অনুবাদ সাহিত্য পত্র সংখ্যা নং ৭। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও পেরুর গণ আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপুর্ণ দলিল। অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক ফেব্রুয়ারি ২৮ ২০০৯ প্রকাশিত।।

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

 

গনসালো চিন্তাধারা হচ্ছে আজকের দিনের কমিউনিস্টদের জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি

-পেরুর গন আন্দোলন

বিদেশে সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ডান সুবিধাবাদী লাইনকে ধ্বংস করা অব্যাহত রাখুন! রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে চূর্ণ করুন!

-পেরুর গণ আন্দোলন

মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির বিজ্ঞপ্তি

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির একাদশ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সিদ্ধান্তবলী

বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা থেকে মুক্তি

-চ্যাং চুন-চিয়াও

সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে রিপোট

-চ্যাং চুন-চিয়াও

বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা সম্পকে

-চ্যাং চুন-চিয়াও

তেঙ শিয়াও-পিংকে সমালোচনা করা ও ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করা সম্বন্ধে আলোচনা

-চ্যাং চুন-চিয়াও

 

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

সংখ্যা নং ৭

মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও

পেরুর গণ আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপুর্ণ দলিল

অকেনেস, পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক ফেব্রুয়ারি ২৮  ২০০৯ প্রকাশিত

সম্পাদকীয়

‘বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে’। বাংলাদেশে রাইফেল্স সিপাহী বিদ্রোহে কেঁপে ওঠেছে সাম্রাজ্যবাদের দালাল বুর্জোয়াদের ভিত। শোষক ও শোষিত শ্রেণীর মধ্যে যে কোন আপস চলতে পারেনা শ্রেণীসংগ্রামের সেই অমোঘ সত্য আবারো প্রমাণিত হলো।… একমাত্র যে সত্য বেরিয়ে এল তা হল, বিপ্লবই হচ্ছে আজকের দুনিয়ায় ও আমাদের দেশে প্রধান প্রবণতা।

আমাদের অনুবাদ সাহিত্য পত্র এমনই এক পটভূমিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের এসংখ্যার ফোকাসঃ ১। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ২। পেরুর গণযুদ্ধ

মানব ইতিহাসের সর্ববৃহত বিপ্লব মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল যে লাইন চেয়ারম্যান মাও  রচনা করেছিলেন তা তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা (কমরেড-ইন-আর্মস) কমরেড চ্যাং চুনচিয়াওয়ের রচনা ও বক্তৃতাসমূহের মধ্যে বেড়িয়ে এসেছে। এক কথায় যাকে বলা হয়েছে সার্বিক একনায়কত্ব অর্থাত মতাদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক-প্রতিটি ক্ষেত্রে বুর্জোয়া শ্রেণীর ওপর একনায়কত্ব পরিচালনার কথা। সার্বিক একনায়কত্ব কথাটা সংশোধনবাদী ও শোষকশ্রেণীর জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই, তারা চ্যাঙকে কখনো ক্ষমা করতে পারেনি। চ্যাঙ সংশোধনবাদীদের হাতে জীবন দান করেছেন কিন্তু মাওবাদী যে অস্ত্রে সর্বহারা শ্রেণীকে সজ্জিত করে গেছেন তা বুর্জোয়াদের ধ্বংসে যথেষ্ট। চ্যাংযের দলিলগুলো আমরা মে, ১৯৮৪তে প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স, ২০২ সি/১, ভিলেজ মুনিরকা, নয়া দিল্লী-১১০৬৭, ভারত থেকে প্রকাশিত চ্যাঙ-চুন-চিয়াওয়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতা সংকলন “বম্বার্ডিং দি ক্যাপিট্যালিস্ট রোড’ থেকে নিয়েছি। এছাড়া ইন্টারনেটে মাওয়িস্ট ডকুমেন্টেশন প্রজেক্ট এর কিছু প্রকাশ করেছে। এছাড়া আমেরিকা থেকে রেমন্ড লোট্টা সম্পাদিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দলিল সংকলন ‘মাও মেকস ফাইভ’-এও এর কিছু পাওয়া যায়।

মহান সর্বহারা সাংস্কৃতি বিপ্লবের ঘোষণার দুটি দলিল এর ইতিহাস ও মূল নির্দেশনাসমূহকে বুঝতে সাহায্য করবে। এই দুটি দলিল আমরা মাওয়িস্ট ডকুমেন্টেশন প্রজেক্ট কর্তৃক ইন্টারনেটে প্রকাশিত ভার্সন থেকে নিয়েছি।

পেরুর গণ আন্দোলনের দুটি দলিল এ সংখ্যায় এসেছেঃ ১। গনসালো চিন্তাধারা হচ্ছে আজকের  দিনের কমিউনিস্টদের জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি ২। বিদেশে সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ডান সুবিধাবাদী লাইনকে ধ্বংস করা অব্যাহত রাখুন!রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে চূর্ণ করুন। এই দুটি দলিল সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরবর্তী মাওবাদী আন্দোলনের বিকাশকে ভালভাবেই প্রকাশিত করে। নেপালে সিপিএন(মাওবাদী)র অভ্যন্তরে প্রচণ্ডের নেতৃত্বে পুঁজিবাদের পথিকদের ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ ও বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা আর বুঝতে বাকী রাখেনা এর লাইন উতস কোথায়, আর নিশ্চিতভাবেই তা আরসিপি ইউএসএর মার্কসবাদকে নেতিকরণের লাইনের মধ্যে নিহিত। কেন রিম কমিটি ৯২ সাল থেকে চেয়ারম্যান গনসালোর বিরুদ্ধে লেগেছে সিআইএর সাথে সুর মিলিয়ে? কেন তারা পেরুতে বিশ্বাসঘাতকতাবাদী শান্তি লাইনের সাথে দুই লাইনের সংগ্রামের নসিহত করে চলেছে অদ্যাবধি। আমাদের পার্টিতেও ’৯২ সালেই পুঁজিবাদের পথগামিরা ক্ষমতা করায়ত্ত করে ফেলে। একে, এ,বি,সি,ডি প্রায় সমস্ত ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব সিরাজ সিকদার পথকে বর্জন করায় নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু নিম্নস্তরের ভয়ে তারা এসএসের নাম বর্জন করতে পারেনা। যুদ্ধ বর্জনের পর থেকে রিম কমিটি এই বিশ্বাসঘাতকতাবাদী লাইনের সাথে দুই লাইনের সংগ্রামের কথা বলে আসছে। এটা কোন্ দুই লাইনের সংগ্রাম? এটা রিম কমিটি বিবৃত দুই লাইনের সংগ্রাম নয়। এটা সেই দুই লাইনের সংগ্রাম যা পুঁজিবাদের পথিকদের বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণী পরিচালিত করে। উপরিস্তরের বিশ্বাসঘাতকতায় যখন পার্টি ও বিপ্লব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নিম্নস্তরের কমরেডগণ সাহসের সাথে পার্টি ও আন্দোলনকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাই, আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে পুঁজিবাদের পথকে ধ্বংসের দলিলসমূহ আমরা রক্তের অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখবো।

ফেব্রুয়ারি ২৮  ২০০৯

 

 

দুনিয়ার সর্বহারা এক হও!

 

গনসালো চিন্তাধারা হচ্ছে আজকের দিনের কমিউনিস্টদের জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি

–    পেরুর গণ আন্দোলন(এমপিপি)

নভেম্বর ২০০৬

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ হচ্ছে সর্বহারাশ্রেণীর একমাত্র, অপরাজেয় ও চির অম্লান মতাদর্শ এবং ইতিহাসের সবচেয়ে অগ্রসর ও চূড়ান্ত শ্রেণী মতাদর্শ। এখানে চাবিকাঠি প্রশ্ন হচ্ছে চেয়ারম্যান গনসালো কিভাবে মাওবাদ-কে তৃতীয়, নতুন ও উচ্চতর স্তর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন; এটা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, কেননা শুধুমাত্র এভাবেই আমাদের পার্টি মাওবাদকে উপলব্ধি করে, আমাদের পার্টি বোঝাতে চায়mpp3 যে মাওবাদের আছে তিনটি স্তরঃ লেনিনবাদ মার্কসবাদের উপর নিজেকে দাঁড় করায় এবং মাওবাদ নিজেকে পূর্ববর্তী দুটির উপর দাঁড় করায়, কিন্তু তাদের বিকাশ সাধন করে। সুতরাং মাওবাদ হচ্ছে নতুন ও তৃতীয় এবং যেহেতু এটা মার্কসবাদ-কে একটা উচ্চতর স্তরে বিকশিত করেছে, মাওবাদ হচ্ছে অধিকতর উচ্চতর (Superior)।

এই চাবিকাঠি প্রশ্ন থেকেই যাত্রা শুরু করে পার্টির প্রথম কংগ্রেসে প্রতিষ্ঠিত গনসালো চিন্তাধারা হচেছ্ পেরুর সমাজ ও আজকের দুনিয়ার মূর্ত নির্দিষ্ট বাস্তবতায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদের সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগ। সেই কারণে আমরা বলি যে গনসালো চিন্তাধারার সবচেয়ে পূর্ণতর ও সর্বাধিক বিকাশ পার্টির সাধারণ রাজনৈতিক লাইনে পাওয়া যায় এবং মার্কসবাদে গনসালো চিন্তাধারার অবদান ও বিকাশও সেখানে সুনির্দিষ্ট। এমনকি তদপেক্ষা, গনসালো চিন্তাধারা গণযুদ্ধের নয়া সমস্যাবলীর সমাধান দেয় এবং বিশ্ববিপ্লবের জন্য রণনীতি ও রণকৌশলের ভিত্তিসমূহের বিকাশ সাধন করেছে; এটা প্রতিষ্ঠা করেছে এর তিনটি স্তর বা পর্যায়কালকে, বিশ শতকের ১৯৮০র দিকে তৃতীয় পর্যায়কালে আমাদের অনুপ্রবেশকে এটা সঠিকভাবে নিরূপন করেছে; ১৯৯২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান গনসালো তাঁর কর্তৃত্বব্যঞ্জক বক্তব্যে দিক নির্দেশ দিয়েছিলেন যে বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের এক নয়া মহাতরঙ্গে আমরা প্রবেশ করছি। পার্টির ভিতরকার বিরুদ্ধ ডানপন্থী মতাবস্থানসমূহ ও লাইনকে মোকাবেলা করে ও তাকে চূর্ণ করে, (এবং পরবর্তীতে রিম-এর হৃতপিন্ডের ভিতর গণযুদ্ধের শক্তিশালী অগ্রগতিসহ), চেয়ারম্যান গনসালো সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ও আগ্রাসনকে সাহসের সাথে মোকাবেলা ও বিপ্লব সংঘটিত করার জন্য  পেরুসহ দুনিয়ায় গণযুদ্ধের সূচনা ও বিকাশের আশু প্রয়োজন, সুযোগ ও সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-এই বাস্তবতা থেকে যাত্রা করে যে বর্তমান বিশ্বে বিপ্লব প্রধান ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে এবং পেরু ও সমগ্র বিশ্বে এক বিপ্লবী পরিস্থিতির অসমান বিকাশের অস্তিত্বমানতা, শোষিত দেশসমূহ হচ্ছে বিশ্ববিপ্লবের ভিত্তি কেননা সেখানেই বিশ্বজনগণের বৃহত্তর অংশ কেন্দ্রিভূত আর বিপ্লব অধিকতর শক্তি নিয়ে ফুটন্ত অবস্থায় বিরাজ করছে-সংশোধনবাদের ধূর্তামী চূর্ণ করেছেন কারণ তারা বিশ্বের বিপ্লবী পরিস্থিতির অস্তিত্বমানতা অস্বীকার করে, বিপ্লবী সংকটের সাথে বিপ্লবী পরিস্থিতিকে জড়িয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর পুনর্গঠন, এর সামরিকীকরণ ও সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তাকে চেয়ারম্যান গনসালো প্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য নির্ধারক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত মার্কসীয় রাজনৈতিক অর্থনীতির তিনি বিকাশ সাধন করেছেনঃ এর আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদকে, একে সাধারণীকরণ করে এবং এর বিকাশের নিয়ম ও স্তরসমুহের প্রতিষ্ঠা করেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে বিপ্লবের জন্য পরিস্থিতিকে এটা পরিপক্ক করে। বিশ্ব বিপ্লবে চেযারম্যান গনসালো কিভাবে অবদান রেখেছেন এগুলো হচ্ছে তার অল্পকিছু উদাহারণ। আর এভাবেই মার্কসবাদ বিকশিত হচ্ছে। রিম গঠনকারী পার্টি ও সংগঠনসমূহ, RCP সহ, সেই কারণে এর চেয়ারম্যান কম. এভাকিয়ান, ১৯৯৩ সালের তাদের এই ঘোষণাঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ দীর্ঘজীবি হোক!, কে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, যেখানে এই ঘোষণার সূচনাতে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির পরিপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং গণযুদ্ধে এর নেতৃত্ব উল্লেখ করা হয়েছে, যা মাওবাদের স্বীকৃতিদানের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে রিম-কে সহায়তা করেছিল, ১৯৮৪ সালে যাকে বাতিল করা হয়েছিল। এটাই এখানে বড় হরফে রয়েছে: তত্ত্ব ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে এই অগ্রগতিসমূহ (পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন গণযুদ্ধ-আমাদের নোট) সর্বহারার মতাদর্শের আমাদের আত্মস্থকরণ অধিকতর গভীর করতে এবং এই ভিত্তির উপর মার্কসবাদের নতুন, তৃতীয় ও উচ্চতর স্তর হিসেবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের স্বীকৃতিদানে এক সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে আমাদেরকে সমর্থ করে তুলেছে।

চেয়ারম্যান গনসালো গনসালো চিন্তাধারা জন্ম দিয়েছেন যা আজকের পেরু এবং বিশ্বের কমিউনিস্টদের অনুশীলনের জন্য, গণযুদ্ধের জন্য তত্ত্বগত ভিত্তি স্বরূপ, যখন আমরা বিশ্বসর্বহারা বিপ্লব বিকাশের এক মহাতরঙ্গে প্রবেশ করেছি তখন গনসালো চিন্তাধারাই হচ্ছে আজকের বিশ্ববিপ্লবের তাত্ত্বিক ভিত্তি। এভাবেই গনসালো চিন্তাধারা মার্কসবাদের বিকাশে অবদান রাখছে এবং না সাম্রাজ্যবাদ না প্রতিক্রিয়া এটা চায়-সংশোধনবাদীদের অবস্থা এর চেয়ে নিম্নমানের। তারা চায়না চেয়ারম্যান গনসালোর মতো একজন তাত্ত্বিক বা ‘নেতা’ কে যিনি চেয়ারম্যান মাওয়ের তুলে ধরা চাহিদাকে পূরণ করেনঃ তত্ত্বগত দৃঢ়তা, ইতিহাসের উপলব্ধি এবং রাজনীতির উত্তম ব্যবহারিক পরিচালনা, তাই তারা তাকে মেরে ফেলতে চায় যাতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদের বিকাশ সাধনকারীর অনুপস্থিতিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এটা স্বীকৃত যে, কম, এভাকিয়ান ও অন্যরা শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়ার সাথে পরিপূর্ণভাবে সমকেন্দ্রিকই হয় নি বরং তারা চেয়ারম্যান গনসালোর এই আবদ্ধাবস্থা কামনা করে এবং গোঁড়ামীবাদী-সংকীর্ণতাবাদী সংশোধনবাদী হিসেবে অভিয্ক্তু করে তারা তাকে আক্রমণ করে, অপমান করে, তারা ভুলে যায় তাদের দ্বারা লিখিত, স্বাক্ষরকৃত ও স্বীকৃত ১৯৯৩ সালের রিমের ঘোষণায় রয়েছে মার্কসবাদে চেয়ারম্যান গনসালোর সীমাতিক্রমকারী অবদানের স্বীকৃতি।

এভাবে দেখা যাচ্ছে, মতাদর্শিক সংগ্রাম আরো শক্তি অর্জন করে এবং তাই আমরা যখন সত্যগুলোকে ও বিষয়গুলোকে খোলাখুলিভাবে বলি তখন তা রিমভুক্ত কিছূ পার্টি ও সংগঠনের কিছু কমরেডদের আঘাত লাগে। নির্দিষ্টভাবে, কমরেড এভাকিয়ান একটা বিষয়ের জন্য, মাওবাদকে সংজ্ঞয়িত করার জন্য চেয়ারম্যান গনসালোকে ক্ষমা করতে পারেননা। রিমের জন্ম থেকেই চেয়ারম্যান গনসালো এভাকিয়ানের মতাবস্থানগুলোকে ; মাওবাদ ও গণযুদ্ধের বিরোধিতাকে তীব্র সমালোচনামূলকভাবে চিহ্নিত করেছেন এবং রিমের অভ্যন্তরে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে উন্মোচন করেছেন। সেই কারণে আরসিপি চেয়ারম্যান সর্বদাই তার মতাবস্থানগুলোকে মধ্যবর্তী মাধ্যমের সাহায্যে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেন এবং মুখোমুখিভাবে দুই লাইনের সংগ্রাম পরিচালনায় অবতীর্ণ হননা।

আমরা জানি যে ডান ও তার মাথাকে চূর্ণ করাই প্রয়োজন এবং পরবর্তী সময়ে যারাই ডানপন্থী অবস্থানকে গ্রহণ করবে তাদেরকেই শেষে চূর্ণ করতে হবে; কারণ, দ্বান্দ্বিক গতিবিদ্যার নিয়মে সর্বদাই বিপরীতের সংগ্রাম চলবে। চেযারম্যান গনসালো সর্বদাই আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন; এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অভিজ্ঞতা। পেরুতেও এরকমটা ছিল, যেই একে (ডানপন্থী অবস্থান) ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিল তার বিরুদ্ধেই এটা (চূর্ণ) করা হয়েছিল, যে মুখ খুলেছে তার বিরুদ্ধে নয়। অন্যেরা পদের জন্য তাদের প্রাণপন চেষ্টার কারণে অতিকথন করছেন, তারা রিমে একজন ‘নেতা’ খোজার চেষ্টা করছেন। আমরা ভুলি নাই ঘৃণ্য তেং এর কার্যকলাপকে, সেও অন্যদের ব্যবহার করত পরবর্তীকালে পর্দার অন্তরালের স্রষ্টা হিসেবে নিজেকে জাহির করার জন্য, যার জন্য ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদের কাছে সে নিজের আত্মাকে বিক্রি করেছে। আজকে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে আরো বেশী প্রয়োজন যা চেয়ারম্যান গনসালো বলেছেনঃ মৃত্যু অবধি সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। পার্টি অভিজ্ঞতা আমাদের অনুমতি দেয় এই সকল বিষয়কে বুঝতে যাতে এর (দক্ষিণপন্থী অবস্থান) ছদ্মবেশী আবরণকে খুলে দিতে পারি।

কেউ কেউ এক গণযুদ্ধের বিরুদ্ধে অন্য গণযুদ্ধকে স্থাপন করতে চেষ্টা করে, যেমন পেরুর গণযুদ্ধের বিরুদ্ধে নেপালের গণযুদ্ধকে এবং তারা বলে যে নেপালের গণযুদ্ধ যদি পেরুর গণযুদ্ধের চেয়ে “অধিকতর অগ্রসর” হয়, এবং দ্বিতীয়টি জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, এটার কারণ হচ্ছে একটার ‘পথ’ অন্যটার ‘চিন্তাধারা’র চেয়ে উতকৃষ্টতর, এভাবে যুদ্ধে জনগণের বিস্ফোরক অগ্রগতি নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত করার পরিবর্তে যৌথ একনায়কত্বকে সংস্থাপন করা হচ্ছে; এভাবে তারা বিতর্ক এড়ানোর চেষ্টা করে এবং নিছক এটা বলে যেঃ আমাদের অনেক শক্তি আছে, আমাদের অনেক সম্পদ (Resource) আছে।

এই মতাদর্শিক সংগ্রামকে আমরা মহান দায়িত্বরূপে ধারণ করি; আমরা পরিষ্কার যে আমরা কি চাই, কারণ মুক্ত প্রতিজ্ঞাসহ দৃঢ় প্রত্যয় দ্বারা আমরা এটা ধারণ করি। আমাদের অবশ্যই সর্বদা দূরপানে তাকাতে হবে; আমরা এটাকে দৃঢ়ভাবে ধারন করি। যখন ২০০৪ইং এর নভেম্বরে আমাদের পার্টি আমাদের সতর্ক করেছিল যে আরো বিশোধিত মতাদর্শিক সংগ্রাম হবে, এবং আমাদের অতি অবশ্যই গনসালো চিন্তাধারাকে রক্ষা করতে হবে। অতঃপর আমরা প্রতিক্রিয়ার সকল চালাকির অসারতা প্রমাণ করি, যেমন ‘সাধারণ ক্ষমা’র নয়া প্রতিক্রিয়াশীল প্রতারণা যা চেয়ারম্যান গনসালোর বিরুদ্ধে ‘বিচার’-এর প্রতারণা (Hoax) সাথে অবিচ্ছেদ্য, কাজেই পুরনো রাষ্ট্র, প্রতিক্রিয়া, সি.আই.এসহ সংশোধনবাদী ও আত্মসমর্পণকারী ROL (ডান সুবিধাবাদী লাইন) এর চামচাদের দ্বারা সরবরাহকৃত প্রমাণ ছাড়া দুনিয়ার নতুন-পুরাতন সংশোধনবাদীদের হাতে আর কোন যুক্তি প্রমাণ নেই।

আমরা পেরুর গণআন্দোলন (এমপিপি), যেমন পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি জনসম্মুখে ঘোষণা দিয়েছে, চেয়ারম্যান গনসালো ও তাঁর সর্বশক্তিমান চিন্তাধারাকে রক্ষার আমাদের প্রতিশ্রুতিকে আমরা ধারন করি, বিশ্ববিপ্লব ও গণযুদ্ধকে সেবা করার মাধ্যমে, এটা আমরা নিরন্তরভাবে পালন করি, সর্বদাই এই নিশ্চয়তা সহকারে যে এমপিপি জীবনের মূল্যে হলেও এরকম উচ্চ ভূমিকা পালন করে। অপরপক্ষে, ঐসকল লোকদের পরিণতি কি হল? ইউরোপের ঐসকল সিএসআরপি ও ইউএসের লোকেদের অথবা ঐসব বাজে সাংবাদিকদের? যখন ‘পত্রগুলো’ আবির্ভূত হল, প্রথম তারা বলেছিলঃ হয় তিনি অথবা তিনি নন? সম্ভবতঃ হ্যাঁ অথবা সম্ভবতঃ না; কোরিম (রিম কমিটি) পর্যায়ে প্রকাশিত সংশোধনবাদী অবস্থানের সাথে হয় এভাবে নয় ওভাবে পরিশেষে তারা এক কাতারে মিলিত হতে এই অবস্থানকে তারা ব্যক্ত করল যে তারা সংগ্রামরত; স্ফটিকের মতো স্বচ্ছভাবে বিষয়গুলো যখন আমরা তাদের বললাম, ঐ মতাবস্থানের প্রতিনিধিদের তা আঘাত করলো। শুধুমাত্র আমরাই তাদের মনে করিয়ে দিলাম যে রিমের একেবারে প্রথম মুহুর্ত থেকে চেয়ারম্যান গনসালো তীব্র সমালোচনামুলকভাবে চিহ্নিত করেছেন কমরেড এভাকিয়ানকে।

দুই লাইনের সংগ্রামের বিকাশের প্রশ্নে নয়া প্রজাতন্ত্র, ঘাঁটি, নয়া ক্ষমতা-কে আমরা কিভাবে উপলব্ধি করি, আমরা অবিরামভাবে আমাদের সেই মতাবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করছি, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গনসালো চিন্তাধারার প্রয়োগে, কীভাবে এটা আমাদের সৃষ্টি ও ধ্বংসের অনুমতি দেয়, বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের সমকেন্দ্রিক বিনির্মাণ, এক নয়া অর্থনীতি, নয়া সংস্কৃতির নির্মান, ইত্যাদি এবং সর্বহারা একনায়কত্বের একটা প্রকাশ হিসেবে যৌথ একনায়কত্বে পুরোনো রাষ্ট্র, এর পেটি-পার্টিসমূহ, চার্চ, এর ‘প্রতিবিধান’ ও এর এন.জি.ওসমূহের ধ্বংস সাধন। এসমস্ত সকল নয়া বিষয়সমূহ, নয়া ক্ষমতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা, রক্ষা করা এবং বিকাশ করা হয়েছে বাহিনী সহকারেঃ মিলিশিয়া, স্থানীয় বাহিনী, প্রধান বাহিনী; বিকশিত করা হয়েছে এক উচ্চতর চলমান গণযুদ্ধের মাধ্যমে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের প্রয়োগে আমাদের অভিজ্ঞতাকে আমরা পার্টি ও সংগঠনসমূহের কাছে ব্যাখ্যা করছি এবং যারা নিজেদের এর নীতিসমূহ থেকে দূরে রাখছে যেমন ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ ওয়ালারা, তারা পার্টি, নয়া ক্ষমতা, দখলীকৃত অর্জনগুলোকে বিলোপ করায় নেতৃত্ব দিচ্ছে, এখানে দুইটি পরিপ্রেক্ষিত, এক, দীপ্তিময় গণযুদ্ধে অটল থাকা, যা আমরা করছি এবং অন্যটি হচ্ছে কালো আঁধার, বিশ্বাসঘাতকতা, যদি কেউ গণযুদ্ধে অটল না থাকে, যদি কেউ এর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি, বিদেশে তার পার্টির কাজের অঙ্গ এমপিপি, সকল মাওবাদী এবং সকল মাওবাদী পার্টি ও সংগঠনসমুহের সাথে একত্রে এই সংগ্রামকে বহন করে যাচ্ছে। কারণ আমাদের প্রয়োজন মাওবাদের মূর্ত প্রকাশ, এবং এটাই বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের নয়া মহাতরঙ্গ পরিচালনা, নেতৃত্ব দিতে কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ সৃষ্টি করার কাজ চালিয়ে যায় এবং আপোষ ও দ্বন্দ্বে নেতৃত্ব দেয়া একচ্ছত্র আধিপত্যবাদী পরাশক্তি হিসেবে ইয়াংকী সাম্রাজ্যবাদ-নেৃতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদ, প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনবাদী সাধারণ প্রতিবিপ্লবী আক্রমণ চূর্ণ করে।

মাওবাদ জিন্দাবাদ!

চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ জিন্দাবাদ!

বর্তমান দুনিয়ার মহানতম জীবিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী চেয়ারম্যান গনসালা জিন্দাবাদ!                                     

দুনিয়ার সর্বহারা এক হও!

বিদেশে সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ডান সুবিধাবাদী লাইনকে ধ্বংস করা অব্যাহত রাখুন!

রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে চূর্ণ করুন

–    পেরুর গণ আন্দোলন(এমপিপি)

জানুয়ারি ২০০০

 

মতাদশির্ক এবং রাজনৈতিক লাইনের সঠিকতা ও বেঠিকতা সবকিছুকে নির্ধারণ করে। যখন পার্টির লাইন সঠিক, তখন সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চলবে। যদি তার কোন অনুসারী না থাকে তার অনুসারী হবে, তার যদি কোন বন্দুক না থাকে, তার বন্দুক হবে, তার যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকে, তার রাজনৈতিক ক্ষমতা হবে। তার লাইন যদি ভুল হয় অর্জিত সবকিছু খোয়া যাবে।

চেয়ারম্যান মাও সে-তুঙ

আমাদের জনগণের প্রতি, আমাদের শ্রেণীর প্রতি, আমাদের পার্টি এবং আমাদের পথ-গণযুদ্ধ-এর প্রতি গভীর ভালবাসাসহকারে আমাদের প্রাণপ্রিয় ও সম্মানিত চেয়ারম্যান গনসালোর মহান নেতৃত্বে সর্বদাই পরিচালিত গৌরবোজ্জ্বল পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি) কর্তৃক সৃষ্ট সংগঠন পেরুর গণআন্দোলন সারা দুনিয়ার জনগণ, আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণী, আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন এং বিশেষত বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনের প্রতি এই সুযোগে বিজয়গর্বিত শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এইসময়ে,  এই সুযোগে আমরা সেই সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ডান সুবিধাবাদী লাইনের শোচনীয় ইঁদুরগুলোর প্রতি আমাদের সমগ্র নিন্দা জানাচ্ছি ও প্রত্যাখ্যান করছি যারা mpp4সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের মহান নেতৃত্ব (হেপাতুরা) ও গণযুদ্ধকে হত্যা করার জন্য ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় ধাবিত হয়েছে, যদিও এটা গনসালো চিন্তাধারার দ্বারা ও গণযুদ্ধের অগ্নিশিখার দ্বারা সম্পূর্ণতঃ ধ্বংস হয়েছে ও ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা হয়েছে। এর সার্বিকভঅবে ঝেঁটিয়ে বিদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণের সারির মধ্যে এই লাইনের যে কোন সমকেন্দ্রিক মিলনকে যেমন রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে, ধবংস করা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।

১.    গনযুদ্ধ সারাদেশে ক্ষমতা দখলের বিরতিহীন এগিয়ে চলা অব্যাহত রেখেছে

গভীর আনন্দসহকারে আমরা রিপোর্ট করতে পারি যে আমাদের মাতৃভুমিতে গণ গেরিলা বাহিনী সদাসর্বদা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল পার্টির সামগ্রিক নেতৃত্বের অধীনে জনগণকে সমাবেশিতকরণ, রাজনীতিকরণ, সংগঠিতকরণ ও সশস্ত্রকরণের মাধ্যমে  গ্রামাঞ্চলে পরিচালিত সেই শত্রুর ভয়ংকর ঘেরাও অভিযান “খতম” সমগ্রভাবে পরাজিত করেছে যারা গণযুদ্ধকে ধ্বংস ও ঝেটিয়ে বিদেয় করতে চেয়েছিল। এটা ঘটেছে ফ্যাসিবাদী, গণহত্যাকারী ও দেশবিক্রেতা সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিণ লড়াইসমূহে , ইয়াঙ্কি (মার্কিন) সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের অধীনে যারা হচ্ছে প্রতিবিপ্লবের কুকুর, নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় যারা দক্ষ সেই তাদের বিরুদ্ধে, জনগণের শক্তিমত্তাকে মোকাবেলায় পরাজিত যারা পার্টি, বাহিনী ও নয়া রাষ্ট্রকে ধ্বংসে সমগ্র শক্তি নিয়োযিত করে আসছে। শত্রু কামান অথবা আধুনিক আক্রমনকারী হেলিকপ্টার কোনকিছু ব্যবহার বাকী রাখেনি,  তারা পরাজয় থেকে পরাজয় বরণ করেছে, যেমনটা সাতিপো (জুনিন ডিপার্টমেন্ট)তে আমরা তাদের ওপর করেছি, যেখানে অন্য আরো কিছূ বড় আকৃতির সশস্ত্র এ্যাকশনের মধ্যে তাদের হানাদার হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছি, তাদের বিপুল সংখ্যক গণহত্যাকারী বাহিনীসদস্যকে খতম করেছি একজন জেনারেল, একজন ক্যাপ্টেন ও কতিপয় অফিসারসহ, আরো একবার “সেন্ডেরোর চুড়ান্ত পরাজয়”-এর তাদের কালো স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়ে।

এভাবে পার্টি আবারো বীরত্বব্যাঞ্জক লড়াকু হিসেবে  ভুমিকা পালনে তার নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে প্রদর্শন করছে,  গণযুদ্ধকে পাণ্ডিত্যপূর্ণভাবে নেতৃত্ব দিয়ে ও বিকশিত করে, পথের বাঁককে সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে, কমরেড ফেলিসিয়ানোর গ্রেফতারের পটভূমিতে দায়িত্বভার গ্রহণকারী  কমরেড খুলিওর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রিয় কমিটির মাধ্যমে,  আবারো এই মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, গনসালো চিন্তাধারা নীতিমালার সঠিকতা দেখিয়ে যে “কমান্ডার কখনো মরেনা” এবং এই যে খোদ চেয়ারম্যান  গনসালোর গড়ে তোলা ও বহু বছরের গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পরীক্ষিত ও প্রমাণিত নেতৃত্ব আমাদের রয়েছে। বিপ্লব তার পথে যে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছে তাকে অতিক্রম করতে পার্টি যে সক্ষম হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে পার্টির সঠিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইন, গনসালো চিন্তাধারার দৃঢ় প্রয়োগ-যে হাতিয়ারের মাধ্যমে পার্টি উদ্ভূত সকল নয়া সমস্যাগুলো সমাধা করছে, এভাবে পার্টি গণযুদ্ধের বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশ্ব বিপ্লবকে সেবা করে, গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা করে বিরতিহীনভাবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব অব্যাহত রেখে ও ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক বিপ্লব বিকশিত করে যতক্ষণ না মানবজাতির বাকি সকলকে নিয়ে আমরা চিরউজ্জ্বল কমিউনিজমে পৌঁছবো।

এভাবে এখন জটিল পথের বাঁক থেকে উঠে এসে সমগ্র পার্টি ও তার সকল অঙ্গগুলোর প্রায় চুড়ান্ত পুনর্গঠন চালিয়ে, কেন্দ্রিয় কমিটির চতুর্থ পুর্ণাঙ্গ অধিবেশন সফলভাবে অনুষ্ঠিতকরণের জন্য দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে পার্টি সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে চূর্ণ করার দিকে এগোচ্ছে যা আন্তর্জাতিক স্তরে আইসিএম(আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন), রিম (বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন) ও সমগ্র বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবকে ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

২.     রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে চূর্ণ করুন

বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে, রিম কমিটি অধিক থেকে অধিকতরভাবে সংশোধনবাদী মতাবস্থানে পূর্ণ হয়ে চলেছে, সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ডান সুবিধাবাদী লাইনের সাথে সমকেন্দ্রিকভাবে মিলিত হয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্রীড়ণকে পরিণত হয়েছে। তারা মার্কসবাদের চার প্রধান দিকের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ঃ সমাজতন্ত্র, সর্বহারা একনায়কত্ব, পার্টি ও মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ। তাই, আমরা দেখি চার হাওয়ার প্রতি তারা কী উপদেশ বাণী দেয় যা “সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন” সম্পর্কে সাম্রাজ্যবাদ, সংশোধনবাদ ও প্রতিক্রিয়ার বক্তব্য পুনরাবৃত্তির বেশি কিছু নয়। এটা টিকিয়ে রাখতে তারা “আমেরিকার অবনতি”(“অ্যামেরিকা ইন ডিক্লাইন”) (যা আরসিপির কোন দলিল নয়)-এর ওপর নিজেদের দাঁড় করায়। কিন্তু বাস্তবতাটা কী? পাটি যা বলে তা হচ্ছে সুনিশ্চিত ঘটনাঃ

“তাই সোভিয়েত ইউনিয়নে যা ঘটেছে তা হচ্ছে সংশোধনবাদের দেউলিয়াত্ব, আর সংশোধনবাদ হচ্ছে পুনপ্রতিষ্ঠার অগ্রবাহিনী,  ‘…সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন..’ নয়, অনেকে যেমনটা বলেন। সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়নি, বরং পুরোনো সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সমাজতন্ত্রের এটা ছিল অস্বীকৃতি; সেখানে তারা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের অংশ হওয়ার জন্য তাদের ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে।”

“আমাদের মহান নেতার বক্তৃতা হচ্ছে একটা যুদ্ধাস্ত্র যা বিশ্বের সামনে বিজোয়জ্জ্বলভাবে ও শক্তিমত্ততায় ঝলক দিয়ে ওঠে”, সিসি, পিসিপি, সেপ্টেম্বও, ১৯৯৯।

একইভাবে, রিম কমিটি তার অবস্থান নিজ নামে ব্যাখ্যা করেনা, বরং অন্য পার্টি ও সংগঠনসমূহকে ব্যবহার করে, এভাবে বিতর্ক করা প্রস্তাব করতে তার রাজনৈতিক দুর্বলচিত্ততা ও অক্ষমতা প্রদর্শন করে; এসবই দুই লাইনের সংগ্রাম, পার্টি, গণযুদ্ধ প্রভৃতি কী তা বোঝায় তাদের মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে। চেয়ারম্যান গনসালো নিজে এই সমস্যাসমূহ তুলে ধরেছেন এবং এগুলো তারা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। এগুলো রিমকে বিচ্যুত করা ছাড়া আর কিছু করেনা, সদস্যদের মতাদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে নিরাসক্ত করে এবং এর সমগ্র দায় দয়িত্ব হচ্ছে রিম কমিটির।

তাই, আসুন দেখি সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ROL (ডান সুবিধাবাদী লাইন)-এর বিরুদ্ধে সারবেদারান সংগঠনের মাধ্যমে কীভাবে সংগ্রাম তারা চালিয়েছে এবং কীভাবে শত্রুর নর্দমা ও সরিসৃপ ফুজিমেরি থেকে “চেয়ারম্যান গনসালো পত্রের পিছনে আছেন” এই কথা পুনরাবৃত্তি করার মধ্যে নিজেদের টিকিয়ে রাখে এবং অধিকন্ত এই মতাবস্থান সকল সদস্যের, এই কথা বলে উপসংহার টানে যে “চেয়ারম্যান গনসালো এই পত্রের পিছনে রয়েছেন তার প্রমাণ রয়েছে” এবং “প্রণেতা কে সেটা কোন ব্যাপার নয়”।

তারা যে বৃথা চেষ্টা চালায় তা হচ্ছে চেয়ারম্যান গনসালোকে অসম্মানিত করা ও অপবাদ দেয়া-যিনি হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে মহানতম জীবিত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী, পেরুর পার্টি ও বিপ্লবের মহান নেতৃত্ব (হেপে)- তাদের নোংরা মিথ্যা অপবাদ সহকারে মার্কবাদের বিকাশে তার অবদানগুলোকে প্রধানভাবে নেতিকরণ করতে, যার মধ্যে রয়েছে মহান নেতৃত্ব [হেপাতুরা] থিসিসকে নেতিকরণ করা যা খোদ লেনিন কর্তৃক উত্থাপিত ও চেয়ারম্যান গনসালো কর্তৃক বিকশিত এবং পার্টির প্রথম কংগ্রেস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিতঃ

“‘পার্টির একনায়কত্ব নাকি শ্রেণীর একনায়াকত্ব? নেতাদের একনায়কত্ব নাকি জনগণের একনায়কত্ব(পার্টি)?’ প্রশ্নের এই উপস্থাপনাই হল অবিশ্বাস্য রকমের একটা ঘোর চিন্তা বিভ্রান্তির প্রমাণ। একান্ত বিশেষ কিছূ একটা উদ্ভাবনের প্রাণপন চেষ্টা চলছে এবং বুদ্ধি জাহিরের অত্যুতসাহে এরা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হাস্যকর। সবাই জানেন যে জনগণ শ্রেণীতে বিভক্ত;-শ্রেণী ও জনগণকে আলাদা করে ধরা সম্ভব কেবল উতপাদনের সামাজিক ব্যবস্থায় বিশেষ অবস্থাধারী বর্গগুলির বিপরীতে উতপাদনের সামাজিক ব্যবস্থায় অবস্থান নির্বিশেষে সাধারণভাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের ধরলে;-শ্রেণীরা সাধারণত ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অন্তত আধুনিক সভ্য দেশগুলিতে পরিচালিত হয়  রাজনৈতিক পার্টি দ্বারা;-সাধারণ নিয়ম হিসবে, রাজনৈতিক পার্টিদের চালায় সর্বাধিক প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন, প্রভাবশালী, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পদে নির্বাচিত, নেতা বলে অভিহিত লোকদের পাকাপোক্ত একটা গোষ্ঠী। এসবই অ-আ-ক-খ। এসবই সহজ এবং পরিষ্কার। এর বদলে যত সব হ-য-ব-র-ল নতুন এক সন্ধ্যাভাষার প্রয়োজন পড়ল কেন?”[“কমিউনিজমে বামপন্থার বাল্যব্যাধি”, ভ, ই, লেনিন]

“সকল বিপ্লব তাদের বিকাশের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বকারী শ্রেণী হিসেবে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামের মাধ্যমে, সর্বোপরি কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রামের মাধ্যমে-যে পার্টি তার অপরিত্যাজ্য শ্রেণীস্বার্থ তুলে ধরে-এক ঝাঁক নেতৃত্বের জন্ম দেয়, প্রধানত, একজন নেতৃত্ব যিনি একে প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্ব করেন, স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ আর প্রভাবশালী এক নেতৃত্ব…।” প্রথম কংগ্রেস (মৌলিক দলিলসমূহ)

এভাবে মার্কসবাদের এ সত্যসমূহের সামনে কী তারা প্রস্তাব করে? স্বকীয় ও চতুর হওয়ার তাদের প্রচেষ্টায়, যেমনটা লেনিন তুলে ধরেছেন, তারা “যৌথ নেতৃত্ব”র ওপর কেন্দ্র করতে চায়, মহান নেতৃত্ব [হ্যাপাতুরা] ব্যতিত, একটা পথ নির্দেশক চিন্তাধারা ব্যতিত-যা হচ্ছে ক্ষমতা দখলে ও অধিকন্তু আমাদের চির উজ্বল ও গৌরবময় লক্ষ্য সাম্যবাদের দিকে আমাদের যাত্রা বজায় রাখায় নির্ধারক।

“অধিকন্তু, এবং এটাই হচ্ছে ভিত্তি, যার ওপর ভিত্তি করে সকল মহান নেতৃত্ব (হ্যাপাতুরা) গড়ে উঠে, বিপ্লব এক চিন্তাধারার জন্ম দেয় যা তাদের পরিচালনা করে, যা হচ্ছে প্রতিটি বিপ্লবের মূর্ত বাস্তবতায় আন্তর্জান্তিক সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শের সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগের ফলাফল, একটা পথ নির্দেশক চিন্তাধারা, বিজয়ে পৌঁছাতে আর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে অপরিহার্য; এবং অধিকন্তু বিপ্লবকে অব্যাহত রাখতে আর সদা সর্বদা একমাত্র মহান লক্ষ্য কমিউনিজমের পথে প্রক্রিয়াকে বজায় রাখতে অপরিহার্য…।”

মার্কসবাদের এই নীতিমালাসমূহকে গ্রহণ ও মূর্ত বাস্তবতায় সেগুলোকে প্রয়োগের পরিবর্তে তারা তাদের মুখ ও পাতা ভর্তি করে ফেলে রুশ বিপ্লব, চীন বিপ্লব ও মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বুলিসর্বস্ব অসার বাক্যে; কিন্ত অনুশীলনে তারা সর্বহারার এই মাইলফলকগুলোকে নেতিকরণ করে, নেতিকরণ করে এই সত্যকে যে এই শ্রেণীর রয়েছে এক মহান নেতৃত্ব [হ্যাপাতুরা] যা চিন্তাধারাকে ভিত্তি করে টিকে থাকে, যা [চিন্তাধারা] হচ্ছে মুর্ত বাস্তবতায় সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগের ফল এবং এটাই তাদেরকে এই মাইলফলকসমূহের বিজয় ও অর্জনে অনুমোদন দিয়েছে তাদের সময়কার প্রতিক্রিয়াশীল ও সংশোধনবাদীদের চূর্ণ করে; অধিকন্ত সেই চিন্তাধারাকে বর্জনের ফলশ্রুতিতে, ন্যায্য ও সঠিক লাইনকে বর্জনের ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাদের পুনপ্রতিষ্ঠা আমরা দেখেছি যা ঘটেছে সংশোধনবাদের মাধ্যমে-যে মতাবস্থানসমূহকে রিম কমিটি প্রচুর পরিমাণে গলধ;করণ করছে। নির্দিষ্টভাবে, তারা মূর্ত বাস্তবতায় মাওবাদকে প্রয়োগ ছাড়া মস্তকবিহীন বিপ্লব চায়, এসবই জ্বলন্ত সংশোধনবাদের বেশি কিছু নয়।

একইভাবে, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (আরসিপি-ইউএসএ)-এর মতো অন্য পার্টি ও সংগঠনসমূহকে তারা ব্যবহার করে সংশ্লেষণে, তুলে ধরে যে সাম্রাজ্যবাদ বিকাশ লাভ করেঃ

“এসকল কারণে সাম্রাজ্যবাদীরা আজকে যে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করছে তাকে একটা ‘সংকট’ বলে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করাকে আমরা সঠিক মনে করিনা..”

“সামগ্রিকঅর্থে বিশ্বব্যবস্থা কোন সংকট অবস্থায় নেই”

-“রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর নোট”; সিসি, আরসিপি, ইউএসএ, ১৯৯৮

অধিকন্তু, তাদের একটা রিপোর্টে, তারা সাধারণীকরণে পুর্ণ করে আমাদের চুড়ান্ত লক্ষ্য কমিউনিজমকে আলোচনার জন্য তুলে রাখেঃ

“আইসিএমের ভেতর রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখায় যা সমস্যা হিসেবে বিরাজমান তার একটা বড় অংশ হচ্ছে সংগ্রামের চুড়ান্ত লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে কমিউনিজম কিনা, নাকি ধর্ম কর্তৃক প্রতিশ্রুত ‘দুনিয়ার বুকে স্বর্গ’-এর মতো একটা কিছু এই চুড়ান্ত লক্ষ্য। অন্য কথায়, কমিউনিজমের লক্ষ্য যদি উভয়ত এখন এবং যখন বিভিন্ন দেশে আমাদের ক্ষমতা থাকে কীভাবে ও কেন আমরা লড়াই করি তার সাথে একাকার হয়।”

যেন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদের কোন পরিষ্কার লক্ষ্য ছিলনা অথবা এসম্পর্কে কোন কিছু আলোচনা করার ছিল। বিষয়টা হচ্ছে ধূর্ততার সাথে তারা লক্ষ্যকে নেতিকরণ করে এবং এই বুলি কপচায় যে কিছূ জিনিসকে পুনসংজ্ঞায়িত করতে হবে, তারা ভবিষ্যতে আরো প্রকাশ্যভাবে কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের প্রয়োজনীয়তা নেতিকরণ করবে; তাই মূর্ত, পরিষ্কার ও নির্লজ্জ ঘটনা হচ্ছে যে তারা মার্কসবাদকে সংশোধন করতে চায়। কিন্তু এটা পরিষ্কারভাবে আরসিপি নেতা বি, এভাকিয়ানের মতো লোকেদের কাছে যুক্তিসংগত, যিনি অপ্রয়োজনীয় ও বেঠিক তুলনা করেন মতাদর্শিক বিভ্রান্তি প্রদর্শন করে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ এবং চেয়ারম্যান গনসালোর অবদানসমূহ থেকে যাত্রা না করে; উদাহারণস্বরূপ কিছু বুর্জোয়া শিল্পীর গানের পর্যায়ে কমিউনিজমকে অবমূল্যায়ন ও অবনমিত করা যায় কীভাবে?

“আমি খুবই নিশ্চিত Heav D ঠিক এইভাবে এটা চিন্তা করেননি, বরং ঘটনা হচ্ছে এই যে এই লাইনগুলো সেই বৃহত প্রশ্নটির উত্তর দানের সাথে জড়িতঃ কমিউনিজম কী এবং কমিউনিস্ট সমাজ কেমন হবে?  অনেকটাই তা জীবন্ত রঙ (Living Color)”-এ ঐ লাইনসমূহে যা বলা হয়েছে তার সাথে সম্পর্কিতর মতো একটা কিছু।”

অথবা যখন বলেনঃ

“এই জিনিসটা আমাদের আরেকটা গানের দিকে ভাবনায় নিয়ে যায়ঃ “কল্পনা করো (Imagine)” যা প্রাক্তন বিটল জন লেনন কর্তৃক লিখিত ও রেকর্ডকৃত, যা ২০ বছর আগে এসেছে। আমার একজন বন্ধু যিনি জানতেন যে আমি একজন কমিউনিস্ট, আমাকে বলেনঃ তোমার “Imagine” গানটি শোনা দরকার…কমিউনিস্ট বিশ্বের জন্য তার স্বপ্নকে রূপদান করার এটা ছিল জন লেননের প্রচেষ্টা। আমার সন্দেহ ছিল, কিন্তু যখন আমি এটা দেখলাম, আমি স্বীকার করতে বাধ্য হলাম যে এর মধ্যে কিছু একটা ছিল।”

-“কমিউনিজমঃ কল্পনা করুন…পূর্ণ রঙে, বি, এভাকিয়ান, আর ডব্লিউ নং ৫৯২, ১৯৯১

এসকল কারণে আমরা কমিউনিস্ট পার্টি ও বিপ্লবী সংগঠনসমূহের প্রতি বিশেষভাবে রিম সদস্যদের প্রতি আহ্বাণ জানাই রিম কমিটির সংশোধনবাদী মতাবস্থানসমূহকে লড়াই ও চূর্ণ করতে, তারা যেন এই মতাবস্থানসমূহের পেছনে তাদেরকে টেনে নিতে না দেন যারা তাদেরকে সম্ভব যেকোন উপায়ে অবদমিত করতে চায়, সকল পার্টি ও সংগঠনসমূহের প্রতি তাদের অনুমোদন কামনা করে, এমনকি তাদের আধিপত্যবাদী প্রবণতাকে অধিক থেকে অধিকতরভাবে আরোপ করতে চায় যা চেয়ারম্যান গনসালো বহু বছর আগে বলেছেন, অন্য প্রশ্নসমূহ যেগুলো তারা ধামাচাপা দিতে চাইছেনঃ বিশ্বব্যাপী প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে একদিকে নিপীড়িত জাতিসমূহ আর অপরদিকে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের মধ্যে এবং বিপ্লবই হচ্ছে প্রধান প্রবণতা প্রভৃতি। তাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে সর্বহারা শ্রেণীর লাল লাইনকে রক্ষা করতে, মাওবাদকে বিশ্বসর্বহারা বিপ্লবের কমান্ড ও গাইড হিসেবে আরোপ করতে, কমিউনিস্ট পার্টিসমূহকে সামরিকীকরণ করতে যাতে তারা গণযুদ্ধ জন্ম দিয়ে  সেই পার্টিসমূহে পরিণত হয় যারা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকে নেতৃত্ব করে এবং যাতে তারা তাদের মূর্ত বাস্তবতায় সার্বজনীন সত্যকে প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পথনির্দেশক চিন্তাধারা ও এক মহান নেতৃত্ব (হ্যাপাতুরা) গড়ে তোলে যা হবে তাদের নিজ নিজ বিপ্লবের গ্যারান্টি। এই সব দুষ্ট সংশোধনবাদীদেরকে আমরা অবশ্যই রিম-এর ভেতর প্রবেশের অনুমোদন দেবনা যেহেতু তারা বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের নয়া মহা তরঙ্গকে বিরোধিতা করতে চায়।

চুড়ান্ততঃ আমরা বলবো, নতুনভাবে আমরা যখন পথের বাঁকের থেকে উঠে এসেছি; সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়া কর্তৃক সেবা করা সংশোধনবাদী ও বিশ্বাসঘাতকতাবাদী ROL (ডান সুবিধাবাদী লাইন)কে আমরা চুর্ণ করেছি এবং চুর্ণ করেছি ROL-এর সাথে সকল সমকেন্দ্রিক মিলনকে; বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের আলোকবর্তিকা হিসেবে সমগ্র বিশ্বের সামনে প্রতিভাদীপ্তভাবে গণযুদ্ধ ঝলক দিয়ে ওঠে, চেয়ারম্যান গনসালোর মহান নেতৃত্বের (হ্যাপাতুরা)র অধীনে নিজেকে সমর্পণ করে; এবং এখন কমরেড ফেলিশিয়ানোর গ্রেফতারকে মোকাবেলা করে কমরেড খুলিওকে কেন্দ্র করে সারিকে ঐক্যবদ্ধ করে। কিন্তু এসবকিছুই যা আমরা খুঁজে পেয়েছি যা আমাদের চুড়ান্ত বিজয়ের দিকে নিয়ে যাবে, ভন্ড বুদ্ধিজীবিদের একটা গ্রুপের কাছ থেকে নয়, নয় কোন পুস্তক ছাঁকনকারীদের ভাবধারা থেকে যা আমাদের রশিদ দেবে। না! কারুর আঘাত লাগলে যায় আসেনা, এটা একারণে যে আমরা একটা ন্যায্য ও সঠিক লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে, কারণ আমরা একটা প্রচণ্ড শক্তিশালি যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত, আমাদের সর্বশক্তিমান মতাদর্শঃ গনসালো চিন্তাধারা!

 

চেয়ারম্যান গনসালো ও তাঁর সর্বশক্তিমান চিন্তাধারা জিন্দাবাদ!

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানতঃ মাওবাদ জিন্দাবাদ!

পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দাবাদ!

সংশোধনবাদ নিপাত যাক!

বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন জিন্দাবাদ!

বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের নয়া মহাতরঙ্গ জিন্দাবাদ!

 মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির বিজ্ঞপ্তি

১৬ মে, ১৯৬৬

 

কেন্দ্রিয় কমিটির সকল আঞ্চলিক ব্যুরো, সকল প্রাদেশিক, পৌর ও স্বায়ত্বশাসিত আঞ্চলিক পার্টি কমিটি, কেন্দ্রিয় কমিটির অধীনস্ত সকল বিভাগ ও কমিশন, সরকারী বিভাগসমূহ ও জনগণের সংগঠনসমূহে সকল নেতৃস্থানীয় পার্টি সদস্যদের গ্রুপসমূহ ও পার্টি কমিটিসমূহ, এবং পিএলএ’র সাধারণ রাজনৈতিক বিভাগ-এর প্রতিঃ

কেন্দ্রিয় কমিটি ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব-এর দায়িত্বে নিয়োযিত ‘গ্রুপ অব ফাইভ’ কর্তৃক প্রণীত ‘বর্তমান একাডেমিক আলোচনার ওপর রূপরেখা রিপোর্ট’-টি বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা ১৯৬৬ সালের ১২ ফেরুয়ারিতে বন্টনের জন্য অনুমোদিত হয়েছিল, এবং ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দায়িত্বে নিয়োযিত গ্রুপ অব ফাইভ’ ও তার দপ্তরসমূহ ভেঙে দেওয়া ও রাজনৈতিক ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সরাসরি অধীন একটা নয়া সাংস্কৃতিক বিপ্লব গ্রুপ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তথাকথিত ‘গ্রুপ অব ফাইভ’-এর রূপরেখা রিপোর্টটি মৌলিকভাবে ভ্রান্ত। এটা কেন্দ্রিয় কমিটি ও কমরেড মাও সেতুঙ উত্থাপিত সমাজতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের লাইনের বিরুদ্ধে যায় এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণী ও শ্রেণী সংগ্রামের প্রশ্নে ১৯৬২ সালে অষ্টম কেন্দ্রিয় কমিটির দশম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যে পথনির্দেশক নীতিমালা গৃহীত হয়েছিল তাcultural revolution posterর বিরুদ্ধে যায়। সম্মতির ভান করার পাশাপাশি, রূপরেখা রিপোর্ট প্রকৃতপক্ষে কমরেড মাও সেতুঙের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে সূচিত ও পরিচালিত মহান সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বিরোধিতা করে, সেইসাথে উ হানের সমালোচনা সংক্রান্ত নির্দেশাবলী-কেও, যা তিনি দিয়েছিলেন ১৯৬৫-র সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির  কর্ম-সম্মেলনে (অর্থাত, কেন্দ্রিয় কমিটির স্ট্যান্ডিং কমিটির অধিবেশনে যাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সকল আঞ্চলিক ব্যুরোর নেতৃস্থানীয় কমরেডগণও অংশ নিয়েছিলেন)।

তথাকথিত ‘গ্রুপ অব ফাইভ’-এর রূপরেখা রিপোর্টটি আসলে কেবল পেং চেন-এর রূপরেখা রিপোর্ট। এটা তিনি ‘গ্রুপ অব ফাইভ’-এর একজন সদস্য কমরেড ক্যাং শেন ও অন্য কমরেডগণের অগোচরে তার নিজ ধারণা অনুসারে সাজিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলীর উপর এমন একটি দলিলকে পর্যালোচনার ক্ষেত্রে পেং চেন ‘গ্রুপ অব ফাইভ’-এর মধ্যে কোন রকম আলোচনা অথবা মত বিনিময়ই করেননি। তিনি কোন স্থানীয় পার্টি কমিটির মত আহ্বান করেননি, রূপরেখা রিপোর্ট পেশ করার সময় তিনি এটা পরিষ্কারও করেননি যে এটা কেন্দ্রিয় কমিটিতে প্রেরিত হচ্ছে তার আনুষ্ঠানিক দলিল হিসেবে পরীক্ষার জন্য এবং কেন্দ্রিয় কমিটির চেয়ারম্যান কমরেড মাওসেতুঙের অনুমোদনতো তিনি আরও কম পান। সর্বাধিক অযথার্থ পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি স্বেচ্ছাচারীভাবে কাজ করেন, তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং কেন্দ্রিয় কমিটির নামকে কুক্ষিগত করে সমগ্র পার্টির প্রতি রূপরেখা রিপোর্টটি তড়িত ইস্যু করেন।

রূপরেখা রিপোর্টের প্রধান প্রধান ভুলসমূহ নিম্নরূপঃ

১. পরিস্থিতি ও বর্তমান একাডেমিক সমালোচনার চরিত্রের মূল্যায়ণে একটা বুর্জোয়া অবস্থান ও বুর্জোয়া বিশ্বদৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রসর হয়ে রূপরেখা আমাদের ও শত্রুর মধ্যকার সম্পর্ককে সম্পূর্ণরূপে উল্টে দেয়- একটিকে আরেকটির জায়গায় বসিয়ে। আমাদের দেশ এখন মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একট উত্থানের মধ্যে রয়েছে যা এখনো বুর্জোয়া ও সামন্তবাদের অবশেষের দ্বারা ধারণ করা সকল ক্ষয়িষ্ণু মতাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানসমূহকে চূর্ণ-বিচূর্ন করে দিচ্ছে। তারা যাতে অব্যাহতভাবে আঘাত করে যেতে পারে সেজন্য শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিক এবং সর্বহারা সংস্কৃতির জন্য লড়াকুদের ব্যাপক জনগণকে জাগানোর জন্য সমগ্র পার্টিকে বলিষ্ঠভাবে উতসাহদানের বদলে রূপরেখা আন্দোলনকে ডানে মোড় ফেরানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধি ও প্রতারণামূলক ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে এটা সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক ফ্রন্টে চলমান তীক্ষ্ণ শ্রেণীসংগ্রামকে ধোঁয়াশা করে। বিশেষভাবে, এটা এই মহান সংগ্রামের লক্ষ্যকে ছায়াচ্ছন্ন করতে চায়, যা উ হান ও অন্য পার্টি-বিরোধী সমাজতন্ত্র-বিরোধী বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের সমালোচনা ও বর্জনে নিয়োযিত (কেন্দ্রিয় কমিটি এবং পার্টি, সরকার ও কেন্দ্রের এবং সেইসাথে প্রাদেশিক, পৌর ও স্বায়ত্বশাসিত আঞ্চলিক স্তরে বিভিন্ন বিভাগসমূহে এরা প্রচুর সংখ্যায় আছে)। চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক বারংবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে যা সেই উ হান-এর নাটক হাই জুই দপ্তর থেকে অপসারিত¬-এর চাবিকাঠি সূত্র হচ্ছে দপ্তর থেকে অপসারণের প্রশ্ন-তার কোন উল্লেখ এড়িয়ে গিয়ে রূপরেখা সংগ্রামের রাজনৈতিক গুরুতর প্রকৃতিকে ঢেকে দিয়েছে।

২. রূপরেখা এই মৌলিক মার্কসবাদী থিসিসকে লঙ্ঘন করে যে সকল শ্রেণীসংগ্রাম হচ্ছে রাজনৈতিক সংগ্রাম। যখন সংবাদপত্রসমূহ উ হান-এর হাই জ্ইু দপ্তর থেকে অপসারিত–এর সাথে জড়িত রাজনৈতিক প্রশ্নসমুহ স্পর্শ করতে শুরু করল, তখন রূপরেখার রচয়িতারা এতদূর পর্যন্ত বললো: “সংবাদপত্রে আলোচনা রাজনৈতিক প্রশ্নসমূহে আটকে থাকা উচিত নয়, বরং সম্পর্কিত বহুবিধ একাডেমিক ও তত্ত্বগত প্রশ্নসমূহে পুরোমাত্রায় ঢোকা উচিত।” উ হানের সমালোচনার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় তারা ঘোষণা করেছে যে বিষয়টির প্রাণকেন্দ্র নিয়ে নাড়াচাড়া করা অননুমোদনীয়, উদাহারণস্বরূপ, ১৯৫৯ সালে লুশান প্লেনামে ডান সুবিধাবাদীদের অপসারণ এবং উ হান ও অন্যদের পার্টি ও সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা। কমরেড মাও সেতুঙ প্রায়শই আমাদের বলেছেন যে, বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে মতাদর্শিক সংগ্রাম হচ্ছে একটা দীর্ঘস্থায়ী শ্রেণীসংগ্রাম, যা তড়িঘড়ি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত টানার মাধ্যমে সমাধান করা যায়না। যাহোক, পেং চেন মরিয়াভাবে গুজব ছড়ায়, অনেক লোককে এটা বলে যে, চেয়ারম্যান মাও বিশ্বাস করেন যে উ হান-এর ওপর সমালোচনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দুই মাস পরে টানা যেতো। পেং চেন আরো বলে যে, রাজনৈতিক ইস্যুগুলো দুই মাস পর আলোচনা করা যায়। তার উদ্দেশ্য ছিল, বুর্জোয়া রাজনীতি প্রায়ই যার ওকালতি করে, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের রাজনৈতিক সংগ্রামকে খাঁটি একাডেমিক আলোচনায় প্রবাহিত করা এবং সর্বহারা রাজনীতিকে বিশিষ্টতা দানকে বিরোধিতা করা।

৩. রূপরেখা তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে যাকে সেটি বলে ‘প্রশস্তভাবে খুলে দেওয়া’। কিন্তু ধূর্ত কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এটা স্থূলভাবে কমরেড মাও সেতুঙ কর্তৃক ১৯৫৭-র মার্চে প্রচার কার্য সম্পর্কে জাতীয় সম্মেলনে ব্যাখ্যা করা “প্রশস্তভাবে খুলে ধরা”র কর্মনীতিকে বিকৃত করে এবং “প্রশস্তভাবে খূলে দেওয়া”র শ্রেণীসারবস্তুকে নেতিকরণ করে। এটা ছিল মাও সেতুঙ কর্তৃক তুলে ধরা এই প্রশ্নের মোকাবেলায়ঃ ‘বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়া মতাদর্শের বিরুদ্ধে আমাদের এখনো দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম চালাতে হবে। এটা না বোঝা এবং মতাদর্শিক সংগ্রাম পরিত্যাগ করা ভুল। সকল ভ্রান্ত ধারণা, সকল বিষাক্ত আগাছা, সকল দৈত্য ও দানবকে অতি অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে, কোনভাবেই তাদেরকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে দেওয়া যাবেনা।’ কমরেড মাও সেতুঙ আরো বলেছেন, ‘“প্রশস্তভাবে খুলে দেওয়া” অর্থ হচ্ছে সকল জনগণকে খোলামেলাভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে দেয়া, যাতে তারা কথা বলতে সাহসী হয়, সমালোচনা করতে সাহসী হয় ও বিতর্ক করতে সাহসী হয়।’ কিন্তু এই রূপরেখা, সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানকে উন্মোচনের বিরুদ্ধে ‘প্রশস্তভাবে খুলে দেওয়া’-কে দেখাতে চায়। এটা ‘প্রশস্তভাবে খুলে ধরা’ বলতে বুর্জোয়া উদারীকরণ বোঝায়, যা কেবল বুর্জোয়াদের ‘প্রশস্তভাবে খুলে ধরতে’ অনুমোদন দেবে, কিন্তু সর্বহারা শ্রেণীকে অনুমোদন দেবেনা ‘প্রশস্তভাবে খূলে ধরতে’ ও প্রত্যাঘাত করতে; অন্য কথায়, এটা উ হান-এর মতো প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের ঢাল। এই রূপরেখার ‘প্রশস্তভাবে খুলে ধরা’ হলো মাও সেতুঙ চিন্তাধারার বিরুদ্ধে এবং বুর্জোয়াদের চাহিদার যোগানদাতা।

৪. ঠিক আমরা যখন বুর্জোয়াদের বন্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ অভিযান শুরু করেছি, রূপরেখার প্রণেতারা শ্লোগান তুলে ধরলো: ‘সত্যের সামনে সবাই সমান’। এটা একটা বুর্জোয়া শ্লোগান। সত্যের শ্রেণীপ্রকৃতিকে সম্পূর্ণভাবে নেতিকরণ করে এই শ্লোগানকে তারা ব্যবহার করে বুর্জোয়াদের রক্ষা করতে এবং সর্বহারা শ্রেণীকে বিরোধিতা করতে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে বিরোধিতা করতে এবং মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে বিরোধিতা করতে। সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যে সংগ্রামে মার্কসবাদের সত্য ও বুর্জোয়াদেরসহ অন্য সকল শোষক শ্রেণীসমূহের ভ্রান্তির মধ্যে সংগ্রামে হয় পূবালী হাওয়া পশ্চিমী হাওয়াকে দাবিয়ে রাখবে, নয়-তো পশ্চিমী হাওয়া পূবালী হাওয়াকে দাবিয়ে রাখবে, এবং সমতার মত কিছু মোটেই নেই। বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সর্বহারার সংগ্রাম, বুর্জোয়াদের উপর সর্বহারার একনায়কত্ব, সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রসহ উপরিকাঠামোয় সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব, এবং কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা, যারা লাল পতাকার বিরুদ্ধে ‘লাল পতাকা’ উড়ায় তাদের উতপাটনে তাদের বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণীর অব্যাহত প্রচেষ্টার মতো মৌলিক প্রশ্নাবলীতে সমতা কি অনুমোদন করা যায়? বহু যুগের পুরোনো লাইনের সমাজ গণতন্ত্রীরা এবং দশ বছরের বেশি সময় ধরে আধুনিক সংশোধনবাদীরা কখনো বুর্জোয়াদের সাথে সর্বহারা শ্রেণীর সমতার অনুমোদন দেয়নি। তারা সম্পূর্ণত অস্বীকার করে যে, কয়েক হাজার বছরের মানব ইতিহাস হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে সর্বহারার শ্রেণীসংগ্রামকে, বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে সর্বহারা বিপ্লবকে এবং বুর্জোয়ার ওপর সর্বহারা একনায়কত্বকে তারা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে। বিপরীতে, তারা হচ্ছে বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত সেবাদাস। বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদের সাথে একত্রিতভাবে তারা সর্বহারা শ্রেণীর ওপর বুর্জোয়ার নিপীড়ন ও শোষণের মতাদর্শের সাথে, আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয়; এবং তারা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শ ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিরোধিতা করে। কমিউনিস্ট পার্টি ও জনগণকে বিরোধিতাকারী তারা হচ্ছে একঝাঁক প্রতিবিপ্লবী। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম হচ্ছে জীবন- মরণের বিষয়, এবং এখানে সমতার কোন প্রশ্ন নেই। তাই, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামও জীবন-মরন সংগ্রাম ব্যতীত আর কিছু হতে পারেনা এবং তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কও কোনভাবেই সমতার সম্পর্ক হতে পারেনা। বিপরীতে, এটা হচ্ছে এক শ্রেণী কর্তৃক আরেক শ্রেণীকে নিপীড়ণের সম্পর্ক, অর্থাত বুর্জোয়াদের ওপর সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব। তথাকথিত সমতার সম্পর্ক অথবা শোষক ও শোষিত শ্রেণীসমূহের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অথবা দয়া বা মহানুভবতার মত কোন ধরণের সম্পর্কই থাকতে পারেনা।

৫. রূপরেখা বলছেঃ ‘অপরপক্ষকে শুধু রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা প্রয়োজন শুধু তাই নয়, বরং একাডেমিক ও পেশাদার মানদন্ডেও ব্যাপক মাত্রায় সত্যিকারভাবে তাকে অতিক্রম ও পরাজিত করা দরকার।’ এই ধারণা যা একাডেমিক বিষয়গুলিতে কোন শ্রেণী পার্থক্য নিরূপন করেনা তাও খূবই ভ্রান্ত। একাডেমিক প্রশ্নসমূহের উপর সত্য, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সত্য, মাও সেতুঙ চিন্তাধারার সত্য-যা সর্বহারা শ্রেণী আত্মস্থ করেছে, ইতিমধ্যেই বুর্জোয়াকে অনেক দূর অতিক্রম করেছে ও পরাজিত করেছে। রূপরেখার সূত্রায়ণ দেখায় যে, এর প্রণেতারা বুর্জোয়াদের তথাকথিত একাডেমিক কর্তৃপক্ষের স্তবগান গায়, তাদের সম্মানকে স্ফীত করতে চেষ্টা করে, এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে জঙ্গী নবজাত শক্তি যা সর্বহারা শ্রেণী প্রতিনিধিত্ব করে, তাকে ঘৃণা ও দমন করে।

৬. চেয়ারম্যান মাও প্রায়ই বলেন যে, ধ্বংস ছাড়া কোন গঠন হয় না। ধ্বংসের অর্থ হচ্ছে সমালোচনা ও বর্জন; এর অর্থ হচ্ছে বিপ্লব। এর সাথে জড়িত হলো যুক্তিগত বিষয়গুলো বের হয়ে আসা, যা হচ্ছে গঠন। ধ্বংসকে প্রথম স্থান দাও, এবং এই প্রক্রিয়ায় তুমি গঠন পাবে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, মাওসেতুঙের চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠা ও অব্যাহতভাবে বিকাশ হয়েছে বুর্জোয়া ভাবাদর্শের ধ্বংসের জন্য সংগ্রামের প্রক্রিয়ায়। কিন্তু, এই রূপরেখা জোর দেয় যে, ‘নির্মাণ ছাড়া কোন প্রকৃত ও সামগ্রিক ধ্বংস হতে পারেনা’। এটা বুর্জোয়া ভাবাদর্শের ধ্বংসকে বাধা দেয় ও সর্বহারা মতাদর্শের বিনির্মাণকে বাধা দেয়। এটা আপাদমস্তক চেয়ারম্যান মাও-এর চিন্তাধারার বিরোধী। এটা বুর্জোয়া মতাদর্শের সবল ধ্বংসের জন্য যে বিপ্লবী সংগ্রাম আমরা সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে চালাচ্ছি তার বিরুদ্ধে যায়। এবং এটা সর্বহারা শ্রেণীকে বিপ্লব সাধন করতে বাধা দেয়।

৭. রূপরেখা বলে যে, ‘আমাদের পন্ডিত-উতপীড়কদের মতো আচরণ করা উচিত নয় যারা সর্বদা স্বেচ্ছাচারীভাবে কাজ করছে, এবং জনগণকে তাদের ক্ষমতার দ্বারা আচ্ছন্ন করতে চেষ্টা করছে’ এবং বলছে যে ‘বুর্জোয়া দক্ষ ও পন্ডিত-উতপীড়কদের পথ গ্রহণ করতে আমাদের বাম একাডেমিক কর্মীদের যেকোন প্রবণতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকা দরকার’। ‘একাডেমিক-উতপীড়ক’ বলতে সত্যিকারভাবে কী বোঝানো হচ্ছে? কারা ‘একাডেমিক-উতপীড়ক’? সর্বহারা শ্রেণীর কি উচিত নয় একনায়কত্ব পরিচালনা করা এবং বুর্জোয়াদের চাপা দেয়া? সর্বহারা শ্রেণীর একাডেমিক কাজের কি উচিত নয় বুর্জোয়ার একাডেমিক কাজকে চাপা দেয়া ও অপসারণ করা? এবং যদি সর্বহারা একাডেমিক কাজ বুর্জোয়া একাডেমিক কাজকে অধীন ও অপসারণ করে, তাকে কি ‘পন্ডিত-উতপীড়ক’-দের কাজ বলে বিবেচনা করা যায়? রূপরেখা সর্বহারা বামদের বিরুদ্ধে তার বর্শাফলক তাক করে। নিশ্চিতভাবে, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্কসবাদী-লেনিনবাদীদের ‘পন্ডিত-উতপীড়ক’ বলে লেবেল আাঁটা এবং এভাবে প্রকৃত বুর্জোয়া পন্ডিত-উতপীড়কদের সাহায্য করা এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে তাদের টলায়মান একচেটিয়া অবস্থানকে রক্ষা করা। বস্তুত, ঐসব কর্তৃস্থানীয় পার্টি-লোকেরা যারা পুঁজিবাদী পথ গ্রহণ ক’রে বুর্জোয়া পন্ডিত-উতপীড়কদের সমর্থন করছে, এবং সেই বুর্জোয়া প্রতিনিধিরা যারা পার্টিতে অনুপ্রবেশ করেছে আর বুর্জোয়া পন্ডিত-উতপীড়কদের রক্ষা করছে, তারা নিশ্চয়ই বড় পার্টি-উতপীড়ক, যারা পার্টির নাম কব্জা করেছে, জনগণের সাথে যাদের কোন  যোগাযোগ নেই, শিক্ষা বলতে কিছু নেই, এবং যারা ‘স্বেচ্ছাচারীভাবে কাজ করা আর জনগণকে তাদের ক্ষমতার দ্বারা আচ্ছন্ন করার চেষ্টা করা’র ওপর পরমভাবে নির্ভর করে।

৮. তাদের দূরবর্তী উদ্দেশ্য থেকে, রূপরেখার লেখকরা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে মরিয়া প্রচেষ্টায়, শ্রেণীসহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে এবং সংগ্রামের লক্ষ্য থেকে জনগণকে ভিন্ন দিকে চালিত করতে একনিষ্ঠ বামদের বিরুদ্ধে একটা ‘শুদ্ধি অভিযান’ দাবী করে। রূপরেখার এমন তড়িত প্রণয়নে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সর্বহারা বামকে আঘাত করা। বামদের সম্পর্কে দলিল-দস্তাবেজ সৃষ্টির জন্য তারা তাদের রাস্তায় এগিয়েছে; তাদেরকে আক্রমণের সকল ধরণের অযুহাত খোঁজার চেষ্টা করেছে এবং তাদের সারিকে ভেঙে দেওয়ার বৃথা আশায় ‘শুদ্ধি অভিযান’ দ্বারা তাদের ওপর আরো আক্রমণ চালানোয় সচেষ্ট হয়েছে। বামদের রক্ষা করা, সমর্থন করা ও তাদের সারিসমূহকে গড়ে তোলা ও সম্প্রসারণে গুরুতর মনোযোগ দেওয়ার চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক মূর্তভাবে তুলে ধরা কর্মনীতিকে তারা প্রকাশ্যে প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে, যারা পার্টিতে অনুপ্রেবেশকারী বুর্জোয়া প্রতিনিধি, সংশোধনবাদী ও বেঈমান- তাদেরকে “একনিষ্ঠ বাম” খেতাব দিচ্ছে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই ভাবে, তারা বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থীদের ঔদ্ধত্যকে ফুলাতে চাইছে, আর সর্বহাimageschineserev10রা বামদের উদ্দীপনাকে নিরুতসাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা সর্বহারার প্রতি ঘৃণা আর বুর্জোয়ার প্রতি ভালবাসায় পূর্ণ। রূপরেখার রচয়িতাদের ভ্রাতৃত্বের বুর্জোয়া ধারণা হচ্ছে এমনই।

৯. যখন মতাদর্শিক ফ্রন্টে বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণীর নতুন ও প্রচন্ড সংগ্রাম কেবল শূরু হয়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে ও জায়গায় এখনও এমনকি শূরু হয়নি-অথবা শুরু হলেও, জড়িত বহু পার্টি কমিটির এই মহান সংগ্রামে নেতৃত্বের কর্তব্য সম্পর্কে খুবই দুর্বল উপলব্ধি রয়েছে এবং তাদের নেতৃত্ব বিবেক-বুদ্ধি ও কার্যকরতা থেকে অনেক দূরে-তখন রূপরেখা বারবার জোর দেয় যে সংগ্রামকে ‘নির্দেশনার অধীন’, ‘পরিনামদর্শী’ ও ‘সতর্ক’ ভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং চালাতে হবে ‘সম্পর্কিত নেতৃত্বকারী সংস্থাগুলোর অনুমোদনের ভিত্তিতে’। এসবই সর্বহারা বামদের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে, তাদের হাত বেঁধে ফেলার জন্য বাধা-নিষেধ ও হুকুম জারী করতে, এবং সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পথে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করতে সাহায্য করে। এক কথায়, রূপরেখার প্রণেতারা গতিরোধ করতে ও প্রতিশোধমূলক প্রতি আক্রমণ চালাতে প্রচণ্ডভাবে এগোচ্ছে। যেহেতু সর্বহারা বামদের দ্বারা লিখিত প্রবন্ধগুলি প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া ‘কর্তৃপক্ষ’-কে খন্ডন করছে, তাই তারা ইতিমধ্যে যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে তিক্ত ঘৃণা ছড়ায় আর যেগুলো প্রকাশিত হয়নি সেগুলোকে দমন করছে। কিন্তু অন্যদিকে, তারা সেইসকল বহুবিধ দৈত্যদানবদের মুক্ত কার্যক্রমের অনুমতি দেয় যা আমাদের সংবাদপত্র, রেডিও, ম্যাগাজিন, বইপুস্তক, পাঠ্যপুস্তক, প্লাটফরম, সাহিত্যকর্ম, সিনেমা, নাটক, গাঁথা ও গল্পসমূহ, চারুকলা, সঙ্গীত, নৃত্য প্রভৃতিকে বহু বছর ধরে ছেয়ে ফেলেছে এবং এগুলো করার জন্য তারা কখনো সর্বহারা নেতৃত্বের কথা বলেনা অথবা অনুমোদনের কোন প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়না। এখানে এই বৈপরীত্য দেখায়, রূপরেখার প্রণেতাদের অবস্থান কোথায়।

১০. বর্তমান সংগ্রাম সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ওপর কমরেড মাওসেতুঙের লাইনের প্রয়োগ অথবা প্রতিরোধকে কেন্দ্র করে আবির্ভূত হয়। অথচ, রূপরেখা বলছেঃ ‘এই সংগ্রামের মাধ্যমে এবং মাও সেতুঙ চিন্তাধারার পরিচালনার অধীনে আমরা এই সমস্যার সমাধানের দরজা খুলে দেব (অর্থাত, “একাডেমিক কাজে বুর্জোয়া চিন্তার সামগ্রিক বিলোপ।’) কমরেড মাও সেতুঙ সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক ফ্রন্টে সর্বহারা শ্রেণীর জন্য দরজা খুলে দিয়েছেন দীর্ঘকাল আগে, তার নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে, ইয়েনান ফোরামে শিল্প ও সাহিত্য সম্পর্কে বক্তৃতা, ‘লিয়াংশান বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দিতে ভ্রমণ’ দেখার পর ইয়েনান পিকিং অপেরা থিয়েটারের প্রতি চিঠি, জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্বসমূহের সঠিক সমাধান সম্পর্কে, এবং প্রচার কার্য সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতায়। তবু রূপরেখা বলছে যে, মাও সেতুঙ চিন্তাধারা এখনো আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়নি এবং নতুন করে দরজা খুলতে হবে। ‘মাও সেতুঙ চিন্তাধারার পরিচালনার অধীনে’ ব্যানারকে একটা পর্দা হিসেবে ব্যবহার করে রূপরেখা প্রকৃতপক্ষে মাও সেতুঙ চিন্তাধারার বিরোধী একটা পথ খুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিচ্ছে যা হচ্ছে, আধুনিক সংশোধনবাদের পথ, পুঁজিবাদের পুনপ্রতিষ্ঠার পথ।

সংক্ষেপে, রূপরেখা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে শেষপর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করে, কমরেড মাও সেতুঙের নেতৃত্বে পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি অনুসৃত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের লাইনকে বিরোধিতা করে; সর্বহারা বামকে আক্রমণ করে ও বুর্জোয়া ডানকে নিরাপত্তা দেয়, এভাবে পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য জনমত প্রস্তুত করে। এটা হচ্ছে পার্টিতে বুর্জোয়া মতাদর্শের প্রতিফলন, এটা হচ্ছে পুরোপুরি সংশোধনবাদ। গৌণ প্রশ্ন হওয়া দূরের কথা, এই সংশোধনবাদী লাইনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটা পরম গুরুত্বের প্রশ্ন যার ওপর আমাদের পার্টির ভাগ্য, ভবিষ্যত ও বর্তমান পরমভাবে নির্ভর করে, আমাদের পার্টির বর্তমান ও ভবিষ্যত আকৃতি এবং বিশ্ব বিপ্লবেরও।

সকল স্তরের পার্টি কমিটিকে অতি অবশ্যই ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দায়িত্বে নিয়োযিত গ্রুপ অব ফাইভ প্রণীত চলতি একাডেমিক আলোচনার ওপর রূপরেখা’ প্রচার অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সমগ্র পার্টিকে অবশ্যই কমরেড মাও সেতুঙের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মহান ব্যানারকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে, পার্টি ও সমাজতন্ত্রকে বিরোধিতাকারী তথাকথিত ‘একাডেমিক কর্তৃপক্ষ’-দের প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া অবস্থানকে সামগ্রিকভাবে উন্মোচন করতে হবে, একাডেমিক কাজ, শিক্ষা, সাংবাদিকতা, সাহিত্য-শিল্পকলা ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া ভাবধারাকে সামগ্রিকভাবে সমালোচনা ও বর্জন করতে হবে এবং এই সমস্ত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রসমূহে নেতৃত্ব কব্জা করতে হবে। এটা অর্জন করতে পার্টি, সরকার, সেনাবাহিনী এবং সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী বুর্জোয়া প্রতিনিধিদের একইসাথে সমালোচনা ও বর্জন করা প্র্রয়োজন যাতে তাদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করা যায় অথবা তাদের কাউকে কাউকে অন্য পদে বদলী করা যায়। সর্বোপরি, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতৃত্বের কাজে এই ধরণের লোকদের কোনভাবেই বিশ্বাস করা যাবেনা। বস্তুত, তাদের অনেকেই এধরণের কাজ করেছে এবং এখনও এমন কাজ করছে, আর তা সত্যিই ভয়ংকর।

পার্টি, সরকার, সৈন্যবাহিনী ও বিবিধ সাংস্কৃতিক চক্রে অনুপ্রবেশকারী বুর্জোয়াদের ঐ প্রতিনিধিরা হচ্ছে এক ঝাঁক প্রতিবিপ্লবী সংশোধনবাদী। অবস্থা পরিপক্ক হলে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করবে, আর সর্বহারা একনায়কত্বকে বুর্জোয়াদের একনায়কত্বে পরিণত করবে। তাদের কাউকে কাউকে আমরা ইতিমধ্যে সমগ্রভাবে দেখেছি, অন্যদের দেখিনি। তাদের কাউকে কাউকে আমরা এখনো বিশ্বাস করি এবং এরা আমাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রশিক্ষিত হচ্ছে, উদাহারণস্বরূপ, ক্রুশ্চেভের মতো লোকেরা, এখনো আমাদের পাশে বাসা বেঁধে আছে। সকল স্তরের পার্টি কমিটিকে অতি অবশ্যই এই প্রশ্নে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।এই বিজ্ঞপ্তিকে ১৯৬০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারীতে ইস্যুকৃত কেন্দ্রিয় কমিটির ভ্রান্ত দলিলের সাথে একত্রিতভাবে কাউন্টি পার্টি কমিটি, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পার্টি কমিটি এবং সৈন্য বাহিনীতে রেজিমেন্ট স্তর পর্যন্ত পার্টি-কমিটিকে পাঠাতে হবে। এই কমিটিসমূহকে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে এই দুই দলিলের কোনটি বেঠিক আর কোনটি সঠিক, এই দলিলসমূহের ওপর তাদের উপলব্ধি, আর তাদের অর্জনসমূহ ও ভুল সম্পর্কে।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির একাদশ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সিদ্ধান্তবলী

আগষ্ট ৮, ১৯৬৬

১.     বর্তমানে বিকাশরত মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব জনগণের হৃদয় স্পর্শকারী এক বিরাট বিপ্লব যা আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের বিকাশের এক নয়া স্তর গঠন করে, একটা গভীরতর ও ব্যাপকতর স্তর।

পার্টির ৮ম কেন্দ্রিয় কমিটির দশম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কমরেড মাও সেতুঙ বলেনঃ রাজনৈতিক ক্ষমতা উচ্ছেদে সর্বদাই প্রয়োজন হচ্ছে সর্বাগ্রে জনমত সৃষ্টি করা, মতাদর্শিক ক্ষেত্রে কাজ করা। এটা বিপ্লবী শ্রেণীর জন্য যেমন সত্য, প্রতিবিপ্লবী শ্রেণীর জন্যও তেমনি সত্য। কমরেড মাও সেতুঙের এই থিসিস অনুশীলনে সমগ্রভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

উতখাত হওয়া সত্ত্বেও বুর্জোয়ারা ক্ষমতা পুনর্দখলের লক্ষ্যে শোষক শ্রেণীসমূহের পুরোনো ধারণা, সংস্কৃতি, অভ্যাস ও উপায়ের মাধ্যমে জনগণকে দূষিত করতে আর জনগণের মন জয় করার প্রচেষ্টা চালায়। সর্বহারা শ্রেণীকে করতে হবে ঠিক তার বিপরীত; মতাদর্শগত ক্ষেত্রে বুর্জোয়াদের সকল চ্যালেঞ্জের প্রতি সে নির্দয় মুখোমুখি আঘাত ছুঁড়ে দেবে এবং তার নিজস্ব নতুন ধারণা, সংস্কৃতি, অভ্যাস ও 2উপায়ের মাধ্যমে সমগ্র সমাজের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাবে। আমাদের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করা কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা পুঁজিবাদী পথ অনুসরণ করছে, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া ‘কর্তৃপক্ষসমূহ’ কে সমালোচনা ও অপসারণ করা, বুর্জোয়া ও অন্যান্য শ্রেণীসমূহের মতাদর্শকে সমালোচনা ও প্রত্যাখ্যান করা, এবং সমাজতন্ত্রের অথনৈতিক ভিত্তির সাথে অসাঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা আর উপরিকাঠামোর অবশিষ্ট ক্ষেত্রসমূহকে রূপান্তর করা যাতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুসংহতকরণ ও বিকাশে সহায়তা করা যায়।

২.     শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক, বিপ্লবী বুদ্ধিজীবি জনগণ ও বিপ্লবী ক্যাডাররা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রধান শক্তি। পূর্বে অজানা ছিলেন এমন বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগণ সাহসী হয়ে উঠেছেন এবং সাহসী পথবিভাজনকারীতে (Path Breaking) পরিণত হয়েছেন। তারা কর্মততপরতায় সজীব ও বুদ্ধিমান। বৃহদাকৃতির পোস্টার ও মহা বিতর্কসমূহের মাধ্যম দিয়ে তারা যুক্তি প্রদান করেন, পূর্ণাঙ্গ উন্মোচন করে ও সমালোচনা করেন আর বুর্জোয়াদের প্রকাশ্য ও লুক্কায়িত প্রতিনিধিদের ওপর সুদৃঢ় আক্রমণ পরিচালনা করেন। এমন একটা বিরাট বিপ্লবী আন্দোলনে তারা যে কোন না কোন ধরণের সীমাবদ্ধতা প্রদর্শন করবেন তা খুব কমই এড়ানো যায়, তথাপি তাদের প্রধান বিপ্লবী গতি প্রকৃতি (Orientation) শুরু থেকেই ছিল সঠিক। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে এটা হচ্ছে প্রধান ধারা। এটা হচ্ছে প্রধান দিশা, যে দিকে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব অব্যাহতভাবে অগ্রসরমান।

সাংস্কৃতিক বিপ্লব যেহেতু একটা বিপ্লব এটা অনিবার্যভাবে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এই প্রতিরোধ আসে প্রধানভাবে তাদের দিক থেকে কর্তৃপক্ষের মধ্যকার পার্টিতে অনুপ্রবেশকারী যারা পুঁজিবাদের পথ গ্রহণ করেছে। সমাজের পুরোনো অভ্যাসের শক্তি থেকেও এটা আসে। বর্তমানে, এই প্রতিরোধ এখনো যথেষ্ট শক্তিশালি ও একগুয়ে। যাই হোক, মোটের ওপর সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব একটা অপ্রতিরোধ্য সাধারণ ধারা। জনগণ পূর্ণভাবে জাগরিত হলে এমন প্রতিরোধ যে তড়িত চূর্ণ হবে তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে।

প্রতিরোধ যথেষ্ট শক্তিশলি হওয়ার কারণে উল্টানো ও এমনকি পুন পুন উল্টানো এত থাকবে। এটা সর্বহারা শ্রেণী ও অন্য মেহনতী জনগণকে বিশেষত নবীনতর প্রজন্মকে শক্তি প্রদান করে, তাদেরকে শিক্ষা দেয়, অভিজ্ঞতা দেয় এবং এটা বুঝতে সাহায্য করে যে বিপ্লবী পথ হচ্ছে আঁকাবাঁকা, সমতল নৌচালনা নয়।

৩.     পার্টি নেতৃত্ব জনগণকে জাগরিত করতে সাহসী কিনা তার দ্বারা এই মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলাফল নির্ণীত হবে।

বিবিধ স্তরে পার্টি সংগঠনসমূহের কর্তৃক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আন্দোলন কর্তৃক প্রদত্ত নেতৃত্ব সংক্রান্ত চারটি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি রয়েছে।

১)     এই পরিস্থিতিতে পার্টি সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকে এবং জনগণকে সাহসের সাথে জাগরিত করে। তারা সবকিছুর ওপরে সাহসকে স্থান দেয়, তারা নির্ভীক কমিউনিস্ট যোদ্ধা এবং চেয়ারম্যান মাওয়ের ভাল ছাত্র। তারা বৃহত আকৃতি পোস্টার ও মহা বিতর্কের প্রবক্তা। তারা জনগণকে উতসাহিত করে সকল রকমের ভূত ও দানবের উন্মোচনে, সেইসাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও ভুল ভ্রান্তিকে সমালোচনায়ও। নেৃতত্বের এই সঠিক ধরণ হচ্ছে সর্বহারা রাজনীতিকে সম্মুখভাগে রাখা ও মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে নেতৃত্বে রাখার ফলশ্রুতি।

২)     বহু ইউনিটেই, এই মহান সংগ্রামে নেতৃত্বের কর্তব্য সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের খুবই দুর্বল উপলব্ধি রয়েছে, তাদের নেতৃত্ব সতর্ক ও কার্যকর হওয়া থেকে দূরে এবং সেই অনুসারে তারা নিজেদের অক্ষম ও দুর্বল অবস্থানে আবিষ্কার করেন। তারা সবকিছুর ওপর ভীতিকে স্থান দেয়, সেকেলে পথ ও নিয়মনীতির প্রতি দৃঢ় এবং প্রচলিত অনুশীলন ভেঙে বেরিয়ে আসা ও সামনে অগ্রসর হতে অনিচ্ছুক। তারা নতুন ধারার জিনিসসমূহ ও জনগণের বিপ্লবী ধারার ব্যাপারে অসচেতন, ফলে তাদের নেতৃত্ব পরিস্থিতির পেছনে পড়ে রয়েছে এবং জনগণের পেছনে পড়ে রয়েছে।

৩)    কিছু ইউনিটে যেসকল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ অতীতে কোন না কোন ধরণের ভুল করেছেন তারা ভীতিকে সবার উপরে স্থান দিতে এমনকি আরো করুন অবস্থায় আছেন এই ভয়ে যে জনগণ তাদের বর্জন করবে। প্রকৃতপক্ষে, যদি তারা সিরিয়াস আত্মসমালোচনা করেন এবং জনগণের সমালোচনা গ্রহণ করেন পার্টি ও জনগণ ভুলত্রুটিসমূহের জন্য ভর্তুকী দেবে। যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ তা না করেন, তাহলে তারা অব্যাহতভাবে ভুল করে যাবেন এবং গণআন্দোলনের প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হবেন।

৪)     কিছু ইউনিট পার্টিতে অনুপ্রবেশকারী পুঁজিবাদের পথগামীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কর্তৃপক্ষের এই ব্যক্তিগণ জনগণ কর্তৃক উন্মোচিত হওয়ার আশংকায় চরমভাবে আতঙ্কিত। তাই তারা গণআন্দোলনকে দমন করার সম্ভাব্য সকল ছূঁতো খোঁজে। তারা আক্রমণের নিশানাকে বদল করা ও কালোকে সাদায় রূপান্তরের মতো রণকৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করে আন্দোলনকে গোল্লায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায়। যখন তারা নিজেদের খুবই বিচ্ছিন্ন ও আগের মতো চলতে অক্ষম আবিষ্কার করে, তারা আরো ষড়যন্ত্র পাঁকায়, জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত করে, গুজব রটায় এবং যতটুকু সম্ভব বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবকে একাকার করে দেওয়ার চেষ্টা করে, আর এসবকিছুই তারা করে বিপ্লবীদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে।

পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি দাবী করে সকল স্তরের পার্টি কমিটি সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করবে, সবকিছুর ওপর সাহসিকতাকে স্থান দেবেন, সাহসের সাথে জনগণকে জাগরিত করবে, দূর্বলতা ও অক্ষমতার অবস্থাকে পরিবর্তন করবে যেখানে তা বিদ্যমান, সেই কমরেডদের অনুপ্রাণিত করবে যারা ভুল করেছিল কিন্তু নিজেদের মানসিক বোঝাকে ঝেরে ফেলতে ও সংগ্রামে যোগ দিতে নিজেদের সংশোধনে ইচ্ছুক, কর্তৃপক্ষের যারা পুঁজিবাদের পথ গ্রহণ করেছে তাদের নেতৃত্বকারী পদ থেকে অপসারণ করবেন এবং এভাবে সর্বহারা বিপ্লবীদের নেতৃত্ব পুনকব্জাকরণ সম্ভব করবেন।

৫)     মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে জনগণের জন্য একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে নিজেদের নিজেরা মুক্ত করা, এবং তাদের পক্ষ হয়ে কোন পদ্ধতি অতি অবশ্যই ব্যবহার করা যাবেনা।

জনগণকে বিশ্বাস করুন, তাদের ওপর নির্ভর করুন এবং তাদের উদ্যোগকে শ্রদ্ধা করুন। ভয় মুছে ফেলুন। বিশৃঙ্খলাকে ভয় করবেননা। চেয়ারম্যান মাও মাঝে মাঝে আমাদের বলেন যে বিপ্লব এত শুদ্ধ, এত ভদ্র, এত শান্ত, এত দয়ালু, এত বিনীত, এত সংযত, এত উদার হতে পারেনা। এই মহান বিপ্লবী আন্দোলনে জনগণকে নিজে নিজে শিক্ষিত হতে দিন এবং সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে আর কাজের নির্ভুল ও ভুল পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য করতে শিখতে দিন।

বিষয়বস্তুর যুক্তিযুক্তকরণে বৃহদাকৃতির পোস্টার ও মহা বিতর্কসমূহের পুর্ণ সদ্ব্যবহার করুন যাতে জনগণ সঠিক মতসমূহ স্বচ্ছকরণে সক্ষম হন, ভুল মতসমূহকে সমালোচনায় সক্ষম হন এবং সকল ভূত ও দানবের উন্মোচনে সক্ষম হন। এভাবে সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক সচেতনতাকে উন্নীত করতে সক্ষম হবেন, সক্ষমতা ও মেধাকে বিকশিত করতে পারবেন এবং সঠিককে ভুল থেকে আলাদা করতে পারবেন এবং শত্রু ও আমাদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য রেখা টানতে সক্ষম হবেন।

৬)কারা আমাদের শত্রু? কারা আমাদের বন্ধু? এটাই হচ্ছে বিপ্লবের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং একইভাবে সাংস্কৃতিক বিপ্লবেরও এটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্র্শ্ন।

পার্টি নেতৃত্বকে বাম আবিষ্কারে, বামের সারিকে বিকশিতকরণে ও শক্তিশালিকরণে ভাল হতে হবে এবং বিপ্লবী বামের ওপর দৃঢ়ভাবে নির্ভর করতে হবে। আন্দোলনের সময় সর্বাধিক প্রতিক্রিয়াশিল দক্ষিণপন্থীদের সমগ্রভাবে বিচ্ছিন্ন করতে, মধ্যপন্থীদের জয় করতে এবং ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ যাতে আন্দোলনের শেষে আমরা শতকরা ৯২ ভাগেরও অধিক জনগণের সাথে ঐক্য অর্জন করতে পারি।

মুষ্টিমেয় চরম প্রতিক্রিয়াশিল বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থী ও প্রতিবিপ্লবী সংশোধনবাদীদের আঘাত হানতে, পার্টি, সমাজতন্ত্র ও মাও সেতুঙ চিন্তাধারার বিরুদ্ধে তাদের অপরাধকে পুর্ণরূপে উন্মোচন ও সমালোচনা করতে সকল শক্তি কেন্দ্রিভূত করুন যাতে সর্বোচ্চ বিচ্ছিন্নকরণ সম্ভব হয়।

বর্তমান আন্দোলনের প্রধান নিশানা হচ্ছে পার্টির মধ্যকার সেইসকল যারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে রয়েছে আর পুঁজিবাদের পথ গ্রহণ করেছে।

পার্টি-বিরোধী, সমাজতন্ত্র বিরোধী দক্ষিণপন্থী এবং যে সকল পার্টি ও সমাজতন্ত্র সমর্থনকারী ভূল বলেছে অথবা করেছে অথবা কিছু বাজে প্রবন্ধ লিখেছে অথবা অন্য কাজ করেছে তাদের মধ্যে পার্থক্যকরণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কঠোরভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে একদিকে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া পণ্ডিত একনায়ক ও ‘কর্তৃপক্ষ’ আর অন্যদিকে সাধারণ বুর্জোয়া একাডেমিক ধ্যান ধারণা আছে এমন জনগণের মধ্যে পার্থক্যকরণে।

৭)     কঠিন পার্থক্যরেখা অঙ্কন করতে হবে দুইটি ভিন্ন ধরণের দ্বন্দ্বের মধ্যেঃ জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং আমাদের ও শত্রুদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বে পরিণত করা চলবেনা এবং আমাদের ও শত্রুদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব বিচার করলে চলবেনা।

বিভিন্ন ধরণের মত পোষণ করা জনগণের জন্য স্বাভাবিক। বিভিন্ন মতের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর অযোগ্য, প্রয়োজনীয় ও উপকারী। স্বাভাবিক ও পুর্ণ বিতর্কের প্রক্রিয়ায় জনগণ নিশ্চিত করবেন কোনটা ন্যায্য, সঠিক আর কোনটা বেঠিক এবং ক্রমান্বয়ে সর্বসম্মতি অর্জন করবেন।

বিতর্কে যে পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে তা হচ্ছে বাস্তব তথ্য উপস্থাপন, যুক্তি দিয়ে বিচার করা এবং যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া। বিভিন্ন মত পোষণকারী সংখ্যালঘুদের ওপর বল প্রয়োগে মত চাপিয়ে দেওয়া অননুমোদনীয়। সংখ্যালঘুকে রক্ষা করতে হবে কারণ কখনো কখনো সত্য সংখ্যালঘুদের সাথে থাকে। এমনকি সংখ্যালঘু যদি ভুলও হয়, তখনও তাদেরকে নিজ বক্তব্য প্রদান করতে অনুমোদন করতে হবে এবং তাদের মতকে সংরক্ষণ করতে হবে।

যখন কোন বিতর্ক হবে তাকে যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে হতে হবে বল প্রয়োগ অথবা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নয়।

বিতর্কের প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক বিপ্লবীকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করায় ভাল হতে হবে এবং চিন্তা করতে সাহসী হওয়া, কথা বলতে সাহসী হওয়া আর কর্মততপরতায় সাহসী হওয়ার কমিউনিস্ট উদ্যমকে বিকশিত করতে হবে। বিপ্লবী কমরেডদের যেহেতু একই প্রবণতাগত ভিত্তি রয়েছে, ঐক্যকে জোরদারের স্বার্থে পার্শ্ব ইস্যুসমূহে সীমাহীন বিতর্ক তাদের এড়াতে হবে।

৮)    সাংস্কৃতিক বিপ্লবে কিছূ বিদ্যালয়, ইউনিট ও কর্মততপরতা দল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে বৃহত আকৃতি পোস্টার সাঁটিয়েছিল যে-জনগণ তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ সংগঠিত করেছে। এই লোকেরা এমন শ্লোগান তুলে ধরেছেঃ একটা ইউনিট অথবা কর্মততপরতা দল-এর বিরোধিতার মানে হচ্ছে পার্টি ও সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা, অর্থাত প্রতিবিপ্লব। এভাবে এটা অনিবার্য যে তাদের আক্রমণসমূহ কিছু প্রকৃত বিপ্লবী কর্মীর ওপর পড়বে। এটা হচ্ছে প্রবণতাগত ভ্রান্তি, লাইনের ত্রুটি এবং চরমভাবে অননুমোদনীয়।

গুরুতর মতাদর্শিক ভ্রান্তিতে ভোগে এমন বেশ কিছু ব্যক্তি, পার্টি বিরোধী সমাজতন্ত্র-বিরোধী দক্ষিণপন্থীদের অনেকে গণআন্দোলনের কতিপয় সীমাবদ্ধতা ও ভুলভ্রান্তির সুযোগ নিচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনগণের অনেককে ‘প্রতিবিপ্লবী’ আখ্যা দিয়ে গুজব রটনা করতে, ঘোঁট পাঁকাতে, বিক্ষোভ করতে । এমন ‘পকেটমার’ দের ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন এবং যথাসময়ে তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করা দরকার।

আন্দোলনের প্রক্রিয়ায়, যা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করতে হবে যেমন হত্যা, জ্বালাও পোড়াও, সাবোটাজ অথবা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা চুরির মতো অপরাধের প্রমাণ রয়েছে প্রতিবিপ্লবীদের ক্ষেত্রে এমন ব্যতীত আন্দোলনে উদ্ভূত সমস্যাবলীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক স্কুল ও প্রাইমারী স্কুলে ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা। আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া প্রতিরোধের জন্য যে ছুঁতোয়ই হোকনা কেন জনগণকে একে অপরের বিরুদ্ধে এবং ছাত্রদেরও উত্তেজিত করা অননুমোদনীয়। এমনকি প্রমাণিত দক্ষিণপন্থীদেরকেও আন্দোলনের পরবর্তী স্তরে প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব অনুসারে মোকাবেলা করতে হবে।

৯)    ক্যাডাররা মোটা দাগে চার বর্গে পড়েঃ

১)     ভাল;

২)     তুলনামূলক ভাল

৩)    যারা গুরুতর ভুলভ্রান্তি করেছে কিন্তু পার্টি-বিরোধী সমাজতন্ত্র বিরোধী দক্ষিণপন্থী হয়নিimages3

৪)     স্বল্পসংখ্যক পার্টি-বিরোধী সমাজতন্ত্র বিরোধী

সাধারণ পরিস্থিতিতে, প্রথম দুই বর্গ (ভাল ও তুলনামূলক ভাল) হচ্ছে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ।

পার্টি-বিরোধী সমাজতন্ত্র-বিরোধী দক্ষিণপন্থীদের সম্পূর্ণরূপে দেউলিয়া করে দিতে হবে ও তার প্রভাবকে দূরীভূত করতে হবে। একইসাথে তাদেরকে একটা সমাধান দিতে হবে যাতে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে পারে।

১০)    মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে বহু নতুন জিনিস জন্ম নিতে শুরু করেছে। বহু স্কুল ও ইউনিটে জনগণ কর্তৃক সৃষ্ট সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপ, কমিটি, অন্যান্য সাংগঠনিক রূপ হচ্ছে নতুন জিনিস এবং বিরাট ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন।

এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপ, কমিটি ও কংগ্রেসসমূহ হচ্ছে চমতকার নয়া রূপের সংগঠন যেখানে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে জনগণ নিজেদের শিক্ষিত করছেন।এগুলো হচ্ছে জনগণের সাথে আমাদের পার্টির ঘনিষ্ঠ সংযোগের এক চমতকার সেতু। এগুলো হচ্ছে সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ক্ষমতার অঙ্গ।

হাজার হাজার বছর ধরে সকল শোষক শ্রেণীসমূহের দ্বারা বাহিত পুরোনো ধ্যান ধারণা, আচার আচরণ ও অভ্যাসের বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রাম আবশ্যিকভাবে খুবই খুবই দীর্ঘকাল ব্যাপী হবে। তাই, সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপ, কমিটি ও কংগ্রেসসমুহকে অস্থায়ী সংগঠন নয় বরং স্থায়ী নিয়মিত গণসংগঠণ হতে হবে। তারা শুধু কলেজ, স্কুল ও সরকারের সমর্থক সংগঠণসমূহের জন্যই উপযোগী তাই নয় বরং সাধারণভাবে সকল কারখানা, খনি ও অন্য সংস্থাসমূহ, শহুরে জেলা ও গ্রামসমূহের জন্যও।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপসমূহ ও কমিটিসমূহের সদস্য ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবী কংগ্রেসসমূহের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য প্যারি কমিউনের মতো সাধারণ নির্বাচনের একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। প্রার্থীদের তালিকা বিপ্লবী জনগণ কর্তৃক পূর্ণ আলোচনার পর প্রদত্ত হতে হবে এবং বারংবার জনগণ তালিকাসমূহ আলোচনা করার পর নির্বাচন হবে।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপের সদস্যদের এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবী কংগ্রেসসমূহের প্রতিনিধিদের যে কোন সময় সমালোচনা করতে পারবে জনগণ। যদি এই সদস্যগণ অথবা প্রতিনিধিগণ অক্ষম প্রমাণিত হয়, তাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা যাবে অথবা আলোচনার পর জনগণ ফেরত আনতে পারবেন।

কলেজ ও স্কুলের সাংস্কৃতিক বিপ্লবী গ্রুপ, কমিটি ও কংগ্রেসসমূহ বিপ্লবী ছাত্রদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে। একইসাথে, বিপ্লবী শিক্ষক কর্মচারী ও শ্রমিকদের কিছু সংখ্যক প্রতিনিধিও তাতে থাকতে হবে।

১১)    মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে একটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে পুরোনো শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদানের পুরোনো নীতিমালা ও পদ্ধতির রূপান্তর।

আমাদের স্কুলসমূহ বুর্জোয়া বুদ্ধিবীবিদের আধিপত্যে থাকার অবস্থাকে এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে হবে।

প্রতিটি ধরণের স্কুলে আমাদের অতি অবশ্যই কমরেড মাও সেতুঙ কর্তৃক এগিয়ে নেওয়া এই কর্মনীতিকে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে যে শিক্ষা সর্বহারা শ্রেণীকে সেবা করবে এবং শিক্ষাকে উতপাদনশীল শ্রমের সাথে যুক্ত হতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ও শারীরিকভাবে বিকশিত করা যায় এবং তারা যাতে সমাজতান্ত্রিক সচেতনতা ও সংস্কৃতিযুক্ত শ্রমিক হতে পারে।

পাঠদানের পর্যায়কালকে ছোট হতে হবে এবং কোর্সসমূহকে হতে হবে স্বল্প ও অধিকতর ভাল। শিক্ষা সরঞ্জামকে সামগ্রিকভাবে রূপান্তরিত হতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে সরলীকৃত জটিল বস্তু দ্বারা সূচিত হতে হবে। প্রধান কাজ অধ্যয়ন হলেও ছাত্রদের অন্যান্য বিষয়ও শিখতে হবে। বলতে গেলে, অধ্যয়নের সাথে সাথে তাদেরকে শিল্প শ্রম, কৃষি কাজ ও সামরিক বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং বুর্জোয়াদের সমালোচনার লক্ষ্যে সংঘটিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।

১২)    সাংস্কৃতিক বিপ্লবের গণ আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় বুর্জোয়া ও সামন্ত মতাদর্শের সমালোচনাকে সর্বহারা বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী ও মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, মাও সেতুঙ চিন্তাধারার প্রচারের সাথে ভালভাবে যুক্ত হতে হবে।

পার্টিতে অনুপ্রেবেশকারী প্রচলিত (Typical) বুর্জোয়া প্রতিনিধি ও প্রচলিত (Typical) বুর্জোয়া একাডেমিক ‘কর্তৃপক্ষ’-এর সমালোচনা সংগঠিত করতে হবে, এবং এর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে দর্শন, ইতিহাস, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং শিক্ষায়, সাহিত্য ও শিল্পকলার বিভিন্ন কর্মে ও তত্ত্বে এবং প্রকৃতিবিজ্ঞানের তত্ত্বে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিবিধ প্রতিক্রিয়াশীল মত-এর সমালোচনা।

সংবাদ মাধ্যমে কারো নামে সমালোচনা সম স্তরে পার্টি কমিটির আলোচনার পর সিদ্ধান্তকৃত হতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে উচ্চতর স্তরের পার্টি কমিটিতে পেশ করা হবে অনুমোদনের জন্য।

১৩)   বিজ্ঞানী, কৃতকৌশলী এবং কর্মচারীদের ব্যাপারে যতক্ষণ তারা দেশপ্রেমিক, সজীবতার সাথে কাজ করেন, পার্টি ও সমাজতন্ত্রের বিরোধী নন এবং বিদেশী কোন দেশের সাথে কোন অবৈধ সম্পর্ক রক্ষা করেননা, বর্তমান আন্দোলনে আমাদের ‘ঐক্য, সমালোচনা, ঐক্য’-এর কর্মনীতি অব্যাহতভাবে প্রয়োগ করতে হবে, আর যেসব বিজ্ঞান ও কৃতকৌশল কর্মী অবদান রেখেছেন, তাদের বিশ্বদৃষ্টিকোন ও কাজের স্টাইলকে ক্রমান্বয়ে রূপান্তরের জন্য তাদেরকে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

১৪)    বৃহত ও মাঝারি শহরগুলোর পার্টি ও সরকারের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ইউনিটসমূহ এবং নেতৃত্বকারী অঙ্গসমূহ হচ্ছে বর্তমান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মনোযোগের কেন্দ্র। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে উভয়ত শহর ও গ্রামে চালাতে হবে এবং উচ্চতর স্তরে উন্নীত করতে হবে। নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুসারে বিবিধ অঞ্চল ও বিভাগে এর প্রভাবে ব্যবস্থা গড়ে ওঠতে পারে।

গ্রামাঞ্চলে ও শহরের সংস্থাসমূহে চলমান সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা আন্দোলনকে হতাশ হলে চলবেনা যেখানে মূল ব্যবস্থাপনা হচ্ছে যথার্থ এবং আন্দোলন ভালভাবেই চলছে বরং মূল ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অব্যহত থাকতে হবে। যাইহোক, বর্তমান মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে উত্থিত প্রশ্নসমূহ যথাযথ সময়ে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে আলোচনার জন্য যাতে সর্বহারা মতাদর্শকে আরো এগিযে নেওয়া যায় এবং বুর্জোয়া মতাদর্শকে অপসারণ করা য়ায়।

কিছু কিছু এলাকায় মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে মনোযেগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা আন্দোলনে গতি সঞ্চারক যুক্ত করতে এবং রাজনীতি, মতাদর্শ, সংগঠন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রসমূহ পরিষ্কারকরণে। স্থানীয় পার্টি কমিটি যেখানে যথার্থ মনে করে সেখানে তা করা যেতে পারে।

১৫)    মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের মতাদর্শের বিপ্লবীকরণ এবং ফল হিসেবে কাজের সকল ক্ষেত্রে ব্যাপকতর, দ্রুততর, অধিকতর ভাল এবং অধিক অর্থনৈতিক ফলাফল অর্জন। যদি জনগণকে সম্পূর্ণরূপে জাগরিত করা হয় এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়, উভয়তঃ সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও উতপাদনকে পরিচালনা করা সম্ভব হবে একটি আরেকটিকে বাঁধাগ্রস্ত না করে, আমাদের সকল কাজে উচ্চ গুণাগুণের নিশ্চয়তা সহকারে।

মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব হচ্ছে আমাদের দেশে সামাজিক উতপাদিকা শক্তির বিকাশে এক শক্তিশালি চালিকাশক্তি। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে উতপাদনের বিকাশের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর যে কোন ধারণা ভুল।

১৬)   সশস্ত্র বাহিনীতে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা আন্দোলন চালাতে হবে কেন্দ্রিয় কমিটির সামরিক কমিশন ও গণমুক্তি বাহিনীর সাধারণ রাজনৈতিক বিভাগের নির্দেশাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে।

১৭)    মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে মাও সেতুঙ চিন্তাধারার মহান লাল ব্যানারকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে এবং সর্বহারা রাজনীতিকে কমান্ডে রাখতে হবে। ব্যাপক শ্রমিক, কৃষক, ক্যাডার ও বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে চেয়ারম্যান মাও সেতুঙের রচনাসমূহের সৃজনশীল অধ্যয়ন ও প্রয়োগের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবে মাও সেতুঙ চিন্তাধারাকে কর্মের দিক নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

এই জটিল মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে সকল স্তরের পার্টি কমিটিকে চেয়ারম্যান মাওয়ের রচনাবলীকে অধিক থেকে অধিক যতন সহকারে ও সৃজনশীলভাবে অধ্যয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। নির্দিষ্টভাবে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং নেতৃত্ব সম্পর্কে পার্টির পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে মাওয়ের লেখা যেমন নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে, শিল্প ও সাহিত্য সম্পর্কে ইয়েনান ফোরামে আলোচনা, জনগণের ভিতরকার দ্বন্দ্বসমূহের সঠিক সমাধান সম্পর্কে, প্রচারকার্য সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতা, নেতৃত্বের পদ্ধতি এবং পার্টি কমিটির কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে সমস্যাবলী তাদের বারংবার অধ্যয়ন করতে হবে।

সকল স্তরের পার্টি কমিটিকে চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক বছর বছর ধরে প্রদত্ত নির্দেশনাকে মেনে চলতে হবে, তাদেরকে ‘জনগণের মধ্য থেকে আসা এবং জনগণের মধ্যে যাওয়া’র গণলাইন সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং তাদেরকে শিক্ষক হওয়ার আগে ছাত্র হতে হবে। তাদেরকে একতরফা ও সংকীর্ণ হওয়া এড়াতে হবে। তাদেরকে বস্তুবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্বকে এগিয়ে নিতে হবে এবং অধিবিদ্যা ও পন্ডিতীপণাকে বিরোধিতা করত হবে।

কমরেড মাওকে শীর্ষে রেখে পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির নেতৃত্বের অধীনে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উজ্জ্বল সাফল্য সুনিশ্চিত।

বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা থেকে মুক্তি

–   চ্যাং চুন-চিয়াও

(১৯৫৮)

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীন বিপ্লবের ইতিহাস সম্পর্কে যে কারো প্রাথমিক ধারণা আছে তারা সবাই জানেন যে সৈন্যবাহিনী ও জনসাধারণের মধ্যে, অফিসার ও অধঃস্তনদের মধ্যে এবং উচ্চতর স্তর ও নিম্নতর স্তরের মধ্যে সমতা জনসাধারণের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা (Handling)র ক্ষেত্রে সর্বদাই মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন চীনা গণমুক্তি ফৌজ এবং বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকাগুলোতে শ্রমিক ও কৃষকদের সৈন্যবাহিনীর অস্তিত্ব থেকে অস্টম রুট বাহিনী, নয়া চতুর্থ বাহিনী ও Zhang_Chunqiaoপিএলএর জন্ম পর্যন্ত এবং চিঙকাংশান থেকে মুক্ত এলাকাগুলো পর্যন্ত সকল বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকাগুলো এই নীতি সর্বদাই দেখেছে। কমরেড মাও সেতুঙের প্রতক্ষ্য নেতৃত্বে চিঙকাঙশানের বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকায় এই নীতি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সিসিপি কেন্দ্রিয় কমিটির প্রতি রিপোর্টে (“চিংকাঙশানে সংগ্রাম”) কমরেড মাও সেতুঙ লেখেনঃ

“লাল ফৌজের সৈন্যদের অধিকাংশই এসেছে বেতন ভোগী সৈন্যবাহিনী থেকে, কিন্তু লাল ফৌজে এসে এদের চরিত্র বদলেছে। সর্বাগ্রে লাল ফৌজ বেতন দেওয়ার প্রথার বিলোপ ঘটিয়েছে এই অনুভূতি জাগিয়ে যে তারা নিজেদের জন্য ও জনসাধারণের জন্য সংগ্রাম করছে, অন্য কারো জন্য নয়। তখন থেকে লাল ফৌজে নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই বরং শস্য, রান্নাবান্নার তেল, লবণ, জ্বালানী কাঠের জন্য টাকা ও শাক শব্জি এবং সামান্য পকেট খরচ ইস্যু করা হয়…”

“হুনান প্রাদেশিক কমিটি সৈনিকদের বৈষয়িক অবস্থার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং একজন গড়পরতা শ্রমিক অথবা কৃষকের চেয়ে অন্ততঃ কিছুটা ভাল করার আহ্বাণ জানায়। প্রকৃতপক্ষে তা আরও খারাপ। শস্যের সাথে সাথে প্রত্যেকে রান্না করার তেল, লবণ, জ্বালানী কাঠ ও শাকশব্জীর জন্য পাঁচ সেন্ট এক দিনের জন্য পায়, আর এমনকি এটাও বজায় রাখা কঠিণ। অত্যধিক শীতেও আমাদের অনেক সৈনিকই এখনও কেবল দুই স্তরের পাতলা পোশাক পড়ছেন। সৌভাগ্যবশতঃ আমরা কঠোর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তার চেয়ে বেশী, আমাদের সকলে একই কঠোর জীবন যাপনের অংশীদার; কমান্ডার থেকে শুরু করে সকলে শস্যের পাশাপাশি রান্নার জন্য পাঁচ সেন্টের খাদ্য ভাতা পান।”

“পার্টির পালিত ভূমিকার পাশাপাশি যে কারণে লাল ফৌজ দরিদ্র বৈষয়িক অবস্থা এবং ঘন ঘন এমন গণতন্ত্রের অনুশীলন সত্ত্বেও এগিয়ে যেতে পেরেছে তা হল  অফিসাররা সৈনিকদের প্রহার করেনা; অফিসার ও সৈন্যরা সমান ব্যবহার পান; সৈন্যরা মুক্তভাবে সভা করতে ও কথা বলতে পারেন; তুচ্ছ আনুষ্ঠানিকতা বিলোপ করা হয়েছে; এবং হিসাব সবার কাছে উন্মুক্ত খতিয়ে দেখার জন্য। সৈন্যরা মেস ব্যবস্থা পরিচালনা করে এবং রান্না বান্নার তেল, লবণ, জ্বালানী কাঠ ও শাক শব্জির জন্য দৈনিক বরাদ্দ পাঁচ সেন্টের মধ্যে প্রত্যেকে প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে সাত পয়সা বাঁচিয়ে ফেলতে পারে পকেট খরচার জন্য যাকে বলে “মেস সঞ্চয়’। এসকলই সৈন্যদের বিরাট তুষ্টি প্রদান করে। নির্দিষ্টভাবে নতুন বন্দী সৈন্যরা অনুভব করে  যে আমাদের বাহিনী আর কুও মিনতাঙ বাহিনীর মধ্যে বিরাট ব্যবধান। তারা আত্মিকভাবে মুক্ত মনে করে যদিও লাল ফৌজের বৈষয়িক অবস্থা শ্বেত ফৌজের সমান নয়। শ্বেত বাহিনীতে গতকাল যেসকল সৈনিকের কোন সাহস ছিলনা আজকে লাল ফৌজে তারা খুব সাহসী; গণতন্ত্রের ফলাফল হচ্ছে এমনই। লাল ফৌজ হচ্ছে সেই চুল্লী যাতে সকল বন্দী সৈনিকেরা রূপান্তরিত হয় যখনই তারা আসে। চীনে জনসাধারণের যতখানি দরকার ঠিক ততখানিই সৈন্যবাহিনীরও গণতন্ত্র দরকার। সামন্ততান্ত্রিক ভাঁড়াটে সৈন্যদলকে খাঁটো করতে আমাদের সৈন্যবাহিনীতে গণতন্ত্র হচ্ছে একটা অস্ত্র।”

আমরা যেমনটা জানি, এইসব মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ও কমিউনিস্ট সম্পর্কসমূহ বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকায় সম্পর্কের একটা উদাহারণ স্থাপন করে। সমতার এই কমরেডসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছে সৈন্যবাহিনী ও জনসাধারণের মধ্যে, সৈন্যবাহিনী ও সরকারের মধ্যে, ক্যাডারদের মধ্যে, এবং উচ্চতর স্তর ও নিম্নতর স্তরসমূহের মধ্যে। তারা সম্পর্ক পরিচালনা করেছে অস্ত্র ও ক্ষমতার বলে নয়; বরং বোঝানো ও সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মাধ্যমে। গণমুক্তি বাহিনীর মতো বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকার জনগণও একে অপরের সাথে সম্পর্ক পরিচালনা করেছে। অন্য এলাকার থেকে আসা জনগণ মুক্ত এলাকাসমূহে আসা মাত্র খুঁজে পায় যে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক যথাযথভঅবে পরিচালনা করার মাধ্যমে মুক্ত এলাকাসমূহের সকল জনগণ কঠিণ জীবন যাপন করার পাশাপাশি “সৌভাগ্যতঃ একই কঠোর জীবন যাপনের অংশীদার হয়েছিল”। সকলে এক সরবরাহ প্রথায় জীবন যাপন করছিল যা ছিল কমিউনিস্ট চরিত্রের। যদিও কাজের প্রয়োজনীয়তার কারণে জীবন যাপন মানে বিভিন্নতা ছিল কিন্তু পার্থক্য ব্যাপক ছিলনা। রাজনীতি ও গণলাইন সর্বত্র কর্তৃত্ব করেছে, এই কারণে শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক, ছাত্র ও ব্যবসায়ীরা একই পরিবারের সদস্যদের মতো ঐক্যবদ্ধ ছিল; তারা শত্রুর বিরুদ্ধে কঠিণ লড়াই চালিয়েছে। আপনাদের কি এখনো মনে আছে বৃহত সৈন্যবাহিনীর সৈনিকেরা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কীভাবে লড়াই করেছে? গণমুক্তি বাহিনীকে সমর্থন করতে লক্ষ লক্ষ মিলিশিয়া সদস্য সৈন্যবাহিনীকে অনুসরণ করে দক্ষিণে তাদের অগ্রগমণে। সৈন্যবাহিনীর মতো একই সামরিক কমিউনিজমের জীবন তারা যাপন করে। তারা কর্তপক্ষ অথবা ধনী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। মজুরীর কোন ভাবধারা, “টুকরো মজুরী” তো দূরের কথা, তাদের মনে আসেনি। বিপ্লবে তারা যোগদান করতে এসেছে নিজেদের খাদ্য সাথে করে নিয়ে এসে। তাদের লক্ষ্য ছিল তিন প্রধান শত্রুকে উচ্ছেদ করা আর সমগ্র দেশকে মুক্ত করা।

বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকাসমূহে, পুরুষ ও নারীরা, প্রবীণ ও নবীনরা এবং অগ্রভাগ ও পশ্চাদভাগ একই অন্তকরণ নিয়ে লড়াকু দল গঠণ করেছিল। সুসংহতভাবে এটা ছিল সামরিক কমিউনিজম যা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী চিন্তা ও কাজের স্টাইলকে চিহ্নিত করে। মাও সেতুঙের চিন্তা ও কাজের স্টাইল লক্ষকোটি জনের মধ্যে শিকড় গাড়ল, প্রস্ফুটিত হল ও ফল দিল। কমিউনিজমের অস্ত্রে সজ্জিত আর যুদ্ধে পোড় খাওয়া সৈন্যবাহিনী ও জনগণ ছিল অপরাজেয়। চীনা বিপ্লবের ইতিহাস কি একে সম্পূর্ণভাবে জন্ম দেয়নি?

দেশব্যাপী মুক্তি অর্জনের পরেও, “সরবরাহ প্রথা”র দ্বারা চিহ্নিত সামরিক কমিউনিজমের এই জীবন ছিল খুবই জনপ্রিয়। “সরবরাহ প্রথা”য় সবাই গর্বিত হত কেননা এটা পুরোনো বিপ্লব ও কঠিন সংগ্রাম দ্বারা চিহ্নিত ছিল। কিছু বিপ্লবী তরুণও “সরবরাহ প্রথা” কামনা করেছিল যখন তারা প্রথম বিপ্লবে যোগ দেয়। তারা এটা দেখাতে চেয়েছিল যে পুরোনো কমরেডদের মতো তারাও বিপ্লবে আন্তরিকভাবে অংশ নিয়েছে। সরবরাহ প্রথার জীবনে যারা অভ্যস্ত ছিল তারা মজুরী প্রথার প্রতি লোভ করেনি। জীবনের এই প্রথা যা সমতার সম্পর্ক প্রদর্শন করেছে, তা তাদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু অল্প কিছুকাল পরেই জীবনের এই প্রথা বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারার দ্বারা আক্রান্ত হল। বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারার শাঁস নিহিত রয়েছে অভিজাততন্ত্রে (Hierarchy)। বুর্জোয়া অধিকার-এর ভাবধারায় সিক্ত লোকজনের দৃষ্টিতে সরবরাহ প্রথা ছিল অনাকাঙ্খিত। তারা একে “গ্রামীণ কাজের স্টাইল” এবং “গেরিলা অভ্যাস” হিসেবে দেখেছে। বুর্জোয়াদের দ্বারা আনীত এমন বক্তব্যে আশ্চর্য কিছূ ছিলনা। কিন্তু শীঘ্রই বেশ কিছু পার্টি ক্যাডার এই ভাবধারার প্রভাবে পড়লো। তাদের মধ্যে শোনা গেল সরবরাহ প্রথার অধিক দোষত্রুটি ও সমালোচনা আর মজুরী প্রথার অধিক গুণাগুণ। এভাবে, “সরবরাহ প্রথা” প্রায় একটা খারাপ সূত্রে পরিণত হলো। কাজে উতসাহ উদ্দীপনার অভাবকে সরবরাহ প্রথার ওপর আরোপ করা হল। সরবরাহ প্রথার দোষত্রুটির  ওপর একটা দাপ্তরিক খাম আরোপ করা হল। কারখানা ও গুদামের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক ক্ষতিকে আবারো সবররাহ প্রথার দোষত্রুটির ওপর আরোপ করা হল।  এক কথায়, যে কমিউনিস্ট সরবরাহ প্রথা চীন বিপ্লবের বিজয় নিশ্চিত করেছিল তাকে কিছু লোক মারাত্মক আক্রমণাত্মক নিন্দা জানালো যাকে অতি অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।

সরবরাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রধান যুক্তি হল যে এটা উতপাদনে উতসাহ উদ্দীপনা জাগাতে পারেনা। এর তাত্ত্বিক ভিত্তি হচ্ছে অর্থনীতিবাদীদের দ্বারা জোর দেওয়া “বৈষয়িক স্বার্থের নীতিমালা”। বলা হচ্ছে যে সামাজিক ব্যবস্থার অধীনে যেহেতু পুরোনো শ্রম বিভাজন এখনো অস্তিত্বমান, অর্থাত মানসিক ও শারিরীক শ্রমের মধ্যে, শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে এবং দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমের মধ্যে কিছু পার্থক্য যেহেতু এখনো বিরাজমান, শ্রমিকদের বৈষয়িক স্বার্থের মাধ্যমে উতপাদন বিকাশের নীতিকে একটা চমতকার নীতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে “মজুরী স্কেল” ও “টুকরো মজুরী” শ্রমিকদের উদ্দীপনা জাগাতে পারে তাদের শ্রমের ফলে সর্বাধিক স্বার্থ দেখাতে এবং “সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা”র উদ্দীপনা জাগায় কারণ উচ্চতর শ্রম উতপাদনশীলতা উচ্চতর মজুরী দাবী করে। বলা হচ্ছে যে এই প্রথা হচ্ছে “সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধিতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।” এই যুক্তি খুবই বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও জনপ্রিয় ভাষায় পুরোনো প্রবাদটির মতো সংক্ষেপিত “টাকায়

কথা বলে”। যদি উচ্চ মজুরী ব্যবহার করা হয় “উদ্দীপনা” জাগাতে, তাহলে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমকে এক পিস্ চকোলেটের মতো কেনা যাবে।

এমন একটা তত্ত্বের ব্যাপারে আমাদের কি বলার আছে?

যখন সরবরাহ প্রথা বলবত ছিল লক্ষ কোটি জনগণ কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে, তুষারাবৃত পর্বতদেশে আরোহন করেছে, তৃণভুমি অতিক্রম করেছে এবং ২৫,০০০ লি লঙ মার্চ করেছে। সে সময় কেই বা মজুরী নিয়েছে? এটা কি বলা যাবে যে জাপ-বিরোধী যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ এবং মার্কিনকে প্রতিরোধ কর ও কোরিয়াকে সাহায্য কর যুদ্ধে বিজয় মজুরীর উদ্দীপনায় হয়েছিল? প্রতিটি কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি অপমান বোধ করেন এমন যুক্তি শুনে। নির্মাণ কাজের কথা ধরুন। মূর্তভাবে শ্রমিকরাই, যারা উক্ত অর্থনীতিবাদীদের ভাষ্যমতে মজুরী স্তর নিয়ে সর্বাধিক উদ্বিগ্ন, মৌলিকভাবে বিপরীত মত প্রকাশ করেন। সাংহাই শ্রমিকরা লড়াই করে, প্রস্ফুটিত করে এবং বিতর্ক করে “রাজনীতিকে কমান্ডার করার বদলে অর্থকে কমান্ডার করার” এই তত্ত্ব ও মানদন্ডের বক্তব্যের উন্মোচন করেন। এই কথাগুলি ষাড়ের চোখে আঘাত করে। অবশ্যই আমরা অস্বীকার করিনা যে কমিউনিজমের প্রাথমিক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক সমাজ এখনো পুরোনো সমাজের অর্থনৈতিক, নৈতিক ও মতাদর্শিক চিহ্ন বহন করে যার ওপর এটা জন্ম নিয়েছিল, যেমনটা কার্ল মার্কস কর্তৃক “গোথা কর্মসূচির সমালোচনা”য় বিবৃত হয়েছে এবং “বুর্জোয়া অধিকার”-এর বৈষম্য একবারেই বিলোপ করা যায়না। আমরা স্বীকার করি যে এই স্তরে আমরা কেবল দেখতে পারি “প্রত্যেকে দেবে সাধ্যমত, প্রত্যেকে নেবে শ্রম অনুযায়ী” নীতি, “প্রত্যেকে দেবে সাধ্যমত, প্রত্যেকে নেবে প্রয়োজনুযায়ী” নীতি নয়। কিন্তু মার্কস কি আমাদের একথা বলেছেন যে বুর্জোয়া অধিকার ও বৈষম্যের বুর্জোয়া অভিজাততন্ত্রকে ধ্বংস করা যাবেনা বরং সুসংহত করতে হবে ও বিকশিত করতে হবে? তিনি কি বলেননি যে “বৈষয়িক স্বার্থ”-র নীতিমালাকে কেবল আংশিকভাবে জোর দিতে হবে এবং কমিউনিস্ট শিক্ষাকে রাজনৈতিকভাবে, মতাদর্শিকভাবে ও নৈতিকভাবে প্রবল করতে হবে বুর্জোয়া অধিকারকে ভেঙে দিতে? এটা কেবল মার্কস নিজে অন্য কেউ নয়, এই প্রশ্নের উত্তর দেন। তাঁর “ফ্রান্সে শ্রেণী সংগ্রাম”- এ প্যারী কমিউনের অভিজ্ঞতার সার সংকলন করে তিনি প্যারী কমিউনের বীরদের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেনঃ “কমিউনের সদস্য থেকে নীচের দিকে পাবলিক সার্ভিসকে মেহনতীদের মজুরীতে কাজ করতে হয়েছে। সুদী কারবার ও রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থদের ভাতা উচ্চপদস্থদের সমেত বিলুপ্ত করা হয়েছিল।” ভালভাবে লক্ষ্য করুন, বিশ্বে সর্বহারা শ্রেণীর প্রথম কমিউনের গৃহীত বিপ্লবী প্রথা প্যারী কমিউন সুনির্দিষ্টভাবে বুর্জোয়া অভিজাততন্ত্র ধ্বংস করেছিল এবং বৈষয়িক স্বার্থের নীতির বিলোপ করেছিল। এটা কি বলা যায় যে এই অভিজ্ঞতায় জোর দেওয়ার সময় মার্কস এবং পরে এঙ্গেলস ও লেনিন বুর্জোয়া অধিকারের কথা ভুলে গেছিলেন? এভাবে, মার্কস, এঙ্গেলস ও লেনিন সেইসব অর্থনীতিবাদীদের সেবায় নিয়োযিত হননা যারা বিশ্বাস করেন যে “টাকায় কথা বলে”। বিপরীতে লেনিন আক্রমণাত্মকভাবে বলেন, “রাষ্ট্র ও বিপ্লব”-এঃ “নির্দিষ্টভাবে এই মূর্ত বিষয়েই, রাষ্ট্রের সমস্যা নিয়ে যতদূর চিন্তা করা যায় তাতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত, এই যে, মার্কসের চিন্তাকে সর্বাধিক পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।” এই অভিজ্ঞতার প্রতি দৃষ্টিপাতে, অনেক লোক একে “সেকেলে ও সরল” আখ্যা দেয়। যারা প্রকাশ্যে সরবরাহ প্রথার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয় ও টাকাকে কমান্ডে রাখতে চায়, তারা কি এও বলেনি যে সরবরাহ প্রথা হচ্ছে “গেরিলা স্টাইল” এবং “গ্রাম্য স্বভাব” এবং “সেকেলে”? তারাওকি মার্কসের শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলে যায়নি?

অতীতের বছরগুলোর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে “সরবরাহ প্রথা”, “গ্রামীণ স্টাইল” এবং “গেরিলা অভ্যাস”-এর ওপর আক্রমণ প্রকৃতপক্ষে সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবী ট্রাডিশনের ওপর এবং সমতার ভিত্তিতে শ্রমজীবি জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক যথাযথভাবে পরিচালনার কমিউনিস্ট নীতির ওপর আক্রমণ এবং প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যের বুর্জোয়া অধিকারকে রক্ষার পরিকল্পনায় রচিত। সকল শোষক ও নিপীড়ক শ্রেণীসমূহ এক কঠিণ অভিজাতন্ত্র রক্ষা করে। এই কল্পকাহিনী রচনা করতে তারা দ্বিধা করেনা যে তারা “জন্মগতভাবে মানবজাতির প্রভু”। চিয়াং কাইশেক নির্লজ্জভাবে দাবী করেছিল তার “চীনের নিয়তি” তে যে সে ছিল ওয়েন ওয়াংয়ের বংশধর। একটা জীবনীচিত্র দাবী করে যে সে হচ্ছে ওয়েন ওয়াংয়ের একজন পুত্র এবং ডিউক চৌ-এর বংশধর। শিয়াও লিন কুয়াং চি তে এই গল্প একটা স্থান দাবী করে কিন্তু এটা আরো দেখায় যে চিয়াং কাইশেক ও তার গং কতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিল নিজেদের “সর্বোচ্চ” চীনা হিসেবে দেখাতে। সাংহাই মুতসুদ্দিরা “উচ্চশ্রেণী চীনা” হওয়াতে গর্ববোধ করতো। আহ কিউ বলেন যে “আমি পুরোনো জনাব চাওয়ের সমগোত্রীয়” এবং জনাব চাও তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলেনঃ “তোমার বংশীয় নাম চাও হয় কিভাবে!” প্রাচীনকালে সামাজিক প্রতিপত্তি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রেণী ছিল সর্বাংশে গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু মালিকানা সত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত ছিলঃ যা ছিল “মালিকানা সত্ত্ব” তা ছিল বৈধ। বুর্জোয়া অধিকার সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। যেসব লোকেরা সরবরাহ প্রথাকে এই ভিত্তিতে আক্রমণ করে যে এটা উতপাদনে উতসাহ জাগায়না images12তারা প্রকৃতপক্ষে সমতার সর্বহারা সম্পর্কের স্থলে বুর্জোয়া অভিজাততন্ত্রের “মালিকানা সত্ত্ব” বসাতে চায়। তাদের অনুসারে, এটা উতপাদনে উতসাহ উদ্দীপনা জাগাবে। বাস্তবে কি এটাই ঘটনা? সরবরাহ প্রথার ওপর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে অতীতে যে জীবনযাত্রার মধ্যে বেশী পার্থক্য দেখা যায়নি তা আমাদের পার্টি ক্যাডারদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং যারা কঠোর জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলনা দ্রুতই ভদ্রলোকী, উচ্চ শ্রেণী চীনা ও পুরোনো জনাব চাওয়ের আচার ব্যবহার শিখে ফেললো। কিছু ক্যাডার দুঃখিত হন যখন তাদের “মাথা” হিসেবে সম্বোধন করা হয়না। এটা সত্যিই কিছূ একটার উদ্দীপনা জাগায়। কিন্তু এটা উতপাদন উদ্দীপনা জাগায়না বরং খ্যাতি ও সম্পদের জন্য লড়ার উদ্দীপনা জাগায়। এটা আবর্জনা জাগিয়ে তোলে। এটা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা জাগায়। কিছূ উপাদান শীঘ্রই বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থী ও দুর্নীতিগ্রস্থ উপাদানে অধঃপতিত হয়। কিছু ব্যক্তি এই মত প্রকাশ করেছিল যে সরবরাহ প্রথা আলস্যকে উতসাহিত করবে। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বিপরীত হচ্ছে ঘটনাঃ অভিজাততন্ত্র আলস্যকে উতসাহিত করেছে। কিছু ক্যাডার স্রেফ এক ঘন্টা অতিরিক্ত শ্রম দেয়ার পর অতিরিক্ত বেতন আশা করে। সরবরাহ প্রথার অধীনে বিপ্লবী যুদ্ধে যারা সবকিছু উতসর্গ করেছিলেন, এমনকি তাদের জীবন, তারা কি বেতন দাবী করেছিল? এর চেয়ে মারাত্মক যা তা হচ্ছে এই অভ্যাস গড়ে ওঠার পর ক্যাডার ও মেহনতী জনগণের মধ্যে সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে, “তিন প্রবণতা” এবং “পাঁচ অহংকার” নেতৃত্বস্থানীয় ক্যাডারদের মধ্যে গড়ে ওঠেছে। কিছূ লোক পুরোপুরিভাবে এই শিক্ষা ভূলে গেছে যে রাজনীতিকে অবশ্যই কমান্ডে থাকতে হবে; অন্যদের সাথে অবশ্যই সমতা অনুশীলন করতে হবে, জনগণকে বুঝিয়ে আস্থা অর্জন করতে হবে, বলপ্রয়োগে নয়, এবং তাদেরকে জনগণের একজন হতে হবে। তারা এপর্যন্ত এগোয় যে যখন পার্টি কেন্দ্র জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্বের মীমাংসা সম্পর্কে নির্দেশনা ইস্যু করলো তারা প্রতিরোধ করলো।

এর একটা পুনসংগ্রহ প্রত্যেকের জন্য গভীর শিক্ষাগত তাতপর্যসম্পন্ন। এই প্রক্রিয়ায় আমরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, যদিও আমরা ঠিক এই জিনিস সমর্থন করিনা ও বিরোধিতা করি এবং এমনকি যদিও আমরা বিভিন্ন প্রভাব দ্বারা আক্রান্ত।

পার্টির ট্রাডিশন হচ্ছে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এবং তা আমাদের পার্টি ক্যাডার ও জনগণের মধ্যে গভীরভাবে শিকর-প্রথিত। যদিও তা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা পুনপ্রতিষ্ঠা করা ততটা কঠিন নয়। এখন পার্টি কেন্দ্র ও কমরেড মাও সেতুঙের আহ্বাণে এবং শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে এই ট্রাডিশন পুনপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো বলতে পারিনা যে এটা পুরোপুরিভাবে পুনপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অধিকারের বুর্জোয়া ভাবধারা ও কুওমিনতাঙ কর্তৃপক্ষীয় অহংকার এখনো জনগণের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে। কিছু লোক এখনো জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার কর্মনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও আমরা দীর্ঘ ও পুনরাবৃত্তিময় সংগ্রামের মোকাবেলা করছি। কিন্তু আন্তঃসম্পর্কসমূহের পুনস্থাপনে মহান অগ্রগামী উলম্ফণের জন্য পরিস্থিতি আমাদের কাছে যতখানি অগ্রগামী উলম্ফণ দাবী করে, কমিউনিস্ট আদর্শে নিবেদিত সকল কমরেড নিশ্চিতভাবে আন্দোলনের সম্মুখসারিতে দাঁড়াতে সমর্থ হবে এবং নতুন পরিস্থিতির অধীনে আমাদের পার্টির চমতকার ট্রাডিশন পুনপ্রতিষ্ঠা ও বিকশিত করতে সক্ষম হবেন। নিশ্চিতভাবে তারা বুর্জোয়া অধিকারের ভাবধারা ভেঙে বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হবেন, জনসাধারণের সাথে সমতার সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন, একটা ঐক্যবদ্ধ নিবিড় একক গঠণ করতে সক্ষম হবেন, একত্রে বসবাস ও কাজ করতে সক্ষম হবেন এবং সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের জন্য একই সাধারণ সংগ্রাম করতে সক্ষম হবেন। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে কি?

সংবিধানের সংশোধন সম্পর্কে রিপোর্ট

–   চ্যাং চুন-চিয়াও

(জানুয়ারী ১৭, ১৯৭৫)

 

সম্মানিত ডেপুটিবৃন্দ!

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটি পেশকৃত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কংগ্রেসের জন্য সংবিধানের খসড়া সংশোধিত পাঠ কংগ্রেসে বিবেচনার জন্য ডেপুটিদের প্রতি ইস্যু করা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির অনুরোধে আমি কিছু পয়েন্ট ব্যাখ্যা করবো।

বিশ বছর আগে ১৯৫৪ সালে, প্রথম জাতীয় গণ কংগ্রেস গণপ্রজাতন্তী চীনের সংবিধান গ্রহণ করেছিল। আমাদের মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও সেতুঙ ব্যাখ্যা করেন, “একটা সংগঠণের অবশ্যই নিয়মশৃংখলা থাকতে হবে, এবং একটা রাষ্ট্রের ও অবশ্যই নিয়মশৃঙ্খলা থাকতে হবে:  সংবিধান হচ্ছে সাধারণ নিয়ম শৃঙ্খলাসমূহের একটা সেট এবং মৌলিক নির্দেশনা।” ১৯৫৪ সালের সংবিধান ছিল চীনের প্রথমzhang-chunqiao2 সমাজতান্ত্রিক ধরণের সংবিধান। মৌলিক নির্দেশনার ধরণে এটা সারসংকলন করে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, আমাদের জনগণের বিজয়সমূহ সুসংহত করে এবং সমগ্র দেশের জনগণের অগ্রগমণের পরিষ্কার মূর্ত প্রক্রিয়া চিত্রিত করে। বিগত কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে সংবিধান ছিল সঠিক। এর মূল নীতিমালা আজকেও প্রয়োগযোগ্য। যাহোক, যেহেতু ১৯৫৪ সাল থেকে চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড পরিবর্তন ঘটেছে সংবিধানের কিছু অংশ আর উপযোগী নয়। সংবিধানের বর্তমান সংশোধনীতে আমাদের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে আমাদের নয়া অভিজ্ঞতার সারসংকলন করা, আমাদের নয়া বিজয়সমূহ সুসংহত করা এবং সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে অব্যাহত বিপ্লবে টিকে থাকার জন্য আমাদের দেশের জনগণের সাধারণ আকাঙ্খাকে প্রকাশ করা।

বিগত দুই দশকে আমাদের জনগণ কর্তৃক বিজিত নয়া জয়সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চেয়ারম্যান মাওকে শীর্ষে রেখে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধাপে ধাপে সংহতকরণ ও বিকাশ। দেশে ও বিদেশে শত্রুদের সাথে পুনপুন শক্তির মহড়ায়, এবং বিশেষভাবে বিগত ৮ বছরের মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে-যা লিউ শাউচি ও লিন পিয়াওয়ের বুর্জোয়া হেড কোয়ার্টারকে ধ্বংস করেছিল, আমাদের দেশের সকল জাতিসত্ত্বার জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিকতর সুসংহত। যা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান মাও মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্যকে মূর্ত নির্দিষ্ট অনুশীলনের সাথে একীভূত করার মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের সমগ্র পর্যায়কালের এক মৌলিক লাইন আমাদের জন্য সূত্রায়িত করেন। তিনি বলেনঃ

সমাজতান্ত্রিক সমাজ এক বিবেচনাযোগ্য দীর্ঘ ঐতিহাসিক পর্ব নিয়ে গঠিত। সমাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক পর্বে এখনো শ্রেণীসমূহ, শ্রেণীদ্বন্দ্বসমূহ এবং শ্রেণী সংগ্রাম রয়েছে, এখনো সমাজতান্ত্রিক পথ ও পুঁজিবাদী পথের মধ্যে সংগ্রাম রয়েছে এবং পুঁজিবাদী পুনপ্রতিষ্ঠার বিপদ রয়েছে। আমাদের অবশ্যই সংগ্রামের দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল প্রকৃতিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমাদের অবশ্যই সতর্কতাকে উঁচু করতে হবে। আমাদের অবশ্যই  সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা পরিচালনা করতে হবে। আমাদের শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও শ্রেণীসংগ্রামকে সঠিকভাবে বুঝতে হবে ও মীমাংসা করতে হবে, আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে, জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে পার্থক্য করতে হবে এবং সঠিকভাবে মীমাংসা করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের মতো একটা সমাজতান্ত্রিক দেশ বিপরীতে পরিণত হবে এবং অধঃপতিত হবে, এবং একটা পুঁজিবাদী পুনপ্রতিষ্ঠা সংঘটিত হবে। এখন থেকে আমাদেরকে এটা স্মরণ রাখতে হবে প্রতি বছর, প্রতি মাস এবং প্রতিদিন যাতে সমস্যাটির একটা সিরিয়াস উপলব্ধি আমাদের আমাদের বজায় থাকে এবং একটা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী লাইন আমাদের থাকে।

পার্টির নবম ও দশম উভয় কংগ্রেস এই মৌলিক লাইনকে পুননিশ্চিত করেছে। লিউ শাউচি ও লিন পিয়াওয়ের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম একটা ইস্যুর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করেছে: এই মৌলিক লাইনকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে নাকি তাকে পরিবর্তন করতে হবে। অতীত ও বর্তমানের শ্রেণীসংগ্রাম প্রমাণ করে যে এই মৌলিক লাইন হচ্ছে আমাদের পার্টির ও সেইসাথে আামাদের দেশের জীবনপ্রবাহ। যতক্ষণ আমরা তা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবো, আমরা নিশ্চিতভাবে সকল দুঃখ দুর্দশাকে জয় করতে পারবো, দেশে ও বিদেশে শত্রুদের পরাজিত করতে পারবো এবং বৃহত্তর বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো। এটাই হচ্ছে আমাদের অর্জিত প্রধান অভিজ্ঞতা এবং সেইসাথে সংবিধান সংশোধনে আমাদের পথনির্দেশক অভিজ্ঞতা।

এখনকার পেশকৃত খসড়া সংশোধিত সংবিধান হচ্ছে ১৯৫৪ সংবিধানের ধারাবাহিকতা ও বিকাশ। এটা জন্ম নিয়েছে আমাদের সকল জাতিসত্ত্বার জনগণের মধ্যে বারংবার আলোচনার মধ্য দিয়ে এবং তা হচ্ছে নেতৃত্বকারী সংগঠণসমূহের ও জনগণের চিন্তার সংযুক্তকরণের ফল। ভুমিকাটা নতুন। অনুচ্ছেদের সংখ্যা ১০৬ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলি নিম্নরূপঃ

(১)   ভুমিকা থেকে যাত্রা করে খসড়া সংশোধিত পাঠ চীনা জনগণের বীরত্বব্যাঞ্জক সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে রেকর্ড করেছে। “চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হচ্ছে সমগ্র চীনা জনগণের নেতৃত্বের কোর” এবং “মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা হচ্ছে আমাদের জাতির চিন্তার পথপ্রদর্শক তাত্ত্বিক ভিত্তি”-এমনই হচ্ছে উপসংহার যা আমাদের দেশের জনগণ টেনেছেন তাদের এক শতকেরও বেশি অভিজ্ঞতা থেকে এবং এখন যা খসড়ার সাধারণ নীতিমালায় বর্ণিত হয়েছে। খসড়া জোর দেয়, “জাতীয় গণকংগ্রেস হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের অধীনে রাষ্ট্রক্ষমতার উচ্চতম অঙ্গ।” এটা আরো জোর দেয়, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির চেয়ারম্যান দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে কমান্ড করেন।” যেহেতু রাষ্ট্রের কোন চেয়ারম্যানশিপ গঠণ করা হয়নি, খসড়া রাষ্ট্রের গঠণকাঠামো সংক্রান্ত ১৯৫৪— সংবিধানের ধারাসমূহের সামঞ্জস্যপূর্ণ সংশোধন করে। এসকলই নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রের গঠণকাঠামোর ওপর পার্টির কেন্দ্রিভূত নেতৃত্বকে শক্তিশালি করতে সাহায্য করবে এবং সমগ্র দেশের জনগণের আকাঙ্খাকে পূরণ করবে।

(২)   খসড়া জোর দেয়, “গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে ও শ্রমিক কৃষক জোটের ওপর ভিত্তি করে সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র।” এটা জোর দেয় যে শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিক ডেপুটিবৃন্দ সকল স্তরে গণকংগ্রেসের মূল কাঠামো গঠণ করবে। এটা সর্বহারা একনায়কত্বের নিশানা নির্দিষ্ট করে এবং একনায়কত্বের কর্মনীতি প্রণয়ন করে। খসড়ার পৃথক পৃথক অনুচ্ছেদের মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ গণকমিউন যা সরকারী প্রশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করে, এবং বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় বিপ্লবী কমিটি বিপ্লবী একের ভিতর তিন সম্মিলনের ভিত্তিতে গঠিত, উভয়ে বিরাট বিপ্লবী গণআন্দোলন থেকে উদ্ভূত। এভাবে রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র ও আমাদের দেশের প্রতিটি শ্রেণীর সামাজিক অবস্থান (স্ট্যাটাস) পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। মার্কস ও লেনিন অব্যাহতভাবে আমাদের শিক্ষা দেনঃ “শ্রেণীসংগ্রাম অবশ্যম্ভাবীভাবে সর্বহারা একনায়কত্বে চালিত করে” এবং “সর্বহারা রাষ্ট্র হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক বুর্জোয়াদের ওপর নিপীড়ণের একটা যন্ত্র।” আমাদের খসড়া মার্কসবাদ-লেনিনবাদের নীতিগত অবস্থানের প্রতি অনুগত এবং কনফুসীয় “দয়ালু সরকার” এর মতো মিথ্যাচার থেকৈ তীক্ষ্ণভাবে পার্থক্যকৃত অথবা সোভিয়েত সংশোধনবাদী বেঈমান চক্রের “সমগ্র জনগণের রাষ্ট্র” থেকে।

আমাদের সর্বহারা একনায়কত্বের কথা বলতে গেলে, প্রথমত, দেশের মধ্যে এটা প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীসমূহ ও উপাদানসমূহকে এবং যারা সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণকে বিরোধিতা করে তাদেরকে দমন করে এবং সকল চক্রান্তমূলক ও প্রতিবিপ্লবী ততপরতাকে দমন করে; এবং দ্বিতীয়ত, এটা আমাদের দেশকে চক্রান্ত ও সম্ভাব্য বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে। এটা হচ্ছে সেই যাদুযন্ত্র যার দ্বারা আমাদের দেশের জনগণ শত্রুদের ধ্বংস করে আর নিজেদের রক্ষা করে। আমাদের অবশ্যই এক সংরক্ষণ করতে হবে এবং অব্যাহতভাবে একে শক্তিশালি করতে হবে। আমাদের অবশ্যই আমাদের সকল জাতিসত্ত্বার জনগণের ব্যাপক ঐক্যকে শক্তিশালি করতে হবে, গণমুক্তিবাহিনী ও গণ মিলিশিয়াকে শক্তিশালি করতে হবে-যা হচ্ছে সর্বহারা একনায়কত্বের খুঁটি; এবং রাষ্ট্রের অঙ্গগুলির নির্মাণকে শক্তিশালি করতে হবে।

আমাদেরকে শ্রমিক শ্রেণীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র গরীব ও নিম্ন-মাঝারি কৃষকের সাথে তার জোটকে অব্যাহতভাবে সংহত করতে হবে, অন্যান্য শ্রমজীবি জনগণের ও বহু বুদ্ধিজীবির সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং বিপ্লবী যুক্তফ্রন্ট বিকশিত করতে হবে যার মধ্যে রয়েছে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক পার্টিসমূহ এবং জীবনের সকল স্তরে দেশপ্রেমিক ব্যক্তিসমূহ। কেবল এই পথেই আমরা যাদের সাথে ঐক্য করা সম্ভব তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, কার্যকরভাবে সর্বহারা একনায়কত্বকে অনুশীলন করতে পারি, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাক রক্ষা করতে পারি, এবং আমাদের মহান মাতৃভুমির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংহত করতে কারি।

(৩)   সর্বহারা একনায়কত্ব একদিকে শত্রুদের ওপর একনায়কত্ব অনুশীলন করে অন্যদিকে জনগণের সারির মধ্যে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা অনুশীলন করে। পর্যাপ্ত গণতন্ত্র ছাড়া এক উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রিকতা পাওয়া অসম্ভব; এবং এক উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রিকতা ছাড়া সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ করা অসম্ভব। খসড়া জোর দিয়ে বলে যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা অনুশীলন করতে হবে এবং নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার বিশেষত ভ্রাতৃপ্রতিম সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বাসমূহের এবং নারীদের অধিকারকে নির্দিষ্ট করে। এটা আরো জোর দিয়ে বলে যে জনসাধারণের মুক্তভাবে কথা বলার, পূর্ণভাবে মত প্রকাশের, মহা বিতর্ক পরিচালনার এবং বৃহত আকৃতি পোস্টার লেখার অধিকার থাকতে হবে। অধিকন্তু, চেয়ারম্যান মাওয়ের প্রস্তাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এই নির্দিষ্টকরণ খসড়ার অনুচ্ছেদ ২৮-এ যুক্ত করা হয়েছে যে নাগরিকগণ ধর্মঘট করার স্বাধীনতা ভোগ করে। আমরা আশ্বস্ত যে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে পোড় খাওয়া বিপ্লবী জনগণ এই ধারাগুলোকে আরও ভালভাবে প্রয়োগ করবেন এবং “একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন যেখানে উভয়ত কেন্দ্রিকতা ও গণতন্ত্র, উভয়ত শৃংখলা ও স্বাধীনতা এবং উভয়ত ইচ্ছার ঐক্য এবং ব্যক্তিগত মনের স্বচ্ছন্দতা ও সজীবতা রয়েছে, এবং এভাবে রাষ্ট্রের ওপরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব সংহত করতে এবং সর্বহারা একনায়কত্বকে সংহত করতে সহায়তা করবে।”

(৪)   ১৯৫৪ সংবিধানে তুলে ধরা উতপাদনের উপায়ের মালিকানার সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্তব্য প্রধানভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। খসড়া পূর্ণভাবে চীনের জনগণের এই বিরাট বিজয়কে নিশ্চিত করে এবং তুলে ধরে যে বর্তমান স্তরে দুই ধরণের উতপাদনের উপায়ের মালিকানা আমাদের দেশে রয়েছে, যথা, সমগ্র জনগণ কর্তৃক সমাজতান্ত্রিক মালিকানা এবং শ্রমজীবি জনগণ কর্তৃক সমাজতান্ত্রিক যৌথ মালিকানা। খসড়াতে ধারা রয়েছে অ-কৃষি স্বতন্ত্র শ্রমিকদের সম্পর্কে এবং কমিউন সদস্যদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ভুমিখন্ড চাষাবাদের ও গৃহসন্নিহিত সীমিত উতপাদনের অনুমোদন সম্পর্কে। এই ধারাগুলো প্রয়োজনীয় নমনীয়তার সাথে সমাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য ও নীতিকে একীভূত করে এবং তা স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত আবাসস্থলের জন্য নিজস্ব খামার উতপাদন কোটা নির্দিষ্টকরণ ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খামার ভুমিখন্ডের বিলোপের লিউ শাউচি ও লিন পিয়াওয়ের ভন্ডামীর সাথে তীক্ষ্ণভাবে পার্থক্যকৃত।

খসড়া সার্বিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার, সমাজতন্ত্র নির্মাণে উচ্চলক্ষ্য এবং বৃহত্তর, অধিকতর দ্রুত, অধিকতর ভাল এবং অধিকতর অর্থনৈতিক ফলাফল অর্জনের সাধারণ লাইন পুনধ্বনিত করে এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ভিত্তির সুসংহতকরণ ও বিকাশে এক ঝাঁক নীতিমালা ও কর্মনীতির ওপর জোর দেয়।

এটা উল্লেখ করা দরকার যে আমাদের দেশে এখনও উতপাদন সম্পর্ক ও উতপাদিকা শক্তির মধ্যে এবং উপরিকাঠামো ও অর্থনৈতিক ভিত্তির মধ্যে ঐক্য ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। সকালের সূর্যের মতো আমাদের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো খুবই নবীন। এটা সংগ্রামের মধ্যে জন্ম নিয়েছে এবং কেবল সংগ্রামের মধ্যেই বেড়ে ওঠতে পারে। উদাহারণস্বরূপ রাষ্ট্রীয় সেক্টরকে ধরুন। কিছু সংস্থায় সমাজতান্ত্রিক মালিকানার ধরণ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নেতৃত্ব মার্কসবাদী ও শ্রমিক জনগণের হাতে নেই। বহু ফ্রন্ট বুর্জোয়ারা দখল করে নেবে যদি সর্বহারা শ্রেণী তার দখল না নেয়। কনফুসিয়াস মারা গেছে দুই হাজার বছরেরও বেশী, এখনো তার মতো জঞ্জাল কখনো পরিষ্কার হয়না যদিনা সর্বহারা শ্রেণীর ঝারু সেখানে পৌঁছায়। খসড়া তুলে ধরে যে “রাষ্ট্রীয় সংগঠনসমূহ ও রাষ্ট্রীয় কর্মচারিবৃন্দকে অবশ্যই আন্তরিকতাসহকারে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা অধ্যয়ন করতে হবে,” যে “সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রসহ উপরিকাঠামোয় সর্বহারা শ্রেণীকে অতি অবশ্যই বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব প্রয়োগ করতে হবে” এবং যে রাষ্ট্রীয় সংগঠণ ও কর্মচারিবৃন্দকে অবশ্যই জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং অসুস্থ প্রবণতাসমূহকে জয় করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে এই ধারাগুলির উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের প্রতি আহ্বাণ রাখা উপরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে আঁকড়ে ধরায় তীক্ষ্ণ মনোযোগ প্রদান করতে এবং উতপাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে মনোযোগ প্রদান করতে। লিন পিয়াও ও কনফুসিয়াসকে সমালোচনা করতে আমাদের অবশ্যই আন্দোলনকে প্রশস্থতর ও গভীরতর করতে হবে এবং অধ্যবসায়সহকারে তাতে লেগে থাকতে হবে এবং মার্কসবাদের সাহায্যে সকল ফ্রন্ট দখল করতে হবে।

(৫)   চেয়ারম্যান মাওয়ের এই শিক্ষা অনুসারে, “গভীর সুড়ঙ্গ খনন কর, সর্বত্র শস্য মজুদ কর এবং কখনো একাধিপত্য কামনা করোনা।”, আমরা খসড়ায় লিখেছি যে “চীন কখনোই পরাশক্তি হবেনা” এটা দেখাতে যে আমাদের দেশ আজকে একাধিপত্য কামনা করেনা এবং সে তা কখনো করবেওনা। কেবলমাত্র সমগ্র মানবজাতিকে মুক্ত করেই সর্বহারা শ্রেণী তার নিজ চুড়ান্ত মুক্তি অর্জন করতে পারে। আমরা সর্বদাই সকল দেশের জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হবো পৃথিবীর বুকে মানুষ কর্তৃক মানুষের ওপর শোষণের ব্যবস্থাকে বিলোপ করতে সাধারণ সংগ্রামে যাতে সমগ্র মানবজাতি মুক্ত হয়।

সম্মানিত ডেপুটিবৃন্দ,

সংবিধান সংশোধনের কাজ প্রায় পাঁচ বছর যাবত চলছে। এই কংগ্রেস কাজটি শেষ করবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের নতুন মৌলিক পথ প্রদর্শক প্রচার করবে। এটা এক প্রধান ঘটনা যা আমাদের উদ্দীপনাময় উদযাপন আহ্বান করছে। জনগণতন্ত্রের ও সমাজতন্ত্রের অধিকারকে জয় ও রক্ষা করতে, কাও কাঙ, জাও সু-শি, পেং তে-হুয়েই, লিউ শাও-চি এবং লিন পিয়াওয়ের আভ্যন্তরীণভাবে পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা এবং বাহ্যিকভাবে দেশকে বিক্রী করার নীল নকশাকে ধ্বংস করার জন্য এবং দেশ ও বিদেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের পরাজিত করতে আমাদের দেশের জনগণ তীক্ষ্ণ ও জটিল সংগ্রামে দীর্ঘকাল নিয়োযিত রয়েছেন যাতে লক্ষ লক্ষ শহীদ তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। সুনির্দিষ্টভাবে এই সকল সংগ্রামের বিজয়ই এই সমাজতান্ত্রিক সংবিধান জন্ম দিয়েছে। আমরা আস্থাবাণ যে আমাদের সকল জাতিসত্ত্বার জনগণ এবং প্রথমত, কমিউনিস্টগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্মচারিবৃন্দ আন্তরিকভাবে এই সংবিধানকে প্রয়োগ করবেন এবং সাহসের সাথে রক্ষা করবেন আর সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে অব্যাহতভাবে বিপ্লবকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নেবেন যাতে নিশ্চয়তা সহকারে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাও সেতুঙ চিন্তাধারা নির্দেশিত পথে আমাদের মহান মাতৃভুমি বিজোয়জ্জ্বলভাবে চিরকাল এগিয়ে যেতে পারে!

বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করা সম্পর্কে

–   চ্যাং চুন-চিয়াও

(এপ্রিল ৪, ১৯৭৫)

 

চেয়ারম্যান মাও থেকে উদ্ধৃতি

কেন লেনিন বুর্জোয়াদের ওপর একনায়কত্ব পরিচালনা করার কথা বলেন? এ প্রশ্নটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এ প্রশ্নে স্পষ্টতার অভাব সংশোধনবাদে চালিত করবে। সমগ্র জাতিকে এটা জানানো প্রয়োজন।

আমাদের দেশ বর্তমানে একটা পণ্য ব্যবস্থা অনুশীলন করছে; মজুরী ব্যবস্থাও অসম, যেমনটা আট-গ্রেড মজুরী স্কেলে রয়েছে, এবং এরকম আরো কিছু। সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে এ বিষয়গুলোকে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই, লিন পিয়াওয়ের মত লোকেরা যদি ক্ষমতায় আসে তাদের পক্ষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তৈরী করা খুবই সহজ হবে। সেজন্য মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রচনাসমূহ আমাদের আরো পড়া 524601_107145486140371_1857584912_nদরকার।

লেনিন বলেছেন যে “ক্ষুদে উতপাদন পুঁজিবাদ ও বুর্জোয়া জন্মদান করে অব্যাহতভাবে, প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায়, স্বতস্ফূর্তভাবে ও বিপুলভাবে। শ্রমিকশ্রেণী এবং পার্টি সদস্যদের একটা অংশের মধ্যেও তারা জন্ম নেয়। সর্বহারা শ্রেণীর সারির ভেতরে আর রাষ্ট্রের ও অন্যান্য অঙ্গসমূহের কর্মচারীদের মধ্যে- উভয় ক্ষেত্রেই এমন লোকজন রয়েছে যারা বুর্জোয়া জীবন যাপন স্টাইল গ্রহণ করে।

*      *    *

সর্বহারা একনায়কত্বের প্রশ্নটি দীর্ঘকাল থেকে মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যেকার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। লেনিন বলেছেন, “কেবল তিনি একজন মার্কসবাদী যিনি শ্রেণীসংগ্রামের স্বীকৃতিকে সর্বহারা একনায়কত্বের স্বীকৃতিতে সম্প্রসারিত করেন।” এবং এটা অত্যন্ত যথাযথভাবে তত্ত্ব ও অনুশীলন উভয় ক্ষেত্রে সংশোধনবাদ নয়, মার্কসবাদ মান্য করে চলতে আমাদের সক্ষম করে তোলে, যা থেকে চেয়ারম্যান মাও সমগ্র জাতিকে সর্বহারাশ্রেণীর একনায়কত্বের প্রশ্নে পরিষ্কার হবার আহ্বান জানান।

আমাদের দেশ তার ঐতিহাসিক বিকাশের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে রয়েছে। দুই দশকেরও বেশি সময়ের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের, এবং বিশেষভাবে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে লিউ শাউচি ও লিন পিয়াওয়ের বুর্জোয়া হেডকোয়ার্টাগুলোর বিলোপের ফলশ্রুতিতে আমাদের সর্বহারা একনায়কত্ব আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অধিকতর সুসংহত এবং আমাদের সমাজততান্ত্রিক আদর্শ সাফল্য অর্জন করছে। পূর্ণ জঙ্গীত্বতায়, আমাদের সমগ্র জনগণ এ শতক শেষ হওয়ার আগেই চীনকে একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক দেশে বিনির্মাণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ায় এবং সমাজতন্ত্রের সমগ্র ঐতিহাসিক পর্যায়কাল ধরে আমরা সর্বহারা একনায়কত্বের প্রতি সর্বোতভাবে অটল থাকতে পারবো কিনা চীনের ভবিষ্যত বিকাশের জন্য সেটা একটা মূল প্রশ্ন। বর্তমান শ্রেণীসংগ্রামও দাবী করে যে, সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের প্রশ্নে আমরা পরিষ্কার হই। চেয়ারম্যান মাও বলেন, “এই প্রশ্নে স্পষ্টতার অভাব সংশোধনবাদে চালিত করবে।” অল্প কিছু লোক বিষয়টিকে আত্ম্স্থ করলে চলবেনা, একে অবশ্যই “সমগ্র জাতিকে জানাতে হবে”। এই অধ্যয়নে সাফল্যের বর্তমান ও দীর্ঘকালীন গুরুত্বকে অতিমূল্যায়ণ করা যায়না।

সেই ১৯২০ সালে লেনিন মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে নেতৃত্বদান ও সর্বহারা একনায়কত্বের প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনা করার বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর নিজেকে দাঁড় করিয়ে তীক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেন, “সর্বহারা একনায়কত্ব নতুন শ্রেণী কর্তৃক পরিচালিত একটা দৃঢ়তম ও নির্দয়তম যুদ্ধ, একটা অধিকতর শক্তিধর শত্রু বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে- যার উতখাতের সাথে (এমনকি একটিমাত্র দেশে হলেও) তার প্রতিরোধ দশগুণ বৃদ্ধি পায় এবং যার শক্তি নিহিত রয়েছে আন্তর্জাতিক পুঁজির সামর্থ্যইে শুধু নয়, বুর্জোয়াদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সামর্থ্য ও স্থায়িত্বের মধ্যেই শুধু নয়, বরং নিহিত অভ্যাসের বলে, ক্ষুদে উতপাদন-এর শক্তিতেও। যেহেতু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্ষুদে উতপাদন পৃথিবীতে খুবই খুবই এখনো বিস্তৃত, এবং ক্ষুদে উতপাদন অনবরত প্রতিদিন প্রতিঘন্টায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং ব্যাপকভাবে পুঁজিবাদ ও বুর্জোয়াদের জন্ম দেয়। এসকল কারণে সর্বহারা একনায়কত্ব অপরিহার্য।” লেনিন ব্যাখ্যা করেন যে, সর্বহারা একনায়কত্ব হচ্ছে একটা অটল সংগ্রাম- রক্তাক্ত ও রক্তপাতহীন, সহিংস ও শান্তিপূর্ণ, সামরিক ও অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক্ল-পুরোনো সমাজের ঐতিহ্য ও শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে, যার অর্থ হচ্ছে বুর্জোয়াদের উপর সার্বিক একনায়কত্ব। লেনিন বার বার জোর দিয়েছেন যে, বুর্জোয়াদের উপর একটা দীর্ঘস্থায়ী সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করা ছাড়া তার উপর বিজয় অর্জন করা অসম্ভব। লেনিনের এই কথাগুলো, বিশেষত যেগুলোতে তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছিলেন, পরবর্তী বছরসমূহের অনুশীলন দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। যথেষ্ট নিশ্চিত যে, ব্যাচের পর ব্যাচ নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহ জন্ম নিয়েছে, এবং ক্রুশ্চেভ-ব্রেজনেভ বেঈমান চক্র সুস্পষ্টভাবে তাদেরই প্রতিনিধি। এই লোকগুলোর সাধারণভাবে ভাল শ্রেণী পূর্বপ্রেক্ষাপট রয়েছে, প্রায় সকলেই লাল পতাকার অধীনে লালিত পালিত হয়েছে, তারা সাংগঠনিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিল, কলেজ ট্রেনিং পেয়েছিল এবং তথাকথিত লাল দক্ষে পরিণত হয়েছিল। যাই হোক, তারা হচ্ছে পুঁজিবাদের পুরোনো জমিতে জন্ম নেয়া নয়া বিষাক্ত আগাছা। তারা নিজেদের শ্রেণীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, পার্টি ও রাষ্টক্ষমতা করায়ত্ব করেছে, পুঁজিবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে, সর্বহারা শ্রেণীর উপর বুর্জোয়াদের একনায়কত্বের পাণ্ডায় পরিণত হয়েছে, আর সেই জিনিসটা সম্পন্ন করেছে যা হিটলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। আমাদের কোনভাবেই ইতিহাসের এই অভিজ্ঞতাকে ভুলে যাওয়া চলবেনা যে, “যখন আকাশে উপগ্রহগুলো উড়েছে, তখন লাল পতাকা মাটিতে পতিত হয়েছে”- বিশেষতঃ এই মুহুর্তে তো নয়ই, যখন আমরা এটা শক্তিশালী দেশ গড়তে বদ্ধপরিকর ।

আমাদের ধীর-স্থিরভাবে সচেতন থাকতে হবে যে, চীনের সংশোধনবাদীতে রূপান্তরিত হওয়ার বিপদ এখনো রয়েছে। এটা কেবল এজন্য নয় যে, সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ আমাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও ধ্বংসাত্মক ততপরতা চালানো কখনো ত্যাগ করবেনা, কেবল এ কারণে নয় যে, চীনের পুরোনো ভূস্বামী ও পুঁজিপতিরা এখনো আশেপাশে রয়েছে এবং তাদের পরাজয় মেনে নেয়নি, বরং একারণে যে নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহ জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন প্রতিঘন্টায়, যেমনটা লেনিন বলেছেন। কিছু কমরেড বলেন যে, লেনিন যৌথকরণের পূর্বের পরিস্থিতির কথা বলেছিলেন। এটা নিশ্চিতভাবেই ভুল। লেনিনের বক্তব্য একটুও সেকেলে হয়ে যায়নি। এই কমরেডগণ ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত চেয়ারম্যান মাওয়ের জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্বসমূহের সঠিক মীমাংসা সম্পর্কে দেখে নিতে পারেন। সেখানে চেয়ারম্যান মাও মূর্ত বিশ্লেষণ দ্বারা দেখান যে, মালিকানা ব্যবস্থার সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের মৌলিক বিজয় – যার মধ্যে রয়েছে কৃষি সমবায়ের অর্জন – এর পরও চীনে শ্রেণীসমূহ, শ্রেণীদ্বন্দ্বসমূহ এবং শ্রেণীসংগ্রাম রয়েছে। এবং উতপাদন সম্পর্ক ও উতপাদিকা শক্তিসমূহের মধ্যে, আর উপরিকাঠামো ও অর্থনৈতিক ভিত্তির মধ্যে সঙ্গতি ও দ্বন্দ্ব তখনো রয়ে গেছে। লেনিনের পর সর্বহারা একনায়কত্বের নয়া অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে চেয়ারম্যান মাও মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তনের পর যে বিবিধ প্রশ্নসমূহ উত্থিত হয়েছে তার সুব্যবস্থিত উত্তর প্রদান করেন, সর্বহারা একনায়কত্বের করণীয় ও কর্মনীতিসমূহ নিরূপণ করেন এবং সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখার ও পার্টির মৌলিক লাইনের তত্ত্বগত ভিত্তি স্থাপন করেন। বিগত ১৮ বছরের, বিশেষতঃ মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক পেশ করা তত্ত্ব, লাইন ও কর্মনীতিসমূহ সমগ্রভাবে সঠিক।

চেয়ারম্যান মাও সম্প্রতি বলেন, “এক কথায় চীন একটা সমাজতান্ত্রিক দেশ। মুক্তির পূর্বে সে ব্যাপকভাবে একটা পুঁজিবাদী দেশের মত ছিল। এমনকি এখনও সে আট-গ্রেড মজুরী ব্যবস্থা অনুশীলন করে, কাজ অনুযায়ী বণ্টন আর টাকার মাধ্যমে বিনিময় অনুশীলন করে, আর এ সবকিছুতেই পুরোনো ব্যবস্থা থেকে খুব কমই পার্থক্য হয়। যা পৃথক সেটা হলো এই যে, মালিকানা ব্যবস্থাটি পরিবর্তিত হয়েছে।” চেয়ারম্যান মাও-এর নির্দেশাবলীর ওপর গভীর উপলব্ধি অর্জনে আসুন দৃষ্টি দেওয়া যাক চীনে মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে, আর ১৯৭৩ সালে চীনের শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যে বিবিধ অর্থনৈতিক সেক্টরসমূহের অনুপাতসমূহের ওপর।

প্রথম, শিল্প। সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন শিল্প সমগ্রভাবে শিল্পের ধ্রুব সম্পদের শতকরা ৯৭ ভাগ, শিল্পে নিয়োজিত জনগণের শতকরা ৬৩ ভাগ এবং মোট শিল্পোতপাদনের শতকরা ৮৬ ভাগ মূল্য নিয়ে বিস্তৃত। যৌথ মালিকানাধীন শিল্প ধ্রুব সম্পদের শতকরা ৩ ভাগ, শিল্পে নিয়োজিত জনগণের শতকরা ৩৬.২ ভাগ ও মোট উতপাদন মূল্যের শতকরা ১৪ ভাগ নিয়ে গঠিত। এছাড়া, ব্যক্তি-হস্তশিল্পীরা শিল্পে নিয়োজিত জনগণের শতকরা ০.৮ ভাগ নিয়ে গঠিত।

এরপর, কৃষি। কৃষি উতপাদন উপকরণের মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ খামারভূমি ও সেচ-ড্রেনেজ যন্ত্রপাতি এবং শতকরা ৮০ ভাগ ট্রাক্টর ও গবাদি পশু যৌথ মালিকানার অধীন ছিল। এখানে সমগ্র জনগণের মালিকানা খুব ক্ষুদ্র একটা অনুপাত গঠন করে। তাই, শতকরা ৯০ ভাগের ওপর খাদ্যশস্য(জাতির) ও বিবিধ শিল্পশস্য এসেছে যৌথ অর্থনীতি থেকে। রাষ্ট্রীয় খামার খুব ক্ষুদে একটা অনুপাতের। এর বাইরে, কমিউন সদস্যদের দ্বারা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে চাষকৃত ক্ষুদ্র প্লটসমূহ এখনো রয়েছে, আর রয়েছে বাড়ীর আশেপাশের উতপাদনের একটা সীমিত পরিমাণ।

তারপর বাণিজ্য। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য খুচরা বিক্রয়ের মোট আকারের শতকরা ৯২.৫ ভাগ, যৌথ মালিকানাধীন বাণিজ্যিক সংস্থাসমূহ শতকরা ৭.৩ ভাগ, আর স্বতন্ত্র দোকানদাররা শতকরা ০.২ ভাগ ছিল। এর বাইরে, গ্রামীণ মেলাগুলোতে সংঘটিত ব্যবসার একটা বড় পরিমাণ এখনো রয়ে গেছে।

উপরের চিত্র দেখায় যে, সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানা ও শ্রমজীবী জনগণের সমাজতান্ত্রিক যৌথ মালিকানা চীনে সত্যিই এক বিরাট বিজয় অর্জন করেছে। সমগ্র জনগণ কর্তৃক মালিকানার কর্তৃত্বমূলক অবস্থান বিরাটাকারে এগিয়ে নেয়া হয়েছে, আর, গণকমিউনসমূহের অর্থনীতিতেও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে  কমিউন, উতপাদন ব্রিগেড ও উতপাদন টিম- এই তিনটি স্তরে মালিকানার অনুপাতে। উদাহরণস্বরূপ, সাংহাইয়ের শহরতলীতে মোট আয়ের অনুপাতে কমিউন স্তরে আয় ১৯৭৩ সালে শতকরা ২৮.১ থেকে বেড়ে ১৯৭৪-এ শতকরা ৩০.৫ হয়েছে, ব্রিগেডের আয় শতকরা ১৫.২ থেকে বেড়ে হয়েছে শতকরা ১৭.২ ভাগ, যেখানে টিমের অনুপাত শতকরা ৫৬.৭ থেকে শতকরা ৫২.৩ ভাগে নেমে গেছে। গণকমিউনসমূহ আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেছে তার অধিকতর বড় আকার ও উচ্চতর মাত্রার গণমালিকানা নিয়ে। যতখানি আমরা বিগত ২৫ বছরে ধাপে ধাপে সাম্রাজ্যবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদের মালিকানা অপসারণ করেছি, জাতীয় পুঁজিবাদ ও ব্যক্তি শ্রমিকদের মালিকানাকে রূপান্তরিত করেছি এবং এই পাঁচ ধরনের ব্যক্তিমালিকানাকে দুই ধরনের সমাজতান্ত্রিক গণমালিকানা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছি, তাতে আমরা গর্বের সাথে ঘোষণা করতে পারি যে, চীনে মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, চীনের সর্বহারা শ্রেণী ও অন্যান্য মেহনতী জনগণ ব্যক্তিগত মালিকানার শৃংখল থেকে নিজেদের প্রধানত মুক্ত করেছেন, এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্রমাগত ধারায় সুসংহত ও বিকশিত করা হয়েছে। চতুর্থ জাতীয় গণ কংগ্রেসে গৃহীত সংবিধান নির্দিষ্টভাবে আমাদের এই মহান বিজয়সমূহকে রেকর্ড করেছে।

যাহোক, আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে যে মালিকানা ব্যবস্থার দিক থেকে বিষয়টি এখনও পুরোপুরি মীমাংসিত নয়। আমরা প্রায়শ বলি যে, মালিকানার বিষয়টি “প্রধানত মীমাংসিত হয়েছে”; এর অর্থ হচ্ছে যে, এটা সমগ্রভাবে মীমাংসা হয়নি, এবং এই ক্ষেত্রে বুর্জোয়া অধিকারও পুরোপুরি বিলোপ হয়নি। উপরে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান দেখায় যে, শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যে ব্যক্তিগত মালিকানা অংশত এখনো বিদ্যমান, সমাজতান্ত্রিক গণমালিকানা সমগ্রভাবে সমগ্র জনগণের মালিকানা দ্বারা গঠিত নয় বরং দুই ধরনের মালিকানা নিয়ে গঠিত, এবং সমগ্র জনগণের মালিকানা কৃষিতে এখনো বরং দুর্বল- যে কৃষি হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি। মার্কস ও লেনিন যেমনটা কল্পণা করেছিলেন-  সমাজতান্ত্রিক সমাজে মালিকানা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বুর্জোয়া অধিকারের অবলুপ্তির অর্থ হচ্ছে, সকল উতপাদনের উপায়সমূহের সমগ্র সমাজের সাধারণ সম্পত্তিতে রূপান্তর। পরিষ্কারভাবে, আমরা এখনো সেই স্তরে পৌঁছাইনি। না তত্ত্বে না অনুশীলনে, কোনভাবেই আমরা সেই কষ্টকর কাজটিকে এড়িয়ে যেতে পারি না, যা এই প্রশ্নে সর্বহারা একনায়কত্বের জন্য করণীয় হিসেবে সামনে রয়েছে।

অধিকন্তু, আমাদের অবশ্যই দেখা উচিত যে, সমগ্র জনগণের মালিকানা ও যৌথ মালিকানা- উভয়ের সাথে নেতৃত্বের প্রশ্ন জড়িত, অর্থাত, কোন্ শ্রেণীটি মালিকানা ধারণ করে প্রকৃতপক্ষে, স্রেফ নামে নয়।

১৯৬৯ সালের ২৮ এপ্রিল পার্টির নবম কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে চেয়ারম্যান মাও বলেছিলেন, “স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান যে, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব ব্যতীত আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না, কারণ আমাদের ভিত্তি মজবুত ছিলনা। আমার পর্যবেক্ষণ থেকে আমি ভীত যে, কারখানাসমূহের একটা ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতেই- আমি মনে করছিনা সকল কিংবা নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতে- প্রকৃত মার্কসবাদীদের এবং শ্রমিক জনগণের হাতে নেতৃত্ব ছিলনা। তার মানে এই নয় যে কারখানাসমূহের নেতৃত্বে কোন ভাল মানুষ ছিলনা। সেখানে তা ছিল। পার্টির কমিটিসমূহের সম্পাদক, উপসম্পাদক ও সদস্যদের মধ্যে এবং পার্টির শাখা সম্পাদকদের মধ্যে ভাল মানুষ ছিল। কিন্তু তারা লিউ শাও-চি’র শুধুমাত্র বৈষয়িক প্রণোদনাকে অবলম্বন করা, মুনাফাকে কমান্ডে রাখা, আর সর্বহারা রাজনীতিকে উতসাহের পরিবর্তে বোনাসের মুষ্টিভিক্ষা ও এ জাতীয় বিষয়কে উতসাহের লাইনকে অনুসরণ করছিলেন।” “কিছু কারখানায় প্রকৃতই মন্দ লোক বিদ্যমান।” “এটাই দেখাচ্ছে যে বিপ্লব এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে”। চেয়ারম্যান মাও-এর মন্তব্যসমূহ মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তাকেই শুধু ব্যাখ্যা করছে না, বরং মালিকানা ব্যবস্থার সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের আরো সচেতন হতে সহায়তা করছে, যেমন অন্য সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে, শুধু তার রূপের ক্ষেত্রে নয় বরং প্রকৃত মর্মবস্তুর দিকেও আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত। উতপাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মালিকানা ব্যবস্থার নির্ধারক ভূমিকায় পূর্ণ জোর দেওয়া একদম সঠিক। কিন্তু মালিকানা ব্যবস্থা স্রেফ রূপের দিক থেকেই সমাধা করা হয়েছে, নাকি প্রকৃত বাস্তবে হয়েছে- তার দিকে, উতপাদন সম্পর্কের অন্য দুটো দিক: জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক ও বণ্টনের রূপ- এদের দ্বারা মালিকানা ব্যবস্থার ওপর যে প্রতিক্রিয়া হয় তার দিকে, এবং অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর উপরিকাঠামোর দ্বারা আনীত প্রতিক্রিয়ার দিকে কোন জোর না দেওয়া ভুল। নির্দিষ্ট শর্তে এই দুটো দিক ও উপরিকাঠামো নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনীতি হচ্ছে অর্থনীতির ঘনীভূত প্রকাশ। মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইন সঠিক না বেঠিক, এবং কোন্ শ্রেণী নেতৃত্বে আছে, তা নির্ধারণ করে যে, প্রকৃতপক্ষে কারখানাগুলো কাদের মালিকানায় রয়েছে। কমরেডগণ স্মরণ করতে পারেন, কিভাবে আমরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজি অথবা জাতীয় পুঁজির মালিকানাধীন কোন সংস্থাকে সমাজতান্ত্রিক সংস্থায় পরিণত করেছিলাম। তাকে পার্টির লাইন ও রাজনীতি অনুসারে রূপান্তরের জন্য সেটা কি আমরা একটা সামরিক-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি অথবা একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে করিনি? ঐতিহাসিকভাবে মালিকানা ব্যবস্থায় প্রতিটি বড় পরিবর্তন- তা সামন্ত ব্যবস্থা কর্তৃক দাস প্রথার প্রতিস্থাপন, অথবা পুঁজিবাদ কর্তৃক সামন্ততন্ত্রের প্রতিস্থাপন যা-ই হোক, তা ব্যতিক্রমহীনভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পরবর্তীতে হয়েছে, যা মালিকানা ব্যবস্থায় বড় আকারে পরিবর্তন আনতে এবং নয়া ব্যবস্থাকে সংহত ও বিকশিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে । সমাজতান্ত্রিক গণমালিকানার ক্ষেত্রে এটা আরো সত্য যা বুর্জোয়া একনায়কত্বের অধীনে জন্ম নিতে পারেনা। আমলাতান্ত্রিক পুঁজি, যা পুরোনো চীনের শতকরা ৮০ ভাগ শিল্প নিয়ন্ত্রণ করতো, তাকে রূপান্তরিত করা ও সমগ্র জনগণের মালিকানার অধীনে স্থাপন করা সম্ভব হল গণমুক্তি বাহিনী চিয়াংকাইশেককে পরাজিত করার পরই কেবল। একইভাবে, অনিবার্যভাবে পুঁজিবাদী পুনরুত্থানের পূর্বে ঘটে নেতৃত্ব কব্জা এবং পার্র্টির লাইন ও কর্মনীতির পরিবর্তন। ক্রুশ্চেভ ও ব্রেজনেভ কি এই পথেই সোভিয়েত ইউনিয়নের মালিকানা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়নি? এই পথেই কি লিউ শাও-চি ও লিন পিয়াও আমাদের বেশকিছু কারখানা ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর চরিত্রের বিভিন্ন মাত্রায় পরিবর্তন ঘটায়নি?

আমাদের এটাও দেখতে হবে যে, আজকে আমরা যা অনুশীলন করছি তাহচ্ছে একটা পণ্য ব্যবস্থা । চেয়ারম্যান মাও বলেন, “আমাদের দেশ বর্তমানে একটা পণ্য ব্যবস্থা অনুশীলন করছে, মজুরী ব্যবস্থাও অসম, যেমন আট-গ্রেড মজুরী স্কেল ও এরকম আরো কিছু। সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে এ জাতীয় বিষয়গুলোকে শুধু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই, লিন পিয়াওয়ের মতো লোকেরা ক্ষমতায় আসলে তাদের পক্ষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তৈরী করা খুবই সহজ হবে।” এই পরিস্থিতি, যা চেয়ারম্যান মাও তীক্ষ্ণভাবে তুলে ধরেছেন, স্বল্প সময়ে পরিবর্তন করা যাবেনা। উদাহারণস্বরূপ, সাংহাই-এর শহরতলীর গ্রামীণ গণকমিউনসমূহে, যেখানে কমিউন ও উতপাদন ব্রিগেড স্তরে অর্থনীতি বরং দ্রুত গতিতে বিকাশ লাভ করেছে, সেখানে এই  তিনটি স্তরের সবগুলোর মালিকানাধীন ধ্রুব সম্পদসমূহের শতকরা ৩৪.২ ভাগ কমিউন মালিকানাধীন, ব্রিগেড মালিকানা শতকরা মাত্র ১৫.১ ভাগ, অথচ উতপাদন টিমসমূহ এখনো শতকরা ৫০.৭ ভাগ দখল করে রয়েছে। তাই, আমরা যদি শুধু কমিউনগুলোতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে হিসেব করি, (তাহলেও) মূল হিসেব-রক্ষণকারী ইউনিট হিসেবে টিমের ব্রিগেডে এবং তারপর কমিউনে রূপান্তরে একটা ভাল মতো দীর্ঘসময় লাগবে। অধিকন্তু, যখন কমিউন মূল হিসেব-রক্ষণকারী ইউনিটে পরিণত হবে, মালিকানা তখনও যৌথ থাকবে। তাই, স্বল্প মেয়াদে, পরিস্থিতির কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটবেনা, যেখানে সমগ্র জনগণের মালিকানা ও যৌথ মালিকানা সহাবস্থান করে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই দুই ধরনের মালিকানা থাকবে, ততদিন পণ্য উতপাদন, অর্থের মাধ্যমে বিনিময় এবং কাজ অনুসারে বণ্টন অনিবার্য। আর যেহেতু “সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে এই বিষয়গুলোকে শুধু নিয়ন্ত্রণ করা যায়”, তাই, গ্রাম ও শহরে পুঁজিবাদী উপাদানসমূহের বৃদ্ধি এবং নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহের উদ্ভব একইভাবে অনিবার্য। যদি এই বিষয়সমূহকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, (তাহলে) পুঁজিবাদ ও বুর্জোয়া অধিক দ্রুতগতিতে জন্ম নেবে। তাই, আমরা কোনভাবেই আমাদের সতর্কতাকে ঢিলে করতে পারিনা, শুধু এ কারণে যে, মালিকানা ব্যবস্থার রূপান্তরে আমরা একটা বিরাট বিজয় অর্জন করেছি এবং একটা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরিচালনা করেছি। আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি এখনো মজবুত নয়; মালিকানা ব্যবস্থায় বুর্জোয়া অধিকার এখনো সমগ্রভাবে বিলোপ করা হয়নি; এটা এখনো জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের মধ্যে মারাত্মক পরিমাণে রয়েছে এবং বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় রয়েছে। উপরিকাঠামোর বহুবিধ ক্ষেত্রের কিছু এলাকা বস্তুত এখনো বুর্জোয়াদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার সেখানে কর্তৃত্ব রয়েছে। এর কিছু রূপান্তরিত করা হচ্ছে, কিন্তু ফলাফলসমূহ এখনো সংহত হয়নি এবং পুরোনো ধারণা ও অভ্যাসের পুরোনো শক্তি এখনো সমাজতান্ত্রিক নয়া জিনিসসমূহকে একগুঁয়েভাবে বাধা দিচ্ছে। শহর ও গ্রামে পূঁজিবাদী উপাদানসমূহের বিকাশের তরঙ্গে দলের পর দল নতুন বুর্জোয়া উপাদানসমূহ জন্ম নিচ্ছে। সর্বহারা শ্রেণী ও বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যে শ্রেণীসংগ্রাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে শ্রেণীসংগ্রাম এবং মতাদর্শিক ক্ষেত্রে সর্বহারা শ্রেণী ও বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যে শ্রেণীসংগ্রাম দীর্ঘ ও আঁকাবাঁকা হিসেবে অব্যাহত থাকবে এবং সময়ে সময়ে খুবই তীক্ষ্ণ হবে। এমনকি পুরোনো প্রজন্মের সামন্ত ভূস্বামী ও বুর্জোয়ারা যখন সবাই মারা যাবে, তখনো এই শ্রেণীসংগ্রাম শেষ হবেনা কোনভাবেই; আর লিন পিয়াও-এর মতো লোকেরা ক্ষমতায় আসলে তখনো একটা বুর্জোয়া পুনরুত্থান ঘটতে পারে। জাপনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়োত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের কর্মনীতি শীর্ষক বক্তব্যে চেয়ারম্যান মাও ব্যাখ্যা করেছিলেন কীভাবে ১৯৩৬ সালে পাও-আন-এ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর-এর কাছে একটা গ্রাম বেশ কিছু সশস্ত্র প্রতিবিপ্লবীর দ্বারা সুরক্ষিত ছিল, যারা অব্যাহতভাবে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল, যতক্ষণ না লাল ফৌজ এর ওপর আঘাত হানল এবং সমস্যাটির সমাধান করল। এই গল্পটির একটি বিশ্বজনীন তাতপর্য রয়েছে। কারণ তা আমাদের বলে “প্রতিটি প্রতিক্রিয়াশীল জিনিস একই, আপনি যদি একে আঘাত না করেন এর পতন ঘটবেনা। এটা মেঝে ঝাড়– দেওয়ার মতো। যেখানে ঝাড়– পৌঁছায়না, ধূলা কখনো আপনি থেকে সরে যায়না।” আজকে এখনো বুর্জোয়াদের দ্বারা দখলকৃত অনেক “সুরক্ষিত গ্রাম” রয়েছে। একটা ধ্বংস হলে আরেকটা জন্ম নেবে। এমনকি একটা বাদে সবকটি ধ্বংস হলেও সেটা নিজে থেকে ধ্বংস হবেনা, যদিনা সর্বহারা একনায়কত্বের লোহার ঝাড়– সেখানে পৌঁছে। লেনিন সম্পূর্ণ সঠিকভাবেই বলেছিলেন, “এই সব কারণেই সর্বহারা একনায়কত্ব অপরিহার্য।”

ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায় যে, সর্বহারা শ্রেণী বুর্জোয়া শ্রেণীর উপর বিজয় অর্জন করতে পারবে কিনা এবং চীন সংশোধনবাদীতে পরিণত হবে কিনা তা নির্ভর করে আমরা বুর্জোয়াদের উপর সকল ক্ষেত্রে ও বিপ্লবের বিকাশের সকল স্তরে সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করা অব্যাহত রাখতে পারি কিনা তার ওপর। বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব কী? ১৮৫২ সালে জে, ওয়েডমেয়ারের কাছে মার্কসের চিঠির একটা অনুচ্ছেদে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সাধারণীকরণ পাওয়া যায় যা আমরা সবাই অধ্যয়ন করছি। মার্কস বলেন, “…আধুনিক সমাজে শ্রেণীসমূহের অস্তিত্ব বা তাদের মধ্যকার সংগ্রাম আবিস্কারের কৃতিত্ব আমার নয়। আমার বহু পূর্বে বুর্জোয়া ঐতিহাসিকরা শ্রেণীসমূহের সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিকাশকে বর্ণনা করেছেন, এবং বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদরা শ্রেণীসমূহের অর্থনৈতিক ব্যবচ্ছেদ করেছেন। নতুন আমি যা করেছি তা হচ্ছে এটা প্রমাণ করা যে- ১) শ্রেণীসমূহের অস্তিত্ব কেবল উতপাদনের বিকাশের নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্বের সাথে বাঁধা। ২) শ্রেণীসংগ্রাম আবশ্যিকভাবে সর্বহারা একনায়কত্বে চালিত করে। ৩) এই একনায়কত্ব নিজেই সকল শ্রেণীর বিলোপ এবং একটা শ্রেণীহীন সমাজে যাওয়ার উত্তরণই কেবল গঠন করে।” লেনিন বলেন, এই চমতকার পর্যবেক্ষণে মার্কস লক্ষণীয় স্পষ্টতায় রাষ্ট্র সংক্রান্ত বুর্জোয়াদের তত্ত্বের সাথে সেসংক্রান্ত তাঁর তত্ত্বের প্রধান ও মৌলিক পার্থক্য, এবং রাষ্ট্র সংক্রান্ত তাঁর শিক্ষার সার প্রকাশে সফল হয়েছেন। এখানে লক্ষণীয় যে, মার্কস সর্বহারা একনায়কত্ব সম্পর্কে বাক্যটিকে তিনটি প্রশ্নে ভাগ করেছেন, যেগুলো পরস্পর সম্পর্কিত এবং একে অপর থেকে  অবিচ্ছেদ্য। এই তিনটি বিষয়ের কেবল একটিকে গ্রহণ করে অপর দুটি বর্জন করা অনুমোদনীয় নয়। কারণ, বাক্যটি সর্বহারা একনায়কত্বের জন্ম, বিকাশ ও শুকিয়ে মরার গোটা প্রক্রিয়ার পূর্ণ প্রকাশ প্রদান করে এবং সর্বহারা একনায়কত্বের সমগ্র করণীয় ও তার প্রকৃত সারকে প্রকাশ করে। ফ্রান্সে শ্রেণীসংগ্রাম, ১৮৪৮-১৮৫০-এ মার্কস সর্বহারা একনায়কত্বের অধিকতর মূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, একে সাধারণভাবে সকল শ্রেণী পার্থক্য বিলোপ, যে উতপাদন সম্পর্কসমূহের উপর এগুলো দাঁড়িয়ে তার সকলগুলোর বিলোপ, এই উতপাদন সম্পর্কসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল সামাজিক সম্পর্কের বিলোপ এবং এই সামাজিক সম্পর্কসমূহ থেকে জন্ম নেওয়া সকল ধারণাসমূহের বিপ্লবীকরণের প্রয়োজনীয় উত্তরণকাল হিসেবে। এ চারটি ক্ষেত্রের সবগুলো ক্ষেত্রেই মার্কস বুঝিয়েছেন সকলের (All) কথা। একটা অংশ নয়, একটা বৃহত্তর অংশ এমনকি বৃহত্তম অংশও নয়, সকলগুলো! এটা আশ্চর্য কিছু না, কারণ, সমগ্র মানব জাতিকে মুক্ত করেই কেবল সর্বহারা শ্রেণী নিজ চুড়ান্ত মুক্তি অর্জন করতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনে একমাত্র উপায় হচ্ছে বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করা এবং সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে অব্যাহত বিপ্লবকে শেষপর্যন্ত পরিচালনা করা, যতক্ষণ না উপরে উল্লিখিত চার সকল পৃথিবী থেকে বিদূরিত হচ্ছে, যাতে বুর্জোয়া ও অন্য সমস্ত শোষক শ্রেণীসমূহের পক্ষে অস্তিত্বমান হওয়া অসম্ভব হয়, অথবা নতুন কারো উদ্ভব অসম্ভব হয়; উত্তরণ-এর পথে নিশ্চিতভাবে আমাদের থামা যাবেনা। আমাদের মতে, যারা  বিষয়টিকে এভাবে বোঝেন  তারাই কেবল রাষ্ট্র সম্পর্কিত মার্কসের শিক্ষার সারমর্মকে আত্মস্থ করেছেন বলে গণ্য করা যায়। কমরেডগণ, দয়া করে বিষয়টি নিয়ে বারবার ভাবুন: যদি বিষয়টিকে এভাবে বোঝা না হয়, যদি মার্কসবাদকে তত্ত্ব ও অনুশীলনে সীমিত, কাটছাঁট ও বিকৃত করা হয়, যদি সর্বহারা একনায়কত্বকে একটা ফাঁকা বুলিতে পরিণত করা হয় অথবা বুর্জোয়াদের উপর সার্বিক একনায়কত্বের অঙ্গছেদন করে পঙ্গু করা হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে কেবল পরিচালনা করা হয়, কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয় অথবা কেবল একটি নির্দিষ্ট স্তরে (উদাহরণস্বরূপ, মালিকানা ব্যবস্থার রূপান্তরের আগে), কিন্তু সকল স্তরে নয়, অথবা অন্য কথায়, যদি বুর্জোয়াদের সকল “দুর্ভেদ্য গ্রামসমূহ” ধ্বংস না করে কিছু বাকি রাখা হয় বুর্জোয়াদের পুনরায় সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে- এটা কি বুর্জোয়া পুনরুত্থানের শর্তসমূহকে প্রস্তুত করা বোঝায় না? এটা কি সর্বহারা একনায়কত্বকে এমন একটা জিনিসে পরিণত করা বোঝায়না যা বুর্জোয়াদের রক্ষা করে, বিশেষতঃ নতুন জন্ম নেয়া বুর্জোয়াদের? সকল শ্রমিকবৃন্দ, সকল গরীব ও নিম্ন মাঝারি কৃষক এবং অন্য শ্রমজীবী মানুষ যারা দুর্ভোগ ও ক্রন্দনে পুনরায় নিমজ্জিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেন, সকল কমিউনিস্টগণ যারা কমিউনিজমের জন্য সংগ্রামে জীবন দান করেছেন, আর সকল কমরেডরা যারা চাননা চীন সংশোধনবাদীতে পরিণত হোক, তাদেরকে অবশ্যই মার্কসবাদের এই মৌলিক নীতিকে দৃঢ়ভাবে মনে রাখতে হবে: বুর্জোয়াদের উপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করা দরকার, এবং একে মাঝপথে পরিত্যাগ করা চরমভাবে অননুমোদনীয়। সন্দেহাতীতভাবে আমদের মধ্যে কিছু কমরেড আছেন যারা সাংগঠনিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু মতাদর্শিকভাবে নয়। তাদের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিতে তারা এখনো ক্ষুদে উতপাদন ও বুর্জোয়াদের সীমার বাইরে পা দেননি। তারা সর্বহারার একনায়কত্বকে অনুমোদন দেন একটা নির্দিষ্ট স্তরের জন্য ও একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে এবং সর্বহারা শ্রেণীর কিছু কিছু বিজয়ে তারা আনন্দিত, কারণ সেগুলো তাদের জন্য কিছু অর্জন এনে দেবে; একবার যখন তাদের লাভ অর্জিত হয়েছে, তারা মনে করে যে, এখন ক্ষান্তি দেবার এবং আপন ভাণ্ডার পূর্ণ করার সময় হয়েছে। বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে, ১০,০০০ লি লং মার্চের ১ম পদক্ষেপ দেবার পর এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে, দুঃখিত, অন্যরা কাজটা করুক; আমি এখানেই থামবো এবং অবশ্যই বাস থেকে নেমে পড়বো। এসব কমরেডকে আমরা একটা উপদেশ দিতে চাই: মাঝ পথে ক্ষান্তি দেয়া ভয়ংকর! বুর্জোয়ারা তোমাদের ইশারায় ডাকছে। সারিতে থাক এবং এগিয়ে চলা অব্যাহত রাখো!

ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাও আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যখন সর্বহারা একনায়কত্ব একটার পর একটা বিজয় অর্জন ক’রে চলে, তখন বুর্জোয়ারা উপরে উপরে এই একনায়কত্বকে গ্রহণ করার ভান করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তারা বুর্জোয়া একনায়ত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজ চালিয়ে যায়। ঠিক এই কাজটি ক্রুশ্চেভ ও ব্রেজনেভ করেছে। তারা না “সোভিয়েত” নাম পরিবর্তন করেছে, না লেনিনের পার্টির নাম, “সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসমূহ”-র নামও নয়। কিন্তু এই নাম গ্রহণ ক’রে ও এগুলোকে একটা মুখোশ হিসেবে ব্যবহার ক’রে তারা সর্বহারা একনায়কত্বের প্রকৃত সারবস্তুকে তার থেকে কেটে-ছিঁড়ে ফেলেছে এবং একে একচেটিয়া পুঁজিপতি শ্রেণীর একনায়কত্বে পরিণত করেছে, যা হচ্ছে সোভিয়েত বিরোধী, লেনিনের পার্টির বিরোধী এবং সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রসমূহের বিরোধী। তারা “সমগ্র জনগণের রাষ্ট্র” ও “সমগ্র জনগণের পার্টি”র সংশোধনবাদী কর্মসূচি তুলে ধরছে যা হচ্ছে মার্কসবাদের প্রতি একটা খোলামেলা বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু যখন সোভিয়েত জনগণ তাদের ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তারা জনগণকে দমন করার জন্য সর্বহারা একনায়কত্বের পতাকা ওড়ায়। চীনেও একই ধরনের ব্যাপার ঘটেছে। লিউ শাও-চি ও লিন পিয়াও শ্রেণীসংগ্রামের শুকিয়ে মরার তত্ত্বের প্রসারেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি।2830373079_bce904b0ae_o তারাও সর্বহারা একনায়কত্বের পতাকা উড়িয়েছে বিপ্লবকে দমনের সাথে সাথে। লিন পিয়াও কি তার চার “কখনো ভুলোনা” নসিহত করেনি? তার মধ্যে একটি ছিল “সর্বহারা একনায়কত্বকে কখনো ভুলোনা।” সত্যিই এটা ছিল এমন একটা জিনিস যা সে “কখনো ভুলেনি”, শুধু “উচ্ছেদ করা” শব্দটি যোগ করা দরকার, “সর্বহারা একনায়কত্বকে উচ্ছেদ করতে কখনো ভুলোনা” বানাতে, অথবা যেমনটি তার নিজ গ্যাং কর্তৃক স্বীকার করা হয়েছে, “চেয়ারম্যান মাওয়ের শক্তিসমূহের ওপর আঘাত হানতে চেয়ারম্যান মাওয়ের ব্যানারকে তুলে ধরো”। কখনো তারা তাদের পাল তুলে দিয়েছে সর্বহারা শ্রেণীর দিকে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ও ধ্বংসাত্মক ততপরতা চালাতে এমনকি “বাম” শ্লোগান তুলে ধরেছে, যাতে যে কারো চেয়ে নিজেদেরকে বেশি বিপ্লবী দেখানোর ভান করা যায়। কিন্তু তারা স্বভাবতই সর্বহারা শ্রেণীর বিরুদ্ধে একটা প্রত্যক্ষ পাল্টা-সংগ্রাম চালাচ্ছিল। আপনি সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর চালাতে চেয়েছেন? তারা বলল যে নয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে হবে। আপনি সমবায় ও কমিউনসমূহ সংগঠিত করতে চাইলেন? তারা বলল যে এটা করার এখনো সময় হয়নি। যখন আপনি বললেন, শিল্প ও সাহিত্যকে বিপ্লবীকরণ করতে হবে, তারা বললো যে, ভূত-প্রেতের কিছু নাটক মঞ্চস্থ করলে কোন ক্ষতি হবেনা। আপনি বুর্জোয়া অধিকারের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চাইলেন? তারা বলল যে সত্যিই এটা একটা দারুণ ব্যাপার এবং একে সম্প্রসারিত করা দরকার। তারা হচ্ছে পুরনো জিনিসগুলোকে রক্ষাকারী অতীত প্রভুদের একটা দঙ্গল এবং মাছিদের একটা ঝাঁক, যারা পুরোনো সমাজের “জন্মচিহ্ন” ও “ত্রুটি”, যার কথা মার্কস বলেছিলেন, তার ওপর সারা দিন ভন ভন করে। বিশেষতঃ তারা আমাদের তরুণ জনগণকে বৈষয়িক প্রণোদনায় উতসাহিত করার জন্য তাদের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিতে আগ্রহী- এটা বলে যে, এটা হলো কড়া মটরসুটি-দই পনিরের মতো, যার গন্ধ কটু, কিন্তু সুস্বাদু। তারা এসব নোংরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনবরত সমাজতন্ত্রের ব্যানার তুলে ধরে। কিছু বদমাস কি নেই যারা ফাটকাবাজি, দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়ে বলে যে তারা সমাজতান্ত্রিক সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে? তরুণ জনগণের মনকে বিষাক্তকারী অপরাধের মন্ত্রণাদাতা কিছু লোক কি “কমিউনিজমের জন্য উত্তরাধিকারীদের প্রতি যতন ও ভালবাসা”র ব্যানার ওড়ায়না? আমাদেরকে তাদের রণকৌশল অবশ্যই অধ্যয়ন করতে হবে, আর আমাদের অভিজ্ঞতার সারসংকলন করতে হবে, যাতে বুর্জোয়াদের ওপর আমরা সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনা করতে পারি অধিক কার্যকরভাবে।

“আপনারা কি ‘সাম্যকরণ’-এর বাতাস আন্দোলিত করতে চাইছেন?” সম্প্রতি এ ধরনের প্রশ্ন তুলে ধরার মাধ্যমে গুজব রটনা করা হলো একটা কৌশল, যা কিছু লোক করার চেষ্টা করেছে। আমরা একটা নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারি: লিউ শাও-চি ও চেন পো-তা কর্তৃক আন্দোলিত করা “সাম্যকরণ”-এর বাতাসকে পুনরায় আঘাত করার সুযোগ কখনোই আর দেওয়া হবে না। আমরা সর্বদাই তুলে ধরেছি যে, পণ্যের পথে খুব বেশি থাকার পরিবর্তে আমাদের দেশে সেটার পর্যাপ্ত প্রাচুর্য নেই। উতপাদন ব্রিগেড ও টিমগুলো যা আনতে পারে তাসহ কমিউনগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত বেশি কিছু “সাম্যকরণ” করার জন্য দিতে পারেনা, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন সংস্থাসমূহ আমাদের ৮০ কোটি জনগণের মধ্যে প্রয়োজনানুযায়ী বণ্টনের জন্য বিপুল পর্যাপ্ত উতপন্ন নিবেদন করতে না পারবে- ততক্ষণ আমাদের পণ্য উতপাদন, টাকার মাধ্যমে বিনিময় এবং কাজ অনুযায়ী বণ্টন অনুশীলন করে যেতে হবে। এই বিষয়গুলি দ্বারা আনীত ক্ষতি রুখতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং অব্যাহতভাবে করতে থাকবো। সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব হচ্ছে জনসাধারণের দ্বারা একনায়কত্ব। আমরা আস্থাবান যে, পার্টির নেতৃত্বে ব্যাপক জনসাধারণের সামর্থ্য ও ক্ষমতা রয়েছে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে লড়ার ও চুড়ান্তভাবে তাকে পরাজিত করার। পুরোনো চীন ছিল ক্ষুদে উতপাদনের একটা বিশাল সমুদ্র। কয়েক দশক কোটি কৃষক জনগণের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা দেওয়া সবসময়ই ছিল একটা গুরুতর প্রশ্ন এবং কয়েক প্রজন্মের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিন্তু কয়েক দশক কোটি কৃষকের মধ্যে গরীব ও নিম্ন মাঝারি কৃষকেরা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ, আর তারা  অনুশীলন থেকে জানে যে, উজ্জ্বল ভবিষ্যত আনার একমাত্র পথ হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টিকে অনুসরণ করা, এবং সমাজতান্ত্রিক পথে চলতে থাকা। আমাদের পার্টি তাদের ওপর নির্ভর করেছে মাঝারি কৃষকদের সাথে ঐক্য গড়ে তুলতে এবং ধাপে ধাপে পারস্পরিক সহযোগিতা টিম থেকে প্রাথমিক ও অগ্রসর কৃষি উতপাদকদের সমবায়ে এবং তারপর গণকমিউনে যেতে। এবং আমরা নিশ্চিতভাবে সেগুলোকে অধিকতর অগ্রসর হতে নেতৃত্ব দিতে পারি।

আমরা বরং কমরেডদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এই বাস্তবতার প্রতি যে, আরেক ধরনের বাতাস বইছে- “বুর্জোয়া বাতাস”। এটা হচ্ছে চেয়ারম্যান মাও যাকে বলেছেন বুর্জোয়া স্টাইলের জীবন, একটা দুষ্ট বাতাস- জনগণের সেই “অংশ”-র দ্বারা আন্দোলিত, যারা বুর্জোয়া উপাদানে অধঃপতিত হয়েছে। এই “অংশ”-র সাথে জড়িত কমিউনিস্টদের মধ্য থেকে, বিশেষতঃ নেতৃস্থানীয় কেডারদের থেকে প্রবাহিত “বুর্জোয়া বাতাস” আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে। এই দুষ্ট বাতাসে বিষাক্ত হয়ে কিছু লোক তাদের মাথা বুর্জোয়া ভাবধারায় পূর্ণ করে ফেলেছে; তারা পদ ও লাভের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে, আর এর জন্য লজ্জিত হওয়ার বদলে গর্বিত হয়। কেউ কেউ নিজেদেরসহ সবকিছুকে পণ্য হিসেবে দেখার মধ্যে পর্যন্ত ডুবে গেছে। তারা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয় ও সর্বহারা শ্রেণীর জন্য কাজ করতে যায় স্রেফ পণ্য হিসেবে নিজেদের উন্নীত করতে, আর সর্বহারা শ্রেণীর কাছে উচ্চ দাম চাইতে। যারা নামে কমিউনিস্ট কিন্তু বাস্তবে নয়া বুর্জোয়া উপাদান, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্ষয়িষ্ণু বুর্জোয়ার চিত্রকেই সামগ্রিকভাবে প্রদর্শন করে। ঐতিহাসিকভাবে, যখন দাসমালিক, ভূস্বামী ও পুঁজিপতি শ্রেণীসমূহ উদীয়মান ছিল তখন তারা মানবজাতির জন্য কিছু উপকার করেছিল। কিন্তু আজকের নয়া বুর্জোয়ারা তাদের পূর্বপুরুষদের বিপরীতমুখে ধাবিত। এরা “নতুন” আবর্জনার স্তুপ ছাড়া আর কিছুই নয়, যা কেবল মানবজাতির ক্ষতিই করতে পারে। “সাম্যকরণ”-এর যে বাতাস আন্দোলিত হচ্ছে সে বিষয়ে গুজব-রটনাকারীদের মাঝে কিছু নয়া বুর্জোয়া উপাদান রয়েছে যারা গণ মালিকানাকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছে, তারা ভয় পায় যে জনগণ সেগুলোকে আবারো “সাম্যকরণ” করবে; অন্যরা তাদের নিজেদের জন্য কিছু দখল করার জন্য সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। আমাদের অনেক কমরেডের চেয়ে এই লোকগুলোর ভাল নাক রয়েছে। আমাদের কিছু কমরেড বলে যে, অধ্যয়ন হচ্ছে একটা “স্থিতিস্থাপক” কর্তব্য, যা অন্যদের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব ব্যবহার করতে পারে। অথচ এই লোকগুলো জৈব ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝতে পেরেছে যে বর্তমান অধ্যয়ন হচ্ছে একটি “অ-স্থিতিস্থাপক” বস্তু যা উভয় শ্রেণী- বুর্জোয়া ও সর্বহারার সাথে গভীরভাবে সংগ্রামরত। সত্যিই, তারা নিজেরা সুচিন্তিতভাবে “সাম্যকরণ”-এর কিছু বাতাসকে আন্দোলিত করতে পারে, অথবা আমাদের নিজস্ব কিছু শ্লোগানকে দখল করতে পারে দুইটি ভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্বকে মিশিয়ে ফেলতে ও কিছু অনাকাংখিত ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তুলতে। এটা গুরুত্বের সাথে লক্ষণীয়।

চেয়ারম্যান মাওয়ের নেতৃত্বাধীনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালনায় কোটি কোটি চীনা জনগণ দ্বারা গঠিত সর্বহারা বিপ্লবের শক্তিমত্ত বাহিনী দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে চলেছে।  আমাদের রয়েছে সর্বহারা একনায়কত্ব পরিচালনার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা, সেই সাথে রয়েছে প্যারি কমিউন থেকে আরম্ভ করে সকল আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা; আর যতক্ষণ আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক শত সদস্য ও কয়েক হাজার সিনিয়র কেডার নেতৃত্ব করবেন এবং বিপুল সংখ্যক অন্যান্য কেডার ও জনগণের সাথে মিলিত হবেন অধ্যবসায় সহকারে পঠনে ও অধ্যয়নে, তদন্ত ও বিশ্লেষণ পরিচালনায়, আর অভিজ্ঞতার সারসংকলনে, নিশ্চিতভাবে আমরা চেয়ারম্যান মাওয়ের আহ্বানকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারি, সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের প্রশ্নে স্পষ্টতা অর্জন করতে পারি এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা প্রদর্শিত পথ ধরে আমাদের দেশের বিজয়োজ্জ্বল এগিয়ে চলাকে নিশ্চিত করতে পারি। “শৃংখল ছাড়া সর্বহারার হারাবার কিছু নেই। জয় করার জন্য রয়েছে সারা দুনিয়া।” নিশ্চিতভাবে এই অসীম উজ্জ্বল সম্ভাবনা ক্রমবর্ধমান সংখ্যক সচেতন শ্রমিক এবং অপরাপর মেহনতী জনগণ ও তাদের অগ্রপথিক কমিউনিস্টদের অব্যাহতভাবে অনুপ্রাণিত করবে, পার্টির মৌলিক লাইনে লেগে থাকতে, বুর্জোয়াদের ওপর সার্বিক একনায়কত্ব পরিচালনায় লেগে থাকতে এবং সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের অধীনে অব্যাহত বিপ্লবকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে! বুর্জোয়াশ্রেণী ও অপরাপর শোষক শ্রেণীসমূহের ধ্বংস আর কমিউনিজমের বিজয় অনিবার্য, নিশ্চিত এবং মানুষের ইচ্ছা নিরপেক্ষ।

তেঙ শিয়াও-পিংকে সমালোচনা করা ও

ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করা সম্বন্ধে আলোচনা

–   চ্যাং চুন-চিয়াও

(২৮ জুন, ১৯৭৬)

[পিকিং-এ কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন ক্লাশ-এ উপস্থিত প্রাদেশিক ও পৌর স্তরের নেতৃস্থানীয় কেডারদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা]

 

ঝড়ো সংগ্রাম

৫ এপ্রিলের প্রতিবিপ্লবী ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর, এপ্রিল ৭-এ কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরো চেয়ারম্যান মাও-এর পরামর্শের ভিত্তিতে দুইটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে। এগুলো সময়োচিতভাবে দেশব্যাপী জনগণের কাছে সংগ্রামের সাধারণ দিক নির্দেশ ব্যাখ্যা করে ও তেঙ শিয়াও-পিং-নেতৃত্বাধীন অল্পসংখ্যক পুঁজিবাদের পথগামীদের দ্বারা ক্ষিপ্রবেগে চালানো পূর্ব রায়গুলোকে উল্টানোর জন্য দক্ষিণপন্থী বাতাসকে ধ্বংস করে, ধ্বংসাত্মক ততপরতারত ও ঝামেলা পাকানো প্রতিবিপ্লবী উপাদানসমূহকে দমন করে, প্রতিকূল স্রোতের বিরুদ্ধে দৃঢ় করে ও দুষ্ট zhangwithবাতাসকে থামিয়ে দেয়, এবং সামাজিক ব্যবস্থা ও সর্বহারা একনায়কত্বকে সংহত করে। চেয়ারম্যান মাও ও পার্টি কেন্দ্রের সঠিক নেতৃত্বের অধীনে কোটি কোটি শ্রমিক-কৃষক-সৈনিক জনগণ সারাদেশব্যাপী এখন এই দুই সিদ্ধান্তের পূবালী বাতাস পরিচালনা করছেন, এবং, মূর্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ক’রে আবার পূর্বতন রায়কে উল্টে দেওয়ার ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করা এবং প্রতিবিপ্লবীদের খোঁজ করার জন্য দেশব্যাপী একটা নতুন জোয়ার সংগঠিত করছেন ।

এপ্রিল ৫ প্রতিবিপ্লবী ঘটনা পার্টিতে দুই লাইনের মধ্যকার সংগ্রামের একটা ধারাবাহিকতা, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্নে এবং দুই শ্রেণীর মধ্যকার জীবন মরণ সংগ্রামের অনিবার্য ফল, যা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অব্যাহত গভীরকৃত বিকাশের সাথে যুক্ত। পূর্বতন সকল শ্রেণীসংগ্রামের মতো এটাও প্রতিবিপ্লবীর পরাজয় ও বিপ্লবীর বিজয়ের দ্বারা চিহ্নিত হয়ে শেষ হয়েছে। এই ঝড়ো সংগ্রাম সমগ্র পার্টি ও দেশব্যাপী সমগ্র জনগণকে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানান দেয়, “শ্রেণীসংগ্রাম এখনো বিদ্যমান, পুঁজিবাদের পথগামীরা এখনো সক্রিয়, সকল বিপ্লবীগণ কখনো পুঁথিসর্বস্ব বুদ্ধিজীবীদের ভান দ্বারা স্ফীত/আত্মতৃপ্ত হতে পারে না, যারা মনে করে যে দেশ শান্তিতে রয়েছে।”

বর্তমানে, আমাদের পার্টির সকলকে অবশ্যই প্রথমেই পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে সংগ্রামের নতুন ধারাকে। ১০ এপ্রিলের দুই সিদ্ধান্ত ইস্যু করার পর অনেক কমরেডই তাদের চোখের সামনেকার কেবল ক্ষুদ্র চক্রই দেখতে সক্ষম ছিলেন, সমগ্র পরিবেশ ও সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যাপ্ত মূল্যায়ন ও উপলব্ধির অভাবে। বেশ কিছু কমরেড এমনকি এই মর্মবস্তু লালন করেছিলেন যে “এত কিছুর পর আমরা এখন শ্বাস নিতে পারি”, কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার চিন্তায়। প্রকৃতপক্ষে, এই দৃষ্টিকোণ অবাস্তবই শুধু নয় বরং ক্ষতিকরও, কারণ শ্রেণীশত্রু ঠিক এই আশাই করে যে আমরা ঢিল দেই, অর্থাত “তুমি তোমার শ্বাস নাও, আর সেও তার শ্বাস নেবে।” শ্রেণীসংগ্রামের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে যে, “সংগ্রামের যে কোন ঢিল দেওয়া বিপ্লবের জন্য চরম ক্ষতি  ডেকে আনবে।” অতীতে, ইউনান প্রাদেশিক পার্টি কমিটি “বিবেকবুদ্ধিপূর্ণভাবে উতপাদনের কর্তব্যে থেকে উতপাদনের ক্ষেত্রে শ্রেণীসংগ্রামকে অঙ্গীভূত করা”র ভ্রান্ত শ্লোগান নিয়ে এসেছিল। ফলে, উতপাদনই যে কেবল ভালভাবে আঁকড়ে ধরা হয়নি এবং করণীয়ও সম্পাদন করা হয়নি, তাই নয়, বিপরীতে, শ্রেণীসংগ্রামকে আঁকড়ে ধরা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে শ্রেণীশত্রু সুযোগকে কাজে লাগায় ধ্বংসাত্মক ততপরতা চালাতে, যেখানে পুঁজিবাদ ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে সবজায়গায়, একেবারে অপূরণীয় ক্ষতির পর্যায়ে। এইবারে, ইউনান প্রাদেশিক পার্টি কমিটির দায়িত্বশীল কমরেডরা যারা অধ্যয়ন ক্লাশে উপস্থিত গভীর উপলব্ধিসহকারে বলেন যে, “আমাদের মস্তিষ্ক একটা ইন্দ্রিয় স্নায়ুর অভাবে ছিল এবং আমাদের কাজের চাবিকাঠি সূত্রকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম; এভাবে কাজগুলো সম্পাদিত হয়নি। আমরা যদি গিরিচূড়ার একেবারে পাড়ে লাগাম টেনে না ধরতাম তাহলে আমাদের ক্ষমতা হয়তো হারাতাম”। শিয়াও-চিয়া-চুয়ান সকল ধরনের কাজে শ্রেণীসংগ্রামের বিরাট আঁকড়ে ধরা রোপণ করেছেন অনমনীয় দৃঢ়তায়, কখনো কোন উতপাদন কাজ বাদ দেননি আর কোন সময় নষ্ট করেননি, এবং এভাবে তা বিপ্লবী উতপাদনকে এক স্তরে উচ্চে উঠতে সাহায্য করেছে এবং সর্বত্র সজীব ও সতেজ সমাজতন্ত্রের একটা নতুন আবহাওয়া সৃষ্টি করেছে। যেহেতু সর্বত্র একই ধরনের উদাহারণ রয়েছে, আমি এর পুনরুল্লেখ করতে যাচ্ছিনা। আমি যা উল্লেখ করতে চাই তাহচ্ছে, দুই সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর বিভিন্ন স্তরে ক্যাডারদের দ্বারা প্রকাশিত কিছু বিষয়। ইতিবাচকভাবে বললে, কেডারদের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই হচ্ছে ভাল- তারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে সযতেœ লালন ও বাস্তবায়ন করছেন কোন কাটছাঁট ছাড়াই; তারা নিজেদেরকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের নেতৃত্ব স্কোয়াডগুলোর সদস্যদেরকে সন্তোষজনক উপায়ে পরিচালনা করেছেন, তারা সিদ্ধান্তগুলোর চেতনাকে অধ্যয়ন ও উপলব্ধি করতে জনগণের সাথে একাত্ম হয়েছেন, তারা বিবেকবুদ্ধির সাথে একে প্রয়োগ করেছেন, এবং অন্যদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরাট সমালোচনা করতে, কাজ ও উতপাদনকে আঁকড়ে ধরতে। যেহেতু পার্টি কমিটির লোকদের রয়েছে এমন ভাল স্কোয়াড নেতৃত্ব, তাই, এলাকাসমূহ নয়া পরিস্থিতি ও নয়া পরিবেশ পেতে সক্ষম।

নেতৃত্বকারী স্কোয়াডগুলি “ভীতি-কে সামনে তুলে ধরে

পরিস্থিতিসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে যে, ক্যাডার কমরেডরা, বিশেষত নেতৃত্বকারী স্কোয়াডসমূহের স্কোয়াড নেতৃত্বরা “ভীতি”-কে সামনে তুলে ধরে; তারা আন্দোলনে আবির্ভূত হওয়া নব-জন্ম লাভ করা জিনিসগুলোকে খোলামেলা সমর্থন দিতে সাহস করেনা, তারা সমাজে আঞ্চলিকীকৃত সমস্যাসমূহকে সমগ্র স্বর্গে বিরাট বিশৃংখলা মনে করে এবং তারা জানেনা সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা করতে হয়; তারা শ্রেণীশত্রুর ধ্বংসাত্মক ততপরতার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে সাহস করেনা, সমগ্র আন্দোলনের সময়কাল ধরে তারা সিদ্ধান্তহীনভাবে কাজ করেছে এবং দুর্বল ও শক্তিহীন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, আর পার্টিসংগঠনগুলোর ভূমিকাকে যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্গের ভূমিকায় আনতে ব্যর্থ হয়। এই ক্যাডারদের “ভীতি”-কে সারসংকলিত করা যায় বিশৃংখলার ভীতি হিসেবে, যা হচ্ছে বিশ্বদৃষ্টিকোণের প্রশ্ন। চীনে একটা পুরনো প্রবাদ আছে: “একবার কেউ সাপের কামড় খেলে সারা জীবন সে দড়ির ভয়ে থাকবে।” যেহেতু পূর্বতন রাজনৈতিক আন্দোলগুলোতে কিছু ক্যাডার বিভিন্ন মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছিল, অথবা কোনভাবে তাদের প্রতি ভুল করা হয়েছিল, এবং পূর্বতন গণআন্দোলনগুলোতে তারা যে প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছিল তার একটা সঠিক উপলব্ধি অর্জনে তারা ব্যর্থ হয়েছিল, তাই, যখনই একটা আন্দোলন আসে, তারা ভয় পায় যে সামনে বাঘ আর পেছনে নেকড়ে থাকতে পারে, বিপ্লব তাদের নিজেদের ওপরই বর্তাতে পারে এবং তাদের দাপ্তরিক টুপিকে বিপ্লবীকরণ ক’রে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। যারা “ভীতি”-কে সামনে রাখে, তেমন সকল ক্যাডাররা এপ্রিল ৫ প্রতিবিপ্লবী ঘটনার পর, আমাদের ও শত্রুদের মধ্যে অবৈষম্যের প্রকাশ করেছেন। তাই, না তারা নয়া জন্ম নেয়া জিনিসগুলোকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেন, না তারা মুষ্টিমেয় খারাপ লোকের ওপর একনায়কত্ব পরিচালনা করতে সাহস করেন। জনগণ বলেনঃ “আমাদের কেডাররা ভাল ও খারাপের মধ্যে, আর সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে পার্থক্যকরণে ব্যর্থ হয়েছেন; তারা পুরনো অনুশীলনের প্রতি আটকে থাকেন, আর আন্দোলনকে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা বানিয়ে ফেলেন।” আমাদের অবশ্যই কেডারদের এই অংশটিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে “ভয়”-কে “সাহস” দ্বারা প্রতিস্থাপনে। সমাজতান্ত্রিক পর্বে পার্টির মৌলিক লাইনকে উপলব্ধি করতে সচেতন বিপ্লবের প্রতিজ্ঞা সর্বাগ্রে থাকতে হবে, তার বিশ্বদৃষ্টিকোণে “ভীতি”র কারণ খুঁজে বের করতে হবে, এবং তারপর আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যথায়, সময় দ্বারা তিনি আগে অথবা পরে বর্জিত হবেন।

ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করার সংগ্রামকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যান

তৃতীয় পরিস্থিতি হচ্ছে এই যে, পার্টির মধ্যকার পুঁজিবাদের পথগামীরা কিছু এলাকায় নেতৃত্ব ক্ষমতা কব্জা করতে সক্ষম হয়েছে, আর তারা সে এলাকার সমাজে শ্রেণী শত্রুর সাথে সহযোগিতা করছে জনগণের মধ্যে জন্ম নেওয়া বহুবিধ মতকে দমন করতে, গণতন্ত্রকে দমন করতে, সর্বহারা একনায়কত্বকে বুর্জোয়া একনায়কত্বে পরিণত করতে এবং পুঁজিবাদী বাতাসকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করতে যা ঐ এলাকার আন্দোলনকে হতাশ করে, উতপাদনকে ব্যাহত করে, প্রকৃত বিপ্লবী জনগণকে নিপীড়ন করে এবং ন্যায়ের চেতনাকে দমিয়ে রাখে। ঐসব এলাকা ঠিক স্বাধীন রাজ্যসমূহের সদৃশ। তারা কেন্দ্রীয় সিদ্বান্তসমূহের প্রতি বাহ্যতঃ বাধ্যগত কিন্তু ভিতরে ভিতরে অবাধ্যতার মনোভঙ্গি গ্রহণ করেছে। উপরিতলে তারা কেন্দ্রীয় দুই সিদ্ধান্তের সমর্থনে বিশ/চল্লিশ হাজার, এমনকি লক্ষাধিক লোকের গণসমাবেশও করেছে, অন্যদের পেছনে না পড়ার মনোভাবে কেন্দ্রের দুই সিদ্ধান্তের সমর্থনে তারা তারবার্তা পাঠিয়েছে বা চিঠি লিখেছে। বস্তুত, যত উঁচুতেই তারা পতাকা উত্তোলন করুক না কেন, অথবা পর্যাপ্ত উচ্চস্বরে শ্লোগান দিক না কেন, তারা কখনোই তাদের প্রকৃত সারবস্তু ও প্রকৃত রূপকে ঢেকে রাখতে পারবেনা। “এমনকি রাস্তায় পদযাত্রীরাও ভাল জানেন সু-মা চাও [একজন কুক্ষিগতকারী যে ওয়েই রাজবংশের দখল নিয়েছিল] কী চিন্তা করছে”-এর অর্থ হচ্ছে ঠিক এইসব লোকেরা। বর্তমানে কিছু সময়ের জন্য, সম্ভবত তারা জনগণকে বোকা বানাতে পারে; কিন্তু, দীর্ঘতর প্রাসঙ্গিকতায় নিশ্চিতভাবে তারা শেয়ালের লেজ দেখাবে, যেহেতু তাদের সারবস্তু হচ্ছে প্রতিবিপ্লবী।

যে কারণে তেঙ শিয়াও-পিং একঘরে হলেও এখনো লড়ার সাহস রাখে তাহচ্ছে, এখনো তেঙের মতো এইসব বড় বা ছোট লোকেরা রয়েছে, যারা তার অনুগামী। তাদের কেউ কেউ পতাকা উত্তোলন করে আর প্রকাশ্যে চিতকার করে, আর অন্যরা হন্তারক তীর ছোঁড়ে আর পর্দার অন্তরালে বিষ ছড়ায়। তারা প্রকাশ্যেই থাকুক আর পর্দার অন্তরালেই থাকুক, যতক্ষণ তারা প্রতিবিপ্লবী হতে চায় ততক্ষণ তারা তাদের প্রতিবিপ্লবী চেহারা অনিবার্যভাবেই উন্মোচন করবে। এখন, কেন্দ্র সারা দেশে সমগ্র পার্টি ও জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে, “অব্যাহতভাবে চেয়ারম্যান মাওয়ের বিপ্লবী লাইন গ্রহণ করতে, নির্মমভাবে শ্রেণীসংগ্রামকে আঁকড়ে ধরতে, তেঙ শিয়াও-পিং-এর সমালোচনাকে তার প্রধান লক্ষ্য ধরে সঠিক রায়কে উল্টে দেবার ডান বিচ্যুতিপন্থী লাইনকে প্রতিহত করার জন্য শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে, এবং অবিরামভাবে ও বৃহত্তর মাত্রায় প্রতিবিপ্লবীদের খুঁজে বের করার জোয়ারকে সারা দেশে আন্দোলিত করতে।” “আমরা যদি এবছর তা করতে না পারি, আমরা আগামী বছর তা অব্যাহত রাখবো। যদি এক বছরের সময়ে তা না হয়, তাহলে দুই বছর, তিন বছর, প্রয়োজনে পাঁচ বছর, এবং এমনকি দশ বছর ধরে তা আমরা চালিয়ে যাবো।” আমরা কম খেতে পারি, কম ঘুমাতে পারি, শরীরের শক্তির কিছুটা হারানোর ভয় করলে চলবেনা, আমরা আমাদের কব্জির ব্যাণ্ডকে আরো চাপাতে পারি এবং আমরা অন্য আরো কিছু জিনিসের ক্ষতি স্বীকারে সমর্থ; কিন্তু এটা আমাদের কোনভাবেই অবহেলা করলে চলবেনা যখন আমরা অন্য ব্যাপারসমূহে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছি, এবং এভাবে রাজনৈতিক সংগ্রামের পরিচালনাকে ঢিল দেওয়া যাবেনা। এটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার যা পার্টি ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের সাথে বিজড়িত, যা কোটি কোটি মানুষকে ভূতলে নিক্ষেপ করতে পারে। কিছু লোক বলে যে এটা কেবল “ক্ষমতার আকাংখা”। আমরা চেয়ারম্যানকে এ কথাটা বলেছি। চেয়ারম্যান মাও বলেন: “তাদেরকে বলুন, আমাদের ক্ষমতা শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের দ্বারা প্রদত্ত, আমাদের লোকসংখ্যার শতকরা নব্বই ভাগের বেশী যে ব্যাপক জনগণ সেই তাদের দ্বারা প্রদত্ত। কমিউনিস্ট পার্টি তার এই রাজনৈতিক ক্ষমতার অস্তিত্বের জন্য কখনো দোদুল্যমান না হয়ে তাদের ওপর একনায়কত্ব পরিচালনা করবে যারা [আমাদের] ক্ষমতা দখলকে বিরোধিতা করে।” চেয়ারম্যান আরো বলেন: “ক্ষমতার জন্য আকাংখা কি? সর্বহারা শ্রেণীর রয়েছে ক্ষমতার জন্য সর্বহারা আকাংখা এবং অর্জিত ক্ষমতার একবিন্দুও বুর্জোয়াদের সাথে ভাগাভাগি করবেনা। ক্ষমতার জন্য বুর্জোয়ার আকাংখাটা কি? এটা সেই জিনিস যার একবিন্দুও তারা সর্বহারা শ্রেণীকে দেবেনা। আমরা এটা তাদের কাছে শিখেছি, কিন্তু আমরা শিখেছি আরো ভালভাবে।” চীনের কমিউনিস্ট পর্টির পঞ্চান্ন বছরের সংগ্রাম এই রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য। এই রাজনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য আমরা আমাদের রক্ত ঝরিয়েছি আর আত্মত্যাগ করেছি; এবং এই রাজনৈতিক ক্ষমতাকে রক্ষার জন্য আমরা রক্ত দানে ও আত্মত্যাগে যে কোন সময় প্রস্তুত, যতদিন না কমিউনিস্ট বিপ্লব এক সমগ্র বিজয় অর্জন করছে।

অতি-বামপন্থী প্রবণতা মাথাচাড়া দিচ্ছে

এই মুহুর্তে যেখানে অতি অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে তাহচ্ছে, ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করার আন্দোলনে একটা বামপন্থী ঝোঁক আর চিন্তাধারার অতি বামপন্থী প্রবণতা মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রতিবিপ্লবীদের দ্বারা ব্যতিক্রমহীনভাবে গৃহীত একটা স্বভাবগত কৌশল হচ্ছে “একটা নেতিবাচক প্রবণতাকে ঢাকতে একটা ইতিবাচক প্রবণতাকে ব্যবহার করা।” যখন বিপ্লবের পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে বিকশিত হচ্ছে, আর তাদেরকে বিরাট প্রতিকূলতার মধ্যে নিয়ে যায়, তখন, টিকে থাকার জন্য তারা অনিবার্যভাবে বিপ্লবী শ্লোগান তুলে নেবে। যখন আপনি ডানে যাবেন, তারা আরো ডানে যাবে, আর যখন আপনি বামে যাবেন, তারা আরো বামে যাবে সংগ্রামের সাধারণ গতিমুখে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং অন্যদের দেখা ও শোনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। কিছু এলাকায় খুব সম্প্রতি এক অস্বাভাবিক ধারা জন্ম নিয়েছে। পার্টির মধ্যকার বুর্জোয়ারা পর্দার অন্তরালে এসে দাঁড়িয়েছে এবং দূরবর্তী লক্ষ্যসহকারে সংখ্যাগরিষ্ঠকে আক্রমণের জন্য বেশ কিছু শত্রুশ্রেণী ও ব্যক্তিদের তেঙ শিয়াও-পিং বিরোধিতার ছুতাকে ব্যবহারে চালিত করেছে।  তারা শ্লোগান তুলে ধরেছে: “প্রত্যেক কর্মকর্তা ভুল করেছে আর প্রতিটি ভুলকেই বিরোধিতা করা হবে।” বড় ক্যাডার হোক আর ছোট ক্যাডার হোক, যতক্ষণ সে ক্যাডার তাকেই দায়ী করা হবে। ফলে, এখন একজনও কাউন্টি পার্টি-কমিটি লোক নেই যাকে বিশ্বাস করা যাবে, একজনও প্রশাসনিক পার্টি কমিটি লোক নেই যাকে বিশ্বাস করা যায়, প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পার্টি কমিটির লোকদের মধ্যেও কাউকে বিশ্বাস করা যায় না, শুধু চেয়ারম্যান মাও ছাড়া। শানসি ও শেনসি প্রদেশের একটা পুরোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে যা বলে: “বড় ও ছোট ক্যাডারদের প্রথমে সিঁড়ির ওপরে তোল তারপর নীচে নামাও এবং চেক পয়েন্টের মধ্যে একের পর এক নিয়ে যাও পরীক্ষার জন্য।” এটা কি লিউ শাউ চি’র ভুয়া “চার পরিষ্কারকরণ” এবং “তাওউয়ান অভিজ্ঞতা”র একটা কিছু নয়- যা ছিল রূপে বাম, কিন্তু চরিত্রগতভাবে ডান? এটা কি একটা বাজে ব্যাপার নয় যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য অথবা একটা এলাকার নেতৃত্ব শাখা এমন জিনিসের মুখোমুখি হলে তা শুনবে না বা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না? আমি যা বলছি তার অর্থ এটা নয় যে, আমি অথবা কেন্দ্রের কিছু দায়িত্বশীল কমরেড বাঘের লেজ নই যা কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা, অথবা বিরোধিতা করতে পারবেনা। ব্যতিক্রমহীনভাবে, যদি কেন্দ্রের কোন দায়িত্বশীল কমরেড ভুল করে থাকেন অথবা মারাত্মক পার্টি বিরোধী ততপরতায় নিয়োজিত হন, তাদেরকে উন্মোচন ও সমালোচনার জন্য জনগণকে শুধূ সমাবেশিতই আপনারা করবেন তা নয়, বরং তার বিরুদ্ধে সংগ্রামও করবেন, আর অবশিষ্ট বিষকে শুদ্ধ করবেন। কিন্তু, এর জন্য অবশ্যই নেতৃত্ব থাকতে হবে, পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকতে হবে। একটা বিশৃংখল বোমা বর্ষণ বিষয়টিকে ব্যর্থ করবে, সফল নয়। এটা না বুর্জোয়াদের এজেন্টদের উতপাটিত করতে পারে যারা পার্টির ভেতর তাদের পথ করে নিয়েছে, না এটা আন্দোলনে অবশিষ্ট বিষ-কে নাশ করতে পারে একটা আন্দোলনের মাধ্যমে। যে আন্দোলন ব্যাপক জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য পরিচালিত, এবং যা তাদেরকে সক্ষম ক’রে তুলে যাতে সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে, কোন্টা zhang4মার্কসবাদ-লেনিনবাদ আর কোনটা সংশোধনবাদ, কোনটা সঠিক লাইন (আর কোনটা বেঠিক লাইন), কোন্টা সমাজতন্ত্র আর কোনটা পুঁজিবাদ তার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বিপরীতে এটা কেবল নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিপ্লবী ক্যাডার ও জনগণের সক্রিয়তাকে ব্যাহত করতে পারে। ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করা, আর প্রতিবিপ্লবীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ; এবং এটা হচ্ছে সেই চেক পয়েন্ট যার মধ্য দিয়ে সবাইকে অবশ্যই পার হতে হবে। কিন্তু বর্শাফলক প্রাথমিকভাবে নিবদ্ধ মুষ্টিমেয়’র ওপর। সংখ্যাগরিষ্ঠ কেডারদের ব্যাপারে [তাদের] প্রতি আমাদের প্রথমে নজর দিতে হবে এবং [তাদের] সাহায্য করতে হবে। জনগণের মতাদর্শের সমস্যা মোকাবেলা শিক্ষা ছাড়া অন্য কিছূ হতে পারে না। চিন্তার অতিবাম প্রবণতা এখন সমাজে জন্ম নিচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে নৈরাজ্যবাদের দুষিত বাতাস হচ্ছে শ্রেণীসংগ্রামে একটা নয়া প্রবণতা। একদিকে, বিভিন্ন স্তরের পার্টি সংগঠনকে অবশ্যই একে উল্টানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে, আর পাশাপাশি অন্যদিকে এই প্রতিকূল হাওয়া অস্তিত্বমান বলে বর্তমান সাধারণ গতিমুখকে কখনোই অস্বীকার করা যাবে না।

প্রতিবিপ্লবীদের দমনের পদ্ধতি সম্পর্কে

কিছু প্রদেশ ও পৌরসভায় কিছু সমস্যা জন্ম নিয়েছে। পিকিং এক ঝাঁক প্রতিবিপ্লবীদের দমন করেছে এবং তাদের ধ্বংসাত্মক ততপরতা ও ঝামেলাকে ধূলিস্যাত করেছে। চেংচৌ, চাংশা, উহান ও নানকিং প্রভৃতির মতো এলাকায় যেখানে প্রতিবিপ্লবী ধ্বংসাত্মক ততপরতা জন্ম নিয়েছে সেখানে পরিস্থিতিকে সামলাতে দৃঢ় ও নির্ধারক এ্যাকশন গ্রহণ হচ্ছে সঠিক, যতক্ষণ কর্মনীতিকে ভালভাবে আঁকড়ে থাকার প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়। এটা প্রতিবিপ্লবীদের দমনকে বর্ধিত করবেনা, কারণ, কর্মনীতি সঠিকভাবে পরিচালিত না হতে পারে, যা যারা শত্রু নয় তাদেরকে শত্রু শিবিরে ঠেলে দেয়- এই ভয়ে (দমন করে না- অনু)। কিন্তু, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার জোরে প্রতিবিপ্লবীদের দমনে খেয়ালখুশীমত জনগণকে গ্রেফতার ও টেনেহিঁচড়ে আনা যেখানে পিকিংয়ের মতো প্রতিবিপ্লবী ঘটনা ঘটেনি, সেরকম জায়গায় সচেতনভাবে আর অসেচতনভাবে যেভাবেই করা হোকনা কেন “জনগণকে গ্রেফতার করা” ভুল এবং ভাল জিনিস নয়। এমন কাজ কেবল তখনই করা যায় যখন আর কোন বিকল্প নেই। জনগণের জন্য বিভিন্ন মত নিয়ে বিতর্ক করা, এমনকি কিছূ মাত্রাতিরিক্ত এ্যাকশন নেওয়া সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এটা প্রতিবিপ্লবী ধ্বংসাত্মক ততপরতা থেকে সমগ্রভাবে ভিন্ন একটা জিনিস। জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সমাধানে সর্বহারা একনায়কত্বের হাতিয়ারকে ব্যবহারে যখন অযথার্থভাবে পরিচালনা করা হয় তা আমাদের ও শত্রুর মধ্যকার দ্বন্দ্বে চালিত করতে পারে আর তা কেবল শত্রুদের পক্ষেই যায়, আমাদের নয়। এটা অনস্বীকার্য যে কিছূ স্বতন্ত্র এলাকায় পার্টির মধ্যকার পুঁজিবাদের পথগামীরা সেখানে নেতৃত্বকারী ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে; এই মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গ ভীত যে জনগণ বিপ্লব করতে জেগে উঠতে পারে এবং বিপ্লবের হাওয়া তাদের “স্বর্গীয় পর্বত ও জলপাই নির্মিত তাদের তাঁবুগুলোকে” ও এই ভ্যাম্পায়ারদের উঁচু দালানগুলোকে উড়িয়ে দিতে পারে। তাই যখন জনগণ জেগে উঠে তারা আতংকিত হয়। শুরুতে তারা গণআন্দোলনকে বাধা দিতে সকল ধরনের ষড়যন্ত্রকে ব্যবহার করে, তারপর ভুতুড়ে হাওয়া প্রবাহিত করে, অন্ধকারে হন্তারক তীর নিক্ষেপ করে, সঠিক ও বেঠিকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং সাদা ও কালোকে উল্টে দেয়। যখন তারা আর কোনভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারেনা, তারা স্রেফ তাদের লুক্কায়িত চেহারাকে উন্মোচন করে এবং সংগ্রামের বর্শাফলক প্রকৃত বিপ্লবীদের দিকে তাক করে, এমনকি [সর্বহারা] একনায়কত্বের হাতিয়ারগুলোকে এবং একনায়কত্বের পদক্ষেপগুলোকে ব্যবহারে যায়, সঠিককে দমন করতে ও ভুলকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে। কিন্তু এধরনের কর্মপন্থা তাদেরই আকাংখার বিপরীত কিছু সৃষ্টি করেছে কারণ তা প্রকৃত বিপ্লবীদের ভীত করেনি, বরং বিপরীতে তাদের নিজেদেরই উন্মোচিত করেছে। বিপ্লবের স্বার্থে এধরনের আগেভাগের উন্মোচন দেরীতে উন্মোচনের চেয়ে ভাল। বর্তমানে, কিছু এলাকার কিছু অভিযোগকারী গ্রুপ পিকিং-এ এসেছে কেন্দ্রের কাছে সরাসরি আঞ্চলিক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটাতে, তাদের কেউ কেউ চিঠি অথবা অন্যভাবে এলাকার পরিস্থিতি কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট করেছে। এই পরিস্থিতিসমূহ কেন্দ্র সামলাবে একে একে। কমরেড হুয়া কুয়ো-ফেং, কমরেড চিয়াং চিং ও কেন্দ্রের অন্য দায়িত্বশীল কমরেডগণ বারংবার উক্ত কমরেডদের প্রতি, বিবিধ প্রদেশ ও পৌরসভা থেকে আগত ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রতি, এইসাথে মিলিশিয়া, গণপুলিশ ও গ্যারিসন যোদ্ধা [সৈনিক]-দের প্রতিনিধি- যারা এপ্রিল ৫-এর প্রতিবিপ্লবী ঘটনা দমনে অংশ নিয়েছেন- তাদের প্রতি বলেছেন, সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করা হবে, প্রদেশ অনুযায়ী ও প্রশাসনিক স্তর অনুসারে, কেন্দ্র থেকে শুরু ক’রে স্থানীয় এলাকা পর্যন্ত, এবং পার্টির অভ্যন্তর থেকে শুরু ক’রে বাইরে এবং আন্দোলনকে অতি অবশই চালাতে হবে, যে বুর্জোয়া বৈরী ব্যক্তিরা যারা পার্টির ভেতর তাদের পথ ক’রে নিয়েছে তাদের অতি অবশ্যই ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে, স্থানীয় এলাকার সমস্যাকে অবশ্যই সমাধান করতে হবে; এটা আমাদের সিদ্ধান্ত, সভার সকল দায়িত্বশীল কমরেডদের ও সেইসাথে দেশব্যাপী সমগ্র পার্টি, সমগ্র সৈন্যবাহিনী ও জনগণেরও এটাই ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

এখানে, আমরা আশাও করি যে, যে সকল কমরেড ভুল করেছেন- অসচেতনভাবে ভ্রান্ত লাইন ও কর্মনীতি প্রয়োগের কারণে, লাইনের যথেষ্ট উঁচু সচেতনতা না থাকায়, তেঙ শিয়াও-পিং বিবৃত জিনিসগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করায়- তারা সচেতনভাবে নিজেদের সংশোধিত করতে সক্ষম হবেন এবং ভুল দিকে একগুঁয়েভাবে লেগে থাকবেন না। যে কমরেডরা তাদের ভুল শোধরাতে চান, তারা যেই হোননা কেন, পার্টি ও জনগণ এখনো তাদের স্বাগত জানাবে। যারা একগুয়েভাবে লেগে থাকবে তাদের জন্য কোনই ভাল ফল হবেনা।

এখনকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয়

নীচে আমি এখনকার জন্য কিছূ গুরুত্বপূর্ণ করণীয় সম্পর্কে আপনাদের কাছে বলতে যাচ্ছি:

১)     ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করার সংগ্রামে বিজয়ের নিশ্চয়তার চাবিকাঠি হচ্ছে পার্টির কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব। আমাদের পার্টি একটা মহান, গৌরবোজ্জ্বল ও সঠিক পার্টি, সারাদেশের সকল জাতিসত্ত্বার জনগণের দ্বারা অন্তরে লালন করা ও সমর্থিত একটি পার্টি। এমন একটা মহান পার্টি কখনোই বুর্জোয়া উপাদানের অস্তিত্ব দ্বারা নিজের মহত্বকে বিপন্ন করতে পারেনা। বিপরীতে, আমাদের পার্টি হচ্ছে সেই পার্টি যে আত্মসমালোচনা করার মতো যথেষ্ট সাহসী, দ্বন্দ্বসমূহকে উন্মোচনে যথেষ্ট সাহসী, আর ব্যাপক জনগণের প্রতি কোন অপরাধী বিবেক তার নেই। তাই বিবিধ স্তরে পার্টি সংগঠনকে অবশ্যই বারংবার জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে এটা তুলে ধরে যে, স্বতন্ত্র ব্যক্তিবর্গ ও পার্টি অভ্যন্তরে উদ্ভূত মুষ্টিমেয় বুর্জোয়া উপাদানসমূহ কর্তৃক কৃত ভুলকে কখনোই খোদ পার্টির সাথে এক করা চলবেনা, এবং কতিপয়ের সমস্যা উদ্ধৃত ক’রে সমগ্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে পার্টির নেতৃত্বকারী ভূমিকাকে নেতিকরণ করা তাদের উচিত নয়। সর্বদাই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আদর্শের কেন্দ্রশক্তি হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং আমাদের আদর্শকে পরিচালনাকারী তত্ত্বগত ভিত্তি হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাওসেতুঙ চিন্তাধারা। পার্টির নেতৃত্বকে দুর্বল করার চেষ্টা কখনোই করা যাবেনা; পার্টির নেতৃত্বকে দুর্বল করা, প্রতিরোধ করা, এবং তার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতি কাজ করা হচ্ছে প্রতিবিপ্লবী কাজ। একজন নেতৃত্বকারী ক্যাডার সদস্য হিসেবে সবাইকে অবশ্যই “ক্ষমতাকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে, ক্ষমতাকে ভালভাবে কাজে লাগাতে হবে”, এবং কেন্দ্রীভূত নেতৃত্বকে অটলভাবে চালিয়ে যেতে হবে। পার্টি-কমিটিসমূহে “ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা, ঐক্যবদ্ধ কমাণ্ড, ঐক্যবদ্ধ কর্মনীতি, ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্য ও ঐক্যবদ্ধ কর্মততপরতা” অর্জন হচ্ছে নির্দেশমূলক। প্রবীণ, মধ্যবয়সী ও নবীন ক্যাডারদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বড় ব্যাপারসমূহে নীতিতে জোর দেয়া, ক্ষুদ্র ব্যাপারসমূহে সাধারণ ঐকমত্য গঠন করা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিস্তারিত এড়ানো, পর্বত চুড়ায় দুর্গ গঠন না করা এবং উপদলবাদ চর্চা না করা- এসবকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।

২)     সাংগঠনিক বিনির্মাণ ও মতাদর্শিক বিনির্মাণকে শক্তিশালী করুন। সর্বহারা একনায়কত্ব সম্পর্কে চেয়ারম্যান মাওয়ের তত্ত্ব অধ্যয়ন করার মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান মাওয়ের বিপ্লবী লাইনের সচেতনতা বৃদ্ধি করুন; শ্রেণীসংগ্রামকে চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করে সন্তোষজনকভাবে তদন্ত ও গবেষণাকর্ম এবং আন্দোলনগুলোতে গণসমাবেশিতকরণকে কার্যকর করুন; পার্টি-গঠনকে ভালভাবে অব্যাহত রাখুন, আন্দোলনের পূবালী বাতাসের শক্তির উপর নির্ভর ক’রে সেই সব বৈরী উপাদানসমূহকে টেনে বের ক’রে আনুন যারা পার্টির ভেতর তাদের পথ ক’রে নিয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করুন এবং পার্টি থেকে বহিষ্কার করুন। এই মহান সঠিক ও ভুলের প্রশ্নে কোনভাবেই নরম হওয়া যাবেনা ও “বদান্য শাসন” দেখানো যাবেনা। মুষ্টিমেয় কতিপয় খারাপ লোক যারা পার্টির ভেতর তাদের পথ ক’রে নিয়েছে তাদের যে কেবল অবশ্যই টেনে বের ক’রে আনতে হবে তাই নয়, বরং সংগ্রামে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে, এবং সমগ্রত রাজনৈতিকভাবে, মতাদর্শিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও অন্য সকল ক্ষেত্রে তাদের দেউলিয়া ক’রে দিতে হবে। কিন্তু এই বিষয়গুলিকে তাড়াহুড়া ক’রে সামলানো যাবেনা; তার আগে নির্দেশনা চান। পার্টি শুদ্ধিকরণে, পার্টি বিনির্মাণও করতে হবে এবং চাষাবাদ ও অগ্রসর শ্রমিক-কৃষক-সৈনিক জনগণ যারা আন্দোলন থেকে উদ্ভূত তাদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, তাদেরকে পার্টির ভেতর বলিষ্ঠভাবে অঙ্গীভূত করতে হবে যখন তাদের যথেষ্ট শর্তাবলী রয়েছে এবং নতুন রক্তের বিকাশ ও উতপাদনে মনোযোগ দিতে হবে ও বিভিন্ন স্তরে পার্টির নেতৃত্ব শাখায় তাদেরকে নিতে হবে। ১ জুলাই হচ্ছে পার্টির জন্ম দিন। এই তারিখে, আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া ও বহুবিধ যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে লক্ষ কোটি অগ্রসর উপাদান পার্টিতে যোগদান করেছে। এটা একটা আনন্দদায়ক ঘটনা, আমাদের পার্টির উন্নতির একটি নির্দেশক এবং তেঙ শিয়াও-পিং-এর প্রতি সর্বোতকৃষ্ট প্রতি আঘাত। সাংগঠনিক বিনির্মাণ ভালভাবে করার জন্য আমাদেরকে অতি অবশ্যই প্রথমে মতাদর্শিক বিনির্মাণকে ভালভাবে আত্মস্থ করতে হবে। পার্টি কমিটিসমূহের মতাদর্শিক বিনির্মাণের এই পথ থেকে বিচ্যুত হলে পার্টি সংগঠনসমূহ সঠিক গতিমুখ হারিয়ে ফেলবে, বিরাট পরিকল্পনাসমূহ হারিয়ে ফেলবে ও বিশৃংখল হয়ে যাবে, এমনকি পার্টি সংগঠনসমূহের ঐক্য ভেঙে পড়বে যা এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যে “সবাই তার কথা বলতে পারে”- এ জায়গাগুলোকে পরিণত করবে এমন জায়গায় যেখানে “আমার কথাই চূড়ান্ত।” তখন সংগঠনসমূহ হয়ে পড়ে শৃংখলাহীন এবং আন্দোলনে এক ইঞ্চিও সামনে এগোতে পারেনা।

৩)    বিরাট বিপ্লবী সমালোচনার বিকাশ। বিরাট সমালোচনাকে এমনভাবে পরিণত করা যায়না যাতে যত বেশী সমালোচনা হবে তত বিশৃংখলা হবে, উদ্দেশ্য ও গতিমুখহীনভাবে ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যহীনভাবে তীর ছোঁড়া। সমালোচনা হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এই ধরনের সমালোচনার হাড়গোড় ও পেশী থাকতে হবে; যুক্তি প্রদানে এবং ভুলকে উন্মোচন করতে  একে সক্ষম হতে হবে, যাতে জনগণ সমালোচনা থেকে শিখতে পারে এবং অতঃপর পার্থক্য করতে সক্ষম হয় যে এই জিনিসটা সঠিক, একে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে এবং ঐ জিনিসটা ভ্রান্ত ও তাকে বর্জন করতে হবে। সমালোচনাকে তত্ত্বগত বিচারেই শুধূ ভাল ব্যাখ্যেয় হতে হবে তাই নয়, অন্তঃসারেও। সমালোচনার জন্য সমালোচনা থেকে অতি অবশ্যই বিরত থাকতে হবে যা খাঁটি একাডেমিক সমালোচনার খারাপ রাস্তার রাজনৈতিক সংগ্রামে চালিত করতে পারে। একইসাথে, এই ধরনের সমালোচনা থেকেও অবশ্যই বিরত থাকতে হবে যা সরলীকৃত ও অমার্জিত গালিগালাজ। লু শুনের এই কথাটি অবশ্যই মনে রাখা দরকার, “ঝগড়া মানে লড়াই নয়।” এখন আমি আপনাদের বিবেচনার জন্য অল্প কিছু মত পেশ করতে চাই।

ক) এখন থেকে, সমালোচনাকে হতে হবে অন্তর্ভেদী উন্মোচন এবং কিছু প্রধান প্রশ্নে গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্যের প্রতি নিখুঁতভাবে নিশানা ক’রে, সঠিক হাতিয়ার বের করুন এবং তাদেরকে একে একে ধারাবাহিকভাবে সমালোচনা করুন। প্রতিটি আক্রমণকে যেখানে তা সর্বাধিক আঘাত করে সেখানে করতে হবে। সমালোচনার সময়, ক্যাডারগণ ও পার্টি সদস্যগণ অবশ্যই নেতৃত্ব দেবেন। বিরাট বিপ্লবী সমালোচনায় নেতৃস্থানীয় ক্যাডারদের অতি অবশ্যই অধ্যয়ন, সমালোচনা এবং জনগণসহ নিজ ইউনিটের প্রকৃত পরিস্থিতির মধ্যে মিলন ঘটানোর ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ী হতে হবে। তাদের নিজেদেরকে অবশ্যই চিত্রপটে স্থাপন করতে হবে, নিজেদের বিশ্বদৃষ্টিকোণের সচেতন পুনর্গঠনবিহীন স্রেফ তেঙকে সমালোচনা নয়। এমন ক্যাডার হবেননা কোয়াঙতুঙ-এর হুয়াং সানতুঙ উতপাদন টিমের গরীব কৃষকরা যেমনটা বর্ণনা করেছেন, যারা “অন্য কাউকে বিপ্লবীকরণ করার সময় দ্রুত এগোয়, কিন্তু তারা নিজেরা বিপ্লবীকরণ হবার সময় পশ্চাদপসরণের বাজনা বাজায়”, এবং যারা অধিক সমালোচনার পর অধিক হতভম্ভ হয়। এরকমভাবে কাজ করা শুধু যে বিরাট সমালোচনাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে তাই নয়, একজনকে অক্ষম ক’রে তোলে জনগণকে ভালভাবে নেতৃত্ব দিতে। আমাদেরকে অতি অবশ্যই তিন সংযুক্তকরণ অর্জন করতে হবে। ১) চেয়ারম্যান মাওয়ের সর্বহারা একনায়কত্ব সংক্রান্ত তত্ত্বের অধ্যয়ন ও চেয়ারম্যান মাওয়ের বিপ্লবী লাইনের প্রজ্ঞাবান প্রয়োগ-এর সাথে বিরাট বিপ্লবী সমালোচনার বিকাশের একত্রীকরণ; এটা হচ্ছে গতিমুখের প্রশ্ন। ২) ইউনিটের শ্রেণীসংগ্রাম এবং তেঙকে সমালোচনা করা ও ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করা এবং সেই সাথে শ্রেণী স্তরসমূহের পরিষ্কারকরণ- এর সাথে বিরাট বিপ্লবী সমালোচনার সংযুক্তকরণ। ৩) সংশোধনবাদকে বিরোধিতা করা ও সংশোধনবাদকে প্রতিরোধ করা এবং সেই সাথে বুর্জোয়া অধিকারের নিয়ন্ত্রণ, পুঁজিবাদী প্রবণতা, সামন্তবাদী মানসিকতা ও অন্য সকল অ-সর্বহারা চিন্তাধারার সমালোচনার সাথে বিরাট বিপ্লবী সমালোচনার সংযুক্তকরণ। পুঁজিবাদের বন্যা বইবার সুযোগ দিয়ে কেউ কখনো বিরাট বিপ্লবী সমালোচনা গড়ে তুলতে পারবেনা। অন্যথায়, তেঙকে সমালোচনা করা যখন শেষ হবে, ইউনিটটি তখন পুরোপুরি পঁচে যাবে।

খ) বহু বড়-হরফের পোস্টার ও বেশ কিছূ সমালোচনা প্রবন্ধ রয়েছে। কিন্তু উচ্চতর গুণের (এসব জিনিস) তুলনামূলক কমই। আমরা যা দেখি তাহচ্ছে, হয় তা মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আনুশাসনিক রচনাসমূহের থেকে উদ্ধৃতিতে ঠাসা লম্বা লেখা, অথবা ছোট ও ফাঁকা নিবন্ধ যাতে অল্পকিছু বাক্য রয়েছে। পরিমাণ খোঁজে, গুণ নয়, এমন ইউনিট নেহাত কম নয়। কিন্তু শত শত রাউণ্ড ফাঁকা কার্তুজের চেয়ে একটি জীবন্ত বুলেট সবসময়ই ভাল। এই সময়ে বিরাট বিপ্লবী সমালোচনার বিকাশ কোন পণ্ডিতের গবেষণা-পত্রের উপর বিতর্ক নয় যে কিনা প্রতিযোগিতামূলকভাবে দেখছে কে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রচনাসমূহ থেকে বেশী উদ্ধৃতি নকল করেছে, অথবা তা মুখস্থ করেছে; না এটা কোন বাস্কেটবল খেলা যাতে দেখতে হবে কে বেশী গোল করেছে। এটা একটা শ্রেণীসংগ্রাম, একটা বিপ্লব, যাকে অবশ্যই প্রজ্ঞাপূর্ণভাবে আত্মস্থ করতে হবে, এবং যাকে তালগোল পাকানো চলবে না। পিপল্স ডেইলি “তত্ত্বগত যুদ্ধফ্রন্টে নয়া সৈনিকবৃন্দ” শিরোনামে একটা প্রবন্ধ ছেপেছে, যাতে কতিপয় বাক্য চমতকার:“বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ পুনঃধ্বনিত হয়ে আমাকে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে যেতে আহ্বান করছে”, “বাঘকে হত্যা করার জন্য বাঘের গুহার গভীরে ঢোকা”, “হাতিয়ারগুলোকে অবশ্যই ভাল হতে হবে যাতে তারা বিপজ্জ্বনক স্থানগুলোতে আঘাত হানতে পারে”; “অব্যাহতভাবে বিপ্লবীকরণ কর, এবং দীর্ঘস্থায়ী অপারেশনসমূহে লেগে থাক।” এগুলো ভালভাবে বলা হয়েছে এবং সমস্যাসমূহকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে। আপনাদের সবাইকে আরো বেশী বেশী সংবাদপত্র পড়তে হবে যখন অতিরিক্ত সময় পান। সংবাদপত্রসমূহ শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের লেখা বহু সমালোচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে; এবং সেগুলো প্রতিনিধিত্বের গুরুত্বসম্পন্ন। সেগুলো দীর্ঘ না হতে পারে, ছোটই, কিন্তু কয়েক দশক ধরে বাহুতে বই চেপে রাখা বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে সেগুলো শ্রেষ্ঠতর। সভাগৃহে উপস্থিত কমরেডগণ, আপনারা শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের দ্বারা রচিত ঐসব নিবন্ধের মতো লিখতে সক্ষম না হতে পারেন। যে কারণে প্রবন্ধগুলো ভাল তাহচ্ছে, সেগুলো সাধারণ ভাষায় লেখা হয়েছে, যা গভীর অর্থ বহন করে এবং বাস্তবতার সাথে বিজড়িত। সেগুলো অগভীর ও ফাঁকা নয়। সেগুলো আসলেই এরকম কিনা তা দেখার জন্য কমরেডগণ, আপনারা তার কিছূ অধ্যয়ন করতে পারেন।

এ প্রশ্নে কথা বলার সময় আমি যুক্ত করতে চাই যে, প্রতিনিধিত্বের মূল্য ধারণ করে এমন কিছু সমালোচনামূলক নিবন্ধ এবং স্থানীয় শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের অগ্রসর উদাহারণসমূহকে প্রতিফলিত করে এমন নিবন্ধ পিপল্স ডেইলী’র জরুরীভাবে প্রয়োজন, যা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসবে। সভাগৃহের কমরেডগণ, আপনাদের একে পার্টি প্রদত্ত একটি কর্তব্য হিসেবে নেওয়া উচিত এবং পার্টির সংবাদপত্রকে ভালভাবে চালাতে যৌথভাবে সহযোগিতা দেওয়া উচিত।

৪)     কর্মনীতিসমূহের মূর্ত বাস্তবায়ন ও প্রতিবিপ্লবীদের খোঁজ করার বিকাশ। “কর্মনীতি ও রণনীতি হচ্ছে পার্টির জীবন সঞ্চালক।” কর্মনীতিসমূহ ভুলভাবে বাস্তবায়ন করা হলে অথবা বিচ্যুতিপূর্ণভাবে করা হলে পার্টির উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কর্মনীতসমূহের প্রয়োগে সাফল্য অথবা ব্যর্থতা নির্ভর করে পার্টি নেতৃত্বের ছাড়বিহীন কর্মনীতি প্রয়োগের ওপর। বহুক্ষেত্রে, পর্টির কর্মনীতিসমূহ কেন্দ্র থেকে গিয়ে নিম্নতর স্তরে সম্পাদিত হয়েছে। মধ্যবর্তী স্তর কিছু ছাড় দেয়। যখন তা স্থানীয় এলাকায় পৌঁছায় তখন তা মূল(কর্মনীতি)-এর চেয়ে ভিন্ন কিছু হয়ে যায়। অবশ্যই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ক্যাডারদের কর্মনীতির অসম্পূর্ণ উপলব্ধি থেকে কর্মনীতি প্রয়োগে বিচ্যুতি ঘটতে পারে; এটা এমন একটা কিছূ যা অসচেতনভাবে ঘটে। কিন্তু সেটা সচেতন অথবা অসচেতন যেভাবেই ঘটুকনা কেন, ফল হচ্ছে এই যে, আমরা জনগণকে হারাই, যেখানে অবশ্যই, শত্রুও পালিয়ে যায়। কেডাররা, যারা তাদের আত্মগত সচেতনতায় পার্টিকে ভালবাসেন, চেয়ারম্যান মাওকে ভালবাসেন তারা সংখ্যায় কম নন; তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেন এবং সর্বদাই কর্মনীতিসমূহকে ভালভাবে প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক। কিন্ত অপর্যাপ্ত অধ্যয়ন, খেয়ালী কাজ করার অভ্যাস এবং জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা আহ্বান করতে ও উচ্চস্তরে খবরাদি পৌঁছাতে না চাওয়ার কারণে তারা প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় কর্মনীতিসমূহকে বিকৃত করেন, জনগণের বিশ্বাস নস্ট করেন, এবং বিপ্লবের ক্ষতি ডেকে আনেন। তারপর তারা আর তাদের পদে থাকতে পারেননা এবং হয় তাদের বরখাস্ত করা হয়, অথবা বদলী করা হয়। তারা কাকে দোষ দেবেন? তাই, চেয়ারম্যান মাও কর্মনীতির গুরুত্বকে উচ্চ স্তরের পার্টির জীবন সঞ্চালকে উন্নীত করেন, যাতে কমরেডগণ, আপনারা এতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেন।

একইসাথে, যখন তেঙ শিয়াও-পিং-কে সমালোচনা ও সঠিক রায়কে বদলানোর ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করাকে গভীরতর করা হয়েছে, তখন সারাদেশে প্রতিবিপ্লবীদের খুঁজে বের করার উচ্চ জোয়ারও প্রবাহিত করা হয়েছে। এই উচ্চ জোয়ারে, এক ও একমাত্র কর্মনীতি হচ্ছে তদন্ত ও গবেষণার ওপর জোর প্রদান। সকল ব্যাপারে, প্রমাণ হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এপ্রিল ৫-এর প্রতিবিপ্লবী ঘটনাকে মোকাবেলায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উদ্যোগ হাতে রাখার অবস্থান আমরা গ্রহণ করেছি। যে জিনিসটার ওপর আমরা নির্ভর করেছিলাম তাহচ্ছে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করার কর্মনীতি। প্রতিবিপ্লবীরা আশা করে যে, আমরা গুলিবর্ষণ শুরু করবো। জনগণের সেন্টিমেন্ট উত্তেজিত করার জন্য তারা শহীদ হতে চায়। আমরা আমাদের আচরণ দ্বারা তাদের সুবিধা করে দিতে পারি না। অনুশীলন প্রমাণ করেছে যে, এই মুষ্টিমেয় প্রতিবিপ্লবীরা জনগণকে ভয় পায়, আর সমালোচনাকে ভয় পায়। বিভিন্ন এলাকায় সূচিত এই বিরাট অনুসন্ধানে সেনাদল ও গণ নিরাপত্তা সংস্থাসমূহের উচিত নয় বিবেচনাহীনভাবে গুলিবর্ষণ করা, যদিনা তা পরমভাবে প্রয়োজনীয় ও জনগণের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হয়। যেখানে চেয়ারম্যান থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন যে, তাদের উচিত নয় শহীদ সৃষ্টি করা, সেখানে আমরা অন্য কিছু করতে পারিনা এবং শহীদ সৃষ্টি করতে পারি না। অবশ্যই, এটা [গুলিবর্ষণ করা] যখন প্রয়োজন, অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু নির্দেশাবলীকে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, যারা মারা যায় তারা প্রায়শই হচ্ছেন জনগণ। প্রকৃত প্রতিবিপ্লবীরা বুলেট থামানোর জন্য কখনোই তাদের বুক এগিয়ে দেবে না। নীতিগতভাবে প্রয়োজনীয় কর্মনীতি হচ্ছে, “কাউকে হত্যা করা যাবেনা, এবং অধিকাংশকে গ্রেফতার করা যাবে না।” কর্মনীতির বিস্তৃত লক্ষ্য/কর্মপরিধি ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কেন্দ্র বিবিধ স্তরের সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী ও দলিলসমূহ সরবরাহ করবে, এবং এর সাথে যুক্তভাবে, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কমরেড ওয়াং তুঙ-শিং আপনাদের প্রতি অধিক মূর্ত ব্যাখ্যা দিতে যাচ্ছেন। বর্তমানে যা অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে তা হচ্ছে, “ডানের চেয়ে বরং বাম”-এর বামপন্থী প্রবণতা এবং “অদৃশ্যতার মর্মবস্তু”র ভ্রান্ত ডানপন্থী চিন্তাধারা। [প্রতিবিপ্লবীদের] খুঁজে বের করার প্রক্রিয়ায় সকল জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন; গণনিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর পরম নির্ভরতা নয়। কিন্তু নেতৃত্বের ও বিশেষায়িত সংস্থাসমূহের সাথে সমন্বয় ছাড়া স্রেফ জনগণের একনায়কত্বের ওপর গুরুত্বারোপ কোন কাজে দেবেনা। এর প্রয়োজন একের ভেতর তিন মিশ্রণ। দৃঢ়তা, নির্ভুলতা ও নির্মমতা গুরুত্বপূর্ণ। শত্রুর ওপর কার্যকরভাবে আঘাত হানার জন্য অবশ্যই তদন্ত ও গবেষণার দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার; স্বীকারোক্তির বিকৃতকরণের বিরোধিতা করা দরকার, সশস্ত্র সংগ্রাম পাকিয়ে তোলা নয়, [সমালোচিতদের] বের হবার পথ দেওয়া, এবং রণনীতিসমূহের প্রতি বিবেচনা দেওয়া দরকার।

এই সময় পিকিং অত্যধিক লোককে গ্রেফতার করেছে। শুরুতে কেউ গুলিবর্ষণ করেনি এবং কর্মনীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছিল; পরে ঘটনা আকাংখিতর চেয়ে কম ছিল। শুধু পিকিং-এই ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রতিটি ইউনিট গ্রেফতারে নিয়োজিত ছিল এবং এই অথবা ঐ লোককে বের ক’রে আনায়। দু’জনকে জীবন দিতে হয়েছে, কিছু মানুষের প্রতি ভুল করা হয়েছে। ভাল বিষয়টা ছিল, কেন্দ্র কর্তৃক ব্যাখ্যা দেয়ার পর এইসব পরিস্থিতি দ্রুত শুধরে নেয়া হলো। একে অবশ্যই একটা শিক্ষা হিসেবে নিতে হবে।

“লোকজনের বিষয়কে পরিচালনার ব্যাপারে অবশ্যই এক বিচক্ষণ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।” প্রতিবিপ্লবীদের খুঁজে বের করার বর্তমান আন্দোলনে ইউনিটসমূহকে ভাল করতে হবে। যাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় এমন সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেই শুধু মুষ্টিমেয় শ্রেণীশত্রুর উপর কার্যকর আঘাত হানা যায়; আর মুষ্টিমেয় শ্রেণীশত্রুর ওপর কার্যকর আঘাতই কেবল ব্যাপক জনগণকে সর্বোতকৃষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারে।

৫)     বিপ্লবকে আঁকড়ে ধরো, উতপাদনকে আঁকড়ে ধরো, কাজ বাড়াও, পূর্বপ্রস্তুতি বাড়াও। তেঙকে সমালোচনা ও ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে প্রতিহত করার সংগ্রামে সারাদেশব্যাপী প্রতিটি যুদ্ধফ্রন্টে সমাজতান্ত্রিক সজীবতায় পূর্ণ সতেজ দৃশ্য বিদ্যমান। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কৃষক-সৈনিক ছাত্রবৃন্দ এগিয়ে চলেছে সমাজের দিকে, গ্রামাঞ্চলের দিকে শ্রেণীসংগ্রামে অংশ নিতে, তদন্ত ও গবেষণা চালাতে এবং বই থেকে প্রাপ্ত তাদের শিক্ষাকে ব্যবহারিক কাজের সাথে যুক্ত করতে। দলের পর দল কলেজ গ্রাজুয়েটরা সীমান্ত এলাকা, গ্রামাঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের দিকে ছুটে গেছে চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক বিবৃত করে চলা শ্রমিক-কৃষক জনগণের সাথে যুক্ত হওয়ার পথ গ্রহণে। ৭ মে ক্যাডার স্কুল ও ২১ জুলাই শ্রমিক কলেজগুলো প্রস্ফুটিত হয়েছে সারাদেশজুড়ে বৃষ্টির পর বসন্তের বাঁশঝাড় যেমন ক’রে মাটি ফুঁড়ে বের হয় তেমন। ফলে শিল্প যুদ্ধ ফ্রন্টেও আমরা বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। সুচওয়ানের পেট্রোলিয়াম নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর ৭০০২ ড্রিলিং টিমটির শ্রমিকেরা ৬০১১ মিটার গভীরতাসম্পন্ন আমাদের দেশের প্রথম পরম-গভীর কূপ খনন করেছেন। চীনে তৈরী ৩০০,০০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিগুণ পানি-শীতলীকরণ টারবাইনসম্পন্ন জেনারেটর সিস্টেম উতপাদন শুরু করেছে। জুনের শুরুতে, বিপুল সংখ্যক শিল্প ও খনিজ সংস্থা ১৯৭৬-এর প্রথমার্ধের জন্য উতপাদন লক্ষ্যমাত্রা আগেই পূর্ণ করেছে। গত দুইদিনে একের পর এক আনন্দদায়ক ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি যুদ্ধফ্রন্ট থেকে অব্যাহতভাবে বিজয় রিপোর্ট আসছে। কৃষি যুদ্ধ ফ্রন্টে পরিস্থিতি চমতকার: তাচাই-এর থেকে শিক্ষা নেওয়া ও সিয়াংকে ধরে ফেলার উদ্দীপনা জাগানো সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার তরঙ্গ হচ্ছে কেবল শুরু। সারা দেশে দুই-তৃতীয়াংশ কমিউন এবং উতপাদন ব্রিগেডগুলোর অর্ধেকের বিদ্যুত রয়েছে। দশ বছরের জন্য সারাদেশের গ্রামাঞ্চল ছোট বড় ৫৬,০০০-এর বেশী হাইড্রো পাওয়ার স্টেশন তৈরী করেছে। এ বছরের বসন্তকালীন চারা রোপণ ভাল। তৃতীয় ঋতুতে গম ও ধান প্রভৃতির বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। এক কথায়: “পরিস্থিতি চমতকার।”এই চমতকার পরিস্থিতি সারাদেশের জনগণের জন্য শুধু আত্মিক অনুপ্রেরণা আনে তা নয়, বরং তেঙ শিয়াও-পিং-এর “তিন নির্দেশনাকে চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার” এবং “চার আধুনিকীকরণ”-এর সংশোধনবাদী লাইনের সর্বাধিক শক্তিমত্ত খণ্ডন হিসেবে সেবা করতে পারে। এটা হচ্ছে চেয়ারম্যান মাওয়ের বিপ্লবী লাইনের এক মহান বিজয়, এবং তেঙকে সমালোচনা ও ডান বিচ্যুতিপন্থী হাওয়াকে দাবানোর আন্দোলনেরও একটা বিরাট বিজয়।

কিন্তু এ চমতকার পরিস্থিতিতেও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এসমস্যাগুলোকে অবশ্যই সমাধান করতে হবে, অবহেলা করা যাবেনা। নৈরাজ্যবাদের উদ্ভব ও বৃদ্ধি শ্রম দক্ষতা কমিয়ে ফেলেছে এবং উতপাদনকে পূর্ণ ক্ষমতার নীচে নামিয়ে এনেছে, যা এ বছরের শিল্প প্রজেক্ট মিশন সম্পাদনে ব্যর্থতা ডেকে এনেছে। নৈরাজ্যবাদ মানে একটা সরকার বিলোপ করা নয়। সে যা চায় না তা হলো একটা সর্বহারা সরকার, বরং সে চায় বুর্জোয়া স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের একটা সরকার, তাদের নিজ ক্ষুদ্র চক্রের একটা সরকার। চিন্তাধারার এই প্রবণতাকে অবশ্যই সঠিকভাবে চালিত করতে হবে। অসর্বহারা চিন্তাধারাকে সর্বহারা চিন্তাধারার পথে চালিত করতে সক্ষম হতে হবে। এটা বিবিধ স্তরের পার্টি সংগঠনসমূহের একটা মিশন। উতপাদনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সকল ধরনের অ-সর্বহারা চিন্তাধারাকে সমালোচনার জন্য মতাদর্শিক যুদ্ধফ্রন্টে একটা শ্রেণীসংগ্রাম অবশ্যই বিকশিত করতে হবে। লক্ষ্যনীয় যে, জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্বসমূহের প্রকৃতি নিয়ে বহু বহু প্রশ্ন রয়েছে যাকে পূর্বোল্লিখিত শত্রুদের বিরুদ্ধকার সংগ্রামের সাথে এককরে মোকাবেলা করা যায়না। অন্যথায়, ফল হবে মহা “বিশৃংখলা” ।

রাজনীতিকে দমনে উতপাদনকে ব্যবহারের ভ্রান্ত অনুশীলনের আমাদের সমালোচনায়, ক্যাডারদের কখনোই উচিত হবেনা এজন্য উতপাদনকে ছেড়ে দেওয়া ও তাকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এগোতে দেওয়া। বর্তমানে, ইস্পাত ও লৌহ শিল্পসমূহ, অ-লৌহ-ধাতব মেশিনারী, মোটরযান, নির্মাণ, রসায়ন উতপাদন এবং খনিজ কয়লার এখনো এবছরের প্রথমার্ধের পরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের থেকে কিছু দূরত্ব রয়ে গেছে, বিশেষতঃ, যন্ত্রশিল্পে যন্ত্রপাতি উতপাদন গত বছরের আগের বছরের প্রথম অর্ধাংশের উতপাদন সূচক কেবল বজায় রেখেছে। এই পরিস্থিতিকে অবশ্যই বদলাতে হবে। পার্টি কেন্দ্র ও চেয়ারম্যান মাও সমগ্র পার্টি ও সারা দেশের জনগণকে বিপ্লব আঁকড়ে ধরার জন্য, আরো বেশী উতপাদন বাড়ানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান । আমি বিশ্বাস করি, চেয়ারম্যান মাওয়ের বিপ্লবী লাইনের তত্ত্বাবধানে, আমাদের মিশন সম্পাদিত হবে এবং আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। অধ্যয়ন ও কাজে আরো ভাল অর্জন সৃষ্টি করার জন্য কমরেডগণ আপনাদের প্রতি শুভকামনা রইলো ■