সিরাজ সিকদার রচনাঃ ছয় পাহাড়ের দালাল আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের দেয়া সংবিধান প্রসঙ্গে

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ অক্টোবর ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা  ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪


 

পিডিএফ

পূর্ববাংলার বর্তমান সংবিধান প্রণয়নকারীরা হচ্ছে দেশবিক্রেতা, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফর। পূর্ববাংলার জনগণের জন্য সংবিধান প্রণয়নের কোন অধিকার তাদের নেই।

● তথাকথিত গণপরিষদ সদস্যরা ফ্যাসিস্ট ইয়াহিয়া সামরিক দস্যুর নির্বাচনী কাঠামোর নির্দেশ (এলএফও) মেনে নিয়ে নির্বাচিত হয়েছে।

নির্বাচনী কাঠামোর নির্দেশের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানী সংহতি মেনে চলার কথা।

কাজেই এরা পাকিস্তানের সংহতি মেনে নির্বাচিত হয়েছে।

এ কারণে পাকিস্তানের সংহতি মেনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা কিভাবে বিচ্ছিন্ন পূর্ববাংলার সংবিধান তৈরী করতে পারে! পূর্ববাংলার সংবিধান তৈরীর জন্য তারা নির্বাচিত নয়।

● এ সকল তথাকথিত গণপরিষদ সদস্যরা পাক-সামরিক ফ্যাসিস্টদের নিকট পূর্ববাংলার জাতীয় স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছিল, এ উদ্দেশ্যে তারা বারংবার আপোষ বৈঠক করে। পূর্ববাংলার বীর জনগণ তাদের এ ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করে দেয়।

● এ সকল তথাকথিত গণপ্রতিনিধিরা পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের চরম নির্যাতনের মুখে পূর্ববাংলার জনগণকে অসহায়ভাবে রেখে ভারতে পলায়ন করে।

তারা ক্ষমতা ও গদির লোভে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের নিকট পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়, পূর্ববাংলাকে ভারতের নিকট পরাধীন করার দাসখত লিখে দেয়, পূর্ববাংলায় তাদের ডেকে আনে।

এভাবে তারা পূর্ববাংলাকে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করে। এর ফলে পূর্ববাংলার অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতি অর্থাৎ পূর্ববাংলার সকল ক্ষেত্রে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা নিয়ন্ত্রণ ও লুন্ঠন কায়েম করেছে।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের পূর্ববাংলায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ, মনিসিং-মোজাফফর মস্কোপন্থী, অন্যান্যদের পূর্ববাংলার জনগণের জন্য সংবিধান প্রণয়নের কোনো অধিকার নেই। তারা দেশদ্রোহিতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও মীরজাফরীর অপরাধে অপরাধী।

● তারা সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে পূর্ববাংলায় শোষণ ও লুন্ঠন করা ও সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে।

● তারা যে শোষণ ও লুন্ঠনের রাজত্ব স্থাপন করেছে তার ফলে পূর্ববাংলার জনগণ আজ অন্নহীন, বস্ত্রহীন অবস্থায় চরমতম নির্যাতনের ও লুন্ঠনের মধ্যে দিনযাপন করছেন।

● পূর্ববাংলার বীর জনগণ এ নতুন উপনিবেশিক শোষণ ও লুন্ঠনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। এ সকল দেশবিক্রেতা, বিশ্বাসঘাতক ও মীরজাফরদের বিচার করে চরম শাস্তি প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

কাজেই এ সকল তথাকথিত গণপরিষদ সদস্য যারা জনগণের নিকট লুটপাট সমিতির সদস্য বলে পরিচিত, দেশবিক্রেতা এবং মীরজাফর, তাদের সংবিধান তৈরির কোন অধিকার নেই।

সংবিধান হচ্ছে পূর্ববাংলায় ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের উপনিবেশ বজায় রাখা এবং সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ-মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ বজায় রাখা এবং পূর্ববাংলায় তাদের দালাল ও সামন্তবাদী শোষণ ও লুন্ঠন বজায় রাখা ন্যায়সঙ্গত করা এবং জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব চালিয়ে যাবার কালো দলিল।

এ সংবিধানে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের উপনিবেশিক শোষণ ও লুন্ঠন অবসানের কোন কথা নেই।

পূর্ববাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক-বেসামরিক ক্ষেত্র, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক অর্থাৎ পূর্ববাংলার সকল ক্ষেত্রের উপর ভারতীয় শোষণ ও লুন্ঠনের অবসানের কথা নেই।

অর্থাৎ এ সংবিধানে এ উপনিবেশিক শোষণ ও লুন্ঠনকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। একে ন্যায়সঙ্গত করা হয়েছে।

সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের শোষণ, লুন্ঠন, তাদের সামরিক ঘাঁটি বিলোপের কোন কথা নেই।

অর্থাৎ একে তারা ন্যায়সঙ্গত করেছে।

এ কালো দলিলে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ এবং মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষাকারী পুঁজিপতি, ব্যবসায়ী মহল, কালোবাজারী আমলাদের উৎখাতের কোন কথা নেই। দেশের সামন্তবাদীদের পরিপূর্ণ উৎখাত করে ‘যে জমি চাষ করে, সে-ই জমির মালিক’ এ ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ সামন্তবাদ বিলোপ করা হয়নি।

এ সংবিধানে জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের উপর পরিচালিত জাতীয় নিপীড়ণের অবসান এবং তাদের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন প্রদানের কোন কথা নেই।

এ সংবিধানে ঊর্দু ভাষাভাষী জনগণের উপর পরিচালিত নিপীড়ণের অবসানের কোন কথা নেই।

এ সংবিধানে পূর্ববাংলার অনুন্নত অঞ্চলের বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের দ্রুত উন্নয়নের ব্যবস্থা নেই।

সমাজতন্ত্র ও জনগণের মুক্তি শোষণহীন সমাজ কায়েমের গালভরা বুলির আড়ালে এ সংবিধান হচ্ছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েট সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ এবং পূর্ববাংলায় তাদের দালাল ও সামন্তবাদীদের প্রণীত শাসনতন্ত্র।

এদের অধিকার রক্ষা করা অর্থাৎ শোষণ ও লুন্ঠন এবং জনগণের উপর একনায়কত্ব পরিচালনার জন্য ইহা একটি কালো দলিল।

এ শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে মুজিববাদ অর্থাৎ জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা ও ফ্যাসিবাদকে।

এ সংবিধানে যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট একনায়কত্ব, যে সমাজতন্তের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে ছয় পাহাড়ের শোষণ ও লুন্ঠন, যে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা এবং ঊর্দু ভাষাভাষী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর জাতীয় নিপীড়ন, যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে পূর্ববাংলার মুসলিম জনগণের উপর ধর্মীয় নিপীড়ণ পরিচালনা।

জনগণ যাতে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে এবং তাদেরকে ফ্যাসিস্ট পদ্ধতিতে দাবিয়ে রাখা যায় তার জন্য এ কালো দলিলে রয়েছে সামরিক, আধা-সামরিক এবং বিভিন্ন ধরণের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ব্যবস্থা অর্থাৎ সামরিক, আধা-সামরিক, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হচ্ছে জনগণের উপর ফ্যাসিস্ট একনায়কত্ব পরিচালনার হাতিয়ার।

পার্লামেন্ট ও বিচারালয় হচ্ছে এ ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বকে ন্যায়সঙ্গত করার স্থান বিশেষ।

কাজেই এ সংবিধান উপনিবেশিক-আধা সামন্তবাদী পূর্ববাংলার ছয় পাহাড়ের দালাল শাসক শ্রেণীর জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বমূলক শাসনতন্ত্র।

ফ্যাসিস্ট আইয়ুবের উৎখাতের সাথে সাথে তার কুখ্যাত শাসনতন্ত্রের পতন হয়েছে।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তার তাবেদার আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের উৎখাতের সাথে সাথে এ জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ও ফ্যাসিবাদী শাসনতন্ত্রও উৎখাত হবে এবং জনগণ নিজেরাই জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অধিকার সম্বলিত সত্যিকার শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবেন।