সিরাজ সিকদার রচনাঃ কর্মীস্বল্পতা ও তা সমাধানের কতিপয় উপায়

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির ১ম কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের একটি দলিল। পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

প্রায় সকল অঞ্চলেই একই সমস্যা—কর্মীর তীব্র স্বল্পতা, পরিচালকগণ বারবার উচ্চস্তরে কর্মী চান।

পরিচালক বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে যোগাযোগ করেন, ক্লাশ নেন। ফলে এক এক স্থানে যোগাযোগ অনেকদিন পরে হয়, ফলে কর্মীদের উন্নত করা এবং তাদের ভালভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয় না।

কর্মীস্বল্পতা থাকায় নতুন যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়ে উঠে না।

এমতাবস্থায় নিম্নলিখিত পয়েন্টসমূহ কার্যকরী করে সমস্যার সমাধান করা যায়।

○ পরিচালক কুরিয়ার রাখবেন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, দলিলপত্র পাঠাবেন, নির্দেশ, কতকগুলো প্রশ্ন যার মাধ্যমে এলাকার অবস্থা জানা যায় তা লিখে পাঠাবেন।

কুরিয়ার এলাকার নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করে কাগজপত্র দিবে, প্রশ্নসমূহের উত্তর ও রিপোর্ট নিয়ে আসবে।

এভাবে পরিচালক যেতে না পারলেও বিভিন্ন এলাকার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকবে এবং কর্মীদের কাজে লাগানো যাবে।

কুরিয়ারের মাধ্যমে নতুন যোগাযোগসমূহও করা যায় (যদি এ কাজের জন্য কর্মী না পাওয়া যায়)।

○ যোগাযোগ কেন্দ্র গড়ে তোলা।

বিভিন্ন এলাকার নেতৃস্থানীয় কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। তারা যোগাযোগ কেন্দ্রে এসে রিপোর্ট করবে।

কোন জরুরী সমস্যা হলেও তারা এসে যোগাযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে। পরিচালক যোগাযোগ কেন্দ্রের জন্য প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময় লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেবে।

○ বিভিন্ন এলাকার নেতৃস্থানীয় কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা।

− পরিচালক বিভিন্ন এলাকার নেতৃস্থানীয় কর্মীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হতে পারেন।

সেখানে উচ্চস্তরের নির্দেশ, প্রেরিত দলিলাদি পাঠ এবং বুঝিয়ে দেওয়া, প্রয়োগের পদ্ধতি নির্ণয় করে দেওয়া, তাদের কাজের পর্যালোচনা করা, ভুল বের করা, সফলতা তুলে ধরা, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করা, বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাশ নেওয়া।

এর মাধ্যমে কর্মীদের মানোন্নয়ন করা যায়।

○ বিভিন্ন এলাকার নেতৃস্থানীয় কর্মী, সম্ভাবনাময় কর্মী, অগ্রসর কর্মীদের দ্রুত উন্নয়নের জন্য বিশেষ ক্লাশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

যে যে বিষয়ে দুর্বল সে বিষয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ক্লাশ নেওয়া।

এ সকল ক্লাশের জন্য সর্বনিম্ন পাঠ্যসূচী প্রণয়ণ করা।

○ বিভিন্ন লাইনে দক্ষদের এ সকল ক্লাশে তাদের দক্ষতা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।

ক্লাশের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে দক্ষ লোকদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো তাদের দক্ষতা শিখিয়ে আসার জন্য।

○ কর্মীস্বল্পতা দূর করার জন্য ব্যাপক সংখ্যক কর্মী সার্বক্ষণিক করা।

পরিচালককে উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক সংখ্যক কর্মীদের সার্বক্ষণিক করতে হবে।

রাজনৈতিকভাবে উন্নত বা স্বাধীনভাবে কাজ চালাতে দক্ষ না হলেও সার্বক্ষণিক করা যায়।

কারণ, অনুশীলন ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা দক্ষ হয়ে উঠবে।

অনুশীলনই যোগ্যতার পরীক্ষাক্ষেত্র। কাজেই অনুশীলনে প্রেরণ করেই সার্বক্ষণিক কর্মীর যোগ্যতা মাপা যায়।

এছাড়া পুরুষ কর্মীরা চলে যেতে চাইলে বা অযোগ্যদের পাঠিয়ে দিতে হলে কোন সমস্যা হয়না, তারা বাড়ীতে যেয়ে উঠতে পারে।

মহিলাদের চলে এলে ফিরে যাওয়া অসুবিধাজনক হয় (যদি না পরিবার সহানুভূতিশীল হয়)। এ কারণে তাদের সার্বক্ষণিক করার পূর্বে অনেক বিবেচনা ও পর্যালোচনা করতে হবে। যোগ্যতা ভালভাবে যাচাই করতে হবে যাতে তাদেরকে বাড়ী পাঠাতে না হয়।

সার্বক্ষণিক কর্মী হতে ইচ্ছুক এরূপ কর্মীদের সাথে পরিচালকের কিছুদিন একসঙ্গে থাকতে পারলে ভাল হয়। তাহলে কর্মীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়।

কারণ, সারা দিন, একাধারে অনেকদিন মানুষ অভিনয় করতে পারে না, তার চরিত্রের দিকসমূহ অবশ্যই প্রকাশ পাবে।

সার্বক্ষণিক করার পূর্বে কেডার ইতিহাস খুব ভালভাবে সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা।

○ সার্বক্ষণিক কর্মীদের সহানুভূতিশীলদের বাসায় রাখার ব্যবস্থা করা যেখানে খাওয়া খরচ লাগবেনা। এরূপ অবস্থা থাকলে সার্বক্ষণিক হওয়ার মান কিছুটা শিথিল করা যায়।

সংগঠনের অর্থে ভরণপোষণ করতে হলে মানদণ্ড কিছুটা শক্ত করা উচিত।

চাকুরী, লজিং ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পারলে মানদণ্ড শিথিল করেও কর্মীদের সার্বক্ষণিক করা যায়।

○ কিছুদিনের জন্য, কয়েক মাসের জন্যও সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুক হলে করা উচিত এবং কাজে লাগানো উচিত।

কারণ, কাজের প্রক্রিয়ায় এদের কেউ কেউ হয়তো স্থায়ীভাবে সার্বক্ষণিক হবে।

○ সার্বক্ষণিক কর্মী ও নিরাপত্তার সমস্যা।

− সার্বক্ষণিক কর্মী শত্রুচর হয়ে সংগঠনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।

− অসতর্কভাবে সংগঠনের গোপনীয়তা প্রকাশ করতে পারে।

− গ্রেফতার হলে অত্যাচারের মুখে গোপনীয়তা ফাঁস করতে পারে।

− সহানুভূতিশীলের বাড়ীতে যৌনসংক্রান্ত ও অন্যান্য (চুরি, ঝগড়াঝাটি ইত্যাদি) সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

− নির্দেশাদি পালন না করা, অর্থ আত্মসাত, চক্র, ষড়যন্ত্র করা, নেতা হতে ইচ্ছুক হওয়া প্রভৃতি সমস্যার সৃষ্টি করা।

− অস্ত্র ও পার্টির অন্যান্য সম্পদ ইত্যাদি দখল করা, ডাকাতি করা।

− অসুস্থ হয়ে পড়া।

○ সার্বক্ষণিক কর্মী বাড়িতে চলে গেলে নিম্নলিখিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

− পার্টি সম্পদ নিয়ে যাওয়া।

− গোপনীয়তা ফাঁস করা।

− শত্রুর চরে রূপান্তরিত হওয়া।

− সংগঠনের নামে কুৎসা রটনা করা ইত্যাদি।

কাজেই এসকল সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত।

এজন্য সার্বক্ষণিক কর্মীদের

− কেডার ইতিহাস দেখা।

− তাদের সংস্পর্শে থেকে চরিত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুধাবন করা।

− অন্যের রিপোর্ট ও কর্মীর নিজের রিপোর্টের উপর বিশ্বাস করে সার্বক্ষণিক না করা।

উপরোক্ত সমস্যাবলীর যথাযথ সমাধান করা এবং পদক্ষেপ গ্রহন করা।

বিশ্বাসঘাতক এবং খারাপ লোকদের সম্পর্কে আমাদের নীতি এবং উদাহারণসমূহ সার্বক্ষণিক এবং কর্মীদের পড়ানো।

○ অনুন্নত নতুন কর্মীদেরকে রাজনৈতিক আলোচনার সহজ উপায় বাতলে দেওয়া, প্রয়োজন হলে দলিল পড়ে শোনাতে বলা (মুখে বলতে অক্ষম হলে), সহজভাবে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনার উপায় শিখিয়ে দেওয়া, কোন কাজ প্রথমে ও পরে করতে হবে তা ঠিক করে দেওয়া।

○ সার্বক্ষণিকদের কাজ তদারক করা। তাদের ভুল-ভ্রান্তি দেখিয়ে দেওয়া, সফলতা তুলে ধরা।

○ সার্বক্ষণিকদের নিয়ে বৈঠক করা, অভিজ্ঞতার বিনিময় করা, ক্লাশ নেওয়া।

এভাবে তাদের উন্নত করা।

○ কর্মীস্বল্পতা দূর করার জন্য পরিচালকদের নিম্নলিখিত ভুল চিন্তাধারা ও কর্মপদ্ধতির সংশোধন করা অপরিহার্য।

○ একতরফাবাদ বিরোধিতা করা।

সার্বক্ষণিক করার সময় পরিচালক শুধু সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুকদের অনুন্নত দিকই দেখেন এবং একে চিরস্থায়ী বলে মনে করেন।

অনুন্নত এবং উন্নত হচ্ছে একটি দ্বন্দ্বের দুটো দিক। নির্দিষ্ট শর্তে অনুন্নতরাই উন্নততে রূপান্তরিত হয়।

অনুন্নতের মাঝে উন্নত নিহিত রয়েছে।

অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার সারসংকলন, অনুশীলন এবং সময়ের ব্যবধানে অনুন্নতরাই উন্নত কর্মীতে রূপান্তরিত হবে। অবশ্য কেউ কেউ ঝরে পড়বে। কাজেই শুধু অনুন্নত দিকই দেখা কিন্তু এর মাঝেই যে উন্নতের সম্ভাবনা বিরাজমান তা না দেখা।

○ শুধু ক্ষতির দিকই দেখা লাভের দিক না দেখা।

সার্বক্ষণিক কর্মীদের নিয়ে যে সকল অসুবিধা হতে পারে এবং ক্ষতি হতে পারে সে দিককেই পরিচালক দেখেন।

কিন্তু ক্ষতি ও অসুবিধার মাঝে লাভ ও সুবিধার দিক রয়েছে।

কারণ সার্বক্ষণিকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ টিকে গেলে এবং উন্নত কর্মী হলে আমাদের ক্ষতির তুলনায় বহু লাভ ও সুবিধা হয়।

উপরন্তু কিছু ক্ষতি ব্যতীত লাভ করা, অসুবিধা ব্যতীত সুবিধা অর্জনের চিন্তা দ্বান্দ্বিকতা বিরোধী।

তবে আমাদের যাতে যথাসম্ভব কম ক্ষতি ও অসুবিধা হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ক্ষতির চিন্তা করে রক্ষণশীল হওয়া হচ্ছে একতরফাবাদ।

○ আপেক্ষিকতাকে অস্বীকার করা, আধিবিদ্যক হওয়া।

অনুন্নত—এ অবস্থা পরিবর্তন সাপেক্ষ এবং অস্থায়ী মনে না করে পরিচালকগণ একে স্থায়ী মনে করেন। ফলে তারা আধিবিদ্যক হন।

অনুন্নত হচ্ছে আপেক্ষিক এবং পরিবর্তনশীল। অনুশীলন-সারসংকলন-অনুশীলন এবং সময়ের ব্যবধানে অনুন্নতরা উন্নত হয়, উন্নতরা আরো উন্নত হয়, অনেক সময় পশ্চাদপদও হয়।

কাজেই পরিচালকদের আধিবিদ্যক দৃষ্টিকোণ পরিহার করতে হবে।

○ বস্তুর বিশেষত্বকে প্রতিফলিত না করা, গতিকে উপলব্ধি না করা।

− কর্মীদের মাঝে অগ্রসর, মাঝারী, পশ্চাদপদ এবং প্রত্যেকের যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা, ভাল ও খারাপ দিক না বুঝা।

এর ফলে অগ্রসরদের খুঁজে বের করা, তাদেরকে আরো অগ্রসর করে সার্বক্ষণিক করা, কর্মীদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজে লাগানো এবং ভাল দিকের সদ্ব্যবহার করা হয় না।

ফলে কর্মীস্বল্পতা সর্বদাই থেকে যায়।

কর্মীদের বিকাশও গতিশীল। কেউ বিকাশের প্রক্রিয়ায় সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুক হয়। পরিচালক বিকাশের এ গতি বুঝে না, তাকে সার্বক্ষণিক করে না। ফলে কর্মীরা পুনরায় পশ্চাদপদ হয়ে যায়।

বিকাশের গতি বুঝতে হবে, অগ্রসরদের আরো অগ্রসর করতে হবে, সাহসের সাথে কর্মীদের সার্বক্ষণিক করতে হবে।

○ বস্তুবাদী হওয়া।

কেডারদের সার্বক্ষণিক করার পূর্বে যথাসম্ভব তার বিভিন্ন দিক যথাযথভাবে মস্তিষ্কে প্রতিফলিত করা।

অন্যের রিপোর্ট, কর্মীর মুখের কথা/লেখার উপর নির্ভর না করা।

ভালো দিকই দেখা, খারাপ দিক না দেখা, আত্মগত কল্পনা করে অনেক কিছু ভাবা যা তার মাঝে আদৌ নেই, ইত্যাদি পরিহার করা।

এজন্য সার্বক্ষণিক হতে ইচ্ছুক কর্মীর সংস্পর্শে থাকা, ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা। অতীত ইতিহাস সংগ্রহ করা।

অতীত ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ অতীতের ভিত্তিতে বর্তমান গড়ে উঠেছে এবং অতীত ও বর্তমানের ভিত্তিতেই ভবিষ্যত গড়ে উঠবে।

কাজেই অতীত এবং বর্তমান যথাযথভাবে প্রতিফলিত করা উচিত।

এর ফলে শত্রুচর, খারাপ লোকদের সার্বক্ষণিক হওয়া ঠেকানো সম্ভব হবে।

○ গোড়ামীবাদ পরিহার করা।

আমাদের অধিকাংশ পরিচালকই উপরোক্ত তত্ত্বসমূহ জানেনে কিন্তু বাস্তব কাজে প্রয়োগ করেন না, কর্মী-স্বল্পতায় ভুগেন।

ইহা তাদের গোড়ামীবাদী ভুল।

কাজেই পরিচালকদের গোড়ামীবাদ পরিহার করতে হবে, তত্ত্বকে বাস্তব অনুশীলনে প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার

স্বল্পতা এবং প্রাচুর্য একটি দ্বন্দ্বের দুটো দিক। নির্দিষ্ট শর্তে স্বল্পতাই প্রাচুর্যে রূপান্তরিত হয়।

এজন্য প্রয়োজন ধৈর্যশীল হয়ে কাজ করা। ঘনবসতিপূর্ণ পূর্ববাংলায় বহু কর্মী পাওয়া সম্ভব হবে, তাদেরকে অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় উন্নত করতে হবে, এভাবে কর্মীস্বল্পতা কাটিয়ে তুলতে হবে।

অবশ্যই নেতৃস্থানীয় ও ভাল কেডার সর্বদাই সংখ্যায় অল্প হবে এবং তাদের অভাব থাকবে।

এ কারণে পরিকল্পিতভাবে ধৈর্যের সাথে এ ধরণের কেডার গড়ে তুলতে হবে এবং এদেরকে যত্ন সহকারে রক্ষা করতে হবে।

পূর্ববাংলা একটি ক্ষুদ্র দেশ, জনবসতি ঘন। এখানে বিপ্লব করার জন্য অল্পসংখ্যক উন্নতমানের কেডারই যথেষ্ট।

এ উন্নত কেডারদের পরিচালনাধীন প্রয়োজন ব্যাপক কার্য পরিচালনায় সক্ষম ব্যাপক সংখ্যক কেডার।

কাজেই সাহসের সাথে কেডার সংগ্রহ করতে হবে। শত্রুচর ও খারাপ লোকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে।

পরিচালকদের এ উদ্দেশ্যে কঠোরভাবে একতরফাবাদ, অধিবিদ্যা, গোড়ামীবাদ পরিহার করতে হবে এবং দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী হতে হবে।

►◄

কতকগুলো মৌলিক ক্ষতির দিক ও অভ্যাসসমূহ

অলসতা, ঢিলেমী, নির্বুদ্ধিতা, নীচুতা, হিংসা, মাতব্বরী, হামবড়াভাব, মেজাজী, যৌন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভ্রষ্টতা, পশ্চাদপদতা, ভীরুতা, দোদুল্যমানতা, বেখেয়ালীপনা, খারাপ ব্যবহার, মিথ্যা বলা, ছেলেমি, বদ অভ্যাসসমূহ, অভিনয়, দু’মুখো, প্রতারণা, ছলচাতুরী, ভাগ্যান্বেষী, আরাম-আয়েসের অভ্যাস, ভাল মানুষ সাজা, সমালোচনা সহ্য করতে না পারা, শিখতে অনিচ্ছুক ও অলসতা, দোষ স্বীকার না করা, বিভিন্ন প্রকার লোভ ও লালসা প্রভৃতি।

নোট

১। মানুষের চরিত্রের মৌলিক দিক ও অভ্যাসসমূহ সুদীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ায় শ্রেণীগত প্রভাবে গড়ে উঠে।

কেডার ইতিহাস, অতীত, বর্তমান, অন্যের রিপোর্ট, মৌখিক ও লিখিত প্রশ্ন, ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ প্রভৃতির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা। অনুসন্ধানপ্রাপ্ত এ সকল তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে চরিত্রের মৌলিক দিক ও অভ্যাসসমূহ বের করতে হবে।

এ দিকসমূহের উপকারী, ক্ষতিকর এবং উপকারী বা ক্ষতিকর কোনটাই নয়—এ তিনভাগে ভাগ করতে হবে।

ক্ষতিকর মৌলিক দিকসমূহ সুদীর্ঘ দিন বজায় থাকবে এবং অনেকদিনের কঠোর ও কষ্টকর প্রচেষ্টার প্রক্রিয়ায় দূর করা সম্ভব।

ক্ষতির দিকসমূহ সুদীর্ঘদিন থাকবে, তার দূর করা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য এবং এগুলো সত্ত্বেও উপকারী দিকসমূহ আমাদের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কতখানি কাজে লাগানো সম্ভব তা বিবেচনা করতে হবে, এর ভিত্তিতে কর্মী সংগ্রহ ও নিয়োগ করতে হবে।

উদাহারণস্বরূপঃ

ক.আতাউরের অনেক ভালো দিক আছে কিন্তু বেখেয়ালীপনা তার চরিত্রের একটা মৌলিক খারাপ দিক।

তাকে অনেক স্থানেই কাজে লাগানো হয়েছিল কিন্তু সে হঠাৎ স্থান ত্যাগ করে। এর ফলে ঐ সকল স্থানের কাজের ক্ষতি হয়।

এ থেকে দেখা যায় তার বিভিন্ন ভাল দিক থাকা সত্ত্বেও একটি মৌলিক খারাপ দিকের জন্য ভাল দিকগুলো ব্যবহার করা যায় না।

এ কারণে তাকে অন্য কর্মীর সাথে অস্থায়ীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে যাতে সে হঠাৎ স্থান ত্যাগ করলেও এলাকা নেতৃত্বহীন না হয় এবং ক্ষতি না হয়।

কোন কোন কর্মীর অনেক ভাল দিক থাকা সত্ত্বেও কোন কোন মৌলিক খারাপ দিকের জন্য বর্তমানে তাদেরকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

অনেক সময় এ ধরণের কর্মী কাজে লাগিয়ে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে