পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি কর্তৃক পার্টির তাত্ত্বিক মুখপত্র লালঝাণ্ডা/১-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধ হিসেবে রচনা ও প্রকাশ এপ্রিল ১৯৭২
কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী বাংলাদেশ কর্তৃক সর্বহারা পথ (www.sarbaharapath.com) এর অনলাইন প্রকাশনা ২৯ অক্টোবর ২০১৩
পিডিএফ
৩০শে এপ্রিল পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র বাহিনী দিবস, ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, এবং ৩রা জুন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি দিবস।
এক বৎসর পূর্বে ৩০শে এপ্রিল কমরেড সিরাজ সিকদারের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় বরিশালের পেয়ারা বাগানে পূর্ববাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্বে নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠে। এভাবে পূর্ববাংলার বিপ্লবের ইতিহাসে, পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর ক্ষমতা দখলের সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এভাবে পূর্ববাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম নিয়মিত বাহিনী গড়ে তোলা, নিয়মিত বাহিনীর সাহায্যে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা, জনগণের মাঝে প্রচার করা, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা, তাদের ভূমি ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা, জাতীয় সংগ্রামের সাথে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের যথাযথ সমন্বয় সাধন করা, জনগণকে সশস্ত্র করে গ্রামরক্ষী বাহিনী, স্থানীয় গেরিলা গ্রুপ, নিয়মিত বাহিনী গড়ে তোলা, তাদেরকে কৃষক মুক্তি সমিতি, নারী মুক্তি সমিতি ও অন্যান্য গণসংগঠনে সংগঠিত করা, সেনাবাহিনীর মাঝে পার্টি-সংগঠন গড়ে তোলা, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কাজের সাথে সামরিক কাজের যথাযথ সমন্বয় করা, সেনাবাহিনীকে সম্প্রসারিত করা, ঘাঁটি এলাকা গঠন ও তা সম্প্রসারিত করা, অস্ত্র, খাদ্য, বস্ত্র, অর্থের সংস্থা করা, ঘেরাও-দমন জনিত সমস্যার সমাধান করা এবং সেনাবাহিনীর কমান্ড সমস্যা, সামগ্রিক এলাকায় পার্টি নেতৃত্বের সমস্যা, শত্রুর ঘেরাও-দমন অভিযান জনিত সমস্যা প্রভৃতি সশস্ত্র বিপ্লবের মৌলিক সমস্যার সমাধান করা হয়।
পার্টি এর ফলে সর্বাধিক মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করে যা বিপ্লব পরিচালনায় অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূর প্রসারী তাৎপর্য সম্পন্ন।
এ সকল সমস্যাবলীর যথাযথ সমাধান সম্ভব হয়েছে আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা কমরেড সিরাজ সিকদারের সরাসরি নেতৃত্বে। তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিশেষ অনুশীলনের সাথে সমন্বয় সাধন করেন এবং সাফল্যজনকভাবে উপরোক্ত সমস্যাবলীর সমাধান করেন এবং পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের জন্য সুনাম বয়ে আনেন।
সভাপতি মাও বলেছেন, “বিপ্লবী পার্টি ছাড়া বিপ্লব হয় না।” তিনি আরো বলেছেন, “জনগণের সশস্ত্র বাহিনী ছাড়া জনগনের কিছুই নেই।” কেবলমাত্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারায় সুসজ্জিত, সমালোচনা-আত্মসমালোচনার পদ্ধতি প্রয়োগকারী এবং জনগণের সাথে যুক্ত সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবী রাজনৈতিক পার্টির নেতৃত্বেই জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব।
পূর্ববাংলার মনি সিং-মোজাফফর সংশোধনবাদী, পূর্ববাংলার লিউশাওচী-ক্রুশ্চেভ হক-তোয়াহা, জ্যোতিবসু-নাম্বুদ্রিপদ দেবেন-বাসার-কাজী-রণো-বদরুদ্দীন-অমল, ট্রটস্কী-চেবাদী মতিন-আলাউদ্দিন এবং অন্যান্য বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা, সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণে সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার মত বিপ্লবের সর্বোচ্চ দায়িত্বের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করে।
ফলে সুদীর্ঘদিন পূর্ববাংলার জনগণের কিছুই ছিলনা। পাক সামরিক ফ্যাসিবাদের চরমতম শোষণ ও নির্যাতন অসহায়ভাবে তাদের ভোগ করতে হয়।
পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী বিপ্লবী রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সর্বহারা বিপ্লবীরা বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং ৮ই জানুয়ারী ১৯৬৮ সালে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠার মুহুর্ত থেকেই পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন এবং সর্বহারা পার্টি সর্বহারা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী বিপ্লবী রাজনৈতিক পার্টি এবং এর নেতৃত্বাধীন জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে আঁকড়ে ধরে।
পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন বিপ্লবী অনুশীলনে লেগে থাকে এবং সাফল্য-বিপর্যয়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে অগ্রসর হয়। সংগঠন এমন সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় যে এক পর্যায়ে কমরেড সিরাজ সিকদার একাই থাকেন বিপ্লবের পতাকাকে ঊর্ধে তুলে ধরার জন্য। তিনি অটল থেকে বিপ্লবী অনুশীলন চালিয়ে যান।
অনুশীলনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে অনুশীলনের সাথে সমন্বিত করে কমরেড সিরাজ সিকদার পার্টির সঠিক রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক ও মতাদর্শগত লাইন প্রণয়ন করেন।
পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন সঠিক লাইনে পরিচালিত হয়ে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে। পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় সংগঠন গড়ে উঠে।
পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই পার্টির অধীন প্রধান ধরণের সংগঠন হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার প্রতি মনোনিবেশ করে।
রাজনৈতিক কমিশারের নেতৃত্বে গেরিলা গ্রুপ, গেরিলা গ্রুপ পরিচালনার জন্য পার্টি কমিটির অধীন কমান্ড গড়ে তোলা হয়। গেরিলাদের রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। লড়াই ছাড়াও তাদেরকে জনগণের মধ্যে প্রচার করা, তাদেরকে সংগঠিত করা, সশস্ত্র করা, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কায়েম করা, তাদের মাঝে পার্টি সংগঠন গড়ে তোলা, তাদের মধ্য থেকে গেরিলা সংগ্রহ করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা প্রদান করা হয়।
এর ফলে গেরিলারা সর্বদাই পার্টির নেতৃত্বে অটল থেকে কার্য পরিচালনা করে। এই গেরিলা গ্রুপ সমূহের নেতৃত্বেই পাকিস্তান কাউন্সিল কেন্দ্র, মার্কিন তথ্য কেন্দ্র, বিএনআর-এ বোমাবর্ষন করা হয় এবং ফটিকছড়িতে সর্বপ্রথম জাতীয় শত্রু খতম করা হয়।
১৯৭১-এর মার্চের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংগঠন সঠিক পথে অগ্রসর হয় এবং জনগণের প্রতি অহিংস অসহযোগের ভুল পথ পরিত্যাগ করে সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানায়।
পঁচিশে মার্চের পরবর্তীকালে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব, বিশেষ করে কমরেড সিরাজ সিকদার ভারতে পলায়ন না করে জনগণের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গ্রামে যান। কমরেড সিরাজ সিকদারের সরাসরি নেতৃত্বে বরিশালের পেয়ারা বাগানের মহান সংগ্রাম পরিচালিত হয়, আত্মনির্ভরতার ভিত্তিতে সঠিক পথে পূর্ববাংলার মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়, পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক ও অন্যান্য লাইন অনুশীলনের অগ্নি পরীক্ষায় সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
পূর্ববাংলার সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় শর্তাবলীর উপস্থিতি কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিকভাবে উপলব্ধি করেন। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় কর্মীদের বৈঠকে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের কামানের গোলার শব্দের মাঝে পেয়ারা বাগানে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালের ৩রা জুন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি।
পার্টি প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বে পূর্ববাংলার জনগণের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ দাবানলের মত বহু জেলায় বিস্তৃত হয়, সমগ্র পূর্ববাংলার জনগণের নেতৃত্ব গ্রহণের মত অবস্থার শর্তসমূহ গড়ে উঠে।
এ সময় ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের তাবেদার ছয় পাহাড়ের দালালরা ভারত থেকে সশস্ত্র হয়ে আসে এবং আমাদের পার্টি ভেঙ্গে দিয়ে, অস্ত্র জমা দিয়ে আমাদেরকে কামানের খোরাক হতে বলে।
ইতিমধ্যে দেবেন-বাসার, কাজী-রণো, বদরুদ্দীন-নজরুল এবং আরো কয়েকটি বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদী উপদল জ্যোতিবসু-নাম্বুদ্রিপদের ছত্রছায়ায় তথাকথিত ‘সমন্বয়’ কমিটি গঠন করে। তারা আমাদেরকে প্রলুব্ধ করার প্রচেষ্টা চালায়।
ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং তার তাবেদার বিরোধিতার নামে হক-তোয়াহা, মতিন-আলাউদ্দিন পাক সামরিক ফ্যাসিস্টদের সাথে আঁতাত করে এবং তাদের রাজাকারে পরিণত হয়।
মনি সিং-মোজাফফর সংশোধনবাদীরা ছয় পাহাড়ের লেজুড়ে পরিণত হয়।
এ জটিল পরিস্থিতিতে কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিকভাবে আহ্বান জানান আমাদের পার্টি ও গেরিলাদের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে, স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা বিসর্জন দিয়ে কোন প্রকার ঐক্য না করতে। তিনি আওয়ামী লীগ ও মুক্তি বাহিনীর শ্রেণী বিশ্লেষণ করে তাদেরকে ছয় পাহাড়ের দালাল হিসেবে তুলে ধরেন এবং তাদের সাথে আলোচনায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন।
তিনি “সমন্বয় কমিটি” গঠনের মার্কসবাদ বিরোধী পদক্ষেপের স্বরূপ তুলে ধরেন এবং সমন্বয় কমিটিস্থ উপদলের সর্বহারা বিপ্লবীদের প্রতি উপদল ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি হক-তোয়াহা-মতিন-আলাউদ্দিনদের বিশ্বাসঘাতক কার্যকলাপের স্বরূপও তুলে ধরেন।
এ সময় কমরেড সিরাজ সিকদার বিভিন্ন ফ্রন্টে ছয় পাহাড়ের দালাল ফ্যাসিস্টদের বিষয়ে কর্মীদের সতর্ক করেন, কর্ম পদ্ধতি পালটিয়ে জনগণের সাথে একীভূত হয়ে গোপনভাবে কাজ করার নির্দেশ পাঠান।
কিন্তু বিভিন্ন ফ্রন্টের কর্মীরা এ সকল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হন। ফলে তাঁরা ছয় পাহাড়ের দালালদের শিকারে পরিণত হন। বিভিন্ন ঘাঁটিসমূহ হস্তচ্যুত হয়, বহু কর্মী ও গেরিলা প্রাণ হারায়, বহু অস্ত্র খোয়া যায়। আমাদের নেতৃত্বে সঠিক পথে পরিচালিত জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ব্যাহত হয়।
এ জটিল পরিস্থিতিতে কমরেড সিরাজ সিকদার “বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কয়েকটি দলিল” ১নং ও ২নং এবং “দেশপ্রেমিকের বেশে ছয় পাহাড়ের দালাল” প্রভৃতি দলিলে পাক-সামরিক ফ্যাসিস্ট ও ছয় পাহাড়ের দালাল উভয়কে বিরোধিতা করা, গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, জনসমর্থনকে ব্যবহার করা, সুশৃংখল পশ্চাদপসরনের নির্ভুল নির্দেশ প্রদান করেন, যার ফলে এ জটিল পরিস্থিতিতেও কর্মীদের সঠিক রাজনৈতিক দিশা বজায় থাকে।
এ সময় মহান গণচীনের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এ সকল দলিল এবং কমরেড সিরাজ সিকদার বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি মাওয়ের পররাষ্ট্র নীতির সঠিকতা তুলে ধরেন। ফলে আমাদের সংগঠনে এ প্রশ্নে কোন বিভ্রান্তি দেখা দেয়নি।
ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের পূর্ববাংলা আক্রমণ ও দখলের মত জটিল পরিস্থিতিতে কমরেড সিরাজ সিকদার সঠিকভাবে “অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন” দলিলের মাধ্যমে পরিস্থিতির সময়োচিত বিশ্লেষণ দেন এবং বর্তমান করণীয় তুলে ধরেন।
আমাদের নীতি ঠিক রেখে কৌশলগত প্রচারের মাধ্যমে ব্যাপক জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করবার জন্য কমরেড সিরাজ সিকদার ‘খোলা চিঠি’ প্রণয়ন করেন।
ইহা ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও তার পুতুল বাংলাদেশ সরকার বিরোধী সর্বপ্রথম প্রচার পত্র হিসেবে কাজ করে।
পূর্ববাংলার সমাজের নূতন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পার্টি জরুরী ভিত্তিতে প্রথম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে। এর ফলে কর্মীরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করেন।
কংগ্রেস পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করে তার কাজ সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত করে।
কংগ্রেস উত্তর অতি অল্প সময়ের মাঝেই পার্টির কর্মীদের পুননিয়োগ সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত হয় এবং অনুশীলনে পার্টির নূতন রাজনৈতিক, সামরিক ও অন্যান্য লাইন সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
ইতিমধ্যে কমরেড সিরাজ সিকদার “অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করুন” দলিল পরিবর্ধিত ও সংশোধিত আকারে রচনা করেন। ইহা ব্যাপক জনগণের মাঝে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। পূর্ববাংলার জনগণের ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং ছয় পাহাড়ের দালাল বিরোধী সংগ্রামের ইহা একটি মহান ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কর্মসূচী।
পূর্ববাংলার সমাজের জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি নির্ভুল, ঐক্যবদ্ধ এককেন্দ্রীক সর্বহারার রাজনৈতিক পার্টি হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
পক্ষান্তরে বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা মারাত্মক সংকটে পতিত হয়, তারা নিঃসঙ্গ, অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত, বিভক্ত এবং দেউলিয়া।
কমরেড সিরাজ সিকদার সর্বহারা বিপ্লবীদের প্রতি সময়োচিত আহ্বান জানান বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীদের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য।
পূর্ববাংলার পাকিস্তানে যোগদানের পরবর্তী বিশ বৎসরকাল বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদীরা কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ব্যতিরেকেই মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা এবং পূর্ববাংলার ও বিশ্বের বিপ্লব ও জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
কমরেড সিরাজ সিকদার তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, সর্বহারা বিপ্লবীদের বিভিন্ন আকৃতির সংশোধনবাদ বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্বে দেন এবং পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ববাংলায় সর্ব প্রথম সঠিক রাজনৈতিক, সামরিক, সাংগঠনিক লাইন এবং কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করেন।
তাঁর সঠিক পরিচালনায় পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন অসংখ্য প্রতিকূলতা কাটিয়ে অগ্রসর হয়। শ্রমিক আন্দোলন তার ঐতিহাসিক ভূমিকা সমাপ্ত করে সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টি “পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি” প্রতিষ্ঠা করে।
পঁচিশে মার্চের পরবর্তীকালীন জটিল পরিস্থিতি, ভারত কর্তৃক পূর্ববাংলা দখল করার ফলে উদ্ভূত গুরুতর সমস্যাবলী, অর্থাৎ এ সময়কার প্রচণ্ড ঝড়-তরঙ্গের মাঝেও পার্টি কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে সঠিক পথে অগ্রসর হয় এবং অতিশয় মূল্যবান ও সুদুরপ্রসারী তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
অতীত ও বর্তমানের সাফল্য, কঠোর প্রয়াসের পরিণতি হিসেবে সমগ্র পূর্ববাংলায় গণভিত্তিক পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির বিকাশ লাভের শর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও সর্বহারা পার্টির প্রতিটি সফলতা ও বিজয় অর্জিত হয়েছে কমরেড সিরাজ সিকদার কর্তৃক মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার সার্বজনীন সত্যকে পূর্ববাংলার বিপ্লবের বিশেষ অনুশীলনে সৃজনশীল প্রয়োগের ফলে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস এবং পার্টি দিবসে সমগ্র পার্টির কর্মী, গেরিলা ও সহানুভূতিশীলরা আন্তরিকভাবে কমরেড সিরাজ সিকদারের দীর্ঘজীবন কামনা করেন, কমরেড সিরাজ সিকদার কর্তৃক মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারার অধিকতর সাফল্যজনক প্রয়োগ কামনা করেন।
সমগ্র পার্টির কমরেডগণ কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ঐক্য ও শৃংখলা জোরদার করবেন, পার্টির এক কেন্দ্রকে শক্তিশালী করবেন। তিনটি বৃহৎ শৃংখলা ও মনোযোগ দেবার আটটি ধারা দৃঢ়ভাবে পালন করবেন। সমগ্র পূর্ববাংলা ব্যাপী গণভিত্তিক পার্টি গড়ে তুলবেন; সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন, সর্বহারা বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করবেন। নিজেদের অধিকতর বিপ্লবীকরণ করবেন, আত্মবলিদানে নির্ভয় হয়ে সকল বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে বিরাট বিজয় অর্জনের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে কাজ করে যাবেন, শহীদ কমরেড ও জনগণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবেন।
সমগ্র পার্টির কমরেডগণ মনোযোগের সাথে কমরেড সিরাজ সিকদারের রচনাবলী পাঠ ও প্রয়োগ করবেন এবং তার নির্দেশ সমূহ দৃঢ়তার সাথে কার্যকরী করবেন।
সমগ্র পার্টি অবশ্যই সশস্ত্র বাহিনী দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস এবং পার্টি দিবস উদযাপনের সময় উপরোক্ত লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করবেন।
- মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওসেতুঙ চিন্তাধারা জিন্দাবাদ
- দীর্ঘ দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকুন সভাপতি মাওসেতুঙ
- পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি জিন্দাবাদ!
- কমরেড সিরাজ সিকদার জিন্দাবাদ!
- দীর্ঘ দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকুন কমরেড সিরাজ সিকদার! ■