সিরাজ সিকদার রচনাঃ “গণযুদ্ধের পটভূমি” শীর্ষক কবিতা সংকলনের ভূমিকা

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ অক্টোবর ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৬ নভেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

সাহিত্য-শিল্পকলা মতাদর্শগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভূক্ত। ইহা মানুষের চিন্তাধারাকে প্রভাবান্বিত করে এবং কর্মকে নিয়ন্ত্রিত করে।

বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লব উভয়ের জন্য প্রথম প্রয়োজন জনমত সৃষ্টি করা।

প্রতিক্রিয়াশীল শিল্প-সংস্কৃতি প্রতিবিপ্লব ঘটানো এবং প্রতিবিপ্লবী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করে।

প্রতিক্রিয়াশীল বিষয়বস্তু ও উচ্চমানের শিল্পরূপের সাহিত্য-সংস্কৃতি সবচাইতে বিপদজনক। রবীন্দ্র সাহিত্য তার প্রমাণ।

পূর্ববাংলায় সর্বহারার দৃষ্টিকোণ দিয়ে সঠিক এবং উচ্চমানের শিল্পরূপ সম্পন্ন জাতীয় গণতান্ত্রিক শিল্প-সংস্কৃতি (সম্প্রসারণবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী শিল্প-সংস্কৃতি) গড়ে উঠেনি।

এ ধরণের শিল্প-সংস্কৃতি গড়ে তোলার সময় আমাদেরকে শুধু শ্রেণী সংগ্রামকে তুলে ধরলেই চলবে না, কারণ তা বুর্জোয়া এমনকি বড় বুর্জোয়াদের নিকটও গ্রহণীয়।

শ্রেণীসংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্ব (বর্তমানে জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব), ইহা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি, এর নেতৃত্বে সশস্ত্র ও অন্যান্য সংগ্রাম এবং সর্বহারাদের শ্রেণীসংগ্রাম পরিচালনার বৈজ্ঞানিক তাত্ত্বিক ভিত্তি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা ও তার প্রয়োগ-অনুশীলন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হতে হবে। তখনই এ ধরণের শিল্প-সংস্কৃতির বিষয়বস্তু সর্বহারার বিশ্বদৃষ্টিকোণ দিয়ে সঠিক বলে বিবেচিত হবে।

এভাবে সুকান্তের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে হবে।

সাহিত্য-সংস্কৃতিকে শুধু বিষয়বস্তুর দিক দিয়েই ঠিক হলে চলবে না—ব্যাপক কেডার, সৈনিক, সহানুভূতিশীল, সমর্থক এবং জনগণ কর্তৃক গ্রহণীয় ও সমাদৃত এরূপ শিল্পরূপ সম্পন্ন হতে হবে।

এভাবে আধুনিক সাহিত্য-কবিতা-শিল্পকলার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হবে।

বিপ্লবী বিষয়বস্তু ও উচ্চমানের শিল্পরূপের (জনগণ কর্তৃক গ্রহণীয় ও সমাদৃত) একাত্মতা সম্পন্ন সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি পূর্ববাংলার বিপ্লবে মতাদর্শগত প্রস্তুতির সৃষ্টি করবে, বিপ্লবের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করবে এবং জনগণকে বিপ্লবী কর্মে উদ্বুদ্ধ করবে।

বিপ্লবী শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে চীন-ইন্দোনেশিয়া-ভারত এবং অন্যান্য দেশে ভ্রাতৃপ্রতিম কমরেডগণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

আমাদেরকেও পূর্ববাংলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হচ্ছে—কারণ বাংলা সাহিত্যে আমাদের সঠিক পথ দেখাবার মত কোন উত্তরসূরী নেই।

এ কারণে আমাদের বিষয়বস্তু ও শিল্পরূপে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু আমরা গুরুত্ব দেবো বিষয়বস্তু অর্থাৎ রাজনীতিতে, আর অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠবে নিখুঁত শিল্পরূপ।

দেশের এবং বিদেশের অতীত-বর্তমান সাহিত্য শিল্পকলাকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং সৃজনশীলভাবে সেগুলো থেকে শিখতে হবে, অন্ধভাবে নয়।

সর্বহারার দৃষ্টিকোণ দিয়ে সঠিক, একই সাথে আমাদের কেডার, গেরিলা, সহানুভূতিশীল, সমর্থক এবং জনগণ গ্রহণ করবে, বিপ্লবে প্রেরণা পান—এরূপ শিল্প-সাহিত্য সার্থক বলে বিবেচিত হবে। কাজেই শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে জনগণের সেবার মনোভাবের সার্থক প্রয়োগ হবে সর্বহারার দৃষ্টিকোণ দিয়ে সঠিক, জনগণের গ্রহণীয় এবং প্রেরণাদায়ক শিল্প-সাহিত্য গড়ে তোলা।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি যেমন রচনা করছে বিপ্লবী কাজের নূতন ইতিহাস, বিপ্লবী প্রবন্ধের নূতন রীতি, তেমনি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে সত্যিকার বিপ্লবী এবং নিখুঁত শিল্পরূপ সম্পন্ন জনগণ সমাদৃত শিল্প-সাহিত্যের সম্পূর্ণ নূতন পথ গড়ে তোলার।

আমাদের এ প্রচেষ্টা তখনই সফল হবে যখন কমরেড, গেরিলা-জনগণের কন্ঠে ধ্বনিত হবে আমাদের গান, কবিতা, তাদের আসরে আলোচিত হবে আমাদের শিল্প-সাহিত্য, আত্মত্যাগে তাদের করবে উদ্বুদ্ধ, পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লব করা, পুরোনো দুনিয়া ভেঙ্গে চুরমার করা, বিপ্লবী রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ও তা টিকিয়ে রাখার পক্ষে জনগণকে মতাদর্শগতভাবে তৈরী করবে, তাদেরকে বিপ্লবী কর্মে উদ্ধুদ্ধ করবে। তখনই সার্থক হবে সাহিত্য-শিল্পকলার ক্ষেত্রে আমাদের জনগণের সেবার মনোভাব