সিরাজ সিকদার রচনাঃ সম্পাদকীয়, স্ফুলিঙ্গ (সেপ্টম্বর ১৯৭৪)

সিরাজ সিকদার রচনা

সম্পাদকীয়,স্ফুলিঙ্গ

(সেপ্টম্বর ১৯৭৪)

 sikder

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট ও সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে “স্ফুলিঙ্গ” প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে।

পার্টি, ফ্রন্ট ও সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত এবং অনুশীলনগত সমস্যাবলীর সমাধান আসবে স্ফুলিঙ্গের মাধ্যমে। ইহা কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও পরিচালনা এবং এককেন্দ্র বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।

ফ্রন্ট ও সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর নেতৃত্ব বিন্দু হচ্ছে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি।

পার্টির বর্তমান সমস্যা হচ্ছে কর্মীদের তাত্ত্বিক মান উন্নত করা এবং মতাদর্শগতভাবে অধিকতরভাবে সর্বহারায় রূপান্তরিত করা যাতে তারা পার্টি, দেশপ্রেমিক বাহিনী ও ফ্রন্টের লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়িত এবং দেশ, জাতি ও জনগণকে পরিচালনার পর্বত প্রমাণ কাজ কাঁধে নিতে সক্ষম হয়।

পূর্ববাংলায় বর্তমানে চরমতম সংকটজনক অবস্থা বিরাজ করছে। জনগণ চায় বিপ্লব, আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক ও তার প্রভুদের উৎখাত এবং এ সংকট থেকে আশু মুক্তি।

এ কারণে জনগণকে পরিচালনার মত উত্তম জননেতা পার্টি, ফ্রন্ট ও সশস্ত্র দেশপ্রমিক বাহিনীর প্রধানতম

প্রয়োজন। আর এটা মিটানোর জন্য দরকার কর্মীদের তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক মান উন্নত করা, মতাদর্শগতভাবে পুনর্গঠিত হওয়া, নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা অর্জন করা।

কাজেই ব্যাপক কর্মীদের তাত্ত্বিক মান উন্নত করা, বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় কর্মীদের তাত্ত্বিক মান উন্নত করার জন্য “মার্কসবাদ অধ্যয়ন কর, একে উত্তমরূপে রপ্ত কর” আন্দোলন চালাতে হবে যাতে কর্মীরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারায় সুসজ্জিত হয়, প্রতিটি বিষয় মার্কসবাদী বিশ্ব দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সঠিক সমাধান বের করতে পারে।

এভাবে সমাজের অগ্রগামী শ্রেণীর—সর্বহারা শ্রেণীর চিন্তাধারা কর্মীরা একবার আয়ত্ব করলে তা বস্তুগত শক্তিতে রূপান্তর হবে যা পূর্ববাংলার সমাজ ও বিশ্বকে রূপান্তর করবে।

আওয়ামী বিশ্বাসঘাতক শত্রুদের পতন ঘনিয়ে আসার কারণে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে নিজেদেরকে রক্ষা ও আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য। শত্রুর এ প্রচণ্ড ফ্যাসিবাদী হামলা ও চাপের মুখে অনুন্নত মানের দোদুল্যমান ক্ষুদে বুর্জোয়াদের কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করতে পারে। দলত্যাগ, পলায়ন করতে পারে।এটা ঠেকানোর জন্যও ব্যাপক মানোন্নয়ন প্রয়োজন।

এ মানোন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক লক্ষ্যসমূহ ও প্রধান কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

আমাদেরকে সময় ও লক্ষ্য স্থির করে মানোন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে এবং বিভিন্ন স্তরের জন্য বিভিন্ন পাঠ্য তালিকা, অধ্যয়ন গ্রুপ, লেখক গ্রুপ, শিক্ষাদাতা গ্রুপ গঠন করতে হবে, মার্কসবাদ অধ্যয়ন ও উত্তমরূপে রপ্ত করার একটি প্রাণবন্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

এ অধ্যায়ন আন্দোলনের একটি লক্ষ্য হবে দেশীয়–আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ ও ক্ষুদে বুর্জোয়া মতাদর্শ বিরোধী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া যাতে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ সম্পর্কে কর্মীরা স্পষ্ট হন এবং ক্ষুদে বুর্জোয়া মতাদর্শকে বর্জন এবং মার্কসবাদের সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিশেষ অবস্থার সাথে সমন্বিত করতে পারেন।

শত্রুর প্রচন্ড চাপের মুখেও আমাদের বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ আব্যাহত গতিতে বিকাশ লাভ করছে। মার্কসবাদ অধ্যয়ন ও রপ্তকরণের আন্দোলনের ফলে এ বিজয় আরো বিরাট হবে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিজয় একটা গুণগত বিজয় আনয়ন করবে।

পূর্ববাংলার জনগণ চরমতম দুঃখ কষ্টে দিন যাপন করছে। প্রতিটি কর্মী, গেরিলা ও সহানুভূতিশীল ও জনগণকে দিনকে আঁকড়ে ধরতে হবে, ঘন্টাকে আঁকড়ে ধরতে হবে, বিপ্লবকে ত্বরন্বিত করতে হবে। জনগণকে অতি সত্বর তাদের দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত করতে দুর্বার গতিতে সঠিক লাইনে এগিয়ে যেতে হবে।

বিজয় আমাদের অনিবার্য।

আসুন, আমরা মার্কসবাদ গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করি, একে উত্তমরূপে রপ্ত করি। জনগণের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করি।