সিরাজ সিকদার রচনাঃ প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের বিদ্রোহ না বিপ্লবী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীলদের বিদ্রোহ

 

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার

 

 


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৪  


পিডিএফ

বিশ্বাসঘাতক ফজলু–সুলতান চক্র হৈ চৈ করছেঃ কমরেড সিরাজ সিকদার ও কেন্দ্রীয় কমিটির ‘প্রতিক্রয়াশীল’ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছে, অন্যদেরও তাই করা উচিত। তারা জনগণের সেবক, তারা জনগণকে ভালবাসে, বিপ্লবকে ভালবাসে, তারা বিপ্লবী, কমিউনিস্ট ইত্যাদি।

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সাহায্যে আমাদের নির্ণয় করা প্রয়োজন কে বিপ্লবী, আর কে প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রকৃত ঘটনা কি?

সঠিক লাইন কেবলমাত্র সঠিক মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরাই প্রণয়ন করতে পারেন

ফজলু-সুলতান চক্র বলে সংগঠনের রাজনীতি ঠিক কিন্তু নেতৃত্ব প্রতিক্রিয়াশীল।

সংগঠনের সঠিক রাজনীতি এবং অন্যান্য সঠিক লাইন যার ভিত্তিতেই সংগঠন বিকাশ লাভ করেছে, বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সংগঠনের নেতৃত্ব প্রণয়ন করেছেন, কমরেড সিরাজ সিকদার প্রণয়ন করেছেন।

সংগঠনের রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইন ঠিক অর্থাৎ এ সকল ক্ষেত্রে কমরেড সিরাজ সিকদার ঠিক, তবুও তাদের মতে তিনি প্রতিক্রিয়াশীল।

তারা কোন রাজনৈতিক, তাত্ত্বিক বা মতাদর্শগত প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কমিটি বা কমরেড সিরাজ সিকদারের ভুল ধরতে পারেনি।

তারা তাদের ম্যানিফেষ্টো হিসেবে গ্রহণ করেছে গুজব, অপবাদ, মিথ্যা বলা এবং ব্যক্তিগত কুৎসা।

রাজনৈতিক, মতাদর্শগত ও তত্ত্বগতভাবে আক্রমণ না করতে পেরে আদিকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীলরা শেষ পর্যন্ত গুজব, অপবাদ, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, ব্যক্তিগত কুৎসার আশ্রয় নিয়েছে। মার্কস-এঙ্গেলসের বিরুদ্ধে, লেনিন, ষ্ট্যালিন, মাও অর্থাৎ সকলের বিরুদ্ধে এমন করা হয়েছিল।

প্রথম আন্তর্জাতিকে বাকুনিন মার্কসের বিশ্বাস অর্জনের জন্য লেখে, “আমি আপনার শিষ্য এবং এতে আমি গর্বিত”। পরে যখন প্রথম আন্তর্জাতিকের ক্ষমতা দখলের জন্য তার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হল তখন সে মার্কসকে গাল দেয় এবং বলে “একজন জার্মান এবং ইহুদি হিসেবে সে আগাগোড়া স্বেচ্ছাচারী এবং একনায়ক।”

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকেও দলত্যাগী কাউটস্কি লেনিনকে গাল দেওয়ার জন্য একই ভাষা ব্যবহার করে। সে লেনিনকে নিন্দা করে “নিরীশ্বরবাদীদের ঈশ্বর” বলে, “সে মার্কসবাদকে শুধু একটি রাষ্ট্রীয় ধর্মেই পরিণত করেনি, মধ্যযুগীয় বা প্রাচ্য দেশীয় বিশ্বাসে পরিণত করেছে।”

তৃতীয় আন্তর্জাতিকে ষ্ট্যালিনকে ট্রটস্কি-টিটো ‘আমলাতান্ত্রিক’ এক নায়ক বলে আক্রমণ করে।

ক্রুশ্চোভ প্রতি কথায় ও লেখায় ষ্ট্যালিনের প্রশংসা করে উদ্ধৃতি দেয়, এমনকি “মহান পিতা ষ্ট্যালিন”  হিসেবে ষ্ট্যালিনকে সম্বোধন করে কিন্তু গোপনে ষ্ট্যালিনকে উৎখাত করার জন্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে। ষ্ট্যালিনকে ‘ডাকাত’, ‘খুনী’, ‘গুণ্ডা’, ‘বদমাইশ’, ‘একনায়ক’, ‘ফ্যাসিস্ট’ অর্থাৎ এমন কিছু অপবাদ নেই যা সে দেয়নি।

লিউশাউচি এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গো বিশ্বাসঘাতকরা সভাপতি মাওয়ের বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতি কথায় ও লেখায় সভাপতি মাওয়ের উদ্ধৃতি দেয় ও প্রশংসা করে। কিন্তু গোপনে সভাপতি মাওকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায়। লিনপিয়াও একই কাজ করে।

ফজলু-সুলতান চক্র কমরেড সিরাজ সিকদারকে প্রশংসা করে, তাকে বিরোধিতা করার অর্থ বিপ্লবকে বিরোধিতা করা প্রভৃতি বলে, তার প্রশংসায় কবিতা লেখে। কিন্তু ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত ব্যর্থ হলেই কমরেড সিরাজ সিকদারকে তারা বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমলাতান্ত্রিক, একনায়ক বলে তার বিরুদ্ধে ক্রুশ্চোভের মত জঘণ্য কুৎসা রটায়।

এভাবে তারা তাদের গুরু ক্রুশ্চোভ, লিউশাউচি, লিনপিয়াও, এবং অন্যান্য পুরানো ও আধুনিক সংশোধনবাদীদের পুরোনো কৌশল অবলম্বন করে রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইনে কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিক এ কথা স্বীকার করেও তাকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে।

একজন কমরেড সঠিক রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, সামরিক লাইন প্রণয়ন করেন, কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত জীবনে কি প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারেন?

সঠিক লাইন প্রণয়ন করা সম্ভব যদি একজন সর্বহারার বিশ্বদৃষ্টিকোণ অর্জন করে থাকেন এবং তা রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। ইহা প্রমাণ করে রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইন প্রণয়নের সময় তার সর্বহারা দিক প্রধান।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল, অর্থাৎ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্বদৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করেন, ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে তার প্রতিক্রিয়াশীল দিক প্রধান।

একজন কর্মী ব্যক্তিগত জীবন যাপন করছেন অর্থাৎ তার পরিবার, ছেলে-মেয়ে রয়েছে, তার থাকা-খাওয়া, কথাবার্তা, কমরেডদের সাথে মেলামেশা প্রাত্যহিক ব্যাপার; আবার রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানও তার প্রাত্যহিক ব্যাপার।

“রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইনে সর্বহারা, ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল” –এ তত্ত্ব সঠিক হলে প্রতিদিনের মধ্যে একই সাথে দুটো দিক প্রধান হয় অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের সময় সর্বহারা দিক, আবার ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল দিক প্রধান হয়।

কিন্তু মার্কসবাদ আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, একজন কমরেডের এক সময় একদিক প্রধান হয় এবং তাই নির্ণয় করে কমরেড কি? তার প্রতিক্রিয়াশীল দিক প্রধান হলে সে প্রতিক্রিয়াশীল, আর বিপ্লবী দিক প্রধান হলে সে বিপ্লবী।

আর এ দিকসমূহের রূপান্তর অর্থাৎ সর্বহারা দিক প্রধান থেকে অপ্রধান এবং প্রতিক্রিয়াশীল দিক অপ্রধান থেকে প্রধানে রূপান্তর সময় সাপেক্ষ। এ পরিবর্তন একদিনের মাঝে কয়েকবার হতে পারে না। অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে একটা প্রধান বিকালে বা দুপুরে অন্যটা বা একসাথে দুটোই প্রধান হওয়া মার্কসবাদ বিরোধী তত্ত্ব।

কাজেই একজন কমরেড রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বহারা আর একই সময়ে ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারেন না। হয় তিনি একই সময়ে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল বা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সর্বহারা।

কাজেই কমরেড সিরাজ সিকদার রাজনৈতিক ও অন্যান্য লাইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বহারা, একই সাথে ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারেন না। ব্যক্তিগত জীবনেও তার প্রধান দিক হচ্ছে সর্বহারা।

প্রধান দিক সর্বহারা হলেও রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৌণ দিকের প্রকাশ ঘটতে পারে। এ কারণেই কমরেডদের ভুল হয়। পৃথিবীর এমন কোন বিপ্লবী নেই যিনি কিছু ভুল করেননি। কাজেই কমরেডদের বিচার করার সময় নির্ণয় করতে হবে কোন দিক তার প্রধান, সর্বহারা না অসর্বহারা। যার সর্বহারা দিক প্রধান সে সর্বহারা, যার প্রতিক্রিয়াশীল দিক প্রধান সে প্রতিক্রিয়াশীল। সর্বহারা দিক প্রধান এরূপ কমরেডকে প্রতিক্রিয়াশীল বলা প্রতিক্রিয়াশীল ও শ্রেণী শত্রুদের কাজ।

কর্মীদের দিকসমূহের পর্যালোচনার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা সম্পর্কে সভাপতি মাও বলেছেন, “দুটি সীমারেখা স্পষ্ট করে অংকন করুন। প্রথমতঃ বিপ্লব না প্রতিবিপ্লব? ইয়েনান না সিয়ান (চিয়াং কাইশেকের কেন্দ্র – লেখক)? কেউ কেউ বুঝেন না যে এই সীমারেখা অবশ্যই স্পষ্টভাবে আঁকতে হবে। উদাহারণস্বরূপ যখন তারা আমলাতন্ত্রের বিরোধিতা করেন তখন ইয়েনান সম্বন্ধে এমনি করে বলেন যে যেন সেখানে কিছুই ঠিক নয়, ইয়েনানের আমলাতন্ত্রবাদ ও সিয়ানের আমলাতন্ত্রবাদের মধ্যে পার্থক্য করেন না। এটা মূলতঃ ভুল। দ্বিতীয়তঃ বিপ্লবী বাহিনীর ভেতরে ভুল ও নির্ভুলের মধ্যে, সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা টানতে হবে এবং এ দু’টির কোনটা মুখ্য ও কোনটা গৌণ তা স্পষ্ট করতে হবে। উদাহারণস্বরূপ সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৩০ ভাগ না শতকরা ৭০ ভাগ। কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে বললে চলবে না। ব্যক্তিবিশেষের কাজের মৌলিক মূল্যায়ন আমাদের অবশ্যই করতে হবে যে তার সাফল্য ৩০ ভাগ এবং ভুল শতকরা ৭০ ভাগ, না সাফল্য শতকরা ৭০ ভাগ এবং ভুল ৩০ ভাগ? যদি তার সাফল্যের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ হয় তা হলে তার কাজকে মৌলিকভাবে ইতিবাচক বলে স্বীকার করতে হবে। সাফল্য প্রধান কাজকে ভুল প্রধান কাজ বলা সম্পূর্ণরূপেই ভুল হবে। সমস্যা বিচার করতে গেলে এ দু’টি সীমারেখা টানতে অবশ্যই ভোলা উচিত নয়; বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লবের মধ্যকার সীমারেখা এবং সাফল্য ও ত্রুটির মধ্যকার সীমারেখা। যদি এ দু’টি সীমারেখাকে আমরা মনে রাখি তা হলে ভালভাবে কাজ করতে পারবো, অন্যথায়, আমরা সমস্যার প্রকৃতিকে গুলিয়ে ফেলবো। স্বভাবতই যদি এ সীমারেখা ভালভাবে আঁকতে হয়, তবে মনোযোগের সাথে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য। প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিটি বিষয়ের প্রতি আমাদের বিশ্লেষণ ও গবেষণার মনোভাব গ্রহণ করা উচিত।”

একারণেই সভাপতি মাও বলেছেন, “কোন লোককে অবিবেচিতভাবে সুবিধাবাদের লেবেল এঁটে দেওয়া অথবা তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর পদ্ধতি অবলম্বন করা ঠিক নয়।”

ফজলু-সুলতান চক্র মার্কসবাদী বিশ্লেষণের এ পদ্ধতি অবলম্বন না করে বিপ্লবী দিক প্রধান এরূপ কমরেডদেরও প্রতিক্রিয়াশীল বলে চিহ্নিত করেছে।

ফজলু-সুলতান চক্র কি বিপ্লবী?

সভাপতি মাও বলেছেন, “সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবীদের জন্য কি কি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন।”

“তাদের এমন বিপ্লবী হতে হবে যারা মনে-প্রাণে (চীনের) ও বিশ্বের বিপুল সংখ্যাধিক জনগণের সেবা করেন, কিন্তু ক্রুশ্চোভের মত নিজের দেশের ভেতরে মুষ্টিমেয় বুর্জোয়া শ্রেণীর বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত স্তরের সেবা করা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বার্থের সেবা করা উচিত নয়।”

ফজলু-সুলতান চক্র জনগণের সেবার পরিবর্তে নিজেদের চক্রের, প্রেমিকার, পদের, ক্ষমতার সেবা করে শেষ পর্যন্ত চক্র গঠন করে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, অর্থ-অস্ত্র চুরি করে, কর্মীদের প্রতারিত করে, খাঁটি বিপ্লবীদের গুপ্তহত্যার চক্রান্ত চালায়।

এভাবে সে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টিকে দুর্বল ও ধ্বংস করার সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালায়।

এটা পূর্ববাংলার এবং আন্তর্জাতিক শত্রু এবং বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের সবচাইতে ভালভাবে সেবা ছাড়া আর কি?

সভাপতি মাও বলেছেন, তাদের অবশ্যই গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার অনুসরণে আদর্শ হতে হবে, “জনসাধারণের থেকে আসা এবং জনসাধারণের মধ্যে যাওয়ার নেতৃত্বের পদ্বতিকে অবশ্যই রপ্ত করতে হবে। কিন্তু ক্রুশ্চোভের মত গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে লংঘন করা, স্বেচ্ছাচারী হওয়া, কমরেডদের ওপর আকস্মিক হামলা চালানো, যুক্তি না মানা অথবা ব্যক্তিবিশেষের স্বৈরতন্ত্র চালু করা চলবে না।”

ফজলু-সুলতান চক্র পার্টির গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতাকে সম্পূর্ণ পদদলিত করে, নিজেদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়, স্বেচ্ছাচারিতা করে।

তারা কংগ্রেসে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি ও তার সভাপতিকে অমান্য করে, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্বান্তকে অমান্য করে। এভাবে তারা গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে।

তারা পার্টির নির্দেশকে অমান্য করে। এভাবে তারা কেন্দ্রীকতাকে বিসর্জন দেয়।

তারা তাদের মতামত ও ইচ্ছাকে কার্যকরী করার জন্য সভায় পার্টির নির্দিষ্ট স্তরে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালনার পরিবর্তে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, কোন দিন সমালোচনা না করে পদ থেকে নামিয়ে দেওয়ার কারণে হঠাৎ কমরেডদের হামলা করে, তাদের বিরুদ্ধে জঘন্যতম ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা করে।

তাদের ইচ্ছা ছিল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে ব্যক্তিবিশেষের স্বৈরতন্ত্র চালু করা।

সভাপতি মাও বলেছেন, “ক্রুশ্চোভের মতো মতলববাজ ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি অবশ্যই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে, এ ধরনের খারাপ লোকদের পার্টির ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বকে কুক্ষিগত করতে বাধা দিতে হবে।”

ফজলু-সুলতান চক্র ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে দু’মুখো হয়, মিথ্যা বলে, অভিনয় করে। এভাবে চরম মতলববাজ ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করে।

সভাপতি মাও বলেছেন, “তাদের অবশ্যই প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী হতে হবে। কিন্তু ক্রুশ্চোভের মতো মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সংশোধনবাদী হলে চলবে না।”

ফজলু-সুলতান চক্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রকৃতপক্ষে সামন্তবাদী, ক্ষুদে বুর্জোয়া ভ্রষ্ট রয়ে যায়। তাদের শ্রেণীই মার্কসবাদের আবরণে সংশোধনবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়।

সভাপতি মাও বলেছেন, “একজন কমিউনিস্টের মুক্ত মন, বিশ্বস্ত ও সক্রিয় হতে হবে, বিপ্লবের স্বার্থকে নিজের প্রাণের চেয়েও ঊর্ধে স্থান দিতে হবে, তাকে সর্বদা এবং সর্বক্ষেত্রেই সঠিক নীতিতে দৃঢ় থাকতে হবে এবং সমস্ত ভুল চিন্তাধারার ও আচরণের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে সংগ্রাম করতে হবে, যাতে করে পার্টির যৌথ জীবন সুসংবদ্ধ এবং পার্টির ও জনগণের মধ্যকার সংযোগকে সুদৃঢ় করা যায়, ব্যক্তিবিশেষের চাইতে পার্টির ও জনসাধারণের সম্বন্ধে এবং নিজের চেয়ে অপরের সম্বন্ধে তাকে বেশী যত্নশীল হতে হবে। শুধু এমনি হলেই তাকে একজন কমিউনিস্ট বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

ফজলু-সুলতান চক্র মুক্তমন নয়, তারা তাদের মনের মধ্যকার খারাপ উদ্দেশ্য, চিন্তাধারা প্রকাশ করেনি।

তারা পার্টির বিশ্বস্ততা ভঙ্গ করে, অর্থ-অস্ত্র চুরি করে।

তারা ব্যক্তিগত প্রেম, চক্র গঠন ও পদের জন্য সক্রিয়তা দেখায়। কিন্তু পার্টি ও বিপ্লবের কাজে সক্রিয়তা দেখাবার পরিবর্তে পলায়ন করে।

বিপ্লবের স্বার্থকে নিজেদের প্রাণের চেয়েও ঊর্ধে স্থান দেওয়ার পরিবর্তে তারা প্রেমিকার স্বার্থ, যৌন স্বার্থ, পদের স্বার্থকে বিপ্লবের চেয়ে ঊর্ধে স্থান দেয়, নিজেদের জান বাঁচাবার জন্য, প্রেমিকার জন্য পলায়ন করে, সুবিধাবাদী হয়, পদের জন্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, শেষ পর্যন্ত উপদল গঠন করে নেতা সাজে।

সঠিক নীতি ও চিন্তাধারার পক্ষে দৃঢ় থাকার পরিবর্তে তারা নিজের ও অপরের সাথে উদারতাবাদী হয়।

ফজলু চক্র তারেকের ত্রুটি-বিচ্যুতি, সুলতানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ফজলু-সুলতান একে অপরের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢেকে রাখে। নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢেকে রাখে।

বিভিন্ন দলত্যাগী, সুবিধাবাদী, অসন্তুষ্ট উপাদানের সাথে সংযোগ করে তাদের নিয়ে উপদল গঠন করে, সুবিধাবাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়।

তারা পার্টির যৌথ জীবনকে সুসংবদ্ধ এবং পার্টির ও জনগণের মধ্যকার সংযোগকে সুদৃঢ় করবার পরিবর্তে পার্টি জীবনকে ভেঙ্গে ফেলা, পরস্পরকে সন্দেহ করা, পার্টি ও নেতৃত্বের প্রতি কর্মী ও জনগণের মাঝে অনাস্থা সৃষ্টির জন্য গুজব, অপবাদ, কুৎসা রটায়।

তারা তাদের প্রেমিকার প্রতি, নিজেদের নিরাপত্তা, পদের প্রতি বেশী যত্নশীল হয়।

অন্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরিবর্তে কমরেডদের (এমনকি মরণাপন্ন অসুস্থ কমরেডকেও) খতমের, ধরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় ফজলু-সুলতান চক্র পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবী।

ফজলু-সুলতান চক্র কি দেশপ্রেমিক?

ফজলু-সুলতান চক্র দেশপ্রেমিক হলে, জনগণ ও দেশের জন্য বিন্দুমাত্র ভালবাসা থাকলে একটি বিপ্লবী পার্টির সাচ্চা কমরেডদের হত্যা করা, ষড়যন্ত্র করা, অর্থ-অস্ত্র চুরি করা, পার্টি ও নেতৃত্বকে হেয় করার জন্য প্রতিবিপ্লবী কাজ করতো না। তারা প্রতিবিপ্লবী প্রতিক্রিয়াশীল।

প্রতিবিপ্লবী, প্রতিক্রিয়াশীলরা যতই দেশপ্রেমের কথা বলুক না কেন প্রকৃতপক্ষে তারা দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক, জনগণের প্রতারক ও ঘাতক। তারা জনগণের সেবার নামে করে বিভ্রান্ত ও প্রতারণা, জনগণকে ভালবাসার নাম করে জনসাধারণের চরম ক্ষতি, দেশপ্রেমের নাম করে দেশদ্রোহীতা ও জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা, বিপ্লবের নাম করে প্রতিবিপ্লব ও দালালী।

উপসংহার

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্ব এ সকল প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে আপোষ না করে, উদারতাবাদ না করে নীতিগত সংগ্রাম পরিচালনা করে নীতিতে দৃঢ় থাকেন।

ফজলু-সুলতান চক্র অনুতপ্ত ও নিজেদেরকে সংশোধনে ব্রতী না হয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে, শেষ পর্যন্ত পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়।

এ কারণে তারা নিজেদেরকে রক্ষা এবং কর্মী ও জনগণকে প্রতারিত করার জন্য বলে বেড়াচ্ছে তারা বিদ্রোহ করেছে।

তারা বিদ্রোহ করেছে ঠিকই। কিন্তু তাদের বিদ্রোহ হচ্ছে বিপ্লবী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে, বিপ্লবী পার্টির বিরুদ্ধে, পূর্ববাংলার ও বিশ্ব বিপ্লবের বিরুদ্ধে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার বিরুদ্ধে, পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবীদের বিদ্রোহ।

এ প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লবীদের বিদ্রোহ হচ্ছে তাদের কবরে যাওয়ার পদক্ষেপ, ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার অন্তিম যাত্রা।

অচিরেই পূর্ববাংলার সর্বহারা বিপ্লবীরা ও জনগণ তাদেরকে চূড়ান্তভাবে কবরস্ত করবেন এবং ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবেন।

নোট

ইতিমধ্যে বিশ্বাসঘাতক ফজলু ও তার অপর এক সহযোগী প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে থাকাকালীন অবস্থায় পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির গেরিলাদের হাতে খতম হয়েছে। ■