এক মাসে ধর্মবাদী লাঞ্চনার শিকার শিক্ষক, হত্যার শিকার হোমিও চিকিৎসক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খৃষ্টান দোকানী ও পুলিশের স্ত্রী

লেখকঃ হাসন লাল

নারায়নগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কটুক্তির অভিযোগ এনে তথাকথিত ইস্কুল কমিটির

নারায়ণগঞ্জে ধর্মবাদী লাঞ্চনার শিকার শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত

নারায়ণগঞ্জে ধর্মবাদী লাঞ্চনার শিকার শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত

প্রতিক্রিয়াশীলরা তাদের গডফাদারদের মাধ্যমে চরম লাঞ্চনা দেয় ও নির্যাতন চালায় গত ১৩ মে ২০১৬। এর বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন শুরু হলে হাইকোর্ট রুল জারি করে। তথাকথিত তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দেয় তা হাইকোর্ট ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। নতুন করে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

সরকার এখনো তাদের গডফাদার সেলিম ওসমানকে গ্রেফতার করেনি যেকিনা তাদের তথাকথিত সংসদের সদস্য।

শ্যামল কান্তিকে এভাবে নির্যাতন চালায় সেলিম ওসমানরা

শ্যামল কান্তিকে এভাবে নির্যাতন চালায় সেলিম ওসমানরা

আওয়ামী লীগের বিটিম জাতীয় পার্টির এই সেলিম ওসমানের আরেক ভাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য্ শামিম ওসমান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকেরা অব্যাহতভাবে উক্ত শিক্ষককে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, হেফাজত ইসলাম ইত্যাদি দল জনগণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র ও তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্কুলগুলো স্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীল সামন্ত ধর্মবাদী, বুর্জোয়া গডফাদারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তথাকথিত কমিটিগুলো এরা গঠন করে। এরা প্রতিদিন প্রতি মুহুর্ত শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মবাদী ও সর্বপ্রকার লাঞ্চনা দিচ্ছে। অনেক শিক্ষক তাদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিক্রিয়াশীলদের গডফাদার পরিবার

নারায়নগঞ্জের ব্যবসা বানিজ্য, চুরি ডাকাতি, দুর্নীতি, রাহাজানি, খুন ধর্ষণ, মাদকের সিংহভাগ এই গডফাদার ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। এরাই সাম্প্রতিককালে সাত খুনের

নারায়ণগঞ্জের তথাকথিত গডফাদার শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জের তথাকথিত গডফাদার শামীম ওসমান

মত ভয়ংকর সব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। বিএনপি-জামাত-আলীগ সমেত এরাই ২৪ জুলাই ১৯৯৯তে টানবাজারের পতিতাপল্লীক উচ্ছেদ করেছিল—যা ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম পতিতালয়। সহস্র সহস্র যৌনকর্মী

১৯৯৯ সালে টানবাজারে পতিতারা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন

১৯৯৯ সালে টানবাজারে পতিতারা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন

ভাসমান অবস্থায় পতিত হয় যা ছিল এক মানবিক বিপর্যয়। সম্প্রতি টাঙ্গাইলেও একই ঘটনা ঘটেছে, উভয় ঘটনা ঘটিয়েছে গডফাদার পরিবার, ধর্মবাদ ও সরকার। নারায়নগঞ্জে শামিম উসমানেরা আর

টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ গডফাদার খান পরিবার এইসকল পতিতাপল্লি উচ্ছেদ করে কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি সম্পত্তি দখল করে। এখান থেকে তারা সর্বদাই চাঁদাবাজি করত। মাদক ব্যবসা তারা

টাঙ্গাইলে কান্দাপাড়ার যৌনকর্মীরা উচ্ছেদ হওয়ার পর হাইকোর্টের রায়ে ফিরে আসে

টাঙ্গাইলে কান্দাপাড়ার যৌনকর্মীরা উচ্ছেদ হওয়ার পর হাইকোর্টের রায়ে ফিরে আসে

নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরণের গডফাদারেরা যৌনপল্লী উচ্ছেদের প্র্চেষ্টা চালায় ধর্মবাদীদের নিয়ে।

কথিত আছে এই নারায়নগঞ্জীয় গডফাদার পরিবারের বড় ছেলে প্রাক্তন জাতীয় পার্টি

মেধাবী কিশোর ত্বকী গডফাদারদের হত্যার শিকার

মেধাবী কিশোর ত্বকী গডফাদারদের হত্যার শিকার

এমপি প্রয়াত নাসিম উসমানের ছেলে অয়ন ওসমান প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী কিশোর ত্বকীকে হত্যা করে। শামিম উসমানের লোকেরা

কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবি চন্দনসহ সাতজন খুন হন গডফাদারদের পরিকল্পনায়

কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবি চন্দনসহ সাতজন খুন হন গডফাদারদের পরিকল্পনায়

সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বীকেও হত্যা করে—যা সাত খুন নাম পরিচিত হয়। পৌর কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের মাধ্যমে তারা ছয় কোটি টাকা র‍্যাবের কর্মকর্তাদের দিয়ে তাদের দ্বারা এ হত্যাকান্ড ঘটায়। ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল র‍্যাব ১১ এর কিছু কর্মকর্তা নারায়নগঞ্জের শহর থেকে পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবি চন্দনসহ উক্ত ৭ জনকে হত্যা করে। ৩ দিন পর লাশ শীতলক্ষা নদীতে পাওয়া যায়।

ধর্মবাদীরা ১৪মে ২০১৬ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নে বৌদ্ধভিক্ষু মং

বান্দরবানে ধর্মবাদীদের হত্যার শিকার বৌদ্ধভিক্ষু মং শু ইউ

বান্দরবানে ধর্মবাদীদের হত্যার শিকার বৌদ্ধভিক্ষু মং শু ইউ

শু উকে হত্যা করে।

২০মে ২০১৬ ধর্মবাদীরা কুষ্টিয়ার বটতৈল

কুষ্টিয়ায় ধর্মবাদী হত্যার শিকার হোমিও চিকিৎসক ছানাউর

কুষ্টিয়ায় ধর্মবাদী হত্যার শিকার হোমিও চিকিৎসক ছানাউর

এলাকায় ছানোয়ার রহমান নামে এক হোমিও চিকিৎসকে হত্যা করেছে যে ছিল বাউল মতাবলম্বী আর প্রতি সপ্তাহে সে বহু রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিত।

৬মে ২০১৬ রাজশাহীর তানোরে পবা উপজেলা নিবাসী শহীদুল্লাহ নামের এক সুফী মতাবলম্বীকে হত্যা করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার গোপীবাগে নিজ বাসায় সুফি মতাবলম্বী লুৎফর রহমান রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক, শাহীন, মঞ্জুরুল আলম, মজিবর ও রাসেল ভুঁইয়া ধর্মবাদীদের হাতে নিহত হয়।

২০১৪ সালের ২৭ আগষ্ট ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন টেলিভিশন

হত্যাকান্ডের শিকার টিভি উপস্থাপক ফারুকী

হত্যাকান্ডের শিকার টিভি উপস্থাপক ফারুকী

উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী। ফারুকী ছিল এক প্রকার সুফী মতাবলম্বী।

২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চট্রগ্রামের বায়েজিদে লেংটা মামার মাজারের ‘পীর’ রহমত উল্লাহ প্রকাশ লেংটা মামা আর খাদেম আব্দুল কাদেরকে হত্যা করে ধর্মবাদীরা।

২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডায় নিজ

হত্যার শিকার সুফিবাদী প্রাক্তন আমলা খিজির খান

হত্যার শিকার সুফিবাদী প্রাক্তন আমলা খিজির খান

বাড়ীতে খুন হন সুফিবাদী খিজির খান। তিনি পূর্বে প্রকৌশলি হিসেবে পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন।

সর্বশেষ ৫ জুন ২০১৬ নাটোরের বড়াইগ্রামে মিশনপল্লীতে খৃষ্টান মুদি দোকানী সুনীল গোমেজ

নাটোরের বনপাড়া মিশনপল্লীতে সুনীল গোমেজ ধর্মবাদীদের গণহত্যার শিকার

নাটোরের বনপাড়া মিশনপল্লীতে সুনীল গোমেজ ধর্মবাদীদের গণহত্যার শিকার

খুন হয়েছেন। ধর্মবাদীরা গনহত্যার অভিযানের অংশ হিসবে কাপুরুষোচিত ভাবে তাকে হত্যা করে।ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে পশুরা তাকে হত্যা করেছে। এলাকার খৃষ্টান সম্প্রদায়সহ জনগণ এ ঘটনার প্রতিবাদে মানব বন্ধন ও সমাবেশ করছেন।

একই দিনে চট্রগ্রামে পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে খুন করেছে

পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হওয়ার কারণে মাহমুদা আক্তারকে হত্যা করে ধর্মবাদীরা

পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হওয়ার কারণে মাহমুদা আক্তারকে হত্যা করে ধর্মবাদীরা

ধর্মবাদীরা। পুলিশের উক্ত এসপি ধর্মবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী বিরোধী পুলিশী অভিযানে সক্রিয় ছিল ও রাষ্ট্রীয় অনেক পুরস্কার প্রাপ্ত। তার সাথে বিরোধের জন্য তার পরিবারের সদস্য-এক নারী-কে হত্যা করার মত জঘন্য কাজ ধর্মবাদী-ফ্যাসিবাদী পশুরাই কেবল করতে পারে।

পরিস্থিতির তাৎপর্যঃ

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে মার্কিন ও ভারত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মার্কিন ও ভারতীয় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সামন্তবাদী ব্যবস্থার আগ্রাসন হিসেবে জনগণের জন্য এ পরিস্থিতি বিরাট হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সামন্ত ব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াদের দ্বারা পালিত হচ্ছে। সারা দুনিয়ায় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষয়িষ্ণু। কিন্তু এ ব্যবস্থা ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে যোগসাজশে মরণ কামড় বসাচ্ছে যা তাদের পরিত্রাণ এনে দেবেনা। এ প্রশ্নে জনগণের হস্তক্ষেপ জরুরী। এদেরকে তাদের উৎসমেত উৎপাটন না করলে এরা মধ্যযুগের মত কোটি কোটি মানুষ হত্যা করবে – যা মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যেই তারা করেছে ও করছে। সর্বশেষ আইএস ধর্মবাদী পাশবিক গোষ্ঠীটি চতুর্দিক থেকে ঘেরাও হয়ে পড়ে ভয়ংকর  মার খাচ্ছে।তাদের মদদদাতা তুরস্ক ও সৌদি সম্প্রসারণবাদীরা আর তাদের রক্ষা করতে পারছেনা। কিন্তু সামন্ততন্ত্র ধ্বংস না হওয়া অবধি এরা বারবার জন্ম নেবে তালেবান, আল কায়দা, আইএস ইত্যকার ভিন্ন ভিন্ন নামে। বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচতে হবে। ধর্মবাদের উৎস সামন্তবাদ আর এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা সাম্রাজ্যবাদ ও আমলাতান্তিরক পুঁজিবাদকে নির্মূল করতে হবে। জনগণকে এর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত লড়াই চালাতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীলদের ধ্বংস অনিবার্য।□