অনুবাদ সাহিত্য পত্র সংখ্যা নং ৮। কমরেড মাও সেতুঙের দুটি গুরুত্বপুর্ণ রচনা: বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়।। দ্বন্দ্ববাদের উদাহারণ। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির একটি মৌলিক দলিল: আন্তর্জাতিক লাইন

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়

-মাও সেতুঙ

দ্বন্দ্ববাদের উদাহারণ

-মাও সেতুঙ

আন্তর্জাতিক লাইন

-পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

সংখ্যা নং ৮

কমরেড মাও সেতুঙের দুটি গুরুত্বপুর্ণ রচনা

ও পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির একটি মৌলিক দলিল

অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক আগষ্ট ১৬, ২০০৯ প্রকাশিত

 

 

সম্পাদকীয়

মাও রচনাবলী ও চীন বিপ্লবের অধ্যয়নের কষ্টসাধ্য অনুশীলনে আমাদের প্রবেশ করতে হয়েছে। মাওবাদকে বুঝতে তা একান্ত প্রয়োজন। এখান থেকে বিচ্যুতি যে কী দারুণ ভুল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নেপালের বিপ্লবী কর্মী-জনগণ। মাওবাদের প্রতি অনুগত থাকলে একটা গড়পড়তা উপলব্ধি নিয়েও বিপ্লবের অগ্রগতি ঘটানো সম্ভব। যারা নেতিবাদ ছড়ায় তাদের কথা আলাদা।

এবারের সংখ্যায় আমরা প্রকাশ করেছি চেয়ারম্যান মাওয়ের দুটি অতি গুরুত্বপুর্ণ রচনাঃ ১। বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয় ২। দ্বন্দ্ববাদের উদাহারণ; এবং পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির একটি মৌলিক দলিলঃ আন্তর্জাতিক লাইন।

প্রথম রচনাটি ডিসেম্বর ১৯৪৭-এ অনুষ্ঠিত সিপিসির কেন্দ্রিয় অধিবেশনে গৃহিত দলিল। চেয়ারম্যান মাও তার রচিত এ দলিল ঐ সভায় পেশ করেছিলেন। ১৯৬১ সালে চীন থেকে বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয় প্রকাশিত মাও সেতুঙের নির্বাচিত রচনাবলীর চতুর্থ খণ্ডের পৃ ১৫৭-৯৪ থেকে David J Romagnolo dir@marx2mao.org (September, 1999) ইন্টারনেটের জন্য প্রকাশ করেছে। আমরা ইন্টারনেট থেকে বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করেছি। ততকালীন বিশ্ব ও চীনা পরিস্থিতির চমতকার ব্যাখ্যা এতে রয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনগণের চুড়ান্ত বিজয় এবং চীনের বিপ্লবী যুদ্ধে নির্ধারক বিজয় অর্জনের প্রেক্ষাপটে এটি রচিত হয়েছে। এ রচনাটি চীনের বিপ্লবী যুদ্ধের অগ্রগতির সাথে সাথে সংক্ষিপ্তভাবে যুদ্ধের নিয়মাবলী, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, কৃষি কর্মসুচি তথা ভুমি সংস্কার, বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতি সিপিসির দৃষ্টিভঙ্গী, নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাধারণ কর্মসুচি এবং সেইসাথে মতাদর্শিক শুদ্ধিকরণও বুঝতে সাহায্য করবে।

দ্বিতীয় রচনাটি চীন থেকে মাও সেতুঙ চিন্তাধারা জিন্দাবাদ  শিরোনামে রেডগার্ড পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত হয় যা থেকে মাওয়িস্ট ডকুমেন্টেশন প্রজেক্ট ইন্টারনেটে Transcription করেছে এবং Marxists.org HTML Revisied করে যা থেকে আমরা বাংলা অনুবাদ করেছি। এর রচনাকাল ১৯৫৯ সাল। এ রচনাটি  দ্বন্দ্ববাদের গুরু মাওয়ের  একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ দার্শনিক রচনা যেখানে দ্বন্দ্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে শত শত উদাহারণ টানা হয়েছে। তিনি চীনে সেকালে ষাট কোটি দ্বন্দ্ববাদী দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি দ্বন্দ্ববাদের প্রবক্তা। আমাদের যথার্থ দ্বন্দ্ববাদী হওয়া প্রয়োজন। তাই এরচনাটির সিরিয়াস অধ্যয়ন এমুহুর্তেই প্রয়োজন।

পাঁচ বছর আগে আমরা পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক দলিলসমূহ প্রকাশ করা শুরু করেছিলাম। দেরিতে হলেও একাজটি এখন শেষ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের সংখ্যায় পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি)র প্রথম কংগ্রেসে গৃহিত অন্যতম মৌলিক দলিলঃ আন্তর্জাতিক লাইন প্রকাশ করা হলো। অন্যান্য মৌলিকগুলোর পাশাপাশি এটি বিশেষত আন্তর্জাতিক তাতপর্যসম্পন্ন অতি গুরুত্বপুর্ণ দলিল। এতে একটা আন্তর্জাতিক গড়ে তোলার লক্ষ্য থেকে আন্তর্জাতিক সাধারণ লাইনকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর মতবাদ তুলে ধরা হয়েছে, নিশ্চিতভাবে তা বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন (রিম) কে ভিত্তি অর্জনে সাহায্য করেছিল। একটা আন্তর্জাতিক সাধারণ লাইন গড়ে তোলার চেয়ারম্যান মাওয়ের অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করার বিপ্লবী সাহসিকতার জন্য পিসিপি অবশ্যই আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর সমর্থন পেয়েছে।

 আগস্ট ১৬, ২০০৯

 

 

মাও সেতুঙ

বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের করণীয়*

ডিসেম্বর ২৫, ১৯৪৭

 

*এই রিপোর্ট কমরেড মাও সেতুঙ কর্তৃক রচিত হয়েছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির ডিসেম্বর ২৫-২৮, ১৯৪৭-এ উত্তর সেনশীর মিচি কাউন্টির ইয়াঙচিয়াকৌ-এ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে। উপস্থিত হতে সক্ষম কেন্দ্রের সদস্য ও বিকল্প সদস্যদের ছাড়াও শেনসি-কানসু-নিঙশিয়া সীমান্ত অঞ্চলের ও শানসি-সুইইউয়ান সীমান্ত অঞ্চলের দায়িত্বশীল কমরেডগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা এই রিপোর্ট আলোচনা ও গ্রহণ করে এবং কমরেড মাও সেতুঙ কর্তৃক লিখিত আরেকটি দলিলঃ “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ণের কিছু পয়েন্ট” (এই chairman-mao-anyuan_smখন্ডের পৃ ৮৭-৮৮ দেখুন)। কমরেড মাও সেতুঙের রিপোর্ট সম্পর্কে সভার সিদ্ধান্ত বলেঃ “এই রিপোর্ট হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল চিয়াং কাইশেক চক্রের উচ্ছেদ এবং একটা নয়া গণতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠার সমগ্র পর্যায়কালের রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কর্মসূচিগত দলিল। সমগ্র পার্টি ও সমগ্র সৈন্যবাহিনীকে এই দলিলের ওপর প্রচণ্ড শিক্ষা চালাতে হবে এবং কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে, এর সাথে যুক্তভাবে অক্টোবর ১০, ১৯৪৭-এ প্রকাশিত দলিলসমূহ যথা, ‘চীনা গণমুক্তি বাহিনীর ইশতেহার’, ‘চীনা গণমুক্তি বাহিনীর শ্লোগানসমূহ’, ‘তিনটি বৃহত শৃঙ্খলা ও মনোযোগ দেবার আটটি ধারা পুন ইস্যুকরণের ওপর নির্দেশাবলী’, ‘চীনের ভুমিআইনের রূপরেখা’ এবং (চীনের ভুমিআইনের রূপরেখার) প্রচার সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্ত’ । বিভিন্ন স্থানে কর্মনীতি বাস্তবায়নে এই রিপোর্ট থেকে যে কোন বিচ্যুতিকে ততক্ষণাত শুদ্ধিকরণ করতে হবে।” সভায় গৃহিত অন্য গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তগুলি ছিলঃ

(১) চীনের গণ বিপ্লবী যুদ্ধকে অব্যাহতভাবে পুর্ণ বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকল প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জনগণের ওপর তীব্র আক্রমণ চালানোর জন্য বিশ্রাম ও পুনর্গঠনের জন্য সময় নিতে থামানোর রণকৌশল (শান্তি আলোচনা) ব্যবহারে শত্রুকে অনুমোদন দেওয়া যাবেনা।

(২) বিপ্লবী কেন্দ্রিয় সরকার গঠণে সময় তখনো পরিপক্ক হয়নি, যা আমাদের বাহিনীর বৃহত্তর বিজয় অর্জনের সাথে বিবেচিত হবে, এবং সংবিধানের প্রচার এমনকি আরো ভবিষ্যতের বিষয়।

সভা পার্টিতে বর্তমান প্রবণতাসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে এবং ভুমি সংস্কার ও গণ আন্দোলনের কিছু কর্মনীতি নিয়ে আলোচনা করে। এই আলোচনার ফলাফলসমূহ কমরেড মাও সেতুঙ কতৃক লেখা “পার্টির বর্তমান কর্মনীতির কিছু গুরুত্বপুর্ণ সমস্যা সম্পর্কে” (দেখুন এই খন্ডের পৃ ১৮১-৮৯)-এই রিপোর্ট দিয়ে শুরু হওয়া এবং “পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি” দিয়ে শেষ হওয়া, মার্চ ২০, ১৯৪৮ (পৃ ২১৯-২৬) লেখা হয়েছিল ইয়াঙচিয়াকৌ, মিচি কাউন্টি, উত্তর শেনসিতে।

চীনা বিপ্লবী যুদ্ধ এখন একটা ক্রান্তি লগ্নে এসে পৌঁচেছে। তাহচ্ছে, চীনা গণমুক্তি বাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পা চাটা কুকুর চিয়াং কাই-শেকের কয়েক মিলিয়ন প্রতিক্রিয়াশীল সৈন্যের আক্রমণ (রণনৈতিক-বাং অনুবাদক) কে পরাজিত করেছে এবং আক্রমণে (রণনৈতিক-বাং অনুবাদক) চলে গেছে। ইতিমধ্যে প্রথম বছরের বর্তমান যুদ্ধে জুলাই ১৯৪৬ থেকে জুন ১৯৪৭ পর্যন্ত গণমুক্তি বাহিনী কয়েকটি ফ্রন্টে চিয়াং কাইশেকের আক্রমণকে পরাজিত করেছে এবং তাকে আত্মরক্ষায় যেতে বাধ্য করেছে। এবং যুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম চতুর্থাংশে, জুলাই-সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭-এ গণমুক্তি বাহিনী জাতীয় পর্যায়ে আক্রমণে চলে গেছে এবং মুক্ত এলাকাগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের লক্ষ্য থেকে সেখানে চিয়াং কাইশেকের যুদ্ধ চালিয়ে যাবার প্রতিবিপ্লবী পরিকল্পনাকে চুর্ণ করেছে। এখন যুদ্ধ প্রধানভাবে আর মুক্ত এলাকাগুলোতে হচ্ছেনা বরং কুওমিনতাঙ এলাকাগুলোতে হচ্ছে এবং গণমুক্তি বাহিনীর প্রধান শক্তি লড়াইকে কুওমিনতাঙ এলাকায় [১] নিয়ে গেছে। চীনের এই ভুমিতে, গণমুক্তি বাহিনী  মার্কিন ও তার ভৃত্য চিয়াং কাইশেক দস্যু দলের প্রতিবিপ্লবের চাকাকে ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং তাকে ধ্বংসের পথে স্থাপন করেছে এবং বিপ্লবের জয়রথকে বিজয়ের পথে চালিত করেছে। এটা ইতিহাসের এক মোড়। এটা হচ্ছে চিয়াং কাইশেকের কুড়ি বছরের প্রতিবিপ্লবী শাসনের বেড়ে ওঠা থেকে বিলোপের মোড়। এটা এখন শত বছর বয়সী চীনে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বৃদ্ধি থেকে বিলোপের মোড়। এটা একটা দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা। এটা দুনিয়া কাঁপানো কারণ এটা সাড়ে ৪৭ কোটি জনসংখ্যার একটা দেশে সংঘটিত হচ্ছে এবং সংঘটিত হয়ে তা নিশ্চিতভাবে দেশব্যাপী বিজয়ের ফল ঘটাবে। অধিকন্তু, এটা দুনিয়া কাঁপানো কারণ তা প্রাচ্যে সংঘটিত হচ্ছে যেখানে ১০০ কোটি জনগণের বাস, মানবজাতির অর্ধেক, সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ণে ভুগছে। মুক্তির চীনা গণযুদ্ধের আত্মরক্ষাত্মক থেকে আক্রমণাত্মক পর্যায়ে গমন এই নিপীড়িত জাতিসমূহকে আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত না করে পারেনা। এটা ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশে সংগ্রামরত নিপীড়িত জনগণের প্রতিও সহযোগিতা।

যেদিন থেকে চিয়াঙ কাইশেক প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ শুরু করেছে, আমরা বলছি যে তাকে যে আমাদের অবশ্যই পরাজিত করতে হবে শুধু তাই নয় তাকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম। তাকে অবশ্যই আমরা পরাজিত করবো কারণ সে যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চীনা জাতির স্বাধীনতা ও চীনা জনগণের মুক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক পরিচালিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং জাপ সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদের পর চীনা জনগণের কর্তব্য ছিল চীনকে একটি কৃষীয় দেশ থেকে শিল্পীয় দেশে রূপান্তর করতে জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে নয়াগণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পূর্ণ করা। কিন্তু সেসময় ফ্যাসিবাদ-বিরোধী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী সমাপ্তির পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বিভিন্ন দেশে তার দালালরা জার্মান ও জাপানী সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালালদের জুতা পায়ে দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে, ইউরোপের জনগণতন্ত্রসমূহের বিরুদ্ধে,পুঁজিবাদী দেশসমূহের শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে, উপনিবেশ ও আধা উপনিবেশসমূহের জাতীয় আন্দোলনসমূহের বিরুদ্ধে এবং চীনা জনগণের মুক্তির বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়াশীল শিবির গঠণ করেছে। ঠিক এমনই এক সময়ে চিয়াং কাই-শেককে শীর্ষে রেখে চীনা প্রতিক্রিয়াশিলরা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা কুকুর হিসেবে কর্মরত হয়েছে, যেমনটা ওয়াঙ চিঙ-ওয়েই জাপানী সাম্রাজ্যবাদের জন্য করেছে, চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রয় করেছে এবং চীনা জনগণের মুক্তির অগ্রযাত্রাকে রোধ করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ শুরু করেছে। এমন একটা সময়ে আমরা যদি দুর্বলতা প্রদর্শন করতাম অথবা জমি ছেড়ে দিতাম এবং প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধকে বিপ্লবী যুদ্ধ দিয়ে বিরোধিতার জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর সাহস না করতাম, চীন এক অন্ধকার জগতে পরিণত হত এবং আমাদের জাতির ভবিষ্যত শৃঙ্খলিত হয়ে পড়তো। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি চীনা গণমুক্তি বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছে চিয়াং কাই-শেকের আক্রমণের বিরূদ্ধে একটা দেশপ্রেমিক, ন্যায্য ও বিপ্লবী যুদ্ধ পরিচালনায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিজ্ঞানের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ও দেশিয় পরিস্থিতির একটা স্পষ্ট নির্দিষ্ট মূল্যায়ণ রচনা করার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল যে দেশে ও বিদেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের সকল আক্রমণকে যে শুধু পরাজিত করতে হবে তাই নয়, বরং পরাজিত করা সম্ভব। যখন আকাশে কাল মেঘ দেখা দেয় আমরা একে বলেছিলাম এটা কেবল অস্থায়ী এবং অন্ধকার শীঘ্রই দূরীভূত হবে আর সূর্য উদিত হবে। যখন চিয়াং কাই-শেক দস্যুদল জুলাই ১৯৪৬-এ দেশব্যাপী প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ পরিচালনা করলো, তারা মনে করেছিল গণ মুক্তিবাহিনীকে পরাজিত করতে তাদের কেবল তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। তারা হিসেব করে করে যে তাদের বিশ লাখের নিয়মিত বাহিনী রয়েছে, দশ লাখের বেশি অনিয়মিত এবং আরো দশ লাখ অথবা বেশি লোক সামরিক স্থাপনা অথবা পশ্চাদ এলাকার সশস্ত্র ইউনিটগুলোতে রয়েছে চল্লিশ লাখের বেশি সামগ্রিক সামর্থের অংশ হিসেবে, তারা আক্রমণে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সময় নিয়েছে; তারা বড় বড় শহরের ওপর পুননিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে; তারা দশ লক্ষ জাপানী দখলদার বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছে; এবং তারা মার্কিন সরকারের তরফ থেকে প্রচুর সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পেয়েছে। তারা আরো হিসেব করে যে গণমুক্তি বাহিনী আটবছর জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের পর ক্লান্ত এবং সংখ্যায় ও অস্ত্রশস্ত্রে কুয়োমিনতাং বাহিনীর চেয়ে অনেক কম, মুক্ত এলাকাসমূহের জনসংখ্যা দশকোটির অল্প কিছু বেশি, এই এলাকাসমূহের বেশিরভাগেই প্রতিক্রিয়াশিল সামন্তশক্তিকে এখনো পরিষ্কার করা হয়নি এবং ভুমিসংস্কার এখনো সার্বজনীনভাবে ও সমগ্রভাবে পরিচালনা করা হয়নি; নির্দিষ্টত, গণমুক্তিবাহিনীর পশ্চাদএলাকা এখনো সুসংহত করা হয়নি। এই মূল্যায়ণ থেকে অগ্রসর হয়ে চিয়াঙ কাই-শেক দস্যুবাহিনী চীনা জনগণের শান্তির আকাঙ্খাকে অগ্রাহ্য করলো এবং জানুয়ারী ১৯৪৬-এ স্বাক্ষরকৃত কুওমিনতাঙ ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে শান্তিচুক্তিকে ভঙ্গ করলো এবং সর্বদলীয় রাজনৈতিক পরামর্শক সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্তবলীকে এবং হঠকারি যুদ্ধ পরিচালনা করলো। আমরা তখন বললাম যে সামরিক শক্তিতে চিয়াং কাইশেকের শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে কেবল ক্ষণস্থায়ী একটা উপাদান যা কেবল সাময়িক সুবিধা দিতে পারে, একইভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সহযোগিতাও তেমনি একটা উপাদান যা কেবল সাময়িক ভুমিকা নিতে পারে, যেখানে চিয়াং কাইশেকের যুদ্ধের জনগণ-বিরোধী চরিত্র এবং জনগণের অনুভূতি হচ্ছে সেই উপাদান যা অবিরাম ভুমিকা পালন করবে এবং ঠিক এই দিক থেকেই গণমুক্তিবাহিনী শ্রেষ্ঠতর অবস্থানে রয়েছে। গণমুক্তিবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত দেশপ্রেমিক, ন্যায্য ও বিপ্লবী চরিত্রের যুদ্ধ সারা দেশের জনগণের সমর্থন জয় করতে বাধ্য। এটাই ছিল চিয়াং কাইশেকের ওপর বিজয়ের রাজনৈতিক ভিত্তি। আঠারো মাসের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের বিচারকে পুরোপুরি নিশ্চিত করেছে।

সতের মাসের লড়াইয়ে (জুলাই ১৯৪৬ থেকে নভেম্বর ১৯৪৭ পর্যন্ত; ডিসেম্বরের হিসাব এখনও পাওয়া যাচ্ছেনা), আমরা চিয়াং কাইশেকের ১,৬৯০,০০০ নিয়মিত ও অনিয়মিত সৈন্যকে খতম, আহত ও বন্দী করেছি যার মধ্যে ৬,৪০,০০০ নিহত ও আহত এবং ১,০৫০,০০০ বন্দী হয়েছে। এভাবে আমরা চিয়াং কাইশেকের আক্রমণকে পরাজিত করতে, মুক্ত এলাকাসমূহের প্রধান অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করতে এবং আক্রমণাত্মক পর্যায়ে যেতে সক্ষম। সামরিক দিক থেকে বলতে গেলে আমরা এটা করতে সক্ষম কারন আমরা সঠিক রণনীতি প্রয়োগ করেছি। আমাদের অপারেশনের মূলনীতিমালা নিম্নরূপঃ

১.          বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত শত্রুবাহিনীকে প্রথমে আক্রমণ করো: কেন্দ্রিভূত শক্তিশালি শত্রুবাহিনীকে পরে আক্রমণ করো

images111২.          ছোট, মাঝারি শহর ও বিশাল গ্রামাঞ্চলকে প্রথমে দখল করো, বড় শহরগুলিকে পরে দখল করো

৩.         শত্রুর কার্যকরী শক্তিকে ধ্বংস করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করো, কোন শহর অথবা স্থানকে দখল করা অথবা বজায় রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য করোনা। কোন শহর বা স্থান দখল করা বা বজায় রাখা হচ্ছে শত্রুর কার্যকরি শক্তি ধ্বংস করার ফল, এবং একটা শহর অথবা স্থান প্রায়শ বারবার হাত বদলের মধ্য দিয়ে দখল অথবা বজায় রাখা যায়।

প্রতিটি লড়াইয়ে চরমভাবে উতকৃষ্ট শক্তি কেন্দ্রিভূত করো (শত্রুর দুই, তিন, চার এবং কখনো কখনো এমনকি পাঁচ অথবা ছয় গুণ), শত্রুবাহিনীকে পুর্ণরূপে ঘেরাও করো, তাদের পরিপুর্ণভাবে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হও এবং তাদেরকে জাল থেকে পালিয়ে যেতে দিওনা। বিশেষ পরিস্থিতিতে শত্রুর ওপর মরণ আঘাত হানার পদ্ধতি ব্যবহার করো, অর্থাত আমাদের সকল শক্তিকে একত্রিত করে

১.     সম্মুখভাগে (ফ্রন্টাল) আক্রমণ করা এবং একটি অথবা উভয় পার্শ্ব (ফ্ল্যাঙ্ক) কে আক্রমণ করো শত্রুর একটি অংশকে উতখাত করে অপর অংশের পিছু ধাওয়া করার লক্ষ্য থেকে যাতে আমাদের বাহিনী অন্য শত্রুবাহিনীকে ধ্বংস করতে দ্রত সৈন্যদল প্রেরণ করতে পারে। ধ্বংসাত্মক লড়াই এড়াতে চেষ্টা করো যেখানে আমরা যা অর্জন করি তার চেয়ে বেশি খোয়াই অথবা এমনকি ভেঙে যায়। এইভাবে, সমগ্রভাবে আমরা দুর্বল হলেও (সংখ্যার দিক থেকে), প্রতিটি অংশে ও প্রতিটি নির্দিষ্ট অভিযানে আমরা শ্রেষ্ঠতর এবং এটা অভিযানে বিজয় নিশ্চিত করে। কালক্রমে সমগ্রভাবে আমরা শ্রেষ্ঠতর হবো এবং শেষপর্যন্ত সকল শত্রুকে উতখাত করবো।

২.     অপ্রস্তুত অবস্থায় যুদ্ধ করবেনা, বিজয় নিশ্চিত না হলে কোন যুদ্ধ করবেনা, প্রতিটি খন্ডযুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সকল প্রচেষ্টা চালাও, শত্রু ও আমাদের মধ্যে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী বিজয় নিশ্চিত করতে সকল প্রচেষ্টা চালাও।

৩.     আমাদের লড়াইয়ের স্টাইলের পুর্ণ প্রয়োগ ঘটাও—-যুদ্ধে সাহসিকতা, আত্মত্যাগে ভীত না হওয়া, ক্লান্তিতে ভীত না হওয়া এবং অব্যাহত লড়াই (অর্থাত স্বল্পসময়ের মধ্যে বিশ্রামহীন ধারাবাহিক খন্ডযুদ্ধসমূহ)

৪.     শত্রুকে চলমান যুদ্ধের মাধ্যমে উতখাতের প্রচেষ্টা চালান। একইসাথে, অবস্থান যুদ্ধের রণকৌশল এবং শত্রুর সুসজ্জিত অবস্থান ও শহরসমূহকে দখলের দিকে মনোযোগ দাও।

৫.     শহর আক্রমণের ক্ষেত্রে, দুর্বলভাবে রক্ষিত শত্রুর স্থাপনা ও শহরগুলিকে দৃঢ়তার সাথে দখল করো। পরিস্থিতি অনুমোদন করলে যথেষ্ট শক্তিশালীভাবে রক্ষিত শত্রুর সকল স্থাপনা ও শহরগুলিকে সুবিধাজনক সময়ে দখল করো। অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে রক্ষিত শত্রুর স্থাপনা ও শহরগুলির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো এবং দখল করো।

৬.     শত্রুর সকল অস্ত্র ও অধিকাংশ বন্দীযোদ্ধার দ্বারা আমাদের সামর্থ পুর্ণ করো। আমাদের জনশক্তি ও সামগ্রীর প্রধান উতস হচ্ছে সম্মুখভাগ (ফ্রন্ট)।

৭.     আমাদের বাহিনীর অভিযান থেকে বিশ্রাম, ট্রেনিং এবং সুসংহতকরণের মধ্যে বিরতিসমূহের সদ্ব্যবহার করুন। বিশ্রাম, ট্রেনিং এবং সুসংহতকরণ সাধারণভাবে খুব দীর্ঘ হওয়া উচিত হবেনা এবং যতদূর সম্ভব শত্রুকে নিঃশ্বাস ফেলার সময় দেওয়া যাবেনা।

এগুলো হচ্ছে সেই প্রধান প্রধান পদ্ধতি যা গণমুক্তিবাহিনী চিয়াং কাইশেককে পরাজিত করতে প্রয়োগ করেছে। এগুলো হচ্ছে দেশী ও বিদেশী শত্রুদের বিরুদ্ধে বহু বছরের লড়াইয়ে গণমুক্তিবাহিনীর পোড় খাওয়ার ফল এবং আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপুর্ণ। চিয়াং কাইশেক দস্যুদল আর চীনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সামরিক কর্তাব্যক্তিরা আামাদের এই সামরিক পদ্ধতির সাথে সুপরিচিত। সেগুলোকে মোকাবেলা করার পথ খুঁজে পেতে চিয়াং কাইশেক প্রায়ই তার জেনারেল ও ফিল্ড অফিসারদের ট্রেনিংয়ের জন্য সমাবেশিত করেছে এবং যুদ্ধে দখলকৃত আমাদের সামরিক সাহিত্য ও দলিলসমূহ তাদের অধ্যয়নের জন্য দিয়েছে। মার্কিন সামরিক কর্তাব্যক্তিরা চিয়াং কাইশেকের প্রতি একের পর এক রণনীতি ও রণকৌশলের পরামর্শ দিয়েছে গণমুক্তিবাহিনীকে ধ্বংস করতে; তারা চিয়াং কাইশেকের সৈন্যদলকে ট্রেনিং দিয়েছে এবং সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছে। কিন্তু এর কোনটিই চিয়াং কাইশেক দস্যুদলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনা। কারণ হচ্ছে, আমাদের রণনীতি ও রণকৌশল গণযুদ্ধভিত্তিক, জনগণবিরোধী কোন বাহিনী আমাদের রণনীতি ও রণকৌশল ব্যবহার করতে পারেনা। গণযুদ্ধের ভিত্তিতে এবং সৈন্যবাহিনী এবং জনগণের মধ্যেকার, কমান্ডার ও যোদ্ধাদের মধ্যেকার এবং শত্রুসৈন্যদলের ভেঙে দেওয়ার ঐক্যের নীতিমালার ভিত্তিতে গণমুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড বিপ্লবী রাজনৈতিক কাজ বিকশিত করেছে যা হচ্ছে শত্রুর ওপর বিজয় অর্জনের একটা গুরুত্বপুর্ণ উপাদান। যখন আমরা অনেক শহর নিজেদের উদ্যোগে ছেড়ে দিলাম উতকৃষ্টতর শত্রুবাহিনীর বিপজ্জনক আক্রমণ এড়াতে এবং শত্রুকে চলমান যুদ্ধে ধ্বংস করতে আমাদের বাহিনীকে স্থানান্তর করলাম, আমাদের শত্রুরা অহংকারী হয়ে উঠলো। তারা একে তাদের বিজয় এবং আমাদের পরাজয় হিসেবে নিল। এই ঐতিহাসিক “বিজয়”-এ তারা দুর্বল হয়ে পড়লো। যে অপরাহ্নে সে চ্যাঙাচিয়াকৌ দখল করলো, চিয়াঙ কাইশেক তার প্রতিক্রিয়াশিল জাতীয় সম্মেলন (এসেম্বলী) আহ্বানের আদেশ দিল। যেন সেই মুহুর্ত থেকে তার প্রতিক্রিয়াশিল শাসকগোষ্ঠী তাইশান পর্বতের মতো স্থায়ী হয়ে গেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরাও আনন্দে নেচেছে, যেন চীনকে মার্কিন উপনিবেশ বানানোর তাদের বন্য পরিকল্পনা এখন বাঁধাহীনভাবে বাস্তবায়িত হতে পারবে। কিন্তু কিছু সময় যেতে না যেতেই চিয়াং কাইশেক ও তার মার্কিন প্রভুরা তাদের সুর পরিবর্তন করতে শুরু করলো। এখন আমাদের দেশি বিদেশি সব শত্রুই হতাশাবাদে আচ্ছন্ন। তারা একটা সংকট নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে আর বিলাপ করছে এবং আনন্দের কোন চিহ্নই আর প্রকাশ করছেনা। অতীত আঠার মাসে যুদ্ধে চিয়াং কাইশেকের প্রায় সকল উচ্চ পদস্থ ফিল্ড কমান্ডারকে যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে লিউ ছিহ (চেঙচৌ), শুয়েহ ইউয়েহ (সুচৌ), উ-চি-ওয়েই (উত্তর কিয়াংসু), তাঙ এন-পো (দক্ষিণ সানতুঙ), ওয়াঙ চুঙ লিয়েন (উত্তর হুনান), তু ইউ-মিঙ এবং সিউঙ শিহ-হুই (সেনিয়াঙ) এবং সুন লিয়েন-চুঙ (পিপিঙ)। চেন চেঙকেও চিয়াং কাইশেকের চিফ অব স্টাফ হিসেবে অপারেশনের সামগ্রিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে উত্তর-পুর্বাঞ্চল[২)-এ একটা একক ফ্রন্টকে পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োযিত করে পদাবনতি ঘটানো হয়েছে। যাহোক, এটা এমন একটা সময়ে যখন সামগ্রিক কমান্ডের দায়িত্ব চিয়াং নিজ হাতে নিল চেন চেঙের স্থলে এবং পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে এবং তার বাহিনী আক্রমণাত্মক অবস্থা থেকে আত্মরক্ষার অবস্থায় নেমে গেছে, যেখানে গণমুক্তিবাহিনী আত্মরক্ষার অবস্থা থেকে আক্রমণাত্মক পর্য়ায়ে প্রবেশ করেছে। এখন প্রতিক্রিয়াশিল চিয়াং কাইশেক চক্র ও তাদের মার্কিন  প্রভুদের উচিত তাদের ভুল বুঝতে পারা। তারা শান্তির জন্য ও গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টাকে কাপুরুষোচিত ও দুর্বলতা হিসেবে দেখেছে যাকে চীনের জনগণের ইচ্ছা আকাঙ্খা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জাপানের আত্মসমর্পণের পর দীর্ঘ পর্যায়কাল ধরে। তারা নিজেদের সামর্থের অতিমূল্যায়ণ করে, বিপ্লবের শক্তির অবমূল্যায়ণ করে তড়িঘড়ি যুদ্ধের সূচনা ঘটায় এবং এভাবে নিজেদের ফাঁদে আটকা পড়ে। আমাদের শত্রুর রণনৈতিক হিসাব নিকাশ ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।

গণমুক্তিবাহিনীর পশ্চাদএলাকাগুলো এখন আঠার মাস আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত। কারণ হচ্ছে আমাদের পার্টি কৃষকদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে ভুমি সংস্কার চালিয়েছে। জাপান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় আমাদের পার্টি তার নিজ উদ্যোগে এবং কুওমিনতাঙের সাথে জাপ বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠণের জন্য এবং সেসব লোকের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে যারা তখনো জাপান সাম্রাজ্যবাদকে বিরোধিতা করে, ভূস্বামীদের ভুমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের মধ্যে বিতড়নের যুদ্ধপূর্ব কর্মনীতি পরিবর্তন করে খাজনা ও সুদ কমানোর কর্মনীতি আনে। এটা ছিল সমগ্রভাবে প্রয়োজনীয়। জাপানীদের আত্মসমর্পণের পর কৃষকরা জরুরীভাবে ভুমি দাবী করলো এবং আমরা একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের ভুমি কর্মনীতি খাজনা ও সুদ হ্রাস থেকে পরিবর্তন করে ভুস্বামীদের ভুমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের মধ্যে বিতড়ণের। মে ৪, ১৯৪৬ [৩] তারিখে আমাদের পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি কর্তৃক ইস্যুকৃত নির্দেশনা এই পরিবর্তনকে সূচিত করে। সেপ্টেম্বর ১৯৪৭-এ আমাদের পার্টি জাতীয় ভুমি সম্মেলন আহ্বাণ করে এবং চীনের ভুমি আইন রূপরেখা [৪] রচনা করে যা তড়িত সকল এলাকায় বাস্তবায়ন করা হয়। এই মানদন্ড গত বছরে তুলে ধরা “৪ঠা মে নির্দেশনা” কর্মনীতিকে পুননিশ্চিতই শুধু করেনা বরং সেই নির্দেশনার সামগ্রিক কিছু ঘাটতিকেও খোলামেলাভাবে সংশোধিত করে। ভুমি আইন রূপরেখা মাথাপিছু ভুমির সমবন্টন [৫] যোগান দেয় সামন্তীয় ও আধা-সামন্তীয় ভুমিব্যবস্থা বিলোপের নীতির ভিত্তিতে এবং যে চাষ করে তার হাতে জমির নীতি কার্যকর করে। এটা হচ্ছে সেই পদ্ধতি যা সর্বাধিক সমগ্রভাবে সামন্তব্যবস্থাকে বিলোপ করে এবং চীনের ব্যাপক কৃষক জনগণের চাহিদাকে সম্পূর্ণভাবে পুরণ করে। ভুমিসংস্কার দৃঢ়ভাবে ও সমগ্রভাবে চালাতে গ্রামাঞ্চলে সংস্কার চালাতে আইনি কাঠামো হিসেবে সংগঠিত করা প্রয়োজন, খামার মজুর, গরীব কৃষক, মাঝারি কৃষক ও তাদের নির্বাচিত কমিটিসমূহসমেত ব্যাপকতম গণভিত্তির কৃষকসংস্থাই শুধু নয় বরং সর্বাগ্রে গরীব কৃষক ও খামার মজুরদের নিয়ে গঠিত গরীব কৃষক লীগ ও তাদের নির্বাচিত কমিটি, এবং গরীব কৃষক লীগকে হতে হবে সকল গ্রামীন সংগ্রামের মেরুদন্ড। আমাদের কর্মনীতি হচ্ছে গরীব কৃষকদের ওপর নির্ভর করা এবং মাঝারি কৃষকদের সাথে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যাতে ভুস্বামী ও পুরোনো ধরণের ধনী কৃষকদের কর্তৃক চালিত সামন্তীয় ও আধা-সামন্তীয় শোষণের ব্যবস্থা বিলোপ করা যায়। ভুস্বামী অথবা ধনীকৃষকদের কৃষক জনগণের চেয়ে বেশি ভুমি ও সম্পত্তি দেয়া যাবেনা। কিন্তু ১৯৩১-৩৪-এ পরিচালিত ভ্রান্ত অতিবাম “ভুস্বামীদের কোন জমি নয় এবং ধনীকৃষকদের খারাপ জমি বন্দোবস্ত দেয়া”র কর্মনীতির পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়। যদিও গ্রামীণ  জনসংখ্যার মধ্যে ভুস্বামী ও ধনীকৃষকদের অনুপাত স্থানভেদে ভিন্ন হয়, সাধারণভাবে তা শতকরা ৮ ভাগ (গৃহস্থালির দিক থেকে) যেখানে তারা সকল ভুমির ৭০ থেকে ৮০ শতকরার মালিক। তাই, আমাদের ভুমি সংস্কারের নিশানা হচ্ছে কতিপয়, যেখানে গ্রামের জনগণ যারা ভুমি সংস্কারের জন্য যুক্ত ফ্রন্টে অংশ নিতে পারে ও নেওয়া উচিত–হচ্ছে বহু–৯০ শতকরার বেশি (গৃহস্থালি হিসেবে)। এখানে দুটি মৌলিক নীতিকে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে। প্রথমত, গরীব কৃষক ও খামার মজুরদের চাহিদাকে অবশ্যই পুরণ করতে হবে;এটা হচ্ছে ভুমি সংস্কারে সবচাইতে মৌলিক কাজ। দ্বিতীয়ত, মাঝারি কৃষকদের সাথে অবশ্যই দৃঢ় ঐক্য থাকতে হবে, এবং তাদের স্বার্থের ক্ষতি করা যাবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত এই দুটি মৌলিক নীতিকে আঁকড়ে ধরবো, আমরা নিশ্চিতভাবে আমাদের ভুমিসংস্কারের কর্তব্যগুলিকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। যে কারণে সমবন্টনের নীতির অধীনে বাড়তি ভুমি এবং পুরনো ধরণের ধনী কৃষকদের সম্পত্তির অংশ বন্টনের জন্য হস্তান্তর করতে হবে তাহচ্ছে চীনে ধনীকৃষকদের সাধারণভাবে এবং বিরাট মাত্রায় সামন্তীয় ও আধা-সামন্তীয় শোষক চরিত্র রয়েছে; তাদের অধিকাংশই জমির খাজনা নেয় এবং সুদী কারবার করে এবং তারা আধা-সামন্তবাদী নিয়মে শ্রমিক ভাড়া করে [৬]। অধিকন্তু, যেহেতু ধনী কৃষকদের অধিক ও অধিকতর ভাল জমি রয়েছে [৭], গরীব কৃষক ও খামার মুজরদের চাহিদা পুরণ হবেনা যদিনা এই ভুমি বন্টন হয়। যাহোক, ভুমি আইনের রূপরেখার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে ধনীকৃষকদেরকে ভুস্বামীদের থেকে ভিন্নভাবে সাধারণভাবে দেখতে হবে। ভুমিসংস্কারে মাঝারি কৃষকরা সমবন্টনকে অনুমোদন করে কারণ এটা তাদের স্বার্থের কোন ক্ষতি করেনা। সমবন্টনের অধীনে, মাঝারি কৃষকদের একটা অংশের ভুমি অপরিবর্তিত থাকে এবং আরেকটি অংশের ভুমি বৃদ্ধি পায়, কেবল স্বচ্ছল কৃষকদের একটি অংশের রয়েছে সামাণ্য বাড়তি ভুমি এবং তারা একে সমবন্টনের জন্য হস্তান্তরে ইচ্ছুক কারণ তাতে তাদের ভুমি করের বোঝা লাঘব হবে। তাসত্ত্বেও, বিভিন্ন স্থানে ভুমির সমবন্টন চালানোর সময়, মাঝারি কৃষকদের মতামত শোনা দরকার এবং  তারা আপত্তি করলে তাদের ছাঁড় দিতে হবে। সামন্ত শ্রেণীর ভুমি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বন্টন করার সময় কিছু মাঝারি কৃষকদের প্রয়োজন মনোযোগ পেতে হবে। শ্রেণীচরিত্র নির্ধারণের সময় যতন নিতে হবে যাতে মাঝারি কৃষকদের ধনী কৃষক হিসেবে শ্রেণীবিন্যাস করা না হয়। সক্রিয় মাঝারি কৃষকদের কৃষক সহযোগিতা কমিটি-তে এবং সরকারে নিতে হবে। ভুমিকরের বোঝা এবং যুদ্ধকে সহযোগিতা করার দিক থেকে নীতিসম্মত ও যুক্তিযুক্ত কিনা তা অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে। মাঝারি কৃষকদের সাথে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার রণনৈতিক কর্তব্য বাস্তবায়নে এগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট কর্মনীতি যাকে আমাদের পার্টিকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। সমগ্র পার্টিকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে ভুমি ব্যবস্থার পুর্ণাঙ্গ সংস্কার হচ্ছে চীনের বিপ্লবের বর্তমান স্তরে একটা মৌলিক কর্তব্য। আমরা যদি ভুমি সমস্যাকে সার্বজনীনভাবে ও পুর্ণাঙ্গভাবে সমাধান করতে পারি আমাদের সকল শত্রুদের পরাজিত করার সবচাইতে মৌলিক শর্ত আমরা অর্জন করবো।

দৃঢ়ভাবে ও সমগ্রভাবে ভুমিসংস্কার চালাতে ও গণমুক্তিবাহিনীর পশ্চাদএলাকাকে সুসংহত করতে আমাদের পার্টির সকল স্তরকে শিক্ষিত ও পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে, জাপবিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধের সময়কালে পার্টির ভেতরে শুদ্ধি আন্দোলন [৮] ছিল সফল। এর প্রধান সফলতা ছিল এই যে আমাদের নেতৃস্থানীয় সংস্থাগুলো এবং বিপুলসংখ্যক কেডার ও পার্টিসদস্য আমাদের মূল ধারার ওপর দৃঢ়তর আত্মস্থকরণ অর্জন করেছে, যাহচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্যকে চীনের বিপ্লবের মূর্ত অনুশীলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ করা। এই দিক থেকে এটা প্রতিরোধযুদ্ধের পুর্বেকার সকল ঐতিহাসিক স্তরের তুলনায় আমাদের পার্টির একটা বড় অগ্রপদক্ষেপ। যাহোক, পার্টির স্থানীয় সংগঠণসমূহে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্তরে সংগঠনসমূহে আমাদের স্তরসমূহের শ্রেণী-গঠণে ভেজাল সমস্যা এবং আমাদের কাজের স্টাইল এখনো অমীমাংসিত। ১৯৩৭-৪৭ এই এগার বছরে আমাদের পার্টির সদস্যসংখ্যা কয়েক দশক সহস্র থেকে ২,৭০০,০০০-এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আর এটা একটা বড় উলম্ফণ। এটা আমাদের পার্টিকে চীনের ইতিহাসের যেকোনটির চেয়ে অধিক শক্তিশালি পার্টিতে পরিণত করেছে। এটা জাপানী সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করতে, চিয়াং কাইশেকের আক্রমণকে প্রতিহত করতে এবং ১০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার মুক্ত এলাকাকে নেতৃত্ব করতে এবং বিশ লাখের শক্তিশালি গণমুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব করতে সক্ষম করে তুলেছে। কিন্তু সীমাবদ্ধতাও জন্ম নিয়েছে। বহু ভুস্বামী, ধনীকৃষক ও বদমাইসরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের পার্টিতে অনুপ্রবেশ করেছে। গ্রামাঞ্চলে তারা বেশকিছু পার্টি, সরকার ও গণ সংগঠণ নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ক্ষমতা অন্যায়ভাবে অসদ্ব্যবহার করে, জনগণের ওপর ছড়ি ঘোরায়, পার্টির কর্মনীতিকে বিকৃত করে এবং এভাবে এসব সংগঠণকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং ভুমিসংস্কারের সামগ্রিক হওয়াকে প্রতিরোধ করে। এই মারাত্মক পরিস্থিতি আমাদের পার্টির স্তরসমূহকে শিক্ষিতকরণ ও পুনর্গঠণের কর্তব্য আমাদের প্রদান করে। এই কর্তব্য সম্পাদন না করে গ্রামাঞ্চলে আমরা অগ্রসর হতে পারিনা। পার্টির জাতিয় ভুমি সম্মেলন এই সমস্যাকে সমগ্রভাবে আলোচনা করেছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এগুলো এখন সবজায়গায় দৃঢ়ভাবে প্রযুক্ত হচ্ছে ভুমির সমবন্টনের সিদ্ধান্তের সাথে একত্রিতভাবে। সবার আগে আসে পার্টির মধ্যে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা গড়ে তোলা এবং স্থানীয় সংগঠণের পার্টি-লাইনের থেকে বিচ্যুত ভ্রান্ত চিন্তা ও মারাত্মক পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্মোচন। সকল পার্টিসদস্যকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে ভুমি সংস্কারের সমাধান এবং দীর্ঘকালব্যাপী চালিত যুদ্ধের সমর্থনের জন্য নির্ধারক যোগসূত্র হচ্ছে পার্টির সংগঠন থেকে ভেজাল অপসারণ করা এবং পার্টির স্তরসমূহের শিক্ষা ও পুনর্গঠন, যাতে পার্টি ও ব্যাপকতম মেহনতী জনগণ সকলে একই দিকে এগিয়ে যেতে পারে এবং পার্টি জনগণকে সম্মুখে এগিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিতে পারে।

সামন্তশ্রেণীর ভুমি বাজেয়াপ্ত করুন এবং কৃষকদের অর্পণ করুন। চিয়াং কাইশেক, টি.ভি সুঙ, এইচ.এইচ.কুঙ এবং চেন-লি-ফু শীর্ষক একচেটিয়া পুঁজিবাদ বাজেয়াপ্ত করুন এবং নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিকট তা অর্পণ করুন। জাতীয় বুর্জোয়ার শিল্প ও বাণিজ্য রক্ষা করুন। এগুলোই হচ্ছে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক কর্মনীতি। তাদের কুড়ি বছরের শাসনে চার বৃহত পরিবার চিয়াং, সুঙ, কুঙ ও চেন দশ থেকে কুড়ি মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূল্যমাণের বিপুল বিত্ত জমা করেছে এবং সমগ্রদেশের জীবনধারাকে একচেটিয়াকরণ করেছে। একচেটিয়া পুঁজিবাদ রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া পুঁজিবাদে পরিণত হয়েছে। এই একচেটিয়া পুঁজিবাদ বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ, দেশীয় সামন্তশ্রেণী এবং পুরোনো ধরণের ধনীকৃষকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে মুতসুদ্দি, সামন্তীয় ও রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া পুঁজিবাদে পরিণত হয়েছে। এমনই হচ্ছে চিয়াং কাইশেকের প্রতিক্রিয়াশিল শাসকগোষ্ঠির অর্থনৈতিক ভিত্তি। এই রাষ্ট্রিয় একচেটিয়া পুঁজিবাদ শ্রমিক ও কৃষকদেরই কেবল বিরোধিতা করেনা বরং শহুরে পেটিবুর্জোয়াদের এবং তা মাঝারি বুর্জোয়াদের আহত করে। এই রাষ্ট্রীয় pingjin_campaign__one_of_the_three_major_campaigns_in_the_chinese_civil_war13dce37c7e975d23dbf4একচেটিয়া পুঁজিবাদ প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় এবং জাপানী আত্মসমর্পণের পর তার বিকাশের শিখরে পৌঁচেছে, তা নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য চমতকার বস্তুগত শর্ত প্রস্তুত করেছে। এই পুঁজি আমলাতান্ত্রিক পুঁজি নামে জনপ্রিয়। আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী শ্রেণী হিসেবে পরিচিত এই পুঁজিবাদী শ্রেণী চীনের বড় বুর্জোয়া। চীনে সাম্রাজ্যবাদের বিশেষ সুবিধা বিলোপ করার পাশাপাশি দেশে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্তব্য হচ্ছে ভুস্বামীশ্রেণীর ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী শ্রেণীর (বড় বুর্জোয়া) র শোষণ ও নিপীড়ণ বিলোপ করা। উতপাদনের মুতসুদ্দি, সামন্তীয় সম্পর্কের পরিবর্তন করা এবং উতপাদিকা শক্তির বাঁধা মুক্ত করা। ভুস্বামী ও বড় বুর্জোয়া এবং তাদের রাষ্ট্রক্ষমতার দ্বারা নিপীড়িত ও আঘাতপ্রাপ্ত উচ্চ পেটিবুর্জোয়ারা–যদিও তারা নিজেরা বুর্জোয়া নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবে অংশ নিতে পারে অথবা নিরপেক্ষ থাকতে পারে। সাম্রাজ্যবাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, অথবা তুলনামূলক কম এবং তারা হচ্ছে প্রকৃত জাতিয় বুর্জোয়া। যেখানেই নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্প্রসারিত হবে তাকে দৃঢ়ভাবে ও দ্বিধাহীনভাবে তাদের রক্ষা করতে হবে। চিয়াং কাইশেকের এলাকায় উচ্চ পেটিবুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়ার দক্ষিণপন্থী অংশ যারা হচ্ছে এই শ্রেণীর ক্ষুদ্র অংশ, যাদের প্রতিক্রিয়াশিল রাজনৈতিক প্রবণতা রয়েছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং চিয়াং কাইশেক চক্র সম্পর্কে মোহ ছড়ায় এবং নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবকে বিরোধিতা করে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রতিক্রিয়াশিল প্রবণতা জনগণকে আক্রান্ত করে আমাদেরকে তাদের প্রভাবাধিন জনগণের সামনে তাদের উন্মোচন করতে হবে, এই প্রভাবকে আক্রমণ করতে হবে এবং জনগণকে এর থেকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক আক্রমণ আর অর্থনৈতিক খতম হচ্ছে দুই ভিন্ন জিনিস, এই দুইকে মিশিয়ে ফেললে আমরা ভুল করবো। নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের নিশানা হচ্ছে কেবল সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবাদ উতখাত করা, কেবল ভুস্বামী শ্রেণী এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী শ্রেণী (বড় বুর্জোয়া) উতখাত করা এবং সাধারণভাবে পুঁজিবাদ উতখাত নয়, উচ্চ পেটি বুর্জোয়া অথবা মাঝারি বুর্জোয়া নয়। চীনের অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার দিক থেকে, এমনকি দেশব্যাপি বিপ্লবের বিজয়ের পরও বিপুল উচ্চ পেটিবুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়াদের দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা একটা পুঁজিবাদী সেক্টরের অস্তিত্ব অনুমোদন বেশ একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য এখনো প্রয়োজন। জাতিয় অর্থনীতিতে শ্রমবিভাজনের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে জাতিয় অর্থনীতির জন্য উপকারী পুঁজিবাদী সেক্টরের সকল অংশের কিছূ বিকাশ এখনো প্রয়োজন হবে। পুঁজিবাদী সেক্টর সমগ্র জাতীয় অর্থনীতির অপরিহার্য অংশ হিসেবে এখনো থাকবে। এখানে উচ্চ পেটিবুর্জোয়াদের কথা বলা হচ্ছে , তারা হচ্ছে ক্ষুদে শিল্পপতি ও বণিক যারা শ্রমিক ও সহকারী নিয়োগ করে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক ক্ষুদে স্বাধীন কারুজীবি ও ব্যবসায়ী রয়েছে যারা কোন শ্রমিক অথবা সহকারী নিয়োগ করেনা এবং বলা নি®প্রয়োজন যে এদেরকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে হবে। দেশব্যাপী বিপ্লবের বিজয়ের পর, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিপতি শ্রেণীর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্রীয় সংস্থার মালিক হবে নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা দেশের অর্থনৈতিক জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং সামন্তবাদ থেকে মুক্ত একটা কৃষি অর্থনীতি হবে যদিও এটা মূলগতভাবে বিক্ষিপ্ত ও স্বতন্ত্র থাকবে বেশ দীর্ঘসময় যাবত, পরে ধাপে ধাপে সমবায়ের দিকে বিকশিত হতে থাকবে। এই পরিস্থিতিতে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পুঁজিবাদী  সেক্টরের অস্তিত্ব ও বিকাশ কোন বিপদ হাজির করবেনা। একই কথা সত্য নয়া ধনী কৃষক অর্থনীতির ক্ষেত্রে যা অনিবার্যভাবে গ্রামাঞ্চলে উদ্ভূত হবে ভুমিসংস্কারের পর। উচ্চ পেটি বুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়া সেক্টরের প্রতি ১৯৩১-৩৪ সালে আমাদের পার্টি যে ভ্রান্ত অতিবাম কর্মনীতি গ্রহণ করেছিল (অন্যায্যভাবে শ্রমশর্ত আরোপ, অতিরিক্ত আয়কর আরোপ, শিল্পপতি ও বণিকদের লাভের ওপর দখল নেওয়া ভুমি সংস্কারের সময় এবং তথাকথিত “শ্রমিক কল্যাণ”-এর লক্ষ্য গ্রহণ) যা ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উভয়ত সাধারণ ও ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতি বিবেচনা ও উভয়ত শ্রম ও পুঁজির লাভ আনয়নের মাধ্যমে উতপাদন বিকাশের লক্ষ্যের বদলে একটা অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও একতরফা ধারণা। এই ধরণের ভূলের পুনরাবৃত্তি নিশ্চিতভাবে উভয়ত শ্রমজীবি জনগণ ও নয়াগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষতি করে। চীনের ভুমি আইন রূপরেখার অন্যতম ধারায় বলা হয়েছে, “শিল্পপতি ও বণিকদের সম্পত্তি ও বৈধ ব্যবসাকে অবৈধ দখল থেকে রক্ষা করা হবে।” “শিল্পপতি ও বণিক” বলতে ক্ষুদে স্বাধীন কারুজীবি ও ব্যবসায়ি এবং সেইসাথে সকল ক্ষুদে ও মাঝারি পুঁজিবাদী উপাদানসমূহ। সারসংকলনে, নয়া চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো গঠিত হবেঃ (১) রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি–যাহচ্ছে নেতৃত্বকারী সেক্টর (২) ধাপে ধাপে স্বতন্ত্র থেকে যৌথে বিকশিত কৃষি অর্থনীতি (৩) ক্ষুদে স্বাধীন কারুজীবি ও ব্যবসায়ীদের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যক্তি পুঁজির অর্থনীতি নিয়ে। এগুলো নয়াগণতান্ত্রিক জাতীয় অর্থনীতি সম্পূর্ণ গঠণ করবে। নয়াগণতান্ত্রিক জাতীয় অর্থনীতির পরিচালনাকারী নীতিমালাকে অবশ্যই উতপাদন বিকাশ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিকাশ , উভয়ত সাধারণ ও ব্যক্তি লাভের প্রতি বিবেচনা এবং শ্রম ও পুঁজির উপকার করে এই সাধারণ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হতে হবে। সাধারণ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত যে কোন নীতি, কর্মনীতি অথবা মানদন্ড হচ্ছে ভুল।

অক্টোবর ১৯৪৭-এ গণমুক্তিবাহিনী এক ইশতেহার ইস্যু করে, যার অংশে বলা হয়েছেঃ

শ্রমিক, কৃষক, সৈন্যবাহিনী, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী, সকল নিপীড়িত জাতিসমূহ, সকল গণসংগঠনসমূহ, গণতান্ত্রিক পার্টি, সংখ্যালঘু জাতিসমূহ, প্রবাসী চীনা এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ করুন; একটা জাতীয় যুক্তফ্রন্ট গঠণ করুন; একনায়কত্ববাদী চিয়াং কাইশেক সরকারকে উচ্ছেদ করুন এবং একটি গণতান্ত্রিক সম্মিলিত সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।

এটাই হচ্ছে গণমুক্তি বাহিনী ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক রাজনৈতিক কর্মসূচি। উপরিতলে, আমাদের বিপ্লবী যুক্তফ্রন্ট বর্তমান পর্যায়কালে সংকীর্ণ হয়েছে মনে হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের পর্যায়কালের তুলনায়। বস্তুতঃ চিয়াং কাইশেক জাতীয় স্বার্থকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে বিক্রী করার পর এবং জনগণের বিরূদ্ধে গৃহযুদ্ধ পরিচালনার পর এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীল চিয়াং কাইশেক চক্রের অপরাধ চীনা জনগণের কাছে সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত হওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে এই বর্তমান পর্যায়েই আমাদের যুক্তফ্রন্ট প্রকৃতপক্ষে ব্যাপকতর হয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়কালে চিয়াং কাইশেক ও কুওমিনতাং তখনো সম্পূর্ণভাবে খাটো হয়নি জনগণের মধ্যে এবং তাদেরকে বহুভাবে প্রতারণা করতে সক্ষম ছিল তখনো। এখন তা ভিন্ন; তাদের সকল প্রতারণা তাদের নিজ কর্ম দ্বারা উন্মোচিত হয়েছে; তাদের কোন জনসমর্থন নেই; তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কুওমিনতাঙের বিপরীতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি মুক্ত এলাকায় ব্যাপকতম জনগণের আস্থাই শুধু অর্জন করেনি বরং কুওমিনতাঙ নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ও বড় শহরসমূহের ব্যাপক জনগণের সমর্থনও জয় করেছে। যদি ১৯৪৬-এ চিয়াং কাইশেক শাসনের অধীনে উচ্চ পেটিবুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবিদের একটা অংশ তথাকথিত তৃতিয় পথ [৯]-এর মতকে এখনো তুলে ধরে এই মত এখন দেউলিয়া। কারণ আমাদের পার্টি একটা সামগ্রিক ভুমি কর্মনীতি গ্রহণ করেছে বলে সে প্রতিরোধ যুদ্ধের চেয়ে অধিক ব্যাপকতর কৃষক জনগণের আন্তরিক সমর্থন অর্জন করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, চিয়াং কাইশেকের নিপীড়ণ এবং জনগণের স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার আমাদের পার্টির সঠিক কর্মনীতির কারণে আমাদের পার্টি চিয়াং কাইশেকের এলাকার শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক এবং শহুরে পেটি ও মাঝারি বুর্জোয়াদের ব্যাপক জনগণের সহানুভূতি অর্জন করেছে। জীবনকে যা অসম্ভব করে তুলেছে সেই ক্ষুধা, রাজনৈতিক নিপীড়ণ ও চিয়াং কাইশেকের বিরূদ্ধে গৃহযুদ্ধ দ্বারা চালিত হয়ে জনগণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চিয়াং কাইশেকের প্রতিক্রিয়াশিল সরকারের বিরূদ্ধে বিরামহীন সংগ্রাম চালাচ্ছেন; তাদের মূল শ্লোগান ক্ষুধা, লাঞ্চনা-বঞ্চনা ও গৃহযুদ্ধের বিরূদ্ধে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরূদ্ধে। আগে কখনোই তাদের সচেতনতা এমন স্তরে পৌঁছেনি না প্রতিরোধ যুদ্ধের আগে না সময়কালে না জাপানিদের আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পরের সময়কালে। তাই আমরা বলি যে আমাদের নয়াগণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিকতর ব্যাপক ও সুসংহত। এই বিকাশ শুধু আমাদের ভুমি ও শহুরে কর্মনীতির সাথেই য্ক্তু নয় বরং সমগ্র রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথেও-গণমুক্তিবাহিনীর বিজয়সমূহ, চিয়াং কাইশেকের আক্রমণাত্মক থেকে আত্মরক্ষাত্মকে গমন, গণমুক্তিবাহিনীর আত্মরক্ষাত্মক থেকে আক্রমণাত্মকে গমন, চীনা বিপ্লবের একটা নয়া উচ্চ জোয়ায়ের সাথে জড়িত। চিয়াং কাইশেক শাসকগোষ্ঠী অনিবার্যভাবে ধ্বংস হচ্ছে, এই উপলব্ধি থেকে জনগণ এখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও গণমুক্তি বাহিনীর ওপর তাদের আস্থা স্থাপন করেছে, এটা খুবই স্বাভাবিক। জনসংখ্যার নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যাপকতম যুক্তফ্রন্ট ব্যতিত চীনের নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবে বিজয় অর্জন করা অসম্ভব হবে। এই যুক্তফ্রন্টকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দৃঢ় নেতৃত্বের অধীনে হতে হবে। পার্টির দৃঢ় নেতৃত্ব ছাড়া কোন বিপ্লবী যুক্তফ্রন্টই বিজয় অর্জন করতে পারেনা। যখন উত্তরাভিযান ১৯২৭ সালে শিখরে পৌঁছলো, পার্টির নেতৃস্থানীয় কাঠামোর বিশ্বাসঘাতকতাবাদীরা স্বেচ্ছায় কৃষকজনগণ, শহুরে পাতিবুর্জোয়া ও মাঝারি বুর্জোয়াদের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করলো, নির্দিষ্টভাবে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর পার্টির নেতৃত্ব ত্যাগ করলো ও এভাবে বিপ্লবের পরাজয় ডেকে আনলো। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় আমাদের পার্টি বিশ্বাসঘাতকতাবাদীদের ঐসবের মতো একইরকম মতকে লড়লো, তাহচ্ছে কুওমিনতাঙের জনগণবিরোধী কর্মনীতির প্রতি ছাঁড় দেওয়া, জনগনের চেয়ে কুওমিনতাঙের প্রতি অধিক আস্থা রাখা, গণসংগ্রামকে জাগ্রত করতে ও পুর্ণ গুরুত্ব দিতে সাহস না করা, জাপানী অধিকৃত এলাকাসমূহে মুক্ত এলাকার ও গণবাহিনীর সম্প্রসারণে সাহস না করা, প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব কুওমিনতাঙের হাতে হস্তান্তর করার মতো মত। আমাদের পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিরূদ্ধে যায় এমন অক্ষম ও অধঃপতিত মতের বিরূদ্ধে দৃঢ়সংগ্রাম চালালো, “প্রগতিশীল শক্তিসমূহ বিকশিত করা, মাঝারি শক্তিগুলোকে জয় করা এবং কট্রর শক্তিগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা”র রাজনৈতিক লাইন দৃঢ়ভাবে পরিচালনা করে এবং দৃঢ়ভাবে মুক্ত এলাকা ও গণমুক্তিবাহিনীকে সম্প্রসারিত করে। এটা নিশ্চিত করে যে জাপানী আগ্রাসনের সময় আমাদের পার্টি যে শুধু জাপানী সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করতে সক্ষম ছিল তাই নয়, বরং জাপানী আত্মসমর্পণের পরের পর্বে যখন চিয়াং কাইশেক তার প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ চালালো আমাদের পার্টি চিয়াং কাইশেকের প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধকে একটা বিপ্লবী যুদ্ধ দ্বারা বিরোধিতার প্রক্রিয়ায় মসৃন ও ক্ষতিবিহীন সূচনায় সক্ষম ছিল এবং স্বল্পসময়ে বিজয় অজনে। সকল কমরেডকে ইতিহাসের এইসব শিক্ষাকে দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে।

যখন প্রতিক্রিয়াশিল চিয়াং কাইশেক চক্র ১৯৪৬ সালে জনগণের বিরূদ্ধে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ পরিচালনা করে, যেকারণে তারা এই ঝুঁকি নিতে সাহস করলো তারা স্রেফ তাদের উতকৃষ্ট সামরিক সামর্থের উপর ভিত্তি করেই নয় বরং পারমাণবিক বোমাসমেত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উপর ভিত্তি করেও-যাদের তারা “ব্যতিক্রমী শক্তিধর” এবং “বিশ্বে বিরল” মনে করে। একদিকে তারা মনে করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক চাহিদাকে যোগানের প্রবাহ দ্বারা পুরণ করতে পারে। অন্যদিকে, তারা বন্যভাবে গুজব ছড়ায় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে য্দ্ধু অনিবার্য” এবং “একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাব অনিবার্য।” মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে সকল দেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এটা প্রতিফলণ ঘটায় যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বপুঁজিবাদ কী মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এটা সকল দেশে প্রতিক্রিয়াশিল শক্তিসমূহের দুর্বলতার প্রতিফলন ঘটায়, তাদের ভয় ও আস্থা হারানো, এবং এটা বিশ্ব বিপ্লবী শক্তিসমূহের শক্তিময়তার প্রতিফলন ঘটায়-এসবই সকল দেশের প্রতিক্রিয়াশিলদের এই ভাবনায় চালিত করে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোন উপায়565924862_91359da4f2 নেই। কিন্তু বস্তুত, চিয়াং কাইশেক ও অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়াশিলরা যতটা মনে করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ততটা শক্তিশালি? সেকি তাদের জন্য যোগানের একটা ধারা প্রবাহিত করতে পারে? না, তা নয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যে অর্থনৈতিক শক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে জন্মেছিল তা অস্থায়ী ও দৈনন্দিন অবনতিশীল দেশী-বিদেশী বাজারের মোকাবেলা করছে। এই বাজারসমূহের অধিকতর অবনতি অর্থনৈতিক সংকটের প্রাদুর্ভাব ঘটাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের য্দ্ধু উন্মাদনা ছিল কেবল অস্থায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামর্থ্য হচ্ছে কেবল ভাসাভাসা ও অস্থায়ী। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অমীমাংসেয় দ্বন্দ্বসমূহ আগ্নেয়গিরির মতো সন্ত্রস্ত করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে প্রত্যহ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এই আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে। এই পরিস্থিতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে পরিকল্পনা রচনা করতে চালিত করেছে বিশ্বকে দাসত্বের শৃংখলে বাঁধতে, ইউরোপ, এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে বন্যপশুর মতো ছুটাছুটি করতে, সকল দেশের জনগণ কর্তৃক বর্জিত আবর্জনাঃ প্রতিক্রিয়াশিল শক্তিগুলোকে জড়ো করতে–সোভিয়েত ইউনিয়নকে শীর্ষে রেখে সকল গণতান্ত্রিক শক্তির বিরূদ্ধে একটা সাম্রাজ্যবাদী ও গণতন্ত্রবিরোধী শিবির গঠণ করতে এবং একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া এই আশায় যে ভবিষ্যতে একটা উপয্ক্তু সময়ে কোন একদিন তারা গণতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে পরাজিত করতে একটা তৃতিয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে পারে। এটা একটা হাস্যকর পরিকল্পনা। বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিকে অবশ্যই এই পরিকল্পনাকে পরাজিত করতে হবে এবং নিশ্চিতভাবে তা তারা করতে পারেন। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী শিবিরের শক্তি সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের শক্তিকে অতিক্রম করেছে। শত্রু নয়, আমরাই উতকৃষ্ট অবস্থানে রয়েছি। সোভিয়েত ইউনিয়নকে শীর্ষে রেখে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধি শিবির ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন সংকট থেকে মুক্ত, উদীয়মান এবং বিশ্বের ব্যাপক জনগণ কর্তৃক উচ্ছাসিত; এর সামর্থ ইতিমধ্যেই সংকটে জর্জরিত অবনতিশীল বিশ্বের ব্যাপক জনগণ কর্তৃক বিরোধিতাপ্রাপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করেছে। ইউরোপের জনগণতন্ত্রগুলো আভ্যন্তরীণভাবে নিজেদের সুসংহত করছে এবং একে অপরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। ইউরোপিয় পুঁজিবাদী দেশগুলোতে জনগণের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তিগুলো বিকশিত হচ্ছে যাতে ফ্রান্স ও ইতালির শক্তিগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জনগণের শক্তিগুলো রয়েছে যা প্রতিদিন শক্তিশালিতর হচ্ছে। লাতিন আমেরিকার জনগন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বাধ্যগত দাস নয়। এশিয়ায় বিপুল সংখ্যক জাতিয় মুক্তি আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটেছে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধি সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ও এগিয়ে চলেছে। নয়টি ইউরোপিয় দেশের কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের তথ্য ব্যুরো গঠণ করেছে বিশ্বের জনগণের কাছে এই আহ্বাণ ইস্যু করেছে দাসত্বের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার বিরূদ্ধে উঠে দাঁড়ানোর জন্য [১০]। যুদ্ধের এই আহ্বাণ বিশ্বের নিপীড়িত জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের সংগ্রামের পথপ্রদর্শন করেছে এবং বিজয়ে তাদের আস্থাকে শক্তিশালি করেছে। এটা বিশ্বপ্রতিক্রিয়াকে ভয়ভীতি ও বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেছে। প্রাচ্যের সকল দেশের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধি শক্তিরও উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া, সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দেশীয় প্রতিক্রিয়াশিলদের নিপীড়ণকে বিরোধিতা করা এবং প্রাচ্যের ১০০ কোটি নিপীড়িত জনগণের মুক্তিকে তাদের সংগ্রামের লক্ষ্য করা। আমাদের ভাগ্যকে আমাদের নিজেদের হাতে নিশ্চিতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। আমাদের স্তরসমূহকে সকল অক্ষম চিন্তাধারা থেকে মুক্ত করতে হবে। শত্রুর শক্তিকে অতিরঞ্জিত করে আর জনগণের শক্তিকে খাঁটো করে দেখে এমন সকল মত হচ্ছে ভ্রান্ত। যদি প্রত্যেকে প্রচণ্ড প্রচেষ্টা চালায়, আমরা বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে একত্রিতভাবে নিশ্চিতভাবে দাসত্বের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনাকে পরাজিত করতে পারি, একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবকে রোধ করতে পারি, সকল প্রতিক্রিয়াশিল শাসকগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করতে পারি এবং মানবজাতির জন্য স্থায়ী শান্তি আনয়ন করতে পারি। আমরা ভালভাবে সচেতন যে আমাদের পথে এখনো সকল ধরণের বাঁধা-বিপত্তি থাকবে এবং দেশী-বিদেশী শত্রুর সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ও মরিয়া সংগ্রামকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ আমরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিজ্ঞানকে আঁকড়ে থাকবো, জনগণের ওপর আস্থা রাখবো, জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে একত্রিত থাকবো এবং তাদেরকে সামনে এগিয়ে নেবো, আমরা যেকোন বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হবো। আমাদের শক্তি হবে অপরাজেয়। এটা হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক যুগ যাতে বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ তাদের ধ্বংসের মুখে চলেছে এবং বিশ্ব সমাজতন্ত্র ও জনগণতন্ত্র বিজয়ের পথে চলেছে। সামনে ভোর, আমাদের অবশ্যই ওঠে দাঁড়াতে হবে।

নোট

[১] গণমুক্তি বাহিনী বিবিধ ফ্রন্টে ধারাবাহিকভাবে কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে আক্রমণাত্মকে গেছে এবং কুওমিনতাঙ এলাকায় যুদ্ধ চালিয়েছে দেখুন, “উত্তর পশ্চিমে আমাদের মহান বিজয় এবং মুক্তি বাহিনীতে নতুন ধরণের মতাদর্শিক শিক্ষা আন্দোলন।” (নোট ৪, এই খন্ডের পৃ ২১৫-১৬ [পৃ.১৫৭]

[২] হুনান প্রদেশের চেঙচৌ-এ কুওমিনতাঙ শান্তি সদর দফতরের পরিচালক লিউছি ১৯৪৬-এর নভেম্বরে অপসারিত হয় দক্ষিণ পশ্চিমে শানতুঙ প্রদেশের তিঙশাও যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে। কিয়াংসু প্রদেশের সুচৌ-এ কুওমিনতাঙ শান্তি সদর দফতরের পরিচালক সুয়েহ ইয়েহকে মার্চ ১৯৪৭-এ অপসারণ করা হলো তার কমান্ডের অধীনে কুওমিনতাঙ সৈন্যদলের একঝাঁক মারাত্মক পরাজয়ের কারণেঃ ডিসেম্বর, ১৯৪৬-এ কিয়াংসু প্রদেশের উত্তর সুচিয়েন এলাকায় অভিযানে; জানুয়ারি ১৯৪৭-এ দক্ষিণ সানতুঙ-এর অভিযানে; এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭-এ কেন্দ্রিয় সানতুঙ এর লাইউ অভিযানে। সুচৌ-এর কুওমিনতাঙ শান্তিু সদর দফতরের উপপরিচালক উ চি-ওয়েইকে মার্চ ১৯৪৭-এ অপসারণ করা হলো ডিসেম্বর ১৯৪৬-এ উত্তর সুচিয়েন এলাকায় অভিযানে তার পরাজয়ের কারণে। কুওমিনাতাঙের ১ম বাহিনীর কমান্ডার তাঙ এন-পোকে জুন ১৯৪৭-এ অপসারণ করা হলো কারণ মে-তে দক্ষিণ সানতুঙের মেঙলিয়াংকুর যুদ্ধে কুওমিনতাঙের পুনর্গঠিত ৯৪-তম ডিভিশনকে ধ্বংস করা হলো। কুওমিনতাঙের ৪র্থ বাহিনীর কমান্ডার ওয়াঙ চুঙ-লিয়েনকে আগস্ট ১৯৪৭-এ অপসারণ করা হলে জুলাইয়ে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শানতুঙ অভিযানে তার পরাজয়ের কারণে। উত্তর-পুর্বে কুওমিনতাঙের শান্তিরক্ষী দফতরের কমান্ডার তু ইউ-মিং এবং সিইউং সি-হুই, উত্তর পূর্বে কুওমিনতাঙ জেনারেল সদর দফতরের পরিচালক উভয়ে অপসারিত হল ১৯৪৭-এর জুনে গণমুক্তিবাহিনীর উত্তরপুর্বাঞ্চলে গ্রীস্মকালীন আক্রমণ অভিযানে মারাত্মকভাবে পরাজিত হওয়ার কারণে। কুওমিনতাঙের ১১-তম যুদ্ধ জোনের কমান্ডার সুন লিয়েন-চুঙকে পাওতিঙে হোপেই প্রদেশে শান্তি সদর দফতরে পরিচালক হিসেবে পদাবনতি ঘটানো হলো জুন ১৯৪৭-এ চিঙ-সান অভিযানে এবং পাওতিঙের উত্তরে সুশি এলাকার অভিযানে পরাজয়ের কারণে। চিয়াং কাই-শেকের চিফ অব স্টাফ চেন চেঙকে আগস্ট ১৯৪৭-এ উত্তর পূর্বাঞ্চলে গভর্নর জেনারেল হিসেবে পদাবনাতি ঘটানো হলো সানতুঙ প্রদেশে পরিচালিত অভিযানে তার ধারাবাহিক পরাজয়ের কারণে।[পৃ১৬৩]

[৩] নির্দেশাবলীর জন্য দেখুন, “তিন মাসের সারসংক্ষেপ”, এই খন্ডের নোট ৪, পৃ১১৮[পৃ১৬৪]

[৪] চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতিয় ভুমি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেপ্টেম্বর ১৯৪৭-এ হোপেই প্রদেশের পিঙশান কাউন্টির সিপাইপো গ্রামে। সেপ্টেম্বর ১৩-তে সম্মেলনে গৃহিত চীনের ভুমি আইন রূপরেখা প্রকাশিত হয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি কর্তৃক অক্টোবর ১০, ১৯৪৭-এ । এটা নিচের বক্তব্য প্রদান করেঃ

সামন্ত ও আধা-সামন্ত শোষনের ভুমি ব্যবস্থা বিলোপ কর এবং যে চাষ করে তার হাতে ভুমি কার্যকর কর। গ্রামের ভুস্বামীদের সকল ভুমি এবং সকল সাধারণ জমি (পাবলিক ভুমি) অন্য সকল ভুমি সহকারে স্থানীয় কৃষক সংস্থা কর্তৃক দখলকৃত হবে এবং সমগ্র গ্রামিন জনগণের মধ্যে সুষমভাবে বন্টিত হবে লিঙ্গ অথবা বয়স নির্বিশেষে। গ্রামের বর্তমান সংস্থা সামন্ত ভূস্বামীর সকল গবাদিপশু, চাষাবাদের যন্ত্রপাতি, ঘরবাড়ি, শস্য এবং অপরাপর সম্পত্তি দখল করবে,ধনী কৃষকদের এমন সম্পত্তির উদ্বৃত্ত অধিগ্রহণ করবে এবং এসকল সম্পত্তি বন্টন করবে কৃষকদের মধ্যে ও অন্য দরিদ্র জনগণের মধ্যে যাদের এটা প্রয়োজন এবং ভুস্বামীদের জন্য সমান ভাগ প্রদান করবে।

এভাবে ভুমি আইন রূপরেখা “১৯৪৬-এর ৪ঠা মে’র নির্দেশনা”য় ব্যক্ত “ভুস্বামীর জমি দখল করে কৃষকদের মধ্যে বন্টন”-এর নীতিকেই শুধু নিশ্চিত করেনা বরং সেই নির্দেশনার গভীরতার অভাবকেও পুরণ করে যা কিছূ ভুস্বামীর জন্য অতিরিক্ত বিবেচনা দেখিয়েছিল। [পৃ১৬৪]

ফলতঃ চীনের ভুমি আইন রূপরেখায় ভুমির সমবন্টনের যে পদ্ধতি ছিল প্রয়োগে তার কিছূ পরিবর্তন হলো। ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮-এ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি তার “ভুমিসংস্কার কাজ এবং পুরোনো ও আধা-পুরোনো এলাকায় পার্টি সংহতকরণের নির্দেশনা”য় মূর্ত করলো যে পুরোনো ও আধা পুরোনো  মুক্ত এলাকাগুলিতে যেখানে সামন্তব্যবস্থাকে ইতিমধ্যেই উচ্ছেদ করা হয়েছে, ভুমির আর কোন সমবন্টন হবেনা বরং গরীব কৃষক ও খামার মজুর যারা এখনো সামন্তীয় জোয়ালে থেকে মুক্ত হয়নি, পরিস্থিতি দাবী করলে তাদেরকে কিছু পরিমাণ ভুমি ও উতপাদনের অন্য উপকরণ দেওয়া হবে পুনসমন্বয়সাধন করার মাধ্যমে, যাদের উদ্বৃত্ত আছে তাদের থেকে নিয়ে যাদের অভাব আছে তাদের দেওয়া এবং যাদের ভাল আছে তাদের থেকে নিয়ে যাদের খারাপ আছে তাদের দেওয়ার পদ্ধতি দ্বারা যেখানে গড় গরীব কৃষকের চেয়ে মাঝারি কৃষক বেশি জমি রাখার অনুমোদন পাবে। যেসব এলাকায় সামন্ত ব্যবস্থা এখনো অস্তিত্বশীল, সমবন্টন আবদ্ধ ছিল প্রধানভাবে ভুস্বামীর ভুমি ও সম্পত্তি এবং পুরোনো ধরণের ধনী কৃষকদের ভুমি ও সম্পত্তিতে। সকল এলাকায় পুনসমন্বয়ের জন্য, প্রকৃতপক্ষে কেবল প্রয়োজন হলেই এবং মালিকরা মত দিলে মাঝারি কৃষক ও নতুন ধরণের ধনীকৃষকদের উদ্বৃত্ত জমি নেওয়া অনুমোদনীয়। নয়া মুক্ত এলাকাসমূহে ভুমিসংস্কারে মাঝারি কৃষকদের থেকে জমি নেওয়া হবেনা।

[৬] চীনের ভুমি সংস্কারে ধনী কৃষকদের প্রশ্ন তার বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত একটা অদ্ভূত বিষয় ছিল। চীনের ধনী কৃষকরা পুঁজিবাদী দেশসমূহের ধনী কৃষকদের চেয়ে ভিন্ন ছিল দুই দিক থেকেঃ প্রথম,  সাধারণভাবে এবং বিরাট মাত্রায় তাদের সামন্তীয় ও আধা-সামন্তীয় শোষক চরিত্র ছিল এবং দ্বিতীয়ত, এই ধনীকৃষক অর্থনীতি দেশের কৃষি অর্থনীতিতে কোন গুরুত্বপুর্ণ স্থান দখল করেনি। চীনের ভুস্বামী শ্রেণীর সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যাপক গরীব কৃষক জনগণ ও খামার মজুরেরা ধনী কৃষকদের সামন্তীয় ও আধা-সামন্তীয় শোষণের বিলোপেরও দাবী জানিয়ে আসছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ধনী কৃষকদের উদ্বৃত্ত ভুমি ও সম্পত্তি কৃষকদের মধ্যে বন্টনের জন্য অধিগ্রহণ করার কর্মনীতি গ্রহন  করে আর এভাবে ব্যাপক গরীব কৃষক জনগণ ও খামার মজুরদের দাবী মেটায় আর গণমুক্তিযুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করে। যুদ্ধ বিজয়ের পথে অগ্রসর হলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮-তে নয়া মুক্ত এলাকাসমূহে নয়া কর্মনীতি গ্রহণ করে। এই সংস্কার দুই ভাগে বিভক্ত ছিলঃ প্রথম স্তরে, ধনী কৃষকদের নিরপেক্ষ করা এবং ভুস্বামীদের ওপর, মুখ্যত বৃহত ভুস্বামীদের ওপর আক্রমণ কেন্দ্রিভূত করা; দ্বিতীয় স্তরে ভুস্বামীদের ভুমি বন্টন করার সময় ধনীকৃষকদের কর্তৃক ভাড়া নেওয়া ভুমি ও তাদের উদ্বৃত্ত ভুমি বন্টন করা কিন্তু ধনীকৃষকদেরকে ভুস্বামীদের থেকে ভিন্ন ভাবে বোঝাপড়া করা অব্যাহত রাখা। (দেখুনঃ “নয়া মুক্ত এলাকাসমূহে ভুমিসংস্কারের জরুরী পয়েন্টসমুহ”, পৃ২০১-০২, এই খন্ডে)। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রিয় গণ সরকার ১৯৫০-এর জুনে ভুমি সংস্কার আইন প্রচার করে যা বলে যে ভুমি সংস্কারে ধনীকৃষকদের কেবল ভাড়া নেওয়া জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের বাকী ভুমি ও সম্পত্তি রক্ষা করা হবে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরবর্তী স্তরে কৃষি সমবায় আন্দোলন গভীরতর হলে গ্রামীন অর্থনীতি বিকশিত হলো এবং ধনীকৃষক অর্থনীতি বিলুপ্ত হলো [পৃ১৬৫]।

[৭] তাই বলতে গেলে, ধনী কৃষক গৃহস্থালী গড়ে গরীব কৃষক গৃহস্থালীর চেয়ে বেশি ও ভাল ভুমির মালিক ছিল। সারাদেশকে সমগ্রভাবে ধরলে, চীনের ধনীকৃষকদের মালিকানাধীন উতপাদন উপকরণ এবং তাদের খামার উতপাদের আকার উভয়ই ছিল ক্ষুদ্র। চীনের গ্রামীন অর্থনীতিতে ধনীকৃষক অর্থনীতি কোন গুরুত্বপুর্ণ স্থান দখল করে ছিলনা।

[৮] এটা নির্দেশ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে ১৯৪২-৪৩ সালে সমগ্র পার্টিব্যাপী পরিচালিত কাজের স্টাইল শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের প্রতি। এর সারবস্তু ছিল আত্মমুখীনতা, সংকীর্নতা এবং একঘেয়ে রচনার বিরুদ্ধে লড়াই। কমরেড মাও সেতুঙের নেতৃত্বাধীনে এই শুদ্ধি আন্দোলন “অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পুনরাবৃত্তিকে এড়ানোর এবং রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানোর” নীতি গ্রহণ করে এবং “কমরেডদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভুল চিন্তা দুর করা”।

সমালোচনা-আত্মসমালোচানর পদ্ধতির মাধ্যমে, আন্দোলন “বাম” ও দক্ষিণ বিচ্যুতি সংশোধন করে যা পার্টির ইতিহাসের বিবিধ ক্ষণে ঘটেছে, তার মতাদর্শিক শেকড়ে পৌঁছে পার্টির ব্যাপক স্তরের ক্যাডারদের মতাদর্শিক স্তরকে বিরাটভাবে উন্নীত করে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে পার্টির অভ্যন্তরে চিন্তার ঐক্য সাধনে প্রচণ্ডভাবে সাহায্য করে এবং এভাবে সমগ্র পার্টিতে উচ্চ মাত্রার ঐক্য বয়ে আনে।

[৯] মুক্তির গনযুদ্ধের প্রথম স্তরে দেশীয় কিছু ব্যক্তি কল্পনা করে যে তারা একটা তৃতিয় পথ বের করতে পারবে কুওমিনতাঙের বৃহত ভুস্বামী ও বৃহত বুর্জোয়াদের একনায়কত্ব এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন জনগণের গনতান্ত্রিক একনায়কত্বের বাইরে। এই তৃতিয় পথ ছিল বস্তুত বৃটিশ ও মার্কিন ধরণের বুর্জোয়াদের একনায়কত্বের পথ। [পৃ১৭০]

[১০] কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহের তথ্য ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পোল্যান্ডের ওয়ারশতে সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, পোল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, চেকোস্লাভিয়া, ইতালি ও যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট ও ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহের প্রতিনিধিসমুহের দ্বারা। পরে জুন ১৯৪৮-এ রুমানিয়ায় এক সভায় ব্যুরো যুগোস্লাভ কমিউনিস্ট পার্টির বহিস্কার ঘোষণা করে কারণ সে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বিরোধি অবস্থায় ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক শিবির-বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। তথ্য ব্যুরো বিশ্বের সকল জনগণকে সাম্রাজ্যবাদের দাসত্বের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বাণ জানায়, যা এখানে কমরেড মাও সেতুঙ উল্লেখ করেছেন তথ্য ব্যুরোর ১৯৪৭-এর সেপ্টেম্বর সভায় গৃহীত “আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর ঘোষণা”। [পৃ১৭৩]

মাও সেতুঙ

দ্বন্দ্ববাদের উদাহারণ

(বিমূর্ত সংকলন)

১৯৫৯

. বিশ্লেষণ বোঝা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ বোঝা

বিশ্লেষণ বোঝা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ বোঝা। লেলিন বলেন, দ্বন্দ্ববাদকে বিপরীতের একত্বের মতবাদ হিসেবে সার সংকলিত করা য়ায়।এটা যখন সত্য, দ্বন্দ্ববাদের সারকে তড়িত আঁকড়ে ধরা যেতে পারে। কিন্তু এই মতবাদকে ব্যাখ্যা ও বিকশিত করা প্রয়োজন। বিপরীতের একত্ব হচ্ছে শর্তসাপেক্ষ, অস্থায়ী, উতক্রমনমূলক,আপেক্ষিক ও পারস্পরিক বিপরীতধর্মী। অপরদিকে,বিপরীতের সংগ্রাম হচ্ছে পরম, যেমন বিকাশ ও গতিও হচ্ছে পরম। তাই mao2সাম্যব্যবস্থা হচ্ছে অস্থায়ী এবং তা ভেঙ্গে যেতে পারে, আর আমাদের কর্তব্য হচ্ছে প্রতিদিন অধিক দ্রততার সাথে সাম্যাবস্থা  অর্জন করা। এটা কোন ব্যক্তির সামর্থ যতটুকু আছে সে অনুসারে সে হাঙ্গেরীয় ও পোলীয় ঘটনার উদ্ভব ঠেকাতে পেরেছে কিনা তার উপর নির্ভর করেনা, বরং ঘটনার উদ্ভবের পর সমস্যাকে সমাধানের উপায় ও পথ তার রয়েছে কিনা তার ওপর।

. সবকিছুতে দুই পদ্ধতির তুলনাকে উপস্থিত করার জন্য দ্বন্দ্ববাদ

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্য ও চীনের নির্দিষ্ট অনুশীলনের একত্ব হছে বস্তুবাদ। উভয়ে হচ্ছে বিপরীতের একত্ব, যা হচ্ছে দ্বান্দ্বিকতা। কুটতর্কে জিদ ধরা কেন? সরলভাবে  দ্বান্দিকতার আলোচনাকে এড়িয়ে যেতে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজ করার নিজস্ব ধরণ রয়েছে। সোভিয়েত অভিজ্ঞতা হচ্ছে একদিক, চীনের অভিজ্ঞতাও হচ্ছে আরেক দিক। এটা হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত তার অভিজ্ঞতার ভালগুলোকে বের করে আনা এবং তা অনুসরণ করা আর খারাপ দিকগুলোকে বের করে তা বর্জন করা। সোভিয়েত অভিজ্ঞতাকে বিচ্ছিন্ন করা আর চীনা অভিজ্ঞতার সাথে তা একীভূত না করা হচ্ছে ভাল অভিজ্ঞতাসমূহকে বের করে না আনা আর তা অনুসরণ না করা। কেউ যদি একটা পত্রিকা বের করে আর প্রাভদার মতো মতামত রাখে, যা বিশ্লেষণাত্মক নয়, সে হবে একটা তিন বছরের শিশুর মতো, যার সর্বদিকে সমর্থন দরকার যে অনুপাতে সে স্বাধীন চিন্তা হারিয়েছে। সবকিছুতে, তুলনার জন্য দুই পদ্ধতি তুলে ধরা দরকার। এটা হচ্ছে দ্বান্দ্বিকতা। অন্যথায় তা হবে অধিবিদ্যা।

. দ্বন্দ্ববাদ হচ্ছে প্রধান প্রবণতা পার্শ্ব ইস্যুসমূহকে, সার বহিরঙ্গের অধ্যয়ণের জন্য

দ্বন্দ্ববাদ হচ্ছে প্রধান প্রবণতা ও পার্শ্ব ইস্যুসমূহকে, সার ও বহিরঙ্গের অধ্যয়ণের জন্য। দ্বন্দ্বে প্রধান দ্বন্দ্ব ও গৌণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। অতীতে, অতি-সতর্ক অগ্রযাত্রার মতো ভুলসমূহ উত্থিত হয়েছিল কারণ আমরা প্রধান দ্বন্দ্ব ও সারকে আঁকড়ে ধরিনি এবং গৌণদ্বন্দ্বকে প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং পার্শ্ব ইস্যুকে প্রধান প্রবণতা হিসেবে গ্রহণ করেছি এবং সারকে আঁকড়ে ধরিনি। রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল ও কেন্দ্রিয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরো সভা অনুষ্ঠিত করেছে এবং বহু বিচ্ছিন্ন সমস্যার সমাধান করেছে, কিন্তু তারা জরুরী প্রশ্নসমূহকে আঁকড়ে ধরেনি। এই সভায় আমরা অতীতের বহু প্রশ্নকে শলাপরামর্শ ও সমাধানের জন্য এনেছি।

. কোন প্রশ্নকে পরীক্ষা করতে সার প্রধান প্রবণতাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন

মার্কসবাদ বলে যে কোন প্রশ্নকে পরীক্ষা করতে সার, প্রধান প্রবণতা এবং লাইনকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটা দেখার জন্য যে দেশে সে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ করে কিনা, আন্তর্জাতিকভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিনা এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিকতাবাদের জন্য লড়াই করে কিনা। এই তিন উপাদান একটা লাইন গঠণ করে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে, আমরাও একটা পার্টি যা সাম্রাজ্যবাদকে বিরোধিতা করে এবং সমাজতন্ত্র ও আন্তর্জাতিকতাবাদের জন্য কাজ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্য সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহও তাই। এই দিকসমূহ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী লাইনের সারকে তুলে ধরে। তারা দৃঢ় কিনা তা দেখার জন্য আমরা একটা তুলনা করতে পারি। টিটোর কথা ধরুন। সে কি দৃঢ়? আমার কাছে মনে হয় সে যা করে তার মধ্যে তিন দিকের সবকটির অভাব রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার কোন অংশ সে চায়না। সে সর্বদাই বলছে যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ কত ভাল আর সোভিয়েত ইউনিয়ন কত খারাপ।

. বিপরীতের একতা এবং পারস্পরিক রূপান্তর

সকল প্রদেশ, পৌরসভা এবং স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের উচিত প্রতি দুইমাসে একবার সভা ডাকা তাদের কাজের পর্যালোচনা ও সারসংকলন করতে। তাদের উচিত কতিপয় লোকের অথবা এক ডজন অথবা এরকম লোকের ছোটখাট সভা ডাকা। সমন্বয় ও সহযোগিতার দিক থেকেও তারা প্রতি দুই অথবা তিন মাসে একটা সভা ডাকতে পারেন। একটা আন্দোলনে বহু পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং তথ্য আদান প্রদান সর্বাংশে প্রয়োজন। সভাগুলো হচ্ছে উতপাদনের ছন্দে সুরারোপ করার উদ্দেশ্যে। কাজ ও উতপাদনের ছন্দ থাকতে হবে। একটা ঢেউ চুড়ায় উঠলে আরেকটা আসে। এটা হচ্ছে উচ্চ গতি ও নিম্ন গতির বিপরীতের একত্ব। সার্বিকভাবে এগিয়ে চলা, উচ্চ লক্ষ্যসহকারে অধিকতর, দ্রুততর, অধিকতর ভাল এবং অধিক অর্থনৈতিক ফলাফল অর্জনের সাধারণ লাইনের অধীনে তরঙ্গাকারে অগ্রগমণ হচ্ছে উচ্চ গতি ও নিম্নগতির বিপরীতের একত্ব এবং শ্রম ও বিশ্রামের মধ্যেকার বিপরীতের একত্ব। যদি কেবল উচ্চ গতি এবং শ্রম থাকে তা হবে একতরফা। যদি কেবল শ্রম থাকে এবং কোন বিশ্রাম না থাকে, কেমন করে তা হবে। কোন কিছু করার সময় উচ্চ গতির একটা পর্যায়কাল এবং নিম্নগতির একটা পর্যায়কাল থাকতে হবে। অতীতে কোন যুদ্ধ করার সময় সুসংহতকরণ, পুনসংঘটন এবং দুই অভিযানের মধ্যে বিশ্রামের পর্যায়কাল থাকতে  হতো। এক অভিযানের পর আরেক অভিযান চালানো অসম্ভব হতো। একটা যুদ্ধ করার মধ্যে গতির লয়ও থাকতে হবে। কেন্দ্রিয় সোভিয়েত এলাকা শতকার ১০০ ভাগ বলশেভিকীকৃত। “এটা সংহতকরণে আপত্তি করে আর দৃঢ়তা, নির্ভীকতা, কঠোরতা, সাহসিকতা, বিজয়ে এগিয়ে চলায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া এবং নান-চ্যাঙ[১]-এর উপর প্রত্যক্ষ আঘাত হানার কথা বলে”। কীভাবে তা সম্ভব? কঠিণ যুদ্ধ এবং বিশ্রাম ও সুসংহতকরণ হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। এটা হচ্ছে নিয়ম। এগুলো পারস্পরিক রূপান্তরযোগ্যও। এমন কোন কিছু নেই যা পারস্পরিক রূপান্তরযোগ্য নয়। উচ্চগতি নিম্নগতিতে রূপান্তরিত হয় এবং নিম্নগতি উচ্চগতিতে। শ্রম বিশ্রামে পরিণত হয় এবং বিশ্রাম শ্রমে পরিণত হয়। বিশ্রাম, সুসংহতকরণ এবং কঠিণ যুদ্ধও একইরকম। শ্রম ও বিশ্রাম এবং উচ্চগতি ও নিম্নগতিরও একত্ব রয়েছে। বিশ্রাম, সুসংহতকরণ এবং কঠিণ যুদ্ধেরও একত্ব রয়েছে। ঘুম থেকে উঠা এবং ঘুমাতে যাওয়াও বিপরীতের একত্ব। একটা প্রাচীন প্রবাদ আছেঃ “যে দীর্ঘসময় ধরে ঘুমিয়েছে, সে জাগার কথা ভাবে।” ঘুম জাগরণে রূপান্তরিত হয় এবং জাগরণ ঘুমে। সভার সূচনা সভার সমাপণীতে রূপান্তরিত হয়! একবার একটা সভা সূচিত হলে, শীঘ্রই তা সভার সমাপণীর উপাদানকে আলিঙ্গন করে। ঠিক এটাই ওয়াঙ সি-ফেঙ[২] অর্থ করেছেন যখন তিনি বলেনঃ “যদিও এক হাজার লির জন্য সামিয়ানা টানানো হয়েছিল, কখনোই কোন স্থায়ী ভোজসভা ছিলনা।” লিন তাই-ইউ মর্মাহত হলেন যখন কোন ভোজ সভা শেষ হল আর অতিথিরা অন্তনির্হিত হলো। এটা ছিল অধিবিদ্যা। এটা ছিল এই বস্তুগত নিয়মের সম্পর্কে অজ্ঞতা যে যখন কোন সমাবেশ ঘটবে, একটা বিচ্ছিন্নকরণও অবশ্যই থাকতে হবে। ওয়াঙ শি-ফ্যাঙ লিনের পক্ষাবলম্বন করার চেষ্টা করেননি, বরং তিনি বলেন “যদিও এক হাজার লির জন্য সামিয়ানা টানানো হয়েছিল, কখনোই কোন স্থায়ী ভোজসভা ছিলনা।” তাই, সেটা ছিল দ্বান্দ্বিকতা। এটাই হচ্ছে সত্য। এটা মানুষের দ্বারা সিদ্ধান্তুকৃত নয়। সেটা সত্য কি নয় তার দ্বারা তা নির্ধারিত হতে হবে। একটা সভা শেষ হলে সমস্যা জমা হয় এবং আরেকটা সভার সূচনায় রূপান্তরিত হয়। কিছু সময়ের জন্য ঐক্য প্রয়োগ হবার পর মতের ভিন্নতা দেখা দেবে এবং তা সংগ্রামে রূপান্তরিত হবে। যখন পার্থক্যসমূহ উদ্ভূত হয়, নতুন অনৈক্য সূচিত হয়। প্রতিদিন অথবা প্রতিবছর ঐক্য থাকা সম্ভব নয়। যখন ঐক্যের কথা বলা হয়, তখন অবশ্যই অনৈক্য থাকবে। অনৈক্য হচ্ছে শর্তহীন। কখনো কখনো ঐক্যের কথা বলা হয় অথচ কোন ঐক্যই থাকেনা। তাই, ঐক্য অর্জনের জন্য কিছু করা প্রয়োজন হয়। সবসময় ঐক্যের কথা বলা এবং কখনোই সংগ্রামের কথা না বলা মার্কসবাদ নয়। ঐক্য অর্জিত হবার আগে ঐক্যকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পার্টি, শ্রেণী অথবা জনগণের সারির মধ্যে একই ব্যাপার। ঐক্য সংগ্রামে রূপান্তরিত হয় এবং পুনরায় ঐক্যে। সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের কথা না বলে কেবল ঐক্যের কথা বলা সঠিক নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন নেতৃত্ব ও যাদের নেতৃত্ব প্রদান করা হচ্ছে তার মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা বলেনা। দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম ছাড়া কোন পৃথিবী থাকবেনা, কোন বিকাশ থাকবেনা, কোন জীবন থাকবেনা, কোন কিছু থাকবেনা। সকল সময় ঐক্যের কথা বলা একটা বদ্ধ জলাশয়ের মতো হতে পারে। এটা নিরানন্দময়। আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যের পুরোনো ভিত্তিকে ভেঙে ফেলতে হবে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে imagesহবে এবং একটা নতুন ভিত্তিতে ঐক্য অর্জন করতে হবে। কোনটা ভাল, বদ্ধ জলাশয় না স্রেতস্বিনী ইয়াংসীর সীমাহীন প্রবাহ? পার্টি হচ্ছে এরকম, জনগণ এবং শ্রেণীও তাই। ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য। তখন করার মত কাজ থাকবে। উতপাদন ভোগে রূপান্তরিত হয় এবং ভোগ উতপাদনে। উতপাদন হচ্ছে ভোগের জন্য। উতপাদকরা স্রেফ অন্য শ্রমিকদের জন্য নয়, বরং তারা  নিজেরাও ভোক্তা। মাকর্স বলেছেন যে উতপাদন ভোগের জন্ম দেয়। উতপাদন ও ভোগ এবং গঠন ও ধ্বংস হচ্ছে বিপরীতের একত্ব এবং পরস্পর রূপান্তর যোগ্য। সারাদেশের উতপাদন হচ্ছে ভোগ এবং কয়েক দশকের জন্য যন্ত্রপাতির নবায়ন ও সংস্থাপনের জন্য। বীজবপন ফসল সংগ্রহে পরিনত হয় এবং ফসল সংগ্রহ বীজবপনে। বীজবপন হচ্ছে বীজ ব্যবহারের জন্য। বীজবপন করার পর তারা চারায় বেড়ে ওঠবে। যদি কোন বীজবপন করা না হয় কোন চারা হবে না। ফসল তোলার পর নতুন বীজ বপন করা হয়। জীবন আর মৃত্যুও পরস্পরিক রূপান্তরযোগ্য। জীবন মৃতুতে রূপান্তরিত হয় আর জীবনহীন জিনিস জীবন্ত বস্তুতে পরিনত হয়। আমি মনে করি যে সব লোকেরা ৫০ বছর বয়সে মারা গেছেন তাদের জন্য উতসব করা দরকার। এটা এজন্য যে মানুষ অনিবার্যভাবে মারা যাবে। এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম। শস্য হচ্ছে বাতসরিক উদ্ভিদ। প্রতি বছর তারা একবার জন্ম নেয় আর একবার মারা যায। অধিকন্তু, যতবেশি তারা মারা যায়, তত বেশি তারা জন্ম নেয়। যদি শুকরদের জবাই করা না হয়,তারা কমতে থাকবে আর কমতে থাকবে। কে তাদের খাওয়াবে? সেভিয়েত ইউনিয়নের দর্শনের সংক্ষিপ্ত কোষ আমার সাথে ভিন্নমত পোষন করে। তারা মনে করে যে জীবন ও মৃত্যুর রূপান্তর হচ্ছে আধিবিদ্যক এবং যুদ্ধ ও শান্তির রূপান্তর হচ্ছে ভুল। সর্বোপরি, কে সঠিক? দয়া করে প্রশ্ন করুন, যদি জীবন্ত জিনিসসমূহ জীবনহীন বস্তুতে রূপান্তরিত না হয় তারা কোথা থেকে আসবে? পৃথিবী অজৈব ও জৈব পদার্থে গঠিত। সকল জীবন্ত কাঠামো নাইট্রোজেন, হ্ইাড্রোজেন এবং অন্য ১০ উপাদান থেকে রূপান্তরিত হয়। জীবন্ত বস্তুসমূহ ব্যতিক্রমহীনভাবে জীবনহীন জিনিস থেকে রূপান্তরিত হয়। পুত্রেরা পিতায় রূপান্তরিত হয় আর পিতারা পুত্রে। নারীরা পুরুষে রূপান্তরিত হয় আর পুরুষেরা নারীতে। প্রত্যক্ষ রূপান্তর সম্ভব নয়। কিন্তু বিয়ের পর যখন পুত্র ও কন্যারা জন্ম নেয়, তা কি রূপান্তর নয়? নিপীড়িত ও নিপীড়কের পারস্পরিক রূপান্তর একদিকে সামন্তপ্রভু ও পুঁজিপতিদের আর অন্যদিকে শ্রমিক ও কৃষকদের সম্পর্কের দিকে দিক নির্দেশ করে। অবশ্যই, নিপীড়ক বলতে আমরা শাসক শ্রেণীকে বোঝাই জনগণকে নয়। আমরা শ্রেণী একনায়কত্বের কথা বলছি, স্বতন্ত্র নিপীড়কদের কথা নয়। যুদ্ধ শান্তিতে রূপান্তরিত হয় আর শান্তি যুদ্ধে। শান্তি হচ্ছে যুদ্ধের বিপরীত। যখন কোন যুদ্ধ থাকেনা, তখন শান্তি থাকে। যখন ৩৮ সমান্তরালে শত্রুতা দেখা দেয়, তা হচ্ছে যুদ্ধ। একবার যুদ্ধ বন্ধ হলে আবারো শান্তি আসে। সামরিক ব্যাপারসমুহ হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের রাজনীতি। যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির সম্প্রসারণ। রাজনীতিও এক ধরনের যুদ্ধ। যে কোন হারে, পরিমাণ গুণে রূপান্তরিত হয় এবং গুণ পরিমাণে। ইউরোপে গোঁড়ামীবাদ তীব্র। যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, রূপান্তর পরমভাবে প্রয়োজন। একইভাবে, আমরা যদি ভাল না করি, আমরাও রূপান্তরিত হবো। যদি সেসময় আমাদের শিল্প পৃথিবীতে প্রথম হয়, আমাদের অহংকারী এবং চিন্তায় স্থবির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অসীম সসীমে রূপান্তরিত হয় এবং সসীম অসীমে। প্রাচীন দ্বান্দ্বিকতা মধ্যযুগীয় অধিবিদ্যায় রূপান্তরিত হয় এবং মধ্যযুগীয় অধিবিদ্যা আধুনিক দ্বান্দ্বিকতায় রূপান্তরিত হয়। বিশ্ব রূপান্তরযোগ্য। সমাজও তাই। পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয় এবং তারপর সাম্যবাদে। সাম্যবাদও নিজেকে রূপান্তর করবে। এরও শুরু ও শেষ আছে। নিশ্চিতভাবে, এটাও স্তরে স্তরে বিভক্ত হবে। সম্ভবত, এর অন্য নাম দেয়া হবে। এটা স্থির হবেনা। যদি কেবল পরিমাণগত পরিবর্তন থাকে এবং কোন গুণগত পরিবর্তন না থাকে তা দ্বান্দ্বিকতার বিরুদ্ধে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোন কিছু নেই যা জন্ম, বিকাশ ও বিলয়ের মধ্য দিয়ে যায়না। শিম্পাঞ্জি মানুষে পরিবর্তিত হল এবং মানুষ জন্ম নিল। মানবজাতির চুড়ান্ত ফল সমগ্রভাবে হচেছ বিলয়। মানুষ সম্ভবত অন্য কিছু জিনিসে পরিবর্তিত হবে। তখন পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবেনা। সূর্য শীতল হয়ে যাবে। এমনকি এখনও সূর্যের তাপ বিবেচনাযোগ্যভাবে শীতল হয়েছে প্রাচীন কালের তুলনায়। বরফ যুগে প্রতি ১২ মিলিয়ন বছরে প্রতিটি পরিবর্তন সংঘটিত হতো। যখন বরফ এলো, বিপুল সংখ্যায় জীবন্ত জিনিস মৃত্যুবরণ করলো। দক্ষিণ মেরুতে কয়লা জমাট বেঁধে আছে। তাই, এটা দেখা যায় যে প্রাচীনকালে এটা খুবই গরম ছিল। ইয়েন-চ্যাঙ কাউন্টিতে জীবাশ্ম খনন করে বের করা হয়েছে তাতে সুঙ রাজবংশের সময়কালের বাঁশের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাচীনকালে, ইয়েন-চ্যাঙে বাঁশ জন্মাতো। এখন সেখানে তা জন্মায়না।

ব্যতিক্রমহীনভাবে, প্রতিটি জিনিসের শুরু ও শেষ আছে। কেবল দুইটি জিনিস অসীমঃ স্থান ও কাল। অসীম সসীম নিয়ে গঠিত। সকল ধরণের জিনিস ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয় ও পরিবর্তিত হয়।

এসকল বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে আমাদের চিন্তা করার জন্য এবং আমাদের চিন্তাধারাকে উতসাহিত করতে। কারুর মস্তিষ্ককে অসংগঠিত রাখা বিপজ্জনক। নেতৃত্বস্থানীয় কেডারগণ এবং কেন্দ্রিয়, প্রাদেশিক, আঞ্চলিক ও কাউন্টি স্তরের কেডারগণ সবাই খুব গুরুত্বপুর্ণ। সকল ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত, কয়েক লক্ষ কেডার রয়েছে। তাদেরকে অধিক চিন্তা করতে হবে। তাদের কেবল সবসময় ধ্র“পদী রচনা অধ্যয়ণ করা উচিত নয়, বরং তাদের মস্তিষ্ককে গতিশীল করা দরকার যাতে তাদের চিন্তাকে প্রাণবন্ত রাখা যায়।

. সঠিক লাইন গড়ে ওঠে বেঠিক লাইনের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়

তারপরও ভুল করা হবে। ভুল না করা অসম্ভব। ভুল করা হচ্ছে একটি সঠিক লাইন গড়ে তোলার অপরিহার্য পূর্বশর্ত। একটি সঠিক লাইনের কথা বলা হয় একটি বেঠিক লাইনের প্রেক্ষিতে। এই দুটি হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। একটি সঠিক লাইন গড়ে ওঠে বেঠিক লাইনের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়। ভুল করা এড়ানো যায় আর নিঃখুত সঠিকতা ভুলের ঊর্ধ্বে-একথা বলা হচ্ছে একটা দৃষ্টিভঙ্গী যা মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে লঙ্ঘন করে। প্রশ্ন হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম ভুল করা অথবা ক্ষুদ্রতর ভুল করা। নিঃখুত ও খুত হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। দুই-পয়েন্ট তত্ত্ব হচ্ছে সঠিক আর এক পয়েন্ট তত্ত্ব হচ্ছে বেঠিক। ঐতিহাসিকভাবে, ভুলমুক্ত নিঃখুত সঠিকতার মতো কোন ঘটনা নেই। এটা স্রেফ বিপরীতের একত্বকে অস্বীকার করতে। এই দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে আধিবিদ্যক। যদি কেবল পুরুষ থাকতো, নারী না থাকতো, অথবা অস্বীকার করা হতো নারীর [অস্তিত্ব] আমরা কী করতাম? ন্যুনতম ভুল করতে সচেষ্ট হওয়া সম্ভব। স্বল্পতর ভুল করা যায় এবং করা উচিত। মার্কস ও লেনিন এটা করতে সক্ষম ছিলেন।

 

. সকল জিনিস ব্যতিক্রমহীনভাবে বিপরীতে ধাবিত হয়

সকল জিনিস ব্যতিক্রমহীনভাবে বিপরীতে ধাবিত হয়। গ্রীসের দ্বন্দ্ববাদ, মধ্যযুগের অধিবিদ্যা এবং রেঁনেসাঁ। এটা ছিল একটা নেতিকরণের নেতিকরণ। চীনও এরকম ছিল। যুদ্ধরত রাজ্যসমূহের সময়কালের মতবাদের শত স্কুলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল দ্বন্দ্ববাদ এবং সামন্ত যুগের ধ্র“পদী শিক্ষা ছিল অধিবিদ্যা। এখন আমরা দ্বন্দ্ববাদের ব্যাপারে কথা বলায় প্রত্যাবর্তন করেছি, তাই নয় কি? কমরেড ফ্যান ওয়েন-লেন, আপনি এর সাথে ভালভাবে পরিচিত। আমি একে যেভাবে দেখি তা হচ্ছে ১৫ বছর পর আমাদের লেজ নিশ্চিতভাবে ফুলে আকাশে উঠবে। অবশ্যই, যেহেতু জিনিসগুলো তাদের বিপরীত দিকে ধাবিত হবে, আমি ঐকান্তিক প্রচেষ্টা না চালিয়ে পারিনা। এমনকি যদি ভবিষ্যতে বৃহত জাত্যাভিমান উদ্ভূত হয়, এটাও বিপরীতে ধাবিত হবে। বৃহত জাতি দাম্ভিকতাকে প্রতিস্থাপনে যদি কোন সঠিক জিনিস থাকে, ভয়ের কি আছে? সকল সমাজতান্ত্রিক দেশের জাতিদম্ভী হওয়া সম্ভব নয়। লেনিনের দ্বন্দ্ববাদ, স্তালিনের অধিবিদ্যা এবং বর্তমান দিনের দ্বন্দ্ববাদ, এসবও একটা নেতিকরণের নেতিকরণ।

. টেনশন রয়েছে আর শৈথিল্য সুসংহতকরণও রয়েছে

টেনশন রয়েছে আবার শৈথিল্য ও সুসংহতরণও আছে। অব্যাহত টেনশন থাকলে কাজ হবেনা। টেনশন এবং শৈথিল্য থাকতে হবে। অতিরিক্ত কাজ ভাল নয়। অতি জোর প্রদানে কাজ হবেনা। হোপে ও হুনান প্রদেশে লাল ও দক্ষ স্কুল প্রচুর পরিমাণে সংগঠিত করা হচ্ছে। এটা খুব ভাল। কিন্তু সবকিছু খুবই তীব্র। জনগণ ক্লাশে তন্দ্রাচ্ছন্ন। শিক্ষকেরাও তাই, কিন্তু তারা ঝিঁমুতে সাহস করেননা। আমাদেরকে উভয়তঃ দ্রতগতি ও শ্লথগতি হতে হবে। যদি শৈথিল্য ছাড়া কেবল টেনশন থাকতো, এমনকি [সম্রাটগণ] ওয়েন ও উ [চৌ রাজবংশের] দীর্ঘকাল চালাতে পারতোনা। যদি টেনশন ছাড়া কেবল শৈথিল্য  থাকতো, তাহলেও ওয়েন ও উ  দীর্ঘকাল চালাতে পারতোনা। ওয়েন ও উ উভয় সম্রাটই ছিল সাধু! তাসত্ত্বেও তারা তা করতে পারতোনা। টেনশন রয়েছে আবার শৈথিল্যও রয়েছে। ঐক্য রয়েছে, আবার সংগ্রামও রয়েছে। কেবল ঐক্য থাকলে এবং কোন সংগ্রাম না থাকলে চলবেনা। আমাদের অবশ্যই সন্দেহকারী থমাসদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যারা পতনের পর হিসেব চুকানো কথা বলে, কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐক্যের জন্য কাজ করা। আহ কিউ যা গভীরভাবে অনুভব করে যে তাকে বিপ্লব করার অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাকে অব্যাহতভাবে সমালোচনা করা আর সংস্কারে সহযোগিতা না করা ভাল নয়। প্রথমত, সংগ্রাম, দ্বিতীয়ত সহযোগিতা। আমাদেরকে হৃদয়বাণ হতে হবে। হৃদয়বাণ না হওয়া খারাপ অথবা খারাপ আকাঙ্খা থাকা যা আপনার পতনের আর আমার জয়ের বেশি কিছু ডেকে আনবেনা। অনেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি অথবা অতি অল্প স্বতন্ত্র ব্যক্তি কোনটা ভাল? কিছু বেশি লোক থাকা ভাল। আমাদেরকে অবশ্যই সকল ইতিবাচক উপাদানকে আনতে হবে কাজে লাগানেরা জন্য।

. বিপরীতের রূপান্তর

চীনের একটা সুবিধা রযেছে। সে দরিদ্র এবং ফাঁকা (সাদা)। এরও একটা দ্বৈত চরিত্র রয়েছে। দরিদ্র বলতে বোঝায় যে বিপ্লব প্রয়োজন। কেবল সীমিত জ্ঞান থাকাটা ভাল নয়। বরং এটা সাদা এক পাতা কাগজের সাথে তুলনীয়। একদিকে লেখা রয়েছে। খুব বেশি লেখার বাকী নেই। অন্য পৃষ্ঠায় লেখা নেই। তা খালি। অনেক কিছু লেখার আছে। কারণ অল্প কয়েক দশক পর আমরা অপরাপর দেশগুলোকে ধরে ফেলবো।

১০. মৃত্যু এবং জীবনসংগ্রামের প্রশ্ন

মৃত্যু এবং জীবনসংগ্রামের প্রশ্ন। মৃত্যু ও জীবনসংগ্রামের ১০,০০০ বতসর কেটে গেছে। মৃত্যুকে কি ঠেকানো উচিত অথবা নয়? কোন মুত্যু না থাকলে তা কাজে দেবেনা। কেবল মৃত্যু থাকলেও তা কাজে দেবেনা। ইস্পাত কোটায় যেমন মৃত্যু চাবিকাঠি বিন্দুটির নিশ্চয়তা দেয়, যেখানে জীবন চাবিকাঠি বিন্দুর বাইরে থাকে আর একে প্রতিরোধ করেনা। ফ্রি পাবলিক কেয়ার উভয়ত মৃত এবং জীবিতদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে আর প্রত্যেকের যতন নেয়। মৃত্যু ও জীবনের দুটি দিক হচ্ছে কেন্দ্রিকরণ ও বিকেন্দ্রিকরণ, যা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং উভয়ই যার রযেছে। সুনির্দিষ্টভাবে, পাবলিক কেয়ারের ব্যবস্থা হচ্ছে মৃত্যু ও জীবনের দ্বন্দ্বের একত্ব। এটাই হচ্ছে আরোপ করার ক্ষমতা ধারণ এবং এর কিছুর বিকেন্দ্রিকরণের নীতি।

১১.সত্য মিথ্যা হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক, নিঃখুত খুঁতের সাথে সংগ্রাম থেকে আসে

সত্য আর মিথ্যা হচ্ছে দ্বন্দ্বমূলক। খুঁতের সাথে সংগ্রাম থেকে নিঃখুত আসে। সৌন্দর্য আর কদর্যতা দ্বন্দ্বমূলক। যদি কোন ভাল মানুষ না থাকে, কোন খারাপ মানুষ থাকবেনা। যদি কোন খারাপ মানুষ না থাকে, কোন ভাল মানুষ থাকবেনা। যদি কোন খুব ভাল মানুষ না থাকে, কোন খুব খারাপ মানুষ থাকবেনা। সুগন্ধী ফল আর বিষাক্ত আগাছা। আমরা বিষাক্ত আগাছাকে ভয় পাইনা। যখন তারা অতি জন্মাবে, সবাই আসবে এবং সেগুলোকে উতপাটিত করবে। সত্যেরা মিথ্যার সাথে সংগ্রাম থেকে গড়ে ওঠে। এই সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় ভাল মানুষ সংখ্যায় বাড়ে আর খারাপ মানুষ কমে। বিষাক্ত আগাছা কি? আমি বুলগানিনের কাছে প্রশ্নটা তুলে ধরেছিলাম। ১০০ বছরেরও বেশি আগে টমেটোরা ইউরোপে বিষাক্ত আগাছা ছিল। আমি আরো বলেছিলাম যে যীশু খ্রীস্ট, গ্যালিলিও, কপারনিকাস,মার্টিন লুথার, সান ইয়াত-সেনের মতো বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বগণ এবং কমিউনিস্ট পার্টি জনগণ কর্তৃক বিষাক্ত আগাছা বিবেচিত হতো। এই শ্রেণী কোন কিছুকে বিষাক্ত আগাছা মনে করলে ঐ শ্রেণী আশ্বস্ত হয় যে তা সুগন্ধী ফুল। উদাহারণস্বরূপ, জন ফস্টার ডুলেস আমেরিকার বুর্জোয়াদের কাছে ছিল সুগন্ধী ফুল, কিন্তু সমগ্র বিশ্বের জনগণ তাকে বিষাক্ত আগাছা হিসেবে নিয়েছেন। চিয়াং কাই-শেক কী? একটা সময়ের জন্য সে ছিল সুগন্ধী। মহান বিপ্লবের সময় ছিল সে ছিল সুগন্ধী। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় জনগণ চিয়াং কাই-শেক জিন্দাবাদ শ্লোগান দিত। জেনারেল চিয়াং আমার একজন পুরোনো বন্ধু। এসবই বিপরীতের একত্ব, বিপরীতের সংগ্রাম। যখন কোন তুলনা করা যায়, তখনই কোন পার্থক্য অঙ্কন করা যায় এবং বিকাশ সংঘটিত করা যায়। যখন কোন তুলনা থাকেনা, কীভাবে তা বিকশিত ও সৃষ্টি করা সম্ভব? মার্কসবাদ-লেনিনবাদ বুর্জোয়াদের সাথে সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়।

১২. বিপরীত প্রতিষ্ঠা করো

দুই ধরণের প্রতিষ্ঠিত বিপরীত রয়েছে। এক ধরণ মূলগতভাবে সমাজে অস্তিত্বশীল। উদাহারণস্বরূপ, দক্ষিণপন্থীরা। আমরা তাদেরকে হারতে দেব কিনা তা হচ্ছে একটা কর্মনীতির প্রশ্ন। আমরা যখন একটা আন্তরিক মত প্রচার সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদেরকে বিপরীত হিসেবে সেবা করতে দিলাম, মেহনতী মানুষকে সমাবেশিত করলাম তাদের সাথে বিতর্ক করতে, তাদের বিরোধিতা করতে এবং তাদের পরাজিত করতে। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের মধ্যে বহু দক্ষিণপন্থী ছিল। ৩,০০,০০০ দক্ষিণপন্থীর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রায় অর্ধেক।  ৩,০০,০০০ দক্ষিনপন্থীর মধ্যে বিপরীত অস্তিত্বশীল ছিল। আমরা তাদেরকে হারতে দিলাম জনগণকে শিক্ষিত করতে এবং তাদেরকে বিশ্লেষণ করতে জনগণকে সক্ষম করে তুললাম। অপর ধরনের প্রতিষ্ঠিত বিপরীত প্রকৃতিতে রিরাজ করেনা, কিন্তু তা বস্তুগত শর্তকে ধারণ করে। উদাহারণস্বরূপ, একটা বাঁধ নির্মাণের পর, আমরা কৃত্রিম পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারি বিপরীতকে প্রতিষ্ঠা করতে যাতে শক্তি উতপাদন করতে অথবা নৌকা চালাতে পানির স্তরকে বাড়ানো অথবা কমানো যায়। একটা কারখানা চালানোও হচ্ছে এক কৃত্রিমভাবে প্রতিষ্ঠিত বিপরীত।  আন-শান ইস্পাত কারখানাটি জাপানীদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। চ্যাঙ-চুন মটরযান নির্মাণ প্লান্ট ছিল নতুন। এটা জনগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এক বিপরীত। যা প্রকৃতিতে নেই, তাকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যায়, কিন্তু এর বস্তুগত ভিত্তি সেখানে থাকতে হবে। মহাশুণ্যে উপগ্রহ উতক্ষেপণ করা হয় কৃত্রিমভাবে। তাদেরকে মহাশুণ্যে পাঠানো যায় একবার যখন তাদের পরিচালক নিয়মসমূহ আবিষ্কৃত হয়। আমরা বস্তুবাদী এবং অপসারণের ভয়ে ভীত নই, কারণ অপসারণ হচ্ছে একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আমার মনে হয় ভ্যাচেস্লাভ এম মলোটভের অপসারণে সোভিয়েত ইউনিয়নের সুবিধা হয়েছিল, চেন তু-সিউ, লো চাঙ-লুঙ, চাঙ কুও-তাও এবং কাও কাঙের অপসারণবাদী ততপরতা আমাদের সুবিধা এনে দিয়েছিল, এবং ওয়াঙ মিঙ লাইন কয়েকবার এবং “বাম” বিচ্যুতিবাদী লাইন তিনবার গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের শিক্ষিত করেছে। এই বিপরীতসমূহের সকলের সুবিধা রয়েছে। অবশ্যই, মলোটভ, কাও কাঙ অথবা চেন তু-সিউকে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই আবহাওয়া থাকবে তারা উদ্ভূত হবে। যদিও ভয়ের কিছু নেই। আমাদের অবশ্যই এদেরকে অতিক্রম করতে হবে। তথাকথিত আশাবাদ হচ্ছে আমাদের প্রধান দিক। আমাদের উদ্বেগও রয়েছে। যখন এই দক্ষিণপন্থীরা উদ্ভূত হল কেউ কি উদ্বিগ্ন হননি? আমি কিছুটা উদ্বিুগ্ন ছিলাম। আমার কাছে প্রয়োজন ছিল নেতৃত্বের শৈল্পিকতা 0373-001Mসম্পর্কে বলা যাতে একটা খারাপ বস্তুকে ভাল বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায়। যদি পূর্বতন কারো দূরদৃষ্টি থাকতো তিনি এর সংঘটনকে প্রতিরোধ করতে পারতেন অথবা এটা সংঘটিত হওয়ার পর একে একটা ভাল জিনিসে রূপান্তরিত করতে পারতেন। আমরা ভয় পাবনা যদি আমাদের ১ কোটি ২০ লাখ পার্টি সদস্যের মধ্যে ২০,০০০ অথবা ৩০,০০০ জনের সচেতনতা এবং দূরদৃষ্টি থাকে। তাই, ভয়ের কি আছে! ভীত হলে চলবেনা! একটা বিশ্বযুদ্ধ যাতে না লড়তে হয় তার জন্য আমাদের চেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু আমাদের যদি লড়তে হয়,আমরা ভীত হবোনা। সাধারণ কর্মনীতি হচ্ছেঃ “অতীত থেকে সতর্কীকরণ গ্রহণ করা ভবিষ্যতে আরো সতর্ক হতে; রোগীকে বাঁচাতে রোগ সারানো।” যারা ভুল করেছেন তাদেরকে আমাদের অবশ্যই ভুল সংশোধনের অনুমতি দিতে হবে। আজকে আমরা খুবই ঐক্যবদ্ধ। সবকিছু শান্ত। কেন্দ্র ও অঞ্চলে সবকিছুই ভাল। এখন আমরা  অতিসতর্ক অগ্রগমণ সমস্যাকে সমাধান করেছি এবং নতুন ভিত্তিতে নতুন ঐক্য অর্জন করেছি।

১৩. বিপরীত প্রতিষ্ঠা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

জনগণের উদ্যোগ বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল। বিপরীত প্রতিষ্ঠা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি দক্ষিণপন্থীদের হারতে অথবা কথা বলতে অনুমোদন দেই সেটা পরিকল্পনা অনুসারে। আমরা এটা করি বিপরীত প্রতিষ্ঠা করতে। শুদ্ধি অভিযানের পর, কিছু কমরেড শুদ্ধিকরণ ও পুনর্গঠনকে এড়িয়ে গেলেন এবং বড় হরফ দেয়ালপত্র ও ২-বিরোধী আন্দোলন [অপচয় ও রক্ষণশীলতাবাদের বিরুদ্ধে]-এর উপর জোর দিলেন বিপরীতসমূহকে প্রতিষ্ঠা করতে। তথাকথিত বিপরীতসমূহকে প্রতিষ্ঠা করা যায় যদি তারা সেই জিনিস হয় যা বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল হয়। যেসব জিনিস বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল নয়, তাদেরকে বিপরীত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়না।

১৪.বিপরীতের মতামত শুনুন

বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদকে সম্মান করা হচ্ছে বিতর্ককে উতসাহিত করা। আমাদের অবশ্যই বিপরীতসমূহের মতামত শুনতে হবে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে হবে এবং বিপরীতসমূহকে উন্মোচন করতে হবে।

১৫. দ্বন্দ্ববাদের প্রশ্নসমূহকে অধ্যয়ণ করুন

আমি জানিনা কোন কমরেড চেঙ চৌ সম্মেলনে “বড় যৌথ ও ছোট স্বাধীনতা” প্রশ্নটি এনেছেন। যাই হোক, এটা খুব ভাল। এটা যদি হতো “বড় স্বাধীনতা এবং ছোট যৌথ”, জন ফস্টার ডুলেস, হুয়াঙ ইয়েন-পেই এবং জুঙ ই-জেন একে স্বাগত জানাতো। আমাদেরকে উতপাদন এবং জীবিকাকেও আঁকড়ে ধরতে হবে। এটা হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। দুই পায়ে হাঁটাও বিপরীতের একত্ব। এসবই দ্বন্দ্ববাদের রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত। বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদ সংক্রান্ত কার্ল মার্কসের তত্ত্ব আমাদের দেশে ১৯৫৮ সালে বিরাট উন্নতি সাধন করেছে। উদাহারণস্বরূপ, ভারী শিল্পের বিকাশে অগ্রাধিকার দেয়ার শর্তে আমরা শিল্প ও কৃষির, ভারী শিল্প ও হালকা শিল্পের, জাতীয় শিল্প ও আঞ্চলিক শিল্পের, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের সংস্থাসমূহের, ক্ষুদ্র আদি গ্রুপ ও বড় আধুনিক গ্রুপ এবং আদিম ও আধুনিক পদ্ধতির যুগপত বিকাশ ঘটিয়েছি। এখন প্রশাসনের ব্যবস্থা রয়েছে-কেন্দ্রিয়, ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব এবং আঞ্চলিক স্তর-থেকে-স্তর প্রশাসন। কেন্দ্রিয় সরকার থেকে শুরু করে নীচের দিকে প্রদেশ, অঞ্চল, কাউন্টি এবং কমিউন থেকে উতপাদন টিম পর্যন্ত সবজায়গায় কর্তৃত্ব অবশ্যই বন্টন করে দিতে হবে। তাদের কোন কর্তৃত্ব না দেয়া উপকার বয়ে আনবেনা। এই কতিপয় ধারণা আমাদের পার্টিতে ইতিকৃত হয়েছে এবং এটা খুব ভাল। ক্ষুদ্র আদি গ্রুপ এবং বৃহত আধুনিক গ্রুপও যুগপত বিকশিত করা হচ্ছে। এখনও মাঝারি আধুনিক গ্রুপ রয়েছে। তাঙ-শান এবং লিয়েন-ইয়ুন-কাঙ উদাহারণস্বরূপ কি মাঝারি আকারের নয়? ক্ষুদ্র আধুনিক গ্রুপ কি আছে? হ্যাঁ, আছে। পাশাপাশি, আধুনিক-আদি একীকৃত গ্রুপসমূহ আছে। এক কথায়, এটা খুবই জটিল। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের কিছু দেশে এগুলো অবৈধ ও অননুমতিযোগ্য। আমরা তাদের অনুমতি দেই। আমাদের মতো হতদরিদ্র দেশগুলিতে কিছু ক্ষুদে আদি গ্রুপকে সংগঠিত করা খুবই ভাল!  বৃহত আধুনিক গ্রুপসমূহ সংগঠিতকরণে মনোযোগ কেন্দ্রিভূতকরণ খুবই একঘেয়েও হবে। কৃষিতেও, এটা খুবই জাটিল। উচ্চ উতপাদন এবং নিম্ন উতপাদন রয়েছে। উচ্চ ও নিম্ন উতপাদন যুগপত অস্তিত্বশীল। “তিন তৃতীয়র ব্যবস্থা”র কর্মনীতি চাষাবাদে এখন যে বিপুলভাবে প্রযুক্ত হচ্ছে তা ছিল জনগণের একটা সৃষ্টি। পেই-তাই-হো সম্মেলন কর্তৃক এটা আঁকড়ে ধরা হয়েছিল যা নির্ধারিত করেছিল এক তৃতিয়াংশ জমিতে খাদ্যশস্য উতপাদন, এক তৃতিয়াংশ জমি অনাবাদী রাখা এবং এক তৃতিয়াংশ জমিতে গাছপালা জন্মানো। এটা সম্ভব যে তা কৃষি বিকাশের প্রবণতায় পরিনত হবে। পেই-তাই-হো সম্মেলন আরো নিয়ে এল “কৃষির জন্য আট পয়েন্ট সনদ”-সেচ, সার, জমির উন্নতি, বীজ, ঘনিষ্ঠ চারারোপন, শস্যরক্ষা, খামার যন্ত্রপাতির সংস্কার এবং মাঠ ব্যবস্থাপনা। সেচ মানে পানি দেওয়া। মানুষ পানি ছাড়া বাঁচেনা। একইভাবে, চারাগাছও পানি ছাড়া বাঁচেনা।

সামাজিক ব্যবস্থার দিক থেকে, সমাজতান্ত্রিক স্তরে দুই ধরনের মালিকানা রয়েছে যারা পাশাপাশি অস্তিত্বশীল এবং বিপরীতের একত্ব। যৌথ মালিকানা সমগ্র জনগণের কমিউনিস্ট মালিকানার উপাদানকে ধারণ করে। ইউ-চিন সম্প্রতি বলেন যে এই মত রাখায় চীন সঠিক যে যৌথ মালিকানা কমিউনিস্ট উপাদানকে ধারণ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ মালিকানা এবং সমগ্র জনগণের মালিকানাও কমিউনিস্ট উপাদানসমূহকে ধারণ করে। পুঁজিবাদী সমাজ সমাজতান্ত্রিক যৌথ’র উতপাদন পদ্ধতি সংগঠিতকরণে অনুমোদন দেয়না, বরং কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্বের অধীনে সমাজতান্ত্রিক সংস্থাসমূহে কমিউনিস্ট উপাদানসমূহের বৃদ্ধির অনুমোদন দিতে হবে। তিন ধরণের মালিকানা যথা, যৌথ মালিকানা, সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানা এবং সমগ্র জনগণের কমিউনিস্ট মালিকানাকে পরম বলায় এবং তাদের নির্দিষ্টভাবে পৃথক ব্যাখ্যা দেয়ায় স্তালিন ছিলেন ভুল। উপরের জিনিসগুলো কি দ্বন্দ্ববাদের বিকাশ গঠণ করে অথবা নয়?

চেংচৌ সম্মেলন “বড় যৌথ ও ছোট স্বাধীনতা” এবং “উতপাদন আঁকড়ে ধরো এবং জীবিকা আঁকড়ে ধরো” শ্লোগান তুলে ধরে। এটা হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদের সম্প্রসারণ। উ-চ্যাঙ সম্মেলন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের সাথে উদ্যমের সম্মিলনের প্রশ্নটি তুলে ধরেছে। একটা পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে, যা গরম ও ঠাণ্ডা উভয়ই ছুঁড়ে দিতে পারে, শুধু বিরাট প্রতিজ্ঞা ও উদ্যম থাকলেই চলবেনা, বরং বিবেচনাযোগ্য বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থাকতে হবে। অবশ্যই, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মনে হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য এই সিদ্ধান্তের প্রচার দেরিতে করা ভাল। এখনকার জন্য আমরা কেবল একটা ইশতেহার প্রচার করবো। আগামী বছর, মার্চে, জাতীয় গণ কংগ্রেস সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে প্রচার করবে। এভাবে তা সমগ্রভাবে আমাদের প্রতিজ্ঞা ও উদ্যমের সাথে সংগতিপূর্ন হবে। এটা ১৯৫৮ সালের মহান অগ্রগামী উলম্ফনের ফল হিসেবে আত্মস্থকৃত কিছু অবাস্তব প্রবনতাকে এড়িয়ে যাবে। এটা অধিকতর কর্তৃত্বমুলক এবং অধিকতর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনমূলক হবে। এক সময় আমি আগামী বছর ৩ কোটি টন ইস্পাত উতপাদনের পক্ষে ছিলাম। উ-চ্যাঙে আসার পর আমি মনে করলাম এটা মোটের উপর তেমন চমতকার ধারনা নয়। তার পূর্ব পর্যন্ত আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম কেবল এ প্রশ্নে যে একটা প্রয়োজন ছিল এবং তা সম্ভব ছিল কিনা তা বিবেচনা করিনি। পরে, সম্ভাবনার প্রশ্নটি হিসেবে নিলাম। এবছর ১ কোটি ৭ লক্ষ টন উতপাদন ইতিমধ্যে আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে রয়েছে। পরবর্তী বছর ৩ কোটি টন, তারপরের বছর ৬ কোটি টন এবং ১২ কোটি টন  ১৯৬২- তে একটা ভ্রান্ত সম্ভাবনা এবং বাস্তব সম্ভাবনা নয়। এখন স্থিরকৃত উতপাদন কোটার কিছু কাঁটছাঁট আমাদের কারা প্রয়োজন এবং একে ততটা উচ্চ স্থির করা উচিত না। আমাদের কিছু ভর্তুকি দেওয়া উচিত এবং জনগণের অনুশীলণকে আমাদের পরিকল্পনাকে অতিক্রম করতে দেওয়া উচিত।এটাও দ্বান্দিকতার একটা প্রশ্ন। আমাদের নেতৃস্থানীয় কেডারদের প্রচেষ্টাও জনগনের অনুশীলনের অন্তর্ভূক্ত। আমরা যদি কোটা একটু নীচে নামাই এবং অনুশীলন যদি তাকে বাড়ায়, তা সুবিধাবাদ নয়। মুিক্তর পর ইস্পাত উতপাদন বারংবার দ্বিগুন থেকে দ্বিগুন হয়েছে। এই পৃথিবীতে, প্রাচীন কাল থেকে কখনো তা ঘটেনি।একে কিভাবে সুবিধাবাদ বলা যায়? এখানে একটা আর্ন্তজাতিক যোগাযোগ রয়েছে। সেভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক শিবির সারা দুনিয়ার শ্রমিক শ্রেনির আর্ন্তজাতিক সংহতির সাথে যুক্ত। এ প্রশ্নে, আমরা অবশ্যই লাইনে প্রথম হতে চেষ্টা করবোনা। আজকাল, কিছু দেশ শ্রেষ্টত্বের জন্য সংগ্রামরত। বস্তুত, আমরা যদি কমিউনজিমে সর্বাগ্রে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে প্রবেশ করি, সেটা হবে আন-শান ইস্পাত কারখানা, ফু-শান, লিওআওনিং প্রদেশ, সাংহাই অথবা তিয়েনসিন। মনে হয় সর্বাগ্রে কমউিনিজমে প্রবেশ করা চীনের জন্য লজ্জাজনক হবে। তাছাড়া, সম্ভাবনা আছে কি নেই সেটাও একটা প্রশ্ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ, কয়েক মিলিয়ন উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন বুদ্ধিজীবি এবং ৫ লক্ষ প্রকৌশলী রয়েছে, এইসব মার্কিন যুক্তরাষ্টের চেয়ে বেশি। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিমধ্যেই ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টন ইস্পাত রয়েছে, যেখানে আমাদের এখনও এই যতসামানা রযেছে কেবল। তাদের সঞ্চয় বেড়েই চলেছে যেখানে আমরা সবে শুরু করেছি। সে কারণে সম্ভাবনাও একটা প্রশ্ন।ক্রুশ্চেভ এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন যে সেভিয়েত ইউনিয়ন এখন থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কমিউনিজমে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দুই ধরনের মালিকানা ক্রমান্বয়ে একীভূত হবে।এটা খুবই ভাল জিনিস।এমন কি আমাদের পক্ষে যদি সর্বাগ্রে  কমিউনিজমে প্রবেশ সম্ভব হয় আমাদের তা করা উচিত হবে না। অক্টোবর বিপ্লব ছিল লেনিনের উদ্যোগ। আমরা সবাই কি লেনিন থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না? তাড়াহুড়ার চিন্তাটা কী? এটা কার্ল মাকর্সের কাছে গিয়ে পুরস্কার চাওয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। যদি তাই হয়, সম্ভবত আমরা আর্ন্তজাতিক প্রশ্নে একটা ভুল করবো। এটাও একটা সমস্যা। আমাদের উচিত পারস্পরিক উপকারের ব্যাপারে কথা বলা। দ্বদ্বতত্ত্ব সঙ্গতিপুর্ন ভাবে বিকশিত হয়েছে এবং এটা আশুভাবে এসমস্যার সাথে জড়িত।

১৬. আমাদের কমরেডদের সাথে ব্যবহারে আমাদের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি গ্রহন করা উচিত

আমাদের কমরেডদের সাথে ব্যবহারে, তারা যেই হোননা কেন, যতক্ষন পর্যন্ত তারা শত্রুভাবাপন্ন অথবা অন্তর্ঘাতক উপাদান নন, আামাদের আধিবিদ্যক পদ্ধতির বদলে ঐক্যর মনোভাবের দ্বান্দিক পদ্বতি গ্রহন করা উচিত। দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি বলতে কি বোঝায়? এর অর্থ হচ্ছে আমাদের অবশ্যই সবকিছুকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে যে মানুষ ব্যতিক্রমভাবে ভুল করে এবং ভুল করার কারণে তার সবকিছুকে নেতিকরণ করা যাবেনা। লেনিন একদা বলেছিলেন যে পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে ভুল করেনি। আমি অনেক ভুল করেছি।এইসব ভুল আমার জন্য উপকারী হয়েছে এবং আমাকে শিক্ষিত করেছে। যে কোন ব্যক্তির অন্যদের সমর্থন দরকার। “একজন ভাল কর্মীর তিনজন সাহায্যকারী দরকার, একটা বাঁশের বেড়াঁরও তিনটা খুঁটি দরকার।“ এটা হচ্ছে একটা চীনা প্রবাদ। আরেকটা  চীনা প্রবাদ বলে “যদিও আপনার জলপদ্ম ভাল ও সুন্দর, তথাপি তার দাড়িয়ে থাকার জন্য সবুজ পাতার দরকার।”আপনি ক্রুশ্চেভ, যদিও আপনার জলপদ্ম ভাল ও সুন্দর, তথাপি তাকে দাঁড়ানোর জন্য সমর্থন দরকার। আমার জলপদ্ম খুব ভাল নয়, এর সমর্থনের সবুজ পাতার প্রয়োজন ততোধিক। চীনে আমাদের আরেকটি প্রবাদ আছে যা এরকমঃ “তিন মুচি তাদের বুদ্ধিসহযোগে চু-কো লিয়াঙ-এর সমান হতে পারে, যে হচ্ছে মূল” [৩] আমরা যৌথ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করছি। একা চু-কো লিয়াঙ পুর্ন নয় এবং সর্বদাই সীমাবদ্ধতা থাকবে। কেউ নিজেকে সবজান্তা এবং ইশ্বরের মত সর্বশক্তিমান বললে তা আমার কাছে দুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি মনে হয়। তাই ভুল করেছেন যেসব কমরেড তাদের প্রতি আমরা কী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করবো? আমাদেরকে বিশ্লেণাত্মক হতে হবে এবং আধিবদ্যিক পদ্ধতি নয়, দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের পার্টি পূর্বে অধিবিদ্যা-গোড়ামীবাদ -এ ডুবে গেছিল সেইসব লোকদের ধ্বংস করে যাদেরকে সে পছন্দ করেনি। সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আমরা গোড়ামীবাদকে সমালোচনা করি এবং দ্বান্দ্বিকতা শিখি একটু একটু করে। দ্বান্দ্বিকতার মৌলিক দৃষ্টিকোণ হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। এই দৃষ্টিকোণকে স্বীকৃতি দেয়ার পর আমরা সেসব কমরেডকে নিয়ে কী করবো যারা ভুল করেছে? প্রথমত সমগ্রভাবে সমালোচনা করতে আমরা সংগ্রাম চালবো এবং তার ভ্রান্ত মতাদর্শকে পূর্ণাঙ্গভাবে অপসারণ করব। দ্বিতীয়ত, আমরা তাকে সাহায্য করবো। এক, সংগ্রাম করা দুই সহযোগিতা করা। এ থেকে শুরু করে, আমরা তাকে সাহায্য করবো তার ভুল সংশোধনে যাতে সে একটা সমাধান খুঁজে পায়।

আরেক ধরনের লোকেদের সাথে ব্যাবহারে তা হবে ভিন্ন। টিটো এবং চীনের নিজস্ব চেন-তু-সিউ। তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব গ্রহণ করার কোন উপায় নেই, তারা সংশোধনরে বাইরে। হিটলার, চিয়াং কাই-শেক এবং জারের মতো লোকেররা অসংশোধনীয় এবং তাদেরকে উতখাত করা ব্যতিত অন্যকোন কিছু করার নেই। কারণ, যতদুর আমরা বুঝি তারা দ্বৈত চরিত্রের নয়, বরং একটি পরম প্রকৃতির। চুড়ান্ত বিশ্লেষণে, সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সম্পর্কেও একইরকম। শেষে নিশ্চিতভাবে তারা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বারা অপসারিত হবে। মতাদর্শের ক্ষেত্রেও একই। আমরা ভাববাদকে বস্তুবাদ দ্বারা এবং আস্তিক্যবাদকে নাস্তিক্যবাদ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবো। এটা রণনৈতিক বক্তব্য। কৌশলগত ভাবে তা হবে ভিন্ন। আপোষ করার প্রয়োজন হবে। কোরিযাতে, ৩৮ সমান্তরালে, আমরা কি আমেরিকানদের সাথে আপোষ করিনি? ভিয়েতনামে ফরাসীদের সাথে কি [আমরা] আপোষ করিনি? প্রতিটি কৌশলগত স্তরে সংগ্রাম চালাতে এবং একই সাথে আপোষ করতে দক্ষ হতে হবে। এখন আসুন আমরা কমরেডদের মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নে ফিরে যাই। আমি পরামর্শ দেই যে যেখানে কমরেডদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, তাদের উচিত আলাপ আলোচনা শুরু করা। কিছু লোক মনে হয় এটা বিশ্বাস করেন যে একবার তারা সাম্যবাদে প্রবেশ করলে কোন মতানৈক্য ও সীমাবদ্ধতা ব্যতীত তারা সাধুতে পরিণত হবেন। যখন কেউ বিশ্লেষণ করতে পারেননা তখন তিনি যেন  একটা লৌহ থালার মতো যা সুষমভাবে তৈরি, যেখানে কোন Maoআলাপ আলোচনার প্রয়োজন নেই। এটা এরকম যে একবার আমরা সাম্যবাদে পৌঁছলে আমাদের শতকরা ১০০ ভাগ মার্কসবাদী না হলে চলবেনা। বাস্তবে, বিভিন্ন প্রকরণের মার্কসবাদী রয়েছে। শতকরা ১০০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৯০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৭০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৬০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে, ৫০ ভাগ মার্কসবাদী রয়েছে। কিছু লোক কেবল ১০ ভাগ অথবা ২০ ভাগ মার্কসবাদী। একটা ছোট চক্রের মধ্যে ধরুন, দুই অথবা কতিপয় ব্যক্তির ভেতর আমরা আলাপ আলোচনা করতে পারি অথবা পারিনা? আমরা কি ঐক্য থেকে যাত্রা করে ও সহানুভূতির চেতনা থেকে আলাপ আলোচনা করতে পারি কিনা? এগুলো অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে দরকষাকষি নয় বরং কমিউনিস্ট জনগণের সারির মধ্যে দরকষাকষি। এই সময়, আমরা এবং অন্য ১২ দেশ দরকষাকষি করছি কিনা? আন্তর্জাতিকভাবে, ৬০-এর অধিক দেশ দরকষাকষি করছে কিনা? বস্তুত তারা দরকষাকষি করছে। তাই বলা যায়, মার্কসবাদ-লেনিনবাদে অহংকারী না হওয়ার নীতির অধীনে আমাদের অন্যদের কিছু গ্রহণযোগ্য মতামত গ্রহণ করা উচিত এবং আমাদের কিছু বর্জনযোগ্য মতামতকে বর্জন করা উচিত। এভাবে আমাদের দুই হাত থাকবে। একহাতে আমরা সেই কমরেডদের সাথে সংগ্রাম চালাবো যারা ভুল করেছে এবং অন্যহাতে আমরা তার সাথে ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলবো। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মতবাদের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়ার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম। এটা হচ্ছে একহাত। অন্যহাতটি হচ্ছে ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলার। ঐক্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে একটা সমাধানের পথ করে দেওয়া এবং তার সাথে আপোষ করা। একে বলা হয় নমনীয়তা। নীতি ও নমনীয়তার একীকরণ হচেছ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের এক মতবাদ। এটাই হচ্ছে বিপরীতের একত্ব।

যে বিশ্বই হোকনা কেন, নির্দিষ্টত একটা শ্রেণীসমাজ, অবশ্যই সর্বদাই তা দ্বন্দ্বে পুর্ণ। কিছু লোক বলেন যে একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে দ্বন্দ্ব “খুঁজে পাওয়া” সম্ভব। আমার কাছে এমন বিবৃতি ভুল। যখন বিশ্ব সেগুলোতে (দ্বন্দ্বে) পরিপুর্ণ, কেউ দ্বন্দ্ব “খুঁজে পাওয়া” বলতে পারেননা। বলতে পারেননা যে কোথাও দ্বন্দ্ব বিরাজ করেনা, কোন ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করা যায়না। যদি কোন ব্যক্তিকে অবিশ্লেষণযোগ্য হিসেবে মনে করা হয় তা হচ্ছে অধিবিদ্যা। একটা পারমাণবিক বোমার ভেতরে তাকান। এটা দ্বন্দ্বে পরিপুর্ণ এবং দ্বন্দ্বের একত্বে পুর্ণ। পারমাণবিক নিউক্লিয়াস এবং ইলেক্টণসমূহ-এই দুই বিপরীতের একত্ব রয়েছে। নিউক্লিয়াসের ভেতরে নিউট্রন ও প্রোটনের বিপরীতের একত্ব রয়েছে। প্রোটনের ভেতরে রয়েছে প্রোটন ও এ্যান্টি-প্রোটন এবং একটা নিউট্রনের ভেতরে রয়েছে নিউট্রন ও এ্যান্টি-নিউট্রন। সংক্ষেপে, বিপরীতের একত্বসমূহ হচ্ছে সীমাহীন। বিপরীতের একত্বের এবং দ্বন্দ্ববাদের দৃষ্টিকোণে ব্যাপারে আমাদেরকে প্রচুর প্রচার চালাতে হবে। আমাদের দ্বন্দ্ববাদকে দার্শনিকদের চক্র পরিত্যাগ করতে হবে এবং ব্যাপক জনগণের মধ্যে যেতে হবে। আমি পরামর্শ দেই, আমরা যেন এই সমস্যাকে রাজনৈতিক ব্যুরোর সভায় আলোচনা করি এবং প্রতিটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির পুর্ণাঙ্গ অধিবেসনে এবং স্থানীয় পার্টিকমিটিসমূহের বিভিন্ন স্তরে আলোচিত হোক। বস্তুত, আমাদের শাখা সম্পাদক দ্বন্দ্ববাদ বোঝেন। যখন তিনি শাখা কংগ্রেসের প্রতি তার রিপোর্ট প্রস্তুত করেন, তিনি তার ছোট নোটবুকে প্রায়শই দুই পয়েন্ট লিখে রাখেন। প্রথমটি হচ্ছে ভাল দিকসমূহ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে খারাপ দিকসমূহ-যা হচ্ছে একের দুইয়ে বিভক্তি। এটা হচ্ছে একটা সার্বজনীন প্রক্রিয়া। এটা মূর্তভাবে হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদ।

১৭. সঠিক বেঠিকের মধ্যে সম্পর্ক

পার্টির ভেতরে অথবা বাইরে আমাদের অবশ্যই সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। একটা গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে সেইসব লোকেদের বোঝাপড়া করা যারা ভুল করেছে। সঠিক দৃষ্টিকোণ হচ্ছে প্রত্যেককে বিপ্লব করতে দেওয়া। যখন তিনি কোন ভুল করবেন, এই সাধারণ কর্মনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজনঃ “অতীত থেকে সতর্কীকরণ গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য অধিকতর যতনবাণ হওয়া এবং রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো,” এবং ভুল সংশোধনে তাকে সাহায্য করা। “আহ কিউ-এর সত্য গল্প” হচ্ছে চমতকার একখণ্ড লেখা। আমি পরামর্শ দেবো যারা এটা পড়েছেন তাদের পুনপঠনে এবং যারা এটা পড়েননি তাদের যতনের সাথে পড়তে। এই গল্পে লু শুন পশ্চাদপদ ও অসচেতন কৃষকদের সম্পর্কে লিখেছেন যারা অন্যের সমালোচনাকে সর্বাধিক ভয় পেত এবং যে তাকে সমালোচনা করতো তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতো। তার ঝুঁটিতে কিছু কিছু জায়গায় দাউদের ক্ষত ছিল। আহ কিউ নিজে এই ক্ষতগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে চাইতোনা এবং এই ভয়ে ভীত ছিল যে অন্যেরা এই নিয়ে কথা বলবে। সে যত এমন আচরণ করতো, মানুষ তত বলতো। শেষে আহ কিউ আত্মরক্ষায় চলে যেত। যাহোক, লু শুন বিশেষভাবে “বিপ্লব থেকে বাদ পড়া” শিরোনামে একটা অধ্যায় লেখেন যাতে ম্যাজিস্ট্রেট চাওকে বলা হয়েছে আহ কিউকে বিপ্লব থেকে বিরত রাখতে। প্রকৃতপক্ষে, আহ কিউ যাকে বিপ্লব বলেছেন তা ছিল স্রেফ নিজের জন্য কিছু জিনিস লুট করা। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট চাও এমনকি তাকে এভাবে বিপ্লব করতে দেননি। হুয়াঙ আই-ফেঙ এবং চ্যাঙ সিউ ইউনের মতো কমরেডরা যারা ভুল করেছেন, তাদের প্রতি কিছু লোক বলেন যে আমাদেরকে দেখতে হবে তারা সংস্কার করেন কিনা। আমি বলি যে স্রেফ দেখায় কাজ হবেনা। আমাদের এখনো তাদের সংশোধনে সহযোগিতা করতে হবে। তাই বলা যায়, প্রথমে দেখা এবং দ্বিতীয়ত, সহযোগিতা করা। যেসব লোকেদের পর্যাপ্ত “সাহায্য” করা হয়নি, তাদের মতাদর্শ সঠিক হতে পারেনা। যদি লোকেরা ভুল করে আর আপনি তাদের দুর্যোগ দেখে আনন্দ পান, সেটা সংকীণতাবাদ। এখানেই কাও কাঙের পতন ঘটেছে, উল্টানো ঘটেছে। তিনি ঘটনাকে সাজিয়েছেন চার লোক চক্র এবং দুই বাজার স্টল হিসেবে। এগুলোকে সত্যি মনে করে তার উচিত ছিল প্রথমত, দেখা এবং দ্বিতীয়ত সহযোগিতা করা। কিন্তু তিনি তা করতে প্রস্তুত ছিলেননা। শেষে তিনি এত কঠিণভাবে পতিত হলেন যে আর উঠতে পারলেননা। বিপ্লবের ব্যাপারে যতদূর বলা যায়, সর্বদাই কিছু বেশি লোক থাকা ভাল। হাতে গোনা কতিপয় লোক যারা ভুলে লেগে থাকে অথবা যখনই কোন ভুল ঘটে তাতে অংশীদার হয়, তারা বাদে জনগণের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যারা ভুল করেছেন তাদের সংশোধন সম্ভব। তারা ঠিক সেইসব লোকেদের মতো যারা টাইফয়েড জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগমুক্তি ঘটেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভবিষ্যতে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে ভাল। বিপরীতে, সেসব লোক যারা কখনই ভুল করেননি, তারা বিশেষত সেসবে প্রবৃত্ত, কারণ তারা অতি অহংকারী। আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে যে যদি কেউ ভুলকারী লোকদের অতি শুদ্ধিকরণ করেন তা শেষমেষ নিজেদের শুদ্ধিকরণে পরিণত হয়। আমরা যদি আন্তরিকভাবে বোঝাপড়া করি সেইসব লোকেদের যারা ভুল করেছে, আমরা জনপ্রিয় সমর্থন এবং জনগণের সঙ্গে সংহতি অর্জন করতে পারি। ভুল করেছে যেসব কমরেড তাদের বোঝাপড়ায় একটা বৈরি অথবা সাহায্যকারী দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা তা হচ্ছে সহৃদয় লোক আর অসত লোকের মধ্যে পার্থক্যকরণের বৈশিষ্ট্য। রোগ সারিয়ে রোগীকে বাঁচানো হচ্ছে সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার সাধারণ কর্মনীতি। আমাদের এই সাধারণ কর্মনীতিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।

১৮. দশ আঙুলের প্রশ্ন

আবেগ জাগরিত করা অনুমোদনীয়, কিন্তু তাতে নিমজ্জিত হওয়া উচিত নয়। অনেকসময়, অনভিজ্ঞতাজনিত কারণে আমরা জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনি। একসময়, অনেকগুলো প্রশ্নে ভুল হয়েছে। উদাহারণঃ এমন লোকেরা ছিল যারা বললো অত্যধিক সমবায় সংগঠিত করা হয়েছে এবং তারা তার মধ্যে ১০,০০০ ছেঁটে ফেলতে চাইলো। দুই চাকার দুই ফালের লাঙলের একটা বদনাম করা হয়েছে দক্ষিণে। এখন কামুক লোকের লম্পট কাব্যের কথা ধরুন উদাহারণস্বরূপ। সুঙ ইউ একটা পয়েন্টে আক্রমণ করলো আর বাকীগুলোতে সংক্ষিপ্তকরণ করলো। পদ্ধতিটা ভাল নয়। কিন্তু ঠিক এই পদ্ধতিতেই দক্ষিণপন্থীরা আমাদের আক্রমণ করলো। একজন লোকের ১০ আঙুল রয়েছে। যদি কোনটির ওপর ফোস্কা পড়ে, তাকে এর চিকিতসার জন্য ডাক্তার ডাকতে হবে। তিনি এটা কেটে ফেলতে পারেননা। অন্য নয়টি আঙুল এখনো ভাল। ভাললোকও কখনো কখনো একে একইভাবে দেখে থাকেন এবং কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন লোকেরা রয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যই হোক, আর গণতান্ত্রিক পার্টির অথবা বাণিজ্য চক্রের অথবা উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন বুদ্ধিজীবিই হোক, জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নতি করতে পারেন। এমনকি দক্ষিণপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠও পুনরায় ভাল হতে পারেন। আপনি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠে বিশ্বাস না করেন, তাহলে আপনি আস্থা হারিয়েছেন্ এবং জনগণের আদর্শে আস্থা হারানো ভাল নয়। আজ শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শোষক শ্রেণীর পরিবার থেকে এসেছে। কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা এদের মধ্যে কেবল শতকরা ২ থেকে ৩ ভাগ। স্বতন্ত্র ঘটনা বাদ দিলে তারা বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতত হবেনা। এমন কর্মনীতি প্রয়োগ করে, আমরা তাদের সংস্কার করতে পারি।

১৯. নয় আঙুল এবং এক আঙুলের প্রশ্ন

আমাদের কমরেডরা প্রায়ই তাদের ১০ আঙুল নিয়ে বিভ্রান্ত। যখন কোন কিছু ভুল হয়, তারা দশ আঙুলের কথা ভুলে যান। যখন শ্রমজীবি জনগণের সারিতে সীমাবদ্ধতা উদ্ভুত হয়, তা নয় আঙুল ও এক আঙুলের প্রশ্ন। যখন আমাদের কমরেডরা ভুল করেন, এটাও সেরকম। এখানে আমি কু তা-সু’ন, লি শিহ-নুঙ, প্যান ঢঢ, চন সাই-লি এবং লি ফেঙের কথা বলছিনা। কমরেড উ পু-চিহ চমতকার এক বক্তৃতা দিয়েছেন। আনহেই প্রাদেশিক প্রতিনিধি দল কেন তাদের বক্তৃতায় লি শিহ-নুঙের কথা বলেননা? চেকিয়াঙ প্রাদেশিক প্রতিনিধি দল শা ওয়েন-হানের কথা বলেন, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। তাদের উচিত তাদের মূল্যবাণ মতামত প্রদান করা আর প্রত্যেককে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিনিময় করতে দেওয়া। কেন তারা এসব লোকের কথা বলেননা? এইসব লোকেরা এক আঙুল ও নয় আঙুলের প্রশ্ন নয়। শা ওয়েন-হান হচ্ছে দশটি কালো আঙুলের লোক। চেন সাই-লিও তাই। লি শিহ-নুঙের নয়টি কালো আঙুল রয়েছে, কেবল একটি আঙুল তার পরিষ্কার। যেসকল কমরেড ভুল করেছেন এবং যাদেরকে আমি নয় আঙুল ও এক আঙুল হিসেবে চিহ্নিত করেছি, তারা ঝরো সময়ে দুলেছেন, কিন্তু এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন। আমি ঐসব লোকেদের কথা বলছিনা। আমাদেরকে বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তাদেরকে রক্ষা করতে হবে এবং অব্যাহতভাবে রক্ষা করে যেতে হবে। তারা ভুল করলেও তারা হচ্ছেন কর্মী। পুর্ণ ও আন্তরিক মত প্রকাশের সময়কালে নিজেদের দোষারোপ করতে তারা ছিলেন ভীত। আমরা যদি তাদের রক্ষায় জিদ ধরি। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাদের ভুল হচ্ছে কেবল এক-দশমাংশ। শুদ্ধিকরণ অভিযানে, অব্যাহতভাবে তাদেরকে আমাদের রক্ষা করে যেতে হবে। ক্যাডারদের রক্ষা করার প্রশ্নটি সিঙ-তাও সম্মেলনের দলিলপত্রে উল্লেখিত হয়েছে। অতীতের মতো, শ্রমজীবি জনগণের সারির মধ্যেকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে ব্যাপকভাবে নয় আঙুল ও এক আঙুলের মধ্যে সম্পর্ক, স্বতন্ত্র ঘটনাগুলি বাদ দিলে। বুর্জোয়া মধ্য পথিকদের মধ্যে মৃত কেন্দ্রের মধ্যেকারগুলি হচ্ছে পাঁচ ও পাঁচ আঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস, কেন্দ্রের মধ্যে বামেরা হচ্ছে ছয় থেকে সাত ভাল cultural-revolution-propagandaআঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস এবং কেন্দ্রের মধ্যেকার ডানেরা হচ্ছে ছয় থেকে সাত খারাপ আঙুলসমেত বুর্জোয়া জিনিস। তারা জনগণের মতাদর্শকে এত দীর্ঘকাল যাবত বিরোধিতা করেছে যে তারা একবারে নিজেদের পরিষ্কার করতে পারেনা এবং বারংবার তাদের পরিষ্কারকরণ প্রয়োজন। বুর্জোয়া মতাদর্শ তারপরও পুনঃপ্রতিষ্ঠা কামনা করবে। বড় কোন পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় কিন্তু ছোট পুনঃপ্রতিষ্ঠা খুবই সম্ভব। লো ঢঢ বলেন যে প্রতিবিপ্লবী পুনঃপ্রতিষ্ঠা তারপরও আসবে এবং গণলাইনের উল্লেখ করেন। তিনি ভাল বলেন। সত্যিই, বুর্জোয়ারাও একটা ঝড় বইয়ে দিতে সক্ষম। গ্রেড ১২ টাইফুনের মুখে আমাদের অনেক কমরেড তখনও দোদুল্যমান হবে। যখনই উত্তেজনা দেখা দেবে, পুনঃপ্রতিষ্ঠা তাকে অনুসরণ করবে। কিন্তু সমগ্র পার্টি গত বছরের অভিজ্ঞতাসমেত আরেকটি বছরের ইস্পাতকরণের মধ্য দিয়ে গেছে এবং বাতাস ও ঢেউ সত্ত্বেও পার্টিকে মাছ ধরা নৌকায় শক্তভাবে বসে থাকতে সক্ষম হতে হবে। পোলীয় ও হাঙ্গেরীয় ঘটনাসমূহের সময় আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। এবং যদিও গত বছরের ঝড় ছিল খুবই বড় আমাদের নৌকা উল্টোয়নি। অনেকে বলেন যে “এটা কেন” শিরোনামে আমাদের সম্পাদকীয় অতি আগেভাগে লেখা হয়েছে। এটা ততটা আগেভাগে ছিলনা। আমরা দীর্ঘসময় দেরী করলে বামপন্থীদের মধ্যে অনেকে পঁচে যেত। বস্তুত, গত বছরের ডিসেম্বরের পর, আমরা তখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ১,০০,০০০ দক্ষিণপন্থী উন্মোচন করেছি যারা সারাদেশের ৩,০০,০০০ দক্ষিণপন্থীদের অর্ধেক। তারা তখন আমাদের ওপর উন্মত্ত আক্রমণ চালাচ্ছিল। এটা কি কেউ বলেনি যে চ্যাঙ ও লো দক্ষিণপন্থীদের যখন পরিষ্কারভাবে ঘেরাও দিল, তারা আর আমাদের আক্রমণ করবেনা? তারা একইভাবে আক্রমণ করলো। যতক্ষণ তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট ডিগ্রীতে পৌঁচেছে, ঘটনা একইভাবে আগের মতো ঘটবে। নয় আঙুল ও এক আঙুলের কথা ভুলোনা। ১৯৫৬ সালের হঠকারী অগ্রযাত্রা বিরোধী আন্দোলনের সময় মূর্তভাবে আমরা এই প্রশ্নটি ভুলে গেছিলাম। আমাদের অবশ্যই কোন সমস্যার সারে…। আমাদের এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

২০. দশ আঙুলের প্রশ্ন

দশ আঙুলের প্রশ্ন। মানুষের রয়েছে দশ আঙুল। আমাদের অবশ্যই কেডারদের শিক্ষা দিতে হবে কীভাবে এক আঙুল থেকে নয় আঙুলকে অথবা সংখ্যালঘু আঙুল থেকে সংখ্যাগুরু আঙুলের পার্থক্যকরণ শিখতে ভাল হওয়া যায়। নয় আঙুলের সাথে এক আঙুলের একটা পার্থক্য আছে। এই জিনিসটি দেখতে সরল, কিন্তু বহু লোকই এটা বোঝেননা। আমাদের অবশ্যই এই দৃষ্টিকোণকে প্রচার করতে হবে। সাধারণ পরিস্থিতি ও স্থানীয় পরিস্থিতির মধ্যে, সাধারণ ও স্বতন্ত্রের মধ্যে এবং প্রধান প্রবণতা ও পার্শ্ব ইস্যুর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। প্রধান প্রবণতা আঁকড়ে ধরায় আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। ভুল জিনিসকে আঁকড়ে ধরলে আমরা চিতপটাঙ হবো নিঃসন্দেহে। এটা হচ্ছে চিনতে পারার একটা প্রশ্ন এবং যুক্তিরও একটা প্রশ্ন একইসাথে। আমরা বলি এক আঙুল এবং নয় আঙুল, কারণ এটা কথা বলার জীবন্ত একটা পথ এবং আমাদের কাজের পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। মৌলিকভাবে ভুল দেখা না দিলে, আমরা সর্বদাই আমাদের কাজে বড় বড় অর্জনের জাল বুনেছি। যাহোক, এই ধরণের কথা বলা কিছু লোকের জন্য প্রযোজ্য হয়না। উদাহারণস্বরূপ, দক্ষিণপন্থীদের, যাদের মধ্যে অনেকেই অতি দক্ষিণ, প্রায় ১০ আঙুলই পঁচে গেছে। ছাত্রদের মধ্যে, সাধারণ দক্ষিণপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠেরই একের বেশি আঙুল পঁচে গেঁছে। তথাপি, তাদের সকল আঙুল পঁচছেনা। সেকারণে এখনো তারা স্কুলে থাকতে পারে।

“একটি অথবা কয়েকটি পয়েন্টে আক্রমণ করো, যতটুকু পারো বাড়িয়ে বলো এবং বাকীগুলো সংক্ষেপিত করো।” এটা হচ্ছে একটা আধিবিদ্যক পদ্ধতি, যা হচ্ছে প্রকৃত পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থীরা যখন ১৯৫৭ সালে সমাজতন্ত্রের ওপর উন্মত্ত আক্রমণ চালালো তারা এই পদ্ধতিই ব্যবহার করেছে। ঐতিহাসিকভাবে, আমাদের পার্টি এমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটা সেসময় যখন গোঁড়ামীবাদ পরমভাবে রাজত্ব করেছে। লি লি-সান লাইনও ছিল এরকম। সংশোধনবাদ অথবা ডান সুবিধাবাদও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। চেন তু-সিউ লাইন এবং জাপান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়কালে ওয়াঙ মিঙ লাইনও ছিল এরকম। ১৯৩৪ সালে চাঙ কুও-তাওও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।

২১. দ্বন্দ্ববাদ সমস্যাকে বিপরীত একত্বের মাধ্যমে দেখে, তাই সামগ্রিকভাবে

জীবন ও মৃত্যু, যুদ্ধ ও শান্তি হচ্ছে বৈর ও দ্বন্দ্বমূলক। তাসত্ত্বেও, তাদের মধ্যে একটা আন্তঃসংযোগ রয়েছে। তাই, এই বিপরীতসমূহ কখনো কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সমস্যার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে, আমরা কেবল একদিকে তাকাতে পারিনা। এর সারের মধ্য দিয়ে দেখার জন্য আমাদের উচিত একটা সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা। তাই, যতদূর একজন ব্যক্তিকে বিচার করা যায় তিনি একেবারে সম্পূর্ণ ভাল অথবা কোন ভাল দিক ছাড়া সম্পূর্ণ খারাপ হতে পারেননা। আমাদের পার্টি কেন সঠিক? এর কারণ হচ্ছে, সকল সমস্যার মূল্যায়নে ও সমাধানে আমরা বস্তুগত বাস্তবতা থেকে যাত্রা করতে পারি। এইভাবে এটা আপেক্ষিকভাবে সম্পূর্ণ হবে এবং পরম নয় ।

২২. অব্যাহত বিপ্লবের তত্ত্ব এবং স্তরে স্তরে বিপ্লবের তত্ত্ব

সমবায়ের বিকাশের জন্য উন্নতি হতে হবে তরঙ্গাকারে-একটার পর আরেকটা তরঙ্গ, মাঝখানে অবনতি, দুই পর্বত শিখরের মাঝে উপত্যকার মতো।

নেতৃত্বকে নৌকা সাজাতে হবে বাতাসের অনুসারে এবং পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এবং যখন পরিস্থিতি প্রতিকুল, তাদের সাথে সাথেই ব্রেক কষা উচিত। একটা সুবিধাজনক মুহুতের্, মাথা ব্যাথা হলে জনগণের মাথা টিপে দিতে হবে, যা হচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় কাজ। কিছু লোক প্রশ্ন করেন যে আমাদের চিন্তাভাবনা করার অথবা বিধি-নিষেধের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। আমাদের প্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা অথবা বিধি-নিষেধের প্রয়োজন রয়েছে। চু-প-শিয়েহ (Pigsy) [মিঙ রাজবংশের উপন্যাস “পশ্চিমের দিকে তীর্থযাত্রা”র চরিত্র]-রও তিন নিষেধ ও পাঁচ বিধি ছিল। আমাদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, প্রয়োজনীয় থামা, প্রয়োজনীয় ব্রেক কষা অথবা দরজা বন্ধ করা প্রয়োজন। জনগণ যখন তাদের লেজ ফুঁলিয়ে ধরেন তখন যে পদ্ধতির চেষ্টা করতে হবে তাহচ্ছে তাদের জন্য নতুন কাজ দেওয়া, যেমন আমরা এখন গুণগত প্রতিযোগিতা চালক তুলে ধরছি, যাতে তাদের অহংকারী  হওয়ার সময় না থাকে।

২৩. একতরফাবাদ হচ্ছে দ্বৈত চরিত্রের

দুই ধরণের একতরফাবাদ রয়েছেঃ গোঁড়ামীবাদ এবং সুবিধাবাদ (সংশোধনবাদ)। লু তিঙ-ই এক নিবন্ধে এরকম বলেছেন। গোঁড়ামীবাদীরা সবকিছুকে ইতিকরণ করতে চায় আর তারা শতকরা ১০০ ভাগ বলশেভিক। পরে আমরা কিছু চেকিং করলাম। ১০ বছর পর (১৯৩৫-১৯৪৫), তারা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেল। গোঁড়ামীবাদীরা চীনে আছে, বিদেশেও। একতরফা মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে উপস্থাপন করতে তারা একে অধিবিদ্যা থেকে ব্যাখ্যা করে। কাজের ক্ষেত্রে তারা আপনাকে ভাল দিক সম্পর্কে বলতে দেয়, খারাপ দিক সম্পর্কে নয়। আপনি কেবল প্রশংসা করতে পারেন, সমালোচনা নয়। “ওয়াঙ মিঙের ঘেরাও দমন”-তে আমিও প্রচুর পরিমাণ তথ্য দিয়েছি। এখন আসুন ওয়াঙ মিঙকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ঘেরাও তোলা যাক। তার লেখাতে ত্রুটি ছিল, কিন্তু তিনি কি আমলাতন্ত্রবাদকে সমালোচনা করেননি, যেমনটি তিনি করেছিলেন, অথবা দাপ্তরিক সার্কেলের লোকেদের সম্পর্কেও বলেছিলেন? অতীতে নিশ্চিতভাবে শ্রেণীসংগ্রাম সম্পর্কে কথা বলতে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। কিন্তু আমরা কিছু অতিসরলীকরণ ও প্রশাসনিক ডিক্রী জারি করেছিলাম। আগে, বিপ্লবী সংগ্রাম সংগঠিতকরণের জরুরিত্বের কারণে নিশ্চিতভাবে আমরা সমস্যার একটা সমাধান বের করতে যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি। ক্ষমতা দখলের সময়কালে সেটা ছিল আমাদের কাজের ধারা। কিছু কমরেড কাজের এই স্টাইলকে আবাদ করেছেন। এটা তাদের কাছে সহজ কেবল যাদের এই ধরণের অভিজ্ঞতাই রয়েছে, কেবল এই ধরণের কাজের ধারার সাথেই পরিচিত, বিশেষত যারা দীর্ঘকাল বাহিনী কাজে জড়িত ছিলেন তাদের পক্ষে এমন ভুল করা সহজ। ওয়াঙ মিঙের ঘেরাও দমন ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে ঘেরাও করতে মুক্তিবাহিনী যে অল্পকিছু রেজিমেন্ট বদলী করছিল তার মতো। আরেক ধরণের একতরফাবাদ হচ্ছে “সবকিছুকে নেতিকরণ করা”-শ্রমিক ও কৃষকদের উদ্যোগের নেতিকরণ, কয়েক দশক কোটি জনগণের সংগ্রামকে নেতিকরণ, যাতে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং সবকিছু অন্ধকার দেখে। এটা বাস্তরের সাথে মেলেনা। সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের মহা কর্তব্যের সবকিছু ভাল, তাও বাস্তবের সাথে মেলেনা।1949-plenary চলচিত্র কাজের সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করে চুঙ তিয়েন-ফেই এক ভাল জিনিস করেছেন! যেসব সীমাবদ্ধতা ইতোমধ্যে উন্মোচন করা হয়েছে তার সংশোধনে আমাদের অবশ্যই যতনবাণ হতে হবে,কিন্তু আমাদের অবশ্যই একতরফা দিকগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। চে’ন চি’-তু’ঙ ও অন্য তিনজনের নিবন্ধ ভুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। আজকে আমি তাদের মুখের ওপর অবশ্যই বলবো। আমি সেই নিবন্ধের সাথে খুবই মতানৈক্য পোষণ করি। আমি বলেছি যে পার্টি ও শ্রমিকশ্রেণীর স্বার্থকে রক্ষার প্রচেষ্টায় তাদের কর্তব্যপরায়ণতা হচ্ছে বিষাক্ত আগাছার বিরুদ্ধে ঘৃণার সেন্টিমেন্ট। কিন্তু কেবল কয়েক মাস পরের “প্রস্ফুটিত হওয়ার” পরেই ওয়াঙ মিঙ ও অন্য দৈত্য ও দানবেরা বেড়িয়ে এল। এই মত ব্যক্ত করা হয়েছে যে অর্জন হচ্ছে স্বল্প আর ভুল হচ্ছে বহু। “আমার প্রভুর নিকট রিপোর্ট, একটা ধ্বংসাত্মক কিছূ ঘটে গেছে! একটা ভূত আবির্ভূত হয়েছে!” পরিস্থিতি এমন যে, নিশ্চিতভাবে এমন মনে হয়না যে দিনের শেষ এটা ছুঁতে পারবে। এখন, এটা পরিস্থিতির একটা ভুল মূল্যায়ণ এবং পার্টির সাধারণ কর্মনীতি সম্পর্কে সন্দেহের একটা প্রকাশ। এখানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তা হচ্ছে অতিসরলীকরণ। এর প্ররোচিত করার ক্ষমতা নেই। ওয়াঙ মিঙকে সমালোচনা করায় যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তাহচ্ছে “সংক্ষিপ্ত আহতকরণ” পদ্ধতি। এটা পাঠকদের অনাশ্বস্ত করে। আমি অনাশ্বস্ত। ওয়াঙ মিঙের সাথে আমি কোন সম্পর্ক পাতাইনি। এমননা যে আমার কোন পুত্র অথবা কণ্যার সাথে তার কোন সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমি অনাশ্বস্ত। গোঁড়ামীবাদ ও সুবিধাবাদ হচ্ছে দুই ধরণের একতরফাবাদ। একটা সবকিছুকে ইতিকরণ করে এবং অন্যটি সবকিছুকে অস্বীকার করে। গোঁড়ামীবাদীরা ও সুবিধাবাদীরা উভয়ই আধিবিদ্যক। যাহোক, আমাদের অবশ্যই তাদের ভুল সংশোধনে সহযোগিতা করতে হবে। এটা কেবল তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। তারা বিপুল সংখ্যক জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কমিউনিস্ট্ পার্টি সদস্যদের মধ্যে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা রয়েছে। কেউ কি পার্টির বাইরে? পঞ্চাশ লক্ষ জনগণের মধ্যে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা আছেন। কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর “বামপন্থী” ও দক্ষিণপন্থীরা আছে। এর অর্থ হচ্ছে গোঁড়ামীবাদী ও সুবিধাবাদীরা আছেন। কিছু লোক বলেন লেখায় একতরফা না হওয়া অসম্ভব। এই বিবৃতিতে কিছু একটা আছে। আমি যা এইমাত্র বলেছি তাহচ্ছে প্রচুর মার্কসবাদী চিন্তাধারা, যা প্রত্যেকের কাছে একতরফাবাদ পরিহার দাবী করে। এটা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণও নয়। বস্তুত, সমালোচনা করার ক্ষেত্রে, প্রত্যেকে নিজ নিজ অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে কথা বলেন এবং একদিকে দাঁড়িয়ে। কিন্তু অপরদিকে, একতরফাবাদ দ্বন্দ্ববাদের বিরুদ্ধে যায়। আমরা কি আরেকটু বেশী দ্বন্দ্ববাদ ব্যবহারের জন্য আহ্বাণ করতে পারিনা? দ্বন্দ্ববাদকে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়করণ করা যায় কিনা যাতে ক্রমান্বয়ে আরো বেশি দ্বন্দ্ববাদ ব্যবহৃত হবে। আমি মনে করি, তা পারা যায় এবং করা উচিত। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আরো জনগণ, আরো লেখকগণ এবং অধ্যাপকগণ হবেন যারা সমস্যার প্রতি অধিকতর সামগ্রিকতা নিয়ে দেখবেন। তাই, আমি বলি যে, একতরফাবাদের অস্তিত্ব হচ্ছে একটা ঘটনা। কিন্তু, আমি আহ্বাণ করি, একতরফাবাদকে অতিক্রম করা হোক ক্রমান্বয়ে। ভবিষ্যতে একতরফাবাদ থাকবে কি থাকবেনা? তখনো থাকবে। এমনকি ১০,০০০ বছর পরও একতরফাবাদ থাকবে। আমাদেরকে দ্বন্দ্ববাদ জনপ্রিয় করতে হবে এবং দ্বন্দ্ববাদকে বিকশিত করতে হবে। এককথায়, আমি আহ্বাণ করি দ্বন্দ্ববাদকে ধাপে ধাপে জনপ্রিয় করা হোক যাতে আমাদের ৬০ কোটি দ্বন্দ্ববাদী হয়। জনগণের সারির মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রদান প্রয়োজন, গালিগালাজের ওপর নির্ভরতা নয় বরং দ্বন্দ্ববাদ অনুশীলন প্রয়োজন। লেখায়, আমাদের প্ররোচক হওয়া প্রয়োজন। সেইসাথে, আমাদের নিজেদের আমলাতান্ত্রিক অহংকারী হওয়া উচিত নয় অথবা আমলাতান্ত্রিক আচরণ করা উচিত নয় এটা মনে করে যে আমরা হচ্ছি মন্ত্রিপরিষদের, ব্যুরো অথবা বিভাগের প্রধান। এই ধরণের আচরণ আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ভুলে যেতে হবে যে আমরা কর্মকর্তা, আমাদেরকে অবশ্যই সবার সাথে সমান আচরণ করতে হবে। আপনার পদ উচ্চ হতে পারে, কিন্তু আপনি যখন ভুল করেন তা কোন কাজে দেবেনা। স্তালিনের পদ কি যথেষ্ট উচ্চ ছিলনা? যখন তিনি ভুল করলেন তা কোন কাজে দিলনা। কিছূ লোক প্রবীণ অভিজ্ঞর অহংকার নিয়ে বলেনঃ “আপনি যখন ¬বিপ্লব করছিলাম, তুমি তখন টেবিলের নীচে গড়াগড়ি খাচ্ছিলে।” আপনি যদি এই লাইন প্রয়োগ করেন জনগণ তা শুনতে পছন্দ করবেনা। দ্বন্দ্ববাদ একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে অধিবিদ্যা একটু একটু করে কমে যায়। এটা একতরফাবাদ থেকে ক্রমান্বয়ে মুক্ত করবে।

২৪. দুই ধরণের একতরফাবাদ

কমিউনিস্ট পার্টির সারির ভেতর সবধরণের লোক রয়েছে। মার্কসবাদীরা রয়েছে যারা ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কিন্তু তা মারাত্মক নয়। একটা অংশ গোঁড়ামীবাদী ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এধরণের লোক পার্টি ও দেশের প্রতি বিশ্বস্ত। কেবল সমস্যার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে “বাম”-এর একতরফাবাদ। যখন তারা এই ধরণের “একতরফাবাদ” থামিয়ে দেবে, তারা একটা বড় ধাপ সামনে এগিয়ে যাবে। আরেক অংশ লোক দক্ষিনপন্থী সুবিধাবাদী অথবা সংশোধনবাদী ভ্রান্ত ধারণা লালন করে। এই লোকগুলো তুলনামূলক বিপজ্জনক, কারণ তাদের চেতনা হচ্ছে পার্টির মধ্যে বুর্জোয়া মতাদর্শের প্রতিফলন। তারা বুর্জোয়া উদারতাবাদের জন্য লালায়িত হয় এবং সবকিছূকে নেতিকরণ করে, এবং সমাজের বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবিদের সাথে তাদের সম্পর্ক অতি-জটিল। এখন কয়েক মাস যাবত জনগণ গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনা করছেন, কিন্তু সংশোধনবাদকে বাদ দিয়েছেন। গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হতে হবে। যদি গোঁড়ামীবাদকে সমালোচনা না করা হয়, অনেক ভ্রান্ত ধারণাই সংশোধন করা যাবেনা। এখন আমাদের এটা দেখতে শুরু করতে হবে যে সংশোধনবাদ সমালোচিত হচেছ। গোঁড়ামীরা বিপরীতে ধাবিত হতে পারে, অর্থাত হয় মার্কসবাদ নয়তো সংশোধনবাদ।  আমাদের পার্টির অভিজ্ঞতার আলোকে, অধিক অধিক গোঁড়ামীবাদীরা মার্কসবাদে ধাবিত হবে, যেখানে সংশোধনবাদে যাবে অল্প বিচ্ছিন্ন। কারণ, তারা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর একটা মতাদর্শিক উপদল যারা পেটি বুর্জোয়ার হিংস্র দৃষ্টিকোণের স্বীকারে পরিণত হয়েছে। কিছু “গোঁড়ামীবাদী” যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা বস্তুত সেইসব লোক যারা তাদের কাজে ভুল করেছে। আক্রমণের স্বীকার কিছু “গোঁড়ামীবাদী” যারা  বস্তুত  মার্কসবাদী; তারা কিছু লোকের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে যারা তাদের ভুলভাবে “গোঁড়ামীবাদী” মনে করেছে। প্রকৃত গোঁড়ামীবাদীদের এটা মনে করার একটা যুক্তি আছে যে “বাম” ডানের চেয়ে ভাল। কারণ হচ্ছে তারা বিপ্লব করতে চান। যাহোক, বিপ্লবের বাস্তব ক্ষতির দিক থেকে “বাম” ডানের চেয়ে ভাল নয়। তাই, একে দৃঢ়ভাবে সংশোধন করতে হবে।

২৫. লাল শ্বেত আনন্দদায়ক ঘটনার প্রশ্ন

-আকস্মিক পরিবর্তন হচ্ছে মহাবিশ্বের সর্বাধিক মৌলিক নিয়ম-

লাল ও সাদা আনন্দদায়ক ঘটনার প্রশ্ন। অতীতে যখন আমরা সম্ভাব্য আকস্মিক মহা পরিবর্তনের মোকাবেলার কথা বলেছিলাম, আমরা প্রধানতঃ যুদ্ধ অথবা পার্টির মধ্যকার গোলযোগের দিকেই নির্দেশ করেছি। চীনা জনগণ বিয়েকে লাল আনন্দদায়ক ঘটনা এবং অন্তেষ্টিক্রিয়াকে সাদা আনন্দদায়ক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন। মনে হয় এখানে কিছু একটা আছে। চীনা জনগণ দ্বন্দ্ববাদ বোঝেন। কারণ তারা বিয়ে করার পর সন্তান সন্ততি হবে, মায়েরা তিন অথবা দুইয়ে বিভক্ত হবে, অথবা এমনকি দশ অথবা আটের মতো, একেবারে একটা এয়ারক্রাফ্ট বহনকারীর বিমানসমূহে বিভাজনের মতো।

অত্যধিক সন্তানসন্ততিও ভাল নয়। যখন একজন মানুষ একজন মানুষ জন্ম দেয় তা একটা আনন্দদায়ক ঘটনা। এক দুইয়ে পরিণত হয়, দুই চারে। মৃত্যুতে মানুষ চিরকাল কাঁদবে এবং অন্তেষ্টিক্রিয়া অনষ্ঠান করবে। এটাও একটা আনন্দদায়ক ঘটনা। মানুষ ব্যতিক্রমহীনভাবে মারা যাবে। যদি কনফুসিয়াস এখনো বেঁচে থাকতেন এবং এখানে হুয়েই-জেন-তা’ঙ (বদান্যতার হল)-এ উপস্থিত থাকতেন তিনি ২,০০০ বতসর বয়সী হতেন। সেটা খারাপ হতো। দ্বান্দ্বিকভাবে বললে, কোন মৃত্যু না থাকাটা বেঠিক এবং অধিবিদ্যা। যখন কোন বিপর্যয় ঘটে তাকে এক ধরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া (Phenomenon) বলতে হবে। আকস্মিক পরিবর্তন হচ্ছে মহাবিশ্বের সর্বাধিক মৌলিক নিয়ম। জন্ম হচ্ছে একটি আকস্মিক পরিবর্তন, মৃত্যুও তাই। যদি চিয়াং কাই-শেক মারা যায়, আমরা হাত তালি দিতে পারি। জন ফস্টার ডুলেস মারা গেলে আমরা কোন অশ্রু বিসর্জন দেবনা। কিন্তু যখন কোন নতুন জিনিস মারা যায়, যেমন ১৯০৫ রুশ বিপ্লবের পরাজয় অথবা দক্ষিণে আমাদের ঘাঁটিগুলোর ক্ষয়ক্ষতি, তখন সেটা ভাল নয়। যখন চারাগাছগুলো ঝড় অথবা তুষাঢ়পাতে ভেঙে পড়ে, তা নিশ্চয়ই ভাল নয়, কারণ চারাগাছগুলোর প্রতিস্থাপনের প্রশ্ন আশুভাবে সামনে আসে। আমাদের কমিউনিস্ট পার্টি আশা করে ঘটনাগুলি…

২৬. …

২৭. দুই সম্ভাবনার প্রশ্ন

দুই সম্ভাবনার প্রশ্ন। ভোজনালয়, নার্সারী ও কমিউনগুলো সুসংহত হতে সক্ষম হবে কিনা? মনে হয় তারা সুসংহত হতে সক্ষম হবে। কিন্তু তাদের কারো কারো ধ্বংসের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। দুই সম্ভাবনাঃ সুসংহতকরণ ও ধ্বংস একইসঙ্গে অবস্থান করে। আমরা যদি প্রস্তুত না থাকি, আমরা সম্পূর্ণত ব্যর্থ হবো। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে তাদের সুসংহত হতে সক্ষম করে তোলার জন্য। তাদের কিছু যদি ধ্বংস না হয়, তাহলে সুসংহতকরণ ভালভাবে করা যাবেনা। উদাহারণস্বরূপ, কিছূ শিশু নার্সারীতে মারা গেছে এবং কিছু বৃদ্ধ লোক সুখী গৃহে (হ্যাপিনেস হোম)-এ মারা গেছে। যখন সুখী গৃহে সুখ না থাকে,তখন কোন দিক দিয়ে তাদের ভাল বলা যায়? ভোজনালয়ের এটা গ্রুপও ব্যর্থ হবে যদি তারা ঠান্ডভাত অথবা ভাতের সাথে অপরিহার্য অন্যকিছু খাবার সরবরাহ না করে। কেউ ব্যর্থ হবেনা এটা মনে করা বাস্তরের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ নয়। তারা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ হয়। এটা খুবই যুক্তিযুক্ত। সমগ্রভাবে, ব্যর্থতা হবে আংশিক এবং অস্থায়ী। সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে বিকাশ ও সংহতকরণ। আমাদের পার্টিরও দুই সম্ভাবনা রয়েছে। একটা সম্ভাবনা হচ্ছে সুসংহতকরণ, অপরটা হচ্ছে বিভক্তি। সাংহাইয়ে এক কেন্দ্রিয় কমিটি দুটিতে বিভক্ত হলো। লঙ মার্চের সময়কালে, চাঙ কুও-তাও এক কেন্দ্রিয় কমিটিকে দুটিতে বিভক্ত করলো। কাও কাঙ এবং ঝাও শু-শিহ আংশিক বিভক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। আংশিক বিভক্তি প্রায়ই ঘটে। গত বছর হতে, দেশের অর্ধেক প্রদেশের নেতৃত্ব গ্রুপের মধ্যে বিভক্তি ঘটেছে। মানুষের শরীরে দেহকোষগুলো প্রতিদিন মারা যায়। শৈশব থেকে এই প্রক্রিয়া ঘটে। কেবল এভাবেই বৃদ্ধি লাভবান হয়। যদি কোন মৃত্যু না থাকে মানুষ আর বাঁচবেনা। মানুষ মৃত্যুবরণ করবেনা তা সম্ভব নয়। মৃত্যু উপকারী হতে পারে, তাথেকে সার সৃষ্টি হতে পারে। আংশিক বিভক্তি ঘটে প্রতিদিন। সামগ্রিক বিলোপ ও ঐতিহাসিক অনিবার্যতা। সর্বেসর্বা উভয়তঃ পার্টি ও রাষ্ট্র-যারা শ্রেণীসংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে সেবা করেছে, অবশ্যই ধ্বংস হবে। কিন্তু পার্টির ঐতিহাসিক কর্তব্য সম্পন্ন হওয়ার আগে এটা হচ্ছে সুসংহতকরণের প্রশ্ন। আমরা বিভক্তির আশা করিনা, কিন্তু সেসবের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত। আমরা যদি প্রস্তুত থাকি, আমরা বড় বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হতে পারি। বড় ও মাঝারি বিপর্যয় হচ্ছে সাময়িক। হঙ্গেরীয় ঘটনা ছিল একটা বড় বিভক্তি, যেখানে কাও ও মো ঘটনা ছিল মাঝারি বিভক্তি। প্রতিটি পার্টিশাখা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সদস্যকে বহিষ্কার করা  হচ্ছে , কিছূ সদস্যকে গ্রহণ করা হচ্ছে। কেউ কেউ খুব ভাল কাজ করছে, কেউ কেউ ভুল করছে। কোন পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কখনো না যাওয়া অসম্ভব। লেনিন প্রায়ই বলেন যে প্রতিটি জিনিসের দুই সম্ভাবনা রয়েছেঃ হয় বিজয় অথবা ধ্বংস। আমাদের চীনা গণপ্রজাতন্ত্রেরও দুই সম্ভাবনা রয়েছেঃ বিজয়ের পর বিজয় অথবা ধ্বংস। যেহেতু লেনিন ধ্বংসের সম্ভাবনার কথা ধামাচাপা দেননি, গণপ্রজাতন্ত্রের এমন সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা উচিতনা। আমাদের কোন পারমাণবিক বোমা নেই। যদি শত্রু পিকিং, সাংহাই এবং উহান দখল করে, আমরা পাহাড়ে চলে যাবো এবং গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হবো। আমরা ১০/২০ বছর পেছনে চলে যাবো এবং ইয়েনানের সময়কালে ফিরে আসবো। তাই, আমাদের প্রচণ্ড প্রস্তুতি নিতে হবে, তিন অথবা চার বছরের মধ্যে কোটি কোটি টন ইস্পাত উতপাদনে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং একটা শিল্পভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে আমরা এখনকার থেকে অধিকতর সুসংহত হতে পারি। বর্তমানে আমাদের নাম সারাবিশ্বে পুরোপুরি বিখ্যাত। এক, কুয়েময়ের বোমাবর্ষণের কারণে; দুই গণকমিউনসমূহের কারণে; এবং তিন, ১ কোটি ৭ লাখ টন ইস্পাতের জন্য। মনে হয় এই কয়েকটি বিষয়ের কারণে আমাদের খ্যাতি বিরাট। কিন্তু আমাদের শক্তি বিরাট নয়। আমরা এখনো গরীব ও খালি। আমরা আমাদের হাতে এক ইঞ্চি হাতিয়ার অর্জন করেছি এবং যদিও আমাদের এক ইঞ্চি লোহা আছে, আমরা কিছু সম্পাদন করিনি, আমাদের দেশ প্রকৃতপক্ষে দুর্বল। রাজনৈতিকভাবে আমরা ক্ষমতাশালী দেশ। অর্থনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে আমরা দুর্বল দেশ। তাই, দুর্বলতাকে সবলতায় রূপান্তরের কর্তব্য আমাদের সামনে রয়েছে। তিন বছরের মধ্যে আরো ভালোর জন্য একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। তিন বছরের মধ্যে আমরা কেবল একটা আংশিক পরিবর্তন আনতে পারি, মৌলিক কোন পরিবর্তন নয়। আরো চার বছর পর অর্থাত মোট সাত বছর পর সবকিছু আরো ভাল হবে এবং আমাদের খ্যাতি বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হবে। এখন আমাদের খ্যাতি বিরাট এবং আমাদের সামর্থ্য তাতপর্যহীন। একে আমাদের সমগ্রভাবে উপলব্ধি করতে হবে। ফুলে ওঠবেননা যখন আপনি কোন বিদেশী কর্তৃক প্রশংসিত হন অথবা যখন আপনি সংবাদপত্রের পাতা খুলে দেখেন যে তা আমাদের উচ্চ উদ্যম ও আশ্চর্য কীর্তির হিসাবে পুর্ণ। বস্তুত, ভাল ইস্পাত কেবল ৯০ লক্ষ টন। রল্ড ইস্পাত উতপাদন শতকরা ৩০ ভাগ কম হতে হবে, তাই কেবল ষাট লক্ষ টন। আমাদের নিজেদের প্রতারিত করা উচিত নয়। প্রচুর শস্য উতপাদিত হয়েছিল। যখন কাঁটছাঁট অনুমোদিত হল, সমস্ত স্থানে উতপাদন ছিল ৮৬০ বিলিয়ন ক্যাটি। আমরা বলেছিলাম ৭৫০ বিলিয়ন ক্যাটি। তাই বলতে গেলে, তারা এখানে ওখানে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা বাড়িয়েছে। যে ১১০ বিলিয়ন ক্যাটি তারা বাড়িয়েছেন তা হিসেবে নেওয়া হয়নি। কেউ ভুগবেনা যদি আমাদের প্রকৃতই থাকে কিন্তু সেই ১১০ বিলিয়ন ক্যাটি হিসেব না করা হয়। জিনিসগুলো তখনো সেখানে থাকবে। আমরা কেবল ভীত ছিলাম যে আমরা পাবনা তাই আমরা কাঁটছাঁট করেছিলাম। ৮৬০ বিলিয়ন ক্যাটি ছিল এটা স্বীকৃতি দিয়ে এক চতুর্থাংশ উতপাদন আলূ জাতীয় শস্য করার জন্য আমাদের জন্য ভর্তুকী দিতে হবে। আমরা এবিষয়টি পরিষ্কার করতে পারি। প্রতিটি প্রদেশ, অঞ্চল অথবা কাউন্টিতে বিষয়টি আলোচনা করতে সভা করতে হবে। কিছু লোক আমি যা বলছি তা শুনতে চায়না। কিন্তু আমি এই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপারটিতে কথা বলতে জিদ ধরি। কমিউন অথবা গণভোজনালয়ের ধ্বংস, পার্টির বিভক্তি, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা, মার্কিনের দখলদারিত্ব, জাতির পরাজয় অথবা গেরিলাযুদ্ধ-যাই হোকনা কেন, আমাদের  একটা মার্কসবাদী নীতি আছে, যা সবকিছূর তত্ত্বাবধান করে। আর তা বলে যে, এসকল দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে অস্থায়ী ও আংশিক। ঐতিহাসিকভাবে, আামদের অনেক পরাজয় এই বিষয়টি প্রমাণ করেছে। লঙ মার্চের সময়, আমাদের বাহিনী সদস্য ৩,০০,০০০ থেকে কমে ২০,০০০-এর সামাণ্য কিছু বেশি হয়েছিল এবং পার্টি সদস্য ৩০,০০০ থেকে কমে অল্প কয়েক হাজারে পরিণত হওয়ার ঘটনাও সবই ছিল অস্থায়ী ও আংশিক। বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংস স্থায়ী, যাইহোক। সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়, পরাজয় অথবা অথবা ধ্বংস হবে অস্থায়ী কারণ দীর্ঘসময়ের আগেই তা পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি যদি পুনপ্রতিষ্ঠা পরাজিত হয়, তাও অস্থায়ী হবে। ১৯২৭ সালের মহান বিপ্লব পরাজিত হবার পর, আমরা পুনরায় অস্ত্র হাতে নিলাম গেরিলা যুদ্ধ করতে। “অভূতপূর্ব বাতাস ও মেঘ আকাশে হঠাত দেখা দিতে পারে। সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য ঘটতে পারে।” আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। “প্রাচীন কাল থেকে সত্তুর বছরের মানুষ বিরলভাবে দৃশ্যমান।”মানুষ নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে। একজন ব্যক্তি সর্বদাই মারা যাবে। তিনি ১০,০০০ বছর বাঁচতে পারেননা। মারা যাওয়ার আগেই মানুষের উচিত তার সকল কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করা। এসবই দুঃখের কথা। সকল মানুষই মারা যাবে। কিন্তু সমগ্রত মানবজাতি বাড়বে এবং সমৃদ্ধিশালি হবে। যদি আমাদের মরতেই হয়, আমরা মারা যাবো। সমাজতন্ত্রের জন্য এখনও আরো বেশি কিছু বছরের জন্য আমরা আমাদের অবস্থান বজায় রাখতে চাই…   …

২৮. দুই ধরণের ব্যবহারিক সম্ভাবনা

দুই ধরণের ব্যবহারিক সম্ভাবনা রয়েছে। একটা হচ্ছে বাস্তব সম্ভাবনা এবং অপর ধরণটি হচ্ছে অবাস্তব সম্ভাবনা। এখন যদি কেউ মঙ্গল গ্রহে যেতে চায়, এটা একটা অবাস্তব সম্ভাবনা। যাহোক, ভবিষ্যতে এটা বাস্তব সম্ভাবনা হতে পারে। সম্ভাবনা দুই ধরণের। যদি একে বাস্তবে রূপান্তরিত করা যায় তা বাস্তব সম্ভাবনা। অন্য ধরণের সম্ভাবনা হচ্ছে এমন যাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। অতীতের গোঁড়ামীবাদ যেমন, তা কি শতকরা ১০০ ভাগ প্রমাণিত ছিলনা? এটা কি সর্বত্র বর্জিত হয়নি? আমার কাছে মনে হয় প্রতি মৌ-তে ৮,০০,০০০ ক্যাটি উতপাদন না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করাও একটা অবাস্তব সম্ভাবনা।

২৯. তরঙ্গাকৃতি অগ্রগমন হচ্ছে অনিবার্য

অর্থনৈতিক বিনির্মাণ এমন জিনিস নয় যে যার সামাণ্যতম অগ্রগতি ও পশ্চাদগতি নেই, বরং যা নিশ্চিতভাবে ও দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়। বিনির্মাণও কখনো আকারে একটু বেশি হয় কখনো একটু কম। একটা ঘোড়া কখনো একটু দ্রুত দৌঁড়ায়, কখনো একটু আস্তে। কখনো কেউ ঘোড়াকে ধরে ফেলে, কখনো ঘোড়া ছুঁটে যায়। এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সম্ভব। এর কারণ হচ্ছে, প্রথমত, আমরা অনভিজ্ঞ, এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনৈতিক বিনির্মাণ পরিস্থিতির সাথে জাড়িত। উদাহারণস্বরূপ, অতীতে অর্থনৈতিক বিনির্মাণ অনেকটা দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ হয়েছিল, কারণ সেসময় যুদ্ধ পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল। যদি যুদ্ধ আসন্ন হয়, তখন বৃহত্তর মাত্রায় ভারী শিল্প বিকাশ করা জরুরী হবে। অর্থনেতিক বিনির্মাণ তরঙ্গাকারে ঊর্ধ্বগতি ও নিম্নগতিসহকারে অগ্রসর হবে এবং এক তরঙ্গ আরেকটিকে আঘাত করে। বলা যায়, সাম্যাবস্থা, বিশৃংখলা এবং বিশৃংখলার পর সাম্যাবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্যই, তরঙ্গাকৃতি অগ্রগতি অতি বৃহত হতে পারেনা। যদি অতি বৃহত হয় হঠাত এটা একটা হঠকারী অগ্রগমণে পরিণত হবে এবং হঠাত এটা একটা রক্ষণশীল অগ্রগমণে পরিণত হবে। তাসত্ত্বেও এটা অনিবার্য যে অর্থনৈতিক বিনির্মাণ তরঙ্গাকৃতি অগ্রগমনের নিয়ম অনুসরণ করবে এবং উন্নতি করবে। আপনি যদি বিষয়টি স্বীকার করেন, তাহলে এটা আর আপনাকে আশ্চর্যান্বিত করবেনা যে এবছর আমরা হঠকারী অগ্রগমন ঘটাই এবং পরবর্তী বছর আরেকটু কম সংঘটিত করি। এই হচ্ছে ব্যাপার। সমগ্রভাবে এটা বলতে গেলে, আমাদের পঞ্চাবার্ষিক পরিকল্পনা সঠিক ছিল।

৩০. সব জিনিসের রয়েছে ঐক্য স্বাধীনতা

এখন আসুন কেন্দ্রিভূত নেতৃত্বের অধীনে প্রতিটি কারখানার স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলি। সবজিনিসের রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা। মানুষেরও রয়েছে ঐক্য ও স্বাধীনতা। এখন যে সভা চলছে, এটা হচ্ছে ঐক্য। সভা শেষ হলে এটা হচ্ছে স্বাধীনতা। কিছু লোক হাঁটতে বের হবে, কেউ যাবে বই পড়তে, কেউ যাবে খাওয়া দাওয়া করতে। প্রত্যেকের রয়েছে স্বাধীনতা। শৃংখলার জ্ঞান আর অ-শৃংখলার জ্ঞান হচ্ছে পরস্পর দ্বান্দ্বিক। শৃংখলার জ্ঞান থাকার দরকার রয়েছে, সেইসাথে অ-শৃংখলার জ্ঞানও থাকার দরকার রয়েছে। যুথবদ্ধতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি “উদারতাবাদ”-এরও প্রয়োজন। সভা শেষে আমরা যদি কোন ব্যক্তিকে সভা শেষে স্বাধীনতা, অ-শৃংখলার জ্ঞান এবং “উদারতাবাদ” না দেই, বরং বিরতি ও সমাপ্তিহীনভাবে সভাকে চলতে দেই, সকল মানুষ কি মারা যাবে না? তাই, প্রতিটি কারখানা, প্রতিটি সমবায়, প্রতিটি ব্যক্তির অবশ্যই স্বাধীনতা থাকতে হবে-একটা স্বাধীনতা ঐক্যের সাথে জড়িত। আমাদের অবশ্যই কারখানায় শমিকদের এবং যৌথ খামারে কৃষকদের দেখাশুনা করতে হবে। এটা একটা বড় সমস্যা যা ষাটকোটি মানুষের মাথাব্যাথা। আমাদের অবশ্যই এসমস্যার প্রতি পার্টির মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।

৩১. আমরা ঐক্য চাই এবং বিশিষ্টতাও

আমরা ঐক্য চাই এবং বিশিষ্টতাও। প্রতিটি স্থানের স্বতন্ত্র বিশিষ্টতা থাকতে হবে যা স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাবে স্থানীয় উদ্যোগকে পুর্ণভাবে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে। এই বিশিষ্টতাগুলো কাও কাঙের ধরণের বিশিষ্টতা হবেনা, বরং যৌথের স্বার্থের বিশিষ্টতা এবং জাতীয় ঐক্যের শক্তিশালিকরণে অপরিহার্য।

৩২. আমাদের যথাযথ উদ্যোগ যথাযথ স্বাধীনতা থাকতে হবে

আমাদের সকলের যথাযথ উদ্যোগ ও যথাযথ স্বাধীনতা থাকতে হবে। সকল প্রদেশ, অঞ্চল, কাউন্টি, এলাকা ও শহরের তা থাকতে হবে। কেন্দ্রিয় সরকারের উচিত নয় প্রদেশ ও পৌরসভাগুলিকে অতি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা এবং প্রদেশ ও পৌরসভাগুলির উচিত নয়  অঞ্চল, কাউন্টি, এলাকা ও শহরগুলিকে অতি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা। যেসকল জিনিসকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ করতে হবে; যেসকল জিনিসকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়না, তাদেরকে জোর করে ঐক্যবদ্ধ করা যাবেনা। বিভিন্ন অঞ্চলকে এই অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে এবং আঞ্চলিকতাবাদের লেবেল পাওয়ার ভয় করলে চলবেনা। এই অধিকারের জন্য এধরণের সংগ্রাম দেশের সমগ্র স্বার্থ থেকে আসে, স্থানীয় স্বার্থ থেকে নয়। একে আঞ্চলিকতাবাদ বলা যায়না। কেন্দ্রিয় সরকারের থেকে বরাদ্দকৃত স্বাধীনতা হচ্ছে যথাযথ স্বাধীনতা। একে চাপানো স্বাধীনতা বলা যায়না।

নোট

[১] ৩০-এর শুরুর দিকের সময়কালে সিপিসির “বামপন্থী” লাইনের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। এসম্পর্কে “আমাদের পার্টির ইতিহাসের কিছু সিদ্ধান্তবলী ও কিছু সমস্যাবলী” দেখুল।

নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ৩, পৃ ১৭৭-২২০ (১৯৬৫, পিকিং)

[২] পাথরের গল্প -এর একটি চরিত্র

[৩] শু হান অথবা ছোট হান রাজবংশের প্রধানমন্ত্রী চু-কো লিয়াঙ (১৮১৮-২৩৪) ছিলেন প্রাচীন চীনের একজন বিখ্যাত সামরিক রণনীতি বিশারদ। তিনি ছিলেন তিন রাজ্যের রোমান্স এর কেন্দ্রিয় চরিত্র এবং যেমনটা মাও বলেন, সারা জীবন তার পরিণামদর্শিতা ও দূরদর্শিতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

 পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক দলিলসমূহ

 

আন্তর্জাতিক লাইন

সূচনা

 

সভাপতি গনসালো পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক লাইন প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসেবে তিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের অংশ হিসেবে এবং তার সেবায় আমাদের অবশ্যই গণযুদ্ধের মাধ্যমে পেরুভিয়ান বিপ্লবের বিকাশের দ্বারা সূচনা করতে হবে। আমাদের অপ্রতিস্থাপনীয় লক্ষ্য সাম্যবাদের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি hornএটা হিসেবে নিয়ে যে প্রতিটি বিপ্লব বিশ্ব রাজনীতির আঁকবাঁকের মধ্যে দিয়ে বিকশিত হচ্ছে।

বিশ্ব পরিস্থিতির মূল্যায়ণে, সভাপতি গনসালো লেনিনের এই থিসিস সমেত শুরু করেনঃ “সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ভিত্ গঠণ করে। বিশ শতকের ইতিহাস পুঁজিবাদের এই নয়া, শেষ ও উচ্চতম পর্বের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নির্দিষ্টকৃত হয়।” এবং এই যে নিপীড়ক ও নিপীড়িত দেশসমূহের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের একটা মূর্ত বৈশিষ্ট। যেহেতু আমরা এর চুড়ান্ত ও সর্বোচ্চ পর্ব সাম্রাজ্যবাদে রয়েছি, বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণে আমরা পুঁজিবাদের মৌলিক দ্বন্দ্ব থেকে সরে যেতে পারিনা।

অধিকন্তু, চেয়ারম্যান মাও আমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে যে সকল প্রতিক্রিয়াশিল হচ্ছে কাগুজে বাঘ এবং কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন সত্যিকার শক্তিশালি এবং এই যে “সোভিয়েত সংশোধনবাদীরা এবং আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ যৌথ ষড়যন্ত্রে এত অপরাধ করেছে যে সমগ্র বিশ্বের জনগণ তাদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিতে পারেননা। সমস্ত দেশের জনগণ উঠে দাঁড়াচ্ছেন। এটা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক নয়া ঐতিহাসিক পর্যায় সুচিত করেছে।” তিনি আরো বলেন যে সর্বহারা শ্রেণী ও বিশ্বের জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ কর্তৃক সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার ধ্বংস হচ্ছে একটা অবিসংবাদী সত্য। তিনি দুই পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদের রিরুদ্ধে এবং বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়ার আহ্বাণ জানান প্রতিটি দেশের মূর্ত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণভাবে প্রধান শত্রু নির্ণয় করে তাদের ততপরতাকে মোকাবেলা করতে।

.নয়া যুগ

১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় বিশ্ব ইতিহাসে এক অসাধারণ মাইলফলককে চিহ্নিত করে, যা হচ্ছে বুর্জোয়া বিপ্লবের পরিসমাপ্তি এবং বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের সূচনা। বিপ্লবে নেতৃত্ব প্রদানে বুর্জোয়ার জরা এবং সর্বহারা একনায়কত্বের ক্ষমতাকে গ্রহণ, নেতৃত্ব প্রদান এবং বজায় রাখতে সর্বহারা শ্রেণীর পরিপক্কতাকে প্রকাশ করে প্রবল থেকে প্রবলত হিংসা দ্বারা এই নয়া পর্যায়কাল সংকেত প্রাপ্ত হয়। এই কাঠামোর মধ্যে নিপীড়িত জাতিসমূহের বিপ্লবও সংঘটিত হয়।

সকল ধরণের যুদ্ধের জটিল ব্যবস্থার মধ্যে বিশ্ব প্রতিক্রিয়াসমেত সাম্রাজ্যবাদ ডুবে যাবে, যেখান থেকে সমাজতন্ত্র জন্ম নেবে; ফলতঃ বিপ্লব এবং প্রতিবিপ্লব সচেতন যে কেবলমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই রাজনৈতিক পরিবর্তনসমুহ মূর্তকৃত হয়। যেহেতু যুদ্ধের শ্রেণীচরিত্র রয়েছে তাই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধসমূহ রয়েছে যেগুলো ছিল বিশ্বের ভাগ-বাটোয়ারার লক্ষ্যে লুটেরা যুদ্ধ; অথবা নিপীড়িত জাতিসমূহের বিরুদ্ধে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী য্দ্ধু রয়েছে যেমন মালভিনাসে ইংলন্ডের যুদ্ধ, ভিয়েতনামে ইয়াঙ্কী এবং আফগানিস্তানে সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদী এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় চালিত জাতীয় মুক্তিযুদ্ধসমূহ। পেরুর গণযুদ্ধ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার নেতৃত্বে, তাই এটাকে পরাশক্তি অথবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দখল করতে পারেনা এর ন্যায্য চরিত্র ও সঠিক মতাদর্শের কারণে। এটা রয়েছে অগ্রবাহিনীতে, এটা হচ্ছে একটা বাস্তবতা যা আমাদের দেখায় যে কমিউনিস্টদেরকে বিশ্ব বিপ্লবকে সেবা করতে প্রধান ধরণের সংগ্রাম হিসেবে গণযুদ্ধের বিকাশের প্রধান দিকের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করা প্রয়োজন।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, কেবলমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমেই বিশ্বকে রূপান্তর করা যায়; যেমনটা চেয়ারম্যান মাও রূপরেখা তুলে ধরেছেন, আমরা বিপ্লবী যুদ্ধের সর্বশক্তিময়তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরি, যার অর্থ হচ্ছে গণযুদ্ধ, সর্বহারা শ্রেণীর সর্বোচ্চ সামরিক তত্ত্ব যাকে সাম্রাজ্যবাদী অথবা নিপীড়িত নির্বিশেষে প্রতিটি দেশের ধরণ অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে প্রতিরোধে বিশ্ব গণযুদ্ধ হচ্ছে একটা পর্যাপ্ত জবাব অথবা যদি এটা ইতিমধ্যে ঘটমান যাকে তাকে গণযুদ্ধে রূপান্তরে। কমিউনিস্ট হিসেবে আমরা যুদ্ধ পরিচালনা করি যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধকে ধ্বংস করে একটা “স্থায়ী শান্তি” প্রতিষ্ঠা করতে। কেবল আমরাই প্রকৃত শান্তির জন্য লড়ি-রিগান ও গর্বাচেভের মতো নয়, যারা যতই শান্তির কথা বলে ততই যুদ্ধ চালায়। তারা হচ্ছে যুদ্ধবাজ।

এই যুগে বিশ্বকে বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি যে চারটি মৌলিক দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়ঃ

১)         পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দুইটি মৌলিকভাবে ভিন্ন ব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্বের দিক নির্দেশ করে যা এই সমগ্র যুগ অতিক্রম করবে। এটা হবে সর্বশেষ দ্বন্দ্ব যা সমাধা করতে হবে এবং ক্ষমতা দখলের পরও অব্যাহত থাকবে।

২)         বুর্জোয়া ও সর্বহারার মধ্যে দ্বন্দ্ব, দুইটি বিপরীত শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব যা ক্ষমতা দখলের পরেও বজায় থাকবে যা নিজেকে বহুবিধ মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধরণে প্রকাশ করবে সাম্যবাদের আবির্ভাবের দ্বারা এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত।

৩)         আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বসমূহ, বিশ্বে আধিপত্যের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, পরাশক্তিসমূহের পরস্পরের মধ্যে, পরাশক্তি ও গৌণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে এবং গৌণ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। পরবর্তী ৫০ থেকে ১০০ বছরের যুগের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের সমাধান হবে।

৪)         নিপীড়িত জাতিসমূহ ও সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, যা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াকে ধ্বংস করতে নিপীড়িত জাতিসমূহের সংগ্রাম, যার সমাধানও পরবর্তী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে হবে। এই সময়কালে, এটা হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব (যদিও শ্রেণীসংগ্রামের বিশেষ পরিস্থিতি অনুসারে অস্থায়ীভাবে অথবা কিছু দেশে চারটি মৌলিক দ্বন্দ্বের যেকোনটি প্রধান হবে।)

পরিপ্রেক্ষিত অনুসারে, আমাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য সাম্যবাদে পৌঁছতে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদেরকে তিন ধরণের বিপ্লব করতে হবেঃ

১)         গণতান্ত্রিক বিপ্লব, যা হচ্ছে নিপীড়িত দেশগুলিতে সর্বহারা নেতৃত্বে এক নতুন ধরণের গণতান্ত্রিক বিপ্লব যা সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে-যাতে সর্বহারা একাধিপত্যের অধীনে কৃষক, পেটিবুর্জোয়া, কিছু শর্তাধীনে মাঝারি বুর্জোয়াও থাকবে।

২)         সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী দেশগুলিতে, যা সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে

৩)         সাংস্কৃতিক বিপ্লব, যা সর্বহারা একনায়ত্বধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখতে করা হয়

শেষেরটা পুঁজিবাদের পুনর্জন্ম প্রতিহত ও অপসারিত করতে এবং পুঁজিবাদী পুনপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালাতে এবং যা সর্বহারা একনায়কত্বকে শক্তিশালি করতে এবং সাম্যবাদের দিকে অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে সেবা করে। যেমন বিশ্বে কোন শ্রেণীই একবারে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়নি, বরং পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টাপুনঃপ্রতিষ্ঠার একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেবল, সর্বহারা শ্রেণী যখন ক্ষমতা দখল করে ও তার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে, পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠা করতে এর ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য বুর্জোয়ার আকাঙ্খা জন্ম নেয় এবং তা সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার দ্বার উন্মোচন করে তার একনায়কত্বকে রক্ষা করতে এবং পুঁজিবাদী পুনঃপ্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে। পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যেকার এই সংগ্রাম হচ্ছে একটা অনস্বীকার্য ঐতিহাসিক নিয়ম যা সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে পুনঃসংঘটিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে, যখন চীনে সামন্ত শ্রেণী অগ্রসর হল, দাসপ্রথার পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে ধ্বংস করতে এর ২৫০ বছর লাগে; যখন পাশ্চাত্যে বুর্জোয়া শ্রেণী পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে অথবা সামন্তবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে চুর্ণ করতে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলো, নির্দিষ্টভাবে তার ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হতে ৩০০ বছর লেগেছিল। এবং একটা বিপ্লবকে সামনে রেখে যেখানে সর্বহারা শ্রেণী নিশ্চিতভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, প্যারি কমিউন থেকে শুরু হয়ে প্রায় ২০০ বছর পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টাপুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যে সংগ্রাম চলবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে পুঁজিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা আমাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক মহা শিক্ষা দিয়েছে;বিশেষত নয়া রাষ্ট্র গঠণে অতিকায় অগ্রপদক্ষেপে জোর দেওয়া এবং কীভাবে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব হচ্ছে পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রতিরোধে সমাধান।

আমরা যারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা অনুসারী, ক্ষমতা দখলে বিপ্লবী হিংসার সার্বজনীন নীতিতে এবং তা করতে একশ্রেণীকে অপর শ্রেণী দ্বারা প্রতিস্থাপন যে পরম গুরুত্বপুর্ণ-তাতে নিজেদের পুননিশ্চিত করি। গণতান্ত্রিক বিপ্লবসমূহ সংঘটিত করা হয় বিপ্লবী সহিংসতাসমেত। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিপ্লবী সহিংসতাসমেত পরিচালিত হয়, যেহেতু তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা মোকাবেলা করতে হয় তাই বিপ্লবী সহিংসতা দ্বারা ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার করা হবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের মধ্য দিয়ে আমরা সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে বিপ্লবের ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখবো ও সাম্যবাদে পৌঁছবো কেবল বিপ্লবী সহিংসতা সহকারেই। পৃথিবীর বুকে যেখানেই শোষণ থাকবে, তাকেই আমরা শেষ করবো বিপ্লবী সহিংসতা দ্বারা।

এই নতুন যুগ নয়া হাতিয়ারসমূহের সম্পদ দ্বারা আমাদের সশস্ত্র করে এবং আমাদের কমিউনিস্টদের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও সংগঠনগতভাবে নিজেদের শক্তিশালি করতে হবে সেই দায়িত্ব পালনে যা এই সময়ে আমাদের ওপর বর্তায়েছে।

. বিশ্ব বিপ্লবের প্রক্রিয়া

আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে দু্টি স্রোত কার্যকর রয়েছেঃ আন্তর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলন এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলন। প্রথমটি নেতৃত্ব করে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভিত্তি।

জাতীয় মুক্তি আন্দোলন

নিপীড়িত দেশগুলিতে এটা সংঘটিত হয় সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে। এই শতকের প্রথম দশকে লেনিন ভারত, চীন ও ইরানের সংগ্রামসমূহের প্রতি ঘনিষ্ঠ মনোযোগ দেন। তিনি তুলে ধরেন যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কেবল ও কেবলমাত্র  বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে সর্বহারারই নয় বরং নিজ নিপীড়িকদের বিরুদ্ধে সকল উপনিবেশেরও। তিনি বলেন আন্তর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলন এবং জাতীয় মুক্তি আন্দোলন-এই দুই শক্তির মধ্যে ফিউশন রয়েছে এবং এই যে নিপীড়িত জাতিসমূহের ভর বিশ্বের সংখ্যাগুরু জনগণ এবং বিশ্ব বিপ্লবে তা হবে নির্ধারক। তিনি উপসংহার টানেন যে বিপ্লব নিপীড়িত দেশসমূহের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, কিন্তু এই বাস্তবতা ইউরোপে বিপ্লবকে নেতিকরণ করছেনা, যা প্রদর্শিত হয়েছে এটা দ্বারা যে কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটা সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশ সাম্রাজ্যবাদী ঘেরাওয়ের মধ্যে বিকশিত হতে পারে। মার্কসের ধারণা বিকশিত করে লেনিন বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক ভিত্তিকে স্থাপন করেন সাম্রাজ্যবাদকে অবনত করতে ও বিপ্লবকে বিকশিত করতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলনের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে। যদিও কমিউনিস্টদের জন্য শ্লোগান হচ্ছে “সকল দেশের সর্বহারা এক হও!”, তিনি প্রস্তাব করেন সেই শ্লোগান যা দুইটি শক্তির সংগ্রামকে পথ দেখাবেঃ “সকল দেশের সর্বহারা এবং দুনিয়ার CALENDARIO2010pcpজনগণ এক হও!” যখন থেকে সাম্রজ্যাবাদ নিপীড়িত জাতিসমূহকে অধিক থেকে অধিকতর লুন্ঠন করে আসছে তখন থেকে জাতিয় মুক্তি আন্দোলন বিশ্বের জন্য যে বিরাট গুরুত্ব বহন করছে যা এক পর্যাযে শক্তিশালি বিপ্লবী ঝড়ে জেগে ওঠে যাকে অবশ্যই নিজ নিজ কমিউনিস্ট পর্টিসমূহর নেতৃত্ব প্রাপ্ত হতে হবে তাকে ভিত্তি করে চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ লেনিনের রণনীতি বিকশিত করেন। এভাবে জাতিয় মুক্তি আন্দোলন আন্তর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলনের সাথে ফিউশনকৃত হয় এবং এই দুই শক্তি হচ্ছে বিশ্ব ইতিহাসের বিকাশের চালিকাশক্তি।

সভাপতি গনসালো শিক্ষা দেন যে কমিউনিস্টদের যে রণনীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে তা লেনিনের গড়ে তোলা এবং মাও কর্তৃক বিকাশকৃত থিসিসকে ভিত্তি করে হতে হবে।

আন্তর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলন

এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সর্বহারার তত্ত্ব ও অনুশীলন। সর্বহারা শ্রেনী তিনটি স্তরে সংগ্রাম করেঃ তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। সর্বহারা যেহেতু ইতিহাসে চুড়ান্ত শ্রেণী হিসেবে আবির্ভুত, সে অব্যাহত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তা করে নিম্নলিখিত মাইলফলক দ্বারা গুরুত্বপ্রাপ্ত হয়ঃ

১৮৪৮-মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক বিশদকৃত কমিউনিস্ট ইশতেহার সর্বহারা শ্রেণীর ভিত্তি ও কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করে।

১৮৭২-প্যারি কমিউন, যেখানে প্রথমবারের মতো সর্বহারা শ্রেণী ক্ষমতা জয় করে

১৯০৫-বিপ্লবের মহড়া

১৯১৭-রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় এবং শ্রেণী সর্বহারার যৌথ একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং এক নয়া যুগের সূচনা করে

১৯৪৯-চীন বিপ্লবের বিজয় এবং সর্বহারার নেতৃত্বে যৌথ একনায়ত্বের প্রতিষ্ঠা যা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের গমন পথের সমাধান করে এবং বিশ্বে শক্তিসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটায়।

১৯৬০ দশকে চেয়ারম্যান মাও সেতুঙের নেতৃত্বে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টাপুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যে ক্ষুরধার সংগ্রামের মধ্যে সর্বহারা একনায়কত্বধীনে অব্যাহত বিপ্লব।

অধিকার ও দাবীদাওয়ার সংগ্রামে সর্বহারা শ্রেণী ইউনিয়ন ও ধর্মঘট সৃষ্টি করে যা অর্থনৈতিক সংগ্রামের যন্ত্রই কেবল নয়, বরং “আসন্ন মহাযুদ্ধের জন্য” শ্রেণীকে প্রস্তুত করা। অর্থনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে প্রধান অঙ্গ হচ্ছে ধর্মঘট এবং সাধারণ ধর্মঘট হচ্ছে অভ্যুত্থানের পরিপুরক, কিন্তু সোরেল, নৈরাজ্যবাদী ও অন্যরা যেমনটা বলে যে ক্ষমতা কেবল সাধারণ ধর্মঘটের মাধ্যমেই দখল করা যাবে-তা হচ্ছে ভুল। ক্ষমতা দখলের একটা কার্যকরী অঙ্গ হিসেবে আমরা উন্নততর জীবন জীবিকার জন্য সংগ্রাম বিকশিত করি।

সর্বহারাশ্রেণী একটা রাজনৈতিক যন্ত্র উতপাদন করে। মার্কস কর্তৃক যেমনটা সংজ্ঞায়িত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঙ্খী অপরাপর পার্টির সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ভিন্ন। পুরোনো শাসনে বাঁধা সকল শ্রমিক অভিজাততন্ত্র, ইউনিয়ন আমলাতন্ত্র, সংসদীয় পন্থাভিত্তিক বুর্জোয়া ওয়ার্কার্স পার্টিসমূহকে সৃষ্টি করেছে যে পুরোনো  সংশোধনবাদ তাকে ও তার প্রভাবকে মোকাবেলা করে নতুন ধরণের পার্টি (পার্টি অব দি নিউ টাইপ)র বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠা করেন লেনিন। চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ বন্দুকভিত্তিক পার্টি বিনির্মাণকে বিকশিত করেন এবং তিন উপাদানের বিনির্মাণের রূপরেখা দেন। সভাপতি গনসালো কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের সামরিকীকরণ এবং তিন উপাদানের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণের থিসিস প্রতিষ্ঠা করেন।

সর্বহারা শ্রেণী মতাদর্শ সৃষ্টি করেঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ বিশ্ব বিপ্লবের জন্য এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা, প্রধানত গনসালো চিন্তাধারা পেরুর বিপ্লবের জন্য।

মার্কসবাদ মার্কসের ধারণার ভিত্তিতে হয়েছে। মানবজাতির সৃষ্ট সর্বোতকৃষ্ট ধারণা থেকে মার্কস ও এঙ্গেলস গ্রহণ করেনঃ জার্মান ধ্র“পদী দর্শন, ইংলন্ডের রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং ফরাসী সমাজতন্ত্র- যার ওপর সর্বহারার মতাদর্শের ভিত্তি স্থাপন করেন। ভ্রান্ত অবস্থানসমূহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া মার্কসবাদ তার জীবনে একটি পাও ফেলেনি। সে প্রুঁধো ও নৈরাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, ড্যুরিঙের সৃজনশীল বিকাশের নামে দক্ষিণপন্থী বিচ্যুতির বিরুদ্ধে এবং জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক পার্টি উদ্ভূত সুবিধাবাদী অবস্থানসমূহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এঙ্গেলসের মৃত্যুর পর বার্ণস্তাইন ও কাউতস্কির সাথে পুরোনো সংশোধনবাদ জন্ম নিল, লেনিন এদের পরাজিত করতে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে নিজ প্রথম পর্বে মার্কসবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে-মার্কসবাদী দর্শন অথবা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, মার্কসবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র।

লেনিন মার্কসবাদকে বিকাশ করেন এবং তাকে দ্বিতীয় স্তর মার্কসবাদ-লেনিনবাদে উন্নীত করেন। এটা অর্জিত হয়েছিল পুরোনো সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে কঠিণ সংগ্রামের মধ্যে যা বদলে নয়া-কান্টবাদের প্রস্তাব করে মার্কসবাদী দর্শনকে অস্বীকার করছিল, যা হচ্ছে ভাববাদ এবং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ নয়। রাজনৈতিক অর্থনীতিতে তারা সর্বহারা শ্রেণীর মধ্যে বাড়ন্ত নিঃসকরণকে অস্বীকার করছিল এবং দাবী করছিল যে সর্বহারা শ্রেণী পুঁজিবাদ দ্বারা সন্তুষ্ট। তারা সাম্রাজ্যবাদ ও উদ্বৃত্ত মূল্যের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে তারা শ্রেণীসংগ্রাম ও বিপ্লবী সহিংসতাকে অস্বীকার করে হতাশাবাদ প্রচার করে। সংশোধনবাদ মানে নতুন পরিস্থিতির কথা বলে মার্কসবাদের নীতিমালার সংশোধন। লেনিন বলেন যে সংশোধনবাদ হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর সারির মধ্যে বুর্জোয়া মতাদশের বিকাশ এবং সাম্রাজ্যবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সংশোধনবাদকেও আমাদের অবশ্যই লড়তে হবে, যেহেতু তারা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। লেনিন জোর দেন যে সংশোধনবাদ ট্রেড ইউনিয়নকে এবং সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চায় এবং সমাজতন্ত্রে বিভক্তি সৃষ্টি করে। সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে এই কার্যকর ও বিরতিহীন সংগ্রামে প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে লেনিন আরো প্রস্তাব করেন সামাজিক দেশপ্রেমী ছদ্মবেশি পুরোনো সংশোধনবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে বিপ্লবী যুদ্ধে রূপান্তরের। লেনিন ব্যাখ্যা করেন যে বিপ্লবী সময়ে অবশ্যই নতুন সংগঠন সৃষ্টি করতে হবে যেহেতু প্রতিক্রিয়াশিলরা বৈধ সংগঠন ধ্বংস করতে পারে এবং আমাদের গোপন সংগঠন বিকশিত করতে হবে এমনকি গণ কাজের জন্য। এই মূলনীতিসমূহের ভিত্তিতে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি সহকারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অক্টোবর বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় স্তালিন লেনিনের কাজ অব্যাহত রাখেন। তিনি ত্রতস্কি, জিনোভিয়েভ এবং কামেনেভের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে ১৩ বছরের সংগ্রাম পরিচালনা করেন ১৯৩৭ সালে যার উপসংহার হয়। বিষয়গুলো প্রশাসনিকভাবে মীমাংসিত হয়েছে এমনটা বলা অসত্য। কমরেড স্তালিনের ঐতিহ্যের শতকরা ৭০ ভাগ সঠিক-মাওয়ের এই অবস্থানের সাথে আমরা একমত। কমিউনিস্ট হিসেবে আজকে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভুমিকা এবং নির্দিষ্টত এর ৭ম কংগ্রেসকে ভালমতো অধ্যয়ন করা এবং তার মধ্যে ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতিতে সংশোধনবাদীদের ততপরতাসমেত স্তালিনের ভুমিকার পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ করা।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিকাশে চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ মার্কসবাদকে তার সর্বোচ্চ শিখরে বিকশিত করেন, এভাবে সর্বহারা শ্রেণীর তত্ত্ব মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ-এ বিকশিত হল। এই কাজ সম্পাদিত হয়েছে একরোখা ও অধ্যবসায়ী সংগ্রামে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরকার ডান সুবিধাবাদী লাইনকে বিশেষত লিউ শাউচি ও তেঙ শিয়াও পিঙের সংশোধনবাদী লাইনকে চুর্ণ করে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তিনি সমকালিন ক্রুশ্চভের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং তার পরাজয়ে নেতৃত্ব দেন। মাও চীনে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সাধন করেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উলম্ফণ এবং মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটিত করেন। মাওবাদে যা মৌলিক তা হল রাজনৈতিক ক্ষমতার বিষয়, সর্বহারা শ্রেণীর ক্ষমতা, পার্টির নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর ভিত্তিতে সর্বহারা একনায়কত্বের ক্ষমতা। মাওবাদ হচ্ছে নিপীড়িত দেশগুলিতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের প্রয়োগ, বিশ্ব বিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণের এবং সর্বহারা একনায়কত্বাধীনে বিপ্লবের ধারাবাহিকতার।

আমাদের কমিউনিস্টদের তিনটি মহান তরবারি রয়েছেঃ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা মার্কস, মহান লেনিন এবং চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ। আমাদের মহান কর্তব্য হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদকে উত্থাপন, রক্ষা ও প্রয়োগ করা এবং বিশ্ব বিপ্লবের কমান্ড ও গাইড হিসেবে স্থাপন করা।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের বিকাশকে অব্যাহত রেখে, পেরুভিয়ান বিপ্লবকে বিকশিত করে এবং বিশ্ববিপ্লবকে সমর্থন করে সভাপতি গনসালো আমাদের পার্টি ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে আমাদের অপারেজয় ও অম্লান মতাদর্শ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন, রক্ষা করেন এবং প্রয়োগ করেন। আমাদের জন্য যা প্রধান তাহচ্ছে গনসালো চিন্তাধারাকে সংজ্ঞায়িত করা, কারণ এটাই হচ্ছে বিজয়ের নিশ্চয়তা যা আমাদের পরিচালিত করে গণতান্ত্রিক বিপ্লব, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং সাম্যবাদের দিকে।

সভাপতি গনসালো আমাদের শিক্ষা দেন যে বিশ্ববিপ্লবের প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর বুক থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াকে ঝেটিয়ে বিদেয় করার তিনটি মুহুর্ত রয়েছেঃ

১ম, বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক আত্মরক্ষা;

২য়, রণনৈতিক ভারসাম্য; এবং

৩য়, রণনৈতিক আক্রমণ।

তিনি এই উপসংহারে পৌঁছেন বিপ্লবের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের নিয়ম প্রয়োগ করে, যেহেতু দ্বন্দ্ব সবকিছুর পরিচালক এবং সংগ্রামে সকল দ্বন্দ্বের দুটি দিক রয়েছে; এই ক্ষেত্রে বিপ্লব এবং প্রতিবিপ্লব। প্রতিবিপ্লবের আক্রমণাবস্থার বিরোধিতায় বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক আত্মরক্ষা ১৮৭১-এ প্যারি কমিউনসহকারে শুরু হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে শেষ হয়। রণনৈতিক সাম্যাবস্থা শুরু হয় চীন বিপ্লবের বিজয়, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং শক্তিশালি জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিকাশের পর। পরবর্তীতে বিশ্ববিপ্লব রণনৈতিক আক্রমণে প্রবেশ করে, এই মুহুর্তকে ইতিহাসে ১৯৮০র দশকের সাথে যুক্তভাবে চিহ্নিত করা যায় যাতে আমরা দেখি সূচক যথা ইরান-ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তান, নিকারাগুয়া, পেরুতে গণযুদ্ধের সুচনা, একটা যুগ “পরবর্তী ৫০ থেকে ১০০ বছরের” মধ্যে বাঁধা। তারপর থেকে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিকশিত হবে এবং যার সমাধান আমাদের সাম্যবাদের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের ধারণাগুলো হচ্ছে সাম্যবাদে পৌঁছার আস্থাসহকারে এক দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার, এমনকি যদি এর অর্থ হয় যে তা একঝাঁক বাঁক ও উল্টানোর মধ্য দিয়ে যাবে, যা আবশ্যিকভাবে ঘটবে। অধিকন্তু, এটা আশ্চর্য কিছু নয় যে আমরা বিশ্ববিপ্লবে এই তিন মুহুর্তকে প্রয়োগ করবো, যেহেতু চেয়ারম্যান মাও তাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করেছেন। কমিউনিস্ট হিসেবে আমাদের শুধু নির্দিষ্ট মুহুর্তকে দেখলে চলবেনা বরং আগামী অনেক বছরকে দেখতে হবে।

. বর্তমান পরিস্থিতি এবং পরিপ্রেক্ষিত

বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিপ্লবের রণনৈতিক আক্রমণে প্রবেশ করেছি, আমরা “৫০ থেকে ১০০ বছর”-এর মধ্যে যাতে সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বপ্রতিক্রিয়াসমেত ডুবে যাবে এবং আমরা সেই স্তরে প্রবেশ করবো যেখানে সর্বহারা শ্রেণী দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় স্থাপিত হয় এবং তার সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে। সেখান থেকে সামনের দিকে দ্বন্দ্ব হবে কমিউনিজমের পথের দিকে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে পুনপ্রতিষ্ঠা আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর বিকাশের শক্তিশালি ধারাকে নেতিকরণ করেনা, বরং দেখায় যে পুনপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টাপুনপ্রতিষ্ঠার মধ্যে সংগ্রাম কত মারাত্মক যেখান থেকে কমিউনিস্টগণ শিক্ষা নেন পুঁজিবাদের পুনপ্রতিষ্ঠাকে প্রতিরোধ করতে এবং নিশ্চিতভাবে সর্বহারাশ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।

আমরা চেয়ারম্যান মাও সেতুঙের এই থিসিসকে পুননিশ্চিত করি যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সংগ্রামের একটা পর্যায়কাল শুরু হয়েছে[এটা লেখা হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্বে–ইংরেজী অনুবাদক]; তাই যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লব অথবা সমাজাতান্ত্রিক বিপ্লব করেন সেইসাথে যারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন করেন তাদের জন্য বিশ্ব পরিসরে দুই প্রধান শত্রু মূর্ত হয় এবং তাদের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হচ্ছে যে প্রতিটি আন্দোলন তার প্রধান শত্রু নির্দিষ্ট করে এবং অন্য পরাশক্তিসমূহের অথবা অন্য শক্তিসমূহের আধিপত্যকে মোকাবেলা করতে চায়। পেরুতে, বড় বুর্জোয়া ও ভুস্বামীদের সাথে আঁতাত করে মার্কিন (ইয়াঙ্কি) সাম্রাজ্যবাদ আমাদের আধিপত্য করে। যাহোক, বিশ্বপরিসরে বিশ্ব একাধিপত্যের জন্য দুই পরাশক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমরা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করি, কিন্তু সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ অথবা অন্য কোন শক্তির আধিপত্য দ্বারা এর প্রতিস্থাপন অনুমোদন করিনা। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ আগ্রাসন রয়েছে যা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, চীন ও সেইসাথে অন্য পাশ্চাত্য শক্তির সাথে একাধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারত এবং সেখানে প্রধান শত্রু হিসেবে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সংগ্রাম চালাতে হবে এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অথবা অন্য কোন শক্তির আধিপত্যের অনুপ্রবেশ অনুমোদন করা যাবেনা। সমস্যা হচ্ছে সংগ্রাম সঠিকভাবে বিকশিত করা হয়নি রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা কমিউনিস্ট পার্টির অভাবে। সংশ্লেষণে, দুই পরাশক্তি রয়েছে যারা হচ্ছে প্রধান শত্রু যার মধ্যে একটা  হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে প্রধান এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের ততপরতাকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনা।

চেয়ারম্যান মাওয়ের থিসিসঃ তিন বিশ্ব পৃথকীকৃত হয় কে আমরা ন্যায্য এবং সঠিক মনে করি এবং এই যে এটা শ্রেণী ও দ্বন্দ্বের বিশ্লেষণ ভিত্তিক বিশ্বে শক্তিসমূহের বন্টনসংক্রান্ত লেনিনের থিসিসের সাথে যুক্ত। আমরা তেঙ শিয়াও-পিং এর সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদী তিনবিশ্বের ভ্রান্ত প্রতিনিধিত্বকে প্রত্যাখ্যান করি যা বিপ্লবের সাথে বেঈমানী করার লক্ষ্যে মার্কিন অথবা সোভিয়েত ইউনিয়নের লেজুড়বৃত্তি করে। এথেকে যাত্রা করে, সভাপতি গনসালো বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেন যাতে তিনবিশ্ব পৃথকীকৃত হয় এবং আরো প্রদর্শন করে যে এটা একটা বাস্তবতা।

প্রথম বিশ্ব হচ্ছে দুই পরাশক্তি মার্কিন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যারা বিশ্বে একাধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারত এবং যা একটা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ জন্ম দিতে পারে। তারা হচ্ছে পরাশক্তি কারণ তারা অন্য শক্তিসমূহের চাইতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে অধিকতর শক্তিধর। মার্কিনের রয়েছে অ-রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া সম্পত্তিকেন্দ্রিক অর্থনীতি, অধিকারের ওপর বেড়ে চলা বিধি-নিষেধসহকারে রাজনৈতিকভাবে এটা এক বুর্জোয়া গণতন্ত্র বিকশিত করে। এটা একটা প্রতিক্রিয়াশিল উদারতাবাদ; সামরিকভাবে পাশ্চাত্যে এটা সবচেয়ে শক্তিধর এবং এর বিকাশের এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন রাজনৈতিকভাবে আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ার ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বসমেত অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়াভিত্তিক এবং এটা একটা উচ্চপর্যায়ের সামরিক শক্তি যদিও এর বিকাশের প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত। মার্কিন তার আধিপত্যকে বজায় রাখতে চায় এবং তা সম্প্রসারণও করতে চায়। সোভিয়েতের লক্ষ্য সম্প্রসারণের দিকে বেশি কারণ সে একটা নতুন পরাশক্তি এবং অর্থনৈতিকভাবে তার ইউরোপের ওপর আধিপত্যের স্বার্থ রয়েছে নিজ পরিস্থিতি উন্নত করার লক্ষ্যে। সংশ্লেষণে, তারা দুই পরাশক্তি যারা কোন ব্লক গঠণ করেনা কিন্তু দ্বন্দ্ব রয়েছে, পরিস্কার পারস্পরিক পার্থক্য রয়েছে এবং দুনিয়াকে পুনবিভাজনের জন্য তারা ঘোঁট পাঁকানো ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে আগায়।

দ্বিতীয় বিশ্ব হচ্ছে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ যারা পরাশক্তি নয় কিন্তু ক্ষুদ্রতর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি যথা-জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স, ইতালী প্রভৃতি যাদের পরাশক্তির সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে কারণ তারা ডলারের অবমূল্যায়ণ, সামরিক বিধি-নিষেধ এবং রাজনৈতিক আরোপ কামনা করে; এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ পরাশক্তিসমূহের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিতে চায় নিজেদের নয়া পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত করতে যেহেতু তারাও নিপীড়িত জাতিসূহের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ চালায় এবং অধিকন্তু তাদের মধ্যে তীক্ষè দ্বন্দ্ব বিরাজমান।

তৃতীয় বিশ্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিপীড়িত দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত। তারা হচ্ছে উপনিবেশ অথবা আধাউপনিবেশ যেখানে সামন্তবাদ ধ্বংস হয়নি ও সেই ভিত্তিতে এক আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ গড়ে ওঠে। তারা পরাশক্তি অথবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে বাঁধা। সাম্রাজ্যবাদের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব রয়েছে, অধিকন্তু তারা তাদের নিজ বড় বুর্জোয়া ও সামন্তদের সাথে লড়ে যারা উভয়ই সাম্রাজ্যবাদের সাথে বিশেষত পরাশক্তির সেবায় ও তাদের সাথে আাঁতাতে আবদ্ধ।

এসবই আমাদের ভিত্তি দেয় যার ওপর কমিউনিস্টরা বিশ্ববিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল প্রতিষ্ঠা করতে পারে। চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ বিশ্ববিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়েছিলেন, কিন্তু চীনা সংশোধনবাদীরা তা ধামাচাপা দিয়েছে। তাই, তার নিজ ধারণা থেকে বের করে আনার কাজ আমাদের ওপর বর্তায়, বিশেষত যদি নতুন পরিস্থিতি দৃশ্যমান হয়।

আমাদের পার্টি এই মত পোষন করে যে বর্তমান বিশ্বে তিনটি মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছেঃ

১)         একদিকে পরাশক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ অপরদিকে এদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জাতিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এখানে তিন বিশ্বের থিসিস মূর্ত হয় এবং আমরা একে সূত্রায়িত করি এইভাবে কারণ দ্বন্দ্বের শাঁস রয়েছে পরাশক্তির মধ্যে নিহিত কিন্তু এটা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথেও দ্বন্দ্ব। এটাই হচ্ছে প্রধান দ্বন্দ্ব এবং এর সমাধান হচ্ছে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের বিকাশ ও বিজয়।

২)         সর্বহারাশ্রেণী ও বুর্জোয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব যার সমাধান রয়েছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

৩)         পরাশক্তিসমূহের নিজেদের মধ্যে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব, পরাশক্তিসমূহ এবং ক্ষুদ্রতর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং চুড়ান্ততঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, যা বিশ্বে একাধিপত্যের জন্য যুদ্ধের দিকে চালিত করে এবং লুন্ঠনের সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের দিকে, যাকে সর্বহারা শ্রেণী অবশ্যই গণযুদ্ধের দ্বারা এবং পরিণামে বিশ্ব গণযুদ্ধের দ্বারা অবশ্যই বিরোধিতা করবে।

আমরা সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদ দ্বন্দ্বকে তালিকাবদ্ধ করিনি কারন এটা কেবল মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক স্তরে বিরাজ করছে, যেহেতু কোথাও রাষ্ট্র হিসেবে বিরাজ করছেনা; আজকে কোন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এটা অস্তিত্বমান ছিল এবং আজকে অস্তিত্বমান বলাটা হচ্ছে অন্তঃসারে এটা দাবী করা যে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক, যা হচ্ছে সংশোধনবাদী মতাবস্থান।

দ্বন্দ্বের তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বিশ্ব পরিস্থিতির বিশ্লেষণকে এবং এর রণনৈতিক ও দ্বন্দ্বমুখর অঞ্চলসমুহের মধ্যে এর রণনীতি ও রণকৌশলকে মূর্তকরণ করাকে সেবা করে। আজকে, সর্বাধিক আগুনঝরা দ্বন্দ্বমুখর স্থানসমূহ হচ্ছেঃ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া যেখানে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্পুচিয়ার সংগ্রাম, যেখানে ব্যাপক জনগন কেন্দ্রিভূত সেই এশিয়ার নিরংকুশ রণনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। উদাহারণস্বরূপ, ভারতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিকশিত কমিউনিস্ট পার্টি থাকতো এটা বিপ্লবকে শক্তিমত্ততার সাথে এগিয়ে নিতে সেবা করতো। মহা তেলক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্যে, অদূরপ্রাচ্যের ইস্যুসমূহের সাথে এবং জাতীয়তাবাদী এবং এমনকি প্রতিক্রিয়াশিল আন্দোলনের সাথে বাঁধা পরাশক্তি ও শক্তিসমূহের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। আরেকটি এলাকা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে গেরিলা আন্দোলন রয়েছে যা পরাশক্তিসমূহ কর্তৃক দখলকৃত সেগুলোকে দখলদারী বাহিনীতে পরিণত করতে এবং তাদেরকে আধিপত্য করতে। লাতিন আমেরিকা হচ্ছে সংগ্রামের এক গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্র, মধ্য আমেরিকা (নিকারাগুয়া ও এল সালভাদর) থেকে পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জের অস্থিরতা পর্যন্ত (হাইতি, প্রভৃতি) এবং পেরুর গণযুদ্ধ, এক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, গনসালো চিন্তাধারা বিপ্লব যা একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য লড়াই করে কোন পরাশক্তি অথবা শক্তির প্রতি আত্মসমর্পন না করে। ইউরোপে, যেখানে অব্যাহত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সামরিক এ্যাকশন বিকশিত হচ্ছে, তাদের মতাদর্শকে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন এবং অধ্যয়ন করা দরকার যে-রাজনীতিকে তারা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, যে-শ্রেণীকে তারা সেবা করে, সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শের সাথে তাদের যোগাযোগ এবং বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের মধ্যে তাদের ভুমিকা, সেইসাথে সমকালীন সংশোধনবাদ সম্পর্কে তাদের মতাবস্থান। এই আন্দোলনসমূহ পুরোনো পৃথিবীতে বিপ্লবী পরিস্থিতির যে অসমান বিকাশ বিকাশ বিরাজ করছে তাকে প্রকাশ করে। সংঘাতের এই বিষয়সমূহের যে কোনটি একটা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্বলিত করতে পারে, একটা পরিস্থিতি যা সংঘটিত হতে পারে যখন যেকোন একটি পরাশক্তির রণনৈতিক শ্রেষ্ঠতা মূর্ত হয়। তাই, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ ভিত্তিক এবং গণযুদ্ধের জন্য ও তাতে তাদের সামরিকীকরণসহকারে নিয়োযিত কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের ওপর নির্ভর করা বেশি বেশি জরুরী ও নির্ধারক। বিশ্ববিপ্লব সাধনে গৌণ ও প্রধান গুরুত্বের অঞ্চলসমূহের রণনৈতিক মূর্তকরণ হচ্ছে বিশ্ববিপ্লবে প্রতিটি অঞ্চল ও প্রতিটি পার্টি যে ভুমিকা পালন করবে তার প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি।

কমিউনিস্ট পার্টিসমুহের জন্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করা সমস্যা নয় বরং গণযুদ্ধের ওপর, যেহেতু এমন একটা সংঘাত থেকেই সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে ক্ষমতা জন্ম নেবে। আমরা বিশ্বাস করি যে সাম্রাজ্যবাদ বিদ্যমান থাকলে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। যা চেয়ারম্যান মাও বলেছেন তা নিশ্চিত, হয় বিপ্লব যুদ্ধকে ঠেকাবে নয় বিশ্বযুদ্ধ বিপ্লব ডেকে আনবে। একটা বিশ্বযুদ্ধ হতে হলে কোন একটা পরাশক্তির রণনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব মূর্ত হতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক তাত্ত্বিকদের অনুসারে, এই পরিস্থিতির জন্ম নেবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রথম মুহর্তে অথবা যুদ্ধরত প্রতিটি পক্ষের নিরংকুশ পারমাণবিক বোমা হামলার মধ্যে। একে অনুসরণ করবে দ্বিতিয় মুহুর্ত যেখানে কোটি কোটি সংখ্যার বাহিনীর দখলদারিত্ব এবং ফলতঃ (যেহেতু লক্ষ্য হচ্ছে লুন্ঠনের ভাগ-বাটোয়ারা বিশেষতঃ নিপীড়িত দেশসমূহের) এলাকা দখলের জন্য প্রচলিত যুদ্ধ। তখন এটা একটা ব্যাপক ও ভয়াবহ গণহত্যার মধ্যে প্রবেশ করবে যা সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের জন্য এবং শ্রেণীর জন্য বিরাট শর্ত সৃষ্টি করবে গণযুদ্ধে জেগে ওঠায়। তাই, যদি আরেকটা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধ সূচিত হয়, প্রথমে আমরা একে বিরোধিতা করবো, এবং দ্বিতীয়ত, আমরা একে ভয় পাবনা কারণ আমরা বিপ্লবকে কেন্দ্রবিন্দু করবো। তৃতিয়ত, বিপ্লবকে কেন্দ্রবিন্দু করা মানে সর্বহারা শ্রেণি কর্তৃক তার কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের মাধ্যমে গণযুদ্ধ পরিচালনা করা এবং চতুর্থত, প্রতিটি ধরণের দেশে বিপ্লবের ধরণ অনুসারে এই গণযুদ্ধ বিশেষায়িত হবে। তাই, বিশ্বগণযুদ্ধ হচ্ছে আজকের দিনের ধারা।

. আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন

আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস হচ্ছে সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ধারা, যার মাধ্যমে বিশ্বের কমিউনিস্টরা লড়েছে এবং লড়াই করে চলেছে ঐক্যের জন্য তাদের অপরিবর্তনীয় লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে; একটা কমিউনিস্ট সমাজের জন্য। এই বীরত্বব্যাঞ্জক সংগ্রামে, তিনটি আন্তর্জাতিক গড়ে ওঠেছিল।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা অথবা প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৪ সালে মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক। তারা বাকুনিনের নৈরাজ্যবাদী মতাবস্থানকে কঠিণ সংগ্রামে বিরোধিতা ও চুর্ণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন যে সর্বহারা শ্রেণীর কেবল একটি মতবাদই আছেঃ মার্কসবাদ।

লেনিন বলেন যে প্রথম আন্তর্জাতিক কর্তৃক পালনকৃত ভুমিকা হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর মতবাদের মতাদর্শিক খুঁটি প্রথিতকরণ। আন্তর্জাতিক বিভক্তি, এবং যখন এর দায় মার্কস ও এঙ্গেলসের ওপর চাপানো হল, তারা জবাব দেন যে যদি এমন বিভক্তি না ঘটতো, আন্তর্জাতিক যেকোন ঘটনায়ই তাদের হাতে মারা যেত যারা নীতি বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এঙ্গেলস কর্তৃক ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা সংগঠন ও পার্টিসমূহের বহৃগুণ বাড়ানোয় সেবা করে, কিন্তু এঙ্গেলসের মৃত্যুর সাথে জন্ম নেওয়া পুরনো ধরণের সংশোধনবাদ লেনিন কর্তৃক রুখে দেওয়া ও চুর্ণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক দেউলিয়া হয়ে গেল যখন তার নেতৃত্ব (কাউতস্কি ও বার্ণস্তাইন) সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধকে বিরোধিতা করে তাকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করার বদলে লুন্ঠনের যুদ্ধকে ও নিজ দেশের বুর্জোয়াকে সমর্থন করে। এভাবে তারা সামাজিক-দেশপ্রেমিতে পরিণত হয়। ১৯১৯ সালে লেনিন তৃতীয় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক গড়ে তোলেন একে বিশ্ববিপ্লব সাধনের এবং সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার যন্ত্র হিসেবে উপলব্ধি করে। ১৯২০-দশকে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকে দুটি সমস্যা উদ্ভূত হয় যার মহা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ঃ জার্মানীর সমস্যা (অথবা বরং একটা অগ্রসর দেশে বিপ্লব) এবং চীনের সমস্যা (অথবা একটা পশ্চাদপদ দেশে বিপ্লব)। পরিস্থিতি অধিকতর শোচনীয় হয়ে ওঠলো ফ্যাসিবাদের উদ্ভব ও বিজয়সহকারে এবং যুক্তফ্রন্টকে কীভাবে বোঝা হবে সেই প্রশ্নে। থিওরেজ ও তোগলিয়াত্তি সংশোধনবাদী মতামত দিল পুরোনো শাসনকে ধ্বংস করার চেয়ে বরং সমর্থন দিতে চেয়ে পরমভাবে ফ্যাসিবাদ-বিরোধি সংগ্রামে কেন্দ্রিভূত করে। ১৯৪৩ সালে আন্তর্জাতিক ভেঙে দেওয়া হল কেবল একটা তথ্য কমিটি রেখে। কমিউনিস্টদের জন্য ও আমাদের পার্টির জন্য একটা জরুরী কর্তব্য হচ্ছে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী এর ৭ম কংগ্রেসের মূল্যায়ণ করা এবং কমরেড স্তালিনের মূল্যায়ণ করা।

আন্তর্জাতিক স্তরে কমিউনিস্টদের ঐক্যের জন্য সংগ্রাম দীর্ঘ ও জটিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সমকালীন সংশোধনবাদ-বিরোধি সংগ্রামে এটা দেখা গেছে। টিটোকে ১৯৪৮ সালে নিন্দা জানানো হয়। ব্রাউডারের ভাবধারাও এক নেতিবাচক ভুমিকা পালন করে। ওয়ার্কার্স ও কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ ১৯৫৭ ও ১৯৬০ সালে মস্কোতে মিলিত হয় ১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএসইউ)র বিশতম কংগ্রেসের পর-যাতে ক্রুশ্চভ ইতোমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বহারা একনায়কত্বকে কব্জা করে ফেলেছে এবং কমরেড স্তালিনকে মোকাবেলার আবরণে এর ওপর আক্রমণ করেছে। যাহোক, সারা বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্মান ছিল তখনো বিরাট এবং এমনি পরিস্থিতিতে ১৯৫৭ ও ১৯৬০-এর সভাগুলি দ্ব্যার্থতাবোধক মতাবস্থানে ঐক্যমত পোষণ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিসি)(বিশেষত কমরেড মাও সেতুঙের) কর্তৃক এবং আলবেনিয়ার লেবার পার্টি কর্তৃক ঊর্ধ্বে তুলে ধরা দৃঢ় মতাবস্থানসমূহ সত্ত্ব্ওে। চেয়ারম্যান মাওয়ের মতাবস্থানসমূহ সিপিএসইউকে বাধ্য করে তার কিছু মত বদলাতে, কিন্তু সমকালিন সংশোধনবাদি মতাবস্থানসমূহ সুব্যবস্থিত হয় ১৯৬১ সালে যখন সিপিএসইউ তার বাইশতম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করে।

সিপিসিকে নেতৃত্ব দিয়ে চেয়ারম্যান মাও (“তিন শান্তিপূর্ণ” এবং “দুই সমগ্র”-তে সুব্যবস্থিত) নয়া সংশোধনবাদীদের সারকে সারসংকলিত করেন। “শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান” সহকারে, ক্রুশ্চেভ লেনিনের রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের পুরোনো থিসিসকে বিকৃত করে এই প্রস্তাবনা করতে যে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দেলনের সাধারণ ধারা হচ্ছে “শান্তিপুর্ণ সহাবস্থান”। ক্রুশ্চেভের জন্য সমস্যাটা ছিল যুদ্ধ প্রতিরোধ করা, কারণ তার অনুসারে, পারমাণবিক বোমা শোষক ও শোষিতের মধ্যে পার্থক্যকৃত নয় এবং মানুষকে ভ্রাতৃত্বসুলভ করতে হয়েছে মানবতার নিধন রুখতে। “শান্তিপুর্ণ উত্তরণ” প্রস্তাব করে যে বিপ্লবের বিপ্লবী সহিংসতার কোন প্রয়োজন নেই বরং একটা সামাজিক ব্যবস্থাকে আরেকটায় রূপান্তর করা যায় “শান্তিপুর্ণ পথ”: নির্বাচন অথবা সংসদীয় পন্থায়। “শান্তিপুর্ণ প্রতিযোগিতা” ধারণা এই চিন্তা ব্যক্ত করে যে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে সাম্রাজ্যবাদীদের এটা দেখাতে যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা শ্রেষ্ঠতর এবং এভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের সমাজতন্ত্রী হতে অনুপ্রাণিত করা।“সমগ্র জনগণের রাষ্ট্র” ছিল সংশোধনবাদী থিসিস যার দ্বারা ক্রুশ্চভ রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্রকে অস্বীকার করতে সচেষ্ট হয়। এটা নির্দিষ্টভাবে সর্বহারা একনায়কত্বের দিকে তাক করে ছিল। “সমগ্র জনগণের পার্টি” ছিল আরেক বিকৃতি যা সর্বহারা শ্রেণীর পার্টি হিসেবে পার্টির শ্রেণী চরিত্রকে অস্বীকার করে। ক্রুশ্চভের মতে সিপিএসইউর বাইশতম কংগ্রেস ছিল কমিউনিস্টদের নয়া কর্মসুচি এবং এভাবে কমিউনিস্ট ইশতেহার কে “উদারতা”, “সমতা” এবং “ভ্রাতৃত্ব” র বুর্জোয়া শ্লোগান দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হলো। ইশতেহার হচ্ছে কমিউনিস্টদের কর্মসুচি এবং এর নেতিকরণ মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে সংগ্রাম সৃষ্টি করেছে এবং তীক্ষ্ণ করেছে।

১৯৬৩-র জুন ১৪তে “আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাধারণ লাইনের ওপর প্রস্তাবনা” (“চীনা পত্র” হিসেবেও পরিচিতি) প্রকাশিত হল। তারপর “নয় মন্তব্য” প্রচারিত হলো যাতে চেয়ারম্যান মাও ও সিপিসি প্রতিভাদিপ্তভাবে সর্বোতভাবে আধুনিক সংশোধনবাদকে সমালোচনা ও চুর্ণ করলো।

রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক ভিত্তি-যাকে হতে হতো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা তা তখনো সংজ্ঞায়িত না হওয়ার কারণে আমরা বুঝি চেয়ারম্যান মাও ও সিপিসি অনুভব করেছিলেন যে ঐ পরিস্থিতিতে একটা নতুন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক গঠণ করা অসুবিধাজনক। এটা প্রধানত এই বাস্তব সত্যের কারণে যে আনোয়ার হোজার নেতৃত্বে আলবেনিয়ার লেবার পার্টি মাওসেতুঙ চিন্তাধারা গ্রহণ করেনি এবং নয়া বিকাশকে অস্বীকার করে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ওপর কেবল ভিত্তি করে এক আন্তর্জাতিকের কথা বলে। সারে, হোজা মাও সেতুঙ চিন্তাধারার বিরোধী ছিল।

বিশ্বে চেয়ারম্যান মাওয়ের বাড়ন্ত প্রভাব মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকাশিত হল। সিপিসি খুবই জরুরী সমস্যায় আলোকপাত করলো যথাঃ সংশোধনবাদী লিউ শাউচি ও তেঙ শিয়াও-পিং-কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ক্ষমতা দখল পুনরুদ্ধার করা এবং সর্বহারা একনায়কত্বধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখার পদ্ধতি নিয়ে। দেশে শ্রেণীসংগ্রামে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সংশোধনবাদ-বিরোধি সংগ্রামে চেয়ারম্যান মাও সর্বহারার শ্রেণীর মহান শিক্ষকে পরিণত হলেন এং বিশ্ব বিপ্লবের নেতায়। তার চিন্তাধারা মার্কসবাদের তৃতিয় স্তরে বিকশিত হল। সেই যুগে, কমিউনিস্টগণ এই বিকাশকে “মাও সেতুঙ চিন্তাধারা” হিসেবে নির্দেশ করেছেন। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি) ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে পার্টি ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে। এটা অর্জিত হয়েছে সভাপতি গনসালোর এবং পার্টির লাল অংশের সংগ্রামের ফল হিসেবে যারা ১৯৬৬ সাল থেকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারার প্রতি অনুগত ছিলেন। সভাপতি গনসালো ১৯৬২র দিকে চেয়ারম্যান মাওয়ের মতাবস্থানসমুহকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন, এবং সেই দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে পিসিপির লাল অংশ গড়ে তোলায় এগিয়ে গেলেন। প্রকৃত কমিউনিস্টগণ অপেক্ষা করছিলেন সিপিসি কর্তৃক মাওবাদকে মার্কসবাদের তৃতিয় স্তর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার, কিন্তু সেপ্টেম্বর ১৯৭৬-এ চেয়ারম্যান মাওয়ের মৃত্যুর সাথে চীনা সংশোধনবাদীরা একটা প্রতিবিপ্লবী ক্যু সংঘটিত করলো চেয়ারম্যান মাও ও তাঁর চিন্তাধারার দিকে তাক করে। অতঃপর, মার্কসবাদীদের ঐক্য মারাত্মক ও জটিল সমস্যার মুখোমুখি হল, কিন্তু পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি সাথে সাথে চীনে প্রতিবিপ্লবী ক্যু ও সংশোধনবাদী ক্ষমতা দখলকে নিন্দা জানিয়ে দৃঢ় এবং অদোলায়মান রইল। এটা এমন একটা সময় যখন ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে পিসিপির বর্ধিত রাজনৈতিক ব্যুরো ঘোষণা করলো, “মার্কসবাদী হতে হলে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারার প্রতি অনুগত হতে হয়।”

চেয়ারম্যান মাওয়ের মৃত্যু এবং চীনে তেঙ ও তার গং কতৃক সংশোধনবাদী ক্ষমতা দখলের পর বিশ্বে কমিউনিস্টরা  বিশ্ব বিপ্লবের কেন্দ্র অথবা ঘাঁটিবিহীন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে রইলো। প্রতিবিপ্লবীরা চেয়ারম্যান মাও এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারার প্রযোজ্যতাকে নেতিকরণ করতে তেঙ শিয়াও-পিং (চীনা সংশোধনবাদ), হোজা (আলবেনীয় সংশোধনবাদ) এবং ব্রেজনেভ (রুশ সংশোধনবাদ)-এর ত্রয়ী সংশোধনবাদী আক্রমন সংঘটিত করে তাদের থাবা বিস্তার করলো। এই পরিস্থিতিতে, ১৯৭৯ সালে, পিসিপির প্রথম সম্মেলনে, সভাপতি গনসালো সমগ্র পার্টিকে সংশোধনবাদী ত্রয়ী হামলার বিরুদ্ধে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে রক্ষা ও প্রয়োগ করার আহ্বাণ জানালেন। পার্টির নীতিগত অবস্থান দৃঢ় ও অপরিবর্তনীয় রইল। ১৯৮০তে পিসিপি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারার ভিত্তিতে গনযুদ্ধ পরিচালনা করলো। এবং গণযুদ্ধের প্রয়োগ ও বিকাশের মাধ্যমেই পিসিপি মার্কসবাদের তৃতীয় স্তর হিসেবে মাওবাদের উপলব্ধিকে অধিকতর অগ্রসর করলো। তাই, ১৯৮২র মেতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে পার্টি একমত হয় যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ ছিল মার্কসবাদের তৃতিয় স্তর। বিশ্বে মাওবাদকে রক্ষায় অগ্রবাহিনীতে পিসিপি ছিল একমাত্র পার্টি যে গ্রহণ করেছিল বিশ্বের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদের ঐক্যের জন্য সংগ্রামের করণীয়কে যাতে এই মতাদর্শ বিশ্ব ও পেরুভিয়ান বিপ্লবের কমান্ড ও গাইডে পরিণত হয়।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের প্রয়োগ প্রতিটি বিপ্লবে মূর্ত হতে হবে যাতে এটা একটা যান্ত্রিক সূত্রে পরিণত না হয়। এই কারণে, পেরুভিয়ান বিপ্লব সভাপতি গনসালো ও গনসালো চিন্তাধারাকে সৃষ্টি করেছে যা হচ্ছে পার্টি ঐক্যের ভিত্তির প্রধান নীতি। প্রতিটি বিপ্লবকে অবশ্যই তার পথনির্দেশক চিন্তাধারা সৃষ্টি করতে হবে, যা ছাড়া না মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের কোন প্রয়োগ হতে পারে না কোন বিপ্লবী বিকাশ।

১৯৮০-র শেষে ১৩ কমিউনিস্ট পার্টি ও সংগঠন একটা বিবৃতি স্বাক্ষর করলো “মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, শ্রমিক ও সকল দেশের নিপীড়িতদের উদ্দেশ্যে” কমিউনিস্টদের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সংগ্রামকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান করে এবং চেয়ারম্যান মাওকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে কিন্তু মাওবাদকে সার্বজনীন প্রযোজ্যতাসহ তৃতীয় স্তর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব না করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি (আরসিপি-ইউএসএ) প্রধানত এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেয়। ১৯৮৩ সালে আরসিপি-ইউএসএ পিসিপির সাথে যোগাযোগ করে এবং তাকে ১৯৮০র বিবৃতি স্বাক্ষরে আহ্বান জানায়। পিসিপি এমন একটা বিবৃতিতে স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি জানায় যেহেতু সেখানে মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে বিবেচনা করা হয়নি; অধিকন্তু, আমরা ইতিমধ্যেই মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের ওপর নিজেদের ভিত্তি করছিলাম। মার্চ ১৯৮৪তে, এই সংগঠনসমূহের দ্বিতীয় সম্মেলন সংঘটিত হল এবং বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হলো যা একটা যুক্ত ঘোষণা অনুমোদন করলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিক নির্দেশ করে।

রিমে পিসিপির অংশগ্রহণ সংক্রান্ত আমাদের অবস্থান কেন্দ্রিভূত হয়েছে ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে রিম কমিটির কাছে লেখা এক চিঠিতেঃ “এই প্রশ্নে আমরা দুটি বিষয়কে পুনরুল্লেখ করতে চাই। প্রথম, আমাদের সম্পর্কের সূচনা থেকে আমাদের পার্থক্যের মূল ছিল এই মূল্যবাণ ও নির্ধারক প্রশ্নে যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ হচ্ছে সর্বহারা মতাদর্শের বিকাশে সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য একমাত্র, সত্য এবং নয়া স্তর যেখানে মাওবাদ হচ্ছে চাবিকাঠি। সেহেতু, ‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা’কে পছন্দে আমাদের আপত্তি। তাসত্ত্বেও, আমরা মনে করি এবং এখনো মনে করি যে এই বিষয়টির সমাধান-যা হচ্ছে আমাদের জন্য এক অপরিহার্য যাত্রাবিন্দু-সময় দাবী করে, বিশেষত বিপ্লবী বিকাশ দাবী করে।”

“দ্বিতীয়, রিম গঠণকারী দ্বিতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতকৃত ঘোষণায় স্বাক্ষর আমরা করি পর্যবেক্ষন এবং এমনকি পরিস্কার পার্থক্যসহ, যা সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমরা এই বিষয়গুলি সভা, রিপোর্ট এবং যোগাযোগসমূহে পুন পুন উচ্চরণ করেছি যা পরিস্কার নির্দেশ করে প্রধান দ্বন্দ্ব, অসম বিকাশের বিপ্লবী পরিস্থিতি, বিশ্বযুদ্ধ, আন্দোলনের ভুমিকার কিছু মানদন্ড এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের সার্বজনীনতা ও নির্দিষ্টত গণযুদ্ধের সাধারণ প্রযোজ্যতা ( সর্বহারা সামরিক তত্ত্বের প্রকাশ হিসেবে যা আমাদের শ্রেণী বিকশিত করেছে সম্পুর্নভাবে চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ সহকারে)র মতো অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নে পার্থক্য এবং সর্বদাই এই মহান শ্লোগান উত্থাপনে আমাদের দাবী, “সকল দেশের সর্বহারা এক হও!”। তাসত্ত্বেও, আমরা মনে করেছি এবং অব্যাহতভাবে মনে করি যে ঘোষণা গঠন করেছে এবং অব্যাহতভাবে গঠণ করে চলেছে ঐক্যের একটা আপেক্ষিক ভিত্তি-যার বিকাশ এবং উন্নতি আমাদের আন্দোলনের অগ্রগতি দ্বারা দাবীকৃত হবে, যেমনটা বাস্তব ঘটনাসমূহ পরিস্কারভাবে ইতিমধ্যেই প্রদর্শন করছে।”

“বর্তমানে ঘোষণা  কারো কারো দ্বারা সুবিধাবাদী হিসেবে খণ্ডিত হচ্ছে। অন্যরা জোর দিচ্ছে যে বিপ্লব যে জ্বলন্ত প্রশ্নসমূহ তুলে ধরে তার সমাধান অপ্রয়োজনীয়, এবং তাই আমাদের এক নতুন ঘোষণার দিকে যেতে হবে। পিসিপি বিশ্বাস করে যে রিম বহুবিধ স্তরে সমস্যার মুখোমুখিঃ

মতাদর্শিক স্তরে তাকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদকে উপলব্ধির দিকে অগ্রসর হতে হবে। এই অগ্রসরতা হচ্ছে প্রধান এবং এমনকি রাজনৈতিক বিকাশ এর ওপর নির্ভর করে।

রাজনৈতিক স্তরে, একে অগ্রসর হতে হবে মৌলিক দ্বন্দ্ব, প্রধান বিশ্ব দ্বন্দ্ব, তৃতিয় বিশ্বযুদ্ধের প্রশ্ন, বিপ্লব হচ্ছে প্রধান প্রবণতা এই প্রশ্ন এবং এই ঘটনা যে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হচ্ছে একটা বাস্তবতা, আমাদের অবশ্যই একে গণযুদ্ধে রূপান্তর করতে হবে-এর সংজ্ঞায়িতরণে।

এই বিনির্মাণের প্রশ্নে যে আন্তর্জাতিক আমাদের প্রয়োজন তা অর্জনে যে রাজনৈতিক লাইন আমাদের অনুসরণ করতে হবে তা অবশ্যই গৌরবোজ্জ্বল আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকে অব্যাহত রাখবে।

গণ কাজ সম্পর্কে, আমাদের যাত্রাবিন্দু হচ্ছে এই শ্লোগানসমূহঃ “জনগন ইতিহাস সৃষ্টি করে”, “বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত”, এবং “বিশাল ময়লার স্তুপ..” (সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের-যাকে ঝেটিয়ে বিদেয় করতে হবে-ইংরেজি অনুবাদক)। গণকাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণযুদ্ধ সূচনা ও বিকশিত করা।

নেতৃত্বের প্রশ্ন, এটা হচ্ছে একটা চাবিকাঠি প্রশ্ন যার গড়ে ওঠা, বিকাশ এবং বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য সময় প্রয়োজন।

দুই লাইনের প্রশ্ন, এটা যেভাবে হওয়া প্রয়োজন (রিমে-ইংরেজী অনুবাদক) সেভাবে তা পরিচালনা করা হচেছনা।

এগুলো হচ্ছে বিকাশের সমস্যা, কিন্তু সেগুলো যদি যথাযথ ও সঠিকভাবে মোকাবেলা করা না হয় সেগুলো বিশংখলা আনতে পারে এবং এমন নেতিবাচক সমস্যা আবশ্যিকভাবে আমাদের মাথাব্যাথা সৃষ্টি করে। আমরা বিশ্বাস করি যে রিম কমিটি আমাদের ওপর “মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা”র সূত্রায়ণ চাপাতে চাইছে এবং আমাদের ঘোষণা র মধ্যে আটকাতে চেষ্টা করছে, এবং এভাবে কমিটির নেতৃত্ব সমস্যার সমাধান করতে চাইছে যা একাধিত্যবাদী প্রবণতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করার দিকে আমাদের চালিত করে”

উপরের পরিস্থিতিকে হিসেবে নিয়ে, পিসিপির চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন (অক্টোবর, ১৯৮৬) মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ! কে বিশ্ব বিপ্লবের কমান্ড ও গাইড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে এক দল (অংশ) গঠণ করার আমাদের আকাঙ্খাকে পুনঃনিশ্চিত করে। আমরা আহ্বাণ জানাইঃ “ঊর্ধ্বে তুলে ধরো, রক্ষা করো, এবং প্রয়োগ করো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানতঃ মাওবাদ!” কারণ কেবল এর দ্বারাই আন্তজাতিক সর্বহারা শ্রেণী তার কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেতৃত্ব দিতে পারে এবং নিপীড়িতদের মুক্ত করতে নেতৃত্ব দিতে পারে যাতে তারা একটা শ্রেণী হিসেবে নিজেরাই নিজেদের মুক্ত করতে পারেন।

আমরা কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের পুনর্গঠণের জন্য, এবং বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনকে এই দিকে একটা অগ্রপদক্ষেপ মনে করি। সে এই উদ্দেশ্যকে সেবা করবে যতক্ষণ সে একটা সঠিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইন ঊর্ধ্বে তুলে ধরে অনুসরণ করে।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদকে বিশ্ববিপ্লবের কমান্ড ও গাইড হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হবে দীর্ঘ, জটিল ও কঠিণ, কিন্তু শেষে দুনিয়ার মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীরা সফল হবেন। তার জীবনে সংগ্রাম ছাড়া একটা পাও মার্কসবাদ ফেলেনি।

আন্তর্জাতিক সর্বহারার জয়!

বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লব জিন্দাবাদ!

মার্কসবাদলেনিনবাদমাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারা, প্রধানত গনসালো চিন্তাধারাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন, রক্ষা করুন প্রয়োগ করুন!