সিরাজ সিকদার রচনাঃ ফজলু-সুলতান বিশ্বাসঘাতক চক্র সম্পর্কে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল, সমর্থক ও জনগণের উদ্দেশ্যে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরী বিবৃতি

সিরাজ সিকদার

সিরাজ সিকদার


পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক রচনা ও প্রকাশ ১৯ মে ১৯৭২

কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ৩০ নভেম্বর ২০১৩


পিডিএফ

পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ৭ই মে ফজলু (পৈত্রিক নাম সেলিম শাহনেওয়াজ), সুলতান (পৈত্রিক নাম মাহবুব) চক্রকে নিম্নলিখিত অপরাধের কারণে চিরজীবনের জন্য পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। অপরাধসমূহঃ ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করা, গুজব-অপবাদ রটনা করা, গুপ্ত হত্যার পরিকল্পনা করা, অর্থ-অস্ত্র চুরি করা, পার্টির শৃংখলা ভঙ্গ করা, ক্যু-দেতা ঘটিয়ে পার্টির ক্ষমতা দখল করা ইত্যাদি।

বিশ্বাসঘাতক চক্রান্তকারী প্রতিবিপ্লবী ফজলু-সুলতান পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ও তার কার্যাবলী ধ্বংস করার জঘন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতক ফজলু চক্র কিছু সংখ্যক পার্টি কর্মীকে প্রতারিত করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খুলনায় পার্টি কর্মীর বাসস্থান দখল করে, পার্টির অর্থ, অস্ত্র, সাইক্লো মেশিন এবং অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্যাদি কব্জা করে, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিকে বন্দুকের ডগায় উৎখাত করে।

ফজলু-সুলতান চক্রের ইচ্ছা হচ্ছে কর্মীদের প্রতারিত করা, সামন্তবাদী আত্মীয়তার সম্পর্ক ও পার্টির সুনামের সুযোগ গ্রহণ করা, খুলনা অঞ্চলে একটি প্রতিক্রিয়াশীল দুর্গ গঠন করা, বরিশালের কুদ্দুস মোল্লার মত যুদ্ধবাজ ও ডাকাত সাজা, সাচ্চা কর্মীদের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা ও অন্যান্য চক্রান্ত চালিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে কমরেড সিরাজ সিকদারকে খতম করা, একটা ‘বোগাস’ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে নিজেরাই পার্টির কর্তা ব্যক্তি সাজা, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নাম ব্যবহার করে জনগণকে ভাওতা দেয়া, বিপ্লবের নামে প্রতারণা করা, সশস্ত্র সংগ্রামের নামে ডাকাতি করা।

চীনা পার্টির ইতিহাসে লং মার্চের সময় চেন কাও তো এইরূপ কাজ করে, সে বিশ হাজার লালসেনা ও পার্টির কর্মীকে প্রতারিত করে, সভাপতি মাও-এর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটিকে অস্বীকার করে, ‘বোগাস’ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে, নিজে পার্টির কর্তা সাজে। চেন কাও তোর পরিণতি কি? সে শেষ পর্যন্ত চিয়াং কাইশেকের গুপ্ত পুলিশ হয়। খাঁটি বিপ্লবী যারা প্রতারিত হয়েছিলেন তারা চেন কাও তোর প্রতারণা বুঝতে পেরে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান মাও-এর নেতৃত্বাধীন পার্টিতে ফিরে আসেন।

ফজলু-সুলতান চক্র কি একই পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে না? ইতিমধ্যে তারা কাজী-মেনন চক্রের সাথে হাত মিলিয়েছে। তারা এ চক্রকে সর্বহারা পার্টি, তার নেতৃত্ব বিশেষ করে কমরেড সিরাজ সিকদারকে খতম বা অপসারণের জন্য মদদ জোগাচ্ছে। তারা এই চক্রকে অস্ত্র, লোক অর্থাৎ সব কিছুই দিচ্ছে। এর অর্থ এই যে এই চক্র কাজী-মেননদের মাধ্যমে ভারতের জ্যোতিবসু-নাম্বুদ্রিপদ, তাদের মাধ্যমে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, ছয় পাহাড়ের দালাল, সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতি দেশীয় আন্তর্জাতিক শত্রুর দালালী করছে। তাদের এই দালালীর খবর কাজী-রণো চক্রের পাণ্ডা মেনন-জামাল হায়দার আমাদের জনৈক সহানুভূতিশীলের নিকট প্রকাশ করেছে। বহু দিন পূর্ব থেকেই তারা চক্রান্ত করছে। কাজেই ফজলু-সুলতান চক্রের পরিণতি হচ্ছে চেন কাও তোর পরিণতি, অর্থাৎ ছয় পাহাড়ের দালালদের গুপ্ত পুলিশ হওয়া।

এই চক্রের কার্যকলাপের সাথে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কোন সংযোগ নেই। পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির খাঁটি বিপ্লবী কর্মী, গেরিলা, সহানুভূতিশীল এবং পূর্ববাংলার জনগণ অবশ্যই এ চক্রের সংগঠন, বিপ্লব, জনগণ বিরোধী জঘণ্যতম কার্যকলাপের জন্য এ চক্রকে যথাযথ শাস্তি বিধান করবেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুদের এজেন্টদের গুজব, অপবাদ, প্রতারণা ও মিষ্টি কথায় ভুলবেন না, কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। শত্রু যা করে তার বিরোধিতা করবেন। চক্রান্তকারীদের সাথে কোন সংশ্রব রাখবেন না। তাদেরকে কোন প্রকার সহায়তা করবেন না। তাদেরকে প্রশ্রয়ও দেবেন না, যথাযথ স্তর কর্তৃক অনুমোদিত নয় এইরূপ কোন ব্যক্তির সাথে আলাপ করবেন না।

পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন অল্প কয়েকজন কর্মী নিয়ে কাজ আরম্ভ করে, এমন অবস্থা হয়েছিল যে প্রকৃত পক্ষে একজন কর্মী অবশিষ্ট ছিলেন। কিন্তু লাইন সঠিক থাকায় পার্টি বিকাশ লাভ করেছে। আজ সুবিধাবাদী, চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারীরা চলে গেলেও খাঁটি বিপ্লবী কর্মীরা দৃঢ়ভাবে পার্টির কাজ করে যাবেন। পার্টি অবশ্যই অব্যাহত গতিতে বিকাশ লাভ করবে, অস্থায়ী অসুবিধা কেটে যাবে। অবশ্যই এর জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক লাইন ও তা প্রণয়নে সক্ষম নেতৃত্ব। কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির রয়েছে সঠিক লাইন প্রণয়নের ক্ষমতা।

ফজলু-সুলতান চক্র সর্বহারা পার্টির নাম নিয়ে, তার বক্তব্য চুরি করে নিজেদেরকে বিপ্লবী হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছে। তারা সুবিধাবাদী, চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্যকারী, প্রতিবিপ্লবী, মার্কসবাদী নয়; কাজেই তাদের পক্ষে সঠিক লাইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। কাজেই তাদের পার্টি পরিচালনার ভাওতা অচিরেই প্রকাশ হয়ে পড়বে ও প্রকৃত প্রতিবিপ্লবী চেহারা বেরিয়ে পড়বে।

অতীতে মাহবুবউল্লা, আকাম ফজলুল হক পূর্ববাংলার বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলন নাম দিয়ে একটি সংগঠন করেছিল যার বক্তব্য ছিল পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের চুরি করা থিসিস। তারা এ বক্তব্য নিয়ে কিছুদিন কাজও করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় উথাপিত সমস্যাবলীর সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে দেবেন-মতিনদের সাথে যোগ দেয়। ফজলু-সুলতান চক্রেরও একই পরিণতি হবে। তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত কাজী বা অন্য কোন সংগঠনে যোগদান করতে হবে।

এ কারণে প্রতারিত কমরেডদের প্রতি আহ্বান আপনারা এ প্রতারকদের যথাযথ শাস্তি বিধান করে পার্টিতে ফিরে আসুন। নিজেদের আত্মত্যাগ ও কাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করে সফল করুন। শহীদ, মৃত কমরেড, গেরিলা, জনগণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করুন।

● পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি জিন্দাবাদ!

● কমরেড সিরাজ সিকদার জিন্দাবাদ!

● পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন! ■