সিরাজ সিকদার রচনাঃ প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইশতেহার

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইশতেহার পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ৯ ডিসেম্বর ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ৬ই ডিসেম্বর শুরু হয় এবং সাফল্যজনকভাবে ৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭২ সাল শেষ হয়।

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।

সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সিদ্বান্তসমূহ দেশীয় আন্তর্জাতিক অবস্থা, সংগঠনের রাজনৈতিক, সামরিক, মতাদর্শগত, সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয় এবং নিন্মলিখিত সিদ্বান্ত গৃহীত হয়।

১) সামরিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হচ্ছে কেন্দ্রীয় কাজ—এ সিদ্বান্ত সঠিক বলে গৃহীত হয়। ইহা বর্তমানেও কেন্দ্রীয় কাজ। এ সিদ্বান্ত বাস্তবায়িত করার পক্ষে কেন্দ্রীয় কাজ, তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং অপারেশন সংক্রান্ত কতিপয় গাইড লাইন দলিল খুবই সহায়ক হয়েছে।

এ সিদ্বান্ত বাস্তবায়িত করার জন্য সংগঠনের সর্বস্তরে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ সিদ্বান্ত বাস্তবায়িত করতে লেগে থাকতে হবে। আঞ্চলিক ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বকে সম্ভাবনাময় অঞ্চলে কাজ আঁকড়ে ধরতে হবে। নিজ পরিচালনায় সিদ্বান্ত বাস্তবায়িত করতে হবে, বিন্দু ভেঙ্গে প্রবেশ করতে হবে, অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে বিভিন্ন ইউনিটকে পরিচালনা করতে হবে।

জাতীয় শত্রু খতমের মাধ্যমে গেরিলা যুদ্ধ সূচনার প্রস্তাব বরিশাল জেলায় কার্যকরী হয়েছে এবং অন্যান্য অঞ্চলে শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে। এ উদ্দেশ্যে নেতৃত্বস্থানীয় কর্মীদের দায়িত্ব পুনর্বন্টন ও অন্যান্য সাংগঠনিক পদক্ষেপ সঠিক হয়েছে।

২) মতাদর্শগত ও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে চক্র বিরোধী সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযান খুবই ভাল ফল দিয়েছে, কর্মীদের চেতনা উন্নত করেছে। এর সাথে গোড়ামীবাদ বিরোধী সংগ্রাম যুক্ত করার সিদ্বান্ত কার্যকরী করার জন্য গোড়ামীবাদ বিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ উদ্দেশ্যে গোড়ামীবাদ বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পাঠ্যসূচী অধ্যয়ন করা এবং এর আলোকে সর্বস্তরে গোড়ামীবাদ বিরোধী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

গোড়ামীবাদ বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পাঠ্যসূচী অনুমোদিত হলো।

৩) পূর্ববাংলায় সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তাদের দালালদের সাথে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দালালদের দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ‘মুসলিম বাংলা’, ‘যুক্ত বাংলা’ দাবী উত্থাপন করছে, সাম্প্রদায়িক রায়ট, দাঙ্গা বাধাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

মার্কিনের দালাল রব গ্রুপ (বর্তমানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) প্রাক্তন সামরিক কর্মচারী, মুক্তি বাহিনী, সামরিক বাহিনীর অসন্তুষ্ট অংশের সাথে সংযোগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র, শ্রমিক এবং জনগণকে নিজেদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীরা অর্থনৈতিক ঋণ, রিলিফ প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করছে।

তারা সামরিক কু-দেতা, রায়ট-দাঙ্গা, ছাত্র-শ্রমিক অসন্তোষ, অর্থনৈতিক চাপ, পাক-ভারত যুদ্ধ (এর ফলে ভারত পূর্ববাংলায় সৈন্য পাঠাতে অসুবিধায় পড়বে) প্রভৃতি একযোগে বা একাধিক বিষয় ব্যবহার করে পূর্ববাংলায় নিজের উপনিবেশ স্থাপনের চক্রান্ত চালাচ্ছে।

সামরিক কু-দেতা চুর্ণ করার জন্য ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপ ও তাদের দালাল পুতুল সরকারের অনুগত বাহিনীর হস্তক্ষেপ, শহরসমূহে সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং পরিণতি হিসেবে গ্রামসমূহ শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

শত্রুদের মধ্যে কামড়াকামড়ির ফলে উদ্ভূত এ অবস্থায় কি কি করতে হবে তার পরিকল্পনা প্রতিটি স্তর করে রাখবেঃ

  • ব্যাপক জাতীয় শত্রুর তালিকা প্রণয়ন।
  • ব্যাপক জাতীয় শত্রু খতম ও নির্মূল।
  • স্থানীয় অস্ত্র দখল।
  • থানাসমূহ দখল ও নিরস্ত্রীকরণ।
  • অর্থ সমস্যার সমাধান।
  • গেরিলা ও প্রতিরোধ চালাবার প্রস্তুতি গ্রহণ।
  • কর্মী একত্রীকরণ।
  • উচ্চস্তর, সমস্তর ও নিম্নস্তরের মধ্যেকার যোগাযোগের সমস্যা।

নির্বাচন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের পক্ষে নির্বাচনে পরাজিত হবার সম্ভাবনাই অধিক। এ অবস্থায় এদের দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হবে।

কিন্তু ইতিহাসের মঞ্চ থেকে বিদায় নেবার পূর্বে তারা মুজিববাদের বিরুদ্ধে প্রচার করে মুজিববাদীদের মুখোশ উন্মোচনে সহায়তা করছে।

কাজেই শত্রুদের মধ্যকার সশস্ত্র সংঘর্ষ আমাদের চমৎকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সশস্ত্র সংঘর্ষ না হলেও আমাদের সাধারণ কাজের লাইন অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে।

এক্ষেত্রে আমাদের লাভ হল শত্রু নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে নিজেদের মুখোশ উন্মোচিত করছে এবং নিজেদের দুর্বল করছে।

শ্রেণীসংগ্রাম মানুষের ইচ্ছামুক্ত বস্তুগত নিয়ম। ইহাই তার প্রমাণ।

৪) দলিল প্রকাশ ও বিনিময় প্রসঙ্গেঃ

  • কোন দলিল বিতরণের পূর্বে ছাপানো কপি যথাযথ স্তর কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
  • এক স্তরের প্রকাশিত দলিল পরবর্তী উচ্চস্তর কর্তৃক অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে।
  • পুনরায় মুদ্রিত করতে হলে পরবর্তী উচ্চস্তরের অনুমোদন লাগবে।
  • সকল স্তর প্রকাশিত দলিলের প্রতিলিপি কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট পাঠাবে।
  • প্রতিস্তর দলিল পরবর্তী উচ্চস্তরে পাঠাবে। উচ্চস্তর যোগ্য বিবেচনা করলে অন্যান্য অঞ্চলে পাঠাবে। এক অঞ্চলে প্রকাশিত দলিল অন্য অঞ্চলে পাঠাবে না (উচ্চস্তরের অনুমতি ব্যতীত)।
  • কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি বা পার্টি নেতৃত্বের প্রণীত দলিল সর্বস্তরে বিরতরণ ও প্রচার করা যাবে।
  • এক অঞ্চলের দলিল অন্য অঞ্চলে পুনর্মুদ্রণ ও প্রচার বা পাঠ করতে হলে পরবর্তী উচ্চস্তরের অনুমতি লাগবে।
  • এক অঞ্চলের দলিল অন্য অঞ্চলে যেভাবেই হোক গেলে তা কিভাবে পাওয়া গেল তা এবং দলিল পরিচালক পরবরতী উচ্চস্তরে পাঠিয়ে দেবে।
  • ব্যক্তিগত উদ্যোগে (নিজের অর্থে) যে কেউ দলিল প্রণয়ণ করতে এবং মুদ্রণ করতে পারে। কর্মীরা তা পড়বে কিনা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্বান্ত লাগবে।

৫) এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে কর্মী বদলী, বিনিময়, দ্রব্যাদি আনা-নেওয়া ইত্যাদি যথাযথ স্তরের মাধ্যমে করতে হবে। যথাযথ স্তর ব্যতীত কারো নির্দেশে পত্রের কারণে উপরোক্ত কাজ না করা।

বিশেষ অবস্থায় আন্ত-আঞ্চলিক সহযোগিতা করতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চস্তরকে অবহিত করতে হবে।

৬) যথাযথ স্তরের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন কর্মী অন্য অঞ্চলে কাজ করতে গেলে সেখানকার পরিচালক কাজ করার অনুমতি প্রদান করবেন না।

তাকে যথাযথ স্তরের লিখিত বক্তব্য আনতে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উচ্চস্তরে জানাতে হবে।

বিভিন্ন স্তরের এক কেন্দ্রকে শক্তিশালী করা, ভুল বক্তব্য, চক্রের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়া, পুনরায় ছাপা হওয়া প্রভৃতি ঠেকানো, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ঠেকানোর জন্য উপরোক্ত (৪, ৫, ৬) সিদ্ধান্তসমূহ সহায়ক হবে।

৭) প্রকাশ্য ও গণসংগঠনের কাজ, গোপন পার্টি ও সশস্ত্র সংগ্রামের কাজঃ

পার্টি পরিচিতি গোপন রেখে প্রকাশ্য, আধা প্রকাশ্য কাজ করা যায়। এর উদ্দেশ্য হবে কর্মী সংগ্রহ করা, শত্রুর সাথে জনগণের দ্বন্দ্ব তীব্রতর করা, শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে তীব্রতর করা।

গণসংগঠন

প্রধান ধরণের গণসংগঠন হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী।

প্রকাশ্য, আধা প্রকাশ্য এবং গণসংগঠনের কাজের উদ্দেশ্য হবে সশস্ত্র সংগ্রামকে সহায়তা করা, কর্মী সংগ্রহ করা।

শত্রু এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত কাজঃ

প্রতিক্রিয়াশীলরা যে সকল ট্রেড ইউনিয়ন দখল করেছে সেখানে পালটা ট্রেড ইউনিয়ন বা কেন্দ্রীয় ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন গড়ে না তোলা। এ সকল ক্ষেত্রে পার্টি পরিচিতি গোপন রেখে অনুপ্রবেশ করা এবং পূর্বে উল্লিখিত লক্ষ্য বাস্তবায়িত করা।

যেখানে প্রতিক্রিয়াশীলরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করেনি সেখানে পার্টির কর্মীদের নেতৃত্বে (পার্টি পরিচিতি গোপন রেখে) ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা।

স্বতন্ত্রভাবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে অসুবিধা হলে কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হওয়া।

প্রকাশ্য ও গণসংগঠনের কাজকে গোপন পার্টি কাজ ও সশস্ত্র সংগ্রামের সাথে যথাযথভাবে সমন্বিত করতে হবে, গোপন কাজ ও সশস্ত্র সংগ্রাম হবে প্রধান কাজের পদ্ধতি।

মুক্ত অঞ্চলে প্রকাশ্য গণসংগঠন করতে হবে।

আধা মুক্ত অঞ্চলে বা অস্থায়ী মুক্তাঞ্চলে প্রকাশ্য, আধা প্রকাশ্য ও গোপন সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থী ও অন্যান্যদের নিয়ন্ত্রিত গণসংগঠন, এমনকি প্রতিক্রিয়াশীল গণ এবং আধা-সামরিক, সামরিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ করা, সেখান থেকে সংগৃহীত কর্মীদের সেখানেই রেখে দেওয়ার মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করতে হবে।

এ ধরনের অনুপ্রবেশের কৌশল খুবই সহায়ক হচ্ছে। ইহা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রকাশ্য-আধা প্রকাশ্য ও গণসংগঠনে কাজ করা এবং বিভিন্ন গণসংগঠনে অনুপ্রবেশ করার কাজ হচ্ছে পার্টি ও সশস্ত্র সংগ্রামের সহায়ক এবং অধীন।

পার্টির প্রধান ধরণের সংগ্রাম হচ্ছে সশস্ত্র সংগ্রাম।

পার্টির কাজ ও সশস্ত্র সংগ্রামের মাঝে পার্টি কাজ প্রধান।

পার্টি কাজ, সশস্ত্র সংগ্রাম এবং প্রকাশ্য ও গণসংগঠনের কাজের মধ্যে প্রথমটি প্রধান, দ্বিতীয়টি গৌণ।

পার্টি কাজকে যারা গৌণ করে বা বাদ দেয় সশস্ত্র সংগ্রামকে প্রাধান্য দেয় তারা চে-বাদী।

পার্টি ও সশস্ত্র সংগ্রামকে যারা গৌণ করে বা বাদ দেয়, প্রকাশ্য ও গণসংগঠনের কাজকে প্রাধান্য দেয় তারা দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদী।

যারা পার্টি ও সশস্ত্র সংগ্রামকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে প্রকাশ্য ও গণসংগঠনের কাজ বাদ দিয়ে দেয় তারা বামপন্থী সুবিধাবাদী।

গোপন পার্টি কাজ ও সশস্ত্র সংগ্রামকে প্রাধান্য দিতে হবে, প্রকাশ্য কাজের সুযোগ ব্যবহার করতে হবে, বিভিন্ন গণসংগঠনে ঢুকে পড়তে হবে, গণসংগঠনে কাজ করতে হবে।

শত্রু অঞ্চলে পার্টি কাজ গোপনভাবে করতে হবে, মুক্ত অঞ্চলে এবং পার্টির অধীন সেনাবাহিনীর মাঝে পার্টির কাজ প্রকাশ্যে করতে হবে।

পূর্ববাংলা ক্ষদ্র এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ, অর্থনৈতিকভাবে সমবিকশিত, সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ (ভারত ও চীনের সামাজিক অবস্থা থেকে এ সকল কারণে পৃথক), এ কারণে এখানে কোন রাজনৈতিক ঘটনা দ্রুত অধিকাংশ জনগণকে সমাবেশিত করে। ফলে গণসংগ্রাম অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

এ কারণেই ছাত্ররা সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এ কারণেই শক্তিশালী ছাত্র ও অন্যান্য গণসংগঠন গড়ে তোলা উচিত যাতে গণঅভ্যুত্থানকে সশস্ত্র সংগ্রামের সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৮) বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী প্রসঙ্গেঃ

সম্প্রতি মতিন-আলাউদ্দিন নয়া সংশোধনবাদীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মতিন-আলাউদ্দিনদের বিরুদ্ধে তাদের অপর অংশ কর্তৃক যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তার অনেকগুলো…পূর্বেই আমরা করেছি। এভাবে আমাদের বক্তব্য সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে।

তাদের বিভক্তিকরণ তাদের দেউলিয়াত্ব দ্রুততর করেছে।

হক-তোয়াহার সাধারণ কর্মীরা নেতৃত্বের প্রতি চরমভাবে আস্থা হারিয়েছে। সাধারণ কর্মীরা তাদেরকে বর্জন করছে এবং বিপ্লবী লাইনে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কাজী-রণো, দেবেন-বাসাররা বিভ্রান্তিকর রাজনীতিক মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে।

মনিসিং-মোজাফফর সংশোধনবাদীরা নিজেদের সরকার বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

৯) চাকমা, মগসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের সংগ্রাম সমর্থন করা, তাদের উপর পরিচালিত জাতীয় নিপীড়ন বন্ধ করা, তাদের জাতীয় নিপীড়ন বিরোধী সংগ্রামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা সম্বলিত চিকা, পোস্টার মারা।

১০) আঞ্চলিক পরিচালকগণ একটি ডাইরীতে তার আওতাধীন কর্মী-সহানুভূতিশীল সমর্থকদের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে গৃহীত তথ্যাদি লিখে রাখবে যাতে ভবিষ্যতে কেডারদের জানা সহজ হয়।

১১) প্রতি ২ মাসে কমপক্ষে একবার সার্বক্ষণিক কর্মী হওয়ার আবেদন করার জন্য আহবান জানানো, যাতে সার্বক্ষণিক কর্মী হতে ইচ্ছুক কর্মীদের খোঁজ পাওয়া যায় এবং তাদের থেকে যোগাযোগ বের করা যায়।

১২) নিম্নলিখিত দলিলসমূহ প্রকাশ করাঃ

  • “পূর্ববাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন” ধরনের জনগণের জন্য আহবান তৈরী করা।
  • সামরিক-আধাসামরিক বাহিনী এবং জলিল-তাহেরদের ভূমিকা সম্পর্কে বক্তব্য তৈরী করা।
  • মুসলিম বাংলা প্রসঙ্গে বক্তব্য তৈরী করা।
  • সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা এবং সামরিক অভিজ্ঞতার সারসংকলন করে দুটো দলিল প্রণয়ন করা।
  • পার্টির ইতিহাস প্রণয়ন করা।
  • আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর একটি দলিল প্রণয়ন করা।
  • একটি সামরিক রাজনৈতিক ইশতেহার প্রতি দু’মাসে কমপক্ষে একবার কেন্দ্র কর্তৃক জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা।

১৩) উচ্চস্তরে প্রেরিত দ্রব্য তালিকাসহ প্রেরণ করতে হবে। প্রাপ্ত দ্রব্যের সাথে তালিকা মিলিয়ে দেখে প্রাপক তালিকায় ‘বুঝে পেলাম’ লিখে স্বাক্ষর দেবে। প্রেরক এ কাগজ বুঝে নেবে।

এর ফলে দ্রব্যাদি আত্মসাৎ হবে না।

১৪) প্রকাশিত দলিলঃ

  • রব গ্রুপ পুনর্মুদ্রনের সময় হেডিং-এ রব গ্রুপ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) লিখতে হবে। এ দলিলে রব গ্রুপের মুখোশ চমৎকারভাবে উন্মোচিত হয়েছে। ইহা তাদের কর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করছে, সাচ্চা কর্মীদেরকে আমাদের সাথে যোগদানে প্রেরণা দিচ্ছে, গোঁড়াদের মাঝে ক্রোধের সঞ্চার করছে। ইহার ব্যাপক বিতরণ প্রয়োজন।
  • বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কয়েকটি দলিল”-এ বর্তমান পরিস্থিতি পরিষ্কার করা হয়েছে। কতিপয় সংশোধনীসহ দলিলটি গৃহীত হয়।
  • “সমাজতন্ত্র, শ্রেণী সংগ্রাম ও সামাজিক বিপ্লব প্রসঙ্গে” দলিলে উপরোক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করছে, জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাথে যুক্ত বিভিন্ন প্রশ্নের বিশদ ও সহজবোধ্য বিশ্লেষণ রয়েছে। ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চমৎকার দলিল। এ সম্পর্কে বিভিন্ন সংশোধনী ও প্রস্তাব গৃহীত হল।
  • কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক সংশোধিত কর্মসূচি পাঠ, পর্যালোচনা এবং এর উপর মন্তব্য পেশ করার জন্য সর্বস্তরে প্রেরণ করা।

১৫) কেন্দ্রীয় কমিটির পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের দাম্পত্য জীবন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পার্টির মাঝে সীমাবদ্ধ পরিসরে কার্যকরী করতে হবে।

১৬) বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সাথে যুক্ত আন্তরিক বিপ্লবীদের মতাদর্শগত ও সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা গৃহীত হলো। ইহা সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে মতামত সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করা হবে।

১৭) সভাপতি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশাদি, সিদ্ধান্ত, প্রকাশিত দলিলাদি অনুমোদিত হলো।

১৮) পঞ্চম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ইশতেহার ও সিদ্ধান্ত বর্তমান সভায় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনসহ গৃহীত হলো।

সভায় সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটির সপ্তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের তারিখ নির্ধারণ করে সভার কাজ সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয়