সিরাজ সিকদার রচনাঃ বিভিন্ন স্তরের সাংগঠনিক এককের নিরাপত্তামূলক দায়িত্ব

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৬৮

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক কমরেড সিরাজ সিকদারের নির্বাচিত সাংগঠনিক রচনাবলীর সংকলনে এর প্রকাশ ১৯৭৪

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৮ নভেম্বর ২০১২

 


পিডিএফ

সাংগঠনিক একক বলতে পাঠচক্র, কোষ, কমিটি, বিভাগ ও সংস্থা, মিলিশিয়া ও গেরিলা গ্রুপ বা অন্য কোন সাংগঠনিক একক বুঝায় ।

১। সাংগঠনিক এককের প্রতি সদস্য নিজের বা সংগঠনের অন্য কারো সাংগঠনিক সম্পর্ক, তাদের নাম, ঠিকানা, পেশা বা অন্য কোন প্রকার পরিচয় সংগঠনের অভ্যন্তরে ও বাইরে কারো নিকট প্রকাশ করবেন না ।

২। সাংগঠনিক এককের সদস্যদের সংগঠন কর্তৃক যে সকল দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে তা অপ্রয়োজনীয়ভাবে সংগঠনের অভ্যন্তরে বা বাইরে কারো কাছে প্রকাশ না করা। দায়িত্ব পালনকালে অপ্রয়োজনীয়ভাবে সংগঠনের অভ্যন্তরস্থ বা বহিঃস্থ কাউকে সংগে না নেওয়া ।

৩। যৌথভাবে একটি সাংগঠনিক একককে যে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে তা অপ্রয়োজনীয়ভাবে সাংগঠনিক এককের বাইরে প্রকাশ না করা ।

৪। সাংগঠনিক এককের যে সকল সদস্য যে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন তা নির্দিষ্ট একক ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ না করা ।

৫। সাংগঠনিক এককের সভার স্থান, তারিখ, সময়, আলোচ্যসূচী, সভায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয়, সিদ্ধান্ত (সিদ্ধান্তের মাঝে যতটুকু জনগণকে জানানো প্রয়োজন তা ব্যতীত) সাংগঠনিক এককের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা ।

৬। সাংগঠনিক এককের কেউ উক্ত একক-বহির্ভূত কাউকে সভায় নিয়ে আসবেন না ।

৭। সাংগঠনিক এককের কেউ অন্য সদস্য বা সংগঠনের অন্য কারো সাথে রাস্তায় বা অন্য কোন জনসমাবেশপূর্ণ স্থানে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা, ব্যক্তিগত আলাপ-পরিচয়, কুশলবার্তা বিনিময় করবেন না ।

৮। সদস্যগণ দলিল-পত্রাদি গোপনে রাখবেন । দলিল-পত্রাদি সংগঠন বহির্ভূত কাউকে দেওয়ার সময় যথাযথ অনুসন্ধান করে দিতে হবে ।

৯। সাংগঠনিক এককের সদস্যগণ কোন জনসমাবেশপূর্ণ স্থানে পার্টির পরিচয়ে নিজেদের মাঝে বা বাইরের লোকের সাথে আলাপ-আলোচনা করবেন না ।

১০। অপ্রয়োজনীয়ভাবে অন্য সাংগঠনিক এককের বা সংগঠনের অন্য কারো পরিচয় জানতে না চাওয়া । অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেউ পরিচয় জিজ্ঞেস করলে উত্তর না দেওয়া ।

১১। অপ্রয়োজনীয়ভাবে সাংগঠনিক বিষয় জিজ্ঞেস না করা । অপ্রয়োজনীয়ভাবে কেউ জিজ্ঞেস করলে উত্তর না দেওয়া ।

১২। সাংগঠনিক এককের কোন সদস্যের বা সংগঠনের অন্য কারো কার্যকলাপ, গতিবিধি বা পরিচয় সন্দেহজনক হলে বা সংগঠনের নিরাপত্তার পক্ষে বা সংগঠনের স্বার্থের পরিপন্থী হলে অতিসত্ত্বর নির্দিষ্ট এককের সম্পাদক, নেতা বা পরিচালক বা উচ্চস্তরে রিপোর্ট করবেন ।

১৩। সাংগঠনিক এককের প্রতিটি সদস্যের দুই বা অধিক ছদ্মনাম থাকবে । তারা কখনো পিতা প্রদত্ত নামে সংগঠনের কোথাও পরিচিত হবেন না । বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ছদ্মনামে পরিচিত হতে চেষ্টা করতে হবে ।

১৪। সংগঠনের কোন কর্মীর নিকট সংগঠনের অন্য কর্মী অজ্ঞাতে যদি লাইন দিতে আসে তবে পূর্বোক্ত কর্মী শেষোক্ত কর্মীর নিকট সাংগঠনিক গোপনীয়তা প্রকাশ করবেন না । এ বিষয়ে রিপোর্ট করতে হবে ।

১৫। সাংগঠনিক এককের সদস্যগণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজেদের বাসস্থান বা অন্য কোন কমরেডের বাসস্থান চিনবেন না বা চিনাবেন না ।

১৬। ঘটনাক্রমে যদি কোন একজন লোককে রাজনৈতিক লাইন দিতে সংগঠনের একাধিক কর্মী যান, তখন সংগঠনের কর্মীদের দায়িত্ব হলো উপরের স্তরে রিপোর্ট করা যাতে উপরের স্তর একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারে ।

১৭। শত্রু সম্পর্কিত কোন খবর পেলে অতিসত্ত্বর তা উচ্চস্তরে রিপোর্ট করতে হবে ।

১৮। অপ্রয়োজনীয়ভাবে কমরেডদের পরিচয়, ব্যক্তিগত জীবন, ‘অমুক ঘটনায় তিনি ছিলেন কিনা?’ ‘এ কমরেড অমুক না?’ ইত্যাদি জানার জন্য ঔৎসুক্য প্রকাশ না করা । জানলে তা অন্যের নিকট গল্পচ্ছলে বা সবজান্তা হিসেবে জাহির করার জন্য প্রকাশ না করা ।

১৯। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, গুজব, অপবাদ, ব্যক্তিগত কুৎসা, খারাপ উদ্দেশ্যে পিছনে সমালোচনা-অভিযোগ করা, সাংগঠনিক সিদ্ধান্তকে বিকৃত করে বলার খবর পেলে তা সাথে সাথে উচ্চস্তরে রিপোর্ট করা ।

২০। চক্রগঠন, উপদল গঠন, অর্থ-অস্ত্র চুরির বিষয় বা অর্থ-অস্ত্র নিয়ে দলত্যাগের খবর পেলে তা সাথে সাথে উচ্চস্তরে জানানো ।

২১। গুপ্তহত্যা, চক্রান্ত, ধরিয়ে দেওয়া, ষড়যন্ত্র, কোন প্রতিবিপ্লবী সংস্থা, প্রতিক্রিয়াশীল সরকার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রু চরের সাথে যোগসাজশের খবর পেলে তা সাথে সাথে উচ্চস্তরে জানানো ।

২২। অসাংগঠনিক, অবৈধ গোপন বৈঠক, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তমূলক বৈঠকে অংশগ্রহণ না করা, এ সম্পর্কে উচ্চস্তরে রিপোর্ট করা ।

২৩। ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী বা অন্য কারো দলিলপত্র পেলে তা জমা দেওয়া ।

২৪। ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, দলত্যাগী, বিশ্বাসঘাতকদের বিষয়ে সতর্ক থাকা, তাদের পরিচিত স্থানে না যাওয়া, তারা আত্মসাৎ করতে পারে এরূপ স্থানে অর্থ, অস্ত্র, মূল্যবান দ্রব্যাদি না রাখা । তাদের নিকট সাংগঠনিক গোপনীয়তা বজায় রাখা ।

২৫। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের সাথে যুক্ত হতে পারে এ ধরণের কর্মী ও সহানুভূতিশীলদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা ।

২৬। পার্টি, বিপ্লব ও জনগণ বিরোধী অন্যান্য সকল তৎপরতায় অংশগ্রহণ না করা, তার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা, তার খবর পেলে সাথে সাথে সংগঠনে জানানো । কথা বলতে সতর্ক হওয়া যাতে গোপনীয়তা প্রকাশ না হয়ে পড়ে; কথা শুনতেও সতর্ক হওয়া যাতে সবকিছু শোনা যায় । ■