। এ জঘন্য অপরাধ তারা পার্টিকে রিপোর্ট করেনি।

অর্থ চুরি করার উদ্দেশ্যঃ

১) অর্থনৈতিকভাবে পার্টিকে নিঃস্ব করে দেওয়া যাতে পার্টি সার্বক্ষণিক কর্মী চালাতে না পারে, প্রচার করতে না পারে এবং যোগাযোগ বজায় রাখতে না পারে অর্থাৎ পার্টির কাজ যাতে বন্ধ হয়ে যায়।

২) তারা যাতে অর্থ দ্বারা তাদের চক্রান্তমূলক কাজ করে যেতে পারে।

৩) অর্থের কারণে যাতে পার্টি এ চক্রের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

৪) ইচ্ছা, খুশীমত পার্টির অর্থ অপব্যায় করা।

তাদের উদ্দেশ্য ছিল পার্টির সকল অর্থ চুরি করা। কিন্তু পার্টির সতর্কতার কারণে তারা অধিক টাকা চুরি করতে ব্যর্থ হয়।

* ফজলু কমরেডদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পার্টির অস্ত্র গোপনে চক্রান্তমূলক উদ্দেশ্যে সরিয়ে রাখে।

* পার্টির একটি অর্থনৈতিক অপারেশনে ফজলুর অংশগ্রহণের কথা ছিল। সে এ অর্থ নিয়ে পলায়নের চেষ্টা করেছিল।

* ফজলু বিভিন্ন স্থানে পার্টির কমরেডদের নিকট নেতৃত্বের বিরুদ্ধে, কোন কোন কমরেডদের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যা অপবাদ, গুজব রটায় এবং তাদেরকে তা রিপোর্ট না করার জন্য বলে। এভাবে সে ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে।

* তারা একজনের কাছে যা বলে তা অপরের কাছে অস্বীকার করে, মিথ্যা কথা বলে, অভিনয় করে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, পুরোপুরি ক্রুশ্চভের মত কাজ করে। এ ধরণের কার্যকলাপ তারা নতুন পার্টি কর্মী এবং সহানুভূতিশীলদের মাঝেও করে।

* কেন্দ্রীয় কমিটি, তার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্বান্তের বিরুদ্ধে মনগড়া বক্তব্য পেশ করে এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও তার সভাপতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে এবং কর্মীদের মাঝে অনাস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করে।

* পার্টির সঠিক নীতি ও কর্মপদ্ধতি এবং কমরেড সিরাজ সিকদারের পরিচালনায় পেয়ারা বাগানের মহান সংগ্রাম এবং কমরেডদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ফজলু এই জনপ্রিয়তা এবং সামন্তবাদী আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে পার্টির মধ্যকার সুবিধাবাদীদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি উপদল গঠন করার জন্য এ ধরণের জঘন্য কার্যকলাপ চালায়।

তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যক্তিস্বার্থ, পার্টি-কর্তা, পার্টির নেতা হওয়া।

* তারা কোন এক অসুস্থ কর্মীর নিরাপত্তা পর্যন্ত বিঘ্নিত করে।

* তারা পার্টির শৃংখলা ভঙ্গ করে। কোন কোন কর্মীকে অবৈধভাবে ডেকে আনে, পত্র দেয়, চক্রান্তের জাল ছড়ায়, পরস্পরকে রক্ষা করে। এভাবে পার্টির মাঝে ফজলু-সুলতান চক্র অপর একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এভাবে তারা শত্রুর মতো কার্যকলাপ করছে এবং প্রকৃত অর্থে শত্রুকে সহায়তা করছে।

* জনৈক কর্মী এসকল বিষয় অনুসন্ধান করতে গেলে ফজলু পলায়ন করে।

* পার্টির সকল কর্মী ও সহানুভূতিশীল এসকল চক্রান্ত ষড়যন্ত্র এবং উপদলীয় কার্যকলাপের বিরোধিতা করবেন এবং ফজলু-সুলতান চক্রের কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে পড়বেন না।

* সভাপতি মাও বলেছেন, “পার্টির ও জনগণের উপর আস্থা রাখ, এছাড়া কিছুই হবে না।” পার্টির ওপর আস্থা রাখার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি ও তার সভাপতি কমরেড সিরাজ সিকদারের প্রতি আস্থা রাখা।

আপনারা অবশ্যই কমরেড সিরাজ সিকদারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যকে আরো দৃঢ় করবেন, সুবিধাবাদীদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও উপদলীয় কার্যকলাপকে চূর্ণবিচূর্ণ করবেন।

* এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শাস্তিস্বরূপ ফজলু-সুলতান চক্রকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সকল পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে পরিগণিত হবে না।

নতুন কর্মী, সনুভূতিশীল সংগ্রহ করা, কর্মী, সহানুভূতিশীল পরিচালনা করা, যোগাযোগ করা, সাংগঠনিক ও সামরিক কাজে অংশগ্রহণ করা, পার্টির লোক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়ার তাদের অধিকার বাতিল করা হচ্ছে।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কোন কর্মী, সহানুভূতিশীল বা নতুন কর্মী হতে ইচ্ছুক বিপ্লবীরা এই চক্রের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেন না। এদের মাধ্যমে সংগঠনের সাথে কোন যোগাযোগ হবে না। এদের কার্যকলাপ আরো অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

ফজলু-সুলতান চক্রের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে তারা যেন জামালপুরের সাদেক-বেবী চক্রের পরিণাম, বরিশালের আবুল হাসান-শান্তিলাল চক্রের পরিণাম, পৃথিবীর সকল ষড়যন্ত্রকারী চক্রের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, চক্রান্ত ভেঙ্গে দিয়ে অর্থ-অস্ত্র পার্টির কাছে জমা দেয়, সমগ্র পার্টির নিকট নিজেদের অপরাধ সমূহের জন্য প্রকাশ্য আত্মসমালোচনা করে, পার্টির কাছে শাস্তি প্রার্থনা করে, নিজেদের সংশোধনের সুযোগ চায়।

সিরাজ সিকদার

সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ■