জ ভ স্তালিন। সর্বহারা শ্রেণী ও সর্বহারা পার্টি

পিডিএফ মুদ্রনের জন্য পিডিএফ

জোসেফ ভিসারিওনোভিচ স্তালিন

সর্বহারা শ্রেণী ও সর্বহারা পার্টি

(পার্টি গঠনতন্ত্রের ১ম অনুচ্ছেদ সম্পর্কে)

জোসেফ ভিসারিওনোভিচ স্তালিন

জোসেফ ভিসারিওনোভিচ স্তালিন

জর্জীয় ভাষায় ককেশাস অঞ্চল থেকে প্রকাশিত বলশেভিক পত্রিকা সর্বহারার সংগ্রাম (প্রলেতারিয়াতিস বেয়োর্জৌয়া) পত্রিকার ৮ম সংখ্যায় ১লা জানুয়ারী, ১৯০৫ তারিখে স্বাক্ষরবিহীন প্রকাশিত হয়।

স্তালিন রচনাবলী, প্রথম খণ্ড, বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয় মস্কো, ১৯৫৪ সংস্করণ থেকে ইংরেজী কপিটি সংরক্ষিত করেছে মার্কসিষ্ট ইন্টারনেট আর্কাইভ ও মার্কস টু মাও ডট কম।

উক্ত সংরক্ষিত কপি থেকে বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদীর কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ বাংলায় ভাষান্তর করে ৪ঠা জুন ২০২৩ প্রকাশ করে। সর্বহারা পথ ওয়েবসাইট থেকে এই বাংলা সংস্করণ অধ্যয়ন করা ও প্রিন্ট নেয়া যাবে।

এ রচনাটির আরেকটি বাংলা ভাষান্তর আছেঃ কোলকাতা থেকে ১৯৭৩ সালে নবজাতক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত। এই অনুবাদটিও মোটামুটি সঠিক। এর সাথে বর্তমান অনুবাদকে মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

 বাংলা ভাষান্তরের ভূমিকা

রুশদেশে সর্বহারা শ্রেণীর পার্টি গঠিত হয় ১৮৯৮ সালে। ১৯০৩ সালে পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটিতে লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, কর্মসূচিগত প্রশ্নেও তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন কিন্তু পার্টির গঠনতন্ত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে মার্তভের নেতৃত্বে সুবিধাবাদীরা লেনিনের বিপ্লবী সূত্রের বিপরীতে এক সুবিধাবাদী সূত্র পাশ করালেন। এই পার্টি প্রশ্নেই রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়ঃ লেনিনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা অধিকাংশ প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে তাদের নাম হয় বলশেভিক (সংখ্যাগরিষ্ঠ) আর মার্তভের নেতৃত্বে সুবিধাবাদীরা সংখ্যালঘিষ্ঠ বলে নাম হয় মেনশেভিক (সংখ্যালঘিষ্ঠ)। লেনিনই বলা চলে মার্কসবাদী পার্টির প্রকৃত গোড়াপত্তন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন এই পার্টি হচ্ছে একটি বাহিনীর মত সুশৃংখল, যার নেতারা হবেন পেশাদার বিপ্লবী যাদের বিপ্লব ছাড়া অন্য কোন পেশা নেই। এই পার্টি হচ্ছে কেন্দ্রীভূত। এর থাকবে বিপ্লবী তত্ত্ব, যা ছাড়া কোন বিপ্লবী আন্দোলন হতে পারেনা।

যাহোক, পার্টি সদস্য কারা হতে পারে এ প্রশ্নে লেনিনের সূত্র ছিলঃ যিনি পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা গ্রহণ করেন, পার্টিকে নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন আর কোন না কোন পার্টি সংগঠনে কাজ করেন তিনি রুশ সমাজগণতন্ত্রী পার্টির সদস্য হতে পারেন।

আর মার্তভের সূত্র ছিলঃ যিনি পার্টির কর্মসূচি মানেন, পার্টিকে আর্থিক সাহায্য দেন, আর কোন একটি পার্টি সংগঠনের নির্দেশনার অধীনে নিয়মিত এই সাহায্য দিয়ে থাকেন, তিনি পার্টির সদস্য হতে পারেন।

স্তালিন এই নিবন্ধের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, লেনিন যেখানে সুবিধাবাদীদের জন্য পার্টির দরজা বন্ধ করেন, সেখানে মার্তভ পার্টির দরজা সুবিধাবাদীদের জন্য খুলে দেন লেনিনের সূত্র থেকে তৃতীয় অংশটা বাদ দিয়ে যেঃ পার্টি সদস্য হতে হলে কোন না কোন পার্টি সংগঠনে কাজ করতে হবে। মার্তভের সূত্রটি ছিল বিভ্রান্তিকর।

কমরেড স্তালিন বলেনঃ “তাই, পার্টি সদস্য হতে হলে পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। পার্টির নীতিমালা প্রয়োগ করতে হলে তার পক্ষে লড়াই চালাতে হবে, আর এর জন্য লড়াই চালাতে একটি পার্টি সংগঠনে থেকে পার্টির সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। স্পষ্টতই, একজন পার্টি সদস্য হতে   হলে তাকে যে কোন একটি পার্টি সংগঠন [টীকাঃ একটি জটিল জীব যেমন অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র জীবকোষ দ্বারা গঠিত, আমাদের পার্টিও তাই, জটিল ও সাধারণ সংগঠন হিসেবে বহু জেলা ও স্থানীয় সংস্থা দ্বারা গঠিত যাদের বলা হয় পার্টি সংগঠন, পার্টি কংগ্রেস অথবা কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বারা স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় তারা। পার্টি কমিটিকেই কেবল পার্টি সংগঠন বলা হয়না। একটি একক পরিকল্পনায় এসকল সংগঠনকে পরিচালনার জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি যার দ্বারা এই স্থানীয় পার্টি সংগঠনগুলো মিলে একটি বৃহৎ কেন্দ্রীভূত সংগঠন গড়ে উঠে]-এ যুক্ত হতে হবে। কেবল যখন আমরা কোন একটি পার্টি সংগঠনে যুক্ত হয়ে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে পার্টির স্বার্থের সাথে একীভূত করি, আমরা পার্টি সদস্যে পরিণত হই, আর তার ফলে সর্বহারা বাহিনীর প্রকৃত নেতায় পরিণত হই।”

মেনশেভিকরা কেন্দ্রীয় কমিটি ও স্ফুলিঙ্গ (ইস্ক্রা) পত্রিকার দখল নেয়ার প্রচেষ্টা চালায়। আর সংগ্রামের কর্মসূচি প্রশ্নে বলশেভিক ও মেনশেভিকদের মধ্যে মারাত্মক বিরোধ বাঁধে। বলশেভিকরা বিপ্লবী সংগ্রামের মাধ্যমে জার সরকারকে উচ্ছেদে এগিয়ে যায়। আর মেনশেভিকরা চায় অর্থনীতিবাদী লাইনে জনগণকে দৈনন্দিন কিছু মজুরি বৃদ্ধির সংগ্রামে আটকে রাখতে। আমরা জানি, শেষ পর্যন্ত লেনিন ও স্তালিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বিপ্লবীরাই জার সরকারকে উতখাত ও বিপ্লবী সরকার গঠন করে শেষ পর্যন্ত সর্বহারার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।।

কেন্দ্রীয় অধ্যয়ন গ্রুপ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী

৪ঠা জুন, ২০২৩                                                         

 সর্বহারা শ্রেণী ও সর্বহারা পার্টি

(পার্টি গঠনতন্ত্রের ১ম অনুচ্ছেদ সম্পর্কে)

সেই সময় চলে গেছে যখন জনগণ সাহসের সাথে দাবি করতেন “রাশিয়া এক ও অবিভাজ্য’। আজকে একটি শিশুও জানে যে রাশিয়া “এক ও অভিবাজ্য’ বলে কিছু নেই, আর অনেক আগেই রাশিয়া বিভক্ত হয়ে গেছে দুই বিপরীত শ্রেণী বুর্শোয়া ও সর্বহারার মধ্যে। আজ এটা কোন গোপন ব্যাপার নয় যে এই দুই শ্রেণীর মধ্যে সংগ্রাম হল সেই অক্ষ যাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমকালীন জীবন আবর্তিত হচ্ছে।

অবশ্য সাম্প্রতিক কালের আগে এসব লক্ষ্য করা কঠিন ছিল। এর কারণ ছিল এই যে, এযাবৎ আমরা সংগ্রামের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা গোষ্ঠীগুলিকে দেখেছি, বিচ্ছিন্ন শহর ও দেশের খণ্ডাংশে এই সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে, যেখানে বুর্শোয়া ও সর্বহারাকে শ্রেণী হিসেবে আলাদা করা যেতনা সহজে। এখন শহর ও জেলাগুলো একত্রিত হয়েছে, সর্বহারা শ্রেণীর বহু গোষ্ঠী হাত মিলিয়েছে, যুক্ত ধর্মঘট ও বিক্ষোভ জন্ম নিয়েছে, আমাদের সামনে বুর্শোয়া রাশিয়া ও সর্বহারা রাশিয়া—এই দুই রাশিয়ার মধ্যে সংগ্রামের চিত্র জ্বলজ্বল করে উঠেছে। সর্বহারা বাহিনী আর বুর্শোয়া বাহিনী, এই দুই বাহিনী লড়াইয়ের ময়দানে প্রবেশ করেছে, আর এই দুই বাহিনীর সংগ্রাম আমাদের সমগ্র সামাজিক জীবনকে আলিঙ্গন করছে।

যেহেতু একটি বাহিনী নেতা ছাড়া পরিচালিত হতে পারেনা, যেহেতু প্রতিটি বাহিনীর থাকে অগ্রবাহিনী যা তার আগে এগিয়ে থেকে তার পথ আলোকিত করে, তাই, নিশ্চিতভাবে এই বাহিনীগুলির মধ্যে থাকতে হয় নেতাদের গোষ্ঠী যাকে পার্টি বলা হয়।

তাই এই চিত্র এই দৃশ্যকে প্রদর্শন করেঃ

একদিকে আছে বুর্শোয়া বাহিনী—যার নেতৃত্বে আছে উদারনৈতিক পার্টি, অন্যদিকে আছে সর্বহারা বাহিনী—যার নেতৃত্বে আছে সমাজগণতন্ত্রী পার্টি; প্রতিটি বাহিনী শ্রেণীসংগ্রামে নিজ নিজ পার্টি দ্বারা পরিচালিত হয়। [টীকাঃ আমরা রাশিয়ার অন্য পার্টিগুলিকে উল্লেখ করিনি কারণ আমাদের আলোচিত প্রশ্নের মধ্যে তাদের টেনে আনার দরকার নেই]

এসকল আমরা উল্লেখ করেছি সর্বহারা শ্রেণীর সাথে সর্বহারা পার্টিকে তুলনা করতে যাতে পার্টির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে তুলে আনা যায়।

উপরে উল্লেখিত কথাগুলি যথেষ্ট পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, প্রথমত নেতাদের একটি সংগ্রামী গোষ্ঠী হিসেবে সর্বহারা পার্টি প্রথমত সর্বহারা শ্রেণীর চেয়ে সদস্য বিচারে অনেক ছোট হবে, দ্বিতীয়ত, সে সর্বহারা শ্রেণীর চেয়ে উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর হবে, তৃতীয়ত, সে অবশ্যই হবে একটি সুসংবদ্ধ সংগঠন।

আমাদের মতে, যা বলা হল তার প্রমাণের দরকার পড়েনা, কারণ এটা স্বতসিদ্ধ যে যতদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তার সাথী দারিদ্র্য ও জনগণের পশ্চাদপদতা সমেত বিদ্যমান থাকে, সর্বহারা শ্রেণী সমগ্রত তার কাঙ্খিত শ্রেণীসচেতনতার স্তরে উঠতে পারেনা, আর তাই, শ্রেণীসচেতন নেতাদের একটি গোষ্ঠী থাকতেই হবে সর্বহারা বাহিনীকে সমাজতন্ত্রের উদ্দীপনায় আলোকিত করতে, তাকে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ ও পরিচালিত করতে। এটাও পরিষ্কার যে লড়াইরত সর্বহারাকে নেতৃত্ব দিতে মনস্থির করেছে যে পার্টি তাকে স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের হঠাৎ জড়ো হওয়া আড্ডা হলে চলবেনা, বরং এক সুসংবদ্ধ কেন্দ্রীভুত সংগঠন হতে হবে, যাতে তার তৎপরতাকে একটি একক পরিকল্পনায় পরিচালিত করা যায়।

সংক্ষেপে, এই হল আমাদের পার্টির সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

এসবকিছু মনে রেখে, আসুন প্রধান প্রশ্নে আসিঃ কাকে আমরা পার্টি সদস্য বলব? বর্তমান নিবন্ধের বিষয় যে পার্টির গঠনতন্ত্রের ১ম অনুচ্ছেদ তা নির্দিষ্টভাবে এই প্রশ্নেই আলোচনা করে।

তাহলে কাকে আমরা রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টির সদস্য বলতে পারি? অর্থাৎ একজন পার্টি সদস্যের কর্তব্য কী কী?

আমাদের পার্টি হচ্ছে একটি সমাজগণতন্ত্রী পার্টি। এর অর্থ হচ্ছে তার নিজ কর্মসূচি (আন্দোলনের আশু ও চূড়ান্ত লক্ষ্য) আছে, তার নিজ রনকৌশল (সংগ্রামের পদ্ধতি), নিজ সাংগঠনিক নীতিমালা (সংঘবদ্ধ হওয়ার রূপ) আছে। কর্মসূচীগত, রণকৌশলগত ও সাংগঠনিক নীতির ঐক্য হচ্ছে সেই ভিত্তি যার উপর আমাদের পার্টি গড়ে উঠেছে। কেবল এই নীতিসমূহের ঐক্যই পার্টি সদস্যদের এক কেন্দ্রীভূত পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। যদি এই নীতিসমূহের ঐক্য ভেঙে পড়ে, পার্টি ভেঙে পড়বে। তাই, তিনিই পার্টি সদস্য বিবেচিত হবেন যিনি পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা সম্পূর্ণ গ্রহণ করেন। যিনি পার্টির কর্মসূচিগত, রণকৌশলগত ও সাংগঠনিক নীতিমালা যথেষ্ট অধ্যয়ন করেছেন ও পরিপুর্ণভাবে গ্রহণ করেছেন, তিনিই আমাদের পার্টির সদস্য হিসেবে, আর এভাবে সর্বহারা বাহিনীর নেতৃত্ব সারিতে থাকতে পারবেন।

কিন্তু স্রেফ পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা গ্রহণ করাই কি পার্টির সদস্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট? এরকম একজন লোক কি সর্বহারা বাহিনীর সত্যিকার নেতা হতে পারেন? অবশ্যই নয়! প্রথমত, সকলেই জানেন যে পৃথিবীতে অনেক অন্তসারশূন্য বাচাল লোক আছে যারা পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা এখনই “গ্রহণ’ করতে প্রস্তুত, কিন্তু গলাবাজি করার ছাড়া অন্য কোন যোগ্যতা তাদের নেই। একজন অন্তসারশূন্যকে পার্টির সদস্য অর্থাৎ সর্বহারা বাহিনীর নেতা বলা হবে পার্টির পবিত্রতার অবমাননা! তাছাড়া, আমাদের পার্টি কোন দর্শনের পাঠশালা বা কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় নয়। আমাদের পার্টি কি একটি সংগ্রামী পার্টি নয়? সেই জন্যই এটা কি স্বতসিদ্ধ নয় যে আমাদের পার্টি স্রেফ এর কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালার অবাস্তব গ্রহণে সন্তুষ্ট থাকবেনা, বরং সন্দেহাতীতভাবে দাবি করবে সেই গৃহীত নীতির প্রয়োগ?  তাই যিনিই আমাদের পার্টির সদস্য হতে চাইবেন, তাকেই স্রেফ আমাদের পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা গ্রহণ করে আত্মতুষ্ট থাকলে চলবেনা, তাকে এই নীতিগুলি কার্যকর করারা মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।

কিন্তু একজন পার্টি সদস্য কর্তৃক পার্টি নীতির প্রয়োগ কী? কখন তিনি তা প্রয়োগ করতে পারেন? কেবল যখন তিনি লড়ছেন, সর্বহারা বাহিনীর অগ্রভাগে যখন তিনি সমগ্র পার্টিকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ব্যক্তিরা কি সংগ্রাম পরিচালনা করতে পারে? অবশ্যই না। বিপরীতে জনগণ প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হন, সংগঠিত হন, তারপরই তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যদি তা না করা হয়, সকল সংগ্রামই ফলহীন। স্পষ্টত তখনই পার্টি সদস্যরাও লড়াই করতে সক্ষম হবেন, আর ফলে পার্টির নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারবেন যখন তারা একটি সুদৃঢ় সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ হবেন। এটাও পরিষ্কার যে যত সুদৃঢ় পার্টি সংগঠনে তারা ঐক্যবদ্ধ হবেন, তত ভালভাবে তারা লড়াই করতে পারবেন, আর তারা তত পূর্ণভাবে পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারবেন। আমাদের পার্টিকে যে স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের আড্ডা নয় বরং নেতাদের এক সংগঠন মনে করা হয় তা এমনি এমনি নয়। আর আমাদের পার্টি যদি নেতাদের এক সংগঠন হয়, তাহলে কেবল তাদেরই পার্টি সদস্য বিবেচনা করা হবে, যারা এই সংগঠনে কাজ করেন, তাই নিজেদের ইচ্ছাকে পার্টির ইচ্ছার সাথে মিলিয়ে নেয়া আর পার্টির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা কর্তব্য মনে করেন ।

তাই, পার্টি সদস্য হতে হলে পার্টির কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। পার্টির নীতিমালা প্রয়োগ করতে হলে তার পক্ষে লড়াই চালাতে হবে, আর এর জন্য লড়াই চালাতে একটি পার্টি সংগঠনে থেকে পার্টির সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। স্পষ্টতই, একজন পার্টি সদস্য হতে হলে তাকে যে কোন একটি পার্টি সংগঠন [টীকাঃ একটি জটিল জীব যেমন অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র জীবকোষ দ্বারা গঠিত, আমাদের পার্টিও তাই, জটিল ও সাধারণ সংগঠন হিসেবে বহু জেলা ও স্থানীয় সংস্থা দ্বারা গঠিত যাদের বলা হয় পার্টি সংগঠন, পার্টি কংগ্রেস অথবা কেন্দ্রীয় কমিটি দ্বারা স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় তারা। পার্টি কমিটিকেই কেবল পার্টি সংগঠন বলা হয়না। একটি একক পরিকল্পনায় এসকল সংগঠনকে পরিচালনার জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি যার দ্বারা এই স্থানীয় পার্টি সংগঠনগুলো মিলে একটি বৃহৎ কেন্দ্রীভূত সংগঠন গড়ে উঠে]-এ যুক্ত হতে হবে। কেবল যখন আমরা কোন একটি পার্টি সংগঠনে যুক্ত হয়ে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে পার্টির স্বার্থের সাথে একীভূত করি, আমরা পার্টি সদস্যে পরিণত হই, আর তার ফলে সর্বহারা বাহিনীর প্রকৃত নেতায় পরিণত হই।

যদি আমাদের পার্টি স্বতন্ত্র অন্তসারশূন্য বাচাল ব্যক্তিদের এক আড্ডা মাত্র না হয়, বরং নেতাদের এমন এক সংগঠন হয় যা এর কেন্দ্রীয় কমিটি মারফত সর্বহারা বাহিনীকে চমৎকারভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে উপরে যা কিছু বলা হয়েছে তা স্বতসিদ্ধ হয়।

নিচের এই কথাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবেঃ

এযাৎকাল আমাদের পার্টি এক বিনয়ী পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের মত ছিল যে সহানুভূতিশীল যে কাউকেই নিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পার্টি একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠনে পরিণত হয়েছে যে তার পিতৃতান্ত্রিক দিক ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে আর সকল দিক থেকেই একটা দুর্গে পরিণত হয়েছে, যার দরজা কেবল যোগ্য ব্যক্তিদের জন্যই খোলা। আর এটা আমাদের কাছে বিরাট গুরত্বের। এমন একটা সময় যখন স্বৈরতন্ত্র সর্বহারাশ্রেণীর শ্রেণী সচেতনতাকে কলুষিত করার চেষ্টা করছে “ট্রেড ইউনিয়নবাদ”, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মবাদের মত জিনিস দ্বারা, অন্যদিকে উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবিরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে সর্বহারার রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করে তার উপর নিজেদের মাতব্বরি চাপিয়ে দেয়ার,        তখন আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং কখনো ভোলা যাবেনা আমাদের পার্টি হচ্ছে একটা দুর্গ যার ফটকগুলো কেবল পরীক্ষিতদের জন্যই খোলা।

আমরা পার্টি সদস্যপদের দুটি আবশ্যকীয় শর্ত নিশ্চিত করেছি (পার্টি কর্মসূচির গ্রহণ ও কোন একটি পার্টি সংগঠনে কাজ করা)। আমরা যদি এর সাথে যোগ করি তৃতীয় একটি শর্তঃ একজন পার্টি সদস্যকে পার্টিকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতেই হবে, তাহলে পার্টি সদস্য প্রাপ্তির জন্য সকল শর্ত পূরণ হয়ে যায়।

তাই, রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টির সদস্য সে-ই যে পার্টির কর্মসূচি গ্রহণ করে, পার্টিকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে এবং যে কোন পার্টি সংগঠনে কাজ করে।

এভাবেই কমরেড লেনিন [টীকাঃ লেনিন বিপ্লবী সমাজগণতন্ত্রের একজন অসামান্য তাত্ত্বিক ও বাস্তব সংগ্রামে নেতা] কর্তৃক খসড়াকৃত পার্টির গঠনতন্ত্রের ১ম অনুচ্ছেদ সূত্রায়িত হয়েছিল।

যেমনটা আপনারা দেখেছেন, এই সূত্র পুরোপুরি এই নীতি থেকে এসেছে যে পার্টি হচ্ছে একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠন, স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের দঙ্গল নয়।

এই সূত্রের শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই নিহিত।

কিন্তু দেখা যায় কিছু কমরেড লেনিনের সূত্র প্রত্যাখান করেন একে “সংকীর্ণ” ও “অসুবিধাজনক” বলে, আর প্রস্তাব করেন তাদের নিজস্ব সূত্রায়ণ যা কিনা না “সংকীর্ণ” না অসুবিধাজনক হওয়ার কথা। আমরা মার্তভ [টীকাঃ মার্তভ হচ্ছে স্ফুলিঙ্গ (ইস্ক্রা) পত্রিকার একজন অন্যতম সম্পাদক]-এর সূত্রায়নের দিকে ইঙ্গিত করছি যা এখন আমরা বিশ্লেষণ করব।

মার্তভের সূত্র হচ্ছেঃ “রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টির একজন সদস্য হলেন তিনি যিনি এর কর্মসূচি গ্রহণ করেন, পার্টিকে আর্থিক সহযোগিতা দেন আর পার্টির যে কোন সংগঠনের নির্দেশনায় নিয়মিত এই ব্যক্তিগত সহযোগিতা দান করেন।”

আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, এই সূত্র বাদ দেয় পার্টি সদস্যপদের তৃতীয় আবশ্যকীয় শর্তঃ পার্টির যে কোন একটি সংগঠনে কাজ করার পার্টি সদস্যের কর্তব্য। মনে হয় মার্তভ এই নির্দিষ্ট ও জরুরী শর্তকে অপ্রয়োজনী মনে করছেন, এবং তার ধোঁয়াশা ও দ্ব্যার্থতাবোধক “যে কোন একটি পার্টি সংগঠনের নির্দেশনার অধীনে ব্যক্তিগত সহায়তা দান” সূত্র দ্বারা একে প্রতিস্থাপন করেছেন। যেন পার্টির কোন সংগঠনে যুক্ত না হয়ে (সত্যি চমৎকার “পার্টি”ই বটে!) এবং পার্টির ইচ্ছার অধীনে নিজেকে স্থাপন না করে (সত্যি চমৎকার “পার্টি শৃংখলা”ই বটে!) পার্টি সদস্য হওয়া যায়। তাহলে পার্টিই বা “নিয়মিত” কীভাবে সেসব ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেবে যারা পার্টির কোন সংগঠনে যুক্ত নয়, আর পার্টি শৃংখলার অধীনে নিজেকে স্থাপনে বাধ্য মনে করেনা?

এটা সেই প্রশ্ন যাতে পার্টি গঠনতন্ত্রের ১ম অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্তভের সূত্র খন্ডিত হয়, আর লেনিনের সূত্রে প্রতিভাদীপ্তভাবে জবাব দেয়া হয়েছে যে মাত্রায় তা নির্দিষ্টভাবে বিবৃত করে যে পার্টি সদস্যপদের এক তৃতীয় ও অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে যে পার্টির কোন না কোন সংগঠনে অবশ্যই কাজ করতে হবে।

আমরা যা করতে পারি তা হল মার্তভের সূত্র থেকে ধোঁয়াশা ও অর্থহীন “কোন একটি পার্টি সংগঠনের পরিচালনাধীনে ব্যক্তিগত সহায়তা” কথাটা বর্জন করা। এই শর্ত বাদ দেয়ার পর মার্তভের সূত্রে দুটি শর্ত থাকে (কর্মসূচির গ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা দান) যা নিজে নিজেই সম্পূর্ণ মূল্যহীন কারণ যে কোন অন্তসারশূন্য লোকই পার্টি কর্মসূচি গ্রহণ ও পার্টিকে আর্থিক সহায়তা দিতে পারে, কিন্তু তা তাকে পার্টি সদস্যপদের ন্যূনতম অধিকার দেয়না।

সত্যিই এক “সুবিধাজনক” সূত্র বটে!

আমরা বলি যে সত্যিকার পার্টি সদস্যগণ পার্টি কর্মসূচি গ্রহণ করেই তৃপ্ত হন না, বরং তাদের গৃহীত কর্মসূচি প্রয়োগের প্রচেষ্টাও নিশ্চয়ই তাঁরা চালাবেন।

মার্তভ উত্তর দেয়ঃ আপনারা বড় বেশি কঠিন, কারণ পার্টি সদস্যকে তার গৃহীত কর্মসূচি প্রয়োগ করার অত কী প্রয়োজন যখন সে পার্টিকে আর্থিক সাহায্য দিতে ইচ্ছুক, ইত্যাদি? মনে হচ্ছে মার্তভ কিছু অন্তসারশূন্য “সমাজগণতন্ত্রী”র জন্য কতই না দুঃখিত, আর তাই তাদের জন্য পার্টির দরজা বন্ধ করতে চাননা।

আমরা আরো বলি যে এই কর্মসূচির প্রয়োগের মধ্যে যেমন লড়াই করা জড়িত, আর ঐক্য ছাড়া লড়াই অসম্ভব, তেমনি প্রতিটি সম্ভাবনাময়ী পার্টি সদস্যের কর্তব্য হল যে কোন একটি পার্টি সংগঠনে যোগ দেয়া, পার্টির ইচ্ছার সাথে নিজ ইচ্ছাকে মিলিয়ে ফেলা আর পার্টির সাথে একীভূত হয়ে লড়াইরত সর্বহারা বাহিনীকে পরিচালিত করা অর্থাৎ কেন্দ্রীভূত পার্টির সুসংগঠিত বাহিনী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। এতে মার্তভ উত্তর দেয়ঃ সুসংগঠিত বাহিনীর মত করে পার্টি সদস্যদের সংগঠিত হওয়ার ও সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা; বরং একহাতে লড়াই চালানো যথেষ্ট। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, আমাদের পার্টি কী? তা কি স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের আকস্মিক সমাবেশ, নাকি নেতাদের এক ঐক্যবদ্ধ সংগঠন? আর তা যদি নেতাদের একটি সংগঠন হয়, এমন কাউকে কি আমরা সদস্য বলতে পারি যে এর সাথে যুক্ত নয়, তাই এর শৃংখলা মানা তার কর্তব্য মনে করেনা? মার্তভ উত্তর দেয়, পার্টি কোন সংগঠন নয়, বরং পার্টি একটি অসংগঠিত সংগঠন (কী চমৎকার “কেন্দ্রিকতা”, তাইনা!)

স্পষ্টতই মার্তভের মতে আমাদের পার্টি কোন কেন্দ্রীভুত সংগঠন নয়, বরং আমাদের পার্টি কর্মসূচি গ্রহণকারী “সমাজগণতন্ত্রী” স্থানীয় সংগঠন ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের এক দঙ্গল। কিন্তু আমাদের পার্টি একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠন না হলে তা একটি দুর্গ নয় যার দরজা শুধু পরীক্ষিতদের জন্য খোলা থাকে, কিন্তু মার্তভের সূত্র থেকে পরিষ্কার যে পার্টি কোন দুর্গ নয় বরং ভোজসভা যাতে যে কোন সমর্থক মুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারে। সামান্য জ্ঞান, সামান্য সহানুভুতি, সামান্য আর্থিক সহায়তা, ব্যাস এতেই পার্টি সদস্য হওয়ার পূর্ণ অধিকার পেলেন।

মার্তভ চিৎকার করে ভীত হয়ে “পার্টি সদস্যদের” বলে, ওদের কথা শুনবেনা যারা বলে যে পার্টি সদস্য হতে হলে কোন একটি পার্টি সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে হবে, আর পার্টির ইচ্ছার অধীন করতে হবে নিজ ইচ্ছাকে। প্রথমত, এসব শর্ত গ্রহণ করা কারো পক্ষে কঠিন, পার্টির ইচ্ছার অধীনে নিজ ইচ্ছা স্থাপন করা ছেলেখেলা নয়, আর দ্বিতীয়ত, আমি ইতিমধ্যে যেমনটা বলেছি, ঐসকল লোকের কথা ভুল। তাই, ভদ্রমহোদয়গণ, ভোজসভায়…আপনাদের স্বাগতম!

দেখে মনে হচ্ছে মার্তভ, এমন কিছু অধ্যাপক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য দুঃখিত যারা তাদের ইচ্ছাকে পার্টির ইচ্ছার অধীনে স্থাপন করতে চাননা, তাই সে আমাদের দুর্গে ফাটল ধরিয়ে সেই চোরা পথে ঐসকল ভদ্রলোকদেরকে পার্টিতে পাচার করতে চেষ্টা করছেন। তিনি সুবিধাবাদের জন্য পার্টির দরজা খুলে দিতে চান, আর এটা এমন এক সময় যখন হাজারো শত্রু সর্বহারার শ্রেণীসচেতনতাকে আক্রমণ করছে।

কিন্তু এই সব নয়, মার্তভের দ্ব্যার্থতাবোধক সূত্র পার্টিতে সুবিধাবাদের উত্থান ঘটাতে সক্ষম করে তোলে আরেক দিক থেকে। আমরা জানি, মার্তভের সূত্র কেবল কর্মসূচির গ্রহণকে ইঙ্গিত করে; রণকৌশল ও সংগঠনের ব্যাপারে তা কিছুই বলেনা, আর কর্মসূচিগত ঐক্যের চেয়ে সাংগঠনিক নীতিমালা ও রণকৌশলের ঐক্য কোন অংশেই পার্টি ঐক্যের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের বলা হতে পারে, এমনকি লেনিনের সূত্রেও এমন কিছু বলা হয়নি। সত্য, কিন্তু কমরেড লেনিনের সূত্রে এ সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। এটা কি স্বতসিদ্ধ নয় যে একটি পার্টি সংগঠনে কাজে করে ও তাই পার্টির সাথে একীভূত হয়ে লড়াই করে, পার্টির শৃংখলার প্রতি অনুগত থেকে তার পক্ষে পার্টির রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা ছাড়া অন্য কোনকিছু মেনে চলা চলেনা? কিন্তু সেই “পার্টি সদস্য” সম্পর্কে কি বলবেন যারা পার্টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, কিন্তু পার্টির কোন সংগঠনের সাথে জড়িত নন? এমন “সদস্য”দের রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা পার্টির না অন্যদের তার কি নিশ্চয়তা আছে?

ঠিক এই জিনিসটাই মার্তভের সূত্র ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়! মার্তভের সূত্রের ফল হিসেবে আমাদের একটি উদ্ভট “পার্টি” থাকবে, যার “সদস্যরা” একই কর্মসূচি গ্রহণ করবে (যা সন্দেহজনক!), কিন্তু তাদের কৌশলগত ও সাংগঠনিক নীতিমালা ভিন্ন! কী আদর্শ বৈচিত্র্য! কীভাবে আমাদের পার্টি ভোজসভা থেকে পৃথক হবে?

কেবল একটি প্রশ্ন আমরা রাখতে চাইঃ দ্বিতীয় কংগ্রেস আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে যে মতাদর্শিক ও ব্যবহারিক কেন্দ্রিকতার, তার কি হবে যা মৌলিকভাবে মার্থভের সূত্র দ্বারা বিরোধিতা প্রাপ্ত হয়েছে? তাকি ছুড়ে ফেলে দেব? পছন্দ করার প্রশ্ন এলে সন্দেহাতীতভাবে মার্তভের সূত্র ছুড়ে ফেলে দেয়া বেশি সঠিক হবে।

কমরেড লেনিনের সূত্রের বিরোধিতা করে মার্তভ আমাদের কাছে এমনই উদ্ভট সূত্র উপস্থাপন করেছেন।

আমাদের মতে দ্বিতীয় পার্টি কংগ্রেসে মার্তভের সূত্র গ্রহণ ছিল চিন্তাহীনতার ফল, আর আমরা আশা করি তৃতীয় পার্টি কংগ্রেস দ্বিতীয় কংগ্রেসের মারাত্মক ভ্রান্তি সংশোধনে আর কমরেড লেনিনের সূত্র গ্রহণে ব্যর্থ হবেনা।

আমরা সংক্ষেপে কথাগুলো পুনর্ব্যক্ত করবঃ সর্বহারা বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। যেহেতু প্রতিটি বাহিনীর একটি অগ্রবাহিনী থাকতে হয়, এই বাহিনীরও তাই অগ্রবাহিনী থাকতে হবে। তাই সর্বহারা শ্রেণীর নেতাদের একটি গোষ্ঠী রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টির আবির্ভাব ঘটেছে। একটি নির্দিষ্ট বাহিনীর অগ্রবাহিনী হিসেবে প্রথমত পার্টিকে অবশ্যই তার নিজ কর্মসূচি, রণকৌশল ও সাংগঠনিক নীতিমালা দ্বারা সজ্জিত হতে হবে, দ্বিতীয়ত একে একটি সুসংহত সংগঠন হতে হবে। রুশ সমাজগণতন্ত্রী শ্রমিক পার্টির সদস্য কে হতে পারবে এই প্রশ্নের উত্তর এই পার্টির কেবল একটিইঃ

যিনি পার্টির কর্মসূচি গ্রহণ করেন, পার্টিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন, আর পার্টির যে কোন একটি সংগঠনে কাজ করেন।

এই সেই অনিবার্য সত্য যা কমরেড লেনিন তাঁর চমৎকার সূত্রে প্রকাশ করেছেন।।