সিরাজ সিকদার রচনাঃ বিশেষ সামরিক অঞ্চলের আওতাধীন সেক্টর কমান্ডারদের সাথে বৈঠক শেষে প্রদত্ত সিদ্ধান্তসমূহ

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭৩-এর মাঝামাঝি

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪


 

পিডিএফ

[৭৩-এর বর্ষাকালীন আক্রমণের পূর্বে বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর এবং মুন্সিগঞ্জ জেলাকে নিয়ে বিশেষ সামরিক অঞ্চল গঠন করা হয়েছিল। এই সেক্টর কমান্ডারদের সাথে বৈঠক শেষে ’৭৩-এর মাঝামাঝিতে এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল

—সিপিএমএলএম বাংলাদেশ]

১। এ বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণ ও সশস্ত্র সংগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছেঃ

▬ গ্রামসমূহ জাতীয় শত্রু মুক্ত করা।

▬ ব্যাপক প্রচার চালানো।

▬ ব্যাপক সংগঠন গড়ে তোলা।

▬ অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান।

▬ বাজার ফাঁড়ি শেষ পর্যন্ত কয়েকটি থানা শহর দখল করে ছেড়ে দেওয়া। বড় রকমের যুদ্ধ, শত্রু পরাজিত করা এবারকার লক্ষ্য নয়।

২। এ রণনৈতিক আক্রমণ চালাবার সময়—

▬ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোন ফাঁক না রেখে বিকাশ করতে হবে। ফাঁক থাকলে তা পূরণ করতে হবে।

▬ আশ্রয়স্থল গড়ে তুলতে হবে, অসংগঠিত থাকলে তা সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

▬ বিভিন্ন অঞ্চলের গেরিলারা যাতে একত্র হতে পারে তার সমস্যার সমাধান করতে হবে।

▬ রণনৈতিক এলাকায় কাজ বিকাশে সাহায্য (কর্মী, অস্ত্র, অর্থ দিয়ে) করে যেতে হবে, যাতে শীতকালীন আত্মরক্ষার সময় ঐ সকল অঞ্চলকে পশ্চাদভূমি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

▬ নৌ গেরিলা গড়ে তুলতে হবে।

▬ আন্তঃআঞ্চলিক ভাল যোগাযোগের জন্য বেতার ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

৩। প্রচার ব্যবস্থাকে অতিমাত্রায় জোরদার করতে হবে। সশস্ত্র প্রচার টিমকে অতিমাত্রায় সক্রিয় করতে হবে।

পুলিশ, বিডিআর, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, রক্ষীবাহিনীর মাঝেও ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। এ প্রচারের উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা, নিষ্ক্রিয় করা, আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধ করা।

৪। ব্যাপকভাবে সার্বিক আক্রমণ শুরু করতে হবে।

জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করতে হবে [জাতীয় শত্রু খতমের জটিল অপারেশনের জন্য উচ্চস্তরের অনুমতি লাগবে], ছোট ফাঁড়ি, বাজার, কয়েকটি থানা দখল করতে হবে, এম্বুশ চালাতে হবে (এর জন্য উচ্চস্তরের অনুমতি লাগবে)।

গেরিলাদের ট্রেইন করার জন্য যে সকল অবস্থান আমরা দখল করব না সে সকল এলাকায় তৎপরতা চালানো। এ বিষয় দেখতে হবে, যে সকল শত্রু অবস্থান দখল করা হবে তাতে যেন চাপ না আসে।

ট্রেইন পর্ব সম্পন্ন করে দুর্বল শত্রু অবস্থান দখল করা।

ট্রেইন করা প্রয়োজন, আবার ট্রেইনকালে শত্রু অবস্থান দৃঢ় হয়, ফলে তা দখল করা ব্যহত হয়; এ দ্বন্দ্ব উপরে বর্ণিত উপায়ে সমাধান করা।

৫। সার্বিক রণনৈতিক আক্রমণ শুরু করার জন্য—

▬ গেরিলা গ্রুপ গঠন।

▬ অস্ত্র বন্টন (পরীক্ষিত না হলে পরীক্ষা করে)।

▬ ট্রেইন করা।

▬ যানবাহনের ব্যবস্থা করা।

▬ যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন। কুরিয়ারের ব্যবস্থা করা।

▬ নেতৃত্বের কেন্দ্র স্থাপন করা।

▬ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

৬। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা।

▬ জাতীয় শত্রুর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।

▬ শাস্তি, জরিমানা আদায় করা।

▬ দখলকৃত দ্রব্য বিক্রয় করা।

▬ বাজার, শহর দখল করা।

▬ কর্মী, সহানুভূতিশীল, সমর্থক, আত্মসমর্পণকারী শত্রুদের নিকট থেকে নিয়মিত চাঁদা নেওয়া।

▬ জনগণের নিকট থেকে চাঁদা নেওয়া।

৭। জনগণের প্রতি সকল অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহবান জানানোঃ

▬ জমা নেওয়া।

▬ অপারেশন করে দখল করা।

৮। শাস্তিসমূহ প্রচার টিমের মাধ্যমে জানানো।

কেবলমাত্র জনগণ কর্তৃক চরমভাবে ঘৃণিতদের ব্যতীত অন্যান্যদের আত্মসমর্পণ গ্রহণ, তাদের বিষয়ে জনগণকে জানানো। আত্মসমর্পণকারীদের নিকট থেকে অর্থ এবং অন্যান্য চাঁদা নেওয়া।

৯। গেরিলা কোম্পানী গড়ে তোলা।

বাহিনী ফর্মেশন

কোম্পানীর মানুষের সংখ্যাঃ

প্রতি গেরিলাগ্রুপ—৫/৯ জন।

প্রতি প্লাটুন— ৫/৯x৩ = ১৫/২৭ জন।

প্রতি কোম্পানী—১৫/২৭x৩ = ৪৫/৮১ জন।

কোম্পানীর অস্ত্রঃ

প্রতি গেরিলা গ্রুপ—৩টা বা বেশি ৩০৩, ১টা এসএলআর বা জি-৩

প্রতি প্লাটুন—১টা স্টেইন।

প্রতি কোম্পানী—১টা এলএমজি, ১টা রিভলভার বা পিস্তল।

সর্বমোট অস্ত্রঃ

১। এলএমজি – ১টা

২। রিভলভার বা পিস্তল – ১টা

৩। স্টেইন – ১টা

৪। এসএলআর  বা জি-৩ – ৯টা।

৫। ৩০৩ – ২৭টা।

১০। গেরিলাদের ট্রেইন করার পদ্ধতিঃ

▬ অনভিজ্ঞ অঞ্চল থেকে কমান্ডার ও কমিশার এনে অভিজ্ঞদের সাথে রেখে অপারেশন করানো।

▬ অস্ত্র বিষয়ক ট্রেনিং দেওয়া।

▬ সামরিক দলিল পড়ানো।

▬ অনুসন্ধান, পরিকল্পনা, বাস্তব খতম, সারসংকলন, অপারেশন সিট তৈরী প্রভৃতি শিখানো। কিছুদিন পর পর তাদেরকে ডেকে এনে বা নিজে গিয়ে সারসংকলন করা, গাইড করা।

১১। বর্তমানে প্লাটুন কমান্ডার হতে পারে এরূপ গেরিলাদের লস ঠেকানো।

১২। পাঠ্যঃ

গণযুদ্ধ, পার্টির সামরিক দলিল সকল কমান্ডার-কমিশারদের পড়ানো।

এগুলো ছাড়া সেক্টর, সাব সেক্টর, কোম্পানী কমান্ডারদের ছয়টি সামরিক প্রবন্ধের চীনা বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা, জাপবিরোধী গেরিলা যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা পড়ানো।

১৩। সর্বোচ্চ পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে গেরিলাদের উদ্দেশ্যে সার্কুলার প্রদান করা।

১৪। নিয়মিত গেরিলা দল গড়ে তোলা।

১৫। আন্তঃঅঞ্চল সমন্বিত কাজ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা, আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা।

১৬। রাজনৈতিকঃ

ফ্রন্টের নেতৃত্বে সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ করছে ইহা প্রচার করা।

সর্বহারা পার্টি ফ্রন্টে যোগদান করেছে, অন্যান্যদের যোগদানের আহবান জানানো।

ফ্রন্টের নেতৃত্বকে জনপ্রিয় করা।

দেশীয় চমৎকার বিপ্লবী পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিনের দালাল জাসদ।

জাসদের সমর্থক ও জনগণকে আমাদের প্রতি বিরূপ না করে জাসদের মুখোশ উন্মোচন করা।

▬ তারা পূর্ববাংলার স্বাধীনতা মেনে নিচ্ছে অর্থাৎ ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দাসত্ব, বিশেষ করে ভারতের মার্কিন অংশের দাসত্ব মেনে নিতে চায়।

▬ বিদেশী, বিশেষ করে মার্কিন সহায়তায় পূর্ববাংলা দখল করে তাকে মার্কিনের উপনিবেশে রূপান্তর করতে তারা ইচ্ছুক।

▬ তারা সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করে।

▬ তাদের অধীনে দেশের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।

এভাবে জনমত গড়ে তোলা।

দলিল তৈরী করা