সিরাজ সিকদার রচনাঃ পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির খসড়া সংবিধান

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির আহ্বায়ক কমিটি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩


পিডিএফ

[প্রতি সাংগঠনিক একক এবং কর্মীর খসড়া সংবিধান সম্পর্কে

অভিমত প্রস্তাব থাকলে তা আহ্বায়ক কমিটির নিকট প্রেরণ করবেন]

 

প্রথম অধ্যায়

সাধারণ কর্মসূচী

.

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি হচ্ছে পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি। পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর অগ্রগামী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত, ইহা হচ্ছে সজীব ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটি অগ্রগামী সংগঠন যা জাতীয় ও শ্রেণীশত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সর্বহারা শ্রেণী ও বিপ্লবী জনসাধারণকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে গ্রহণ করেছে এর চিন্তাধারার পথ নির্দেশের তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে। মাওসেতুঙ চিন্তাধারা হচেছ এমন একটা যুগের মার্কসবাদ-লেনিনবাদ যে যুগে সাম্রাজ্যবাদ সামগ্রিক ধ্বংসের মুখে চলেছে আর সমাজতন্ত্র এগিয়ে চলেছে বিশ্বব্যাপী বিজয়ের পথে।

অর্ধ শতাব্দী ধরে কমরেড মাওসেতুঙ চীনের নয়া গনতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রামে নেতৃত্বদানে, সাম্রাজ্যবাদ, আধুনিক সংশোধনবাদ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে বর্তমান যুগের আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের মহান সংগ্রামে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সার্বজনীন সত্যকে বিপ্লবের বাস্তব অনুশীলনের সাথে সমন্বয় সাধন করেছেন, মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন, রক্ষা করেছেন ও বিকাশ করেছেন এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে এক সম্পূর্ণ নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। [এখানে লিন পিয়াও সংক্রান্ত কয়েকটি বাক্য ছিল যা পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল—সর্বহারা পথ]

.

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মসূচী হচ্ছে পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের জন্য দায়ী মৌলিক দ্বন্দ্বসমূহের সমাধান করা এবং কমিউনিজম বাস্তবায়িত করা।

পূর্ববাংলার সামাজিক বিকাশের জন্য দায়ী মৌলিক দ্বন্দ্বসমূহ নিম্নরূপঃ

১। পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর সাথে পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় দ্বন্দ্ব,

২। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের সাথে পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় দ্বন্দ্ব,

৩। সামন্তবাদের সাথে কৃষক জনতার দ্বন্দ্ব,

৪। বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব।

উপরোক্ত দ্বন্দ্বসমূহের মাঝে প্রধান দ্বন্দ্ব হলো পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর সাথে পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় দ্বন্দ্ব।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষাকারী পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী পুর্ববাংলার বিশ্বাসঘাতক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের অধিকাংশের উপর নির্ভর করে পূর্ববাংলাকে উপনিবেশে পরিণত করেছে এবং একে শোষণ ও লুন্ঠন করছে। পূর্ববাংলার সমাজ তার বিকাশের নিজস্ব নিয়মেই জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বৈদেশিক শোষণের অবসান এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্তবাদকে উৎখাত করে পূর্ববাংলায় বুর্জোয়া বিকাশের শর্ত সৃষ্টির লক্ষ্য সামনে রেখে এগুচ্ছে।

পূর্ববাংলার জাতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী, তাদের সহযোগী ও সমর্থক বিশ্বাসঘাতক আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া, সামন্তবাদী, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদকে পূর্ববাংলা থেকে পরিপূর্ণভাবে উৎখাত করা, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে বিরোধিতা করা; সামন্তবাদ ব্যতীত অন্যান্যদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয়করণ করা; সামন্তবাদীদের ভূ-সম্পত্তি ক্ষেতমজুর-গরীব চাষীদের মাঝে বিতরণ করা।

পূর্ববাংলার গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্য হলো সামন্তবাদকে পরিপূর্ণভাবে উখাত করা, সামন্তবাদীদের ভূ-সম্পত্তি ক্ষেতমজুর-গরীব চাষীদের মাঝে বিতরণ করা। সামন্তবাদীদের মাঝে জাতীয় স্বার্থের পরীপন্থীদেরকে জাতীয় বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় উৎখাত করা, জাতীয় বিপ্লব সমর্থক সামন্তবাদীদের শোষণ কমানো, তাদের অস্তিত্ব বজায় থাকতে দেওয়া, শেষ পর্যন্ত যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের ভূমিও কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিপ্লব পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা।

পূর্ববাংলার বর্তমান সামাজিক বিপ্লবের চরিত্র হলো জাতীয় এবং গণতান্ত্রিক অর্থাৎ জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব। জাতীয় ও গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরস্পর যুক্ত এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল।

পূর্ববাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব কেবলমাত্র সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব।

এ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ও নির্মম যুদ্ধ। ইহা পরিচালনা ও সম্পন্ন করা যাবে কেবলমাত্র গণযুদ্ধের রণনীতি ও রণকৌশল প্রয়োগ করে। জাতীয় মুক্তির গণযুদ্ধের বর্তমান রূপ হচ্ছে পূর্ববাংলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে পাকিস্তানী উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর সহযোগী ও সমর্থক অর্থাৎ তাদের চোখ ও কান জাতীয় শত্রুদের খতমের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ সূচনা ও পরিচালনা করা।

জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে সূচিত ও পরিচালিত গেরিলা যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় জনসাধারণকে জাগরিত করা, সংগঠিত করা এবং তাদের শক্তিকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়; পার্টিকর্মী ও গেরিলারা যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধ শেখে, বিপ্লবী অনুশীলনে পোড় খায়; অস্ত্র-অর্থ সংগৃহীত হয়, সংগঠন বিকশিত ও সুসংবদ্ধ হয়, গ্রামসমূহ জাতীয় শত্রুমুক্ত হয়, সেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা কায়েম করা যায়।

এভাবে গ্রাম দখল করে ঘাঁটি স্থাপন করা, শহর ঘেরাও করা, গেরিলা বাহিনী থেকে নিয়মিত বাহিনী গড়ে তোলা, গেরিলা যুদ্ধকে সচল যুদ্ধে উন্নীত করা, যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করা, শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া, তার শক্তিকে দুর্বল করা, দেশীয়-আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করা সম্ভব হয়।

জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে সূচীত গেরিলা যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসঘাতক সামন্তবাদীদের উৎখাত করা এবং জাতীয় মুক্তি সমর্থক সামন্তবাদীদের শোষণ হ্রাস করার ফলে কৃষক-শ্রমিক মৈত্রী গড়ে উঠে ও দৃঢ়তর হয়। এই দৃঢ় মৈত্রীর ভিত্তিতে দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন করা, একে টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত করা যায়।

পূর্ববাংলার সমাজের বিপ্লবী অনুশীলনের অগ্নিপরীক্ষায় সঠিক বলে প্রমাণিত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের এ সকল রাজনৈতিক, সামারিক ও ঐক্যফ্রন্টের লাইন সমগ্র পার্টি অবশ্যই কার্যকরী করবে।

পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর জাতীয় শোষণ ও লুন্ঠন বিরোধী পূর্ববাংলার জনগণের মহান সংগ্রামের সুযোগ গ্রহণ করে পূর্ববাংলার আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদীদের এক অংশ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় পূর্ববাংলাকে দখল করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ এবং পূর্ববাংলার আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ এই ছয় পাহাড়ের শোষণ ও লুন্ঠন কায়েমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পূর্ববাংলার বুর্জোয়া শ্রেণী সাম্রাজ্যবাদ-সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং সামন্তবাদের সাথে শত-সহস্র বন্ধনে যুক্ত এবং শ্রেণী হিসেবে দুর্বল এবং দোদুল্যমান। তাদের অনেকেই আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ও সামন্তবাদীদের ছয় পাহাড়ের শোষণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় শামিল হয়েছে।

এ কারণে এদের দ্বারা পূর্ববাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিচালনা ও সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

কাজেই একমাত্র সর্বহারা শ্রেণীর পক্ষেই পূর্ববাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব পরিচালনা ও সম্পন্ন করা সম্ভব। সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে এ বিপ্লব হবে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব। এর পরিণতি হবে বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব পরিচালনা ও সম্পন্ন করার মাধ্যমে সমাধান করা এবং চূড়ান্তভাবে কমিউনিজম বাস্তবায়িত করা। এ বিপ্লব বিশ্ববিপ্লবের অংশ।

 ৩.

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি প্রতিষ্ঠার জন্য পুর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা বারংবার বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। সভাপতি মাওসেতুঙের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্বের সর্বহারা বিপ্লবীদের আধুনিক সংশাধনবাদ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে বর্তমান যুগের আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে মহান সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও দীক্ষিত হয়ে পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা মনি সিং-মোজাফ্ফর সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এ মহান বিদ্রোহের সুযোগ গ্রহণ করে হক-তোয়াহা নয়া সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক চক্র মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বুর্জোয়া উপদল প্রতিষ্ঠা করে এবং লাল পতাকা নেড়ে লাল পতাকার বিরোধিতা করে। সর্বহারা সাধারণ বিপ্লবীদের নয়া সংশোধনবাদ বিরোধী সংগ্রামের সুযোগ গ্রহণ করে দেবেন-মতিন ট্রটস্কী-চেবাদী, কাজী-রণো ষড়যন্ত্রকারীরা সর্বহারার সংগঠনের নামে বিভিন্ন বুর্জোয়া উপদল গঠন করে। এ সকল বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা প্রতিনিয়ত সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাদেরকে বিপথে পরিচালনা করে।

পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর একটি সত্যিকার রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা ১৯৬৮ সালের ৮ই জানুয়ারী পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে এবং বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক, মতাদর্শগত ক্ষেত্রে তত্ত্ব ও অনুশীলন উভয়ভাবেই মহান সংগ্রাম পরিচালনা করে।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন মাত্র সাড়ে তিন বৎসর সময়ের মধ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিশেষ অনুশীলনে সাফল্যের সাথে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হয়েছে এবং বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক ও মতাদর্শগত ক্ষেত্রে তত্ত্ব ও অনুশীলনে বিরাট বিজয় অর্জন করেছে।

পাকিস্তানী উপনিবেশিক সামরিক ফ্যাসিস্টদের কামানের গোলার শব্দের মাঝে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ে পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় গেরিলা ফ্রন্ট, পূর্ববাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বহারা শ্রেণীর পরিপূর্ণ নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গড়ে উঠেছে, পার্টিকর্মী ও গেরিলারা তত্ত্বকে অনুশীলনের সাথে সংযোগ সাধন করে অধিকতর পরিপক্ক হয়েছে। এভাবে পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার যথাযথ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সমগ্র পার্টিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার মহান লাল পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে, পার্টির সঠিক মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামারিক লাইন প্রতিনিয়ত অনুশীলনের সাথে সমন্বয় সাধন করতে হবে, পার্টির অভ্যন্তরে ও বাইরে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ ও ক্ষুদে বুর্জোয়া মতাদর্শ ও তার প্রকাশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে; সশস্ত্র জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে লেগে থাকতে হবে এবং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনে লেগে থাকতে হবে। এভাবে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, এর নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে।

পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর চরমতম ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের পরিস্থিতিতে পার্টি গোপনভাবে কার্য পরিচালনা করবে। গেরিলা অঞ্চলসমূহেও গোপনভাবে পার্টির কার্য পরিচালিত হবে। কেবলমাত্র ঘাঁটি এলাকায় প্রকাশ্য পার্টি তৎপরতা পরিচালনা সম্ভব।

.

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, সর্বহারা শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতাবাদে অটল থেকে দৃঢ়তার সাথে সারা দুনিয়ার প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি ও সংগঠনের সংগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দুনিয়ার সর্বহারা শ্রেণী, নিপীড়িত জনগণ ও নিপীড়িত জাতির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ, আধুনিক সংশোধনবাদ যার কেন্দ্র হলো সোভিয়েট সংশোধনবাদী বিশ্বাসঘাতক চক্র, বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়াশীলদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য, পৃথিবীতে মানুষের দ্বারা মানুষ শোষণ করার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য এবং সমগ্র মানব জাতির মুক্তির জন্য সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম চালাচ্ছে।

কমিউনিজমের জন্য সারা জীবন কঠোর সংগ্রাম করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্যদের অবশ্যই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আত্মবলিদানে নির্ভয় হতে হবে, সমস্ত বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বিজয় অর্জন করতে হবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

পার্টি সদস্য

প্রথম ধারাঃ আঠার বছর বয়স হলেই পূর্ববাংলার শ্রমিক, গরীব কৃষক, নিম্নমাঝারী কৃষক, বিপ্লবী সামরিক লোক ও অন্যন্য বিপ্লবী ব্যক্তি যারা পার্টির সংবিধান স্বীকার করে, পার্টির কোন একটি সংগঠনে যোগ দেয় এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে, পার্টির সিদ্ধান্ত পালন করে, পার্টির শৃংখলা মেনে চলে, পার্টির চাঁদা দেয়, তারা সকলেই পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্য হতে পারে।

দ্বিতীয় ধারাঃ পার্টির সদস্য পদপ্রার্থীর অবশ্যই পার্টিতে ভর্তির নিয়মাবলী পালন করতে হবে, সুপারিশের জন্য একজন সদস্য থাকতে হবে, পার্টিতে যোগদানের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং পার্টির শাখার দ্বারা পরীক্ষিত হতে হবে, আর পার্টি শাখাকে অবশ্যই ব্যাপকভাবে পার্টির ভেতরের বাইরের জনসাধারণের মতামত শুনতে হবে। তার কেডার ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। এ সকল তথ্যের ভিত্তিতে তাকে পার্টিতে গ্রহণের সিদ্ধান্ত পার্টি শাখার সাধারণ অধিবেশনের দ্বারা গৃহীত ও পরবর্তীতে উচ্চতর পার্টি কমিটির দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।

তৃতীয় ধারাঃ পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্যদের অবশ্যকরণীয় কাজ হচ্ছেঃ

১। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে সজীবতার সাথে অধ্যয়ন ও প্রয়োগ করা।

২। পূর্ববাংলার ও বিশ্বের বিরাট সংখ্যাধিক লোকের স্বার্থে কাজ করা।

৩। যারা ভুল করে তাদের বিরোধিতা করেছিল কিন্তু ভুল সংশোধনে মনোযোগী তাদেরসহ বিরাট সংখ্যাধিক লোকের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে সক্ষম হওয়া, কিন্তু মতলববাজ, ষড়যন্ত্রকারী ও দুমুখো ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবশ্যই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।… পার্টির ও পার্টির নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন সংস্থার নেতৃত্ব চিরকালই মার্কসবাদী বিপ্লবীদের হাতে থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

৪। কোন বিষয় থাকলে জনসাধারণের সাথে পরামর্শ করা।

৫। সাহসের সাথে সমালোচনা ও আত্মসমালোচনা করা।

চতুর্থ ধারাঃ পার্টি সদস্য পার্টির শৃংখলা লংঘন করলে পার্টির বিভিন্ন স্তরের সংগঠনের নিজেদের ক্ষমতার আওতাধীনে বাস্তব অবস্থা অনুসারে পৃথক পৃথকভাবে শাস্তি দিতে হবে; সতর্ক করতে হবে, গুরুতররূপে সতর্ক করতে হবে, পার্টির পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে, পার্টির মধ্যে রেখে যাচাই করে দেখতে হবে অথবা পার্টি থেকে বহিস্কার করতে হবে।

পার্টি সদস্যকে পার্টির মধ্যে রেখে যাচাই করে দেখার মেয়াদকাল খুব বেশী হলে এক বছরের বেশী হতে পারবে না। পার্টির মধ্যে রেখে যাচাই করে দেখার মেয়াদকালে তার ভোট দানের, নির্বাচন করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার থাকবে না।

পার্টি সদস্যদের মাঝে যারা উৎসাহ-উদ্দীপনাহীন এবং শিক্ষাদানের পরেও পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে পার্টি থেকে বেরিয়ে যেতে উপদেশ দেওয়া উচিত।

পার্টি সদস্য পার্টি থেকে বেরিয়ে যেতে দরখাস্ত করলে পার্টি শাখার সাধারণ অধিবেশনের অনুমোদনক্রমে তার নাম কেটে দিতে হবে এবং পরবর্তী উচ্চতর পার্টি কমিটির কাছে রেকর্ড রাখার জন্য রিপোর্ট পেশ করতে হবে। প্রয়োজন হলে, ইহা পার্টি বহির্ভূত জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।

অকাট্য প্রমাণের দ্বারা সিদ্ধ বিশ্বাসঘাতক, গুপ্তচর, একেবারে অনুশোচনাবিহীন পুঁজিবাদের পথগামী কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তি; অধঃপতিত ব্যক্তি, শ্রেণীগতভাবে বৈর ব্যক্তিদেরকে পার্টি থেকে বহিস্কার করতে হবে এবং তাদেরকে পার্টিতে পুনরায় যোগদান করতে অনুমতি দেওয়া হবে না।

তৃতীয় অধ্যায়

পার্টির সাংগঠনিক নীতি

পঞ্চম ধারাঃ পার্টির সাংগঠনিক নীতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা।

পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় সংস্থা গণতান্ত্রিক পরামর্শের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়।

সমগ্র পার্টির অবশ্যই একক শৃংখলা মানতে হবেঃ ব্যক্তি সংগঠনের অধীন, সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর অধীন, নিম্নস্তর উচ্চতর স্তরের অধীন ও সমগ্র পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন থাকবে।

কংগ্রেস অথবা পার্টি সদস্যদের সাধারণ সম্মেলনের নিকট পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় সংস্থার নিজের কাজ-কর্ম সম্বন্ধে নিয়মিতভাবে রিপোর্ট পেশ করতে হবে, সব সময়ে পার্টির ভেতরের ও বাইরের জনসাধারণর মতামত শোনা ও তাদের তদারকি মেনে নিতে হবে।

পার্টির সংগঠনকে ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে সমালোচনা করার ও তাদের নিকট প্রস্তাব পেশ করার অধিকার পার্টি সদস্যদের রয়েছে। পার্টি সংগঠনের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ সম্পর্কে পার্টি সদস্যদের যদি ভিন্নমত থাকে, তাহলে সেটাকে সে পোষণ করতে পারে এবং তার এমন অধিকারও রয়েছে যে, স্তর ছাড়িয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির নিকট পর্যন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারে। এমন রাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি করা উচিৎ, যার মধ্যে থাকবে যেমন কেন্দ্রীকতা তেমনি গণতন্ত্র, যেমনি শৃংখলা তেমনি স্বাধীনতা, যেমনি একক সংকল্প তেমনি থাকবে ব্যক্তির মনের প্রফুল্লতা ও সজীবতা।

জাতীয় মুক্তি ফৌজ, সর্বহারা যুবলীগ, পাঠচক্র, শ্রমিক, গরীব ও নিম্নমাঝারী কৃষক ও অন্যান্য বিপ্লবী জনসাধারণের সংগঠন সকলকে অবশ্যই পার্টির নেতৃত্ব মানতে হবে।

ষষ্ঠ ধারাঃ পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয় সংস্থা হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেস ও তার দ্বারা নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থানীয়, সৈন্যবাহিনীর ও বিভিন্ন বিভাগগুলোর পার্টির নেতৃস্থানীয় সংস্থা হচ্ছে তাদের সমস্তরের পার্টির কংগ্রেস অথবা পার্টি সদস্যদের সাধারণ সম্মেলন ও তার দ্বারা নির্বাচিত কমিটি। পার্টির বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস পার্টির কমিটি কর্তৃক আহুত হয়।

স্থানীয় ও সৈন্যবাহিনীর পার্টির কংগ্রেস আহ্বান করাটা এবং নির্বাচিত পার্টি কমিটির সদস্যদের অবশ্যই উচ্চতর স্তরের অনুমোদিত হতে হবে।

সপ্তম ধারাঃ কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব, জনসাধারণের সংগে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, সহজ ও কার্যকরী কাঠামোর নীতির ভিত্তিতে পার্টির বিভিন্ন স্তরের কমিটিগুলো কর্মসংস্থা প্রতিষ্ঠিত কববে বা নিজেদের প্রতিনিধি সংস্থা প্রেরণ করবে।

চতুর্থ অধ্যায়

পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠন

অষ্টম ধারাঃ পার্টির জাতীয় কংগ্রেস প্রতি তিন বছরে একবার অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে অথবা স্থগিত রাখা যেতে পারে।

নবম ধারাঃ কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনই কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত করে।

যখন কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হয় না, তখন কেন্দ্রীয় কমিটির স্থায়ী কমিটিই কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষমতা পালন করে। স্থায়ী কমিটি দ্বারা কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন আহুত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির বা স্থায়ী কমিটির যখন পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় না তখন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষমতা পালন করবেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পার্টির সৈন্য বাহিনী ও পার্টির নেতৃত্বাধীন সংস্থাসমূহের কার্য পরিচালনার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় কর্মীর নেতৃত্বে প্রয়োজনীয়, সহজতর ও ক্ষমতাশীল সংস্থা গঠন করে নেবেন।

পঞ্চম অধ্যায়

পার্টির স্থানীয় সৈন্যবাহিনীর মধ্যকার সংগঠন

দশম ধারাঃ আঞ্চলিক, ফ্রন্ট, জেলা ও জেলার উপরকার স্থানীয় পার্টি-সংগঠনগুলোর কংগ্রেস প্রতি দেড় বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে বা স্থাগিত করা যেতে পারে।

স্থানীয় পার্টি কমিটিই সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং প্রয়োজনবোধে স্থায়ী কমিটি নির্বাচন করে।

ষষ্ঠ অধ্যায়

পার্টির প্রাথমিক সংগঠন

একাদশ ধারাঃ কল-কারখানা, খনি ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, অফিস-কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকান, শহর-পাড়া, জাতীয় মুক্তি বাহিনীর প্লাটুন ও অন্যান্য প্রাথমিক ইউনিটের সাধারণতঃ পার্টি শাখা (নয় থেকে উনিশ জন বা অধিক সদস্য) প্রতিষ্ঠিত করা হয়; যেখানে অপেক্ষাকৃত কম সদস্য রয়েছে সেখানে পার্টি গ্রুপ গঠন করা যায়; সদস্য না থাকলে পার্টি প্রতিনিধি নিয়োগ করা যায়। যেখানে পার্টি সদস্য অপেক্ষাকৃত বেশী রয়েছে অথবা বিপ্লবী সংগ্রামের জন্য প্রয়োজন হলে সংযুক্ত পার্টি শাখা বা প্রাথমিক পার্টি কমিটি প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

প্রতি বছর পার্টির প্রাথমিক সংগঠন একবার নির্বাচিত হয়। বিশেষ অবস্থায় নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে অথবা স্থগিত রাখা যেতে পারে।

দ্বাদশ ধারাঃ পার্টির প্রাথমিক সংগঠনকে অবশ্যই মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার মহান লাল পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে, সর্বহারা শ্রেণীর রাজনীতিকে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে এবং তত্ত্ব ও অনুশীলনের সংযোজনের রীতিকে, জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযোগের রীতিকে, সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার রীতিকে বিকশিত করতে হবে।

এর প্রধান কর্তব্য হচ্ছেঃ

১। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারাকে সজীবতার সাথে অধ্যয়ন ও প্রয়োগ করার জন্য পার্টি সদস্য ও ব্যাপক বিপ্লবী জনসাধারণকে নেতৃত্ব দান করা।

২। সব সময় পার্টি সদস্য ও ব্যাপক বিপ্লবী জনসাধারণকে প্রধান ধরনের সংগ্রাম হিসেবে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দান করা, পার্টির নেতৃত্বে প্রধান ধরনের সংগঠন হিসেবে জাতীয় মুক্তি বাহিনী গড়ে তোলা।

৩। কৃষক-শ্রমিক মৈত্রীর ভিত্তিতে সকল দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করা, জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গড়ে তোলা, একে বিকশিত ও সুসংবদ্ধ করা।

৪। পার্টির নীতি প্রচার করা ও তা বাস্তবে রূপায়িত করা, পার্টির সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা, পার্টি ও দেশের দ্বারা অর্পিত প্রতিটি কর্তব্য সম্পন্ন করা।

৫। জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা, সব সময়ে জনসাধারণের মতামত ও দাবীদাওয়া শোনা, পার্টির ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ ও ক্ষুদে বুর্জোয়া এবং শোষক শ্রেণীর মতাদর্শ ও তার প্রকাশের বিরুদ্ধে সক্রিয় মতাদর্শগত সংগ্রাম চালানো, যাতে করে পার্টির জীবন সজীব ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে উঠে।

৬। নূতন সদস্যদের পার্টিতে গ্রহণ করা, পার্টির শৃংখলা পালন করা, সব সময় পার্টির সংগঠনকে শুদ্ধিকরণ করা, বাসীটা বর্জন ও টাটকাটা গ্রহণ করা এবং পার্টির সংগঠনের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা।

(দলিলটির শেষ দিককার কিছু অংশ পাওয়া যায়নি—সর্বহারা পথ) ■