ফ্যাসিবাদের দিকে যাত্রার একটি বছর। আমরা কতোটা তৈরি প্রতিরোধে? – নীলিম বসু

ফ্যাসিবাদের দিকে যাত্রার একটি বছর

আমরা কতোটা তৈরি প্রতিরোধে?

– নীলিম বসু

 

ক্ষোভ, যন্ত্রনা, হতাশা, রাগ অনেক জমে আছে এই দেশটায়। হিন্দু ফ্যাসিবাদী শক্তি সেগুলো গড়ে ওঠার জন্য দায়ী নয় কোনোভাবেই। আসাম্যমূলক শোষক সমাজে সেগুলো থাকবেই। সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে তার স্বাভাবিক গতিপথকে পালটে দিয়ে অসাধারন ধৈর্য, কৌশল, চাতূর্য ও নৈপূন্যের সাথে হিন্দু ফ্যাসিবাদীরা নিয়ে যাচ্ছে এক বিকৃত ও মিথ্যা অহংকারের দিকে দেশটাকে। যে দেশের জনগনের ৮০% দিনে ২০ টাকার চেয়ে বেশি খরচ করতে পারে না, যে দেশের জনগন ক্রমাগত উচ্ছেদ হচ্ছেন বা হওয়ার জন্য দিন গুনছেন তাঁদের বাসভূমি-সংস্কৃতি-ভাষা-জীবিকা থেকে তাঁকে একটা কিছুর গর্বে তো গর্বিত করে তুলতে হবে, না হলে কি ভাবে জুটবে সস্তা শ্রম, বিশাল বাজার, অনিয়ন্ত্রিত মুনাফা! তাই সেই গর্ব হোক এমন কিছুর যা সে ব্যাক্তিগত বা সমবেত প্রচেষ্ঠায় কোনোভাবেই অর্জন করতে পারবে না, এমন কিছু যা কাল্পনিক-ধূলোমাটির থেকে বহু দূরের, অলিক। এই অবাস্তব গর্বের খূড়োর কল এই দেশে গড়ে তুলছে এক রনক্ষেত্র। যে রনক্ষেত্রে শ্রেণীবন্ধুরাই অস্ত্র ধরেন শ্রেণীবন্ধুদের বিরুদ্ধে। মনে পড়ে ২০০২ গুজরাট? যেখানে দেশের তৃতীয় দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলেন দেশের দরিদ্রতম দুই জনগোষ্ঠী দলিত ও আদিবাসীরা? যে গুজরাটে হাজার বছর ধরে উচ্চবর্ণ তথা হিন্দু ব্রাক্ষন্যবাদীদের হাতে শোষিত, অবহেলিত, বঞ্চিত দলিত-আদিবাসীরা তাঁদেরই শোষকদের নির্দেশে নেমে পড়েছিল মুসলিম নিধনে। দায় কার? এতো আমরা ১৯৩০ এর জার্মানী থেকে দেখে আসছি যে কমিউনিস্টরা বাস ধরতে না পারলে সেই বাসে উঠে নিজেদের লক্ষে পৌছতে চায় ফ্যাসিস্টরা। কোথাও রাইখস্ট্যাগ পোড়ে তো কোথাও সবরমতি এক্সপ্রেস, কোথাও আর্য শ্রেষ্ঠত্বের শ্লোগান তো কোথাও হিন্দুরাষ্ট্রের আওয়াজ, এই তো পার্থক্য।

২০০২ সালে গুজরাটে ঘটে যাওয়া সংগঠিত সংখ্যালঘু গণহত্যার (‘দাঙ্গা’ কথাটি লিখলে সত্যের অপলাপ হতো) পরপরই জাতীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে বিধানসভা ভোট হবে কিনা তাই নিয়ে! ভোট তখনি হতো বা না হতো নরেন্দ্র মোদীকে শাস্তি না দিয়ে গুজরাটে ভোটের প্রশ্ন আসলে ছিল গণতন্ত্রের হত্যা, ফ্যাসিবাদকে লাল কার্পেট পেতে আমন্ত্রন। ঐ সময় অরুন্ধুতী রায় সঠিকই বলেছিলেন “এ হল বিষপানের মূহুর্ত। আমরা পান করছি ভেজাল গণতন্ত্রের সাথে হিন্দু ফ্যাসিবাদ মেশানো বিষ। নির্ভেজাল আর্সেনিক”। ১২-১৩বছর পর কথাটি আরো বেশি

প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এভাবেই ফ্যাসিবাদের ভ্রুন লালিত হয়েছে এ দেশের তথাকথিত গণতান্ত্রিক অনুশীলনেই। সংসদ, বিচারব্যাবস্থা, পুলিশ-সেনা, প্রসাসন সর্বত্র। কোনো সংসদীয় রাজনৈতিক দলও এর থেকে আলাদা নয়। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’রাও নয়।

২০১৩র সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার তাদের ‘গুজরাট মডেল’কে সারা দেশে পৌছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পালন করা শুরু করেন। উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে সংগঠিত সংখ্যালঘু গণহত্যার (প্রথমক্ত কারনটির জন্যই এখানেও ‘দাঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা গেলো না) মাধ্যমে। মোদী-শাহ জুটির এই অভি্যাণের খবরে অনেকেই শিউরে উঠেছিলেন। সেই সংখ্যাটাও খুব কম নয় যারা এই শিহরনের আরো কাছে যাওয়ার জন্য নিজেদের মগজ ধোলাই হতে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার চিরকালই দূর্ব্বল সেখানেও পার্কে, মাঠে মার্চ করে রোজ আরএসএস। এ রাজ্যেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নের্তৃত্বে ঘটে গেছে ‘ঘর ওয়াপসী’র নামে আদিবাসীদের ধর্মান্তকরন (২০০২ গুজরাটের দূঃস্বপ্ন দেখা শুরূ করা উচিৎ নাকি?)। এই রাজ্যেই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো তথাকথিত সামাজিক সংগঠন প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে এই ‘ঘর ওয়াপসী’ কর্মসূচীকে। জাতীয় মোহভঙ্গের বোধ থেকেই শক্তি সংগ্রহ করে ফ্যাসিবাদ, ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকভ্রষ্ট হওয়ায় যে স্বপ্নভঙ্গ ও ক্ষমতা হস্তান্তর পরবর্তীতে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভাঁওতা ওপর দাঁড়িয়েই পোঁতা হয়ে রয়ে গেছিল ভারতীয় ফ্যাসিবাদের বীজ।

স্বাধীনতা সম্বন্ধে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সেই বিখ্যাত শব্দবন্ধ, ‘কাঠের রুটি’,অর্থাৎ যা চরম ক্ষিদের মুখেও খাওয়া যায় না সেই হলো এই স্বাধীনতা ও এই গণতন্ত্রের তাৎপর্য। সেই আবহেই সমস্ত সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি দেশটাকে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে লুঠ করার অবাধ ক্ষেত্র হিসেবে উপহারই দিয়ে এসেছে। জনগন ডুবেছে দারিদ্র, হতাশায়। জাতপাত-বর্নভিত্তিক সামন্ততন্ত্রের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই ভারতীয় সমাজে অন্য বুর্জোয়া গণতন্ত্রগুলির মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতেও হয় ব্যায়বরাদ্দ নেই না হয় না থাকারই মতো। সেখানে জনগণকে যে অন্ধকারে ডুবে থাকতে হয়েছে তাতে তার কাছে পৌছনোর ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি কমিউনিষ্টদের না হয় ফ্যাসিস্টদের। দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতীয় কমিউনিষ্ট আন্দোলনে নের্তৃত্ব দিয়ে গেছে সংশোধনবাদীরা,তারা নিজেদের এই চাপিয়ে দেওয়া আর মারাত্মক গলদযুক্ত সংসদীয় ব্যবস্থাতেই অঙ্গীভূত করতে ব্যাস্ত থেকেছে। ফলে ফ্যাসিস্টরা পেয়েছে খোলা ময়দান। সংশোধনবাদীদের সাথে বিপ্লবীদের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফেলার পরও কম সময় কাটলো না, কিন্তু অবস্থা খুব বেশি পাল্টায়নি আজো। কারন বিপ্লবী শিবিরেও ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতো করে বারবার মাথা তুলেছে সংশোধনবাদ। নতুন বোতলে পুরনো মদ। তবু যেখানে যেখানে বিপ্লবী কমিউনিষ্ট শক্তি জণগনের কাছে পৌছেছে সেখানে সেখানে সামন্ততন্ত্রের সামরিক শক্তিগুলি ও হিন্দু ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলি প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। সাফল্য এইটুকুই। এই দেশের বুকে

বারবার হিন্দু ফ্যাসিবাদের আঘাত, যা গত ১ বছর ধরে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠছে তা আসলে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অণুশীলনেরই ফলাফল। যে আগুণ আমরা দেখতে পাচ্ছি তার শিকড় এখানে। এখন আগুণ নেভাতে গেলে তার শিকড়কে না দেখলে হবে না। তাতে আগুণ নেভানো সম্ভব নয়, ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে বড়ো জোর। যেমন ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় হয়েছিল। ১০ বছর পর সেই আগুণ আরো শক্তি সঞ্চয় করে জ্বলছে। আর ২০০৪ সালের সাথে এবারের পার্থক্যও আছে, এবার ফ্যাসিস্টরা অনেক শক্তিশালী,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তাদের পক্ষে অনেক অনুকূল। তাই শিকড়ের দিকে তাকাতেই হবে, এতদিন সেটাকে সঠিক গূরূত্ব না দেওয়ার কারনেই আজ ফ্যাসিবাদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কড়া নাড়ছে।

আশেপাশে সবাইকেই প্রায় বলতে শোনা যায় যে ভারত একটি সুপার পাওয়ারে পরিনত হচ্ছে! ভেবে অবাক লাগে যে দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জের ক্ষুধা সূচক, পুষ্টি সূচকের মতো মানব উন্নয়ন সূচকগুলিতে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির সমতূল্য স্থানে সে দেশের মানুষ ভাবে কি করে যে তাঁর দেশ পৃথিবীতে সুপার পাওয়ারে পরিনত হচ্ছে! প্রশ্নটা আসলে সেই অলিক স্বপ্নের, কল্পনার খূড়োর কলের। রাষ্ট্রক্ষমতার সবটা দিয়ে এই মোহ ছড়ানোটাই তো ফ্যাসিস্ট পদ্ধতি। তার সাথে থাকে বিষ ছড়ানো। মৌলিক অধিকারের ধীর সঙ্কোচন, আর অদৃশ্য শত্রুর আনাগোনা নিয়ে আসে ফ্যাসিবাদ জনমানসের আবহে। এর বিরুদ্ধে লড়াই মানে জনগণের প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লড়াই, গণরাজের লড়াই। এই লড়াইয়ের তাৎপর্য কৃষকের জমির লড়াই, শ্রমিকের ইউনিয়ান করার অধিকার, মহিলা শ্রমিকের সম বেতন, বিবাহোত্তর ধর্ষন, খাপ পঞ্চায়েত, উচ্ছেদ—এই সমস্ত কিছু নিয়ে সারা দেশে যে অগুনতি চেপে থাকা বা সরব প্রতিবাদ তাতে গলা মেলানো। আরো দরকার বৈজ্ঞনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের দাবী নিয়ে লড়তে থাকা সমস্ত মানুষ ও সংগঠনগুলির সাথে দাঁড়ানো। ভুলে যাবেন না তাঁরাও হিন্দু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেই সংগ্রামরত ও আক্রান্তও বটে। নরেন্দ্র দাভালকার, গোবিন্দ পানসারে যার সবচেয়ে বড় প্রমান।

দিল্লি বিধানসভা ভোটে আম আদমী পার্টির কাছে বিজেপির পরাজয়ে অনেকেই উৎসাহিত। অনেক বামপন্থীও। অনেকে বলতেও শুরু করেছেন এভাবেই হার মানানো সম্ভব হিন্দু ফ্যাসিবাদকে। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন ১০ বছর আগে এই যুক্তিতেই কংগ্রেস নের্তৃত্বাধীন ইউপিএ-১ কে সমর্থন করেছিল সিপিএম। তাতে ১০ বছর পর আরো শক্তি নিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় ফিরে আসা আটকায় নি। আর এবার তো পরিস্থিতি ফ্যাসিবাদের জন্য আরো অনুকূল। কখনোই ফ্যাসিবাদ বেশিদিন জনগণকে মোহগ্রস্থ করে রাখতে পারে না। হিটলার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরেই খোদ বার্লিনের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা দেখা যেত “হিটলার আমাদের রুটি দাও,কাজ দাও, নাহলে আমরা আবার কমিউনিষ্ট হবো”। তাই কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার ১০ মাসের মধ্যে জনগণের মোহভঙ্গ হয়ে দিল্লির ফলাফল অস্বাভাবিক কিছু নয়। ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় আসে সংসদীয় ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেই।

তারপর সংসদকে নিস্ক্রীয় করে ক্ষমতা ধরে রাখে। এখনো সেই প্রয়োজনীয়তা বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের নেই, কারন তারা ২০১৯ সাল অবধি নিশ্চিন্ত। আর তার আগে তো তাদের লক্ষ্যগুলি পূরন করার জন্য অর্ডিন্যান্স রইলোই (জমি নিয়ে তিনবার অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিজেপির কাছে সংসদে বিল আনার চেয়ে অর্ডিন্যান্স বেশি প্রিয় পদ্ধতি, সংসদকে নিস্ক্রীয় করে দেওয়ার শুরু?)। তাই এই কোনো ভাবে আগুণ ঠেকিয়ে রাখার বা নিজেদের কোনো ভাবে টিকে থাকার (সঙ্ঘ পরিবারের ঘোষিত শত্রুই হলো মুসলিম, খ্রীষ্টান ও কমিউনিষ্টরা, তাই সংশোধনবাদী থেকে বিপ্লবী কমিউনিষ্ট ফ্যাসিস্ট আক্রমন সবার ওপরেই নামবে আজ বা কাল) লড়াইকে প্রধান গুরুত্ব না দিয়ে আগুণ নেভানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়াটাই উচিত। বামপন্থীদের (অন্তত বিল্পবী কমিউনিষ্টদের) নিজেদের কোনো ভাবে টিকে থাকার লড়াইকেই প্রধান সংগ্রাম না বানিয়ে ফেলে প্রকৃত জনগণের ক্ষমতা স্থাপনের দিকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। বস্তুত সেটাই হবে ফ্যাসিবাদের সঠিক উত্তর। আম আদমী পার্টির উত্থান থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, জনগণ প্রচলিত সংসদীয় দলগুলির বাইরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা খুঁজছেন। সেই জায়গা বিপ্লবী কমিউনিষ্টরাই দিতে পারেন। আম আদমীর রাজনীতি হলো বিপ্লবী বামপন্থাই।

হিন্দু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আজ অনেকেই সোচ্চার হচ্ছেন, প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক ব্যাক্তি ও সংগঠন ছাড়া সংশোধনবাদী ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীল সংসদীয় দলগুলিও। শেষাক্ত দুই ধরনের দলগুলিই এই দেশে ফ্যাসিবাদের ভিত্তিভূমি তৈরি করেছে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং সাম্প্রদায়ীকতাকেও নানা মাত্রায় ব্যবহার করেছে। তাও কি আমরা আজ তাদের সাথে হিন্দু ফ্যাসিবাদীদের পার্থক্য করবো? দ্বিধাগ্রস্থ গলাতে হলেও বলবো হ্যা। কারন ফ্যাসিবাদের আক্রমন সর্বগ্রাসী, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মোর্চা যত বড়ো হয় ততোই মঙ্গল। হতেই পারে মোর্চার এই অংশ খুব অবিশ্বস্থ, ক্ষনস্থায়ী এই যৌথতা। কিন্তু ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের এটা কৌশলমাত্র।

কৌশলের প্রশ্ন আসবেই, কারন কোনো চটজলদি সমাধান নেই এই ফ্যাসিবাদের বিপদের থেকে। ফ্যাসিবাদের প্রকৃত মোকাবিলা তখনি করা সম্ভব যখন সামাজিক ন্যায়ের প্রতি বিশ্বস্ত আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। একটা নয় একাধিক, এক জায়গায় নয় দেশের প্রতিটি কোনায়। এখনো অবধি যার বিস্তৃতি খুবই অল্প জায়গায়। যে মানসিক তাগিদ নিয়ে গেরুয়া পতাকা ওড়ায় সঙ্ঘ পরিবার, খাকি জামা-খাকি হাফ প্যান্ট পরে রোজ সকালে কুচকাওয়াজ করে তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক তাগিদ নিয়ে গড়ে তুলতে হবে সংগঠন, আন্দোলন। দায়ীত্বটা বিপ্লবী কমিউনিষ্টদেরই নিতে হবে। যেমন নিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া ও চীন ১৯৪০ এর দশকে। বিশ্ব জনতাকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের পথ দেখিয়েছিল এই দুই দেশের বিপ্লবী কমিউনিষ্টরাই।

আগামী ২৬শে মে ১ বছর পূর্ন হতে চলেছে মোদী সরকারের। গত বছর ঐ দিনটিতেই শপথ গ্রহন করেছিল বিজেপি সরকার। তার ঠিক ১দিন আগে আরেকটি বর্ষপূর্তি। ২৫শে মে ৪৮তম বর্ষপূর্তি নকশালবাড়ী আন্দোলনের। ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের দিশা ঠিক করে দেওয়া এই আন্দোলনই পথ ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার। যার মাধ্যমে যে আগুণ আজ লেগেছে সারা দেশে তার শিকড় উপড়ানো সম্ভব। ভারতের বিপ্লবী কমিউনিষ্টরা যেখানে যেখানে নকশালপন্থাকে নিয়ে পৌছতে পেরেছেন সেখানে সেখানে হিন্দু ফ্যাসিবাদীরা গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন। লোকসভা-বিধানসভায় তার ছাপ না থাকতেই পারে, যে ব্যাবস্থাতেই লুকিয়ে আছে ফ্যাসিবাদের বীজ সেই ব্যাবস্থার প্রতিনিধিত্বে প্রকৃত ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের ছাপ থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতাকে মেনে নিতে ও সেই বাস্তবতা অনুযায়ী সংগ্রাম করতে আমরা কতোটা তৈরি সেটাই এখন দেখার।