বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলাঃ উৎস কী?

গত অক্টোবর ২০২১-এ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পুজার সময় মন্দিরে মন্ডপে হামলা ঘটে সেইসাথে হত্যা অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিম ধর্মবাদীদের হামলায় কিছু হিন্দু পুরোধিতের মৃত্যু ঘটেছে, আবার পুলিশের গুলিতে কিছু মুসলিম ধর্মবাদীরও মৃত্যু ঘটেছে।

কয়েক বছর আগে নাগরিক পঞ্জির নামে ভারতে বিজেপির নেতৃত্বে ভয়ংকর বাঙালী বিরোধি মুসলিম বিরোধী নির্যাতন নিপীড়ণ উচ্ছেদ জ্বালাও পোড়াও বাঙাল খেদা ইত্যাদি বিভীষিকা শুরু করে। আসামে এর সূত্রপাত ঘটে, তারপর সারা ভারতে এর প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম বংগে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় সমগ্র বাঙালীদের মধ্যে। সারা ভারতে মুসলিম বিরোধী নীতি ও কর্মসূচির প্রতিবাদে বিরাট আন্দোলন গড়ে উঠে। আগুন জ্বলে উঠে। করোনা ভাইরাসের আগমনের ফলে এটা স্তিমিত হয়। বাঙালি মুসলিম বিরোধী নীতি বাংলাদেশের জনগণ বিরোধী, মুসলিম বিরোধী। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাব মানসে আঘাত লাগে। ধর্মবাদীরা একে কাজে লাগায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আক্রমণের মাধ্যমে। ধর্মবাদী প্রতিক্রিয়াশীলরা জনগণের মধ্যে ধর্মীয় হিংসাকে কাজে লাগিয়ে তাদের আরো উত্তেজিত করে তোলে। বলা বাহুল্য বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেদের ধর্মীয় স্বাধিনতা ক্ষুন্ন হয়েছে। ভারতে যেমন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধিনতা ক্ষুন্ন হয়েছে, একইভাবে বাংলাদেশেও উল্টোটা হয়েছে। একটা আরেকটার পরিপূরক।

এছাড়াকি সাধারণভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনা? সমাজে বিদ্যমান সাম্পদায়িক হিংসাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরণের ঘটনা কমবেশি ঘটে থাকে। ভারত উপমহাদেশে শত শত বছর এভাবে সমাজকে ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশরা একে কাজে লাগিয়ে সম্প্রদায় ভিত্তিতে ভোটের আয়োজন করে, এবং ভারতকে ভারত ও পাকিস্তান নামে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে বিভক্ত করে। তারপর এ হিংসা চলতেই থাকে। এছাড়া ধর্মবাদী রাজনীতি কংগ্রেস, মুসলিম লীগ এবং পরবর্তীতে ভারতীয় জনতা পার্টি,  আওয়ামী লীগ, বিএনপি ইত্যাদি দলগুলো কোন না কোন ভাবে চালায়, এছাড়া পরিপূর্ণ ধর্মবাদী ইসলামবাদী ও হিন্দুত্ববাদী নব নব দল গড়ে উঠেছে।

আমরা কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী। গণতান্ত্রিক বিপ্লবে আমরা ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে কীভাবে ব্যক্ত করি। আমাদের কর্মসুচি হচ্ছেঃ ধর্ম বিশ্বাস করা বা না করার ব্যাপারে সবাই স্বাধীন। না করাটা হচ্ছে নিরীশ্বরবাদ। বাংলাদেশের মত পশ্চাদপদ সমাজে ধর্ম বিশ্বাস না করার কথা কেউ প্রকাশ্যে বলতেই পারেনা। অথচ সারা দুনিয়ায় নিরীশ্বরবাদীরাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং নিরীশ্বরবাদীরা স্বাধীনতা পাচ্ছেন কিনা তা সবার আগে আসে। আর তারাই সবচেয়ে নিপীড়িত। তারপর বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের প্রশ্ন আসে। যথা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ইত্যাদি। আমরা সকল প্রকার নিপীড়ণের বিরোধী। স্বাভাবিকভাবে ধর্মীয় নিপীড়ণেরও বিরোধী।।