অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং ১ । পিসিপির তিনটি মৌলিক দলিল: ১) মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ সম্পর্কে ২) গনসালো চিন্তাধারা সম্পর্কে ৩) কর্মসূচী ও নীতিমালা

 

 অনুবাদ সাহিত্য পত্র   

 

পূবাসপা এমইউজি কর্তৃক অনুবাদ সাহিত্য পত্রের দশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা এর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। –সর্বহারা পথ

অনুবাদ সাহিত্য পত্র, সংখ্যা নং

পিসিপির তিনটি মৌলিক দলিল) মার্কসবাদলেনিনবাদমাওবাদ সম্পর্কে  ২) গনসালো চিন্তাধারা সম্পর্কে  ৩) কর্মসূচী নীতিমালা

পূবাসপার এম ইউজির রাজনৈতিক অনুবাদ সাহিত্য পত্র

পূবাসপার এম ইউজির নেতৃত্ব কমিটির অনুবাদ সাহিত্য বিভাগ কর্তৃক  হাতে লেখা প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ১০, ২০০৪

পূবাসপার এম ইউজি কর্তৃক কম্পিউটার মুদ্রন প্রকাশ:  মে ১০, ২০০৫

user18970_pic6973_1291527089

সম্পাদকীয়

আমাদের ঘোষণায় আমরা যেমনটা বলেছি: বিশেষত মাওবাদ সম্পর্কে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব (জিপিসিআর) ও তrপরবর্তী আন্তর্জাতিক সংশ্লেষণকে আঁকড়ে ধরা। এ আঁকড়ে ধরার অংশ হিসেবে আমাদের এ প্রয়াস। ঘোষণায় আমরা দুই লাইনের সংগ্রামকে মাওবাদী পার্টির নীতিগত ভিত্তি ও পার্টি বিকাশের অভ্যন্তরীণ চালিকা শক্তি হিসেবে আঁকড়ে ধরবো বলেছি। এ সেই সুস্থ, গণতান্ত্রিক, অহংমুক্ত দুই লাইনের সংগ্রাম (টুএলএস) চালানোর লক্ষ্য থেকে।

মহামতি লেনিন তাঁর সুবিখ্যাত ‘কী করণীয়’ পুসতকে বলেছেন: ‘‘ বিপ্লবী তত্ত্ব ছাড়া বিপ্লবী আন্দোলন হতে পারেনা।’’

কিন্তু বিপ্লবী তত্ত্ব কি শিকেয় তুলে রাখার জিনিস ?

তা কি বছরের পর বছর আলস্য চর্চার বিষয় ?

বছরের পর বছর কি তা স্থগিত রাখা যায় ?

মোটেই তা নয়, বরং সংগ্রামের অন্য দুটি রূপের সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই একে আমরা একটি সিরিয়াস কাজ হিসেবে গ্রহন করেছি। প্রতি মাসে অন্তত একটি অনুবাদ আমরা প্রকাশ করবো।

পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি দুনিয়ার মাওবাদীদের অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে। মাওবাদ প্রতিষ্ঠা, রিম (বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন) প্রতিষ্ঠা, পেরুর মহান গনযুদ্ধসহ অসংখ্য অবদান যে পার্টি তার মহান নেতা বর্তমান বিশ্বের মহানতম জীবিত নেতৃত্ব কমরেড গনসালোর প্রতিভাদীপ্ত নেতৃত্বের অধীনে রেখেছে, তার কাছে সারা দুনিয়ার সর্বহারা শ্রেনী বিশেষভাবে ঋণী।

পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টি (পিসিপি)র ১ম কংগ্রেসে গৃহীত ও ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত মহা গুরুত্বপূর্ণ এ দলিলগুলো সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংস্কারবাদে আটকে পড়া, টুকরো টুকরো হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়া আমাদের পূর্ববাংলার মাওবাদী আন্দোলনে নিশ্চিত গতি সঞ্চারে সহায়ক হবে।

প্রিয় বন্ধুগন, গনজালো চিন্তাধারার প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। পিসিপি মনে করে, পেরুর বিপ্লবের বাস্তবতায় মার্কসবাদ- লেনিনবাদ- মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ এর সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগের ফল হল গনজালো চিন্তাধারা।

আমাদের পূর্ববাংলায় সভাপতি সিরাজ সিকদার সেই মহান অবদান রাখেন। সভাপতি সিরাজ সিকদারের মহান পথনির্দেশক চিন্তাধারাকে আমাদের অতি অবশ্যই পূনরাবিস্কার করতে হবে আর পিবিএসপি তথা গোটা মাওবাদী আন্দোলোনকে পূনর্গঠন করতে হবে। এস এস চিন্তাধারাকে সঠিকভাবে প্রয়োগে নিতে হবে আর নতুনতর সংশ্লেষণ গড়তে হবে। এছাড়া গনজালোচিন্তাধারা থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়না। তবে মনে রাখা দরকার চেয়ারম্যান গনসালোর চিন্তাধারাকে যেমন পিসিপি থোকে বিছিন্নভাবে চিন্তা করা যায়না, তেমনি সভাপতি সিরাজ সিকদারের চিন্তাধারাকে তার মহান সৃষ্টি পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি (পিবিএসপি) থেকে পৃথক করা যায়না। যারা পিবিএসপি থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে এরুপ চিন্তা করবেন তাদের চিন্তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। সভাপতি ও পিবিএসপি গোঁড়ামিবাদকে পার্টিতে অভ্যন্তরীণভাবে প্রধান বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। গোঁড়ামিবাদীরা তত্ত্ব থেকে যাত্রা করে তত্ত্বেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিপ্লবী অনুশিলনের গুরুত্ত্ব তারা বোঝেনা। অন্যদিকে আমাদেরকে প্রয়োগবাদ সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োগবাদীরা অনুশীলন করে কিন্তু তত্ত্বের ধার ধারেনা। ফলত, তাদের অনুশিলন সুবিধাবাদের চোরাবালিতে আটকে যায়। মহান সভাপতি এসএস ছিলেন একই সঙ্গে একজন তাত্ত্বিক ও প্রয়োগবীদ।তিনি সর্বদাই তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হাজির করেছেন, ক্যাডারদের শিক্ষিত করেছেন, এমনকি শত্রুদেরও শিখাতে চেয়েছেন। সর্বদাই তিান টুএলএস কে আঁকড়ে থেকেছেন। অন্যদিকে তিনি স্বল্প সময়ে ঘাঁটি এলাকা গড়ে তোলাসহ বিরাট সৃজনশীল প্রয়োগের নজীর স্থাপন করেছেন।

যাহোক, খুব শীর্ঘ্রই আমাদের গ্রুপের যে মুখপত্র প্রকাশিত হবে তাতে আমরা অধিকতর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাবো।

আমাদের অনুবাদ সাহিত্যপত্রের যাত্রা শুভ হোক!

                             ফেব্রুয়ারী ১০,  ২০০৪ ।

মৌলিক দলিলসমূহ

 

মার্কসবাদলেনিনবাদমাওবাদ সম্পর্কে

শ্রেণীসংগ্রামের অগ্নিপরীক্ষায় আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শ মার্কসবাদ হিসেবে জন্ম নেয়, যা পরে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ এবং তr পরবর্তীতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ-এ বিকশিত হয় সূতরাং, যেহেতু সত্য তাই সর্বশক্তিমান সর্বহারার বৈজ্ঞানিক মতাদর্শের দান্দ্বিক প্রক্রিয়ার রয়েছে তিনটি স্তর অথবা স্তম্ভঃ ১। মার্কসবাদ ২। লেনিনবাদ ৩। মাওবাদ। এই তিনটি স্তর হচেছ একই ঐক্যের তিনটি অংশ যা একশ চল্লিশ বছর আগে কমিউনিষ্ট ইশতেহার দিয়ে শুরু হয়েছে শ্রেনীসংগ্রামের বীরত্ত্বব্যাঞ্জক মহাকাব্য দ্বারা, কমিউনিষ্ট পর্টিগুলোর প্রচন্ড ও ফলপ্রসু দুইলাইনের সংগ্রামসমূহের মধ্যে, আর চিন্তা ও কর্মের বিরাট (টাইটানিক) কাজের মাধ্যমে, যা কেবল b36  সর্বহারা শ্রেণী সৃষ্টি করতে পারে। আজ তিনটি অমলিন আলো ভাস্বর: মার্কস, লেনিন ও মাওসেতুঙ যারা তিনটি মহান উলম্ফনের মাধ্যমে আমাদের সজ্জিত করেছেন:  মার্কসবাদ- লেলিনবাদ- মাওবাদ, যা আজ প্রধানত মাওবাদ এর অপরাজেয় মতাদর্শ দ্বারা।

তথাপি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যখন তার সার্বজনীন প্রজোয্যতার একটি স্বীকৃতি অর্জন করেছে, মাওবাদ তৃতীয় স্তর হিসেবে সম্পুর্ণ স্বীকৃতি পায়নি। কেউ কেউ এর এই বাস্তবতাকে সরলভাবে অস্বীকার করেন, অন্যদিকে কেউ কেউ তাকে স্রেফ ‘‘ মাওসেতুঙ চিন্তাধারা’’ হিসেবে গ্রহন করেন। সারবস্তুতে, উভয় মতাবস্থানই, তাদের অনিবার্য পার্থক্যসহ চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক মার্কসবাদের সাধারণ বিকাশকে অস্বীকার করে। মাওবাদের ‘‘বাদ’’ চর্ত্রিকে অস্বীকার এর সার্বজনীন প্রযোজ্যতাকে অস্বীকার করে এবং ফলত আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শর তৃতীয়, নতুন ও উচ্চতর স্তর হিসেবে এর বাস্তবতাকে অর্থাr মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদকে অস্বীকার করে, যাকে আমরা উর্ধ্বে তুলে ধরি, রক্ষা ও প্রয়োগ করি।

একটি সূচনা হিসেবে, মাওবাদকে আরো ভালভাবে বুঝতে, আর এর জন্য সংগ্রাম করার প্রয়োজনীয়তাকে অনুভব করতে আসুন আমরা লেনিনকে স্মরণ করি। তিনি আমাদের শিক্ষা দেন যে বিপ্লব প্রাচ্যে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে নির্দিষ্ট বাস্তব অবস্থাসমূহকে তুলে ধরেছে ।নতুন পরিস্থিতিসমুহ নীতি অথবা নিয়মকে নেতিকরন করেনি বরং পরাজয়ের বিপদের ঝুঁকিতে বিপ্লবকে রেখেও মার্কসবাদ নতুন পরিস্থিতিকে অবহেলা করতে পারেনি। উদারতাবাদ ও ভূয়ো মার্কসবাদে ঠাঁসা পন্ডিতি ও পুঁথিগত বিদ্যা বুদ্ধিজীবিদের নতুনের বিরুদ্ধকার ক্রোধকে সহ্য না করে একমাত্র ন্যায্য ও সঠিক করণীয় হচ্ছে মূর্ত বাস্তবতায় মার্কসবাদকে প্রয়োগ করা। আর প্রতিটি বিপ্লব অনিবার্যভাবেই যা মোকাবেলা করে সেই নতুন পরিস্থিতি ও সমস্যাসমূহ সমাধান করা। সংশোধনবাদী, সুবিধাবাদী ও দলত্যাগীরা যে ভীতিকর ও ভন্ডামিপূর্ণ ‘‘ ভাবাদর্শ, শ্রেণী ও জনগণকে রক্ষা’’ র বুলি আওরায় তাকে যেমন মোকাবেলা করতে হয়েছে, অন্যদিকে পঁচা বুর্জোয়া মতাদর্শ দ্বারা কলুষিত, পুরোনো সমাজের অন্ধরক্ষাকারী, যে সমাজে তারা হচেছ পরজীবি, সেই পাশবিক প্রাতিষ্ঠানিক আর পুরোনো ধারার ধারক বাহকদের কৃত মার্কসবাদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর আক্রমণকে মোকাবেলা করতে হয়েছে (বাক্যটির ইংরেজী অনুবাদ অসম্পূণ–বাংলা অনুবাদক )। লেনিন পরিস্কারভাবে আরো বলেছেন যে যারা কুসুমাসতীর্র্ণ পথের পুঁজারী আর নতুন কিছু দেখতে অসমর্থ বিপ্লব তাদের নতুন মহা আশ্চর্য থেকে আশ্চর্যতর বিছু উপহার দেয়, আর আমরা সবাই জানি, মাকর্সবাদ যে সমস্যা সমাধানে এখনও সক্ষম হয়নি, তার সমাধানে তিনি প্রাচ্যের কমরেডদের উপর আস্থা রেখেছিলেন।

অধিকন্তু, আমাদের অবশ্যই ভালোভাবে মনে রাখা উচিৎ যে, যখন কমরেড স্ট্যালিন ন্যায্যত ও সঠিকভাবে বললেন যে আমরা মার্কসবাদের বিকাশ হিসেবে লেনিনবাদের স্তরে প্রবেশ করেছি, তখনও মার্কসবাদের কথিত রক্ষার অসিলায় কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণকারীদের তরফ থেকে বিরোধিতা এসেছিল। সেসব লোকেরাও ছিল যারা বলেছিল যে লেনিনবাদ শুধু পশ্চাদপদ দেশগুলোতে পযোজ্য। কিন্তু সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় অনুশীলন লেনিনবাদকে এক মহান বিকাশ হিসেবে তুলে ধরেছে আর এভাবে সর্বহারার মতাদর্শ বিশ্বের সামনে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হিসেবে বিজয়ের গর্বে ঝলক দিয়ে উঠে।

আজ, মাওবাদ একই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। মার্কসবাদের মতো সব নতুন জিনিসই সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই এগিয়েছে এবং একইভাবে মাওবাদ নিজেকে আরোপ করবে আর স্বীকৃত হবে।

আর, যে প্রেক্ষাপটে চেয়ারম্যান মাওসেতুঙ বিকশিত করেন আর মাওবাদ আবির্ভূত হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাহচেছ সাম্রাজ্যবাদ,  বিশ্বযুদ্ধ, আšতর্জাতিক সর্বহারা আন্দোলন, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন, মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে সংগ্রাম এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নে পুঁজিবাদের পূনরুত্থান।বর্তমান শতাব্দীতে তিনটি বিরাট ঐতিহাসিক স্তম্ভকে গুরত্ব দিতে হবে ঃ প্রথমত ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব যা বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের যুগের দরজা খুলে দিয়েছে, দ্বিতীয়ত, ১৯৪৯ সালে চীন বিপ্লবের বিজয় যা সমাজতন্ত্রের সপক্ষে বিভিন্ন শক্তির পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং তৃতীয়ত, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব বা ১৯৬৬ সালে শুরু হয় কমিউনিজমের দিকে অগ্রযাত্রাকে বর্জায় রাখার লক্ষ্যে সর্বহারা একনায়কত্বের অধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখার জন্য। এটা গুরুত্ব পাওয়ার জন্য্র যথেষ্ট যে চেয়ারম্যান মাও এসব গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক কীর্তির দুটোর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিশ্ববিপ্লবের কেন্দ্র হিসেবে চীনে মাওবাদ মূর্তভাবে আবির্ভূত হয় দ্বন্দ্বসমূহের জটিলতম কেন্দ্রবিন্দুতে আর তীব্র ও নিমর্ম শ্রেনীসংগ্রামের ভেতর যা চিহ্নিত হয় মাঞ্চুরিয়া সাম্রাজ্যের ধক্ষংসের পর (১৯১৯সালে) সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মেকী কান্না ও বিভক্তিকরন, ১৯১৯ সালের সাম্রজ্যাবাদ বিরোধী আন্দোলন, মহান কৃষক জনতার বিদ্রোহসমুহ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবের বাইশ বছরের সশস্ত্র সংগ্রাম, সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা ও বিকাশের মহান প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লব পরিচালনার দশটি ঝরো বছর, আর সেই সঙ্গে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির অভ্যন্তরস্থ তীক্ষতম দুইলাইনের সংগ্রাম বিশেষত সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে। এসবই উপরে বর্ণিত আন্ততর্জাতিক পরিস্থিতির কাঠামোর মধ্যে ছিল। এসব ঐতিহাসিক কীর্তিগুলো থেকে চারটি অসাধারণ গুরুত্বপর্ণ ঘটনা বের করে আনতে হবে ১৯২১ সালে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিসি)র প্রতিষ্ঠা, ১৯২৫ সালের শরrকালীন ফসল কাটার অভ্যুত্থান যা গ্রাম থেকে শহরের দিকে পথের সূচনা করেছিল, ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ঘটা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব (জিপিসিআর )। এসব কিছুতেই চেয়ারম্যান মাও ছিলেন এক নায়ক এবং চীন বিপ্লবের স্বীকৃত নেতৃত্ব।

চেয়ারম্যান মাওয়ের জীবনী থেকে আমরা বলতে পারি যে তিনি ১৮৯৩ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন, যুদ্ধের অগ্নি শিখায় তপ্ত বিক্ষুব্ধ এক পৃথিবীতে প্রথম চোখ মেলে দেখেন, তিনি ছিলেন কৃষকের সন্তান যখন  বকসার বিদ্রোহ শুরু হয় তিনি ছিলেন সাত বrসর বয়সী; তিনি শিক্ষক ট্রেনিং কলেজের একজন ছাত্র ছিলেন, সাম্রাজ্যের ধ্বংসের সময় তিনি ছিলেন ১৮ বছরের আর তিনি নিজেকে সৈন্য দলভূক্ত করেন পরবর্তীতে তার নিজ প্রদেশ হুনানের তরুনদের একজন মহান সংগঠক হতে। তিনি হচ্ছেন কমিউনিষ্ট পার্টি আর শ্রমিক ও কৃষকদের লাল ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা। সর্বহারা শ্রেণীর সামরিক তত্ত্ব হিসাবে গণযুদ্ধকে বিকশিত করার মাধ্যমে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও এর পথ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন নয়া গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক এবং গণপ্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, মহান অগ্রগামী উলম্ফন (গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড) ও সমাজতান্ত্রিক বিকাশের প্রবক্তা। তিনি সমকালীন ক্রুশ্চেভ ও তার ভৃত্যগনের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতা, আর মহান সর্বহারা সংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতা ও প্রধান ছিলেন। এসব হচেছ একটি জীবনের স্তম্ভসমূহ, যে জীবন সম্পূর্ন ও আন্তরিক ভাবে বিপ্লবে নিবেদিত ছিল। এই শতাব্দিতে সর্বহারা শ্রেণী তিনটি বিশাল বিজয় প্রত্যক্ষ করেছে যার দুটি চেয়াম্যান মাওয়ের সাথে সম্পর্কিত আর একটি যদি প্রচুর গৌরবোজ্জ্বল হয়, দুটো হচ্ছে আরো বেশী।

মাওবাদের সারবস্তু বলতে সংক্ষেপে আমাদেরকে নিচের তিনটি মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরতে হবেঃ

১। তত্ত্ব: মার্কসবাদের তিনটি অংশ রয়েছেঃ মার্কসবাদী দর্শন, মার্কসবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতি, এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। এই তিনটি অঙ্গের বিকাশ সার্বিকিভাবে মার্কসবাদের এক বিরাট গুণগত উলম্ফনের জন্ম দেয়, উচচতর পর্যায়ের এক ঐক্য হিসেবে, যা এক নতুন স্তরের দিক নির্দেশনা দেয়। ফলত, এটা দেখানো জরুরী যে, তত্ত্বে ও অনুশীলণে যা দেখা যায়, চেয়াম্যান মাও এমন একটি মহান গুণগত উলম্ফনের সৃষ্টি করেছেন। আসুন পরবর্তী পয়েন্ট গুলোর মাধ্যমে আমরা সেটা তুলে ধরি:

মার্কসবাদী দর্শনে তিনি দ্বন্দ্বতত্ত্বের সারবস্তু বিকশিত করে, দ্বন্দ্বের নিয়ম (ল অব কন্ট্রাডিকশন) বিকশিত করেন একে একমাত্র মৌলিক নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে; এছাড়া রয়েছে জ্ঞানের তত্ত্বের তাঁর গভীর দ্বান্দ্বিক উপলব্ধি যার কেন্দ্র হচেছ এর নিয়ম রচয়িতা দুটি উলম্ফন (অনুশীলণ থেকে জ্ঞান, আর তার বিপরীত, কিন্তু জ্ঞান থেকে অনুশীলন হচেছ প্রধান)। আমরা জোর দিয়ে বলি যে, তিনি দ্বন্দ্বের নিয়মকে পান্ডিত্যপূর্ণভাবে রাজনীতিতে প্রয়োগ করেছেন এবং অধিকন্তু ব্যপক জনগণের মধ্যে দর্শনকে নিয়ে গেছেন সেই কর্তব্য সম্পাদন করার মাধ্যমে যা মার্কসের বাকী ছিল।

মার্কসবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতিতে, চেয়ারম্যান মাও ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর মধ্যকার সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করেন এবং “উrপাদিকা শক্তি’’ সংক্রান্ত সংশোধনবাদী থিসিসের বিরুদ্ধে মার্কসবাদী- লেনিনবাদী সংগ্রামকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত টানেন যে উপরিকাঠামো তথা চেতনা ভিত্তিকে রুপান্তর করতে পারে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে উৎপাদিকা শক্তিকে বিকশিত করা যায়। রাজনীতি হচেছ অর্থনীতির ঘনীভূত প্রকাশ, লেনিনবাদী এই ধারণাকে বিকশিত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যে, রাজনীতিকে অবশ্যই কমান্ডে থাকতে হবে (সর্বস্তরে প্রযোজ্য) এবং রাজনৈতিক কাজ হচেছ অর্থনৈতিক কাজের প্রাণসূত্র যা স্রেফ এক অর্থনৈতিক পলিসি নয় বরং আমদের রাজনৈতিক অর্থনীতির সত্যিকার সমাধানে নিয়ে যায়।

প্রায়ই একটি ব্যাপারকে তার গুরুত্ব সত্ত্বেও পাশে ফেলে রাখা হয়, বিশেষত তাদের কর্তৃক যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লবসমূহ  করছেন, সেটা হচেছ আমলাতান্ত্রিক পুঁঁজিবাদ সংক্রান্ত মাওবাদী থিসিস অর্থাr সেই পুঁজিবাদ যা নিপীড়িত দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন মাত্রার সামন্তবাদের ভিত্তিতে অথবা এমনকি প্রাক-সামন্তবাদী স্ততরসমূহের ভিত্তিতে গড়ে তুলছে। এটা হচেছ একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, প্রধানত, এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায়। একজন ভালো রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ সংক্রানত উপলদ্ধি থেকে উদ্ভূত হয়, যেখানে আমলাতান্ত্রিক পুঁজির বাজেয়াপ্তকরণ দ্বিতীয় স্তর হিসেবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব পরিচালনার অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠন করে।

কিন্তু প্রধান বিষয়টি হচেছ চেয়ারম্যান মাওসেতুঙ সমাজতন্ত্রের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিকশিত করেছেন। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন হল, সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের উপর তাঁর সমালোচনা, সেই সাথে চীনে কিভাবে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা যায় তার উপর তাঁর থিসিসঃ কৃষিকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে আর শিল্পকে নেতৃত্বকারী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিয়ে, ভারী শিল্প, হালকা শিল্প ও কৃষির মধ্যকার সম্পর্ক দ্বারা পরিচালিত হয়ে শিল্পোন্নতকরণ, ভারী শিল্পকে অর্থনৈতিক নির্মাণের কেন্দ্র হিসেবে নিয়ে একই সাথে হালকা শিল্প ও কৃষির প্রতি পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করা। মহান অগ্রগামী উলম্ফল ও তার বাস্তবায়নের শর্তসমূহকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক, যে রাজনৈতিক লাইন একে একটি ন্যায্য ও সঠিক ধারা দেয়, দ্বিতিয়ত, তুলনামূলক বড় অথবা ক্ষুদ্রতর পরিমাণে ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বৃহr সাংগঠনিক কাঠামো, তৃতীয়ত, একটি বিরাট ধাক্কা– ব্যাপক জনগণের এক অতিকায় প্রচেষ্টা, একে গতিতে পরিনত করতে ও একে সফল করতে একটি অগ্রগামী উলম্ফন যার ফলাফলসমূহ নতুন প্রক্রিয়াকে গতিতে আনতে, আশু ফলাফলের চাইতে ঐতিহাসিক লক্ষ্য এবং কৃষির যৌথকরণ আর গণকমিউনের সাথে যোগাযোগ এর জন্য অধিকতর মূল্যবাণ। চুড়ান্তভাবে, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে সমাজতন্ত্রের নিয়মকে বোঝা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বস্তুগত ও আত্বগত বাস্তবতা সংক্রান্ত তাঁর শিক্ষা। সমাজতন্ত্রের অল্প কয়েকটি দশক তার পুরো বিকাশকে দেখতে অনুমোদন করেনা, তাই এর নিয়ম ও তার মূর্তকরণের ওপর একটি ভাল উপলব্ধি দরকার এবং প্রধানত বিপ্লব ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যামান সম্পর্ক এই শ্লোগানের মধ্যে রয়েছে ‘‘ বিপ্লবকে আঁকড়ে ধরো ও উrপাদন বাড়াও”। মার্কসীয় রাজনৈতিক অর্থনিতির এই বিকাশ তার অসীম গুরুত্ব সত্ত্বেও স্বল্প মনোযোগই পেয়েছে ।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে, চেয়ারম্যান মাও সামাজিক শ্রেণীসমূহের তত্ত্বকে আরো বিকশিত করেন তাদেরকে অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে। তিনি বিপ্লবী সহিংসতাকে ব্যতিক্রমহীন সার্বজনীন নিয়ম হিসেবে উঠে তুলে ধরেন, এক শ্রেণীর দ্বারা আরেক শ্রেনীর সহিংস প্রতিস্থাপন হিসেবে বিপব, এভাবে এই মহান থিসিস প্রতিষ্ঠা করেন যে ‘‘বন্দুকের নল থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা বেড়িয়ে আসে” । তিনি নিপীড়িত দেশগুলোতে গ্রামাঞ্চল দিয়ে শহারাঞ্চল ঘেরাওয়ের পথের দ্বারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন সমাধান করেন তার সাধারণ নিয়মসমূহ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে।তিনি সমাজতন্ত্রে শ্রেণীসংগ্রাম সংক্রান্ত তত্ত্ব সূত্রায়িত ও বিকশিত করেন, যাতে তিনি প্রতিভাদীপ্তভাবে উলেখ করেন যে সর্বহারা শ্রেণী ও বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যে, সমাজতান্ত্রিক পথ ও পুঁজিবাদী পথের মধ্যে এবং সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে বৈর সংগ্রাম চলে। সমাজতন্ত্রে এটা মূর্তভাবে নির্ধারিত হয়নি কে কাকে পরাজিত করবে, এটা হল একটা সমস্যা যার সমাধান সময় দাবী করে, পুনপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টা পুনপ্রতিষ্ঠার এক প্রক্রিয়ার শুরু, সর্বহারা শ্রেণীর জন্য শক্তিশালীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার দখল রাখা–অবশ্যই সর্বহারা একনায়কত্বের মাধ্যমে এবং চুড়ান্তভাবে ও প্রধানত ঐতিহাসিক কালজয়ী চমৎকার সমাধান আর তা হচেছ সর্বহারা একনায়কত্বধীন বিপ্লবকে অব্যাহত রাখতে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

সরলভাবে ও প্রত্যক্ষভাবে বিবৃত কিন্তু পরিচিত ও অনস্বীকার্য এই মূল প্রশ্নগুলি মাও কর্তৃক মার্কসবাদের অবিচেছদ্য অংশগুলির বিকাশ দেখায় এবং একটি নতুন, তৃতীয় ও উচচতর স্তর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ- মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের উন্নীত হওয়ার প্রমাণ প্রদর্শন করে।

এসব সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষন অব্যাহত রেখে আসুন অন্যান্য নির্দিষ্ট বিষয়গুলির দিকে তাকাই, যদিও উপরের থেকে জাত সংখ্যাগতভাবেও যদি বিবেচনা করা হয়, জোর দেওয়া ও প্রাপ্য মনোযোগ প্রদান করা প্রয়োজন। [ এই লাইনটি ইংরেজী সংস্করণ এ সম্পূর্ণ নয় – বাংলা অনুবাদক]

১। নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব

প্রথমত, এটা তিন ধরণের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংক্রান্ত মার্কসবাদী তত্ত্বের বিকাশ:

১) বুর্জোয়া একনায়কত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো বুর্জোয়া গণতন্ত্রসমূহ, একটি ধরণ যার সাথে নিপিড়ীত দেশগুলোর যেমন ল্যাটিন আমেরিকার যে কোন দেশের তুলনীয়;

২) সর্বহারা একনায়কত্ব

যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নে অথবা চীনে সংশোধনবাদীদের কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পূর্বে

৩) নয়া গণতন্ত্র

কৃষক শ্রমিক মৈত্রীর ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে কমিউনিষ্ট পার্টির পরিচালনায় যৌথ একনায়কত হিসেবে, যা চীনে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কালে গঠিত হয়েছিল এবং আজকে যা পেরুতে স্বতস্ফুর্তবাবে প্রকাশিত হয় ঘাঁটি এলাকাসমূহে, নয়া গণতন্ত্রের গণপ্রজাতন্ত্রের গণকমিটিসমূহের আকারে। রাষ্ট্র সংক্রান্ত তত্ত্বের বিকাশের মধ্যে মৌলিকভাবে যাতে জোর দিতে হবে তা হচেছ এই যে, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার মূল পার্থক্য রাজনৈতিক ক্ষমতাধারী শ্রেণী অথবা শ্রেণীসমূহের একনায়কত্বের মধ্যে বিদ্যমান। এটা হচেছ প্রধান, আর সরকারের একটা ব্যবস্থা, যাকে রাজনৈতিক ক্ষমতা অনুশীলণের এক সংগঠন হিসেবে বোঝা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে নয়াগণতন্ত্র চেয়াম্যান মাওয়ের রচিত অন্যতম অসাধারন বিকাশ যা আমাদের জন্য বুর্জোয়া বিপ্লবের এক নতুন ধরণ প্রতিভাদীপ্তভাবে বাস্তবায়ন করে, যাতে কেবল সর্বহারা শ্রেণী নেতৃত্ব দিতে পারে। সংশেষণে, যে যুগে আমরা বাস করছি, বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের সেই যুগে – এ হচেছ গণতান্ত্রিক বিপ্লব। নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব এক নতুন অর্থনীতি, এক নতুন রাজনীতি ও এক নতুন সংস্কৃতিকে ধারণ করে, অতি অবশ্যই পুরোনো আইনকে সশস্ত্র উপায়ে উচেছদ করে নতুন একটিকে উর্ধ্বে তুলে ধরে যা হচেছ দুনিয়াকে রূপান্তর করার একমাত্র পথ।

শেষত, এটা জোর দেওয়া গুতুত্বপূর্ণ যে, নয়াগণতন্ত্র হচেছ একটি গণতান্ত্রিক বিপ্লব। প্রধানভাবে গনতান্ত্রিক কর্তব্যগুলি বাস্তবায়ন করলেও এটি গৌনভাবে কিছু সমাজতান্ত্রিক কাজে অগ্রসর হয় যাতে আমাদের মতো দেশগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দুই স্তর বিশিষ্ট বিপ্লবঃ গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক পূর্ণভাবে সমাধা হতে পারে এই গ্যারান্টি দিয়ে যে এ্কবার গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা হবার পর এটা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হিসেবেই অব্যাহত থাকবে কোন প্রকার বিরতি অথবা বাঁধা ছাড়াই।

৩। তিন হাতিয়ার

বিপ্লবের হাতিয়ারসমূহ বিনির্মাণের সমস্যা পার্টিকে পার্টি, বাহিনী ও যুক্তফ্রন্টের আন্তসম্পর্ককে বোঝার সমস্যা এবং যুদ্ধের মধ্যে অথবা সশস্ত্র জনগণের ক্ষমতার উপর গড়ে ওঠা নতুন রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার মধ্যে তিন হাতিয়ারের আন্তসম্পর্কিত ভাবে বিনির্মাণকে বোঝা ও সঠিকভাবে পরিচালনার সমস্যাকে তুলে ধরে। এভাবে বিষয়টি দেখা নেতৃত্বের একটি ন্যায্য ও সঠিক দায়িত্ব। এসবের বির্নিমাণ এই নীতি দ্বারা পরিচালিত যে একটি ন্যায্য ও সঠিক মতার্দশিক লাইন সবকিছুর নির্ধারক, আর শ্রেণীসংগ্রামের ঝড়ের মধ্যে, যা হচেছ প্রধান ধরণের ধারা অথবা শক্তি সংগ্রাম- প্রধানত, সেই যুদ্ধের মধ্যে সর্বহারা লাইন ও বুর্জোয়া লইনের মধ্যকার সংগ্রামের ভেতর দিয়ে।

পার্টি সংক্রান্ত প্রশ্নে চেয়ারম্যান মাও একটি নতুন ধরনের পার্টি ( এ নিউ টাইপ অব পার্টি), সর্বহারা শ্রেণীর একটি পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়োজনীয়তা থেকে যাত্রা করেন। আজকে আমরা বলবো একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী পাটির্, যার লক্ষ্য হচেছ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও রক্ষা করা, সেজন্য এই পার্টি অবিচেছদ্যভাবে গণযুদ্ধের সাথে যুক্ত, তাকে সূচনা করার জন্য, বিকশিত ও পরিচালনা করার জন্য যাতে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। একটি পার্টি, যা ব্যাপক জনগণের দ্বারা টিকে থাকে, গঠিত হয় গণযুদ্ধের পথের দ্বারা, যা ব্যাপক জনগণের যুদ্ধ অথবা যুক্তফ্রন্টের দ্বারা যা হচেছ শ্রেনীসমূহের একটি ফ্রন্ট যা ব্যপক জনগণকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। যে পার্টি গড়ে ওঠে ও পরিবর্তিত হয় বিপ্লসমূহ ও পর্যায়সমূহ অনুসারে। দ্বন্দ্ব হচেছ এর বিকাশের চালক যা এর হৃrপিন্ডে দুই লাইনের সংগ্রামের রুপে সর্বহারা লাইন ও বুর্জোয়া লাইন অথবা সাধারণভাবে অসর্বহারা লাইনের মধ্যে সংগ্রামকে বাস্তবায়ন করে যা হচেছ সারবস্তুতে এবং প্রধানত সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। এটি পার্টির জীবনে মতার্দশের নির্ধারক গুরুত্বের দিকে এবং একটি শুদ্ধিকরণ অভিযানের দিকে দিক নির্দেশ করে যা পার্টি সংগঠনসমূহের সর্ববিধ সিস্টেমের এক বৃহত্তর সমন্বয় সাধণে সেবা করে এবং ন্যায্য ও সঠিক মতার্দিশক ও রাজনৈতিক লাইনের সদস্যপদ আর সর্বহারা লাইনের আধিপত্যের নিশ্চয়তা বিধান করে পার্টি নেতৃত্বকে এর লৌহ কঠিন নিয়ন্ত্রণে রাখে। নয়াগণতন্ত্র নেতৃত্বকারী শ্রেণী হিসেবে সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিষ্ঠায় পার্টি সেবা করে এবং প্রধানত সর্বহারা একনায়কত্বের প্রতিষ্ঠা, শক্তিশালী করণ ও বিকাশের জন্য আর সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের মাধ্যমে মহান চুড়ান্ত লক্ষ্য কমিউনিজমের বিজয়ের জন্য কাজ করে। এ কারণে পার্টিকে অতি অবশ্যই সবকিছুকে নেতৃত্ব দিতে হবে সর্বদিক দিয়ে।

এক নতুন ধরণের বিপ্লবী বাহিনী (দি রেভ্যুলুশনারি আর্মি অব এ নিউ টাইপ) এটি একটি বাহিনী সেই সব রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পাদনের লক্ষ্যে যা সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের স্বার্থের সাথে সামনঞ্জস্যপূর্ণভাবে পার্টি প্রতিষ্ঠা করে। এ বৈশিষ্ট্য মূর্তভাবে প্রকাশিত হয় তিনটি কর্তব্যের মাধ্যমে: যুদ্ধকরা, উৎপাদন করা যাতে পরজীবি বোঝা সৃষ্টি না হয় এবং জনগণকে সংগঠিত করা। এটি সর্বহারা শ্রেণীর মতার্দশ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ (আজ) – এর রাজনৈতিক বিকাশের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি বাহিনী, যে সাধারণ রাজনৈতিক লাইন ও সামরিক লাইন পার্টি বাস্তবায়ন করে তার ভিত্তিতে। এটা অস্ত্র নয় জনগনের উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে এক বাহিনী যা জনগণ থেকে উত্থিত হয়, যাদের সাথে এটা সর্বদাই জড়িত হয়ে রয়েছে, সে যাদেরকে সর্বান্তকরণে সেবা করে, যে নিজেকে জনগনের মধ্যে এমনভাবে চলতে অনুমতি দেয় যেন জলের মধ্যে মাছ। চেয়াম্যান মাও বলেছেন, বাহিনী ছাড়া জনগনের কিছুই নেই, একই সাথে তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন বাহিনীর ওপর পার্টি নিরংকুশ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর, আর তার মহান নীতি, পার্টি বন্দুককে কমান্ড করে এবং আমরা কখনোই এর অন্যথা হতে দেবনা। একটি নতুন ধরণের বাহিনী গঠনের নীতি ও নিয়ম কানুন সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি চেয়ারম্যান নিজে, প্রতিবিপ্লবী ক্যুদেতার মাধ্যমে নেতৃত্ব কব্জা করে পূঁজিবাদের পনুপ্রতিষ্ঠা ঘটানোতে বাহিনীর ব্যবহার রোধ করার ডাক দেন, লেনিনের গণমিলিশিয়া সংক্রান্ত্র থিসিস বিকশিত করে তিনি জনগণকে সশস্ত্র করার সাধারন পলিসি যে কারো চাইতে বেশী করে পরিচালনা করেন এবং এভাবে সমস্যার দ্বার উম্মোচন করেন, আর সশস্ত্র জনগণের সমুদ্রের দিকে দিক নির্দেশ করেন, যা কিনা আমাদেরকে জনগণ ও সর্বহারা শেণীর সুনির্দিষ্ট মুক্তির দিকে পরিচালিত করবে।

চেয়ারম্যান মাও হচেছন সেই ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম যুক্তফ্রন্ট সংক্রান্ত একটি পূর্নাঙ্গ তত্ত্বের বিকাশ ঘটান এবং তার নিয়মাবলি রচনা করেন। বিপ্লবে সর্বহারা শেণীর একাধিপত্যের নিশ্চয়তা হিসেবে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে সামাজিক শ্রেণীসমূহের একটি ফ্রন্ট যা কিনা সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে কমিউনিষ্ট পার্র্টির প্রতিনিধিত্বে পরিচালিত। সংশ্লেষনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন একটি যুক্তফ্রন্ট, গণযুদ্ধের জন্য একটি যুক্তফ্রন্ট, বিপ্লবের জন্য, আর সর্বহারা শ্রেণী তথা জনগণের জন্য ক্ষমতা জয় করার জন্য একটি যুক্তফ্রন্ট। সংশ্লেষনে, প্রধানত, সশস্ত্র গণযুদ্ধের মাধ্যমে বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যে সংগ্রাম চালানোর লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্ট হচেছ প্রতিবিল্পবী শক্তির বিপরীতে বিপ্লবী শক্তিসমূহের দলবদ্ধকরন। যুক্তফ্রন্ট, অবশ্যই বিপ্লবের প্রতি স্তরে এক নয় এবং উপরন্তু বিবিধ ঐতিহাসিক পর্যায়ের প্রতিটি স্তরে এর রয়েছে বিশেষত্ব, যেমন একটি নির্দিষ্ট বিপ্লবের যুক্তফন্ট বিশ্ব পর্যায়ের যুক্তফ্রন্টের সমান হতে পারেনা, যদিও উভয়ই একই সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করে ।এছাড়া ফ্রন্ট ও রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পার্ক বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, যা চেয়ারম্যান মাও প্রতিষ্ঠা করেন যখন জাপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ সূচিত ও বিকশিত হচ্ছিল, যে যুক্তফ্রন্ট হচেছ যৌথ একনায়কত্বের এক রূপ, এটা এমন একটা প্রশ্ন, বিশেষত যারা গণতান্ত্রিক বিপ্লব করছেন, তাদের কাছে অধ্যয়ণ আশা করা যায়।

৪। গনযুদ্ধ আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর সামরিক তত্ত্ব। এতে প্রথমবারের মতো একটি নিয়মাফিক ও পূর্নরুপে সারসংকলিত হয়েছে সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক পরিচালিত সংগ্রাম, সামরিক এ্যাকশনসমূহ ও যুদ্ধসমূহের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা, জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং বিশেষত চীনের বিরতিহীন যুদ্ধসমূহ। চেয়ারম্যান মাওয়ের মাধ্যমেই সর্বহারা শ্রেণী তার সামরিক তত্ত্ব অর্জন করেছে, তাসত্ত্বেও এ প্রশ্নে প্রচুর বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। চীনের গণযুদ্ধকে কীভাবে দেখা হবে তা থেকেই এর অনেকটা জন্ম হয় ।সাধারনত, একে উপহাসমূলকভাবে, অবজ্ঞাপূনণভাবে ও সরলভাবে গেরিলাযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়, এটা উপলব্ধির দারিদ্রই কেবল প্রকাশ করে । চেয়ারম্যান মাও ব্যাখা করেন, গেরিলা যুদ্ধ রণনৈতিক চরিত্র অর্জন করে, কিন্তু এর অনিবার্য তরলতা (ফ্লুডিটি)র কারনে গেরিলাযুদ্ধের বিকাশকে সেভাবে বোঝা হয় না সেটা যেভাবে অস্তিত্বশীলঃ কীভাবে তা চলমানতা অর্জন করে, স্থানান্তরের একটা যুদ্ধ, অবস্থান যুদ্ধ, কীভাবে তা রণনৈতিক আক্রমনের বিরাট পরিকল্পনাসমূহ উrসারিত করে, ছোট, মাঝারি আর বড় শহরসমূহ লক্ষকোটি অধিবাসী সমেত দখল করা এর ভেতর থেকে অভূত্থানের সাথে বাহির থেকে আক্রমণকে সমন্বিত করে। এভাবে উপসংহারে, চীন বিপ্লবের চারটি পর্যায় ঃ প্রধানত কৃষকযুদ্ধ থেকে গণমুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, এ দুই এর মধ্যে জাপান বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধকে বিবেচনায় রেখে বিপ্লবীযুদ্ধের বিবিধ উপাদান ও জিিটলতা প্রদর্শন করে যা পরিচালিত হয়েছে বিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিশাল জনসংখ্যা আর জনগনের বিরাট সমাবেশ ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। সেই যুদ্ধে প্রতিটি ধরনের উদাহরণ রয়েছে আর যা প্রধান তা অসাধারণভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে। এসব নীতি, আইন,  রণনীতি, রণকৌশল ও নিয়মকানুন ইত্যাদি প্রতিভার সাথে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই অবিশ্বাম্য কঠোর পরীক্ষায় আর মার্কসাদ-লেনিনবাদ কর্তৃক যার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, চেয়াম্যান মাও সর্বহারা শ্রেণীর সামরিক তত্ত্ব গড়ে তোলেন: গণযুদ্ধ।

আমাদের অবশ্যই পূর্ণভাবে মনে রাখতে হবে যে, ফলত চেয়ারম্যান মাও নিজে পারমানবিক বোমা ও মিশাইলসমূহের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং চীনে ইতিমধ্যে তা বিদ্যমান অবস্থায় গণযুদ্ধকে টিকিয়ে রাখেন ও বিকশিত করেন পারমানবিক অস্ত্র, শক্তি (পাওয়ার) ও পরাশক্তি (সুপার পাওয়ার) সমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নয়া পরিস্থিতিতে তাকে পরিচালনা করার জন্য। সংশ্লেষণে, গণযুদ্ধ হচেছ সর্বহারা শেণীর ও জনগনের অস্ত্র এমনকি পারমানবিক যুদ্ধকে মোকাবেলা করতে।

একটি চাবিকাঠি ও নির্ধারক প্রশ্ন হচেছ গণযুদ্ধের সার্বজনীন প্রজোয্যতাকে বিভিন্ন ধরনের বিপ্লব আর প্রতিটি বিপ্লবের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় এর সফল প্রয়োগ। এবিষয়কে পরিস্কার করতে এটা বিবেচনায় নেয়া দরকার যে, পেত্রগাদের অভূত্থান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিরোধ অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইউরোপীয় গেরিলা আন্দোলনসহ কোন অভূত্থানই পূনরায় সংঘটিত হয়নি, সেই সঙ্গে বর্তমানে ইউরোপ যে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিত হচেছ তাকেও বিবেচনায় নিয়ে। চুড়ান্ত বিশ্লেষণে অক্টোবর বিপ্লব শুধু একটি অভূত্থান ছিল না বরং একটা বিপ্লবী যুদ্ধ যা কয়েক বছর যাবৎ টিকে ছিল। ফলতঃ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে বিপ্লব কেবল বিপ্লবী যুদ্ধ হিসেবেই আর্বিভূত হতে পারে যা আজকে সরল ভাবে গণযুদ্ধ।

শেষত, আজকে পূর্বের চেয়ে বেশী, আমাদের কমিউনিস্ট ও বিপ্লবীদের, সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণকে নিজেদের এভাবে পরিচিত করা দরকার: হ্যাঁ, আমরা বিপ্লবী যুদ্ধের সর্বশক্তিময়তার তত্ত্বের প্রতি অনুগত। সেটা খারাপ নয়, ভাল। এটা মার্কসবাদী, এর অর্থ হচেছ গণযুদ্ধের অপরাজেয়তার প্রতি অনুগত থাকা।

৫। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব তার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক সৃষ্ট মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সর্বাধিক সীমাতিক্রমকারী বিকাশ, এ হচেছ সর্বহারা একনায়কত্বধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখার ঝুলে থাকা বিরাট সমস্যার সমাধান: এটা আমাদের দেশের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অধিকতর গভীর ও প্রশস্ত নয়া স্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে।

এটি কোন্ পরিস্থিতি যা নিজেকে প্রকাশ করে? যেমন, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

“উrখাত হওয়া সত্ত্বেও বুর্জোয়ারা ক্ষমতা পুনর্দখলের লক্ষ্যে শোষক শ্রেণীসমূহের পূরোনো ধারণা, সংস্কৃতি, অভ্যাস ও উপায়ের মাধ্যমে জনগনকে দূষিত করতে আর জনগনের মন জয় করার প্রচেষ্টা চালায়। সর্বহারা শ্রেণীকে করতে হবে ঠিক তার বিপরীত: মতাদর্শগত ক্ষেত্রে বুর্জোয়াদের সকল চ্যালেঞ্জের প্রতি সে নির্দয় মুখোমুখি আঘাত ছুঁড়ে দেবে এবং তার নিজস্ব নতুন ধারণা, সংস্কৃতি, অভ্যাস ও উপায়ের মাধ্যমে সমগ্র সমাজের গঠণ কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাবে। আমাদের বর্তমান লক্ষ্য হচেছ সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করা যারা নেতৃত্বকারী পদ দখল করে আছে আর পুঁজিবাদী পথ অনুসর করছে, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া কর্তৃপক্ষসমূহকে সমালোচনা ও অপসারণ করা, বুর্জোয়া ও অন্যান্য শোষক শ্রেনীসমূহের মতার্দশকে সমালোচনা ও প্রত্যাখ্যান করা, এবং সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক ভিত্তির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ন শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা আর উপরিকাঠামোর বিকাশের সহায়তা করা।”

এসকল পরিস্থিতির মধ্যেই সবচেয়ে দুনিয়া কাঁপানো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, আর পথিবীর স্মরণকালের সর্বাধিক গনসমাবেশ জেগে উঠল, যার লক্ষ্য এভাবে চেয়াম্যান মাও কর্তৃক বিবৃত হয়েছেঃ “বর্তমান মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয় ও খুবই সময়োপযোগী, সর্বহারা একনায়কত্বকে সুসংহত করতে, পুঁজিবাদের পুনরুত্থানকে প্রতিরোধ করতে এবং সমাজতন্ত্র গড়ে তুলতে।’’

১) মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষণাবেক্ষণে সর্বহারা একনায়কত্বের বিকাশে এক মাইল ফলক, যা গণ কমিটির আকারে মূর্তভাবে প্রকাশ পায়; এবং

২) চীনে ১৯৭৬ সালের প্রতিবিপ্লবী ক্যুর পর পূঁজিবাদের পুনপ্রতিষ্ঠা মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতিকরণ নয় বরং সরলভাবে পুনপ্রতিষ্ঠা ও পাল্টা পুনপ্রতিষ্ঠার মধ্যে লড়াই এবং বিপরীতে এটা কমিউনিজমের দিকে মানব জাতির অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে চলায় মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অসীম গুরুত্ব প্রর্দশন করে।

৬। বিশ্ব বিপ্লব

চেয়ারম্যান মাও বিশ্ব বিপ্লবের গুরুত্বে জোর দেন এক ঐক্য হিসেবে এই ভিত্তিতে যে বিপ্লব হচেছ প্রধান প্রবনতা, যেখানে প্রতিটি দিন সাম্রাজ্যবাদ ক্ষয়প্রাপ্ত হচেছ বর্ধিত গতিতে এবং প্রতিটি দিন জনগণের ভূমিকা বেশী বেশী করে বেড়ে চলছে, যে জনগণ নিজ রুপান্তর ঘটায় ও ঘটাবে, তার অপ্রতিরোধ্য শক্তি ক্ষমতা অনুভূত হচেছ আর পুনধ্বনিত করছে এই মহান সত্যকেঃ হয় আমরা সবাই কমিউনিজমে পৌছবো অথবা কেউই পৌঁছতে পারবো না। সাম্রজ্যবাদের যুগের এই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরবর্তী ৫০ অথবা ১০০ বছর’’ – এর মহা-ঐতিহাসিক মূহুর্তে এবং যারা একাধিপত্যের জন্য সংগ্রামরত আর বিপ্লবকে পারমানবিক যুদ্ধের হুমকী দিচেছ সেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ – এই কাগুজে বাঘদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এই প্রেক্ষাপটের সূচনাকালে , এর মোকাবেলায় প্রথমত, আমাদের একে নিন্দা করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, আগেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে গণযুদ্ধের মাধ্যমে একে বিরোধিতা করতে আর বিপ্লব সম্পাদন করতে। অন্যদিকে নিপীড়িত জাতিসমূহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, অধিকন্তু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কমালার মধ্যে তার লক্ষ্য, যে সম্পর্ক সাম্রাজ্যাবদের ক্ষয়ের ধারায় সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উদ্ভূত হচেছ তার থেকে চেয়ারম্যান তাঁর থিসিস বর্ণনা করেনঃ ‘‘তিন বিশ্ব নিজেদেরকে সচিত্র প্রদর্শন করে’’।  এসব কিছু বিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল বিকাশের প্রয়োজনীয়তার দিকে চালিত করে  দুঃখের বিষয় এই সব অসীম গুরুত্বপূর্র্ণ প্রশ্নের ওপর চেয়ারম্যান মাওয়ের রচনা ও বিবৃতিসমূহের ব্যাপারে আমরা প্রায় কিছুই জানিনা, তাসত্ত্বেও অতিক্ষুদ্র যা জানা আছে তা সেই চমrকার আদর্শসমূহকে প্রদর্শন করে যা তিনি খুব কাছে থেকে অবলোকন করেছেন এবং সেই মহান সূত্রসমূহ যা সর্বহারা বিশ্ববিপ্লবকে সেবা করার জন্য আমাদের অতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

৭। উপরিকাঠামো, মতাদর্শ, সংস্কৃতি ও শিক্ষা

এই এবং অন্য সম্পর্কিত ইস্যুগুলো চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক সূক্ষ ও গভীরভাবে অধীত হয়েছে। এজন্য এটাও হচেছ আরেকটা মূল প্রশ্ন যা মানোযোগ দাবী করে।

উপসংহারে, এই মৌলিক ইস্য্রগুলোতে যে সারবস্তুসমূহ দেখা গেছে, যারা দেখতে ও বুঝতে চায় তাদের কাছে পরিস্কারভাবে প্রদর্শন করে যে আমাদের রয়েছে মার্কসবাদের নতুন,তুতীয় ও উন্নত স্তর: মাওবাদ এবং আজকের দিনে মার্কসবাদী হতে হলে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী হতে হবে এবং প্রধানত, মাওবাদী হতে হবে। যেসব বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল তা আমাদের দুটো প্রশ্নে চালিত করেঃ মাওবাদে মৌলিক বিষয়টা কি ? রাজনৈতিক ক্ষমতাই হল মাওবাদে মৌলিক বিষয়। সর্বহারা শ্রেণীর জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা, সর্বহারা একনায়কত্বের জন্য ক্ষমতা, কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বধীন এক সশস্ত্র বাহিনীর ভিত্তিতে ক্ষমতা। আরও নির্দিষ্ট ভাবে:

১।  গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বের অধীনে রাজনৈতিক ক্ষমতা।

২। সমাজতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহে সর্বহারা একনায়কত্বের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা।

৩। কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র বাহিনী-ভিত্তিক রাজনৈতিক ক্ষমতা যা গণযুদ্ধের মাধ্যমে জয় ও রক্ষা করা হয়।

আর মাওবাদ কী ? মাওবাদ হচেছ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্যগ্রামে, সমাজতন্ত্রের বিকাশে এবং সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব আকারে সর্বহারা একনায়কত্বধীনে বিপ্লবকে অব্যাহত রাখা যখন সাম্রজ্যবাদের ধ্বংস গভীরতর হয় আর ইতিহাসে বিপ্লবই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধান প্রবণতা, সেই সময়কালের জটিলতম ও বিরাটতম যুদ্ধসমূহ ও সমকালিন সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে অপ্রশম্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মার্কসবাদ-লেলিনবাদের একটি নতুন, তৃতীয় ও উন্নত স্তরে বিকাশ।

মাওবাদকে ঘিরে সংগ্রাম

সংক্ষেপে চীনে মাওসেতুঙ চিন্তাধারার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৩৫ সালে সুনাই অধিবেশনে, যখন চেয়াম্যান মাও চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে আসীন হন। ১৯৪৫ সালে ৭ম কংগ্রেস একমত হয় যে সিপিসি মার্কসবাদ-লেলিনবাদ মাওসেতুঙ চিন্তাধারা দ্বারা পরিচালিত ছিল, যে মূর্তকরণ ৮ম কংগ্রেসে নিপীড়িত হয় এক ডান লাইন সেখানে কর্তৃত্ব করার কারনে। নবম কংগ্রেস, ১৯৬৯ সালে মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব অব্যাহত রাখে আর দেখায় যে সিপিসি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা দ্বারা পরিচালিত। এভাবে এ পর্যন্ত এটা অগ্রসর হয়।

১৯৫০ এর দশক থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে এটা প্রভাব বিস্তার শুরু করে, কিন্তু মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমেই কেবল তা তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ে, এর সম্মান প্রচণ্ডভাবে জাগ্রত হয়, চেয়ারম্যান মাও বিশ্ববিপ্লবের নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদের এক নতুন স্তরের জন্মদাতা হিসেবে, এভাবে প্রচুর সংখক কমিউনিষ্ট পার্টি কর্তৃক মার্কসবাদ-লেলিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা আখ্যা স্বীকৃত হয়। বিশ্ব পর্যায়ে মাওবাদ সমকালীন সংশোধনবাদকে মোকাবেলা করেছে খোলামেলাভাবে তাকে গভীর ও জোরালোভাবে উম্মোচিত করে, একই ভাবে সিপিসির অভ্যন্তরে তা করেছে, আর এসবই চেয়াম্যানের মহান লাল ব্যানারকে আরো ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শের নতুন, তৃতীয় ও উন্নত স্তর হিসেবে। বর্তমানে, (১৯৮৮) মাওবাদ সোভিয়েত, চীনা ও আলবেনীয় সংশোধনবাদের ত্রিমূখী আক্রমণ মোকাবেলা করছে। কিন্তু আজ যারা মার্কসবাদের বিকাশসহ চেয়ারম্যানের মহান অবদানকে স্বীকার করেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে আমরা এখনো মার্কসবাদ-লেনিনবাদের স্তরে রয়েছি এবং অন্যরা কেউ শুধু মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে গ্রহণ করেন কিন্তু কোনভাবেই মাওবাদকে নয়।

এদেশে নিশ্চিতভাবে সংশোধনবাদীরা, যারা দুরবর্তী প্রভু গর্ভাচেভ, তেঙ, অলিয়া অথবা ক্যাষ্ট্রোকে অনুসরন করেন, অব্যাহতভাবে মাওবাদকে আক্রমন করে এসেছেন, তাদের মধ্যে আমাদের অতি অবশ্যই নিন্দা জানাতে হবে, উম্মোচন করতে হবে এবং অপ্রতিরোধ্য লড়াই চালাতে হবে দেল প্রাদোর কঠিন সংশোধনবাদ ও তার গ্যাং ‘‘পেরুর কমিউনিষ্ট পাটি’’র প্রতি, স্বঘোষিত পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টি, প্যাট্রিয়া রোজার শোচনীয় প্রতাারনার প্রতি যারা নিজেদের ‘‘মহান মাওবাদী’’ হিসেবে তুলে ধরার পর তেঙ-এর ভৃত্যে পরিনত হয়, ১৯৭৬-এ তেঙ ক্ষমতার বাইরে নিক্ষিপ্ত হলে তার নিন্দা জানানোর পর (ইংরেজী লাইনটি পরিস্কার নয়- অনুবাদক)। সেই পথে তথাকথিত ‘‘ইজকুয়েরদা ইউনিদা’’ (ঐক্যবদ্ধ বাম)-এর মাওবাদ বিরোধী বস্তু যার হৃদয় আকড়ে ধরেছে বিভিন্ন ধরনের ভূয়া মার্কসবাদী ও সুবিধাবাদীদের সকল সংশোধনবাদী এমনকি মার্কসবাদ-বিরোধী অবস্থান। মাওবাদকে আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে সংশোধনীদের জন্য চেহারা উম্মোচন করার আয়না হিসেবে তাদেরকে অপ্রতিহতভাবে লড়ার জন্য গণযুদ্ধের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের বিজয়ের জন্য লেগে থেকে কাজ করে যা হচেছ রণনৈতিক চরিত্রের এক অপরিত্যাজ্য এবং এড়িয়ে যাওয়ার অযোগ্য একটি কাজ।

চেয়ারম্যান গনসালোর নেতৃত্বাধীন অংশটির মাধ্যমে পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টি ১৯৬৬ সালে মার্কবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা গ্রহণ করে। গনসালো পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালান, ১৯৭৯ সালে ‘‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে উর্দ্ধে তুলে ধরুন, রক্ষা করুন ও প্রয়োগ করুন’’ শোগান তুলে ধরেন,  ১৯৮১ সালে ‘‘ মাওবাদের পথে’’ এবং ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর মতাদর্শের অবিচেছদ্য অঙ্গ ও উচচতম বিকাশ মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ হিসেবে মাওবাদ গ্রহণ। কেবল গণযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা গভীরভাবে বুঝতে পেরেছি মাওবাদের তাৎপর্য এবং আমরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গ্রহণ করেছি ‘‘ঊর্ধ্বে তুলে ধরুন, রক্ষা করুন এবং প্রয়োগ করুন মাকর্সবাদ-লেনিনবাদ- মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ এবং একে বিশ্ববিপ্লবের নেতা ও পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সহায়তায় বিরতিহীভাবে কাজ করা, সদা লাল অমলিন ব্যানার যা সর্বহারা শ্রেণীর, নিপীড়িত জনগন ও বিশ্বজনগণের বিজয়ের গ্যারান্টি, তাদের লৌহ কঠিন সৈন্যদলের কমিউনিজমের সোনালী ও সদা উজ্জ্বল লক্ষ্যের আগুয়ান লড়াইয়ে অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে চলার।

২। গনসালো চিন্তাধারা সম্পর্কে

সকল বিপ্লব তাদের বিকাশের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বকারী শ্রেণী হিসেবে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামের মাধমে, সর্বোপরি কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রামের মাধ্যমে-যে পার্টি তার অপরিত্যাজ্য শেণীস্বার্থ তুলে ধরে এক ঝাঁক নেতৃত্বের জন্ম দেয়, প্রধানত, একজন নেতৃত্ব যিনি একে প্রতিনিধিত্ব ও 38-3নেতৃত্ব করেন, স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ আর প্রভাবশালী এক নেতৃত্ব। আমাদের বাস্তবতায়, ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা অনুসারে এটা রুপ নিয়েছে চেয়ারম্যান গনসালোর মধ্যে, যিনি হচেছন পার্টি ও বিপ্লবের নেতা।

অধিকস্তু, এবং এটাই হচেছ ভিত্তি, যার উপর ভিত্তি করে সকল নেতৃত্ব গড়ে উঠে, বিপ্লব এক চিšতাধারা (থট)-এর জন্ম দেয় যা তাদের পরিচালনা করে, যা হচেছ প্রতিটি বিপ্লবের মূর্ত বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীর মতার্দশের সার্বজনীন সত্যের প্রয়োগের ফলাফল, একটা পথ নির্দেশক চিন্তাধারা (এ গাইডিং থট), বিজয়ে পৌছাতে আর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে অপরিহার্য; বিপ্লবকে অব্যাহত রাখতে আর একমাত্র মহান লক্ষ্য কমিউনিজমের পথে প্রক্রিয়াকে বজায় রাখতে অপরিহার্য, একটা পথনির্দেশক চিন্তাধারা, যা সেই বিপ্লবের প্রক্রিয়ার জন্য – যে বিপ্লবকে সে নেতৃত্ব করে – নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ উলম্ফনে পৌছতে নিজেকে একজনের নামের দ্বারা চিহ্নিত করে, যে তাকে তত্ত্বগতভাবে ও অনুশীলনগতভাবে রূপ দিয়েছে। আমাদের পরিস্থিতিতে, এই জিনিসটা নিজেকে চিহ্নিত করে প্রথমে পথনির্দেশক চিন্তাধারা, অতঃপর চেয়ারম্যান গনসালোর পথনির্দেশক চিন্তাধারা, এবং পরে গনসালো চিন্তাধারা হিসেবে, কারন সভাপতি গনসালো হচেছন সেই ব্যক্তি যিনি মার্কসবাদ- লেনিনবাদ- মাওবাদকে সৃজনশীলভাবে পেরুর বাস্তবতায় নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রয়োগের মাধ্যমে এটা সৃষ্টি করেছেন এবং এভাবে পার্টি ও বিপ্লবকে এক অপরিহার্য অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করেছেন, যা হচেছ বিজয়ের গ্যারান্টি।

গনসালো চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে বহু বছরের তীব্র, কঠোর এবং অবিশ্রান্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, মার্কসবাদ- লেনিনবাদ- মাওবাদকে উর্ধে তুলে ধরা, রক্ষা করা ও প্রয়োগ করার জন্য, ম্যরিয়েতেগুইর পথ পূনগ্রহণের জন্য ও বিকশিত করার জন্য এবং প্রধানত, পেরুতে গণযুদ্ধের সূচনা, তাকে বজায় রাখা ও বিকশিত করার জন্য বিশ্ব বিপ্লবকে সেবা করার মাধ্যমে, আর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ প্রধানত, মাওবাদকে তত্ত্বে ও অনুশীলনে একমাত্র নেতৃত্ব ও গাইড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। পেরুর বিপ্লবের বৈশিষ্টগুলো উপলব্ধি করতে যা হচেছ মূর্ত ও নির্দিষ্ট, যার উপর চেয়ারম্যান গনসালো কর্তৃত্বপুর্ণভাবে জোর দেনঃ সাধারন রাজনৈতিক লাইন এবং প্রধানত সামরিক লাইনের অধিকতর পূঙ্খাণুপূঙ্খ ও সঠিক উপলব্ধির জন্য গনসালো চিন্তাধারা পার্টির জন্য সাংঘাতিক রকম প্রয়োজনীয়। এভাবে আমরা “ঘাটি এলাকাসমূহ গড়ে তোলার মহান পরিকল্পনা’’, গণযুদ্ধের বিকাশ আর দেশব্যাপি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যকে সেবা করি।

ঐতিহাসিক যে প্রেক্ষাপট তাকে সৃষ্টি করেছে তা থেকে শুরু করে আমাদের অতি অবশ্যই গনসালো চিন্তাধারা অধ্যয়ন করতে হবে; যে মতার্দশগত ভিত্তি একে টিকিয়ে রাখে তাকে পরীক্ষা করতে হবে; এর সারবস্তুকে ব্যাখ্যা করতে হবে যা অধিকতর মূর্ত ভাবে সাধারন রাজনৈতিক লাইনে ব্যক্ত হয়, আর যা হচেছ এর কেন্দ্র সেই সাধারন সামরিক লাইনে; যা হচেছ এর মধ্যকার মৌলিকঃ রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্ন, পেরুতে ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন যা সারা বিশ্বে সর্বহারা শ্রেণী কর্তৃক ক্ষমতা দখলের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। আমাদের অবশ্যই দুই লাইনের সংগ্রামে এর গড়ে ওঠার দিক গভীর মনোযোগ প্রদান করতে হবে।

সংশ্লেষণে, নীচের প্রকল্পকে প্রয়োগ করে এই মৌলিক বিষয়গুলো দেখা যায়:

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট। ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কের দিক থেকেঃ

১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে বিকাশ সমুহ

২. শক্তিশালী জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এবং এর মধ্যে চীন বিপ্লবের প্রক্রিযা ও বিজয়,

৩. কিউবায় বিপ্লব আর ল্যাটিন আমেরিকায় তার প্রতিক্রিয়া,

৪. মার্কসবাদ ও সংশোধনবাদের মধ্যে মহান সংগ্রাম,

৫. মহান সর্বহারা সাঙস্কৃতিক বিপ্লব। কিন্তু চাবিকাঠি হল এটা দেখা যে কিভাবে বিশ্বপর্যায়ের এই মহান শ্রেনীসংগ্রামে গনসালো চিন্তাধারা বিবেচনা করে যে সর্বহারা মতাদর্শের এক তৃতীয় স্তর উদ্ভুত হয়ঃ প্রথমত, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, মাওসেতুঙ চিন্তাধারা; তারপর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ, মাওসেতুঙ চিন্তাধারা এবং পরে এর সার্বজনীন প্রযোজ্যতা উপলদ্ধি করে একে মাওবাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা; এবং এভাবে মার্কসবাদের বর্তমান প্রকাশ হিসেবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদে পৌঁছা।

জাতীয় পরিস্থিতি

১.যুদ্ধ পরবর্তী পেরুর সমাজ আর এর মধেকার রাজনৈতিক সংগ্রাম, তথাকথিত গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, আপ্রা-এর ক্রিয়া ওদ্যিয়া     র ক্যুদেতা ও আট বছরের শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, আপ্রার অনুসারী ও কম্যুনিষ্টদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং নির্দিষ্টভাবে ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকের একাংশে আমলাতান্ত্রিক পূঁজিবাদের বিকাশ আর তার সহগামী তীক্ষè শ্রেনীসংগ্রাম; ‘‘ভ্যালেস্কুইজম” এবং এর তথাকথিত বিপ্লব, মুrসুদ্ধি বুর্জোয়া ও আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়ার মধ্যে সংগ্রাম ও ঐক্য (বড় বুর্জেয়াদের উপদল সমুহ), এবং সুবিধাবাদী ও তাদের সমর্থকদের দ্বারা প্রধানত, সংশোধনবাদ,

২. কৃষক আন্দোলনে শ্রেণীসংগ্রাম

৩. শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের প্রক্রিয়া

৪. বুদ্ধিজীবি আন্দোলন

৫. দেশে সশস্ত্র সংগ্রাম, বিশেষত, এম আই আর ( বিপ্লবী বামদের আন্দোলন) এবং ইএল এন (জাতীয় মুক্তিবাহিনী) কর্তৃক ১৯৬৫ সালে এবং সেইসঙ্গে ব্যাঙ্কো, ভ্যালেলজোস, হেরোদ, এবং;

৬. পার্টির সমস্যাঃ কীভাবে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পরিস্কার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি পার্টি একটি সংশোধনবাদী পার্টিতে অধ:পতিত হল, মেরিয়েতেগুইর পথ পূনগ্রহনের প্রয়োজনীয়তা, পার্টিকে পূনর্গঠন করার জন্য যে পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টিকে মেরিয়েতেগুই নিজে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এবং কীভাবে এই পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী পার্টি গঠিত হল।  কীভাবে গনসালো চিন্তাধারা পেরুর সমাজকে গভীরভাবে অনুধাবন করেছে, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ সংক্রানত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে আলোকপাত করেছে এবং পার্টিকে পুনর্গৃঠন করার এবং গণযুদ্ধের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা জয় ও তা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা দেখেছে তা মৌলিক গুরুত্বসম্পন্ন।

২। মতাদর্শগত ভিত্তি: মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ ছাড়া গনসালো চিন্তাধারা হতে পারেনা, কেননা আমাদের বাস্তবতায় পারেরটা হচেছ পূর্বেরটার সৃজনশীল প্রয়োগ। সর্বহারা মতাদর্শের বিকাশের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ-এ আকৃতি নেওয়া এর তিন স্তর, যাতে মাওবাদ হচেছ প্রধান এসব বোঝার মধ্যেই চাবিকাঠি নিহিত এবং প্রধানত, এটা হচেছ পেরুর বিপ্লবের মূর্ত নির্দিষ্ট অবস্থায় সার্বজনীন সত্য হিসেবে মার্কসবাদ -লেনিনবাদ-মাওবাদ- এর প্রয়োগ, তাই পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টির জন্য এবং সে যে বিপ্লব পরিচালনা করে তার জন্য গনসালো চিন্তাধারা হচেছ নির্দিষ্টভাবে প্রধান। পথনির্দেক চিন্তাধারা (দি গাইডিং থট) পার্টি ও বিপ্লবের নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ গুনগত উলম্ফনে পৌছে গনসালো চিন্তাধারা রূপে বিকাশ লাভ করেছে এভাবে পার্টির জীবনে এক মাইলফলক স্থাপন করার মাধ্যমে।

৩।সার

ক) তত্ত্ব: কীভাবে এটা মার্কসবাদ লেনিনবাদ মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ- এর তিনটি অবিভাজ্য অংশকে উপলব্ধি ও প্রয়োগ করে, এটি সেই গুরুত্ব প্রদান করে, যা দর্শনের প্রতি মার্কসবাদ করে, আমাদেরকে এর মধ্যে গড়ে তোলা এবং বিশেষত প্রতিটি সমস্যায় দ্বন্দ্বের নিয়মকে প্রয়োগ করা, বস্তুর প্রধান দিক ও প্রক্রিয়া বের করার দিকে সর্বদা লক্ষ্য দেওয়া, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে শোষণের সম্পর্কসমূহ সম্পর্কে আলোচনা, বিশেষত আমলাতান্ত্রিক পুঁর্জিবাদ সম্পর্কে, বিপ্লবের পেঁকে ওঠার সাথে এর জড়িত হওয়া, এবং ভিত্তির ওপর গনযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া, সেইসঙ্গে সাম্রজ্যবাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কসমূহের প্রতি মনোযোগ প্রদান করা, তাদের রাজনৈতিক ফলসমূহের দিকে দৃষ্টি দেয়া।  বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে এটা গণযুদ্ধ কে কেন্দ্র করে এবং দেশে তার মূর্ত প্রকাশের ওপর, যেহেতু এর মনে সর্বদাই রয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্ন এবং নির্দিষ্টভাবে একটি নয়া রাষ্ট্র হিসেবে এর রূপ নেয়া ও বিকাশ।

খ) সার সম্পর্কে। গনসালো চিন্তাধারার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিকশিত অংশ পার্টির সাধারণ রাজনৈতিক লাইনে খুঁজে পাওয়া যায়। এই চিন্তাধারা প্রত্যক্ষভাবে টিকে থাকে, তাই ও এর পাঁচ উপাদান যার যাত্রাবিন্দু হচেছ কীভাবে এটা কর্মসূচীকে দৃঢ়ভাবে ও ধারাবাহিকভাবে বোঝে ও বজায় রাখে।

গ) গনসালো চিন্তাধারায় আমরা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবো চেয়ারম্যান মাও কর্তৃক বিবৃত দাবীসমূহের বিখ্যাত পূরণের দিকে: তত্ত্বগত দৃঢ়তা, ইতিহাসের উপলব্ধি এবং রাজনীতির এক ভাল পরিচালনা।

৪। যা হচ্ছে মৌলিক

গনসালো চিন্তাধারায় মৌলিক হচেছ রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্ন, নির্দিষ্টভাবে পেরুতে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল, সার্বিকভাবে ও সম্পুর্ণভাবে, সারা দেশে মাকর্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ এর সার্বজনীন সত্যকে আমাদের বিপ্লবে ফলপ্রসূ প্রয়োগ হিসেবে। কিন্তু একটি কমিউনিষ্ট চিন্তাধারা হিসেবে এটা পেরুতে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে বিশ্বপর্যায়ে সর্বহারা শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের অংশ হিসেবে দেখে এবং সেই সঙ্গে দেশে ক্ষমতা দখল আজ রূপ লাভ করেছে গনকমিউনসমূহ, ঘাটিঁ এলাকাসমূহ আর পেরুর গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতন্ত্রের গণপ্রজাতন্ত্র গড়ে ওটার মধ্যে যা আমাদের দেশে সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় সেবা করে, কারন এ ছাড়া কমিউনিজমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। আর এসবই হচেছ গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়ভাবে ও নির্ধারকভাবে সেবা করার এবং প্রধানত সর্বহারা একনায়কত্বের সারা বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় কমিউনিষ্ট পার্টিসমূহের নেতৃেত্ব নতুন ধরনের বিপ্লবী বাহিনী সহকারে গণযুদ্ধের মাধ্যমে এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের বিকাশের মাধ্যমে, যাতে কমিউনিজম সারা বিশ্বকে আলোকিত করতে পারে।

৫। দুই লাইনের সংগ্রামে উদ্ভুত

অব্যাহত দৃঢ় ও বুদ্ধিদীপ্ত দুই লাইনের সংগ্রাম, সর্বহারা লাইনকে রক্ষাকরা আর বিরোধী লাইনগুলোকে পরাজিত করার মাধ্যমেই কেবল গনসালো চিন্তাধারা উদ্ভুত হয়েছে। সর্বাধিক বিশিষ্ট সংগ্রামসমূহের মধ্যে যেগুলোকে জোর দেওয়া দরকার তা হচেছ দেল প্রাদো ও তার ভৃত্যগণের প্রতিনিধিত্ব করা সমকালীন সংশোধনবাদ-বিরোধী সংগ্রামসমূহ, পারদেস ও তার দলের ডানপন্থি বিলোপবাদ- এর বিরোধি সংগ্রাম, সার্গিও নাম্নি এক ব্যাক্তি ও তার স্বঘোষিত ‘‘বলশেভিক’’ দের বাম বিলোপবাদ-এর বিরোধী সংগ্রাম আর সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনায় বিরোধীতা করেছিল যে ডান সুবিদাবাদী লাইন তার বিরোধী সংগ্রাম। সংগ্রাম ছাড়া গনজালো চিন্তাধারা বিকাশ লাভ করতে পারতোনা আর পার্টির ভিতর দুই লাইনের সংগ্রামের তার বিখ্যাত পরিচালনা হচেছ একটা মৌলিক প্রশ্ন, যাতে আমাদের পার্টি, গণযুদ্ধের বিকাশ আর বিশ্ববিপ্লবকে আরো ভালোভাবে সেবা করার জন্য গনজালো চিন্তাধারা অধ্যয়ন করা এবং প্রধানত তাকে প্রয়োগ করা হচেছ নির্ধারক। একইভাবে সর্বান্তকরণে জনগনের সেবা করার জন্য চেয়ারম্যান গনসালোর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাও হচেছ নির্ধারক।

কর্মসূচী ও নীতিমালা

পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, প্রধানত মাওবাদ এবং বিশেষত গনসালো চিন্তাধারাকে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত যা হচেছ আমাদের পার্টি প্রধান চেয়ারম্যান গনসালো কর্তৃক পেরুর বিপ্লবের বাস্তব অবস্থায় সার্বজনীন সত্যের সৃজনশীল প্রয়োগ।

পেরুভিয়ান সর্বহারা শেণীর সংগঠিত অগ্রযোদ্ধা (ভ্যানগার্ড) ও আনতর্জাতিক সর্বহারা শ্রেনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টি বিশেষত নীচের মূল নীতিগুলোকে উর্ধ্বে তুলে ধরে।29

দন্দ্ব হচেছ জাগতিক বস্তু জগতের অবিশ্রান্ত রূপান্তরের একমাত্র মৌলিক নিয়ম , জনগন ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং ‘‘বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত’’;

শ্রেনী সংগ্রাম, সর্বহারা একনাকত্ব, ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ;

একটি মার্কসাবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির প্রয়োজনীয়তা, যে স্বাধীনতা, স্বশাসন ও আত্মনির্ভরশীলতাকে প্রয়োগ করে;

 দুর্বার ও অপ্রতিরোধ্যভাবে সাম্রাজ্যাবাদ, সংশোধনবাদ ও প্রতিক্রিয়াকে মোকাবেলা করা,

 গণযুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা জয় ও রক্ষা করা, পার্টির সামরিকীকরণ এবং বিপ্লবের তিন হাতিয়ারের এক কেন্দ্রীক নির্মান;

 দুই লাইনের সংগ্রাম হচেছ পার্টি বিকাশের চালিকাশক্তি,

 অব্যাহত মতাদর্শিক রূপান্তর এবং সর্বদাই রাজনীতিকে কমান্ডে রাখা;

 জনগন ও বিশ্বসর্বহারা বিপ্লবের সেবা করা, এবং একটি পরম নিঃস্বার্থতা আর একটি ন্যায্য ও সঠিক কাজের পদ্ধতি;

 পেরুর কমিউনিষ্ট পার্টির চুড়ান্ত লক্ষ্য হচেছ কমিউনিজম, যেহেতু বর্তমান পেরুর সমাজ সাম্রজ্যাবাদ, আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও আধাসামন্তবাদ দ্বারা নিপীড়িত ও শোষিত তাই বিপ্লবের প্রথমে রয়েছে এক গণতান্ত্রিক স্তর, অতঃপর তা হচেছ একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যা পরে ধারাবাহিক ভাবে সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহ গড়ে তুলবে। বর্তমানে পার্টি দেশব্যাপি ক্ষমতা দখলের আশু লক্ষ্যকে নিয়ে গণযুদ্ধের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিপ্লব গড়ে তলেছে। এসব কারনে আমরা নীচের লক্ষ্যগুলো তুলে ধরি:

গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাধারণ কর্মসূচী

১। পেরুভিয়ান রাষ্ট্রের ধ্বংসসাধন, যা হচেছ বড় বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে শোষকদের একনায়কত্ব; সশস্ত্র বাহিনী সমূহের ধ্বংসসাধন, আর নিপীড়ণের সেই শক্তিসমূহ ধ্বংস করা বা রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখে আর টিকিয়ে রাখে এর সকল আমলাতান্ত্রিক যন্ত্র।

২। প্রধানত মার্কিন (ইয়াঙ্কি) সহ সকল সাম্রজ্যবাদী নিপীড়ণকে ঝেটিয়ে বিদেয় করা, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্য্রবাদী নিপীড়ণ আর যেকোন শক্তি (পাওয়ার) অথবা সম্রজ্যবাদী দেশের নিপীড়ণকে ঝেটিয়ে বিদেয় করা। সাধারণভাবে তাদের একচেটিয়া কোম্পানীসমূহ, ব্যাংক এবং বিদেশী ঋণসমেত তাদের সকল রূপের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

৩। ব্যক্তি ও রাষ্ট্র নিয়োন্ত্রিত আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ধ্বংস করা, তাদের সম্পত্তি, দ্রব্যসামগ্রি ও অর্থনৈতিক অধিকার বাজেয়াপ্ত করা, যা নতুন রাষ্ট্রের কাজে লাগবে, সেই সঙ্গে সাম্রজ্যবাদের সাথে যুক্ত সবকিছু বাজেয়াপ্ত করা।

৪। আধা-সামন্ডবাদী সম্পত্তি আর গ্রামে-শহরে এর উপর টিকে থাকা সবকিছুর বিলোপ সাধন।

৫। গ্রামে ও শহরে জাতীয় বুর্জোয়াদের অথবা মাঝারি বুর্জোয়াদের সম্পত্তি ও অধিকারকে সম্মান করা।

৬। পেরুর গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা, যা হচেছ কমিউনিস্ট পার্টিকে শীর্ষে রেখে সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী ভিত্তিক শ্রেনীসমূহের এক যুক্তফ্রন্ট; নয়াগনতন্ত্রের সংস্থা, যা এক নয়া অর্থনীতি, এক নয়া রাজনীতি ও এক নয়া সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেবে।

৭। গণযুদ্ধকে বিকশিত করা, যা এক নতুন ধরণের বিপ্লবী বাহিনীর মাধ্যমে পার্টির পরম নিয়ন্ত্রনের অধীনে, পরোনো ক্ষমতাকে একবারে ধ্বংস করে, প্রধানত তাদের বাহিনীগুলোকে এবং অন্য নিপীড়ক শক্তিগুলোকে ধ্বংস করে। এটা সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের জন্য নয়া ক্ষমতার নির্মাণে সেবা করে।

৮। পেরুভিয়ান জাতির গঠণ সম্পর্ণ করা, দেশকে সকল প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে মোকাবেলার জন্য, সংখ্যালঘুদের সকল অধিকার রক্ষার মাধ্যমে দেশকে সত্যিকার ভাবে ঐক্যবদ্ধ করা।

৯। আন্ততর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর অংশ হিসেবে পেরুভিয়ান সর্বহারা শ্রেণীর বিকাশের সেবা করা, সত্যিকার কমিউনিস্ট পার্টিসমুহের গঠন ও শক্তিশালীকরণ এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ পরিচালিত এক পুনরুজ্জীবিত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে সেসব পার্টি ঐক্যবদ্ধকরণ; এসবই চুড়ান্ত শ্রেণী  হিসেবে সর্বহারা শ্রেনীর ঐতিহাসিক লক্ষ্য (মিশন) পুরনের কার্যকলাপ হিসেবে।

১০। শ্রমিক শ্রেণী ও জনগন রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা, অধিকার, লাভ ও বিজয়সমূহ অর্জন করেছে তা রক্ষা করা ; সেসবের স্বীকৃতি প্রদান এবং “জনগনের অধিকারের ঘোষণা’’র মাধ্যমে এর বৈধ প্রয়োগ। ধর্মমতের স্বাধীনতার প্রতি নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার, কিন্তুু এর ব্যাপক অর্থে, বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস করার মতের স্বাধীনতা। জনগণের স্বার্থের ক্ষতি করে এমন সকল প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়ই করা, বিশেষত যেকোন প্রকার অদেয় মজুরী অথবা ব্যক্তিগত বোঝা অথবা জনগনের ওপর চেপে বসা নিরংকুশ করসমূহের বিরুদ্ধে।

১১। নরনারীদের জন্য সত্যিকার সাম্য; তরুনদের জন্য অধিকতর ভাল ভবিষ্যত; মা ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা; বয়স্কদের প্রতি সম্মান ও সহযোগিতা।

১২। জাতিকে সুদৃঢ়করনে লড়ার এ্ক অস্ত্র হিসেবে এক নয়া সংস্কৃতি যা ব্যাপক জনগণের সেবা করে আর সর্বহারা শ্রেনীর মতার্দশ দ্বারা পরিচালিত।

১৩। আন্তর্জাতিক সর্বহারা শেণী, নিপীড়িত জাতিসমূহ ও দুনিয়ার জনগণের সংগ্রামসমূকে সমর্থন করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও সো্িরভয়েত উনিয়নসহ পরাশক্তিসমূহের বিরুদ্ধ লড়াই করা, সাধারণভাবে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ; আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া ও সকল রূপের সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা পেরুর বিপ্লবকে বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের অংশ হিসেবে ধারণ করে।

১৪। দেশব্যাপি গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পূর্র্ণ বিজয়ের জন্য কঠোর ভাবে ও বীরত্বব্যাঞ্জকভাবে লড়ই করা এবং এই পর্যায় সম্পূর্ণ করে তrক্ষনা r কোন বিরতি না দিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শুরু করা যাতে আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেনীর সাথে মিলিতভাবে দুনিয়ার নিপীড়িত জাতিসমূহ ও জনগন সাংস্কৃতিক বিপ্লবসমূহের মাধ্যমে মানব জাতির চুড়ান্ত লক্ষ্য কমিউনিজমের দিকে অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পারে।

কিন্তু দেশের গণতান্ত্রিক বিপ্লব নীচের বৈশিষ্টযুক্ত এক পর্যায় অতিক্রম করছে বিবেচনা করা যায়:

১। পেরুভিয়ান সমাজের, প্রধানত আমলাতান্ত্রিক পূঁজিবাদের সাধারন সংকট গভীরতর হওয়া ;

২। আজ গনহতাকারী গার্সিয়া পেরেজের কর্তৃত্বে ফ্যাসিস্ট কর্পোরেটিভিস্ট আপ্রিস্টা সরকারের অধীনে রাষ্ট্রের ব্যাপকতর প্রক্রিয়াশীল করণ;

৩। জনগন কর্তৃক লড়াই ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা অধিকতর ভাবে গ্রহণ করা সহকারে শ্রেণী সংগ্রামের তীক্ষ্ণতর হওয়া ;

৪। গণযুদ্ধ জীবন্তভাবে বিকশিত হচেছ ও বাড়ছে ;

৫। জনগণের কাছে এক নয়া গণতন্ত্রের নীতি অনুসারে নির্মিত গনপ্রজাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা;

                                                ….  …  … ■