নীলাদ্রি নিলয় খুন হল।। হাসন লাল

নীলাদ্রি চট্রোপাধ্যায়কে ইসলামবাদীরা একই বর্বরতায় খুন করেছে তাদের ধারাবাহিক ব্লগার হত্যাকান্ডের অংশ হিসেবে। আল কায়দা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা তথা আনসার আল ইসলাম এর দায় স্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারীভাবে তাদের ফ্যাসিবাদী জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিব ও তার পরিবারের মৃত্যু নিয়ে অতি মাতামাতিরত হয়ে এতটাই শোকে পাথর হওয়ার ভাণ করছে যে অন্য কোন মৃত্যুকে তারা উৎপাত মনে করছে। প্রসঙ্গত, যে শেখ মুজিবকে তারা বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে সে কিন্তু ফ্যাসিবাদী ছিল, আর কমিউনিস্ট, বিপ্লবী ও জনসাধারণের উপর গণহত্যার কারণে তার মৃত্যু অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ দুঃখিত হওয়া দুরের কথা, আওয়ামী লীগের কোন নেতাও দুঃখ পায়নি। পরবর্তী ফ্যাসিবাদী জিয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরণের কথা প্রযোজ্য। অজস্র মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে মুজিব-জিয়া যেমন নিজ নিজ মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছিল, একইভাবে নিরীশ্বরবাদী ব্লগারদের হত্যাকারীরাও নিজেদের মৃত্যুই নিশ্চিত করেছে।

যতটুকু জানা যায়, নীলাদ্রি একজন সাধারণ নিরীশ্বরবাদী ব্লগার। সে গণজাগরণ মঞ্চের একজন কর্মী। যুক্তিবাদী হিসেবে সে সকল ধর্মের বিরুদ্ধেই লিখত। ছোট ছোট লেখার মাধ্যমে সে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল। দুই মাস আগে খুনীরা তার পিছু নিলে সে থানায়

নিরীশ্বরবাদী ব্লগার নিলয় খুন হন ধর্মবাদীদের হাতে ৭ আগষ্ট ২০১৫

নিরীশ্বরবাদী ব্লগার নিলয় খুন হন ধর্মবাদীদের হাতে ৭ আগষ্ট ২০১৫

গিয়েছিল ডায়রী করতে। পুলিশ ডায়রী নেয়নি, বরং তাকে বিদেশ চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এই খুনের পর সরকারী দলের নেতারা ও পুলিশেরা উলটো ধর্মবিরোধী ব্লগ লেখার বিরুদ্ধে হুশিয়ারী দেয়। ইতিমধ্যে আওয়ামী ওলামা লীগ ধর্মের বিরোধিতাকারীদের শাস্তির দাবি করেছে। সম্প্রতি নিলয় হত্যাকারী সন্দেহে যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার একজন হচ্ছে শ্রমমন্ত্রীর ভাতিজা।

আগেই দেখা গেছে ব্লগার হত্যাকান্ড পুলিশ ঠেকায়নি বা এর কোন প্রকৃত বিচার হয়নি। সুতরাং এটা পরিষ্কারভাবে আওয়ামি লিগের ভুমিকা প্রদর্শন করে।

কিন্তু নিলয়ের মত অন্য যারা আছে তারা কি এটা যথার্থভাবে বুঝবে?

নীল সাম্যবাদী নয়। তাই সমাজ বিকাশের ধারা জানেনা ও এর সাথে একাত্ম হতে পারেনি। কিন্তু সে নতুন প্রজন্মের এক বুদ্ধিজীবী যার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ছিল। সে জ্ঞান বিজ্ঞান সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছে। যারা সততার সাথে তা করতে চায় তারা একসময় বুঝবে সাম্যবাদের প্রয়োজনীয়তা ও অনিবার্যতা।

অভিজিত ও অনন্তের মত নীলও হিন্দু সম্প্রদায় থেকে আসা। তাই ইসলাম ধর্মবাদীদের বাড়তি আক্রোশ তাদের উপর পড়েছে। কিন্তু এর ফলাফল ভয়ানক হতে পারে। হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হলেও ভারতে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই, ভারতে মুসলমানদের উপর নেমে আসতে পারে নিপীড়ণ, শুধু তাই নয়, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের কর্তৃক বাংলাদেশে উপনিবেশীকরণ ত্বরান্বিত হতে পারে। সাম্রাজ্যবাদীদের বিবৃতি থেকে বোঝা যায় তারা ব্যাপারটা গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। এখান থেকে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ সকল সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদকে খুশী করতে চাইছে কিন্তু কাউকেই খুশী করতে পারছেনা। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। সাম্রাজ্যবাদীরা এই ভিখারীর গলায় ঝুলিয়ে দিতে চায় নিম্ন মধ্য আয়ের মেডেল। মধ্যপ্রাচ্যীয় সম্প্রসারণবাদ, ইসলামী ব্যাংক ও জামাত ও সকল ধর্মবাদীদের সাথে তার বর্তমান সখ্য লক্ষ্যনীয়।

নীলের মত তরুণদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তার এ অধিকারকে স্বীকার করেনি আওয়ামী ও ধর্মবাদী ফ্যাসিস্টরা। ধর্মবাদী ফ্যাসিস্টরা তাকে নৃশংশভাবে খুন করে এক ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে। এর শাস্তি জনসাধারণ অবশ্যই প্রদান করবেন।

১৫ আগষ্ট ২০১৫