সিরাজ সিকদার রচনাঃ প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সপ্তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইশতেহার

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ সম্ভবতঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সপ্তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সাফল্যজনকভাবে তার কাজ সম্পন্ন করে।

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।

সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্তের মাঝে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।

১। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা করা হয় এবং অনুমোদন করা হয়।

সিদ্ধান্তের মাঝে যে সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি তা বাস্তবায়নের জন্য আহবান জানানো হয়।

যে সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি তা নিম্নরূপঃ

ক) ১নং সিদ্ধান্ত

সামরিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হচ্ছে কেন্দ্রীয় কাজ।

এ সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে হবে।

খ) ২নং সিদ্ধান্ত

শুদ্ধি অভিযান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে হবে।

গ) ৩নং সিদ্ধান্ত

ইহা এখনও সংঘটিত হয়নি। কাজেই এ সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

এ সিদ্ধান্ত (এর ফলে ভারত পূর্ববাংলায় সৈন্য পাঠাতে অসুবিধায় পড়বে) নিম্নরূপ হবেঃ (এর ফলে ভারত পূর্ববাংলায় ব্যাপকভাবে সামরিক শক্তি নিয়োগে অসুবিধায় পড়বে)।

ঘ) ১০নং সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে হবে।

ঙ) ১২নং সিদ্ধান্ত

সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনী এবং জলিল-তাহেরদের সম্পর্কে বক্তব্য তৈরী করা স্থগিত থাকবে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।

▬ জনগণের জন্য আহবান তৈরী করা যার মাঝে ঐক্যফ্রন্টের আহবান থাকবে।

▬ ‘মুসলিম বাংলা’ প্রসঙ্গে বক্তব্য তৈরী করা।

▬ পার্টির ইতিহাস প্রণয়ন করা।

▬ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর বক্তব্য তৈরী করা।

▬ কমপক্ষে ২ মাসে একবার সামরিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ইশতেহার প্রকাশ করা।

প্রভৃতি সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা।

২। জাতীয় শত্রু খতম সংক্রান্তঃ

▬ জাতীয় শত্রু খতমের পূর্বে জনমত সৃষ্টি করা। এর উদ্দেশ্যে জাতীয় শত্রুর অপরাধনামা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত শাস্তি জনগণের মধ্যে প্রচার করা।

এর ফলে শত্রু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। জনগণ তাদের শত্রুদের চিনতে পারবে। খতমের পক্ষে বা প্রদত্ত শাস্তির পক্ষে জনমত সৃষ্টি হবে। শত্রু বাহিনী ভাল লোকদের খতম করে আমাদের কাঁধে দোষ চাপাতে পারবে না।

বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাস, ব্যক্তিগত কারণে খতম প্রভৃতি থেকে আমাদের কাজের পার্থক্য নির্ণিত হবে। কিছু শত্রু পালাবে, কিছু আত্মসমর্পণ করবে, কিছু নিষ্ক্রিয় হবে, কিছুসংখ্যক তৎপরতা চালিয়ে যাবে। ফলে শত্রু সংখ্যা কমবে। শত্রু পালিয়ে গেলেও আক্ষেপ করার কিছু নেই। কারণ এতে কাজের বাঁধা দূর হয় এবং ভবিষ্যতে তাকে পাওয়া যাবে।

▬ শত্রুদের শাস্তি নিম্নভাবে ভাগ করতে হবে।

ক) খতম খ) গ্রেফতার গ) জরিমানা ঘ) সতর্ক করা ঙ) সম্পত্তির অংশ বা গোটা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা চ) দৃষ্টি রাখা

সর্বনিম্ন শাস্তি দিয়ে শুরু করতে হবে। জনগণ কর্তৃক ঘৃণীত, বহু অপরাধ করেছে, খতম ব্যতীত অন্যান্য শাস্তি প্রদান সত্ত্বেও শোধরায়নি এরূপ শত্রদের খতম করা এবং ব্যাপক প্রচার করা।

ফলে অনেক শত্রুই ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করবে, পলায়ন করবে বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। এ ধরণের খতম আমরা উদাহারণ হিসেবে তুলে ধরব।

▬ খতমের পূর্বে পুংখানুপুংখ বিচার-বিবেচনা করা এবং উচ্চস্তর কর্তৃক অনুমোদিত করে নেওয়া।

▬ লঘু অপরাধে খতম করলে খতমের সংখ্যা ব্যাপক হবে; শত্রুর প্রতিরোধ বৃদ্ধি পাবে। খতমের তাৎপর্য কমে যাবে। কমরেডদের সহনশীলতা ও বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা জন্মাবে না। ফলে দ্বিমত পোষণকারী, লঘু অপরাধ করেছে এইরূপ কমরেড, গেরিলা ও জনগণকে খতম করতে পারে। এভাবে কর্মীদের মাঝে সমরবাদের উদ্ভব হতে পারে।

▬ খতম যথাসম্ভব কম করা।

▬ বন্দীদের অত্যাচার না করা। বন্দীদের বা খতমের পূর্বে শত্রুদের নিকট থেকে খবর আদায় করা, স্বীকারোক্ত আদায় করার জন্য অথবা নিছক নির্যাতনের খাতিরে নির্যাতন না করা।

▬ সাধারণ পদ্ধতিতে খতম করা (অত্যাচার করে নয়)।

▬ শত্রুর উপর দৈহিক নির্যাতন, খতমে অস্বাভাবিক পদ্ধতির ব্যবহার শত্রুর হিংস্রতা ও প্রতিরোধ বাড়ায়, আত্মসমর্পণের ইচ্ছা হ্রাস পায়।

উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ কার্যকরী করার অর্থ হচ্ছে শত্রুকে ছিন্নভিন্ন করার লক্ষ্য অর্জন করা।

৩। খতমের পরবর্তী পদক্ষেপসমূহঃ

▬ ব্যাপক প্রচার করা।

▬ জনগণকে পার্টির সশস্ত্র ও গণসংগঠনে সংগঠিত করা।

▬ শত্রুকে ভীত-সন্ত্রস্ত করা।

উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহ ব্যতীত খতম হবে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসমূলক কাজ। ইহা বিপ্লবের উপকারে আসবে না। পার্টি, সশস্ত্র বাহিনী ও গণসংগঠনে জনগণকে সংগঠিত করা এবং শত্রু সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করার পথে জাতীয় শত্রুরা প্রতিবন্ধক, তাই তাদের উৎখাত প্রয়োজন। শুধু খতমের স্বার্থেই নয়—এটা সর্বদা মনে রাখতে হবে।

৪। আমাদের গেরিলা গ্রুপসমূহকে একই সাথে সশস্ত্র প্রচার টিম হিসেবে গুরুত্বসহকারে ব্যবহার করা।

তারা চিকা, পোস্টার, লিফলেটিং করবে।

▬ রাতে গ্রামে হ্যান্ডমাইক, চুঙ্গা প্রভৃতি দিয়ে বক্তৃতার মাধ্যমে পার্টির লাইন প্রচার করা। পুলিশ ক্যাম্পের নিকট হাটে-বাজারেও প্রচার করা।

▬ প্রচার টিম সশস্ত্র হবে।

পূর্বাহ্নেই অনুসন্ধান করা, স্কাউট রাখা, শত্রুর এম্বুশ সম্পর্কে সতর্ক থাকা।

▬ সমগ্র পূর্ববাংলা ব্যাপী গ্রামাঞ্চলে এইরূপ তৎপরতা চালানো।

▬ প্রচার টিম সুযোগ পেলে জাতীয় শত্রু খতম করবে।

▬ প্রয়োজনীয় আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া।

▬ ইলেকশন তৎপরতার প্রাক্কালে ট্রাফিক পুলিশ ও অন্যান্য উৎস থেকে হ্যান্ডমাইক সংগ্রহ করা, প্রয়োজন হলে ক্রয় করা।

৫। অপারেশনের কমান্ডার হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক কমান্ডারদের একটি অপারেশনে ব্যবহার না করা। এক অপারেশনে যথাসম্ভব এক অঞ্চলের গেরিলাদেরই নেওয়া।

৬। বিভিন্ন রাজনৈতিক, দলগত, গোষ্ঠীগত এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ বজায় রাখা। এর ফলে তাদের বিষয়ে অবগত হওয়া এবং তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মতামত জানানো সম্ভব হবে।

▬ এ ধরণের সংযোগমূলক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের না পাঠানো। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা।

৭। বিপ্লবী সংবাদ প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, বিভিন্ন এলাকায় সামরিক তৎপরতা এবং জনসাধারণকে জানানো যায় এইরূপ ঘটনাবলী “সংবাদ প্রতিষ্ঠানের জন্য” এই শিরোনামায় পাঠানো।

বিপ্লবী সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সংবাদ প্রতিনিধি সংগ্রহ করা।

৮। আমাদের নীতি হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণীর ঐক্য। ইহা পার্টির মধ্যকার বিপ্লবীদের এবং বাইরের বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে সম্ভব। এ কারণে আমরা ঐক্যের সপক্ষে, বিভেদপন্থীবাদের বিপক্ষে।

আমাদের এই ঐক্যের লাইন আমাদের কর্মীদের মাঝে, সর্বহারা বিপ্লবী ও জনগণের মাঝে প্রচার করা।

৯। পূর্ববাংলার সমগ্র জাতিকেও ঐকবদ্ধ করা আমাদের একটি নীতি। বিভিন্ন দেশপ্রেমিক শ্রেণী, স্তর, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত সংখ্যালঘু, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদেরকে জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করা।

১০। খারাপ লোক, শত্রুচরদের সাথে বিভেদের নীতিতে দৃঢ় থাকা।

১১। পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীদেরকে পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ করা ও তা বজায় রাখা আমাদের একটি মহান বিপ্লবী দায়িত্ব।

একইভাবে পূর্ববাংলার সমগ্র জাতিকে জাতীয় মুক্তিফ্রন্টে ঐক্যবদ্ধ করা আমাদের একটি মহান বিপ্লবী দায়িত্ব।

১২। ব্যুরোর অধীন অঞ্চল, এর অধীন উপঅঞ্চল, এর অধীন এলাকা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম—এ হবে সাংগঠনিক স্তরসমূহ।

১৩। নিম্নলিখিত মানদণ্ডসমূহ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনঃ

১) সার্বক্ষণিক কর্মী সর্বনিম্ন ৫ জন।

২) আঞ্চলিক কমিটি/যোগ্য পরিচালক থাকতে হবে।

৩) কমপক্ষে অর্ধেক অঞ্চলে কাজ থাকতে হবে। প্রায় থানায় সার্বক্ষণিক বা সক্রিয় কর্মী থাকতে হবে।

৪) অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে।

৫) অঞ্চলের সকল স্থানে প্রচার থাকতে হবে।

৬) জাতীয় শত্রু খতমের আত্মগত অবস্থা থাকবে।

৭) শ্রমিক-কৃষকের মাঝে কাজ থাকবে।

৮) উচ্চস্তর এসে কাজ পরিচালনা করতে পারে এইরূপ আশ্রয়স্থল থাকবে।

৯) যোগাযোগ কেন্দ্র ও কুরিয়ার থাকতে হবে।

১০) পার্টি বিরোধী তৎপরতা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

অঞ্চলসমূহকে নিম্নলিখিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনের চেষ্টা চালাতে হবেঃ

ক) গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা।

খ) বিস্তীর্ণ গেরিলা অঞ্চল গড়ে তোলা।

গ) বিচ্ছিন্ন গেরিলা অঞ্চলসমূহের মাঝে সংযোগ সাধন করা।

ঘ) সার্বক্ষণিক নিয়মিত গেরিলা গ্রুপ গঠন করা।

ঙ) আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করা এবং তা রাখার ব্যবস্থা করা।

চ) অঞ্চলের সকল স্থানে পার্টি সংগঠন গড়ে তোলা।

ছ) স্থানীয় ভাল সার্বক্ষণিক কর্মী বের করা।

জ) উচ্চস্তরকে অর্থ প্রদান করা।

ঝ) ছাপানোর ব্যাপারে স্বাবলম্বী হওয়া।

ঞ) চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা।

ট) নারীদের মাঝে কাজ থাকবে।

ঠ) বয়স্ক লোকদের মাঝে কাজ থাকবে।

ড) পরিবহনের ব্যবস্থা থাকবে।

ঢ) বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে।

ণ) ঘাঁটি এলাকা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থাকবে।

১৪। উপ অঞ্চলের মানদণ্ডঃ

ক) সর্বনিম্ন সার্বক্ষণিক কর্মী ১ জন।

খ) অন্যান্য মানদণ্ড অঞ্চলের অনুরূপ।

১৫। কমিটির বৈঠকে নিয়মিত সমালোচনা-আত্মসমালোচনা করা।

১৬। জনগণের চাঁদা নির্ধারিত করে দেওয়া। তারা সামর্থ অনুযায়ী চাঁদা প্রদান করবেন। সামর্থ্যের কম চাঁদা প্রদান করলে বাকী অংশ লিখে রাখা এবং আদায় হবে বলে জানানো।

১৭। রণনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে কর্মী প্রেরণ করা।

১৮। গ্রামে থাকা যায় এরূপ পেশা কর্মীদেরকে শিক্ষা দেওয়া।

যেমন—ফেরিওয়ালা, মুটে, হোমিও ডাক্তার, গ্রাম্য ডাক্তারী, কাঠমিস্ত্রি, ছাতি মেরামতকারী ইত্যাদি।

১৯। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে উদ্যোগহীন, অলস, ঢিলা, বোকা লোক সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।

২০। সার্বক্ষণিক কর্মীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ পার্টিতে জমা দেওয়া।

২১। কর্মী ও সহানুভূতিশীলদের নিজস্ব পরিচিত জনের তালিকা দিতে বলা এবং তার মধ্য থেকে ভাল লোকদের লাইন দিতে বলা।

নিজ কর্মক্ষেত্রের বাইরে অন্যত্র পরিচিত জন থাকলে (যাদের লাইন দেওয়া যায় বা হয়েছে) তা উচ্চস্তরে পাঠানো।

২২। মতাদর্শগতভাবে দৃঢ় কর্মীদের উচিত তাদের দেশপ্রেমিক আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা (সম্ভব হলে)।

২৩। যে সকল কর্মী প্রকাশিত বা ফেরার বা গুরুত্বপূর্ণ তারা অবশ্যই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের বাসস্থানে যাবে না বা অসতর্কভাবে দেখা করবে না। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রশ্নে দেশপ্রেমিক পরিচিতজনকে বৈরী না করা। কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি না দেখানো।

২৪। বর্তমানে ঐক্যের লাইন সঠিক। অতীতে নয়া সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লাইন সঠিক ছিল। কারণ অতীতে তাদের সাথে সাংগঠনিক ঐক্যে গেলে আমরা তাদের দ্বারা গ্রাস হতাম। তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাবকে সংগ্রাম করে আমাদের সঠিক লাইনের প্রতিষ্ঠা কঠিন হতো।

২৫। দলিল সম্পর্কিত মতামত নিম্নভিত্তিতে দিতে হবেঃ

▬ দলিলে সমস্যা ও প্রশ্নাবলীর সমাধান রয়েছে কিনা।

▬ দলিলের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কিনা।

▬ দলিলের কাঠামো কিরূপ।

▬ বিবিধ।

২৬। নতুন রিক্রুটদেরকে ও সহানুভূতিশীলদেরকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা উদাহারণসহ পড়ানো।

২৭। কেন্দ্রীয় কাজ প্রসঙ্গেঃ

প্রায় সকল পরিচালক/আহবায়কই কেন্দ্রীয় কাজ কার্যকরী করার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থেকেছে। ফলে কেন্দ্রীয় কাজ ব্যাহত হয়েছে।

এ কারণে পরিচালক/আহবায়ক নিজ নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কাজের চরিত্রানুযায়ী দক্ষ ও যোগ্যদের নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় কাজ বাস্তবায়ন গ্রুপ’ গঠন করবে, অন্যান্য কাজ পরিচালনের জন্য অন্যান্য কাজ পরিচালনা গ্রুপ গঠন করবে।

কর্মী স্বল্প হলে শেষের কাজ করার জন্য কমরেড নিয়োগ।

প্রথম ক্ষেত্রে কর্মী কম হলে নিজেই পরিচালনা করা। পরিচালক/আহবায়ক অর্থাৎ কেন্দ্র যদি কেন্দ্রীয় কাজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যস্ত থাকে তবেই সত্যিকারভাবে কেন্দ্রীয় কাজ আঁকড়ে ধরা এবং কাজ যথার্থই কেন্দ্রীয় কাজের মর্যাদা পায়।

২৮। প্রতিটি অঞ্চলেরই সুযোগ ও সামর্থ যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে না। এর সদ্ব্যবহার করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের গণআন্দোলনের পথ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয় কার্যকরী করার জন্য সকল কর্মী, সহানুভূতিশীল এবং জনগণকে লাগাতে হবে।

২৯। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

পূর্ববাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে চারভাগে ভাগ করা যায়।

ভারতের দালাল অংশ।

সোভিয়েটের দালাল অংশ।

মার্কিনের দালাল অংশ।

জাতীয় গণতন্ত্রী অংশ।

আওয়ামী লীগকেও অনুরূপ চারভাগে ভাগ করা যায়।

আওয়ামী লীগস্থ জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশ খুবই দুর্বল এবং অসংগঠিত। পূর্ববাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা আওয়ামী লীগস্থ ভারতের দালাল অংশের হাতে। তারা বাকী তিন অংশকে দাবিয়ে রেখে ক্ষমতা বহাল রাখতে চাচ্ছে।

মার্কিনের দালাল অংশ একইভাবে বাকী তিন অংশকে দাবিয়ে রেখে পূর্ববাংলা দখল করতে চাচ্ছে।

মার্কিনের দালালরা সোভিয়েটের দালালদের উৎখাত করে শত্রু কমিয়ে ভারতের দালাল ও জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশকে দাবাবার চেষ্টা করছে।

সোভিয়েটের দালাল অংশও একইভাবে বাকি তিন অংশকে দাবিয়ে রেখে ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে।

একইভাবে সোভিয়েটের দালালরা মার্কিনের দালালদের উৎখাত করে শত্রু কমিয়ে ভারতের দালাল ও জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

একইভাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশও বাকী তিন অংশকে দাবিয়ে রেখে ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম চালাচ্ছে।

ভারতের দালাল অংশ মার্কিন ও সোভিয়েটের দালালদের কামড়া-কামড়িকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে। তারা মার্কিনীদের খুশী করা ও সোভিয়েটের দালালদের দাবিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সোভিয়েটের দালালদের পিটুনি দিচ্ছে।

একইভাবে তারা মার্কিনের দালালদের এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক শক্তির কিছু অংশকে পিটিয়েছে।

পূর্ববাংলার জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশে রয়েছে পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা, কৃষক-শ্রমিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া, জাতীয় বুর্জোয়া, জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু অর্থাৎ সমগ্র জাতি।

সর্বহারা বিপ্লবীদেরকে নিজেদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা, সর্বহারা শ্রেণীকে ঐক্যবদ্ধ করা ও তা বজায় রাখা, কৃষক-শ্রমিক, ক্ষুদে বুর্জোয়া, জাতীয় বুর্জোয়াদের জাতীয় মুক্তিফ্রন্টে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

এভাবে সর্বহারা শ্রেণীকে জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে।

এ জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশকে দাবিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভারত, সোভিয়েট এবং মার্কিনের দালালদের ভূমিকা একরকম এবং পরস্পর সহযোগিতা করে।

এ জাতীয় গণতান্ত্রিক অংশকেই বিশ্বের সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণ সমর্থন করবে।

৩০। যে সকল এলাকায় ব্যাপক জনগণকে সংগঠিত করার জন্য কর্মীর অভাব রয়েছে সে সকল অঞ্চলে সাংগঠনিক টিম (সাংগঠনিক ও সামরিক সংগঠন করার মত কর্মী) তৈরী করে প্রেরণ করা। তাদেরকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণকে সংগঠতি করার দায়িত্ব প্রদান করা। তাদের সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া।

এরা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে নির্দিষ্ট অঞ্চলের পার্টি, গেরিলা ও গণসংগঠন তৈরী করে নির্দিষ্ট কমিটিকে বুঝিয়ে দেবে।

ঐ এলাকার কাজ শেষ হলে টিমকে অন্য এলাকায় পাঠাতে হবে।

এভাবে কর্মীস্বল্পতা থাকলেও ব্যাপক এলাকায় সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব।

এ ধরনের কাজ বর্তমানেই অনেক অঞ্চলে জরুরী হয়ে পড়ছে।

এই ধরনের দক্ষ টিম বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে তোলা ও কাজে লাগানো উচিত।

৩১। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় কর্মীরা কতখানি বাস্তবায়িত করতে পারবে তাও কঠোরভাবে বিবেচনা করা উচিত।

৩২। যৌন বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করা যাতে যৌন বিকৃতি ও যৌন অপরাধ দূর করা ও এড়ানো যায়।

সম্ভাব্য বিষয়

▬ সমকামীতা

▬ ধর্ষণ

▬ গণিকাবৃত্তি

▬ ব্যবহারগত বিকৃতি

▬ প্রাক-বিবাহ সম্পর্ক

▬ গর্ভধারণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ

▬ বৈবাহিক নিয়ম

▬ প্রেম ও বিবাহের বৈধতা

▬ যৌনের জৈবিক কারণসমূহ

উপরোক্ত বিষয়সমূহের উপর দলিল প্রণয়ন।

৩৩। কেডার ইতিহাসে নিম্ন পয়েন্ট যুক্ত হবে।

▬ কোন এলাকায় কতদূর প্রকাশিত তা জানানো।

৩৪। যোগাযোগ দেওয়ার সময় উক্ত যোগাযোগের বাড়ীতে/নিকটে জাতীয় শত্রু রয়েছে কিনা তা জানানো।

৩৫। গ্রেফতারকৃত বা শত্রু নিয়ন্ত্রণে থাকা কমরেড বেরিয়ে আসার পর অথবা বহুদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর যোগাযোগ হলে তাকে যাচাই করে কাজে লাগানো উচিত।

৩৬। জনৈক কর্মীর বিষয়ে কর্মীদের নিকট মতামত চাওয়া। (পরিশিষ্ট—১)

৩৭। অযোগ্য লোকদের নিয়ে কোন প্রকার কমিটি গঠন না করা।

প্রয়োজন হলে বিভিন্ন স্তরে শুধু পরিচালক দায়িত্ব পালন করবে। ইহা সর্বস্তরে (কেন্দ্রীয় কমিটিতেও) প্রযোজ্য। পরিচালক তার সুবিধামত পরামর্শদাতা, সাহায্যকারী গ্রুপ/ব্যক্তি নিয়োগ করবে।

পরিচালক এদের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করতেও পারেন, নাও পারেন।

৩৮। যতদিন শ্রেণী থাকবে ততদিন সর্বহারার বুর্জোয়ায় রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ কারণে কমরেডদের বুর্জোয়া দিক এবং বুর্জোয়ায় রূপান্তরিত হওয়ার শর্তসমূহের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংগ্রাম করতে হবে।

একে অপরকে সহায়তা ও যাচাই করতে হবে।

এভাবে একতরফাবাদ (নিজে এবং কর্মীরা বুর্জোয়ায় রূপান্তরিত হবে না এ চিন্তা) বিরোধিতা করতে হবে।

৩৯। পূর্ববাংলার বিপ্লবী সংবাদ প্রতিষ্ঠান এবং পূর্ববাংলার সর্বহারার পার্টির নিরাপত্তা বিভাগ গঠন করা হবে। এ সংক্রান্ত দলিলাদি অনুমোদিত হলো।

৪০। জনগণের বিভিন্ন অংশকে জাতীয় মুক্তির জন্য জাতীয় মুক্তিফ্রন্টে যোগদানের আহবান জানানো।

সামরিক ও আধা-সামরিক বক্তিদের জন্য পৃথকভাবে আহবান জানানো।

৪১। পার্টিতে যোগদানকারীদের প্রতি অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহবান জানানো।

৪২। ঐক্যের বক্তব্য মৌলিকভাবে ঠিক। ভাষাগত ও কাঠামোগত উন্নতি করে গ্রহণ করা হচ্ছে। ঐক্যের লাইন বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিলিপিসহ বিভিন্ন গ্রুপকে আনুষ্ঠানিক পত্র প্রদান।

৪৩। অঞ্চলের মানদণ্ড অর্জনের জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। যে সকল অঞ্চল ইতিমধ্যেই মানদণ্ড অর্জন করেছে তাদেরকে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করার আহবান জানানো হচ্ছে।

৪৪। সমর্থক ও নিরপেক্ষ সামন্তবাদী, বুর্জোয়া ও আমলাদের সামর্থানুযায়ী চাঁদা ধার্য করে তা আদায় করা। দুর্নীতিপরায়ণ ক্ষুদে বুর্জোয়াদের প্রতিও ইহা প্রযোজ্য।

৪৫। কয়েকটি প্রশ্ন, সামরিক দলিল (সংশোধনীসহ), সাংগঠনিক কতিপয় পয়েন্ট, কর্মীস্বল্পতা দূর করার উপায় গৃহীত হল।

৪৬। কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে প্রধান কাজ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়ে কমরেড নিয়োগ করা।

৪৭। এখন থেকেই শ্রমের বিভাগ করা যাতে কর্মের উৎকর্ষতা বাড়ে।

৪৮। চক্রের অবশিষ্টাংশ প্রমাণিত সরকারী চরে পরিণত হয়েছে এবং তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে ধ্বংস করতে হবে।

৪৯। জনগণের তথাকথিত নির্বাচনের প্রতি কোন আস্থা ও উৎসাহ নেই। আওয়ামী লীগ রক্ষী বাহিনী মোতায়েন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য পার্টির প্রার্থীদের অপহরণ, হুমকি প্রদর্শন, বন্দুকের ডগায় ভোট গ্রহণ প্রভৃতির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রহসন করছে। নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা বজায় রাখার একটি প্রহসন মাত্র।

৫০। নির্বাচনের কাল থেকে বর্ষার সূচনা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুতুল সরকার রণনৈতিক আক্রমণের স্তরে থাকবে। অর্থাৎ রক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা গ্রামসমূহ পরিষ্কার করার প্রচেষ্টা চালাবে।

এ আক্রমণের রূপ হচ্ছে ঘেরাও দমন, খোঁজ কর ধ্বংস কর ইত্যাদি। এ অবস্থায় আমাদের নীতি হচ্ছে রণনৈতিক প্রতিরক্ষা বা সংরক্ষণ অর্থাৎ নিজেদের লোক ও অস্ত্র টিকিয়ে রাখা, ঘেরাও দমন ব্যর্থ করা, কাজকে সংঘবদ্ধ করা। এ সময় বিকাশ কম হবে।

বর্ষাকালে বাংলাদেশ পুতুল সরকার রণনৈতিক প্রতিরক্ষা বা সংরক্ষণে যাবে অর্থাৎ তার লাভসমূহকে সুসংবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাবে, সশস্ত্র বাহিনীসমূহ অভিযান শেষ করবে, পাহারা, চেকপোস্ট ব্যবস্থা করবে, আওয়ামী লীগ দালালদের পুনর্বাসন করবে, তাদের সংগঠিত ও সশস্ত্র করবে, প্রশাসন ব্যবস্থা চালু, সুসংবদ্ধ করবে।

এ সময় আমরা রণনৈতিক আক্রমণের স্তরে পৌঁছাব। বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে হবে, গেরিলা পার্টি বিকাশ করতে হবে।

বর্ষা শেষ হলেই এ স্তর শেষ হবে। বাংলাদেশ পুতুল সরকার পুনরায় শুকনার সময় তার রণনৈতিক আক্রমণ শুরু করবে।

আমাদেরকেও তখন রণনৈতিক আত্মরক্ষা বা সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ পার্টি, গেরিলা ও অস্ত্র রক্ষা করতে হবে, ঘেরাও দমন ভাঙ্গতে হবে।

কাজেই নির্বাচনের পর বাংলাদেশ পুতুল সরকারের রণনৈতিক আক্রমণ স্তিমিত হতে থাকবে এবং রণনৈতিক প্রতিরক্ষার স্তরে প্রবেশ করবে। বর্ষাকালেই আক্রমণে অর্জিত ফলসমূহকে সুসংবদ্ধ করতে হবে।

আমাদেরকেও ধীরে ধীরে রণনৈতিক আক্রমণের স্তরে বিকাশ লাভ করতে হবে যা চূড়ান্ত রূপ পাবে বর্ষাকালে।

রণনীতি সম্পর্কিত ধারণা পরিচালকদের একান্ত প্রয়োজন যাতে তারা বিভিন্ন রণনৈতিক স্তরের উপযোগী সামরিক, সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, মতাদর্শগত কাজ নির্ণয় করা ও তা কার্যকরী করতে পারে।

বর্ষাকালীন রণনৈতিক আক্রমণের জন্য সর্বস্তর অবশ্যই প্রস্তুতি গ্রহণ ও তা সম্পন্ন করবে।

৫১। কর্মসূচী সংশোধিত আকারে গৃহীত হলো।

৫২। হিসেব পরবর্তী সভায় পেশ করা হবে