অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং ৫।। এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০৪/৩০-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধঃ প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম সম্পর্কে।

অনুবাদ সাহিত্য পত্র

 

অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং ৫

পূবাসপা এমইউজির রাজনৈতিক অনুবাদ সাহিত্য পত্র,

এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০৪/৩০-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধঃ

প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম সম্পর্কে।

পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক ফেব্রুয়ারী ১, ২০০৫ হাতে লেখা প্রকাশিত ।

পূবাসপা এমইউজির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংস্থা কর্তৃক ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০০৬ কম্পিউটার মুদ্রন

প্রকাশিত।

সম্পাদকীয়

এ ওয়ার্ল্ড টু উইন চলতি সংখ্যা (২০০৪/৩০)য় প্রকৃত “কমিউনিস্ট শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম সম্পর্কে” শীর্ষক যে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে তার গুরুত্ব বিবেচনায় অনুবাদ সাহিত্য পত্র সংখ্যা নং-৫ এ আমরা এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছি। প্রবন্ধটির সাথে মূল জার্নালে দুটো ছবি রয়েছে, যার একটিতে দেখা যায়, ১৯৬৬ সালে বিপ্লবী তরুণেরা মাওয়ের ব্যানার হাতে তুলে নিয়েছে ও রেডগার্ড গঠণ করেছে, অপরটিতে বেলজিয়ামের ওয়ার্কার্স পার্টি (পিটিবি) র “চীনা স্টাইলের সমাজতন্ত্র” শীর্ষক প্রকাশনার প্রচ্ছদ রয়েছে যাতে মাওয়ের ঐতিহ্য ও বিশ বছরের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরকে পদদলিত করেছে যে চীনের সংশোধনবাদী শাসকবর্গ তার প্রধান প্রধান কর্মসূচীসমূহের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা হয়েছে। বইটি যৌথভাবে রচনা করেছে চীনে প্রাক্তন পূর্ব জার্মান রাষ্ট্রদূত এবং পিটিবির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান। সুউচ্চ গুরুত্বসম্পন্ন কমিউনিস্টদের ঐক্য প্রশ্নটি শুধুমাত্র ভারতের প্রেক্ষাপটে যথাঃ পি ডব্লিউ ও এমসিসির ঐক্য প্রভৃতিকে মাথায় রেখে লেখা হয়েছে তা মনে হয়না। এটা একটা আন্তর্জাতিক প্রশ্ন। আমাদের দেশেও এটা জরুরী প্রশ্ন। দ্বান্দ্বিকতাকে প্রয়োগ করে দুই লাইনের সংগ্রাম চালিয়ে ও অগ্রসরতাকে ভিত্তি করে এই ঐক্য হতে হবে। আন্তর্জাতিকতাবাদ ও রিম (বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন) কে বিসর্জন দিয়ে হামভি কাঁঠাল খায়া, তুম ভি কাঁঠাল খায়া-ধরণের ঐক্য সমর্থন যোগ্য নয়। মাওবাদ-এর প্রতি স্রেফ আনুষ্ঠানিক সমর্থন যথেষ্ঠ নয়, কারণ তা কপটও হতে পারে। অহিংসতা বা সহিংসতা, বিমূর্ততা বা প্রয়োগবাদ-এর কোনটা থেকে যাত্রা করেই প্রকৃত মাওবাদে পোঁছা যাবেনা। সেখানে যেতে হলে ওগুলো বর্জন করতে হবে কেননা সংশোধনবাদী বিবিধ লাইন-উপাদানসমূহের সাথে রাপচার (বিচ্ছেদ) ঘটিয়েই মার্কসবাদের জন্ম বিকাশ ও পরিণতি। প্রবন্ধটি থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। যেমন, একটি পার্টি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক লাইন আর নিজ দেশে আরেক লাইন প্রয়োগ করতে পারেনা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভুল থাকলে অবশ্যই তা স্বদেশে তার লাইনে প্রতিফলিত হবে। সংশ্লেষণ মানে দুয়ে মিলে এক হওয়া নয় বরং এক নিজেকে দুইয়ে বিভক্তকরণের প্রক্রিয়ায় সংগ্রামরত দুই বিপরীত দিকের একটি অপরটিকে পরাজিত, অপসারণ ও শেষ পর্যন্ত গিলে ফেলে। প্রবন্ধটিতে সংশোধনবাদ-বিরোধী  লড়াইয়ের নেতা মার্কস-লেনিন-মাও-চারু মজুমদার-সিরাজ সিকদার-র্ইরাহীম কাপাক্কায়া-জোসে মারিয়া সিসান-গনসালো-বব এভাকিয়ান-প্রচণ্ড প্রমুখদের বীরত্বব্যাঞ্জক ভূমিকা এবং এই নীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছে যে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত। যারা লাইনের চেয়ে অস্থায়ী সামর্থ্যকে বেশী গুরুত্ব দেয় তারা হচ্ছে প্রয়োগবাদী। কিন্তু মার্কসবাদতো প্রয়োগবাদের বিরোধী। সিরাজ সিকদার ও তাঁর অনুসারীরা ‘ক্ষুদ্র’ ছিলেন, কীভাবে তাঁরা শত সহস্র ক্যাডার আর লক্ষ লক্ষ জনগণকে সমাবেশিত করলেন? সাংস্কৃতিক বিপ্লবকালে মাও ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু হয়ে কীভাবে কোটি কোটি জনগণকে জাগিয়ে তুললেন। এটা হচ্ছে সংগ্রামের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত লাইনের প্রশ্ন। সেই লাইনকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আমরা প্রবন্ধটির পুংখানুপুংখ অধ্যয়ন কামনা করি।

১লা ফেব্রুয়ারী, ২০০৫

প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম সম্পর্কে

Globecha_web

 আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমগ্র ইতিহাস জুড়ে ঐক্য প্রশ্নটি সর্বশ্রেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত শত্রুদের বিরুদ্ধে এক অগ্রসেনাদলের অধীনে শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িত জনগনের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিরন্তর পুনজোরালোভাবে নিজেকে তুলে ধরছে। জনগন বিপ্লবীদের ঐক্য হোক এটা চায়, আর প্রায়শই তাদের এটা বুঝতে কষ্ট হয় কেন তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। কিন্তু ঐক্যের আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয়তা আর জনগনের আকাঙ্খা সত্ত্বেও ঐক্য অর্জন করাটা ছিল সর্বদাই কঠিন। মার্কস ও এঙ্গেলসের সময় থেকে আজ অবধি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন অব্যাহত প্রচ- সংগ্রাম দ্বারা চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। বস্তুত এ ধরনের সংগ্রাম চালানোর মাধ্যমেই সর্বহারা শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক মতাদর্শ জন্ম নিতে সক্ষম হয়েছে, শ্রমিক শ্রেণী ও নিপীড়িতদের নামে কথা বলতো এমন বহু অপরাপর ধারা থেকে নিজেকে পৃথক সত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, আর এভাবে তা মেহনতী জনগনের ব্যাপক অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম একটি অগ্রসেনানী পার্টির ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আজকে যখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আগুয়ান কমিউনিস্ট শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রশ্নটি একটি জরুরী প্রশ্ন হিসেবে পুনরায় উদ্ভূত হচ্ছে তখন ঐক্য ও সংগ্রামের মধ্যেকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক, আর কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঐক্য কীভাবে সাধন করা যায় তার দৃঢ় আত্মস্থকরণ আমাদের অতি অবশ্যই থাকতে হবে। আমরা যদি খোদ মাওবাদী আন্দোলনের উদ্ভবসমুহের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব সেই জিনিসটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এর জন্ম হয়েছিল-সেকালের কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যকার যা কিছু পঁচা, যাকে আমরা সংশোধনবাদ হিসেবে জানি, যার মধ্যে “কমিউনিস্ট” অথবা “মার্কসবাদী-লেনিনবাদী” অথবা এমনকি “আন্তর্জাতিকতাবাদ” শব্দটি রয়েছে কিন্তু  বর্জিত হয়েছে তাদেও অপরিহার্য বিপ্লবী সারঃ শোষক শ্রেণীসমূহের একনায়কত্বকে উrখাত করার লড়াই, আর তদস্থলে শ্রেণী সমাজ ধ্বংসের সার্বজনীন বিশ্বজোড়া দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের অংশ হিসেবে সর্বহার শ্রেনী ও ব্যাপক জনগনের শাসন (একনায়কত্ব) প্রতিষ্ঠা করা। প্রাক্তন শ্রমিকদের রাষ্ট্র সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসমূহের ইউনিয়ন-এর ক্ষমতা দখলকারী, পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠাকারী সোভিয়েত ইউনিয়নের সংশোধনবাদী নেতাদেও বিরুদ্ধে মাওয়ের নিজের চালানো সংগ্রামই তার ভিত্তি স্থাপন করে যা মাওবাদী আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। খোদ চীনেও সোভিয়েত আধুনিক সংশোধনবাদেও বিরুদ্ধে মাওয়ের সংগ্রাম তার মতাদর্শিক খুঁটিকে প্রোথিতকরণে জোরদার করেছিল যা আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর জন্য তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান সেই মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব (জিপিসিআর) পরিচালনা করা এবং সর্বহারা একনায়কত্বধীনে বিপ্লব অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত তার থিসিস। এই নিবন্ধে আমরা কেবল জিপিসিআর-এর বিস্ময়কর সাফল্যের দিকে নির্দেশ করবো-কোটি কোটি শ্রমিক কৃষক ও বিপ্লবী বুদ্ধিজীবির অভূতপূর্ব উত্থান রাষ্ট্রের সেই অংশগুলো পুনরুদ্ধারে লড়াই করতে, যেগুলো কুক্ষিগত করেছিল সংশোধনবাদীরা যারা চীনকে পুঁজিবাদের পথে টেনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। জিপিসিআর বিশ্বজুড়ে তরঙ্গমালার মত আঘাত হানে, যেমনটা এর আগে অক্টোবর বিপ্লব করেছিল। একের পর এক দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবী উপাদানসমূহ মাও ও জিপিসিআর-এর ব্যানারকে ঘিওে সমাবেশিত হন। সর্বত্র এই নব উদীয়মান শক্তিসমূহ সংশোধনবাদীদের প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হন এবং তাদেরকে কঠিন যুদ্ধ চালাতে হয়েছিল। কমিউনিস্ট আন্দোলনের মুষ্টিমেয় প্রবীন অভিজ্ঞসমেত তাঁরা ছিলেন প্রধানত তরুণ বিপ্লবী যারা সংশোধনবাদী পাণ্ডাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। চীনের প্রচণ্ড বিপ্লবী উত্থানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া উদীয়মান যুদ্ধের আবেগ দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়ে তাঁরা সংগ্রাম করতে সাহসী হন সেই আধুনিক সংশোধনবাদীদের প্রতিষ্ঠিত পাণ্ডিত্যের বিরুদ্ধে যারা মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ছদ্মাবরণে নিজেদের ঢেকেছিল, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার সাথে আপোষ ও দালালী অনুশীলন করেছিল। আধুনিক সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে বিরাট বিশ্বজোড়া সংগ্রাম প্রতিটি দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছিল। নিপীড়িত দেশগুলিতে প্রায়শই তা ক্ষমতা দখলের পথের প্রশ্নে কেন্দ্রীভূত হয়েছিলঃ চীন কর্তৃক আলোকিত মূল পথ গ্রহণ করা হবে কি হবেনা; যে পথে শহরে শত্রুর দুর্গগুলিকে গ্রামাঞ্চল থেকে ঘেরাও করা হয়। এই দেশগুলির বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় মাওয়ের শিক্ষাকে প্রয়োগ করাকে আধুনিক সংশোধনবাদীরা উন্মত্তভাবে বিরোধিতা করে। কিন্তু নব উদীয়মান বিপ্লবী শক্তিসমূহ সংশোধনবাদীদেরকে অনুশীলন ও তত্ত্বগত বিতর্ক উভয়েেত্র মোকাবেলা করে যা “ব্যবহারিক আন্দোলন” যে জীবন মরন সমস্যার সম্মুখীন ছিল তাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাওয়ের লাইনকে প্রয়োগে মাওবাদী আন্দোলন যে নবজাতকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তাতে সংশোধনবাদী ও সুবিধাবাদীরা যে হিস্টিরিয়গ্রস্থ চেঁচামেচি করেছিল তার প্রতিধ্বনি আজো আমরা শুনতে পাই। ভারতে চারু মজুমদার নকশালবাড়ী বিদ্রোহ পরিচালনা করেন যা ন্যায্যতই সেদেশের বিপ্লবী জনগনের ওপর তার তড়িৎ সঞ্চারক প্রভাবের কারণে “বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ” আখ্যা পায়। এটি সশস্ত্র সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয় আর গোটা রাজনৈতিক প্রেক্ষ্রাপটকে রূপান্তরিত করে। তুরস্কে র্ইরাহীম কাপাক্কায়া সেদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে সংশোধনবাদী ও সুবিধাবাদীদের ভুলের নির্মম সমালোচনাই শুধু বিকশিত করেননি, বরং সাহসের সাথে প্রথম সশস্ত্র স্কোয়াডসমূহ গঠন করেন যা সংশোধনবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ভয়, আর লক্ষকোটি নিপীড়িতদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল। বাংলাদেশে সিরাজ সিকদার মাওবাদীদের একটি দলবদ্ধকরণকে দ্বন্দ্বসমূহের ঘূর্ণাবর্তে ঝাপিয়ে পড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যখন প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জাতীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং তার ফলশ্রুতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বাংলাদেশে নবগঠিত মাওবাদী পার্টি পূবাসপা দ্রুত প্রস্ফুটিত হল আর সেদেশের আলোচ্যসুচিতে সর্বহারাশ্রেণীর রাজনৈতিক কর্মসূচী-দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ ও নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে স্থাপন করে। ফিলিপাইনে জোসে মারিয়া সিসান ফিলিপাইনের কমিউনিস্ট পার্টি ও নয়া গনবাহিনী গঠণে নেতৃত্ব দেন যা আজো পর্যন্ত ফিলিপাইনে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইরত। এসকল ক্ষেত্রে ও সেইসঙ্গে অন্যসকল ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে কেবল সংগ্রামের মাধ্যমেই বিরাট ঐক্য অর্জিত হয়েছে। ক্ষমতার জন্য রাজনৈতিক সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত মতাদর্শিক ক্ষেত্রে সংগ্রামের মাধ্যমেই কেবল দ্রুতগতিতে হাজার হাজার বিপ্লবীদের এগিয়ে নিতে ও ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে আর কোটি কোটি জনগনের সমর্থনকে জয় করতে পেরেছে সেই অল্প সংখ্যক লোকেরা, যাদেরকে “বিদ্যান” সংশোধনবাদীরা স্রেফ “গোষ্ঠী” বলে নিন্দা জানিয়েছিল দ্রুত। সেইসাথে আরো বেশ কিছু দেশে আজকের মাওবাদী আন্দোলনের ভিত জড়িত ছিল তrকালীন সময়ে শক্তিসমূহ কর্তৃক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে গৃহীত অগ্রসর অবস্থানসমূহের সাথে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন য্ক্তুরাষ্ট্রের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বব এভাকিয়ান সেদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের একটি অংশকে একটি মাওবাদী মতাবস্থানে জয় করতে নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পেরুতে অ্যাবিমেল গুজম্যান (চেয়ারম্যান গনজালো) সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে এক ঝাঁক সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন যা পরে একটি সঠিক লাইন ও নেতৃত্বের অধীনে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির পুনর্গঠনে চালিত করেছে। ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী পার্টিসমূহ গঠিত হয়েছিল আর আন্দোলনের সেই টালমাটাল সময়ে বেড়ে উঠেছিল দ্রুত যা ফ্রান্সের মে ১৯৬৮র ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা দ্বারা চিহ্নিত।

ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য

 মাওবাদী আন্দোলনের গঠণ হচ্ছে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের নিয়মসমূহের বিশদকরন। মাওসেতুঙ আমাদেও দিশা দেন যে দ্বন্দ্বের নিয়ম বিপরীতের ঐক্য ও সংগ্রামই প্রতিটি প্রক্রিয়াকে সামনে ঠেলে নিয়ে যায় তা প্রকৃতি, সমাজ অথবা জনগনের চিন্তা যাই হোক না কেন। আন্তর্জাতিকভাবে ও প্রতিটি দেশে উভয়তঃ কমিউনিস্ট আন্দোলন এর কোন ব্যাতিক্রম নয়। কমিউনিস্ট আন্দোলন নিজেই হচ্ছে একটি   বিপরীতসমূহের ঐক্য-একদিকে সর্বহারা শ্রেণী, তার ক্ষমতা দখল ও কমিউনিজমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকে প্রতিনিধিত্বকারী চেতনা ও শক্তিসমূহ, আর অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ ও আপোষ আর কমিউনিস্ট বিশ্বের লক্ষ্যকে বর্জন করে যে চেতনাসমূহ তার মধ্যকার এক স্থায়ী যুদ্ধ ক্ষেত্র। একটি নির্দিষ্ট দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে শ্রেণীসংগ্রামের পরিস্থিতি অনুসারে বিপরীতসমূহের সংগ্রাম বিভিন্ন তরঙ্গের মধ্য দিয়ে যায় আর তার রয়েছে বিভিন্ন পর্ব। পরিমানগত দৃষ্টিভঙ্গিতে, অধিকাংশ সময় এই সংগ্রাম একটি ঐক্যবদ্ধ পার্টি সংগঠনে আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে ঘটে, সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে, বিপ্লবী অনুশীলনের সারসংকলন ও অন্যান্য উপায়ে, যাতে সঠিক ও ভুল চিন্তার মধ্যে লড়াই পরিচালিত হয় এবং যারা ভুল করেছিল তারা সমেত কম্যুনিস্টরা একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। গুণগত দৃষ্টিকোন থেকে, যাহোক, মাওবাদীরা স্বীকৃতি দেয় যে, তীব্র দুই লাইনের সংগ্রামের অপোকৃত বিরল সময়ে “স্বাভাবিক সময়” এর অধিকতর ক্রমিক পরিবর্তনের তুলনায় বিরাট উলম্ফণ ও রাপচার (বিচ্ছেদ) সংঘটিত হয়, কমিউনিস্ট আন্দোলনের খোদ লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গীসমূহ নিজেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে লেনিনের সংগ্রাম অথবা সোভিয়েত আধুনিক সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে মাওয়ের লড়াইয়ের মতো সময়গুলোতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সর্বোচ্চ জয় ও সর্বোচ্চ হারানোর অবস্থা ছিল। এ ধরণের সংগ্রামসমূহ যে আন্তর্জাতিকভাবে পর্যায়ক্রমে আবিভূত হবে, আর নির্দিষ্ট দেশে তা একটা নিয়ম যাকে এড়ানো যায়না। আর যখন এ ধরনের সংগ্রামসমূহ একটি সঠিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের স্বীকৃতি ও তার জন্য লড়াই করতে কমিউনিস্ট নেতা ও ক্যাডারদের মতাকে উৎসারিত করে তা ভবিষ্যত কমিউনিস্ট আন্দোলনের ওপর বহু বছর ধরে এমনকি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত নির্ধারক প্রভাব ফেলবে। কমিউনিস্ট আন্দোলনে ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য-এর প্রক্রিয়া বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ও তার দ্বারা শর্তযুক্ত। শ্রেণীসংগ্রাম নিজেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের স্তর ও শর্তসমূহ সৃষ্টি করে। উদাহারণস্বরূপ, লেনিন ও মাও কর্তৃক পরিচালিত লড়াইসমূহ সংগ্রাম ছিল এজন্য নয় যে সেগুলো তাদের মনমতো হয়েছিল বরং একদিকে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়া ও অন্যদিকে সর্বহারাশ্রেণী ও নিপীড়িতদের মধ্যে বিশ্বে মূর্ত রূপ নিচ্ছিল যে লড়াইসমূহ তার তাত্ত্বিক ও মতাদর্শিক প্রতিফলন। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে লেনিন যে সংগ্রাম পরিচালনা করেন তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিস্ফোরক আবির্ভাব দ্বারা জরুরী হয়ে দাড়িয়েছিল যা বেশ কিছু দেশের কর্মসূচীতে বুর্জোয়াদের উrখাতের প্রশ্নকে আশু কর্তব্য হিসেবে স্থাপন করেছিল। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সংশোধনবাদীরা ছিল শ্রমিক শ্রেণীর কাতারে বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি শ্রমিকদের সেই অংশ ( “শ্রমিক অভিজাত”) কে ভিত্তি করে যারা তাদের “নিজ” শাসক শ্রেণীকে তার সাম্রাজ্যবাদী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থনের বিনিময়ে সামান্য সুবিধা ভোগ করত। অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হত্যাযজ্ঞের বিভrসতায় শ্রমিক জনগণের বিরাট অংশ  ছিল আতঙ্কিত, তারা এক বিপ্লবী সমাধান চাইছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ দেশে শ্রমিকদের ব্যাপক জনগণের শ্রেণীস্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করতে, তাদের আস্থা অর্জনে এবং বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম কোন নেতৃত্ব ছিলনা। অধিকাংশ দেশে বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিপ্লবীদের নেতা ও চক্রসমুহ ছিল, এবং জার্মানীতে কার্ল লিবনেখ্ট ও রোজা লুক্সেমবার্গ বীরত্বব্যাঞ্জক স্পার্টাকাস বিদ্রোহে  নেতৃত্ব দিয়ে জীবন দান করেন, আর শ্রেণীসচেতন আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণী দ্বারা আজো পর্যন্ত সম্মানিত আছেন। তাসত্ত্বেও লক্ষ্য করা আবশ্যক যে জার রাশিয়ার বাইরে সাম্রাজ্যবাদের দূর্গকে আঘাত হানায় লক্ষকোটি জনগণকে নেতৃত্ব দিতে বিপ্লবী শক্তিসমূহ মতাদর্শিকভাবে অস্পষ্ট এবং সাংগঠনিকভাবে দূর্বল ছিল। লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া কোন অক্টোবর বিপ্লব হতোনা এবং সেসময় কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকও গঠিত হতোনা। একইভাবে চীনের শ্রেণীসংগ্রামের ঘটনাবলীরও বিশ্ব সর্বহারা আন্দোলনের ওপর গভীর প্রভাব পড়েছে। ১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর তাঁর লাইন যখন উrখাত হল, চীনের রঙ পরিবর্তন হল, আর শতকোটি শ্রমিক কৃষক পুঁজিবাদী নরকে পুননিক্ষিপ্ত হল যখন মানব ইতিহাসে বিরল উন্মত্ত চৌর্যবৃত্তি, দূর্নীতি, বিতাড়ন ও শৃংখলিতকরণের মাধ্যমে এক নতুন বুর্জোয়া নিজেকে সমৃদ্ধ করেছিল। চীন বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের এক দূর্গ থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার বিশ্বব্যাবস্থার আরেক যোগাযোগে রূপান্তরিত হয়েছিল। তার প্রভাব আজকেও বেদনার সাথে অনুভূত হয়। যদিও মাও ও চীনের বিপ্লবীরা নিরন্তর এই সম্ভাবনার প্রতি সতর্ক করেছিলেন যে সংশোধনবাদীরা চীন দখল করবে এবং বিশ্বব্যাপী বিপ্লবীদের প্রতি চ্যালেঞ্জের প্রতি আন্তর্জাতিক মাওবাদী আন্দোলন খুবই অসমভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। বিরাট সংখ্যক পার্টি ও সংগঠন আসলে চীনের নতুন নেতাদের সমর্থন করেছিল; এবং আসলে যারা মাওয়ের ঘনিষ্টতম সমর্থক ছিল তাদের প্রতি তথাকথিত চার কুচক্রী অতিবাম অভিযোগকেও। অন্যরা চীনে সংশোধনবাদী ক্যুর পর মাওয়ের লাইনের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা হারালো এবং আলবেনিয়ার লেবার পার্টির নেতা আনোয়ার হোজা কর্তৃক মাওসেতুঙ চিন্তাধারা ( মাওবাদকে তখন যেভাবে বলা হতো ) র ওপর আক্রমণকে ব্যবহার করেছিল সর্বহারা বিজ্ঞানে মাওয়ের মূল্যবান বিকাশকে বর্জন করার সংকেত হিসেবে। হোজা ও তার অনুসারীরা অতীত কমিউনিস্ট আন্দোলনের ‘ক্লান্ত’ পুরোনো ধারণাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালায় যা মাওবাদীরা বহু পূর্বে বর্জন করেছিল (উদাহারনস্বরূপ, নিপীড়িত দেশগুলিতে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের প্রযোজ্যতা অস্বীকার, মাও কর্তৃক স্তালিনের অধিবিদ্যার সমালোচনাকে অস্বীকার প্রভৃতি)। আর অতঃপর আরো অনেকে, যারা ছিল পূর্বতন মাওবাদী আন্দোলনের অধিকাংশ, নিজেদের নেতাবিহীন ও মনোবলভাঙা আবিস্কার করেন; ভবিষ্যত বিশ্ব বিপ্লবে আস্থার অভাব সহকারে এ ধরণের বিধ্বংসী পরাজয়ের মুখে বিপ্লবী সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে অক্ষম। সৌভাগ্যশত, প্রাক্তন মাওবাদী আন্দোলনের অপোকৃত সংখ্যালঘু অংশ সবলে উঠে দাঁড়ালো মাও ও চীনের বিপ্লবী সদর দপ্তরের শিক্ষাকে তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৮৪ সালে এই শক্তিগুলির অনেকে বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী  আন্দোলন (রিম) গঠণে এগিয়ে যায়। রিম সাহসের সাথে নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাওবাদী শক্তিসমূহের ভ্রুণকেন্দ্র ঘোষণা করে, আর এগিয়ে যাওয়ার ও একটি নতুন ধরণের কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের জন্য লড়াই করার নিজ আকাঙ্খা ব্যাক্ত করে। তাও প্রথম দিকে বিপ্লবী আন্দোলনের অনেকের আক্রমণ ও উপহাসের মুখে পড়েছিল, আর এড়িয়েছিল অনেকে যারা বিবিধ শক্তিসমূহের আকার অথবা সামর্থ্যরে চেয়ে রাজনৈতিক লাইনকে কম গুরুত্বপুর্ণ মনে করেছিলেন। এই একই ধরণের প্রয়োগবাদঃ রাজনৈতিক মতকে শক্তির দ্বারা বিচার করা-যা তারা যে কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে রপ্ত করেছে, কিছু মাওবাদীদের চীনের সংশোধনবাদীদের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হতে অথবা এমনকি তাদের সমর্থনে চালিত করেছে; যে চীন এক শক্তিশালী দেশ হিসেবে বজায় ছিল যদিও মাঝে মধ্যে কথায় ছাড়া আদৌ আর সমাজতান্ত্রিক ছিলনা। কিন্তু রিম ও পার্টিসমূহ অধ্যবসায় সহকারে লেগে থাকে আর সেসময়ে শ্রেণীসংগ্রামে কিছু চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করে যখন বিশ্ব প্রতিক্রিয়া কমিউনিজমের ওপর তার “চূড়ান্ত বিজয়” ঘোষণা করছিল। রিমের এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৮০ সালে গণযুদ্ধ সূচনা করে দশকব্যাপী সাবলীল বিকাশ অর্জন করে সেই মাত্রা পর্যন্ত যাতে সাম্রাজ্যবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা এক মাওবাদী বিজয়ের আতঙ্কে প্রকাশ্যে তাদের আতঙ্ক ব্যক্ত করে। ১৯৯২ সালে চেয়ারম্যান গনসালোর গ্রেফতার ও তার কিছু পরেই পার্টিতে শান্তি আলোচনার পরে যুদ্ধকে বর্জন করার এক ডান সুবিধাবাদী লাইনের আবির্ভাব ঘটলে পেরুর গণযুদ্ধ এক “পথের বাঁক”-এ পতিত হয়। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির গণযুদ্ধের পথে লেগে থাকা বিশ্বব্যাপী মাওবাদীদের অব্যাহত প্রেরণা দেয়, আর রিম কর্তৃক কেন্দ্রীভূত মতাদর্শ ও রাজনীতির সাফল্যাংক অর্জনে সহায়তা করে।

মতাদর্শগত ক্ষেত্রে রিম ১৯৯৩ সালে সর্বহারা মতাদর্শকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ (মালেমা) হিসেবে উপলব্ধিকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হয়। অনেকে আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনে আরেকটি বিভক্তি সৃষ্টির জন্য রিমকে আক্রমণ করে। অন্যরা এই বিকাশের গুরুত্বকে খাঁটো করার চেষ্টা চালায় এই বলে যে এটা স্রেফ শব্দের পরিবর্তন, রাজনৈতিক সারে নয়। তারা তার প্রফিলন ঘটায় এ জাতীয় সূত্রায়ণ ব্যবহার করে ‘মাওসেতুঙ চিন্তাধারা অথবা মাওবাদ” যাতে দুটি সূত্রকে পারস্পরিক প্রতিস্থাপনীয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বস্তুতঃ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ জিন্দাবাদ দলিলে বিবৃত রিম কর্তৃক মাওবাদ গ্রহণ আমাদের মতাদর্শের উচ্চতর ও অধিকতর ঐক্যবদ্ধ উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করে-আন্তর্জাতিক আন্দোলন তার আগ পর্যন্ত যতটুকু অর্জন করেছে তার চেয়ে। এই উচ্চতর উপলব্ধির অনুশীলনে প্রকাশ ঘটেছে যখন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) [সিপিএন(এম)]-এর কমরেডগণ ১৯৯৬ সালে গণযুদ্ধ পরিচালনা করে যা এখন সারা দেশকে বিপ্লবের আলোয় আলোকিত করেছে-একটা পার্টি যা আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলন ও রিমের বিকাশসমূহের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কে গঠিত হয়েছে। গণযুদ্ধ শুরু করার লক্ষ্যে  সিপিএন(এম)কে এমবিসিং-এর সাথে হিসেব চুকোনোর প্রয়োজন ছিল যে কিনা নেপালে মাওবাদী আন্দোলনের এক দীর্ঘ সময়কালের নেতা ছিল। সিং রিমে মাওবাদ গ্রহণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন এবং সংশোধনবাদী  মতাবস্থানের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন যে প্রথম প্রতিবেশী ভারতে বিপ্লব সফল না হলে নেপালে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যারা পরে সিপিএন(এম) গঠণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের সাথে এম বি সিং-এর সাংগঠনিক বিভক্তি ১৯৮৬ সাল থেকে যখন তrকালীন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মশাল) দুটি কেন্দ্রে বিভক্ত হয় (একটিকে বলা হয় “কেন্দ্রীয় কমিটি” এবং অন্যটি “কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি”)। কেডার সদস্যগণ এটা অনুভব করেছিলেন যে সিং-এর নেতৃত্বাধীনে কোন বিপ্লব হতে পারেনা। তাসত্ত্বেও সেই প্রাথমিক পর্যায়কালে সিং- এর প্রতি সামগ্রিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক সমালোচনা তখনো বিকশিত হয়নি। তাই সেসময়ে মশাল পার্টির বিভক্তি একটি পূর্ণাঙ্গ দুই লাইনের সংগ্রামে বিকশিত হয়নি। কেবলমাত্র পরে যখন রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক প্রশ্নসমূহ নেপালে পরিস্কার হল, সেইসাথে আন্তর্জাতিক আন্দোলনের বিকাশসমূহের সাথে য্ক্তুভাবে, যাকে সিপিএন(এম) পরে সারসংকলন করেছে “এম বি সিং চিন্তাধারা” (“এম বি সিং স্কুল অব থট )” এর বর্জন হিসেবে তা পরিচালনা করা সম্ভব হয়। ধাপে ধাপে এই সমালোচনা গড়ে তুলে অস্বচ্ছ রাজনৈতিক ভিত্তিতে বিভক্তির নেতিবাচক প্রভাবকে জয় করা হয়েছিল, অধিক পার্টিসমূহ একটি একক পার্টিকেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং নেপালে অভূতপূর্ব মাত্রায় ঐক্যের জন্য ভিত্তি স্থাপন করা করা হয়েছিল। মাওবাদকে ঘিরে পার্টির সংহতকরণ এবং “এম বি সিং চিন্তাধারা”র সার্বিক খন্ডন ১৯৯৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী গণযুদ্ধ সূচনার দরজা খুলে দেয়। লেনিন দশক দশক আগে দেখিয়েছিলেন যে সংকট ও বিপ্লবের কালে রাশিয়ার শ্রমিক আন্দোলনে বিভিন্ন শক্তিসমূহ যে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিল,  আগের বছরগুলিতে বিপ্লবীদের মধ্যে সংঘটিত রাজনৈতিক সংগ্রামসমূহ থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বিপ্লবী উত্থানের পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র সংখ্যার লোকদের বিতর্ক বিভিন্ন শ্রেণীসমূহের বিরোধী স্বার্থসমূহকে আনুপাতিক চিত্রে প্রকাশ করে। নেপালে যখন মালেমা লাইন গণযুদ্ধের সূচনা ও এগিয়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দেয়, নেতা ও কর্মীদের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র্র চক্রে আগে যা প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত ছিল সেই রাজনৈতিক প্রশ্নসমূহ সামগ্রিকভাবে ব্যাপক জনগণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, আর একটি সঠিক রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক লাইনের জীবনন্ত বাস্তবতা আরো সহজভাবে দেখা দিয়েছিল। এটি বিরাট সংখ্যক ভুল লাইন অনুসারী ক্যাডার ও সমর্থকদের মালেমা অবস্থানে জয় করতে নেতৃত্ব দিয়েছে, ও তাদেও দ্বারা চলমান বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে। তাই, এভাবে দেখা যায় যে এম বি সিং-এর সাথে সংগ্রাম (অথবা অনৈক্য) সকলের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূণ ঐক্য নির্মাণের জন্য প্রয়োজন ছিল-নেপালী সমাজের সমস্যাসমূহের বিপ্লবী সমাধান যাদের প্রয়োজন সেই শ্রমিক শ্রেণী, কৃষক ও বিপ্লবী বুদ্ধিজীবিদের ব্যাপক জনগণের সাথে প্রকৃত কমিউনিস্টদের ঐক্য। এবং আবারো বিশদীকৃত হল এই সার্বজনীন সত্য যে ঐক্য হচ্ছে সংগ্রামের ফসল। আজকে বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ প্রকৃত কমিউনিস্টদের রণহুংকারে পরিণত হয়ে্ছে। দেখা গেছে, বিভক্তি ও অনৈক্যের শর্ত হওয়া দূরের কথা, রিম কর্তৃক মাওবাদের গ্রহণ নির্দিষ্ট দেশে ও বিশ্বব্যাপী পুনদলবদ্ধকরণ ও ঐক্যের এক স্তম্ভ হিসেবে সেবা করছে।

এক নিজেকে দুয়ে বিভক্ত করে অথবা “দুয়ে মিলে এক হয়

মাওসেতুঙের মহান অবদানগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তাঁর আরো বিকাশ। নির্দিষ্টভাবে মাও আলোকপাত করেন যে বিপরীতসমূহের ঐক্য ও সংগ্রাম হচ্ছে দ্বন্দ্ববাদের কেন্দ্রীয় নিয়ম, এবং তিনি প্রতিভাদীপ্তভাবে তা সমাজতান্ত্রিক সমাজে প্রয়োগ করেন, পার্টি-বিনির্মণ, রাজনৈতিক অর্থনীতি, বিপ্লবী যুদ্ধ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে। যেমনটা আমরা দেখেছি যে একটি অগ্রগামী পার্টি গঠণ ও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় দ্বন্দ্ববাদের নিয়ম কীভাবে প্রয়োগ করা হয় তার আত্মস্থকরণ হচ্ছে নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ।

চীনে তত্ত্বগত সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে একটি ছিল দার্শনিক ফ্রন্টে সংগ্রাম। পরবর্তীকালে মহান সর্বহার সাংস্কৃতিক বিপ্লবে উrখাত হওয়া চীনের সংশোধনবাদীদের নেতা লিও শাও চি এবং দার্শনিক ফ্রন্টে লিউর প্রধান প্রতিনিধি ইয়াং শিয়েন চিয়েন-এর বিরুদ্ধে মাওকে ক্ষুরধার লড়াই চালাতে হয়েছিল। ১৯৬৩ সালে যখন মাও  ক্রুশ্চেভ ও সোভিযেত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সংশোধনবাদীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক বিতর্ক চালাচ্ছিলেন, ইয়াং মত প্রকাশ করেন যে, “সকল কিছু অনাপেক্ষিকভাবে দুয়ে মিলে এক হয়।” (এই বিতর্কের আরো বিস্তারিত পর্যালোচনার জন্য পিকিং রিভিও, ২২শে জানুয়ারী ১৯৭১ এবং ২৩শে এপ্রিল ১৯৭১ দেখুন।)

চীনে ও বিশ্বপ্রেক্ষিতে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিকাশের জন্য, মাওয়ের  জন্য এই থিসিসকে সুদৃঢ়ভাবে খ-ন করার প্রয়োজন ছিল। তিনি পুননিশ্চিত করেন যেঃ “সকল জিনিস অনাপেক্ষিকভাবে নিজেকে দুইয়ে বিভক্ত করে”, “প্রকৃতির মতো সমাজেও সকল সত্ত্বা অনাপেকিভাবে এর বিভিন্ন অংশে ভেঙে যায়, বিভিন্ন মূর্ত পরিস্থিতিতে কেবল সার ও আকৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।” (‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রচার কাজ সম্পর্কে জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ’, চীনের দার্শনিক ফ্রন্টে তিনটি প্রধান সংগ্রাম (১৯৪৯-১৯৬৪) তে উদ্বৃত, বিদেশী ভাষা প্রকাশনা, পিকিং, পৃঃ ৫৮)।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিসি)র বিপ্লবীগণ মত প্রকাশ করেন যে, মার্কসবাদী দর্শন আমাদের বলে যে বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ হচ্ছে কোন জিনিসের বস্তুগত নিয়ম ও কোন কিছু বোঝার জন্য জনগণের এক পদ্ধতি। বিশ্লেষণ দেখায় কীভাবে একটি সত্ত্বা দুটি পৃথক অংশে বিভক্ত হয় আর কীভাবে তারা সংগ্রামে বাঁধা, সংশ্লেষণ দেখায় দুটি বিপরীত দিকের মধ্যে সংগ্রামে কীভাবে একটি বজায় থাকে অন্যটিকে পরাজিত ও অপসারণ করে, কীভাবে একটি পুরোনো দ্বন্দ্ব মীমাংসিত হয় ও নতুন একটি উদ্ভূত হয়, কীভাবে একটি পুরোনো জিনিস অপসারিত হয় ও নতুন জিনিস জয়লাভ করে। সোজা কথায়, সংশ্লেষণ মানে, একটি আরেকটিকে খেয়ে ফেলে”…বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। বিশ্লেষনের মধ্যে সংশ্লেষণ রয়েছে আর সংশ্লেষণের মধ্যে বিশ্লেষণ…

আমাদের অভিজ্ঞতার সারসংকলন প্রক্রিয়াও এক বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ। সামাজিক অনুশীলনে বহুবিধ সংগ্রামে অংশ নিয়ে মানুষ সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেঃ কিছু সফল, কিছু নয়। সঠিককে ভুল থেকে আলাদা করা দরকার, সঠিকের ইতিকরণ ও বেঠিকের নেতিকরণ প্রয়োজন। অর্থাr, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ  চিন্তাধারার পরিচালনাধীনে অনুশীলন থেকে ইন্দ্রিয় দ্বারা লব্ধ সমৃদ্ধ তথ্যসমূহের পুনর্গঠন, আবর্জনা বর্জন এবং প্রয়োজনীয়টা বাছাই, মিথ্যাকে অপসারণ ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা, একটা থেকে আরেকটায় আগানো, বাহির থেকে ভেতরের দিকে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানকে যৌক্তিক জ্ঞানের স্তরে উন্নীত করা এবং কোন বস্তুর অভ্যন্তরস্থ নিয়মসমূহকে আঁকড়ে ধরা। বিপরীতসমূহের গতি-এক নিজেকে দুয়ে বিভক্তকরণ-এই সমগ্র প্রক্রিয়ায় ধাবিত হয়। এই পথে সারসংকলিত অভিজ্ঞতাসহকারে আমরা সত্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে এবং ্আমাদের ভুলগুলিকে সংশোধনে সম হই, আমাদের সকল অভিজ্ঞতাসমূহকে জনপ্রিয়করন করতে পারি এবং আমাদের ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিতে পারি।” (“দুইয়ে মিলে এক হওয়ার তত্ত্ব হচ্ছে পুঁজিবাদের পুনপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন”, পিকিং রিভিও, ২৩শে এপ্রিল, ১৯৭১)।

 জিপিসিআরের উত্তাপের মধ্যে লিখিত উপরের অনুচ্ছেদটি সময়ের দ্বারা পরীক্ষিত এবং এখন আমাদের একটি ভাল পরিচালক হিসেবে কাজ করে যেহেতু আমরা স্বতন্ত্র দেশে ও বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টদের ঐক্য গড়ে তোলায় একটি বিরাট সাফল্য অর্জন করতে চাই। এটা বাহ্যত সামনে আসতে পারে যে বিভিন্ন সংগঠন থেকে কমিউনিস্টদের ঐক্য ‘দুই থেকে এক’-এর মিলিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় হবে, এই মত যে প্রক্রিয়ায় নতুন একটা জিনিস জন্ম নেয় তার সার আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হয়। সংশ্লেষণ একটি নয়া ঐক্যকে প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু উপরের অনুচ্ছেদ যেভাবে মত রেখেছে- “সংশ্লেষণকে দুয়ে মিলে এক হওয়া”র সাথে গুলিয়ে ফেললে হবেনা। সংশ্লেষণ হচ্ছে সংগ্রাম ও রূপান্তরের ফল, যার দ্বারা একটি দ্বন্দ্ব অথবা এক ঝাঁক দ্বন্দ্ব সমাধা হয় ও নয়া দ্বন্দ্ব জন্ম নেয়।

“এক নিজেকে দুযে বিভক্তকরণ” বনাম “দুইয়ে মিলে এক হওয়ার” তত্ত্বের মধ্যকার  সংগ্রামের সাথে যুক্ত প্রশ্নে সিপিসির কমরেডগণ “সাধারণ দফা (কমন পয়েন্টস) কামনা করা” কে তীক্ষè সমালোচনা করেছেন। এ দ্বারা আমরা লিউ শাও চি, ইয়াং শিয়েন চেন ও অন্যদের বিপরীতসমূহের মধ্যে “সাধারণ দফা” যেমন, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে, বুর্জোয়া ও সর্বহারার মধ্যে কামনা করার মতের প্রতি ইঙ্গিত দেই। বস্তুতঃ আমরা যদি বহিরঙ্গের দিকে তাকাই সার না দেখে, মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে বহু তথাকথিত সাধারণ দফা খুঁজে পাব। সংশোধনবাদীরাও  কি সর্বহারা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বের দাবী করেনা, সমাজতন্ত্রের পক্ষ নেয়ার; এমনকি কমিউনিজম? সংশোধনবাদীরাও কি সাম্রাজ্যবাদকে বিরোধিতার দাবী করেনা? কিন্তু আমরা যদি আমাদের মালেমা উপলব্ধিকে উপরিতল ভেদ করে ব্যবহার করি তাহলে আমরা দেখতে পাব সংশোধনবাদ ও মার্কসবাদ প্রতিটি দফায় সংগ্রামরত নির্মম শত্রু। ঐক্যকে সংগ্রাম ও সংশ্লেষণের উrপাদ হিসেবে আবশ্যিকভাবে দেখতে হবে; একটি উলম্ফণের মাধ্যমে যাতে একটি নতুন দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে নয়া সত্ত্বা গঠিত হয় এবং খুবই নিশ্চিতভাবে সংগ্রামের নির্ধারক দিকগুলির সাথে সম্পর্কহীনভাবে “সাধারণ দফা” আবিস্কারের ভিত্তিতে “দরকষাকষি”র ফল নয় । কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাম্প্রতিক কালের ও অতীত ইতিহাসের বহু উদাহারণ রয়েছে যা দেখায় যে “সাধারণ দফা” আবিস্কারের উপর ভিত্তি  করে ঐক্যের প্রতি আগানো কখনো সফল হবেনা, এবং বস্তুতঃ আন্দোলনের অগ্রগমনের ক্ষতি হবে। আমরা যদি কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নিজের গঠনের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব লেনিন যত বেশী সম্ভব শক্তিকে অন্তর্ভূক্ত করতে কঠিন সংগ্রাম চালান কিন্তু তা তিনি করেন সেসময়ের মৌলিক প্রশ্নসমূহে আপোষ না করে। নির্দিষ্টভাবে তিনি জোর দেন কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সদস্যরা সংশোধনবাদী অপনেতাদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটাক, এবং ঐক্যের ছদ্মাবরণে তাদের সাথে আপোষের যে কোন প্রচেষ্টাকে তিনি সুদৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করেন। আমাদের আরো সাম্প্রতিক অতীতে গুরুত্বপূর্ণ উদাহারণসমূহ রয়েছে যা এই বিষয়টিকে বিশদ করে। আমরা আগেই নির্দেশ করেছি মাও ও বিপ্লবী চীনের সমর্থক সাজার প্রচেষ্টারত (শাফাক সংশোধনবাদী, যারা আশ্চর্য নয় চীনের প্রতিবিপ্লবী ক্যুকে সমর্থন করেছিল, আর আজো যাদের প্রধান নেতা পেরেনসেক তুরস্কে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধান শত্রু হিসেবে অব্যাহত রয়েছে, এমনকি তারা প্রতিক্রিয়াশীল শাসকশ্রেণীসমূহের সাথে ঐক্যের আহ্বান জানায়) দের সমেত সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে তুরস্কে ইব্রাহীম কাপাক্কায়ার নেতৃত্বে সংগ্রামের সারবস্তুর প্রতি। কাপাক্কায়ার সংগ্রাম একটি নতুন ঐক্যে চালিত করে-তা হচ্ছে টিকেপিএমএল, যা শত সহস্র এমনকি লক্ষকোটি সমর্থকদেরকে দেশে দ্রুত ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু অন্য যেকোন ঐক্যের মতো এটাও সংগ্রাম দ্বারা চিহ্নিত ছিল এবং ফলে কাপাক্কায়ার শহীদ হওয়া ও তাঁর দ্বারা সূচিত সশস্ত্র সংগ্রামের বিপর্যয় টিকেপিএমএল-তে বিপ্লবী অভিজ্ঞতা কীভাবে সারসংকলন করতে হবে এবং কোন মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনকে প্রয়োগ করতে হবে তা নিয়ে নতুন সংগ্রামসমূহে চালিত করে। এই সংগ্রামের ইতিহাসকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা এখানে আমাদের উদ্দেশ্য নয় (এর কিছু এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০০/২৮-এ “টিকেপি/এমএল-এর প্রতি খোলা চিঠি”-তে পাওয়া যাবে, সেইসাথে এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০০/২৯-মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (তুরস্ক ও উত্তর কুর্দিস্তান)(এমকেপি)-এর কংগ্রেস দলিলসমূহে, যে পার্টি প্রাক্তন টিকেপি(এমএল) থেকে উদ্ভূত। মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব যেভাবে সারসংকলন করেছেঃ কাপাক্কায়ার মৃত্যুর পর ৩০ বছর ধরে এক শক্তিশালী সুবিধাবাদী ধারা বিদ্যমান ছিল বিশেষত মাও কর্তৃক মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে  সম্পূর্ণ এক নতুন স্তরে বিকাশ এবং তুরস্কের বিপ্লবের পথ হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধ-এর কাপাক্কায়ার বিশ্লেষণের প্রযোজ্যতা নিয়ে। একটি সঠিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের অভাব ছিল বলে সাংঠনিক ক্ষেত্রে অনৈক্য প্রতিফলিত হয়েছে। পার্টি উপদলবাদ, শৃংখলাহীনতাও বিভাজনসমূহ দ্বারা কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। পরিস্কারভাবেই কমিউনিস্ট অগ্রগামী শক্তিসমূহের অনৈক্যের ভার তুরস্কের জনগন ও তাদের সংগ্রামের ওপর প্রচ-ভাবে অনুভূত হয়েছে। বস্তুত এটা প্রায়শই হচ্ছে ঘটনা যে জনগণ কেবল অনৈক্য ও ব্যবহারিক সংগ্রামের বিকলাঙ্গতাই দেখতে পান-যা হচ্ছে মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের গভীরতর সমস্যার উপরিতলে প্রতিফলন, কারণ উপরিতল ভেদ করে মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যকার সংগ্রামের সারে পোঁছতে মালেমা প্রয়োজন যা ব্যাপক জনগণ স্বতস্ফ’র্তভাবে অর্জন করেনা ও করবেনা। আর যা জনগণের জন্য সত্য রাজনৈতিক পার্টির ব্যাপক স্তরের সদস্য ও যোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য যদি না তারা মালেমা প্রয়োগে সুসজ্জিত থাকেন (যা তrকালীন সময়ে টিকেপিএমএল এর সাধারণ চিত্র ছিলনা), তাঁরাও উপরিতল দেখতে পাবেন, সারকে নয়, অনৈক্য ও বিকলাঙ্গতা কিন্তু মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের গভীরতর সমস্যাকে নয়। এই ছিল সাধারণ পরিস্থিতি যখন টিকেপিএমএল-এর প্রধান দলবদ্ধকরনগুলিকে একটি একক কেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধ করার কতিপয় প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল। এই প্রচেষ্টাসমূহের মধ্যে অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯৯৩ সালে গঠিত অস্থায়ী ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রিয় কমিটি (পিইউসিসি)। পিইউসিসি টিকেপিএমএল এর বৃহ্ত্তম অংশকে একত্রিত করেছিল।[টিকেপি/এমএল (মাওবাদী পার্টি কেন্দ্র) পিইউসিসিতে অংশ নেয়নি]। কিন্তু পিইউসিসি-যা তাকে গঠন করেছে সেই বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে “সাধারন দফাসমূহ”র দরকষাকষির মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। এমনকি যার মধ্যে বাহ্যত কিছূ সঠিক “সাধারন দফা” মনে হয়েছিল, যেমন মার্কসবাদÑলেনিনবাদÑমাওবাদকে পার্টির মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ, ছিল স্রেফ মাওবাদের প্রাক্তন ভ্রান্ত উপলব্দির ওপর আনুষ্ঠানিক কপোটোক্তির আবরন, নির্দিষ্টভাবে স্তালিনের ভুলগুলিকে মাওয়ের সমালোচনা এবং তাঁর দ্বারা সর্বহারা মতাদর্শের আরো বিকাশকে নেতিকরণ। অতীতের অন্য ভুল মতাবস্থানসমূহ যেমন উল্লেখযোগ্যভাবে, বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনের ওপর একটি ক্ষতিকর ও ভুল মূল্যায়ন পিইউসিসিতে ভূমিকা রেখেছিল।

এই অভিজ্ঞতার ফলসমূহ গুরুত্বপূর্ণ। পিইউসিসি তার সদস্য ও সমর্থকদের আকাঙ্খা পূরণে সক্ষম হয়নি, তুরস্কে বিপ্লবী সংগ্রামের নতুন তরঙ্গ জন্ম দিতেও পারেনি। তার বদলে পুরোনো উপদলবাদ, শৃঙ্খলাহীনতা, অনৈক্য ও বিকলাঙ্গতা নতুন রূপে চলতে থাকে। অল্প সংক্ষিপ্ত কয়েক বছরের মধ্যে আবারো একটি বড় বিভাজন ঘটল। কারণ একটি সঠিক লাইন টিকেপিএমএল-এ সংগ্রাম ও অগ্রগমনের প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করছিলনা, যেসব বহুবিধ ভাঙন ও একীভূতকরণ ঘটেছে তা “ঐক্য-সংগ্রাম-ঐক্য”র একই ধরণের প্রক্রিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করেনি যখন একটি সত্যিকার মালেমা লাইন পরিচালক থাকে। টিকেপি এম এল-এর ক্ষেত্রে একটি উচ্চতর স্তরের ঐক্য ও উচ্চতর স্তরের বিপ্লবী অনুশীলন অর্জিত হয়নি। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করলো কেবল অতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, যখন টিকেপি (এম এল)-এর নেতা ও সদস্যরা আগের বেঠিক মতসমূহকে অধিকতর সামগ্রিকভাবে বর্জন করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করলো  মালেমার ভিত্তিতে সমগ্র আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতার সারসংকলন করার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে অঙ্গীভূত হয়ে এবং আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলন বিশেষত রিম-এর সাথে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। এভাবে আমরা টিকেপি (এমএল) ও টিকেপি/এমএল (প্রায়শ যাকে “ওজগুর গেলেক” বলা হয়ে থাকে) এর দ্বারা চালিত সংগ্রামে অতীতের সংকীর্ণ তুচ্ছ ঝগড়া থেকে একটা পার্থক্য দেখতে পাই-তুর্কী আন্দোলনের জীবন মরন সমস্যা সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং টিকেপি (এম এল) ও টিকেপি/এম এল-এর পার্থক্যকে দুই লাইনের সংগ্রামের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যান্য জায়গার মতো তুরস্কেও সকল প্রকৃত কমিউনিস্টদের একক কেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। নিশ্চিতভাবে বর্তমান টিকেপি/এমএল-এর বিরাট সংখ্যক নেতা, কেডার, সদস্য ও সমর্থক রয়েছেন যারা একটি ঐক্যবদ্ধ অগ্রগামী পার্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন এবং রাখা উচিত। একটি অগ্রগামী একক পার্টি নিশ্চিতভাবে যার প্রতিনিধিত্ব করবে সেই “নয়া ঐক্য” জন্ম দিতে একটি সঠিক ভিত্তিতে এই সম্পূর্ণকরন প্রক্রিয়ার ভিত্ রচিত হবে সেই ভুল উপলব্ধিসমূহের সাথে আরো র‌্যাডিকেল বিচ্ছেদ ঘটিয়ে-এখন যা টিকেপি/এমএল-এর ভেতরে অধিক থেকে অধিকতর কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং রিমের কাতার থেকে এর বিদায় ও আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনের “ঐক্য” গড়ে তোলার মধ্যপন্থী ভ্রান্ত ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণে প্রতিফলিত হয়। (আবারো দেখুন, এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০০/২৮, যা রিম থেকে টিকেপি/এমএল-এর বিদায় ও আন্তর্জাতিক আন্দোলনের আরেক ভিন্ন মেরুকরনে যোগদান-এর ওপর আলোকপাত করেছে।) আবারো, বেঠিক মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের বর্জন ও এর সাথে বিচ্ছেদ হচ্ছে ঐক্য ও অগ্রগমণের চাবিকাঠি।

 

কারা ভাঙনকারী

কারা ঐক্যের পক্ষে দাঁড়ায়?

ইতিহাস এটাও দেখিয়েছে যে সত্যিকার মালেমা শক্তিগুলোই সর্বদা ঐক্যের জন্য লড়াই করে এবং সর্বদাই সংশোধনবাদী ও সুবিধাবাদীরা উপদলবাদ, ভাঙন ও ষড়যন্ত্রে চালিত হয়। মালেমা পার্টি ও সংগঠনসমূহ হচ্ছে দুই লাইনের সংগ্রামের অব্যাহত ক্ষেত্র, এবং যেমনটা আমরা মত প্রকাশ করেছি যে একই সঙ্গে অতীব ধারালো অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ক্ষেত্রও হতে পারে; কিন্তু যদি এই প্রক্রিয়া একটি সঠিক মালেমা লাইন ও নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত হয় তা পার্টির অভ্যন্তরে বৃহ্ত্তর ঐক্যের সৃষ্টি করতে পারে, নেতা ও সদস্যসারির মধ্যে, এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পার্টি ও খোদ জনগণের মধ্যে।

অন্যদিকে বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিগুলো হচ্ছে ভিন্ন ধরনের সংগ্রামের কেন্দ্র-ব্যক্তিসমূহের মধ্যে সংগ্রাম হয় ব্যক্তিগত লাভ, ষড়যন্ত্র, ব্যক্তি কর্তৃত্ব ও সম্মানের জন্য, এমনকি দূর্নীতির ভাগের জন্য। এই ধরনের পার্টিগুলো যদি ঐক্যের একটা প্রাসাদ কিছুকালের জন্য বজায় রাখতে পারে, তাদের নিজেদের কাতারে শৃঙ্খলা আসে প্রতিশোধের ভয়ে, পুরস্কারের আশায়, অজ্ঞতা অথবা সন্ত্রাস থেকে। প্রথম ফাঁটলেই এই পার্টিগুলো ভেঙে তছনছ হয়ে যায়, আর এর নেতারা জালে আটকা পড়া কাঁকড়ার মতো একে অপরের প্রতি দূর থেকে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করবে। এর কারণ হচ্ছে বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিসমূহ সর্বহারা শেণী ও নিপীড়িতদের ব্যাপক জনগণের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করেনা এবং করতে পারেনা, তাই সর্বদা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও ধোঁকা দিতে চায়, তাদের সর্বাধিক পশ্চাদপদ ও নীচ ভাবাবেগের কাছে আবেদন করে, আর তাদের ওপর একনায়কত্ব চালানোর চেষ্টা চালায়। বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিগুলোর অনুসরণ যতই শক্তিশালী মনে হোক না কেন, নিশ্চিতভাবে, আগে অথবা পরে জনগণের বিচারের সম্মুখীন তাদের হতেই হবে। ইতিহাস বারংবার দেশে দেশে এটা প্রমাণ করেছে।  যখন জাতীয় বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়াদের কিছু পার্টি দোদুল্যমানভাবে হলেও সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায়, তারা সমগ্র জনগনের নামে কথা বলার অধিকার দাবী করে এবং প্রায়শ গুরুত্বপূর্ণ অনুসরণ পায় নিপীড়িত শ্রেণীসমূহের মধ্যেসহ। কিন্তু এমনকি এই ধরণের পরিস্থিতিসমূহেও শোষক শ্রেণী হিসেবে বুর্জোয়াদের চরিত্র অনিবার্যভাবেই প্রকাশিত হবে। এই শক্তিসমূহ সর্বান্তকরণে নিপীড়িত জনগণের ওপর নির্ভর করতে পারেনা এবং তাদের উচ্চতম স্বার্থের প্রতি আবেদন জানাতে পারেনা। তারা সর্বদাই আবেদন অথবা আপোষ করার চেষ্টা চালায় তুচ্ছ ও পশ্চাদপদ ভাবাবেগের প্রতি, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় অন্ধত্ব, নারী নিপীড়ন ইত্যাদি সহ। এ ধরণের পার্টিগুলো যদি ক্ষমতায় আসেও, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার সাথে আপোষ করে, যত জনপ্রিয় চরিত্রই একদা তারা প্রতিনিধিত্ব করে থাকুকনা কেন সাধারণত তা দ্রুত উবে যায এবং এই পার্টিগুলোকে অন্যান্য বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিগুলো থেকে পৃথক করা যায়না। (ইরাকে কুর্দী জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর গতিপথে এই রূপান্তর পরিষ্কারভাবে আমরা দেখতে পাই-যারা কুর্দী জনগণের অধিক অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেছিল, আর শেষ করেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের পুতুল হিসেবে কুর্দী জনগনকে দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে শুধু নয়, সমগ্র ইরাকী জনগণকেও।) যখন একটি মালেমা সংগঠন একটি সঠিক বিপ্লবী লাইন থেকে বিদায় নেয়, অনিবার্যভাবে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে সংশোধনবাদী মতাদর্শ ও রাজনীতি প্রতিফলিত হবে এবং এই ধরণের পার্টিগুলো বুর্জোয়া ও প্রতিক্রিয়াশীল পার্টির রূপ পরিগ্রহ করবে। একে মাওসেতুঙ প্রতিভাদীপ্তভাবে সারসংকলন করেছেন তাঁর বিখ্যাত তিন করণীয় তিন বর্জনীয়তেঃ মার্কসবাদ অনুশীলন কর, সংশোধনবাদ নয়; ঐক্যবদ্ধ হও, বিভক্ত হইওনা; মুক্তমনা ও সরল হও, ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করোনা।” (সিপিসির দশম কংগ্রেসের সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে রিপোর্ট দেখুন।) চাবিকাঠি হচ্ছে প্রথমে একটি সঠিক মালেমা লাইন অনুশীলন করা। যারা এমন একটি লাইন থেকে বিদায় নেয় তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনা এবং অনিবার্যভাবে বিভক্ত হয়। যারা মার্কসবাদ থেকে বিদায় নেয় তারা মুক্তমনা ও সরল হতে অক্ষম, তাদের দৃষ্টিকোনের জন্য নীতিগত সংগ্রাম চালাতেও অক্ষম। পরিবর্তে তারা সর্বদা ব্যক্তিগত আক্রমণে সচেষ্ট হয়, গুজব রটায় ও গালগল্পে মেতে উঠে, সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত লাইনের নির্ধারক প্রশ্নসমূহকে গৌণ করে, আর কম গুরুত্বপূর্ণ ও গৌণ প্রশ্নে কেন্দ্রীভূত হয়। একবার মার্কসবাদ থেকে বিদায় নিলে জনগণের ব্যাপক অংশ ও ব্যাপক পার্টিসদস্যদের ওপর আস্থা রাখা অসম্ভব এবং ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দৈনন্দিন ধারা হয়ে ওঠে। সংখ্যাল্পের সংকীর্ণ ও আশু স্বার্থে এই ধরণের লোকেরা সর্বদাই আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থসমূহকে উrসর্গ করবে। প্রকৃত কমিউনিস্টদের ঐক্যের জন্য, পার্টি ও জনগণের মধ্যকার ঐক্যের জন্য লড়াই করা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদের অন্যতম স্থায়ী কর্তব্য-যাদেরকে বুর্জোয়া, প্রতিক্রিয়াশীল ও সংশোধনবাদী পার্টিগুলির কাজের স্টাইল ও সংগ্রামের ধরণসমূহ এড়াতে সদাসতর্ক থাকতে হবে।

গুণগতভাবে সংশোধনবাদী পার্টিতে রূপান্তরিত হয়েছে, প্রাক্তন মালেমা পার্টিগুলোর মধ্যে এমন পার্টিগুলো অন্য পার্টিগুলোর চেয়ে আলাদা কিছু নয়-যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে, তাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা ও শৃংখলা হচ্ছে ব্যাপক জনগণের ওপর প্রতিক্রিয়াশীল একনায়কত্বের একট চিত্র। আজকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হচ্ছে বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল ও ফ্যাসিবাদী পার্টির নিখুঁত দৃষ্টান্ত। যারা মাওয়ের বিধবা স্ত্রী চিয়াং চিংসহ তাঁর হাজার হাজার ঘনিষ্ঠতম অনুসারীদের গ্রেফতার করেছে, যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বিপ্লবী শ্রমিক কৃষকদের বর্বরভাবে নির্যাতন করেছে, যারা ১৯৮৯ সালে বিশ্বের কাছে “তিয়েন আনমেন স্কোয়ারের কসাই” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, এই ধরণের পার্টিগুলো কখনোই বিশুদ্ধিকরণ হবেনা, আর প্রতিক্রিয়াশীল একনায়ত্ব চালাচ্ছে যেসব পার্টি তাদের মতোই এদেরকে অতি অবশ্যই বল প্রয়োগে উr খাত করতে হবে।

ঐক্যের জন্য লড়াই কর্মসূচীতে রয়েছে

প্রতিটি দেশে প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তিসমূহের সর্বদাই ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা, এমনকি ঐক্যের আকাঙ্খা একটি একক অগ্রগামী অর্জনে সংগ্রাম চালাতে সবসময় যথেষ্ট নয়। পুনরায়, নির্দিষ্ট দেশে প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের উদ্ভব হচ্ছে চাবিকাঠি যা প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তিসমূহের বিরাট অংশের সমাবেশ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। ইতিহাস দেখিয়েছে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও ইতিহাস অনুসারে এমন একটি সঠিক লাইনের উদ্ভবের পথ ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়। উদাহারণস্বরূপ, পেরুতে চেয়ারম্যান গনসালো পিসিপির বিকাশকে সেদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসের অনেক পেছনকার একসারি সংগ্রামের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেন, যাতে বিবিধ ধরণের সংশোধনবাদ ও সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কমরেড গনসালো এক কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। নেপালে, যাহোক, সিপিএন(এম) এর গঠণ এক ভিন্ন পথে হয়েছে, এবং কমরেড প্রচণ্ডকে সারসংকলন করতে হয়েছেঃ যে শক্তিসমূহ সিপিএন(এম) গঠণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে তাঁরা আন্দোলনের প্রথম দিককার পর্যায়গুলিতে যথা ১৯৭০-এর দশকগুলিতে সর্বাধিক সঠিক ছিলনা।

একটি নির্দিষ্ট দেশে একটি সঠিক লাইনের গড়ে তোলা হচ্ছে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যাতে অনিবার্যভাবে বাঁক, অগ্রগমন ও বিপর্যয় জড়িত। এবং যেমনটা আমরা জানি এটি একটি সমাপ্তিহীন প্রক্রিয়া কারণ একটি সঠিক লাইন কখনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা বরং যাকিছু বেঠিক তার বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রামের মাধ্যমে এবং খোদ শ্রেণীসংগ্রামের সাথে অব্যাহত আন্তক্রিয়ার মাধ্যমে আগায়। “পরম সঠিক” লাইনের আকাঙ্খার ভুলে পতিত হওয়াও সম্ভব এবং এই মরীচিকা সংজ্ঞাগতভাবে অর্জন করা অসম্ভব “একটি সঠিক লাইনের অনুপস্থিতি” কে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে ঐক্য অর্জন করা সম্ভব তাকে এড়ানোর সুবিধাজনক অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। “পরম সঠিক” লাইন খোঁজা হচ্ছে ভাববাদ ও অধিবিদ্যা, বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদ নয়। এটা অস্তিত্ব থেকে চিন্তাকে এবং অনুশীলন থেকে তত্ত্বকে পৃথক করে, আর তা সংকীর্ণতাবাদ ও বন্ধাত্বে চালিত করবে। কমিউনিস্ট নেতাদেরকে বিপ্লবী আন্দোলন দ্বারা মোকাবেলা করা নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ মূর্তকরণে দক্ষ হতে হবে এবং তাদের মনোযোগকে এই বিষয়গুলিতে কেন্দ্রীভূত করতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামকে একটি পূর্বনির্ধারিত বাক্সের ভিতর সাজিয়ে রাখা যায়না, সর্বদাই সংগ্রামের বহু ভিন্ন ভিন্ন দিক ও ক্ষেত্রসমূহ রয়েছে, তাসত্ত্বেও এটা সত্য যে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যে প্রধান প্রশ্ন অথবা দ্বন্দ্বকে আন্দোলন মোকাবেলা করছে তার সমাধান করা হচ্ছে গৌণ-কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ যথা-কাজের ধারা(স্টাইল), আন্দোলনে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিতর্কসমূহকে সঠিকভাবে সারসংকলন করা ইত্যাদির চাবিকাঠি। যেমন কমিউনিস্টরা মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লাইনের নির্ধারক প্রশ্নসমূহকে উপলব্ধিতে তাদের সামর্থ্যকে উত্তরণ ঘটায়, তেমনি তাঁরা আরো দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে সক্ষম হবেন এবং অপোকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ দ্বারা ঐক্যকে বাঁধাগ্রস্ত করতে অনুমোদন করবেননা।

বিভিন্ন দেশে ও বিশ্বব্যাপী প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের সমগ্র ইতিহাস জুড়ে বিশাল অর্জন হয়েছে এবং এই সময়ে নতুনগুলোরও জন্ম হচ্ছে, যেমন নেপালের গণযুদ্ধে বিরাট অগ্রগতি। কিন্তু আমরা জানি, চীনের ক্ষতিসহ আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনে মারাত্মক বিপর্যয়সমূহ ঘটেছে যা থেকে এখনো আমরা ভুক্তভোগী। সামপ্রতিককাল বিভিন্ন দেশে অগ্রগতিসমূহ ও পরাজয়সমূহ উভয়ই দেখেছে। সংগ্রাম ও ত্যাগ, অগ্রগতি ও পশ্চাদগতির সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার সারসংকলনকে ভিত্তি করে একটি সঠিক লাইনকে অতি অবশ্যই গড়ে উঠতে হবে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ ব্যবহার করে যেমনটা সারসংকলিত হয়েছে, অর্থাr সমগ্রভাবে আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর অপরিহার্য অভিজ্ঞতার একটি ভাল উপলব্ধি থাকা এবং প্রতিটি নির্দিষ্ট দেশে সর্বহারা শ্রেণী, নিপীড়িত ও কমিউনিস্ট অগ্রগামী শক্তিগুলোর সংগ্রামেরও। বেশকিছু দেশে, কমিউনিস্ট শক্তিসমূহের আলাদা আলাদাভাবে কর্মরত বিভিন্ন বাহিনীগুলো দ্বারা বিপ্লবী অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। এটা হচ্ছে নির্দিষ্টভাবে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের চিত্র যেখানে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস, ভারতের ব্যাপকতা ও বড় আকারের জন্য দেশের বহুবিধ কোনায় বিভিন্ন কমিউনিস্ট শক্তি গণযুদ্ধ গড়ে তোলাসহ বিপ্লবী সংগ্রামের বহুবিধ ধরণকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন সাম্প্রতিক বছরগুলি ও নকশালবাড়ীর সময়কালের মহান উত্থান উভয়ত ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সম্মিলিত অভিজ্ঞতার সংশ্লেষণের কর্তব্য আলোচ্য সূচীতে তীব্রভাবে চলে আসছে। এই সারসংকলনও সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রঃ কোন্ কোন্ জরুরী শিক্ষাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে? কোন্ কোন্ দূর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে? অন্যান্য দেশের মতো এই প্রক্রিয়ার সাফল্যজনক উপসংহার-যা একটি সঠিক মালেমা লাইন অনুসারী ও বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ একটি ঐক্যবদ্ধ একক অগ্রগামী পার্টি ছাড়া আর কিছু না-উলম্ফণ ও বিচ্ছেদ(রাপচার)-এর মাধ্যমেই আসবে। চিন্তা ও অনুশীলনে যে দিকগুলো পরিস্কারভাবে ভুল তা বর্জন করার প্রয়োজন হবে, যেখানে সেদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের চমrকার ইতিবাচক অর্জনসমূহকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা ও বিকশিত করা প্রয়োজন হবে।

ভারতে, আমরা আরো দেখি “সাধারন দফাসমূহ”র ভিত্তিতে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে ভারতের মালেমা আন্দোলনের অংশ গঠনকারী এমন বেশ কিছু শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে একটি আন্দোলন জনশক্তি সংগঠন গঠণে পরিণত হয়। এর সৃষ্টি মালেমা আন্দোলনের যোদ্ধা ও সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ অংশের উদ্দীপনা জাগিয়েছিল। কিন্তু এই ঐক্য ছিল ভূয়া ও অন্তঃসারশূণ্য। একীভূতকরণে যাওয়া সংগঠণসমূহের মধ্যে যে “সাধারন দফাসমূহ” বিদ্যমান ছিল তা নির্ণয় করতে দরকষাকষির ওপর তা ভিত্তি করেছিল। কিন্তু এই “সাধারণ দফাসমূহ” অন্তর্ভূক্ত করেছিল এবং বস্তুত ভিত্তি করেছিল চারু মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত নকশালবাড়ী আন্দোলনের একটি ভুল সারসংকলনের ধারাবাহিকতাকে, আর প্রকৃতপক্ষে, সেই অভিজ্ঞতা ও সেই শিক্ষাসমূহের বর্জনকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। আশ্চর্য নয়, এই সুবিধাবাদী ঐক্য আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনের আরো অন্য বহুর মতো “দুয়ে মিলে এক হয়” কে ভিত্তি করেছিল, গণযুদ্ধের রণনীতির প্রতি মৌখিক সমর্থনকে যুক্ত করেছিল শান্তিপূর্ণ গণসংগঠণ গড়ে তোলাকে একটি “প্রয়োজনীয় উপস্তর” করার একটি লাইনের সাথে এবং অবৈধ সংগ্রামকে সংসদীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী অংশগ্রহণের সাথে যুক্ত করে। মার্কসবাদকে সুবিধাবাদের “সমমূল্যে” স্থাপন করার এই ধরণের সমন্বয়বাদ সর্বদা এই অর্থ করে যে মার্কসবাদ হচ্ছে স্রেফ জানালার পর্দা যেখানে সংশোধনবাদী অনুশীলন ও সজ্জিতকরণ আধিপত্য করে। জনশক্তির ক্ষেত্রে এই নীতিহীন ঐক্য বেশিদিন টিকেনি, আর সাবানের ফেনার মতো মিলিয়ে যায়। এই ঐক্য যে উদ্দীপনা জাগিয়েছিল তা এমনকি আরো হতাশা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এর অর্থ এই নয় যে জনশক্তির সদস্য ও নেতাদের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মধ্যে বেশিকিছু নেই যা ভারতে একটি প্রকৃত ঐক্যবদ্ধ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী অগ্রগামী পার্টি গঠণে অবদান রাখতে পারে ও অবশ্যই রাখবে। কিন্তু তাকে কার্যকর হতে ও প্রকৃতই জনগণের সেবায় হতে “এক নিজেকে দুয়ে বিভক্তকরণ”-এর প্রক্রিয়া এবং বিশেষত সুবিধাবাদ ও সংশোধনাদকে বর্জন ও সমালোচনা করা দরকার।

কমিউনিস্ট পাটির আন্তর্জাতিক লাইন সম্পর্কে

প্রতিটি রাজনৈতিক পার্টি অথবা সংগঠন একটি অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গী ও পদ্ধতি দ্বারা পরিচালিত। একটা পার্টির জন্য এটা অসম্ভব যে সে যখন নিজ দেশে বিপ্লব করতে যায় তখন এক মতাদর্শিক রাজনৈতিক লাইন প্রয়োগ করবে, আর আন্তর্জাতিক আন্দোলনে গিয়ে আরেকটি। ইতিহাস এটা বারবার দেখিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের গঠণ ও ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের ঠিক পরের বছরগুলিতে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিল একটি একক প্রক্রিয়ার অংশ। জারীয় রাশিয়া থেকে জন্ম নেওয়া সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব সমর্থন করা হবে কি হবেনা তা নিজ নিজ দেশে সর্বহারা একনায়কত্বের জন্য লড়াইয়ের সাথে যুক্ত ছিল। একইভাবে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে মাওয়ের সংগ্রামকে সমর্থন করা এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হচ্ছে প্রত্যেকটা দেশে প্রকৃত কমিউনিস্ট ও রঙরেঙের সংশোধনবাদীদের মধ্যে নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যরেখা। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে আজকে যা অনিবার্য মনে হচ্ছে তা নিয়ে সেসময় তিক্তভাবে লড়াই করতে হয়েছিল। লেনিন ও আধুনিক সংশোধনবাদীদের মধ্যে সুবিধাবাদী ও মধ্যপন্থীদের একটা দঙ্গল ছিল যারা সর্বহারা শ্রেণীর ঐক্য অথবা “যে কোন কাজই সঠিক” এই দর্শনের সরল প্রয়োগবাদের নামে লেপে মুছে দিতে চেয়েছিল এই পার্থক্যরেখাকে। যখন মাও ঘোষণা করছিলেন যে “বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত” আর সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে দুনিয়া কাঁপানো সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, কিছু প্রভাবশালী শক্তি যেমন উলেখযোগ্যভাবে ভিয়েতনামের ওয়ার্কার্স পার্টি যা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেও বিরুদ্ধে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামে নেতৃত্ব ছিল, তারা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভূয়া “ঐক্য”-এর দিকে ফেরার চেষ্টা করছিল, যে এমনকি

খোদ সোভিয়েত সংশোধনবাদী চক্রকেও আলিঙ্গন করেছিল। মার্কিনের সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামী নেতৃত্বের বিরাট প্রয়োজনীয়তার কথা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা, এবং কূটনীতি ও আপোষ-এর বক্তব্য সহজে কল্পনা করা যায়। কিন্তু আমরা বিয়োগান্তক বিশ্বাসঘাতকতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি যা ভিয়েতনামকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার জালে আটকা পড়ায় চালিত করেছে, এমনকি বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী শত্রুরবিরুদ্ধে জনগণ এতটা বীরত্বব্যাঞ্জক ও সফলভাবে লড়াই করার পরও। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সুবিধাবাদ, প্রয়োগবাদ, মধ্যপন্থা ও সংশোধনবাদ নিশ্চিতভাবে দেশে পরিচালিত যে কোন বিপ্লবী আন্দোলনে প্রবিষ্ট হয়ে কুড়ে কুড়ে খাবে ও চূড়ান্তত ধ্বংস করবে। অতীতে যা সত্য ছিল বর্তমানেও তা কম সত্য নয়। চীনে সংশোধনবাদী ক্যুর পর মাওবাদী আন্দেলনে অনিবার্য বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং কিছু দিনের জন্য আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনের বিভিন্ন বাহিনীসমূহ ভিন্ন ভিন্নভাবে আগানোর প্রয়োজনে পতিত হয়। চীনে বিপর্যয় ও বিশ্ব আন্দোলনে তার প্রভাব থেকে দ্রুত শিক্ষা নিতে কোন কোন শক্তি অন্যদের চেয়ে অধিকতর প্রস্তুত ছিল। বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনের জন্য চীনের সংশোধনবাদীদের প্রকৃত চরিত্র অধিকতর দ্রুতভাবে ও নির্ধারকভাবে চিনতে পারাটা এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর বাধ্যবাধকতা হাতে তুলে নেয়ার কারণে, এটা থেকে বিশেষ সুবিধা দাবীর প্রশ্ন নয়। যেমনটা মাও কত চমrকারভাবে বলেছেন, “আগে অথবা পরে আসুন, যারা বিপ্লব করবেন তারা সমান ব্যবহার পাবেন।”

আগে যখন অনেক কমিউনিস্ট শক্তি ভিন্নভাবে কাজ করছিল, আজকে তার থেকে ভিন্নভাবে, সৌভাগ্যবশত, আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সকল শক্তি একটি আন্তর্জাতিক স্তরে ঐক্যবদ্ধ হতে চাইছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কার সাথে ঐক্য, কোন্ লাইনের ওপর ভিত্তি করে, কোন্ মতাদর্শ সহকারে এবং কোন্ উদ্দেশ্যে? বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলনের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গী কেউ গ্রহণ করে তা ক্ষুদ্র ব্যাপার নয়। এটা অসম্ভব যে কেউ নিজ দেশে বিপ্লবে সঠিক হবে কিন্তু রিম-এর প্রতি বৈরী অথবা নিস্পৃহ হবে। বিপরীতে রিম-সংক্রান্ত একটি ভুল মূল্যায়নকে সংকেত হিসেবে নিতে হবে এবং তা রাজনীতি ও মতাদর্শের সেই ভ্রান্ত দিকগুলোর আবিস্কার ও মূলোrপাটনে সেবা করে যার ওপর এই ধরণের ভ্রান্ত মূল্যায়ণ ভিত্তি করে আছে।

এটাও গুরুত্বের সাথে লক্ষনীয় যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলবদ্ধকরণ নিজ নিজ দেশে শ্রেণীসংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নে রাজনৈতিক পার্টিসমূহ যা অনুসরন করে তার প্রতিফলনের প্রবণতা দেখায়। বেলজিয়ামের ওয়ার্কার্স পার্টি (পিটিবি)র সংসদীয় পন্থা.. আধুনিক সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে কঠিণ লড়াইয়ের অর্জিত শিক্ষাসমূহকে মুছে ফেলার এবং একটি সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী মাওবাদ-বিরোধী ভিত্তিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে “পুনঐক্যবদ্ধকরণ”-এর  তাদের প্রচেষ্টার সাথে হাতে হাত রেখে চলে। মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি ও সংগঠণসমূহের আন্তর্জাতিক সম্মেলন (আইসিএমএল)-এ যারা যোগদান করেছেঃ জার্মানীর মার্কসবাদীÑলেনিনবাদী পার্টি, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মশাল), ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) এবং এরকম গ্রুপগুলির অবিপ্লবী কর্মসূচী হচ্ছে সেই গ্লু যা এই সংকরকে এক রাখে। সংশোধবাদী ও সুবিধাবাদীদের সাথে ভাঙন না ঘাটিয়ে বিপ্লবী আন্দোলনে এক পাও রাখা সম্ভব নয় আজ আমরা দেখতে পাই রিম-এর অস্তিত্ব প্রকৃত মাওবাদী শক্তিসমূহকে জাতীয় পর্যায়ে ও সেই সাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ করতে অধিকতর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এটা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে পরিস্কার হয়েছে, যেখানে উদাহারনস্বরূপ, প্রকৃত মালেমা শক্তিগুলো আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করতে সমাবেশিত হয়ে আসছেন। ভারতে দুটো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী গ্রুপ-এর মধ্যে চলছিল যে সশস্ত্র সংঘাত তা বন্ধ করতে রিম একটি আহ্বাণ জানায়। সেসময় অনেকে ১৯৯৯ সালে রিম পার্টি ও সংগঠনসমূহের দক্ষিন এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলনে গৃহীত উদ্যোগকে বাতিল করে দিয়েছিল নিস্ফলা” বলে, এমনকি অযাচিত নাক গলানো হিসেবে। সংঘাত বন্ধে সহায়তায় এবং সেদেশের মাওবাদী আন্দোলনে অধিকতর ইতিবাচক আবহাওয়া জন্ম দিতে এই আহ্বাণ যে ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা কারো পক্ষেই অস্বীকার করা অসম্ভব। (১৯৯৯ সালে রিমের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলন একটি আহ্বাণ জানায় যা এ ওয়ার্ল্ড টু উইন ২০০০/২৬-এ পুনমুদ্রিত হয়েছে)। এর অর্থ কি এই যে রিম-এর মধ্যেই মাওবাদী শক্তিসমূহ রয়েছে, এবং এর বাইরে আর কেউ মাওবাদী নন? নিশ্চিতভাবে এ ধরণের বক্তব্য হবে হাস্যকর। রিমের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী সংগঠণসমূহ রয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে প্রকৃত মাওবাদীদের ঐক্যে দৃপ্ত ভূমিকা রাখা যাদের প্রয়োজন, এবং অবশ্যই রাখা উচিত। যেমনটা আমাদের জন্ম থেকে আমরা বলছি, রিমের লক্ষ্য হচ্ছে একটি নতুন ধরণের কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক দ্বারা তার নিজের প্রতিস্থাপন। আমরা এখন পর্যন্ত যতটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার চেয়ে গুণগত ভাবে উচ্চতর ভিত্তিতে একটি সংশ্লেষণ ও এক নয়া দ্বন্দ্বকে তা প্রতিফলিত করবে। প্রশ্ন হচ্ছে রিম ও অন্যদের অর্জনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিকভাবে এক প্রকৃত মালেমা মেরু উত্থিতকরণে এগিয়ে যাওয়া নাকি এটা বিশ্বাস করা যে প্রথম কর্তব্য হচ্ছে রিমের ভ্রƒণকেন্দ্র ভূমিকাকে বিলুপ্ত করা, এবং তাকে মাওবাদী ও সুবিধাবাদীদের সাথে মিশিয়ে ফেলে অথবা অন্য কোন অকার্যকর ধরণ দ্বারা একটি সমন্বয়বাদী ও অকার্যকর আড্ডাখানা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা। প্রতিটি প্রকৃত কমিউনিস্ট শক্তি যে প্রশ্নকে মোকাবেলা করছে তা হচ্ছে সর্বান্তকরণে মালেমা শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা অথবা পিছিয়ে থাকা এবং অন্যদের কাছেও তা করার দাবী জানানো। তাহচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ-এর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া নাকি রাজনীতি ও মতাদর্শকে অস্থায়ী সামর্থ্যরে মতো অন্য বিবেচনাসমূহের অধীনস্ত হতে হবে। (আমরা অব্যাহতভাবে আশ্চর্যান্বিত হই যে কলম্বিয়ার এফ এ আর সির মত দুষ্ট সংশোধনবাদী শক্তিসমূহ মাওবাদী আন্দোলনের কারো কারো দ্বারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ “মার্কসবাদী-লেনিনবাদী” হিসেবে বিবেচিত হয়!) আন্তর্জাতিকভাবে প্রকৃত মালেমা শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে “সর্বান্তকরণে সমর্থন করা” অথবা “পিছিয়ে থাকা” হচ্ছে লাইনের এক নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এটা এমন একটা জিনিস যাকে কার্পেটের নীচে ঝারু দেওয়া যায়না, বিশেষত তা একটি নির্দিষ্ট দেশে একটি অগ্রগামী পার্টি গঠণের সমস্যার সাথে জড়িয়ে আছে।

আজকে “ঐক্যের হাওয়া” বিস্তৃত হচ্ছে এবং বহু দেশে বিপ্লবীমনা জনগণের জন্য আশা নিয়ে আসছে। দিগন্তে উদ্ভাসিত হয়ে আসা মহা যুদ্ধসমূহ দাবী জানাচ্ছে কমিউনিস্ট শক্তিসমূহ তাদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রমে বিরাট প্রচেষ্টা চালাক এবং একটি ঐক্য সংহত করুক, আজকে যা বিদ্যমান তার চেয়ে উচ্চতর একটা কিছু, অধিকতর দৃঢ় এবং অধিকতর সঠিক। মাওবাদীদের ঐক্য অর্জনের সংগ্রাম সরল হবেনা, বিপ্লব সেভাবে কখনো হয়না। আমাদের প্রচেষ্টসমূহকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে, যাকিছু ভুল তাকে খ-ন করে ও যাকিছু সঠিক তাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরায় ভয়শূণ্য হয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকৃত কমিউনিস্ট ঐক্যে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদপে নেওয়া সম্ভব।।

“‘দুয়ে মিলে এক হওয়ার তত্ত্ব’ পুঁজিবাদ পুনপ্রতিষ্ঠার একটি প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন”-এর পূর্ণপাঠ এ ওয়ার্ল্ড টু উইন-এর ওয়েবসাইট www.aworldtowin.org -এ আসবে।