সিরাজ সিকদার রচনাঃ উপদলবাদ ও সুবিধাবাদ সম্পর্কে

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক প্রনীত ও প্রকাশিত হয় ১৯৬৮৭০ সময়কালে

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক  ”ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণীউদ্ভূত কর্মীদের মতাদর্শগত পুনর্গঠন সম্পর্কে পুস্তিকায়  এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে

পূবাসপা কর্তৃক নির্বাচিত মতাদর্শগত রচনাবলীতে এর প্রকাশ কাল ১৯৭৪

সিপিএমএলএম বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১২ ডিসেম্বর ২০১২


পিডিএফ

।। স্ট্যালিনের রচনাবলীর ভিত্তিতে ।।

পার্টি হচ্ছে ইচ্ছার ও কাজের, ঐক্যের প্রতিনিধি যা যে কোন প্রকার উপদলের বিরোধী। সর্বহারার একনায়ত্ব অর্জন ও তা বজায় রাখা অসম্ভব-সংহতি ও লৌহ-কঠিন শৃংখলার একটি শক্তিশালী পার্টি ব্যতীত। কিন্তু লৌহ-কঠিন শৃংখলা সকল পার্টি সদস্যদের সম্পূর্ণ ও সামগ্রিক ইচ্ছার ঐক্য, কাজের ঐক্য ব্যতীত চিন্তা করা যায় না।  কিন্তু ইহা অবশ্যই বুঝায় না যে, পার্টির মধ্যে কোন প্রকার মতের সংঘাত থাকবে না। লৌহ-কঠিন শৃংখলা স্বীকার করে নেয় পার্টির অভ্যন্তরে সমালোচনা ও মতের সংঘাতকে। ইহা মোটেই বুঝায় না যে শৃংখলা হবে অন্ধ শৃংখলা। লৌহ-কঠিন শৃংখলা হবে সচেতন এবং স্বেচ্ছা আনুগত্যমূলক, কেননা কেবল সচেতন শৃংখলাই লৌহ কঠিন হতে পারে।  কিন্তু যখন একটি মতের উপর সংঘাত শেষ হয়, সমালোচনা  সমাপ্ত হয় এবং একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখন সকল সদস্যের ইচ্ছা ও কাজের ঐক্য প্রয়োজন। এ ছাড়া পার্টির ঐক্য বা লৌহ-কঠিন শৃংখলা কোনটাই অর্জন করা যায় না।  লেনিন বলেছেন, বর্তমান গৃহযুদ্ধের যুগে কমিউনিস্ট পার্টি তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে যদি ইহা কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে গঠিত হয়, যদি এর শৃংখলা সামরিক শৃংখলার মত হয় এবং যদি পার্টির কেন্দ্র শক্তিশালী নেতৃত্বদাতা সংস্থা হয়যা ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী এবং পার্টি সদস্যের বিশ্বাসভাজন হয়লেনিন অন্যত্র বলেছেন, যে কেউ সর্বহারার পার্টির শৃংখলাকে সামান্যতম দুর্বল করে সে বাস্তবে সর্বহারার বিরুদ্ধে বুর্জোয়াকে সাহায্য করে

এ থেকে আমরা পাই যে উপদলের অবস্থিতি পার্টির ঐক্য অথবা লৌহ-কঠিন শৃংখলা কোনটার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা প্রমাণের সামান্যই প্রয়োজন রয়েছে যে, উপদলের অবস্থান কয়েকটি কেন্দ্র সৃষ্টি করে এবং কয়েকটি কেন্দ্রের সৃষ্টি পার্টির সাধারণ একটি কেন্দ্রের অনুপস্থিতি, এর ঐক্যের ভাঙ্গন, শংখলাকে দুর্বল ও ছিন্ন করা, সর্বহারার একনায়কত্বকে দুর্বল ও ছিন্ন করা বুঝায়।  সংশোধনবাদী ও ট্রটস্কীবাদী পার্টিগুলো-যারা সর্বহারাদের ক্ষমতা দখলের দিকে পরিচালিত করে না, তারাই কেবল উপদলীয় কার্যকলাপের স্বাধীনতা অনুমোদন করার উদারতাবাদ স্বীকার করতে পারে। কিন্তু যে পার্টি রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের এবং তা বজায় রাখার সংগ্রামে সর্বহারাদের পরিচালিত করে তা উপদলীয় কার্যকলাপের প্রতি উদার হতে পারে না বা তা চলার স্বাধীনতা দিতে পারে না।

পার্টি ইচ্ছার ঐক্যের প্রতিনিধিত্ব করে যা সকল প্রকার উপদলবাদ এবং নেতৃত্বের বিভক্তিকরণকে বিরোধিতা করে।

এ কারণেই লেনিন সাবধান করেছেন, পার্টির ঐক্য এবং সর্বহারা একনায়কত্বের সাফল্যের মৌলিক শর্ত হিসেবে সর্বহারার অগ্রগামী বাহিনীর ঐক্যের দৃষ্টিকোণ, যা উপদল দ্বারা বিপদগ্রস্ত হতে পারে তার সম্বন্ধে।

এ কারণেই লেনিন দাবী করেছেন, সকল প্রকার উপদলবাদকে সম্পূর্ণভাবে খাত করার জন্য এবং কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়া সকল গ্রুপ যা বিচ্ছিন্ন প্লাটফরমের ভিত্তিতে তৈরী হয়েছে তা অতি সত্ত্বর ভেঙ্গে দিতে,এমনকি শর্তহীনভাবে এবং দ্রুতগতিতে পার্টি থেকে বহিষ্কার করতে

 

পার্টি শক্তিশালী হয় সুবিধাবাদী

উপদলকে বর্জন করে

পার্টির মধ্যে উপদলবাদের উৎস হচ্ছে সুবিধাবাদী উপাদানসমূহ। সর্বহারা একটি বিচ্ছিন্ন শ্রেণী নয়। এটা সর্বদাই বৃদ্ধি পাচেছ কৃষক, ক্ষুদে বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিয়ত আগমনের জন্য। একই সাথে সর্বহারার উপরের অংশ বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা এবং পার্লামেন্টের সদস্যরা-যারা বুর্জোয়াদের উপনিবেশ থেকে লুন্ঠিত অগাধ মুনাফার একটি অংশ পায় তারা প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। লেনিন বলেছেন, “এই বুর্জোয়া বনে যাওয়া শ্রমিক বা শ্রমিক আমলাতন্ত্র-যারা তাদের জীবনযাত্রায়, তাদের জীবিকা অর্জনে, তাদের সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে অন্ধ তারাই হলো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রধান প্রণেতা এবং বুর্জোয়াদের প্রধান সহায়ক, কেননা এরাই হলো শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনে সত্যিকার বুর্জোয়া দালাল, পুঁজিবাদী শ্রেণীর শ্রমিক লেফট্যানেন্ট সংস্কারবাদ বৃহৎ জাতীয়তাবাদের প্রধান রাস্তা

কোন না কোনভাবে এই সকল ক্ষুদে বুর্জোয়া গ্রুপ পার্টির মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং পার্টির মধ্যে দোদুল্যমানতা, সুবিধাবাদ, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মনোভাব সৃষ্টি করে। প্রধানতঃ এরাই উপদলবাদ বা বিচ্ছিন্নতার উৎস, ভিতর থেকে পার্টি ভেঙ্গে দেওয়া ও ক্ষতিসাধন করার উৎস। নিজের পিছনে এই ধরনের মিত্র নিয়ে শত্রুকে আক্রমণ করার অর্থ হলো দু’দিক থেকে গোলাবর্ষণের মধ্যে পড়া অর্থাৎ সম্মুখ থেকে এবং পেছন থেকে। অতএব এইসব উপাদানের বিরুদ্ধে সাফল্যজনক সংগ্রাম একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

সুবিধাবদী উপদলকে পার্টির অভ্যন্তরে রেখে মতাদর্শগত সংগ্রাম দ্বারা পরাজিত করার তত্ত্ব, এ সকল উপাদানকে একই পার্টির ভিতরে রেখে তাদেরকে অতিক্রম করার তত্ত্ব-একটা বাজে এবং বিপজ্জনক তত্ত্ব, যা হুমকি প্রদর্শন করে পার্টিকে সুবিধাবাদের শিবিরে পরিণত করতে, হুমকি প্রদর্শন করে সর্বহারার একটি বিপ্লবী পার্টিহীন করতে, হুমকি প্রদর্শন করে সর্বহারাদের শত্রু বিরোধী সংগ্রামে প্রধান অস্ত্রচ্যুত করতে।

পার্টি শক্তিশালী হয় সুবিধাবাদী উপাদানকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে