সিরাজ সিকদার রচনা: নির্বাচন প্রসঙ্গে

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার



পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা প্রকাশ অক্টোবর ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীলেনিনবাদীমাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪


পিডিএফ

পূর্ববাংলার মীরজাফর ছয় পাহাড়ের দালাল আওয়ামী লীগ তথাকথিত গণপ্রতিনিধিদের দ্বারা ফ্যাসিবাদী জাতীয় বিশ্বাসঘাতক দলিল তথাকথিত শাসনতন্ত্র অনুমোদনের পর গণপরিষদ ভেঙ্গে দেওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মসুচী গ্রহণ করেছে।

গণপরিষদ ভেঙ্গে দেওয়া ও নির্বাচন প্রদানের কারণ—

ছয় পাহাড়ের দালাল আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী গণ অসন্তোষ প্রচণ্ড রোষে ফেটে পড়ছে এবং সশস্ত্র সংগ্রামের পর্যায়ে দ্রুত উন্নীত হচ্ছে।

এ নির্বাচনের ভাওতা দিয়ে জনগণকে পার্লামেন্টারী নির্বাচনের কানাগলি পথে আটকে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

● আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টরা দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

দ্রুত নির্বাচন না দিলে তারা মোটেই ভোট পাবে না। এ ভয়ে তারা নির্বাচন দিচ্ছে।

● মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ প্রভৃতি এ দ্বন্দ্বের কারণে বিভক্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

আওয়ামী লীগের মাঝে এ দ্বন্দ্বের প্রধান দিক হচ্ছে সোভিয়েট-ভারতের দালালরা।

এরা পূর্ববাংলাকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে বজায় রাখা এবং সোভিয়েটের লুন্ঠন ক্ষেত্র হিসেবে টিকিয়ে রাখতে চায়।

পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের মধ্যকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের দালালরা পূর্ববাংলাকে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশে পরিণত করতে চায়।

এই দুই শিবিরের মধ্যকার কামড়াকামড়ি এবং তথাকথিত গণপরিষদ সদস্যদের মারাত্মক জনপ্রিয়তাহীনতাই গণপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের কারণ।

এই দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব প্রতিফলিত হছে নির্বাচনেও।

নির্বাচনকে একপক্ষ অন্যপক্ষের উপর প্রাধান্য বিস্তারের উপায় অর্থাৎ অপর পক্ষকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখলের উপায় হিসেবে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্র করছে।

এভাবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে নির্বাচন তাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব ও সংঘাত তীব্রতর করবে।

● এ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে তারা বিরোধী দলসমূহের উপর ফ্যাসিবাদী দমন তীব্রতর করেছে। এর কারণ নিজেদের ক্ষমতাচ্যুত হবার ভয়।

এর পরিণতি হিসেবে তারা দেশের মধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করার ফ্যাসিবাদী পাঁয়তারা করছে।

আওয়ামী লীগ ছয় পাহাড়ের দালালদের ‘সি’ ও ‘ডি’ টিম কাজী-রণো, দেবেন-বাসার প্রভৃতি চক্র এ উপনিবেশিক সামন্তবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীন ভাসানীর নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পাঁয়তারা করছে, তারা প্রকাশ্যে সশস্ত্র সংগ্রামকে বিরোধিতা করছে।

এভাবে তারা তাদের প্রকৃত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের দালালী চরিত্র তুলে ধরেছে।

● মনিসিং-মোজাফফর মস্কোপন্থী সংশোধনবাদীরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের ছয় পাহাড়ের দালালদের ‘বি’ টিম হিসেবে আরো স্পষ্টভাবে পরিচিত করে তুলবে।

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি এবং অন্যান্য সাচ্চা বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিকরা এ নির্বাচনের প্রহসনকে বিরোধিতা করবেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম জোরদার করবেন।