সিপিএমএলএম বাংলাদেশ-এর দলিল। রাজনৈতিক ইসলামবাদঃ এক ফ্যাসিবাদী মতবাদ। ০৮ এপ্রিল ২০১৩

সিপিএমএলএম বাংলাদেশএর দলিল

রাজনৈতিক ইসলামবাদঃ এক ফ্যাসিবাদী মতবাদ

০৮ এপ্রিল ২০১৩

বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে যা লালিত পালিত আর রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয় হাতিয়ার হিসেবে তার ফল আগেই ধরেছে। এখন এটা পেঁকে ফেটে বেড়িয়ে এসেছে। এ হচ্ছে ধর্মবাদ–ইসলামবাদ ও মোল্লাতন্ত্র। আমরা আগেই দেখিয়েছি আমাদের দেশে  বুর্জোয়া ধর্মীয় শিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কওমী মাদ্রাসাসহ সকল ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা চালু রাখা হয়েছে। এখন মোল্লারা nadiaattackedমাঠে নেমেছে তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক’ ব্লাগারদের শাস্তিসহ ব্লাসফেমি আইন চালু, সংবিধানে আল্লাহ ও মোহাম্মদের নাম অন্তর্ভ্ক্তুকরণ, ধর্মীয় শিক্ষাকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা, নারী নীতি বাতিল, দেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙে দেওয়াসহ তের দফা দাবীতে। ইতিমধ্যে ঢাকায় মোল্লা মহাসমাবেশে তারা নাদিয়া শারমিন নামে এক নারী সংবাদ কর্মীকে মারধোর করেছে তাদের নারীবিরোধী ইসলামবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে।

মধ্য ও উচ্চবিত্ত অনেক বুদ্ধিজীবিই এই মত প্রকাশ করেছেন যে মোল্লাদের তের দফার একটিও যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে বাংলাদেশ মধ্যযুগীয় মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু আওয়ামী সরকার মোল্লাদের দাবী বিবেচনা করতে আগ্রহী। বিএনপিও তাই। আর মতলববাজ এরশাদ বেশ অনেক দিন ধরেই মোল্লাদের সাথে ধর্মীয় জিকির শুরু করেছে।

কোন উদগ্র আকাংখায় হাসিনা খালেদা ও এরশাদ মোল্লাদের পদসেবায় নিয়োযিত হয়েছে?

সেই আকাংখাটা হচ্ছে ক্ষমতার আকাঙ্খা। ক্ষমতায় টিকে থেকে অথবা গিয়ে শোষন, দুর্নীতি ও লুটপাট করা।

ইমরান ও কতিপয় আওয়ামী কর্মীদের মাধ্যমে শাহবাগ আন্দোলনকে সীমিতকরণ ও শুকিয়ে দেয়ার পর আওয়ামী লীগ তার প্রতিদ্বন্দ্বি asif-mahiuddinবিএনপি ও জামাতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকভাবে হেফাজত নামে একটি ‘খাঁটি’ ইসলামবাদী মোল্লাতান্ত্রিক দল দাঁড় করায় তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক ব্লগার’দের বিরুদ্ধে। এজন্য সরকার আসিফ মহিউদ্দিনসহ চারজন তরুন ব্লাগারকে গ্রেপ্তার করে এই অভিযোগে যে তারা আল্লাহ ও মোহাম্মদের  বিরুদ্ধে কটূ্িক্ত করেছে।

সরকারের ভয়টা কোথায় ব্লগারদের নিয়ে। তাদের ভয় ব্লাগারদের মধ্যে অনেকেই র‌্যাডিকেল, যারা খুব স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বিপ্লবী রূপান্তর আকাঙ্কা করতে পারে। তাহলে তাদের শোষণ ও লুটতরাজ হুমকির সম্মুখিন হবে। সুতরাং বরং সমাজকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া তাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাই হেফাজতকে হেফাজত করতে নিজেদের দলের লোককেও প্রতিরোধ করে পুলিশের মাধ্যমে যাতে কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে।

সামনের নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে এরা ইসলাম ধর্মবাদীদের ব্যবহার করতে চায়। আর ইসলামবাদীদের সবচেয়ে বড় প্রচারক হয়েছে  মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ও মধ্যপ্রাচ্যীয় আরব সম্প্রসারণবাদীরা। এরা চায় তালেবানদের মত একটা সরকার। তাহলে এদেশে তারা যুদ্ধ বাঁধিয়ে পূর্ণ উপনিবেশ কায়েম করতে পারবে। সুতরাং ইসলামবাদীদের তারা সাহায্য করতে পারে এখানে সবকিছু গিলে খেয়ে ফেলতে।

এই ইসলামবাদীদের প্রতারক এক বুদ্ধিজীবি হচ্ছে ফরহাদ মাযহার। সে নিজেকে প্রগতিশীল পরিচয় দেয়, কিন্তু সে প্রগতিশীলতার সবচেয়ে বড় শত্রু।  ইসলামবাদের ফেরিওয়ালা এই দুষ্টটি মোল্লাদের সমাবেশকে এশিয়ার সাম্প্রতিক বৃহত জাগরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা একে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশকে অন্ধকার জগতে রূপান্তর করতে যাতে তাদের কালো কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করা যায়।

এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক ইসলামবাদী যা কায়েম করতে চায় তার প্রতিঃ

১। সামন্তবাদ- তারা কৃষক ও শ্রমিকদের বেগার খাটাবে। অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত মুল্য শোষন করবে। তাদের ওপর দৈহিক নির্যাতন চালাবে। ইসলামবাদী সমাজ চির বৈষম্যমূলক। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সেখানে সামন্তীয় দাস। সমাজের শাসকরা মোল্লারা তাদের ভাষায় ‘আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত’ বিধায় তাদের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন চলবেনা। সুতরাং মোল্লারা লুটতরাজের নিরংকুশ অংশ ভোগ করবে। অধিকাংশ দরিদ্র মানুষকে যাকাত ও ফেতরা হিসেবে সামান্য ভিক্ষা দেবে ধনীরা যাতে বৈষম্য টিকে থাকতে পারে। এ ছাড়া থাকছে পূর্ণ দাস, যাদেরকে মালিকরা হত্যাও করতে পারে।

২। সমাজের অর্ধাংশ যে নারী, তাদেরকে মনে করা হয় মাল। তাদের ওপর আরোপিত পর্দাসহ অবরোধ প্রথা। তারা সামাজিক কোন কাজে অংশ নিতে পারবেনা। একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারবে। কিন্তু নারীরা পারবেনা। সম্পত্তিতে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার পাবেনা। রাষ্ট্র, সমাজ বিচার আচারে পুরুষের পক্ষাবলম্বন করবে। নারীরা পুরুষের দাস বিবেচিত হওয়ায় পুরুষরা নারীদের হত্যাও করতে পারে।

৩। শিল্প সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চা চলবেনা। কারণ কেবল আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, তাই কোন সৃষ্টিশীল কাজ চলবেনা। সমাজ বিজ্ঞান চর্চা অধিকতর বিপজ্জনক, কারণ তা সমাজ পরিবর্তনে চালিত করতে পারে। মানুষ সমাজ পরিবর্তন করতে পারেনা, এটা আল্লাহর হাতে।

৪। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা কাফের হিসেবে বিবেচিত। তাদেরকে থাকতে হলে জিজিয়া কর দিয়ে থাকতে হবে।

৫। নিরীশ্বরবাদী ও বস্তুবাদীরা ঈশ্বর বা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেনা বলে তারা সমাজে থাকতে পারবেনা।

৬। উম্মার অংশ যারা অর্থাত ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যারা সংগ্রাম করেছে তারা লুটের মালে ভাগ পাবে ও অন্য কিছু সুবিধা পাবে, কিন্তু সাধারণ মানুষ কোন কিছু পাবেনা।

৬। ফেতনা করা যাবেনা। অর্থাত জনগণের বিদ্রোহ করার অধিকার থাকবেনা।

সংক্ষিপ্তভাবে এই হচ্ছে ইসলামবাদীদের কয়েকটি মুল কর্মসূচী।

কেন এটা ফ্যাসিবাদ?

আজকে পুঁজিবাদ তার শেষ পর্যায় সাম্রাজ্যবাদের স্তরে মৃত্যুশয্যায়। এর আর কোন বিকাশের সম্ভাবনা নেই। ভাঁওতা দেওয়া ছাড়া এর কোন আদর্শ নেই। ইসলামবাদ একটা ভাঁওতা। অশিক্ষিত ও পশ্চাদপদ মানুষকে অলৌকিকতা, পারলৌকিকতার ভয় দেখিয়ে এবং পরকালে বেহেশতে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে তারা ধনীক শ্রেণীর মধ্যযুগীয় অন্যায় শাসন ও শোষণ কায়েম করতে চায়।

আজকে যারা সত্যিকার প্রগতিশীল এক সমাজ চান তাদেরকে হাসিনা খালেদার গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার, ধর্মবাদীদের ইসলামবাদ, সামরিক আমলাতান্ত্রের সামরিক স্বৈরাচারসহ সকল প্রকার ফ্যাসিবাদকে উন্মোচন করে দিতে হবে জনগণের কাছে যাতে তারা  সক্ষম হন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে সংগ্রাম করতে।

সকল প্রকার শোষন ও তার মতাদর্শের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম গড়ে তুলুন!

এক নতুন প্রজন্মের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলুন!

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী