সিপিএমএলএম বাংলাদেশ-এর দলিল।। ইসলামবাদের ফেরিওয়ালারা

সিপিএমএলএম বাংলাদেশএর দলিল

ইসলামবাদের ফেরিওয়ালারা

news_image_2013-02-23_22310

ইসলামবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়েছে। তার শাহবাগ আন্দোলনের উদ্যোক্তা ব্লগারদের শাস্তি দাবী করছে। তাদের অভিযোগ ব্লগাররা নাস্তিক আর তারা নাকি ইসলাম ধর্ম প্রবর্তক মোহাম্মদ-এর নামে কটুক্তি করেছে। বলাবাহুল্য বৃহস্পতিবার সরকারী প্রভাবে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে সরে যায়। শুক্রবারই ইসলামবাদী রাজনৈতিক দলসমূহ বাইতুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদে ঘাঁটি গাড়ে। জুম্মার নামাজের পর মুসল্লিদের এরা চালিত করে নিরীশ্বরবাদ-বিরোধী তাণ্ডব চালাতে। সারাদেশেই এরা শহীদ মিনার ও গণজাগরণ মঞ্চের ওপর হামলা চালায়, এমনকি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকাও তারা ছিঁড়ে ফেলে। এ তাণ্ডবে অংশ নেয়া অধিকাংশই মাদ্রাসা ছাত্র। ফলে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা পুনরায়ে শাহবাগে ফিরে আসে। ইসলামবাদীদের রবিবারের হরতালে বিএনপি সমর্থন জানায়। এ কয়েকদিনের সহিংসতায় ৫/৭ জন ইসলামবাদী ছাড়াও বেশ কিছু সাধারণ গ্রামবাসী, পথচারী পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন। প্রশ্ন হলোঃ

শাহবাগ আন্দোলন কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে?

আওয়ামী লীগ কী চায়?

বিএনপি কোন ধরণের রাজনৈতিক দল?

ধর্ম সম্পর্কে কে কি বলতে চায়?

আসুন প্রশ্নগুলো মীমাংসা করা যাক।

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ব্লগাররা আন্দোলন শুরু করলেও দ্রতই এটা আওয়ামী লীগ ও সংশোধনবাদী বামদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। শেখ হাসিনা রাঙামাটিতে জনসভায় নিরীশ্বরবাদীদের প্রতি হুশিয়ারী জানিয়েছে এই বলে যে যারা মোহাম্মদকে নিয়ে কটুক্তি করবে তাদের বরদাশ্ত করা হবেনা। পাশাপাশি সে ইসলামবাদীদের প্রতিও হুশিয়ারি জানিয়েছে। সংসদে হাসিনা জানিয়েছে, কেবল জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হবে, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবেনা। বলা বাহুল্য, শুক্রবারের তাণ্ডব ও রবিবারের হরতাল ডেকেছিল জামাতের সমমনা ইসলামবাদী দল, কিন্তু জামাত নয়। তবে, এতে জামাতের নেতৃত্ব ছিল বলে সবাই মনে করে। জামাত ছাড়াও বাংলাদেশে বহু ইসলামবাদী দল রয়েছে যারা চরিত্রগতভাবে জামাতের থেকে ভিন্ন কিছু নয়।

আর বিএনপি?

বিএনপি সর্বদাই ইসলামবাদী দলগুলোর সাথে গাঁটছড়া বাঁধা। এরা ইসলামবাদীদের শুধু ইন্ধনই দিচ্ছেনা, এতে অংশগ্রহণও করছে।

এখন ধর্ম সম্পর্কে অনেকেই বলছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আমরা এর বিরোধী নই এবং ইসলামবাদীরাই প্রকৃত ইসলামের বিরোধী। এমন দাবীর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা আছে বলে মনে হয়না। আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব ঘটেছিল রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক আধিপত্য খর্ব করার মধ্য দিয়ে। শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ধর্ম বরাবরই ব্যবহার হয়ে আছে, যাকে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ অব্যাহত রেখেছে। পুঁজিবাদের সর্বশেষ রূপ সাম্রাজ্যবাদ ধর্মকে সর্বাধিক ব্যবহার করেছে, বিশ্বকে নিজেদের মধ্যে পুনঃ পুনঃ ভাগবন্টন করে নিতে যুদ্ধ বাঁধিয়ে। আফগানিস্তানের কমরেডগণ দেখিয়েছেন, তালিবানরা আফগানিস্তানের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কহীন। তারা সেদেশে পাকিস্তানের উপনিবেশ কায়েম করেছিল। আর মার্কিনের পুতুল হামিদ কারজাই সরকারও কুরআনের ফারসী অনুবাদ করতে অনুমোদন দেয়না। তারা মনে করে কেবল আরবীই আল্লাহর ভাষা। সেখানেও বাংলাদেশের মত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পৃথিবীতে আদিম সমাজ ছিল সাম্যবাদী। তখন শোষণের আবির্ভাব ঘটেনি। ধর্মেরও অস্তিত্ব ছিলনা। ধর্মবাদীরা যেমনটা দাবী করে ধর্ম একটা ঈশ্বর অথবা পরমাত্মার বিশ্বাসের চেয়ে বেশী কিছু, সেটা কী? তারা ধর্মকে স্রেফ একটা বিশ্বাসের ব্যাপার মনে করেনা, বরং মনে করে সমাজ পরিচালনার ব্যবস্থা। রাজা-রাজরারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের মনোনিত দেখাতে ধর্মকে আরোপ করেছে প্রজাদের ওপর যাতে তারা বিদ্রোহ করতে সাহস না পায়। বাংলাদেশে মানুষ বারংবার ধর্ম পরিবর্তন করেছে, জাত-পাত, শরিয়ার হাত থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বৌদ্ধ, জৈন, বৈষ্ণব, ফকিরি, সত্য বহুবিধ ভাববাদী ধারার দ্বারস্থ হয়েছে, কিন্তু শোষণ থেকে মুক্তি পায়নি। বরং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ জনগণকে শৃংখলে বেঁধে ফেলেছে। এর থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে দার্শনিক বস্তুবাদ। দ্বন্দ্ববাদের পদ্ধতি প্রয়োগকারী এ দর্শনই মানবজাতির অগ্রবর্তী শ্রেণী সর্বহারা শ্রেণীকে সক্ষম করে তুলেছে প্রকৃতি, সমাজ ও চিন্তাধারার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে, এর নিয়ম আবিষ্কারে, অনিবার্য বিদ্রোহ ও বিপ্লবের পথে সাম্যবাদের পথে এগিয়ে চলতে। ইসলামবাদীদের বা হিন্দুত্ববাদীদের জ্বীন, ভূত-প্রেত কোন পরিবর্তন সাধন করেনা। সচেতন জনগণ সমাজের পরিবর্তন সাধন করে, যার নেতৃত্ব মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে থাকলে চলবেনা, সর্বহারা শ্রেণীর হাতে থাকতে হবে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী দোদুল্যমান শ্রেণী, এটা পুঁজিপতি, সামন্তবাদী আর জনগণের মাঝখানে দোল খায়। বৈপ্লবিক সময় ব্যতিত অন্য সময় প্রায়ই তারা শোষকদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শাহবাগ আন্দোলনে এখনও যেসব ব্যাডিকেল আছেন, তাদের এবিষয়টা উপলব্ধি করতে হবে। এ আন্দোলনটা কীভাবে শোষকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল, তা এক গুরুতর শিক্ষা।

ইসলামবাদের ফেরিওয়ালাদের মুখোশ উন্মোচন করা কঠিণ কিছু নয়। এজন্য মার্কসবাদের দর্শন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ জানা জরুরী।

২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীলেনিনবাদীমাওবাদী