সিরাজ সিকদার রচনাঃ বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির খোলা চিঠি

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ জানুয়ারি ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩


 

পিডিএফ

পূর্ব বাংলার সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য পূর্ববাংলার লক্ষ লক্ষ জনগণ আত্মবলিদান করেছেন। তাদের আকাংক্ষিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় স্বাধীনতা বাস্তবায়িত হতে পারে নিম্নলিখিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমেঃ

১। পুর্ব বাংলার ভুমি থেকে অনতিবিলম্বে শর্তহীনভাবে সকল ভারতীয় সৈন্য, সামরিক ও বেসামরিক উপদেষ্টাদের ভারতে ফেরত পাঠানো।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, স্থিতিশীলতা আনয়ন, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন বা অন্য কোন কাজে সহায়তা করার জন্য ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের সামরিক বা বেসামরিক নাগরিকদের উপদেষ্টা বা অন্য কোন পদে নিয়োগ না করা, নিয়োজিত হয়ে থাকলে তাদেরকে অনতিবিলম্বে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের পুর্ববাংলার রাজনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব, হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের অবসান করা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যাতে জনগণের উপর অত্যাচার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২। পুর্ববাংলার স্থিতিশীলতা আনয়ন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কাজের জন্য পূর্ববাংলার সম্পদ এবং কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক জনগনের উপর সর্বতোভাবে নির্ভর করা।

৩। পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষার জন্য পূর্ববাংলার জনগণের মধ্য থেকে নিয়মিত স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী গড়ে তোলা এবং জনগণকে সামরিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সশস্ত্র করে স্থানীয় বাহিনী গড়ে তোলা। পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষার জন্য এই সামরিক বাহিনী ও জনগণের উপর নির্ভর করা।

পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষার জন্য ভারত বা অন্য কোন দেশের উপর নির্ভর না করা। পূর্ববাংলার নিয়মিত বাহিনী ও স্থানীয় বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব মুক্তি বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। মুক্তি বাহিনীকে নিরস্ত্র করা থেকে ভারতীয় বাহিনীকে বিরত করা। মুক্তি বাহিনীর মধ্যকার প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা জনগণের উপর অত্যাচার বন্ধ করা।

ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে প্রকাশ্য বা গোপন কোন প্রকার প্রতিরক্ষা চুক্তি, সামরিক চুক্তি বা বন্ধুত্বের চুক্তির আবরনে সামরিক চুক্তি না করা।

৪। পুর্ববাংলার জামাত, পিডিবি, মুসলিম লীগ (তিন অংশ), নিজামে ইসলাম এবং পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের সাথে সহযোগিতা করেছে এইরূপ অন্যান্য রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী, দল ও ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়া, ভোট প্রদানের অধিকার, মিটিং, মিছিল ও সংগঠিত হওয়া এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার অধিকার বাতিল করা। তাদের ভূমি ভূমিহীন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা। ভূমি ব্যতিত তাদের শিল্প-ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রাষ্ট্রীয়করণ করা।

এদের মধ্যকার গোঁড়া জনগণ-বিরোধীদের বিচার করা ও শাস্তি প্রদান করা।

৫। আদমজী, দাউদ, ইস্পাহানী, বাওয়ানী, গান্ধারা, করিম, হাবিব ও অন্যান্য অবাঙালীদের পুর্ববাংলাস্থ বৃহৎ শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রাষ্ট্রীয়করণ করা। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জাতীয় পুঁজি রক্ষা ও তার বিকাশে সাহায্য করা।

৬। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের সাথে সহযোগিতা করেনি-এরূপ পূর্ববাংলার সামন্ত-জমিদার-জোতদারদের ভূমি ক্ষতিপূরণসহ ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা। মহাজনী প্রথা, সুদ গ্রহণের প্রথা ও বন্ধকী প্রথা বাতিল করা এবং এর ফলে হারানো ভূমি কৃষকদের মাঝে বিনা ক্ষতিপূরণে ফেরত দেয়া। গ্রাম-পঞ্চায়েত ও গ্রাম রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে গ্রামে জমিদার, জোতদার, মহাজন, টাউট, অত্যাচারী, জুলুমবাজ শাসন কায়েম ও তাদের রক্ষা না করা। পাক-সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে ও যুদ্ধে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

৭। ২৫শে মার্চের পরবর্তী সময়ে পূর্ববাংলা থেকে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের তৎপরতার ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে নিহত, যুদ্ধকালে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্ষতিগ্রস্থ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্য শুরু করার জন্য সাহায্য করা।

পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে আটককৃত সকল রাজবন্দীদের মুক্তি প্রদান করা।

৮। শর্তহীন ও স্বল্প সুদে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ঋণ গ্রহণ করা। প্রকাশ্য বা গোপনে ভারত বা অন্য কোন দেশের সাথে কোন প্রকার স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী অসম বাণিজ্য চুক্তি, পণ্য বিনিময় চুক্তি না করা। গোপনে সম্পাদিত সকল প্রকার চুক্তি জনসাধারণের বিবেচনার জন্য প্রকাশ করা। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, তরি তরকারি, শাক-সব্জি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ভারতে রপ্তানী বন্ধ করা।

ভারত কর্তৃক সরাসরি পূর্ববাংলা থেকে পাট, চা, চামড়া ইত্যাদি ক্রয়ের অধিকার বাতিল করা, অন্যথায় পূর্ববাংলার জনগণ শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা হারাবেন।

৯। পূর্ববাংলার শিল্প ব্যবস্থা, বাণিজ্য, ব্যাংকিং, কৃষি, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন, যোগাযোগ এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের পুঁজির অনুপ্রবেশ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব প্রতিরোধ করা। পূর্ববাংলা থেকে ভারত বা অন্য কোন রাষ্ট্রে পুঁজি পাচার বন্ধ করা।

পূর্ববাংলার সীমান্তে কাস্টম ব্যবস্থা চালু করা। পূর্ববাংলা থেকে ভারত বা ভারত থেকে পূর্ববাংলায় চোরাকারবারী বা অননুমোদিত উপায়ে দ্রব্যাদি পাচার রোধ করা।

১০। পূর্ববাংলার ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা, হাল্কা শিল্প ও কুটির শিল্পের বিকাশ সাধন করা। এদেরকে বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে রক্ষা করা। এ উদ্দেশ্যে ভারত বা অন্য কোন দেশের পণ্যে পূর্ববাংলার বাজার দখল প্রতিহত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১১। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের দ্বারা বরখাস্তকৃত, ছাঁটাইকৃত, ছুটি প্রদত্ত, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী এরূপ সকল কর্মচারীদের পুনরায় কাজে বহাল করা। বেকারদের চাকুরীর ব্যবস্থা করা।

চাকুরীকালীন অবস্থায় মৃতদের পেনশন ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক নাগরিকদের সরকারী বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ না করা। নিয়োজিত হয়ে থাকলে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।

সরকারী, বেসরকারী, সামরিক এবং অন্যান্য সকল চাকুরীতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে কোন প্রকার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, পার্টিগত, গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত প্রভাবের বিরোধিতা করা, যোগ্যতাকে নিয়োগ, পদোন্নতি ও ছাঁটাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা।

১২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমুহ চালু করা, ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয় প্রেরনায় উদ্বুদ্ধ, জাতি ও দেশ গঠনমূলক গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।

১৩। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পূর্ববাংলার গণতান্ত্রিক শিল্পকলা-চলচ্চিত্র, সাহিত্যসহ সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রের অবাধ বিকাশের ব্যবস্থা করা। ভারত বা অন্য দেশের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও সংঙ্কৃতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দেশীয় সাহিত্য, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা।

১৪। বেতার, চলচ্চিত্র, সংবাদপত্রকে একক পার্টির প্রচারযন্ত্র বা বৈদেশিক প্রচারযন্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিরোধিতা করা।

১৫। দেশে সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিপীড়ণের বিরোধিতা করা, উপাসনা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা প্রদান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা রক্ষা করা। ধর্মীয় সমতার ব্যবস্থা করা।

১৬। বিভিন্ন মতাবলম্বী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা, বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার ও সমাবেশের স্বাধীনতা, বিক্ষোভ প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা। প্রকাশ্যে বা গোপনে বিনা বিচারে গ্রেফতার, হত্যা, আটক রাখার বিরোধিতা করা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মীরা ভারতে না গিয়ে নিজেদের ও জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করে পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তির মহান গেরিলা যুদ্ধ চালায়, মুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলে, একে স্বাগত জানাবার পরিবর্তে মুক্তিবাহিনীর মধ্যকার ফ্যাসিস্টরা এ সকল অঞ্চল আক্রমণ ও দখল করে নেয়, সর্বহারা পার্টির বহু কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল ও জনগণকে নকসাল অভিহিত করে হত্যা করে।

বর্তমানেও প্রকাশ্যে বা গোপনে আওয়ামী লীগ থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী, পূর্ববাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের নকসাল অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে খতম অভিযান পরিচালনা বন্ধ করা। যে সকল ফ্যাসিস্ট খুনীরা এ সকল জঘন্য কাজ করেছে তাদের বিচার করা ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা জনগণের নিকট প্রকাশ করা। শহিদদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দান করা।

প্রমাণিত আল বদর, রাজাকার ও পাক সামরিক দস্যুদের অন্যান্য দালালের কঠোর শাস্তি বিধান করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র বাঙালী-অবাঙালী নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিককে আল বদর, রাজাকার বা পাক সামরিক গোষ্ঠীর দালাল বলে খতম করার ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিরোধিতা করা।

১৭। পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, অণাক্রমণ, পরস্পরের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, এই পঞ্চশীলার নীতির ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। অন্য দেশের সামরিক তৎপরতায় শরীক না হওয়া, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করা।

১৮। ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ কর্তৃক পূর্ববাংলার উদ্বাস্তু জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। তাদের দ্বারা প্রদত্ত সাহায্য সুদসহ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।

১৯। ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক রাষ্ট্রের নাগরিকদের পূর্ববাংলায় আগমন বা পূর্ববাংলা থেকে ভারত ও বৈদেশিক রাষ্ট্রে গমনের জন্য প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিয়মের প্রবর্তন করা। অবাধ চলাচল প্রতিহত করা।

২০। মার্কিন ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক পাকিস্তানের স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি অগ্রাহ্য করা। পাকিস্তানের অংশ হিসেবে মার্কিন ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদের ঋণ পরিশোধের যে অংশ পূর্ববাংলার উপর পড়ে তা প্রদান না করা।

মার্কিন ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীদের পূর্ববাংলাস্থ সকল সম্পত্তি ও পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা।

২১। সকল ক্ষেত্রে নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পুনর্বাসন ও কর্মের সুযোগ প্রদান করা।

২২। সকল প্রকার শ্রমিকদের আট ঘন্টার শ্রম সময় নির্ধারণ করা এবং প্রগতিশীল শ্রম আইন প্রণয়ন করা। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে ও যুদ্ধে নিহত শ্রমিকদের পরিবারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করা।

২৩। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের হাতে ও যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কর্মে অক্ষম ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের জীবন ধারণের ব্যবস্থা করা।

২৪। আত্মসমর্পণকারী পাক সামরিক দস্যুদের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি পূর্ববাংলার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা। এ সকল দ্রব্যাদি ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক দখল ও ভারতে প্রেরণ বন্ধ করা।

২৫। পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালীদের পূর্ববাংলায় নিয়ে আসা ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

২৬। পূর্ববাংলায় চালু মুদ্রার মান কমানোর ফলে ভারত লাভবান হচ্ছে। পূর্ববাংলার বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ভারত অর্জন করেছে। ইহা প্রতিরোধ করা এবং মূল্যমান বাড়িয়ে পূর্বের মূল্য ধার্য করা, বাজারে ভারতীয় মুদ্রা চালু বন্ধ করা।

পূর্ববাংলা থেকে ভারতে স্বর্ণ, রৌপ্য পাচার বন্ধ করা।

২৭। ফারাক্কা বাঁধজনিত সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান করা।

উপরিউক্ত দাবীসমূহ বাস্তবায়িত না করার অর্থ পূর্ববাংলার সত্যিকারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতার আবরণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন করে পরাধীনতার শৃংখল।

পূর্ববাংলার জনগণ আশা করে বাংলাদেশ সরকার উপরিউক্ত দাবীসমূহ বাস্তবায়িত করে তাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের প্রমাণ দেবেন। অন্যথায় এ সরকার হবে ভারতের পুতুল সরকার এবং পূর্ববাংলা হবে ভারতের উপনিবেশ। ■