অনুবাদ সাহিত্যপত্র ৬। পূবাসপা এমইউজির রাজনৈতিক অনুবাদ সাহিত্য পত্র। সোভিয়েত অর্থনীতির সমালোচনা। মাওসেতুঙের তিনটি রচনাঃ ১) সোভিয়েত পাঠ্য রাজনৈতিক অর্থনীতি (১৯৬১-১৯৬২)-এর অধ্যয়ন নোট, ২) সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সম্পর্কে, ৩) স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর সমালোচনা । পূবাসপা এমইউজির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংস্থা কর্তৃক জুলাই ৫, ২০০৬ প্রকাশিত ও প্রচারিত।

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

 

অনুবাদ সাহিত্যপত্র ৬

পূবাসপা এমইউজির রাজনৈতিক অনুবাদ সাহিত্য পত্র

সোভিয়েত অর্থনীতির সমালোচনা

মাওসেতুঙের তিনটি রচনাঃ

১)     সোভিয়েত পাঠ্য রাজনৈতিক অর্থনীতি (১৯৬১-১৯৬২)-এর অধ্যয়ন নোট,

২)     সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সম্পর্কে,

৩)     স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর সমালোচনা

       পূবাসপা এমইউজির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংস্থা কর্তৃক জুলাই ৫, ২০০৬ প্রকাশিত ও

       প্রচারিত।

 

সম্পাদকীয়

সোভিয়েত পাঠ্য রাজনৈতিক অর্থনীতি (১৯৬১-১৯৬২)-এর অধ্যয়ন নোট, সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সম্পর্কে, এবং স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর সমালোচনা শীর্ষক কমরেড মাওসেতুঙের এই তিনটি রচনার প্রথম দুটো চীনা ভাষায় মাওসেতুঙ চিন্তাধারা দীর্ঘজীবি হোক শিরোনামে ১৯৬৭ সালে, এবং তারপর ১৯৬৯ সালে তিনটিই একই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সংস্করণ থেকে ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে মান্থলী রিভিও প্রেস, নিউইয়র্ক ও লন্ডন, ১৯৭৭ সালে সোভিয়েত অর্থনীতির সমালোচনা শিরোনামে গ্রন্থটি প্রকাশ করে। ইংরেজী অনুবাদ করেছেন মস রবার্টস, রিচার্ড লেভী অনুবাদ পরীক্ষা করেছেন আর অনেক সংশোধনী এনেছেন। জেম্স প্যাক ও পল সুইজি অনুবাদ পড়েছেন আর অতিরিক্ত পরামর্শ দিয়েছেন। ইংরেজী অনুবাদের ভূমিকা লেখেন জেম্স প্যাক। আমরা এই ইংরেজী পুস্তিকাটি থেকে সরাসরি বাংলা অনুবাদ করেছি।

আন্তর্জাতিক সাহিত্য প্রকাশে এটিকে আমাদের একটি উলম্ফণই বলতে হবে। সাহসের সাথে আমাদের একাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। মাওবাকে আমাদের মূর্ত করতে হবে আর এদেশের সমাজকে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে একটা যথার্থ দুই লাইনের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

মহান অগ্রগামী উলম্ফণ ও সমাজতান্ত্রিক বিকাশের প্রবক্তা মাও তার কমরেডদেরসহ চীনে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে প্রবল সংগ্রামের মুখে পড়েই উপলব্ধি করলেন যে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণকে একটি পূর্ণাঙ্গ মতাদর্শিক রাজনৈতিক লাইন হিসেবে তুলে ধরতে হবে। এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমরেড স্তালিনের আমল থেকেই যে বিচ্যুতিতে গড়িয়ে পড়ে তা চীনেও প্রতিফলিত হয়। সমাজতন্ত্রের প্রকৃতি সম্বন্ধেই ঐসব ভ্রান্তি সংশোধনবাদের জন্য জায়গা করে দিয়েছিল। যেমন পরবর্তীতে যা পূর্ণাঙ্গ সংশোধনবাদী তত্ত্বে পরিণত হয়েছিল সেই উত্পাদিকা শক্তির তত্ত্বের প্রাথমিক প্রবণতা স্তালিনের রচনায় পাওয়া যায়। তথাপি মাও একে একজন কমিউনিস্টের বিচ্যুতি হিসেবেই দেখেছেন।

সমাজতন্ত্রের বিনির্মাণকে মাও প্রবল গণ আন্দোলন হিসেবে দেখেছেন। মাও ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন। উত্পাদন সম্পর্ক ও উপরিকাঠামোর অব্যাহত বিপ্লবীকরণের কথা বলেন। মহান অগ্রগামী উলম্ফণ রূপে জনগণের সাহসী প্রবল অতিকায় প্রচেষ্টাকে এভাবে দেখতে হবে। বইটিকে মহান উলম্ফণের বিশ্লেষণও বলা যায়। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে সর্বাধিক বিকশিত হয় যে ধারণাগুলো তার বীজ পাওয়া যাবে এই বইয়ে। স্তালিন ও সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ ভুলবশতঃ মনে করেছিলেন যে সমাজতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানা আর উত্পাদিকা শক্তির কিছুটা বিকাশ। মাও লক্ষ্য করেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নে উত্পাদন সম্পর্কের অগ্রগতি মৌলিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। মাও শিক্ষা দেন যে উত্পাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মালিকানা ব্যবস্থাই নির্ধারক, তবে সমাজতন্ত্রের অধীনে গণমালিকানাকে সারবস্তু ও রূপ উভয়তই সমাজতান্ত্রিক হতে হবে। সমাজতান্ত্রিক মালিকানা ব্যবস্থার সাথে উত্পাদন সম্পর্কের অন্য দুটো দিকের যথা উত্পাদনে নিযুক্ত মানুষে মানুষে সম্পর্ক, ও বন্টন ব্যবস্থার আন্তঃক্রিয়ার ওপর তিনি বিশেষ জোর দেন। মাও দেখিয়েছেন যে আমলাতান্ত্রিক নির্দেশ দ্বারা নয় বরং জনগণের উদ্যোগ বাড়ানোর মাধ্যমেই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি দৃঢ়ভাবে নির্মাণ করা যায়। মাও ‘বুর্জোয়া অধিকার’-এর ভাবাদর্শের ওপর অব্যাহত আঘাত হানার আহ্বাণ জানান।

বইটিতে বহু নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যথা, ভারী শিল্পকে কেন্দ্রে রেখে হালকা শিল্প ও কৃষির যুগপৎ বিকাশ, রাজনীতি কমাণ্ডে, লাল ও দক্ষ, গণলাইন, জনগণই ইতিহাসের স্রষ্টা, বৃহৎ ও গণ, আংশিক গুণগত রূপান্তর, ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতা, নিবিড় কর্মসূচী, গণমালিকানার রূপান্তর, দুই পায়ে হাটা তথা আত্মনির্ভরশীলতাভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বিনির্মাণ, যৌথস্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া, উত্পাদনের যৌথ পরিচালনা, দুই অংশগ্রহণ(শ্রমিকদের ব্যবস্থাপণায় অংশগ্রহণ, ব্যবস্থাপণার উত্পাদনশীল শ্রমে অংশগ্রহণ), মহান অগ্রগামী উলম্ফণঃ “অধিক! দ্রুততর!অধিকতর ভাল!অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!”, মিলিশিয়া, সহিংস বিপ্লব, প্রাচীন নিয়মকানুন ও কুসংস্কারের বিলোপ, বুর্জোয়া অধিকারের ভাবাদর্শের ধ্বংস, জ্ঞানের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে যুদ্ধের অনিবার্যতা, বিপ্লবের ঝটিকা কেন্দ্র পশ্চাদপদ দেশে স্থানান্তরিত হওয়া ও পশ্চাদপদ দেশে বিপ্লবের অধিকতর অনুকূলতা ইত্যাদি বহুকিছু।

চেয়ারম্যান মাওই প্রথম সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ওপর একটা বৈজ্ঞানিক ও সার্বজনীন চিন্তার বিকাশ সাধন করেন।

তাঁর অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রন্থটিকে আমাদের বহুবহুবার অধ্যয়ণ করতে হবে।

তারিখঃ জুলাই ৫, ২০০৬

 সোভিয়েত অর্থনীতির সমালোচনা

Mao

সোভিয়েত পাঠ্য রাজনৈতিক অর্থনীতি

(১৯৬১-১৯৬২)-এর

অধ্যয়ন নোট

 

খণ্ড ১: অধ্যায় ২০-২৩

১.পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র

৩২৭-২৮ পৃষ্ঠায় পাঠ্যপুস্তক বলছে যে সমাজতন্ত্র “অনিবার্যভাবে” পুঁজিবাদের স্থান দখল করবে এবং অর্ধিকন্তু তা “বিপ্লবী উপায়ে” করবে। সাম্রাজ্যবাদী কালে উত্পাদিকা শক্তি ও উত্পাদন সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তীক্ষ্ণতর হয়েছে। সর্বহারা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হচ্ছে একটি বিষয়গত প্রয়োজনীয়তা। এই বক্তব্যসমূহ খুবই সন্তোষজনক এবং তা এভাবে বলা দরকারঃ “বিষয়গত প্রয়োজনীয়তা” সম্পূর্ণ ঠিক আছে এবং জনগণের একমত হওয়ার মতো। বিপ্লবকে একটা বিষয়গত প্রয়োজনীয়তা বলা সরলভাবে এই অর্থ করে এটা যে পথ গ্রহণ করে তা ব্যক্তির ইচ্ছা আকাঙ্খার ওপর নির্ভর করেনা। কেউ চাক আর না চাক তা আসবেই।

সর্বহারা শ্রেণী “তার চারপাশের সকল মেহনতী জনগণকে সংগঠিত করবে পুঁজিবাদকে অপসারণ করতে।”(পৃঃ ৩২৭)। সঠিক। কিন্তু এই বিষয়ে ক্ষমতা দখলের প্রশ্নকে উথ্থাপন করতে এগিয়ে আসতে হবে। “সর্বহারা বিপ্লব তৈরি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক রূপসমূহ সহকারে আসবে আশা করা যায়না।” “ব্যক্তিগত মালিকানাকে ভিত্তি করে একটি পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভেতরে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পেঁকে উঠতে পারেনা।”(পৃঃ৩২৮)। সত্যিই তাই, তারা যে শুধু “পেঁকে ওঠতে”ই পারেনা, তাই নয়, জন্মও নিতে পারেনা। পুঁজিবাদী সমাজে একটি সমবায় অথবা রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনীতি ও এমনকি জন্ম নিতে পারেনা, পরিপক্ক হওয়াতো দূরের কথা। সংশোধনবাদীদের  সাথে এটা আমাদের প্রধান পার্থক্য যারা দাবী করে যে পৌর গণসংস্থাসমূহ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সমাজতান্ত্রিক উপাদান, আর এমত প্রকাশ করে যে পুঁজিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে সমাজতন্ত্রে বিকশিত হতে পারে। এটা হচ্ছে মার্কসবাদের  একটা মারাত্মক বিকৃতি।

২.উত্তরণ পর্ব

পুস্তিকা বলছে, “সর্বহারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে উত্তরণ পর্যায় শুরু হয় আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়-যা হচ্ছে কমিউনিজমের প্রথম পর্যায়, সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা।”(পৃঃ ৩২৮)। উত্তরণ পর্বে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে কোন্ কোন্ পর্যায়সমূহ আছে তা সযতেœ অধ্যয়ন করতে হবে। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণকেই কি শুধু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে নাকি সমাজতন্ত থেকে কমিউনিজমেও?

এখানে মার্কসকে উদ্ধৃত করা হয়েছেঃ পুঁজিবাদ থেকে কমিউনিজমে এক “বিপ্লবী রূপান্তরের পর্যায়” রয়েছে। আমরা বর্তমানে এমন একটি পর্যায়ে রয়েছি। কিছুসংখ্যক বছরের মধ্যে আমাদের গণকমিউনগুলোকে মৌলিক টিমের মালিকানা থেকে মৌলিক কমিউনের মালিকানা[১]য় এবং তারপর সমগ্র জনগনের[২] মালিকানায় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। গণকমিউনের দ্বারা পরিচালিত মৌলিক কমিউন ইতিমধ্যে রূপান্তরিত যৌথ মালিকানা হিসেবে বজায় রয়েছে[এবং তখনো সমগ্র জনগণের মালিকানা দ্বারা নয়][* “উত্তরণ পর্বে সকল সামাজিক সম্পর্ককে মৌলিকভাবে আবশ্যিকভাবে রূপান্তর করতে হবে।” নীতিগতভাবে এই উক্তি সঠিক। সকল সামাজিক সম্পর্ক তার অর্থসহ উত্পাদন সম্পর্ক ও উপরিকাঠামো যথা অর্থনীতি, রাজনীতি, মতাদর্শ ও সংস্কৃতি প্রভৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

উত্তরণ পর্বে আমাদের অবশ্যই “সমাজতন্ত্রের বিজয়ের নিশ্চয়তার জন্য উত্পাদিকা শক্তিসমূহের যে বিজয় অর্জনের প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করতে হবে।” চীনের জন্য ব্যাপকভাবে বললে, আমি বলব, প্রতি বছর আমাদের ১০০-২০০ মিলিয়ন টন ইস্পাত প্রয়োজন। এ বছর পর্যন্ত আমাদের প্রধান  অর্জন হচ্ছে উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশের পথ পরিস্কার করা। চীনের সমাজতন্ত্রের উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশ খোলামেলাভাবে শুরু হয়েছে। ১৯৫৮-১৯৫৯ এর মহান অগ্রগামী উলম্ফণকে অধ্যয়ন করলে আমরা ১৯৬০ সালকে উত্পাদনের বিরাট বিকাশের প্রতিশ্রুতিশীল একটি বছর হিসেবে দেখতে পারি।**

*বন্ধনীর ভেতরকার বক্তব্য ইংরেজী অনুবাদক কর্তৃক যুক্ত করা হয়েছে পরিস্কার করার জন্য]

**এটা দেখায় যে এই পাঠনোটসমূহ ১৯৬১র পূর্বে লেখা হয়েছে।

৩. বিবিধ দেশে সর্বহারা বিপ্লবের সার্বজনীন ও মূর্ত বৈশিষ্টসমূহ

পুস্তিকা বলছে “অক্টোবর বিপ্লব আদর্শ স্থাপন করেছে”, আর প্রতিটি দেশের “সমাজতন্ত্র বিনির্মান করার নির্দিষ্ট ধরণ ও মূর্ত পদ্ধতি রয়েছে।” সুন্দর উক্তি। ১৮৪৮ সালে একটা কমিউনিস্ট ইশতেহার ছিল। একশ দশ বছর পরে আরেকটা কমিউনিস্ট ইশতেহার ছিল ১৯৫৭ সালে বহুবিধ কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃক রচিত মস্কো ঘোষণা যার নাম। এই ঘোষণা নিজেকে সার্বজনীন নিয়ম আর মূর্ত নির্দিষ্টতার একত্বের প্রতি নিবেদন করেছে।

অক্টোবর বিপ্লবকে আদর্শ হিসেবে স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে এটা স্বীকার করা যে প্রতিটি দেশের সর্বহারা বিপ্লবের “মূল সার” হচ্ছে একই। সুনির্দিষ্টভাবে আমরা এখানে সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই।

কেন বিপ্লব উচ্চমাত্রার পুঁজিবাদী উত্পাদনশীলতা ও বিরাট সর্বহারা শ্রেণীযুক্ত পাশ্চাত্যের কোন দেশে প্রথমে সফল হলনা, বরং প্রাচ্যের  দেশসমূহে, উদাহারনস্বরূপ রাশিয়া ও চীনে যেখানে পুঁজিবাদী উত্পাদনশীলতা ছিল অপেক্ষাকৃত নিম্ন এবং সর্বহারাশ্রেণী অপেক্ষাকৃত ছোট?

এই প্রশ্ন অধ্যয়ন আশা করে।

কেন সর্বহারা শ্রেণী প্রথম রাশিয়ায় বিজয় অর্জন করল? পাঠ্যপুস্তক বলছে, “সাম্রাজ্যবাদীদের সকল দ্বন্দ্ব রাশিয়াতে একত্রিতভাবে এসেছে।” বিপ্লবের ইতিহাস দেখায় যে বিপ্লবের ঝটিকা কেন্দ্র পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। আঠারো শতকের শেষে ঝটিকা কেন্দ্র ছিল ফ্রান্সে, যা বিশ্বের রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। মধ্য ঊনবিংশ শতকে ঝটিকা কেন্দ্র জার্মানীতে স্থানান্তরিত হয় যেখানে সর্বহারা শ্রেণী রাজনৈতিক মঞ্চে করে  মার্কসবাদের জন্ম দিয়ে। বিশ শতকের প্রথম দিককার বছরগুলিতে ঝটিকা কেন্দ্র রাশিয়ায় স্থানান্তরিত হয় লেনিনবাদের জন্ম দিয়ে। মার্কসবাদের এই বিকাশ ছাড়া রুশ বিপ্লবের বিজয় হতোনা। মধ্য বিশ শতকে ঝটিকা কেন্দ্র চীনে স্থানান্তরিত হয়। বলা নি®প্রয়োজন, ভবিষ্যতে পুনরায় ঝটিকা কেন্দ্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য।

রুশ বিপ্লবের বিজয়ের আরেকটি কারণ হচ্ছে বিপ্লবের মিত্র শক্তি হিসেবে ব্যাপক কৃষক জনগণের ভুমিক। পাঠ্যপুস্তক বলছে, “রুশ সর্বহারা শ্রেণী গরীব*কৃষকদের সাথে মৈত্রী গড়ে তুলেছে।”(পৃঃ ৩২৮-২৯, ১৯৬৭ সংস্করণ)। কৃষকদের মধ্যে কতিপয় বর্গ রয়েছে,  আর গরীব  কৃষকেরাই হচ্ছে সেই অংশ যাদের ওপর সর্বহারা শ্রেণী নির্ভর করেছে। যখন একটা বিপ্লব শুরু হয় মাঝারী কৃষক দোলতে শুরু করে, তারা ঘটনার দিকে তাকিয়ে দেখতে চায় বিপ্লবের কোন সামর্থ্য রয়েছে কিনা, তা নিজেকে চালাতে পারবে কিনা, আর এমন কোন সুবিধা অর্জন করতে পারবে কিনা  যা সেটা তাকে দিতে পারে। কিন্তু মাঝারী কৃষক সর্বহারা শ্রেণীর পক্ষে স্থানান্তরিত হবেনা যতক্ষণ না সে একটি অপেক্ষাকৃত পরিস্কার ছবি দেখতে পাচ্ছে। অক্টোবর বিপ্লব ছিল এমনই একটা ঘটনা। আর আমাদের নিজ ভূমি সংস্কার, সমবায়সমূহ আর গনকমিউনসমূহ[৩] এভাবেই হয়েছে।

মতাদর্শিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও সাংগঠনিকভাবে বলশেভিক-মেনশেভিক বিভক্তি অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়ের পথ প্রস্তুত করেছে। মেনশেভিকদের আর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে বলশেভিকদের সংগ্রাম ছাড়া অক্টোবর বিপ্লব কখনো বিজয় অর্জন করতে পারতনা। সকল ধরণের সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মধ্যে লেনিনবাদ জন্ম নিয়েছে ও বিকশিত হয়েছে। আর লেনিনবাদ ছাড়া রুশ বিপ্লবের কোন বিজয় ঘটতনা।

পুস্তিকা বলছে, “সর্বহারা বিপ্লব প্রথমে রাশিয়ায় সফল হয়েছে, আর বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ার বিপ্লবকে সফল করার ব্যবস্থা করার উপযুক্ত মাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশ ছিল।” সর্বহারা বিপ্লবের বিজয় উচ্চমাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশযুক্ত একটা দেশে না আসতে পারে। লেনিন থেকে উদ্ধৃতি দেয়ায় বইটি সম্পূর্ণ সঠিক। বর্তমান সময় পর্যন্ত, যেসব দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়েছে কেবলমাত্র পূর্ব জার্মানীর আর চেকোস্লাভিয়ার অপেক্ষাকৃত উচ্চ মাত্রার পুঁজিবাদ ছিল, বাকী সবখানে তা অপেক্ষাকৃত নিম্নমাত্রার ছিল। আর অপেক্ষাকৃত উচ্চমাত্রার বিকাশযুক্ত পশ্চিমা দেশসমূহের কোনটাতে বিপ্লব জন্ম নেয়নি। লেনিন বলেছিলেন, “সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের দুর্বল গ্রন্থিতে বিপ্লব প্রথমে জন্ম নেয়।” অক্টোবর বিপ্লবের সময় রাশিয়া ছিল এমন একটা দুর্বল গ্রন্থি। অক্টোবর বিপ্লবের পর চীনের জন্য একই ব্যাপার ছিল সত্যি। রাশিয়া ও চীন উভয়েরই ছিল অপেক্ষাকৃত বিরাট সর্বহারা শ্রেণী আর নিপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্ত বিশাল কৃষক সমাজ। উভয়েই ছিল বড় দেশ…[ডট মূল গ্রন্থের]। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারত ব্যাপকভাবে ছিল একই। প্রশ্ন হল লেনিন ও স্তালিন যেমনটা বর্ণনা করেছেন সাম্রাজ্যবাদের  সেই দূর্বল গ্রন্থিকে ভেঙে ভারত কেন একটা বিপ্লব সম্পাদন করতে পারলনা? কারন ভারত ছিল একটা ইংরেজ উপনিবেশ, একটা উপনিবেশ যা একটি একক সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত। এখানেই ভারত ও চীনের মধ্যে পার্থক্য নিহিত। কতিপয় সাম্রাজ্যবাদী সরকারের অধীন চীন ছিল একটি আধা-উপনিবেশ। দেশের বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সক্রিয় অংশ নেয়নি আর গণতান্ত্রিক বিপ্লবে নেতৃত্ব হতে ভারতীয় সর্বহারা শ্রেণীকে সক্ষম করে তোলেনি। স্বাধীনতার পরও ভারতীয় সর্বহারা শ্রেণীর স্বাধীনতার স্বার্থে অধ্যবসায়ী ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ছিলনা।

       চীন ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে বিপ্লবে জয়ী হতে একটি অভিজ্ঞ পার্টি থাকাটা হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। রাশিয়ায় বলশেভিকরা গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় আর ১৯০৫ সালের বিপ্লবের জন্য একটা কর্মসূচীর প্রস্তাব দেয় যা বুর্জোয়াদের  থেকে পৃথক ছিল। এটা জারকে উrখাত করার প্রশ্নকে সমাধান করার লক্ষ্যযুক্ত কর্মসূচীই শুধু নয় বরং জারকে উচ্ছেদের লড়াইয়ে সাংবিধানিক গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নেতৃত্ব কব্জা করার প্রশ্নও।

১৯১১ সালের বিপ্লবের সময় চীনে তখনো কোন কমিউনিস্ট পার্টি ছিলনা। কিন্তু ১৯২১ সালে এটা প্রতিষ্ঠার পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি অব্যাহত ও সতেজভাবে গনতান্ত্রিক বিপ্লবে যোগ দেয় আর এর সম্মুখভাগে দাঁড়ায়। সেসময়টা ছিল ১৯০৫-১৯১৭, যখন চীনের বুর্জোয়াদের ছিল স্বর্ণযুগ, আর যখন তাদের বিপ্লবের ছিল বিরাট গুরুত্ব। ১৯১১ সালের বিপ্লবের পর জাতীয়তাবাদী দল ইতিমধ্যে ছিল ভাটায়। আর ১৯২৪ সালের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি ঝোঁকা ছাড়া তাদের  কোন [*তারকা চিহ্নিত অংশ কেবল ১৯৬৯ পাঠে রয়েছে ]বিকল্প ছিলনা পুনরায় অগ্রগতি ঘটাবার  আগ পর্যন্ত। সর্বহারা শ্রেণী বুর্জোয়া শ্রেণীর স্থান দখল করেছিল। সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি বুর্জোয়ার রাজনৈতিক পার্টির স্থান দখল করে নিয়েছিল গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতৃত্ব হিসেবে। আমরা প্রায়শই বলেছি যে ১৯২৭ সালে তখনো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি তার পরিপক্কতায় পৌঁছেনি। প্রাথমিকভাবে একথার অর্থ হচ্ছে আমাদের পার্টি বুর্জোয়াদের সাথে তার মৈত্রীর বছরগুলিতে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে যে বুর্জোয়ারা বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে এবং বস্তুত, সম্পূর্ণ এর জন্য অপ্রস্তুত ছিল।

এখানে(পৃঃ৩৩১) পাঠ্যপুস্তকটি এ মত প্রকাশ করে  যে প্রাক পুঁজিবাদী অথনৈতিক ধরণের অধীন দেশগুলি যে কারণে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেতে পারে তা হচ্ছে অগ্রসর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সহযোগিতা। এটা ঘটনাকে উপস্থাপনের একটা অসম্পূর্ণ উপায়। চীনে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হওয়ার পর আমরা সমাজতন্ত্রের পথ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম কারণ আমরা সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের শাসনকে উrখাত করেছিলাম। অভ্যন্তরীন উপাদানগুলিই ছিল প্রধান। সফল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে আমরা যে সহযোগিতা পেয়েছি তা ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, কিন্তু এটা এমন একটা কিছু নয় যে সমাজতন্ত্রের পথ আমরা গ্রহণ করতে পারি কিনা সে সমস্যার সমাধান করতে পারে, বরং আমরা পথটা গ্রহণ করার পর তা আমাদের অগ্রগমণের গতিকে ত্বরান্বিত করায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সাহায্য নিয়ে আমরা বেশী দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি, তাছাড়া কম দ্রুত এগোতে পারি। সহযোগিতা বলতে আমরা যা বুঝি তার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সাথে যুক্তভাবে সহযোগী দেশটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সাফল্য ও ব্যার্থতার আমাদের অধ্যয়নমূলক প্রয়োগ।

৪. “শান্তিপূর্ণ উত্তরণ-এর প্রশ্ন

গ্রন্থ ৩৩০ পৃষ্ঠায় বলছে, “কিছু পুঁজিবাদী দেশ আর প্রাক্তন উপনিবেশিক দেশগুলিতে শ্রমিক শ্রেণীর পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতা শান্তিপূর্ণ সংসদীয় পথে দখল করা হচ্ছে একটি বাস্তব সম্ভাবনা।” আমাকে বলুন, কোন কোন সেই “কিছু দেশ”? ইউরোপ ও উত্তর আমোরিকার প্রধান পুঁজিবাদী দেশগুলি সর্বাঙ্গে সশস্ত্র। আপনি তাদের কাছে আশা করেন কি যে তারা আপনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা দখলে অনুমোদন দেবে? প্রতিটি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিপ্লবী শক্তিসমূহকে দুই দিকেই প্রস্তুত থাকতে হবে, একদিকে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে, অন্যদিকে সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে। কোনটাকেই পরিহার করা যায়না। এটা উপলব্ধি করা আবশ্যক যে কোন বস্তু বা ঘটনার সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে এই যে বুর্জোয়াদের স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার কোন বাসনাই নেই। এজন্য তারা একটি লড়াই প্রদর্শন করবে, আর তাদের জীবনই যেখানে বিপদগ্রস্ত হবে, তারা বলপ্রয়োগের চেষ্টা করবেনা কেন? আমাদের  নিজেদেরটার মতো, অক্টোবর বিপ্লবে উভয় দিকেই প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। ১৯১৭ সালের জুলাইয়ের পূর্বে লেনিন শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করে  বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার কথা বিবেচনা করেছিলেন কিন্তু জুলাই ঘটনা দেখিয়ে দিল যে সর্বহারা শ্রেণীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর আর কোনভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্ভব নয়। আর নিজেকে বিপরীত না করা পর্যন্ত আর তিনমাসের সামরিক প্রস্তুতি না গ্রহন করা পর্যন্ত অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় তিনি অর্জন করতে পারেননি। সর্বহারা শ্রেণী অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর পুঁজিবাদকে অপসারন করতে আর সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরকে কার্যকর করতে “শুদ্ধি” ব্যবহার করে  লেনিন শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োগে ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু বুর্জোয়ারা ১৪টি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সহযোগিতায় প্রতিবিপ্লবী সশস্ত্র উথ্থান ও সশস্ত্র হস্তক্ষেপ পরিচালনা করে। তাই অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়কে সুসংহত করার আগে তিনটি বছর রুশ পার্টির নেতৃত্বাধীনে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে হয়েছে।

*তারকা চিহ্ন কেবল ১৯৬৯ পাঠে রয়েছে।

৫.গণতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে সমাজতান্ত্রিকবিপ্লব- কতিপয় সমস্যা

পৃষ্ঠা ৩৩০-এর শেষে পাঠ্যপুস্তক গণতান্ত্রিক বিপ্লব থেকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপান্তরকে তুলে ধরে কিন্তু পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেনা কীভাবে রূপান্তর কার্যকর হয়। অক্টোবর বিপ্লব ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব যেসব কর্তব্য অসমাধিত রেখেছিল একইসাথে তাও সমাধা করে। অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়ের অব্যবহিত পরে ভূমির জাতীয়করণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভূমি সমস্যার গণতান্ত্রিক বিপ্লবের একটা উপসংহারে আসতে একটা কালপর্ব তখনো গ্রহণ করা বাকি ছিল।

মুক্তযুদ্ধকালে চীন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কর্তব্যসমূহ সমাধা করে। ১৯৪৯ সালে চীনা গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মৌলিক উপসংহারকে আর সমাজতন্ত্রের দিকে উত্তরণকে চিহ্নিত করে। ভূমিসংস্কার সমাধা করতে আরো তিন বছর লাগে, কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আমরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সংস্থাসমূহকে দ্রুত বাজেয়াপ্ত করি- আমাদের শিল্প ও পরিবহনের শতকরা ৮০ ভাগ ধ্রুব পুঁজিকে- এবং সমগ্র জনগণের মালিকানায় রূপান্তরিত করি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ-বিরোধী শ্লোগান ও সেইসাথে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও সামন্তবাদ-বিরোধী শ্লোগান উথ্থাপন করি। আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ-বিরোধী সংগ্রামের দ্বিমুখী চরিত্র রয়েছে: এটার একটা গণতান্ত্রিক বিপ্লবী চরিত্র রয়েছে যতটুকু পরিমাণে তা মুrসুদ্দি পুঁজিবাদকে বিরোধিতা করে [৪], কিন্তু তার একটি সমাজতান্ত্রিক চরিত্র রয়েছে যতটুকু পরিমাণে তা বড় বুর্জোয়াদের বিরোধিতা করে।

প্রতিরোধ যুদ্ধের বিজয়ের পর, জাতীয়তাবাদী পার্টি (কেএমটি) জাপান, জার্মানী ও ইতালী থেকে বিরাট অংকের আমলাতান্ত্রিক পুঁজি নিয়ে আসে। আমলাতান্ত্রিক ও জাতীয়(অর্থাr, চীনা) পুঁজির অনুপাত ছিল ৮ঃ২। মুক্তির পর আমরা সকল আমলাতান্ত্রিক পুঁজি বাজেয়াপ্ত করি, এভাবে চীনা পুঁজিবাদের[৫] প্রধান ’অঙ্গসমূহকে অপসারণ করি।

কিন্তু এটা ভাবা ভুল হবে যে সমগ্র দেশের মুক্তির পর “বিপ্লব তার প্রাথমিকতম পর্যায়ে কেবল বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রধানত ছিল এবং যতক্ষণ না তা ক্রমান্বয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে বিকশিত হয়।”[কোন পৃষ্ঠা রেফারেন্স নেই]

৬. সহিংসতা ও সর্বহারা একনায়কত্ব

পৃষ্ঠা ৩৩৩-এ পাঠ্যপুস্তক সহিংসতার ধারণার ব্যবহারে অধিকতর সুনির্দিষ্ট। মার্কস ও এঙ্গেলস সর্বদাই বলেছেন যে “সংজ্ঞাগতভাবে রাষ্ট্র হচ্ছে বিরোধী শ্রেণীকে দমনের জন্য প্রযুক্ত সহিংসতার একটা যন্ত্র।” তাই এটা কখনো বলা যায়না যে “সর্বহারা একনায়কত্ব শোষকদের সাথে সম্পর্কের  ক্ষেত্রে সহিংসতাকে বিশুদ্ধভাবে ও সরলভাবে ব্যবহার করেনা এবং প্রাথমিকভাবে তা ব্যবহার নাও করতে পারে।”

শোষকশ্রেণী সর্বদাই বলপ্রয়োগে সচেষ্ট হয় যখন তাদের জীবন বিপদগ্রস্ত। বস্তুত, যখনই তারা দেখে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে তখনই তারা তাকে বলপ্রয়োগে দমন করে। পাঠ্যপুস্তক বলছে, “ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে শোষক শ্রেণী জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্পূর্ণতই অনিচ্ছুক এবং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিরোধিতা করতে সশস্ত্র শক্তিকে ব্যবহার করে।” প্রশ্নটি বিবৃত করার এটা পূর্ণাঙ্গ উপায় নয়। জনগণ রাজনৈতিক ক্ষমতা সংগঠিত করার পর্ইে শোষকশ্রেণী বলপ্রয়োগে তার বিরোধিতা করবে শুধু তাই নয়, বরং এমনকি যে মুহুর্তে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে জনগণ জেগে ওঠে, বিপ্লবী জনগণকে দমনে শোষকশ্রেণী তড়িr সহিংসতা ব্যবহার করে।

আমাদের বিপ্লবের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের উত্পাদিকা শক্তিসমূহকে বিকশিত করা। এই লক্ষ্যে, প্রথমে আমাদের অবশ্যই শত্রুকে উচ্ছেদ করতে হবে। তারপর আমাদের অবশ্যই এর প্রতিরোধ চূর্ণ করতে হবে। জনগণের বিপ্লবী সহিংসতা ছাড়া কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

এখানে পুস্তিকাটি সর্বহারা একনায়কত্বের “সারবস্তু”র এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে সাধারণভাবে শ্রমিকশ্রেণী ও মেহনতী জনগণের যে প্রাথমিক দায়িত্বসমূহ রয়েছে তার দিকে মোড় নিয়েছে। কিন্তু আলোচনাটি অসম্পূর্ণ কারণ তা শত্রুর দমনকে বাদ দেয় আর শ্রেণীসমূহের পুনর্গঠণকেও। ভূস্বামী, আমলা, প্রতিবিপ্লবী আর অনাকাঙ্খিত উপাদানসমূহকে পুনর্গঠিত হতে হবে; পুঁজিপতি শ্রেণী, ক্ষুদে বুর্জোয়ার উপরের স্তর আর মাঝারি কৃষক*দের  ক্ষেত্রে একই কথা সত্য। আমাদের অভিজ্ঞতা দেখায় যে পুনর্গঠন হচ্ছে কঠিন। যারা অব্যাহত স্রোতের বিপরীতে থেকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়না যথার্থভাবে পুনর্গঠিত হতে পারেনা। বুর্জোয়াদের অবশিষ্ট কোন ক্ষমতাকে অথবা কোন প্রভাব যা তাদের থাকতে পারে তাকে সামগ্রিকভাবে অপসারণ করতে এক অথবা দুই দশক কমপক্ষে লাগবে এবং এমনকি অর্ধশতকও লাগতে পারে। গ্রামাঞ্চলে মৌলিক কমিউন মালিকানাকে কার্যকর করা হয়েছে, ব্যক্তিগত মালিকানাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রূপান্তর করা হয়েছে। সমগ্র দেশ নতুন নতুন শহর ও নতুন নতুন বৃহr শিল্পে ছেয়ে গেছে।সমগ্র দেশের জন্য পরিবহন ও যোগাযোগ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, আর প্রথমবারের মতো কৃষককুলের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী ধাপে ধাপে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হতে বাধ্য।(এখানে “প্রাথমিক দায়িত্ব” সম্পর্কে বলতে গিয়ে পুস্তিকাটি লেনিনের পদকে তার মূল আকাঙ্খা থেকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করে)। সাম্রাজ্যবাদী শত্রুর পছন্দকে চরিতার্থ করতে লেখা অথবা কথা বলার অর্থ হচ্ছে জনগনকে প্রতারণা করা এবং তা একইসাথে নিজ শ্রেণী সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে শত্রুকে সেবা করা ।* তারকা চিহ্নিত শব্দটি ১৯৬৯ পাঠে কেবল রয়েছে।

৭.সর্বহারা রাষ্ট্রের রূপ

পৃষ্ঠা ৩৩৪তে পুস্তিকা বলছে, “সর্বহারা রাষ্ট্র বিবিধ রূপ নিতে পারে।” যথেষ্ট সত্য, কিন্তু জনগণতন্ত্রে সর্বহারা একনায়কত্ব আর অক্টোবর বিপ্লবের পর যা রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে সারবস্তুতে খুব বেশী পার্থক্য নেই। তাছাড়া, সোভিয়েত ইউনিয়নের সোভিয়েতসমূহ আর আমাদের নিজেদের গণকংগ্রেসসমূহ উভয়ই ছিল প্রতিনিধি সভা, কেবল নামে ছিল পৃথক। চীনে জাতীয়তাবাদী পার্টি থেকে যারা বিভক্ত হয়েছিল সেইসব প্রতিনিধি আর খ্যাতনামা গণতান্ত্রিক ব্যক্তি প্রতিনিধিদের গণকংগ্রেসে অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া হয়েছিল বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে। তাদের সকলেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির  নেতৃত্ব গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ গোলোযোগ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে , কিন্তু ব্যর্থ হয়।এরকম অন্তর্ভূক্তকরণ সোভিয়েত থেকে ভিন্ন মনে হতে পারে , কিন্তু মনে রাখা দরকার অক্টোবর বিপ্লবের পর সোভিয়েত অন্তর্ভূক্ত করে  নেয় মেনশেভিক ডানপন্থী সোশালিস্ট [ইংরেজী অনুবাদে সম্ভবতঃ ভুলক্রমে সোশ্যাল বলা হয়েছে-বাংলা অনুবাদক] রেভ্যুল্যুশনারী পার্টি, একটি ট্রটস্কীপন্থী উপদল, একটি বুখারিন উপদল, একটি জিনোবিয়েভ উপদল এবং এরকম আরো। শ্রমিক ও কৃষকদের  নামমাত্র প্রতিনিধি এরা আসলে ছিল বুর্জোয়দের প্রতিনিধি। অক্টোবর বিপ্লবের পরবর্তীকালটা ছিল এমন একটা সময় যখন সর্বহারা শ্রেণী কেরিনেস্কি সরকার থেকে বিরাট সংখ্যক কর্মকর্তাদের গ্রহণ করে, যাদের সবাই ছিল বুর্জোয়া উপাদান। আমাদের নিজ কেন্দ্রীয় গণসরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর চীন গনসরকারের ভিত্তির ওপর। বিভিন্ন বিভাগের সকল সদস্য ঘাঁটি এলাকাসমূহ থেকে আগত ছিলেন, আর প্রধান প্রধান ক্যাডারদের অধিকাংশ ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য।

৮.পুঁজিবাদী শিল্প ও বাণিজ্যের রূপান্তর

পৃষ্ঠা ৩৩৫তে চীনে যে প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাদী মালিকানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রূপান্তরিত হয়েছে তার ভূল বর্ণনা রয়েছে। বইটি কেবল জাতীয় পুঁজিতন্ত্রে আমাদের কর্মনীতি ব্যাখ্যা করে কিন্তু আমলাতান্ত্রিক পুঁজি (বাজেয়াপ্তকরণ) সম্পর্কে আমাদের কর্মনীতি নয়। আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সম্পত্তিকে গণ মালিকানায় রূপান্তরে আমরা বাজেয়াপ্তকরণের পদ্ধতি পছন্দ করেছি।

       অনুচ্ছেদ ২ পৃঃ ৩৩৫তে পুঁজিবাদের রূপান্তরের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ী রূপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাকে দেখা হয়েছে একক ও বিশেষ অভিজ্ঞতা হিসেবে, এর সার্বজনীন তাrপর্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুবই উচ্চমাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশ রয়েছে, আর একচেটিয়া পুঁজিপতিদের এক সংখ্যল্প তার নিয়ন্ত্রণের অবস্থান দখল করে  রেখেছে। কিন্তু বিরাট সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারী পুঁজিপতিও রয়েছে। তাই বলা হয় মার্কিন পুঁজি হচ্ছে কেন্দ্রীভূত কিন্তু ব্যাপকভাবে বন্টিতও। এসব দেশে একটি সফল বিপ্লবের পর সন্দেহাতীতভাবে একচেটিয়া পুঁজিকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে, কিন্তু ক্ষুদ্র ওমাঝারি পুঁজিপতিদেরও[পুঁজির কথা সম্ভবতঃ বলা হচ্ছে-বাংলা অনুবাদক] কি একইরকম সুষমভাবে বাজেয়াপ্ত করতে হবে? এরকম হতে পারে যে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের কিছু রূপ গ্রহণ করতে হবে তাদের রূপান্তরের জন্য।

আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহকে উচ্চমাত্রার পুঁজিবাদী বিকাশের অঞ্চল হিসেবে মনে করা যেতে পারে। কিয়াংসুর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার সত্য(সাংহাইয়ে কেন্দ্রসমূহ ও প্রদেশের দক্ষিণাংশ)। এসব অঞ্চলে যদি রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ কাজ করতে পারে, আমাকে বলুন, এই প্রাদেশিক সেক্টরসমূহের মতো অন্যান্য কাউন্টিতে এই কর্মনীতি কেন কাজ করবেনা?

       জাপানীরা যখন  আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ দখল করল তারা যে পদ্ধতি নিয়েছিল তা ছিল স্থানীয় পুঁজিপতিদের অপসারণ করা আর তাদের সংস্থাগুলোকে জাপানী রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অথবা কিছু ক্ষেত্রে একচেটিয়া পুঁজিবাদী সংস্থায় রূপান্তর করা। নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেয়ার একট উপায় হিসেবে ক্ষুদ্র ও মাঝারী পুঁজিপতিদের  জন্য তারা সহকারী কোম্পানী স্থাপন করেছে। জাতীয় পুঁজির আমাদের রূপান্তর তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছেঃ রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যক্তিগত ম্যনুফ্যাকচার, ব্যক্তিগত উত্পাদের ঐক্যবদ্ধ সরকারী ক্রয় ও বিক্রয়, রাষ্ট্র-ব্যক্তি যৌথ কার্য (স্বতন্ত্র ইউনিটসমূহ ও পুরো প্রতিষ্ঠানের)। প্রতিটি পর্ব একটি পদ্ধতিগত পথে পরিচালিত হয়। এটা উত্পাদনের কোন ক্ষতি প্রতিরোধ করে যা রূপান্তর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রকৃতপক্ষে বিকশিত হয়। রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের সাথে আমরা প্রচুর নয়া অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি; উদাহারণস্বরূপ, রাষ্ট্র-ব্যক্তি যৌথ কার্য পর্ব[৭]-এর পর পুঁজিপতিদের নির্দিষ্ট হারে সুদ দেওয়া।

৯. মাঝারী কৃষক

ভূমি সংস্কারের পর ভূমির মুদ্রাদাম ছিলনা এবং কৃষকরা “নিজেদের প্রদর্শনে” ভীত ছিলেন। কিছু কমরেড এক সময় এই পরিস্থিতিকে অসন্তোষজনক বিবেচনা করেন কিন্তু যা ঘটে, তাহচ্ছে ভূস্বামী আর ধনী কৃষকদের যা অপমানিত করে সেই শ্রেণীসংগ্রামের প্রক্রিয়ায় কৃষককুল দারিদ্র্যকে মর্যাদাকর আর সম্পদকে লজ্জাজনক মনে করতে শুরু করেন। এটা ছিল একটা স্বাগত চিহ্ন যা দেখায় যে গরীব কৃষকরা রাজনৈতিকভাবে ধনী কৃষকদের বিপর্যস্ত করেছে আর গ্রামাঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে।

পৃষ্ঠা ৩৩৯ তে এটা বলে যে যে জমিগুলো ধনী কৃষকদের  থেকে নিয়ে গরীব আর মাঝারী কৃষকদের দেওয়া হয়েছে তা সরকার বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে আর তারপর খন্ড খন্ড করে বন্টন করেছে। এটা সমস্যাকে এমনভাবে দেখে যেন রাজকীয় আনুকূল্যে গৃহীত; এটা ভুলে গিয়ে যে শ্রেণীসংগ্রাম আর গণসমাবেশ এগিয়ে নেয়া হয়েছিল; তাহচ্ছে একটা ডান সুবিধাবাদী দৃষ্টিকোন। আমাদের দৃষ্টিকোন ছিল গরীব কৃষকদের ওপর নির্ভর করা, মাঝারী কৃষকদের অধিকাংশদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া (নিম্ন মাঝারী কৃষক) আর ভূস্বামী শ্রেণীর কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া। পার্টি যেখানে একটা নেতৃত্বকারী ভুমিকা পালন করে, সে নিজে নিজে জনগণের জন্য এভাবে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে সবকিছু করার বিরোধী ছিল। বস্তুত, এর মূর্ত অনুশীলন ছিলঃ গরীবদের সাথে সাক্ষাত করা তাদের দুঃখ কষ্ট থেকে শেখার জন্য, সক্রিয় উপাদানসমূহ খুঁজে বের করা, মূলে আঘাত হানা আর সবকিছুকে একত্রিত করা, নিউক্লিয়াস সুসংহত করা, দুঃখ কষ্টের কথা বলা বাড়ানো এবং শ্রেণীস্তর সংগঠিত করা-সবই শ্রেণীসংগ্রাম জাগিয়ে তোলার জন্য।

পাঠ্যপুস্তক বলছে, “গ্রামাঞ্চলে মাঝারি কৃষকেরা প্রধান চরিত্রে পরিণত হয়েছে।” এটা একটা অসন্তোষজনক বক্তব্য। মাঝারী কৃষকদের প্রধান হিসেবে দাবী করা, তাদেরকে দেবতা হিসেবে প্রশংসা করা, কখনো তাদের আক্রমণ করতে সাহস না করা প্রাক্তন গরীব কৃষকদের এটা ভাবাতে বাধ্য যে তাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। অনিবার্যভাবে এটা মাঝারী কৃষকদের জন্য গ্রামীণ নেতৃত্ব হওয়ার পথ খুলে দেয়।

পুস্তিকা মাঝারি কৃষকদের  কোন বিশ্লেষণ করেনা। আমরা উচ্চ ও নিম্ন মাঝারি কৃষকদের মধ্যে পার্থক্য করি এবং ঐসব বর্গের মধ্যে পুনরায় পুরোনো ও নতুনের মধ্যে, নতুনকে কিছুটা পছন্দনীয় হিসেবে। অভিযানের পর অভিযানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে গরীব কৃষক, নয়া নিম্ন মাঝারী কৃষক আর পুরোনো নিম্ন মাঝারি কৃষকের তুলনামূলক ভাল রাজনৈতিক দুষ্টিভঙ্গী রয়েছে। তাঁরাই গণকমিউনকে আলিঙ্গন করেন। উচ্চ মাঝারি কৃষক আর উন্নতিশীল মাঝারি কৃষকদের মধ্যে একটি দল রয়েছে যারা কমিউনকে সমর্থন করে আর আরেকটি দলও রয়েছে যারা তার বিরোধিতা করে। হোপেই প্রদেশের মালমশলা অনুসারে  মোট চল্লিশ হাজারেরও বেশী উত্পাদন টিম unk-serf(উত্পাদন দল) রয়েছে যার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ কোন রিজার্ভেশন ছাড়াই কমিউনকে আলিঙ্গন করে, শতকরা ৩৫ ভাগ মূলত তাকে গ্রহণ করে কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নে অভিযোগ অথবা সন্দেহসহ, শতকরা ১৫ ভাগ বিরোধিতা করে অথবা কমিউন সম্পর্কে গুরুতর রিজার্ভেশন রয়েছে। এই শেষ দলটির বিরোধিতা এই ঘটনার কারণে যে দলটির নেতৃত্ব উন্নতিশীল মাঝারী কৃষকদের অথবা এমনকি অনাকাংখিত উপাদানসমূহের হাতে পড়েছে। এই দুই পথের মধ্যে সংগ্রামের শিক্ষার প্রক্রিয়ার সময়কালে এই দলগুলির মধ্যে যদি বিতর্ক বিকশিত করতে হয় তবে তাদের  নেতৃত্ব বদলাতে হবে। পরিস্কারভাবে তখন তাদের অবশ্যই মাঝারি কৃষকদের বিশ্লেষণ দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলে কার হাতে নেতৃত্ব রয়েছে সেখানকার বিকাশের ওপর তার প্রচণ্ড প্রভাব রয়েছে।

বইটির ৩৪০ পৃষ্ঠায় বলছে, “মাঝারি কৃষকদের আবশ্যিকভাবে দ্বৈত চরিত্র রয়েছে”। এই প্রশ্নেও মূর্ত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। গরীব, নিম্ন মাঝারি, উচ্চ মাঝারি এবং উন্নতিশীল মাঝারি কৃষক সকলেই এক অর্থে শ্রমিক কিন্তু অন্য অর্থে তারা ব্যক্তি মালিক। ব্যক্তি মালিক হিসেবে তাদের  দৃষ্টিকোণ হচ্ছে একেকরকম। গরীব ও নিম্ন মাঝারি কৃষকদের  বলা যায় আধা ব্যক্তি মালিক যার দৃষ্টিকোণ অপেক্ষাকৃত সহজেই পরিবর্তিত হয়। বিপরীতে উচ্চ মাঝারি এবং উন্নতিশীল কৃষকদের যে ব্যক্তি মালিক দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে তার বৃহত্তর সার রয়েছে আর তারা অব্যাহতভাবে সমবায়করণকে বিরোধিতা করেছে।

১০. শ্রমিক কৃষক মৈত্রী

তৃতীয ও চতুর্থ অনুচ্ছেদ ৩৪০ পৃষ্ঠায় শ্রমিক কৃষক মৈত্রীর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছে, কিন্তু সেই মৈত্রী গড়ে ওঠা ও সুসংহত হওয়ার আগে যা করা দরকার তাতে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক পুনরায় ক্ষুদ্র উত্পাদকদের রূপান্তর সহকারে কৃষকদের এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করে কিন্তু বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয় কীভাবে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায় তা, রূপান্তরের পর্যায়ে কীধরণের দ্বন্দ্ব দেখা যায় আর কীভাবে তা সমাধান করা যায়। আর, পাঠ্যপুস্তক সমগ্র প্রক্রিয়াটির জন্য নীতি আর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেনা। আমাদের শ্রমিক কৃষক মৈত্রী ইতিমধ্যে দুটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রথমটি ছিল ভূমি বিপ্লবকে ভিত্তি করে, আর দ্বিতীয়টি সমবায় আন্দোলনকে। যদি সমবায়করণ বাস্তবায়ন করা না হত কৃষকরা মেরুকরন হয়ে যেতেন, আর শ্রমিক কৃষক মৈত্রী সুসংহত করা যেতনা। ফলত, ব্যক্তিগত উত্পাদের ঐক্যবদ্ধ সরকারী ক্রয় ও বিক্রয়”[৮] কর্মনীতি কার্যকর করতে পারা যেতনা। কারন হচ্ছে সামগ্রিকভাবে এ কর্মনীতিকে বজায় রাখা যায় আর কার্যকর করা যায় কেবলমাত্র সমবায়করণের ওপর ভিত্তি করে। বর্তমান কালে আমাদের শ্রমিক কৃষক মৈত্রীকে দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যান্ত্রিকীকরণের ওপর ভিত্তি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যান্ত্রিকীকরণ ব্যতিরেকে সরলভাবে সমবায় ও কমিউন আন্দোলন আবারো এটাই বোঝায় যে মৈত্রী সুসংহতকরণ হবেনা। আমাদেরকে এখনো সমবায়গুলোকে গণকমিউনে বিকশিত করতে হবে। আমাদেরকে এখনো কমিউন টিম কর্তৃক মৌলিক মালিকানাকে  কমিউন কর্তৃক মৌলিক মালিকানায় এবং তারপর রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বিকশিত করতে হবে। যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানা আর যান্ত্রিকীকরণ একীভূত হবে আমরা সত্যিকারভাবে শ্রমিক কৃষক মৈত্রী সংহত করা শুরু করতে পারবো এবং শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যকার পার্থক্যকে নিশ্চিতভাবে ধাপে ধাপে দূর করা যাবে।

১১. বুদ্ধিজীবিদের রূপান্তর

পৃষ্ঠা ৩৪১ সেই বুদ্ধিজীবিদের বিকাশে উrসাহ দেওয়ার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নিবেদিত যারা শ্রমিক ও কৃষকদের নিজস্ব, সেইসাথে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণে বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবিদের যুক্তকরণের সমস্যা। যাহোক পাঠ বুদ্ধিজীবিদের রূপান্তরকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবিরাই নয় বরং শ্রমিক ও কৃষকদের থেকে উদ্ভূত বুদ্ধিজীবিদেরও রূপান্তরে নিয়োযিত হওয়া প্রয়োজন কারন তারা বুর্জোয়াদের বহুবিধ প্রভাবের অধীনে এসেছেন। শিল্প ও সাহিত্যের চক্রে লিও শাও তাং এক উদাহারন যিনি একজন লেখক হওয়ার পর সমাজতন্ত্রের একজন বড় বিরোধীতে পরিণত হন। বুদ্ধিজীবিরা সাধারণত তাদের সাধারণ দৃষ্টিকোন প্রকাশ করেন জ্ঞানের প্রশ্নে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা। এটা কি ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা গণমালিকানাধীন? কেউ কেউ এটাকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন বিক্রয় করার জন্য যার দামটা হচ্ছে সঠিক এবং অন্য কিছু নয়। তারা হচ্ছে স্রেফ “দক্ষ” কিন্তু “লাল”[৯] নয়, যারা বলে পার্টি হচ্ছে “বহিরাগত” আর “অন্তর্গতদের নেতৃত্ব দিতে অক্ষম”। চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্টরা দাবী করে  যে পার্টি চলচ্চিত্রকে নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। সঙ্গীত অথবা নৃত্যকলার সাথে সংশ্লিষ্টরা দাবী করে পার্টি সেখানে নেতৃত্ব নিবেদন করতে পারেনা। পারমাণবিক বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্টরাও একই রকম বলেন। সব মিলিয়ে, তারা সকলে যা বলছেন তা হচ্ছে পার্টি কোন ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিতে সক্ষম নয়। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও বিনির্মাণের সমগ্র পর্যায়কাল ধরে বুদ্ধিজীবিদের পুনর্গঠনের প্রশ্নটি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। নিশ্চিতভাবে এ প্রশ্নে আপোষ করা অথবা বুর্জোয়া জিনিসগুলির প্রতি একটা স্বীকৃতিসূচক মনোভাব দেখানো ভুল হবে।

পুনরায় পৃষ্ঠা ৩৪১ তে বলছে যে অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনীতিতে মৌলিক দ্বন্দ্ব হচ্ছে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে। সঠিক। কিন্তু এই অনুচ্ছেদটি অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কে বিজয়ীর বেশে আসবে তা দেখার জন্য সংগ্রাম জাগ্রত করার কথা কেবল বলে। এর কোনটাই সম্পূর্ণ নয়। আমরা এটাকে এভাবে উথ্থাপন করবোঃ রাজনীতি, অর্থনীতি ও মতাদর্শের তিনটি ফ্রন্টে এক পূর্ণাঙ্গ সামগ্রিক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে।

পাঠ্যপুস্তক বলছে যে আমরা বুর্জোয়া উপাদানসমূহকে শুষে নেই যাতে তারা রাষ্ট্রের সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারে। এটা ৩৫৭*(*১৯৬৭ পাঠ অনুসারে পৃঃ৩৪১) পৃষ্ঠায় পুনরুল্লিখিত হয়। আমরা বুর্জোয়া উপাদানগুলিকে পুনর্গঠণের দায়িত্বের ওপর জোর দেই। আমরা তাদের নিজ জীবন যাপন পদ্ধতি, সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী [General Outlook] ও কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নে তাদের দৃষ্টিকোণ [View Point] রও পরিবর্তন সাধনে সাহায্য করি। গ্রন্থ যাহোক, পুনর্গঠনের কোন উল্লেখ করেনা।

১২.শিল্পায়ন ও কৃষি যৌথকরণের মধ্যে সম্পর্ক

পুস্তিকা সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়নকে কৃষি যৌথকরনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখে। এই মত কোনভাবেই খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নের নিজ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যেখানে যৌথকরণ মূলত বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৩০ থেকে ১৯৩২-এর মধ্যে। যদিও আমাদের আজকে যতটা আছে তার চেয়ে সেসময় তাদের বেশী ট্রাক্টর ছিল এবং যান্ত্রিক চাষাবাদের অধীন চাষযোগ্য জমির পরিমান শতকরা ২০.৩ ভাগ। যৌথকরণ সবমিলিয়ে যান্ত্রিকীকরণ দ্বারা নির্ধারিত হয়না, এবং তাই শিল্পায়ন এর জন্য পূর্বশর্ত নয়।

পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে কৃষি যৌথকরণ খুবই ধীর গতিতে সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। প্রধান কারণ ছিল ভূমি সংস্কারের পরে লৌহ যখন তপ্ত ছিল তখন তারা আঘাত হানেননি বরং কিছু সময়ের জন্য দেরী করেছেন। আমাদের কিছু পুরাতন ঘাঁটি এলাকায়ও কৃষকদের একটি অংশ সংস্কার দ্বারা সন্তুষ্ট ছিল আর আরো এগিয়ে যেতে অনিচ্ছুক ছিল। শিল্পায়ন হয়েছিল কি হয়নি তার ওপর এই পরিস্থিতি মোটেই নির্ভর করেনি।

১৩. যুদ্ধ ও বিপ্লব

পৃষ্ঠা ৩৫২-৫৪ মত প্রকাশ করে  যে পূর্ব ইউরোপের বিবিধ গণ প্রজাতন্ত্র “সমাজতন্ত্র নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল যদিও সেখানে না ছিল কোন গৃহযুদ্ধ না ছিল বৈদেশিক সশস্ত্র হস্তক্ষেপ”। এই মতও এখানে রাখা হয়েছে যে “গৃহযুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষা ছাড়াই সমাজতন্ত্রের রূপান্তর এসব দেশে ঘটানো হয়েছে।” এটা বলা অধিকতর ভাল হবে যে এসব দেশে যা ঘটেছে তাহচ্ছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের রূপে গৃহযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, গৃহযুদ্ধ আর আন্তর্জাতিক যুদ্ধ একইসঙ্গে পরিচালিত হয়েছে। এই দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াশীলরা সোভিয়েত লাল ফৌজ কর্তৃক অপসৃত হয়েছে। এসব দেশে কোন গৃহযুদ্ধ ছিলনা একথা বলার অর্থ হচ্ছে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতাবাদ যা সারকে অগ্রাহ্য করে।

পুস্তিকাটি বলছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বিপ্লবের পর “সংসদ হয়ে দাঁড়ায় ব্যাপকভাবে জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী যন্ত্র।” বস্তুত, এই পার্লামেন্টগুলো ছিল পুরোনো বুর্জোয়া পার্লামেন্ট থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কেবল নামেই যা সাদৃশ্য বহন করে। মুক্তির প্রাথমিক পর্বের কালে যে রাজনৈতিক মন্ত্রণা সম্মেলন (Political Consultative Conference) আমাদের ছিল তা জাতীয়তাবাদী সময়কালের রাজনৈতিক মন্ত্রণা সম্মেলনের চেয়ে নামে কোন পৃথক কিছু ছিলনা। জাতীয়তাবাদীদের সাথে আমাদের দরকষাকষির সময় আমরা সভার প্রতি উদাসীন ছিলাম, যেখানে চিয়াং কাই শেক এতে ছিল খুবই আগ্রহী। মুক্তির পর আমরা সাইনবোর্ড হস্তগত করি আর জাতীয় ভিত্তিক চীনা গণ রাজনৈতিক মন্ত্রণা সভার অধিবেশন আহ্বাণ করি, যা একটা অস্থায়ী গণ কংগ্রেস[১০] হিসেবে সেবা করেছে।

মূলগ্রন্থ বলছে যে চীন “বিপ্লবী সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় একটা জনগণের গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট সংগঠিত করেছে।”(পৃঃ ৩৫৭)। কেন শুধু “বিপ্লবী সংগ্রাম” এবং “বিপ্লবী যুদ্ধ” নয়? ১৯২৭ সাল থেকে দেশব্যাপী বিজয় পর্যন্ত আমরা বাইশবছরের দীর্ঘস্থায়ী বিরতিহীন যুদ্ধ চালিয়েছি। আর এমনকি তার আগে ১৯১১ সালের বুর্জোয়া বিপ্লব সহকারে শুরু করে আরেকটা পনের বছরের যুদ্ধ ছিল। সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা পরিচালিত যুদ্ধবাজদের বিশৃংখল যুদ্ধসমূহকেও গুণতে হবে। এভাবে, ১৯১১ থেকে শুরু করে আমেরিকাকে প্রতিরোধ আর কোরিয়াকে সহযোগিতার যুদ্ধ পর্যন্ত এটা বলা যেতে পারে যে চীনে ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে চল্লিশ বছর ধরে-বিপ্লবী যুদ্ধ আর প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধ। আর, প্রতিষ্ঠা থেকে আমাদের পার্টি যুদ্ধে যোগ দিয়েছে অথবা পরিচালনা করেছে তিরিশ বছর ধরে।

একটা মহান বিপ্লবকে অতি অবশ্যই গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটা একটা নিয়ম। আর যুদ্ধের খারাপ দিক দেখা কিন্তু তার লাভ না দেখা হচ্ছে একটি একদিকদর্শী দৃষ্টিভঙ্গী। একদেশদর্শীভাবে যুদ্ধের ক্ষতিকারকতার কথা বলা জনগণের বিপ্লবের জন্য কোন কাজের নয়।

১৪. বিপ্লব কি পশ্চাদপদ দেশগুলিতে কঠিণতর?

পাশ্চাত্যের বিবিধ দেশে যেকোন বিপ্লব ও নির্মাণ আন্দোলন চালানোর বিরাট প্রতিবন্ধকতা রয়েছে অর্থাr বুর্জোয়াদের বিষ এতটাই শক্তিশালি যে তারা প্রতিপ্রান্তে প্রবেশ করেছে। যেখানে আমাদের বুর্জোয়াদের কেবল তিনটি প্রজন্ম ছিল, ইংলন্ড ও ফ্রান্সের বুর্জোয়াদের প্রজন্মের ২৫০-৩০০ বছরের বিকাশের ইতিহাস রয়েছে আর তাদের মতাদর্শ ও কার্যসাধন প্রণালী (Modus Operandi-Latin)  তাদের সমাজের সকল দিক ও স্তরকে প্রভাবিত করেছিল। তাই, ইংরেজ শ্রমিকশ্রেণী শ্রমিক দলকে অনুসরণ করে কমিউনিস্ট পার্টিকে নয়।

লেনিন বলেন, “ পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ একটা দেশ যত পশ্চাদপদ তত কঠিন হবে।” এটা আজকে ভুল মনে হবে। প্রকৃতপক্ষে, একটা অর্থনীতি যত পশ্চাদপদ উত্তরণ তত কম কঠিন কারন জনগণ যত গরীব তত বিপ্লব চান। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী দেশগুলিতে কাজপ্রাপ্ত জনগণের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত উচ্চ, আর মজুরীর মানও সেরকম। শ্রমিকরা সেখানে বুর্জোয়াদের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত, সেখানে সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর চালানো ততটা সহজ হবে প্রতীয়মান হয়না। আর যেহেতু যান্ত্রিকীকরণের মাত্রা সেখানে উচ্চ তাই একটা সফল বিপ্লবের পর প্রধান সমস্যা যান্ত্রিকীকরণ হবেনা বরং জনগণকে রূপান্তর করা। প্রাচ্যের দেশগুলি যেমন চীন ও রাশিয়া ছিল পশ্চাদপদ ও গরীব, কিন্তু এখন তাদের সামাজিক ব্যবস্থা পাশ্চাত্যের চেয়ে ভালভাবে এগিয়ে গেছে, শুধু তাই নয় তাদের উত্পাদিকা শক্তির বিকাশের হারও পাশ্চাত্যকে অনেকদূর ছাড়িয়ে গেছে। পুন, যেমনটা পুঁজিবাদী দেশগুলোর বিকাশের ইতিহাসে পশ্চাদপদ অগ্রসরকে ছাড়িয়ে যায়-যেমন আমেরিকা ইংলন্ডকে ছাড়িয়ে গেছে এবং যেমন পরে জার্মানী ইংলন্ডকে ছাড়িয়ে গেছে বিশ শতকের প্রথম দিকে।

১৫. বৃহদায়তন শিল্প কি সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি?

পৃষ্ঠা ৩৬৪ (১৯৬৭ পাঠ অনুসারে পৃঃ ৩৪৯) য় মূল গ্রন্থ বলছে, “যেসব দেশ সমাজতান্ত্রিক নির্মানের পথ গ্রহণ করেছে, বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশের উদ্দেশ্যে (যা হচ্ছে অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি) যত দ্রুত সম্ভব পুঁজিবাদী শাসনের পরবতী প্রভাবকে অপসারণ করার কর্তব্যের সম্মুখীন হয়।” এট্ বলা যথেষ্ট নয় যে বৃহদায়তন শিল্প হচ্ছে অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের ভিত্তি। সকল বিপ্লবী ইতিহাস দেখায় যে নয়া উত্পাদিকা শক্তির পূর্ণ বিকাশ পশ্চাদপদ উত্পাদন সম্পর্কসমূহের রূপান্তরের পূর্বশর্ত নয়। আমাদের বিপ্লব শুরু হয়েছে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী প্রচার দিয়ে যা বিপ্লবের পক্ষে নতুন জনমত সৃষ্টিতে সেবা করে। অধিকন্তু, বিপ্লবের প্রক্রিয়ায়-একটা পশ্চাদপদ উপরিকাঠামো উচ্ছেদ করার পর্ইে কেবল পুরোনো উত্পাদন সম্পর্কসমূহ ধ্বংস করা সম্বব ছিল। পুরাতন উত্পাদন  সম্পর্কসমূহ ধ্বংস করার পরেই নয়াগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এগুলো নয়া সামাজিক উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশের পথ পরিস্কার করেছে। এগুলো পেছনে রেখে আমরা বৃহদায়তনে সামাজিক উত্পাদিকা শক্তিসমূহ বিকশিত করতে প্রযুক্তিগত বিপ্লবকে কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছিলাম। একই সাথে, তখনো আমাদের উত্পাদন সম্পর্কসমূহ ও ভাবাদর্শকে অব্যাহতভাবে রূপান্তর করতে হয়েছে।

       এ মূলগ্রন্থ বস্তুগত পূর্বশর্তের কথাই কেবল তুলে ধরে আর কদাচিত উপরিকাঠামো অর্থাr, রাষ্ট্র, দর্শন ও বিজ্ঞানের শ্রেণীচরিত্রের প্রশ্নে নিয়োযিত হয়। অর্থনীতিতে অধ্যয়নের প্রধান বিষয় হচ্ছে উত্পাদন সম্পর্ক। একইভাবে, রাজনৈতিক অর্থনীতি আর বস্তুবাদী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে ঘনিষ্ঠ রক্তসম্বন্ধীয় ভাই। উপরিকাঠামোর প্রশ্নকে অবহেলা করে অর্থনৈতিক ভিত্তি ও উত্পাদন সম্পর্কসমূহের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা কঠিন।

১৬. সমাজতান্ত্রিক পথ গ্রহণের বৈশিষ্টমণ্ডিত চিত্র সম্পর্কে লেনিনের আলোচনা

পৃষ্ঠা ৩৭৫-এ লেনিন থেকে একটি অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করা হয়েছে। এটা খুব ভালভাবে বিবৃত হয়েছে আর আমাদের কাজের পদ্ধতি রক্ষা করতে সম্পূর্ণ সহযোগী। “বসবাসকারীদের সচেতনতার স্তর এই অথবা ঐ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যে প্রচেষ্টাসমূহ তারা চালিয়েছে তা সহকারে, সমাজতন্ত্রের দিকে তারা যে পথ গ্রহন করেছে তার বৈশিষ্টমণ্ডিত চিত্রে প্রতিফলিত হতে বাধ্য। আমাদের প্রতিবেশীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের  নিজ “রাজনীতি কমান্ডে” হচ্ছে সুনির্দিষ্ট। আমাদের নিজেদের মহান অগ্রগামী উলম্ফণ হচ্ছে সুনির্দিষ্টভাবে “এই অথবা ঐ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার এক প্রচেষ্টা”।

১৭. শিল্পায়নের হার হচ্ছে একটি জটিল সমস্যা

মূল গ্রন্থ বলছে,“সোভিয়েত ইউনিয়ন যতদূর পর্যন্ত আলোচিত হয়, শিল্পায়ন হার হচ্ছে জটিল সমস্যা।” বর্তমানে চীনের জন্যও এটা জটিল সমস্যা। বস্তুত, শিল্প যত পশ্চাদপদ তত এই সমস্যা গভীর। এটা এক দেশ থেকে আরেক দেশের ক্ষেত্রেই সত্যি, শুধু তাই নয়, এক দেশের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকার ক্ষেত্রেও সত্য। উদাহারনস্বরূপ, আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহ আর সাংহাইয়ের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ভিত্তি আছে, আর তাই রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সেখানে কম দ্রুত গতিতে বেড়েছে। অন্য এলাকাসমূহ, যেখানে মূল শিল্প ভিত্তি ছিল সামান্য এবং বিকাশ ছিল জরুরী প্রয়োজন সেখানে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেড়েছে সম্পূর্ণ দ্রুত গতিতে।

সাংহাই মুক্ত হওয়ার দশ বছরে ২.২ বিলিয়ন চীনা ডলার[১১] বিনিয়োজিত হয়েছে, পুঁজিপতিদের দ্বারা ৫০০ মিলিয়নেরও বেশী। সাংহাইয়ের অর্ধ মিলিয়নেরও বেশী শ্রমিক থাকত, বর্তমানে শহরটিতে ১ মিলিয়নের ওপর রয়েছে আমরা যদি লক্ষ লক্ষ যারা স্থানান্তরিত হয়েছে তাদের হিসেব না করি। আগের শ্রমিক জনগোষ্ঠীর এটা কেবল দ্বিগুণ। আমরা যদি কিছু নয়া শহরের সাথে তুলনা করি সেখানে শ্রমশক্তি বেড়েছে বিরাটাকারে আমরা সহজ সরলভাবে দেখতে পাবো অপর্যাপ্ত শিল্পভিত্তির এলাকাগুলিতে হারের সমস্যা অধিকতর জটিল। এখানে মূল গ্রন্থ কেবল বলছে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উচ্চ হারের দাবী করে আর ব্যাখ্যা করেনা যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিজে নিজে এই উচ্চহারে উঠতে পারে কিনা। এটা একতরফা। যদি কেবল প্রয়োজন থাকে আর  সামর্থ না থাকে, আমাকে বলুন, কেমন  করে এই উচ্চ হার অর্জিত হয়।

১৮. ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সংস্থার যুগপৎ বিকাশের মাধ্যমে উচ্চ হারের শিল্পায়ন অর্জন করুন

পৃৃষ্ঠা ৩৮১তে মূল গ্রন্থ ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির সংস্থার আমাদের ব্যাপক বিকাশের ওপর স্পর্শ করে কিন্তু দেশীয় ও বিদেশী ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহr সংস্থার যুগপr বিকাশের আমাদের দর্শনের নিখুঁত প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়। গ্রন্থ বলছে আমরা “ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির সংস্থার বিপুল বিকাশের ওপর নির্ভর করেছি আমাদের প্রযুক্তিগত অর্থনীতির পূর্ণ পশ্চাদপদতা আমাদের জনসংখ্যার আকার আর খুবই মারাত্মক কাজের সমস্যার কারনে।” কিন্তু প্রযুক্তিগত স্তর, জনসংখ্যার আকার অথবা কাজের বৃদ্ধির প্রয়োজনের মধ্যে কোনভাবেই সমস্যা নিহিত নয়। বৃহৎ সংস্থাসমূহের পরিচালনাধীনে আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিকশিত করছি; বিদেশী পরিচালনাধীনে আমরা দেশী পদ্ধতি প্রণয়ন করছি যেখানে সম্ভব-প্রধানত উচ্চহারের শিল্প বিকাশ অর্জন করার জন্যে।

১৯. দুই ধরণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সহাবস্থান কি সম্ভব?

৩৮৬ পৃষ্ঠায় এটা বলছে, “ দুটি ভিন্ন ভিত্তির ওপর একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ যে কোন মাত্রার সময়ের জন্যই প্রতিষ্ঠিত করা যায়না। তাই বলতে গেলে তার বৃহত্তম ও সর্বাধিক ঐক্যবদ্ধ ভিত্তি সমাজতান্ত্রিক শিল্পের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা, আর পারেনা কৃষক ক্ষুদে পণ্য অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে যা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত আর পশ্চাদপদ।” অবশ্যই বিষয়টিকে ভালভাবে নেওয়া হয়েছে আর তাই আমরা যুক্তিটিকে সম্প্রসারিত করি পরবর্তী উপসংহারে পৌঁছতেঃ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ প্রতিষ্ঠিত করা যায়না যেকোন দীর্ঘ সময়কালের জন্য, সমগ্র জনগনের মালিকানা আর যৌথ মালিকানা, মালিকানার দুটি ভিন্ন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে।

সোভিয়েত ইউনিয়নে দুই ধরণের মালিকানার মধ্যে সহাবস্থান দীর্ঘকাল টিকে থেকেছে। সমগ্র জনগণের মালিকানা আর যৌথ মালিকানার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব হচ্ছে বাস্তবে শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। মূল গ্রন্থ এধরণের দ্বন্দ্বসমূহকে স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়।

একইভাবে সমগ্র জনগণের মালিকানা আর যৌথমালিকানার দীর্ঘায়িত সহাবস্থান উত্পাদিকা শক্তির বিকাশের সাথে খাপা খাওয়াতে কম থেকে কম যোগ্য হতে বাধ্য এবং কৃষকদের ভোগ, কৃষি উত্পাদন অথবা কাঁচামালের জন্য শিল্পে চিরবাড়ন্ত প্রয়োজনকে তৃপ্ত করতে ব্যর্থ হবে। এধরণের প্রয়োজন পূরণ করতে আমাদের অবশ্যই দুই ধরণের মালিকানার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে সমাধা করতে হবে, যৌথ মালিকানাকে সমগ্র জনগণের মালিকানায় রূপান্তর করতে হবে, আর একটা অবিভাজ্য জাতির জন্য সমগ্র জনগণের মালিকানার ওপর ভিত্তি করে শিল্প ও কৃষিতে উত্পাদন ও বন্টনের একটা ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা রচনা করতে হবে।

উত্পাদিকা শক্তি ও উত্পাদন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরতিহীনভাবে উন্মোচিত হয়। উত্পাদিকা শক্তির সাথে যে সম্পর্কসমূহ একদা খাপ খেত তা একটা সময়কাল পরে আর তা হবেনা। চীনে আমরা অগ্রসর সমবায় সংগঠিত করার পর বৃহৎ ও ক্ষুদ্র উভয় ইউনিট থাকার প্রশ্ন প্রতিটি বিশেষ জেলা ও প্রতিটা কাউন্টিতে সামনে আসে।

সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রম অনুযায়ী বন্টন, পণ্য উত্পাদন, মূল্যের নিয়ম, এবং এরকম আনুষ্ঠানিক বর্গ বর্তমানে উত্পাদিকা শক্তিসমূহের চাহিদার সাথে খাপ খাচ্ছে। কিন্তু এই বিকাশ এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এমন দিন আসতে বাধ্য যখন এই আনুষ্ঠানিক বর্গগুলি কোনভাবেই খাপ খাবেনা। সেসময় এই বর্গগুলি উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশের দ্বারা ধ্বংস হবে; তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমাদের কি বিশ্বাস করতে হবে যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে যে অর্থনৈতিক বর্গগুলো আছে সেগুলো চিরজীবি ও অপরিবর্তনশীল? আমাদের কি বিশ্বাস করতে হবে যে শ্রম অনুযায়ী বন্টন আর যৌথ মালিকানার মত বর্গগুলো চিরজীবি, অন্য সকল বর্গ যেগুলো ঐতিহাসিক সেগুলো থেকে পৃথকভাবে [তাই আপেক্ষিক]?

২০. সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর কেবলমাত্র যান্ত্রিকীকরণের ওপর নির্ভর করতে পারেনা

পৃষ্ঠা ৩৯২ বলছে, “কৃষিতে সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর চালাতে মেশিন ও ট্রাক্টর স্টেশনগুলো হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।” পুনরায় এবং পুনরায় মূল গ্রন্থ জোর দিচ্ছে মেশিনারি রূপান্তরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি কৃষকদের সচেতনতা জাগিয়ে তোলা না হয়, যদি মতাদর্শকে রূপান্তর না করা হয়, কিন্তু আপনি শুধুমাত্র মেশিনারির ওপর নির্ভর করছেন-সেটা কি কাজে দেবে? দুই পথের মধ্যে সংগ্রামের প্রশ্ন, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ, জনগণের রূপান্তর ও পুনশিক্ষিতকরণ-এগুলো হচ্ছে চীনের প্রধান প্রধান সমস্যা।

৩৯৫ পৃষ্ঠায় পুস্তক বলছে সাধারন যৌথকরণের প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে কর্তব্য সম্পাদনে বৈরি ধনী কৃষকদের বিরূদ্ধে সংগ্রামের প্রশ্ন উঠে আসে। এটা অবশ্যই সঠিক। কিন্তু হিসেবে গ্রন্থ সমবায় গঠণের পর গ্রামীণ পরিস্থিতি দেখায়, কিন্তু একটি উন্নতিশীল অংশের প্রশ্ন বাদ পড়েছে; রাষ্ট্র, যৌথ ও ব্যক্তির মধ্যে, সঞ্চয় ও ভোগের[১৩] মধ্যে, এবং এরকম কিছুর মধ্যে এমন দ্বন্দ্বসমূহের কোন উল্লেখ নেই।

পৃষ্ঠা ৪০২ বলছে, “কৃষি সমবায় আন্দোলনের জোয়ারের পরিস্থিতিতে মাঝারি কৃষকদের ব্যাপক জনগণ পুনরায় দুলবেনা।” এটা অতি সাধারণীকৃত। ধনী মাঝারি কৃষকের একটা অংশ রয়েছে যে এখন দোদুল্যমান এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে।

২১. তথাকথিত পূর্ণসংহতকরণ

“…পূর্ণসংহত যৌথখামার ব্যবস্থা”, পৃঃ৪০৭-এ এটা বলে। “পূর্ণ সংহতকরণ”-একটা বিব্রতকর বাক্য। কোন কিছুর সংহতকরণ হচ্ছে আপেক্ষিক। সেটা কীভাবে “পূর্ণ” হতে পারে? মানবজাতির-শুরু থেকে কেউ যদি মারা না যেতেন এবং প্রত্যেকেই “পূর্ণ সুসংহত” হতেন তাহলে কী হত? সেটা কী ধরণের পৃথিবী হত! মহাবিশ্বে, আমাদের ভূমণ্ডলে প্রতিটা জিনিস জন্ম নেয়, বিকশিত হয় এবং বিগত হয় বিরতিহীনভাবে। এর কোনটাই চির “পূর্ণ সুসংহত” নয়।

একটা রেশম পোকার জীবন দেখুন। অন্তিমে এটা শুধু মারা যায় তাই নয়, সে তার জীবনকালে বিকাশের চারটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়ঃ ডিম, রেশম পোকা, পিউপা ও মথ। একে আবশ্যিকভাবে এক পর্যায় থেকে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হয় এবং কোন একটা পর্যায়ে সে পূর্ণ সংহত হতে পারেনা। শেষে, মথ মৃত্যুবরণ করে, এবং পুরোনো সার এক নয়া সারে পরিণত হয় (যেহেতু সে বহু ডিম ছেড়ে যায়)। এটা একটা গুণগত উলম্ফণ। অবশ্যই, ডিম থেকে পোকা, পোকা থেকে পিউপা, পিউপা থেকে মথে পরিস্কারভাবে পরিমাণগত পরিবর্তনের চেয়ে বেশিকিছু রয়েছে। গুণগত রূপান্তরও রয়েছে, কিন্তু এটা আংশিক গুণগত রূপান্তর। একজন ব্যক্তিও জীবন থেকে মৃত্যুর দিকে গমনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়সমূহের অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে ঃ শৈশব, তারুণ্য, যৌবন, প্রবীন এবং বৃদ্ধ বয়স। জীবন থেকে মৃত্যু জনগণের জন্য এক পরিমাণগত প্রক্রিয়া, কিন্তু একইসঙ্গে তারা আংশিক গুণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ঠেলে দিচ্ছে। এমনটা ভাবা নিরর্থক যে যুব বয়স থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত গুণগত পরিবর্তন ছাড়া পরিবর্তনগত বৃদ্ধি রয়েছে। মানব দেহের মধ্যে কোষগুলো অবিরামভাবে বিভক্ত হচ্ছে, পুরোনো গুলো মারা যাচ্ছে আর শেষ হয়ে যাচ্ছে, নতুনগুলো উদ্ভূত হচ্ছে আর বাড়ছে। মৃত্যুতে একটি পূর্ণ গুণগত পরিবর্তন ঘটে, যা পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আর এসময়ে যে আংশিক গুণগত পরিবর্তন ঘটে তার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। পরিমাণগত পরিবর্তন ও গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে বিপরীতের একত্ব। পরিমাণগত পরিবর্তনের মধ্যে আংশিক গুণগত পরিবর্তন রয়েছে। পরিমাণগত পরিবর্তনের মধ্যে কোন গুণগত পরিবর্তন নেই একথা কেউ বলতে পারেনা। এবং গুণগত পরিবর্তনের মধ্যে পরিমাণগত পরিবর্তন রয়েছে। গুণগত পরিবর্তনের মধ্যে কোন পরিমাণগত পরিবর্তন নেই একথা কেউ বলতে পারেনা।

পরিবর্তনের যে কোন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়, চূড়ান্ত গুণগত পরিবর্তনে প্রবেশ করার পূর্বে, কর্তাকে বিরতীহীন পরিমাণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং প্রচুর আংশিক গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আংশিক গুণগত পরিবর্তন, আর বিবেচনাযোগ্য পরিমাণগত পরিবর্তন না হলে চূড়ান্ত গুণগত পরিবর্তন আসতে পারেনা। উদাহারণস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট স্থাপনা ও আকৃতির একটি কারখানা গুণগতভাবে পরিবর্তিত হয় যখন মেশিনারি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির একাংশ একবারে নবায়িত হয়। অভ্যন্তরভাগ পরিবর্তিত হয়, যদিও বহির্ভাগ ও আকৃতির পরিবর্তন হয়না। সৈন্যদের একটা কোম্পানী পৃথক কোন কিছু নয়। একটা যুদ্ধ করার পর সে ডজন ডজন লোক হারালে, একশ সৈন্যের কোম্পানীকে তার ক্ষতি পূরণ করতে  হবে। যুদ্ধ করা ও পূরণ করা অব্যাহতভাবে-এভাবে কোম্পানী বিরতিহীনভাবে আংশিক গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ফলে কোম্পানী বিকশিত হতে থাকে এবং নিজেকে সুদৃঢ় করে।

চিয়াংকাইশেকের ধ্বংস ছিল একটি গুণগত পরিবর্তন যা পরিমানগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘটে। উদাহারণস্বরূপ, সাড়ে তিন বছর সময়কাল লাগত তার বাহিনী ও রাজনৈতিক ক্ষমতার একাংশ একবারে ধ্বংস হতে। এবং এই পরিমাণগত পরিবর্তনের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন পাওযা যাবে। মুক্তিযুদ্ধ কতিপয় ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে, এবং প্রত্যেকটা নতুন পর্যায় পূর্বগামী পর্যায়গুলি থেকে গুণগতভাবে পৃথক। ব্যক্তিগত অর্থনীতি থেকে যৌথ অর্থনীতিতে রূপান্তর ছিল গুণগত উলম্ফণের একটি প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে এই প্রক্রিয়া গঠিত ছিল পারস্পরিক সহযোগিতা টিম, প্রাথমিক পর্যায়ের সমবায়, অগ্রসর সমবায় এবং গণকমিউন[১৪] দ্বারা। আংশিক গুণগত পরিবর্তনের এমন ভিন্ন পর্যায়সমূহ ব্যক্তিগত অর্থনীতি থেকে একটা যৌথ অর্থনীতি জন্ম দেয়।

আমাদের দেশের বর্তমান সমাজতান্ত্রিক অথনীতি দুই ভিন্ন ধরণের গণমালিকানা দ্বারা সংগঠিত ঃ সমগ্র জনগণের মালিকানা এবং যৌথ মালিকানা। এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নিজস্ব জন্ম ও বিকাশ রয়েছে। কে বিশ্বাস করবে যে পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে, এবং আমরা যদি বলি, “মালিকানার এই দুই রূপ পূর্ণ সংহত হতে থাকবে সব সময়ের জন্য”? সমাজতান্ত্রিক সমাজের এমন সূত্র যথা “শ্রম অনুযায়ী বন্টন”, “পণ্য উত্পাদন” ও “মূল্যের নিয়ম” চিরকালের জন্য টিকে থাকবে? কে বিশ্বাস করবে যে কেবল জন্ম ও বিকাশ রয়েছে কিন্তু কোন মৃত্যু ও রূপান্তর নেই এবং অন্য সকল কিছু থেকে বৈসাদৃশ্যমূলকভাবে এই সূত্রগুলো অনৈতিহাসিক?

সমাজতন্ত্রকে অবশ্যই কমিউনিজমে উত্তরণ ঘটাতে হবে। সেসময় সমাজতান্ত্রিক স্তরের জিনিস থাকবে যাকে মারা যেতে হবে। আর, কমিউনিজমের পর্যায়েও তখনো বিরতিহীন বিকাশ ঘটবে। এটা খুবই সম্ভব যে কমিউনিজমকে বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমরা কীভাবে বলতে পারি যে একবার কমিউজমে পৌঁছার পর কোন কিছুই পরিবর্তন হবেনা এবং সবকিছুই “পূর্ণ সংহত” হিসেবে চলতে থাকবে, কেবল পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটবে, আর সর্বদা কোন আংশিক গুণগত পরিবর্তন ঘটবেনা।

যেভাবে কোন জিনিস বিকশিত হয়, একস্তর থেকে আরেক স্তরে চালিত করে, বিরতিহীন ভাবে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু প্রতিটি স্তরের রয়েছে “সীমা”। প্রতিদিন ধরুন, আমরা চারটা সময় পড়তে শুরু করি, ৭টা অথবা ৮টায় শেষ করি। এটাই হচ্ছে সীমা। যতদূর পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শিক পুনর্গঠন চলে, এটা হচ্ছে একটা দীর্ঘমেয়াদী কাজ। কিন্তু প্রত্যেক ভাবাদর্শিক অভিযান তার উপসংহারে পৌঁছে, তাই বলা যায়, একটা সীমা রয়েছে। মতাদর্শিক ফ্রন্টে যখন আমরা বিরতিহীন পরিমাণগত পরিবর্তন ও আংশিক গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আসবো এমন দিন আসবে যখন আমরা পুঁজিবাদী মতাদর্শের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হবো। সেসময় মতাদর্শিক পুনর্গঠনের গুণগত পরিবর্তন শেষ হবে। কিন্তু কেবল এক নযা গুণের পরিমানগত পরিবর্তন তাকে অনুসরণ করবে।

সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের ও সীমা রয়েছে। আমাদের পরিসংখ্যান (সারণী) রাখা দরকার; উদাহারণস্বরূপ, সমগ্র উত্পাদনের সাথে শিল্পসামগ্রীর কী অনুপাত হবে, কী পরিমাণ ইস্পাত উত্পাদন করতে হবে, জনগণের জীবনযাত্রার মান কত উচুতে তোলা যায় ইত্যাদি? সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের একটা সীমা আছে একথা বলার কদাচিত এই অর্থ হয় যে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চাইনা কমিউনিজমে উত্তরণ ঘটাতে। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণকে দুই স্তরে ভাগ করা যায়ঃ এক পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র যাকে অনুন্নত সমাজতন্ত্র বলা হয়, আরেকটা অনুন্নত সমাজতন্ত্র থেকে অপেক্ষাকৃত বিকশিত সমাজতন্ত্রের দিকে, যাকে কমিউনিজম নাম দেয়া যায়। পরের স্তরটি প্রথমটি থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। কিন্তু একবার এই স্তর পার হলে বস্তুগত উত্পাদন এবং আত্মিক উন্নতি হবে বিপুল। জনগণের কমিউনিস্ট সচেতনতা বিরাটাকারে বেড়ে যাবে এবং তারা কমিউনিজমের উচ্চস্তরে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত হবেন।

পৃষ্ঠা ৪০৯তে বলা হয়েছে যে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের রূপ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, উত্পাদন অটলভাবে ও দ্রুত বাড়বে। উত্পাদনশীলতার হার দৃঢ়তার সাথে উপরে উঠতে  থাকবে। মূল গ্রন্থ দৃঢ়তার সাথে অথবা বিরতিহীনভাবে সূত্রটি ব্যবহার করেছে অনেকবার, কিন্তু তা শুধু পরিমাণগত রূপান্তরের কথা বলতে। আংশিক গুনগত পরিবর্তনের খুব সামান্য উউল্লেখই রযেছে।

২২. যুদ্ধ ও শান্তি

পৃষ্ঠা ৪০৮-এ এটা বলছে যে পুঁজিবাদী সমাজে “উদ্ধৃত্ত উত্পাদনের একটা সংকট অনিবার্যভাবে সৃষ্টি হবে বেকারত্ব বৃদ্ধি ঘটিয়ে।” এটা হচ্ছে যুদ্ধের ধারণা। এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে মার্কসবাদী অর্থনীতির মূল নীতিসমূহ হঠাৎ অকার্যকর হয়ে গেল, একটা বিশ,¦ যেখানে পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহ এখনো বিদ্যমান সেখানে যুদ্ধ সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করা যেন সম্ভব।

এটা বলা কি সম্ভব যে চিরতরে যুদ্ধ বিলোপ করার সম্ভাবনা এখন দেখা দিয়েছে? এটা কি বলা সম্ভব যে বিশ্বের তাবৎ সম্পদ মানব জাতির সেবায় বিনিয়োযিত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই মত মার্কসবাদ নয়, এর কোন শ্রেণী বিশে¬ষণ নেই, এবং এটা বুর্জোয়া ও সর্বহারা শাসনের অধীন পরিস্থিতির মধ্যে পরিস্কার পার্থক্য অঙ্কন করেনি। আপনি যদি শ্রেণীর বিলোপ সাধন না করেন আপনি কিভাবে যুুদ্ধের বিলোপ সাধন করেন?

একটা বিশ্বযুদ্ধ পরিচালিত হবে কি হবেনা তা কেবল আমরাই নির্ধারণ করবোনা। একটা যুদ্ধ নয় শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও যুদ্ধের সম্ভাবনা বজায় থাকে। যখন সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধ করতে চায় কোন চুক্তিই হিসেবে নেয়া হবেনা। এবং তা যদি আসে পারমাণবিক অথবা হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহার করা হবে কি হবেনা সেটা আরেক প্রশ্ন। যদিও রাসায়নিক অস্ত্রের অস্তিত্ব রয়েছে, তারা যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়নি; প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। দুই শিবিরের মধ্যে কোন যুদ্ধ না থাকলেও, কোন নিশ্চয়তা নেই যে পুঁজিবাদী বিশ্বের মধ্যে যুদ্ধ পরিচালিত হবেনা। সাম্রাজ্যবাদ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে যুদ্ধ বাঁধাতে পারে। একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশের বুর্জোয়া সেদেশের সর্বহারা শ্রেণীর ওপর যুদ্ধ শুরু করতে পারে। সাম্রাজ্যবাদ এমনকি এখন উপনিবেশ ও আধা উপনিবেশের বিরূদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। যুদ্ধ হচ্ছে এক ধরণের শ্রেণী সংঘাত। কিন্তু যুদ্ধ ছাড়া শ্রেণীর বিলোপ হবেনা। আর শ্রেণীর বিলোপ ছাড়া যুদ্ধ চিরতরে বিলুপ্ত হবেনা। বিপ্লবী যুদ্ধ না পরিচালিত হলে শ্রেণী বিলুপ্ত হতে পারেনা। শ্রেণী ধ্বংস না করে সমরাস্ত্রের বিলোপ করা সম্ভব আমরা বিশ্বাস করিনা। এটা সম্ভব নয়। শ্রেণীসমাজের ইতিহাসে শ্রেণী অথবা রাষ্ট্র “তার শক্তির অবস্থা” দ্বারা পরিচিত হয়। এধরণের অবস্থান লাভ করা ইতিহাসের অনিবার্য প্রবণতা হয়েছে। কোন শ্রেণীর প্রকৃত শক্তির মূর্ত প্রকাশ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। আর যতদিন শ্রেণীবৈরিতা থাকবে সশস্ত্র বাহিনীও থাকবে। স্বাভাবিকভাবে, আমরা যুদ্ধে ইচ্ছুক নই। আমরা শান্তি চাই। আমরা আণবিক যুদ্ধ বন্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পক্ষে এবং দুই শিবিরের মধ্যে পারস্পরিক অনাগ্রাসন চুক্তির জন্য সচেষ্ট হওয়ার। দশ অথবা বিশ বছরের শান্তি অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার বক্তব্য আমরা অনেক আগেই দিয়েছি। আমরা যদি এই আকাংখাকে বাস্তবায়ন করতে পারি এটা সমগ্র সমাজতান্ত্রিক শিবিরের জন্যই সর্বাধিক লাভজনক হবে এবং চীনের সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের জন্যও।

পৃষ্ঠা ৪০৯ তে এটা বলছে যে এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর পুঁজিবাদ দ্বারা ঘেরাও নয়। এভাবে কথা বলার ভঙ্গী জনগণকে সাত্ত্বনা দিয়ে ঘুম পাড়ানোর ঝুঁকিতে চালিত করে। অবশ্যই বর্তমান পরিস্থিতি বিরাটাকারে পরিবর্তিত হয়েছে সেসময় থেকে যখন কেবলমাত্র একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পশ্চিমে এখন পূর্ব ইউরোপের বহুবিধ সমাজতান্ত্রিক দেশ রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্বে রয়েছে চীন, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ। কিন্তু পরিচালিত ক্ষেপনাস্ত্রগুলোর কোন চোখ নেই এবং এক হাজার অথবা দশ হাজার কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে পারে। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের চতুর্দিকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নিয়োযিত করা হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের দিকে তাক করে। এটা কি বলা যায় যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার ভেতরে নয়?

২৩. সর্বসম্মতি কি সামাজিক বিকাশের চালিকা শক্তি?

পৃষ্ঠা ৪১৩ এবং ৪১৭ বলছে যে সমাজতন্তের লক্ষ্য “সর্বসম্মতির সংহতি” এবং “তা পাথরের মতো কঠিন।” এটা বলছে যে সর্বসম্মতি হচ্ছে “সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি।”

এটা সংহতির সর্বসম্মতিকে কেবল স্বীকার করে কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সমাজের দ্বন্দ্বসমূহকে নয়, দ্বন্দ্বসমূহ যে সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি, তাকে নয়। একবার এভাবে জিনিসটা তুলে ধরলে দ্বন্দ্বের সার্বজনীনতার নিয়মসমূহ অস্বীকার করা হয়, দ্বন্দ্বতত্ত্বের নিয়ম স্থগিত করা হয়। দ্বন্দ্ব ব্যতিরেকে কোন আন্দোলন নেই এবং সমাজ সর্বদা আন্দোলনের মাধ্যমে বিকশিত হয়। সমাজতন্ত্রের যুগে দ্বন্দ্ব সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি হিসেবে থাকে। সুনির্দিষ্টভাবে যেহেতু কোন সর্বসম্মতি নেই, তাই ঐক্যের জন্য দায়িত্ব রয়েছে আর এর জন্য লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা। যদি সর্বদা ১০০ শতকরা সম্মতি থাকে, তাহলে ঐক্যের জন্য কাজ করতে অধ্যবসায়ী হওয়ার প্রয়োজনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?

২৪.সমাজতন্ত্রের অধীনে শ্রমের অধিকারসমূহ

পৃষ্ঠা ৪১৪তে আমরা শ্রম যে অধিকারসমূহ ভোগ করে তার আলোচনা পাই কিন্তু রাষ্ট্র,বহুবিধ সংস্থা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে পরিচালনা করতে শ্রমের অধিকারের কোন আলোচনা পাইনা,। প্রকৃতপক্ষে এটাই হচ্ছে সমাজতন্ত্রের অধীনে শ্রমের সবচেয়ে বড় অধিকার, সবচাইতে মৌলিক অধিকার, যা ছাড়া কাজ করার, শিক্ষার, ছুটি প্রভৃতির কোন অধিকার নেই।

সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সমস্যা(ইস্যু) হচ্ছেঃ বহুবিধ বৈর শক্তিগুলো ও তাদের প্রভাব দমন করার অধিকার কি শ্রমের আছে? উদাহারণস্বরূপ, কারা সংবাদপত্র, পত্রপত্রিকা, বেতার স্টেশন ও চলচ্চিত্রের মতো জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণ করে? কারা সমালোচনা করে? এগুলো হচ্ছে অধিকারের প্রশ্নের অংশ। যদি এই জিনিসগুলো ডানসুবিধাবাদীদের(যারা হচ্ছে সংখ্যালঘু) হাতে থাকে তাহলে বিশাল দেশব্যাপী সংখ্যাগরিষ্ঠ যাদের জরুরীভাবে মহান অগ্রগামী উলম্ফণ প্রয়োজন তারা নিজেদের এই অধিকারগুলো বঞ্চিত খুঁজে পাবেন। যদি চলচ্চিত্র চুং তিয়েন পেই[১৫]-এর মতো লোকদের হাতে থাকে, ঐ সেক্টরে জনগণের নিজেদের অধিকারের অনুভব কীভাবে করার কথা? জনগণের মধ্যে বহুবিচিত্র উপদল রয়েছে। কারা অঙ্গ ও সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে তা জনগণের অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা বিধান করার সমস্যার ওপর প্রচণ্ডভাবেপ্রভাব বিস্তার করে। যদি মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা নিয়ন্ত্রণে থাকে বিরাট ব্যাপক জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান হবে। যদি ডানপন্থীরা অথবা ডানসুবিধাবাদীরা নিয়ন্ত্রণে থাকে, এসব অঙ্গ ও সংস্থাগুলো গুণগতভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এসম্পর্কে জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান হতে পারেনা। সবমিলিয়ে, উপরিকাঠামোর ব্যবস্থাপনায় জনগণের অবশ্যই অধিকার থাকতে হবে। আমরা জনগণের অধিকারকে এভাবে নিতে পারিনা যে কেবল জনগণের একটি খণ্ডাংশ দ্বারা রাষ্ট্রের পরিচালনা হবে, আর কেবল কিছুসংখ্যক জনগণের  পরিচালনাধীনে জনগণ শ্রম অধিকার, শিক্ষা অধিকার, সামাজিক বীমা প্রভৃতি যেন ভোগ করতে পারে।

২৫. কমিউনিজমে উত্তরণ কি একটি বিপ্লব?

পৃষ্ঠা ৪১৭তে এটা বলছে, “সমাজতন্ত্রের অধীনে কোন শ্রেণী অথবা সামাজিক গ্রুপ থাকবেনা যাদের স্বার্থ কমিউনিজমের সাথে সংঘাত করে এবং সেজন্য কমিউনিজমে উত্তরণ কোন সামাজিক বিপ্লব ছাড়াই হবে।”

কমিউনিজমে উত্তরন নিশ্চিতভাবে এক শ্রেণী কর্তৃক আরেক শ্রেণী উচ্ছেদের ব্যাপার নয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কোন সামাজিক বিপ্লব হবেনা, কারণ এক ধরণের উত্পাদন সম্পর্ক কর্তৃক অন্যটির প্রতিস্থাপনও একটি গুণগত উলম্ফণ, অর্থাr একটা বিপ্লব। দুই রূপান্তর-ব্যক্তিগত অর্থনীতি যৌথতে, আবার যৌথ অর্থনীতি গণতে, চীনে উভয়টি উত্পাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপ্লব। সুতরাং, সমাজতন্ত্রের “শ্রম অনুযায়ী বন্টন” থেকে কমিউনিজমের “চাহিদা অনুযায়ী বন্টন”-এ যাওয়াকে উত্পাদন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব বলতে হবে। অবশ্যই, “চাহিদা অনুযায়ী বন্টন”কে আনতে হবে ক্রমান্বয়ে। সম্ববত যখন প্রধান দ্রব্যসামগ্রীকে পর্যাপ্তভাবে যোগান দেয়া যাবে, আমরা ঐ দ্রব্রসামগ্রীসহযোগে বন্টন পরিচালনা করা শুরু করতে পারি, উত্পাদিকা শক্তিসমূহের অধিকতর বিকাশের ওপর ভিত্তি করে অন্য দ্রব্যসামগ্রীতে অনুশীলনকে সম্প্রসারিত করে।

আমাদের গণকমিউনসমূহের বিকাশকে বিবেচনা করুন। যখন আমরা টিম কর্তৃক মৌলিক মালিকানা থেকে কমিউন দ্বারা মৌলিক মালিকানায় পরিবর্তন করলাম জনগণের একটি অংশ বিরোধিতা উত্থাপন করতে ইচ্ছুক ছিল কিনা? এটা একটা প্রশ্ন যা আমাদের অধ্যয়নের জন্য মূল্যবাণ। প্রণালীগত এই পরিবর্তনকে বূঝতে একটি নির্ধারক বিষয় হচ্ছে যে কমিউনের মালিকানাধীন অর্থনীতির আয় ছিল সমগ্র কমিউনের মোট আয়ের অর্ধেকের বেশী। মৌলিক কমিউন মালিকানা ব্যবস্থাকে বোঝাটা কমিউন সদস্যদের জন্য সাধারণভাবে লাভজনক। এভাবে আমরা হিসেব করি যে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের পক্ষ থেকে কোন বিরোধিতা আসা উচিত নয়। কিন্তু প্রণালীগত পরিবতর্’নের সময় মূল টিম কর্মীরা আর কোনভাবেই পরিস্থিতির অধীনে অপেক্ষাকৃত হ্রাস পাবেননা। তারা কি পরিবর্তন প্রবাহকে বিরোধিতা করবেন?

যদিও সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণীসমূহ অপসারিত হতে পারে, এর বিকাশের প্রক্রিয়ায় “কায়েমী স্বার্থবাদী গ্রুপসমূহ”র সাথে কিছু সমস্যা হতে বাধ্য, যার পরিপক্ক সার রয়েছে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানাদিগুলোতে আর তারা পরিবর্তিত হতে অনিচ্ছুক। উদাহারণস্বরূপ, যদি শ্রম অনুযায়ী বন্টনের নিয়ম কার্যকর হয় তারা অধিক কাজের উচ্চ বেতন দ্বারা লাভবান হয় এবং যখন সময় আসে “চাহিদা অনুযায়ী বন্টন”-এ পরিবর্তিত হতে, নতুন পরিস্থিতি তাদের জন্য খুবই অস্বস্তিকর হবে। নতুন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় সর্বদাই পুরোনোগুলি ধ্বংসের প্রয়োজন সৃষ্টি করে। ধ্বংস ছাড়া সৃষ্টি হয়না। যদি ধ্বংসের প্রয়োজন হয়, কিছু বিরোধিতা সৃষ্টি হতে বাধ্য। মানব জীব সত্যিই অদ্ভূত। যখনই মানুষ কিছুটা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে তারা হাওয়ায় উড়তে থাকে…একে খেয়াল না করাটা বিপজ্জনক হবে।

২৬. এই দাবী যে “চীনে তীব্র রূপের শ্রেণীসংগ্রাম গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই

পৃষ্ঠা ৪১৯-এ একটি ভুল আছে। অক্টোবর বিপ্লবের পর রাশিয়ার বুর্জোয়ারা দেখল যে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত আর তারা সিদ্ধান্ত করলো যে সর্বহারা শ্রেণী পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারবেনা, আর তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখারও সামর্থ্যরেও অভাব রয়েছে। তারা বিচার করল যে তার্দেই কেবল আগানো সম্ভব আর সর্বহারা শ্রেণীর ক্ষমতার উচ্ছেদ সম্ভব। এই যুক্তিতে তারা সশস্ত্র প্রতিরোধ পরিচালনা করল আর এভাবে রুশ সর্বহারা শ্রেণীকে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার শক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করল। সেসময় কোন শ্রেণীরই বেশী অভিজ্ঞতা ছিলনা।

চীনের শ্রেণীসংগ্রাম তীব্র নয় একথা বলা অবাস্তব। তা ছিল যথেষ্ট ভয়ংকর। আমরা সোজা বাইশ বছর লড়াই করেছি। যুদ্ধ পরিচালনা করে আমরা বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী পার্টির শাসন উচ্ছেদ করেছি আর আমলাতান্ত্রিক পুঁজি বাজেয়াপ্ত করেছি যা ছিল সমগ্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির শতকরা ৮০ভাগ। এভাবেই কেবল আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বাকী শতকরা ২০ ভাগ জাতীয় পুঁজির পুনর্গঠণে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহারে। পুনর্গঠণ প্রক্রিয়ায় তখনো আমাদের “তিন বিরোধিতা” ও “পাঁচ বিরোধিতা” অভিযানের মতো ভয়ংকর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে[১৬]। পৃষ্ঠা ৪২০ বুর্জোয়া শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাসমূহের পুনর্গঠণকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। মুক্তির পর জাতীয় বুর্জোয়াকে সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠণের পথ গ্রহণে বাধ্য করা হয়। আমরা চিয়াং কাই শেকের পতন ঘটাই, আমলাতান্ত্রিক পুঁজি বাজেয়াপ্ত করি, ভূমি সংস্কার সাধন করি, “তিন বিরোধিতা” ও “পাঁচ বিরোধিতা” অভিযানসমূহ পরিচালনা করি এবং সমবায়কে এক কার্যকর chinese_civil_war__war_of_liberation8931762f0327cb948cacবাস্তবতায় পরিণত করি। আমরা শুরু থেকে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করি। রূপান্তরের এই ধারা জাতীয় বুর্জোয়াকে ধাপে ধাপে পুনর্গঠণকে গ্রহণে বাধ্য করে। তবু আরেক দৃষ্টিতে , সাধারণ কর্মসূচী চুক্তি করেছে যে বিবিধ অর্থনৈতিক স্বার্থকে সুযোগ দেয়া হবে। এটা পুঁজিপতিদের সক্ষম করে তোলে যে লাভ তারা করতে পারে তার চেষ্টা করতে। এর সাথে যুক্তভাবে সংবিধান তাদের একটা ব্যালট ও একটা জীবনযাপনের অধিকার দিয়েছে। এই জিনিসগুলো বুর্জোয়াদের উপলব্ধি করতে সহযোগিতা করেছে যে পুনর্গঠণ গ্রহণ করে তারা সামাজিক জীবন করতে পারে আর সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে একটা নির্দিষ্ট ভুমিকাও পালন করতে পারে।

রাষ্ট্র-ব্যক্তি যৌথ সংস্থাসমূহে, পুঁজিপতিদের সত্যিকার ব্যবস্থাপনা অধিকার নেই। নিশ্চিতভাবে উত্পাদন পুঁজিপতি ও গণপ্রতিনিধিদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হয়না। এটাও বলা যায়না যে “পুঁজির শ্রম শোষণ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।” এটা কার্যত সংকোচন করা হয়েছে। গ্রন্থে এই ধারণা মনে হয় বাদ পড়েছে যে যৌথ পরিচালিত সংস্থাগুলোর কথা আমরা বলছি তার শতকরা ৭৫ ভাগ ছিল সমাজতান্ত্রিক। অবশ্য বর্তমানে তারা শতকরা ৯০ ভাগ সমাজতন্ত্রী অথবা বেশী।

পুঁজিবাদী শিল্প ও বাণিজ্যের পুনর্গঠণ মূলতঃ সম্পাদিত হয়েছে। কিন্তু পুঁজিপতিরা যদি সুযোগ পেত তারা কোন সংযম ছাড়াই আমাদের আক্রমণ করত। ১৯৫৭ সালে আমরা ডানপন্থী[১৭] আক্রমণকে ঠেকিয়ে দেই। ১৯৫৯ সালে পার্টিতে তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তারা পুনরায় আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ সংগঠিত করে [১৮]। জাতীয় পুঁজিপতিদের প্রতি আমাদের কর্মনীতি হচ্ছে তাদেরকে আমাদের সাথে নেওয়ার এবং তারপর বেষ্টন করা।

পাঠ লেনিনের বক্তব্য ব্যবহার করে যে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ “শ্রেণীসংগ্রাম অন্য রূপে অব্যাহত রাখে।” এটা সঠিক।(পৃঃ ৪২১)

২৭.সমাজতন্ত্র নির্মাণের জন্য সময়কাল

পৃষ্ঠা ৪২৩ তে এটা বলে যে আমরা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব “শেষ” করেছি রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক ক্ষেত্রে ১৯৫৭[১৯]তে। আমরা বরং বলবো যে আমরা একটা নির্ধারক বিজয় অর্জন করেছি।

একই পৃষ্ঠায় এটা বলছে যে আমরা চীনকে দশ থেকে পনের বছরের মধ্যে একটা শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। এখন এটা এমন একটা বিজয় যাতে আমরা একমত হতে পারি! এর অর্থ হচ্ছে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পর এর ১৯৭২ আগ পর্যন্ত আরো দুটো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে আমাদের (অথবা ১৯৬৯ এ আমরা শিডিওল [পূর্ব নির্ধারিত সময় ক্রম] কে দুই অথবা তিন বছরের জন্য আগু পিছু করতে পারি) যেতে হবে। শিল্প ও কৃষি, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি আধুনিকায়ন সহযোগে আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা আধুনিকায়ন করতে হবে। আমাদের মতো দেশে সমাজতন্ত্রের নির্মাণ শেষ করা হচ্ছে একটা প্রচণ্ড কঠিন কাজ। সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে আমাদের অবশ্যই “তাড়িঘড়ি”র কথা বলা যাবেনা।

২৮. শিল্পায়ন ও সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্যে সম্পর্কের ওপর আরো আলোচনা

পৃষ্ঠা ৪২৩তে-এটা বলছে যে শিল্পায়ন বাস্তবায়নের অনেক আগে মালিকানার ব্যবস্থার সংস্কার ছিল একটা পরিস্থিতি যা চীনের বিশেষ পরিস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। এটা একটা ভ্রান্তি। চীনের মতো পূর্ব ইউরোপ, “শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অস্তিত্ব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটা শিল্পায়িত দেশের সহযোগিতা দ্বারা উপকৃত হয়েছে।” প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হওয়ার আগে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো মালিকানা ব্যবস্থা(কৃষিসহ)র কেন রূপান্তর সম্পূর্ণ করতে পারলনা?*[*অধ্যায় ২৮, অনুচ্ছেদ ১, ১৯৬৭ সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৪২৩ বলছে, “চীনের বিশেষ অবস্থায়, সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হওযার আগে, একটা শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অস্তিত্ব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটা  শক্তিশালী উচ্চ বিকশিত শিল্পায়িত শক্তির সহযোগিতার কারণে কৃষিসহ মালিকানা ব্যবস্থার সংস্কার বিজয় অর্জন করে।” এটা একটা ভূল। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে চীনের চেয়ে কম নয় “শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অস্তিত্ব ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো উচ্চ বিকশিত শিল্পীয় জাতির সহযোগিতা ছিল।” মালিকানা ব্যবস্থায়(কৃষিসহ) কেন তারা সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পূর্ণ করতে পারলনা শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হওয়ার আগে?] শিল্পায়ন ও সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্যে সম্পর্কের দিকে তাকালে সত্য হচেছ যে খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নে শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হওয়ার আগে মালিকানা সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে।

একইভাবে, বিশ্ব ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে, বুর্জোয়া বিপ্লবসমূহ ও বুর্জোয়া জাতিসমূহের প্রতিষ্ঠাসমূহ শিল্প বিপ্লবের আগে হয়েছে, পরে নয়। বুর্জোয়ারা প্রথমে উপরিকাঠামো পরিবর্তন করে এবং রাষ্ট্রের মেশিনারী সম্পদ দখল করে প্রকৃত শক্তি সঞ্চিত করতে প্রচার চালানোর আগে। কেবল তারপরই তারা উত্পাদনসম্পর্কসমূহে  বিরাট পরিবর্তন এগিয়ে নেয়। যখন উত্পাদন সম্পর্কসমূহের যতœ নেওয়া হয়, আর তারা সঠিকভাবে চলছিল তখনই তারা উত্পাদিকা শক্তিসমূহের জন্য পথ খুলে দেয়। নিশ্চিত হতে, উত্পাদিকা শক্তির কিছুটা মাত্রার বিকাশের ওপর উত্পাদন সম্পর্কে বিপ্লব আসে, কিন্তু উত্পাদিকা শক্তির বড় বিকাশ সর্বদাই উত্পাদন সম্পর্কের পরিবর্তনের পর আসে। পুঁজিবাদের বিকাশের ইতিহাস বিবেচনা করুন। প্রথমে আসল সাধারণ সমন্বয়, যা হস্তশিল্প কারখানায় ফলত বিকশিত হল। এসময় পুঁজিবাদী উত্পাদন সম্পর্ক ইতিমধ্যে দানা বাঁধছিল, কিন্তু ওয়ার্কশপ মেশিন ছাড়াই উত্পাদন করত। এই ধরণের পুঁজিবাদী উত্পাদন সম্পর্ক প্রযুক্তিগত অগ্রসরতার প্রয়োজন জন্ম দিল, যন্ত্রপাতির ব্যবহারের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ইংলন্ডে শিল্প বিপ্লব (অস্টাদশ শতকের শেষভাগ-ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে) পরিচালিত হয়েছে কেবল বুর্জোয়া বিপ্লবের পরে, অর্থাৎ সপ্তদশ শতকের পরে। জার্মানী, ফ্রান্স, আমেরিকা এবং জাপান পুঁজিবাদী শিল্পের বিশাল বিকাশের আগে যার যার পথে উপরিকাঠামো ও উত্পাদন সম্পর্কের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে।

এটা হচ্ছে একটা সাধারণ নিয়ম যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার জন্য জনমত প্রথম সৃষ্টি করার আগে আপনি মালিকানা সমস্যার সমাধান এবং উত্পাদিকা শক্তির বিকাশ সম্প্রসারিত করতে পারেননা।

যদিও বুর্জোয়া বিপ্লব ও সর্বহারা বিপ্লবের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে (সর্বহারা বিপ্লবের আগে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন সম্পর্কের অস্তিত্ব ছিলনা, যেখানে পুঁজিবাদী উত্পাদন সম্পর্ক সামন্ত সমাজে ইতিমধ্যেই জন্মাতে শুরু করেছিল) মূলত তারা একইরকম।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ অধ্যায় ২৪-২৯

২৯. সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন সম্পর্ক ও উত্পাদিকা শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব

পৃষ্ঠা ৪৩৩ কেবল সমাজতন্ত্রের অধীনে উত্পাদন সম্পর্ক ও উত্পাদিকা শক্তির “পারস্পরিক ক্রিয়া” নিয়ে আলোচনা করে কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে নয়। উত্পাদন সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে উত্পাদনের উপায়ের মালিকানা, উত্পাদনের প্রক্রিয়ায় জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, ও বন্টন প্রক্রিয়া। বলতে গেলে, মালিকানা ব্যবস্থায় বিপ্লব হচ্ছে ভিত্তি। উদাহরণস্বরূপ, যৌথ থেকে গণ মালিকানায় উত্তরণের মাধ্যমে সমগ্র জাতীয় অর্থনীতি সমগ্র জনগণের দ্বারা অবিভাজ্যরূপে হস্তগত হওয়ার পর, যদিও অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময়ের জন্য গণমালিকানা কার্যকর হবে, এভাবে হস্তগত সকল সংস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়ে যাবে। কর্তৃত্বের কেন্দ্রীয়-আঞ্চলিক বিভাজন কি কার্যকর করা উচিত হবে? কোন্ সংস্থা কার দ্বারা পরিচালিত হবে? ১৯৫৮ সালে কিছু মৌলিক নির্মাণ ইউনিটে পুঁজি বিনিয়োগে নির্দিষ্ট দায়িত্বের একটা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছিল। ফল ছিল এই ইউনিটসমূহে বিপুল উrসাহের উrসারন। যখন কেন্দ্র নিজ উদ্যোগের ওপর নির্ভর করতে পারেনা তাকে অবশ্যই সংস্থা অথবা এলাকার উrসাহ উrসারিত করতে হবে। যদি এমন উদ্দীপনা হতাশাগ্রস্ত হয় তা উত্পাদনকে বাঁধাগ্রস্ত করে।

অতঃপর আমরা দেখি গণমালিকানার অধীনে উত্পাদন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব সমাধা করার প্রয়োজনীয়তা বজায় রয়েছে। শ্রম ও বন্টন সম্পর্কের প্রক্রিয়ায় জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক যতদূর যায়, তাদেরকে অব্যাহতভাবে বিকশিত করা বেশী বেশী প্রয়োজন। এসব এলাকার জন্য এটা বরং বলা কঠিণ কোনটা ভিত্তি। শ্রমের প্রক্রিয়ায় মানব সম্পর্কের সম্পর্কে অনেককিছুই লেখা বাকী রয়েছে যেমন, নেতৃত্বের সমতাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণের ব্যাপার,

কিছু আইন কানুন ও প্রতিষ্ঠিত অনুশীলনের পরিবর্তন, “দুই অংশগ্রহণ[ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনার উত্পাদনশীল শ্রমে অংশ্রগ্রহণ], “তিন সংমিশ্রন”[ক্যাডার, শ্রমিক ও টেশনিশিয়ানদের প্রচেষ্টার সংমিশ্রণ] প্রভৃতি। আদি কমিউনের গণমালিকানা দীর্ঘদিন টিকে ছিল, কিন্তু সেসময়কালে জনগণের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক প্রচুর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, আর সবই শ্রমের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।

৩০. যৌথ থেকে গণমালিকানায় উত্তরণ অনিবার্য

পৃষ্ঠা ৪৩৫তে পাঠ কেবল বলছে যে দুই ধরণের গণমালিকানা বিষয়গতভাবে অনিবার্য, কিন্তু বলছেনা যে যৌথ থেকে গণমালিকানায় উত্তরণও বিষয়গতভাবে অনিবার্য। এটা হচ্ছে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা এমন একটা প্রক্রিয়া, যার প্রমাণ আমাদের দেশের কতগুলি এলাকায় রয়েছে। হোপেই প্রদেশের চেং এন কাউন্টির তথ্য থেকে দেখা যায় কমিউনের জন্মানো শিল্প ফসলগুলো বাড়ছে, সঞ্চয় স্তর ৪৫ শতকরায়[২০] উত্তীর্ণ করা হয়েছে, এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান হচ্ছে উচ্চ। এই পরিস্থিতি কি অব্যাহতভাবে বাড়া উচিত? আমরা যদি যৌথ মালিকানাকে গণ মালিকানায় পরিণত না করি এবং দ্বন্দ্ব সমাধা না করি, কৃষকদের জীবনযাত্রার মান শ্রমিকদের ছাড়িয়ে যাবে যা শিল্প ও কৃষি উভয়ের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

পৃষ্ঠা ৪৩৮-এ এটা বলছে যে “রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থাগুলো সমবায়গুলো থেকে মৌলিকভাবে পৃথক নয়…দুই ধরণের গণমালিকানা অস্তিত্বশীল…পবিত্র ও অলংঘনীয়।” পুঁজিবাদের  দিক থেকে যৌথ ও গণ মালিকানার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মধ্যে এই পার্থক্যগুলো মৌলিক হয়ে যায়। গ্রন্থ দুই ধরণের মালিকানাকে “পবিত্র ও অলংঘনীয়” বলছে। বৈর শক্তিসমূহের কথা বলার সময় এটা অনুমোদনযোগ্য, কিন্তু গণমালিকানার বিকাশের প্রক্রিয়ার কথা বলার সময় এটা ভুল। কোন কিছুকেই অপরিবর্তনশীল বলা যায়না। সমগ্র জনগণের মালিকানারও পরিবর্তনের একটা প্রক্রিয়া রয়েছে।

বেশ অনেক বছর পর, গণ কমিউনসমূহ সমগ্র জনগণের মালিকানায় পরিবর্তিত হওয়ার পর সমগ্র জাতি হয়ে দাঁড়াবে সমগ্র জনগণের মালিকানার একটা অবিভাজ্য ব্যবস্থা। এটা উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশে বিরাটভাবে গতি সঞ্চার করবে। একটা সময়কাল ধরে এটা সমগ্র জনগণের মালিকানার একটা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে বজায় থাকবে, এবং কেবল আরেকটা সময়কাল পরেই এটা সমগ্র জনগণের মালিকানার একটি কমিউনিস্ট ব্যবস্থায় পরিণত হবে। এভাবে, গণ মালিকানার নিজেকে অগ্রসর করতে হবে শ্রম অনুযায়ী বন্টন থেকে চাহিদা অনুযায়ী বন্টন-এ।

৩১. ব্যক্তি সম্পত্তি

পৃষ্ঠা ৪৩৯-এ এটা বলছে, “আরেকটি অংশ হচ্ছে ভোগ্যবস্তু…যা শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি সৃষ্টি করে।” এমন প্রকাশভঙ্গী জনগণকে এরকম ভাবতে চালিত করে যে “ভোগ্য” হিসেবে শ্রেণী বিভাজিত বস্তুসমূহ শ্রমিকদের কাছে বন্টিত হবে তাদের ব্যক্তি সম্পত্তি হিসেবে। এটা ভুল। ভোগ্যবস্তুসামগ্রীর একটা অংশ ব্যক্তি সম্পত্তি আরেকটা হচ্ছে গণসম্পত্তি, উদাহারণস্বরূপ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা সুবিধাদি, হাসপাতাল, শরীরচর্চা সুবিধাদিসহ উদ্যান প্রভৃতি। অধিকন্তু এই অংশটি বাড়ছে। অবশ্যই, এগুলো প্রতিটি শ্রমিকের উপভোগের জন্য। কিন্তু এগুলো ব্যক্তিসম্পত্তি নয়।

পৃষ্ঠা ৪৪০এ আমরা সামষ্টিক একত্রিতভাবে পাই কাজের আয় ও সঞ্চয়, গৃহ নির্মাণ, গৃহ সামগ্রী, ব্যক্তিগত ভোগের সামগ্রী আর অন্য সাধারণ সাজ সরঞ্জাম। এটা অসন্তোষজনক কারণ সঞ্চয়, আবাসন প্রভৃতি শ্রমজীবি জনগণের আয় থেকেই উদ্ভূত।

অনেক জায়গায়ই বইটি ব্যক্তিগত ভোগের কথাই বলে, সামাজিক ভোগের কথা নয় যেমন গণ কল্যাণ, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য প্রভৃতি। এটা একতরফা। আমাদের গ্রামাঞ্চলে আবাসন হচ্ছে যা হওয়া উচিত তার থেকে অনেক দূরে । গ্রামীণ গৃহ নির্মাণ পরিস্থিতির আমাদের ধারাবাহিকভাবে*[*কেবল ১৯৬৯ পাঠে] উন্নতি ঘটানো উচিত। আবাসিক নির্মাণে বিশেষত বড় শহরগুলোতে প্রধানত যৌথ সামাজিক শক্তিসমূহকে ব্যবহার করতে হবে ব্যক্তিদেরকে নয়। যদি একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, পরিণামে সেখানে কী ধরণের সমাজতন্ত্র আছে? কেউ কেউ বলে যে সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের থেকে অধিকতর বস্তুগত প্রণোদনা (Material Incentive) কেন্দ্রীক। এমন কথা সরলভাবে বলা যায় ভয়ংকর।

এখানে পাঠ বলছে যে যৌথখামার কর্তক উrপন্ন সম্পদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও সেই সাথে সহযোগী পেশাসমূহ রয়েছে। আমরা যদি এই সহযোগী পেশাসমূহকে গণমালিকানায় রূপান্তরের প্রস্তাব করতে না পারি কৃষকরা চিরকাল কৃষকই থাকবেন। একটি নির্দিষ্ট সামাজিক ব্যবস্থাকে একটা নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সুসংহত করতে হবে। কিন্তু সংহতকরণের একটা সীমা থাকতে হবে।যদি এটা চলতেই থাকে, ব্যবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে যে-মতাদর্শ তা বদ্ধ হয়ে যাবে নতুন পরিস্থিতিসমূহের সাথে তাদের চিন্তাকে খাপ খাওয়াতে জনগণের অক্ষমতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে।

একই পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত ও যৌথ স্বার্থসমূহের একীভূতকরণের উউল্লেখ রয়েছে। এটা বলছে “একীকরণ নিচের পদ্ধতির দ্বারা বাস্তবায়িত হয়ঃ সমাজের একজন সদস্যকে তার শ্রমের পরিমাণ ও গুণ অনুসারে ভাতা দেয়া হয় যাতে তার ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থের নীতিকে পূরণ করণ করতে পারে।” এখানে প্রয়োজনীয় রিজার্ভেশনের কোন আলোচনা না করে গ্রন্থ প্রথমেই ব্যক্তি স্বার্থকে স্থাপন করে। ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থের মূলনীতির এটা একটা একতরফা সমাধান।

পৃষ্ঠা ৪৪১ অনুসারে, “গণ ও ব্যক্তিগত স্বার্থসমূহ পরস্পর বিরোধী নয় এবং ক্রমান্বয়ে সমাধা করা সম্ভব।” এটা বৃথা উক্তি আর কোন কিছু সমাধান করেনা। আমাদের মতো দেশগুলিতে প্রতি কয়েক বছরে যদি জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্বসমূহ যথার্থভাবে তুলে ধরা না হয়, তারা কখনোই সমাধান পাবেনা।

৩২. সমাজতান্ত্রিক সমাজে দ্বন্দ্বই হচ্ছে চালিকাশক্তি

পৃষ্ঠা ৪৪৩ পঞ্চম অনুচ্ছেদ স্বীকার করছে যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে উত্পাদিকা শক্তিসমূহ ও উত্পাদন সম্পর্কসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বসমূহের অস্তিত্ব রয়েছে এবং এমন দ্বন্দ্বসমূহকে জয় করার কথা বলে। কিন্তু কোন ভাবেই পাঠ স্বীকার করেনা যে দ্বন্দ্বসমূহ হচ্ছে চালিকাশক্তি।

পরের অনুচ্ছেদ গ্রহণযোগ্য; যাহোক, সমাজতন্ত্রের অধীনে মানবিক সম্পর্কের কিছু দিক এবং অর্থনীতি পরিচালনার কিছু ধরণই শুধু নয় বরং খোদ মালিকানা ব্যবস্থার সমস্যাও (উদাহারণস্বরূপ, দুই ধরণের মালিকানা) উত্পাদিকা শক্তির বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

পরের অনুচ্ছেদের দৃষ্টিকোণ খুবই দ্ব্যার্থতাবোধক। এটা বলছে, “সমাজতন্ত্রের অধীনে দ্বন্দ্বসমূহ অমীমাংসেয় নয়”। এটা দ্বন্দ্বতত্ত্বের নিয়মসমূহের সাথে একমত পোষণ করেনা, যা মনে করে সকল দ্বন্দ্ব অমীমাংসেয়। কোথায় কবে দ্বন্দ্ব মীমাংসেয় ছিল? কোনটা বৈর, কোনটা অবৈর, কিন্তু এটা কোনভাবেই চিন্তা করা যায়না যে অমীমাংসেয় ও মীমাংসেয় দ্বন্দ্ব রয়েছে।

সমাজতন্ত্রের অধীনে*[* ১৯৬৭ পাঠের অনুবাদক মন্তব্য করছেন যে মাও সম্ভবত অর্থ করছেন “কমিউনিজমের অধীনে”] কোন য্দ্ধু নাও থাকতে পারে, কিন্তু তখনো সংগ্রাম থাকে, জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংগ্রাম, এক শ্রেণী কর্তৃক আরেকটিকে উrখাতের বিপ্লব থাকেনা কিন্তু বিপ্লব তখনো থাকে। সমাজতন্ত্র থেকে কমিউনিজমে উত্তরণ বিপ্লবী। কমিউনিজমের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উত্তরণও। তখন প্রযুক্তিগত বিপ্লব ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব থাকে। কমিউনিজমকে অতি অবশ্যই বহু স্তর ও অনেক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

এখানে গ্রন্থ যথার্থ সময়ে দ্বন্দ্বসমূহ সমাধা করতে জনগণের “ইতিবাচক কর্ম” এর উপর নির্ভর করার কথা বলছে। “ইতিবাচক কর্ম”-এর মধ্যে জটিল সংগ্রামসমূহ অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিত।

“সমাজতন্ত্রের অধীনে এমন কোন শ্রেণী নেই যে জোরালোভাবে বাতিল অর্থনৈতিক সম্পর্কসমূহকে রক্ষা করার জন্য পরিকল্পনা করছে।” সঠিক, কিন্তু একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে এখনো রক্ষনশীল স্তর রয়েছে এবং “কায়েমী স্বার্থবাদী গ্রুপ”-এর মতো কিছু। এখনো সেখানে মানসিক ও কায়িক শ্রমের মধ্যে, শহর ও গ্রামের মধ্যে এবং শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও এগুলো বৈর দ্বন্দ্ব নয়, সংগ্রাম ছাড়া এগুলো সমাধা হবেনা।

আমাদের ক্যাডারদের ছেলেমেয়েরা হতাশার একটা কারণ। জীবন ও সমাজের তাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে, তথাপি তাদের অহংকার বিবেচনাযোগ্য এবং তাদের বিরাট হামবড়া মনোভাব রয়েছে। তাদেরকে শিক্ষিত হতে হবে তাদের পিতামাতা অথবা অতীতের শহীদদের ওপর নির্ভর না করার জন্য বরং সমগ্রভাবে নিজেদের ওপর নির্ভর করতে।

একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজে সর্বদাই অগ্রসর ও পশ্চাদপদ ব্যক্তিসমূহ রয়েছে; যারা যৌথ প্রচেষ্টার ওপর স্থির সংকল্প অনুগত, পরিশ্রমী ও আন্তরিক, উদ্যমে সতেজ ও জীবন্ত, আরার যারা খ্যাতি ও ভাগ্যের জন্য কাজ করছেন, ব্যক্তিগত লাভ ও নিজের জন্য, অথবা যারা উদাসীন ও বিষন্ন। সমাজতান্ত্রিক বিকাশের প্রতিটি সময়কালের এক একটা গ্রুপ থাকতে বাধ্য যারা পশ্চাদপদ উত্পাদন সম্পর্ক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানাদি বজায় রাখায় আকাংখিতর চেয়ে বেশী কিছু। অনেক অনেক প্রশ্নে উন্নতিশীল মাঝারি কৃষকদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে। তারা বিকাশসমূহের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা, তাদের কেউ কেউ এমন বিকাশসমূহকে প্রতিরোধ করে যেমনটা আট শব্দ সংবিধান[২১] নিয়ে বিতর্কে প্রমাণিত যা কুওমিনতাং গ্রামীন এলাকাগুলোতে উন্নতিশীল মাঝারি কৃষকদের সাথে হয়েছিল।

পৃষ্ঠা ৪৫৩ এর শেষ অনুচ্ছেদ বলছে “সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা হচেছ সমাজতান্ত্রিক সমাজের বিকাশের শক্তিশালী চালিকাশক্তি।” বিষয়টা তা নয়। দ্বন্দ্ব হচ্ছে চালিকাশক্তি আর সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা হচ্ছে দ্বন্দ্বসমূহ সমাধানের পদ্ধতি।

৩৩. জ্ঞানের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া

পৃষ্ঠা ৪৪৬ অনুচ্ছেদ ২ বলছে যে মালিকানা গণ হওয়ার সাথে “জনগণ তাদের নিজেদের সমাজের অর্থনৈতিক সম্পর্কসমুহের প্রভুতে পরিণত হয়।” এবং “দখল বজায় রাখতে পারে এবং এসব নিয়মকে পূর্ণভাবে ও সচেতনভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম।” এটা লক্ষ্য করা উচিত যে এটার একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নিয়মসমূহের উপলব্ধি সর্বদা শুরু হয সংখ্যালঘুর উপলব্ধি হিসেবে সংখ্যাগুরুর জ্ঞানে পরিণত হওয়ার আগে। অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানে যাওয়ার জন্য অনুশীলণ ও অধ্যয়ণের একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একে যেতে হবে। শুরুতে কারো কোন জ্ঞান ছিলনা। পূর্বজ্ঞানের কখনো অস্তিত্ব ছিলনা। জনগণকে ফল পাওয়ার জন্য অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সমস্যা দেখা দিলে ব্যর্থতা মোকাবেলা করা, কেবলমাত্র এমন একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জ্ঞান ক্রমান্বযে অগ্রসর হতে পারে। আপনি যদি কোন জিনিসের অথবা ঘটনার বিকাশের বিষয়গত নিয়মসমূহ সম্পর্কে জানতে চান আপনাকে অবশ্যই অনুশীলণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, একটা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করতে হবে, সাফল্য ও ব্যর্থতাকে তুলনা করতে হবে, নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন ও অধ্যয়ণ, বহু সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যাওয়া; অধিকন্তু নির্ভুল অধ্যবসায়ী গবেষণা চালাতে হবে। নিয়মসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্ঞান হওয়ার অন্য কোন উপায় নেই। যারা কেবল বিজয় দেখেন কিন্তু পরাজয় দেখেননা তাদের পক্ষে এই নিয়ম জানা সম্ভব নয়।

এই নিয়মসমূহ “পূর্ণভাবে ও সচেতনভাবে ধারণ করা ও প্রয়োগ করা” সহজ নয়। ৪৪৬ পৃষ্ঠায় গ্রন্থ এঙ্গেলসকে উদ্ধৃত করেঃ “কেবলমাত্র এই সময় পূর্ণ সচেতন ব্যক্তি নিজে ইতিহাস সৃষ্টি করতে শুরু করে। প্রথম বারের মতো বিপুল পরিমাণে এবং এ পর্যন্ত যতটা তার চেয়ে বেশী পরিমাণে জনগন ফল সৃষ্টি করতে পারে যা তার আকাংিখত ছিল এতদিন।” “শুরু করে” আর “এপর্যন্ত যতটা তার চেয়ে বেশী” হচ্ছে আপেক্ষিকভাবে সঠিক। বহিরঙ্গ ও সারের মধ্যে দ্বন্দ্বকে গ্রন্থ স্বীকার করেনা। সারবস্তু সর্বদা বহিরঙ্গের ভেতরে থাকে এবং বহিরঙ্গের মাধ্যমে ছাড়া উন্মোচিত হতে পারেনা। পাঠ এই ধারণা প্রকাশ করেনা যে একজন ব্যক্তির জন্য নিয়ম জানার জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার। অগ্রবর্তী দল কোন ব্যতিক্রম নয়।

৩৪. ইউনিয়ন ও একক নেতৃত্ব ব্যবস্থা

পৃষ্ঠা ৪৫২তে ট্রেড ইউনিয়নসমূহের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে মূল গ্রন্থ বলেনা যে ইউনিয়নসমূহের প্রাথমিক কর্তব্য হচ্ছে উত্পাদন বিকশিত করা; এটা রাজনৈতিক শিক্ষা জোরালো করার জন্য উপায়ের ওপর আলোচনা করেনা; এটা স্রেফ কল্যাণের ওপরই অতিগুরুত্ব প্রদান করে।

সমগ্র পাঠ জুড়ে “একক নেতৃত্ব ব্যবস্থা নীতি অনুসারে উত্পাদন ব্যবস্থাপনা”র কথা বলে। পুঁজিবাদী দেশসমূহে সকল সংস্থা এই মূল নীতিকে কার্যকর করে। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর ও পুঁজিবাদী দেশগুলোর সংস্থাগুলোর পরিচালনার মূলনীতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকা উচিত। আমরা চীনে পার্টির পরিচালনাধীনে কারখানা নেতৃত্ব দায়িত্ব কার্যকর করার মাধ্যমে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনার থেকে কঠোরভাবে আমাদের পদ্ধতিসমূহ আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি।

৩৫. মৌলিক নীতিমালা ও নিয়মকানুন থেকে শুরু করা মার্কসবাদী পদ্ধতি নয়

দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে প্রচুর পরিমাণে নিয়মকানুন স্থাপন করা হয়েছে। পুঁজি গ্রন্থে পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিশে¬ষণ বহিরঙ্গ দিয়ে শুরু হয়, সারবস্তুর সন্ধান করে; কেবল তারপরই সারবস্তু ব্যবহার করে বহিরঙ্গকে ব্যাখ্যা করতে, এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করে কার্যকর সারাংশ ও সিদ্ধান্ত রচনা করার মাধ্যমে। কিন্তু পাঠ কোন বিশে¬ষণ করেনা। এর গঠণে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। এটা সর্বদা আইনকানুন, মূলনীতি, নিয়ম ও সংজ্ঞা থেকে শুরু করে, একটা পদ্ধতিবিদ্যা যা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ সর্বদাই বিরোধিতা করেছে। মূলনীতি ও নিয়মসমূহের ফলকে অবশ্যই বিশে¬ষণ ও গভীর অধ্যয়নের কাছে সমর্পিত হতে হবে; কেবল তখনই মূলনীতিসমূহ ও নিয়ম জন্ম নিতে পারে। মানব জ্ঞান সর্বদাই প্রথমে বহিরঙ্গের মুখোমুখি হয়, সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে কেউ মূলনীতি ও নিয়ম সন্ধান করে। গ্রন্থ করে তার বিপরীত। এর পদ্ধতি হচ্ছে অবরোহ, বিশ্লেষনাত্মক নয়। আনুষ্ঠানিক যুক্তি অনুসারে, “মানুষ সবাই মারা যাবে। জনাব চ্যাং একজন ব্যক্তি। তাই জনাব চ্যাং মারা যাবেন।”এটা এই প্রতিজ্ঞা থেকে উদ্ভূত একটা উপসংহার যে সকল মানুষ মারা যায়। এটা অবরোহ পদ্ধতি। প্রতিটি প্রশ্নে গ্রন্থ প্রথমে সংজ্ঞা প্রদান করে, যা তারপর একে বড় প্রতিজ্ঞা ও হেতু হিসেবে সেখান থেকে নেয়, এটা বুঝতে ব্যর্থ হয় যে একটা বড় প্রতিজ্ঞা হতে হবে একটা প্রশ্নে গবেষণার ফল। মূর্ত গবেষণার মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগে মূলনীতি ও নিয়মসমূহ আবিস্কৃত ও প্রমাণিত হয়না।

৩৬. অগ্রসর অভিজ্ঞতা কি প্রচেষ্টা ছাড়া জনপ্রিয়করণ সম্ভব?

পৃষ্ঠা ৪৬১, অনুচ্ছেদ ২ বলছে, “সমাজতান্ত্রিক জাতীয় অর্থনীতিতে বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জন, প্রযুক্তিগত আবিস্কার, এবং অগ্রসর অভিজ্ঞতা সকল সংস্থায় জনপ্রিয়করণ করা সম্ভব সামান্যতম কষ্ট ছাড়াই।” এটা বাস্তবতা থেকে দূরে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে এখনো “প্রাতিষ্ঠানিক অধিস্বামীগণ” রয়েছে যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণার অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণ  করে এবং নয়া শক্তিগুলোকে নিপীড়ণ করে। তাই বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জনগুলো সামান্যতম কষ্ট ছাড়াই সরলভাবে জনপ্রিয়করণ হয়না। এমনতর কথা বলার ভঙ্গী এটা স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয় যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে দ্বন্দ্ব রয়েছে। যখনই নতুন কোন জিনিস উদ্ভূত হয় এটা বাঁধাপ্রাপ্ত হতে বাধ্য, সম্ভবত কারণ লোকে এর সাথে অনভ্যস্ত অথবা বোঝেনা, অথবা এটা একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের স্বার্থের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করে। উদাহারণস্বরূপ, ঘনিষ্ঠ চারা ও গভীর নালার আমাদের অনুশীলনের নিজের কোন শ্রেণীপ্রকৃতি নেই, তথাপি একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের কতর্ৃৃক তা বিরোধিতা ও প্রতিরোধ করা হয়েছিল। অবশ্যই, সমাজতান্ত্রিক সমাজে এমন বাঁধাদানকারী পরিস্থিতিসমূহ পুঁজিবাদী সমাজের থেকে মৌলিকভাবে পৃথক।

৩৭. পরিকল্পনা প্রণয়ণ

পৃষ্ঠা ৪৬৫ এঙ্গেলসকে উদ্ধৃত করেছে, “সমাজতন্ত্রের অধীনে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সামাজিক উত্পাদন করা সম্ভব।” এটা সঠিক। পুঁজিবাদী সমাজে জাতীয় অর্থনীতির ভারসাম্য অর্জিত হয অর্থনৈতিক সংকটসমূহের মাধ্যমে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে পরিকল্পনা প্রনযনের মাধ্যমে ভারসাম্য সৃষ্টি করার সম্ভাবনাকে একটা বাস্তবতায় পরিণতা করা সম্ভব। কিন্তু এটা অস্বীকার না করা যে এই সম্ভাবনাার কারণে, প্রয়োজনীয় অনুপাতের এই জ্ঞান অবশ্যই একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসবে। এখানে গ্রন্থ বলছে, “স্বতস্ফ’র্ততা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ উত্পাদনের উপায়ের গণমালিকানার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।” এটা মনে করা  উচিত নয় যে, যাহোক, ঐ স্বতষ্ফ’র্ততা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ সমাজতান্ত্রিক সমাজে অস্তিত্বমান নয়। নিয়মের ওপর আমাদের জ্ঞান হঠাৎ পুরো সঠিক হয়না। প্রকৃত কাজ আমাদের বলে যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে অমুক অমুক লোক অথবা একটা পৃথক গ্রুপ কর্তৃক অমুক অমুক পরিকল্পনা রয়েছে। কেউ বলতে পারেনা যে একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের পরিকল্পনা নিয়মসমূহের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে। নিশ্চিতভাবে, কিছু পরিকল্পনা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে অথবা মূলত সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যেখানে অন্যগুলো হবেনা অথবা মূলত হবেনা।

সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে তুলনায় বিকাশের আাঁকাবাঁকা পথে অনুপাতসমূহের জ্ঞানের কোন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই মনে করা হচ্ছে একটা আধিবিদ্যক দৃষ্টিকোণ। স্বাধীনতা হচ্ছে প্রয়োজনের স্বীকৃতি, কিন্তু প্রয়োজনীয়তা এক পলকে অনুভব করা যায়না। পৃথিবীর কোন স্বাভাবিক পূর্বজ্ঞানী নেই, সমাজতান্ত্রিক সমাজে উত্তীর্ণ হয়েও কেউ পূর্বজ্ঞানী হয়না। রাজনৈতিক অর্থনীতির এই পাঠ কেন কিছুটা আগে প্রকাশিত হলনা? প্রকাশনার পর কেন এটা বারংবার সংশোধন করা হয়েছে? এটা কি এই কারণে নয় যে অতীতে জ্ঞান পুরো খাঁটি ছিলনা এবং এমনকি বর্তমানেও না? আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা দেখুন, শুরুতে আমরা বুঝতামনা সমাজতন্ত্রকে কীভাবে কার্যকর করতে হয়; ক্রমান্বয়ে অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা সামাণ্য বুঝতে সমর্থ হয়েছি, কিন্তু যথেষ্ট নয়। আমরা যদি মনে করি এটা যথেষ্ট তখন কিছুই করার বাকী থাকবেনা!

পৃষ্ঠা ৪৬৬তে এটা বলছে যে সামাজতন্ত্রের একটা সুবিদিত চিত্র হচ্ছে, “যথানুপাতের সচেতন নিয়মিত বজায় রাখা।” এটা উভয়ত একটা দায়িত্ব ও চাহিদা, এবং পূরণ করার মতো কঠিন একটা জিনিস। এমনকি স্তালিন বললেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিকল্পনাসমূহকে মনে করা যায়না যে নিয়মসমূহের চাহিদাকে ইতিমধ্যে পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করেছে।

“যথানুপাতের নিয়মিত বজায় রাখা” একইসঙ্গে ভারসাম্যহীনতার নিয়মিত চেহারা। যখন যথানুপাত অর্জিত হয়না তখন জিনিসকে আনুপাতিকভাবে রাখার কর্তব্য উত্থিত হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশের প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীনতার নিয়মিত চেহারা আমাদেরকে আনুপাতিকতা ও সামগ্রিকতা ধরে রেখে কোন কিছুর ভারসাম্য করাতে চায়। উদাহারণস্বরূপ, অর্থনীতি বিকশিত হওয়ার সাথে টেকনিকাল কর্মকর্তা ও ক্যাডারদের অভাব সর্বত্র অনুভূত হয় এবং চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব আবির্ভূত হয়। এটা ফলশ্রুতিতে এই দ্বন্দ্ব সমাধান করতে আমাদেরকে আরো বিদ্যালয় পরিচালনা করতে ও অধিকতর ক্যাডার ট্রেইন করতে সক্ষম করে তোলে। ভারসাম্যহীনতা ও অসমতার সম্মুখীন হওয়ার পর্ইে জনগণ বিষয়গত নিয়মসমূহ অধিকতর উপলব্ধি করে।

পরিকল্পনা প্রনয়ণে যদি কোন হিসাব নিকাশ করা না হয়, আমরা যদি কোনকিছুকে নিজের মতো চলতে দেই, অথবা অতিসতর্ক হয়ে প্রত্যেকটি জিনিসকে পানির মতো সহজ দাবি করি, তাহলে আমাদের পদ্ধতিসমূহ সফল হবেনা এবং ফলশ্রুতিতে আনুপাতিকতা ধ্বংস হবে।

একটি পরিকল্পনা হচ্ছে একট ভাবাদর্শিক রূপ। ভাবাদর্শ হচ্ছে বাস্তবতার প্রতিফলন, কিন্তু এটা বাস্তবতার ওপর ক্রিয়াও করে। আমাদের অতীত পরিকল্পনাসমূহ স্থির করেছিল যে আমাদের সমুদ্র তীর অঞ্চলে কোন নতুন শিল্প স্থাপন করা হবেনা, এবং ১৯৫৭ পর্যন্ত কোন নির্মাণ সেখানে হয়নি। আমরা সাত বছর অপচয় করেছি। ১৯৫৮ সালের পর্ইে কেবল বড় নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই গত দুই বছর বিরাট বিকাশ অবলোকন করেছে। এভাবে, অর্থনৈতিক বিকাশ ও তার হারের ওপর ভাবাদর্শিক রূপের যথা পরিকল্পনার বিরাট প্রভাব পড়েছে।

৩৮. উত্পাদনের উপায়ের উত্পাদনে অগ্রাধিকার বৃদ্ধি; শিল্প ও কৃষির যুগপৎ বিকাশ

পৃষ্ঠা ৪৬৬তে উত্পাদনের উপায়ের উত্পাদনের অগ্রাধিকার বৃদ্ধির সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।

উত্পাদনের উপায়ের উত্পাদনে অগ্রাধিকার বৃদ্ধি সকল সমাজের জন্য সাধারণ বর্ধিত পুনরূত্পাদনের একটা অর্থনৈতিক নিয়ম। পুঁজিবাদী সমাজে উত্পাদনের উপায়ের উত্পাদনে কোন অগ্রাধিকার না থাকলে কোন বর্ধিত পুনরূত্পাদন থাকতে পারেনা। স্তালিনের আমলে, ভারী শিল্পের অগ্রাধিকার বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্বের কারণে পরিকল্পনাসমূহে কৃষি অবহেলিত হয়েছিল। বিগত কিছু বছরে পুর্ব ইউরোপে একই ধরণের সমস্যা হয়েছিল। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল ভারী শিল্পের অগ্রাধিকার বিকাশকে শিল্প ও কৃষির যুগপr বিকাশকে কার্যকর করতে শর্ত বানানো, সেই সাথে অন্যকিছু যুগপr কর্মসূচী, যার প্রতিটির মধ্যে আবার একটা নেতৃত্বকারী দিক রয়েছে। কৃষি লাভ করতে না পারলে কম সমস্যাই সমাধা হবে। চার বছর হয়েছে আমরা শিল্প ও কৃষির যুগপr বিকাশের প্রস্তাব দিয়েছি, যদিও এটা সত্যিকারভাবে কার্যকর হয়েছে ১৯৬০ সালে। কৃষিকে কতটা উচ্চভাবে আমরা দেখেছি তা প্রকাশিত হয়েছে কৃষিতে আমাদের ইস্পাত সামগ্রী বন্টনের পরিমাণে। ১৯৫৯ সালে আমরা কেবল ৫,৯০,০০০ টন বন্টন করেছি কিন্তু এই বছর (পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণসহ) আমরা ১.৩ মিলিয়ন টন বন্টন করেছি। এটা সত্যিকারভাবে শিল্প ও কৃষির যুগপৎ বিকাশ।

এখানে গ্রন্থ উউল্লেখ করছে যে ১৯২৫ এবং ১৯৫৮র মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে উত্পাদনের উপায়ের উত্পাদন বেড়েছে ১০৩ গুণ, যেখানে ভোগ্য সামগ্রী বেড়েছে ১৫.৬ গুণ। প্রশ্ন হচ্ছে ১০৩ঃ১৫.৬ অনুপাত কি ভারী*[*১৯৬৭ পাঠে]শিল্পের বিকাশে লাভজনক অথবা নয়? আমরা যদি ভারী শিল্পকে দ্রুত বিকাশ করতে চাই প্রত্যেককে উদ্যোগ প্রদর্শন করতে হবে এবং উচ্চ উদ্যম বজায় রাখতে হবে। এবং আমরা যদি তা চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই শিল্প ও কৃষিকে যগপr বিকাশের সুযোগ দিতে হবে এবং হালকা ও ভারী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা।

এটা করে আমরা কৃষি, হালকা শিল্প ও ভারী শিল্পকে একইসাথে একটা উচ্চ হারে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেই, আমরা এর নিশ্চয়তা বিধান করতে পারি যে জনগণের জীবনযাত্রা ভারী শিল্পের সাথে একত্রিতভাবে উপযুক্তভাবে বিকশিত হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিজ্ঞতা, আমাদের নিজেদের চেয়ে কম নয়, প্রমাণ করে যে যদি কৃষি বিকশিত না হয়, যদি হালকা শিল্প বিকশিত না হয় তা ভারী শিল্পের বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৩৯. “বন্টন হচ্ছে নির্ধারক-একটা ভ্রান্ত মত

অধ্যায় ২০-এ এটা বলছে যে “রাষ্ট্র-পরিচালিত শিল্পে জোয়ারের শর্ত ছিল সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থের প্রবণতাকে ব্যবহার করা।” অধ্যায় ২১-এ এটা বলছে, “শ্রম অনুযায়ী বন্টনের অর্থনৈতিক নিয়ম (একটা নিয়ম যা শ্রমিকের ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থকে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের স্বার্থের সাথে যুক্ত করে)ব্যবহার করে পূর্ণভাবে অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ পরিচালনা করা জাতীয় শিল্পায়ণের জন্য সংগ্রামে একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকর সেবা প্রদান করার জন্য।” অধ্যায় ২৫-এ এটা বলছে, “সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের লক্ষ্যসমূহ শ্রমিকদেরকে উত্পাদন বাড়াতে সতেজ প্রচেষ্টায় মনোযোগী হতে এবং বস্তুগত স্বার্থ থেকে নিজেদের শ্রমের ফল নিয়ে ব্যাপৃত হতে কর্মীদের চালিত করে। সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশে এটা একটা শক্তিশালী চালিকাশক্তি।” “ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থে ব্যাপৃত হওয়া” থেকে এভাবে পরম একটা কিছু সৃষ্টি করা বাইরে নিয়ে যাওয়া এই রূপে, ব্যক্তিতাবাদ বৃদ্ধির বিপদ সৃষ্টি করতে বাধ্য।

পৃষ্ঠা ৪৫২ বলছে যে “শ্রম অনুযায়ী বন্টনের নিয়ম” হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের অন্যতম নির্ধারক চালিকাশক্তি যা ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থ থেকে সকল শ্রমিককে উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করতে ব্যাপৃত হতে চালিত করে।” কেউ প্রশ্ন না করে পারবেনা, যদি সমাজতন্ত্রের মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়ম সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশের গতিমুখকে নির্ধারণ করে তাহলে কীভাবে তা থেকে আসে যে ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থ উত্পাদনের কথিত নির্ধারক চালিকাশক্তি হতে যাচ্ছে? ভোগ্যসামগ্রী বন্টনকে একটা নির্ণায়ক চালিকাশক্তি বলা হচ্ছে বন্টনকে নির্ণায়ক বলার ভুল মত। মার্কস তাঁর গোঁথা কর্মসূচীর সমালোচনায় বলেন “প্রথম ক্ষেত্রে বন্টন হওয়া উচিত উত্পাদনের উপায়ের বন্টন যাতে হাত হচ্ছে উত্পাদনের উপায়? এটা একটা নির্ধারক প্রশ্ন। উত্পাদনের উপায়ের বন্টন হচ্ছে যা ভোগ্যসামগ্রীর বন্টনকে নির্ধারন করে।” ভোগ্য সামগ্রীর বন্টনকে নির্ণায়ক চালিকাশক্তি মনে করা মার্কসের সঠিক মতের বিকৃতি এবং একটি মারাত্মক তাত্ত্বিক ভুল।

৪০.রাজনীতি কমান্ডে এবং বৈষয়িক উrসাহ প্রদান  (Politics in Command And Material Incentive)

পৃষ্ঠা ৪৫২, অনুচেছদ ২ পার্টি সংগঠনকে স্থানীয় অর্থনৈতিক শাখার পর স্থান দেয়; শেষেরটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ প্রশাসনের অধীনে প্রধানে পরিণত হয়। স্থানীয় পার্টি সংগঠণসমূহ ঐসকল এলাকায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেনা, সকল ইতিবাচক শক্তিকে প্রচুর পরিমাণে সমাবেশিত করতে কার্যকরভাবে নিজেদের অসম্ভব করে তোলার মাধ্যমে। গ্রন্থ পৃষ্ঠা ৪৫৭তে যদিও জনগনের সক্রিয় ভূমিকার স্বীকৃতি দেয় তাসত্ত্বেও বলছে, “কমিউনিস্ট নির্মাণ ত্বরান্বিতকরণের অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচেছ সংগ্রামে জনগণের অংশগ্রহণে জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের পরিকল্পনাকে সম্পাদন ও অতিসম্পাদন করতে।” পৃষ্ঠা ৪৪৭ ও বলছে, “কৃষির বিকাশে একটি নির্ধারক দিক হচ্ছে খামার-কর্মীর উদ্যোগ।” জনগণই হচ্ছে ইতিহাসের স্রষ্টা এই মূলনীতির মুখোমুিখ দাঁড়ায় গণসংগ্রামকে “একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান” মনে করা। কোন পরিস্থিতিতেই ইতিহাসকে এমনভাবে তুলে ধরা যায়না যাকে জনগণের চেয়ে বরং পরিকল্পনাবিদরা সৃষ্টি করে।

ঠিক পরপরই গ্রন্থ এই বিষয়টি উত্থাপন করে: “শুরু করতে আমাদের অবশ্যই বৈষয়িক প্রণোদনা (Material Incentive) ব্যবহার করা উচিত।” এটা এমনভাবে দেখায় যেন জনগণের সক্রিয় ভূমিকাকে বস্তুগত স্বার্থ দিয়ে উrসাহিত করতে হবে। প্রতিটি সুযোগে গ্রন্থ ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থ তুলে ধরে যেন এটা জনগণকে আনন্দদায়ক ভবিষ্যতের কথা বলে ঘুম পাড়ানোর একটা আকর্ষণীয় উপায়। বিপুল সংখ্যক অর্থনৈতিক শ্রমিক ও নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তার আত্মিক পরিস্থিতির এটা একটা প্রতিফলন এবং রাজনৈতিক মতাদর্শিক কাজে গুরুত্বপ্রদানের ব্যর্থতার। এরকম পরিস্থিতিতে বৈষয়িক প্রণোদনার ওপর নির্ভর করার কোন বিকল্প নেই। “প্রত্যেকে দেবে সাধ্যমত, প্রত্যেকে নেবে শ্রম অনুযায়ী।” স্লোগানটির প্রথম অর্ধের অর্থ হচ্ছে প্রতিটি বিরাটতম প্রচেষ্টা উত্পাদনে সম্প্রসারিত করতে হবে অবশ্যই। কেন শে¬াগানটির দুই অর্ধাংশকে আলাদা করা এবং সর্বদা একতরফাভাবে বস্তুগত প্রণোদনার কথা বলা? বৈষয়িক স্বার্থের এই ধরণের প্রচার পুঁজিবাদকে অপরাজেয় বানিয়ে ফেলবে!

৪১.ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতা

পৃষ্ঠা ৪৩২, অনুচ্ছেদ ১-এ ভুল করা হয়েছে। পুঁজিবাদী প্রযুক্তির বিকাশ কিছু দিক থেকে সুষম, আর ভারসাম্যহীন অন্য দিক থেকে। বিষয় হচ্ছে পুঁজিবাদের অধীনে ও সমাজতন্ত্রের অধীনে প্রযুক্তিগত বিকাশে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতা সারগতভাবে পৃথক। সমাজতন্ত্রের অধীনে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতা রয়েছে; উদাহারণস্বরূপ, মুক্তির প্রথম পর্যায়ে খোলাখুলি ২০০র বেশী ভুতাত্ত্বিক প্রজেক্ট শ্রমিক আমাদের ছিল, এবং সবমিলিয়ে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের তুলনায় অপ্রতুল ছিল প্রত্যাশা। কয়েক বছরের তীব্র প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি ব্যবহারিকভাবে শুদ্ধিকরণ হল যখন বিশুদ্ধ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিল। বর্তমানে চীনে কায়িক শ্রমের নিরংকুশ গুরুত্ব রয়েছে, একটা পরিস্থিতি উত্পাদন বৃদ্ধি ও শ্রমের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একারণে আমাদের একটা ব্যাপক প্রযুক্তিগত বিপ্লব পরিচালনা করতে হবে এবং এই ভারসাম্যহীনতা সমাধান করতে হবে। প্রতিটা নয়া টেকনিকাল বিভাগের আবির্ভাবের সাথে প্রযুক্তিগত বিকাশের ভারসাম্যহীনতা পুনরায় দেখা দিতে বাধ্য। উদাহারণস্বরূপ, আমরা এখন উচ্চতর প্রযুক্তি সমাধান করার চেষ্টা করছি, তাই আমরা অনেক জিনিসের অসামঞ্জস্যতার বিষয়ে সচেতন। কিন্তু এই সোভিয়েত পাঠ পুঁজিবাদের অধীনে একটা মাত্রার ভারসাম্যকেই শুধু অস্বীকার করেনা, বরং সমাজতন্ত্রের অধীনে একটা মাত্রার ভারসাম্যহীনতাও।

প্রযুক্তি ও অর্থনীতি উভয়ই এইভাবে বিকশিত হয়। গ্রন্থ সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশের তরঙ্গধর্মী অগ্রগমণের সাথে অপরিচিত মনে হয় এবং খাঁটি সরলরৈখিক ও পতনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিকাশের কথা বলে। এটা অচিন্ত্যনিয়। বিকাশের কোন রেখাই সোজা নয়, এটা তরঙ্গ অথবা সর্পিল আকৃতির। এমনকি আমাদের অধ্যয়নেরও সেইরকম ছাঁচ রয়েছে। অধ্যয়নের পূর্বে আমরা অন্য কিছু করি। পরে আমাদের কয়েক ঘন্টার জন্য অন্য কিছু বিশ্রাম নিতে হবে। দিনরাত আমরা অধ্যয়ন অব্যাহত রাখতে পারিনা। আমরা একদিন বেশী অধ্যয়ন করি, পরের দিন কম। অধিকন্তু, আমাদের দৈনন্দিন অধ্যয়নে কখনো আমরা মন্তব্য করার মতো বেশি কিছু পাই, কখনো কম। এগুলো সবই তরঙ্গাকৃতি ছাঁচেরঃ উত্থান ও পতন। ভারসাম্য ভারসাম্যহীনতার সাথে আপেক্ষিক। ভারসাম্যহীনতা ছাড়া কোন ভারসাম্য নেই। সকল জিনিসের বিকাশ ভারসাম্যহীনতা দ্বারা বৈশিষ্টমণ্ডিত। এই কারণে ভারসাম্যের চাহিদা রয়েছে। বিবিধ এলাকা ও বিভাগের সকল অংশে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার দ্বন্দ্ব রয়েছে, চিরকাল উদ্ভূত হচ্ছে, চিরকাল সমাধা হচ্ছে। যখন প্রথম বছরের জন্য Raid on the White Tiger Regiment- 1971.jpg.CROP.article920-large1কোন পরিকল্পনা হয়, পরের বছরের জন্যও আরেকটা হতে হবে। একটা বার্ষিক পরিকল্পনার জন্য একটা ত্রৈমাসিক পরিকল্পনা প্রয়োজন যার আবার শেষে দরকার মাসিক পরিকল্পনা। বার মাসের প্রতি মাসে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাধা করতে হবে। পরিকল্পনাকে অব্যাহতভাবে সংশোধন করতে হয়, সুনির্দিষ্টভাবে কারণ নয়া ভারসাম্যহীনতা উদ্ভূত হয়।

কিন্তু গ্রন্থ বহুবিধ সমস্যা গবেষণায় দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি পর্যাপ্তভাবে প্রয়োগ করেনি। জাতীয় অর্থনীতির পরিকল্পিত আনুপাতিক বিকাশের নিয়মসমূহের প্রতি নিবেদিত এই অধ্যায় সম্পূর্ণ দীর্ঘ, তবুও ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার মধ্যে দ্বন্দ্বের কোন উল্লেখ করা নেই।

সমাজতান্ত্রিক সমাজের জাতীয় অর্থনীতির পরিকল্পিত আনুপাতিক বিকাশ থাকতে পারে যা ভারসাম্যহীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ সৃষ্টি করে। যাহোক, ভারসাম্যহীনতা দূর হয়না। “অমসৃনতা হচ্ছে কোন জিনিসের স্বভাব।” যেহেতু ব্যক্তিগত মালিকানা অপসারিত হয়েছিল অর্থনীতির পরিকল্পিত সংগঠন থাকা সম্ভব ছিল। তাই, বহু আপেক্ষিক অস্থায়ী*[*কেবল ১৯৬৯ পাঠে] ভারসাম্য সৃষ্টি করতে ভারসাম্যহীনতার বিষয়গত নিয়মসমূহের সচেতন নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করা সম্ভব ছিল।

যদি উত্পাদিকা শক্তিসমূহ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে, উত্পাদন সম্পর্ক উত্পাদিকা শক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবেনা; উপরিকাঠামো উত্পাদন সম্পর্কের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবেনা। সেই মুহুর্তে উত্পাদিকা শক্তি অনুসারে উপরিকাঠামো ও উত্পাদন সম্পর্ককে পরিবর্তন করতে হবে। উপরিকাঠামো ও উত্পাদন সম্পর্কের মধ্যে, উৎপদন সম্পর্ক ও উত্পাদিকা শক্তির মধ্যে ভারসাম্য কেবল আপেক্ষিকভাবে অর্জনযোগ্য, কারণ উত্পাদিকা শক্তি সর্বদা অগ্রসরমান, তাই ভারসাম্যহীনতা সর্বদাই রয়েছে। ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতা একটি দ্বন্দ্বের দুটি দিক যাতে ভারসাম্যহীনতা হচ্ছে পরম আর ভারসাম্য হচ্ছে আপেক্ষিক। তা যদি না হত, না উপরিকাঠামো না উত্পাদন সম্পর্ক না  উত্পাদিকা শক্তি, কোনটাই বিকশিত হতে পারতনা; তারা শিলীভূত হয়ে যেত। ভারসাম্য হচ্ছে আপেক্ষিক, ভারসাম্যহীনতা পরম। এটা একটা সার্বজনীন নিয়ম যা সমাজতান্ত্রিক সমাজে প্রযোজ্য বলে আমার বিশ্বাস। দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম  হচ্ছে পরম; ঐক্য, সর্বসম্মতি এবং সংহতি হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন, তাই আপেক্ষিক। পরিকল্পনায় অর্জিত বহুবিধ ভারসাম্য হচ্ছে অস্থায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন ও শর্তযুক্ত তাই আপেক্ষিক। কে কল্পনা করতে পারে শর্তহীন অমর ভারসাম্যবস্থার কথা?

সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যার গবেষণায় পথ প্রদর্শক লাইন হিসেবে উত্পাদিকা শক্তি, উত্পাদন সম্পর্ক ও উপরিকাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতাকে আমাদের ব্যবহার করা উচিত।

রাজনৈতিক অর্থনীতিতে অধ্যয়নের প্রধান বিষয় হচ্ছে উত্পাদন সম্পর্ক। কিন্তু উত্পাদন সম্পর্ককে পরিস্কারভাবে অধ্যয়ন করতে উত্পাদিক শক্তির যুগপr অধ্যয়ন প্রয়োজন, সেইসাথে উত্পাদন সম্পর্কের ওপর উপরিকাঠামোর ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলেরও। গ্রন্থ রাষ্ট্রের কথা বলে কিন্তু কখনো তা গভীরভাবে অধ্যয়ন করেনা। এটা একটা বর্জন। অবশ্যই, রাজনৈতিক অর্থনীতি অধ্যয়নের প্রক্রিয়ায় উত্পাদিকা শক্তি ও উপরিকাঠামোর অধ্যয়ন মাত্রাতিরিক্ত হওয়া উচিত নয়। উত্পাদিকা শক্তির অধ্যয়ন যদি অতি দূরে যায় তাহলে তা হয়ে দাঁড়ায় প্রযুক্তি ও প্রকৃতি বিজ্ঞান। যদি উপরিকাঠামোর  অধ্যয়ন অতি দূরে যায় তা হয়ে দাঁড়ায় জাতি-রাষ্ট্রতত্ত্ব, শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব। সমাজতন্ত্রের(মার্কসবাদের গঠণকারী তিন অঙ্গের অন্যতম অঙ্গ) শিরোনামে আমরা যা অধ্যয়ন করিঃ শ্রেণীসংগ্রামের তত্ত্বসমূহ, রাষ্ট্র সংক্রান্ত তত্ত্বসমূহ, পার্টি ও বিপ্লবের তত্ত্ব এবং সেইসঙ্গে সামরিক রণনীতি ও রণকৌশল প্রভৃতি।

পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যাকে বিশ্লেষণ করা যাবেনা। কিন্তু পরিস্থিতি পার্থক্য করে এবং একইভাবে সারও করে। বহু মৌলিক ক্যাটাগরি(বর্গ) ও নিয়ম যথা, দ্বন্দ্বের একতা প্রযোজ্য। আমরা যদি সমস্যাকে এভাবে অধ্যয়ন করি, আমরা যদি সমস্যাকে এভাবে দেখি তাহলে আমরা একটা সুসংবদ্ধ ও অখণ্ড বিশ্ব দৃষ্টিকোণ ও পদ্ধতিবিদ্যা অর্জন করবো।

৪২. “বৈষয়িক উrসাহ প্রদান (Material Incentive)

পৃষ্ঠা ৪৮৬ বলছে, “সমাজতান্ত্রিক স্তরে শ্রম এখনো সমাজের সকল সদস্যের জীবনে প্রাথমিক প্রয়োজনে পরিণত হয়নি, তাই শ্রমের জন্য বস্তুগত প্রণোদণা(গধঃবৎরধষ ওহপবহঃরাব)র বিরাটতম তাrপর্য রয়েছে।” এখানে “সকল সদস্য” হচ্ছে খুবই সাধারণীকৃত। লেনিন ছিলেন সমাজের সদস্য। তাঁর শ্রম কি তাঁর জীবনের “প্রাথমিক প্রয়োজন”-এ পরিণত হয়নি?

পৃষ্ঠা ৪৮৬ এই পয়েন্ট উত্থাপন করে ঃ সমাজতান্ত্রিক সমাজে দুই ধরণের ব্যক্তি রয়েছে, ব্যাপক অধিকাংশ যারাা আস্থাভাজনভাবে তাঁদের কর্তব্য সম্পাদন করে এবং কতিপয় যারা তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে অসr । এটা ভালভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এই পরের গ্রুপকে এগিয়ে নিতে চাই আমরা কেবলমাত্র বস্তুগত প্রণোদনার ওপর নির্ভর করতে পারিনা। তাদের সচেতনতাকে বাড়াতে এখনো আমাদের তাদেরকে সমালোচনা করতে হবে ও শিক্ষিত করতে হবে।

গ্রন্থের এই অংশটি সেই শ্রমিকদের কথা বলছে যারা অপেক্ষাকৃত পরিশ্রমী ও ইতিবাচক। একই সমান শর্তে এরা হচ্ছে সেই, যারা বেশী উত্পাদন করবে। সরলভাবে, একজন শ্রমিক পরিশ্রমী অথবা উদ্যমী কিনা তা রাজনৈতিক সচেতনতা দ্বারা নির্ধারিত হয়, টেকনিকাল অথবা সাংস্কৃতিক দক্ষতার মাত্রা দ্বারা নয়। অনেকের টেকনিকাল ও সাংস্কৃতিক স্তর উচ্চ হওয়া সত্ত্বেও না পরিশ্রমী না উদ্যমী; অন্যরা যাদের স্তর নিচে তারা সম্পূর্ণ পরিশ্রমী ও উদ্যমী। কারণ নিহিত রয়েছে পূর্বতনদের নিচু রাজনৈতিক সচেতনতার মধ্যে আর পরবর্তীদের উচ্চতর রাজনৈতিক সচেতনতার ওপর।

গ্রন্থ বলছে যে শ্রমের প্রতি বস্তুগত প্রণোদনা “উত্পাদন বৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার করে” এবং “ উত্পাদন বিকাশে উদ্যম সৃষ্টিতে অন্যতম নির্ধারক।” কিন্তু বস্তুগত উrসাহ প্রদান আবশ্যিকভাবে প্রতি বrসর পরিবর্তন হয়না। প্রতিদিন, প্রতিমাসে অথবা প্রতি বছর জনগণের এমন উrসাহ প্রয়োজন না পড়তে পারে। কষ্টের সময় যখন প্রণোদনা হ্রাস পায় জনগণ অবশ্যই তখন চালিয়ে যাবেন, এবং তা সন্তোষজনকভাবে। বৈষয়িক উrসাহ প্রদানকে একতরফা পরম বানিয়ে গ্রন্থ সচেতনতা বৃদ্ধিকে যথার্থ গুরুত্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়, এবং ব্যাখ্যা করতে পারেনা কেন একই বেতনভুক্ত জনগণের শ্রমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উদাহারণস্বরূপ, ৫নং[২২] স্কেলে, একটি গ্রুপ ভাল কাজ করতে পারে, অন্যরা বরং খারাপ করতে পারে, এবং তৃতীয় একটি সামগ্রিকভাবে সহনীয়ভাবে ভাল। কেন, একইরকম বস্তুগত প্রণোদনা সত্ত্বেও এমন পার্থক্য ঘটে তা তাদের যুক্তিমতে ব্যাখ্যাযোগ্য নয়।

এমনকি যদি বৈষয়িক প্রণোদনার গুরুত্ব স্বীকার করা হয় এটা কখনোই পরম মূলনীতি নয়। সর্বদাই আরেকটি মূলনীতি রয়েছে রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে আত্মিক প্রেরণা যার নাম। এবং যখন আমরা বিষয়টিতে আছি, বস্তুগত প্রণোদনাকে সরলভাবে ব্যক্তিস্বার্থ হিসেবে আলোচনা করা যায়না। যৌথ স্বার্থও রয়েছে, যার অধীনে ব্যক্তিস্বার্থকে থাকতে হবে, দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থ-যার অধীনে থাকতে হবে অস্থায়ী স্বার্থকে এবং সমগ্রের স্বার্থ-যার অধীনে আংশিক স্বার্থকে থাকতে হবে।

“শ্রমের প্রতি বস্তুগত প্রণোদনা, সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা” অংশে প্রতিযোগিতা নিয়ে কিছু সুন্দর ভালভাবে লেখা অনুচ্ছেদ রয়েছে। যা নেই তা হচ্ছে রাজনীতির আলোচনা।

প্রথমত, জনগণকে খাঁটিয়ে মারবেননা। দ্বিতীয়ত, তাদের স্বাস্থ্য নষ্ট করবেনা, কিন্তু এমনকি ক্রমান্বয়ে সামর্থ্য বাড়িয়ে তুলুন। এই দুটি বিষয় হচ্ছে মূল। অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রে, আমরা যদি পাই তো সুন্দর, যদি না পাই চলনসই ভাল! আমরা চাই জনগণের কিছু সচেতনতা হোক। গ্রন্থ ভবিষ্যতের ওপর একেবারে কোন গুরুত্বই দেয়নাঃ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে, কেবল বৈষয়িক স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়, বস্তুগত স্বার্থের রাস্তা অব্যাহতভাবে গ্রহণ করে এবং হঠকারিভাবে একে ব্যক্তিস্বার্থের মূলনীতিতে পরিণত করে যেন এটা একটা যাদুদণ্ড।

তারা যা বলেনা তা হচ্ছে স্বতন্ত্র ব্যক্তি স্বার্থ পূরণ হবে যখন সমগ্র জনগণের স্বার্থ পূরণ হবে। তারা যে স্বতন্ত্র ব্যক্তিস্বার্থে গুরুত্ব দেয় তা হচ্ছে বাস্তবে সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, একটা অর্থনীতিবাদী প্রবণতা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সর্বহারা শ্রেণীসংগ্রামের সময়কাল থেকে নিজেকে প্রকাশিত করে সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের কালে। বুর্জোয়া বিপ্লবের যুগে প্রচুর সংখ্যক বুর্জোয়া বিপ্লবী তাঁদের শ্রেণী ও তাঁঁদের শ্রেণীর ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থের জন্য বীরত্বব্যাঞ্জক আত্মত্যাগ করেছেন, নিশ্চিতভাবে আশু স্বতন্ত্র ব্যক্তি স্বার্থে নয়।

আমরা যখন ঘাঁটি এলাকাগুলোতে ছিলাম আমাদের একটা মুক্ত[অবাজার] সর্বরাহ ব্যবস্থা[২৩] ছিল। জনগণ তখন অধিকতর শক্ত ছিল, অগ্রাধিকার সেবা চাইবার মতো কোন প্রকার ঝগড়া ঝাঁটি ছিলনা। মুক্তির পর আমাদের একটা মজুরী পদ্ধতি ছিল এবং ঐকমত্যপূর্ণ স্কুল   ছিল, কিন্তু আমাদের সমস্যা কেবল অনেকগুণ বাড়ল। অনেক জনগণই প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায়শই মুখোমুখি সংগ্রামে লিপ্ত হল আর বোঝানোর জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়েছে।

আমাদের পার্টি বাইশ বছরের বেশৗ বিরতিহীনভাবে যুদ্ধ চালিয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আমরা একটা অবাজার সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর করেছি। অবশ্যই সেসময় ঘাঁটি এলাকাসমূহের সমগ্র সমাজ ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণ করছিলনা। কিন্তু গৃহযুদ্ধের সময় যারা ব্যবস্থা কার্যকর করছিল তাদের সংখ্যা উপরে কয়েক লক্ষে পৌঁছায়, এবং নিচে তখনো অযুত অযুত। জাপান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় সংখ্যা এক মিলিয়ন থেকে কয়েক মিলিয়নে লাফিয়ে ওঠে। ঠিক মুক্তির প্রথম পর্যায় পর্যন্তু আমাদের জনগণ সমতাভিত্তিক জীবন যাপন করেছেন কঠোর পরিশ্রম ও সাহসিকতার সাথে লড়াই করে,বস্তুগত উrসাহের প্রতি সামান্যতম নির্ভরতা ছাড়াই কেবল বিপ্লবী উদ্যমের প্রেরণায়। দ্বিতীয় পর্যায়ের গৃহযুদ্ধের অবসানে আমরা এক পরাজয় বরণ করলাম যদিও আগে ও পরে আমাদের বিজয় হয়েছিল। আমাদের বৈষয়িক উrসাহ প্রদান আছে কি নেই সেব্যাপারে তার সাথে ঘটনা প্রবাহের কিছু করার ছিলনা। এর সম্পর্ক ছিল আমাদের রাজনৈতিক লাইন ও আমাদের সামরিক লাইন সঠিক কিনা সেটার সাথে। আমাদের সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের সমস্যাসমূহের সমাধানে এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাসমূহের বিরাট তাrপর্য রয়েছে।

       অধ্যায় ২৬ বলছে, “সমাজতান্ত্রিক সংস্থাসমূহে যেসব শ্রমিকরা বৈষয়িক স্বার্থ থেকে বাইরে নিজেদের কাজের ফল নিয়ে ব্যাপৃত তারাই হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশে চালিকাশক্তি।”(পৃঃ ৪৮২)

অধ্যায় ২৭ বলছে, “দক্ষ শ্রমিকের ভাতা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত উচ্চ… এবং এটা শ্রমিকদেরকে তাদের সাংস্কৃতিক ও টেকনিকাল স্তরকে উন্নত করতে উrসাহিত করে দৈহিক ও মানসিক শ্রমের মধ্যে অপরিহার্য পার্থক্যকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে।”(পৃঃ৫০১-০৩)

এখানে বিষয় হচ্ছে যে দক্ষ শ্রমিকদের জন্য উচ্চতর ভাতা অদক্ষ শ্রমিকদের নিজেদের অব্যাহতভাবে মানোন্নোয়ন করতে উrসাহিত করেছে যাতে তারা দক্ষ শ্রমিকদের সারিতে প্রবেশ করতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে তারা সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি অধ্যয়ন করেছে অধিক অর্থ উপার্জন করতে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি অধ্যয়নের জন্য স্কুলে প্রবেশ করা যেকোন জনকে কোন কিছুর আগে স্বীকার করতে হবে যে তারা অধ্যয়ণ করছেন সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের জন্য, শিল্পায়নের জন্য, জনসেবা করার জন্য, যৌথ স্বার্থের জন্য এবং সর্বোপরি উচ্চতর মজুরীর জন্য নয়।

অধ্যায় ২৮ বলছে, “শ্রম অনুযায়ী বন্টন হচ্ছে উত্পাদনের বিকাশকে পরিচালনার বিরাটতম শক্তি।” (পৃঃ ৫২৬)। এই পৃষ্ঠার শেষে এই ব্যাখ্যা করে যে সমাজতন্ত্রের অধীনে মজুরী অটলভাবে এগিয়ে যায়, গ্রন্থের অসংশোধিত ৩য় সংস্করণ এতদূর পর্যন্ত বলতে এগিয়ে যায়, “সমাজতন্ত্র হচ্ছে মৌলিকভাবে পুঁজিবাদের  চেয়ে উন্নত, সুনির্দিষ্টভাবে এই ক্ষেত্রে।” এখন একথা বলা খুবই ভুল যে সমাজতন্ত্র পুঁজিবাদের চেয়ে উন্নত কারণ মজুরী অটলভাবে বাড়ছে। মজুরী হচ্ছে ভোগ্য সামগ্রীর বন্টন। যদি উত্পাদনের উপায়ের কোন বন্টন না থাকে উrপন্ন দ্রব্য ভোগ্যসামগ্রীর কোন বন্টন াকতে পারেনা। পরেরটা হচ্ছে প্রথমটার বিধেয়।

৪০. সমাজতান্ত্রিক সংস্থাসমূহে আন্তঃব্যক্তিসম্পর্ক

পৃষ্ঠা ৫০০ বলছে, “সমাজতন্ত্রে অর্থনৈতিক নেতাদের সম্মান হচ্ছে জনগণের যে আস্থা তাদের ওপর আছে তার দ্বারা শর্তযুক্ত।” সত্যিই ভাল কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্যে পৌঁছতে কাজ করতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতায়, যদি ক্যাডাররা তাদের দাম্ভিকতা ত্যাগ না করেন, এবং শ্রমিকদের সম্মান না করেন, শ্রমিকেরা কখনোই কারখানাকে নিজেদের মনে করবেনা বরং তা ক্যাডারদের মনে করবে।

“গৃহ কর্তা” মনোভাব শ্রমিকদের আত্মসচেতনভাবে শ্রম শৃংখলা পালনে অনীহা সৃষ্টি করে। এটা মনে করবেননা সমাজতন্ত্রের অধীনে শ্রমিক ও সংস্থাসমূহের নেতৃত্বদের মধ্যে সৃজনশীল সহযোগিতা নিজে নিজেই উদ্ভূত হবে এর জন্য কাজ করা ছাড়া।

যদি কায়িক শ্রমিকরা আর সংস্থার নেতৃত্বরা উভয়ই একটা ঐক্যবদ্ধ উত্পাদন যৌথর সদস্য তাহলে “কেন সমাজতান্ত্রিক সংস্থাসমূহকে একক নেতৃত্ব” কার্যকর করতে হবে যৌথ পরিচালনাধীন নেতৃত্বের বদলে” অর্থাr পার্টি কমিটির পরিচালনাধীনে কারখান প্রধান দায়িত্বের ব্যবস্থা।

যখন রাজনীতি দূর্বলীকৃত হয় তখন বস্তুগত প্রণোদনার কথা বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। সেজন্যে গ্রন্থ ঠিক অনুসরণ করে “শ্রমিকদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত বস্তুগত স্বার্থ উদ্ভূত নিজেদের শ্রমের ফল নিয়ে গভীরভাবে ব্যাপৃত থাকার নীতি পূর্ণভাবে কার্যকর করা হচ্ছে।সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন প্রগতিশীলভাবে আঁকড়ে ধরা ও বৃদ্ধি করার প্রধান চালিকাশক্তি।”

৪৪.নিবিড় কর্মসূচী [Crash Program], ত্বরান্বিত কাজ

পৃষ্ঠা ৫০৫ বলছে, “ত্বরান্বিত কাজের প্রক্রিয়া বাতিল করুন। নীল নকশা অনুযায়ী উত্পাদন চালিয়ে যান একটা সুষম পদ্ধতিতে।” অসংশোধিত তৃতীয় সংস্করণে এই বাক্যগুলো এভাবে বলছে, “আমাদের অবশ্যই ‘ঘনীভূত কর্মসূচী’[Crash Program][Crash Program এর বাংলা অর্থ হচ্ছে তড়িr ফল লাভের জরুরী কর্মসূচী, একে আমরা নিবিড় অথবা ঘনীভূত কর্মসূচী বলতে পারি-বাংলা অনুবাদক]র বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং পূর্ব নির্ধারিত শিডিওল(সময়ক্রম) অনুসারে সুষমভাবে কাজ করতে হবে।” নিবিড় কর্মসূচী ও ত্বরান্বিত কাজের সম্পূর্ণ বর্জন হচ্ছে অতি পরমীকৃত।

       আমরা নিবিড় কর্মসূচীকে সম্পূর্ণ বর্জন করতে পারিনা। তাদের ব্যবহার অথবা অব্যবহার একটা বিপরীতের একত্ব গঠণ করে। প্রকৃতিতে মৃদুমন্দ হাওয়া ও হালকা বৃষ্টি রয়েছে, এবং উচ্চ বায়ুপ্রবাহ ও ভয়ংকর বৃষ্টি রয়েছে। ঘনীভূত কর্মসূচীর ব্যবহার তরঙ্গাকারে আবির্ভূত ও অপসৃত হয়। উত্পাদনের প্রযুক্তিগত বিপ্লবে তাদের প্রয়োজন অব্যাহতভাবে আবির্ভূত হয়। কৃষিতে আমাদের অবশ্যই ঋতুকে আঁকড়ে ধরতে হবে। নাটকের অবশ্যই ক্লাইমেক্স (পরিণতি) থাকতে হবে। নিবিড় কর্মসূচী অস্বীকার হচ্ছে বাস্তবে ক্লাইমেক্স অস্বীকার করা। সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। সোভিয়েতের পর্যায়ে আমরা উঠতে চাই তাদের যত সময় লেগেছে তার চেয়ে কম সময়ে। এটা হচ্ছে এক ধরণের নিবিড় কর্মসূচী।

সমাজতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা অর্থ হচ্ছে পশ্চাদপদ অগ্রসরকে ছাড়িয়ে যায়। এটা সম্ভব কেবল নিবিড় কর্মসূচীর মাধ্যমেই। স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের মধ্যে, ইউনিটসমূহের মধ্যে, উদ্যোগসমূহের মধ্যে আর জাতিসমূহের মধ্যে সবকিছুই প্রতিযোগিতামূলক। কাউকে যদি অগ্রসরকে ছাড়িয়ে যেতে হয় নিবিড় কর্মসূচী না নিয়ে পারেনা। যদি বিনির্মাণ অথবা বিপ্লব নির্বাহী আদেশ (উদাহরণস্বরূপ ভূমিসংস্কার অথবা সমবায় সংগঠিত করার প্রশাসনিক আদেশ) দ্বারা আক্রান্ত হয় উত্পাদনে হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটতে বাধ্য, কারণ জনগণকে সমাবেশিত করা হয়নি এবং তা ঘনীভূত কর্মসূচীর কারণে নয়।

৪৫. মূল্যের নিয়ম এবং পরিকল্পনা প্রণয়ণ

পৃষ্ঠা ৫২১-এ একটি ছোট ছাপা অনুচ্ছেদ রয়েছে যা সঠিক; এটা জটিল, এটা বিষয়বস্তুর সাথে যুক্ত হয়। মূল্যের নিয়ম পরিকল্পনা প্রণয়েেণ একটা অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ভাল। কিন্তু মূল্যের নিয়মকে পরিকল্পনা প্রণয়ণের প্রধান ভিত্তি বানানো উচিত নয়। আমরা মূল্যের নিয়মের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মহান উলম্ফণ পরিচালনা করিনি বরং সমাজতন্ত্রের মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়মের ওপর এবং উত্পাদন বর্ধিতকরনের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে। যদি মূল্যের নিয়মের দৃষ্টিকোন থেকে জিনিসগুলো সংকীর্ণভাবে দেখা হয় মহান উলম্ফণকে ক্ষতির চেয়ে বেশী মূল্যবান হিসেবে দেখা হবেনা এবং ইস্পাত ও লৌহ উত্পাদনের গত বছরের সর্বাত্মক প্রচেষ্টকে পণ্ডশ্রম হিসেবে। স্থানীয় ইস্পাত উrপন্ন ছিল পরিমাণে ও গুণে নিম্ন, এবং রাষ্ট্রকে প্রচুর ক্ষতি পৌঁছাতে হয়েছিল। অর্থনৈতিক ফলসমূহ তাrপর্যপূর্ণ ছিলনা, প্রভৃতি। আংশিক আশু দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে যে অভিযান ছিল একটা ক্ষতি, কিন্তু সামগ্রিক দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে অভিযানের বিরাট মূল্য ছিল কারণ ব্যাপক একট সমগ্র অর্থনৈতিক বিনির্মাণ পর্বের তা সূচনা ঘটিয়েছে। সমগ্র দেশ জুড়ে ইস্পাত ও লৌহে বহু নতুন সূচনা করা হয়েছে, এবং বহু শিল্পকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এটা আমাদের গতিবেগ বিরাটাকারে বাড়াতে সক্ষম করেছে। ১৯৫৯ সালের শীতে ৭৫ মিলিয়ন জনগণ দেশজুড়ে পানি সংরক্ষনাগারে কাজ করছিল। দুটি বৃহদায়তন অভিযান সংগঠিত করার পদ্ধতি আমাদের মৌলিক পানি সংরক্ষণ সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হতে পারে। এক, দুই অথব তিন বছরের দৃষ্টিকোণ থেকে এত বেশী শ্রমের জন্য প্রদেয় শস্যের মূল্য স্বাভাবিকভাবে ছিল খুব উচ্চ। কিন্তু দীর্ঘতর দৃষ্টিতে অভিযান শস্য উত্পাদন বিবেচনাযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে এবং একে ত্বরান্বিত করতে পারে, এবং স্থিতিশীল করতে পারে কৃষি উত্পাদন এবং এভাবে প্রতি ইউনিট পণ্যের যে মূল্য অর্জন করে তা। এসবই জনগণের শস্যের প্রয়োজনকে পূরণ করার  দিকে যায়।

কৃষি ও হালকা শিল্পের অব্যাহত বিকাশ ভারী শিল্পের জন্য অধিকতর সঞ্চয় সৃষ্টি করে। পরিণামে এটা জনগনকেও লাভবান করে। রাষ্ট্র কী করছে, অর্থ অর্জিত হচ্ছে অথবা খোয়া যাচ্ছে, যতক্ষণ সমগ্র দেশের কৃষক জনগণ বোঝেন তারা অনুমোদন করতে আর বিরোধিতা না করতে বাধ্য। কৃষকদের নিজেদের মধ্য থেকে শিল্পকে সমর্থন করার শ্লে¬াগান উত্থাপিত হয়েছে। এখানেই প্রমাণ নিহিত!

স্তালিন, ও সেইসাথে লেনিন বলেছেন, “সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের পর্যায়ে কৃষককুলকে অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।” চীনের ব্যাপক অধিকাংশ কৃষকরা “শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন” একটা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে। কেবল উন্নতিশীল কৃষক ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে-যারা কৃষকদের শতকরা ১৫ ভাগ-কিছু অসন্তোষ রয়েছে। তারা মহান উলম্ফণ ও গণ কমিউনের সমগ্র ধারণাকে বিরোধিত করেন।

সামষ্টিকভাবে, আমরা দামের পরিকল্পনা তুলে ধরি। অবশ্যই, আমরা দামের প্রতি চোখ বুজে থাকতে পারিনা। কয়েক বছর আগে আমরা জীবন্ত শুকরছানার ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি করেছিলাম এবং শূকর পালনের ওপর এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু বৃহদায়তন ধরণের জাতীয় ভিত্তিক পালনের ক্ষেত্রে-যা আমাদের রয়েছে-তার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ণ হচ্ছে প্রধান জিনিস যার ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি।

পৃষ্ঠা ৫২১ যৌথ খামারের বাজারসমূহে দাম নির্ধারণ করার সমস্যার প্রতি নির্দেশ করে। তাদের যৌথ খামার বাজারসমূহের অতিমাত্রায় স্বাধীনতা রয়েছে। এধরণের বাজারসমূহে দাম সমন্বয় করতে কেবল রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়। নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণও প্রয়োজনীয়। আমাদের বাজারসমূেহ, প্রথম পর্যায়কালে, সরকারের কতিপয় সীমার মধ্যেই দাম রাখা হয়েছিল। এভাবে ক্ষুদ্র স্বাধীনতাকে বৃহৎ হওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।

পৃষ্ঠা ৫২২ বলছে, “মূল্যের নিয়মের পরিচালনা সম্পর্কে, পুঁজিবাদের অধীনে নিয়ম উত্পাদনে যে ধরণের নৈরাজ্য অথবা সামাজিক শ্রমশক্তির অপচয় সৃষ্টি করে তা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে দেখা যায়না।” এটা মূল্যের নিয়মের কার্যকরিতার অত্যুক্তি। সমাজতান্ত্রিক সমাজে সংকট ঘটেনা প্রধানত মালিকানা ব্যবস্থার কারণেঃ সমাজতন্ত্রের মূল নিয়ম, উত্পাদনের জাতীয় পরিকল্পনা ও বন্টন, মুক্ত প্রতিযোগিতা অথবা নৈরাজ্যের ঘাটতি প্রভৃতি, এবং একারণে নয় যে মূল্যের নিয়মকে আমরা পরিচালনা করি। পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক সংকটও, বলা নি®প্রয়োজন, মালিকানা ব্যবস্থা দ্বারা নির্ধারিত হয়।

৪৬. মজুরীর রূপসমূহ

পৃষ্ঠা ৫৩০ মজুরীর রূপ সম্পর্কে তার আলোচনায় খণ্ড কাজ মজুরীকে মুখ্য আর সময় হারকে সহায়ক হিসেবে বক্তব্য রাখছে। আমরা বিপরীতটা করি। খণ্ড হারের ওপর একতরফা গুরুত্ব প্রদান প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে, তুলনামূলক শক্তিশালী ও দূর্বল শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে বাধ্য এবং শ্রমিকদের মধ্যে “বড়কিছুর পেছনে দৌড়ানোর” মনস্তত্ত্ব সঞ্চার করবে। এটা যৌথ স্বার্থকে নয় বরং ব্যক্তি আয়কে মুখ্য ব্যাপার করে। খণ্ডহার মজুরী যে এমনকি প্রযুক্তিগত নবরূপায়ন (Technological Innovation) ও যান্ত্রিকীকরণে বাঁধা দেয় তার প্রমাণ রয়েছে।

গ্রন্থ স্বীকার করে যে স্বয়ংক্রিয়করণ (Automation) এর সাথে খণ্ডহার মজুরী অনুপযোগী। একদিকে তারা বলেন যে তারা স্বয়ংক্রিয়করণের ব্যাপক বিকাশ চান, অপরদিকে তারা বলেন খণ্ডহারের ব্যাপক ব্যবহার চান।এটা একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।

আমরা সময়হার পদ্ধতিকে কার্যকর করেছি, সেইসঙ্গে পুরস্কারও। বিগত দুই বছরের বছর শেষের “অগ্রগামী উলম্ফণ” বোনাস হচ্ছে একটা উদাহারণ। সরকারী ও শিক্ষা শ্রমিকদের ছাড়া সকল কর্মচারী ও শ্রমিকরা বছর শেষে অগ্রগামী উলম্ফণ বোনাস পেয়েছেন বিভিন্ন পরিমাণে নির্দিষ্ট ইউনিটসমূহে কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিজেদের দ্বারা নির্ধারিত হিসাব অনুযায়ী।

৪৭. দাম সম্পর্কে দুটি প্রশ্ন

দুটি প্রশ্ন রয়েছে যা অধ্যয়ন দাবী করে।

প্রথমটি হচ্ছে ভোগ্য সামগ্রীর দাম নির্ধারন। গ্রন্থ বলছে, “সমাজতন্ত্র বরাবর জনগণের জন্য ভোগ্য সামগ্রীর দাম কমানোর একটা কর্মনীতি অনুশীলন করে আসছে।” আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে দাম সাম্যাবস্থায় আনা, সাধারণভাবে তাদের না বাড়তে দেয়া, না কমতে দেয়া। যদিও আমাদের মজুরী স্তর তুলনামূলকভাবে নিম্ন, সার্বজনীন চাকুরী আর কম দাম ও কম ভাড়া কর্মচারী ও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট ভাল রেখেছে। দাম কমাতে থাকা অথবা না কমানো না বাড়ানো, শেষ বিশ্লেষণে কোনটা ভাল তা হচ্ছে একটা সমস্যা যা অধ্যয়ন দাবী করে।

অপর প্রশ্নটি ভারী ও হালকা শিল্পের উrপন্ন দ্রব্যের দাম নিয়ে ব্যাপৃত। আপেক্ষিকভাবে বললে, আগেরটার তাদের কম দাম রয়েছে আর পরেরটার বেশী। আমরা করি বিপরীত। কেন? শেষ বিশ্লেষণে যা তুলনামূলক ভাল পন্থা তা হচ্ছে আরেকটা সমস্যা যা অধ্যয়ন দাবী করে।

খণ্ড ৩ঃ অধ্যায় ৩০-৩৪

৪৮.বিদেশী ও দেশী বৃহr, মাঝারি ও ক্ষুদ্রর যুগপr বিকাশ

পৃষ্ঠা ৫৪৭ নির্মাণ তহবিল ছড়িয়ে দেওয়ার বিরোধিতা প্রকাশ করে। এর অর্থ যদি এই হয় যে খুব বেশী বড় প্রজেক্ট গ্রহণ করা উচিত নয় পাছে কোনটাই শিডিওল অনুযায়ী সম্পূর্ণ করা যাবেনা, তখন অবশ্যই আমরা একমত। কিন্তু উপসংহার যদি এটা হয় যে বড় বড় নির্মাণকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়তনের প্রজেক্টকে বিরোধিতা করা উচিত, তখন আমরা একমত নই। ১৯৫৮ সালে যে বড়সংখ্যক মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তনের উদ্যোগসমূহ গড়ে উঠেছিল তার ভিত্তিতে চীনে প্রধান নয়া শিল্পকেন্দ্রসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইস্পাত ও লৌহ শিল্পে  প্রারম্ভিক ব্যবস্থাপনা অনুসারে ঊনত্রিশ বৃহr, একশর কাছাকাছি মাঝারি ও কয়েকশ  ক্ষুদ্রায়তন কেন্দ্র সামনের আট বছরে সম্পন্ন হবে। ইস্পাত ও লৌহ শিল্পে মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তনগুলো  ইতিমধ্যে একটা বড় প্রভাব সৃষ্টি করেছে। ১৯৫৯-এর দৃষ্টিকোণ থেকে কাঁচা লোহা উত্পাদন দেশব্যাপী ২০ মিলিয়ন টন অতিক্রম করেছে, যার অর্ধেক মাঝারি ও ক্ষুদে আয়তন উদ্যোগসমূহ দ্বারা উত্পাদিত হয়েছিল। ভবিষ্যতে মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তন উদ্যোগসমূহ অব্যাহতভাবে ইস্পাত ও লৌহশিল্পের বিকাশের জন্য বড় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। বহু ক্ষুদে মাঝারিতে পরিণত হবে, অনেক মাঝারি বড় হবে, পশ্চাদপদ অগ্রসরে পরিণত হবে, স্থানীয় মডেলগুলো বিদেশীগুলোর মত হবে-এটা হচ্ছে বিকাশের বিষয়গত নিয়ম।

আমরা অগ্রসর প্রযুক্তি গ্রহণ করবো, কিন্তু একটা সময়কালের জন্য পশ্চাদপদ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও অনিবার্যতাকে এটা অস্বীকার করতে পারেনা। ইতিহাসের শুরু থেকে বিপ্লবী যুদ্ধসমূহে তারাই জিতেছে যাদের অস্ত্র ছিল নিুমানের, আর হেরেছে তারাই যাদের অস্ত্র ছিল বেশী সুবিধাজনক। আমাদের গৃহযুদ্ধের সময়ে, জাপানের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়ে, এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা আর আধুনিক অস্ত্রাগারের অভাব ছিল। সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র না থাকলে কেউ যদি যুদ্ধ না করতে পারে তাহচ্ছে নিজেকে নিরস্ত্র করার শামিল।

সর্বাত্মক যান্ত্রিকীকরণের আমাদের আকাঙ্খা যেমনটা গ্রন্থ বর্ণনা করে একটা বাস্তবতা (পৃঃ৪২০) আমাদের দ্বিতীয় দশকে সম্পাদনে এখনো ঘাটতি আছে মনে হয়; সম্ভবত এটা আমাদের তৃতীয় দশকে হবে। ভবিষ্যতের একটা সময়ে, যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততার কারণে আমরা আংশিক যান্ত্রিকীকরণ আর যন্ত্রপাতির উন্নয়নের আহ্বাণ জানাব। সেজন্যে আমরা সাধারণীকৃত স্বয়ংক্রিয়করণ(অঁঃড়সধঃরড়হ)-থেকে দূরে আছি। যান্ত্রিকীকরণ আলোচিত হতে হবে কিন্তু একটা আনুপাতিক বোধ থেকে। যদি যান্ত্রিকীকরণ আর যন্ত্রের ব্যবহার অতিমাত্রায় করা হয় তা জনগণকে আংশিক যান্ত্রিকীকরণ আর দেশীয় পদ্ধতিতে উত্পাদন থেকে দূরে রাখবে। অতীতে আমাদের এমন দিক পরিবর্তন ঘটেছিল, যখন প্রত্যেকে নতুন প্রযক্তি, নতুন যন্ত্রপাতি, বৃহদায়তন, উচ্চমান দাবী করছিল আর দেশী, মাঝারি ও ক্ষুদ্রায়তনকে অপমানজনক মনে করা হয়েছিল। আমরা ততক্ষণ এই প্রবণতাকে অতিক্রম করতে পারিনি যতক্ষণ না আমরা দেশী ও বিদেশী, বৃহদায়তন, মাঝারি ও ক্ষুদ্রকে যুগপrভাবে বিকশিত করেছি।

বর্তমান সময়ে আমরা কৃষির রাসায়নিকীকরণের প্রস্তাব করিনি। একটা কারণ হচ্ছে যে সামনের অনেকগুলো বছরে আমরা খুব বেশী সার উত্পাদন করতে পারার আশা করিনা। (আর খুব ক্ষুদ্র যা আমাদের আছে তা শিল্পশস্যে আমরা কেন্দ্রীভূত করেছি)। আরেকটি কারণ হচ্ছে যে যদি রাসায়নিকীকরণের দিকে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয় সবাই তার দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে আর শুকর পালনকে অবহেলা করবে। অজৈব সারেরও প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু তাদেরকে জৈব সারের সাথে মিশাতে হবে; একা তারা জমিকে শক্ত করে ফেলে।

গ্রন্থ প্রতিটি বিভাগে নয়া টেকনিক গ্রহণের কথা বলে। কিন্তু এটা করা এত সহজ নয়। সর্বদাই একটা ক্রমিক বিকাশের প্রক্রিয়া থাকতে হবে। অধিকন্তু, এমনকি যখন কিছু নয়া মেশিন গ্রহণ করা হয় পুরোনো অনেকগুলি বজায় থাকে। গ্রন্থ সঠিক যখন বলে যে আপনি যদি নয়া উদ্যোগ গড়ে তুলেন আর বিদ্যমান কারখানায় যন্ত্রাদি নবায়ন করেন, আপনাকে বিদ্যমান মেশিনারি ও যান্ত্রিক হাতিয়ারগুলিকে যৌক্তিকভাবে ও পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত। (পৃঃ ৪২৭)। বিষয়গুলো ভবিষ্যতেও আলাদা কিছু হবেনা।

“বৃহr” ও “বিদেশী” সম্পর্কে, আমাদের অবশ্যই “নয়া বৃদ্ধির জন্য আত্মনির্ভরশীলতা”র চেতনায় কাজ করা উচিত। ১৯৫৮ সালে আমরা কুসংস্কার মুক্ত হওয়া আর নিজের হাতে কাজ করার শ্লোগান তুলে ধরেছিলাম। ঘটনা দেখাচ্ছে যে নিজেদের ভিত্তিতে কাজ করা সম্পূর্ণ সম্ভব। অতীতে পশ্চাদপদ পুঁজিবাদী দেশগুলো উত্পাদনে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর সমপর্যায়ে আসতে নতুন টেকনিকের ব্যবহারের ওপর নির্ভর করেছিল। একইভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন অগ্রসর প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে পুঁজিবাদী দেশগুলোকে ধরতে। আমাদেরও অবশ্যই তা করতে হবে এবং আমরা তা পারবো।

৪৯. কোনটি আগে ট্রাক্টর না সমবায়?

পৃষ্ঠা ৫৬৩ বলছে, “১৯২৮ সালে সামগ্রিক যৌথকরণের সময়ে শতকরা ৯৯ ভাগ বসন্তকালীন ফসল চাষ করা হয়েছে কাঠের অথবা ঘোরায় টানা লাঙলের সাহায্যে”। এই ঘটনা গ্রন্থের বারংবার জোর দিয়ে বলা “ট্রাক্টরকে অবশ্যই সমবায়কে ছাড়িয়ে যেতে হবে” বক্তব্যকে খণ্ডন করে। একই পৃষ্ঠায় আমরা পাই, “সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন সম্পর্ক কৃষি উত্পাদিকা শক্তির বিকাশ ও কৃষি প্রযুক্তির উন্নতিতে এক ব্যাপক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছে।” এটা সত্য।

প্রথমে উত্পাদন সম্পর্ক পরিবর্তন করতে হবে, তারপর এবং কেবল তারপরই উত্পাদিকা শক্তিসমূহকে ব্যাপকভাবে বিকশিত করা সম্ভব। এই নিয়ম হচ্ছে সার্বজনীন। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে সমবায়সমূহ খুব জীবন্তভাবে সংগঠিত করা হয়নি, এবং এমনকি আজকেও তারা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। প্রধান কারণ এটা নয় যে তাদের ট্রাক্টরের অভাব রয়েছে(তাদের আমাদের চেয়ে অনেক বেশী ছিল তুলনামূলকভাবে) কিন্তু তাদের কৃষি সংস্কার আপাদমস্তক ছিল রাজকীয় আনুকুল্যে। ভুমি কোটাভিত্তিক বাজেয়াপ্ত হয়েছে(কিছু দেশে ১০০ হেক্টরের নিচে খামারে কোন বাজেয়াপ্তকরণ চালানো হয়নি); বাজেয়াপ্তকরণের কাজ নির্বাহী আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং কৃষি সংস্কারের পর, লোহা যখন তপ্ত তখন আঘাত না করে তারা পূর্ণ পাঁচ অথবা ছয় বছর পার হতে দেয় বেশী কিছু না করে। আমরা করেছি সম্পূর্ণ বিপরীত। কিন্তু আমরা একটা গণলাইন [২৪] কার্যকর করেছি, দরিদ্র ও নিু মাঝারি কৃষকদের জাগ্রত করেছি শ্রেণীসংগ্রাম পরিচালনা করতে এবং ভূস্বামী শ্রেণীর সকল ভূমি দখল করতে আর ধনী কৃষকদের উদ্বৃত্ত জমি বন্টন করতে ও মাথাপিছু জমি বন্টন করে। (গ্রামাঞ্চলে এটা ছিল একটা বিরাট বিপ্লব)। অব্যবহিত পরেই আমরা পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতা আন্দোলন পরিচালনা করি। এবং সেই বিন্দু থেকে অটলভাবে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে আমরা কৃষকদের সমাজতন্ত্রের পথে পরিচালনা করেছি। আমাদের একটা বিরাট পার্টি ও বাহিনী ছিল। যখন আমাদের বাহিনী দক্ষিণে গেছে ক্যাডার স্কোয়াডদের একটা পূর্ণ সংখ্যা প্রতিটি প্রদেশে স্থাপন করা হয়েছে প্রাদেশিক, আঞ্চলিক, কাউন্টি ও জেলা স্তরে স্থানীয় কাজ করতে। আমাদের বাহিনীর আগমনের সাথে সাথে তারা কৃষি গ্রামগুলির গভীরে প্রবেশ করতো, “গরীবদের দুঃখকষ্ট সম্পর্কে শিক্ষা নিতে তাদের সাথে সাক্ষাত করা” “মূলে আঘাত করে সব জিনিস একত্রে টেনে তোলার”, এবং গরীব ও নিু মাঝারি কৃষকদের সক্রিয় উপাদানসমূহকে সংগঠিত করা।

৫০. দুই লক্ষ্যঃ বৃহr ও গণ

সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ খামারগুলি দুইবার একীভূতকরণের মধ্য দিয়ে গেছে। ২,৫০,০০০  খামার প্রায় ৯৩,০০০-এর মতো খামারের মধ্যে একীভূত হয়েছে, তারপর এগুলো আবার প্রায় ৭০,০০০ খামারের মধ্যে একীভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে এগুলো নিশ্চিতভাবে পুনরায় সম্প্রসারিত হবে। গ্রন্থ বলছে, (পৃঃ৫৬৮), “আমাদেরকে অবশ্যই বহুবিধ যৌথখামারের উত্পাদন সম্পর্কসমূহকে শক্তিশালী ও বিকশিত করতে হবে এবং যৌথ খামারের মধ্যে গণভাবে ব্যবহৃত উত্পাদন সংস্থাসমূহকে সংগঠিত করতে হবে।” এখানে, প্রকৃতপক্ষে, আমাদের নিজস্ব পদ্ধতির সাথে বহু সাদৃশ্য রয়েছে, সেগুলো সরলভাবে  জিনিসগুলোকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যক্ত করে। ভবিষ্যতে এমনকি যদি তাদের অবস্থান আমাদের মতো হয় এটা সন্দেহজনক মনে হয় যে তারা কমিউন সূত্রটি ব্যবহার করবে কিনা। প্রকাশ ও সূত্রায়ণে পার্থক্য অবশ্যই একটা গভীর বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন একটা গণলাইন কার্যকর করা হচ্ছে কিনা।

নিশ্চিতভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌখখামারসমূহের বৃহr মাত্রা কখনোই আমাদের তুল্য হবেনা গৃহস্থালী ও জনসংখ্যার বিচারে কেননা তাদের গ্রামীণ জনসংখ্যা কম ঘন এবং তাদের ভূমিক্ষেত্র বিরাট। কিন্তু কে বলতে পারে যে একারণে তাদের যৌথখামারগুলোর এখন আর বেশী সম্প্রসারণের প্রয়োজন নেই? সিংকিয়াং ও চিংঘাইয়ের মতো এলাকাগুলোতে কমিউনগুলোর আকার এখনো বাড়ানো প্রয়োজন যদিও বেশী জমির জন্য কম লোক রয়েছে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলির কিছু কাউন্টিতে (উদাহারণস্বরূপ, উত্তর ফু কিয়েন) এমন পরিস্থিতিতে বৃহৎ কমিউনগুলোকে একত্রে পেয়েছে।

কমিউনসমূহের আকার বৃদ্ধি করা একটি বড় ইস্যু। পরিমাণে পরিবর্তন গুণে পরিবর্তন আনতে বাধ্য এমন পরিবর্তনকে উদ্দীপনা দিতে। আমাদের গণকমিউনগুলো হচ্ছে ভাল উদাহারণ-“বৃহr ও গণ!” প্রথমে আসে “বৃহr”-এটা “গণ”র স্তর উন্নীত করবে। এর অর্থ হচ্ছে পরিমাণগত পরিবর্তন আংশিক গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসে।

৫১.বৈষয়িক স্বার্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের মৌলিক কারণ কি? 

যৌথখামার ব্যবস্থার অধ্যায়ে স্বতন্ত্র ব্যক্তি বৈষয়িক প্রণোদনার অব্যাহত আলোচনা রয়েছে (পৃঃ৫৬৫, ৫৭১ প্রভৃতি)। বর্তমান বৈষয়িক স্বার্থের ওপর গুরুত্ব প্রদান হচ্ছে একটি কারণে। স্তালিনের কালে যৌথ স্বার্থের ওপর মাত্রারিতিক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল; স্বতন্ত্র ব্যক্তি লাভকে অবহেলা করা হয়েছিল। গণকে অতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল, ব্যক্তিগতকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। এখন তারা বিপরীত চরমে গেছে, বৈষয়িক প্রণোদনায় অতি গুরুত্ব প্রদান, যৌথ স্বার্থের অবহেলা। আর তারা যদি একই ধারায় টিকে থাকে, নিশ্চিতভাবে তা বিপরীত দিকে যেতে বাধ্য।

“ব্যক্তিগত”-এর তুলনায় “গণ”, এবং বিপরীতটা হচ্ছে একটা বিপরীতের একত্ব। একটি ছাড়া অপরটি অসম্ভব। আমরা সর্বদাই গণ ও ব্যক্তিগতের যৌথ বিবেচনার কথা বলেছি এবং অনেক আগে এই ব্যাখ্যা দিয়েছি যে এমন কোন কিছু নেই যা কেবল একটা অথবা অন্যটা, কিন্তু ব্যক্তিগতের চেয়ে গণ শ্রেষ্ঠতর। স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত যৌথের অংশ। যদি যৌথ স্বার্থ অগ্রসর হয় ব্যক্তির অনেক কিছুই ফলে উন্নত হবে।

দ্বৈত্ব হচ্ছে সব জিনিসের একটা বৈশিষ্ট এবং সকল সময়ের জন্য। নিশ্চিতভাবে, দ্বৈত্ব বিভিন্ন মূর্ত রূপের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় আর তাই জিনিসসমূহের চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন হয়। বংশগতি ও মিউটেশন (রূপান্তর) হচ্ছে একত্বের বিপরীতসমূহের দ্বৈত্ব। যদি আগেরটা ছাড়া পরেরটা কেবল থাকে তবে পরবতী বংশধর সম্পূর্ণত পূর্বের চেয়ে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ হবে। ধান আর কোনভাবেই সেরকম হবেনা যা ধান গঠণ করে, না কুকুর না মানুষ। রক্ষণশীল দিকের একটা ভাল, একটা ইতিবাচক কার্যকরিতা থাকতে পারে। এটা একটা জীবন্ত জিনিসকে একটা অবিরাম পরিবর্তনের মধ্যে একটা অস্থায়ী ধ্রুবতা ও সাম্যাবস্থা দিতে পারে। তাই, উন্নত চাল এখনো চাল। কিন্তু মিউটেশন বিহীন বংশগতির অর্থ হচ্ছে কোন অগ্রসরতা নেই এবং বিকাশ স্থবিরতায় পতিত হবে।

৫২. জনগণের সক্রিয়তাই হচ্ছে কারণ

পৃষ্ঠা ৫৭৭ বলছে, “যৌথ খামারসমূহ প্রাকৃতিক ও অথনৈতিক পরিস্থিতিকে অন্তর খাজনাকে নির্ধারণে অনুমোদনের প্রস্তাব দেয়”।  অন্তর খাজনা বিষয়গত পরিস্থিতি দ্বারা সবমিলিয়ে নির্ধারিত হয়না। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি জনগণের কর্মকান্ডের সাথে জড়িযে আছে। উদাহারণস্বরূপ, হোপেই প্রদেশে অনেক যান্ত্রিক কূপ রয়েছে পিকিং হ্যাংকাও রেললাইন ধরে, কিন্তু তিয়েঙসিন-পুকৌ ধরে খুব কমই আছে। প্রাকৃতিক পরিস্থিতি একইরকম, যোগাযোগও সমান সুবিধাজনক, কিন্তু ভুমির উন্নতি স্থানভেদে কখনোই সমান নয়। মনে হয় কারণ হচ্ছে কোন একটা এলাকা উন্নতির জন্য গ্রহণযোগ্য (অথবা গ্রহণযোগ্য নয়), অথবা বিভিন্ন রকম ঐতিহাসিক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, তথাপি প্রধান বিষয় হচ্ছে জনসাধারণের সক্রিয়তা। যখন আমরা বিষয়টিতে রয়েছি, সাংহাইয়ের কিছু দূরবর্তী জেলা শূকর পালন ভালভাবে চালাতে সক্ষম, অন্যরা নয়। চুং মিং কাউন্টিতে এটা প্রকৃতপক্ষে চিন্তা করা হয়েছে যে কিছু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, great-leap-forward-poster-china-smallউদাহারণস্বরূপ, বহু সংখ্যক হ্রদ শূকর পালনের জন্য অনুক’ল হবেনা। কিন্তু জনগণের দুঃখ কষ্টের ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার পর, এবং পালনের ব্যবসার প্রতি জনগণ একটা ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করার পর, এটা উপলব্ধ হয়েছে যে প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা দূরে থাক, এই প্রাকৃতিক পরিস্থিতিসমূহ সুবিধা প্রদান করেছে। প্রকৃতপক্ষে, এটা একটা গভীর চাষাবাদ হোক, চমrকার উদ্যানকরণ, যান্ত্রিকীকরণ অথবা সমবায়করণ-এর ব্যাপার হোক, জনগণের সক্রিয়তাই হচ্ছে আসল।

পিকিং-এর চেংপিং কাউন্টি সর্বদাই বন্যা আর খরা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ঘটনা পরিবর্তিত হল মিং সমাধিতে একটা সংরক্ষণাগার নির্মাণের পর। এটা কি পুনরায় প্রকাশ করেনা যে জনগণের সক্রিয়তাই হচ্ছে কারণ? হুনানে ১৯৫৯ ও ১৯৬০এর পর তারা পরিকল্পনা করছে পীত নদীকে বশে আনতে তিনটি বছর সময় নিয়ে কতিপয় বৃহদায়তন খাল নির্মাণ সম্পন্ন করার। এসবকিছুই পুনরায় দেখায় যে জনগণের সক্রিয়তাই হচ্ছে কারণ।

৫৩. পরিবহণ ও বাণিজ্য

 পরিবহণ ও প্যাকেটকরণ ব্যবহার মূল্য বাড়ায়না, কিন্তু তারা মূল্য বৃদ্ধি করে। তারা যে শ্রম ব্যবহার করে তা সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় শ্রমের অংশ। কারণ পরিবহণ ও প্যাকেটকরণ ছাড়া উত্পাদনের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রয়ে যেত, এবং যে ব্যবহারমূল্য উত্পাদিত হত তাকে বলা যেতনা যে তা উশুল হয়েছে। কয়লার কথা ধরুন। খনি থেকে উত্তোলন করার পর যদি তা ক্ষেত্রের আশেপাশে ফেলে রাখা হয় এবং ভোক্তার কাছে রেল, জাহাজ অথবা ট্রাকে করে সরবরাহ করা না হয় এর ব্যবহারমূল্য সম্পূর্ণভাবে উশুলযোগ্য নয়।

পৃষ্ঠা ৫৮৫ বলছে যে তাদের বাণিজ্যের দুটো পদ্ধতি রয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালিত আর সমবায়। সেইসাথে, তাদের রয়েছে “অসংগঠিত বাজারসমূহ” অর্থাr যৌথ খামার বাজার। আমাদের রয়েছে কেবল এক পদ্ধতি। আমরা সমবায় বাণিজ্যকে রাষ্ট্র পরিচালিত বাণিজ্যে একীভূত করেছি এবং এখন পদ্ধতিকে মনে হচ্ছে পরিচালনা করা যথেষ্ট সহজ। সবদিকে প্রচুর পরিমাণে অর্থনীতি রয়েছে।

পৃষ্ঠা ৫৮৭ বাণিজ্যের গণ তদারকির কথা বলে। এজন্যে আমরা প্রধানত নির্ভর করি পার্টি পরিচালনার ওপর; রাজনীতিকে কমাণ্ডে রেখে জনগণ কর্তৃক তদারকি রয়েছে। বাণিজ্যিক শ্রমিকদের শ্রম সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয়-এবং এটা ছাড়া উত্পাদন সর্বোচ্চ সীমায় ভোগ হতে পারেনা(উত্পাদনশীল ভোগ ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিভোগ সহ)।

৫৪. শিল্প ও কৃষির যুগপr বিকাশ

পৃষ্ঠা ৬২৩ উত্পাদনের উপকরণের বৃদ্ধির প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়ার নিয়মকানুন আলোচনা করে। অসংশোধিত তৃতীয় সংস্করণ নির্দিষ্টভাবে এখানে উল্লেখ করে, “উত্পাদনের উপকরণের বৃদ্ধির প্রতি অগ্রাধিকার প্রদান অর্থ হচ্ছে কৃষির চাইতে শিল্প দ্রুততর হারে বিকশিত হবে।”

“কৃষির চেয়ে শিল্পের দ্রুতগতিতে বিকাশ লাভ”কে যথার্থ ভাবে দেখতে হবে। শিল্পের প্রতি একটা অযথার্থ মাত্রায় গুরুত্ব প্রদান করা যায়না তাহলে সমস্যা ঘটবে নিশ্চিতভাবে। আমাদের লিয়াওনিঙ এর কথা ধরুন। এর বহু শিল্পসহকারে এই প্রদেশের একটা শহুরে জনসংখ্যা রয়েছে যা সমগ্রের এক তৃতীয়াংশ। অতীতে তারা সর্বদাই শিল্পকে প্রথম স্থান দিয়েছে একইসঙ্গে কৃষির সজীব বিকাশে অংশগ্রহণ না করে। ফল হয়েছিল এই যে প্রদেশের কৃষিশস্য, মাংস ও শাকসব্জি শহরের বাজারগুলিতে সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, তাদের সর্বদাই এই আইটেমগুলি অন্য প্রদেশসমূহ থেকে আনতে হয়েছে। চাবিকাঠি ইস্যু হচ্ছে যে কৃষিশ্রম বিরাট চাপে রয়েছে। আর তার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। এটা বিকাশকে সীমিত করে, আর বৃদ্ধি হচ্ছে তুলনামূলক কম। আমরা যা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলাম তা হচ্ছে নির্দিষ্টভাবে উত্তর-পূূর্বাঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে বিশেষ করে লিয়াওনিঙ-এ, কৃষিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা উচিত ছিল। তাই, কেবলমাত্র শিল্পকে আঁকড়ে ধরায় গুরুত্ব দেওয়া যায়না।

আমাদের মত হচ্ছে ভারী শিল্প বিকাশে অগ্রাধিকার দিয়ে শিল্প ও কৃষিকে একত্রে বিকশিত করা উচিত। “যুগপৎ বিকাশ” কথাটা কোনভাবেই কৃষির চেয়ে শিল্পে অগ্রাধিকার বৃদ্ধি অথবা দ্রুততর বিকাশকে অস্বীকার করেনা। একইসাথে, “যুগপৎ বিকাশ” আমাদের সামর্থ্যরে সমান ব্যবহার নয়। উদাহারণস্বরূপ, এই বছর আমাদের হিসাবে আমরা ১৪ মিলিয়ন টন ইস্পাত দ্রব্য সামগ্রী উত্পাদন করতে পারি যার শতকরা ১০ ভাগ কৃষি প্রযুক্তিগত রূপান্তরে ও পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণে প্রয়োগ করতে হবে। বাকী শতকরা ৯০ ভাগ ব্যবহার করতে হবে প্রধানত ভারী শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহণ বিনির্মাণে। এবছরের পরিস্থিতিতে এটা হচ্ছে শিল্প ও কৃষির যুগপৎ বিকাশ।  ভারী শিল্পের অগ্রাধিকার বৃদ্ধি ও শিল্পের*[*১৯৬৭ পাঠে কৃষি] বিকাশ ত্বরান্বিতকরণে এটা ক্ষতিকর না হওয়া উচিত।

পোল্যান্ডের ৩০ মিলিয়ন জনসংখ্যা রয়েছে, কিন্তু কেবল ৪,৫০,০০০ শূকর। এখন মাংস সরবরাহ খারাপভাবে সংকুচিত হয়েছে। এমনকি আজকেও এটা মনে হবে যে পোল্যান্ড তার কর্মসূচি (Agenda) তে কৃষি বিকাশকে অন্তর্ভুক্ত করেনি।

পৃষ্ঠা ৬২৪ বলছে, “বিভিন্ন সময়ে পশ্চাদপদ কৃষি, হালকা শিল্প ও খাদ্য শিল্পে বিকাশ ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন।” ঠিক আছে ভাল, কিন্তু কৃষি ও হালকা শিল্পের পশ্চাদপদতা সৃষ্ট ভারসাম্যহীনতা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণতা স্রেফ “আংশিক ভারসাম্যহীনতা ও অসমাঞ্জস্যপূর্ণতা” মনে করা যায়না। এগুলো হচ্ছে সামগ্রিকতার প্রশ্ন।

পৃষ্ঠা ৬২৫ বলছে, “ যেকোন সময়ে হোক না কেন ভারী শিল্প ও হালকা শিল্পের মধ্যে সঠিক অনুপাতে পুঁজির যৌক্তিক বন্টন প্রয়োজন।” এই অনুচ্ছেদ কেবল ভারী ও হালকা শিল্পের কথাই বলে, শিল্প ও কৃষির কথা নয়।

৫৫. সঞ্চয়ের আদর্শসমূহ

পোল্যান্ডে এটা একটা বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শুরুতে গোমুলকা বৈষয়িক প্রণোদনায় জোর দিয়েছিলেন। তিনি শ্রমিকদের মজুরী বাড়িয়েছিলেন কিন্তু তাদের  চেতনার বৃদ্ধিকে অবহেলা করেছিলেন যার ফল হয়েছে শ্রমিকরা বেশী উপার্জনের চিন্তা করেছে কিন্তু তাদের কর্তব্যের প্রতি সঠিক চেতনা গ্রহণ করেনি। মজুরীর বৃদ্ধি উত্পাদনশীলতার বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে এবং মজুরী পুঁজিকে গ্রাস করে ফেলছিল। চাপ এখন তাদেরকে বাধ্য করেছে বস্তুগত প্রণোদনা প্রদানের বিরোধিতা ও চেতনাগত অনুপ্রেরণায় আসতে। গোমুলকা এমনকি বলেছেন, “অর্থ জনগণের মনকে কিনতে পারেনা।”

বৈষয়িক উrসাহ প্রদানের ওপর অতিরিক্ত জোর প্রদান সর্বদাই বিপরীতে চালিত করেছে মনে হয়। বিপুল পরিমাণ চেক লেখা স্বাভাবিকভাবে উচ্চবেতনভোগী স্তরকে সুখী করে কিন্তু ব্যাপক শ্রমিক ও কৃষক যখন তা নগদ টাকায় রূপান্তর করতে যান তারা দেখেন যে তারা পারছেননা, “চেতনাগত” তে যাওয়ার চাপ তাই আশ্চর্য কিছু নয়।

পৃষ্ঠা ৬৩১-এ যা বর্ণিত হয়েছে তা অনুসারে, সোভিয়েত ইউনিয়নে সঞ্চিত পুঁজির পরিমাণ ছিল সমগ্র জাতীয় আয়ের এক চতুর্থাংশ। চীনে এই পরিমাণ ছিল নিুরূপঃ ১৯৫৭ সালে শতকরা ২৭ ভাগ, ১৯৫৮ সালে শতকরা ৩৬ ভাগ, ১৯৫৯ সালে শতকরা ৪২ ভাগ, এবং মনে হচ্ছে যে ভবিষ্যতে শতকরা ৩০ ভাগের ওপর একটা অংক নিয়মিত বজায় রাখা সম্ভব হবে। উত্পাদনের বিপুল বিকাশের মধ্যে মূল সমস্যা নিহিত। কেবল যদি উত্পাদন বাড়ে আর সঞ্চয়ের শতকরা হার কিছুটা উপরে ওঠে জনগণের জীবনযাত্রার চূড়ান্তভাবে উন্নয়ন ঘটতে পারে।

মিতব্যয়িতা অনুশীলন করা এবং বিপুল পরিমাণ সামগ্রী ও সম্পদ সঞ্চয় করা আমাদের নিয়মিত কর্তব্য। এটা মনে করা ভুল হবে যে এটা কেবল প্রতিকুল পরিস্থিতিতে করা উচিত। এটা বিশ্বাস করা কঠিণ যে যখন দুঃখ কষ্ট কমে যায় মিতব্যয় ও সঞ্চয়ের প্রয়োজন নেই।

৪র্থ খণ্ডঃ অধ্যায় ৩৫ থেকে উপসংহার

৫৬. কমিউনিস্ট রাষ্ট্র

পৃষ্ঠা ৬৩৯ বলছে, “কমিউনিজমের উচ্চতর পর্যায়সমূহে রাষ্ট্র অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াবে আর ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হবে।” তা সত্ত্বেও এর জন্য কিছু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে। যদি অন্য কারোর রাষ্ট্রযন্ত্র আছে কিন্তু আপনার না থাকে, তা বিপজ্জনক। পৃষ্ঠা ৬৪০ বলছে যে এমনকি কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও, যতক্ষণ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো অস্তিত্বশীল, রাষ্ট্র অব্যাহতভাবে প্রয়োজনীয় থাকবে। এই অবস্থান সঠিক। অব্যবহিত পর্ইে বইটি বলছে, “কিন্তু এমন রাষ্ট্রের চরিত্র ও ধরণ কমিউনিস্ট পদ্ধতির নির্দিষ্ট আকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হবে।” এই বাক্যটি বোঝা কঠিণ। রাষ্ট্রের প্রকৃতি হচ্ছে এই যে এটা বিরোধী শক্তিসমূহকে দমনের একটা যন্ত্র। এমনকি এমন কার্যকরিতা যদি অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োজন আর নাও হয়, রাষ্ট্রের হিংসাত্মক চরিত্র বাইরের বিরোধী শক্তিসমূহের সাথে সম্পর্কের দিক থেকে বদলাবেনা। রাষ্ট্রের তথাকথিত রূপের অর্থ হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, কারাগার, গ্রেফতার, প্রাণদণ্ড প্রভৃতির চেয়ে বেশীকিছু নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ বজায় রয়েছে, কমিউনিজমে পৌঁছলে রূপে কী পার্থক্য হবে?

৫৭. কমিউনিজমে উত্তরণ

পৃষ্ঠা ৬৪১ বলছে, “একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজে কোন বৈর শ্রেণী নেই, ‘কিন্তু’ বৈর শ্রেণীসমূহের অবশেষসমূহ এখনো রয়েছে।” সমাজতন্ত্র থেকে কমিউনিজমে উত্তরণ সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে একটা বাস্তবতায় পরিণত করার প্রয়োজন নেই। সবকিছু এভাবে বলা যেতে পারে যে একটা সামাজিক বিপ্লবের প্রয়োজন নেই যাতে এক শ্রেণী আরেকটাকে উrখাত করে, কিন্তু একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটবে যাতে নয়া উত্পাদন সম্পর্ক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পুরোনোগুলোর স্থান নেবে।

এখানে গ্রন্থ ঘোষণা করতে এগিয়ে যায়, “এটা নিশ্চিতভাবে এই অর্থ করেনা যে, সমাজ কমিউনিজমের পথে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বসমূহকেও জয় করার প্রয়োজন হবেনা।” এই ঘোষণা স্রেফ প্রসঙ্গক্রমে আসা। যদিও জায়গায় জায়াগায় গ্রন্থ দ্বন্দ্বসমূহের স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু তা করেছে কেবল প্রাসঙ্গিকতায়। এই গ্রন্থ থেকে একটা জিনিস বাদ পড়েছে তা হচ্ছে কোন বিষয়কে ব্যাখ্যায় দ্বন্দ্বের বিশ্লেষণ থেকে তা যাত্রা করেনা। বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে রাজনৈতিক অর্থনীতিকে দ্বন্দ্বসমূহের বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করা উচিত।

যখন একটি কমিউনিস্ট সমাজ অর্জিত হবে, শ্রম শৃংখলা বর্তমানের চেয়ে অধিক কঠিন হতে বাধ্য। কারণ উচ্চতর স্তরের  স্বয়ংক্রিয়করণের প্রয়োজন হবে আগের চেয়ে উচ্চতর জনগণের শ্রম ও আচরনের নির্ভুলতা।

এখন আমরা কমিউনিস্ট সমাজকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত বলছি, একটা নিুতর আরেকটা উচ্চতর। এটা তা যা মার্কস ও তাঁর চক্র সেসময়ে সামাজিক বিকাশের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে দূরদর্শন করেছিলেন। উচ্চতর পর্যায়ের কমিউনিস্ট সমাজে প্রবেশ করার পর তা নতুন স্তরে বিকশিত হবে, এবং নতুন লক্ষ্য ও কর্তব্য নিশ্চিতভাবে নিজেদের উপস্থাপিত করবে।

৫৮. যৌথ মালিকানার ভবিষ্যত বিকাশ

পৃষ্ঠা ৬৫০ বলছে, “যৌথ খামারগুলির ও সমবায়গুলির উত্পাদন সম্পর্কসমূহের যে রূপসমূহ রয়েছে তা গ্রামাঞ্চলে উত্পাদিকা শক্তির বর্তমান প্রয়োজন ও স্তরের সাথে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” আমি আশ্চর্য হই যে সত্যিই যদি তা হয়।

লাল অক্টোবর যৌথ খামার উদ্বোধন করে একটা সোভিয়েত প্রবন্ধ বলছে, “একীভূতকরণের পুর্বে কিছু খামার বহু দিক থেকেই ব্যবস্থাপনা করা কঠিন ছিল। পরে সমস্যা দূর হয়।” প্রবন্ধটি বলছে যে খামারটির দশ সহস্র জনসংখ্যা রয়েছে এবং তিন হাজার অধিবাসীর জন্য একটা গৃহায়ণ প্রজেক্ট পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটা পরামর্শ দেয় যে খামারের বর্তমান রূপ উত্পাদিকা শক্তিসমূহের বিকাশের সাথে আর পুর্ণভাবে খাপ খায়না।

একই অনুচ্ছেদ বলছে, “আমাদের অবশ্যই সমগ্র প্রচেষ্টাকে সমবায়সমুহ ও যৌথ খামার মালিকানা ব্যবস্থার আরো বিকাশ ও শক্তিশালীকরণে ও অধিকতর বিকাশে নিয়োযিত করতে হবে।” বিকাশ যদি প্রয়োজন হয় একটা প্রক্রিয়াকে চালাতে হবে; তাহলে “কেন শক্তিশালীকরণে সকল প্রচেষ্টা?” সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন সম্পর্কসমূহ, সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ-অবশ্যই এগুলোকে সংহতকরণের কথা বলা যায়, কিন্তু এগুলোকে ধ্বংসের ব্যাপারে নয়। গ্রন্থ অস্পষ্টভাবে সামনে যাওয়ার পথের কথা বলে, কিন্তু যখন মূর্ত হিসাব নিকাশের মুহুর্ত আসে এটা সকল স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে। বহু দিকে(প্রধানত উত্পাদন) সোভিয়েতরা উন্নতি করে চলে, কিন্তু উত্পাদন সম্পর্কসমূহের প্রশ্নে মৌলিকভাবে তাদের উন্নতি বন্ধ হয়ে গেছে।

গ্রন্থ বলছে যে যৌথ মালিকানা থেকে সমগ্র জনগণের অবিভাজ্য মালিকানায় উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথমে প্রয়োজন হচ্ছে যৌথ মালিকানাকে সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানায় পরিণত করা, অর্থাr কৃষি উত্পাদন উপকরণ সমগ্রভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বানানো এবং রাষ্ট্রের সাথে মজুরীর জন্য সুষম চুক্তির অধীনে কৃষকদের সমগ্রভাবে শ্রমিকে পরিণত করা । বর্তমানে, দেশব্যাপী প্রতি চীনা কৃষকের গড় বার্ষিক আয় ৮৫*ইয়েন্(৬৫, ১৯৬৭ পাঠে)। ভবিষ্যতে, এই পরিমাণ যখন ১৫০ ইয়েন দাঁড়াবে আর শ্রমিকদের অধিকাংশকে কমিউন কর্তৃক প্রদান করা  হবে, একটা কমিউন মালিকানা ব্যবস্থাকে মূলত কার্যকর করা সম্ভব হবে। এই পথে রাষ্ট্র মালিকানার দিকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া সহজ হওয়া উচিত।

৫৯. গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দূর করা

পৃষ্ঠা ৬৫১তে শেষ অনুচ্ছেদে গ্রামীন বিনির্মাণ সম্পর্কে একটা ভাল অবস্থান রয়েছে।

যেহেতু তারা গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দূর করতে চান (বইটি বলছে “মৌলিক পার্থক্য”) কেন গ্রন্থ একথা বলার যুক্তি সৃষ্টি করছে যে এটা “বড় শহরগুলোর কার্যকরিতা হ্রাস করা?” নয়। ভবিষ্যতের শহরগুলো ততটা বড় হওয়ার প্রয়োজন নেই। বড় শহরগুলোর অধিবাসীদেরকে গ্রামাঞ্চলে স্থানান্তর করা উচিত। আণবিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে অনেক ছোট শহর তৈরী করা আপেক্ষিকভাবে সুবিধাজনক।

৬০. একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিবিধ সমাজতান্ত্রিক দেশের সমস্যা

পৃষ্ঠা ৬৫৯ বলছে, “প্রতিটি দেশ উত্পাদন অভিজ্ঞতা ও ক্যাডারসহকারে তার নিজ সর্বাধিক সুবিধাজনক প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিভাগগুলির বিকাশ সাধন করতে তার নিজ জনশক্তি ও বস্তুগত উrসসমূহকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সেই দ্রব্যসামগ্রী উত্পাদনের প্রয়োজন নেই যা অন্য দেশগুলো সরবরাহ করতে পারে।”

এটা খুব ভাল ধারণা নয়। এমনকি আমাদের নিজেদের প্রদেশসমূহ সম্পর্কেও আমরা এমন পরামর্শ দেইনা। আমরা সার্বিক বিকাশের কথা বলি এবং এমনটা মনে করিনা যে প্রতিটি প্রদেশের সেই দ্রব্যসামগ্রী উত্পাদনের প্রয়োজন নেই যা অন্য প্রদেশগুলো সরবরাহ করতে পারে। আমরা বিবিধ প্রদেশসমূহকে চাই তারা রকমারি উত্পাদন পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করুক, সমগ্রের ওপর যাতে কোন প্রতিকূল প্রভাব না পড়ে। ইউরোপ অন্যতম যে সুবিধা ভোগ করে তা হচ্ছে বিবিধ দেশের স্বাধীনতা। প্রত্যেকে কর্মকান্ডের এক একটা সারিতে নিয়োযিত যা ইউরোপের অর্থনীতিকে তুলনামূলক দ্রুত বিকশিত করেছে। ছিনের সময় হতে চীন একটা বৃহr শক্তির রূপ নিয়েছে একটা লম্বা সময়ের জন্য সমগ্রভাবে এর ঐক্যকে রক্ষা করে। একটা ত্রুটি ছিল আমলাতান্ত্রিকতা, যার শ্বাসরুদ্ধকারী নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় এলাকাগুলো স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারেনি, এবং প্রত্যেককে দাস বানিয়ে অর্থনৈতিক বিকাশ ছিল খুবই মন্থর। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একতার মধ্যে আমরা কাজে এগিয়ে যেতে চাই, বিভিন্ন প্রদেশগুলিও স্বাধীনতা পাবে। এটা হচ্ছে আপেক্ষিক ঐক্য এবং এটা হচ্ছে আপেক্ষিক স্বাধীনতা।

কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতি পেশ করার ও তাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রদেশগুলো নিজেদের সমস্যাগুলো স্বাধীনভাবে সমাধান করে। অন্যদিকে, বড় বড় ইস্যুগুলোতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তসমূহ সব একইভাবে তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্র ও প্রদেশসমূহের শলা পরামর্শের মাধ্যমে। উদাহারণস্বরূপ, লুশান সম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ ছিল এরকম[২৫]। সেগুলো সমগ্র দেশের প্রয়োজনের সাথে শুধু নয়, বহুবিধ প্রদেশের প্রয়োজনের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। কে এরকম মতাবস্থান গ্রহন করতে পারে যে স্থানীয় এলাকাগুলো নয়, কেবল কেন্দ্রের প্রয়োজন ডান সুবিধাবাদকে বিরোধিতা করা? সমগ্র দেশের জন্য একটা একক পরিকল্পনার অধীনে প্রদেশগুলির নিজেদের একসারি কর্মকান্ডে পূর্ণভাবে নিয়োযিত করাকে আমরা সমর্থন করি। যেখানে যোগান দেয়া কাঁচামাল ও বাজার রয়েছে, যোগান দেয়া মাল লাভ করা যায় ও স্থানীয়ভাবে বিক্রী করা যায়, যা করা যেতে পারে তা করা উচিত সম্ভাব্য পূর্ণ মাত্রায়। আগে, আমাদের চিন্তা ছিল প্রদেশগুলো আগে বিকশিত হলে রকমারি শিল্প, শিল্পদ্রব্য(উদাহারণস্বরূপ সাংহাইয়ের মতো এলাকা থেকে) সবকিছু খুব সম্ভবত প্রয়োজন হবেনা। এখন মনে হয় ব্যাপার তা নয়। সাংহাই ইতিমধ্যেই উচ্চতর, বৃহদায়তন মাত্রার, সূক্ষতর ও অধিকতর চমrকার উত্পাদনের দিকে বিকাশের প্রস্তাব রেখেছে। এখনো তাদের অনেককিছুই করার আছে!

আমি আশ্চর্য হই, অন্য দেশগুলো যা সরবরাহ করতে পারে সেই দ্রব্যসামগ্রী উত্পাদন না করার চেয়ে বরং প্রতিটি দেশের নিজের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলতে গ্রন্থ কেন ব্যর্থ হচ্ছে? সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে প্রত্যেকের নিজে নিজে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো নয়া বৃদ্ধির লক্ষ্যে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে একটা উপায় হিসেবে, সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মাত্রায় স্বাধীনভাবে কাজ করা, অন্যদের ওপর নির্ভর না করার থেকে একটা নীতি বের করা, এবং কেবল যখন কোন কাজ বাস্তবত ও প্রকৃতপক্ষে করা সম্ভব নয় তখনই কেবল করা নয়। সর্বোপরি, কৃষিকে ভাল করতে হবে যতদূর সম্ভব। অন্য দেশ অথবা প্রদেশের ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভরতা সর্বাধিক বিপজ্জনক।

কিছু দেশ এত ছোট যে, ঠিক গ্রন্থ যেভাবে বলছে, “সকল শিল্প বিভাগ বিকশিত করা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক হবে, একটা কর্তব্য যার জন্য তাদের সামর্থ্য অসম।” সেক্ষেত্রে অবশ্যই একটা দেশকে এর মধ্যে জোর করে যাওয়া উচিত নয়। ক্ষুদ্র জনসংখ্যাযুক্ত আমাদের কিছু প্রদেশ-চিংঘাই ও নিংশিয়া-এর জন্য সার্বিক বিকাশ অর্জন করা খুবই কঠিন হবে।

৬১. বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশের বিকাশ কি সমানভাবে করা যায়?

পৃষ্ঠা ৬৬০-এ তৃতীয় অনুচ্ছেদ বলছে, “…বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সামগ্রিক স্তরকে ক্রমান্বয়ে সমান্তরালে আনা।” এই দেশগুলোর জনসংখ্যা, সম্পদ-ভিত্তি ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি এক নয়। তাদের কোন কোনটার বিপ্লব ছিল বেশি পশ্চাদপদ, অন্যদের অধিকতর অগ্রসর। কীভাবে তারা সমান হতে পারে? যদি একজন পিতার কয়েক ডজন ছেলেমেয়ে থাকেঃ কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ বড়, কেউ ছোট, কেউ উজ্জ্বল আর কেউ ধীর, কীভাবে তারা সমান হতে পারে? এটা হচ্ছে বুখারিনের ভারসাম্য তত্ত্ব। বিবিধ সমাজতান্ত্রিক দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ সাম্যাবস্থায় নেই, একটা দেশের প্রদেশগুলির মধ্যেও না, কোন প্রদেশের কাউন্টিগুলিতেও না। কুয়াংতোঙ প্রদেশের গণস্বাস্থ্যের কথা ধরুন। ফো শান শহর ও ছিহলো কমিউন ভাল কাজ করছে। ফলে ফোশান সমগ্র প্রদেশের সাথে সাম্যাবস্থায় নেই। ছিহলো শাকুয়ানের সাথে সাম্যাবস্থায় নেই। ভারসাম্যহীনতার বিরোধিতা করা ভুল।

৬২. চূড়ান্ত প্রশ্ন হচ্ছে একটা ব্যবস্থার প্রশ্ন

পৃষ্ঠা ৬৬৮ বলছে যে সমাজতান্ত্রিক ঋণ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী ঋণের চেয়ে পৃথক। এটা ঘটনার সাথে মিলে যায়। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো সর্বদাই পুঁজিবাদী দেশগুলোর চেয়ে পছন্দনীয়। আমরা এই নীতি বুঝি। চূড়ান্ত প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবস্থাগত, প্রতিষ্ঠানগত। একটা দেশ যে পথ গ্রহণ করবে তা ব্যবস্থা নির্ধারণ করে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্ধারণ করে যে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো সর্বদা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে আর তাদের আপোষ হচ্ছে সর্বদাই অস্থায়ী।

৬৩. বিশ্বে দুই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক

পৃষ্ঠা ৬৫৮ “দুই বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিযোগিতা”র কথা বলে। সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলীতে স্তালিন দুই বিশ্ব বাজার সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। গ্রন্থ এখানে দুই ব্যবস্থার মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা আর অর্থনৈতিক সম্পর্কসমূহ “শান্তিপূর্ণভাবে বিকশিতকরণ” গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে। এটা বাস্তবে অস্তিত্বমান দুই বিশ্ববাজারকে একটি একক বিশ্ববাজারের মধ্যে দুই অর্থনৈতিক বাজারে পরিণত করে-স্তালিনের মতের থেকে এক পা পেছনে। দুই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে বস্তুত প্রতিযোগিতাই শুধু নেই বরং প্রচণ্ড ও ব্যাপক মাত্রার সংগ্রাম রয়েছে যে-সংগ্রামগুলো থেকে গ্রন্থ দূরত্ব বজায় রেখেছে।

৬৪. স্তালিনের সমালোচনা

স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী তে তাঁর অন্যান্য রচনাবলীর মতো ভ্রান্ত বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু পৃষ্ঠা ৬৮১ তে যে দুই অভিযোগ আনা হয়েছে তা বিশ্বাসজনক নয়।

একটা অভিযোগ হচ্ছে যে স্তালিন মনে করতেন “পণ্য সঞ্চালন মনে হচ্ছে ইতিমধ্যেই উত্পাদিক শক্তিসমূহের বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প ও কৃষির মধ্যে উত্পাদনের প্রত্যক্ষ বিনিময়ের ক্রমিক উত্তরণ ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা পূর্ণভাবে উদ্ভূত হয়েছে।”

এই বইতে স্তালিন বলেন যে যখন দুই ধরণের মালিকানা ব্যবস্থা রয়েছে তখন পণ্য উত্পাদন থাকে। তিনি বলেন যে যৌথ খামারসমূহের সংস্থাগুলিতে যদিও উত্পাদনের উপকরণ (ভুমি, হাতিয়ার প্রভৃতি) রাষ্ট্রের অধিকারে, উrপন্ন সামগ্রী সবই হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন যৌথের সম্পত্তি। কারণ হচ্ছে যৌথখামারের শ্রম(বীজের মতো) যৌথখামারের মালিকানাধীন, যেখানে রাষ্ট্র তাদেরকে যে জমি স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে দিয়েছে বস্তুত যৌথখামারগুলি কর্তৃক তা নিয়ন্ত্রিত যেন এটা তাদের নিজেদের সম্পত্তি। এমন পরিস্থিতিতে “যৌথ খামারগুলি, তারা যা পণ্যরূপে উrপন্ন করে তাকে সঞ্চালনে নিতে ইচ্ছুক, বিনিময়ে  তাদের যে পণ্য প্রয়োজন তা পাবার আশায়। বর্তমান সময়ে যৌথ খামারগুলো ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে বিনিময় ছাড়া অন্য কোন আর্থিক সম্পর্কে প্রবেশ করবেনা।”

স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নে পণ্য উত্পাদন বাতিল করার চলতি পোষণকারী মতকে সমালোচনা করেন এই মত রেখে যে তিরিশ বছর আগে যখন লেনিন পণ্য সঞ্চালন বিকাশে প্রতিটি প্রচেষ্টা নিয়োযিত করার ঘোষণা করলেন, আজকে পণ্য উত্পাদন তার চেয়ে কম প্রয়োজন নয়।

গ্রন্থ বলছে যে স্তালিন মনে হয়েছে যে পণ্যের জরুরী অবলোপের কথা বলছেন। এই অভিযোগকে ভাল বানানো কঠিণ। পণ্য বিনিময়  প্রশ্নে বলা যায়, স্তালিনের কাছে এটা ছিল কেবল একটা প্রকল্প। তিনি যেমন বলেছেন, “এই ব্যবস্থাকে জরুরীভাবে এগিযে নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই; শহরে শিল্পোrপন্ন সামগ্রীর সঞ্চয়ের মাত্রানুসারে অবশ্যই এর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে উত্পাদনের ক্ষেত্রে স্তালিন মূল্যের নিয়মের কার্যকরিতাকে অবমূল্যায়ন করেছেন বিশেষত উত্পাদনের উপকরণের কথা বলা যায়। “সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের ক্ষেত্রে মূল্যের নিয়ম কোন নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করেনা। পরিকল্পিত আনুপাতিক বিকাশের আর রাষ্ট্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতির নিয়ম এই ভূমিকা পালন করে।” গ্রন্থ কর্তৃক প্রদানকৃত বক্তব্য বাস্তবে স্তালিনের নিজস্ব বক্তব্য। যদিও গ্রন্থ বলছে যে উত্পাদনের উপকরণ হচ্ছে পণ্য, তাসত্ত্বেও, প্রথমস্থানে তার অবশ্যই বলা উচিত যে তারা সমগ্র জনগণের মালিকানার বর্গের মধ্যে। উত্পাদনের উপকরণের ক্রয় ও বিক্রয় কোনভাবেই মালিকানা পরিবর্তন করেনা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, গ্রন্থের স্বীকার করা উচিত যে মূল্যের নিয়ম উত্পাদনের ক্ষেত্র আর সঞ্চালনের প্রক্রিয়ায় ভিন্নভাবে কাজ করে। এসব বক্তব্যই স্তালিনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্তালিন ও ক্রুশ্চেভের মধ্যে একটা পার্থক্য হচ্ছে স্তালিন এসব উত্পাদনের উপকরণ যেমন ট্রাক্টর প্রভৃতিকে যৌথখামারের কাছে বিক্রয়ের বিরোধিতা করেছেন যেখানে ক্রুশ্চেভ বিক্রয় করেছেন।

৬৫. গ্রন্থের সাধারণ দৃষ্টিকোণ

এটা মনে করবেননা যে গ্রন্থে কোন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ নেই যেহেতু এতে প্রচুর মত রয়েছে যা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। অন্যদিকে এটা সমগ্রভাবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মনে করবেননা, যেহেতু এতে প্রচুর মত রয়েছে যা বিচ্যুত হয়েছে। যাহোক, আমরা এই উপসংহারে আসতে প্রস্তুত নই যে এই গ্রন্থ মূলত নেতিবাচক।

গ্রন্থ গুরুত্বারোপ করে যে একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি সমগ্র জনগণকে সেবা করে, সংখ্যালঘু শোষকদের মুনাফা সঞ্চালনকে নয়। গ্রন্থে আলোচিত সমাজতন্ত্রের মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়ম সমগ্রভাবে ভুল বলা যায়না। আর এই নিয়মগুলো হচ্ছে গ্রন্থের মৌলিক বিষয়। গ্রন্থ পরিকল্পনা প্রণয়ন, আনুপাতিকতা, বিকাশের উচ্চহার প্রভৃতিও ব্যাখ্যা করে, এবং এই সব ক্ষেত্রে গ্রন্থ এখনো সমাজতন্ত্রী ও মার্কসবাদী। কিন্তু একবার পরিকল্পনা প্রণয়ন আর আনুপাতিকতা স্বীকার করা হলে, কীভাবে এই বিষয়গুলো করা হবে তা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে।

তাসত্ত্বেও, এই গ্রন্থের কিছু মৌলিক বক্তব্য রয়েছে যা ভ্রান্ত। “রাজনীতি কমান্ডে” এবং “গণলাইন” এর ওপর জোর দেওয়া হয়নি। “দুই পায়ের ওপর হাটা”র কোন আলোচনা নেই, আর স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত বৈষয়িক প্রণোদনার ওপর একতরফাভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৈষয়িক উrসাহ প্রদানের দাবী করা হয়েছে এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ অনেকদূর দৃষ্টিগ্রাহ্য।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অধ্যয়নে গ্রন্থ দ্বন্দ্ব থেকে যাত্রা করেনা। সত্য হচ্ছে, না এটা দ্বন্দ্বের সার্বজনীনতাকে স্বীকৃতি দেয় না এই ব্যাপারকে যে সামাজিক দ্ন্দ্বসমূহ হচ্ছে সামাজিক বিকাশের চালিকাশক্তি। সত্য হচ্ছে, তাদের নিজেদের সমাজে*(*১৯৬৭ পাঠে সমাজতান্ত্রিক সমাজে) এখনো শ্রেণীসংগ্রাম রয়েছে, অর্থাr সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের অবশেষের মধ্যে সংগ্রাম। কিন্তু এটাকে তারা স্বীকার করেননা। তাদের সমাজে*(১৯৬৭ পাঠে সমাজতান্ত্রিক সমাজে) তিন ধরণের মালিকানা রয়েছেঃ সমগ্র জনগণের দ্বারা, যৌথ খামারের দ্বারা, এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তি দ্বারা। নিশ্চিতভাবে, এধরণের স্বতন্ত্র ব্যক্তি মালিকানা যৌথকরণের পূর্বে স্বতন্ত্র ব্যক্তি মালিকানা থেকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ যখন কৃষকদের জীবনযাত্রা সমগ্রভাবে ব্যক্তিমালিকানা ভিত্তিক ছিল। এখন তাদের এক পা নৌকায় আরেক পা এখনো তীরে, প্রধানত যৌথর ওপর নির্ভরতা কিন্তু একইসঙ্গে ব্যক্তিগতর ওপরও। তিন ধরণের মালিকানা যদি থাকে, দ্বন্দ্ব ও সংগ্রামও থাকবে। কিন্তু এর ওপর গ্রন্থের  কোন আলোচনা নেই। গণ আন্দোলনের প্রতি কোন উrসাহ প্রদান নেই। সমাজতন্ত্রের অধীনে যৌথ মালিকানাকে সমাজতন্ত্রের অধীনে গণ মালিকানায় উত্তরণ ঘটানোর, কমিউনিজমে উত্তরণের একটা পূর্বশর্ত হিসেবে সমগ্র সমাজকে সমগ্র জনগণের অবিভাজ্য সম্পদে পরিণত করার কোন স্বীকৃতি নেই।

গ্রন্থ এমন অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করে যেমন “নিন্দার্হ” ও “অন্বয়”, এই ধারণার স্থান দখল করতে যে এক মালিকানা ব্যবস্থা আরেকটায় পরিণত হয়, এক ধরণের উত্পাদন সম্পর্ক আরেকটাতে পরিণত হয়। এই দিক থেকে বইটির গুরুতর ত্রুটি রয়েছে, মারাত্মক ভুল রয়েছে, আর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ থেকে আংশিকভাবে বিচ্যুত।

গ্রন্থটি খুব দুর্বলভাবে (Poorly) লেখা, পড়ার জন্য না প্ররোচক না মজার। এটা না উত্পাদিক শক্তি ও উত্পাদন সম্পর্কের না অথনৈতিক ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর মধ্যেকার দ্বন্দ্বের মূর্ত বিশ্লেষণ থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রশ্ন তুলে ধরায়, সমস্যাসমূহের গবেষণায়, এটা সর্বদা সাধারণ ধারণা অথবা সংজ্ঞা থেকে যাত্রা করে। বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা না দিয়ে এটা সংজ্ঞা প্রদান করে। বস্তুত, একটা সংজ্ঞা হওয়া উচিত কোন একটা বিশ্লেষণের ফল, যাত্রাবিন্দু নয়। পূর্ণ ভিত্তি ছাড়াই গ্রন্থ এক ঝাঁক নিয়ম প্রস্তাব করে, যে নিয়ম মূর্ত ঐতিহাসিক বিকাশের বিশ্লেষণের মাধ্যমে আবিস্কৃত ও যাচাইকৃত নয়। নিয়মসমূহ নিজে নিজে ব্যাখ্যাযোগ্য হতে পারেনা। মূর্ত প্রক্রিয়াসমূহ থেকে, মূর্ত ঐতিহাসিক বিকাশ থেকে কেউ যদি কাজ না করেন, নিয়মসমূহকে পরিস্কারভাবে ব্যখ্যা করা হবেনা।

ব্ই সমস্যাকে পাণ্ডিত্যপূর্ণভাবে এর বিষয়বস্তুর ওপর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সহকারে বিচার করেনা। ইস্যুগুলো পরিস্কারভাবে  উপস্থাপিত হয়না। গঠণ প্রলুব্ধকারক নয়, ভোঁতা ও অযৌক্তিক, এমনকি আনুষ্ঠানিক যুক্তির অভাবযুক্ত। মনে হয় বিভিন্ন লেখক এটা লিখেছেন, প্রত্যেকে একটা করে অধ্যায় নিয়ে-ঐক্য ব্যতীত শ্রমের একটা বিভাজন। একটা পাঠ্যপুস্তকের যে পদ্ধতিগত ক্রম থাকে তার অভাব এতে রয়েছে। এর ওপর, এর পদ্ধতি হচ্ছে সংজ্ঞা থেকে যাত্রা করা এবং এটা পড়তে অর্থনীতি অভিধানের মতো লাগে। লেখকরা পরোক্ষ, বহুক্ষেত্রে একজন আরেকজনের সাথে দ্বন্দ্বরত, পরের অধ্যায়গুলো পূর্বের গুলোর সাথে পরস্পর বিরোধী, শ্রমের সমবায়ধর্মী বিভাজন এবং যৌথ লেখকত্ব একটা পদ্ধতি। কিন্তু সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে কতিপয় সহকারীসহ একজন নেতা লিখবে। এই পদ্ধতিতেই মার্কস ও তাঁর চক্র লিখেছেন, এবং তাদের রচনাগুলো ছিল একক, কঠোরভাবে ও পদ্ধতিগতভাবে বৈজ্ঞানিক।

লেখার সময় ফল হবে চমrকার কেবল যদি সমালোচনার একটা লক্ষ্য থাকে। যদিও এই গ্রন্থের সঠিক কিছু বলার আছে, এটা ভুল বিবেচিত মতগুলির একটা সমালোচনা উrসারিত করেনা। এটা অধ্যয়নকে ক্লান্তিকর করে তোলে।

বহু ক্ষেত্রে কেউ মনে করবেন যে একজন বিপ্লবী নয়, একজন পণ্ডিত কথা বলছেন। যে অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক অনুশীলন বোঝেনা সে একজন দক্ষ নয়। গ্রন্থ মনে হয় নিচের রকমের পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছেঃ সেরকম লোক রয়েছে যারা ব্যবহারিক কাজ করেন কিন্তু সাধারণীকরণ করার সামর্থ্যরে অভাব রয়েছে, যেহেতু তাদের ধারণা(ঈড়হপবঢ়ঃ) ও নিয়মের অভাব রয়েছে; অন্যদিকে যারা তাত্ত্বিক কাজ করেন তাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। এই দুই ধরণ একাত্ম হয়নি; অর্থাৎ তত্ত্ব ও অনুশীলন একাত্ম হয়নি।

গ্রন্থটি দেখায় যে লেখকের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি নেই। একটা অর্থনীতির পাঠ লিখতে কাউকে দার্শনিকভাবে চিন্তা করতে হবে। দার্শনিকদের উচিত লেখায় অংশ গ্রহণ করা, অন্যথায় একটা সন্তোষজনক পাঠ উত্পাদন করা সম্ভব হবেনা।

গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯৫৫র প্রথমদিকে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মূল কাঠামো মনে হচ্ছে তার আগেই তৈরি করা। এবং দেখা যাচ্ছে যেন স্তালিন যে মডেল সেসময় দাঁড় করিয়েছিলেন তা খুব আলোকপ্রাপ্ত নয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নে বর্তমানে তাঁরা আছেন যারা বইটা কীভাবে করা হয়েছিল সে নিয়ে একমত নন। জি, কজলভ “সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক অর্থনীতি অধ্যয়নের একটা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া” নামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যা বইটির সমালোচনা করে। তাঁর মত ব্যাপারটার মূলে প্রবেশ করে। তিনি বইটির পদ্ধতিবিদ্যাগত ত্রুটি ব্যাখ্যা করেন এবং যে নিয়মগুলো সমাজতান্ত্রিক উত্পাদন প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ থেকে যাত্রা করে-তার ব্যাখ্যা আহ্বাণ করেন। তিনি গঠণ কাঠামোর পরামর্শও দেন। কজলভ ও অন্যদের সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সম্ভব যে একটা বিপরীত চিন্তা থেকে আরেকটা পাঠ্যপুস্তক সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রস্তুত হবে। বিরোধিতা সর্বদাই ভালর দিকে যায়।

ব্ইটির একবার অধ্যয়ণে কেউ এর পদ্ধতি ও দৃষ্টিকোণ বুঝতে পারে। কিন্তু এখনো তা গভীর অধ্যয়ণ নয়। ভবিষ্যতে যা সবচেয়ে ভাল হবে তা হচ্ছে ইস্যু ও বক্তব্যগুলোকে শাঁস হিসেবে নেয়া, কিছু যতœশীল গবেষণা চালানো, কিছু বস্তু একত্রিত করা, এবং অন্যান্য সুলভ প্রবন্ধ, পুস্তক, রিপোর্ট প্রভৃতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া এই মত নিয়ে যা এই বইয়ের সাথে পার্থক্য করে। বিতর্কিত ইস্যুগুলিতে বিভিন্ন মতের একটা ধারণা থাকা উচিত। ইস্যুকে স্বচ্ছ করতে অন্তত দুই দিকের মত বুঝতে হবে।

ভ্রান্ত মতগুলোকে আমাদের অবশ্যই সমালোচনা ও বিরোধিতা করতে হবে, কিন্তু আমাদের অবশ্যই সকল সঠিক জিনিসকে রক্ষা করতে হবে। সাহস ও সতর্কতা উভয়ই প্রয়োজন।

যাই হোকনা কেন, তাদের জন্য একটা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক অর্থনীতি লেখা সমগ্রভাবে একটা বিরাট কর্তব্য। কত সমস্যা এটা ধারণ করে তা নির্বিচারে, বইটি অন্ততঃ আমাদের বিতর্ক করার জন্য সামগ্রী দ্বারা সজ্জিত করে, এবং এই প্রশ্নে আরো অধ্যয়নে চালিত করেছে।

৬৬. রাজনৈতিক অর্থনীতির একটা পাঠ কীভাবে লেখতে হয়

মালিকানা ব্যবস্থা থেকে যাত্রা করা পাঠটির জন্য নীতিগতভাবে অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু এমনকি একটা অধিকতর ভাল পথ আছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি গবেষণায় মার্কসও পুঁজিবাদের অধীন উত্পাদনের উপকরণের মালিকানা প্রধানত অধ্যয়ন করেন, এটা পরীক্ষা করে যে কীভাবে উত্পাদনের উপকরণের বন্টন পণ্যের বন্টনকে নির্ধারণ করে। পুঁজিবাদী সমাজে উত্পাদনের সামাজিক চরিত্র ও মালিকানার ব্যক্তিগত চরিত্র হচ্ছে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব। মার্কস পণ্য থেকে শুরু করেন এবং পণ্য(জিনিসগুলোর মধ্যে সম্পর্ক)-এর পেছনে জনগণের মধ্যকার লুক্কায়িত সম্পর্কসমূহের উন্মোচনে এগিয়ে যান। এখনো সমাজতান্ত্রিক সমাজে পণ্যের দ্বৈত্ব রয়েছে; তাসত্ত্বেও উত্পাদনের উপকরণের গণমালিকানার এবং এই বাস্তবতা যে শ্রমশক্তি আর পণ্য নয়-এই দিক থেকে সমাজতন্ত্রের অধীন পণ্যের দ্বৈত্ব আর পুঁজিবাদের অধীন তাদের দ্বৈত্ব এক নয়।  জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক পণ্যসম্পর্কের পেছনে আর লুক্কায়িত নয়। তাই, যদি পণ্যের দ্বৈত্ব দিয়ে সমাজতন্ত্রের অর্থনীতির অধ্যয়ন শুরু করা হয় মার্কসের পদ্ধতি নকল করে, এটা ইস্যুগুলোকে বিভ্রান্ত করতে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে জনগণের জন্য বিষযগুলোকে বুঝতে কঠিণ করে তোলার মাধ্যমে।

রাজনৈতিক অর্থনীতির লক্ষ্য উত্পাদন সম্পর্কের অধ্যয়ণ। যেমনটা স্তালিন দেখেছেন, উত্পাদন সম্পর্কে তিনটা জিনিস রয়েছেঃ মালিকানা, শ্রমের কালে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, এবং পণ্যের বন্টন। আমাদের নিজেদের একটা রাজনৈতিক অর্থনীতি লিখতে আমরাও মালিকানা ব্যবস্থা দিয়ে শুরু করতে পারি। প্রথমত, আমরা উত্পাদনের উপকরণের ব্যক্তিগত থেকে গণমালিকানায় রূপান্তরকে ব্যাখ্যা করিঃ কীভাবে আমরা আমলাতান্ত্রিক পুঁজির ব্যক্তি মালিকানা এবং পুঁজিবাদী মালিকানা ব্যবস্থাকে সমগ্র জনগণের সমাজতান্ত্রিক মালিকানায় রূপান্তর করলাম; কীভাবে ভুস্বামীদের কর্তৃক ভুমির ওপর ব্যক্তিমালিকানাকে প্রথমে স্বতন্ত্র কৃষকদের ব্যক্তিগত মালিকানায়, তারপর সমাজতন্ত্রের অধীনে যৌথ মালিকানায় পরিণত করা হল। কেবল তখনই সমাজতন্ত্রের অধীনে দুই ধরণের গণ মালিকানার মধ্যকার দ্বন্দ্বকে ব্যাখ্যা করতে পারি এবং কীভাবে সমাজতন্ত্রের অধীনে যৌথ মালিকানাকে কমিউনিজমের অধীনে জনগণের মালিকানায় উত্তরণ ঘটাতে পারে। একইসময়ে, আমাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে কীভাবে জনগণের মালিকানা নিজে পরিবর্তিত হয়ঃ ক্যাডারদের নিুতর স্তরগুলিতে বদলী করার ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তর কর্তৃক প্রশাসন, উদ্যোগসমূহের স্বশাসনের অধিকার প্রভৃতি। যদিও সমগ্র জনগণের মালিকানায় একই রকম, আমাদের উদ্যোগগুলি বহুবিধভাবে প্রশাসিত, কিছু কেন্দ্রের বিভাগগুলো দ্বারা, অন্যরা প্রদেশগুলো দ্বারা ও পৌরসভা অথবা স্বশাসিত অঞ্চলসমূহ, আবার অন্যরা স্থানীয় বিশেষ জেলা অথবা কাউন্টির মাধ্যমে। কিছু কমিউন চালিত সংস্থা সমগ্র জনগণের আধা-মালিকানাধীন, যৌথর আধা-মালিকানাধীন। কিন্তু কেন্দ্রীয় অথবা স্থানীয় যেভাবেই প্রশাসিত হোক উদ্যোগসমূহ সব ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অধীনে এবং বিশেষ স্বশাসনের অধিকারসমুহ ধারণ করে।

উত্পাদনশীল শ্রমের কালে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের দিকে মোড় নিয়ে, “কমরেডসুলভ সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সাহায্যের সম্পর্কসমূহ”-ধরণের মন্তব্যের পাশাপাশি গ্রন্থ গভীর ইস্যুগুলিকে আঁকড়ে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে এই ক্ষেত্রে কোন গবেষণা অথবাবিশ্লেষণ না করে। মালিকানা ব্যবস্থার প্রশ্ন সমাধা হওয়ার পর, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে পরিচালনা, কীভাবে সমগ্র জনগণেরঅথবা যৌথমালিকানাধীন উদ্যোগসমূহ পরিচালিত হয়। একটা নির্দিষ্ট মালিকাানা ব্যবস্থার অধীনে জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নের মতো একই রকম এটা একটা বিষয় যা বহু প্রবন্ধ ব্যবহার করতে পারে। একটা নির্দিষ্ট সময়কালে মালিকানা ব্যবস্থায়পরিবর্তনের সর্বদাই সীমা রয়েছে কিন্তু উত্পাদনশীল শ্রমে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বিপরীতভাবে বিরতিহীন পরিবর্তনে রত থাকে। সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন সংস্থাসমূহের পরিচালনা সম্পর্কে আমরা একসারি অবস্থান গ্রহণ করেছিঃ কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব ও গণআন্দোলনের একীভবন, পার্টি নেতা, শ্রমজীবি জনগণ ও টেকনিকাল কমীদের একীভবন, উত্পাদনে ক্যাডারদের অংশগ্রহণ; পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ; দৃঢ়ভাবে আঞ্চলিক আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন পরিবর্তন।

পণ্যের বন্টন সম্পর্কে গ্রন্থকে পুনর্লিখন করতে হবে, এর বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গীকে সবমিলিয়ে পরিবর্তন করে। কঠিণ, তিক্ত সংগ্রাম, বর্ধিত পুনরূত্পাদন, কমিউনিজমের ভবিষ্যত প্রত্যাশা-এসবকেই গুরুত্ব প্রদান করতে হবে, ব্যক্তিগত বৈষয়িক প্রণোদনাকে নয়। যে লক্ষ্যের  দিকে জনগণকে চালিত করতে হবে তা “একজন পোষ্য, দেশে একটা গৃহ, একটা মোটরগাড়ি, একটা পিয়ানো ও একটা টেলিভিশিন নয়” এটা নিজেকে সেবা করার রাস্তা, সমাজের নয়। এক “দশ হাজার লি ভ্রমণ শুরু হয় যেখানে আপনি দাঁড়িয়ে।” কিন্তু কেউ যদি ভবিষ্যতের দিকে চিন্তা না দিয়ে কেবল পায়ের দিকে তাকায়, তখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ বিপ্লবী উত্তেজনা উদ্দীপনার কী বাকি থাকল?*[*“ভ্রমণের জন্য কী শক্তি বাকি থাকল?” ১৯৬৭ পাঠে]

৬৭. সারে পৌঁছতে কীভাবে বহিরঙ্গের অধ্যয়ন করতে হয়

একটা সমস্যাকে অধ্যযনে বহিরঙ্গ দিয়ে অবশ্যই শুরু করতে হবে যা জনগণ দেখতে পায় ও অনুভব করতে পারে. সেগুলোর পেছনে যে সার রয়েছে তাকে গবেষণা করতে এবং সেখান থেকে সারকে ও বিষয়গত জিনিসগুলো ও ঘটনাসমূহের দ্বন্দ্বকে উন্মোচনে এগিয়ে যাওয়া।

 গৃহযুদ্ধের সময় এবং জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রশ্নে আমাদের অধ্যয়ন বহিরঙ্গ দিযে শুরু হয়। শত্রু ছিল বড় ও শক্তিশালি, আমরা ক্ষুদ্র ও দূর্বল। এটা সেসময়ের সর্বাধিক বহিরাকৃতি ছিল যা সবাই দেখতে পেয়েছে। কীভাবে একটা ক্ষুদ্র ও দূর্বল পক্ষ বড় ও শক্তিশালি শত্রুকে পরাজিত করতে পারে তার অধ্যয়ণে বহিরাকৃতি থেকে যাত্রা করে আমরাই সমস্যাসমূহকে অধ্যয়ণ ও সমাধা করেছিলাম। আমরা ব্যাখ্যা করলাম যে আমরা যদিও ক্ষুদ্র ও দুর্বল, আমাদের গণসমর্থন ছিল এবং শত্রু বড় ও শক্তিশালি হলেও কিছু এলাকায় তাদের ওপর আঘাত হানার মতো অরক্ষিত তারা ছিল। গৃহযুদ্ধের কালের কথা ধরুন, যখন শত্রুর কয়েক লক্ষ লোক ছিল, আমাদের ছিল কয়েক দশক সহস্র। রণনৈতিকভাবে শত্রু ছিল শক্তিশালি আর আক্রমণাত্মক, আমরা ছিলাম দূর্বল ও রক্ষণাত্মক। কিন্তু আমাদেরকে আক্রমণ করতে তাদেরকে নিজেদের বাহিনীকে কলামে, কলামকে আবার ডিটাচমেন্টে বিভক্ত করতে হয়েছিল। সাধারণভাবে Mao-speech-Founding-of-New-Chinaএকটা কোম্পানী একটা শক্তিশালি পয়েন্টে আঘাত হানবে যেখানে অন্যরা তখনো সতর্কতার সাথে চলবে। আমরা তখন কয়েক দশক সহস্রকে কেন্দ্রীভূত করবো একটি কলামকে আঘাত করতে, এমনকি আমাদের বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে শত্রুর কলামের একটি একক পয়েন্ট দখল করতে কেন্দ্রীভূত করবো, অন্য গ্রুপটি সেখানে শত্রু বাহিনীর সেই অংশগুলো-যারা সতর্ক রয়েছে-তাদেরকে বিক্ষিপ্ত করে দেবে। এভাবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি। শত্রু ছোট ও দূর্বলে পরিণত হয়েছে আর আমরা বড় ও শক্তিশালিতে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যখন তারা এমন একটা জায়গায় আসে যার পরিস্থিতি তাদের কাছে অজানা, জনগণ তাদের সমর্থন করবেনা এবং আমরা শত্রুর একটা গ্রুপকে সম্পূর্ণভাবে উrখাত করতে সক্ষম হবো।

ভাবাদর্শ-পদ্ধতিগততে পরিণত হয়, সাধারণভাবে বললে, প্রপঞ্চের গতিধারায়। কারণ হচ্ছে চিন্তাধারা ও উপলব্ধি হচ্ছে বস্তুগত আন্দোলনের প্রতিফলন। নিয়ম হচ্ছে সেই জিনিস যা বারবার আবির্ভূত হয়, প্রপঞ্চের গতিধারায় দূর্ঘটনাক্রমে নয়। কোনকিছুর বারংবার আবির্ভাবের পরই কেবল তা নিয়মে পরিণত হয় এবং এভাবেই কেবল বস্তুকে বুঝতে হবে। উদাহারণস্বরূপ, পুঁজিবাদের সংকট প্রতি দশবছরে আবির্ভূত হয়। যখন এটা বারংবার ঘটে তখন পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক সংকটের নিয়ম বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়। ভুমি সংস্কারে, শ্রমশক্তির বদলে আমাদেরকে জনসংখ্যা অনুসারে ভুমি বন্টন করতে হয়েছে। কিন্তু অনেকবার এটা করার আগে আমরা এটা পরিস্কারভাবে বুঝতে পারিনি। দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের শেষভাগের সময়ে “বাম” হঠকারী কমরেডগণ শ্রমশক্তি অনুসারে ভুমি বন্টনের আহবান জানান এবং মাথাপিছু জমি বন্টনকে অননুমোদন করেন। তাদের দৃষ্টিতে জনসংখ্যা অনুপাতে ভুমি বন্টন এমনকি শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গীতে নিখুঁত ছিলনা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ছিলনা। তাদের শ্লোগান ছিলঃ ভুস্বামীদের জন্য কোন জমি নয়; ধনী কৃষকদের জন্য খারাপ জমি আর অন্যদের জন্য শ্রমশক্তি অনুযায়ী জমি। ঘটনা ধারা তাদের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করেছে। আমরা বারংবার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই কেবল পরিস্কার হয়েছে কীভাবে জমি বন্টিত হতে  হবে।

মার্কসবাদের প্রয়োজন হচ্ছে যে যুক্তি হবে ইতিহাসের সাথে সুসামঞ্জস। চিন্তাধারা হচ্ছে বস্তুগত অস্তিত্বের প্রতিফলন। যুক্তি ইতিহাস থেকে আসে। যদিও গ্রন্থটির সামগ্রীর প্রাচুর্য আছে, কোন বিশ্লেষণ নেই, কোন যুক্তি নেই, নিয়মগুলো বিচারযোগ্য নয়, এবং এটা সন্তোষজনক নয়। কিন্তু সামগ্রীর অভাবও অসন্তোষজনক। তখন জনগণ কেবল যুক্তি দেখবে, কিন্তু ইতিহাস নয়। অধিকন্তু, এটা কেবল হবে আত্মগত যুক্তি। ঠিক এখানেই বইটির ত্রুটি নিহিত।

চীনা পুঁজিবাদের একটা ইতিহাস রচনা করা হচ্ছে পরম গুরুত্বপূর্ণ। যারা ইতিহাস অধ্যয়ণ করেন, বিভিন্ন সমাজ ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুগ যদি অধ্যয়ন না করেন, তারা সামগ্রিক ভাল ইতিহাস রচনায় নিশ্চিতভাবে অক্ষম হবেন। বিভিন্ন্ সমাজ অধ্যয়ন করা মানে হচ্ছে ঐ সমাজসমূহের পরিচালক নির্দিষ্ট নিয়মসমূহ বের করা। একবার নির্দিষ্ট নিয়মসমূহ অধিত হলে ও পরিস্কারকরণ হলে, সমাজের সাধারণ নিয়মসমূহ জানা সহজ হবে। বহু মুর্ত নির্দিষ্টতার অধ্যয়ন থেকে সাধারণকে বিচার করা প্রয়োজন। যদি মূর্ত নিয়মসমূহ পরিস্কারভাবে বোঝা না হয়, সাধারণও বোঝা যাবেনা। উদাহারণস্বরূপ, প্রাণীদের পরিচালক সাধারণ নিয়ম অধ্যয়ণে, মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রভৃতির পরিচালক সাধারণ নিয়মসমূহ আলাদা আলাদাভাবে অধ্যয়ন প্রয়োজন।

৬৮. দর্শনকে অবশ্যই আমাদের মুখোমুখি রাজনৈতিক কর্তব্যকে সেবা করতে হবে

যে কোন দর্শন তার সমকালীন কর্তব্যসমূহের সেবায় নিয়োযিত। পুঁজিবাদী দর্শনের এই কার্যকারিতা রয়েছে। এবং প্রতিটি জাতি ও প্রতিটি যুগের নতুন তাত্ত্বিকেরা রয়েছে যারা সময়ের রাজনৈতিক কর্তব্যের জন্য নতুন তত্ত্ব রচনা করেন। ইংলন্ডে বেকন ও হবসের মতো বুর্জোয়া বস্তুবাদীর আবির্ভাব ঘটল; এনসাইক্লোপিডিস্ট (বিশ্বকোষবাদী) দের মতো বস্তুবাদীদের তারপর আবির্ভাব ঘটল অস্টাদশ শতকের ফ্রান্সে; জার্মান ও রুশ বুর্জোয়াদেরও তাদের বস্তুবাদীরা ছিল। এরা সকলেই ছিল বুর্জোয়া বস্তুবাদী, যাদের সকলেই বুর্জোয়া শ্রেণীর রাজনৈতিক কর্তব্যকে সেবা করেছেন। তাই, ইংরেজ অথবা বুর্জোয়া বস্তুবাদের অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে ফরাসী বুর্জোয়া বস্তুবাদকে অপ্রয়োজনীয় বানায়নি, না ইংরেজ না ফরাসী বুর্জোয়া বস্তুবাদের অস্তিত্ব জার্মান অথবা রুশদের অপ্রয়োজনীয় বানিয়েছে।

সর্বহারা শ্রেণীর মার্কসবাদী দর্শন এমনকি আরো পরম গুরুত্বপূর্ণভাবে সমকালীন রাজনৈতিক কর্তব্যের সেবায় নিয়োযিত। চীনের জন্য মার্কস, লেনিন এবং স্তালিন*(*১৯৬৭ পাঠে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে) প্রয়োজনীয অধ্যয়ন। এটা সর্বাগ্রে আসে। কিন্তু কোন দেশের কমিউনিস্টদের এবং সর্বহারা দার্শনিক চক্রসমূহকে অবশ্যই নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি করতে হবে, নতুন বই লিখতে হবে, তাদের নিজেদের তাত্ত্বিক তৈরি করতে হবে তাদের মোকাবেলা করা রাজনৈতিক কর্তব্যকে সেবা করতে।

কোন জাতি কোন সময়ই যা পুরোনো তার নির্ভর করতে পারেনা। লেনিনের দুই রণকৌশলের ও অন্য রচনাসমূহ ছাড়া  শুধু মার্কস ও এঙ্গেলস থাকলে ১৯০৫ ও তrপরবর্তী নতুন সমস্যাসমূহ তা সমাধান করতে পারতনা। কেবল ১৯০৭-এর বস্তুবাদ ও বিচারমূলক সমালোচনা থাকলে তা অক্টোবর বিপ্লবের আগে ও পরে যে নতুন ইস্যুগুলো উত্থিত হল তার সমাধানে পর্যাপ্ত হতনা। এই সময়ের প্রয়োজনকে মেটাতে লেনিন লেখেন সাম্রাজ্যবাদ, রাষ্ট্র ও বিপ্লব এবং অন্য রচনাসমূহ। লেনিনের পর স্তালিনের প্রয়োজন হয় লেনিনবাদের ভিত্তি এবং লেনিনবাদের সমস্যাবলী লেখার, প্রতিক্রিয়াশীলদের মোকাবেলা করতে আর লেনিনবাদকে রক্ষা করতে। আমাদের দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের অবসান এবং জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের শুরুতে আমর অনুশীলন সম্পর্কে এবং দ্বন্দ্ব সম্পর্কে লিখি। সেগুলো সেসময়ের প্রয়োজন মিটাতে লেখা হয়েছে।

এখন আমরা সমাজতন্ত্রের কালে প্রবেশ করায় নতুন সমগ্র এক সারি সমস্যা আবির্ভূত হয়েছে। আমরা যদি নয়া প্রয়োজনসমূহ না মিটাই, নয়া লেখা না রচনা করি, নতুন তত্ত্বকে রূপ প্রদান না করি, তাহলে চলবেনা!

পরিশিষ্ট

১.চীনের শিল্পায়নের সমস্যা

সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হওয়ার পর যখন সকল বৃহr শিল্প উত্পাদনের মূল্য ছিল সকল শিল্পজ ও কৃষি উত্পাদনের মূল্যের শতকরা ৭০ ভাগ, তাঁরা তড়িr ঘোষণা করলেন যে শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। আমরাও দ্রুত এমন একটি মাপকাঠিতে পৌঁছতে পারতাম, কিন্তু আমরা যদি তা করতাম আমরা দাবী করতাম না যে শিল্পায়ন একটা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, কারণ আমাদের ৫০ কোটি কৃষক রয়েছেন যারা কৃষিতে নিয়োযিত। শিল্পোrপাদন যখন শতকরা ৭০ ভাগ তখন যদি শিল্পায়নের দাবি করা হয় আমাদের জাতীয় অর্থনীতির প্রকৃত চিত্রকে যথার্থভাবে প্রতিফলিত করতে আমরা ব্যর্থ হবো তাই নয় বরং স্থবিরতাও জন্ম দিতে পারি। ৮ম জাতীয় গণকংগ্রেসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আমরা দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায সমাজতান্ত্রিক শিল্পাযনের শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলাম। আমরা আরো বলেছিলাম যে পনের বছর অথবা এরকম সময়ের মধ্যে আমরা একক সমগ্র শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। এই দুই বিবৃতি পরস্পর  দ্বন্দ্বমূলক, পূর্ণ সজ্জিত শিল্প ব্যবস্থা ব্যতীত কীভাবে আমরা সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়নের “দৃঢ় ভিত্তি” অর্জনের কথা বলতে পারি? এখন সবকিছু যে অবস্থায় আছে, আরেকটা তিন বছরে আমরা প্রাথমিক শিল্প সামগ্রী উত্পাদনে ইংলন্ডকে অতিক্রম করতে পারি। আরেক পাঁচ বছরে শিল্প ব্যবস্থাকে একটা ব্যবহারিক বাস্তবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কর্তব্যকে আমরা সম্পাদন করতে পারি।

দীর্ঘ মেয়াদে, আমরা শিল্পীয়-কৃষি জাতি*(“আমরা একটা শিল্পীয় জাতি হিসেবে পরিচিত হবনা” ১৯৬৭ পাঠে) হিসেবে পরিচিত হওয়ার আশা করি। আমরা যদি এমনকি ১০০ মিলিয়ন টনের বেশী ইস্পাত উত্পাদন করি তাহলে তখনও তা হবে। আমাদের মাথাপিছু  উত্পাদনকে যদি গ্রেট ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে যেতে হয় আমাদের কমপক্ষে ৩৫০ মিলিয়ন টন ইস্পাত উত্পাদন করার প্রয়োজন হবে!

একটা দেশকে বেছে নেওয়া ও তার সাথে প্রতিযোগিতা করার বিশেষ তাrপর্য রয়েছে। আমরা সর্বদা ইংলন্ডকে ধরে ফেলার কথা বলছি। আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে মুখ্য সামগ্রী উত্পাদনের দিক থেকে ধরে ফেলা, তারপর মাথাপিছু উত্পাদনের দিক থেকে। জাহাজ নির্মাণ ও মটর গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারে আমরা এখনো সেদেশের অনেক পেছনে। আমাদের অবশ্যই চেষ্টা চালাতে হবে একে ছাড়িয়ে যেতে। এমনকি জাপানের মতো একটা ছোট দেশের জাহাজ পথে বাণিজ্যিক পরিবহণের ক্ষমতা চার মিলিয়ন টন। আমাদের মতো একটা বড় দেশের নিজেদের সামগ্রী জাহাজ পথে পরিবহণে ঘাটতি ক্ষমার অযোগ্য।

১৯৪৯ সালে আমাদের ৯০,০০০ অথবা বেশী মেশিন টুল ছিল। ১৯৫৯ এর মধ্যে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪,৯০,০০০। ১৯৫৭ তে জাপানের ছিল ৬,০০,০০০। শিল্প বিকাশের স্তরের একটা গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে মেশিন টুলের সংখ্যা।

আমাদের যান্ত্রিকীকরণের স্তর এখনো খুবই নিু, সাংহাইয়ের কথাই কেউ বলতে পারেন যেখানে সর্বাাধিক সাম্প্রতিক গণনায় যান্ত্রিকীকৃত শ্রম, আধা যান্ত্রিকীকৃত শ্রম ও কায়িক শ্রম প্রত্যেকে সমগ্রের এক তৃতীয়াংশ ছিল।

সোভিয়েত শিল্পের শ্রম উত্পাদনশৗলতা এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম উত্পাদনশীলতাকে ছাড়িয়ে যায়নি। আমরা এখনো আরো পেছনে। যদিও আমাদের জনসংখ্যা খুবই বিরাট, আমাদের শ্রম উত্পাদনশীলতা অন্যদের সাথে তুলনা করার থেকে অনেক দূরে। ১৯৬০ সাল থেকে সামনের দিকে আমাদের এখনো তের বছর গভীর মনোনিবেশ সহকারে কাজ করতে হবে।

২.সামাজিক অবস্থান ও ব্যক্তি সামর্থ্য

পৃষ্ঠা ৪৮৮তে এটা বলছে যে সমাজতান্ত্রিক সমাজে একজন ব্যক্তি অবস্থান কেবল শ্রম ও ব্যক্তি সামর্থ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। আবশ্যিকভাবে তা নয়। তীক্ষè মনস্ক লোকেরা সবসময় আসে যারা নিুতর অবস্থানে আছে তাদের মধ্য থেকে। তাদেরকে অন্যরা ঘৃণার চোখে দেখে, তারা আত্মমর্যাদাহীনতায় ভুগে আর তারা নবীন। সমাজতান্ত্রিক সমাজ কোন ব্যতিক্রম নয়। পুরোনো সমাজে সর্বদাই এটা ছিল ঘটনা যে নিপীড়িতদের ছিল নিুতর সংস্কৃতি কিন্তু তারা ছিল একটু তীক্ষèতর; নিপীড়কদের উচ্চতর সংস্কৃতি ছিল কিন্তু তারা কিছুটা ধীর পক্ষে ছিল। আজকে এর কিছু বিপদ রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক সমাজের উচ্চ বেতন ভোগী অংশের কিছু বেশী সাংস্কৃতিক জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু নিুতর অংশের তুলনায় কিছুটা ধীর। তাই, আমাদের ক্যাডারদের পুত্র কণ্যাদের অক্যাডারদের ছেলে মেয়েদের সাথে সম্পূর্ণ তুলনা করা যায়না।

ছোট স্থাপনাসমূহ থেকে বহু সৃজন ও আবিস্কার এসেছে। তুলনামূলক বড় ফ্যাক্টরীগুলির উচ্চতর সুযোগ সুবিধা থাকতে পারে, নবতর প্রযুক্তি থাকতে পারে, সেই নির্দিষ্ট কারণে সকল কর্মচারীরা আত্ম-গুরুত্বের আত্মম্ভরিতায় ভোগে, জিনিসগুলো যে অবস্থায় আছে তা নিয়ে তা নিয়ে সন্তুষ্ট হয় এবং অগ্রসর হতে আর উচ্চাভিলাষিভাবে পাল্লা দিতে চায়না। প্রায়শই তাদের সৃজনশীলতাকে ক্ষুদ্রতর কারখানার কর্মচারিদের সৃজনশীলতার সাথে একেবারেই তুলনা করা যায়না। সাম্প্রতিককালে চ্যাং চৌ-এ একটা টেক্সটাইল মিল ছিল যাতে শ্রমিকরা এমন যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে-যা তাঁদের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এটা সূতা কাটা (কটন স্পিনিং), বস্ত্র বুনন (টেক্সটাইল ওয়েভিং), ছাঁপা(প্রিন্টিং) ও রঞ্জন(ডায়িং)-এ সুষম কার্যক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করবে। এই নতুন টেকনিক সাংহাই অথবা তিয়েনসিন থেকে আসেনি বরং চাংচৌ নামে একটা ছোট জায়গা থেকে এসেছে।

জ্ঞান অর্জিত হয় প্রতিক’লতার মধ্য দিয়ে আসার মাধ্যমে। যদি চু ইউয়ান  তার অফিসে থাকতেন তার লেখাগুলো সৃষ্টি হতোনা।[১] তিনি তার অবস্থান হারিয়েছেন এবং “শ্রম করার জন্য নিচের দিকে বদলীকৃত হয়েছিলেন” কেবল এই কারণে সমাজের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং লি সাওয়ের মতো চমrকার সাহিত্য রচনা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। এবং বহু রাজ্যে প্রত্যাখ্যাত না হওয়া পর্যন্ত, যেখানে কনফুসিয়াসও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন আর আপন অধ্যয়ণে নিজেকে নিয়োযিত করেছিলেন। তিনি বেকারদের একটা গ্রুপকে সমাবেশিত করেন যারা স্থান থেকে স্থানান্তরে শ্রম বিক্রীর জন্য যাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু কেউ তাদের নেয়নি। পদে পদে হতাশ তাঁর ওডেস-এর পুস্তক নামে বর্তমানে পরিচিত লোক সঙ্গীত সংগ্রহ করা ও বসন্ত ও শরৎ নামে পরিচিত ঐতিহাসিক বস্তগুলিকে ক্রমানুসারে সাজানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিলনা।

ঐতিহাসিকভাবে, বহু অগ্রসর জিনিস অগ্রসর দেশগুলি থেকে আসেনি বরং তুলনামূলকভাবে পশ্চাদপদগুলো থেকে। মার্কসবাদ সেসময় তুলনামূলকভাবে বিকশিত পুঁজিবাদী দেশগুলো-ইংলন্ড, ফ্রান্স থেকে আসেনি বরং জার্মানী থেকে, যার পুঁজিবাদী বিকাশ ছিল মাঝারি মাত্রার। এর একটা কারণ রয়েছে।

একইভাবে বৈজ্ঞানিক আবিস্কারসমূহ আবশ্যিকভাবে তাদের থেকে আসেনা যাদের উচ্চ মাত্রার সংস্কৃতি ও শিক্ষা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক রয়েছেন যারা কোন কিছু আবিস্কার করেননি। নিশ্চিতভাবে এটা একজন প্রকৌশলী ও একজন শ্রমিকের মধ্যে পার্থক্য অস্বীকার করার জন্য নয়। এই না যে আমরা প্রকৌশলীদের চাইনা। কিন্তু এখানে একটা বাস্তব প্রশ্ন রয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে সাধারণত এটা হচ্ছে ঘটনা যে সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চাদপদরা সাংস্কৃতিকভাবে শ্রেষ্ঠতরদের পরাজিত করে। আমাদের গৃহযুদ্ধে আমাদের বিভিন্ন স্তরের সেনানায়করা কুয়োমিন্টাং অফিসারদের চেয়ে সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চাদপদ ছিলেন যারা দেশ-বিদেশের সামরিক একাডেমী থেকে এসেছেন। কিন্তু আমরা তাদের পরাজিত করেছিলাম।

মানব প্রাণীটির এই দোষ রয়েছেঃ অন্যদের ঘৃণার চোখে দেখা। যারা ছোট খাট কিছু সম্পাদন করেছেন তারা তাদের ঘৃণা করেন যারা এখনো তা করেনি। বৃহৎ শক্তি ও ধনী জাতিসমূহ ক্ষুদ্রতর দরিদ্রদের ঘৃণা করে। পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়াকে ঘৃণা করে ঐতিহাসিকভাবে। চীন এখনো একই ধরণের অবস্থানে। এর একটা কারণ রয়েছে, যেহেতু এখনো আমরা বেশি কিছু নই, এত বড় একটা দেশ, এত কম ইস্পাত। এত বেশি নিরক্ষরতা। কিছু লোক আমাদের ছোট করে দেখে তা আমাদের জন্য ভাল কিছু করতে পারে। এটা আমাদের সামনে ঠেলে দিতে উদ্যমী করে তুলবে।

৩.জনগণের ওপর নির্ভর করা

লেনিন চমrকারভাবে এটা তুলে ধরেন যখন তিনি বলেন, “সমাজতন্ত্র হচ্ছে প্রাণবন্ত, উদ্দীপনাময়, সৃজনশীল-জনগণের ব্যাপক অংশের নিজেদের সৃষ্টি”, আমাদের গনলাইন হচ্ছে এরকমই। এটা কি লেনিনবাদের সাথে একমত নয়? বিবৃতি উদ্ধৃত করে গ্রন্থ বলছে, “ব্যাপক শ্রমজীবি জনগণ বর্ধিতভাবে উত্পাদনের ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ সক্রিয় পথে অংশগ্রহণ করে, রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাজে, দেশের সামাজিক জীবনের সকল বিভাগের নেতৃত্বে।”(পৃঃ ৩৩২) এটাও ভালভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বলা এক কথা আর করা অন্য। এবং এটা করা কোনভাবেই সহজ নয়।

১৯২৮ সালে সিপিএসইউ কেন্দ্রীয় কমিটি একটা সিদ্ধান্ত পাশ করে যা বলেছেঃ “আমরা পুঁজিবাদী দেশগুলিকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ছাড়িয়ে যেতে ও অতিক্রম করার কর্তব্যকে সমাধান করতে সক্ষম হবো কেবল তখনই যখন পার্টি, শ্রমিক ও কৃষক জনগণ সেই মাত্রায় সমাবেশিত হবেন।”(পৃঃ৩৩৭) এটা খুব ভাল বলা হয়েছে। ঠিক এটাই আমরা করছি। সেসময় স্তালিনের জনগণের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কিছু ছিলনা, তাই তিনি পার্টি ও জনগণের সর্বাত্মক সমাবেশিতকরণের দাবি করেন । পরবর্তীতে এভাবে তারা যখন কিছু অর্জন উপলব্ধি করলেন, তাঁরা জনগণের ওপর কম নির্ভরশীল হয়ে ওঠলেন।

লেনিন বলেছেন, “সত্যিকার গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার প্রয়োজন হচ্ছে বহুরকম পথ, ধরণ এবং পদ্ধতি যার দ্বারা স্থানীয় সৃজনশীলতা এবং উদ্যোগের উদ্যম সাধারণ লক্ষ্যসমূহ অর্জন করে, তার পর্যাপ্ত বাঁধাহীন বিকাশ রয়েছে।” (পৃঃ৪৫৪) ভাল বলা হয়েছে। জনগণ পথসমূহ সৃষ্টি করতে পারেন। জনগণ রাশিয়ার সোভিয়েতসমূহ সৃষ্টি করেছেন। এবং তারা আমাদের গণ কমিউনসমূহ সৃষ্টি করেছেন।

৪.সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনঃ বিকাশ প্রক্রিয়ায় তুলনামূলক কিছু বিষয়

পৃষ্ঠা ৪২২তে গ্রন্থ লেনিনকে উদ্ধৃত করে: “রাষ্ট্র ক্ষমতা যদি শ্রমিকশ্রেণীর হাতে থাকে তাহলে কমিউনিজমে দিকে উত্তরণ রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের মধ্য দিয়ে ঘটানো সম্ভব।” এবং এরকম আরো কিছু। এটা খুব ভাল বলা হয়েছে। লেনিন ছিলেন একজন খাঁটি কর্মী। কারণ তিনি উপলব্ধি করলেন যে অক্টোবর বিপ্লবের পর সর্বহারা শ্রেণীর অর্থনীতিকে ব্যবস্থাপনার কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা, তিনি রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের পথ ও উপায় ব্যবহার করেন। তিনি এই ক্ষেত্রে সর্বহারা শ্রেণীর দক্ষতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেন। রুশ বুর্জোয়া সেসময় সর্বহারা শ্রেণীর সামর্থ্যরে অবমূল্যায়ণ করে। লেনিনের শর্তসমূহ প্রত্যাখ্যান করে তারা অবরোধ ও ধ্বংসাত্মক তrপরতা চালিয়ে শ্রমিকদেরকে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণে বাধ্য করে। একারণে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ বিকশিত হতে পারেনি।

গৃহযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সমস্যা র্ছিল সত্যিই বিরাট। কৃষি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাণিজ্যিক যোগাযোগগুলো বিপর্যস্ত হয়েছিল। যোগাযোগ ও পরিবহণ কঠিণভাবে কার্যকর হচ্ছিল। কাঁচামাল আহরণ করা যায়নি, এবং বহু কারখানা যেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল কাজ শুরু করতে পারেনি। কারণ তাদের প্রকৃতপক্ষে এর প্রতি কোন উত্তর ছিলনা, কৃষকদের উদ্বৃত্ত ফসল সরবরাহের আদেশ দেওয়ার একটা ব্যবস্থার দিকে যাওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় ছিলনা। প্রকৃতপক্ষে এটা  ক্ষতিপূরণ ছাড়া কৃষকদের শ্রমের ফল নিয়ে নেওয়ার একটা উপায় ছিল, একটা পদ্ধতি যার অর্থ ছিল কৃষকদের হাড়ি পাতিল লুটে নেওয়া-খুব সুস্থ অনুশীলন নয়। কেবল যখন গৃহযুদ্ধ সমাপ্ত হল এই ব্যবস্থা শস্য খাজনার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হল।

আমাদের গৃহযুদ্ধ তাদের চেয়ে অনেক লম্বা সময় ব্যাপ্ত ছিল। বাইশ বছর ব্যাপী ঘাঁটি এলাকাসমূহে আমাদের অনুশীলন ছিল গণ শস্য সংগ্রহ করা আর উদ্বৃত্ত শস্য ক্রয় করা। কৃষকদের প্রতি আমাদের একটা সঠিক রণনীতি ছিল এবং যুদ্ধের সময়কালে আমরা তাদের ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভর করেছিলাম।

ব্ইাশ বছরব্যাপী আমরা ঘাঁটি এলাকাসমূহে রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকশিত করে তুলি এবং ঘাঁটি এলাকাসমূহে অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি। অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা আর কৃষকদের সাথে একটা মৈত্রী গড়ে তোলায় আমরা ক্যাডারদের ট্রেইন করি, যাতে সমগ্র দেশ মুক্ত হওয়ার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজ আমরা দ্রুত গতিতে সম্পাদন করতে পারি। তার অব্যবহিত পর্ইে আমরা উত্তরণ পর্যায়ের সাধারণ লাইন তুলে ধরি, যেমন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাধীনে  বিনির্মাণ শুরু করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে আমাদের প্রাথমিক প্রচেষ্টা চালানো। যেহেতু আমরা সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর চালিয়েছি আমরা পুঁজিপতিদের মোকাবেলায় কৃষকদের সাথে একত্রে কাজ করেছি। যাহোক, একসময় এমন একটা সময় ছিল যখন লেনিন এমনকি পুঁজিপতিদের সাথে দরকষাকষি করাটা সহ্য করতে পারেন বলে বলেছিলেন, ক্ষুদে বুর্জোয়াদের স্বতস্ফ’র্ততা মোকাবেলার একটা উপায় হিসেবে পুঁজিবাদকে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদে পরিণত করার আশায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মনীতির উদ্ভব ঘটে।

নয়া অথনৈতিক কর্মনীতি (ঘঊচ)-এর কালে সোভিয়েত ইউনিয়েেনর ধনী কৃষকদের প্রতি একটা বলপ্রয়োগের কর্মনীতি ছিল কারণ তাদের শস্যের প্রয়োজন ছিল। স্বাধীনতার পর প্রথম পর্যায়গুলিতে জাতীয় বুর্জোয়াদের প্রতি আমাদেরও একই রকম কর্মনীতি ছিল। যতক্ষণ না যৌথ খামার ও রাষ্ট্রীয় খামারগুলো ৪০০ মিলিয়ন পঁদ শস্য উত্পাদন করেছে তারা ধনী কৃষকদের অপসারণ করা আর সামগ্রিক যৌথকরণকে একটা বাস্তবতায় পরিণত করার শ্লোগান উত্থাপন করে ধনী কৃষকদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হননি।* (*“সোভিয়েত ভুমি কর্মনীতির কতিপয় সমস্যা সম্পর্কে”[ডিসেম্বর, ১৯২৯] স্তালিন বললেন, “ ১৯২৭ সালে ধনী কৃষকরা ৬০০ মিলিয়ন পঁদের বেশী শস্য উত্পাদন করেছে যার মধ্যে ১৩০ মিলিয়ন গ্রামীন বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রী হয়েছে। এটা একটা গুরুত্ববহ শক্তি যাকে আমরা হালকা করতে পারিনা। আমাকে বলুন, সেসময় কী পরিমাণ আমাদের যৌথ ও রাষ্ট্রীয় খামার উত্পাদন করেছিল? প্রায় ৮০ মিলিয়ন পঁদ যার মধ্যে ৩০ মিলিয়ন ছিল পণ্য শস্য।” তাই স্তালিন সিদ্ধান্ত করলেন, “ এই পরিস্থিতিতে ধনী কৃষকদের আমরা দৃঢ়ভাবে আক্রমণ করতে পারিনা।” এবং স্তালিন বলতে থাকেন, “ এখন তাদের আক্রমণ করার পর্যাপ্ত বস্তগত ভিত্তি আমাদের রয়েছে।” এর কারণ ছিল ১৯২৯ সালে যৌথ ও রাষ্ট্রীয় খামারগুলো ৪০০ মিলিয়নের পঁদের কম শস্য উত্পাদন করেনি, যার মধ্যে ১৩০ মিলিয়ন ছিল পণ্য শস্য। [যোসেফ স্তালিন, সমগ্র রচনা, খণ্ড ১২, পৃঃ ১৪২])

 সোভিয়েত ইউনিয়নে সমবায় আন্দোলনে “কৃষি শুরুতে একটা প্রচণ্ড মূল্য দিয়েছে।”(পৃঃ৩৯৭)। এটাই পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশকে সমবায়করণের প্রশ্নে প্রচুর উদ্বিগ্নতা সৃর্ষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে আর বৃহr কে সংগঠিতকরণে ভীত হতে। যখন তারা শুরু করলেন তারা ধীরে এগোচ্ছিলেন। আমাদের উত্পাদন সমবায়সমূহ দ্বারা হ্রাসপ্রাপ্ত হয়নি। বিপরীতে, এটা বিরাটাকারে বেড়ে গেল। শুরুতে অনেকে ছিলেন সন্ধিগ্ন। এখন রূপান্তরের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

৫.একটি সাধারণ লাইন গড়ে তোলা ও সংহতকরণের প্রক্রিয়া

এই অতীত দুই বছর আমরা একটা বিরাট পরীক্ষা চালিয়ে আসছি।

স্বাধীনতার প্রথম পর্যায়গুলিতে সমগ্র জাতির অর্থনীতিকে ব্যবস্থাপণার কোন অভিজ্ঞতা আমাদের ছিলনা। তাই, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পদ্ধতির নকল করার বেশি কিছু আমরা করতে পারিনি, যদিও এতে আমরা কখনোই সবমিলিয়ে সন্তুষ্ট ছিলামনা। ১৯৫৫ সালে, যখন আমরা “তিন রূপান্তর”[২](বছরের শেষে ও পরের বছরের বসন্তে) মূলত সম্পন্ন করেছি, আমরা তিরিশ জনের মতো ক্যাডারকে খুঁজে বের করলাম শলা পরামর্শের জন্য। এই আলোচনাগুলোর ফলে আমরা “দশটি প্রধান সম্পর্ক”[ইংরেজী অনুবাদে  এৎবধঃ শব্দটি রয়েছে, কিন্তু বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয় পিকিং এর প্রকাশনায় আমরা পাই গধলড়ৎ , আর বাংলায় পাই প্রধান। আমরা পিকিংয়েরটাই গ্রহণ করেছি-বাংলা অনুবাদক] এবং “অধিক! দ্রুততর! অধিকতর ভাল! অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!” প্রস্তাব করলাম। সেসময় আমরা স্তালিনের ১৯৪৯ সালের নির্বাচনী ভাষণ পড়লাম যা বলেছে যে জারীয় রাশিয়া ৪ মিলিয়ন টন ইস্পাত বার্ষিক উত্পাদন করছিল। ১৯৪০ সালের মধ্যে অংকটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ মিলিয়ন। ১৯২১ থেকে কেউ যদি হিসেব করেন বিশ বছরে কেবল ১৪ মিলিয়ন টন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ভাবতে হবে যে সমগ্র সময় তারা সমাজতন্ত্রী ছিলেন! আমরা কি একটু ভালতর, দ্রুততর কিছু করতে পারিনা? সেসময় আমরা “দুই পদ্ধতি”র প্রশ্ন উত্থাপন করলাম এবং একই সাথে আমরা কৃষির বিকাশের জন্য চল্লিশ অনুচ্ছেদ কর্মসূচী ঘোষণা করলাম।[৩] সেসময় অন্য কোন মানদণ্ড প্রস্তাব করা হয়নি।

১৯৫৬ সালের অগ্রগামী উলম্ফণের পর, হঠকারি অগ্রগমণের বিরোধিতা*(*কেবল ১৯৬৭ পাঠে) আবির্ভূত হল। বুর্জোয়া ডানপন্থীরা আমাদের বেণী ধরে টানতে লাগলো আর সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের কীর্তিগুলো নেতিকরণ করার একটা প্রচেষ্টায় বর্বরভাবে আক্রমণ করলো। ১৯৫৭র জুনে, জাতীয় গণকংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের রিপোর্ট ডানপন্থীদের ওপর পাল্টা আঘাত হানল। একই বছবে সেপ্টেম্বরে পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন “অধিক! দ্রুততর! অধিকতর ভাল! অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!” এমন শ্লোগান পুনরুজ্জীবিত করল, চল্লিশ অনুচ্ছেদ সাধারণ কর্মসূচী, উন্নয়নের বিকাশের জন্য সমাজ*(*কেবল ১৯৬৭ পাঠে। মহান অগ্রগামী উলম্ফণ ১৯৬৭ পাঠে) প্রভৃতি। নভেম্বরে মস্কোয় “অধিক! দ্রুততর! অধিকতর ভাল! অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!”-এর ওপর পিপল্স ডেইলির সম্পাদকীয় সংশোধন করলাম। এভাবে শীতকালে আমরা দেশব্যাপী গণআন্দোলন চালালাম বৃহদায়তন পানি সংরক্ষণাগারের জন্য।

১৯৫৮ সালে সভা হয়েছিল; প্রথমে নানিং-এ তারপর চেংতুতে। আমরা সাহসী অগ্রগমনের যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের সমালোচনা করে আমাদের সমস্যায় ব্যপৃত হলাম। সাহসী অগ্রগমণের আর কোন বিরোধিতা অনুমোদন না করার আমরা সিদ্ধান্ত করলাম। আমরা সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের একটা সাধারণ লাইন প্রস্তাব করলাম। যদি কোন নানিং সভা না হত আমরা একটা সাধারণ লাইন সহকারে উঠে আসতে পারতাম না। মে তে একজন কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিনিধি*(লিউশাওচি ১৯৬৭ পাঠে) ৮ম জাতীয় গণ কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে রিপোর্ট করলেন। এবং অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ লাইন অনুমোদন করল। কিন্তু লাইনটি সুসংহত ছিলনা, তাই আমরা মূর্ত মানদণ্ডসহ এগিয়ে গেলাম কেন্দ্র ও স্থানীয় এলাকাসমূহের কর্তৃত্বের বিষয় নিয়ে প্রধানত ব্যাপৃত হয়ে। পেই তাই হো-তে আমরা ইস্পাত উত্পাদন দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করলাম এবং ইস্পাত ও লৌহে একটা গণ আন্দোলন চলন্ত পেলাম যাকে পশ্চিমা কাগজগুলো নাম দিয়েছে পশ্চাদভুমির ইস্পাত। একইসময়ে আমরা গণকমিউনসমূহ পরিচালনা করলাম। কুয়েময়ে বোমা বর্ষিত হল তার পরপরই। এইগুলো কাউকে কাউকে উদ্বিগ্ন করলো আর অন্যদের আক্রান্ত করলো। আমাদের কাজে ভুল দেখা দিল। খাদ্যের জন্য পরিশোধ না করে আমরা শস্য আর নিত্য ব্যবহার্য নয় এমন খাদ্যের সংকটে নিজেদের খেয়ে ফেললাম। অতি কমিউনিস্ট বাতাস তখন প্রবাহিত হচ্ছিল। দৈনন্দিন প্রয়োজনের নির্দিষ্ট কিছু শতকরা*(*১৯৬৭ পাঠে শতকরা ১২ ভাগ) যোগান দেওয়া যায়নি। ১৯৫৯ সালের জন্য পেইতাইহো-তে ইস্পাত উত্পাদন ঠিক করা হয়েছিল ৩০ মিলিয়ন টন। উচাং অধিবেশন একে ২০ মিলিয়নে নামিয়ে আনলো। সাংহাই অধিবেশন একে ১৬.৫ মিলিয়ন টনে নামিয়ে আনলো। জুন ১৯৫৯-এ পুনরায় এটা ১৩ মিলিয়নে কেটে আনা হল। এসবকিছুকেই তারা লুফে নিল যারা আমাদের সাথে ভিন্নমতে ছিল। কিন্তু যখন কেন্দ্রীয় কমিটি “বাম” কে বিরোধিতা করছিল তারা তাদের অভিযোগ উত্থাপন করলনা, না তারা তা করলো দুই চেং চৌ সম্মেলনে, উচাং সম্মেলনে, পিকিং সম্মেলনে, অথবা সাংহাই সম্মেলনে। “বাম” দের প্রচণ্ড বিরোধিতা করে পরাজিত করা হল, আর লক্ষ্য যখন নিশ্চিত হল ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করলো। “বাম”-এর প্রতি আরো বিরোধিতা ডানের প্রতি বিরোধিতা প্রয়োজনীয় করে তুললো। লুশান সম্মেলনে, যখন ডানের বিরুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা “বাম”-এর বিরুদ্ধে বেড়িয়ে এল[৪]।

এসব কিছুই দেখায় যে আমাদের বিশ্বে ঘটনাবলী শান্তিপূর্ণ হওয়া থেকে অনেক দূরে, এবং সাধারণ লাইন নিশ্চিতভাবে সুসংহত নয়। এখন আমরা যখন কঠিণ আঁকবাঁকের একটা পর্ব আর লুসান সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এলাম, সাধারণ লাইন তুলনামূলকভাবে সুসংহত। কিন্তু “কোনকিছু আসে তিনে”, তাই সম্ভবত আমাদের তৃতীয় পর্বের আঁকবাঁকের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তাহলে, আমরা আশা করতে পারি যে লাইন এমনকি আরো সংহত হবে। চেকিয়াং প্রাদেশিক কমিটির তথ্য মতে “সমতা বিধান” এবং “সম্পত্তির বঞ্চনাহীন বদলী” কিছু নির্দিষ্ট কমিউনে পুন আবির্ভূত হয়েছে অতি সম্প্রতি। অতি কমিউনিস্ট বাতাস পুনরায় আবির্ভূত হতে পারে।

  পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরীর ঘটনাগুলো ঘটলো ১৯৫৬তে, “সাহসী অগ্রগমণ” অভিযানের আঁকবাঁকের সময়। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সমগ্র পৃথিবী চলে গেল। ১৯৫৯-এর আঁকবাঁকের সময় সমগ্র পৃথিবী আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেল।

       দুই শুদ্ধিকরণ ও ডানপন্থী-বিরোধী অভিযানে –এক, ১৯৫৭তে অন্যটি লুশানে, বুর্জোয়া মতাদর্শের কার্যকরিতা আর বুর্জোয়া প্রভাবের অবশেষকে তুলনামূলক পূর্ণাঙ্গ সমালোচনার মুখে ফেলা হয়েছিল জনগণকে সেই বিপদ থেকে মুক্ত হতে সক্ষম করার মাধ্যমে। সেসময় আমরা অনেক কুসংস্কারের ওপরও আঘাত হেনেছিলাম তথাকথিত মা আনশান লৌহ ও ইস্পাত সংবিধানসহ*[৫] (*একটা বড় সোভিয়েত কারখানার ব্যক্তিস্বাধিনতা বিরোধী কতৃপক্ষীয় পরিশোধন পদ্ধতি-১৯৬৭ পাঠে নেয়া)

অতীতে আমরা একটা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কীভাবে চালাতে হবে তা জানতাম না। আমরা মনে করেছিলাম যে সমবায়ের পর, গণ-ব্যক্তি ব্যবস্থাপনার পর সমস্যা সমাধান হবে। বুর্জোয়া ডানপন্থীদের বর্বর আক্রমণ আমাদেরকে ঠেলে দেয সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে একটি রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক লাইন হিসেবে তুলে ধরতে। প্রকৃতপক্ষে, লুশান সম্মেলন এই বিপ্লব পরিচালনা করেছে এবং এটা ছিল একটা তীক্ষ বিপ্লব। আমরা যদি লুশানে ডান সুবিধাবাদী লাইনকে পরাজিত না করতাম এটা খুব খারাপ হতো।

৬.সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং অন্য ব্যাপারসমূহ

সংশ্লিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বকে একটা বড় বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। এভাবেই লেনিন তাঁদেরকে দেখেছেন এবং স্তালিনও, একটা কিছু, যাকে তাঁরা বিপ্লবের পরোক্ষ মজুদ শক্তি বলেছেন। বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকা প্রাপ্ত হয়ে চীন এই সুবিধাজনক পরিস্থিতি ভোগ করেছে। অতীতে ভুস্বামী ও মুৎসুদ্দি শ্রেণীর বিভিন্ন উপদলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব আমাদের ছিল। দেশীয় এসব দ্বন্দ্বের পেছনে ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বসমূহের কারণেই সাম্রাজ্যবাদীদের সবার বদলে কেবল একটা অংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের সাথে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করে, যতক্ষন পর্যন্ত আমরা দ্বন্দ্বসমূহকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি। সেইসাথে, তাই স্বভাবত, বিশ্রামের ও পুন সংগঠিতকরণের সময় আমাদের ছিল।

সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ যার জন্য অক্টোবর বিপ্লব সুসংহত হতে পেরেছে। সেসময় চৌদ্দ দেশ হস্তক্ষেপকারী বাহিনী পাঠিয়েছিল। কিন্তু কেউই একা বেশী পাঠায়নি। অধিকন্তু, তাদের উদ্দেশ্যসমূহ সমন্বিত করা হয়নি। তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। কোরীয় যুদ্ধের সময় আমেরিকার উদ্দেশ্য তার মিত্রদের সাথে সমন্বিত করা হয়নি। যুদ্ধটা বৃহত্তম মাত্রায় চালানো হয়নি। আমেরিকা নিজের প্রক্রিয়াকে নির্ধারণ করতে পারেনি শুধু তাই নয়, ফ্রান্স আর ইংলন্ড ততটা আগ্রহী ছিলনা।

আন্তর্জাতিকভাবে বুর্জোয়ারা এখন চরমভাবে অস্বস্তিতে ভুগছে এবং যে কোন বাতাসে ভীত যা ঘাশকে আন্দোলিত করতে পারে। তাদের সতর্কতার মাত্রা ছিল খুবই উচ্চ কিন্তু তারা ছত্রভঙ্গ অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক সংকটসমূহ মার্কসের সময়ের তা থেকে ভিন্ন। সাধারনভাবে বলতে, তারা সাধারনত প্রতি সাত, আট অথবা দশ বছরে আসত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত চৌদ্দ বছরে তিনটা হয়েছে।

বর্তমানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের চেয়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনেক বেশী উত্তেজনাময়, যখন পুঁজিবাদের তখনো আপেক্ষিক স্থায়িত্বের পর্যায় ছিল, রাশিয়া ছাড়া বিপ্লব সর্বত্র ব্যর্থ হয়েছে। ইংলন্ড ও ফ্রান্স ছিল উচ্চ উদ্যমে ভরপুর এবং বিবিধ জাতীয় বুর্জোয়ারা সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর ততটা ভীত ছিলনা। জার্মানীর উপনিবেশ হ্রাস পাওয়া ছাড়া সমগ্র সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা তখনো কার্যকর ছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে তিনটির পতন ঘটল। ইংলন্ড ও ফ্রান্স দূর্বল হয়ে গেল আর হেলে পড়ল। দশটিরও বেশী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত হল। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা অংশত ভেঙে যাচ্ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যা তার ছিল পুঁজিবাদী বিশ্ব আর কখনোই সেই আপেক্ষিক স্থায়িত্ব ভোগ করতে পারবেনা।

৭.কেন চীনের শিল্প বিপ্লব খুব দ্রুত গতি হতে পারে

পশ্চিমা বুর্জোয়া গণমতে এখন তারা রয়েছে যারা স্বীকৃতি দেয়, “চীন হচ্ছে অন্যতম দেশ যার সর্বাধিক দ্রুত শিল্প বিকাশ রয়েছে।” (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কর্মনীতি সম্পর্কে মার্কিন কলোন রিপোর্ট এটা উল্লেখ করে।)

অনেক দেশ রয়েছে যারা একটা শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গেছে। সকল অতীত জাতিয় শিল্প বিপ্লবের সাথে তুলনায় চীন অন্যতম সর্বাধিক দ্রুত গতির প্রতিশ্রুতিশীল।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন? একটা প্রধান কারণ হচ্ছে যে আমাদের সামাজিক বিপ্লব চমrকার সামগ্রিকতায় পরিচালিত হয়েছে। সকল বুর্জোয়া প্রভাব নির্মূল করার জন্য নিজেদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে আমরা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গেছি সামগ্রিকভাবে। আমরা কুসংস্কারের ওপর আঘাত হেনেছি এবং সকল ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্তি অর্জনে জয়ী হতে জনগণকে সহযোগিতা করতে আমরা সতেজভাবে চেষ্টা চালিয়েছি।

৮.লোকসংখ্যা*

(*এই অংশটি ১৯৬৯ পাঠে কেবল পাওয়া গেছে)

অতি জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানে গ্রামীন জনসংখ্যা হচ্ছে একটা বড় সমস্যা যার সমাধান উত্পাদনের বিশাল বিকাশ দাবী করে। চীনে ৫০০ মিলিয়নের বেশী জনগণ কৃষিতে নিয়োযিত। কিন্তু তারা তৃপ্তিসহকারে খায়না, যদিও বছরের পর বছর চাষ করে। এটা সর্বাধিক অযৌক্তিক। আমেরিকায় কৃষি জনসংখ্যা হচ্ছে কেবল শতকরা ১৩ ভাগ আর গড়ে প্রত্যেক ব্যক্তি ২০০০ কাটি[৬] শস্য পায়। আমাদের ততটা নেই। গ্রামীন জনসংখ্যা কমাতে আমরা কী করবো? আমরা যদি তাদের শহরে ভীড় জমাতে না চাই তাহলে গ্রামাঞ্চলে আমাদের প্রচুর শিল্প থাকতে হবে যাতে কৃষকরা শ্রমিকে পরিণত হতে পারে ঠিক যেখানে তারা আছে সেখানেই। এটা আমাদের একটা বড় কর্মনীতি ইস্যু নিয়ে আসেঃ আমরা কি গ্রামীণ জীবন যাত্রার মান শহরের চেয়ে নিচু হওয়া থেকে ঠেকাতে চাই, দুটোকে সাধারণভাবে সমান রাখতে চাই অথবা শহরের চেয়ে গ্রামীণকে কিছুটা উচ্চতর রাখতে চাই? প্রত্যেক কমিউনের তার নিজের অর্থনৈতিক কেন্দ্র থাকতে হবে, নিজ বুদ্ধিজীবি ট্রেইন করতে নিজস্ব উচ্চতর পর্যায়ের স্কুল থাকতে হবে। অতিরিক্ত গ্রামীণ জনসংখ্যার সমস্যাকে সত্যিকারভাবে ও বাস্তবভাবে সমাধান করার অন্য কোন উপায় নেই।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সম্পর্কে

(নভেম্বর ১৯৫৮)[১]

প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক কমিটিকে অবশ্যই এই পুস্তক অধ্যয়ন করতে হবে। অতীতে প্রত্যেকে এটা পড়েছেন একটা গভীর অনুভব অর্জন ছাড়া। একে চীনের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে অধ্যয়ন করা উচিত। প্রথম তিন অধ্যায় ধারণ করে বেশী বেশী তা যা মনোযোগ পাওয়ার গুরুত্ব ধরে, বেশী যা সঠিক যদিও অনেক জায়গায় স্তালিন নিজে বিষয়গুলো যথেষ্ট পরিষ্কার করেননি। উদাহারণস্বরূপ, অধ্যায় ১-এ তিনি বিষয়গত নিয়ম ও অর্থনীতির পরিকল্পনা রচনায় কীভাবে যাওয়া যায তা সম্পর্কে খুব কম কথা বলেন, তার ধারণগুলো উন্মোচিত না করে, অথবা তার মনে ছিল যে অর্থনীতির সোভিয়েত পরিকল্পনা বিষয়গত পরিচালক নীতিমালাকে ইতিমধ্যেই প্রতিফলিত করেছে। ভারি শিল্প, হালকা শিল্প ও কৃষির প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরের দুটোয় যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করেনি এবং ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সংযোজনে, জনগণের আশু ও দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থসমূহের সংযুক্তকরণে তারা খুব ভাল কাজ করেননি। প্রধানভাবে তারা একপায়ে চলেছেন। stalinandmaoপরিকল্পনাকে তুলনায়, আমাদের মধ্যে কারা সবার ওপর “পরিকল্পিত সমানুপাতিক বিকাশ” অধিকতর ভালভাবে চালিয়েছে? আরেকটি বিষয়ঃ স্তালিন কেবল প্রযুক্তি, টেকনিকাল কেডারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রযুক্তি, কেডার ছাড়া অন্য কিছু চাননি; কোন রাজনীতি নয়, নয় কোন জনগণ। এটাও এক পায়ে চলা। এবং শিল্পে তারা একপায়ে চলেন যখন তারা ভারি শিল্পে মনোযোগ দেন, কিন্তু হালকা শিল্পে নয়। অধিকন্তু, তারা ভারি শিল্পের বিভাগগুলোর মধ্যে সম্পর্কসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্বসমূহের প্রধান দিক বের করেননি। তারা ভারি শিল্পের গুরুত্বকে বাড়িয়ে বলেছেন এই দাবী করে যে ইস্পাত হচ্ছে ভিত্তি আর মেশিনারি হচ্ছে অন্তরাত্মা। আমাদের অবস্থান হচ্ছে শস্য হচ্ছে কৃষির আর ইস্পাত হচ্ছে শিল্পের প্রধান অবলম্বন, এবং ইস্পাতকে যদি প্রধান অবলম্বন হিসেবে নেয়া হয়, তাহলে কাঁচামাল একবার থাকলে যন্ত্র শিল্প সেদিকে এগিয়ে যাবে। স্তালিন অধ্যায় ১-এ প্রশ্ন তুলে ধরেন, তিনি বিষয়গত পরিচালক নীতিমালার পরামর্শ দেন, কিন্তু সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন।

অধ্যায় ২-এ তিনি পণ্যের আলোচনা করেন, অধ্যায় ৩-এ মূল্যের নিয়ম। আপেক্ষিকভাবে বললে, বিবৃত অনেক মতের আমি পক্ষে। উত্পাদনকে দুটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা আর বলা যে উত্পাদনের উপায় পণ্য নয়-বিষয়গুলো অধ্যয়ণ দাবী করে। চীনা কৃষিতে এখনো অনেক উত্পাদনের উপায় রয়েছে যা পণ্য হওয়া উচিত। আমার মত হচ্ছে যে তিনটি সংযোজিত চিঠি*র(*অর্থনৈতিক সমস্যাবলীতে অন্তর্ভুক্ত কমরেড এ,ভি সানিনা এবং ভি,জি, ভেনজারের উত্তর) শেষটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। এটা একটা গভীর অস্বস্তিকে প্রকাশিত করে, একটা বিশ্বাস যে কৃষকরা কৃষি যন্ত্রপাতি পেতে বিশ্বাসযোগ্য নয় বরং তারা এতে ঝুলে থাকবে। একদিকে স্তালিন বলেন যে উত্পাদনের উপায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার অধীন। অন্যদিকে তিনি বলেন যে কৃষকরা তাতে সমর্থ নয়। ঘটনা হচ্ছে যে তিনি নিজেকে প্রতারিত করছেন। রাষ্ট্র কৃষকদের খুবই শক্তভাবে, অনমনীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দুই উত্তরণে স্তালিন যথার্থ উপায় ও পথ খুঁজতে ব্যর্থ হন,তার জন্য একটা বিরক্তিকর ব্যাপার।

প্ুঁজিবাদ পণ্য রূপকে রেখে গেছে যাকে বর্তমান সময়ের জন্য আমাদের অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। মূল্য পরিচালক পণ্য বিনিময়ের নিয়মসমূহ আমাদের উত্পাদনে কোন পরিচালক ভূমিকা পালন করেনা। এই ভূমিকা পালিত হয় পরিকল্পনা দ্বারা, পরিকল্পনার অধীনে মহান অগ্রগামী উলম্ফণের দ্বারা, রাজনীতি-কমাণ্ডে দ্বারা । স্তালিন কেবল উত্পাদন সম্পর্কের কথা বলেন, উপরিকাঠামোর কথা নয়, না উপরিকাঠামো ও অর্থনৈতিক ভিত্তির মধ্যকার সম্পর্কের কথা। চীনা ক্যাডাররা উত্পাদনে অংশগ্রহণ করে; শ্রমিকরা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে। ক্যাডারদের নিচের স্তরে পাঠানো কাঠিণ্য বৃদ্ধি করতে, পুরোনো নিয়ম কানুন বর্জন করা-এসবই উপরিকাঠামোর সাথে, ভাবাদর্শের সাথে সম্পর্কিত। স্তালিন কেবল অর্থনীতির উল্লেখ করেন, রাজনীতি নয়। তিনি নিঃস্বার্থ শ্রমের কথা বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এমনকি একটা অতিরিক্ত ঘন্টার শ্রমও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হয়না। নিঃস্বার্থপরতা নেই একবিন্দুও। জনগণের ভূমিকা, শ্রমিকের ভূমিকা উল্লেখিত হয়নি। যদি কোন কমিউনিস্ট আন্দোলন না থাকত কমিউনিজমের দিকে উত্তরণ ঘটানোর চিন্তা করা কঠিণ। “সকল জনগণ আমার জন্য, আমি সবার জন্য” এর কোন অস্তিত্ব নেই। এটা সবকিছু নিজের সাথে যুক্ত হয়ে শেষ হয়। কেউ কেউ বলেন যে মার্কস এটা বলেছেন? তিনি যদি তা বলেন তাহলে চলুন এর প্রচার না চালাই। “সকল জনগণ আমার জন্য” অর্থ হচ্ছে প্রত্যেকে, স্বতন্ত্র ব্যক্তি আমার জন্য। “আমি সবার জন্য”, তাহলে আপনি কত বেশি জনের জন্য হতে পারেন?

বুর্জোয়া অধিকার বুর্জোয়া আইন ও শিক্ষা হিসেবে প্রকাশিত হয়। আমরা বুর্জোয়া অধিকারের একটা অংশ জমিদারসুলভ মনোভাব, তিন স্টাইল[আমলাতান্ত্রিক, সংকীর্ণ, ও আত্মগত] এবং পাঁচ আত্মম্ভরিতা[মাতব্বরি, ঔদ্ধত্য, ঔদাসিন্য, অপচয়িতা, ও নিজেকে বেশী মূল্যবাণ ভাবা] ধ্বংস করতে চাই। কিন্তু অন্যদিকে পণ্য সঞ্চালন, পণ্যরূপ, মূল্যের নিয়ম, এসব সংক্ষেপে ধ্বংস করা যায়না এগুলো বুর্জোয়া বর্গের হওয়া সত্ত্বেও। আমরা যদি এখন বুর্জোয়া অধিকারের সামগ্রিক বিলোপের প্রচার চালাই এটা একটা যৌক্তিক অবস্থান হবেনা মনে রাখুন।

সমাজতান্ত্রিক সমাজে অল্পকিছু রয়েছে-ভুস্বামী, ধনী কৃষক, ডানপন্থী-যারা পুঁজিবাদের সপক্ষে এবং তার প্রবক্তা। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কমিউনিজমের দিকে পার হওয়ার চিন্তা করছেন। এটা, যাহোক, ধাপে ধাপে করতে হবে। আপনি স্বর্গে একধাপে যেতে পারেননা। গণ কমিউনের কথা ধরুনঃ একদিকে তাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো পর্যাপ্ত উত্পাদন বিকশিত করতে হবে, অন্যদিকে পণ্য বিনিময়। আমরা উত্পাদন বিকাশের লাভের জন্য এবং উত্তরণের সুবিধা সৃষ্টির জন্য পণ্য বিনিময় এবং মূল্যের নিয়মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি।

আমরা একটা জাতি যার পণ্য উত্পাদন খুবই অনুন্নত। গত বছর আমরা ৩.৭ ট্রিলিয়ন ক্যাটি খাদ্য শস্য উত্পাদন করেছি। এই সংখ্যার জন্য পণ্যশস্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ বিলিয়ন ক্যাটি। শস্য ছাড়া সূতা ও পাটের মতো শিল্পশস্যও অনুন্নত। তাই আমাদের বিকাশের এই[পণ্য] পর্যায় থাকতে হবে। বর্তমানে এখনও  বেশ অনেক কাউন্টিতে খাদ্যের জন্য অভিযোগ নেই, কিন্তু তারা মজুরী দিতে পারেনা। হোপেইতে এমন তিনটি কাউন্টি রয়েছে এবং অন্যরা আছে যারা মজুরী দিতে পারে কিন্তু বেশী নয়ঃতিন অথবা পাঁচ ইয়েন। তাই, এখনো আমাদের উত্পাদন বাড়াতে হবে, সেসব জিনিস বিকশিত করতে হবে যা খাাদ্যশস্যের বদলে বিক্রী করা যায়। সিয়ান কৃষি সম্মেলনে এই বিষয় অপর্যাপ্তভাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে, আমরা এমন একটা জাতি যার বাণিজ্য স্বল্পোন্নত, এবং তবু বহু দিক থেকে আমরা সমাজতন্ত্রে প্রবেশ করেছি। আমাদের অবশ্যই বুর্জোয়া অধিকারের একটা অংশের বিলোপ করতে হবে, কিন্তু পণ্যোrপাদন ও বিনিময়কে এখনো রাখতে হবে। এখন একটা প্রবণতা রয়েছে যা অনুভব করে যত শীঘ্র কমিউনিজম আসে ততই ভাল। অনেকে পরামর্শ দেন যে কেবল তিন অথবা পাঁচ বছরে আমরা উত্তরণ ঘটাবো। শানটুং-এর ফ্যান কাউন্টিতে এটা পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে চার বছর কিছুটা ধীর হয়ে যায়!

বর্তমানে কিছূ অর্থনীতিবিদ রয়েছেন-যেমন ইয়ারোশেঙ্কো*(*স্তালিনের দ্বিতীয় চিঠির গ্রহীতা-অর্থনৈতিক সমস্যাবলীতে অন্তর্ভূক্ত) একজন যারা অর্থনীতিতে মজা পাননা। এখনকার জন্য আর ভবিষ্যতের কিছু সময়ের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে কমিউনের জন্য বরাদ্দ ও সরবরাহ সম্প্রসারিত করতে হবে। এবং আমাদের পণ্য উত্পাদন বাড়াতে হবে। অন্যথায় আমরা মজুরী প্রদানে অথবা জীবন উন্নত করতে সক্ষম হবোনা। আমাদের কমরেডদের কেউ কেউ একটা ভুল বুঝাবুঝিতে দুষ্ট যখন পণ্য ও পণ্যের উত্পাদনের প্রশ্নে আসেন, তারা প্রতিটি দিন বুর্জোয়া আইন ধ্বংস করতে চান, উদাহারণস্বরূপ, তারা বলেন মজুরী, পদমর্যাদা(গ্রেড) প্রভৃতি হচ্ছে মুক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। ১৯৫৩ সালে আমরা মুক্ত যোগান ব্যবস্থাকে একটা মজুরী ব্যবস্থা[২]য় পরিণত করলাম। এই দৃষ্টিকোণ ছিল মূলত সঠিক। আমাদের একধাপ পেছনে আসতে হয়েছিল। কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছিল। আমরা পদমর্যাদা(গ্রেড) প্রশ্নেও একধাপ পেছনে এসেছিলাম। ফলে এই প্রশ্নে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শুদ্ধিকরণের একটা সময়কালের পর গ্রেডের অবনতি ঘটানো হয়। গ্রেড পদ্ধতি হচ্ছে একটা পিতা-পুত্র সম্পর্ক, একটা বিড়াল-ইঁদুর সম্পর্ক। একে দিনের পর দিন আঘাত করতে হবে। ক্যাডারদের নিুতর স্তরগুলোতে নামিয়ে আনা, গবেষণার ক্ষেত্রগুলোকে চালানো[৩]-এসব হচ্ছে গ্রেড পদ্ধতির পরিবর্তনের উপায়; অন্যথায কোন বিরাট উলম্ফণ নয়!

শহুরে গণকমিউনগুলোতে পুঁজিপতিরা ঢুকতে পারে আর কর্মচারি হিসেবে সেবা করতে পারে। কিন্তু পুঁজিপতি লেবেল তাদের ওপর থাকা উচিত। সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম সম্পর্কে, সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ বলতে কী বোঝায়? আমরা দুটি পয়েন্ট উত্থাপন করিঃ

১.সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের ঘনীভূত প্রকাশ হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক সার্বজনীন গণমালিকানা*(*চীনা সমগ্র জনগণের মালিকানা আর এটা একই)কে একটা বাস্তবতায় পরিণত করা।

২.সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ অর্থ হচ্ছে কমিউন যৌথ মালিকানাকে গণমালিকানায় পরিণত করা। কিছু কমরেড এই দুই ধরণের মালিকানা ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যরেখা অঙ্কনকে অননুমোদন করেন যেন কমিউনগুলো সম্পূর্ণভাবে জনগণের মালিকানাধীন। বাস্তবে দুই পদ্ধতি রয়েছে। একটা হচ্ছে গণমালিকানা যেমনটা আনশান লৌহ ও ইস্পাত ওয়ার্কসে রয়েছে আর অন্যটা হচ্ছে কমিউন-বৃহৎ যৌথ মালিকানা। আমরা যদি একে তুলে না ধরি সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের কার্যকরিতার কী অর্থ থাকল? স্তালিন রেখা অঙ্কন করেন যখন তিনি তিনটি শর্তের কথা বলেন। এই তিনটি মূল শর্ত অর্থবোধক এবং এভাবে নিচের মতো করে সংক্ষেপিত হতে পারে: সামাজিক উত্পাদন বৃদ্ধি করুন, যৌথ মালিকানাকে গণমালিকানায় উত্তীর্ণ করুন; পণ্যের বিনিময় থেকে উrপন্নের বিনিময়ে যান, বিনিময় মূল্য থেকে ব্যবহার মূল্যে।

এই দুই উপরেল্লিখিত পয়েন্টে আমরা চীনারা ভারি শিল্পের বিকাশে পছন্দ সহকারে শিল্প ও কৃষির যুগপr বিকাশ সাধন করে ১) উত্পাদন সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে সচেষ্ট, এবং ২) ক্ষুদ্র যৌথ মালিকানাকে গণমালিকানায় উত্তীর্ণ করছি এবং তারপর সার্বজনীন গণমালিকানায়। যারা এই পার্থক্য অঙ্কন করেননা[মালিকানার ধরণসমূহের মধ্যে] তারা মনে হয় এই মত পোষণ করেন যে আমরা ইতিমধ্যে গন মালিকানায় আরোহন করেছি। এটা ভুল। স্তালিন সংস্কৃতির কথা বলছিলেন যখন তিনি তিনটি শর্ত প্রস্তাব করেন, সমগ্র জনগণের শারিরীক বিকাশ ও শিক্ষা। এজন্য তিনি চারটি শর্ত প্রস্তাব করেনঃ ক) দৈনিক ছয় ঘন্টা কাজ খ) কাজের সাথে কারিগরি শিক্ষা সংযুক্তকরণ গ) আবাসিক পরিস্থিতির উন্নয়ন;ঘ)মজুরী বৃদ্ধিকরণ। মজুরী বৃদ্ধিকরণ আর দাম হ্রাসকরণ নির্দিষ্টভাবে এখানে সহায়ক, কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাদ পড়েছে এখানে।

এসব শর্ত হচ্ছে মূলত উত্পাদন বৃদ্ধি করতে। একবার যখন উত্পাদন প্রচুর হবে যৌথ মালিকানাকে গণ মালিকানাতে উত্তীর্ণ করার সমস্যা সমাধান সহজ হবে। উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রয়োজন “অধিক! দ্রুততর! অধিকতর ভাল! অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!” আর এজন্য আমাদের রাজনীতিকে কমাণ্ডে প্রয়োজন; চার যুগপr বিকাশ, শুদ্ধিকরণ অভিযানসমূহ, বুর্জোয়া অধিকারের ভাবাদর্শের ধ্বংস। এর সাথে গণকমিউন যুক্ত করুন এবং “অধিক! দ্রুততর! অধিকতর ভাল! অধিকতর মিতব্যয়ীভাবে!” অর্জন সর্বোতভাবে সহজ হয়ে যায়।

সার্বজনীন গনমালিকানার তাrপর্য কী? তাহচ্ছে দুটোঃ (১) সমাজের উত্পাদনের উপকরণ সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন; এবং (২) সমাজের উত্পাদন সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন।

গণকমিউনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এটা হচ্ছে মূল স্তর যাতে শিল্প, কৃষি, সামরিক, শিক্ষা ও বাণিজ্য আমাদের সামাজিক কাঠামোয় একীভূত হবে। বর্তমান সময়ে এটা মূল স্তর প্রশাসনিক সংগঠণ। মিলিশিয়া বিদেশী বিশেষত সাম্রাজ্যবাদীদের হুমকী মোকাবেলা করে। দুই উত্তরন পরিচালনায় কমিউন হচ্ছে সবচেয়ে ভাল সাংগঠনিক ধরণ; সমাজতন্ত্র(বর্তমান) থেকে সার্বজনীন গণতে, এবং সার্বজনীন গণ থেকে কমিউনিস্ট মালিকানায়। ভবিষ্যতে, যখন উত্তরণ সম্পূর্ণ হবে, কমিউন হবে কমিউনিস্ট সমাজের মূল মেকানিজম।

স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নের

সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর

সমালোচনা

স্তালিনের পুস্তক প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপরিকাঠামের ব্যাপারে কিছু বলেনা। এটা জনগণ নিয়ে ব্যাপৃত নয়; এটা জিনিসকে বিবেচনা করে জনগণকে নয়। ভোগ্য সামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থার ধরণ অর্থনৈতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে কিনা? এতে তার অন্ততঃ স্পর্শ করা উচিত ছিল। পণ্য উত্পাদন রাখা উচিত না রাখা উচিত নয়? প্রত্যেকের এটা অধ্যয়ণ করা উচিত। তার শেষ চিঠি*(*কমরেড এভি সানিনা ও ভিজি ভেনজারের উত্তর) তে স্তালিনের দৃষ্টিকোণ অনেকাংশে সবমিলিয়ে ভুল। মূল ভ্রান্তি হচ্ছে কৃষকদের অবিশ্বাস করা।

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ের অনেক অংশ সঠিক; অন্য অংশগুলো আরো পরিস্কার হতে পারত। উদাহারণস্বরূপ, পরিকল্পিত অর্থনীতির আলোচনা সম্পূর্ণ নয়। সোভিয়েত অর্থনীতির বিকাশের হার যথেষ্ট উচ্চ নয়, যদিও পুঁজিবাদীদের হারের চেয়ে এটা দ্রুততর। কৃষি ও শিল্পের মধ্যে আর হালকা ও ভারী শিল্পের মধ্যে সম্পর্ক পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।

এটা এমন  দেখায় যেন মনে হয় তাদের কোন মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী আর স্বল্পমেয়াদী স্বার্থসমূহের মধ্যে সম্পর্ক কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য বিকাশ লক্ষ্য করেনি। তারা একপায়ে হাটেন, আমরা দুই পায়ে হাটি। তারা বিশ্বাস করেন যে প্রযুক্তি সবকিছু নির্ধারণ করে, কেবল “দক্ষ”এর কথা বলা, “লাল”এর কথা কখনো না বলা, কেবল ক্যাডারদের কথা বলা, জনগণের কথা কখনো না বলা। এটা একপায়ে চলা। ভারী শিল্প যতদূর পর্যন্ত যায়, তাঁরা প্রধান দ্বন্দ্ব আবিস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন, ইস্পাতকে ভিত্তি আর মেশিনারিকে অন্তরাত্মা বলে, কয়লাকে খাদ্য বলে…। আমাদের জন্য ইস্পাত হচ্ছে প্রধান অবলম্বন, শিল্পে প্রধান দ্বন্দ্ব, যেখানে কৃষিতে খাদ্যশস্য হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। অন্য জিনিসগুলো সমানুপাতিকভাবে বিকশিত হয়।

প্রথম অধ্যায়ে তিনি নিয়মসমূহের আঁকড়ে ধরা আলোচনা করেন কিন্তু কোন পদ্ধতি প্রস্তাব না করে। পণ্য উত্পাদন ও মূল্যের নিয়ম সম্পর্কে তার বেশ কিছু মত রয়েছে যা আমরা নিজেরা অনুমোদন করি, কিন্তু সেই সাথে সমস্যাও রয়েছে। জীবনধারণের উপকরণের সাথে পণ্য উত্পাদনকে সীমিত করা বাস্তবে বরং সন্দেহজনক। কৃষকদের অবিশ্বাস করা হচ্ছে তৃতীয় চিঠির মূল দৃষ্টিকোণ। সারগতভাবে, যৌথ থেকে গণ মালিকানায় উত্তরণ ঘটানোর কোন উপায় স্তালিন আবিস্কার করেননি। পণ্য উত্পাদন ও বিনিময় হচ্ছে রূপসমূহ যা আমরা বজায় রেখেছি, যেখানে মূল্যের নিয়মের সাথে যুক্তভাবে আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং একইসাথে রাজনীতিকে কমান্ডে রাখার কথা বলতে হবে। তারা কেবল উত্পাদন সম্পর্কের কথা বলেন, উপরিকাঠামোর কথা নয়, না রাজনীতি, না জনগণের ভূমিকার কথা। কোন কমিউনিস্ট আন্দেলন*[*এই প্রথম চার অনুচ্ছেদ সমগ্র পাঠের ওপর সমালোচনামূলকভাবে মন্তব্য করে। তারপর রয়েছে নির্দিষ্ট অংশগুলোকে সমালোচনা করে একসারি মন্তব্য। প্রতিটি মন্তব্যের আগে স্তালিনের মূল পাঠ প্রদত্ত রয়েছে জেন মিন চু পান শে অনুবাদ ৩য় সংস্করন, জাুনয়ারী ১৯৩৮(আমরা বিদেশী ভাষা প্রকাশনা, ইংরেজী সংস্করন, পিকিং ১৯৭২ ব্যবহার করেছি)] না থাকলে কমিউনিজমে পৌঁছা যেতে পারেনা।

১.  এই কমরেডগণ…এটা স্পষ্টঃপ্রতীয়মান যে, বিজ্ঞানের যে নিয়মগুলি প্রকৃতি বা সমাজের বস্তুগত প্রক্রিয়াগুলির-মানুষের ইচ্ছা-নিরপেক্ষভাবেই সংঘটিত প্রক্রিয়াগুলির-প্রতিফলন ঘটায় সেই নিযমগুলোকে তাঁরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মাবলীর সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন, যেগুলো মানুষেরই ইচ্ছাপ্রসূত এবং যেগুলোর কেবলমাত্র আইনগত বৈধতাই রয়েছে। কিন্তু সেগুলিকে অবশ্যই গুলিয়ে ফেললে চলবেনা।[স্তালিনের উদ্ধৃতিগুলি আমরা গণপ্রকাশন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সেরাজুল আনোয়ার অনূদিত স্তালিনের রচনা সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনেতিক সমস্যাবলী) থেকে সামান্য দু চারটা পরিবর্তন সহকারে দিয়েছি-বাংলা অনুবাদক]

  ১. এই মূলনীতি হচ্ছে মূলত সঠিক, কিন্তু দুটি বিষয় ভুলঃ প্রথম, পার্টি ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকাকে পর্যাপ্তভাবে আনা হয়নি; দ্বিতীয়, এটা যথেষ্ট সামগ্রিক নয় যাতে এটা ব্যর্থ হয় ব্যাখ্যা করতে যে সরকারী ডিক্রীসমূহকে যা সঠিক প্রতিপন্ন করে তা শ্রমিক শ্রেণীর ইচ্ছা থেকে কেবল উদ্ভূত হয়না বরং এই সত্য যে বিষয়গত অর্থনৈতিক নিয়মসমূহের আবশ্যকতাকে তা বিশ্বস্তভাবে প্রতিফলিত করে।

২.জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক, ভূতাত্ত্বিক এবং অনুরূপ অন্যান্য প্রক্রিয়ায়-যেগুলোর বিকাশের নিয়ম মানুষ জানতে পারলেও সেগুলোকে প্রভাবান্বিত করতে মানুষ সত্যিই অক্ষম… …

২.এই বক্তব্য ভুল। মানব জ্ঞান এবং প্রকৃতির রূপান্তরের সামর্থ্যরে কোন সীমা নেই। স্তালিন এই ব্যাপারগুলোকে বিকাশমূলকভাবে বিচার করেননি। এখন যা করা যায়না তা ভবিষ্যতে করা যেতে পারে।

৩.একই কথা অবশ্যই বলা উচিত অর্থনৈতিক বিকাশের নিয়ম ও রাজনৈতিক অর্থনীতির নিয়মসমূহের ক্ষেত্রে-তা পুঁজিবাদের আমলেই হোক আর সমাজতন্ত্রের আমলেই হোক। এক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক বিকাশের নিয়ম, প্রকৃতি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রের মতো, হচ্ছে বিষয়গত নিয়ম, মানুয়ের ইচ্ছা নিরপেক্ষভাবে সংঘাটিত হয় অর্থনৈতিক বিকাশের যে প্রক্রিয়াসমূহ তারই প্রতিফলন।

৩.আমরা কীভাবে অর্থনীতির পরিকল্পনা প্রণয়নের দিকে যাবো? হালকা শিল্প ও কৃষির প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয়নি।

৪.সে কারণেই ঐ একই প্স্তুকে এঙ্গেলস বলেছেনঃ “মানুষের স্বীয় সামাজিক কর্মতrপরতার যে নিয়মগুলি এতকাল তার মুখোমুখি দাঁড়াতো তার সাথে সম্বন্ধহীন ও তার ওপর প্রভুত্বকারী নিয়মরূপে, সেগুলো তখন মানুষ ব্যবহার করবে পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা সহকারে, আর এভাবে সেগুলোর ওপর সে করবে প্রভুত্ব।”(এন্টি ড্যুরিং)

৪.স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের দ্বারা বোধগম্য বিষয়গত নিয়ম। মানুষ তার ইচ্ছা নিরপেক্ষভাবে এমন নিয়মের মুখোমুখি হয়। কিন্তু একবার মানুষ একে বুঝতে পারলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৫.সোভিয়েত সরকারের বিশেষ ভূমিকা ছিল দুই পরিস্থিতির জন্য; প্রথম, যা সোভিয়েত সরকারকে করতে হয়েছিল তা পূর্ববর্তী বিপ্লবসমূহের মতো এক রূপের শোষণকে আরেকটা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা নয় বরং সামগ্রিকভাবে শোষণের বিলোপসাধন। দ্বিতীয়, দেশে সমাজতন্ত্রের অর্থনীতির তৈরি কোন প্রাথমিক উপাদান না থাকায় তাকে একটা নতুন সমাজতান্ত্রিক রূপের অর্থনীতি সৃষ্টি করতে হয়েছে, বলতে গেলে “সহায়সম্বলহীন অবস্থা থেকে শুরু করতে হয়েছে”।

৫.সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নিয়মসমূহের অনিবার্যতা হচ্ছে এমন একটা বিষয় যার অধ্যয়ন প্রয়োজন। চেংতু সম্মেলনে আমি বলেছিলাম যে আমাদেরকে দেখতে হবে আমাদের সাধারণ কর্মসূচী (“অধিক! দ্রুততর!, অধিকতর ভাল! অধিক মিতব্যয়ীভাবে!”), তিন যুগপr বিকাশ, এবং গণলাইন ব্যর্থ হয় কিনা[১]; অথবা এটা সফল হয় কিনা। এটা কয়েক অথবা এমনকি দশবছরের জন্য প্রদর্শিত হতে পারেনা। বিপ্লবের নিয়মসমূহ যা কারো কারো দ্বারা সন্দেহ করা হয়ে থাকে, এখন সঠিক প্রমাণিত হয়েছে কারণ শত্রু উচ্ছেদ হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ কি কার্যকর হতে পারে? জনগণের এখনো সন্দেহ আছে। আমাদের চীনা অনুশীলন কি চীনের অর্থনৈতিক নিয়মসমূহের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে? একে অধ্যয়ন করতে হবে। আমার মত হচ্ছে যে যদি অনুশীলন সাধারণভাবে সামঞ্জস্য বিধান করে, বিষয়গুলো ঠিক হয়ে যাবে।

৬.এটা [নয়া, সমাজতান্ত্রিক রূপের অর্থনীতি “সহায়সম্বলহীন অবস্থা থেকে” সৃষ্টি করা] সন্দেহাতীতভাবে একটা কঠিণ, জটিল ও নজিরবিহীন কর্তব্য ছিল।

৬.সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক রূপ সৃষ্টির প্রশ্নে আমাদের সোভিয়েত ইউনিয়নের নজির রয়েছে এবং একারণে তাদের চেয়ে কিছুটা ভাল আমাদের করা উচিত। আমরা যদি ব্যর্থ হই তা দেখাবে যে চীনা মার্কসবাদ কার্যকর নয়। কর্তব্যের সমস্যা ও জটিলতার দিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যা মোকাবেলা করেছে ব্যাপারগুলো তার থেকে পৃথক কিছু নয়।

৭.বলা হয় যে আমাদের দেশে জাতীয় অর্থনীতির সুষম (আনুপাতিক) বিকাশের প্রয়োজন সোভিয়েত সরকারকে প্রচলিত অর্থনৈতিক নিয়মবিধিকে বিলোপে ও নতুন একটা সৃষ্টিতে সক্ষম করে তোলে। এটা পুরোপুরি অসত্য। আমাদের বার্ষিক এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির সুষম আনুপাতিক বিকাশের বিষয়গত অর্থনৈতিক নিয়মের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবেনা।

৭.এটাই ঘটনার মূল(ঈৎীঁ)।

৮.এর অর্থ এই যে, জাতীয় অর্থনীতির সুষম বিকাশের নিয়মই আমাদের পরিকল্পনা রচনাকারী সংস্থাগুলির পক্ষে সঠিকভাবে সামাজিক উত্পাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব করে তোলে। কিন্তু সম্ভাব্যতা(চড়ংংরনরষরঃু)কে অবশ্যই বাস্তবিকতা(অপঃঁধষরঃু)র সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবেনা। এগুলো হল দুটো ভিন্ন জিনিস। সম্ভাব্যতাকে বাস্তবিকতায় পরিণত করতে যা প্রয়োজন তা হল এই অর্থনৈতিক নিয়মকে অধ্যয়ন করা, তাকে রপ্ত করা, পূর্ণ উপলব্ধি সহকারে একে প্রয়োগ করতে শেখা, এবং এমন সব পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যা এই নিয়মের চাহিদাকে পরিপূর্ণতায় প্রতিফলিত করে। এটা বলা যেতে পারেনা যে, আমাদের বাৎসরিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলি দ্বারা এই অর্থনৈতিক নিয়মের চাহিদা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়।

৮.এই অনুচ্ছেদের কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে যে পরিকল্পিত আনুপাতিক বিকাশের বিষয়গত নিয়মকে পরিকল্পনা প্রণয়নের সাথে গুলিয়ে ফেললে চলবেনা। অতীতে আমরাও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলাম কিন্তু সেগুলো প্রায়শই ঝর সৃষ্টি করেছে। অতি বেশী! অতি কম! আমরা অন্ধভাবে বিষয়গুলোতে ঢুকেছি, সবচেয়ে ভাল উপায় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে। কেবলমাত্র উত্থান-পতন ভূগা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ইউ আকৃতি ছাঁচে ঘুরে, উত্তরের খোঁজে প্রত্যেকে মস্তিষ্ক ঝাঁকিয়েছি, তারপরই চল্লিশ অনুচ্ছেদ কৃষি কর্মসূচী উদ্ভাবন করেছি যা আমরা এখন কার্যকর করছি। এখন আমরা একটা নতুন চল্লিশ অনুচ্ছেদ রচনার মধ্যে রয়েছি। আরেকটা তিন বছরের তিক্ত সংগ্রামের পর আমরা আরো বিকশিত হবো; পূর্ণ ও পর্যাপ্ত আলোচনাসমূহের পর আমরা পুনরায় অগ্রসর হবো। আমরা কি একে একটা বাস্তবতায় পরিণত করতে পারি? বিষয়গত অনুশীলনে এর প্রমাণিত হওয়া বাকি আছে। শিল্পের ওপর আমরা আট বছর ধরে কাজ করেছি কিন্তু উপলব্ধি করিনি যে আমাদেরকে  ইস্পাতকে প্রধান অবলম্বন হিসেবে নিতে হত। শিল্পে এটা ছিল দ্বন্দ্বের প্রধান দিক। এটা ছিল অদ্বৈতবাদ। বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রর মধ্যে আমরা বৃহr কে প্রধান অবলম্বন হিসেবে নেই; কেন্দ্র ও অঞ্চলসমূহের মধ্যে কেন্দ্রকে। কোন দ্বন্দ্বের দুটি দিকের মধ্যে একটি4 হচ্ছে প্রধান দিক। আট বছরের অর্জনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের পথ ধরে আরো অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছিলাম। এটা বলা যায়না যে আমাদের উত্পাদনের পরিকল্পনা ছিল সমগ্রভাবে সঠিক অথবা তা সমগ্রভাবে বিষয়গত নিয়মসমূহকে প্রতিফলিত করেছে। পরিকল্পনা করা হয় সমগ্র পার্টি কর্তৃক, স্রেফ পরিকল্পনা কমিটি অথবা অর্থনীতি কমিটি কর্তৃক নয়, বরং সকল স্তর কর্তৃক, প্রত্যেকে এর সাথে জড়িত। এই অনুচ্ছেদে স্তালিন তাত্ত্বিকভাবে সঠিক। কিন্তু এখনো সূক্ষভাবে বিস্তারিত বিশ্লেষণ নেই, না এমনকি কোন পরিস্কার ব্যাখ্যার সূচনা। সোভিয়েতরা বৃহr, মাঝারি ও ক্ষুদ্রর মধ্যে আর অঞ্চল ও কেন্দ্রের মধ্যে পার্থক্য অঙ্কন করেননি। না তারা শিল্প ও কৃষির যুগপr বিকাশ ঘটিয়েছেন। তারা মোটেই দুপায়ে হাটেননি। তাদের আইনকানুন জনগণকে খোঁড়া করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতিকে আমরা পর্যাপ্তভাবে অধ্যয়ন ও আত্মস্থ করিনি, এবং ফলশ্রুতিতে আমাদের পরিকল্পনাও বিষয়গত নিয়মসমূহকে পূর্ণভাবে প্রতিফলিত করেনি।

৯.এঙ্গেলসের সূত্রটি পরীক্ষা করে দেখা যাক। এঙ্গেলসের সূত্রটি পুরোপুরি পরিস্কার ও যথাযথ বলে মনে করা যায়না, কারণ এখানে সমাজ কর্তৃক উত্পাদনের সমস্ত উপকরণ না তার অংশবিশেষ দখল করার কথা বলা হয়েছে, অর্থাr, উত্পাদনের সমস্ত উপকরণ না তার অংশ বিশেষকে সাধারণ সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করার কথা বলা হয়েছে তার কোন ইঙ্গিত নেই। সুতরাং এঙ্গেলসের এই সূত্রটির দু’রকম অর্থই করা যেতে পারে।

৯.এই বিশ্লেষণ সারকে স্পর্শ করছে। সমস্যা হচ্ছে উত্পাদনের উপকরণকে দুই অংশে বিভক্ত করা। উত্পাদনের উপকরণ পণ্য নয় এটা বলা অধ্যয়ণ দাবী করে।

১০.সমাজতন্ত্রের অধীনে পণ্য উত্পাদন, এই অংশে, স্তালিন পণ্যের অস্তিত্বের শর্তসমূহকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরেননি। দুই ধরণের মালিকানার অস্তিত্ব হচ্ছে পণ্য উত্পাদনের প্রধান মুখবন্ধ (ভূমিকা)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পণ্য উত্পাদন উত্পাদিকা শক্তির সাথে জড়িত। একারণে এমনকি সম্পূর্ণ সামজিকীকৃত সাধারণ মালিকানার অধীনে এখনো কিছু এলাকায় পণ্য উত্পাদনকে চালাতে হবে।

১১.এথেকে একথাই বেরিয়ে আসে যে এঙ্গেলস সেসব দেশের কথাই ভাবছিলেন যেখানে শিল্প ও কৃষি-উভয় ক্ষেত্রেই পুঁজিবাদ ও উত্পাদনের কেন্দ্রীভবন এতদূর অগ্রসর হয়েছে যাতে করে দেশের সমস্ত উত্পাদন উপকরণকে বাজেয়াপ্ত করে নেয়া যেতে পারে এবং সেগুলোকে সর্বসাধারণের সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। ফলস্বরূপ, এঙ্গেলস মনে করেছেন যে, এই ধরণের দেশে সমস্ত উত্পাদন উপকরণগুলোর সামাজিকীকরণের পাশাপাশি পণ্য উত্পাদনের বিলোপ সাধন করা উচিত। আর নিঃসন্দেহেই তা হলো সঠিক।

১১এঙ্গেলসের সূত্রায়ণের স্তালিনে বিশ্লেষণ হচ্ছে সঠিক। বর্তমানে পণ্য উত্পাদনের বিলোপ ঘটানোর একটা শক্ত প্রবণতা রয়েছে। জনগণ যে মুহুর্তে পণ্য উত্পাদন দেখতে পায় দুঃখিত হয়, একে পুঁজিবাদ হিসেবে মনে করে। কিন্তু মনে হয় যেন পণ্য উত্পাদনকে ব্যাপকভাবে বিকশিত করতে হবে আর অর্থযোগান বাড়াতে হবে কয়েক দশক কোটি কৃষকের সংহতির স্বার্থে। এটা কয়েক লক্ষ ক্যাডারের মতাদর্শের জন্য আর কয়েক দশক কোটি কৃষকের সংহতির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এখন আমাদের রয়েছে উত্পাদনের উপকরণসমূহের একটা অংশ। কিন্তু মনে হয় তারা রয়েছে যারা এই মুহুর্তে সমগ্র জনগণের মালিকানা ঘোষণা করতে চান ক্ষুদে ও মাঝারি উত্পাদকদের বঞ্চিত করে। কিন্তু তারা মালিকানার বর্গ(ক্যাটাগরি) ঘোষণা করতে ব্যর্থ হন! এটা কি কমিউন মালিকানাধীন অথবা কাউন্টি মালিকানাধীন হবে? স্রেফ গণ মালিকানা ঘোষণা করে এভাবে পণ্য ও পণ্য উত্পাদন বিলোপ করা হচ্ছে কৃষককুলকে বঞ্চিত করা। ১৯৫৫র শেষে উত্পাদন ও ক্রয় মিলিয়ে আমাদের প্রায় ৯০ বিলিয়ন ক্যাটি শস্য ছিল, আমাদের সামাণ্য সমস্যাও সৃষ্টি করেনি। প্রত্যেকেই খাদ্যের কথা বলছিল, আর গৃহস্থালির পর গৃহস্থালি ঐক্যবদ্ধ ক্রয়ের কথা বলছিল। কিন্তু তাসত্ত্বেও এটা ছিল ক্রয়, বন্টন নয়। যখন আমরা ৮৩ বিলিয়ন ক্যাটি শস্য উত্পাদন করার সিদ্ধান্ত নিলাম কেবল তারপরই সংকট মিটল। আমি বুঝিনা কেন জনগণ এই জিনিসগুলো এত দ্রুত ভুলে গেলেন।

১২. বৃটেনের কাছে বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্বের প্রশ্ন ও তার জাতীয় অর্থনীতিতে যে বিরাট ভূমিকা তা পালন করে তার গুরুত্বের প্রশ্নটি আমি দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে তুলছিনা। আমার মনে হয় এপ্রশ্নে কেবল একট তদন্তের পরই চূড়ান্তভাবে এটা সিদ্ধান্ত করা যায় বৃটেনে সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক ক্ষমতা দখল এবং সকল উত্পাদনের উপকরণের জাতীয়করণের পর বৃটেনে পণ্য উত্পাদনের ভবিষ্যত (ভাগ্য) কী হবে?

১২.ভাগ্য নির্ভর করে পণ্য উত্পাদন বিলোপ করা হচ্ছে কিনা তার ওপর।

১৩.কিন্তু এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়ঃ যেসব দেশে, যেমনটা ছিল আমাদের দেশে, সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক ক্ষমতা অধিগ্রহণ করার এবং পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ঘটাবার জন্যে পরিস্থিতি হলো অনুক’ল, [যেখানে শিল্পের ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ উত্পাদন-উপকরণগুলিকে এত পরিমাণে কেন্দ্রীভুত করেছে যে সেগুলিকে বাজেয়াপ্ত করা ও সমাজের সম্পত্তিতে পরিণত করা যায়, কিন্তু যেখানে পুঁজিবাদের বিকাশ সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ছোট, মাঝারি মালিক উত্পাদকদের মধ্যে কৃষি এমন পরিমাণে বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তা এসব উত্পাকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা ভাবতে অসম্ভব করে তোলে?}* [বন্ধনীর বক্তব্য স্তালিনের পাঠ থেকে যুক্ত করা হয়েছে বিষয়বস্তুকে পরিস্কার করতে]…[এটা]কৃষক সমাজকে দীর্ঘকালের জন্য সর্বহারা শ্রেণীর শত্রু শিবিরে ঠেলে দেবে।

১৩. সামষ্টিকভাবে পণ্য উত্পাদন পরিচালক নীতিমালা আঁকড়ে ধরা হয়নি। চীনা অর্থনীতিবিদরা হচ্ছে যতদূর পর্যন্ত বই পড়ে শেখা যায় ততদূর পর্যন্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী। কিন্তু যখন তারা অর্থনৈতিক অনুশীলনের মুখোমুখি হন মার্কসবাদ-লেনিনবাদ দূর্ব্যবহার পায়। তাদের চিন্তা বিভ্রান্ত হয়। আমরা যদি ভুল করি আমরা কৃষকদের শত্রুশিবিরে ঠেলে দেব।

১৪.লেনিনের উত্তর নিচের মতো করে সারসংক্ষেপিত করা যায়ঃ

ক)ক্ষমতা দখলের অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ হারানো উচিত নয়-পুঁজিবাদ লক্ষকোটি ক্ষুদে ও মাঝারি স্বতন্ত্র উত্পাদকদের সর্বনাশ না করা পর্যন্ত অপেক্ষা না কর্ইে সর্বহারা শ্রেণীর ক্ষমতা দখল করা উচিত।

১৫(খ) শিল্পের ক্ষেত্রে উত্পাদনের উপকরণকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং সাধারণ সম্পত্তিতে রূপান্তর করতে হবে;

১৬(গ) ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্বতন্ত্র ব্যক্তি উত্পাদকদের সম্পর্কে বলা যায় তাদেরকে পর্যায়ক্রমে উত্পাদকদের সমবায়ে অর্থাr বৃহr কৃষি সংস্থাসমূহে যৌথ খামারসমূহে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে;

১৭(ঘ) শিল্পকে সর্বোচ্চ মাত্রায় বিকশিত করতে হবে এবং যৌথ খামারগুলিকে বৃহদায়তন উত্পাদনের আধুনিক কৃr কৌশলগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাদেরকে বাজেয়াপ্ত করে নয়, বরং বিপরীতে অকৃপণভাবে তাদেরকে প্রথমশ্রেণীর ট্রাক্টর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে;

১৮(ঙ) শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যকার, শিল্প ও কৃষির মধ্যেকার অর্থনৈতিক বন্ধন সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে, নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে পণ্য উত্পাদন (ক্রয় ও বিক্রয় মারফত বিনিময়) বজায় রাখতে হবে, কারণ শহরের সাথে অর্থনৈতিক বন্ধনের এই রূপটিই কৃষকদের নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য, আর সোভিয়েত ব্যবসাকে-রাষ্ট্র, সমবায় ও যৌথ খামারের ব্যবসাকে-পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করতে হবে এবং সবধরণ ও বর্ণনার পুঁজিপতিদের ব্যবসায়মূলক কার্যকলাপ থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।

আমাদের দেশের সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের ইতিহাস দেখিয়ে দিয়েছে যে, লেনিন কর্তৃক পরিকল্পিত বিকাশের এই পথটি নিজেকে পুরোপুরি ন্যায্য প্রমাণ করেছে।

১৯. কোন সন্দেহ নেই যে কম বেশী ব্যাপক সংখ্যাযুক্ত ক্ষুদে ও মাঝারি উত্পাদক শ্রেণীযুক্ত সকল পুঁজিবাদী দেশগুলির ক্ষেত্রে বিকাশের এই পথ হচ্ছে সমাজতন্ত্রের বিজয়ের জন্য একমাত্র সম্ভাব্য ও উপযুক্ত।

১৪.এই অনুচেছদের একটা সঠিক বিশ্লেষণ রয়েছে। চীনের পরিস্থিতি দেখুন। বিকাশ রয়েছে। এই পাঁচ পয়েন্টের সবগুলোই সঠিক।

১৫. জাতীয় বুর্জোয়ার প্রতি আমাদের কর্মনীতি ছিল তাদের সম্পত্তির পরিত্রাণ করা।

১৬. আমরা গণকমিউনসমূহকে এযাবrকালের বৃহr আয়তনে বিকশিত করছি।

১৭. এটাই সুনির্দিষ্টভাবে তা যা আমরা করছি।

১৮. এমন লোক রয়েছে যারা কোন পণ্য উত্পাদন চাননা, কিন্তু তারা ভ্রান্ত। পণ্য উত্পাদন সম্পর্কে আমাদের এখনো স্তালিন থেকে সেটা নিতে হবে যিনি এক পর্যায়ে লেনিন থেকে পেয়েছেন। লেনিন বলেছিলেন বাণিজ্যকে বিকশিতকরণে পূর্ণতম শক্তি বিনিয়োযিত করতে। আমরা বরং বলবো, শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের বিকাশে পূর্ণতম শক্তি বিনিয়োযিত করুন। এই সমস্যার সার হচ্ছে কৃষক সমস্যা। এমন লোক রয়েছে যারা এমনকি কৃষকদেরকে শ্রমিকদের চেয়ে অধিক সচেতন মনে করে। আমরা এই পাঁচ আইটেমের ওপর কর্মসূচী পরিচালনা করেছি অথবা পরিচালনার প্রক্রিয়ায় রয়েছি। কিছু এলাকাকে এখনো বিকশিত করতে হবে, যথা কমিউন পরিচালিত শিল্প অথবা শিল্প ও কৃষির যুগপৎ বিকাশ।

১৯. লেনিন একই কথা বলেছেন।

২০. পণ্য উত্পাদনকে স্বয়ংসম্পূর্ণের মতো একটা কিছু, পারিপার্শ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে স্বাধীন একটা কিছু মনে করা উচিত নয়। পণ্য উত্পাদন পুঁজিবাদী উত্পাদনের চেয়ে প্রাচীনতম। দাসমালিক সমাজে এটা ছিল, এবং তাকে সেবা করেছে, কিন্তু তাকে পুঁজিবাদে চালিত করেনি। সামন্তবাদী সমাজে এটা ছিল এবং তাকে সেবা করেছে, তথাপি, যদিও তা পুঁজিবাদী উত্পাদনের জন্য কিছু শর্ত প্রস্তুত করেছে তা পুঁজিবাদে চালিত করেনি।

২১.এটা মনে রেখে যে আমাদের দেশে পণ্য উত্পাদন ততটা সীমাহীন ও সর্বব্যাপী নয় পুঁজিবাদী পরিস্থিতির

২২.অধীনে যেমনটা থাকে, বরং উত্পাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা, মজুরী শ্রম পদ্ধতির বিলোপ এবং শোষণের পদ্ধতির বিলোপের মতো এমন নির্ধারক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো কঠিণ সীমায় বাঁধা আছে

২৩.তখন প্রশ্ন উঠে পণ্য উত্পাদন একটা নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য একইভাবে আমাদের সমাজতান্ত্রিক সমাজের সেবা করতে পারবেনা কেন পুঁজিবাদের দিকে চালিত না করে?

২০.এই বক্তব্য খানিকটা অতিকথন। কিন্তু এটা সত্য যে পণ্য উত্পাদন একচেটিয়াভাবে পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান ছিলনা।

২১.কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন(পণ্য উত্পাদন) ব্যবহার করা, বিধি নিষেধ আরোপ করা এবং রূপান্তর করার কর্মনীতি প্রস্তাব করে।

২২.এই পরিস্থিতি চীনে পূর্ণভাবে কার্যকর রয়েছে

২৩. এই পয়েন্টটি সমগ্রভাবে সঠিক। আমাদের আর তেমন পরিস্থিতি ও অবস্থা নেই। এমন লোক রয়েছে যারা পণ্যকে ভয় পায়। ব্যতিক্রমহীনভাবে তারা পুঁজিবাদকে ভয় পায়, এই সত্য উপলব্ধি না করে যে পুঁজিপতিদের অপসারণের সাথে সাথে পণ্য উত্পাদনকে বিপুলভাবে বৃদ্ধি করা অনুমোদনীয়। পণ্য উত্পাদনে আমরা এখনো পশ্চাদপদ, ব্রাজিল ও ভারতের পেছনে। পণ্য উত্পাদন কোন বিচ্ছিন্ন জিনিস নয়। প্রেক্ষিতের দিকে লক্ষ্য করুনঃপুঁজিবাদ অথবা সমাজতন্ত্র। পুঁজিবাদী প্রেক্ষিতে এটা পুঁজিবাদী পণ্য উত্পাদন। একটা সমাজতান্ত্রিক প্রেক্ষিতে তা সমাজতান্ত্রিক পণ্য উত্পাদন। প্রাচীন কাল থেকে পণ্য উত্পাদন বজায় রয়েছে। ইতিহাস যাকে বলে শ্যাং[“বাণিজ্য”] রাজবংশ, সেআমলে ক্রয় ও বিক্রয় শুরু হয়। শ্যাং রাজবংশের শেষ রাজা চৌ ছিলেন সিভিল ও সামরিক বিষয়াদিতে দক্ষ, কিন্তু তিনি ছিন[২] ও ছাও ছাও[৩]-এর প্রথম সম্রাট সহকারে ভিলেনে রূপান্তরিত হন। এটা ভুল। “সম্পূর্ণ আস্থা পুস্তকে থাকার চেয়ে কোন পুস্তক না থাকা ভাল।”*[*  মাও মনে হয় এটা বোঝাচ্ছেন “আসুন পণ্য উত্পাদনের ভেতর থেকে পণ্ডিতি ভিলেন মজুদ না করি”]। পুঁজিবাদী সমাজে এমন কোন সমাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই যা সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা যায়, কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক শ্রেণী ও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের অস্তিত্ব রয়েছে। পণ্য উত্পাদনকে যা নির্ধারন করে তা হচ্ছে পারিপার্শ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসমূহ। প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনকে এগিয়ে নেয়ার একটা উপযোগী অঙ্গ হিসেবে পণ্য উত্পাদনকে মনে করা যায় কি? আমি মনে করি পণ্য উত্পাদন সমাজতন্ত্রকে বিনীতভাবে সেবা করবে। এটা ক্যাডারদের মধ্যে আলোচনা করা যায়।

২৪.বলা হয় যে যেহেতু আমাদের দেশে উত্পাদনের উপকরণগুলোর ওপর সামাজিক মালিকানার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং মজুরী শ্রম প্রথা ও শোষণের ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করা হয়েছে, পণ্য উত্পাদন তার সকল অর্থ হারিয়েছে এবং আর তাই একে খতম করে দেয়া উচিত।

২৪.“আমাদের দেশ” এর স্থলে “চীন” চিন্তা করুন আর তা হবে খুব ষড়যন্ত্রমূলক।

২৫. আজকে আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের দুটি মৌলিক রূপ রয়েছেঃ রাষ্ট্র অথবা গণমালিকানাধীন উত্পাদন, আর যৌথ খামার উত্পাদন যাকে গণমালিকানাধীন বলা যায়না।

২৫“আজকে” বলতে ১৯৫২, তাদের বিপ্লবের পয়ত্রিশ বছর পর। আমরা বরং আমাদেরটা থেকে নয় বছর দূরে দাঁড়িয়ে।

তিনি দুটো মূল রূপের কথা বলেন। কমিউনে ভুমি ও মেশিনারি শুধু নয় বরং শ্রম, বীজ আর অন্যান্য উত্পাদনের উপকরণসমূহও কমিউন মালিকানাধীন। তাই উrপন্নও একই মালিকানাধীন। কিন্তু এটা মনে করবেননা যে চীনা কৃষকরা খুব চমrকার অগ্রসর। ছিউউ কাউন্টি, হুনান-এ বন্যা অথব খরার ঘটনায় পার্টি সম্পাদক ব্যাপৃত ছিলেন গণমালিকানা ঘোষিত হবার পর এবং মুক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর পর রাষ্ট্র মজুরী প্রদান করবে কিনা এনিয়ে । তিনি আরো ব্যাপৃত ছিলেন যে বাম্পার ফলনের সময় রাষ্ট্র সাধারণ শস্য সরিয়ে নেবে মজুরীও প্রদান করবেনা ফলন সফল হোক না হোক কৃষকদের ভোগান্তিতে ফেলে। এটা কৃষকদের সমস্যাকে প্রতিনিধিত্ব করে। মার্কসবাদীদের এসব সমস্যা নিয়ে ব্যাপৃত হওয়া উচিত। আমাদের পণ্য উত্পাদনকে পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করা উচিত এবং এটা পনের বছর অথবা বেশী লাগতে যাচ্ছে, ধৈর্য্যও সেইসাথে। আমরা দশক দশক যুদ্ধ চালিয়েছি। এখনো আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে তাইওয়ানের মুক্তির জন্য, সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণ ভালভাবে চালানোর জন্য। দ্রুত বিজয়ের আশা করবেননা!

২৬.[কীভাবে মালিকানার দুই মূল রূপ শেষ পর্যন্ত একটায় পরিণত হবে] হচ্ছে একটা বিশেষ প্রশ্ন যার জন্য পৃথক আলোচনার প্রয়োজন।

২৬. স্তালিন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন একটা পদ্ধতি অথবা উপযুক্ত সূত্রায়ণ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে[যৌথ থেকে গণমালিকানায় উত্তরণের প্রশ্নে]]

২৭. ফলত, আমাদের পণ্য উত্পাদন মামুলি ধরণের নয়, বরং একটা বিশেষ ধরণের, বরং একটা বিশেষ ধরণের পণ্য উত্পাদন, পুঁজিপতিদের ছাড়া পণ্য উত্পাদন, যা সংঘবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক উত্পাদকদের (রাষ্ট্রীয়, যৌথ খামার, সমবায়)দের উত্পাদিত সামগ্রী নিয়ে প্রধানত ব্যাপৃত, যার কর্মতrপরতার ক্ষেত্র সীমিত যা ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রীগুলোর মধ্যেই আবদ্ধ, যা আবশ্যিকভাবে পুঁজিবাদী উত্পাদনে বিকশিত হতে সক্ষম নয় এবং স্বীয় “মুদ্রা অর্থনীতি”সহকারে যা সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনের বিকাশ ও সংহতকরণের সেবায় পরিকল্পিত।

২৭.“কর্মতrপরতার ক্ষেত্র” স্বতন্ত্র ব্যক্তিভোগের আইটেমে সীমাবদ্ধ নয়। কিছু উত্পাদনের উপকরণকে পণ্য হিসেবে শ্রেণী বিভাজিত করতে হবে। যদি কৃষি উrপন্ন পণ্য নিয়ে গঠিত হয় কিন্তু শিল্পোrপাদন না, তাহলে কীভাবে বিনিময় হতে যাচ্ছে? যদি “আমাদের দেশ”-এর স্থলে “চীন হয়”, অনুচ্ছেদটি অধ্যয়ন আরো বেশী মজার হয়। চীনে ভোগ্য সামগ্রী শুধু নয় কৃষি উত্পাদনের উপকরণও সরবরাহ করতে হবে। স্তালিন কৃষকদের কাছে কখনো উত্পাদনের উপকরণ বিক্রী করেননি। ক্রুশ্চেভ তা পরিবর্তন করেন।

২৮.(মূল পাঠের পৃষ্ঠা ১৩তে চেয়ারম্যান মাও মন্তব্য করেন)ঃ যৌথ ও গণমালিকানার মধ্যে পার্থক্য রেখার সমস্যার সাথে সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের মধ্যকার পার্থক্য রেখার সমস্যাকে গুলিয়ে ফেললে চলবেনা। যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা আমাদের পণ্য উত্পাদনের সমস্যায় ব্যাপৃত করে যার লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিক কৃষক মৈত্রী সংহতকরণ এবং উত্পাদন বিকশিত করণ। আজকে সেসব লোকেরা রয়েছে যারা বলে যে যে কৃষকদের কমিউনিজম হচ্ছে গৌরবোজ্জ্বল। গ্রামাঞ্চলে একবার যেয়ে তারা মনে করেন কৃষককুল হচ্ছে এককথায় চমrকার, যেন তারা প্রায় স্বর্গে প্রবেশ করেছেন, যেন তারা শ্রমিকদের চেয়ে ভাল। এটা হচ্ছে উপরিতলের ঘটনা। আমাদের দেখতে হবে কৃষকদের সত্যিই একটা কমিউনিস্ট উদ্যম রয়েছে কিনা, তার চেয়ে বেশী যা তাহচ্ছে আমাদের কমিউন মালিকানা ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, উত্পাদনের ও জীবন ধারণের উপকরণ যেমাত্রায় কমিউনাল যৌথ মালিকানার সাথে জড়িত তাসহ। যেমনটা হুনানের ছিউউ কাউন্টি পার্টি কমিটি সম্পাদক বলেন আমাদেরকে এখনো পণ্য উত্পাদন বিকশিত করতে হবে, এবং অন্ধভাবে সামনে এগোনো যাবেনা।

২৯. পুন, আমার মনে হয় যে যেখানে মার্কস পুঁজিবাদের একট বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যাপৃত হয়েছেন সেই মার্কসের পুঁজি থেকে নেওয়া ও কৃত্রিমভাবে আমাদের সমাজতান্ত্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয্ক্তু অন্যান্য কিছু ধারণা বর্জন করতে হবে…এটা স্বাভাবিক যে মার্কস এই ধারণাগুলোকে(বর্গগুলোকে) ব্যবহার করেছেন যা পুঁজিবাদী সম্পর্কের সাথে পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩০. কিন্তু কম বললে এটা আশ্চর্য যে এই ধারণাগুলিকে ব্যবহারের কথা বলা যখন শ্রমিকশ্রেণী শুধু ক্ষমতা ও উত্পাদনের উপকরণ বঞ্চিত নয় তাই নয় বরং বিপরীতে ক্ষমতার মালিক

৩১. এবং উত্পাদনের উপকরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রমশক্তিকে পণ্য গণ্য করা এবং শ্রমিকদের “ভাড়া করা” এখন উদ্ভট শোনায় আমাদের ব্যবস্থার অধীনে, যদিও শ্রমিকশ্রেণী যেকিনা উত্পাদনের উপকরণের মালিক, নিজেকে নিজে ভাড়া করে এবং নিজের শ্রমশক্তি নিজের কাছে বিক্রী করে।

২৯. নির্দিষ্টভাবে, শিল্প সেক্টরে উত্পাদনের উপকরণ।

৩০. পণ্য উত্পাদনকে বিপুলভাবে বিকশিত করতে হবে মুনাফার জন্য নয় বরং কৃষককুলের জন্য, কৃষি-শিল্প মৈত্রীর জন্য এবং উত্পাদনের বিকাশের জন্য।

৩১. বিশেষত শুদ্ধিকরণের পর। শুদ্ধিকরণ ও ডানপন্থা-বিরোধী অভিযানসমূহের পর শ্রমশক্তি আর পণ্য ছিলনা। এটা ছিল জনগণের সেবায় নিয়োযিত, ডলারের সেবায় নয়। শ্রমশক্তি প্রশ্ন সমাধা হয়নি যতক্ষন না শ্রমশক্তি আর পণ্য নয়।

৩২. অনেক সময় এ প্রশ্ন করা হয় আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে মূল্যসূত্র[খধি ড়ভ ঠধষঁব] অস্তিত্বশীল ও কার্যকর রয়েছে কিনা।

৩২. মূল্যের নিয়মের কোন সঞ্চালক কার্যকরিতা নেই। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং রাজনীতি কমাণ্ডে সেই ভূমিকা পালন করে।

৩৩. সত্যি, আমাদের সমাজতান্ত্রিক উত্পাদনে মূল্যের নিয়মের কোন নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নেই।

৩৩. আমাদের সমাজে মূল্যের নিয়মের কোন নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নেই, অর্থাৎ, কোন নির্ণায়ক কার্যকরিতা নেই। পরিকল্পনা প্রণয়ন উত্পাদনকে নির্ণয় করে, উদাহারণস্বরূপ, শূকর অথবা ইস্পাতের জন্য আমরা মূল্যের নিয়ম ব্যবহার করিনা আমরা পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর নির্ভর করি।

টীকা

[ইংরেজী সংস্করণে প্রদত্ত]

পাঠনোট

  ১.চীনা গ্রামাঞ্চলে তিন স্তরের যৌথ মালিকানা রয়েছে। ক্ষুদ্রতম ইউনিট উত্পাদন টিম সাধারণত পনের থেকে পঁয়ত্রিশ পরিবার নিয়ে গঠিত। টীম হচ্ছে মূল মালিকানা এবং উত্পাদন একক সে যে জমিতে কাজ করে তা; বেশকিছু ভারবাহী পশু, এবং ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি যথা মাড়াই যন্ত্র ও পেষণযন্ত্র তার অধিকারে। পরের ইউনিটটি হচ্ছে উত্পাদন ব্রিগেড, পাঁচ থেকে পনের টিম নিয়ে গঠিত। ব্রিগেডের মালিকানায় রয়েছে বৃহত্তর উত্পাদনের উপকরণ যা টিমের কেনার পক্ষে অতি দামী এবং কার্যকরভাবে তাদের ব্যবহারের জন্য অতি বৃহৎ যথা ট্রাক্টর ও সেচ যন্ত্রাদি। ব্রিগেড পাহাড় কেটে সমান করার মতো কার্যাদিও দেখাশোনা করে যার জন্য টিম অতি ক্ষুদ্র্। কয়েক হাজার থেকে কয়েক পঞ্চাশ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট কমিউন দশ থেকে ত্রিশটি ব্রিগেড নিয়ে গঠিত। ব্রিগেডসমূহের জন্য সামগ্রিক সমন্বয়সাধন করা সহকারে কমিউন বৃহৎ শিল্প উদ্যোগসমূহ ও সেইসব প্রজেক্ট যা ব্রিগেডের পক্ষে পরিচালনার জন্য অতি বৃহৎ যেমন পানি সংরক্ষণ প্রজেক্ট ইত্যাদির মালিকানা ভোগ করে ও পরিচালনা করে।

  ২.যৌথ মালিকানার বিবিধ ধরণ, সমগ্রভাবে দেখলে, সমগ্র জনগণের মালিকানা থেকে পৃথক। যৌথ মালিকানা অর্থ করে যে উত্পাদনের উপকরণসমূহ সমগ্র জনসংখ্যার একটা সেক্টরের মালিকানাধীন। এই সেক্টর, তা একটা টিম, ব্রিগেড অথবা কমিউন যাই হোক, মূলত উত্পাদন সংগঠিত ও পরিচালনা করে। করের পাশাপাশি যৌথ মালিকানাধীন ইউনিটের উত্পাদসমূহ সেই ইউনিটের অধিকারে যে উত্পাদন করে। ইউনিট উত্পাদের একটা অংশকে পুনরূত্পাদন ও বিনিয়োগে আর অবশিষ্টাংশ শ্রমিকদের আয়ে ব্যবহার করে।

সমগ্র জনগণের মালিকানা, অন্যদিকে সমগ্র সমাজের মালিকানার দিক নির্দেশ করে, কোন সেক্টরের নয়। এই সংস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও সংগঠণের প্রতি নিবেদিত। তাদের উত্পাদ সমগ্র সমাজের অধিকারে এবং সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন ইউনিটসমূহের সমগ্র ব্যবস্থার মধ্যে চাহিদা অনুসারে বন্টিত হতে পারে। যেহেতু এই বহুবিধ উত্পাদন ইউনিটসমূহ একটি ঐক্যবদ্ধ হিসাব ইউনিট হিসেবে গণ্য হয়, একটি স্বতন্ত্র উত্পাদন এককের লাভ অথবা ক্ষতি ইউনিটে বিনিয়োগ অথবা এর শ্রমিকদের আয়ে কোন প্রভাব ফেলেনা।

১৯৭৩ সালে, সমগ্র জনগণের মালিকানার অধীনে শিল্পের হিসাব ছিল সমগ্র স্থির পুঁজির শতকরা ৯৭ ভাগ, শিল্পে নিয়োযিত জনগণের শতকরা ৬৩ ভাগ, সমগ্র শিল্পোrপাদনের শতকরা ৮৬ ভাগ। যৌথ মালিকানাধীন স্থির পুঁজি ছিল শতকরা ৩ ভাগ,সমগ্র শিল্পোr পাদনের শতকরা ৩৬.২ ভাগ, এবং সমগ্র উrপন্নের শতকরা ১৪ ভাগ। স্বতন্ত্র হস্তশিল্প বাকী শতকরা ৮ ভাগ গঠণ করেছিল। বাণিজ্যে ৯২.৫ ভাগ খুচরা বিক্রয় সমগ্র জনগণের মালিকানাধীন, আর যৌথ মালিকানাধীন ইউনিটের হিসাব ছিল সমগ্র খুচরা বিক্রয়ের শতকরা ৭.৩ ভাগ। কৃষিতে, অন্যদিকে উত্পাদনের উপকরণের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ তখনো ছিল যৌথ মালিকানাধীন।

৩.কৃষি সংস্কার আন্দোলন নির্দিষ্টভাবে বোঝাচ্ছে স্বাধীনতাত্তের ১৯৪৯-১৯৫২র ভুমি সংস্কার অভিযানকে। ব্যাপক অধিকাংশ এলাকার কৃষি উত্পাদকদের সমবায়সমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৫ ও ১৯৫৬র প্রথম দিককার সময়ের যৌথকরণের জোয়ারের সময়। সমগ্র চীনব্যাপী গণ কমিউনসমূহ সংগঠিত হয়েছিল ১৯৫৮র শেষে মহান অগ্রগামী উলম্ফণের সূচনাকালীন পর্যায়কালে।

৪.মুrসুদ্দি পুঁজিবাদ বলতে চীনে বৈদেশিক বাণিজ্য স্থাপনাগুলো বোঝাচ্ছে, যার কর্মচারীরা ছিল চীনা, আর তারা বৈদেশিক স্বার্থসমূহকে সেবা করত

৫.আমলাতান্ত্রিক পুঁজি এবং সেসময়ে এর প্রতি কর্মনীতির গুরুত্ব সম্পর্কে মাওয়ের আলোচনার জন্য দেখুন “বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের কর্তব্য”, ডিসেম্বর ২৫, ১৯৪৭, এবং ৭ম কেন্দ্রীয় কমিটির ২য় অধিবেশনে প্রদত্ত রিপোর্ট”, মার্চ ৫, ১৯৪৯, মাওসেতুঙের নির্বাচিত রচনাবলী(ইংরেজী), খণ্ড ৪ (পিকিং; বৈদেশিক সাহিত্য প্রকাশনা, ১৯৬১), পৃঃ১৬৭-৬৮ এবং ৩৬২-৭৫

৬.এখানে মাও চ্যাং পো-চ্যুন এবং লো লুঙ-ছির তrপরতার কথা বলছেন। ১৯৫৭র গ্রীষ্মকালে চ্যাং চীনা গণ রাজনৈতিক পরামর্শক সভার কাছে অধিক ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করেন, যা বিরাটাকারে বহুবিধ গণতান্ত্রিক পার্টির সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছিল। সিসিপি আধিপত্যাধীন জাতীয় গণ কংগ্রেসে ভেটো প্রদানের ক্ষমতাযুক্ত এই ইউনিট একটা “উচ্চ কক্ষ” হিসেবে সেবা করত। লো এক সারি “পুনর্বাসন কমিটি” প্রস্তাব করেন গণতন্ত্রী ব্যক্তিদের প্রতি ব্যবহারের পরীক্ষা করতে যাদের সাথে ১৯৫০ দশকের প্রথম দিককার প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে অভিযানসমূহর সময়ে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।

৭.নির্দিষ্ট হারে সুদ ছিল জাতীয় বৃুর্জোয়াদের উত্পাদনের উপকরণ ক্রয় করতে সিসিপির রণনীতির অংশ। স্বাধীনতার পর তাদের প্রতি কর্মনীতি কতিপয় পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রথম পর্যায় ছিল ম্যানুফ্যাকচার ও প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগসমূহ এবং এসব উদ্যোগসমূহ কর্তৃক উত্পাদিত উrপন্নের ঐক্যবদ্ধ ক্রয় ও বন্টন সম্পর্কে রাষ্ট্র কর্তৃক আদেশ প্রদান। ১৯৫২তে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্পে শুদ্ধিকরণ অভিযান চালানোর পর “মুনাফাকে চার শেয়ারে বিভক্ত করা”র দ্বিতীয় পর্ব প্রযুক্ত হল। অপেক্ষাকৃত সমান চার শেয়ার ছিল: ১) রাষ্ট্রকে প্রদান করা কর (২) শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রদান (৩) প্রতিষ্ঠান উন্নয়ণ তহবিল (৪) পুঁজিপতিদের জন্য মুনাফা।

তৃতীয় পর্যায় ছিল রাষ্ট্র-ব্যক্তি যুক্ত মালিকানার প্রয়োগ, প্রথমে স্বতন্ত্র ব্যক্তি উদ্যোগসমূহে তারপর সমগ্র ব্যবসায়। এই “রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের উচ্চতম পর্ব”তে পুঁজিপতিদের আয় আসত ইউনিটে তারা যে কাজ করত তার জন্য যে বেতন তারা পেত এবং “নির্দিষ্ট হারে সুদ” থেকে। নির্দিষ্ট হারে সুদ বাrসরিক সংস্থার সম্পদের মূল্যের শতকরা ৫ ভাগ হিসেবে প্রদান করা হত স্বতন্ত্র ব্যক্তি খামারগুলোর বাrসরিক লাভ অথবা ক্ষতি যাই হোকনা কেন। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নির্দিষ্ট হার সুদ প্রদান বিলোপ করা হয়।

৮.ঐক্যবদ্ধ ক্রয় ও সরবরাহ বলতে বোঝাত যে সরকার কিছু উrপন্ন নির্দিষ্ট মূল্যে ক্রয় করবে, এভাবে প্রাইভেট বাজার ও এসব দ্রব্যের ফাটকার পরিস্থিতির বিলোপ ঘটিয়ে। খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, তৈলবীজের ঐক্যবদ্ধ ক্রয় ও সরবরাহ সূচিত হয় মার্চ ১৯৫৪তে, এবং সেপ্টেম্বর ১৯৫৪তে সূতা ও সূতি কাপড়ের ক্ষেত্রে কর্মনীতিটি সূচিত হয়।

ঐক্যবদ্ধ ক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থায় তিনটি বর্গের দ্রব্য রয়েছে। প্রথম বর্গের দ্রব্য (যা ১৯৫৯ এপ্রিল হিসেবে ৩৮ দ্রব্য অন্তর্ভূক্ত করেছে)রাষ্ট্রীয় কোম্পানীগুলোর কাছে বিক্রী হয় নির্দিষ্ট দামে। দ্বিতীয় বর্গের দ্রব্য(এপ্রিল ১৯৫৯ অনুসারে ২৯৩ দ্রব্য) রাষ্ট্রের কাছে বিক্রী হয় চুক্তিভিত্তিক কোটা অনুসারে। কোটা ঊর্ধ্ব উত্পাদন রাষ্ট্রের কাছে বিক্রী হতে পারে কিন্তু প্রয়োজন নেই। তৃতীয় বর্গের দ্রব্য(এগুলো প্রথম অথবা দ্বিতীয় বর্গে অন্তর্ভুক্ত নয়) এখনো বাজারে বিক্রয় হতে পারে।

৯.“লাল ও দক্ষ” একটা সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে একটা বিপরীতের ঐক্যকে বর্ণনা করে। লালত্ব কাজের রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক দিককে আর দক্ষতা টেকনিকাল দিককে প্রতিনিধিত্ব করে। উভয়ই যেকোন কাজের প্রয়োজনীয় দিক। কিন্তু প্রত্যেক দ্বন্দ্বের অতি অবশ্যই একটা মুখ্য দিক রয়েছে, মাও তাঁর এই যুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে দীর্ঘদিন যাবr মনে করে করেছেন যে “মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক কাজ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও টেকনিকাল কাজের নিশ্চয়তা…, “আত্মা”। অন্যদিকে, দক্ষতাকে বাদ দিতে যদি লালত্বকে জোর দেওয়া হয় তাহলে বিপরীতের ঐক্য ধ্বংস হবে এবং সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ অসম্ভব হবে।

১০.১৯৪৯ সালের মার্চে সিসিপি একটা গণ রাজনৈতিক পরামর্শক সভা শুরু করে যা তেইশটি পার্টি ও গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করতো। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে গণ রাজনৈতিক পরামর্শক সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি বসল এবং সাধারণ কর্মসূচী অনুমোদন করল নয়া সরকারের লক্ষ্যের একটা সাধারণ বিবৃতি এবং কেন্দ্রীয় গণপ্রজাতন্ত্রের গঠণকারী আইন যা শ্রমিক শ্রেণীকে প্রজাতন্ত্রের নেতা বানিয়েছে। ফলত, ১৯৫৪ সালে প্রথম আহুত জাতীয় গণ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চীনে আধিপত্যকারী দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় বিধান সভা হিসেবে।

১১.এক চীনা ডলার (ইয়েন)-এর মূল্য হচ্ছে মার্কিন $.৫৩ ডলার(এপ্রিল, ১৯৭২)। ইয়েনের মূল্য মার্কিন ডলার $.৫০-এ স্থিতিশীল রাখা হয়েছে কুড়ি বছরেরও বেশী সময় ধরে। মার্কিন ডলারের অবমূল্যায়নের ফলে উঠানামা ঘটছে।

১২.এখানে মাও সম্ভবত মহান অগ্রগামী উলম্ফণের সময়কালে নিজ অভিজ্ঞতার কথা বলছেন। উচাং-এ নভেম্বর ১৯৫৮তে পেইতাইহো সম্মেলনে মাও স্বীকার করেন যে আগষ্ট ১৯৫৮তে মহান উলম্ফণের উদ্যমের উচ্চতার সময়কালে কেবল প্রয়োজনকে দেখা কিন্তু সামর্থ্যকে না দেখার একই রকম ভুল তিনি করেছিলেন।

১৩.এই অতি গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্বসমূহের সূত্রায়ণ মাওয়ের এপ্রিল ১৯৫৬ ভাষণ “দশটি প্রধান সম্পর্ক” তে রয়েছে।

১৪.পারস্পরিক সহযোগিতা টিম ছিল যৌথ কৃষি সংগঠণের প্রথম দিককার একটা রূপ। চীনের কিয়দংশে প্রচলিত কৃষকদের ঋতুকালীন শ্রম-শেয়ার অনুশীলন ভিত্তিক এগুলো ১৯৫০ দশকের প্রথম দিকে প্রচুর পরিমাণে প্রযুক্ত হয়। ১৯৫৫ সালে চীনের কৃষক গৃহস্থালীর প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ পারস্পরিক সহযোগিতা টিমে ছিল।

  এই টিমগুলো ১৯৫৫-এ প্রতিস্থাপিত হয় প্রাথমিক কৃষি উত্পাদকদের সমবায় (এপিসি) কর্তৃক। প্রতি এপিসি কতিপয় পারস্পরিক সহযোগিতা টিম ধারণ করতঃ ভুমি ও অন্য পুঁজি দ্রব্যসামগ্রী ব্যক্তিগত মালিকানাধীন রয়ে গেল, কিন্তু অন্যান্য সম্পদগুলো সাধারণীকৃত হল এবং সমবায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বারা প্রস্তুত হয়ে বার্ষিক পরিকল্পনামাফিক ব্যবহৃত হত।

১৯৫৬র জুনের মধ্যে কৃষক গৃহস্থালির শতকরা ৬৩ ভাগ বিকশিত হয় বৃহত্তর অগ্রসর এপিসিতে যাতে ভুমি, শ্রম ও উত্পাদনের উপকরণ সাধারণীকৃত হয়েছিল।

১৫.চেং তিয়েন-পেই ছিলেন ১৯৫০ দশকের মাঝামাঝির একজন চলচ্চিত্র সমালোচক যিনি পরে ১৯৫৭র পার্টি বিরোধী সমাজতন্ত্র বিরোধী স্রোতে অংশ নেন।

১৬.“তিন বিরোধিতা”(সানফান) অভিযান ১৯৫১র আগষ্টে উত্তরাঞ্চলে শুরু হয় এবং জানুয়ারি ১৯৫২তে জাতীয়ভাবে শুরু হয় যা সরকারি কর্মচারিদের-যাদের অনেকে জাতীয়তাবাদী শাসনের রীতি তখনো বজায় রেখেছিল-দূর্নীতি অপচয় এবং আমলাতন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। “পাঁচ-বিরোধিতা”(উফান) অভিযান পরিচালিত হয়েছিল জাতীয় বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে। এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল ঘুষ, রাষ্ট্রিয় সম্পদ চুরি, কর ফাঁকি, রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক গোপনীয়তা চুরি এবং সরকারী চুক্তিসমূহ বাস্তবায়নে তহবিল তছরুপের বিলোপ।

১৭. এখানে মাও ফেব্র“য়ারি ১৯৫৭তে “জনগণের মধ্যকার দ্বন্দ্বসমূহের সঠিক সমাধান সম্পর্কে” তাঁর ভাষণের অল্প কিছুদিন পরে ১৯৫৭র বসন্তকালে “প্রস্ফুটিত হওয়া ও প্রতিযোগিতা”র সময়ে সিসিপির ডানপন্থী সমালোচনার কথা বলছেন।

১৮.জুলাই ১৯৫৯তে লুশান সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পেং তেহ-হুয়েই এর নেতৃত্বে পার্টির একটি গ্রুপ মহান অগ্রগামী উলম্ফণ ও তার নেতৃত্বকে পেটি বুর্জোয়া রোমান্টিকতাবাদ হিসেবে সমালোচনা করেন। তারা মত রাখেন যে এটা ভালর চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে একটা বৃহৎ সংগ্রামের পর পেঙ এবং অন্য ডানপন্থীরা পার্টি ও সরকারে তাদের দায়িত্বের অবস্থান থেকে অপসারিত হয়।

১৯.পাঠ্য পুস্তকে উপস্থাপিত বক্তব্য যে মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক ফ্রন্টে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সমাপ্ত হয়েছে ১৯৫৭তে, হচ্ছে ১৯৫৬র ৮ম পার্টি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের বক্তব্যের অনুরূপ। অর্থাৎ চীনে প্রধান দ্বন্দ্ব আর কোনভাবেই বুর্জোয়া ও সর্বহারাদের মধ্যে নয় বরং অগ্রসর উত্পাদন সম্পর্ক (মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসমূহ যেখানে বিপ্লব “সমাপ্ত” হয়েছে) ও উত্পাদনের পশ্চাদপদ শক্তিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব।

২০. মাও কর্তৃক উল্লেখিত শতকরা ৪৫ ভাগ সঞ্চয়ের হার হচ্ছে এক ব্যতিক্রমী উচ্চ যা একটি উদাহারণীয় অগ্রসর পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়।

মহান অগ্রগামী উলম্ফণের সময় মাও অব্যাহতভাবে সঞ্চয়ের মাত্রারিতিক্ত হারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন যা কৃষকদের উত্পাদনে উr সাহ হ্রাস করতে পারে। একটা সাধারণ নিয়ম হিসেবে কৃষির পরবর্তী ভাঙনের প্রতি তিনি পরামর্শ দেন: কর(৭ শতকরা); উত্পাদন ব্যয়(২০ শতকরা); সঞ্চয়(১৮ শতকরা); জনগণের প্রতি বন্টন(৫৫ শতকরা)

২১.মহান অগ্রগামী উলম্ফণের সময় প্রচারিত আট পয়েন্টের কৃষি সনদ পানি, সার, মৃত্তিকা(সংরক্ষণ), বীজ(বেছে নেওয়া), ঘনিষ্টতা(চারা রোপনে), নিরাপত্তা(চারার), প্রয়োগ ও (ক্ষেত্র) ব্যবস্থাপণার আহবাণ জানায়।

২২. এখানে মাও চীনের বর্তমান আট গ্রেড মজুরী পদ্ধতির পঞ্চম গ্রেডের কথা বলেছেন।

২৩.মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাডাররা প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রব্য পেয়েছেন, কৃত কাজ অনুযায়ী নয়। এসব দ্রব্য সরাসরি বন্টন করা হয়েছে ব্যবহারের জন্য বিনিময় মূল্য ভিত্তিক কোন বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়। এসব পরিস্থিতিতে প্রয়োজনকে সাহসের সাথে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

২৪.গণ লাইন হচ্ছে নেতৃতের পদ্ধতি যা সিসিপি অর্জনে সচেষ্ট [ছিল] (ব্য্রকেটের শব্দটি আমাদের-বাংলা অনুবাদক)]। মাও কর্তৃক এর ধ্র“পদী সূত্রায়ণ নিচে প্রদত্ত হলঃ[নিচের অংশটি বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পিকিং থেকে বাংলায় প্রকাশিত মাওসেতুঙ রচনাবলীর নির্বাচিত পাঠ ১৯৭৯, পৃঃ৩০৮ থেকে হুবুহু প্রদত্ত হল-বাংলা অনুবাদক]

“আমাদের পার্টির সমস্ত ব্যবহারিক কাজকর্মে সমস্ত নির্ভুল নেতৃত্ব অপরিহার্যভাবেই হচ্ছে-জনসাধারণ থেকে নেওয়া এবং জনসাধারণকে দেওয়া। এর অর্থ হচ্ছে, জনসাধারণের মতামত(ইতস্ততঃছড়ানো ও অব্যবস্থিত) সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা(গবেষণার মাধ্যমে সেগুলি কেন্দ্রীভূত ও সুব্যবস্থিত মতে রূপান্তরিত করা), তারপর, সেগুলি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে গিয়ে প্রচার ও ব্যাখ্যা করা যতক্ষণ পর্যন্ত না জনসাধারণ সেগুলি নিজেদের মত বলে গ্রহণ করেন, তাতে অটল থাকেন ও তা কাজে পরিণত করেন এবং এইভাবে জনসাধারণের কাজের ভেতর দিয়েই এই মত ভুল কি নির্ভূল তা যাচাই করে নেওয়া। পুনর্বার জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীভূত করা এবং জনসাধারণের কাছে গিয়ে তা অধ্যবসায় সহকারে কার্যকরী করা। আর সীমাহীন আবর্তে এই রকম চলবে বারবার; এর ফলে প্রতি বারই এই মত হয়ে ওঠে আরো বেশী নির্ভুল, আরো বেশি প্রাণবন্ত এবং আরো বেশী সমৃদ্ধ।”

নেতৃত্বের পদ্ধতি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন,

জুন ১, ১৯৪৩

২৫.মাও জুলাই-আগষ্ট ১৯৫৯-এ লুশান সম্মেলনের কথা পুনরায় বলছেন যাতে পেংতেহ-হুয়েই-এর সাথে সংগ্রাম পুনরায় সামনে আসে।

পরিশিষ্ট

১.চু ইউয়ান (কু ইউয়ান) ছিলেন খৃষ্ট পূর্ব ৩য় শতকের চৌ কালের একজন অভিযাত যিনি রাজকীয় বিচারালয় থেকে অপসারিত হওয়ারর পর লি ছাও লেখেন যা ছিল একজন সুবিবেচক শাসকের খোঁজে এক রূপক কল্পনাপূর্ণ অনুসন্ধান। তিনি পরে হতাশায় ডুবে মরেন।

২.“তিন রূপান্তর” নির্দেশ করছে কৃষি, ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প, এবং হস্তশিল্প উত্পাদনের রূপান্তর।

৩.চল্লিশ অনুচ্ছেদ কর্মসূচী মাও সমর্থিত কৃষি বিকাশের একটা পরিকল্পনা হাজির করে। চল্লিশ অনুচ্ছেদ কৃষি উত্পাদন, ও বিদেশী বাজারের চেয়ে দেশীয় কৃষি বাজারের ওপর নির্ভর করার কথা বলে চীনের শিল্পায়নকে অর্থায়ন করতে প্রয়োজনীয় আদি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দিতে। অনুচ্ছেদগুলো উত্পাদন সম্পর্কসমূহের পরিবর্তনের কথা বলে উত্পাদিক শক্তির অধিকতর বিকাশ এবং বর্ধিত সমবায়করণের একটা শর্ত হিসেবে কৃষকদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আয় বৃদ্ধি করতে পেরেছিল এই প্রক্রিয়ায়। যদিও চল্লিশ অনুচ্ছেদ রচিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে এবং ১৯৫৭র অধিকাংশ সময় জুড়ে, তারা মহান অগ্রগামী উলম্ফণের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিল।

৪.মাও যেমনটা ইঙ্গিত দেন নভেম্বর ১৯৫৮ থেকে ১৯৫৯ এর প্রথম দিক পর্যন্ত এক সারি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভাগুলিতে মহান উলম্ফণের ভুলত্রুটিগুলি সমালোচিত হয় এবং সেগুলোকে শুধরানোর প্রচেষ্টা হয়। যাহোক, এসব ভুলগুলিকে সমালোচনা ও শুধরানোর পর্ইে ১৯৫৯ এর জুলাইতে ডানপন্থীরা সেটা পরিচালনা করে মাও যাকে মহান উলম্ফণ ও তার সমর্থনকারী নেতৃত্বদের ওপর এক সুবিধাবাদী আক্রমণ হিসেবে দেখেছেন। ডানপন্থী সমালোচনার উপলব্ধি প্রতিফলিত হয়েছে লুশানে মাও যে দুটো ভাষণ দিয়েছেন “কেন ডানপন্থীরা এখন একটা আক্রমণ পরিচালনা করছে?” এবং  “মেশিনগান, মর্টার ও অন্যান্য জিনিস” তাতে।(আক্রমণের বৈরি চরিত্র প্রতিফলিত করে)।

৫.মা আনশান লৌহ ও ইস্পাত সংবিধান নির্দেশ করছে সোভিয়েত ম্যাগনিটোগোর্স্ক লৌহ ও ইস্পাত ওয়ার্কস-এর কর্তৃপক্ষীয় সংবিধানের প্রতি, যা চীনের সর্বাধিক বিকশিত লৌহ ও ইস্পাত ওয়ার্কস আনশান ওয়ার্কস গ্রহণ করেছিল ১৯৫০ দশকে। ১৯৫৮র আগ পর্যন্ত সংবিধান চ্যালেঞ্জবিহীন অবস্থায় ছিল। মহান উলম্ফণের সময়কালে এক ব্যক্তির কমান্ড এবং প্রযুক্তির কমান্ডের “মা-আন” নীতিমালাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি এক রিপোর্টে।

১৯৬০ এর মার্চের মধ্যে মাওয়ের অংশগ্রহণসহকারে একটা নতুন আনশান সংবিধান লেখা হয়েছিল। এটা পাঁচটি নীতি নিয়ে গঠিত হয়েছিল(১)রাজনীতি কমান্ডে;(২)পার্টি নেতৃত্বকে শক্তিশালিকরণ;(৩)প্রবল গণ আন্দোলন পরিচালনা করা;(৪)“দুই অংশগ্রহণ, এক সংস্কার, এবং তিন সংমিশ্রণ”(উত্পাদনশীল শ্রমে ক্যাডারদের অংশগ্রহণ, ব্যবস্থাপণায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ; অযৌক্তিক ও প্রাচীন নিয়মসমূহের সংস্কার, শ্রমিক, ক্যাডার ও টেকনিশিয়ানদের মধ্যে সহযোগিতা) এবং(৫)কৃৎকৌশলগত নবরূপায়ন(ওহহড়াধঃরড়হ)সহকারে পূর্ণগতিবেগে এগিয়ে যাওয়া। যদিও মাও নয়া আনশান সংবিধান ইস্যু, প্রকাশ ও প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছিলেন মার্চ ১৯৬০-এ, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আগে এটা বৃহদাকারে প্রচারিত হয়নি।

৬.এক ক্যাটি হচ্ছে ১.১ পাউন্ড।

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক সমস্যাবলী সম্পর্কে

১.১৯৬৭ সংস্করণে এই দলিলের তারিখ হচ্ছে ১৯৫৯। ১৯৬৯ সংস্করণে তারিখ হচ্ছে ১৯৫৮। নভেম্বর ১৯৫৯-এ কোন চ্যাং চৌ সম্মেলন হয়নি, একটা হয়েছিল নভেম্বর ১৯৫৮তে। এ দলিল নিশ্চিতভাবে আগের সময়ের তারিখে হবে।

২.১৯৫৩তে প্রতিষ্ঠিত মজুরি পদ্ধতি আধিপত্যকারী স্বল্পমেয়াদী স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত বৈষয়িক উrসাহ প্রদানের ওপর জোর দেয়। এটা একটা আট গ্রেডের মজুরী পয়েন্ট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত করে প্রতিমাসে ১৩৯ থেক ৩৯০ মজুরী পয়েন্ট সীমার মধ্যে। বিভিন্ন অঞ্চলে একই রকম কাজ সমান সংখ্যক কাজ পয়েন্ট পাবে। কিন্তু কাজ পয়েন্টের মূল্য আঞ্চলিক জীবনযাত্রার মানের সাথে ভিন্ন ভিন্ন হয়েছিল। ১৯৫৬র মধ্যে মজুরী পয়েন্ট পদ্ধতি একটা মজুরী পদ্ধতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় কিন্তু আট গ্রেড কাঠামো বজায় রাখা হয়।

৩.গবেষণা ক্ষেত্রগুলো নয়া ও অগ্রসর টেকনিক বিকাশে চেষ্টা চালিয়ে যেমন ঘনিষ্ট চারা রোপন, অগ্রিম চারা রোপন, গভীর চাষ প্রভৃতি। উত্পাদ বৃদ্ধিতে যদি সফল হয় টেকনিকগুলো সমগ্র চীনব্যাপী জনপ্রিয় হবে। উত্পাদন বৃদ্ধি করে এবং এভাবে সমগ্র মজুরী তহবিল বৃদ্ধি করে, গবেষণা ক্ষেত্র ধারণা গ্রেডযুক্ত মজুরী পদ্ধতির মতাদর্শিক ভিত্তিকে অবমূল্যায়ণে সহযোগিতা করতে পারে এটা শিক্ষা দিয়ে যে বিশেষজ্ঞরা কৃষকদের থেকে শিখতে পারে।

স্তালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর সমালোচনা

১.মাও এখানে ১৯৫৪র শেষে খাদ্যশস্যের মাত্রাতিরিক্ত ক্রয়ের কথা বলছেন এবং ১৯৫৫র বসন্তে এর ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ শস্য ঘাটতির কথা। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্রয়ের কোটা ৭ বিলিয়ন ক্যাটিতে হ্রাস পায় এবং গ্রামাঞ্চলে উদ্বেগ কমে যায়।

এঘটনাগুলো, যাহোক, ১৯৫৫র বসন্তে ঘটেছিল, ঐবছরের শেষে নয়, যা চীনের গ্রামাঞ্চলে যৌথকরণের অব্যাহত জোয়ারের দ্বারা বৈশিষ্টমণ্ডিত হয়েছিল।

২.ছিন শি হুয়াঙ তি (কিন শি হুয়াঙছি) ছিলেন প্রথম সম্রাট, ছিন রাজ্যের রাজা ছিলেন খৃষ্টপূর্ব ২৩০ থেকে ২২১ সাল পর্যন্ত, প্রতিবেশী রাজ্যগুলো জয় করেন এবং চীনকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তার শাসনের অধীনে একটা সামন্তীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ওৎন, পরিমাপ ও মুদ্রার মান ঠিক করা হয়েছিল। বৈধতাবাদী দর্শন ছিল ছিনের দার্শনিক ভিত্তি। সকল অ-উপযোগবাদী “নাশকতামূলক” সাহিত্য ২১৩ খৃষ্ট পূর্বাব্দে পুড়িয়ে ফেলার জন্য প্রথম সম্রাটকে স্মরন করা হয়।

৩.সাও সাও ছিলেন পরবর্তীকালের হান রাজবংশ (২৫-২২০ খৃষ্টাব্দ)-এর একজন বিখ্যাত জেনারেল ও আচার্য; সেসব যুদ্ধে তাrপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যা শেষপর্যন্ত হানদের উrখাত করেছিল এবং তিন রাজ্য নামে বিভক্ত সাম্রাজ্যের যুগে চালিত করেছিল।