সিরাজ সিকদার রচনাঃ বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ের সারসংকলন

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বাধীন পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ আগষ্ট ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১৭ নভেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

১। বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের সিদ্ধান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং আমাদের আত্মগত অবস্থার সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইহা মার্কসবাদী সামরিক রণনীতি ও রণকৌশলের একটি চমৎকার প্রয়োগ। পার্টি ও বিপ্লবের ইতিহাসে ইহা একটি ঐতিহাসিক, সুদূরপ্রসারী, তাৎপর্যসম্পন্ন এবং যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

২। বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী দেখা যায় এ রণনৈতিক আক্রমণের মাধ্যমে নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়িত করা সম্ভবঃ

▬ অস্ত্র ও অর্থ দখল করা।

▬ দেশপ্রেমিক বাহিনীর নিয়মিত ও স্থানীয় বাহিনী গড়ে তোলা।

▬ ব্যাপক প্রচার চালানো।

▬ স্থানীয় শত্রুদের উৎখাত করা।

▬ জনগণকে সংগঠিত করা।

▬ সশস্ত্র সংগ্রামের সাথে গণসংগ্রামের সমন্বয় সাধন করা।

▬ জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা কায়েম করা।

▬ গ্রামসমূহ মুক্ত করা।

৩। রণনৈতিক আক্রমণের সফলতার জন্য নেতৃত্বকে জনগণের সাথে সংযোগ করা।

সেক্টর কমান্ডারগণ তার আওতাধীন সেকটরের একটি অংশে যেয়ে নিজ পরিচালনায় উপরোক্ত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়িত করবেন, তার ভিত্তিতে সমস্ত সেক্টর পরিচালনা করবেন।

সেকটর কমান্ডার তার আওতাধীন সেক্টরের ঐ অংশে যেতে পারেন যেখানে ভাল কাজ রয়েছে অর্থাৎ গেরিলা, কর্মী, শেল্টার, অস্ত্র ও লক্ষ্যবস্তু আছে।

সেকটর কমান্ডারের সরাসরি পরিচালনা সহায়ক হবে তখনই যখন সেক্টর কমান্ডার ভীরুতা, রক্ষণশীলতা এবং একতরফাবাদ থেকে মুক্ত হবেন। সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা কার্যকরী করার জন্য মার্কসবাদ প্রয়োগে সক্ষম হবেন।

পক্ষান্তরে সেকটর কমান্ডার ভীতু, রক্ষনশীল ও একতরফাবাদী ও সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকরী করার ক্ষেত্রে মার্কসবাদ প্রয়োগে অক্ষম হলে উপকারের পরিবর্তে অপকার হবে, স্থানীয় উদ্যোগ ব্যাহত হবে, কর্মীদের মনোবল নষ্ট হবে, কোন সামরিক তৎপরতা বিকাশ লাভ করবে না।

৪। যথাযথ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে গেরিলাদের সাহস থাকলে ফাঁড়ি বা থানা দখল করা খুবই সহজ।

৫। বর্তমান পর্যায়ে থানা বা ফাঁড়ি দখলের জন্য কমান্ডো আক্রমণের রূপই হচ্ছে যথাযথ।

পুলিশ, রক্ষীবাহিনী প্রভৃতিদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় না দিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে হঠাৎ আক্রমণ বা গুলি বর্ষণ করতে করতে ঢুকে পড়া—এ ধরণের পদ্ধতি হওয়া উচিত আক্রমণের কৌশল।

থানা বা ফাঁড়ির চারদিকে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করা উচিত নয়। এতে দখল করা সম্ভব হবে না। উলটো লোক ও অস্ত্র খোয়া যাবে।

৬। আমাদের ও শত্রু অবস্থার যথাযথ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে চিন্তার ক্ষেত্রে সাহস অর্জন করা।

আমরা ন্যায় যুদ্ধ করছি, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করছি। তারা অন্যায় যুদ্ধ করছে, অন্যায়কে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
জনগণ আমাদের সমর্থন করে। জনগণ তাদের সমর্থন করে না।
আমরা প্রস্তুতি নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ করছি। তারা অপ্রস্তুত অবস্থায় হঠাৎ আত্মরক্ষা করছে।
আমরা আমাদের উদ্দেশ্যের প্রতি দৃঢ়। আমরা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের জন্য কাজ করছি। পক্ষান্তরে তারা সরকারকে সমর্থন করে না। তারা পেটের দায়ে নিজের জন্য কাজ করছে।
আমাদের মনোবল উঁচু, আমরা সাহসী। তাদের মনোবল নীচু, তারা ভীতু।

এ সকল কারণে অস্ত্র ও লোকবল যদিও তাদের আমাদের চাইতে বেশি, কিন্তু তবুও তারা আমাদের চাইতে নিকৃষ্ট।

৭। লক্ষ্যবস্তুর বিশ্লেষণ এবং ক্রমনির্ধারণঃ

লক্ষ্যবস্তুসমূহকে বিশ্লেষণ করা যায়—আক্রমণ, ঠেকানো এবং দখলের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে।

উদাহারণস্বরূপ—আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল লৌহজং থানা, সি আই অফিস এবং ব্যাংক। এর মাঝে সি আই অফিস ছিল ঠেকানোর লক্ষ্যবস্তু এবং থানা ও ব্যাংক ছিল দখলের লক্ষ্যবস্তু।

সার্বিকভাবে তিনটি লক্ষ্যবস্তুর মাঝে প্রধান ছিল থানা। এর কারণ এর অস্তিত্ব ও টিকে থাকার উপর ঠেকানোর ও দখলের দ্বিতীয় লক্ষ্যবস্তুর অস্তিত্ব ও টিকে থাকা নির্ভরশীল।

দখলের লক্ষ্যবস্তুর মাঝে প্রধান ছিল থানা এবং গৌণ বা দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্যাংক।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী আমরা আমাদের বাহিনীকে প্রধান (১নং) এবং গৌণ (২নং) এবং রিজার্ভ বাহিনীতে ভাগ করি। প্রধান গ্রুপে সাহসী, অভিজ্ঞ এবং ভাল গেরিলা এবং অস্ত্র নেওয়া হয় এবং সবচাইতে শক্তিশালী করা হয়।

বিশেষ অবস্থা মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ গ্রুপ গঠন করা হয়।

প্রধান লক্ষ্যবস্তু, আক্রমণ ও দখলের জন্য প্রধান গ্রুপ ও রিজার্ভ এবং ঠেকানোর জন্য গৌণ বা ২নং গ্রুপ নিয়োগ করা হয়।

প্রধান গ্রুপ থানা দখল করে ব্যাংক দখল করবে বলে স্থির করা হয়।

বিভিন্ন গ্রুপের মাঝে সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়।

আমাদের অনভিজ্ঞতার কারণে আমরা প্রধান লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ ও দখল এবং দ্বিতীয়টি (সি আই অফিস) ঠেকিয়ে রাখার পরিকল্পনা করি।

অর্থাৎ শক্তিশালী একটি শত্রু অবস্থান আক্রমণ ও দখলের পরিকল্পনা করি।

কাজেই প্রাথমিক পর্যায়ে একটি শত্রু অবস্থান আক্রমণ ও দখলের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। অভিজ্ঞ হয়ে উঠলে একাধিক শত্রু অবস্থান একবারে আক্রমণ ও দখলের পরিকল্পনা করা উচিত।

দখলকৃত দ্রব্যাদি স্থানান্তরের জন্য বহনকারী গ্রুপ গঠন হয়েছিল।

৮। কাজের ক্রম নির্ধারণ করতে হবেঃ

প্রধান কাজ ও গৌণ কাজ নির্ধারণ করতে হবে। একই সময় একতরফাবাদী ভুল এড়াতে হবে। অর্থাৎ প্রধান কাজ করতে যেয়ে গৌণ কাজ বাদ দিলে বা অবহেলা করলে চলবে না।

লৌহজং-এ প্রধান কাজ ছিল থানা দখল, দ্বিতীয়-গৌণ কাজ ছিল সি আইর অফিস ঠেকানো, তৃতীয়-গৌণ কাজ ছিল ব্যাংক দখল।

প্রধান কাজের জন্য প্রধান গ্রুপ ও রিজার্ভ নিয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় কাজের জন্য দ্বিতীয় গ্রুপ নিয়োগ করা হয়। তৃতীয়ের জন্য প্রধান বাহিনী নিয়োগ করা হয়।

প্রধান কাজ সাফল্যজনকভাবে হয়ে যাওয়া পর দ্বিতীয় কাজ প্রধান হয়ে আসে। দ্বিতীয় কাজ সাফল্যজনকভাবে হওয়ার ফলে তৃতীয় কাজ এবং দখলের দিক দিয়ে দ্বিতীয় কাজ প্রধান হয় অর্থাৎ ব্যাংক দখল করা প্রধান হয়।

এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রধান কাজের পরে গৌণ কাজগুলো প্রধান হয়।

প্রধান কাজ হওয়ার পর দখলকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কারণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় কজে সেগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাজে প্রয়োজন হলে সেগুলো ব্যবহার করা হতো।

প্রধান কাজের সময় গৌণ কাজগুলো বাদ দেয়া হয়নি যে কারণে আমাদের আর্থিক লাভ হয় এবং আর্থিক সংকট অনেকটা কমে।

প্রধান কাজের সময় গৌণ কাজ ব্যাংক দখল বাদ দিলে আমাদের লাভ অনেক কম হতো বা দ্বিতীয় কাজ বাদ দিলে শত্রু সেখান থেকে এগিয়ে এসে থানার সাহায্যে পালটা আক্রমণ করলে আমাদের অসুবিধা হতো।

এভাবে একতরফাবাদ এড়ানো হয়।

৯। আক্রমণের সময় সামগ্রিক পরিচালক রিজার্ভ বাহিনীতে বা কাছাকাছি অবস্থান করবে যাতে কোন পরিবর্তিত পরিস্থিতির যথাযথ সমাধান প্রদান করা যায়।

১০। সামগ্রিক অপারেশনেও আমাদের কাজগুলো নির্ধারণ করা, প্রধান ও গৌণ কাজ ঠিক করা, পর্যায়ক্রমে কোনটার পর কোনটা প্রধান হবে তা নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সাধারণতঃ একটি অপারেশেনে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হয়ঃ

▬ অনুসন্ধান (আমাদের ও শত্রুদের)।

▬ পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরামর্শ গ্রহণ, অনুমোদন (উচ্চ ও সমস্তরের)।

▬ পরিকল্পনাভিত্তিক অস্ত্র, গেরিলা, যানবাহন সংগ্রহ, ট্রুপ গঠন।

▬ পরিকল্পনাভিত্তিক মতাদর্শগত ও সামরিক ট্রেনিং।

▬ আক্রমণের জন্য সমাবেশ ও রওয়ানা হওয়া।

▬ শেষ মুহুর্তের অনুসন্ধান ও অনুমোদন।

▬ আক্রমণ।

▬ দখলকৃত দ্রব্যাদি, আহত ও নিহত এবং গ্রেফতারকৃতদের সরানো।

▬ গেরিলাদের সরে আসা।

▬ নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ, দখলকৃত দ্রব্যাদি, আহত, নিহত ও গ্রেফতারকৃতদের নিরাপদে রাখা।

▬ সারসংকলন।

এ সকল কাজ একটি একটি করে প্রধান হয়ে আসবে, এগুলোর যেকোন একটি সুষ্ঠুভাবে না হলে সামগ্রিক অপারেশন ঠিক হবে না।

উদাহারনস্বরূপ, বৈদ্যের বাজারে অপারেশনে দখলকৃত দ্রব্যাদি সরানো এবং গেরিলাদের সরে আসার পরিকল্পনা যথাযথ না হওয়ায় অপারেশন দখল পর্যায় পর্যন্ত সফল হওয়া সত্ত্বেও অপারেশন ব্যর্থ হয়, দখলকৃত দ্রব্যাদি খোয়া যায়, কয়েকজন গেরিলা প্রাণ হারায়।

অন্য এক ক্ষেত্রে শেষ মুহুর্তের অনুসন্ধান ও অনুমতি প্রদানের পর্যায়ে ঠিক না হওয়ায় নিশ্চিত অপারেশন হয়নি।

আক্রমণের জন্য সমাবেশ ও রওয়ানা হওয়ার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপ, অস্ত্র ও যানবাহনের যথাযথ সমন্বয় না হওয়ায় অনেক অপারেশন হয়নি।

১১। অঞ্চলের অপারেশনের জন্য আন্তঃসেকটর বা সাবসেক্টর সমন্বয় প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই এ ধরণের আন্তঃসেকটর সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অস্ত্র, গেরিলা, যানবাহন, অর্থ, অনুসন্ধান, মেনুভারিং প্রভৃতি বিষয়ে পরস্পর সহযোগিতা করা যায়।

এটা আরো সুবিধাজনক হবে ওয়্যারলেস কানেকশন গড়ে উঠলে।

১২। সামগ্রিকভাবে পূর্ববাংলার কতকগুলো অঞ্চলে আমরা লড়াই এবং পশ্চাদভূমি হিসেবে ঠিক করেছি তেমন একটি সেকটরেও লড়াই এবং পশ্চাদভূমির অঞ্চল ঠিক করে কাজ করতে হবে যাতে আশ্রয়, শেলটার এবং টিকে থাকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়।

১৩। আমাদের ও শত্রুদের অবস্থার বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সাহসী ছোট কমান্ডো ট্রুপ (গেরিলা গ্রুপ) সুবিধাজনক।

ছোট গ্রুপকে পরিচালনা করা, আশ্রয় দেওয়া, গোপনে সমাবেশ করা, ট্রেনিং প্রদান করা, চলাফেরা, অতর্কিতে আক্রমণ করা, সরে পড়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুবিধাজনক।

১৪। এক অঞ্চলে বিরাটাকার গেরিলা যুদ্ধ করার পরিবর্তে বর্তমানে গেরিলাযুদ্ধ বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার সার্বিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

গেরিলা যুদ্ধের বিস্তৃতিই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

বিস্তৃত অঞ্চলে গেরিলাযুদ্ধ ছড়িয়ে দিলে শত্রুচাপ এক অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরিবর্তে ছড়িয়ে পড়বে, আমাদের স্থানীয় গেরিলারা সক্রিয় হবে, পার্টির বিকাশ বৃদ্ধি পাবে। জনগণের গণ অসন্তোষকে কাজে লাগানো যাবে। বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্র ও অর্থের অভাব কমে যাবে।

গেরিলা যুদ্ধকে বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সাহসী গেরিলা, কমান্ডার ও পরিচালক নিয়ে ভ্রাম্যমান ইউনিট গঠন করা। এরা বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় গেরিলাদের নিয়ে অপারেশন করবে। দখলকৃত অস্ত্র দিয়ে আসবে। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় গেরিলারা ট্রেইন হবে, অস্ত্র ব্যাপকভাবে স্থানান্তর প্রয়োজন হবে না।

১৫। সংগঠন থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সামরিক দলিল, কমরেড সিরাজ সিকদার প্রদত্ত সিদ্বান্তসমূহ প্রয়োগ প্রয়োজন।

১৬। জনগণের লড়াইয়ের মনোবল, গেরিলাদের লড়াইয়ের আকাঙ্খা ও উদ্যোগকে সাহসের সাথে কাজে লাগাতে হবে, রণনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হবে।

১৭। লৌহজং ও জাবড়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে।

ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহ ও বরিশালে এ অভিজ্ঞতা প্রয়োগের সুফল অর্জিত হয়েছে।

লৌহজং ও জাবড়ায় আক্রমণের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা ক্রমাগত সফলতা আনয়ন করছে।

পক্ষান্তরে অন্যান্য বিচ্ছিন্ন গ্রুপসমূহ অবস্থান নিয়ে গুলি বর্ষণ করে। ফলে তারা দখল করতে ব্যর্থ হয়।

কাজেই আমাদের ইতিবাচক ও অন্যান্যদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে, সফলতাকে নিশ্চিত করতে হবে।

১৮। উপরোক্ত পয়েন্টসমূহ এবং নিজেদের বিচক্ষণতার সাহায্যে আত্মগত ও বস্তুগত অবস্থার নিয়মবিধি আবিষ্কার করতে হবে, আত্মগত ও বস্তুগতের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে, অপারেশনের সফলতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯। বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের পরিকল্পনা ও তার বাস্তব প্রয়োগ আমাদের চমৎকার অবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং বিরাটাকার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে নিয়মিত বাহিনীর সাহায্যে আন্তঃআঞ্চলিক সমন্বিত গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান, দেশীয়-আন্তর্জাতিক বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সম্ভাবনার উদ্ভব হয়েছে।

জনগণ, সহানুভূতিশীল, কর্মী ও গেরিলাদের মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আশার সৃষ্টি হয়েছে।

বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ সফল করার জন্য আমদেরকে কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের বিজয়—দীর্ঘজীবী হোক!

সর্বোচ্চ পরিচালক মণ্ডলীর দপ্তর,

পূর্ববাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী □