গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল জনগণের বিদ্রোহ

লেখকঃ হোসেন নীল

৬ ও ৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পূর্বপুরুষের জমি পুনরুদ্ধারের আন্দোলনরত সাঁওতালদের উপর গাইবান্ধা জেলার সাহেবগঞ্জ ও বাগদা ফার্ম এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে একজন সাঁওতাল নারীসহ ৪ জন সাঁওতাল নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বহু; পুলিশ ও চিনিকল ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল আর সাপমারা ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান শাকিল আলম

এভাবে-সাঁওতালদের-বাড়িঘর-উচ্ছেদ-করে-পুলিশ-প্রশাসন-ও-সন্ত্রাসীরা

এভাবে সাঁওতালদের বাড়িঘর উচ্ছেদ করে পুলিশ প্রশাসন ও সন্ত্রাসীরা

বুলবুলের নেতৃত্বে বাহিনীসমূহ ৬০০ ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় আগুণ দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় যা জমি পুনরুদ্ধারে আদিবাসী-বাঙালী সমন্বিতভাবে নির্মাণ করেছিল। জয়পুর, মাদারপুরসহ সাঁওতাল গ্রামগুলিতে চলে দমন নির্যাতন। বর্তমানে আশ্রয়হীন শত শত সাঁওতাল জনগণ খোলা আকাশের নীচে কাজ ও খাদ্য সংকটে দিনযাপন করছেন।

১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার রংপুর চিনিকলের ইক্ষু চাষের জন্ন্য আদিবাসী ও বাঙালী কৃষকদের প্রায় ১৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ফলে ১৫টি আদিবাসী গ্রাম ও ৫টি বাঙালী গ্রাম উচ্ছেদ হয়। গোবিন্দগঞ্জে উক্ত চিনিকল প্রতিষ্ঠা করার সময় এই শর্তে জমি অধিগ্রহণ করা হয় যে কল বন্ধ হয়ে গেলে বা সেখানে আখ ছাড়া অন্য কিছু চাষ করলে সরকারীভাবে জমি পূর্বতন মালিকদের ফেরত দেয়া হবে। বাংলাদেশের চিনিকলগুলো কল কর্মকর্তা ও শাসক প্রতিক্রিয়াশীলদের ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে এক এক করে প্রায় সবই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কল কৃষকদের ইক্ষু যথাসময়ে নেয়না, অনেক টাকায় অনুমতিপত্র বিক্রি করে, ফলে সারা বছরের এই ফসলে অনেক ক্ষতি হয়, যথাসময়ে ইক্ষু দিতে না পারায় পঁচে যায় ও ওজন কমে যায়, কৃষক সর্বসান্ত হয়, অন্য ফসল চাষাবাদ করতে চায়, চিনিকলও আর ইক্ষু পায়না, তাই বন্ধ হয়ে যায় যেখানে কিনা চালু অবস্থায় দেশের চাহিদার শতকরা ১০ ভাগও চিনিকলগুলো মেটাতে পারেনা, বাকী নব্বই ভাগ চাহিদা মেটানো হয় বিদেশ থেকে নিম্ন মানের বিট চিনি আমদানী করে। লাভবান হয় আমদানি কারকরা। এরই অংশ হিসেবে দুর্নীতির ফল হিসেবে গোবিন্দগঞ্জের কল ২০০৪ সাল থেকে অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। কিন্ত জমি ক্ষমতাসীনদের ইজারা দিয়ে সেখানে ধান ও তামাক চাষ করাচ্ছে। সুতরাং চুক্তি মোতাবেক

সাঁওতাল-পল্লীতে-খাদ্য-সংকট-কাজ-নেই

সাঁওতাল পল্লীতে খাদ্য সংকট কাজ নেই

ঐসকল জমি সাঁওতাল ও বাঙালী পূর্বতন মালিকরা প্রাপ্য। সেই দাবীতে তারা পূর্বপুরুষের জমিতে ঘর বানান ও জমি পুনরুদ্ধারে গণ আন্দোলন সুচিত করেন। ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ প্রশাসন ও মিল কর্তৃপক্ষ ইক্ষু কাটার নামে ঐসব ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ, মিল কর্তৃপক্ষ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেসব ঘরবাড়ি ট্রাক্টর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা গুলি চালায় আর সাঁওতালরা তীর ধনুক নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নিহত হন শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডুসহ এক নারী সাঁওতাল জনগণ। লুটপাট, ঘরবাড়ী ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ আর নারী ও শিশুদের মারধর করে সন্ত্রাসিরা। এ ঘটনা গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী এমপি আবুল কালাম আজাদ সাপমারা ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান শাকিল আলমের মাধ্যমে সরাসরি পরিচালনা করেছে। এরা চার বছর আগে ভুমি পুনরুদ্ধার আন্দোলন সূচিত হলে সহায়তা করেছিল আর চার বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা চাঁদাও সাঁওতাল জনগণ দিয়েছেন আন্দোলনের আইনী কাজের জন্য। বুর্জোয়া-সামন্তরা এখন তাদের আসল চেহারা প্রদর্শন করেছে। তাই উচ্ছেদকৃত জনগণ এমপির দেয়া ত্রাণ গ্রহণ করেননি। পুলিশ গ্রেফতারকৃত সাঁওতালদের হাসপাতালেও হাতকড়া পড়িয়ে রেখেছিল।

এ ঘটনার তাৎপর্য হচ্ছে আদিবাসী ও বাঙালী ভুমিহীনদের জমির জন্য সংগ্রামই বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের সমাজের বিপ্লবী রূপান্তরের সংগ্রামের মেরুদন্ড। এই ভুমি দখলের সংগ্রামের মাধ্যমেই কৃষক জনগণ পরিষ্কারভাবে তাদের শত্রুমিত্র চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন। সাম্যবাদের মতাদর্শের আলোকে বিপ্লবের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। আর সাঁওতাল জনগণের রয়েছে মহান বিদ্রোহের ইতিহাস। ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ উপমহাদেশে ব্রিটিশ প্রত্যক্ষ উপনিবেশের অবসানে বিরাট

ব্রিটিশ-ঔপনিবেশিক-শাসন-বিরোধী-ঐতিহাসিক-সাঁওতাল-বিদ্রোহ

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধী ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ

ভুমিকা রেখেছে। সাঁওতাল জাতি বৃহৎ বাঙালী জাতি গঠনে নৃতাত্বিক অবদান রেখেছে। আদিবাসীদের যারা ছোট করে দেখে তারা এই জিনিসটা মানেনা। সত্যি বলতে কি তাদের শ্রেণিস্বার্থ তাদের মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করতে চালিত করে। ভয়ংকর দুর্নীতির মাধ্যমে চিনিকলসহ সকল দেশজ শিল্প এরাই ধ্বংস করেছে। এরা যেমন কৃষককে অন্যায়ভাবে জমি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে তেমনি শ্রমিককেও বাঁচার মত মজুরি দেয়না, দেশের জনগণের স্বার্থ রয়েছে যেসব উৎপাদনে তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নিপীড়িত আদিবাসী-বাঙালীরা এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন ও আরো সামনে এগিয়ে যাবেন স্বাভাবিকভাবেই। ■