সিপিএমএলএম বাংলাদেশ এর বিবৃতিঃ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও পার্টির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ডাক- বিপ্লবের নতুন বীজ বপন করুন! (১মে ২০১৪)

সিপিএমএলএম বাংলাদেশ এর বিবৃতি

১মে ২০১৪

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও পার্টির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ডাক-

বিপ্লবের নতুন বীজ বপন করুন!

কমরেড ও বন্ধুগণ,

১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর সংহতি দিবস ও একই সাথে আমাদের পার্টি সিপিএমএলএম এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।

সবাই জানেন, ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দের এই দিনে ৮ ঘন্টা কর্ম দিবসের দাবিতে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকেরা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এটা এক স্মরণীয় দিন।

বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতীদের অবস্থা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। গত বছরের রানা প্লাজা গার্মেন্ট গণহত্যার দুঃসহ স্মৃতি এখনো ম্লান হয়ে যায়নি। শ্রমিকদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছে সরকারী বেসরকারী ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের ভুয়ো সাহায্যের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। আমাদের পার্টি এক অসাধারণ আহ্বান জনগণের নিকট রেখেছিল যাকে কেউ কেউ বলেছিল সামরিক বক্তব্য। ঐ সব লোকেরা যে লাইন অনুসরণ করে তা হচ্ছে অর্থনীতিবাদ। এর অর্থ হল শ্রমিকদের দৈনন্দিন সামান্য মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনে শ্রমিক আন্দোলনকে সীমিত রাখা। শ্রমিকদের মূল সংগ্রাম সাম্যবাদী ধারার বিপ্লবের আহ্বান না রাখা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটাই জনগণকে বুর্জোয়া ও সামন্ত বড় ধনীদের তথাকথতি ভোটের ভাঁওতাবাজির শিকার হতে বলে। এই অর্থনীতিবাদী বুর্জোয়া মতবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর গুরু মার্কস, লেনিন, মাও, সিরাজ সিকদার প্রমুখ। শ্রমিক শ্রেণীর এই শিক্ষকেরা যে শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে মার্কসবাদ-লেনিন-মাওবাদ। আমাদের দেশের বাস্তবতায় যা সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিল আমাদের তা মেনে চলতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে বিপ্লব। মানে আমূল পরিবর্তন। পুরোন সমাজ যা শ্রমিক কৃষক মেহনতিদের রক্ত শোষণের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তাকে ধ্বংস করা, তার স্থলে সাম্যবাদী ধারার এক নতুন সমাজ নির্মাণ করা।

গত কয় মাস যাবত বাংলাদেশের বুর্জোয়ারা ভোটের ভাঁওতাবাজি করে গেল যাতে তাদের ‘জাতীয় নির্বাচন’-এ আওয়ামী লীগ একাই ভোট করল আর বিএনপি-জামাত লোভ সামলাতে না পেরে উপজেলা ভোট করল। এখন চারিদিকে গুম-খুন-অপহরণ-বিচার বহির্ভূত হত্যার নিয়ত চিত্রে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরী গোল্লায় গেছে। কৃষকদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে। পরিকল্পিত পরিবেশ ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তের ফলে শীতে চরমতম শৈত্য এবং গ্রীস্মে চরমতম উষ্ণতা সীমা অতিক্রম করেছে। সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। লোড শেডিং অসহনীয়। চিনি কল বন্ধ করেছে, কৃষকদের দাম শোধ করেনি। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রন আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ তিস্তার পানি পায়নি। ভারত সীমান্ত হত্যা চালাচ্ছে। বাংলাদেশী ইসলামবাদী তৎপরতা ভারতে হিন্দুত্ববাদকে উস্কে দিয়েছে। ভারতে গণযুদ্ধের বিকাশ একে প্রতিরোধ করবে আমরা আশাবাদী। ধর্মবাদ হচ্ছে একটা বিষ, যা ভারতকে বিভক্ত করেছিল। এর থেকে দক্ষিণ এশিয়া আজো মুক্ত হতে পারেনি। বহু শতাব্দী ধরে হিন্দুত্ববাদ বা ইসলামবাদ বা উভয় ধর্মবাদের ভিত্তিতে ভারতীয় সমাজ ও অর্থনীতি বিভক্ত হয়ে ছিল। ধর্মবাদ হচ্ছে একটা ফ্যাসিবাদ। পশ্চাদপদতা, কুসংস্কার ও অন্ধত্বকে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণী তার শাসন কায়েমে ও জনগণকে মধ্যযুগীয় দাস বানিয়ে রাখতে কাজে লাগায়। ধর্মবাদীরা মানষকে পরকালের স্বপ্ন দেখিয়ে ইহলোকে নিজেরা বিলাসিতায় লিপ্ত হয় সংখ্যাগুরিষ্ঠ মানুষের বুকের ওপর পা দিয়ে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে। রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে সিরিয়ায় মার্কিন ও ইউরোপীয় সাঙাতরা আগ্রাসন চালাতে পারেনি। উপরন্তু রাশিয়া ইউরোপে সীমানা বৃদ্ধি করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইউরোপীয়দের হম্বি তম্বি কাজে লাগছেনা।

আমাদের পার্টি সিপিএমএলএম আক্ষরিক অর্থেই নতুন। দুই বৎসর আগে এর জন্ম। পুরোনো কোন ধারার সাথে মতাদর্শিক ব্যতিত অন্য কোন সম্বন্ধই আমাদের নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসের যা কিছু ইতিবাচক আমরা তা ধারণ করব, যা কিছু নেতিবাচক আমরা তা বর্জন করব। আমাদের সাথে যারা যোগদান করছেন তারা নতুন ও সজীব। তাদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ অধ্যয়ন করতে হবে। মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মূল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং সিরাজ সিকদার চিন্তাধারা আঁকড়ে ধরতে হবে। আমরা সারা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ও এমনকি বিদেশে থাকা সর্বহারা বিপ্লবীদের আমাদের পার্টিতে যোগদানের আহ্বান জানাই। আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণী এক। প্রত্যেকটি দেশের সর্বহারা শ্রেণী হচ্ছে তার এক একটি বাহিনী। এই সর্বহারা শ্রেণী বুর্জোয়া ও শোষকদের সাথে নিরন্তর যুদ্ধে লিপ্ত বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত সর্বত্র। কিন্তু আমাদের মত দেশগুলি হচ্ছে সর্বহারা বিপ্লবের ভারকেন্দ্র। কারণ এখানেই মানুষ সর্বাধিক শোষিত। কিন্তু বিপ্লব সর্বত্রই হতে হবে। কয়েক বছর আগে আমেরিকা ও ইউরোপের পুঁজির কেন্দ্রগুলিকে সেসব দেশের সর্বহারারা অনেক দিন অবরোধ করে রেখেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির সর্বহারা শ্রেণীর অন্যতম কর্তব্য হচ্ছে আমাদের মত দেশগুলির বিপ্লবে সহায়তা দেওয়া। কিন্তু তাদের দেশে বিপ্লব করাই তাদের প্রধান কাজ। অপরদিকে আমদের মত দেশের বিপ্লব নিশ্চিতভাবে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে জাগড়ন ঘটাবে ও বিরাট সহায়তা দেবে।

আমাদের দেশের বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে প্রথমে জনগনের মধ্যে পার্টি সংগঠন স্থাপন করতে হবে, দেশব্যাপী যত বেশী বেশী এলাকায় পারা যায় বিপুল প্রচার চালাতে হবে । সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

 

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী

hammerandsicle