সিরাজ সিকদার রচনাঃ অর্থনৈতিক অপারেশন সংক্রান্ত কতিপয় পয়েন্ট

সিরাজ শিকদার

সিরাজ শিকদার

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিচালক মণ্ডলীর দপ্তর কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ মে ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৫ অক্টোবর ২০১৪


পিডিএফ

বড় রকমের অর্থনৈতিক অপারেশন হচ্ছে জটিল ধরণের কমান্ডো বা গেরিলা হামলা। ‘আক্রমণ কর সরে পড়’ ধরণের অপারেশনের চাইতে এগুলো জটিল। কারণ, এ সকল অপারেশনে প্রয়োজন হয় আক্রমণ করে দখল করা, দ্রব্যাদি সংগ্রহের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করা এবং দখলকৃত দ্রব্যাদি নিয়ে সরে আসা। এছাড়া অপারেশন হয় শত্রু এলাকার শহর অঞ্চলে যেখানে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। তারা শক্তিশালী, জনসমর্থন আমাদের পক্ষে কাজে লাগানো কঠিন।

এ কারণে অপারেশন করতে হয় খুবই তড়িৎ বেগে।

এ ধরণের অপারেশনের জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের পরিকল্পনাবিদ, যানবাহন সমস্যার সমাধান, অংশগ্রহণকারীদের পরিকল্পনা কার্যকরী করা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত পেশাদারসুলভ (Professionalism) দক্ষতা ও বিচক্ষণতা এবং এগুলো সমন্বিত করে অপারেশন পরিচালনা করার মত পরিচালক।

সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন আমাদের অবস্থা এবং লক্ষ্যবস্তুর পারিপার্শ্বিকতা, যাতায়াত ব্যবস্থা, শত্রু ও জনগণের অবস্থা প্রভৃতির পুংখানুপুংখ অনুসন্ধান। এর ভিত্তিতে সকল দিক ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে সফলতা প্রায় নিশ্চিত এরূপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

এর পর আসে গেরিলা, অস্ত্র, যানবাহন সংগ্রহ, গেরিলাদের মতাদর্শগত ট্রেনিং প্রদান ইত্যাদি।

সবশেষে আসে সকল প্রস্তুতি সমন্বিত করে অপারেশন করানো।

এ সকল কাজ যথাযথভাবে করানোর মতো কর্মীর এবং সুযোগের অভাব রয়েছে। এ কারণেই আত্মগত অবস্থার (আমাদের অবস্থা) সাথে বস্তুগত অবস্থার (অপারেশন লক্ষ্যবস্তু ও পারিপার্শ্বিকতা) সামঞ্জস্য হয়না। ফলে অনেক অপারেশন ব্যর্থ হয়।

○ উচ্চস্তরের মূল্যবান পরামর্শ কার্যকরী না করা, সহায়তা গ্রহণ না করা অপারেশন ব্যর্থতার একটি কারণ।

এ কারণে অপারেশনপূর্বে সম্ভাব্য সকলের নিকট থেকে বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সাহায্য গ্রহণ করা, সহায়তা নেওয়া বিশেষ করে উচ্চস্তরের সহায়তা, পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা।

○ ব্যাপক কাজ না হওয়ায় এবং পশ্চাদপদ অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে আমাদের কর্মীদের মধ্য থেকে প্রচুর সংখ্যক ড্রাইভার ও মেকানিক পাওয়া যায় না। ইহাও আপারেশন সফল না হওয়ার একটি কারণ।

কাজেই পরিকল্পিতভাবে শহরে ড্রাইভিং শেখার জন্য কর্মীদের নিয়োগ করতে হবে, ড্রাইভারদের মধ্যে কাজ করতে হবে।

○ ব্যাপক কাজ না হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুর ভিতর থেকে যথাযথ খবর পাওয়া সর্বদা সম্ভব হয় না।

○ অপারেশন নিকটবর্তী সংগঠন ও জনসমর্থন অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগানো হয়নি। ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

এ কারণে অপারেশনের পূর্বেই স্থানীয় সংগঠন ও জনসমর্থন কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করতে হবে।

○ এক স্থানের গেরিলারা অপরিচিত অন্যস্থানে অপারেশন চালাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিপদগ্রস্ত হয়েছে।

এ কারণে স্থানীয় গেরিলাদের দিয়ে অপারেশন করানো উচিত। বাইরের গেরিলাদের অংশগ্রহণ থাকলেও স্থানীয় গেরিলাদের নেয়া উচিত। বাইরের গেরিলাদের বেশ সময় নিয়ে স্থানীয় অবস্থার সাথে পরিচিত করে তোলা উচিত।

○ অনেক সময় অপারেশনে সব ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার, গেরিলা ও কমিশার নিয়োগ করা হয়েছে বা নিয়োগের পরিকল্পনা হয়েছিল।

অপারেশনে অংশগ্রহণকারীদের দ্বারা বা তাদের বিপদ হলে সংগঠনের কি কি ক্ষতি হতে পারে, কি কি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে তা চিন্তা বা বিবেচনা করা হয়নি।

প্রথমোক্ত কারণে কোন কোন এলাকায় এত ক্ষতি হয় যে পরে আর অপারেশন করার মতো অবস্থা থাকে না।

কোন কোন পরিকল্পনায় এমন সব কমরেডদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যে তাদের বিপদ ঘটলে বিরাট অঞ্চলের সাংগঠনিক, সামরিক কাজ বন্ধ হয়ে যেত।

অপারেশনে অংশগ্রহণকারীদের বিপদ হওয়ার ফলে কোন কোন অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কি অন্যান্য অঞ্চলের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়।

অস্ত্রের ক্ষেত্রেও অনেক সময় চিন্তা করা হয়নি এগুলো হারালে কি হবে, যার ফলে পরে অপারেশন করার মত অবস্থা থাকেনি।

এ সকল কাজ হচ্ছে একতরফাবাদ দ্বারা পরিচালত হবার ফল। ইহা হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থ, সমগ্র অবস্থা, সকল দিক চিন্তা না করে একতরফাভাবে শুধু অপারেশন করার কথাই চিন্তা করার পরিণতি।

○ পরিকল্পনা কতোখানি বাস্তবায়িত করতে গেরিলা, কমান্ডার, কমিশাররা সক্ষম তা বিবেচনা করতে পরিচালকদের অক্ষমতা অনেক অপারেশন ব্যর্থতার কারণ।

○ অপারেশনকালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কি করতে হবে তা কমান্ডাররা নির্ধারণ করতে পারে না, ফলে অপারেশন ব্যর্থ হয় এবং ট্রুপ বিপদগ্রস্ত হয়।

○ একাধারে বারংবার অপারেশন ব্যর্থতা হতাশা আনে। এ কারণে সুদীর্ঘ সময় নিয়ে ভালভাবে প্রস্তুতিসহ সফলতা নিশ্চিত এরূপ অপারেশন করা উচিত। ব্যর্থতা যাতে বহু সময় ব্যবধানে হয় তা দেখা উচিত।

বড় অপারেশনের মাঝে ছোট ছোট সফল অপারেশন করা উচিত। এর ফলে মনোবল দৃঢ় থাকবে।

○ অপারেশনের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ, একত্রিত হওয়া, ট্রেনিং ও বিশেষ করে অপারেশনে অংশগ্রহণ, অপারেশন শেষে অস্ত্র ও দখলকৃত দ্রব্যাদি জমা নেওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতা প্রচলিত করা।

প্রথম ক্ষেত্রে পরিচালকের লিখিত অনুমতিপত্র লাগবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে জমাকারীদের স্বাক্ষর লাগবে।

○ পরিচালক নিজে ও অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট তত্ত্ব পড়ে সারসংকলন সভায় মিলিত হবে এবং অপারেশনের সারসংকলন করবে।

অপারেশন শিট উচ্চস্তরে পাঠাতে হবে।

○ পরবর্তী অপারেশনে সারসংকলন প্রাপ্ত পয়েন্টসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।

○ সামরিক গ্রুপের গেরিলাদের কোন কোন অঞ্চলে সামরিক গ্রুপ বা সাংগঠনিক গ্রুপ পরিচালনা বা অন্যান্য সাংগঠনিক কাজে লাগানো হয়নি। ফলে তাদের মানদণ্ড উন্নত হয়নি, সাংগঠনিক চেতনা ও বৈপ্লবিক দায়িত্ববোধ জন্মেনি, শৃংখলা ও সমন্বয় সাধন করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকরী করা, নিজেদের ও গেরিলাদের উন্নত করা, পরিচালনার জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

ফলে যদিও গেরিলা গ্রুপে ভাল ভাল কমরেড এসেছে কিন্তু তাদের কর্মক্ষমতা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি।

এটা সকল এলাকায় অবশ্যই পরিহার করতে হবে, গেরিলাদের সাংগঠনিক কাজে লাগাতে হবে।

সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুক গেরিলাদের সার্বক্ষণিক করে অন্যত্র পাঠাতে হবে, অন্যথায় তারা সুবিধাবাদী ও পশ্চাদপদ হয়ে যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় কাজ, তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং অপারেশন সংক্রান্ত কতিপয় গাইড লাইন

“উচ্চস্তরের সংস্থার পক্ষে হাল্কা ও গুরু এবং মন্থর ও জরুরী প্রকৃতি নির্বিশেষে কোনটা কেন্দ্রীয় কাজ তার উল্লেখ না করে নিম্নস্তরের সংস্থাকে একই সময়ে অনেক কাজ করতে নির্দেশ প্রদান করা উচিত নয়। এমনি করলে নিম্নস্তরের কাজের বিন্যাস এলোমেলো হবে এবং নির্ধারিত ফলও পাওয়া যাবে না।”

সভাপতি মাও আরো বলেছেন, “যে কোন অঞ্চলে একই সময়ে অনেকগুলো কেন্দ্রীয় কাজ থাকতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ে কেবলমাত্র একটা কেন্দ্রীয় কাজ থাকতে পারে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কাজ পরিপূরক হিসেবে থাকতে পারে। তাই একটা অঞ্চলের মুখ্য পরিচালককে অবশ্যই সেখানকার সংগ্রামের ইতিহাস, সংগ্রামের অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন কাজকে উপযুক্ত স্থানে সাজিয়ে রাখতে হবে, নিজে কোন পরিকল্পনা তৈরী না করে শুধু উচ্চস্তরের নির্দেশানুসারে এক একটা কাজ করা উচিত নয়। এমনি করলে অসংখ্য ‘কেন্দ্রীয় কাজ’ এলোমেলো বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের ঐতিহাসিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানুসারে সমগ্র পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে প্রতিটি বিশেষ সময়ের জন্য কাজের ভারকেন্দ্র ও কাজের ক্রম সঠিকভাবে স্থির করা এবং তা অবিচলিতভাবে পালন করা যাতে নির্দিষ্ট ফলার্জন সুনিশ্চিত হয়; এটাই হচ্ছে নেতৃত্বের অন্যতম কৌশল।” [১]

কেন্দ্রীয় কাজ সাজানোই যথেষ্ট নয়, তা বাস্তবায়িত করার জন্য সভাপতি মাওয়ের নিম্নোক্ত নির্দেশ পালন করতে হবেঃ

“দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা উচিত। এর অর্থ যে, পার্টি কমিটি এর প্রধান কাজকে অবশ্যই শুধু ধরবে না বরং ‘দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা’ উচিত। কোন জিনিস শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং লেশমাত্র শিথিল না করেই তাকে ধারণ করা যায়। ধরা, কিন্তু দৃঢ়ভাবে নয়, তার অর্থই হচ্ছে মোটেই না ধরা। স্বভাবতঃই খোলা হাতে কিছু ধারণ করা যায় না। হাতটা যখন মুঠো করা হয়, কিন্তু দৃঢ়ভাবে মুঠোবদ্ধ করা না হয়, তখন ধরার মতো দেখা গেলেও আসলে কিছুই ধরা হয়নি। আমাদের কোন কোন কমরেডও প্রধান কাজকে ধরেন কিন্তু তা দৃঢ় করে নয়। তাই কাজেও তারা ভাল করতে পারেন না। মোটেই না ধরলে চলবে না এবং ধরা দৃঢ় না হলেও চলবে না।”

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও নেতৃত্ব পার্টির বিভিন্ন নিম্নতর সংস্থার প্রধান কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছে।

উদাহারণস্বরূপঃ

সামরিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কাজ হচ্ছে অর্থনৈতিক অপারেশন। মতাদর্শগত-সাংগঠনিক ক্ষেত্রে চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের ও ছয় পাহাড়ের দালালদের মুখোশ উন্মোচন, প্রচার জোরদার ইত্যাদি।

নিম্নস্তরের করণীয়ঃ

বিভিন্ন নিম্নস্তরের সংস্থায় নিজস্ব মতাদর্শগত, সাংগঠনিক, সামরিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য কাজ রয়েছে উদাহারণস্বরূপঃ জাতীয় শত্রু বা অর্থনৈতিক অপারেশনের পরিকল্পনা, প্রচার ইত্যাদি কাজ রয়েছে।

তাদেরকে উচ্চস্তর প্রদত্ত কেন্দ্রীয় কাজ এবং নিজেদের কাজসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় কাজ ঠিক রেখে নিজেদের কাজের ক্রম সাজাতে হবে।

উপরোক্ত বিষয়সমূহের আলোকে আমরা কয়েকটি অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করি।

সম্প্রতি আমাদের কোন এক অঞ্চলে দুটি জাতীয় শত্রু (ভাই) খতম ও তাদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়।

সামরিক ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান কেন্দ্রীয় কাজ, এ নির্দেশের সাথে সঙ্গতি রেখে স্থানীয় কাজে অসুবিধা সৃষ্টিকারী উপরোক্ত জাতীয় শত্রু দুটো অপারেশন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কিন্তু অপারেশনে যাওয়ার মুহুর্তে খবর পাওয়া যায় যে, জাতীয় শত্রু দু’জন বাড়ী নেই। তাই অপারেশন বাদ দেওয়া হয়। কারন তাদের অনুপস্থিতিতে অপারেশন করলে পরে তাদের পেতে কষ্ট হবে।

তাদের অনুপস্থিতিতেও অপারেশন করলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হতো এবং দুটো অস্ত্র পাওয়া যেত।

অপারেশন বাদ দেওয়ার ফলে নিম্নলিখিত ভুল হয়ঃ

শেষ মুহুর্তে অপারেশন বাদ দিয়ে সামরিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান প্রধান কাজ তা ভুলে যাওয়া হয় এবং জাতীয় শত্রু খতমের কাজকে প্রধান কাজ বলে গণ্য করা হয়। পরিকল্পনায় যদিও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান প্রাধান্য পায় কার্যতঃ তা গৌণ হয়।

কাজেই জাতীয় শত্রু বাড়ীতে না থাকলেও অপারেশন করা, তাদের অস্ত্র ও মূল্যবান দ্রব্যাদি দখল করা উচিত ছিল।

এর ফলে পার্টির আর্থিক লাভ হতো এবং অস্ত্র দখল হতো। প্রধান কাজকে যথার্থই প্রাধান্য দেয়া হত।

অপর এক জাতীয় শত্রুকে অপারেশনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়। তার নিকট বেশ অর্থ রয়েছে এ খবর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পাওয়া যায়।

উক্ত অঞ্চলের নেতৃত্ব অধীনস্ত কর্মীদের অপারেশন করার দায়িত্ব দেন এবং অপারেশনে যাবে এরূপ গেরিলাদের একটা তালিকা তৈরী করে দেন। অধীনস্থ কর্মী ইচ্ছা খুশীমত অপারেশন করে এবং অর্থ আনতে ব্যর্থ হয় যদিও জাতীয় শত্রু খতম হয়।

এক্ষেত্রে উক্ত অঞ্চলের নেতৃত্বের উচিত ছিল নিজস্ব তত্ত্বাবধানে অপারেশন করানো, যেহেতু ইহা কেন্দ্রীয় কাজের মাঝে (অর্থাৎ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের মাঝে) পড়ে।

এখানে উক্ত অঞ্চলের নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কাজকে আঁকড়ে ধরেননি।

অপর এক ক্ষেত্রে একটি ব্যাংক অপারেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এমন কি বাইরে থেকে গেরিলা আনানো হয়। কিন্তু ম্যানেজারের অসুস্থতার কারণে অপারেশন বাতিল করা হয়।

এক্ষেত্রে উচিত ছিল ম্যানেজারের সুস্থতা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। এক্ষেত্রে কাজকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা হয়নি।

ফলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানও হয়নি। অর্থাৎ প্রধান সমস্যার সমাধান হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে প্রধান সমস্যাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা হয়নি। অর্থাৎ প্রধান সমস্যাকে ধরা হয়নি।

○ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানকে সামরিক ক্ষেত্রে প্রধান কাজ হিসেবে আঁকড়ে ধরে গেরিলা, পার্টি-কমিটি, পাঠচক্রকে কাজ দিতে হবে, স্থানীয় সামরিক কাজকে সে অনুযায়ী সন্নিবেশিত করতে হবে, এ কাজের সাথে শুদ্ধি অভিযান ও চক্রবিরোধী সংগ্রাম সমন্বিত করতে হবে, প্রচার চালাতে হবে।

উদাহারণস্বরূপঃ গেরিলাদের অপারেশন পরিকল্পনার জন্য একত্র করা হলো। অপারেশন পরিকল্পনার পূর্বে তাদেরকে কয়েক ঘন্টা চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত ক্লাশ নেওয়া হলো। এরপর অপারেশন বিষয়ক আলোচনা হলো।

অপারেশনের মতাদর্শগত প্রস্তুতি হবে চক্রবিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান।

জাতীয় শত্রুর অর্থ ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি এবং কৃষিজাত দ্রব্যাদি দখল করে আমরা পার্টিফান্ড গড়ব কি?

আমাদের কিছু কিছুকর্মী, পরিচালক ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বের ধারণা রয়েছে যে, জাতীয় শত্রুর উপরোক্ত বিষয়াদি নিয়ে এলে জনগণ একে ডাকাতি বলে ভুল বুঝবে, রাজনৈতিক অপারেশন বলে বুঝবে না।

অথবা বিষয়াদি নিয়ে এলে তা জনগণের মাঝে বিতরণ করা উচিত যাতে জনগণ ভুল না বুঝে।

জনগণকে বিপ্লবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন বিপ্লবী পার্টি। এ পার্টির কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজন অর্থ।

এ অর্থ আসবে প্রধানতঃ শত্রুদের নিকট থেকে (শত্রুদের অর্থ প্রকৃতপক্ষে জনগণের অর্থ যেহেতু তা জনগণ থেকে শোষিত ও লুন্ঠিত)।

সরকারের অর্থও জনগণের অর্থ।

কাজেই জনগণের মুক্তির জন্য এ অর্থ দখল ও ব্যবহার ন্যায়সঙ্গত।

কাজেই শত্রুদের ধনসম্পদ ও অর্থ দখল করা এবং প্রথমে পার্টি পরিচালনার জন্য তা ব্যবহার করা ন্যায়সঙ্গত।

পার্টির প্রয়োজনের বাইরে জাতীয় শত্রুর ধনসম্পদ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা উচিত। কিন্তু পার্টির কার্য পরিচালনার প্রয়োজনকে প্রাথমিক স্থান দিতে হবে। জাতীয় শত্রুর ভূমি বিনামূল্যে ক্ষেতমজুর, গরীব চাষীদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।

গৌরনদী অঞ্চলে ১৯৭১ সালে কয়েক হাজার মন চাল ও গম পাওয়া গিয়েছিল। তা কমমূল্যে বিক্রয় করলে পার্টির ফান্ডের সমস্যার সমাধান হত।

কিন্তু তা জনসাধারণের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

জনসাধারণ যাতে ভুল না বুঝে তার জন্য পোস্টার, লিফলেট, চিকার মাধ্যমে প্রচার করা এবং জনসাধারণকে জানানো উচিত যে এই অপারেশনে এই অর্থ ও সম্পদ পাওয়া গেছে তা পার্টির কার্য পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

জনসাধারন চায় মুক্তি, তারা চায় বিপ্লব ও বিপ্লবী পার্টি। কাজেই তারা একে সমর্থন করবে।

উপরন্তু শত্রু যে প্রচার করে আমরা সিআইএ, অমুক-তমুক তাও ভ্রান্ত হবে।

কারণ আমাদের ফান্ড আসে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বারা, বিদেশ থেকে নয়।

আমরা জনসাধারণকে জানাতে পারি না এমন কাজ নেই।

জনসাধারণ ডাকাতি ভাববে এর অর্থ জনসাধারণের উপর আস্থা না থাকা।

বিপ্লবী পার্টির জন্য অর্থ প্রয়োজন আর তা আসবে শত্রুর সম্পদ দখল করে, এটা জনসাধারণের মাঝে প্রচার করলে জনসাধারণ বুঝবে।

সরকারী অর্থ ও সম্পদের বেলায়ও ইহা প্রযোজ্য।

কাজেই শত্রু ও সরকারী অর্থসম্পদ দখল করতে হবে এবং জনসাধারণকে জানাতে হবে যে, তাদেরকে বিপ্লবে পরিচালনার জন্য এ সম্পদ পার্টি ব্যবহার করছে।

পদ্ধতিঃ

○ আঞ্চলিক পরিচালক তার প্রতি কর্মীকে সার্কুলার মারফত জানিয়ে দেবে পার্টির অর্থের প্রয়োজনীয়তা এবং ইহা সামরিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কাজ।

○ তাদেরকে এমন কি সহানুভূতিশীলদেরকেও জাতীয় শত্রু এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধান পাঠাতে বলতে হবে যেখানে অপারেশন হলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়।

○ অনুসন্ধান আঞ্চলিক নেতৃত্ব পর্যালোচনা করবে এবং লক্ষ্যবস্তু নির্ণয় করবে এবং ক্রম অনুযায়ী সাজাবে।

পরিকল্পনা প্রণয়ন, অপারেশন

ও তার পরবর্তী কার্যাবলী

অপারেশন, গেরিলা গ্রুপ গঠন, অস্ত্র সংগ্রহ, অপারেশনে যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা, অপারেশনে গেরিলা কমান্ডার, সহকমান্ডার, রাজনৈতিক কমিশার নিয়োগ, অপারেশনে কার কি ভূমিকা নির্ণয়, এ বিষয়ে গেরিলাদের সাথে আলোচনা, তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া, খবর সরবরাহকারী নিয়োগ এবং তাদের মাধ্যমে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত খবর সংগ্রহ করা। সম্ভব হলে কমান্ডার, কমিশারদের অপারেশনের লক্ষ্যবস্তু দেখানো। অপারেশন গেরিলাদের অচেনা স্থানে হলে ঐ এলাকার সাথে পরিচিত এরূপ লোক বা স্থানীয় লোকের ব্যবস্থা করা, অপারেশন শেষে গেরিলারা কিভাবে চলে যাবে তা নির্ণয় করা, দখলকৃত দ্রব্যাদি জমা নেওয়া ও রাখার ব্যবস্থা করা, অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা করা, আহত বা মৃত হলে তাদের চিকিৎসা বা সরানোর ব্যবস্থা করা।

অপারেশনের তারিখ, মিলনস্থান এবং সময় নির্ণয় করা ইত্যাদি।

○ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন নিজ তদারকিতে করা এবং আঁকড়ে ধরা।

○ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের সমস্যা থাকলে জাতীয় শত্রু থাক বা না থাক অপারেশন করা।

○ জাতীয় শত্রু পেলে তাও খতম করা।

○ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ক্রমাগত অপারেশন চালিয়ে যাওয়া।

○ কিছুটা ঝুঁকি নিতে হলে তাও নেওয়া।

○ যতদিন না বিভিন্ন গেরিলা গ্রুপ বা এলাকার নেতৃত্ব ভালভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হচ্ছে ততদিন আঞ্চলিক নেতৃত্বের অনুমোদন ব্যতীত অপারেশন করতে না দেওয়া অর্থাৎ কেন্দ্রীকতা প্রয়োগ করা।

○ দখলকৃত দ্রব্যাদি ঠিকমত জমা নেওয়া, অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্যাদি উচ্চস্তরে পাঠানো।

○ প্রয়োজনবোধে অন্য অঞ্চল থেকে সর্ব প্রকার সহায়তা গ্রহণ করা।

○ প্রচারের ব্যবস্থা করা, অপারেশনের সময় পার্টি, কর্মসূচি ও নেতৃত্বের নামে শ্লোগান প্রদান করা। সভব হলে চুঙ্গা বা হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করা।

পরবর্তী সময়ে লিফলেট, পোস্টার ও চিকা ব্যবহার।

○ অপারেশনের প্রক্রিয়ায় শুদ্ধি অভিযান ও চক্রবিরোধী সংগ্রাম পরিচালনা করা।

○ অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে নীতিকে বিসর্জন দেওয়া কোন ক্রমেই অনুমোদনীয় নয়। অর্থাৎ কোন অবস্থায় জনগণের উপর হামলা করা চলবে না। এ ধরনের হামলা হলে পার্টির সুনাম নষ্ট হবে। জনগণের সাথে পার্টির সম্পর্ক ক্ষুন্ন হবে, কর্মীদের মাঝে শত্রু-মিত্র নির্ণয় না করে যত্রতত্র হামলার চরম ক্ষতিকর অভ্যাসের সৃষ্টি হবে, শত্রুদের সুবিধা হবে।

১৯৭০ এর প্রথম দিকে বরিশালে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যার ফলে পার্টির সুনাম নষ্ট হয়, পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

○ জাতীয় শত্রু খতমের পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় অপারেশনের লক্ষ্যবস্তু, গেরিলাদের অবস্থান, আশপাশ, যাতায়াত পথ, ম্যাপ এঁকে বুঝানোর অভ্যাস সৃষ্টি করা।

এ প্রক্রিয়ায় কম্পাস রিডিং শেখানো।

এগুলো ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হবে।

অপারেশনের ট্রুপ গঠনঃ

১। ভ্রষ্ট ছিল এ ধরণের লোক খুব সাহসী এ ধরণের ধারণা কারো কারো রয়েছে। ভ্রষ্টরা মুখে বড় বড় কথা বলে। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এরা সবচাইতে আগে পলায়ন করে, ভয় পায়, গেরিলাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়। এরা খুব ক্ষতিকর। অপারেশনে এদেরকে বর্জন করা উচিত।

অভিজ্ঞতায় আরো দেখা গেছে যারা ভ্রষ্ট ছিলনা তারাই গেরিলা হিসেবে ভাল হয়। গেরিলাদের সাধারণতঃ সংগ্রহ করা উচিত বিশ্বস্ততা, উৎসাহ, পার্টিতে যোগদানের পূর্বেকার এবং পরবর্তীকালের কার্যাবলী পর্যালোচনা করে।

২। গেরিলা ট্রুপে পুরোনো বা একাধিক অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছে এরূপসহ কিছু নতুন গেরিলা নেওয়া ভাল।

অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অভিজ্ঞদের নিলে ভাল হয়।

প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে নতুনরা অভিজ্ঞ হওয়ার সুযোগ পায়।

৩। যেখানে পুরানো অভিজ্ঞ নেই সেখানে রাজনৈতিক মান, শ্রেণিভিত্তি, উৎসাহ, অতীত জীবন, পার্টিতে যোগদানের পরবর্তী সময়কালীন কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে অপারেশন ট্রুপ গঠন করতে হবে।

এরাই অপারেশনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে।

○ অপারেশন ট্রুপ গঠনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে অপারেশনসমূহ যেন ব্যক্তি-নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। কারো উপর অপারেশন নির্ভর হয়ে পড়লে এবং তার মতাদর্শগত মান নিম্ন হলে তার মাথা বিগড়ে যেতে পারে। সে নিজেকে কেউকেটা মাতব্বর ভাবতে পারে, তার মাঝে হামবড়া মনোভাব দেখা দিতে পারে। সে উদ্ধত হতে পারে। এ সকল খারাপ মনোভাব বেড়ে গিয়ে তার মাঝে পার্টি ও জনগণকে অবজ্ঞা, তাদের প্রতি অনাস্থার সৃষ্টি করতে পারে।

এর পরিণতি হবে ফজলু চক্রের অনুরূপ মারাত্মক পরিণতি।

○ গেরিলা ট্রুপে একজন কমান্ডার, একজন সহকারী কমান্ডার এবং একজন রাজনৈতিক কমিশার নিয়োগ করা।

এদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া।

বড় রকমের অপারেশনে বহু গেরিলা প্রয়োজন হতে পারে। তখন সমগ্র অপারেশনের মধ্যে বিভিন্ন দায়িত্বে দু’জন, তিনজন, পাঁচজন বা অধিক গেরিলা প্রয়োজন হতে পারে। তখন প্রতি কাজের জন্য নির্দিষ্ট গেরিলাদের জন্য কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার ঠিক করা এবং সকল গেরিলাদের জন্য কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার, রাজনৈতিক কমিশার ঠিক করা।

কমান্ডো ট্রুপ

কমান্ডো ট্রুপ গঠন করে তাদেরকে অপারেশন করার জন্য কতকগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে দেওয়া যায়, এরা হাতের নিকট যে অস্ত্র পায় তাই দিয়ে অপারেশন করবে। কখনো প্রয়োজন হলে অস্ত্র ব্যতীত হাতে বা গামছা দিয়ে অপারেশন করবে।

এদেরকে রিভলভার, পিস্তল, চাকু, স্টেন, গ্রেনেড অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দেওয়া যায়।

বরিশালে ২নং ফ্রন্টে শুধু ব্লেড দিয়ে এ ধরণের একটি ট্রুপ একটি পুলিশ ফাঁড়ি দখল করেছিল।

মেহেন্দীগঞ্জ এলাকায় এ ধরণের একটি ট্রুপ একটি লোহার ছাতি, পেনসিল ও চাকু দ্বারা থানা, রাজাকারদের সামনে দফাদার খতম করে।

সম্প্রতি এ ধরণের একটি ট্রুপ কয়েকজন জাতীয় শত্রুকে খালি হাতে খতম করে।

বিশেষ ট্রুপঃ

কখনো কখনো বিশেষ ট্রুপ গঠন করা যায়, যাদেরকে দিনরাত্রি প্রস্তুত রাখা হয় অপারেশনের জন্য।

এ ধরণের ট্রুপ প্রয়োজন হয় যখন অপারেশন যে কোন সময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক গেরিলাদের চব্বিশ ঘন্টা থাকা, খাওয়া এবং অস্ত্রসহ একত্রে থাকার ব্যবস্থা করা যায়।

সম্প্রতি চক্রবিরোধী সামরিক তৎপরতায় এ ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। বিশেষ ট্রুপের কাজ শেষ হয়ে গেলে তা ভেঙ্গে দেওয়া যায়।

○ কোন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে একটি স্টেনগান নিয়ে না যাওয়া। কারণ অনেক সময়ে স্টেন জ্যাম হয়ে যায়।

সম্প্রতি বরিশালে এ ধরণের একটি ঘটনা ঘটে এবং রিজভী বেঁচে যায়।

○ কমপক্ষে দুটো স্টেন ব্যবহার করা।

○ কোন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে দুটো হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার না করা। কারণ দুটোই ফাটতে না পারে।

সম্প্রতি অতিমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে দুটো হ্যান্ড গ্রেনেডই ফাটেনি।

এজন্য অপারেশনের পূর্বে হ্যান্ড গ্রেনেডের ফিউজ রৌদ্রে শুকিয়ে নেওয়া উচিত (আগুনে নয়) এবং কমপক্ষে তিনটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে যাওয়া উচিত।

○ দেশী বোমা তৈরী ও বহনের সময় অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা। দেশীয় বোমা এমন স্থানে তৈরী করা উচিত যেখানে জনগণ নেই।

একজন তৈরী করবে, যে অবশ্যই কোন নেতৃস্থানীয় কর্মী বা সম্ভাবনাময় কর্মী হবে না।

বহন করার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং নেতৃস্থানীয় বা সম্ভাবনাময় কর্মী বহন করবে না।

কমরেড শাহীনের মত সম্ভাবনাময় কর্মী হাত বোমা তৈরী করতে যেয়ে নিহত হন এবং আরো কয়েকজন আহত হন।

এরূপ ঘটনা চটগ্রামেও একবার ঘটে।

○ জাতীয় শত্রুর ঘরের দরজা ভাঙ্গার জন্য কুড়াল বা শাবল ব্যবহার করা যায়।

সিন্দুক ভাঙ্গার জন্য পাঁচ সেরী হাতুড়ী ও ছেনি (চিমটা দ্বারা ধরে) ব্যবহার করা যায়। একান্ত প্রয়োজন হলে দরজা ভাঙ্গার জন্য হ্যান্ড গ্রেনেড চার্জ করা যায়।

○ রিভলভার, পিস্তল, স্টেনগান, ব্রেটা প্রভৃতি ছোট স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র অতিশয় যত্নের সাথে রাখা ও ব্যবহার করা উচিত। এগুলো যেন কোন প্রকারেই হারানো বা খোয়া না যায় তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

সকল ধরণের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বেলায় এটা প্রযোজ্য।

অপারেশন সংক্রান্ত কতিপয় অভিজ্ঞতা

“অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সামরিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কাজ।”

কেন্দ্রীয় কমিটির এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় শত্রু নাগর মোল্লার অপারেশন সংক্রান্ত অনুসন্ধান, সিদ্ধান্ত এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ট্রুপ তৈরি, ট্রুপের কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার, রাজনৈতিক কমিশার, স্কাউট নিয়োগ, ট্রুপ সদস্যদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া, যাতায়াত, ট্রুপের থাকার জায়গা, অস্ত্র সরাবার জায়গা ইত্যাদি ঠিক করে দেওয়া হয়। প্রথমবার প্রচেষ্টা চালান হয়। কিন্তু শত্রু না থাকায় ঘটনাস্থল থেকে ট্রুপ ফিরে আসে (শত্রুর অনুপস্থিতিতে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হতোনা)।  কয়েকদিন পরে আবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অপারেশন প্রক্রিয়ায় কতিপয় মারাত্মক ভুলত্রুটি ঘটে। যদিও শত্রু খতম হয়।

○ অপারেশন স্থানে গিয়ে অনেক বিলম্ব করা, সন্দেহজনক আলাপ-আলোচনা করা এবং ঘোরাফেরা করা, সিদ্ধান্ত নিতে দোদুল্যমানতা।

এর একটা কারণ ছিল অপারেশন পরিকল্পনায় শত্রুকে যেখানে পাওয়ার কথা ছিল শত্রু সেখানে না থেকে অন্যত্র ছিল। দ্বিতীয় কারণ হলো অপারেশন স্থানে অধিক লোকের ভীড় থাকা। উল্লেখ করা যেতে পারে অপারেশনটি ছিল একটি জনবহুল হাটে।

প্রথম সমস্যার সমাধান কমান্ডারের দ্রুত করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে সে বড়জোর সহকারী কমান্ডার অথবা রাজনৈতিক কমিশার উপস্থিত থাকলে তার সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে বিলম্ব করা, গেরিলাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোন মতেই উচিত নয়।

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থল ত্যাগ করা এবং নিরাপদ স্থানে চলে এসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

অধিক লোকের ভীড়ের সমস্যার সমাধান যথাযথ কমান্ডের মাধ্যমে করা যেত।

কাজেই প্রথম অবস্থায় শত্রুর অবস্থান স্কাউটের মাধ্যমে জেনে লোকের ভীড়কে ভয় না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্রমণ করা উচিত ছিল। বিলম্ব করার ফলে শত্রু হাতছাড়া হতে পারত, গেরিলা ট্রুপ ডাকাত বলে ধরা পড়তে পারত। এক্ষেত্রে কমান্ডার নিজস্ব ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলেই দ্বিতীয়বার শত্রুকে যখন যথাস্থানে পাওয়া গেল তখন জনৈক গেরিলা কমান্ডারের নির্দেশের অপেক্ষা না করেই আক্রমণ করে। এই গেরিলার সক্রিয়তা না থাকলে হয়ত শত্রু হাতছাড়া হতো।

○ মূল কথা হল যে কোন অবস্থাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে দোদুল্যমানতা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। দোদুল্যমানতা দেখা দিলেই ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করা উচিত।

○ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে ট্রুপ সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষত্রেও কমান্ডার এবং সহকারী কমান্ডারের নির্দেশ দিতে ব্যর্থতাই এর কারণ।

কমান্ডারের উচিত ছিল আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে উচু গলায় কমান্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গেরিলাদের শত্রুর দোকান এবং ‘রাইসমিল’ সার্চ করতে বলা। অধিকন্তু কমান্ড যথাযথভাবে দিতে পারলে শত্রুকে জীবিত অবস্থায় আটক করে টাকা আদায় করা সম্ভব হতো। কিন্তু যথাযথ কমান্ডের অভাবে এটা সম্ভব হয়নি। কমান্ডারের পরিবর্তে সহকারী কমান্ডার এ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার ‘অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান কেন্দ্রীয় কাজ’ এ নির্দেশ ভুলে গিয়েছিলেন।

দোকান এবং মিলের সার্চের দায়িত্ব পূর্বেই গেরিলাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়, গেরিলারাও তা করতে ব্যর্থ হয়।

সামগ্রিকভাবে ট্রুপ তার কেন্দ্রীয় কাজকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেনি।

○ যথাযথ নির্দেশ প্রদান করতে না পারায় এবং অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত আক্রমণ করায় জনৈক গেরিলা অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক বুলেট খরচ করেন।

যেখানে ১টি বুলেটও প্রয়োজন হতো না সেখানে ৩৫টি বুলেট খরচ করেন। এটা সম্পূর্ণরূপে মিতব্যয়িতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশের পরিপন্থী। কেন্দ্রীয় কমিটি একটি বুলেটও অপ্রয়োজনীয়ভাবে নষ্ট করতে নিষেধ করেছে।

○ এছাড়া জনৈক কমরেড অপ্রয়োজনীয়ভাবে নির্দেশ ছাড়া একটি বুলেট নষ্ট করেন এবং আসার পথ আরো একটি বুলেট নষ্ট করার পদক্ষেপ নেন।

কিন্তু জনৈক গেরিলার নির্দেশে তা থেকে বিরত হন। ফেরার পথে যেহেতু জনগণ কোন বাধার সৃষ্টি করেননি সেহেতু কোনরকম শব্দ করা অপ্রয়োজনীয়। এরূপ করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। শব্দ লক্ষ্য করে শত্রু আমাদের অনুসরণ করতে পারে। তাই ফেরার পথে (Retreat) যথাসম্ভব নিঃশব্দে চলে আসা উচিত। এমন কি কোন আলাপ-আলোচনাও করা উচিত নয়; ভুলত্রুটি সম্পর্কেও আলোচনা করা উচিত নয়। নিরাপদ স্থানে এসে একত্রে বসে ভুলত্রুটি পর্যালোচনা এবং অন্যান্য বিষয় আলোচনা করা উচিত।

কমান্ডারের নির্দেশ ছাড়া এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বুলেট খরচ করার অর্থ হচ্ছে অস্ত্রের উপর বেশী প্রাধান্য দেওয়া অথবা রোমাঞ্চের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। যুদ্ধক্ষেত্রে এ দুটোই মারাত্মক ক্ষতিকর।

অধিকন্তু উক্ত গেরিলার নিকটস্থ স্টেনগান প্রথম অবস্থায় যখন কাজ করছিল না তখন সে ঘাবড়িয়ে যায় যদিও স্টেনগান চালনার ব্যাপারে তার ট্রেনিং ছিল।

যুদ্ধক্ষেত্রে ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অর্থ হলো নিজেদের বিপদ ডেকে আনা। এজন্য মাথা সবসময় ঠাণ্ডা রাখা প্রয়োজন। ম্যাগাজিনের স্প্রিং ঢিলে হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এটা ঠিকভাবে কাজ করে না (এজন্য ম্যাগাজিনের বুলেট কাজের সময় ছাড়া অন্য সময় খুলে রাখা উচিত)। অনেক সময় বোল্টও ঠিকভাবে কাজ করে না। এ ধরনের অসুবিধার ক্ষেত্রে মাথা ঠাণ্ডা রেখে দ্রুত ম্যাগাজিন বদলানো উচিত এবং বোল্ট আবার টানা প্রয়োজন। এজন্য মনের দিক থেকে তৈরী থাকতে হবে। কিন্তু অস্ত্রের উপর বেশী প্রাধান্য দিলে কখনোই এটা করা সম্ভব হবে না বরং মাথা বিগড়ে যাবে।

○ পরিকল্পনায় নৌকায় যাওয়ার সময় নির্ণয় করা হয়নি। যার ফলে ট্রুপকে নৌকায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এ ব্যাপারে তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।

○ এলাকার প্রথম অপারেশন এবং জাতীয় শত্রু সাফল্যজনকভাবে খতম, গেরিলাদের সময়মত উপস্থিত হওয়া, স্কাউটের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন, ঘটনাস্থলে বক্তৃতা, শ্লোগানের মাধ্যমে উপস্থিত জনগণকে পার্টির নেতৃত্ব ও বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত করা, ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া এগুলো হচ্ছে এ অপারেশনের ভাল দিক।

কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়া, অধিক এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বুলেট খরচ হওয়ায় এ অপারেশনে আমাদের ক্ষতির দিক প্রধান।

►◄

অপর একটি হামলার জন্য দুটি স্টেনগানসহ গেরিলা, গাইড ও স্কাউট নিয়ে একটি কমান্ডো ট্রুপ গঠন করা হয়। অপারেশনটি শহরের উপরে এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কার্যক্ষেত্রে কমান্ডোরা সাফল্যজনকভাবে হামলা করে। কিন্তু স্টেন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে গুলি বের হলেও ব্রাশ হয়নি। প্রথম কমান্ডোর এ অসুবিধা ঘটায় প্রথম কমান্ডো ঘাবড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় কমান্ডো স্টেন নিয়ে হামলা করে কিন্তু তার স্টেনে মোটেও গুলি বেরুচ্ছে না দেখে প্রথম কমান্ডো আরো ঘাবড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা ছিল কমান্ডোদের অস্ত্রের দখল না থাকা, কৌশল পূর্ণাঙ্গরূপে না জানায় তারা ঘাবড়িয়ে যায়। তাদের উচিত ছিল ম্যাগজিন পরিবর্তন করা, বোল্ট বার বার টানা, সেফটিকেস ঠিকভাবে সেট করা।

○ সৌভাগ্যবশতঃ প্রথম পর্যায়েই শত্রু খতম হয়ে যায়। কিন্তু কমান্ডোদের মনে সন্দেহ থাকায় তারা পার্টির নেতৃত্ব ও পার্টির নামে শ্লোগান দিতে ব্যর্থ হয়।

○ এ অপারেশনে দুটি হাতবোমা নিক্ষেপ করতে নির্দেশ ছিল কিন্তু একটি হাতবোমা নিক্ষেপের পর তা ফাটেনি। দ্বিতীয়টি নিক্ষেপ করতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ব্যর্থ হয়। হাতবোমা বিস্ফোরণ না হওয়ার কারণ ড্যাম্প পড়ে যাওয়া। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ অপারেশেনে ব্যবহৃত হাতবোমা দু’একদিন পূর্বে তৈরী করা এবং ভালভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে নেওয়্যা প্রয়োজন।

○ এ অপারেশনের গাইড অপারেশনের পরে কিছুটা ভীত হয়ে পড়ে। যার ফলে নির্দিষ্ট পথে কমান্ডোদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও সে তা করেনি। সে কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে এবং কমান্ডোদের অপরিচিত ও অস্বাভাবিক পথে নিয়ে যায়। এ পথে এভাবে চলা যে কোন মুহুর্তে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারত এবং কমান্ডোদের এ পথ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিশেষ অবস্থায় নিজ দায়িত্বে সরে পড়তে হলে কমান্ডোরা বিপদে পড়ত।

এক্ষেত্রে গাইড নিয়োগের ব্যাপারে সাহসী ও অভিজ্ঞ কর্মী নিয়োগ করা প্রয়োজন।

○ এ অপারেশনে সামগ্রিক ভুল হচ্ছে অপারেশনের পরবর্তী অবস্থা পরিকল্পনাকালে গভীরভাবে চিন্তা না করা।

শহর এলাকায় শত্রু শক্তিশালী, এজন্য তারা সেখানে দ্রুত যোগাযোগ করা, শক্তি বৃদ্ধি করা, কার্ফু দেওয়া, তল্লাসী চালানো ইত্যাদি করতে পারে। কিন্তু এ অপারেশনে এদিকগুলি গভীরভাবে চিন্তা করা হয়নি। চিন্তা না করার একটা কারণ ছিল স্থানীয় প্রশাসনযন্ত্রের শত্রুর উপর তীব্র ঘৃণা, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও, ঊর্ধতন প্রশাসনযন্ত্র দ্রুত যোগাযোগ করে অতিরিক্ত শক্তি নিয়োগ করে এবং কার্ফু জারী, ব্যাপক তল্লাসী চালানো ও ধরপাকড় করতে সক্ষম হয় (এতে আমাদের সতর্কতার কারণে যদিও ক্ষতি হয়নি)।

○ এজন্য শহর এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের বেলায় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কাগজপত্র, অস্ত্র আগেই নিরাপদ স্থানে সরানো উচিত। কিছুটা প্রকাশিত কর্মীদের বাইরে পাঠনো উচিত এবং অপারেশন ট্রুপের আশ্রয়স্থল শহরের উপকন্ঠে করা উচিত। অস্ত্র বহনে অসুবিধা হলে শহরেই নিরাপদ আশ্রয়স্থানে মাটির নীচে রাখা উচিত, একান্ত অসুবিধা হলে পানিতে রেখে দেওয়া। এজন্য অপারেশনের পূর্বেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে থানা এবং মহকুমা পর্যায়ের শহরগুলোতে (যেখানে শত্রুর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত) অবশ্যই এ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। বড় শহরে ব্যাপকভাবে না হলেও নির্দিষ্ট এলাকায় কার্ফু দিতে পারে, তল্লাসী চালাতে পারে। সে এলাকা থেকে নিরাপদ দূরবর্তী এলাকায় আশ্রয়স্থান এবং অস্ত্র, কাগজপত্র রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।

○ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে ভাল, দক্ষ ও সাহসী গেরিলাদের নিয়োগ করা উচিত। দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন অস্ত্রের ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন।

○ শহরে কমান্ডো হামলা করে জাতীয় শত্রু খতম করা সুবিধাজনক। অপারেশন স্থান (একটি বা দুটি) ঠিক করে তার কাছাকাছি (দুই/তিন মিনিটের পথ) অস্থায়ী আশ্রয়স্থান ঠিক করা যেখানে কমান্ডোরা প্রস্তুতি নিয়ে সাময়িকভাবে অবস্থান করবে। স্কাউট এবং প্রয়োজন হলে গাইড নিয়োগ করা। এ ধরণের হামলায় স্কাউটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হয়। কমান্ডোদের খুব সাহসী হতে হবে। এ প্রক্রিয়া রাস্তার উপর চলমান অবস্থায়ও করা যায়। নির্দিষ্ট পথের নিশ্চিত খবর স্কাউট দিবে। তার উপর ভিত্তি করেই চলমান অবস্থায় কমান্ডোরা হামলা করবে। শত্রু কমান্ডোদের অপরিচিত হলে আগেই তা চিনিয়ে নিতে হবে। অপরিচিত স্থানে রাস্তা-ঘাট, আশ্রয়স্থল ভালভাবে চিনিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

এ ধরণের হামলায় রিভলবার, চাদর মুড়ি দিয়ে স্টেনগান, চাকু ব্যবহার করা যায়। তবে বড় অস্ত্রসহ (স্টেনগান) অধিক সময় (পাঁচ মিনিটের বেশী) কমান্ডোদের লোকালয়ে অবস্থান করা উচিত নয়।

নোটঃ

১। উদ্ধৃতি, পৃঃ—২৫৮, সাংগঠনিক কার্য প্রসঙ্গে দলিল